বিশ্বস্ত থাকার মাধ্যমে ঈশ্বরের অনুমোদন লাভ করা যায়
“যাহারা বিশ্বাস ও দীর্ঘসহিষ্ণুতা দ্বারা প্রতিজ্ঞা-সমূহের দায়াধিকারী, তাহাদের অনুকারী হও।”—ইব্রীয় ৬:১২.
১, ২. যিপ্তহ ও তার মেয়ে কোন প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখোমুখি হয়েছিলেন?
একজন যুবতী তার বাবার সঙ্গে দেখা করার জন্য দৌড়ে আসে। তার বাবাকে একটা যুদ্ধ শেষ করে নিরাপদে বাড়িতে ফিরে আসতে দেখে সে খুবই আনন্দিত। বাবার বিজয়ে সে অত্যন্ত আনন্দিত হয়ে নেচে-গেয়ে ওঠে। কিন্তু এরপর তার বাবা যা করেন, সেটা দেখে এবং তার কথা শুনে সে নিশ্চয়ই খুব অবাক হয়ে যায়। তার বাবা নিজের পোশাক ছিঁড়ে কাঁদতে কাঁদতে বলে ওঠেন: “হায় হায়, আমার বৎসে, তুমি আমাকে বড় ব্যাকুল করিলে।” তারপর তিনি মেয়েকে বলেন, তিনি যিহোবার কাছে এমন এক প্রতিজ্ঞা করেছেন, যেটা তার মেয়ের জীবন চিরকালের জন্য পালটে দেবে। তার প্রতিজ্ঞা রক্ষা করার অর্থ হচ্ছে, তার মেয়ে কখনো বিয়ে করতে অথবা সন্তানের জন্ম দিতে পারবে না। কিন্তু, সেই মেয়ে সঙ্গেসঙ্গে একটা চমৎকার উত্তর দেয় ও তার বাবাকে যিহোবার কাছে করা প্রতিজ্ঞা রক্ষা করতে উৎসাহিত করে। তার উত্তর এটা প্রকাশ করে, যিহোবা তাকে যা-কিছু করতে বলবেন, সেটা যে তার জন্য মঙ্গল নিয়ে আসবে, সেই বিষয়ে তার পূর্ণ আস্থা রয়েছে। (বিচার. ১১:৩৪-৩৭) সেই মেয়ের বিশ্বাস দেখে তার বাবা খুবই গর্বিত হন কারণ তিনি জানেন, তার মেয়ের ইচ্ছুক মনোভাব দেখে যিহোবা খুশি হবেন।
২ যিপ্তহ ও তার মেয়ে যিহোবার উপর এবং বিভিন্ন বিষয় করার জন্য তাঁর উপায়ের উপর পূর্ণ আস্থা রেখেছিলেন। এমনকী তারা সেই সময়েও বিশ্বস্ত ছিলেন, যখন তা করা তাদের জন্য সহজ ছিল না। তারা যিহোবার অনুমোদন লাভ করতে চেয়েছিলেন আর তা লাভ করার জন্য যেকোনো ত্যাগস্বীকার করা উপযুক্ত।
৩. কেন যিপ্তহ ও তার মেয়ের উদাহরণ বর্তমানে আমাদের জন্য উপকারী?
৩ যিহোবার প্রতি বিশ্বস্ত থাকা সবসময় সহজ নয়। “বিশ্বাসের পক্ষে” আমাদের ‘প্রাণপণ করা’ প্রয়োজন। (যিহূদা ৩) তা করার জন্য আসুন আমরা এখন দেখি, কীভাবে যিপ্তহ ও তার মেয়ে তাদের জীবনের বিভিন্ন কঠিন পরিস্থিতির সঙ্গে সফলভাবে মোকাবিলা করেছিলেন। কীভাবে তারা যিহোবার প্রতি বিশ্বস্ততা বজায় রাখতে পেরেছিলেন?
জগতের প্রভাব সত্ত্বেও বিশ্বস্ত থাকা
৪, ৫. (ক) ইস্রায়েলীয়রা যখন প্রতিজ্ঞাত দেশে প্রবেশ করেছিল, তখন যিহোবা তাদের কী আজ্ঞা দিয়েছিলেন? (খ) গীতসংহিতা ১০৬ গীত অনুযায়ী, ইস্রায়েলীয়দের অবাধ্যতার কারণে তাদের প্রতি কী ঘটেছিল?
৪ যিহোবার প্রতি অবাধ্যতার কারণে ইস্রায়েলীয়রা যে-পরিণতি ভোগ করেছিল, তা হয়তো প্রতিদিন যিপ্তহ ও তার মেয়ের মনে পড়ে যেত। প্রায় ৩০০ বছর আগে, যিহোবা ইস্রায়েলীয়দের আজ্ঞা দিয়েছিলেন যেন তারা প্রতিজ্ঞাত দেশের সমস্ত মিথ্যা উপাসককে হত্যা করে। কিন্তু তারা সেই আজ্ঞার বাধ্য হয়নি। (দ্বিতীয়. ৭:১-৪) ইস্রায়েলীয়দের মধ্যে অনেকে সেই কনানীয়দের অনুকরণ করতে শুরু করেছিল, যারা মিথ্যা দেব-দেবীর উপাসনা করত এবং অনৈতিক জীবনযাপন করত।—পড়ুন, গীতসংহিতা ১০৬:৩৪-৩৯.
৫ ইস্রায়েলীয়দের অবাধ্যতার কারণে যিহোবা তাদের শত্রুদের হাত থেকে তাদের সুরক্ষা করেননি। (বিচার. ২:১-৩, ১১-১৫; গীত. ১০৬:৪০-৪৩) যে-সমস্ত পরিবার যিহোবাকে ভালোবাসত, তাদের জন্য সেই কঠিন সময়ে যিহোবার প্রতি বিশ্বস্ত থাকা নিশ্চয়ই কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছিল। কিন্তু বাইবেল জানায়, সেই সময়ে বিভিন্ন ব্যক্তি, যেমন যিপ্তহ ও তার মেয়ে আর সেইসঙ্গে ইল্কানা, হান্না ও শমূয়েল বিশ্বস্ত ছিলেন। তারা যিহোবাকে খুশি করার জন্য দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ ছিলেন।—১ শমূ. ১:২০-২৮; ২:২৬.
৬. বর্তমানে জগতে কোন প্রভাব রয়েছে আর আমাদের কী করতে হবে?
৬ আমাদের সময়ে, লোকেরা কনানীয়দের মতোই চিন্তা ও আচরণ করে থাকে। তাদের জীবন যৌনতা, দৌরাত্ম্য ও টাকাপয়সার উপর কেন্দ্রীভূত। কিন্তু যিহোবা আমাদের স্পষ্ট সতর্কবাণী দেন। তিনি আমাদের সুরক্ষা করতে চান, ঠিক যেমনটা তিনি ইস্রায়েলীয়দেরকে মন্দ প্রভাব থেকে সুরক্ষা করতে চেয়েছিলেন। আমরা কি ইস্রায়েলীয়দের ভুল থেকে শিক্ষা লাভ করতে পারি? (১ করি. ১০:৬-১১) জগতের চিন্তাভাবনা এড়িয়ে চলার জন্য আমাদের যথাসাধ্য করতে হবে। (রোমীয় ১২:২) আমরা কি তা করব?
হতাশাজনক পরিস্থিতি সত্ত্বেও যিপ্তহ বিশ্বস্ত ছিলেন
৭. (ক) যিপ্তহের নিজের লোকেরা তার প্রতি কেমন আচরণ করেছিল? (খ) যিপ্তহ কীভাবে প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিলেন?
৭ যিহোবার প্রতি অবাধ্যতার কারণে ইস্রায়েলীয়রা যিপ্তহের দিনে পলেষ্টীয় ও অম্মোন-সন্তানদের দ্বারা উৎপীড়িত হয়েছিল। (বিচার. ১০:৭, ৮) শত্রু জাতি ছাড়াও, যিপ্তহ তার নিজের ভাই ও ইস্রায়েলীয় নেতাদের কাছ থেকে তাড়নার মুখোমুখি হয়েছিলেন। তার ভাইয়েরা তাকে ঈর্ষা ও ঘৃণা করত আর তাই তারা তাকে সেই ভূমির অধিকার ত্যাগ করতে বাধ্য করেছিল, যে-ভূমি তার অধিকারভুক্ত ছিল। (বিচার. ১১:১-৩) তাদের নিষ্ঠুর আচরণের দ্বারা যিপ্তহ নিজের মনোভাবকে নিয়ন্ত্রিত হতে দেননি। কীভাবে আমরা তা জানতে পারি? কারণ সেই জাতির নেতারা যখন যিপ্তহের কাছে সাহায্যের জন্য অনুরোধ করেছিলেন, তখন তিনি তাদের প্রতি নিষ্ঠুর মনোভাব না দেখিয়ে বরং তাদের সাহায্য করেছিলেন। (বিচার. ১১:৪-১১) কোন বিষয়টা হয়তো যিপ্তহকে এমন প্রতিক্রিয়া দেখাতে অনুপ্রাণিত করেছিল?
৮, ৯. (ক) মোশির ব্যবস্থার কোন নীতিগুলো হয়তো যিপ্তহকে সাহায্য করেছিল? (খ) যিপ্তহের কাছে কোন বিষয়টা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিল?
৮ যিপ্তহ একজন বীরযোদ্ধা ছিলেন আর তিনি ইস্রায়েলীয়দের ইতিহাস এবং মোশির ব্যবস্থা সম্বন্ধে ভালোভাবে জানতেন। যিহোবা যেভাবে তাঁর লোকেদের সঙ্গে আচরণ করেছিলেন, সেটা তাকে ন্যায়-অন্যায় সম্বন্ধে ঈশ্বরের মান বুঝতে সাহায্য করেছিল। (বিচার. ১১:১২-২৭) যিপ্তহ বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় সেই জ্ঞান তার জীবনে ব্যবহার করেছিলেন। তিনি জানতেন, যিহোবা বিদ্বেষ পুষে রাখাকে অনুমোদন করেন না; এর পরিবর্তে, ঈশ্বর চান যেন তাঁর লোকেরা একে অন্যকে ভালোবাসে। এ ছাড়া, ব্যবস্থা তাকে এই বিষয়ে শিক্ষা দিয়েছিল, অন্য লোকেদের সঙ্গে, এমনকী যারা তাকে ঘৃণা করে তাদের সঙ্গে কেমন আচরণ করতে হবে।—পড়ুন, যাত্রাপুস্তক ২৩:৫; লেবীয় পুস্তক ১৯:১৭, ১৮.
৯ সম্ভবত যোষেফের উদাহরণ যিপ্তহকে সাহায্য করেছিল। যিপ্তহ নিশ্চয়ই জানতেন, যোষেফের ভাইয়েরা তাকে ঘৃণা করা সত্ত্বেও যোষেফ তাদের প্রতি করুণা দেখিয়েছিলেন। (আদি. ৩৭:৪; ৪৫:৪, ৫) তার উদাহরণ নিয়ে চিন্তা করা হয়তো যিপ্তহকে এমন উপায়ে প্রতিক্রিয়া দেখাতে সাহায্য করেছিল, যা যিহোবাকে খুশি করে। যিপ্তহের ভাইয়েরা যা করেছিল, সেটা তাকে সত্যিই কষ্ট দিয়েছিল। কিন্তু যিহোবার নাম ও তাঁর লোকেদের জন্য যুদ্ধ করা, যিপ্তহের কাছে নিজের ব্যক্তিগত অনুভূতির চেয়ে আরও গুরুত্বপূর্ণ ছিল। (বিচার. ১১:৯) তিনি যিহোবার প্রতি বিশ্বস্ত থাকার জন্য দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ ছিলেন। এই মনোভাবের ফলে তিনি নিজে যিহোবার আশীর্বাদ লাভ করেছিলেন ও সেইসঙ্গে ইস্রায়েলীয়রা যিহোবার আশীর্বাদ লাভ করেছিল।—ইব্রীয় ১১:৩২, ৩৩.
১০. কীভাবে ঐশিক নীতিগুলো বর্তমানে আমাদেরকে খ্রিস্টান হিসেবে আচরণ করার ক্ষেত্রে সাহায্য করতে পারে?
১০ আমরা কি যিপ্তহের উদাহরণ থেকে শিখতে পারি? কোনো খ্রিস্টান ভাই যদি আমাদের হতাশ করেন অথবা আমাদের মনে হয় যে, আমাদের সঙ্গে সঠিক আচরণ করা হচ্ছে না, তা হলে আমরা কী করব? নিজেদের তিক্ত অনুভূতি যেন আমাদেরকে যিহোবার সেবা থেকে বিরত না করে। খ্রিস্টীয় সভাতে যাওয়া অথবা মণ্ডলীর সঙ্গে মেলামেশা করা কখনো বাদ দেবেন না। আসুন, আমরা যিপ্তহকে অনুকরণ করি এবং যিহোবার বাধ্য থাকি। তা করার ফলে আমরা কঠিন পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠতে পারব আর এভাবে আমরাও উত্তম উদাহরণ হতে পারব।—রোমীয় ১২:২০, ২১; কল. ৩:১৩.
ইচ্ছুক মনোভাব নিয়ে ত্যাগস্বীকার করার মাধ্যমে আমাদের বিশ্বাস প্রকাশ পায়
১১, ১২. যিপ্তহ কোন প্রতিজ্ঞা করেছিলেন আর এর সঙ্গে কী জড়িত ছিল?
১১ যিপ্তহ জানতেন, অম্মোন-সন্তানদের হাত থেকে ইস্রায়েলকে মুক্ত করার জন্য তার ঈশ্বরের সাহায্য প্রয়োজন। তিনি যিহোবার কাছে প্রতিজ্ঞা করেছিলেন, যিহোবা যদি তাকে বিজয়ী করেন, তা হলে যুদ্ধ থেকে ফিরে আসার পর যে-ব্যক্তি প্রথমে তার বাড়ি থেকে বের হয়ে আসবে, তাকে তিনি যিহোবার কাছে “হোমবলিরূপে” উৎসর্গ করবেন। (বিচার. ১১:৩০, ৩১) এর অর্থ কী ছিল?
১২ মানুষকে আগুনে পুড়িয়ে হোমবলি দেওয়ার বিষয়টা যিহোবা ঘৃণা করেন। তাই আমরা বুঝতে পারি, যিপ্তহ আক্ষরিক বলিদান করতে যাচ্ছিলেন না। (দ্বিতীয়. ১৮:৯, ১০) মোশির ব্যবস্থায় হোমবলি ছিল এক বিশেষ উপহার, যা একজন ব্যক্তি পুরোপুরিভাবে যিহোবাকে দিতেন। তাই, যিপ্তহ এটা বুঝিয়েছিলেন, যে-ব্যক্তিকে তিনি যিহোবার উদ্দেশে দান করবেন, সে তার বাকি জীবন আবাসে সেবা করবে। যিহোবা যিপ্তহের কথা শুনেছিলেন এবং তাকে বিজয়লাভ করতে সাহায্য করেছিলেন। (বিচার. ১১:৩২, ৩৩) কিন্তু যিপ্তহ কাকে যিহোবার উদ্দেশে দান করবেন?
১৩, ১৪. বিচারকর্ত্তৃগণের বিবরণ ১১:৩৫ পদে উল্লেখিত যিপ্তহের কথা তার বিশ্বাস সম্বন্ধে কী প্রকাশ করে?
১৩ এই প্রবন্ধের শুরুতে বলা দৃশ্যটা নিয়ে একটু চিন্তা করুন। যিপ্তহ যখন যুদ্ধ শেষ করে ফিরে এসেছিলেন, তখন যে-ব্যক্তি প্রথমে তার সঙ্গে দেখা করার জন্য বের হয়ে এসেছিল, সে ছিল তার প্রিয় মেয়ে, তার একমাত্র সন্তান! যিপ্তহ কি বিশ্বস্ততার সঙ্গে তার প্রতিজ্ঞা রক্ষা করবেন? তিনি কি নিজের মেয়েকে বাকি জীবন আবাসে সেবা করার জন্য যিহোবার উদ্দেশে দান করবেন?
১৪ ঈশ্বরের ব্যবস্থার পিছনে থাকা নীতিগুলো যিপ্তহকে আবারও সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করেছিল। তিনি হয়তো যাত্রাপুস্তক ২৩:১৯ পদ স্মরণ করেছিলেন, যেখানে বলা ছিল, যিহোবার উদ্দেশে তাঁর লোকেদের তাদের অগ্রিমাংশ বা সবচেয়ে ভালো অংশ দান করতে ইচ্ছুক হতে হবে। ব্যবস্থায় এটাও বলা ছিল, কোনো ব্যক্তি যদি যিহোবার কাছে প্রতিজ্ঞা করে, তা হলে “সে আপন বাক্য ব্যর্থ না করুক, আপন মুখ হইতে নির্গত সমস্ত বাক্যানুসারে কার্য্য করুক।” (গণনা. ৩০:২) যিপ্তহ যদিও জানতেন, তার ও তার মেয়ের জন্য সেই প্রতিজ্ঞা রক্ষা করার অর্থ কী, কিন্তু তারপরও তিনি এটা বুঝতে পেরেছিলেন, বিশ্বস্ত হান্নার মতো তাকে নিজের প্রতিজ্ঞা রক্ষা করতে হবে, যিনি সম্ভবত যিপ্তহের সময়েই বেঁচে ছিলেন। যেহেতু তার মেয়ে আবাসে সেবা করবে, তাই সে কখনো বিয়ে করতে পারবে না ও তার কখনো সন্তান হবে না। আর এই কারণে যিপ্তহের বংশ রক্ষা করার জন্য ও ভূমির অধিকার লাভ করার জন্য কেউ থাকবে না। (বিচার. ১১:৩৪) তা সত্ত্বেও, যিপ্তহ বিশ্বস্ততার সঙ্গে বলেছিলেন: “আমি সদাপ্রভুর কাছে মুখ খুলিয়াছি, আর অন্যথা করিতে পারিব না।” (বিচার. ১১:৩৫) যিহোবা যিপ্তহের অসাধারণ বলি গ্রহণ করেছিলেন ও তাকে আশীর্বাদ করেছিলেন। যিপ্তহের জায়গায় থাকলে আপনিও কি তার মতো বিশ্বস্ত থাকতেন?
১৫. আমাদের মধ্যে অনেকে কোন প্রতিজ্ঞা করেছে আর কীভাবে আমরা নিজেদের বিশ্বস্ত বলে প্রমাণ করতে পারি?
১৫ আমরা যখন যিহোবার উদ্দেশে নিজেদের জীবন উৎসর্গ করেছিলাম, তখন আমরা এই প্রতিজ্ঞা করেছিলাম, যা-ই ঘটুক না কেন, আমরা তাঁর ইচ্ছা পালন করব। আমরা জানতাম, এই প্রতিজ্ঞা রক্ষা করা সবসময় সহজ হবে না। কিন্তু, আমাদের যদি এমন কিছু করতে বলা হয়, যা আমরা পছন্দ করি না, তা হলে আমরা কেমন প্রতিক্রিয়া দেখাই? আমাদের পছন্দ না হলেও আমরা যদি তা করি এবং ঈশ্বরের বাধ্য হতে ইচ্ছুক থাকি, তা হলে আমরা এটা প্রমাণ করি, আমরা বিশ্বস্ততার সঙ্গে প্রতিজ্ঞা রক্ষা করছি। আমাদের ত্যাগস্বীকার কষ্টদায়ক হতে পারে, কিন্তু সেই কষ্টের তুলনায় যিহোবার আশীর্বাদ সবসময়ই প্রচুর। (মালাখি ৩:১০) কিন্তু, যিপ্তহের মেয়ের বিষয়ে কী বলা যায়? তার বাবার প্রতিজ্ঞা রক্ষা করার বিষয়ে সে কেমন প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিল?
১৬. যিপ্তহের মেয়ে তার বাবার করা প্রতিজ্ঞা শুনে কীভাবে প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিল? (শুরুতে দেওয়া ছবিটা দেখুন।)
১৬ যিপ্তহের প্রতিজ্ঞা হান্নার প্রতিজ্ঞার চেয়ে ভিন্ন ছিল। হান্না প্রতিজ্ঞা করেছিলেন, তিনি নিজের ছেলে শমূয়েলকে একজন নাসরীয় হিসেবে আবাসে সেবা করার জন্য দান করবেন। (১ শমূ. ১:১১) একজন নাসরীয় বিয়ে করে পরিবার গড়ে তুলতে পারতেন। কিন্তু, যিপ্তহের মেয়েকে সম্পূর্ণ “হোমবলিরূপে” উৎসর্গ করা হয়েছিল আর তাই সে একজন স্ত্রী ও মা হওয়ার আনন্দ লাভ করতে পারত না। (বিচার. ১১:৩৭-৪০) একটু চিন্তা করুন! সম্ভবত দেশের সবচেয়ে যোগ্য ব্যক্তির সঙ্গে তার বিয়ে হতে পারত কারণ তার বাবা ইস্রায়েলের নেতা ছিলেন। কিন্তু আবাসে, তাকে সামান্য একজন দাসী হিসেবে সেবা করতে হবে। এই যুবতী কীভাবে প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিল? “তোমার মুখ দিয়া যে কথা বাহির হইয়াছে, তদনুসারে আমার প্রতি কর,” এই কথাগুলো বলার মাধ্যমে সে দেখিয়েছিল, যিহোবার সেবা তার জীবনে প্রথম বিষয়। (বিচার. ১১:৩৬) যিহোবার সেবা করার জন্য, সে স্বামী-সন্তান লাভ করার স্বাভাবিক আকাঙ্ক্ষাকে ত্যাগ করেছিল। আমরা কীভাবে তার আত্মত্যাগমূলক মনোভাব অনুকরণ করতে পারি?
১৭. (ক) কীভাবে আমরা যিপ্তহ ও তার মেয়ের বিশ্বাস অনুকরণ করতে পারি? (খ) ইব্রীয় ৬:১০-১২ পদের কথাগুলো কীভাবে আপনাকে আত্মত্যাগমূলক মনোভাব দেখাতে উৎসাহিত করে?
১৭ হাজার হাজার খ্রিস্টান নারী-পুরুষ—অন্ততপক্ষে এই বর্তমান সময়ে—বিয়ে করার অথবা সন্তান নেওয়ার আকাঙ্ক্ষা ত্যাগ করার ব্যাপারে ইচ্ছুক মনোভাব দেখিয়ে থাকে। কেন? কারণ তারা যিহোবার সেবায় আরও বেশি মনোযোগ দিতে চায়। এ ছাড়া, আমাদের মধ্যে অনেক বয়স্ক ব্যক্তি তাদের সন্তান অথবা নাতি-নাতনির সঙ্গে সময় কাটানোর আকাঙ্ক্ষা ত্যাগ করে থাকে। এর পরিবর্তে, তারা তাদের সময় ও শক্তি যিহোবার উদ্দেশে দান করে। তাদের মধ্যে কেউ কেউ বিভিন্ন নির্মাণ প্রকল্পে কাজ করেন অথবা রাজ্যের সুসমাচার প্রচারকদের জন্য স্কুল-এ যোগ দেওয়ার পর এমন মণ্ডলীতে চলে যান, যেখানে আরও প্রকাশকের প্রয়োজন রয়েছে। অন্যেরা এমন পরিকল্পনা করেন, যাতে স্মরণার্থের মরসুমে যিহোবার উদ্দেশে তাদের সেবা বৃদ্ধি করতে পারেন। এই বিশ্বস্ত ব্যক্তিরা সকলে প্রেম দেখিয়ে যে-সমস্ত ত্যাগস্বীকার করেন, তা যিহোবা কখনো ভুলে যাবেন না। (পড়ুন, ইব্রীয় ৬:১০-১২.) আপনার বিষয়ে কী বলা যায়? আপনি কি আরও পূর্ণরূপে যিহোবার সেবা করার জন্য ত্যাগস্বীকার করতে পারেন?
আমরা কী শিখেছি?
১৮, ১৯. যিপ্তহ ও তার মেয়ের বিষয়ে বাইবেলের বিবরণ থেকে আমরা কী শিখেছি আর আমরা কীভাবে তাদের অনুকরণ করতে পারি?
১৮ কী যিপ্তহকে নিজের বিভিন্ন কঠিন পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করেছিল? নিজের জীবনের বিভিন্ন বাছাইয়ের ক্ষেত্রে তিনি যিহোবার নির্দেশনা অনুসরণ করেছিলেন। তিনি তার চারপাশের লোকেদের দ্বারা প্রভাবিত হওয়া বেছে নেননি। এমনকী অন্যেরা যখন তাকে হতাশ করেছিল, তখনও তিনি বিশ্বস্ত ছিলেন। যিপ্তহ ও তার মেয়ে ত্যাগস্বীকার করার ব্যাপারে ইচ্ছুক মনোভাবে দেখিয়েছিলেন আর তাই যিহোবা তাদের আশীর্বাদ করেছিলেন এবং সত্য উপাসনাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য তাদের দু-জনকে ব্যবহার করেছিলেন। এমনকী অন্যেরা যখন সঠিক বিষয় করা বন্ধ করে দিয়েছিল, তখনও তিনি ও তার মেয়ে যিহোবার প্রতি বিশ্বস্ত ছিলেন।
১৯ বাইবেল বলে: “যাহারা বিশ্বাস ও দীর্ঘসহিষ্ণুতা দ্বারা প্রতিজ্ঞা-সমূহের দায়াধিকারী, তাহাদের অনুকারী হও।” (ইব্রীয় ৬:১২) যিপ্তহ ও তার মেয়ে এক মৌলিক সত্যের সঙ্গে মিল রেখে জীবনযাপন করেছিলেন আর তা হল: বিশ্বস্ত থাকার মাধ্যমে ঈশ্বরের অনুমোদন লাভ করা যায়। আসুন, আমরা সেভাবে জীবনযাপন করার মাধ্যমে তাদের অনুকরণ করি।