যিপ্তহ যিহোবার কাছে তার মানত পূর্ণ করেন
একজন বিজয়ী যোদ্ধা তার জাতিকে নির্যাতন থেকে মুক্ত করার পর বাড়িতে ফিরে আসেন। তার সঙ্গে দেখা করার জন্য তার মেয়ে বিজয়ানন্দে নাচতে নাচতে ও একটা তবল বাজাতে বাজাতে দৌড়ে আসেন। মেয়েকে দেখে তিনি আনন্দ করার পরিবর্তে তার নিজের বস্ত্র ছিঁড়ে ফেলেন। কেন? তিনি নিরাপদে ফিরে আসায় তার মেয়ের যে-আনন্দ, তাতে কি তিনি অংশী হতে চান না? তিনি কোন যুদ্ধে জয়লাভ করেছেন? তিনি কে?
এই ব্যক্তি হলেন যিপ্তহ, প্রাচীন ইস্রায়েলের বিচারকদের মধ্যে একজন। কিন্তু, অন্যান্য প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার এবং আমাদের জন্য এই বিবরণের অর্থ কী, তা বোঝার জন্য এই অস্বাভাবিক পুনর্মিলনের পটভূমি আমাদের বিবেচনা করতে হবে।
ইস্রায়েলে এক সংকট
যিপ্তহ এক সংকটময় সময়ে বাস করেন। তার সহইস্রায়েলীয়রা বিশুদ্ধ উপাসনা পরিত্যাগ করেছে এবং তারা সীদোন, মোয়াব, অম্মোন ও পলেষ্টিয়ার দেব-দেবীর উপাসনা করছে। তাই, যিহোবা তাঁর লোকেদের অম্মোনীয় ও পলেষ্টীয়দের কাছে সমর্পণ করেছেন, যারা ১৮ বছর ধরে তাদের ওপর নির্যাতন করে। বিশেষভাবে যর্দন নদীর পূর্বপারে গিলিয়দের অধিবাসীরা কষ্ট ভোগ করে।a অবশেষে, ইস্রায়েলীয়রা তাদের চেতনা ফিরে পায়, অনুতপ্ত হয়ে যিহোবার সাহায্যের অন্বেষণ করে, তাঁকে সেবা করতে শুরু করে এবং তাদের মধ্যে থেকে পরজাতীয় দেব-দেবীকে নির্মূল করে দেয়।—বিচারকর্ত্তৃগণের বিবরণ ১০:৬-১৬.
অম্মোনীয়রা গিলিয়দে শিবির স্থাপন করে আর ইস্রায়েলীয়রা তাদের সঙ্গে দেখা করার জন্য একত্রিত হয়। কিন্তু, ইস্রায়েলীয়দের কোনো অধ্যক্ষ নেই। (বিচারকর্ত্তৃগণের বিবরণ ১০:১৭, ১৮) ইতিমধ্যে, যিপ্তহ নিজেই কিছু সমস্যার মধ্যে রয়েছেন। তার লোভী সৎ ভাইয়েরা তার উত্তরাধিকার চুরি করার জন্য তাকে তাড়িয়ে দিয়েছে। তাই, যিপ্তহ গিলিয়দের পূর্বদিকে ও ইস্রায়েলের শত্রুদের কাছে অরক্ষিত এক অঞ্চল টোবে চলে যান। “কতকগুলিন অসারচিত্ত লোক,” যারা সম্ভবত নির্যাতনকারীদের কারণে তাদের কাজ হারিয়েছিল অথবা তাদের দাসত্বের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছিল, তারা যিপ্তহের কাছে একত্র হয়। তারা ‘তাঁহার সঙ্গে বাহিরে যায়,’ হয়তো এর অর্থ হচ্ছে, যিপ্তহ যখন শত্রুভাবাপন্ন প্রতিবেশীদের বিরুদ্ধে আক্রমণ করেন, তখন তারা তার সঙ্গী হয়। সম্ভবত একজন যোদ্ধা হিসেবে যিপ্তহের অসাধারণ দক্ষতার কারণে শাস্ত্র তাকে “বলবান বীর” বলে। (বিচারকর্ত্তৃগণের বিবরণ ১১:১-৩) অতএব, কে অম্মোনীয়দের বিরুদ্ধে ইস্রায়েলীয়দের নেতৃত্ব দেবেন?
“আইস, তুমি আমাদের অধ্যক্ষ হও”
গিলিয়দের প্রাচীনবর্গ যিপ্তহকে অনুরোধ করে: “আইস, তুমি আমাদের অধ্যক্ষ হও।” তারা যদি আশা করে যে, তিনি সঙ্গে সঙ্গেই তার নিজের দেশে ফিরে যাবেন, তা হলে তারা ভুল করছে। “তোমরাই কি আমাকে ঘৃণা করিয়া আমার পিতৃকুল হইতে আমাকে তাড়াইয়া দেও নাই?” তিনি উত্তরে বলেন। “এখন বিপদ্গ্রস্ত হইয়াছ বলিয়া আমার কাছে কেন আসিলে?” এটা কতই না অন্যায্য যে, তারা প্রথমে তাকে প্রত্যাখ্যান করেছিল আর পরে তার কাছেই সাহায্যের জন্য এসেছিল!—বিচারকর্ত্তৃগণের বিবরণ ১১:৪-৮.
শুধুমাত্র এক শর্তে যিপ্তহ গিলিয়দের নেতৃত্ব নেবেন। ‘সদাপ্রভু যদি আমার হস্তে অম্মোনকে সমর্পণ করেন,’ তিনি ঘোষণা করেন, ‘তবে আমিই তোমাদের প্রধান হইব।’ বিজয় ঈশ্বরের সমর্থনের প্রমাণ দেবে কিন্তু যিপ্তহ এই বিষয়টাও নিশ্চিত করতে চান, যেন সংকট দূর হয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ঐশিক শাসনকেও পরিত্যাগ করা না হয়।—বিচারকর্ত্তৃগণের বিবরণ ১১:৮-১১.
অম্মোনের সঙ্গে ব্যবহার
যিপ্তহ অম্মোনীয়দের সঙ্গে আলাপআলোচনা করার চেষ্টা করেন। তিনি অম্মোনীয়দের আক্রমণের কারণ উদ্ঘাটনের জন্য তাদের রাজার কাছে দূত পাঠান। এর উত্তরে একটা অভিযোগ করা হয়: ইস্রায়েলীয়রা যখন মিসর থেকে বের হয়ে এসেছিল, তখন তারা অম্মোনীয়দের এলাকা দখল করেছিল আর এখন তা ফিরিয়ে দিতে হবে।—বিচারকর্ত্তৃগণের বিবরণ ১১:১২, ১৩.
ইস্রায়েলের ইতিহাস সম্বন্ধে তার সামগ্রিক জ্ঞান থেকে যিপ্তহ দক্ষতার সঙ্গে অম্মোনীয়দের দাবিগুলো খণ্ডন করেন। তিনি তাদের বলেন যে, ইস্রায়েলীয়রা যখন মিসর ছেড়ে এসেছিল, তখন তারা অম্মোন, মোয়াব অথবা ইদোমকে উত্যক্ত করেনি; কিংবা ইস্রায়েলের যাত্রার সময়ে সেই বিতর্কিত ভূমি অম্মোনের অধিকারেও ছিল না। সেই সময়ে সেটা ইমোরীয়দের অধিকারে ছিল কিন্তু ঈশ্বর তাদের রাজা সীদোনকে ইস্রায়েলের হাতে সমর্পণ করেছিলেন। অধিকন্তু, ইস্রায়েলীয়রা প্রায় ৩০০ বছর ধরে সেই জায়গায় বাস করছে। তা হলে, কেন অম্মোনীয়রা এখন সেটা দাবি করছে?—বিচারকর্ত্তৃগণের বিবরণ ১১:১৪-২২, ২৬.
এ ছাড়া, যিপ্তহ ইস্রায়েলীয়দের দুর্দশার মূল কারণের ওপর মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করেন: সত্য ঈশ্বর কে? যিহোবা নাকি ইস্রায়েল যে-ভূমি দখল করেছিল, সেই জায়গার দেব-দেবীরা? কমোশ দেবের যদি আদৌ কোনো ক্ষমতা থেকে থাকে, তা হলে সে কি তার লোকেদের ভূমি রক্ষা করার জন্য তা ব্যবহার করবে না? এটা অম্মোনীয়দের সমর্থিত মিথ্যা ধর্ম ও সত্য উপাসনার মধ্যে প্রতিযোগিতা। তাই, যিপ্তহ যুক্তিসংগতভাবেই এই উপসংহারে পৌঁছান: “বিচারকর্ত্তা সদাপ্রভু অদ্য ইস্রায়েল-সন্তানগণের ও অম্মোন-সন্তানগণের মধ্যে বিচার করুন।”—বিচারকর্ত্তৃগণের বিবরণ ১১:২৩-২৭.
অম্মোনের রাজা যিপ্তহের আপোশহীন বার্তার প্রতি কান দিলেন না। ‘পরে সদাপ্রভুর আত্মা যিপ্তহের উপরে আসিলেন, আর তিনি গিলিয়দ ও মনঃশি প্রদেশ দিয়া গমন করেন,’ সম্ভবত যুদ্ধের জন্য বলিষ্ঠ পুরুষদের ডেকে পাঠান।—বিচারকর্ত্তৃগণের বিবরণ ১১:২৮, ২৯.
যিপ্তহের মানত
ঐশিক নির্দেশনার জন্য আকুল আকাঙ্ক্ষা করে যিপ্তহ ঈশ্বরের কাছে এই প্রতিজ্ঞা করেন: “তুমি যদি অম্মোন-সন্তানগণকে নিশ্চয় আমার হস্তে সমর্পণ কর, তবে অম্মোন-সন্তানগণের নিকট হইতে যখন আমি কুশলে ফিরিয়া আসিব, তখন যে কিছু আমার গৃহের কবাট হইতে নির্গত হইয়া আমার সঙ্গে সাক্ষাৎ করিতে আসিবে, তাহা নিশ্চয় সদাপ্রভুরই হইবে, আর আমি তাহা হোমবলিরূপে উৎসর্গ করিব।” এর উত্তরে, ঈশ্বর যিপ্তহকে অম্মোনের ২০টা নগর ‘মহাসংহার’ করতে সাহায্য করার দ্বারা তাকে আশীর্বাদ করেন আর এর ফলে অম্মোনীয়রা ইস্রায়েলের সেনাবাহিনীর কাছে নতি স্বীকার করে।—বিচারকর্ত্তৃগণের বিবরণ ১১:৩০-৩৩.
যিপ্তহ যখন যুদ্ধ থেকে ফিরে আসেন, তখন যার সঙ্গে তার দেখা হয়, তিনি তার প্রিয় মেয়ে, একমাত্র সন্তান! “তাহাকে দেখিবামাত্র,” বিবরণ বলে, “তিনি বস্ত্র ছিঁড়িয়া কহিলেন, হায় হায়, আমার বৎসে, তুমি আমাকে বড় ব্যাকুল করিলে; আমার কষ্টদায়কদের মধ্যে তুমি এক জন হইলে; কিন্তু আমি সদাপ্রভুর কাছে মুখ খুলিয়াছি, আর অন্যথা করিতে পারিব না।”—বিচারকর্ত্তৃগণের বিবরণ ১১:৩৪, ৩৫.
যিপ্তহ কি সত্যি সত্যিই তার মেয়েকে বলি দেবেন? না। সেই ধরনের চিন্তা তার মনে থাকতেই পারে না। যিহোবা আক্ষরিক মানব বলিকে তীব্রভাবে ঘৃণা করেন, যা হচ্ছে কনানীয়দের মন্দ অভ্যাসগুলোর মধ্যে একটা। (লেবীয় পুস্তক ১৮:২১; দ্বিতীয় বিবরণ ১২:৩১) যিপ্তহ যখন এই মানত করেছিলেন, তখন তার ওপর ঈশ্বরের আত্মা কেবল কাজই করেনি কিন্তু যিহোবা তার প্রচেষ্টাগুলোতেও আশীর্বাদ করেছিলেন। শাস্ত্র যিপ্তহের বিশ্বাস এবং ঐশিক উদ্দেশ্যের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত বিষয়ে তিনি যে-ভূমিকা পালন করেছিলেন, সেইজন্য তার প্রশংসা করে। (১ শমূয়েল ১২:১১; ইব্রীয় ১১:৩২-৩৪) তাই, মানব বলিদানের—হত্যা করার—কোনো প্রশ্নই আসে না। তা হলে, যিপ্তহ যখন একজন মানুষকে যিহোবার উদ্দেশে উৎসর্গ করার মানত করেছিলেন, তখন তার মনে কী ছিল?
স্পষ্টতই যিপ্তহ বুঝিয়েছিলেন যে, যার সঙ্গে তার দেখা হবে, তাকে তিনি একান্তভাবে যিহোবার সেবায় নিয়োজিত করবেন। মোশির ব্যবস্থায় যিহোবার উদ্দেশে একজন ব্যক্তিকে মানত করার সুযোগ ছিল। উদাহরণস্বরূপ, যে-নারীরা ধর্মধামে সেবা করত, তারা সম্ভবত জল তুলত। (যাত্রাপুস্তক ৩৮:৮; ১ শমূয়েল ২:২২) এই ধরনের কাজ সম্বন্ধে অথবা সেটা সাধারণত স্থায়ী ছিল কি না, সেই বিষয়ে খুব কমই জানা যায়। স্পষ্টতই মানত করার সময়ে যিপ্তহের মনে এই ধরনের বিশেষ ভক্তি ছিল আর তার প্রতিজ্ঞা স্থায়ী সেবাকে ইঙ্গিত করে বলে মনে হয়েছিল।
যিপ্তহের মেয়ে ও পরে বালক শমূয়েল উভয়েই তাদের ঈশ্বরভয়শীল বাবামার মানত পূর্ণ করায় সহযোগিতা করেছিল। (১ শমূয়েল ১:১১) ঈশ্বরের একজন অনুগত উপাসক হিসেবে, যিপ্তহের মেয়েও তার বাবার মতোই দৃঢ়প্রত্যয়ী ছিলেন যে, তার মানত পূর্ণ করা উচিত। এটা অনেক বড় ত্যাগস্বীকার ছিল কারণ এর অর্থ ছিল তিনি কখনো বিয়ে করতে পারবেন না। তিনি তার কুমারীত্বের বিষয়ে বিলাপ করেছিলেন কারণ পরিবারের নাম ও উত্তরাধিকার সংরক্ষণের উদ্দেশ্যে প্রত্যেক ইস্রায়েলীয়ই সন্তান লাভ করার আকাঙ্ক্ষা করত। যিপ্তহের জন্য মানত পূর্ণ করার অর্থ ছিল তার একমাত্র সন্তানের সাহচর্য হারানো।—বিচারকর্ত্তৃগণের বিবরণ ১১:৩৬-৩৯.
এই বিশ্বস্ত যুবতীর জীবন অর্থহীন হয়নি। তার জন্য যিহোবার গৃহে পূর্ণসময়ের সেবা করা ছিল ঈশ্বরকে সম্মান করার এক চমৎকার, পরিতৃপ্তিদায়ক ও প্রশংসাযোগ্য উপায়। তাই, “বৎসর বৎসর গিলিয়দীয় যিপ্তহের কন্যার যশঃকীর্ত্তন করিতে ইস্রায়েলীয় কন্যাগণ . . . গমন করে।” (বিচারকর্ত্তৃগণের বিবরণ ১১:৪০) আর নিশ্চিতভাবেই তিনি যিহোবার প্রতি তার সেবায় আনন্দ লাভ করেছিলেন।
আজকে ঈশ্বরের লোকেদের মধ্যে অনেকেই অগ্রগামী, মিশনারি, ভ্রমণ অধ্যক্ষ অথবা বেথেল পরিবারের সদস্য হিসেবে এক পূর্ণসময়ের সেবা করার জীবন বেছে নেয়। এর অর্থ হতে পারে, যখন ইচ্ছা তখনই পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দেখা করতে না পারা। তা সত্ত্বেও, জড়িত সকলেই যিহোবার প্রতি নিবেদিত এই ধরনের পবিত্র সেবায় আনন্দ লাভ করতে পারে।—গীতসংহিতা ১১০:৩; ইব্রীয় ১৩:১৫, ১৬.
ঐশিক নির্দেশনার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ
যিপ্তহের সময়ের দিকে তাকালে আমরা লক্ষ করি যে, অনেক ইস্রায়েলীয় যিহোবার নির্দেশনা প্রত্যাখ্যান করে। যিপ্তহের ওপর ঐশিক আশীর্বাদের প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও, ইফ্রয়িমের লোকেরা তার সঙ্গে বিবাদ করে। তারা জানতে চায় যে, কেন তিনি তাদেরকে যুদ্ধ করার জন্য আহ্বান করেননি। এমনকি তারা ‘তাহাকে শুদ্ধ’ তার বাড়ি পুড়িয়ে দিতে চায়!—বিচারকর্ত্তৃগণের বিবরণ ১২:১.
যিপ্তহ বলেন যে, তিনি ইফ্রয়িমের লোকেদের আহ্বান করেছেন কিন্তু তারা সাড়া দেয়নি। যা-ই হোক না কেন, ঈশ্বর সেই যুদ্ধে জয়ী হয়েছিলেন। যিপ্তহকে অধ্যক্ষ হিসেবে মনোনীত করার সময় গিলিয়দীয়রা তাদের সঙ্গে আলোচনা করেনি বলে কি তারা এখন বিরক্ত? আসলে, ইফ্রয়িমের বিরোধিতা যিহোবার বিরুদ্ধে বিদ্রোহকেই নির্দেশ করে আর তাই তাদের সঙ্গে যুদ্ধ করা ছাড়া অন্য কোনো বিকল্প নেই। আসন্ন যুদ্ধে ইফ্রয়িমের লোকেরা পরাজিত হয়। পরীক্ষা করার জন্য “শিব্বোলেৎ” শব্দটি সঠিকভাবে উচ্চারণ করতে অসমর্থ হওয়ায় পালিয়ে যাওয়া ইফ্রয়িমের লোকেদের সহজেই শনাক্ত করা যায়। সেই যুদ্ধে ইফ্রয়িমের সর্বমোট ৪২,০০০ জন লোক হত হয়।—বিচারকর্ত্তৃগণের বিবরণ ১২:২-৬.
ইস্রায়েলের ইতিহাসে কতই না দুঃখজনক এক সময়! বিচারক অৎনিয়েল, এহূদ, বারক ও গিদিয়োনের দ্বারা যুদ্ধে জয়লাভ শান্তি নিয়ে এসেছিল। কিন্তু, এইবার শান্তির বিষয়ে উল্লেখ করা হয় না। বিবরণ কেবল এভাবে উপসংহার করে: “যিপ্তহ ছয় বৎসর পর্য্যন্ত ইস্রায়েলের বিচার করিলেন। পরে [তিনি] মরিয়া গেলেন, এবং গিলিয়দের এক নগরে তাঁহার কবর হইল।”—বিচারকর্ত্তৃগণের বিবরণ ৩:১১, ৩০; ৫:৩১; ৮:২৮; ১২:৭.
এইসমস্ত বিষয় থেকে আমরা কী শিখতে পারি? যদিও যিপ্তহের জীবন কঠোর সংগ্রামে পরিপূর্ণ ছিল কিন্তু তিনি ঈশ্বরের প্রতি বিশ্বস্ত ছিলেন। এই সাহসী পুরুষ যখন গিলিয়দের প্রাচীনবর্গের সঙ্গে, অম্মোনীয়দের সঙ্গে, তার মেয়ের সঙ্গে, ইফ্রয়িমের লোকেদের সঙ্গে কথা বলেছিলেন এবং অবশ্যই যখন তার মানত করেছিলেন, তখন যিহোবা সম্বন্ধে উল্লেখ করেছিলেন। (বিচারকর্ত্তৃগণের বিবরণ ১১:৯, ২৩, ২৭, ৩০, ৩১, ৩৫; ১২:৩) ঈশ্বর যিপ্তহকে তার ভক্তির কারণে আশীর্বাদ করেছিলেন, তাকে ও তার মেয়েকে সত্য উপাসনাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য ব্যবহার করেছিলেন। এমন এক সময় যখন অন্যেরা ঐশিক মানগুলোকে পরিত্যাগ করেছিল, তখন যিপ্তহ সেগুলো মেনে চলেছিলেন। যিপ্তহের মতো আপনিও কি সবসময় যিহোবার বাধ্য থাকবেন?
[পাদটীকা]
a অম্মোনীয়রা চরম নিষ্ঠুর প্রকৃতির ছিল। এমনকি ৬০ বছরেরও কম সময়ের মধ্যে, তারা গিলিয়দীয় যে-নগরে আক্রমণ করেছিল, সেখানকার প্রত্যেক অধিবাসীর ডান চোখ উৎপাটন করার হুমকি দিয়েছিল। ভাববাদী আমোষ এমন এক সময় সম্বন্ধে বলেছিলেন, যখন তারা গিলিয়দের গর্ভবতী স্ত্রীদের উদর বিদীর্ণ করেছিল।—১ শমূয়েল ১১:২; আমোষ ১:১৩.