অধ্যয়ন প্রবন্ধ ২৫
চাপের সঙ্গে মোকাবিলা করার সময়ে যিহোবার উপর নির্ভর করুন
“মনুষ্যের মনোব্যথা [‘দুশ্চিন্তার ভার,’ বাংলা কমন ল্যাঙ্গুয়েজ ভারশন] মনকে নত করে।”—হিতো. ১২:২৫.
গান সংখ্যা ৫১ আমরা যিহোবাতে আসক্ত
সারাংশa
১. কেন আমাদের অবশ্যই যিশুর দেওয়া সতর্কবাণীতে মনোযোগ দিতে হবে?
শেষ কাল সম্বন্ধে বলা তাঁর ভবিষ্যদ্বাণীতে যিশু বলেছিলেন: “আপনাদের বিষয়ে সাবধান থাকিও, পাছে . . . জীবিকার চিন্তায় তোমাদের হৃদয় ভারগ্রস্ত হয়।” (লূক ২১:৩৪) এই সতর্কবাণীতে আমাদের মনোযোগ দিতে হবে। কেন? কারণ বর্তমানে আমাদেরও অন্যদের মতোই একই ধরনের চাপপূর্ণ সমস্যার সঙ্গে মোকাবিলা করতে হয়।
২. আমাদের ভাই-বোনদের কোন ধরনের চাপপূর্ণ সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়?
২ কখনো কখনো আমাদের একসঙ্গে একাধিক চাপপূর্ণ সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়। পরবর্তী উদাহরণগুলো বিবেচনা করুন। জনb নামে একজন সাক্ষি গুরুতর স্নায়ুর রোগে ভুগছেন আর তিনি সেইসময়ে একেবারে ভেঙে পড়েন, যখন তার স্ত্রী তাকে ছেড়ে চলে যান। তারা একসঙ্গে ১৯ বছর ধরে বিবাহিত জীবন কাটিয়ে ছিলেন। তারপর, তার দুই মেয়ে যিহোবার সেবা করা বন্ধ করে দেন। বব ও লিন্ডা নামে এক দম্পতি আবার ভিন্ন সমস্যার মুখোমুখি হন। তারা দু-জনেই তাদের চাকরি হারান এবং তাদের বাড়িও ছাড়তে হয়। এই সমস্যাগুলোর পাশাপাশি বোন লিন্ডার এক মারাত্মক হৃদ্রোগ ধরা পড়ে এবং অন্য একটা রোগের কারণে তার রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতা কমতে শুরু করে।
৩. ফিলিপীয় ৪:৬, ৭ পদ অনুযায়ী আমরা কোন বিষয়ে নিশ্চিত থাকতে পারি?
৩ আমরা নিশ্চিত থাকতে পারি, আমাদের সৃষ্টিকর্তা ও প্রেমময় পিতা যিহোবা এটা বোঝেন যে, আমরা যখন চাপের মধ্যে থাকি, তখন আমরা কেমন অনুভব করি। আর তিনি আমাদের চাপের সঙ্গে মোকাবিলা করার জন্য সাহায্য করতে চান। (পড়ুন, ফিলিপীয় ৪:৬, ৭.) ঈশ্বরের বাক্যে এইরকম অনেক উদাহরণ রয়েছে, যেগুলো ব্যাখ্যা করে যে, তাঁর দাসেরা কোন কোন প্রতিদ্বন্দ্বিতা সহ্য করেছে। এ ছাড়া, এটি জানায়, কীভাবে যিহোবা তাদের সেই চাপপূর্ণ পরিস্থিতির সঙ্গে মোকাবিলা করতে সাহায্য করেছেন। আসুন, আমরা কয়েকটা উদাহরণ নিয়ে বিবেচনা করি।
এলিয়—“আমাদের ন্যায় সুখদুঃখভোগী মনুষ্য ছিলেন”
৪. এলিয় কোন কোন প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখোমুখি হয়েছিলেন এবং তিনি যিহোবা সম্বন্ধে কেমন অনুভব করেছিলেন?
৪ এলিয় কঠিন সময়ে যিহোবার সেবা করেছিলেন এবং বিভিন্ন গুরুতর প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখোমুখি হয়েছিলেন। রাজা আহাব ইস্রায়েলের ইতিহাসের অবিশ্বস্ত রাজাদের মধ্যে একজন ছিলেন। তিনি ঈষেবল নামে একজন দুষ্ট মহিলাকে বিয়ে করেছিলেন, যিনি বাল দেবের উপাসনা করতেন। রাজা আহাব ও রানি ঈষেবল বাল দেবের উপাসনাকে সারা দেশে ছড়িয়ে দিয়েছিলেন এবং যিহোবার অনেক ভাববাদীকে হত্যা করেছিলেন। এলিয় কোনোরকমে জীবন বাঁচিয়ে পালাতে পেরেছিলেন। এলিয় যিহোবার উপর নির্ভর করার মাধ্যমে চরম দুর্ভিক্ষের হাত থেকেও রক্ষা পেয়েছিলেন। (১ রাজা. ১৭:২-৪, ১৪-১৬) এ ছাড়া, তিনি সেইসময়েও যিহোবার উপর নির্ভর করেছিলেন, যখন তিনি বাল দেবের ভাববাদী ও উপাসকদের বিরোধিতা করেছিলেন। তিনি ইস্রায়েলীয়দের যিহোবার সেবা করার জন্য জোরালো পরামর্শ দিয়েছিলেন। (১ রাজা. ১৮:২১-২৪, ৩৬-৩৮) এলিয়ের জীবনে এইরকম অনেক অভিজ্ঞতা হয়েছিল, যেগুলো দেখায় যে, বিভিন্ন চাপপূর্ণ পরিস্থিতিতে যিহোবা তাকে সাহায্য করেছিলেন।
৫-৬. প্রথম রাজাবলি ১৯:১-৪ পদ অনুযায়ী এলিয় কেমন অনুভব করেছিলেন এবং কীভাবে যিহোবা এলিয়কে দেখিয়েছিলেন যে, তিনি তাকে ভালোবাসেন?
৫ প্রথম রাজাবলি ১৯:১-৪ পদ পড়ুন। তবে, রানি ঈষেবল যখন এলিয়কে হত্যা করার হুমকি দিয়েছিলেন, তখন এলিয় ভয় পেয়ে গিয়েছিলেন। তাই, তিনি বেরশেবাতে পালিয়ে গিয়েছিলেন। তিনি এতটাই নিরুৎসাহিত হয়ে গিয়েছিলেন যে, তিনি ‘আপনার মৃত্যু প্রার্থনা করিয়াছিলেন।’ কেন তিনি এইরকম অনুভব করেছিলেন? এলিয় একজন অসিদ্ধ ব্যক্তি ছিলেন, “আমাদের ন্যায় সুখদুঃখভোগী মনুষ্য ছিলেন।” (যাকোব ৫:১৭) খুব সম্ভবত, তিনি চাপ ও চরম ক্লান্তির কারণে ভারগ্রস্ত হয়ে পড়েছিলেন। মনে হয়, এলিয় ভেবেছিলেন যে, সত্য উপাসনাকে তুলে ধরার বিষয়ে তার প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়ে গিয়েছে, ইস্রায়েলে কোনো উন্নতি হয়নি আর একমাত্র তিনিই যিহোবার সেবা করছেন। (১ রাজা. ১৮:৩, ৪, ১৩; ১৯:১০, ১৪) আমরা হয়তো এই বিশ্বস্ত ভাববাদীকে এভাবে প্রতিক্রিয়া দেখাতে দেখে অবাক হয়ে যাই। কিন্তু, যিহোবা এলিয়ের অনুভূতি বুঝেছিলেন।
৬ এলিয় এভাবে নিজের অনুভূতি প্রকাশ করেছিলেন বলে যিহোবা তাকে বকাঝকা করেননি। এর পরিবর্তে, তিনি এলিয়কে শক্তি ফিরে পেতে সাহায্য করেছিলেন। (১ রাজা. ১৯:৫-৭) পরবর্তী সময়ে, যিহোবা তাঁর অসীম শক্তি প্রদর্শন করার মাধ্যমে সদয়ভাবে এলিয়ের চিন্তাভাবনাকে সংশোধন করেছিলেন। তারপর যিহোবা বলেছিলেন, ইস্রায়েলে এখনও ৭,০০০ লোক রয়েছে, যারা বাল দেবের উপাসনা করতে প্রত্যাখ্যান করেছে। (১ রাজা. ১৯:১১-১৮) যিহোবা ব্যাবহারিক উপায়ে এলিয়কে দেখিয়েছিলেন, তিনি তাকে ভালোবাসেন।
যেভাবে যিহোবা আমাদের সাহায্য করবেন
৭. যিহোবা যেভাবে এলিয়কে সাহায্য করেছিলেন, সেখান থেকে আমরা কোন কোন আশ্বাস লাভ করি?
৭ আপনি কি চাপপূর্ণ পরিস্থিতির সঙ্গে মোকাবিলা করছেন? আমাদের জন্য এটা জানা কতই-না সান্ত্বনাদায়ক যে, যিহোবা এলিয়ের অনুভূতি বুঝেছিলেন! এটা আমাদের আশ্বস্ত করে, তিনি আমাদের আবেগগত যন্ত্রণাও বোঝেন। তিনি আমাদের সীমাবদ্ধতা সম্বন্ধে জানেন আর তিনি এমনকী এটাও জানেন, আমরা কী চিন্তা করছি এবং কেমন অনুভব করছি। (গীত. ১০৩:১৪; ১৩৯:৩, ৪) আমরা যদি যিহোবার উপর নির্ভর করার মাধ্যমে এলিয়কে অনুকরণ করি, তা হলে যিহোবা আমাদের সমস্যার সঙ্গে মোকাবিলা করার জন্য সাহায্য করবেন, যেগুলো চাপের সৃষ্টি করে।—গীত. ৫৫:২২.
৮. কীভাবে যিহোবা আপনাকে চাপের সঙ্গে মোকাবিলা করার জন্য সাহায্য করবেন?
৮ চাপের কারণে আপনি হয়তো ভাবতে পারেন, পরিস্থিতি কোনোদিনও পরিবর্তিত হবে না আর এর ফলে আপনি নিরুৎসাহিত হয়ে যেতে পারেন। যদি এমনটা হয়, তা হলে মনে রাখবেন, যিহোবা আপনাকে চাপের সঙ্গে মোকাবিলা করতে সাহায্য করবেন। কীভাবে তিনি আপনাকে সাহায্য করবেন? তিনি আপনাকে আমন্ত্রণ জানান যেন আপনি নিজের উদ্বিগ্নতার বিষয়গুলো তাঁকে জানান। আর তিনি আপনার সাহায্য চেয়ে করা বিনতির উত্তর দেবেন। (গীত. ৫:৩; ১ পিতর ৫:৭) তাই, আপনার সমস্যাগুলো নিয়ে যিহোবার কাছে বার বার প্রার্থনা করুন। তিনি এলিয়ের সঙ্গে যেভাবে কথা বলেছিলেন, সেভাবে আপনার সঙ্গে সরাসরি কথা বলবেন না ঠিকই, কিন্তু তিনি তাঁর বাক্য বাইবেল এবং তাঁর সংগঠনের মাধ্যমে আপনার সঙ্গে কথা বলবেন। বাইবেল থেকে আপনি যে-বিবরণগুলো পড়েন, সেগুলো আপনাকে সান্ত্বনা ও আশা প্রদান করতে পারে। এ ছাড়া, ভাই-বোনেরা আপনাকে উৎসাহিত করতে পারে।—রোমীয় ১৫:৪; ইব্রীয় ১০:২৪, ২৫.
৯. কীভাবে একজন নির্ভরযোগ্য বন্ধু আমাদের সাহায্য করতে পারেন?
৯ যিহোবা এলিয়কে তার কিছু দায়িত্ব ইলীশায়কে অর্পণ করতে বলেছিলেন। এভাবে যিহোবা এলিয়কে একজন ভালো বন্ধু জুগিয়ে দিয়েছিলেন আর কোনো সন্দেহ নেই ইলীশায় তাকে আবেগগত বোঝা বহন করতে সাহায্য করেছিলেন। একইভাবে, আমরা যখন কোনো নির্ভরযোগ্য বন্ধুর কাছে আমাদের অনুভূতির বিষয়ে জানাই, তখন তিনি আমাদের আবেগগত বোঝা বহন করার জন্য সাহায্য করতে পারেন। (২ রাজা. ২:২; হিতো. ১৭:১৭) আপনি যদি মনে করেন, এমন কোনো ব্যক্তি নেই, যার কাছে আপনি নিজের সমস্যা ও অনুভূতির বিষয়ে জানাতে পারেন, তা হলে যিহোবার কাছে সাহায্য চেয়ে প্রার্থনা করুন যেন তিনি আপনাকে এমন একজন পরিপক্ব খ্রিস্টানকে খুঁজে পেতে সাহায্য করেন, যিনি আপনাকে উৎসাহিত করতে পারেন।
১০. কীভাবে এলিয়ের অভিজ্ঞতা আমাদের আশা প্রদান করে এবং যিশাইয় ৪০:২৮, ২৯ পদে লিপিবদ্ধ প্রতিজ্ঞা কীভাবে আমাদের সাহায্য করতে পারে?
১০ যিহোবা এলিয়কে চাপের সঙ্গে মোকাবিলা করতে এবং অনেক বছর ধরে বিশ্বস্তভাবে সেবা করতে সাহায্য করেছিলেন। এলিয়ের অভিজ্ঞতা আমাদের আশা প্রদান করে। আমরা হয়তো চরম চাপের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি আর এর ফলে আমরা শারীরিক ও আবেগগতভাবে একেবারে ক্লান্ত হয়ে গিয়েছি। তারপরও, আমরা যদি যিহোবার উপর নির্ভর করি, তা হলে তিনি আমাদের তাঁর সেবা চালিয়ে যাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় শক্তি দেবেন।—পড়ুন, যিশাইয় ৪০:২৮, ২৯.
হান্না, দায়ূদ ও একজন গীতরচক যিহোবার উপর নির্ভর করেছিলেন
১১-১৩. অতীতের সময়ে কীভাবে ঈশ্বরের তিন জন উপাসক চাপের দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিলেন?
১১ বাইবেলের অন্যান্য ব্যক্তিরাও চরম চাপের মুখোমুখি হয়েছিলেন। উদাহরণ স্বরূপ, হান্না সন্তানের জন্ম দিতে না পারার কারণে লজ্জিত ছিলেন এবং তার স্বামীর দ্বিতীয় স্ত্রীর সন্তান ছিল আর সেই স্ত্রী হান্নাকে অনেক দুঃখ দিয়ে কথা বলতেন। (১ শমূ. ১:২, ৬) হান্না চাপের কারণে এতটাই দুঃখিত হয়ে গিয়েছিলেন যে, তিনি খাওয়া-দাওয়া ছেড়ে কান্নাকাটি করেছিলেন।—১ শমূ. ১:৭, ১০.
১২ এক সময়ে, রাজা দায়ূদ চাপের কারণে ভারগ্রস্ত হয়ে পড়েছিলেন। একটু চিন্তা করুন, তিনি কোন কোন প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখোমুখি হয়েছিলেন। তিনি যে-সমস্ত ভুল করেছিলেন, সেগুলোর কারণে তিনি নিজেকে অনেক দোষী বলে মনে করেছিলেন। (গীত. ৪০:১২) তার প্রিয় ছেলে অবশালোম তার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছিলেন আর পরবর্তী সময়ে মারা গিয়েছিলেন। (২ শমূ. ১৫:১৩, ১৪; ১৮:৩৩) এ ছাড়া, দায়ূদের একজন ঘনিষ্ঠ বন্ধু তার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছিলেন। (২ শমূ. ১৬:২৩–১৭:২; গীত. ৫৫:১২-১৪) দায়ূদের লেখা অনেক গীত তার নিরুৎসাহিতার অনুভূতির পাশাপাশি যিহোবার উপর তার দৃঢ় আস্থা সম্বন্ধে বর্ণনা করে।—গীত. ৩৮:৫-১০; ৯৪:১৭-১৯.
১৩ পরবর্তী সময়ে, একজন গীতরচক দুষ্ট লোকদের জীবনধারা দেখে ঈর্ষা করতে শুরু করেছিলেন। তিনি খুব সম্ভবত লেবীয় বংশীয় আসফের বংশধর ছিলেন এবং তিনি “ঈশ্বরের ধর্ম্মধামে” সেবা করতেন। এই গীতরচক আবেগগত চাপের কারণে কষ্ট পেয়েছিলেন আর এর ফলে তিনি অখুশি ও অসন্তুষ্ট হয়ে গিয়েছিলেন। তিনি এমনকী যিহোবার সেবা করার ফলে আসা আশীর্বাদগুলো নিয়ে সন্দেহ করতে শুরু করেছিলেন।—গীত. ৭৩:২-৫, ৭, ১২-১৪, ১৬, ১৭, ২১.
১৪-১৫. সাহায্যের জন্য যিহোবার উপর নির্ভর করার বিষয়ে বাইবেলের তিন জন ব্যক্তির কাছ থেকে আমরা কী শিখি?
১৪ সবেমাত্র উল্লেখিত এই তিন জন সত্য উপাসক সাহায্যের জন্য যিহোবার উপর নির্ভর করেছিলেন। তারা আন্তরিক প্রার্থনায় যিহোবাকে নিজেদের উদ্বিগ্নতা সম্বন্ধে জানিয়েছিলেন। তারা কেন অত্যন্ত চাপের মধ্যে ছিলেন, সেই সম্বন্ধে খোলাখুলিভাবে যিহোবাকে জানিয়েছিলেন। আর তারা ক্রমাগত যিহোবার উপাসনার স্থলে গিয়েছিলেন।—১ শমূ. ১:৯, ১০; গীত. ৫৫:২২; ৭৩:১৭; ১২২:১.
১৫ যিহোবা সমবেদনা দেখিয়ে তাদের প্রত্যেকের প্রার্থনার উত্তর দিয়েছিলেন। হান্না মনের শান্তি লাভ করেছিলেন। (১ শমূ. ১:১৮) দায়ূদ লিখেছিলেন: “ধার্ম্মিকের বিপদ অনেক, কিন্তু সেই সকল হইতে সদাপ্রভু তাহাকে উদ্ধার করেন।” (গীত. ৩৪:১৯) আর গীতরচক পরবর্তী সময়ে অনুভব করেছিলেন, যিহোবা তার ‘দক্ষিণ হস্ত ধরিয়া রাখিয়াছেন।’ তিনি গেয়েছিলেন: “ঈশ্বরের নিকটে থাকা আমারই পক্ষে মঙ্গল; আমি প্রভু সদাপ্রভুর শরণ লইলাম।” (গীত. ৭৩:২৩, ২৪, ২৮) আমরা এই উদাহরণগুলো থেকে কী শিখি? কখনো কখনো আমাদের সামনে অনেক গুরুতর সমস্যা আসবে, যেগুলো চাপের সৃষ্টি করে। কিন্তু, আমরা যদি অন্যদের সাহায্যের জন্য করা যিহোবার কাজগুলো নিয়ে ধ্যান করি, প্রার্থনায় তাঁর উপর নির্ভর করি এবং তিনি আমাদের কাছ থেকে যা আশা করেন, তা করি, তা হলে আমরা চাপের সঙ্গে মোকাবিলা করতে পারব।—গীত. ১৪৩:১, ৪-৮.
যিহোবার উপর নির্ভর করুন এবং সফল হোন
১৬-১৭. (ক) কেন যিহোবা ও তাঁর লোকেদের কাছ থেকে আমাদের নিজেদের আলাদা করা উচিত নয়? (খ) কীভাবে আমরা শক্তি ফিরে পেতে পারি?
১৬ সেই তিন জন ব্যক্তি আমাদের আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা প্রদান করেন আর সেটা হল যিহোবা ও তাঁর লোকেদের কাছ থেকে আমাদের নিজেদের আলাদা করা উচিত নয়। (হিতো. ১৮:১) বোন ন্যান্সি, যিনি সেইসময় চরম চাপ অনুভব করেছিলেন, যখন তার স্বামী তাকে ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন, বলেন: “এমন অনেক দিন গিয়েছে, যখন আমি কারো সঙ্গে দেখা করতে অথবা কথা বলতে চাইনি। তবে, আমি যতবেশি নিজেকে আলাদা করে নিয়েছিলাম, ততবেশি দুঃখে ছিলাম।” বোন ন্যান্সি সেইসময় উপকৃত হয়েছিলেন, যখন তিনি সমস্যার মধ্যে থাকা অন্যান্য ব্যক্তিকে সাহায্য করার উপায়গুলো খুঁজে ছিলেন। তিনি বলেন: “অন্যেরা যখন তাদের কষ্টের বিষয়ে ব্যাখ্যা করে, তখন আমি তা মন দিয়ে শুনি। আমি লক্ষ করেছি, আমি যখন তাদের ও তাদের সমস্যাগুলোর উপর মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করি, তখন আমি আমার নিজের ও আমার সমস্যাগুলোর উপর কম মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করি।”
১৭ আমরা মণ্ডলীর সভায় যোগ দেওয়ার মাধ্যমে শক্তি ফিরে পেতে পারি। আমরা যখন সভায় থাকি, তখন আমরা যিহোবাকে আরও বেশি সুযোগ দিই যেন তিনি আমাদের ‘সাহায্য ও সান্ত্বনা’ প্রদান করেন। (গীত. ৮৬:১৭) সেখানে তিনি তাঁর পবিত্র আত্মা, তাঁর বাক্য ও তাঁর লোকেদের মাধ্যমে আমাদের শক্তিশালী করেন। সভাগুলো আমাদের একে অপরকে “আশ্বাস” দেওয়ার সুযোগ করে দেয়। (রোমীয় ১:১১, ১২) সোফিয়া নামে একজন বোন বলেন: “যিহোবা ও আমাদের ভ্রাতৃসমাজ আমাকে টিকে থাকতে সাহায্য করেছে। মণ্ডলীর সভাগুলো হল আমার কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। আমি দেখেছি, পরিচর্যায় ও মণ্ডলীতে আমি যতবেশি ব্যস্ত থাকি, তত ভালোভাবে আমি আমার চাপ ও উদ্বিগ্নতার সঙ্গে মোকাবিলা করতে পারি।”
১৮. আমরা যদি নিরুৎসাহিতা বোধ করি, তা হলে যিহোবা আমাদের কী প্রদান করতে পারেন?
১৮ আমরা যখন নিরুৎসাহিতা বোধ করি, তখন আমরা যেন মনে রাখি, যিহোবা ভবিষ্যতে আমাদের কেবল চিরস্থায়ী স্বস্তি প্রদান করার প্রতিজ্ঞাই করেননি কিন্তু সেইসঙ্গে বর্তমানে চাপের সঙ্গে মোকাবিলা করার জন্য সাহায্য করার প্রস্তাবও দেন। আমরা যাতে নিরুৎসাহিতা ও হতাশার অনুভূতি কাটিয়ে উঠতে পারি, সেইজন্য তিনি আমাদের “অন্তরে ইচ্ছা ও কার্য্য” করার ক্ষমতা দেন।—ফিলি. ২:১৩.
১৯. রোমীয় ৮:৩৭-৩৯ পদ আমাদের কোন আশ্বাস প্রদান করে?
১৯ রোমীয় ৮:৩৭-৩৯ পদ পড়ুন। প্রেরিত পৌল আমাদের আশ্বস্ত করেন, কোনো কিছুই ঈশ্বরের প্রেম থেকে আমাদের পৃথক করতে পারবে না। কীভাবে আমরা সেই ভাই-বোনদের সাহায্য করতে পারি, যারা চাপের সঙ্গে মোকাবিলা করার চেষ্টা করছে? পরবর্তী প্রবন্ধে বিবেচনা করা হবে, চাপপূর্ণ পরিস্থিতিতে থাকা আমাদের ভাই-বোনদের প্রতি সমবেদনা দেখানোর এবং তাদের সাহায্য করার মাধ্যমে কীভাবে আমরা যিহোবাকে অনুকরণ করতে পারি।
গান সংখ্যা ৩৮ যিহোবার ওপর তোমার ভার অর্পণ করো
a অতিরিক্ত অথবা দীর্ঘস্থায়ী চাপ আমাদের শারীরিক ও আবেগগতভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। কীভাবে যিহোবা আমাদের সাহায্য করতে পারেন? আমরা বিবেচনা করে দেখব, কীভাবে তিনি এলিয়কে চাপের সঙ্গে মোকাবিলা করতে সাহায্য করেছিলেন। আমরা বাইবেলের অন্যান্য উদাহরণগুলো থেকে দেখব, চাপের সঙ্গে মোকাবিলা করার সময়ে কীভাবে যিহোবার উপর নির্ভর করা যায়।
b এই প্রবন্ধে নামগুলো পরিবর্তন করা হয়েছে।
c ছবি সম্বন্ধে: যিহোবার স্বর্গদূত কোমলভাবে এলিয়কে ঘুম থেকে জাগাচ্ছেন এবং তাকে রুটি ও জল খেতে দিচ্ছেন।
d ছবি সম্বন্ধে: একজন গীতরচক, সম্ভবত আসফের একজন বংশধর, তার সহলেবীয়দের সঙ্গে আনন্দের সঙ্গে গান রচনা করছেন এবং গান গাইছেন।