জীবন ও পরিচর্যা সভার জন্য অধ্যয়ন পুস্তিকা-র রেফারেন্স
মার্চ ৭-১৩
ঈশ্বরের বাক্যের গুপ্তধন | ১ শমূয়েল ১২-১৩
“অহংকারের পরিণতি অপমান”
অহংকারের পরিণতি অপমান
১৭ প্রথমে হয়তো মনে হবে যে শৌল ঠিক কাজই করেছিলেন। কারণ সেই সময় ঈশ্বরের লোকেদের অবস্থা খুবই খারাপ ছিল এবং তারা “বিপদ্গ্রস্ত,” “উপদ্রুত” ও ভয়ের মধ্যে ছিল। (১ শমূয়েল ১৩:৬, ৭) এটা ঠিক যে জরুরি অবস্থায় নিজে থেকে কিছু করা ভুল নয়। কিন্তু তবুও মনে রাখবেন যে যিহোবা মানুষের হৃদয় পড়তে জানেন এবং আমাদের মনের সমস্ত কথাই তিনি বোঝেন। (১ শমূয়েল ১৬:৭) যিহোবা নিশ্চয়ই শৌলের মধ্যে এমন কিছু দেখেছিলেন, যা বাইবেলে সরাসরি বলা নেই। যেমন, যিহোবা হয়তো দেখেছিলেন যে শৌল অহংকারের জন্যই অধৈর্য হয়ে পড়েছিলেন। শৌল হয়তো বিরক্ত হয়ে মনে মনে বলেছিলেন যে সমস্ত ইস্রায়েলের রাজা হয়ে আমি কেন বুড়ো ভাববাদীর জন্য অপেক্ষা করব যে কিনা ইচ্ছে করে দেরি করছে! তার মনে যাই থাকুক না কেন, শমূয়েলের দেরি দেখে তিনি ভেবেছিলেন যে এখন শমূয়েলের কথা তার না শুনলেও চলবে এবং তিনি নিজেই ব্যাপারটা সামলাতে পারেন। কিন্তু এর পরিণতি কী হয়েছিল? শমূয়েল শৌলের এই কাজের প্রশংসা করেননি। বরং তাকে এই বলে তিরস্কার করেছিলেন: “তোমার রাজত্ব স্থির থাকিবে না . . . কেননা সদাপ্রভু তোমাকে যাহা আজ্ঞা করিয়াছিলেন, তুমি তাহা পালন কর নাই।” (১ শমূয়েল ১৩:১৩, ১৪) আবারও অহংকারের পরিণতি হয়েছিল অপমান।
যিহোবা আপনার বাধ্যতাকে মূল্যবান বলে গণ্য করেন
৮ রাজা শৌল সম্বন্ধে বাইবেলের বিবরণ বাধ্যতার গুরুত্ব সম্বন্ধে তুলে ধরে। রাজা শৌল শুরুতে একজন নম্র ও বিনয়ী শাসক ছিলেন, ‘আপনার দৃষ্টিতে ক্ষুদ্র ছিলেন।’ কিন্তু, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে গর্ব ও মিথ্যা যুক্তি তার সিদ্ধান্তগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করতে শুরু করেছিল। (১ শমূয়েল ১০:২১, ২২; ১৫:১৭) একবার শৌল পলেষ্টীয়দের সঙ্গে যুদ্ধ করতে যাচ্ছিলেন। শমূয়েল রাজাকে তার জন্য অপেক্ষা করতে বলেছিলেন, যেন তিনি এসে যিহোবার কাছে বলি উৎসর্গ করতে এবং তাকে আরও নির্দেশনা দিতে পারেন। কিন্তু, শমূয়েল যে-সময়ে আসবে বলে মনে করা হয়েছিল, সেই সময়ে আসেননি আর এতে লোকেরা ছিন্নভিন্ন হয়ে পড়তে শুরু করেছিল। তা দেখার পর, শৌল “হোমবলি উৎসর্গ করিলেন।” এটা যিহোবাকে অসন্তুষ্ট করেছিল। অবশেষে শমূয়েল যখন এসেছিলেন, তখন রাজা এই বলে তার অবাধ্যতার অজুহাত দেখিয়েছিলেন যে, শমূয়েল আসতে দেরি করেছেন বলে তিনি যিহোবার অনুগ্রহ লাভ করার জন্য, “ইচ্ছা না থাকিলেও” বলি উৎসর্গ করেছেন। রাজা শৌলের কাছে, বলি উৎসর্গ করতে শমূয়েলের জন্য অপেক্ষা করার যে-নির্দেশনা তিনি লাভ করেছিলেন, সেটার বাধ্য হওয়ার চেয়ে বরং বলি উৎসর্গ করা আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ ছিল। শমূয়েল তাকে বলেছিলেন: “তুমি অজ্ঞানের কর্ম্ম করিয়াছ; তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভু তোমাকে যে আজ্ঞা দিয়াছেন, তাহা পালন কর নাই।” যিহোবার অবাধ্য হওয়ায় শৌলকে তার রাজপদ হারাতে হয়েছিল।—১ শমূয়েল ১০:৮; ১৩:৫-১৩.
অমূল্য রত্ন
প্রহরীদুর্গ ১১ ৭/১৫ ১৩ অনু. ১৫
আপনি কি যিহোবার প্রেমময় নির্দেশনা অনুসরণ করবেন?
১৫ সেই লোকেরা কি এইরকম চিন্তা করেছিল যে, একজন মানবরাজা যিহোবার চেয়ে কোনো না কোনোভাবে আরও বাস্তব, আরও নির্ভরযোগ্য হবেন? যদি তা-ই হয়ে থাকে, তাহলে তারা সত্যিই এক অবাস্তব বিষয়ের পিছনে ছুটছিল! আর তারা শয়তানের অন্যান্য অনেক মরীচিকার পিছনে ছোটার বিপদের মুখে ছিল। মানবরাজারা খুব সহজেই তাদেরকে প্রতিমাপূজার দিকে পরিচালিত করবে। প্রতিমাপূজকরা ভুলভাবে এইরকম চিন্তা করে থাকে যে, দৃশ্যত বস্তুগুলো—কাঠ বা পাথরের তৈরি দেব-দেবী—কোনো না কোনোভাবে সমস্ত কিছুর সৃষ্টিকর্তা অদৃশ্য ঈশ্বর যিহোবার চেয়ে আরও বাস্তব, আরও নির্ভরযোগ্য। কিন্তু, প্রেরিত পৌল যেমনটা বলেছিলেন, প্রতিমাগুলো “কিছুই নয়।” (১ করি. ৮:৪) তারা দেখতে, শুনতে, কথা বলতে অথবা কাজ করতে পারে না। যদিও আপনি হয়তো সেগুলোকে দেখতে ও স্পর্শ করতে পারেন কিন্তু আপনি যদি সেগুলোর মধ্যে কোনো একটার উপাসনা করেন, তাহলে আপনি সত্যিকার অর্থেই এমন এক অবাস্তব বিষয়ের—এক অর্থহীন মরীচিকার—পিছনে ছুটছেন, যা কেবল বিপর্যয় নিয়ে আসবে।—গীত. ১১৫:৪-৮.
মার্চ ১৪-২০
ঈশ্বরের বাক্যের গুপ্তধন | ১ শমূয়েল ১৪-১৫
“বলিদান উৎসর্গ করার চেয়ে আজ্ঞা পালন করা আরও ভালো”
প্রহরীদুর্গ ০৭ ৬/১৫ ২৬-২৭ অনু. ৪, ৭-৮
যিহোবা আপনার বাধ্যতাকে মূল্যবান বলে গণ্য করেন
৪ সৃষ্টিকর্তা হিসেবে, যিহোবা ইতিমধ্যেই আমাদের সমস্ত বস্তুগত সম্পদের মালিক। তা হলে, এমন কিছু কি আছে, যা আমরা তাঁকে দিতে পারি? হ্যাঁ, আমরা তাঁকে অত্যন্ত মূল্যবান কিছু দিতে পারি। সেটা কী? এই উপদেশ থেকে আমরা এর উত্তর পেতে পারি: “বৎস, জ্ঞানবান হও; আমার চিত্তকে আনন্দিত কর; তাহাতে যে আমাকে টিট্কারি দেয়, তাহাকে উত্তর দিতে পারিব।” (হিতোপদেশ ২৭:১১) আমরা ঈশ্বরকে আমাদের বাধ্যতা দিতে পারি। যদিও আমাদের ভিন্ন ভিন্ন পরিস্থিতি ও পটভূমি রয়েছে কিন্তু বাধ্য হওয়ার মাধ্যমে আমরা প্রত্যেকে শয়তানের এই বিদ্বেষপূর্ণ দাবির উত্তর দিতে পারি যে, পরীক্ষার মুখোমুখি হলে মানুষ ঈশ্বরের প্রতি অনুগত থাকবে না। এটা কী এক বিশেষ সুযোগ!
৭ এই প্রসঙ্গে স্মরণ করে দেখুন, অতীতে যিহোবা তাঁর প্রাচীন লোকেদের কাছে প্রকাশ করেছিলেন যে, পশুবলির চেয়ে বাধ্যতা এমনকি আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ। (হিতোপদেশ ২১:৩, ২৭; হোশেয় ৬:৬; মথি ১২:৭) যেখানে যিহোবাই তাঁর লোকেদেরকে এই ধরনের বলিদান করতে আজ্ঞা দিয়েছিলেন, সেখানে কেন তিনিই এই কথা বলেছিলেন? আসলে, যে-ব্যক্তি বলি উৎসর্গ করছেন, তার উদ্দেশ্য কী? তিনি কি ঈশ্বরকে খুশি করার জন্য তা করছেন? নাকি তিনি কেবল কিছু আচার-অনুষ্ঠান পালন করছেন? একজন উপাসক যদি সত্যিই ঈশ্বরকে খুশি করতে আকাঙ্ক্ষী হন, তা হলে ঈশ্বরের সমস্ত আজ্ঞার প্রতি বাধ্য হওয়ার বিষয়ে তিনি যত্নশীল হবেন। ঈশ্বরের পশুবলির কোনো প্রয়োজন নেই কিন্তু আমাদের বাধ্যতাই এমন এক মূল্যবান বিষয়, যা আমরা তাঁকে দিতে পারি।
৮ রাজা শৌল সম্বন্ধে বাইবেলের বিবরণ বাধ্যতার গুরুত্ব সম্বন্ধে তুলে ধরে। রাজা শৌল শুরুতে একজন নম্র ও বিনয়ী শাসক ছিলেন, ‘আপনার দৃষ্টিতে ক্ষুদ্র ছিলেন।’ কিন্তু, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে গর্ব ও মিথ্যা যুক্তি তার সিদ্ধান্তগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করতে শুরু করেছিল। (১ শমূয়েল ১০:২১, ২২; ১৫:১৭) একবার শৌল পলেষ্টীয়দের সঙ্গে যুদ্ধ করতে যাচ্ছিলেন। শমূয়েল রাজাকে তার জন্য অপেক্ষা করতে বলেছিলেন, যেন তিনি এসে যিহোবার কাছে বলি উৎসর্গ করতে এবং তাকে আরও নির্দেশনা দিতে পারেন। কিন্তু, শমূয়েল যে-সময়ে আসবে বলে মনে করা হয়েছিল, সেই সময়ে আসেননি আর এতে লোকেরা ছিন্নভিন্ন হয়ে পড়তে শুরু করেছিল। তা দেখার পর, শৌল “হোমবলি উৎসর্গ করিলেন।” এটা যিহোবাকে অসন্তুষ্ট করেছিল। অবশেষে শমূয়েল যখন এসেছিলেন, তখন রাজা এই বলে তার অবাধ্যতার অজুহাত দেখিয়েছিলেন যে, শমূয়েল আসতে দেরি করেছেন বলে তিনি যিহোবার অনুগ্রহ লাভ করার জন্য, “ইচ্ছা না থাকিলেও” বলি উৎসর্গ করেছেন। রাজা শৌলের কাছে, বলি উৎসর্গ করতে শমূয়েলের জন্য অপেক্ষা করার যে-নির্দেশনা তিনি লাভ করেছিলেন, সেটার বাধ্য হওয়ার চেয়ে বরং বলি উৎসর্গ করা আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ ছিল। শমূয়েল তাকে বলেছিলেন: “তুমি অজ্ঞানের কর্ম্ম করিয়াছ; তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভু তোমাকে যে আজ্ঞা দিয়াছেন, তাহা পালন কর নাই।” যিহোবার অবাধ্য হওয়ায় শৌলকে তার রাজপদ হারাতে হয়েছিল।—১ শমূয়েল ১০:৮; ১৩:৫-১৩.
অমূল্য রত্ন
যিহোবার সমবেদনা অনুকরণ করুন
১০ এর মানে এই নয় যে, সমবেদনা দেখানো সবসময় উপযুক্ত হবে। উদাহরণ স্বরূপ, রাজা শৌল যখন অমালেকীয়দের রাজা ও ঈশ্বরের লোকেদের এক শত্রু অগাগকে হত্যা করেননি, তখন তিনি হয়তো ভেবেছিলেন যে, তিনি দয়া বা সমবেদনা দেখাচ্ছেন। এ ছাড়া, শৌল অমালেকীয়দের সমস্ত পশুকেও হত্যা করেননি। কিন্তু, যিহোবা শৌলকে আজ্ঞা দিয়েছিলেন যেন তিনি সমস্ত অমালেকীয়কে ও তাদের সমস্ত পশুকে হত্যা করেন। শৌলের অবাধ্যতার কারণে যিহোবা তাকে রাজা হিসেবে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। (১ শমূ. ১৫:৩, ৯, ১৫) যিহোবা হলেন ন্যায্য বিচারক। তিনি লোকেদের হৃদয় পড়তে পারেন এবং তিনি জানেন যে, কখন দয়া বা সমবেদনা দেখানো উচিত নয়। (বিলাপ ২:১৭; যিহি. ৫:১১) শীঘ্রই তিনি সেই সমস্ত ব্যক্তির উপর বিচার নিয়ে আসবেন, যারা তাঁর বাধ্য হতে প্রত্যাখ্যান করে। (২ থিষল. ১:৬-১০) সেই সময়টা দুষ্ট লোকেদের প্রতি যিহোবার সমবেদনা দেখানোর সময় হবে না। তবে, তাদের ধ্বংস করার মাধ্যমে তিনি সেই ধার্মিক লোকেদের প্রতি সমবেদনা দেখাবেন, যাদের তিনি রক্ষা করবেন।
মার্চ ২১-২৭
ঈশ্বরের বাক্যের গুপ্তধন | ১ শমূয়েল ১৬-১৭
“এই যুদ্ধ যিহোবার”
প্রহরীদুর্গ, জনসাধারণের সংস্করণ ১৬.৪ ১১ অনু. ২-৩
“এই যুদ্ধ সদাপ্রভুর”
একটা সিংহ এবং ভল্লুককে তিনি কীভাবে হত্যা করেছিলেন, সেই ঘটনা বলার মাধ্যমে দায়ূদ শৌলকে আশ্বস্ত করেন। তিনি কি বড়াই করছিলেন? না। দায়ূদ জানতেন, কার সাহায্যে তিনি সেই লড়াইয়ে জয়ী হয়েছিলেন। তিনি বলেন: “সদাপ্রভু সিংহের থাবা ও ভল্লুকের থাবা হইতে আমাকে উদ্ধার করিয়াছেন, তিনি এই পলেষ্টীয়ের হস্ত হইতে আমাকে উদ্ধার করিবেন।” অবশেষে শৌল রাজি হয়ে বলেন: “যাও, সদাপ্রভু তোমার সহবর্ত্তী হইবেন।”—১ শমূয়েল ১৭:৩৭.
আপনিও কি দায়ূদের মতো বিশ্বাস দেখাতে চান? যদি চান, তা হলে লক্ষ করুন, দায়ূদের বিশ্বাসের ভিত্তি অবাস্তব ছিল না। বরং, জ্ঞান ও অভিজ্ঞতার আলোকে তিনি ঈশ্বরের প্রতি বিশ্বাস গড়ে তুলেছিলেন। তিনি জানতেন, যিহোবা হলেন একজন প্রেমময় সুরক্ষাকারী ও সেইসঙ্গে তিনি তাঁর প্রতিজ্ঞা রক্ষা করেন। আমরা যদি এই ধরনের বিশ্বাস অর্জন করতে চাই, তা হলে আমাদেরকে বাইবেল থেকে ঈশ্বর সম্বন্ধে জানতে হবে। এরপর, আমরা যা শিখি, সেই অনুযায়ী যদি জীবনযাপন করি, তা হলে আমরা দেখব যে, এর ফলে প্রাপ্ত উত্তম ফল আমাদের বিশ্বাসকেও শক্তিশালী করবে।—ইব্রীয় ১১:১.
প্রহরীদুর্গ, জনসাধারণের সংস্করণ ১৬.৪ ১১-১২
“এই যুদ্ধ সদাপ্রভুর”
উত্তরে দায়ূদ যা বলেছিলেন, সেটা এখনও বিশ্বাসের এক অসাধারণ অভিব্যক্তি হিসেবে রক্ষিত আছে। কল্পনা করে দেখুন, অল্পবয়সি দায়ূদ গলিয়াতের উদ্দেশে চিৎকার করে বলছেন: “তুমি খড়্গ, বড়শা ও শল্য লইয়া আমার কাছে আসিতেছ, কিন্তু আমি বাহিনীগণের সদাপ্রভুর, ইস্রায়েলের সৈন্যগণের ঈশ্বরের নামে, তুমি যাঁহাকে টিট্কারি দিয়াছ তাঁহারই নামে, তোমার নিকটে আসিতেছি।” দায়ূদ জানতেন, মানুষের শক্তি ও অস্ত্র গুরুত্বপূর্ণ নয়। গলিয়াৎ যিহোবা ঈশ্বরের প্রতি অসম্মান দেখিয়েছিলেন এবং যিহোবাই এর উত্তর দেবেন। দায়ূদ এভাবে বলেন, “এই যুদ্ধ সদাপ্রভুর।”—১ শমূয়েল ১৭:৪৫-৪৭.
দায়ূদ যে গলিয়াতের আকৃতি অথবা অস্ত্রশস্ত্রকে উপেক্ষা করেছিলেন, তা নয়। তবে, এই বিষয়গুলো দেখে তিনি দমে যাননি। শৌল ও তার সৈন্যবাহিনী যে-ভুল করেছিল, তিনি সেই একই ভুল করেননি। তিনি গলিয়াতের সঙ্গে নিজেকে তুলনা করেননি। বরং, তিনি জানতেন, যিহোবার সামনে গলিয়াতের অবস্থান আসলে কী। যেহেতু গলিয়াতের উচ্চতা প্রায় সাড়ে নয় ফুট (২.৯ মিটার) ছিল, তাই অন্যদের সামনে দাঁড়ালে তাকে হয়তো দৈত্য বলে মনে হতো। তবে, নিখিলবিশ্বের সর্বক্ষমতাময় ব্যক্তির সামনে এই আকৃতি কোনো ব্যাপারই ছিল না। কারণ অন্যান্য মানুষের মতো তিনিও যিহোবার কাছে খুবই ক্ষুদ্র এবং নগণ্য ছিলেন। সবচেয়ে বড়ো কথা হল, শীঘ্রই যিহোবা তাকে বিনষ্ট করতে যাচ্ছেন।
প্রহরীদুর্গ, জনসাধারণের সংস্করণ ১৬.৪ ১২ অনু. ৪
“এই যুদ্ধ সদাপ্রভুর”
আজকে, ঈশ্বরের দাসেরা আক্ষরিক যুদ্ধে অংশ নেয় না। সেই সময় অতীত হয়ে গিয়েছে। (মথি ২৬:৫২) তবুও, আমাদেরকে দায়ূদের বিশ্বাস অনুকরণ করতে হবে। তার মতো আমাদেরও যিহোবাকে একজন বাস্তব ব্যক্তি হিসেবে দেখতে হবে—একমাত্র তাঁকেই ঈশ্বর হিসেবে সেবা করতে হবে এবং শ্রদ্ধা করতে হবে। কখনো কখনো, আমরা হয়তো আমাদের সমস্যার সঙ্গে তুলনা করে নিজেদেরকে ছোটো বলে মনে করতে পারি, কিন্তু যিহোবার অসীম শক্তির তুলনায় আমাদের সমস্যাগুলো একেবারেই ক্ষুদ্র। আমরা যদি যিহোবাকে আমাদের ঈশ্বর হিসেবে বেছে নিই এবং দায়ূদের মতো তাঁর প্রতি বিশ্বাস রাখি, তা হলে কোনো বাধা বা সমস্যাই আমাদের দমিয়ে রাখতে পারবে না। কারণ এমন কোনো বাধা নেই, যা যিহোবার পক্ষে জয় করা অসম্ভব!
অমূল্য রত্ন
অন্তর্দৃষ্টি-২ ৮৭১-৮৭২, ইংরেজি
শৌল
যিহোবা শৌলের উপর থেকে তাঁর পবিত্র শক্তি সরিয়ে নিয়েছিলেন। তাই, শৌলের মন্দ চিন্তাভাবনা তার মনের শান্তি কেড়ে নিয়েছিল। তিনি ভুলভাবে চিন্তা করেছিলেন এবং ভুল বিষয় নিয়ে কল্পনা করেছিলেন। যিহোবার অবাধ্য হওয়ার মাধ্যমে শৌল দেখিয়েছিলেন, তার মন ও হৃদয় মন্দ। যিহোবার পবিত্র শক্তি শৌলকে তার ভুল চিন্তাভাবনা ও অনুভূতি থেকে আর রক্ষা করেনি এবং সেগুলোর বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য তাকে সাহায্য করেনি।—১শমূ ১৬:১৪, ১৫.
মার্চ ২৮–এপ্রিল ৩
ঈশ্বরের বাক্যের গুপ্তধন | ১ শমূয়েল ১৮-১৯
“সফল হওয়ার পরও নম্রতা বজায় রাখুন”
জীবনের পরিবর্তনগুলোর সঙ্গে মোকাবিলা করার সময় ঈশ্বরের আত্মার ওপর নির্ভর করুন
৪ শীঘ্রই এই বালক মেষপালক জাতীয় খ্যাতি অর্জন করে। তাকে রাজার সামনে উপস্থিত হওয়ার এবং তার জন্য বাদ্যযন্ত্র বাজানোর জন্য বলা হয়। তিনি যোদ্ধা গলিয়াৎকে হত্যা করেছিলেন, যে-দৈত্যাকৃতি ব্যক্তি এত হিংস্র ছিল যে, এমনকি ইস্রায়েলের অভিজ্ঞ সৈন্যরাও তার মুখোমুখি হতে ভয় পেত। যোদ্ধাদের ওপর কর্তৃত্বপদে নিযুক্ত ব্যক্তি হিসেবে দায়ূদ সফলতার সঙ্গে পলেষ্টীয়দের সঙ্গে যুদ্ধ করেছিলেন। লোকেরা তাকে ভালবাসত। তার প্রশংসা করে তারা সংগীত রচনা করেছিল। এর আগে, রাজা শৌলের একজন পরামর্শদাতা যুবক দায়ূদকে কেবল বীণা “বাদনে নিপুণ” বলেই বর্ণনা করেননি কিন্তু সেইসঙ্গে “বলবান বীর, যোদ্ধা, বাক্পটু ও রূপবান” বলেছেন।—১ শমূয়েল ১৬:১৮; ১৭:২৩, ২৪, ৪৫-৫১; ১৮:৫-৭.
প্রহরীদুর্গ ১৮.০১ ২৮-২৯ অনু. ৬-৭
লোকেদের মধ্যে পার্থক্য লক্ষ করুন
৬ কোনো কোনো ব্যক্তি গর্বিত হয়ে যায় কারণ তারা দেখতে খুব সুন্দর, জনপ্রিয়, সংগীতপারদর্শী, শক্তিশালী অথবা তারা অন্যদের কাছ থেকে প্রশংসা লাভ করে। দায়ূদের কাছে এই সমস্ত ভালো বিষয়গুলো ছিল কিন্তু তিনি সারাজীবন ধরে নম্রতা বজায় রেখেছিলেন। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, দায়ূদ যখন গলিয়াৎকে হত্যা করেছিলেন, তখন রাজা শৌল দায়ূদকে বলেছিলেন যে, তিনি তার মেয়েকে বিয়ে করতে পারেন। কিন্তু, উত্তরে দায়ূদ বলেছিলেন: “আমি কে, এবং আমার প্রাণ কি, ইস্রায়েলের মধ্যে আমার পিতার গোষ্ঠীই বা কি যে, আমি রাজার জামাতা হই?” (১ শমূ. ১৮:১৮) কী দায়ূদকে নম্রতা বজায় রাখতে সাহায্য করেছিল? তিনি জানতেন, তার কাছে যে-সমস্ত গুণ, ক্ষমতা ও বিশেষ সুযোগ ছিল, সেগুলো একমাত্র এই কারণেই ছিল যে, ঈশ্বর হলেন নম্র আর তিনি দায়ূদের প্রতি মনোযোগ দিয়েছিলেন। (গীত. ১১৩:৫-৮) দায়ূদ উপলব্ধি করেছিলেন যে, তার কাছে থাকা যেকোনো ভালো বিষয় আসলে যিহোবার কাছ থেকেই এসেছে।—তুলনা করুন, ১ করিন্থীয় ৪:৭.
৭ দায়ূদের মতো বর্তমানেও যিহোবার লোকেরা নম্র হওয়ার চেষ্টা করে। এই বিষয়টা জানা আমাদের হৃদয়কে স্পর্শ করে যে, নিখিলবিশ্বের সবচেয়ে মহান ব্যক্তি স্বয়ং যিহোবা হলেন নম্র। আমরা বাইবেলের এই কথাগুলো প্রয়োগ করতে চাই: “করুণার চিত্ত, মধুর ভাব, নম্রতা, মৃদুতা, সহিষ্ণুতা পরিধান কর।” (কল. ৩:১২) আমরা এও জানি যে, প্রেম “আত্মশ্লাঘা করে না, গর্ব্ব করে না।” (১ করি. ১৩:৪, ৫) অন্যেরা যখন আমাদের মধ্যে নম্রতা লক্ষ করবে, তখন তারাও হয়তো যিহোবাকে জানার বিষয়ে আগ্রহী হবে। ঠিক যেমন একজন খ্রিস্টান স্ত্রীর উত্তম আচরণের কারণে তার ন-সাক্ষি স্বামী যিহোবার প্রতি আকৃষ্ট হতে পারেন, তেমনই ঈশ্বরের দাসদের নম্রতার কারণে লোকেরা তাঁর প্রতি আকৃষ্ট হতে পারে।—১ পিতর ৩:১, ২.
অমূল্য রত্ন
অন্তর্দৃষ্টি-২ ৬৯৫-৬৯৬, ইংরেজি
ভাববাদী
ঈশ্বরের পবিত্র শক্তি যখন ভাববাদীদের “উপর নামিয়া” আসত, কেবল তখনই তারা ভবিষ্যদ্বাণী বলত। (যিহি ১১:৪, ৫; মীখা ৩:৮) এই পবিত্র শক্তির মাধ্যমে তারা অসাধারণভাবে, এমনকী কখনো কখনো অস্বাভাবিক উপায়ে কথা বলত এবং কাজ করত। এটা থেকে বোঝা যায়, বাইবেলে কারো কারো বিষয়ে কেন বলা হয়েছে, তারা “ভাববাদীদের মতো আচরণ” করছে। (১শমূ ১০:৬-১১; ১৯:২০-২৪; যির ২৯:২৪-৩২; তুলনা করুন, প্রেরিত ২:৪, ১২-১৭; ৬:১৫; ৭:৫৫.) পবিত্র শক্তির মাধ্যমে শৌল যখন “ভাববাদীদের মতো আচরণ” করেছিলেন, তখন তিনি তার পোশাক খুলে ফেলেছিলেন এবং “সারাদিন ও সারারাত উলঙ্গ অবস্থাতেই” ছিলেন। (১শমূ ১৯:১৮–২০:১) এর অর্থ এই নয়, ভাববাদীরা প্রায় সময়ই উলঙ্গ অবস্থায় থাকত। এর পরিবর্তে, বাইবেলে যখন ভাববাদীদের কথা বলা হয়েছে, তখন বেশিরভাগ সময়ই তারা পোশাক পরা অবস্থায় ছিল। তা হলে, শৌল কেন উলঙ্গ অবস্থায় ছিলেন? বাইবেলে এর কারণ সম্বন্ধে বলা নেই। তবে, এর বিভিন্ন কারণ থাকতে পারে। একটা কারণ হতে পারে, রাজকীয় পোশাক ছাড়া শৌল কেবল এক সাধারণ মানুষ ছিলেন, বিশেষ কেউ নন। কিংবা তার এই উলঙ্গ অবস্থা দেখিয়েছিল, যিহোবার কর্তৃত্ব ও শক্তির তুলনায় তিনি কতটা শক্তিহীন ছিলেন আর যিহোবা তার প্রতি যা চান, তা-ই করতে পারেন।
এপ্রিল ৪-১০
ঈশ্বরের বাক্যের গুপ্তধন | ১ শমূয়েল ২০-২২
“যেভাবে একজন ভালো বন্ধু হওয়া যায়”
শেষ আসার আগে বন্ধুত্বের এক দৃঢ় বন্ধন গড়ে তুলুন
১৮ বর্তমানে, আমাদের ভাই-বোনেরা বিভিন্ন ধরনের প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখোমুখি হয়। উদাহরণ স্বরূপ, অনেকে প্রাকৃতিক অথবা মানুষের সৃষ্ট বিপর্যয়ের শিকার হয়। যখন এমনটা ঘটে, তখন আমাদের মধ্যে কেউ কেউ হয়তো নিজেদের বাড়িতে এই বন্ধুদের আমন্ত্রণ জানাতে পারে। অন্যেরা আবার আর্থিকভাবে সাহায্য করতে পারে। তবে, আমরা সবাই যিহোবার কাছে প্রার্থনা করতে পারি, যাতে তিনি আমাদের ভাই-বোনদের সাহায্য করেন। আমরা যদি জানতে পারি, আমাদের কোনো ভাই-বোন নিরুৎসাহিত হয়ে গিয়েছেন, তা হলে আমরা কী বলব অথবা করব, তা হয়তো ঠিক করতে পারি না। কিন্তু, আমরা সবাই সাহায্য করতে পারি। উদাহরণ স্বরূপ, আমরা আমাদের বন্ধুর সঙ্গে সময় কাটাতে পারি। তিনি যখন কথা বলেন, তখন আমরা সদয়ভাবে মন দিয়ে তা শুনতে পারি। আর আমরা তাকে আমাদের কোনো প্রিয় সান্ত্বনাদায়ক শাস্ত্রপদ সম্বন্ধে বলতে পারি। (যিশা. ৫০:৪) সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টা হল আপনার বন্ধুদের প্রয়োজনের সময়ে আপনি তাদের রয়েছেন।—পড়ুন, হিতোপদেশ ১৭:১৭.
যিহোবার পথে চলুন
৭ ঈশ্বর চান যেন আমরা নির্ভরযোগ্য বন্ধু হই। (হিতো. ১৭:১৭) রাজা শৌলের ছেলে যোনাথন দায়ূদের বন্ধু হয়েছিলেন। যোনাথন যখন শুনেছিলেন যে, দায়ূদ গলীয়াৎকে হত্যা করেছেন, তখন “যোনাথনের প্রাণ দায়ূদের প্রাণে সংসক্ত হইল, এবং যোনাথন আপন প্রাণের মত তাঁহাকে ভালবাসিতে লাগিলেন।” (১ শমূ. ১৮:১, ৩) যোনাথন এমনকি সেই সময় দায়ূদকে সাবধান করে দিয়েছিলেন, যখন শৌল দায়ূদকে হত্যা করতে চেয়েছিলেন। দায়ূদ পালিয়ে যাওয়ার পর, যোনাথন তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে একটা চুক্তি করেছিলেন। শৌলের কাছে দায়ূদ সম্বন্ধে বলা যোনাথনের জীবনকে প্রায় ঝুঁকির মুখে ফেলে দিয়েছিল কিন্তু তা সত্ত্বেও, দুই বন্ধু আবারও সাক্ষাৎ করেছিল এবং তাদের বন্ধুত্বের বন্ধনকে পুনরুজ্জীবিত করেছিল। (১ শমূ. ২০:২৪-৪১) তাদের শেষ সাক্ষাতের সময় যোনাথন দায়ূদের হস্ত “ঈশ্বরেতে . . . সবল করিলেন।”—১ শমূ. ২৩:১৬-১৮.
প্রহরীদুর্গ ০৯ ১০/১৫ ১৯ অনু. ১১
ভালোবাসাহীন এক জগতে বন্ধুত্ব বজায় রাখা
১১ অনুগত হোন। শলোমন লিখেছিলেন, “বন্ধু সর্ব্বসময়ে প্রেম করে, ভ্রাতা দুর্দ্দশার জন্য জন্মে।” (হিতো. ১৭:১৭) এই কথাগুলো লেখার সময়, শলোমনের মনে হয়তো সেই বন্ধুত্বের কথা ছিল, যা তার পিতা দায়ূদ যোনাথনের সঙ্গে উপভোগ করেছিলেন। (১ শমূ. ১৮:১) রাজা শৌল চেয়েছিলেন যেন তার ছেলে যোনাথন ইস্রায়েলের সিংহাসনের উত্তরাধিকারী হয়। কিন্তু, যোনাথন এই বাস্তব বিষয়টা মেনে নিয়েছিলেন যে, যিহোবা এই বিশেষ সুযোগের জন্য দায়ূদকে বেছে নিয়েছেন। এই বিষয়টা নিয়ে যোনাথন দায়ূদের প্রতি ঈর্ষা করেননি যেমনটা শৌল করেছিলেন। দায়ূদ যে-প্রশংসা লাভ করেছিলেন, তাতে তিনি ক্রুদ্ধ হননি অথবা দায়ূদ সম্বন্ধে শৌল যে-অপবাদ ছড়িয়েছিলেন, সেটাও তিনি বিশ্বাস করেননি। (১ শমূ. ২০:২৪-৩৪) আমরা কি যোনাথনের মতো? আমাদের বন্ধুরা যখন বিশেষ সুযোগ লাভ করে, তখন আমরা কি তাদের জন্য আনন্দিত হই? তারা যখন কষ্টভোগ করে, তখন আমরা কি তাদেরকে সান্ত্বনা ও সাহায্য প্রদান করি? আমরা যদি কোনো বন্ধু সম্বন্ধে গুজব শুনি, তখন সেটা কি আমরা সঙ্গে সঙ্গে বিশ্বাস করি? নাকি যোনাথনের মতো আমরা অনুগতভাবে আমাদের বন্ধুদের রক্ষা করি?
অমূল্য রত্ন
প্রথম শমূয়েল বইয়ের প্রধান বিষয়গুলো
২১:১২, ১৩. যিহোবা চান যাতে আমরা আমাদের মানসিক দক্ষতাকে এবং ক্ষমতাকে আমাদের জীবনের কঠিন পরিস্থিতিগুলো মোকাবিলা করার জন্য কাজে লাগাই। তিনি আমাদেরকে তাঁর অনুপ্রাণিত বাক্য দিয়েছেন, যা আমাদের বিচক্ষণতা, জ্ঞান এবং পরিণামদর্শিতা বা চিন্তা করার ক্ষমতা দান করে। (হিতোপদেশ ১:৪) এ ছাড়া, নিযুক্ত প্রাচীনদের সাহায্যও আমাদের রয়েছে।
এপ্রিল ১৮-২৪
ঈশ্বরের বাক্যের গুপ্তধন | ১ শমূয়েল ২৩-২৪
“যিহোবার সময়ের জন্য ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করুন”
জীবনের পরিবর্তনগুলোর সঙ্গে মোকাবিলা করার সময় ঈশ্বরের আত্মার ওপর নির্ভর করুন
৮ দায়ূদ শৌলের ক্ষতি করতে অসম্মত হয়েছিলেন। বিশ্বাস এবং ধৈর্য অনুশীলনের মাধ্যমে তিনি বিষয়গুলো যিহোবার হাতে ছেড়ে দিয়ে সন্তুষ্ট হয়েছিলেন। রাজা সেই গুহা ছেড়ে চলে যাওয়ার পর, দায়ূদ তাকে ডেকে বলেছিলেন: “সদাপ্রভু আমার ও আপনার মধ্যে বিচার করিবেন, আপনার কৃত অন্যায় হইতে আমাকে উদ্ধার করিবেন, কিন্তু আমার হস্ত আপনার বিরুদ্ধ হইবে না।” (১ শমূয়েল ২৪:১২) যদিও তিনি জানতেন যে, শৌল অন্যায় করছিলেন তবুও দায়ূদ নিজে প্রতিশোধ নেননি; অথবা তিনি শৌলের বা তার সম্বন্ধে খারাপ কথা বলেননি। বেশ কয়েক বার দায়ূদ নিজের হাতে বিষয়গুলো তুলে নেওয়া থেকে বিরত হয়েছিলেন। এর পরিবর্তে, বিষয়গুলো সংশোধন করার জন্য তিনি যিহোবার ওপর নির্ভর করেছিলেন।—১ শমূয়েল ২৫:৩২-৩৪; ২৬:১০, ১১.
আপনার পরিস্থিতিগুলো কি আপনার জীবনকে নিয়ন্ত্রণ?
তৃতীয় শিক্ষাটা হল, আমাদের পরিস্থতিগুলোকে পরিবর্তন করার জন্য অশাস্ত্রীয় মাধ্যমগুলো ব্যবহার করার পরিবর্তে, আমাদের যিহোবার জন্য অপেক্ষা করা উচিত। শিষ্য যাকোব লিখেছিলেন: “ধৈর্য্য সিদ্ধ কার্য্যবিশিষ্ট হউক, যেন তোমরা সিদ্ধ ও সম্পূর্ণ হও, কোন বিষয়ে তোমাদের অভাব না থাকে।” (যাকোব ১:৪) তাড়াতাড়ি শেষ নিয়ে আসার জন্য অশাস্ত্রীয় উপায়গুলো অবলম্বন করার পরিবর্তে শেষ পর্যন্ত পরীক্ষা চলতে দেওয়ার মাধ্যমে ধৈর্যকে “সিদ্ধ কার্য্যবিশিষ্ট” হতে বা সম্পূর্ণরূপে কাজ করতে দেওয়া উচিত। তা হলে আমাদের বিশ্বাস পরীক্ষিত এবং বিশুদ্ধ হবে আর এভাবে এর রক্ষা করার ক্ষমতা প্রকাশ পাবে। যোষেফ এবং দায়ূদের এই ধরনের ধৈর্য ছিল। তারা এমন কোনো সমাধান নিয়ে আসার চেষ্টা করেনি, যা হয়তো যিহোবাকে অখুশি করত। এর পরিবর্তে, তারা তাদের পরিস্থিতিগুলোকে সর্বোত্তমভাবে ব্যবহার করেছিল। তারা যিহোবার অপেক্ষা করেছিল এবং তা করার জন্য তারা কত আশীর্বাদই না পেয়েছিল! যিহোবা তাদের দুজনকেই তাঁর লোকেদের উদ্ধার করতে এবং পরিচালনা দিতে ব্যবহার করেছিলেন।—আদিপুস্তক ৪১:৩৯-৪১; ৪৫:৫; ২ শমূয়েল ৫:৪, ৫.
আমরাও এমন পরিস্থিতিগুলোর সম্মুখীন হতে পারি, যেগুলোর জন্য আমরা অশাস্ত্রীয় সমাধান খোঁজার জন্য প্রলুব্ধ হতে পারি। উদাহরণস্বরূপ, এখনও একজন উপযুক্ত বিবাহসাথি খুঁজে পাননি বলে আপনি কি নিরুৎসাহিত হয়ে পড়েছেন? যদি তা-ই হয়, তা হলে “কেবল প্রভুতেই” বিবাহ করার বিষয়ে যিহোবার আদেশ অমান্য করার যেকোনো প্রলোভন এড়িয়ে চলুন। (১ করিন্থীয় ৭:৩৯) আপনি কি আপনার বিবাহিত জীবনে সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছেন? আলাদা থাকার এবং বিবাহবিচ্ছেদের মনোভাবকে জাগিয়ে তোলে, জগতের এমন আত্মার দ্বারা প্রভাবিত হওয়ার পরিবর্তে কঠিন সময়ের মধ্যেও একত্রে কাজ করুন। (মালাখি ২:১৬; ইফিষীয় ৫:২১-৩৩) অর্থনৈতিক পরিস্থিতির কারণে আপনার পরিবারের যত্ন নেওয়ার জন্য আপনার কি সমস্যা হচ্ছে? যিহোবাতে অপেক্ষা করার মধ্যে টাকাপয়সা অর্জন করার জন্য সন্দেহজনক অথবা অবৈধ কাজগুলো এড়িয়ে চলা অন্তর্ভুক্ত। (গীতসংহিতা ৩৭:২৫; ইব্রীয় ১৩:১৮) হ্যাঁ, আমাদের সকলকে আমাদের পরিস্থিতিগুলোকে সর্বোত্তমভাবে কাজে লাগানোর জন্য কঠোর পরিশ্রম এবং যিহোবার আশীর্বাদ লাভ করার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করতে হবে। আর তা করার সময় আসুন আমরা সর্বোত্তম সমাধানের জন্য যিহোবাতে অপেক্ষা করার ক্ষেত্রে দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ হই।—মীখা ৭:৭.
অমূল্য রত্ন
কোনো কিছুই যেন আপনাকে পুরস্কার থেকে বঞ্চিত না করে
১১ আমরা যদি প্রকৃতই প্রেমময় ও সদয় হওয়ার জন্য কঠোর প্রচেষ্টা করি, তা হলে আমরা সহজেই ঈর্ষান্বিত হয়ে যাব না। ঈশ্বরের বাক্য বলে: “প্রেম চিরসহিষ্ণু, প্রেম মধুর,” বা সদয় এবং “ঈর্ষা করে না।” (১ করি. ১৩:৪) ঈর্ষা যাতে আমাদের ব্যক্তিত্বের একটা অংশ হয়ে না ওঠে, সেই বিষয়টা নিশ্চিত করার জন্য বিভিন্ন বিষয়কে আমাদের যিহোবার মতো করে দেখার চেষ্টা করতে হবে। আমাদের ভাই-বোনদের একই দেহের অর্থাৎ মণ্ডলীর অংশ হিসেবে দেখতে হবে। বাইবেল বলে: “এক অঙ্গ গৌরব প্রাপ্ত হইলে তাহার সহিত সকল অঙ্গই আনন্দ করে।” (১ করি. ১২:১৬-১৮, ২৬) আমাদের কোনো ভাইয়ের প্রতি যদি ভালো কিছু ঘটে, তা হলে আমরা তার প্রতি ঈর্ষান্বিত হওয়ার পরিবর্তে তার জন্য আনন্দিত হব। রাজা শৌলের ছেলে যোনাথনের উত্তম উদাহরণের বিষয়ে চিন্তা করুন। যোনাথনের পরিবর্তে যখন দায়ূদকে রাজা হিসেবে মনোনীত করা হয়েছিল, তখন যোনাথন ঈর্ষান্বিত হননি। এর পরিবর্তে, তিনি এমনকী দায়ূদকে উৎসাহ ও সমর্থন জুগিয়েছিলেন। (১ শমূ. ২৩:১৬-১৮) আমরা কি যোনাথনের মতো সদয় ও প্রেমময় হতে পারি?
এপ্রিল ২৫–মে ১
ঈশ্বরের বাক্যের গুপ্তধন | ১ শমূয়েল ২৫-২৬
“আপনি কি চিন্তাভাবনা না করেই কাজ করেন?”
তিনি বিচক্ষণতার সঙ্গে পদক্ষেপ নিয়েছিলেন
১০ সেই পরিশ্রমী সৈন্যরা এই মেষপালকদের সঙ্গে কেমন ব্যবহার করেছিল? তারা চাইলে যখন-তখন মেষ চুরি করতে পারত কিন্তু তারা এইরকম কিছুই করেনি। এর পরিবর্তে, তারা নাবলের মেষপাল ও দাসদের রক্ষা করেছিল। (পড়ুন, ১ শমূয়েল ২৫:১৫, ১৬.) সেখানে মেষ ও মেষপালকরা অনেক বিপদের সম্মুখীন হতো। অনেক হিংস্র পশু ছিল আর ইস্রায়েলের দক্ষিণ সীমান্ত এত কাছে ছিল যে, বাইরের চোরডাকাতরা প্রায়ই আক্রমণ করত।
১১ সেই প্রান্তরে এত এত লোকের জন্য খাবার জোগানো এক বিরাট দায়িত্ব ছিল। তাই, একদিন দায়ূদ সাহায্য চেয়ে নাবলের কাছে দশ জন বার্তাবাহককে পাঠিয়েছিলেন। দায়ূদ বিজ্ঞতার সঙ্গে সময় বাছাই করেছিলেন। সেটা ছিল লোম ছেদনের উৎসবের সময়, যে-সময় উদারতা দেখানোর ও ভোজনপান করার প্রথা ছিল। এ ছাড়া, দায়ূদ শব্দ বাছাইয়ের ব্যাপারেও বেশ সতর্ক ছিলেন, সম্বোধন করার সময় সম্মানজনক শব্দ ব্যবহার করেছিলেন। এমনকী তিনি নিজেকে ‘আপনার পুত্ত্র দায়ূদ’ বলে উল্লেখ করেছিলেন, নাবল যে তার চেয়ে বড়ো ছিলেন সম্ভবত সেটার এক সম্মানপূর্বক স্বীকারোক্তি ছিল। কিন্তু, নাবল কেমন প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিলেন?—১ শমূ. ২৫:৫-৮.
১২ তিনি ক্রোধে ফেটে পড়েছিলেন! “তিনি তাহাদিগকে লাঞ্ছনা করিলেন,” এই কথাগুলো বলেই প্রবন্ধের শুরুতে উল্লেখিত যুবক অবীগলকে ঘটনার বর্ণনা দিয়েছিল। কৃপণ স্বভাবের নাবল তার বহুমূল্য রুটি, জল ও বধ করা পশুর মাংসের জন্য চিৎকার করে অভিযোগ করেছিলেন। তিনি দায়ূদকে এক তুচ্ছ ব্যক্তি হিসেবে উপহাস করেছিলেন এবং তাকে এক পলাতক দাসের সঙ্গে তুলনা করেছিলেন। নাবলের দৃষ্টিভঙ্গি হয়তো শৌলের মতো ছিল, যিনি দায়ূদকে ঘৃণা করতেন। এই দুই ব্যক্তির মধ্যে কারোরই যিহোবার মতো দৃষ্টিভঙ্গি ছিল না। ঈশ্বর দায়ূদকে ভালোবাসতেন এবং তাকে একজন বিদ্রোহী দাস হিসেবে নয় কিন্তু ইস্রায়েলের ভাবী রাজা হিসেবে দেখেছিলেন।—১ শমূ. ২৫:১০, ১১, ১৪.
তিনি বিচক্ষণতার সঙ্গে পদক্ষেপ নিয়েছিলেন
১৮ তিনি সমস্যার দায়ভার নিজের ওপর নিয়েছিলেন এবং তাকে ক্ষমা করে দেওয়ার জন্য দায়ূদের কাছে অনুরোধ জানিয়েছিলেন। তিনি যুক্তিযুক্তভাবে স্বীকার করেছিলেন যে, তার স্বামীর নামের অর্থ অনুযায়ী তার স্বামী মূর্খ ছিলেন আর এই কথার দ্বারা সম্ভবত ইঙ্গিত করছিলেন যে, এইরকম একজন ব্যক্তিকে শাস্তি দেওয়া দায়ূদের জন্য মর্যাদাহানিকর হবে। তিনি যিহোবার প্রতিনিধি হিসেবে দায়ূদের ওপর আস্থা রেখেছিলেন আর এভাবে স্বীকার করেছিলেন যে, দায়ূদ ‘সদাপ্রভুরই জন্য যুদ্ধ’ করছিলেন। এ ছাড়া, তিনি এও ইঙ্গিত দিয়েছিলেন যে, তিনি দায়ূদ ও তার রাজত্ব সম্বন্ধীয় যিহোবার প্রতিজ্ঞার বিষয়ে জানতেন, কারণ তিনি বলেছিলেন: “সদাপ্রভু . . . আপনাকে ইস্রায়েলের উপরে অধ্যক্ষপদে নিযুক্ত করিবেন।” তা ছাড়া, তিনি দায়ূদকে এমন কোনো পদক্ষেপ না নিতে বিনীত অনুরোধ করেছিলেন, যেটা হয়তো দায়ূদকে রক্তপাতের দোষে দোষী করতে পারে অথবা পরবর্তী সময়ে তার ‘শোকের হেতু’ হতে পারে, যে-কথার দ্বারা স্পষ্টতই বিবেকের দংশনকে বোঝায়। (পড়ুন, ১ শমূয়েল ২৫:২৪-৩১.) কতই-না সদয় ও হৃদয়গ্রাহী কথা!
অমূল্য রত্ন
তিনি বিচক্ষণতার সঙ্গে পদক্ষেপ নিয়েছিলেন
১৬ তার মানে কি এই যে, অবীগল তার স্বামীর ন্যায্য মস্তকপদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছিলেন? না; মনে রাখবেন যে নাবল যিহোবার একজন অভিষিক্ত দাসের বিরুদ্ধে মন্দ আচরণ করেছিলেন, যে-আচরণ নাবলের পরিবারের অনেক নিরীহ সদস্যের মৃত্যু ঘটাতে পারত। অবীগল যদি পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হতেন, তবে তিনিও কি তার স্বামীর অপরাধের অংশী হতেন? এই ক্ষেত্রে, অবীগলকে তার স্বামীর প্রতি বশীভূত থাকার চেয়ে বরং ঈশ্বরের প্রতি বশীভূত থাকাকে অগ্রাধিকার দিতে হতো।