“ভয় করিও না, আমি তোমার সাহায্য করিব”
যিশু তাঁর অনুসারীদের পূর্বেই সাবধান করে দিয়েছিলেন: “পরীক্ষার জন্য দিয়াবল তোমাদের কাহাকেও কাহাকেও কারাগারে নিক্ষেপ করিতে উদ্যত আছে।” কিন্তু, সেই সাবধানবাণী দেওয়ার আগে, যিশু এই কথা বলেছিলেন: “তোমাকে যে সকল দুঃখ ভোগ করিতে হইবে, তাহাতে ভয় করিও না।” যেহেতু শয়তান রাজ্যের প্রচার কাজকে বন্ধ করার এক মাধ্যম হিসেবে ক্রমাগত কারাগারে নিক্ষেপ করার হুমকি দেয়, তাই এই সম্ভাবনা রয়েছে যে, কিছু সরকারের দ্বারা সত্য খ্রিস্টানরা তাড়িত হবে। (প্রকা. ২:১০; ১২:১৭) অতএব, কী আমাদেরকে শয়তানের মন্দ পরিকল্পনার জন্য প্রস্তুত হতে এবং যিশুর উপদেশ অনুযায়ী ‘ভয় না করিতে’ সাহায্য করবে?
অবশ্য, আমাদের মধ্যে অধিকাংশেরই কোনো না কোনো সময়ে ভয় পাওয়ার অভিজ্ঞতা রয়েছে। তবে, ঈশ্বরের বাক্য আমাদের আশ্বাস দেয় যে, যিহোবার সাহায্যে আমরা ভয়ের কাছে নতিস্বীকার করা এড়িয়ে চলতে পারি। কীভাবে? একটা যে-উপায়ে যিহোবা আমাদেরকে বিরোধিতার সঙ্গে মোকাবিলা করার জন্য প্রস্তুত হতে সাহায্য করেন, তা হল শয়তান ও তার প্রতিনিধিদের দ্বারা ব্যবহৃত কলাকৌশল শনাক্ত করার মাধ্যমে। (২ করি. ২:১১) কীভাবে আমরা তা করতে পারি, সেটা বোঝার জন্য আসুন আমরা বাইবেলের সময়ের একটা ঘটনা বিবেচনা করি। এ ছাড়া, আমরা আধুনিক দিনের কিছু বিশ্বস্ত সহবিশ্বাসীর উদাহরণও লক্ষ করব, যারা ‘দিয়াবলের নানাবিধ চাতুরীর সম্মুখে দাঁড়াইয়াছিল।’—ইফি. ৬:১১-১৩.
একজন ঈশ্বরভয়শীল রাজা এক মন্দ শাসকের মুখোমুখি হন
সাধারণ কাল পূর্ব অষ্টম শতাব্দীতে, অশূরের মন্দ রাজা সন্হেরীব পর পর বেশ কয়েকটা জাতিকে জয় করেছিলেন। অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসী হয়ে, তিনি এরপর যিহোবার লোকেদের ও তাদের রাজধানী যিরূশালেমকে জয় করার ব্যাপারে দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ হয়েছিলেন, যেখানে ঈশ্বরভয়শীল ব্যক্তি হিষ্কিয়, রাজা হিসেবে শাসন করছিলেন। (২ রাজা. ১৮:১-৩, ১৩) কোনো সন্দেহ নেই যে, শয়তান সেই পরিস্থিতিকে স্বীয়স্বার্থে কাজে লাগাচ্ছিল, তার মন্দ পরিকল্পনাগুলোকে বাস্তবায়িত করার জন্য সন্হেরীবকে প্ররোচিত করেছিল, যাতে পৃথিবী থেকে সত্য উপাসনাকে বিলুপ্ত করা যেতে পারে।—আদি. ৩:১৫.
সন্হেরীব এই দাবি জানিয়ে যিরূশালেমে এক প্রতিনিধিদল পাঠিয়েছিলেন, যেন সেই নগর আত্মসমর্পণ করে। সেই প্রতিনিধিদলের মধ্যে রব্শাকিও ছিলেন, যিনি রাজার প্রধান মুখপাত্র হিসেবে কাজ করতেন।a (২ রাজা. ১৮:১৭) রব্শাকির লক্ষ্য ছিল যিহুদিদের মনোবল ভেঙে দেওয়া এবং কোনোরকম যুদ্ধ ছাড়াই তাদেরকে হাল ছেড়ে দিতে বাধ্য করা। যিহুদিদেরকে ভয় দেখানোর প্রচেষ্টায় রব্শাকি কোন পন্থাগুলো ব্যবহার করেছিলেন?
বিচ্ছিন্ন হওয়া সত্ত্বেও বিশ্বস্ত
হিষ্কিয়ের প্রতিনিধিদের রব্শাকি এই কথা বলেছিলেন: “রাজাধিরাজ অশূর-রাজ এই কথা কহেন, তুমি যে সাহস করিতেছ, সে কেমন সাহস? . . . দেখ, তুমি ঐ থেঁৎলা নলরূপ যষ্টিতে, অর্থাৎ মিসরের উপরে নির্ভর করিতেছ; কিন্তু যে কেহ তাহার উপরে নির্ভর করে, সে তাহার হস্তে ফুটিয়া তাহা বিদ্ধ করে।” (২ রাজা. ১৮:১৯, ২১) রব্শাকির অভিযোগ মিথ্যা ছিল কারণ হিষ্কিয় মিশরের সঙ্গে কোনো সন্ধিস্থাপন করেননি। যাই হোক, এই অভিযোগ যে-বিষয়টার ওপর জোর দিয়েছিল, তা হল রব্শাকি চেয়েছিলেন যেন যিহুদিরা স্পষ্টভাবে এই বিষয়টা মনে রাখে: ‘কেউই তোমাদের সাহায্য করবে না। তোমরা একা—বিচ্ছিন্ন।’
আরও সাম্প্রতিক সময়ে, সত্য উপাসনার বিরোধীরাও একইভাবে সত্য খ্রিস্টানদের ভয় দেখানোর প্রচেষ্টায় বিচ্ছিন্ন করে দেওয়ার হুমকি ব্যবহার করেছে। একজন খ্রিস্টান বোন, যিনি তার বিশ্বাসের কারণে বেশ কয়েক বছর কারাগারে ছিলেন এবং সহবিশ্বাসীদের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন ছিলেন, তিনি পরবর্তী সময়ে বর্ণনা করেছিলেন যে, কোন বিষয়টা তাকে ভয়ের কাছে নতিস্বীকার না করতে সাহায্য করেছিল। তিনি বলেছিলেন: “প্রার্থনা আমাকে যিহোবার নিকটবর্তী হতে সাহায্য করেছিল . . . আমি যিশাইয় ৬৬:২ পদের এই আশ্বাসবাণী মনে রেখেছিলাম যে, ঈশ্বর ‘দুঃখী, ভগ্নাত্মা ব্যক্তির প্রতি’ দৃষ্টিপাত করেন। এই বিষয়টা সবসময়ই আমার কাছে শক্তি ও প্রচুর সান্ত্বনার এক উৎস ছিল।” একইভাবে, কয়েক বছর নিঃসঙ্গ কারাগারে ছিলেন এমন একজন ভাই বলেছিলেন: “আমি উপলব্ধি করতে পেরেছিলাম যে, কারগারের চার দেওয়ালও এক নিখিলবিশ্ব হয়ে উঠতে পারে, যখন একজন ব্যক্তি ঈশ্বরের সঙ্গে এক অন্তরঙ্গ সম্পর্ক উপভোগ করেন।” হ্যাঁ, যিহোবার সঙ্গে এক ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক এই দুজন খ্রিস্টানকে সেই শক্তি প্রদান করেছিল, যা বিছিন্নতার সঙ্গে মোকাবিলা করার জন্য প্রয়োজন। (গীত. ৯:৯, ১০) তাদের তাড়নাকারীরা তাদেরকে পরিবার, বন্ধুবান্ধব এবং সহবিশ্বাসীদের কাছ থেকে পৃথক করতে পারে কিন্তু কারাবন্দি সাক্ষিরা জানত যে, তাদের বিরোধীরা কখনো তাদেরকে যিহোবার কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন করতে পারবে না।—রোমীয় ৮:৩৫-৩৯.
তাই, এটা কতই না গুরুত্বপূর্ণ যে, যিহোবার সঙ্গে আমাদের সম্পর্ককে শক্তিশালী করার জন্য আমরা যেন প্রতিটা সুযোগের সদ্ব্যবহার করি! (যাকোব ৪:৮) নিজেদেরকে নিয়মিতভাবে এই প্রশ্নগুলো জিজ্ঞেস করা উচিত: ‘যিহোবা আমার কাছে কতখানি বাস্তব? তাঁর বাক্যগুলো কি আমাকে রোজকার জীবনে, ছোটো-বড়ো যেকোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় গভীরভাবে প্রভাবিত করে?’ (লূক ১৬:১০) আমরা যদি ঈশ্বরের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রাখার জন্য কঠোর পরিশ্রম করি, তাহলে আমাদের ভয় পাওয়ার কোনো কারণ নেই। ভাববাদী যিরমিয়, দুর্দশাগ্রস্ত যিহুদিদের হয়ে বলেছিলেন: “হে সদাপ্রভু, আমি অগাধলোকস্থ কূপের মধ্য হইতে তোমার নাম ডাকিয়াছি . . . যে দিন আমি তোমাকে ডাকিয়াছি, সেই দিন তুমি নিকটে আসিয়াছ, বলিয়াছ, ভয় করিও না।”—বিলাপ ৩:৫৫-৫৭.
সন্দেহের বীজ বপন করা ব্যর্থ হয়
সন্দেহের বীজ বপন করার প্রচেষ্টায় রব্শাকি ধূর্ত যুক্তি ব্যবহার করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন: “[সদাপ্রভু] কি সেই নহেন, যাঁহার উচ্চস্থলী ও যজ্ঞবেদি সকল হিষ্কিয় দূর করিয়াছে? . . . সদাপ্রভুই আমাকে বলিয়াছেন, তুমি ঐ দেশে গিয়া উহা ধ্বংস কর।” (২ রাজা. ১৮:২২, ২৫) এভাবে রব্শাকি যুক্তি দেখিয়েছিলেন যে, যিহোবা তাঁর লোকেদের হয়ে যুদ্ধ করবেন না কারণ তিনি তাদের প্রতি অসন্তুষ্ট। কিন্তু, এটা সত্য ছিল না। হিষ্কিয় এবং সেই যিহুদিদের প্রতি যিহোবা সন্তুষ্ট ছিলেন, যারা পুনরায় সত্য উপাসনা শুরু করেছিল।—২ রাজা. ১৮:৩-৭.
বর্তমানে, মন্দ পরিকল্পনাকারীরা সেই ব্যক্তিদের সঙ্গে মতৈক্য স্থাপন করার উদ্দেশ্যে তাদেরকে কিছুটা সত্য এমন তথ্য জানিয়ে থাকে কিন্তু সন্দেহের বীজ বপন করার প্রচেষ্টায় তারা সেই সত্যকে সূক্ষ্মভাবে মিথ্যার সঙ্গে মিলিয়ে বিকৃত করে। উদাহরণস্বরূপ, কারাবন্দি ভাই ও বোনদের মাঝে মাঝে বলা হয়েছিল যে, তাদের দেশে যে-ভাই নেতৃত্ব দিচ্ছেন, তিনি তার বিশ্বাস ত্যাগ করেছেন আর তাই তাদেরও তা করা এবং তাদের দৃঢ়প্রত্যয়কে ত্যাগ করা ভুল হবে না। কিন্তু, এই ধরনের যুক্তি সেই খ্রিস্টানদের মধ্যে সন্দেহ জাগিয়ে তুলতে ব্যর্থ হয়, যারা বিচক্ষণ।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় একজন খ্রিস্টান বোনের প্রতি কী ঘটেছিল, তা বিবেচনা করুন। কারাগারে থাকাকালীন, তাকে একটা লিখিত বিবৃতি দেখানো হয়েছিল, যা ইঙ্গিত দিয়েছিল যে, একজন দায়িত্বপ্রাপ্ত ভাই তার বিশ্বাস পরিত্যাগ করেছেন। যিনি জেরা করছিলেন, তিনি জিজ্ঞেস করেছিলেন যে, ওই বোন সেই সাক্ষিকে বিশ্বাস করেন কি না। বোন উত্তর দিয়েছিলেন, “[তিনি] তো কেবল একজন অসিদ্ধ মানুষ।” বোন আরও বলেছিলেন যে, যতক্ষণ পর্যন্ত তিনি বাইবেলের নীতিগুলো অনুসরণ করেছেন, ততক্ষণ পর্যন্ত ঈশ্বর তাকে ব্যবহার করেছেন। “কিন্তু, তার বিবৃতি যেহেতু বাইবেলের বিপরীত, তাই তিনি আর আমার ভাই নন।” সেই বিশ্বস্ত বোন বিজ্ঞতার সঙ্গে বাইবেলের এই উপদেশ অনুসরণ করেছিলেন: “তোমরা নির্ভর করিও না রাজন্যগণে, বা মনুষ্য-সন্তানে, যাহার নিকটে ত্রাণ নাই।”—গীত. ১৪৬:৩.
ঈশ্বরের বাক্যের তত্ত্বজ্ঞান বা সঠিক জ্ঞান থাকা ও এটির পরামর্শ প্রয়োগ করা আমাদেরকে এমন যেকোনো প্রতারণামূলক যুক্তি থেকে সুরক্ষা করবে, যা স্থির থাকার ব্যাপারে আমাদের সংকল্পকে দুর্বল করে দিতে পারে। (ইফি. ৪:১৩, ১৪; ইব্রীয় ৬:১৯) তাই, চাপপূর্ণ পরিস্থিতিতে থাকাকালীন আমরা যেন স্পষ্টভাবে চিন্তা করার জন্য প্রস্তুত থাকতে পারি, সেইজন্য আমাদের প্রতিদিন বাইবেল পড়া ও ব্যক্তিগত অধ্যয়নকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। (ইব্রীয় ৪:১২) হ্যাঁ, আমাদের জ্ঞানকে গভীর করার ও বিশ্বাসকে শক্তিশালী করার সময় এখনই। একজন ভাই, যিনি অনেক বছর নিঃসঙ্গ কারাগারে ছিলেন, তিনি বলেছিলেন: “আমি প্রত্যেককে, আমাদেরকে জোগানো সমস্ত আধ্যাত্মিক খাদ্যের প্রতি সঠিক উপলব্ধি দেখানোর জন্য উৎসাহিত করতে চাই, যেহেতু আমরা জানি না যে, সেগুলো কোনো এক সময় ঠিক কীভাবে আমাদের কাছে মূল্যবান হয়ে উঠবে।” বস্তুতপক্ষে, আমরা যদি ঈশ্বরের বাক্য এবং বর্তমানে দাস শ্রেণীর দ্বারা জোগানো প্রকাশনাগুলো মনোযোগপূর্বক অধ্যয়ন করি, তাহলে জীবনের সংকটময় মুহূর্তগুলোতে পবিত্র আত্মা আমাদেরকে আমরা যা শিখেছি, সেগুলো “স্মরণ করাইয়া দিবেন।”—যোহন ১৪:২৬.
ভয়ের বিরুদ্ধে সুরক্ষিত
রব্শাকি যিহুদিদের ভয় দেখানোর চেষ্টা করেছিলেন। “তুমি এক বার আমার প্রভু অশূর-রাজের কাছে পণ কর,” তিনি বলেছিলেন, “আমি তোমাকে দুই সহস্র অশ্ব দিব, যদি তুমি তদারোহী লোক দিতে পার। তবে কেমন করিয়া আমার প্রভুর ক্ষুদ্রতম দাসগণের মধ্যে এক জন সেনাপতিকে হটাইয়া দিবে?” (২ রাজা. ১৮:২৩, ২৪) মানুষের দৃষ্টিকোণ থেকে হিষ্কিয় ও তার লোকেদের পক্ষে শক্তিশালী অশূরীয় সেনাবাহিনীকে প্রতিরোধ করা অসম্ভব ছিল।
বর্তমানেও, তাড়নাকারীদের অনেক শক্তিশালী বলে মনে হতে পারে, বিশেষ করে যখন তারা সরকারি কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে সমর্থন লাভ করে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় নাতসি তাড়নাকারীদের বেলায় তেমনটাই হয়েছিল। তারা ঈশ্বরের অনেক দাসকে ভয় দেখানোর চেষ্টা করেছিল। আমাদের একজন ভাই, যিনি অনেক বছর কারাগারে ছিলেন, তিনি পরে বর্ণনা করেছিলেন যে, কীভাবে তাকে হুমকি দেওয়া হয়েছিল। একবার, একজন কর্মকর্তা তাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন: “তুই কি দেখেছিস, তোর ছোটো ভাইকে কীভাবে গুলি করা হয়েছে? সেটা থেকে তুই কী শিখেছিস?” ভাই উত্তরে বলেছিলেন: “আমি যিহোবার একজন সাক্ষি আর তা-ই থাকব।” “তাহলে, এরপরে তোকে গুলি করা হবে,” সেই কর্মকর্তা হুমকি দিয়েছিলেন। তা সত্ত্বেও, আমাদের ভাই দৃঢ় থেকেছিলেন আর শত্রুরা তাকে ভয় দেখানো থেকে বিরত হয়েছিল। কী তাকে এইরকম এক হুমকির সঙ্গে মোকাবিলা করতে সাহায্য করেছিল? তিনি উত্তর দিয়েছিলেন: “আমি সদাপ্রভুর নামের ওপর নির্ভর করেছিলাম।”—হিতো. ১৮:১০.
যিহোবার ওপর পূর্ণ বিশ্বাস থাকায়, আমরা বিশ্বাসের এক বড়ো ঢাল বহন করি, যা আমাদেরকে শয়তানের সেই সমস্ত উপায় থেকে রক্ষা করে, যেগুলো সে আমাদেরকে আধ্যাত্মিকভাবে ক্ষতি করার জন্য ব্যবহার করে। (ইফি. ৬:১৬) তাই, আমাদের বিশ্বাসকে শক্তিশালী করতে সাহায্য করার জন্য প্রার্থনায় যিহোবার কাছে যাচ্ঞা করা উত্তম। (লূক ১৭:৫) এ ছাড়া, বিশ্বস্ত দাস শ্রেণী আমাদের বিশ্বাসকে শক্তিশালী করার মতো যে-ব্যবস্থাগুলো জুগিয়ে থাকে, সেগুলোর সদ্ব্যবহার করতে হবে। আমরা যখন হুমকির মুখোমুখি হই, তখন আমরা ভাববাদী যিহিষ্কেলকে দেওয়া যিহোবার আশ্বাস সম্বন্ধে স্মরণ করে শক্তিপ্রাপ্ত হই, যাকে একগুঁয়ে লোকেদের সঙ্গে মোকাবিলা করতে হয়েছিল। যিহোবা তাকে বলেছিলেন: “আমি তাহাদের মুখের প্রতিকূলে তোমার মুখ, এবং কপালের প্রতিকূলে তোমার কপাল দৃঢ় করিলাম। যে হীরক চক্মকি পাথর হইতেও দৃঢ়, তাহার ন্যায় আমি তোমার কপাল দৃঢ় করিলাম।” (যিহি. ৩:৮, ৯) প্রয়োজনে যিহোবা আমাদেরকে হিরের মতো দৃঢ় হতে সাহায্য করতে পারেন, যেমনটা যিহিষ্কেলকে হতে সাহায্য করেছিলেন।
প্রলোভনগুলো প্রতিরোধ করা
বিরোধীরা দেখেছে যে, যখন তাদের সমস্ত পন্থা ব্যর্থ হয়, তখন পুরস্কারের লোভ দেখানো মাঝে মাঝে একজন ব্যক্তির নীতিনিষ্ঠাকে ভেঙে ফেলতে পরিচালিত করতে পারে। রব্শাকিও এই পন্থা কাজে লাগিয়েছিলেন। তিনি যিরূশালেমের লোকেদের বলেছিলেন: “অশূর-রাজ এই কথা কহেন, তোমরা আমার সঙ্গে সন্ধি কর, বাহির হইয়া আমার কাছে আইস . . . পরে আমি আসিয়া তোমাদের নিজ দেশের ন্যায় এক দেশে, শস্য ও দ্রাক্ষারসের দেশে, রুটী ও দ্রাক্ষাক্ষেত্রের দেশে, এবং তৈলদায়ক জিতবৃক্ষ ও মধুর দেশে তোমাদিগকে লইয়া যাইব; তাহাতে তোমরা বাঁচিবে, মরিবে না।” (২ রাজা. ১৮:৩১, ৩২) নতুন রুটি ও নতুন দ্রাক্ষারস পান করার প্রত্যাশা নিশ্চয়ই সেই লোকেদের কাছে খুবই লোভনীয় বলে মনে হয়েছিল, যারা অবরুদ্ধ নগরের প্রাচীরের ভিতরে ছিল!
একবার, এইরকম এক প্রত্যাশা একজন কারাবন্দি মিশনারির দৃঢ়সংকল্পকে দুর্বল করে দেওয়ার প্রচেষ্টায় ব্যবহার করা হয়েছিল। তাকে বলা হয়েছিল যে, ছয় মাসের জন্য তাকে “সুন্দর বাগানের” এক “মনোরম গৃহে” নিয়ে যাওয়া হবে, যাতে তিনি এই ব্যাপারে চিন্তা করতে সমর্থ হন। কিন্তু, সেই ভাই আধ্যাত্মিকভাবে সতর্ক ছিলেন এবং তার খ্রিস্টীয় নীতিগুলোর ব্যাপারে আপোশ করেননি। কী তাকে সাহায্য করেছিল? পরবর্তী সময়ে তিনি ব্যাখ্যা করেছিলেন: “রাজ্যকে সবসময় আমি এক প্রকৃত আশা বলে বিবেচনা করতাম। . . . ঈশ্বরের রাজ্য সম্বন্ধীয় জ্ঞানের দ্বারা শক্তিপ্রাপ্ত হওয়ায়, সেই সম্বন্ধে নিশ্চিত থাকায় এবং এক মুহূর্তের জন্যও এই বিষয়ে সন্দেহ না করায়, তারা আমাকে আমার বিশ্বাস থেকে টলাতে পারেনি।”
ঈশ্বরের রাজ্য আমাদের কাছে কতখানি বাস্তব? কুলপতি অব্রাহাম, প্রেরিত পৌল এবং স্বয়ং যিশু, কঠিন পরীক্ষাগুলো সহ্য করতে সমর্থ হয়েছিল কারণ তাদের কাছে রাজ্য এক বাস্তব বিষয় ছিল। (ফিলি. ৩:১৩, ১৪; ইব্রীয় ১১:৮-১০; ১২:২) আমরা যদি ক্রমাগত রাজ্যকে আমাদের জীবনে প্রথমে রাখি এবং এর স্থায়ী আশীর্বাদগুলোর কথা মনে রাখি, তাহলে আমরাও পরীক্ষাগুলো থেকে সাময়িকভাবে রেহাই পাওয়ার প্রস্তাব গ্রহণ করার প্রলোভন প্রতিরোধ করতে পারব।—২ করি. ৪:১৬-১৮.
যিহোবা আমাদের পরিত্যাগ করবেন না
যিহুদিদের ভয় দেখানোর ব্যাপারে রব্শাকির সমস্ত প্রচেষ্টা সত্ত্বেও, হিষ্কিয় এবং তার প্রজারা যিহোবার ওপর দৃঢ়ভাবে নির্ভর করেছিল। (২ রাজা. ১৯:১৫, ১৯; যিশা. ৩৭:৫-৭) ফলে, যিহোবাও একজন দূত পাঠানোর মাধ্যমে সাহায্যের জন্য করা তাদের প্রার্থনার উত্তর দিয়েছিলেন, যে-দূত এক রাতের মধ্যেই অশূরীয় শিবিরের ১,৮৫,০০০ জন যোদ্ধাকে বধ করেছিলেন। ঠিক পরের দিনই, সন্হেরীব তার অল্পসংখ্যক অবশিষ্ট সৈন্য নিয়ে অবমানিত হয়ে রাজধানী নীনবীতে ফিরে গিয়েছিলেন।—২ রাজা. ১৯:৩৫, ৩৬.
স্পষ্টতই, যিহোবা সেই ব্যক্তিদের পরিত্যাগ করেননি, যারা তাঁর ওপর নির্ভর করেছিল। আমাদের আধুনিক দিনের সেই ভাই ও বোনেরা, যারা পরীক্ষার মধ্যে দৃঢ় থাকে, তাদের উদাহরণ দেখায় যে, বর্তমানেও যিহোবার ক্ষেত্রে একই বিষয় সত্য। তাই, উত্তম কারণেই আমাদের স্বর্গীয় পিতা আমাদের এই আশ্বাস দেন: “আমি সদাপ্রভু তোমার ঈশ্বর তোমার দক্ষিণ হস্ত ধারণ করিব; তোমাকে বলিব, ভয় করিও না, আমি তোমার সাহায্য করিব।”—যিশা. ৪১:১৩.
[পাদটীকা]
a “রব্শাকি” ছিল একজন বিখ্যাত অশূরীয় কর্মকর্তার আখ্যা। সেই ব্যক্তির ব্যক্তিগত নাম এই বিবরণে প্রকাশ করা হয়নি।
[১৩ পৃষ্ঠার ব্লার্ব]
তাঁর বাক্যে যিহোবা বহুবার তাঁর দাসদের এই আশ্বাস দিয়েছেন: ‘ভয় করিও না’
[১২ পৃষ্ঠার চিত্র]
কীভাবে রব্শাকির কলাকৌশল, বর্তমানে ঈশ্বরের লোকেদের শত্রুদের দ্বারা ব্যবহৃত কলাকৌশলের সমরূপ?
[১৫ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]
যিহোবার সঙ্গে এক ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক আমাদেরকে পরীক্ষার মধ্যেও নীতিনিষ্ঠা বজায় রাখতে সমর্থ করে