আমরা আমাদের নীতিনিষ্ঠায় চলব!
“আমি নিজ সিদ্ধতায় [“নীতিনিষ্ঠায়,” NW] চলিব।”—গীত. ২৬:১১.
১, ২. ইয়োব তার নীতিনিষ্ঠা সম্বন্ধে কী বলেছিলেন এবং ইয়োব ৩১ অধ্যায়ে তার সম্বন্ধে কী ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে?
প্রাচীনকালে বিভিন্ন দ্রব্যসামগ্রী প্রায়ই দাঁড়িপাল্লায় ওজন করা হতো। এটা সাধারণত একটা আনুভূমিক কাঠ বা দণ্ড দিয়ে গঠিত ছিল, যেটা এর মাঝখানে একটা পিনকে কেন্দ্র করে ভারসাম্য বজায় রাখে। সেই দণ্ডের দু-পাশে একটা করে পাত্র ঝোলানো থাকত। যে-দ্রব্য ওজন করা হতো, সেটা একটা পাত্রে আর অন্য পাত্রে বাটখারা রাখা হতো। ঈশ্বরের লোকেদের ন্যায্য দাঁড়িপাল্লা বা নিক্তি ও বাটখারা ব্যবহার করতে হতো।—হিতো. ১১:১.
২ ঈশ্বরভয়শীল ব্যক্তি ইয়োব যখন শয়তানের আক্রমণের কারণে কষ্টভোগ করছিলেন, তখন তিনি এই কথা বলেছিলেন: “[সদাপ্রভু] ধর্ম্মনিক্তিতে আমাকে তৌল করুন, ঈশ্বর আমার সিদ্ধতা [“নীতিনিষ্ঠা,” NW] জ্ঞাত হউন।” (ইয়োব ৩১:৬) তখন ইয়োব বেশ কিছু পরিস্থিতি সম্বন্ধে উল্লেখ করেছিলেন, যেগুলো একজন নীতিনিষ্ঠ ব্যক্তিকে পরীক্ষায় ফেলতে পারে। কিন্তু, ইয়োব আসলে সফলভাবে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছিলেন, যেমনটা ইয়োব ৩১ অধ্যায়ে তার লিপিবদ্ধ কথাগুলোতে পরোক্ষভাবে প্রকাশ করা হয়েছে। তার চমৎকার উদাহরণ যেন আমাদেরকেও একই উপায়ে আচরণ করতে এবং গীতরচক দায়ূদের মতো দৃঢ়প্রত্যয়ের সঙ্গে এই কথা বলতে অনুপ্রাণিত করে: “আমি নিজ নীতিনিষ্ঠায় চলিব।”—গীত.২৬:১১.
৩. কেন আমাদের ছোটো-বড়ো সমস্ত বিষয়ে ঈশ্বরের প্রতি বিশ্বস্ত থাকা গুরুত্বপূর্ণ?
৩ যদিও ইয়োব চরমভাবে পরীক্ষিত হয়েছিলেন কিন্তু তিনি ঈশ্বরের প্রতি বিশ্বস্ত ছিলেন। কেউ কেউ হয়তো বলতে পারে যে, ইয়োবের চরম পরীক্ষাগুলো এবং দৃঢ় নীতিনিষ্ঠা বজায় রাখা ছিল বীরোচিত এক কাজ। আমরা ঠিক ইয়োবের মতো কষ্টভোগ করছি না। কিন্তু, আমাদের ছোটো-বড়ো সমস্ত বিষয়ে ঈশ্বরের প্রতি বিশ্বস্ত থাকতে হবে, যদি আমরা নীতিনিষ্ঠ ব্যক্তি ও তাঁর সার্বভৌমত্বের সমর্থক হিসেবে আমাদের অবস্থানকে দৃঢ় রাখতে চাই।—পড়ুন, লূক ১৬:১০.
নৈতিক দিক দিয়ে নীতিনিষ্ঠা অপরিহার্য
৪, ৫. একজন নীতিনিষ্ঠ ব্যক্তি হিসেবে ইয়োব কোন আচরণ এড়িয়ে চলেছিলেন?
৪ যিহোবার প্রতি আমাদের নীতিনিষ্ঠা বজায় রাখার জন্য আমাদের তাঁর নৈতিক মানগুলো মেনে চলতে হবে, ঠিক যেমনটা ইয়োব মেনে চলেছিলেন। তিনি দৃঢ়তার সঙ্গে বলেছিলেন: “আমি নিজ চক্ষুর সহিত নিয়ম করিয়াছি; অতএব যুবতীর প্রতি কটাক্ষপাত কেন করিব? . . . আমার হৃদয় যদি রমণীতে মুগ্ধ হইয়া থাকে, প্রতিবাসীর দ্বারের নিকটে যদি আমি লুকাইয়া থাকি, তবে আমার স্ত্রী পরের জন্য যাঁতা পেষণ করুক, অন্য লোকে তাহাকে ভোগ করুক!”—ইয়োব ৩১:১, ৯, ১০.
৫ ঈশ্বরের প্রতি নীতিনিষ্ঠা বজায় রাখার জন্য দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ হয়ে ইয়োব কোনো নারীর প্রতি কামবাসনা সহকারে তাকানো এড়িয়ে চলেছিলেন। একজন বিবাহিত ব্যক্তি হিসেবে তিনি কোনো অবিবাহিত নারীর সঙ্গে প্রেমের ভান করেননি কিংবা অন্য পুরুষের স্ত্রীর সঙ্গে রোমান্টিক সম্পর্ক স্থাপনের চেষ্টা করেননি। যিশু পর্বতেদত্ত উপদেশে যৌন নৈতিকতার বিষয়ে এক জোরালো উক্তি করেছিলেন আর এই বিষয়টা নিশ্চিতভাবেই নীতিনিষ্ঠ ব্যক্তিদের মনে রাখতে হবে।—পড়ুন, মথি ৫:২৭, ২৮.
কখনো প্রতারণাপূর্ণ পদ্ধতিগুলো অবলম্বন করবেন না
৬, ৭. (ক) ইয়োবের ক্ষেত্রে যেমন দেখা যায়, তেমনই ঈশ্বর আমাদের নীতিনিষ্ঠা পরিমাপ করার জন্য কী ব্যবহার করেন? (খ) কেন আমরা প্রতারণাপূর্ণ বা ছলনাপূর্ণ হব না?
৬ আমরা প্রতারণাপূর্ণ উপায়গুলো অবলম্বন করতে পারি না, যদি আমরা নীতিনিষ্ঠ ব্যক্তিদের মধ্যে গণিত হতে চাই। (পড়ুন, হিতোপদেশ ৩:৩১-৩৩.) ইয়োব বলেছিলেন: “আমি যদি অলীকতার সহচর হইয়া থাকি, আমার চরণ যদি ছলের পথে দৌড়িয়া থাকে, তিনি [সদাপ্রভু] ধর্ম্মনিক্তিতে আমাকে তৌল করুন, ঈশ্বর আমার সিদ্ধতা [“নীতিনিষ্ঠা,” NW] জ্ঞাত হউন।” (ইয়োব ৩১:৫, ৬) যিহোবা সমস্ত মানবজাতিকে “ধর্ম্মনিক্তিতে” বা সঠিক দাঁড়িপাল্লায় ওজন করেন। ইয়োবের ক্ষেত্রে যেমন দেখা যায়, তেমনই ঈশ্বর তাঁর উৎসর্গীকৃত দাস হিসেবে আমাদের নীতিনিষ্ঠা পরিমাপ করার জন্য তাঁর ন্যায়বিচারের নিখুঁত মানদণ্ড ব্যবহার করেন।
৭ আমরা যদি প্রতারণাপূর্ণ বা ছলনাপূর্ণ হই, তাহলে আমরা ঈশ্বরের প্রতি আমাদের নীতিনিষ্ঠা বজায় রাখতে পারব না। নীতিনিষ্ঠ ব্যক্তিরা ‘লজ্জার গুপ্ত কার্য্যসমূহ জলাঞ্জলি দিয়াছে’ এবং ‘ধূর্ত্ততায় চলে না।’ (২ করি. ৪:১, ২) কিন্তু, কী হবে যদি আমরা কথায় ও কাজে প্রতারণাপূর্ণ হই আর এই কারণে কোনো সহবিশ্বাসীকে ঈশ্বরের কাছে সাহায্যের জন্য মিনতি করতে হয়? তাহলে আমাদের পরিণতি খুবই দুঃখজনক হবে! “আমি সঙ্কটে সদাপ্রভুকে ডাকিলাম, তিনি আমাকে উত্তর দিলেন,” গীতরচক গেয়েছিলেন। “সদাপ্রভু, আমার প্রাণ মিথ্যাবাদী ওষ্ঠাধর হইতে, প্রতারক জিহ্বা হইতে রক্ষা কর।” (গীত. ১২০:১, ২) এই বিষয়টা মনে রাখা উত্তম যে, ঈশ্বর আমাদের ভিতরের ব্যক্তিকে দেখতে পারেন, আমরা অকৃত্রিম নীতিনিষ্ঠ ব্যক্তি কি না, তা নির্ধারণ করার জন্য আমাদের ‘অন্তঃকরণ ও মর্ম্মের পরীক্ষা’ করেন।—গীত. ৭:৮, ৯.
অন্যদের সঙ্গে আচরণ করার সময় উদাহরণযোগ্য হোন
৮. ইয়োব অন্যদের সঙ্গে কীভাবে আচরণ করেছিলেন?
৮ আমাদের নীতিনিষ্ঠা বজায় রাখার জন্য আমাদের ইয়োবের মতো হতে হবে, যিনি ন্যায়পরায়ণ, নম্র ও অন্যদের প্রতি বিবেচক ছিলেন। তিনি বলেছিলেন: “আমার দাস কি দাসী আমার কাছে অভিযোগ করিলে, যদি তাহাদের বিচারে তাচ্ছিল্য করিয়া থাকি, তবে ঈশ্বর উঠিলে আমি কি করিব? তিনি তত্ত্ব করিলে তাঁহাকে কি উত্তর দিব? যিনি জরায়ু-মধ্যে আমাকে রচনা করিয়াছেন, তিনিই কি উহাকেও রচনা করেন নাই? একই জন কি আমাদিগকে গর্ব্ভে গঠন করেন নাই?”—ইয়োব ৩১:১৩-১৫.
৯. ইয়োব তার দাস-দাসীদের সঙ্গে আচরণ করার সময় কোন গুণাবলি প্রদর্শন করেছিলেন আর এই ক্ষেত্রে আমাদের কীভাবে আচরণ করা উচিত?
৯ এটা স্পষ্ট যে, ইয়োবের দিনে আইন সংক্রান্ত মামলাগুলো মীমাংসা করার জন্য কোনো জটিল প্রক্রিয়া ছিল না। মামলাগুলো নিয়ম অনুযায়ী পরিচালিত হতো আর এমনকী দাস-দাসীদের জন্যও আদালতের দ্বার খোলা ছিল। ইয়োব তার দাস-দাসীদের সঙ্গে আচরণ করার ব্যাপারে ন্যায়পরায়ণ ও করুণাময় ছিলেন। আমরা যদি নিজেদের নীতিনিষ্ঠায় চলতে চাই, তাহলে আমাদের এই ধরনের গুণাবলি প্রদর্শন করতে হবে, বিশেষভাবে আমরা যদি খ্রিস্টীয় মণ্ডলীতে প্রাচীন হিসেবে সেবা করি।
উদার হোন, লোভী হবেন না
১০, ১১. (ক) কীভাবে আমরা জানি যে, ইয়োব উদার এবং সাহায্যকারী ছিলেন? (খ) ইয়োব ৩১:১৬-২৫ পদ আমাদেরকে পরবর্তীতে দেওয়া কোন শাস্ত্রীয় পরামর্শ মনে করিয়ে দিতে পারে?
১০ ইয়োব স্বার্থপর ও লোভী নন বরং উদার ও সাহায্যকারী ছিলেন। তিনি বলেছিলেন: “আমি যদি . . . বিধবার নয়ন নিস্তেজ করিয়া থাকি, যদি আমার খাদ্য একা খাইয়া থাকি, পিতৃহীন তাহার কিছু খাইতে না পাইয়া থাকে, . . . যখন আমি কাহাকেও বস্ত্রাভাবে মৃতকল্প দেখিয়াছি, . . . নগরদ্বারে নিজ সহায়কে দেখিতে পাওয়াতে, যদি পিতৃহীনের বিপরীতে হাত তুলিয়া থাকি; তবে আমার স্কন্ধের অস্থি খসিয়া পড়ুক, আমার বাহু সন্ধি হইতে পড়িয়া যাউক।” আর ইয়োব তার নীতিনিষ্ঠা বজায় রাখতে পারতেন না, যদি তিনি স্বর্ণকে এই কথা বলতেন: “তুমি মম আশ্রয়।”—ইয়োব ৩১:১৬-২৫.
১১ এই ধরনের কাব্যিক অভিব্যক্তিগুলো হয়তো আমাদেরকে শিষ্য যাকোবের এই কথাগুলো মনে করিয়ে দেয়: “ক্লেশাপন্ন পিতৃমাতৃহীনদের ও বিধবাদের তত্ত্বাবধান করা, এবং সংসার হইতে আপনাকে নিষ্কলঙ্করূপে রক্ষা করাই পিতা ঈশ্বরের কাছে শুচি ও বিমল ধর্ম্ম।” (যাকোব ১:২৭) এ ছাড়া, আমরা যিশুর এই সতর্কবাণী মনে করতে পারি: “সাবধান, সর্ব্বপ্রকার লোভ হইতে আপনাদিগকে রক্ষা করিও, কেননা উপচিয়া পড়িলেও মনুষ্যের সম্পত্তিতে তাহার জীবন হয় না।” এরপর যিশু একজন ধনী লোভী ব্যক্তি সম্বন্ধে একটা দৃষ্টান্ত তুলে ধরেছিলেন, যিনি “ঈশ্বরের উদ্দেশে ধনবান্ নয়” এমন ব্যক্তি হিসেবে মারা গিয়েছিলেন। (লূক ১২:১৫-২১) নীতিনিষ্ঠ ব্যক্তি হতে চাইলে আমরা পাপপূর্ণ লোভের কাছে নতিস্বীকার করব না। লোভ হচ্ছে প্রতিমাপূজা কারণ একজন লোভী ব্যক্তি যে-বিষয়টার জন্য আকুলভাবে কামনা করেন, সেটা যিহোবার কাছ থেকে তার মনোযোগকে বিক্ষিপ্ত করে আর এভাবে একটা প্রতিমা হয়ে ওঠে। (কল. ৩:৫) নীতিনিষ্ঠা ও লোভ একসঙ্গে থাকতে পারে না!
সত্য উপাসনাকে দৃঢ়ভাবে ধরে রাখুন
১২, ১৩. প্রতিমাপূজা এড়িয়ে চলার ক্ষেত্রে ইয়োব কোন উদাহরণ স্থাপন করেছিলেন?
১২ নীতিনিষ্ঠ ব্যক্তিরা সত্য উপাসনা থেকে বিপথগামী হয় না। ইয়োব বিপথগামী হননি কারণ তিনি দৃঢ়তার সঙ্গে বলেছিলেন: “যখন তেজোময় প্রভাকরকে দেখিয়াছি, সজ্যোৎস্না-বিহারী চন্দ্রকে দেখিয়াছি, তখন যদি আমার মন গোপনে মুগ্ধ হইয়া থাকে, আমার মুখ যদি হস্তকে চুম্বন করিয়া থাকে, তবে তাহাও বিচারকর্ত্তাদের শাসনীয় অপরাধ হইত, কেননা তাহা হইলে ঊর্দ্ধ্ববাসী ঈশ্বরকে অস্বীকার করিতাম।”—ইয়োব ৩১:২৬-২৮.
১৩ ইয়োব কোনো জড় বস্তুর উপাসনা করেননি। যদি তার হৃদয় গোপনে আকাশের বিভিন্ন বস্তু যেমন, চাঁদকে দেখে মুগ্ধ হতো এবং তার ‘মুখ যদি হস্তকে চুম্বন করিত,’ তাহলে তিনি এমন একজন প্রতিমাপূজক হতেন, যিনি ঈশ্বরকে জলাঞ্জলি দিয়েছেন কারণ হাত দিয়ে চুম্বন ছুঁড়ে দেওয়া হয়তো প্রতিমাপূজা করার এক ভঙ্গি হবে। (দ্বিতীয়. ৪:১৫, ১৯) ঈশ্বরের প্রতি আমাদের নীতিনিষ্ঠা বজায় রাখার জন্য আমাদের সমস্ত ধরনের প্রতিমাপূজা এড়িয়ে চলতে হবে।—পড়ুন, ১ যোহন ৫:২১.
প্রতিহিংসাপরায়ণ বা কপট হবেন না
১৪. কেন আমরা বলতে পারি যে, ইয়োব বিদ্বেষপরায়ণ ছিলেন না?
১৪ ইয়োব বিদ্বেষপরায়ণ কিংবা নিষ্ঠুর ছিলেন না। তিনি জানতেন যে, এই ধরনের বৈশিষ্ট্য নীতিনিষ্ঠার অভাবকে প্রকাশ করবে কারণ তিনি বলেছিলেন: “আমার বিদ্বেষীর বিপদে কি আনন্দ করিয়াছি? তাহার অমঙ্গলে কি উল্লাসিত হইয়াছি? . . . আমার মুখকে পাপ করিতে দিই নাই; অভিশাপসহ উহার প্রাণ যাচ্ঞা করি নাই।”—ইয়োব ৩১:২৯, ৩০.
১৫. যারা আমাদের ঘৃণা করে, তাদের ওপর দুর্দশা আসতে দেখে আনন্দ করা কেন ভুল?
১৫ ন্যায়নিষ্ঠ ব্যক্তি ইয়োব কখনো সেই ব্যক্তিদের ওপর দুর্দশা আসতে দেখে আনন্দিত হতেন না, যারা তাকে ঘৃণা করত। পরবর্তীতে একটা প্রবাদবাক্য এই সতর্কবাণী দিয়েছিল: “তোমার শত্রুর পতনে আনন্দ করিও না, সে নিপাতিত হইলে তোমার চিত্ত উল্লাসিত না হউক; পাছে সদাপ্রভু তাহা দেখিয়া অসন্তুষ্ট হন, এবং তাহার উপর হইতে আপন ক্রোধ ফিরান।” (হিতো. ২৪:১৭, ১৮) যিহোবা যেহেতু হৃদয় পড়তে পারেন, তাই তিনি জানেন যে, আমরা গোপনে কোনো ব্যক্তির ওপর দুর্দশা আসতে দেখে আনন্দিত হচ্ছি কি না এবং তিনি নিশ্চিতভাবেই এই ধরনের মনোভাবকে অনুমোদন করেন না। (হিতো. ১৭:৫) ঈশ্বর হয়তো আমাদের সঙ্গে সেভাবেই আচরণ করতে পারেন কারণ তিনি বলেন: “প্রতিশোধ ও প্রতিফলদান আমারই কর্ম্ম।”—দ্বিতীয়. ৩২:৩৫.
১৬. এমনকী আমরা যদি ধনী না-ও হই, তবুও আমরা কীভাবে অতিথিপরায়ণ হতে পারি?
১৬ ইয়োব অথিতিপরায়ণ ছিলেন। (ইয়োব ৩১:৩১, ৩২) যদি আমরা ধনী না-ও হই, তবুও আমরা ‘অতিথি-সেবায় রত হইতে’ পারি। (রোমীয় ১২:১৩) আমরা অন্যদের সঙ্গে সাধারণ কোনো খাবারদাবার খেতে পারি, এই বিষয়টা মনে রেখে যে, “প্রণয়ভাবের সহিত শাক ভক্ষণ ভাল, তবু দ্বেষভাবের সহিত পুষ্ট গোরু ভাল নয়।” (হিতো. ১৫:১৭) একজন সহনীতিনিষ্ঠ ব্যক্তির সঙ্গে প্রেমময় পরিবেশে এমনকী সাধারণ কোনো খাবারদাবার খাওয়াও উপভোগ্য হতে পারে এবং নিশ্চিতভাবেই আমরা আধ্যাত্মিকভাবে উপকৃত হব।
১৭. কেন আমাদের গুরুতর পাপকে লুকিয়ে রাখার চেষ্টা করা উচিত নয়?
১৭ ইয়োবের আতিথ্য উপভোগ করা নিশ্চয়ই আধ্যাত্মিকভাবে গঠনমূলক ছিল কারণ তিনি কপট ছিলেন না। তিনি সেই ভক্তিহীন লোকেদের মতো ছিলেন না, যারা প্রথম শতাব্দীর মণ্ডলীতে গোপনে প্রবিষ্ট হয়েছিল এবং ‘লাভার্থে মনুষ্যদের তোষামোদ করিয়াছিল।’ (যিহূদা ৩, ৪, ১৬) ইয়োব তার অধর্ম ঢেকে রাখেননি কিংবা ‘তাহার অপরাধ বক্ষঃস্থলে লুকাইয়া’ রাখেননি, এই ভয় পেয়ে যে অন্যেরা সেটা জেনে তাকে অবজ্ঞা করতে পারে। তিনি ঈশ্বরের দ্বারা পরীক্ষিত হতে ইচ্ছুক ছিলেন, যাঁর কাছে তিনি প্রয়োজনীয় যেকোনো ভুল স্বীকার করতে পারতেন। (ইয়োব ৩১:৩৩-৩৭) আমরা যদি কোনো গুরুতর ভুল করে থাকি, তাহলে আমরা যেন নিজেদের সুনাম রক্ষার জন্য সেই অন্যায়কে লুকিয়ে রাখার চেষ্টা না করি। আমরা কীভাবে দেখাতে পারি যে, আমরা নীতিনিষ্ঠা বজায় রাখার চেষ্টা করছি? আমাদের ভুল স্বীকার করে, অনুতপ্ত হয়ে, আধ্যাত্মিক সাহায্য চেয়ে এবং ভুল সংশোধন করার জন্য যথাসাধ্য করে।—হিতো ২৮:১৩; যাকোব ৫:১৩-১৫.
একজন নীতিনিষ্ঠ ব্যক্তি বিচারের মুখোমুখি হন
১৮, ১৯. (ক) কেন এটা বলা যেতে পারে যে, ইয়োব কখনো কাউকে স্বীয়স্বার্থে ব্যবহার করেননি? (খ) যদি ইয়োব অপরাধী হতেন, তাহলে তিনি কী করার জন্য ইচ্ছুক ছিলেন?
১৮ ইয়োব সৎ ও ন্যায্য ছিলেন। তাই, তিনি বলতে পেরেছিলেন: “আমার ভূমি যদি আমার প্রতিকূলে ক্রন্দন করে, তাহার সীতা সকল যদি রোদন করে, আমি যদি বিনা অর্থে তাহার ফলভোগ করিয়া থাকি, তদধিকারীদের প্রাণহানির কারণ হইয়া থাকি, তবে গোমের স্থানে কন্টক উৎপন্ন হউক, যবের স্থানে বিষবৃক্ষ উৎপন্ন হউক।” (ইয়োব ৩১:৩৮-৪০) ইয়োব কখনো অন্যের ভূমি কেড়ে নেননি এবং তিনি তার কর্মীদের স্বীয়স্বার্থে কাজে লাগাননি। তার মতো আমাদেরও ছোটো-বড়ো সমস্ত বিষয়ে যিহোবার প্রতি আনুগত্য বজায় রাখতে হবে।
১৯ তার তিন জন সঙ্গী ও সেইসঙ্গে যুবক ইলীহূর সামনে ইয়োব তার জীবনধারা সম্বন্ধে বলেছিলেন। ইয়োব নিজের “স্বাক্ষর” দ্বারা সত্যায়িত তার জীবন বৃত্তান্তের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করার জন্য যেকোনো ব্যক্তিকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। যদি প্রমাণ হতো যে ইয়োব অপরাধী, তাহলে তিনি শাস্তি ভোগ করার জন্য ইচ্ছুক ছিলেন। তাই, তিনি নিজের মামলা উপস্থাপন করেছিলেন এবং ঐশিক আদালতের বিচারের জন্য অপেক্ষা করেছিলেন। এভাবে “ইয়োবের বাক্য সমাপ্ত” হয়েছিল।—ইয়োব ৩১:৩৫, ৪০.
আপনি নীতিনিষ্ঠা বজায় রাখতে পারেন
২০, ২১. (ক) কেন ইয়োব তার নীতিনিষ্ঠা বজায় রাখতে সমর্থ হয়েছিলেন? (খ) কীভাবে আমরা ঈশ্বরের প্রতি প্রেম গড়ে তুলতে পারি?
২০ ইয়োব তার নীতিনিষ্ঠা বজায় রাখতে সমর্থ হয়েছিলেন কারণ তিনি ঈশ্বরকে ভালোবাসতেন এবং যিহোবা তাকে ভালোবাসতেন ও সাহায্য করতেন। ইয়োব বলেছিলেন: “তুমি আমাকে জীবনদান ও দয়া” বা প্রেমপূর্ণ-দয়া “করিয়াছ, তব তত্ত্বাবধানে মম আত্মার পালন হইতেছে।” (ইয়োব ১০:১২) অধিকন্তু, ইয়োব অন্যদের প্রতি ভালোবাসা দেখিয়েছিলেন, এই বিষয়টা উপলব্ধি করে যে, যেকেউ সহমানবদের প্রতি অনুগত প্রেম দেখানো থেকে বিরত থাকে, তারা সর্বশক্তিমানের প্রতি সশ্রদ্ধ ভয় পরিত্যাগ করে থাকে। (ইয়োব ৬:১৪) নীতিনিষ্ঠ ব্যক্তিরা ঈশ্বর ও প্রতিবেশীদের ভালোবাসে।—মথি ২২:৩৭-৪০.
২১ প্রতিদিন তাঁর বাক্য পড়ার ও সেটি তাঁর সম্বন্ধে যা প্রকাশ করে, তা নিয়ে ধ্যান করার মাধ্যমে আমরা ঈশ্বরের প্রতি প্রেম গড়ে তুলতে পারি। আন্তরিক প্রার্থনায় আমরা যিহোবার প্রশংসা করতে পারি এবং তিনি আমাদের জন্য যে-মঙ্গলসাধন করেন, সেগুলোর জন্য তাঁকে ধন্যবাদ জানাতে পারি। (ফিলি. ৪:৬, ৭) আমরা যিহোবার উদ্দেশে গান গাইতে পারি এবং তাঁর লোকেদের সঙ্গে নিয়মিত মেলামেশা করে উপকৃত হতে পারি। (ইব্রীয় ১০:২৩-২৫) এ ছাড়া, পরিচর্যায় রত হলে এবং “তাঁহার পরিত্রাণ” ঘোষণা করলেও ঈশ্বরের প্রতি আমাদের প্রেম বৃদ্ধি পাবে। (গীত. ৯৬:১-৩) এই উপায়গুলোর মাধ্যমে আমরা সেই গীতরচকের মতো নীতিনিষ্ঠা বজায় রাখতে পারি, যিনি গেয়েছিলেন: “ঈশ্বরের নিকটে থাকা আমারই পক্ষে মঙ্গল; আমি প্রভু সদাপ্রভুর শরণ লইলাম।”—গীত. ৭৩:২৮.
২২, ২৩. যিহোবার সার্বভৌমত্বের সমর্থনকারী হিসেবে কীভাবে আমাদের কাজগুলোকে আগের নীতিনিষ্ঠ ব্যক্তিদের সঙ্গে তুলনা করা যায়?
২২ শত শত বছর ধরে যিহোবা নীতিনিষ্ঠ ব্যক্তিদের বিভিন্ন ধরনের কার্যভার দিয়ে এসেছেন। নোহ একটা জাহাজ নির্মাণ করেছিলেন এবং “ধার্ম্মিকতার প্রচারক” ছিলেন। (২ পিতর ২:৫) যিহোশূয় ইস্রায়েলীয়দের প্রতিজ্ঞাত দেশে নিয়ে যাওয়ায় নেতৃত্ব দিয়েছিলেন কিন্তু তিনি শুধুমাত্র এই কারণে সফল হয়েছিলেন যে, তিনি ‘দিবারাত্র ব্যবস্থা’ পাঠ করেছিলেন এবং সেটার সঙ্গে মিল রেখে কাজ করেছিলেন। (যিহো. ১:৭, ৮) প্রথম শতাব্দীর খ্রিস্টানরা শিষ্য তৈরি করেছিল এবং শাস্ত্র অধ্যয়ন করার জন্য নিয়মিতভাবে মিলিত হয়েছিল।—মথি ২৮:১৯, ২০.
২৩ আমরা ধার্মিকতার প্রচার করার, শিষ্য তৈরি করার, শাস্ত্রীয় পরামর্শ প্রয়োগ করার এবং সভা ও সম্মেলনগুলোতে সহবিশ্বাসীদের সঙ্গে মিলিত হওয়ার মাধ্যমে যিহোবার সার্বভৌমত্বকে সমর্থন করে থাকি। এই ধরনের কাজ আমাদের সাহসী, আধ্যাত্মিকভাবে শক্তিশালী এবং ঈশ্বরের ইচ্ছা সম্পাদনে সফল হতে সাহায্য করে। তা করা আমাদের জন্য খুব কঠিন নয় কারণ আমাদের ওপর আমাদের স্বর্গীয় পিতা ও তাঁর পুত্রের সমর্থন রয়েছে। (দ্বিতীয়. ৩০:১১-১৪; ১ রাজা. ৮:৫৭) অধিকন্তু, আমাদের ওপর ‘ভ্রাতৃসমাজের’ সমর্থন রয়েছে, যারা নিজেরাও তাদের নীতিনিষ্ঠায় চলছে এবং তাদের সার্বভৌম প্রভু হিসেবে যিহোবাকে সম্মান করছে।—১ পিতর ২:১৭.
আপনি কীভাবে উত্তর দেবেন?
• যিহোবার নৈতিক মানকে আমাদের কীভাবে দেখা উচিত?
• বিশেষভাবে ইয়োবের কোন গুণাবলি আপনার কাছে আবেদনময়?
• ইয়োব ৩১:২৯-৩৭ পদে যেমন দেখানো হয়েছে, ইয়োব কীভাবে আচরণ করতেন?
• কেন আমাদের পক্ষে ঈশ্বরের প্রতি আমাদের আনুগত্য বজায় রাখা সম্ভব?
[২৯ পৃষ্ঠার চিত্র]
ইয়োব যিহোবার প্রতি তার নীতিনিষ্ঠা বজায় রেখেছিলেন। আমরাও পারব!
[৩২ পৃষ্ঠার চিত্র]
আমরা আমাদের নীতিনিষ্ঠা বজায় রাখতে পারি!