ক্রমবর্ধিষ্ণু আলোর পথে গমনাগমন করা
“ধার্ম্মিকদের পথ প্রভাতীয় জ্যোতির ন্যায়, যাহা মধ্যাহ্ন পর্য্যন্ত উত্তরোত্তর দেদীপ্যমান হয়।”—হিতোপদেশ ৪:১৮.
১, ২. যিহোবার কাছ থেকে আসা ক্রমবর্ধিষ্ণু আধ্যাত্মিক আলোর ফলে ঈশ্বরের লোকেরা কোন অভিজ্ঞতা লাভ করেছে?
রাতের অন্ধকারের ওপর উদিত সূর্যের যে-প্রভাব রয়েছে, তা আলোর উৎস স্বয়ং যিহোবা ঈশ্বরের চেয়ে ভাল করে আর কেই বা বর্ণনা করতে পারে? (গীতসংহিতা ৩৬:৯) ‘যখন প্রভাতীয় আলো পৃথিবীর প্রান্ত সকল ধরে,’ তখন “ভূমণ্ডল মুদ্রাচিহ্নিত মৃত্তিকাবৎ আকারান্তর প্রাপ্ত হয়, সকলই বস্ত্রের ন্যায় প্রকাশ পায়।” (ইয়োব ৩৮:১২-১৪) সূর্য থেকে আসা ক্রমবর্ধিষ্ণু আলোর কারণে পৃথিবীর বাহ্যিক রূপ আকার লাভ করে এবং স্পষ্ট হয়ে ওঠে, ঠিক যেমন নরম কাদা একটা মুদ্রার প্রতীক থেকে ছাপ ধারণ করার পর এর রূপান্তর ঘটে।
২ এ ছাড়াও, যিহোবা হলেন আধ্যাত্মিক আলোর উৎস। (গীতসংহিতা ৪৩:৩) যদিও জগৎ গভীর অন্ধকারের মধ্যে রয়েছে কিন্তু সত্য ঈশ্বর তাঁর লোকেদের ওপর ক্রমাগত আলো বর্ষণ করছেন। এর ফল কী হচ্ছে? বাইবেল উত্তর দেয়: “ধার্ম্মিকদের পথ প্রভাতীয় জ্যোতির ন্যায়, যাহা মধ্যাহ্ন পর্য্যন্ত উত্তরোত্তর দেদীপ্যমান হয়।” (হিতোপদেশ ৪:১৮) যিহোবার কাছ থেকে আসা ক্রমবর্ধিষ্ণু আলো ক্রমাগত তাঁর লোকেদের পথকে আলোকিত করছে। এটা তাদেরকে সাংগঠনিকভাবে, মতবাদগুলোর ক্ষেত্রে এবং নৈতিকভাবে উন্নতি করতে সাহায্য করছে।
জ্ঞানালোক সাংগঠনিক উন্নতির দিকে পরিচালিত করে
৩. যিশাইয় ৬০:১৭ পদে কী প্রতিজ্ঞা করা হয়েছে?
৩ ভাববাদী যিশাইয়ের মাধ্যমে যিহোবা ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন: “আমি পিত্তলের পরিবর্ত্তে সুবর্ণ, এবং লৌহের পরিবর্ত্তে রৌপ্য আনিব, কাষ্ঠের পরিবর্ত্তে পিত্তল, ও প্রস্তরের পরিবর্ত্তে লৌহ আনিব।” (যিশাইয় ৬০:১৭) নিকৃষ্টমানের বিষয়বস্তুর জায়গায় উৎকৃষ্টমানের বিষয়বস্তু স্থাপন করা যেমন উন্নতিকে নির্দেশ করে, তেমনই যিহোবার সাক্ষিরা ‘যুগান্ত’ অথবা ‘শেষ কাল’ জুড়ে তাদের সাংগঠনিক ব্যবস্থায় বিভিন্ন উন্নতির অভিজ্ঞতা লাভ করছে।—মথি ২৪:৩; ২ তীমথিয় ৩:১.
৪. উনিশশো উনিশ সালে কোন ব্যবস্থা কার্যকর হয়েছিল এবং কীভাবে তা উপকারজনক ছিল?
৪ যিহোবার সাক্ষিরা আগে বাইবেল ছাত্র হিসেবে পরিচিত ছিল আর শেষকালের শুরুতে, বাইবেল ছাত্রদের মণ্ডলীগুলো তাদের প্রাচীন এবং ডিকনদের গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে নির্বাচন করত। কিন্তু, কোনো কোনো প্রাচীনের মধ্যে সুসমাচার প্রচার করার আন্তরিক মনোভাব ছিল না। কেউ কেউ কেবল প্রচার কাজে অংশগ্রহণ করতে অনিচ্ছুকই ছিল না কিন্তু সেইসঙ্গে তাতে অংশগ্রহণ করতে অন্যদেরও নিরুৎসাহিত করেছিল। তাই ১৯১৯ সালে, প্রতিটা মণ্ডলীতে এক নতুন দায়িত্বপদ প্রবর্তন করা হয় আর সেটা হল একজন পরিচর্যা পরিচালক। পরিচর্যা পরিচালক মণ্ডলীর দ্বারা নির্বাচিত হতেন না কিন্তু ঈশ্বরের লোকেদের শাখা অফিস তাকে তার পদে ঈশতান্ত্রিকভাবে নিযুক্ত করত। নিযুক্ত পরিচালকের দায়িত্বগুলোর অন্তর্ভুক্ত ছিল, প্রচার কাজকে সংগঠিত করা, এলাকাগুলোকে ভাগ করে দেওয়া এবং ক্ষেত্রের পরিচর্যায় অংশ নিতে উৎসাহিত করা। এর পরের বছরগুলোতে, রাজ্যের প্রচার কাজের প্রতি বিপুল সাড়া পাওয়া গিয়েছিল।
৫. উনিশশো কুড়ির দশকে কোন উন্নতি বাস্তবে পরিণত হয়?
৫ মণ্ডলীর সকলে এই উৎসাহের দ্বারা আরও উদ্দীপিত হয়েছিল যে, “রাজা এবং তাঁর রাজ্যকে ঘোষণা কর, ঘোষণা কর, ঘোষণা কর,” যা ১৯২২ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ওহাইওর সিডার পয়েন্টে বাইবেল ছাত্রদের সম্মেলনে দেওয়া হয়। ১৯২৭ সালের মধ্যে ক্ষেত্রের পরিচর্যাকে এমনভাবে সংগঠিত করা হয় যে, রবিবারকে ঘরে ঘরে প্রচারে অংশ নেওয়ার জন্য সবচেয়ে ভাল দিন বলে বিবেচনা করা হয়। কেন সেই দিনটিকে বেছে নেওয়া হয়? কারণ রবিবারেই বেশির ভাগ লোকের ছুটি থাকত। আজকে যিহোবার সাক্ষিরাও সেই সময়গুলোতে লোকেদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করার আপ্রাণ চেষ্টা করে একইরকম মনোভাব দেখিয়ে থাকে, যখন তাদের ঘরে থাকার সম্ভাবনা সবচেযে বেশি, যেমন সাপ্তাহিক ছুটির দিন এবং সন্ধ্যার সময়গুলোতে।
৬. উনিশশো একত্রিশ সালে কোন সংকল্প নেওয়া হয় এবং রাজ্যের প্রচার কাজের ওপর তা কেমন প্রভাব ফেলে?
৬ উনিশশো একত্রিশ সালের ২৬শে জুলাই রবিবার দুপুরে রাজ্যের প্রচার কাজ সম্বন্ধে অনেক উৎসাহ পাওয়া যায়, যখন প্রথমে যুক্তরাষ্ট্রের ওহাইওর কলম্বাসের সম্মেলনে এবং পরে পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গায় একটা সংকল্প নেওয়া হয়। সংকল্পের কিছু অংশে বলা হয়: “যিহোবা ঈশ্বরের দাস হিসেবে আমাদের তাঁর নামে কাজ করার এবং তাঁর আদেশের বাধ্য হয়ে যিশু খ্রিস্টের সাক্ষ্য প্রদান করার ও সেইসঙ্গে যিহোবাই যে-সত্য এবং সর্বশক্তিমান ঈশ্বর, তা লোকেদের জানানোর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে; তাই আমরা আনন্দের সঙ্গে সেই নাম গ্রহণ ও ধারণ করি, যা প্রভু ঈশ্বর নিজ মুখে তা দিয়েছেন আর আমরা সেই নামে অর্থাৎ যিহোবার সাক্ষি নামে পরিচিত হতে চাই এবং চাই যেন সেই নামে ডাকা হয়।” (যিশাইয় ৪৩:১০, NW) এই নতুন নাম কত স্পষ্টভাবেই না সেইসমস্ত ব্যক্তির প্রধান কাজ সম্বন্ধে বর্ণনা করে, যারা সেই নাম বহন করে! হ্যাঁ, যিহোবার কাছে তাঁর সমস্ত দাসের করার মতো কাজ ছিল। সার্বিকভাবে, সেই সাড়া সত্যিই উদ্দীপনামূলক ছিল!
৭. উনিশশো বত্রিশ সালে কোন পরিবর্তন দেখা যায় এবং কেন?
৭ অনেক প্রাচীন নম্রভাবে নিজেদেরকে প্রচার কাজে নিয়োজিত করে। তবে, কিছু কিছু জায়গায় নির্বাচিত প্রাচীনরা, জনসাধারণ্যের পরিচর্যায় মণ্ডলীর প্রত্যেকের অংশ নেওয়া উচিত, এই ধারণার যথেষ্ট বিরোধিতা করে। কিন্তু, শীঘ্রই আরও উন্নতি দেখা যায়। ১৯৩২ সালে, মণ্ডলীগুলো প্রহরীদুর্গ পত্রিকার মাধ্যমে প্রাচীন এবং ডিকনদের নির্বাচন করার ব্যবস্থা বন্ধ করে দেওয়ার বিষয়ে নির্দেশনা লাভ করে। এর পরিবর্তে, তাদেরকে সেই আধ্যাত্মিক পুরুষদের নিয়ে গঠিত এক পরিচর্যা কমিটিকে নির্বাচন করতে বলা হয়, যারা জনসাধারণ্যের প্রচার কাজে অংশগ্রহণ করে। তাই, সেইসমস্ত ব্যক্তিকে আস্থা সহকারে তত্ত্বাবধানের দায়িত্ব দেওয়া হয়, যারা সক্রিয়ভাবে পরিচর্যায় অংশ নিত আর এতে কাজ এগিয়ে গিয়েছিল।
ক্রমবর্ধিত আলোর অর্থ আরও উন্নতি
৮. উনিশশো আটত্রিশ সালে কোন উন্নতি লাভ করা হয়?
৮ আলো “উত্তরোত্তর দেদীপ্যমান” হচ্ছিল। ১৯৩৮ সালে নির্বাচনের ব্যবহার একেবারে বাদ দিয়ে দেওয়া হয়। মণ্ডলীর সমস্ত দাসকে ‘বিশ্বস্ত ও বুদ্ধিমান্ দাসের’ তত্ত্বাবধানের অধীনে ঈশতান্ত্রিকভাবে নিযুক্ত করা হয়। (মথি ২৪:৪৫-৪৭) যিহোবার সাক্ষিদের প্রায় সমস্ত মণ্ডলী এই পরিবর্তন সাগ্রহে মেনে নেয় এবং সাক্ষ্য দেওয়ার কাজ ক্রমাগত ফল উৎপন্ন করে চলে।
৯. উনিশশো বাহাত্তর সালে কোন ব্যবস্থা প্রবর্তন করা হয় এবং কেন তা এক উন্নতি ছিল?
৯ উনিশশো বাহাত্তর সালের ১লা অক্টোবর থেকে মণ্ডলীর তত্ত্বাবধানের দায়িত্বের আরেকটা রদবদল কার্যকারী হয়। সারা পৃথিবীতে যিহোবার সাক্ষিদের মণ্ডলীগুলোতে, কেবল মণ্ডলীর একজন দাস অথবা অধ্যক্ষের দ্বারা তত্ত্বাবধানের দায়িত্বের পরিবর্তে প্রাচীন গোষ্ঠীর দ্বারা তত্ত্বাবধানের দায়িত্বের ব্যবস্থা প্রবর্তন করা হয়। এই নতুন ব্যবস্থা, পরিপক্ব পুরুষদের মণ্ডলীতে নেতৃত্ব নেওয়ার জন্য যোগ্য হতে বিপুল উৎসাহ জুগিয়েছিল। (১ তীমথিয় ৩:১-৭) এর ফলে, অনেক ভাই মণ্ডলীর দায়িত্বগুলোর যত্ন নেওয়ার ক্ষেত্রে অভিজ্ঞতা লাভ করে। যে-অনেক নতুন ব্যক্তিরা বাইবেলের সত্যকে গ্রহণ করে নিয়েছিল, তাদেরকে পালন করার ক্ষেত্রে তারা কত মূল্যবান বলেই না প্রমাণিত হয়!
১০. উনিশশো ছিয়াত্তর সালে কোন ব্যবস্থা বাস্তবায়ন করা হয়?
১০ পরিচালক গোষ্ঠীর সদস্যদেরকে ছয়টা কমিটিতে সংগঠিত করা হয় এবং ১৯৭৬ সালের ১লা জানুয়ারি থেকে, সংগঠনের এবং সারা পৃথিবীর মণ্ডলীগুলোর সমস্ত কাজকর্ম এই কমিটিগুলোর তত্ত্বাবধানের অধীনে নিয়ে আসা হয়। রাজ্যের কাজের সমস্ত দিক ‘অনেক পরামর্শদাতার’ দ্বারা পরিচালিত হওয়া কত আশীর্বাদই না প্রমাণিত হয়!—হিতোপদেশ ১৫:২২; ২৪:৬, বাংলা কমন ল্যাঙ্গুয়েজ ভারসন।
১১. উনিশশো বিরানব্বই সালে কোন উন্নতি দেখা যায় এবং কেন?
১১ উনিশশো বিরানব্বই সালে আরও একটা উন্নতি দেখা গিয়েছিল, যে-উন্নতি ইস্রায়েলীয়রা এবং অন্যান্যরা বাবিলের বন্দিত্ব থেকে ফিরে আসার পর যা ঘটেছিল, সেটার সঙ্গে তুলনীয়। সেই সময়ে মন্দিরের সেবার করার জন্য যথেষ্ট লেবীয় ছিল না। তাই, লেবীয়দের সাহায্য করার জন্য ন-ইস্রায়েলীয় নথীনীয়দের অনেক কাজ দেওয়া হয়েছিল। একইভাবে, বিশ্বস্ত ও বুদ্ধিমান দাস শ্রেণীর বৃদ্ধিরত পার্থিব বিষয়গুলোর দেখাশোনা করার জন্য সাহায্য করতে ১৯৯২ সালে ‘আরও মেষের’ কেউ কেউ সেবা করার আরও দায়িত্ব লাভ করে। তাদেরকে পরিচালক গোষ্ঠীর বিভিন্ন কমিটির সাহায্যকারী হিসেবে নিযুক্ত করা হয়।—যোহন ১০:১৬.
১২. কীভাবে যিহোবা শান্তিকে আমাদের অধ্যক্ষ করেছেন?
১২ এই সমস্তকিছুর ফল কী হয়েছিল? যিহোবা বলেন, “আমি শান্তিকে তোমার অধ্যক্ষ করিব, ধার্ম্মিকতাকে তোমার শাসনকর্ত্তা করিব।” (যিশাইয় ৬০:১৭) আজকে, যিহোবার দাসদের মধ্যে ‘শান্তি’ রয়েছে এবং ‘ধার্ম্মিকতার’ প্রতি ভালবাসা তাদের “শাসনকর্ত্তা” হয়ে উঠেছে, যেটি হল সেই চালিকাশক্তি যা তাদেরকে ঈশ্বরের সেবা করার জন্য অনুপ্রাণিত করে। রাজ্যের প্রচার ও শিষ্য তৈরির কাজ পালন করার জন্য তারা সুসংগঠিত।—মথি ২৪:১৪; ২৮:১৯, ২০.
যিহোবা মতবাদগুলোর ক্ষেত্রে পথকে আলোকিত করেন
১৩. উনিশশো কুড়ির দশকে, কীভাবে যিহোবা মতবাদগুলোর ক্ষেত্রে তাঁর লোকেদের পথকে আলোকিত করেন?
১৩ এ ছাড়া, যিহোবা মতবাদগুলোর ক্ষেত্রেও তাঁর লোকেদের পথকে ধীরে ধীরে আলোকিত করেন। প্রকাশিত বাক্য ১২:১-৯ পদে একটা উদাহরণ রয়েছে। এই বিবরণে তিনটে রূপক চরিত্রের—গর্ভবতী “একটী স্ত্রীলোক,” একটা “নাগ” এবং ‘এক পুত্ত্রসন্তানের’—বিষয়ে উল্লেখ রয়েছে। আপনি কি জানেন, প্রতিটা চরিত্র কাকে চিত্রিত করে? তাদেরকে ১৯২৫ সালের ১লা মার্চ প্রহরীদুর্গ (ইংরেজি) পত্রিকার “জাতির জন্ম” নামক একটা প্রবন্ধে শনাক্ত করা হয়। সেই প্রবন্ধ ঈশ্বরের লোকেদেরকে রাজ্যের জন্ম সম্বন্ধীয় ভবিষ্যদ্বাণীর এক উত্তম বোধগম্যতা প্রদান করে ও সেইসঙ্গে অন্তর্দৃষ্টি দান করার মাধ্যমে এটা স্পষ্ট করে যে, দুটো পৃথক সংগঠন রয়েছে আর সেগুলো হল, যিহোবার সংগঠন এবং শয়তানের সংগঠন। এরপর ১৯২৭/২৮ সালে, ঈশ্বরের লোকেরা বুঝতে পারে যে, বড়দিন এবং জন্মদিন পালন করা অশাস্ত্রীয় আর তাই তারা সেগুলো উদ্যাপন করা বাদ দেয়।
১৪. উনিশশো ত্রিশের দশকে কোন মতবাদ সংক্রান্ত সত্যগুলো স্পষ্ট করা হয়?
১৪ উনিশশো ত্রিশের দশকে তিনটে মতবাদ সংক্রান্ত সত্যের ওপর আরও আলো বর্ষণ করা হয়। কয়েক বছর ধরে বাইবেল ছাত্ররা জানত যে, বিস্তর জনতা অথবা প্রকাশিত বাক্য ৭:৯-১৭ পদে বলা “বিস্তর লোক” সেই ১,৪৪,০০০ জন থেকে আলাদা, যারা রাজা এবং যাজক হিসেবে খ্রিস্টের সঙ্গে শাসন করবে। (প্রকাশিত বাক্য ৫:৯, ১০; ১৪:১-৫) কিন্তু, বিস্তর জনতার পরিচয় অস্পষ্ট রয়ে যায়। ক্রমবর্ধিষ্ণু আলো যেমন অস্পষ্ট বিষয়গুলোর বাহ্যিক রূপ এবং রংকে আরও স্পষ্ট করে তোলে, তেমনই ১৯৩৫ সালে বিস্তর জনতাকে সেইসমস্ত ব্যক্তি হিসেবে শনাক্ত করা হয়, যারা পৃথিবীতে চিরকাল বেঁচে থাকার প্রত্যাশাসহ “মহাক্লেশের” মধ্যে রক্ষা পায়। পরে সেই একই বছরে আরও একটা বিষয় স্পষ্ট করা হয়, যা বেশ কয়েকটা দেশে যিহোবার সাক্ষিদের সেইসমস্ত ছেলেমেয়েকে প্রভাবিত করে, যারা স্কুলে যায়। যদিও সারা পৃথিবীতে স্বদেশভক্তির অনুভূতি অনেক তীব্র হচ্ছিল কিন্তু সাক্ষিরা বুঝতে পারে যে, পতাকা অভিবাদন করা নিছক আনুষ্ঠানিকতার চেয়ে আরও বেশি কিছু। পরের বছর, মতবাদ সংক্রান্ত আরেকটা সত্য ব্যাখ্যা করা হয়েছিল যে, খ্রিস্ট কোনো ক্রুশের ওপর নয় কিন্তু একটা দণ্ডের ওপর মারা গিয়েছিলেন।—প্রেরিত ১০:৩৯.
১৫. কখন এবং কীভাবে রক্তের পবিত্রতার ওপর জোর দেওয়া হয়?
১৫ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর পরই, যে-সময়ে আহত সৈন্যদের রক্ত দেওয়া এক সাধারণ অভ্যাস হয়ে উঠেছিল, সেই সময় রক্তের পবিত্রতার ওপর ক্রমবর্ধিত আলো বর্ষণ করা হয়। ১৯৪৫ সালের ১লা জুলাই প্রহরীদুর্গ (ইংরেজি) পত্রিকা, “ধার্মিকতার নতুন জগতে যারা অনন্তজীবন পেতে চায়, যিহোবার সেইসমস্ত উপাসককে রক্তের পবিত্রতাকে সম্মান করতে এবং এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে ঈশ্বরের ধার্মিক শাসন অনুযায়ী জীবনযাপন করতে” উৎসাহ দেয়।
১৬. কখন পবিত্র শাস্ত্রের নতুন জগৎ অনুবাদ প্রকাশ করা হয় এবং এর দুটো উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য কী?
১৬ উনিশশো ছেচল্লিশ সালে, বাইবেলের এক নতুন অনুবাদ করার প্রয়োজন দেখা দেয়, যেটি আধুনিক জ্ঞানের ভাণ্ডারকে কাজে লাগায় এবং খ্রিস্টীয়জগতের প্রথাগুলোর ওপর ভিত্তি করা ধর্মমতের দ্বারা কলুষিত ছিল না। এইরকম এক অনুবাদের কাজ ১৯৪৭ সালের ডিসেম্বর মাসে শুরু হয়। ১৯৫০ সালে, খ্রিস্টান গ্রিক শাস্ত্রের নতুন জগৎ অনুবাদ ইংরেজিতে প্রকাশ করা হয়। ইব্রীয় শাস্ত্র ইংরেজি ভাষায় পাঁচটা খণ্ডে ১৯৫৩ সাল থেকে ধীরে ধীরে প্রকাশ করা হয়। অনুবাদ প্রকল্প শুরু হওয়ার বারো বছরের একটু বেশি সময় পর, ১৯৬০ সালে শেষ খণ্ডটা প্রকাশ হয়। ১৯৬১ সালে সম্পূর্ণ পবিত্র শাস্ত্রের নতুন জগৎ অনুবাদ একটা খণ্ডে প্রকাশ করা হয়। বর্তমানে অনেক ভাষায় এই অনুবাদ পাওয়া যায়, যার কিছু উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এই অনুবাদে ঐশিক নাম যিহোবা পুনর্স্থাপন করা হয়েছে। অধিকন্তু, মূল লেখাগুলোর আক্ষরিক অনুবাদ, ঐশিক সত্যের বোধগম্যতায় ক্রমাগত উন্নতি করার ক্ষেত্রে ভিত্তি জুগিয়েছে।
১৭. উনিশশো বাষট্টি সালে কোন ক্রমবর্ধিত আলো বর্ষণ করা হয়?
১৭ উনিশশো বাষট্টি সালে, রোমীয় ১৩:১ পদের ‘প্রাধান্যপ্রাপ্ত কর্ত্তৃপক্ষ’ এবং একজন খ্রিস্টান কতদূর পর্যন্ত তাদের বাধ্য থাকবে, সেই সম্বন্ধে স্পষ্ট করা হয়। রোমীয় ১৩ অধ্যায় এবং শাস্ত্রের সেই পদগুলো যেমন তীত ৩:১, ২ ও ১ পিতর ২:১৩, ১৭ এই বিষয়টাকে স্পষ্ট করে যে, ‘প্রাধান্যপ্রাপ্ত কর্ত্তৃপক্ষ’ অভিব্যক্তিটি যিহোবা ঈশ্বর এবং যিশু খ্রিস্টকে নয় বরং মনুষ্য সরকারের কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ করে।
১৮. কিছু সত্য কী, যেগুলো ১৯৮০ এর দশকে স্পষ্ট করা হয়?
১৮ পরবর্তী বছরগুলোতে ধার্মিক ব্যক্তিদের পথ উত্তরোত্তর উজ্জ্বল হতে থাকে। ১৯৮৫ সালে, “জীবনদায়ক” ধার্ম্মিক গণিত হওয়ার এবং ঈশ্বরের বন্ধু হিসেবে ধার্মিক হওয়ার মানে কী, সেটার ওপর আলো বর্ষণ করা হয়। (রোমীয় ৫:১৮; যাকোব ২:২৩) ১৯৮৭ সালে, খ্রিস্টীয় যোবেলের অর্থ পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে ব্যাখ্যা করা হয়।
১৯. সাম্প্রতিক বছরগুলোতে, কীভাবে যিহোবা তাঁর লোকেদের জন্য আরও আধ্যাত্মিক আলো জুগিয়েছেন?
১৯ উনিশশো পঁচানব্বই সালে, “ছাগ” থেকে ‘মেষের’ পৃথকীকরণ সম্বন্ধে আরও স্পষ্টভাবে বোঝা যায়। ১৯৯৮ সালে যিহিষ্কেলের মন্দিরের দর্শন সম্বন্ধে আরও বিস্তারিত ব্যাখ্যা করা হয়, যে-দর্শন ইতিমধ্যে পরিপূর্ণ হতে শুরু করেছে। ১৯৯৯ সালে স্পষ্ট করা হয় যে, কখন এবং কীভাবে ‘ঘৃণার্হ বস্তু পবিত্র স্থানে দাঁড়ায়।’ (মথি ২৪:১৫, ১৬; ২৫:৩২) আর ২০০২ সালে “আত্মায় ও সত্যে” ঈশ্বরকে উপাসনা করার মানে কী, সেই বিষয়ে আরও বোধগম্যতা লাভ করা হয়।—যোহন ৪:২৪.
২০. ঈশ্বরের লোকেরা আর কোন কোন ক্ষেত্রে উন্নতি লাভ করেছে?
২০ সাংগঠনিক এবং মতবাদ সংক্রান্ত উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে খ্রিস্টীয় আচরণের বিষয়েও আরও উন্নতি হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, ১৯৭৩ সালে তামাকের ব্যবহারকে ‘মাংসের মালিন্য’ হিসেবে বিবেচনা করা হয় এবং এটাকে এক গুরুতর অন্যায় হিসেবে দেখা হয়। (২ করিন্থীয় ৭:১) দশ বছর পর, ১৯৮৩ সালের ১৫ই জুলাই প্রহরীদুর্গ (ইংরেজি) পত্রিকা আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবহার সম্বন্ধে আমাদের অবস্থানকে স্পষ্ট করে। এগুলো হল, আমাদের সময়ে ক্রমবর্ধিষ্ণু আলোর মাত্র কয়েকটা উদাহরণ।
ক্রমবর্ধিষ্ণু আলোর পথে গমনাগমন করে চলুন
২১. কোন মনোভাব থাকা আমাদের ক্রমবর্ধিষ্ণু আলোর পথে চলতে সাহায্য করবে?
২১ “কোনো পরিবর্তন করা হলে সেটা মেনে নেওয়া এবং সেই অনুযায়ী কাজ করা কঠিন হতে পারে,” দীর্ঘসময়ের একজন প্রাচীন স্বীকার করেন। ৪৮ বছর ধরে একজন রাজ্য ঘোষণাকারী হিসেবে তিনি যে-অনেক উন্নতি দেখেছেন, সেগুলো মেনে নিতে কী তাকে সাহায্য করেছে? তিনি উত্তর দেন: “সঠিক মনোভাব রাখা হল মূল চাবিকাঠি। কোনো উন্নতি মেনে না নেওয়ার অর্থ হল, সংগঠন এগিয়ে যাওয়ার সময় পিছনে পড়ে থাকা। পরিবর্তনগুলোকে মেনে নেওয়া যদি আমার কাছে কঠিন বলে মনে হয়, তা হলে আমি যিশুর প্রতি বলা পিতরের কথাগুলো নিয়ে চিন্তা করি: ‘প্রভু কাহার কাছে যাইব? আপনার নিকটে অনন্ত জীবনের কথা আছে।’ এরপর আমি নিজেকে জিজ্ঞেস করি, ‘আমিই বা কোথায় যাব—বাইরে জগতের অন্ধকারে?’ এটা আমাকে ঈশ্বরের সংগঠনের সঙ্গে দৃঢ়ভাবে লেগে থাকতে সাহায্য করে।”—যোহন ৬:৬৮.
২২. আলোর পথে চলে আমরা কীভাবে উপকার পাই?
২২ আমাদের চারপাশের জগৎ নিশ্চিতভাবেই গভীর অন্ধকারে রয়েছে। যিহোবা তাঁর লোকেদের ওপর ক্রমাগত আলো বর্ষণ করে চলায় তাদের এবং জগতের লোকেদের মধ্যে ব্যবধান আরও বৃদ্ধি পেয়ে চলেছে। এই আলো আমাদের জন্য কী করে থাকে? সত্যি বলতে কী, অন্ধকার রাস্তায় গর্তের ওপর পড়া আলো যেমন গর্তকে সরিয়ে দিতে পারে না, ঠিক তেমনই ঈশ্বরের বাক্যের আলো ফাঁদগুলো সরিয়ে দেয় না। কিন্তু, ঐশিক আলো নিশ্চিতভাবেই সেগুলো এড়াতে আমাদের সাহায্য করে, যাতে আমরা ক্রমাগত ক্রমবর্ধিষ্ণু আলোর পথে চলতে পারি। তা হলে, আসুন আমরা ‘অন্ধকারময় স্থানে দীপ্তি দেয় এমন প্রদীপের তুল্য’ যিহোবার সেই ভবিষ্যদ্বাণীমূলক বাক্যে ক্রমাগত মনোযোগ দিই।—২ পিতর ১:১৯.
আপনি কি মনে করতে পারেন?
• যিহোবা তাঁর লোকেদের জন্য কোন সাংগঠনিক উন্নতিগুলো করেছেন?
• ক্রমবর্ধিত আলো কোন মতবাদ সংক্রান্ত উন্নতিগুলো নিয়ে এসেছে?
• ব্যক্তিগতভাবে আপনি কোন রদবদলগুলো দেখেছেন এবং কী আপনাকে সেগুলো মেনে নিতে সাহায্য করেছে?
• কেন আপনি ক্রমবর্ধিষ্ণু আলোর পথে ক্রমাগত চলতে চান?
[২৭ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]
১৯২২ সালে, ওহাইওর সিডার পয়েন্টের সম্মেলন, বাইবেল ছাত্রদের ঈশ্বরের কাজ করার জন্য উদ্দীপিত করেছিল
[২৯ পৃষ্ঠার চিত্র]
১৯৫০ সালে, ভাই এন. এইচ. নর “খ্রিস্টান গ্রিক শাস্ত্রের নতুন জগৎ অনুবাদ” প্রকাশ করেছিলেন
[২৬ পৃষ্ঠার চিত্র সৌজন্যে]
© ২০০৩ BiblePlaces.com