যিহোবার মহিমা অননুসন্ধেয়
“সদাপ্রভু মহান্ ও অতীব কীর্ত্তনীয়; তাঁহার মহিমার তত্ত্ব পাওয়া যায় না।”—গীতসংহিতা ১৪৫:৩.
১, ২. দায়ূদ কী ধরনের ব্যক্তি ছিলেন এবং ঈশ্বরের তুলনায় তিনি নিজেকে কীভাবে দেখেছিলেন?
গীতসংহিতা ১৪৫ অধ্যায়ের রচয়িতা হলেন ইতিহাসের সুপরিচিত ব্যক্তিদের মধ্যে একজন। তিনি যখন একজন বালক ছিলেন, তখন এক সশস্ত্র দৈত্যাকৃতি ব্যক্তির মুখোমুখি হয়েছিলেন এবং তাকে হত্যা করেছিলেন। আর যখন একজন যোদ্ধা রাজা ছিলেন, তখন এই গীতরচক অনেক শত্রুকে পরাজিত করেছিলেন। তার নাম ছিল দায়ূদ এবং তিনি ছিলেন প্রাচীন ইস্রায়েলের দ্বিতীয় রাজা। দায়ূদের সুনাম তার মৃত্যুর পরেও ছিল আর তাই এমনকি বর্তমানেও লক্ষ লক্ষ লোক তার সম্বন্ধে কিছু না কিছু জানে।
২ দায়ূদের কৃতিত্ব সত্ত্বেও, নিজের সম্বন্ধে তার এক নম্র দৃষ্টিভঙ্গি ছিল। যিহোবার সম্বন্ধে তিনি গেয়েছিলেন: “আমি তোমার অঙ্গুলি-নির্ম্মিত আকাশমণ্ডল, তোমার স্থাপিত চন্দ্র ও তারকামালা নিরীক্ষণ করি, [বলি], মর্ত্ত্য কি যে, তুমি তাহাকে স্মরণ কর? মনুষ্য-সন্তান বা কি যে, তাহার তত্ত্বাবধান কর?” (গীতসংহিতা ৮:৩, ৪) নিজেকে মহান বলে মনে করার পরিবর্তে, দায়ূদ তার সমস্ত শত্রুর হাত থেকে উদ্ধার পাওয়ার কৃতিত্ব যিহোবাকে দিয়েছিলেন এবং ঈশ্বর সম্বন্ধে বলেছিলেন: “তুমি আমাকে নিজ পরিত্রাণ-ঢাল দিয়াছ, তব কোমলতা আমাকে মহান করিয়াছে।” (২ শমূয়েল ২২:১, ২, ৩৬) পাপীদের করুণা দেখিয়ে যিহোবা কোমলতা প্রদর্শন করেন এবং দায়ূদ ঈশ্বরের অযাচিত দয়ার প্রতি কৃতজ্ঞ ছিলেন।
‘আমি রাজন্ ঈশ্বরের প্রতিষ্ঠা করিব’
৩. (ক) ইস্রায়েলের রাজপদের বিষয়ে দায়ূদের কোন দৃষ্টিভঙ্গি ছিল? (খ) কত সময় পর্যন্ত ঈশ্বরের প্রশংসা করার ইচ্ছা দায়ূদের ছিল?
৩ যদিও দায়ূদ ঈশ্বরের নিযুক্ত রাজা ছিলেন, তিনি যিহোবাকে ইস্রায়েলের প্রকৃত রাজা হিসেবে দেখতেন। দায়ূদ বলেছিলেন: “হে সদাপ্রভু, রাজ্য তোমারই, এবং তুমি সকলের মস্তকরূপে উন্নত।” (১ বংশাবলি ২৯:১১) আর ঈশ্বরকে শাসক হিসেবে দায়ূদ কতই না উপলব্ধি করেছিলেন! “আমি তোমার প্রতিষ্ঠা করিব, হে আমার ঈশ্বর, হে রাজন্,” তিনি গেয়েছিলেন, “আমি অনন্তকাল তোমার নামের ধন্যবাদ করিব। প্রতিদিন আমি তোমার ধন্যবাদ করিব, যুগে যুগে চিরকাল তোমার নামের প্রশংসা করিব।” (গীতসংহিতা ১৪৫:১, ২) প্রতিদিন এবং চিরকাল ধরে যিহোবা ঈশ্বরের প্রশংসা করাই ছিল দায়ূদের ইচ্ছা।
৪. গীতসংহিতা ১৪৫ অধ্যায় কোন মিথ্যা দাবিগুলো প্রকাশ করে?
৪ গীতসংহিতা ১৪৫ অধ্যায় হল, শয়তানের এই দাবির এক জোরালো উত্তর যে, ঈশ্বর হলেন একজন স্বার্থপর শাসক, যিনি তাঁর সৃষ্ট প্রাণীদের কোনো স্বাধীনতা দেন না। (আদিপুস্তক ৩:১-৫) এ ছাড়া, এই গীত শয়তানের এই মিথ্যাকেও প্রকাশ করে দেয় যে, যারা ঈশ্বরের বাধ্য থাকে তারা ঈশ্বরকে ভালবাসে বলে নয় কিন্তু শুধু কিছু পাওয়ার জন্য বাধ্য থাকে। (ইয়োব ১:৯-১১; ২:৪, ৫) দায়ূদের মতো, আজকে সত্য খ্রিস্টানরাও দিয়াবলের মিথ্যা অভিযোগগুলোর উত্তর জুগিয়ে থাকে। তারা রাজ্য শাসনের অধীনে তাদের অনন্তজীবনের আশা ধরে রাখে কারণ তাদের ইচ্ছা হল চিরকাল ধরে যিহোবার প্রশংসা করা। ইতিমধ্যেই লক্ষ লক্ষ ব্যক্তি যিহোবার উৎসর্গীকৃত, বাপ্তাইজিত উপাসক হিসেবে যিশুর মুক্তির মূল্যে বিশ্বাস অনুশীলন করার এবং প্রেমের দ্বারা চালিত হয়ে বাধ্যতার সঙ্গে তাঁকে সেবা করার মাধ্যমে তা করতে শুরু করেছে।—রোমীয় ৫:৮; ১ যোহন ৫:৩.
৫, ৬. যিহোবাকে ধন্যবাদ জানানোর এবং তাঁর প্রশংসা করার কোন সুযোগগুলো রয়েছে?
৫ যিহোবার দাস হিসেবে তাঁর ধন্যবাদ এবং প্রশংসা করার যে-অনেক সুযোগ আমাদের রয়েছে, সেগুলো নিয়ে চিন্তা করুন। প্রার্থনার সময় আমরা তা করতে পারি, যখন আমরা তাঁর বাক্য, বাইবেল থেকে কোনো কিছু পড়ার দ্বারা গভীরভাবে প্রভাবিত হই। কৃতজ্ঞতাপূর্ণ প্রশংসা এবং আনন্দ প্রকাশ করা যেতে পারে, যখন আমরা ঈশ্বর তাঁর লোকেদের সঙ্গে যেভাবে আচরণ করেন, সেটার দ্বারা প্রভাবিত হই অথবা যখন আমরা তাঁর বিস্ময়কর সৃষ্টির কোনো একটা বৈশিষ্ট্য দেখে রোমাঞ্চিত হই। এ ছাড়া, সেই সময়ও আমরা যিহোবা ঈশ্বরকে ধন্যবাদ জানাই, যখন খ্রিস্টীয় সভাগুলোতে বা ব্যক্তিগতভাবে কথাবার্তা বলার সময় সহবিশ্বাসীদের সঙ্গে তাঁর উদ্দেশ্যগুলো নিয়ে আলোচনা করি। বস্তুত, ঈশ্বরের রাজ্যের সমর্থনে করা সমস্ত “সৎক্রিয়া” যিহোবার প্রশংসা নিয়ে আসে।—মথি ৫:১৬.
৬ এই ধরনের সৎক্রিয়া বা উত্তম কাজের সাম্প্রতিক উদাহরণগুলো দারিদ্র-পীড়িত দেশগুলোতে যিহোবার লোকেরা যে-অনেক উপাসনার স্থান নির্মাণ করেছে, সেটাকে অন্তর্ভুক্ত করে। এর বেশির ভাগই করা হয়েছে অন্যান্য দেশের সহবিশ্বাসীদের আর্থিক সহযোগিতার মাধ্যমে। কিছু খ্রিস্টান কিংডম হল নির্মাণ কাজে অংশ নেওয়ার জন্য স্বেচ্ছায় এই ধরনের এলাকায় গিয়ে সাহায্য করেছে। আর সমস্ত উত্তম কাজের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজটা হল, যিহোবার রাজ্যের সুসমাচার প্রচার করে তাঁর প্রশংসা করা। (মথি ২৪:১৪) ১৪৫ গীতের শেষ পদগুলো যেমন দেখায় যে, দায়ূদ ঈশ্বরের শাসনব্যবস্থাকে গভীর উপলব্ধি করেছিলেন এবং তাঁর রাজপদের উচ্চপ্রশংসা করেছিলেন। (গীতসংহিতা ১৪৫:১১, ১২) ঈশ্বরের প্রেমময় শাসন পদ্ধতির প্রতি আপনারও কি একই উপলব্ধি রয়েছে? আর আপনি কি নিয়মিতভাবে তাঁর রাজ্য সম্বন্ধে অন্যদের সঙ্গে কথা বলেন?
ঈশ্বরের মহিমার উদাহরণগুলো
৭. যিহোবার প্রশংসা করার একটা প্রধান কারণ বলুন।
৭ গীতসংহিতা ১৪৫:৩ পদ যিহোবার প্রশংসা করার একটা প্রধান কারণ সম্বন্ধে জানায়। দায়ূদ গেয়েছিলেন: “সদাপ্রভু মহান্ ও অতীব কীর্ত্তনীয়; তাঁহার মহিমার তত্ত্ব পাওয়া যায় না।” যিহোবার মহিমা অসীম। মানুষের দ্বারা পুরোপুরি এর তত্ত্ব পাওয়া, তা বোঝা বা পরিমাপ করা যেতে পারে না। কিন্তু, যিহোবার অননুসন্ধেয় মহিমার উদাহরণগুলো এখন বিবেচনা করে নিশ্চিতভাবে আমরা উপকৃত হব।
৮. বিশ্বব্রহ্মাণ্ড যিহোবার মহিমা এবং শক্তির বিষয়ে কী প্রকাশ করে?
৮ এমন একটা সময়ের কথা মনে করার চেষ্টা করুন, যখন আপনি শহরের উজ্জ্বল আলো থেকে দূরে ছিলেন এবং মেঘমুক্ত রাতের আকাশের দিকে চোখ তুলে তাকিয়েছিলেন। মহাশূন্যের অন্ধকার ভেদ করে অসংখ্য তারার উপস্থিতি দেখে আপনি কি বিস্মিত হয়ে যাননি? এই সমস্ত গ্রহ-নক্ষত্র সৃষ্টি করার ব্যাপারে যিহোবার মহিমা দেখে আপনি কি তাঁর প্রশংসা করার জন্য অনুপ্রাণিত হননি? কিন্তু আপনি যা দেখেছিলেন, তা হল ছায়াপথের অসংখ্য তারার ক্ষুদ্র অংশ মাত্র, যে-ছায়াপথের একটা অংশ হল পৃথিবী। এ ছাড়া, অনুমান করে দেখা গেছে যে, একশো কোটিরও বেশি ছায়াপথ রয়েছে, যেগুলোর মধ্যে মাত্র তিনটাকে টেলিস্কোপের সাহায্য ছাড়া দেখা যেতে পারে। বস্তুত, অসংখ্য তারা এবং ছায়াপথ নিয়ে গঠিত বিশাল বিশ্বব্রহ্মাণ্ড হল যিহোবার সৃজনীশক্তি এবং অননুসন্ধেয় মহিমার এক প্রমাণ।—যিশাইয় ৪০:২৬.
৯, ১০. (ক) যিশু খ্রিস্টের ক্ষেত্রে যিহোবার মহিমার কোন বৈশিষ্ট্যগুলো দেখা গিয়েছে? (খ) যিশুর পুনরুত্থানের বিষয়টা আমাদের বিশ্বাসকে কীভাবে প্রভাবিত করা উচিত?
৯ যিহোবার মহিমার অন্যান্য দিক বিবেচনা করুন—যেগুলো যিশু খ্রিস্টের সঙ্গে জড়িত। ঈশ্বরের মহিমা তাঁর পুত্রকে সৃষ্টি করার এবং তাঁকে তাঁর “কার্য্যকারী [“সুদক্ষ কর্মী,” NW]” হিসেবে অগণিত বছর ব্যবহার করার মাধ্যমে দেখা গিয়েছিল। (হিতোপদেশ ৮:২২-৩১) যিহোবার প্রেমের মহিমা প্রকাশ পেয়েছিল, যখন তিনি তাঁর একমাত্র পুত্রকে মানবজাতির জন্য মুক্তির মূল্য হিসেবে দান করেছিলেন। (মথি ২০:২৮; যোহন ৩:১৬; ১ যোহন ২:১, ২) আর যিশুর পুনরুত্থানের সময় যে-গৌরবান্বিত এবং অমর আত্মিক দেহ যিহোবা রচনা করেছিলেন, তা মানুষের বোধাতীত।—১ পিতর ৩:১৮.
১০ যিশুর পুনরুত্থানের সঙ্গে যিহোবার অননুসন্ধেয় মহিমার অনেক হৃদয়গ্রাহী বৈশিষ্ট্য জড়িত। নিঃসন্দেহে, দৃশ্য এবং অদৃশ্য সৃষ্টির সঙ্গে জড়িত কাজের বিষয়ে যিশুর স্মৃতিকে ঈশ্বর পুনর্স্থাপন করেছিলেন। (কলসীয় ১:১৫, ১৬) এগুলোর অন্তর্ভুক্ত হল অন্যান্য আত্মিক প্রাণী, বিশ্বব্রহ্মাণ্ড, ফলোৎপাদক পৃথিবী এবং আমাদের পৃথিবীর সমস্ত ধরনের জীবন। তাঁর পুত্রের স্বর্গীয় এবং পার্থিব জীবনের সম্পূর্ণ ইতিহাসের জ্ঞান, যা পুত্র মনুষ্যপূর্ব অস্তিত্বের সময়ে প্রত্যক্ষ করেছিলেন, তা পুর্নস্থাপন করা ছাড়াও যিহোবা সিদ্ধ মানুষ হিসেবে যিশুর যে যে অভিজ্ঞতা হয়েছিল, সেগুলোও যুক্ত করেন। হ্যাঁ, যিহোবার অননুসন্ধেয় মহিমা যিশুর পুনরুত্থানের মধ্যে স্পষ্ট হয়। সেইসঙ্গে সেই মহান কাজ হল এক নিশ্চয়তা যে, অন্যদের পুনরুত্থান সম্ভব। এই বিষয়টার আমাদের বিশ্বাসকে শক্তিশালী করা উচিত যে, ঈশ্বর সেই লক্ষ লক্ষ মৃত ব্যক্তিকে জীবন ফিরিয়ে দিতে পারেন, যাদের তিনি তাঁর নিখুঁত স্মৃতিতে রেখেছেন।—যোহন ৫:২৮, ২৯; প্রেরিত ১৭:৩১.
আশ্চর্য এবং পরাক্রম কাজগুলো
১১. সাধারণ কাল ৩৩ সালে যিহোবার কোন মহান কাজগুলো শুরু হয়েছিল?
১১ যিশুর পুনরুত্থানের পর থেকে যিহোবা অন্যান্য অনেক মহান এবং আশ্চর্য কাজ করেছেন। (গীতসংহিতা ৪০:৫) সা.কা. ৩৩ সালের পশ্চাশত্তমীর দিনে, যিহোবা এক নতুন জাতি, ‘ঈশ্বরের “ইস্রায়েলকে”’ অস্তিত্বে এনেছিলেন, যা খ্রিস্টের সেই সমস্ত শিষ্যকে নিয়ে গঠিত ছিল, যারা পবিত্র আত্মার দ্বারা অভিষিক্ত হয়েছিল। (গালাতীয় ৬:১৬) এক পরাক্রম উপায়ে এই নতুন আত্মিক জাতি সেই সময়কার জগতে বিস্তার লাভ করেছিল। ধর্মভ্রষ্টতা যা যিশুর প্রেরিতদের মৃত্যুর পর খ্রিস্টীয়জগতের বৃদ্ধি ঘটিয়েছিল, তা সত্ত্বেও যিহোবা তাঁর উদ্দেশ্যের পরিপূর্ণতা নিশ্চিত করার জন্য আশ্চর্য কাজগুলো করে চলেছিলেন।
১২. পৃথিবীতে সমস্ত প্রধান ভাষায় যে বাইবেল পাওয়া যায়, সেটা কীসের প্রমাণ?
১২ উদাহরণ হিসেবে বাইবেলের প্রামাণিক অংশ সংরক্ষিত হয়েছিল এবং অবশেষে আজকে পৃথিবীতে সমস্ত প্রধান ভাষায় অনুবাদিত হয়েছে। বেশির ভাগ সময়ই কঠিন পরিস্থিতিগুলোতে এবং শয়তানের প্রতিনিধিদের কাছ থেকে আসা মৃত্যুর হুমকির মধ্যে বাইবেলের অনুবাদগুলো করা হয়েছে। এটা নিশ্চিত যে, ২০০০রেরও বেশি ভাষায় বাইবেলের অনুবাদ সম্পাদিত হতে পারত না, যদি না তা অননুসন্ধেয় মহান ঈশ্বর, যিহোবার ইচ্ছা হতো।
১৩. কীভাবে ১৯১৪ সাল থেকে যিহোবার রাজ্যের উদ্দেশ্যগুলোর ক্ষেত্রে তাঁর মহিমা প্রকাশিত হয়েছে?
১৩ যিহোবার মহিমা তাঁর রাজ্যের উদ্দেশ্যগুলোর ক্ষেত্রে প্রকাশিত হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, ১৯১৪ সালে তিনি তাঁর পুত্র, যিশু খ্রিস্টকে স্বর্গীয় রাজা হিসেবে স্থাপন করেছেন। এর পর পরই শয়তান এবং তার মন্দ দূতেদের বিরুদ্ধে যিশু পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। তাদেরকে স্বর্গ থেকে বহিষ্কার করা এবং পৃথিবীর সীমার মধ্যে আবদ্ধ রাখা হয়েছে, যেখানে তারা এখন অগাধলোকে নিক্ষিপ্ত হওয়ার অপেক্ষা করছে। (প্রকাশিত বাক্য ১২:৯-১২; ২০:১-৩) তখন থেকে যিশুর অভিষিক্ত অনুসারীরা অধিকতর তাড়না ভোগ করে আসছে। যাইহোক, খ্রিস্টের এই অদৃশ্য উপস্থিতির সময় যিহোবা তাদের টিকিয়ে রেখেছিলেন।—মথি ২৪:৩, NW;; প্রকাশিত বাক্য ১২:১৭.
১৪. যিহোবা ১৯১৯ সালে কোন আশ্চর্য কাজ করেছিলেন এবং এটা কী সম্পাদন করেছিল?
১৪ যিহোবা ১৯১৯ সালে আরেকটা আশ্চর্য কাজ করেছিলেন, যা তাঁর মহিমা সম্বন্ধে তুলে ধরে। যিশুর অভিষিক্ত অনুসারীরা, যাদের আধ্যাত্মিক নিষ্ক্রিয় অবস্থায় রাখা হয়েছিল, তারা পুনরায় সক্রিয় হয়েছিল। (প্রকাশিত বাক্য ১১:৩-১১) সেই সময়ের পরের বছরগুলো থেকে অভিষিক্ত ব্যক্তিরা উদ্যোগের সঙ্গে প্রতিষ্ঠিত স্বর্গীয় রাজ্যের সুসমাচার প্রচার করে আসছে। ১,৪৪,০০০ জনের সংখ্যা পূর্ণ করার জন্য অন্যান্য অভিষিক্ত ব্যক্তিদের একত্রিত করা হয়েছে। (প্রকাশিত বাক্য ১৪:১-৩) আর খ্রিস্টের অভিষিক্ত অনুসারীদের মাধ্যমে যিহোবা “এক নূতন পৃথিবী,” এক ধার্মিক মানবসমাজের ভিত্তি স্থাপন করেছেন। (প্রকাশিত বাক্য ২১:১) কিন্তু, বিশ্বস্ত অভিষিক্ত ব্যক্তিরা সকলে স্বর্গে চলে যাওয়ার পর, ‘নূতন পৃথিবীর’ কী হবে?
১৫. অভিষিক্ত খ্রিস্টানরা কোন কাজে নেতৃত্ব দিচ্ছে এবং এর ফলাফল কী?
১৫ উনিশশো পঁয়ত্রিশ সালে, এই পত্রিকার ১লা আগস্ট এবং ১৫ই আগস্ট (ইংরেজি) সংখ্যার মধ্যে যে-মূল প্রবন্ধগুলো ছিল, সেগুলো প্রকাশিত বাক্য ৭ অধ্যায়ে বলা “বিস্তর লোক” নিয়ে আলোচনা করেছিল। অভিষিক্ত খ্রিস্টানরা উদ্যোগের সঙ্গে সমস্ত জাতি, বংশ, প্রজাবৃন্দ ও ভাষার মধ্যে থেকে এই সহউপাসকদের খুঁজে বের করতে এবং তাদের সাহচর্যে নিয়ে আসতে শুরু করে। এই “বিস্তর লোক” ‘নূতন পৃথিবীর’ স্থায়ী বাসিন্দা হিসেবে পরমদেশ পৃথিবীতে অনন্তজীবনের আশা সহ আসন্ন “মহাক্লেশের” মধ্যে থেকে রক্ষা পাবে। (প্রকাশিত বাক্য ৭:৯-১৪) অভিষিক্ত খ্রিস্টানদের নেতৃত্বে রাজ্য প্রচার এবং শিষ্য তৈরির কাজের ফলে, এখন ষাট লক্ষেরও বেশি ব্যক্তিকে এক পার্থিব পরমদেশে অশেষ জীবনের আশা রয়েছে। শয়তান এবং তার কলুষিত জগতের কাছ থেকে বিরোধিতা সত্ত্বেও, এই ধরনের বৃদ্ধির জন্য কার কৃতিত্ব পাওয়া উচিত? (১ যোহন ৫:১৯) একমাত্র যিহোবাই তাঁর পবিত্র আত্মা ব্যবহার করে এই সমস্তকিছু সম্পাদন করতে পারেন।—যিশাইয় ৬০:২২; সখরিয় ৪:৬.
যিহোবার গৌরবান্বিত প্রতাপ এবং মর্যাদা
১৬. কেন মানুষেরা আক্ষরিকভাবে ‘যিহোবার মর্যাদার গৌরবযুক্ত প্রতাপ’ দেখতে পারে না?
১৬ যিহোবার “আশ্চর্য্য ক্রিয়া” এবং “পরাক্রমের কার্য্য সকল” যে-ধরনেরই হোক না কেন, সেগুলোকে কখনও ভোলা যাবে না। দায়ূদ লিখেছিলেন: “বংশানুক্রমে এক পুরুষ অন্য পুরুষের কাছে তোমার ক্রিয়া সকলের প্রশংসা করিবে, তোমার পরাক্রমের কার্য্য সকল প্রচার করিবে। তোমার প্রভার [“মর্যাদার,” NW] গৌরবযুক্ত প্রতাপ, ও তোমার আশ্চর্য্য ক্রিয়া সকল আমি ধ্যান করিব। আর লোকে তোমার ভয়াবহ কর্ম্ম সকলের বিক্রমের কথা বলিবে, এবং আমি তোমার মহিমার বর্ণনা করিব।” (গীতসংহিতা ১৪৫:৪-৬) তবুও, যেহেতু “ঈশ্বর আত্মা” আর এর ফলে মানুষের চোখে তিনি অদৃশ্য, তাই যিহোবার গৌরবান্বিত প্রতাপ সম্বন্ধে দায়ূদ কতটা জানতে পারতেন?—যোহন ১:১৮; ৪:২৪.
১৭, ১৮. দায়ূদ কীভাবে ‘যিহোবার মর্যাদার গৌরবযুক্ত প্রতাপের’ প্রতি উপলব্ধি বাড়াতে পেরেছিলেন?
১৭ যদিও দায়ূদ ঈশ্বরকে দেখতে পারতেন না, তবুও যিহোবার মর্যাদার প্রতি উপলব্ধি বাড়ানোর বিভিন্ন উপায় তার জন্য ছিল। উদাহরণস্বরূপ, তিনি ঈশ্বরের পরাক্রম কাজগুলোর শাস্ত্রীয় বিবরণ যেমন, বিশ্বব্যাপী জলপ্লাবনের দ্বারা দুষ্ট জগতের ধ্বংস সম্বন্ধে পড়তে পারতেন। খুব সম্ভবত দায়ূদ জানতে পেরেছিলেন যে, ঈশ্বর যখন মিশরের দাসত্ব থেকে ইস্রায়েলীয়দের উদ্ধার করেছিলেন, তখন মিশরের মিথ্যা দেবতারা কীভাবে অবমানিত হয়েছিল। এই ধরনের ঘটনাগুলো যিহোবার মর্যাদা এবং মহিমার সাক্ষ্য দেয়।
১৮ নিঃসন্দেহে দায়ূদ শুধু শাস্ত্র পড়ার মাধ্যমেই নয় কিন্তু সেগুলো নিয়ে ধ্যান করেও ঈশ্বরের মর্যাদার প্রতি উপলব্ধি বাড়িয়ে তুলেছিলেন। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, তিনি হয়তো যিহোবা যখন ইস্রায়েলকে ব্যবস্থা দিয়েছিলেন, তখন যা হয়েছিল সেটা নিয়ে ধ্যান করেছিলেন। তখন মেঘগর্জন, বিজলীচমক, পর্বতের ওপর নিবিড় মেঘ এবং অত্যন্ত উচ্চরবে তূরীধ্বনি হয়েছিল। সীনয় পর্বত আন্দোলিত এবং ধূমময় হয়েছিল। সীনয় পর্বতের তলে সমবেত ইস্রায়েলীয়রা, এমনকি আগুন এবং মেঘের মধ্যে থেকে “দশ আজ্ঞা” শুনতে পেয়েছিল, যে-সময় যিহোবা এক দূত প্রতিনিধির মাধ্যমে তাদের সঙ্গে কথা বলেছিলেন। (দ্বিতীয় বিবরণ ৪:৩২-৩৬; ৫:২২-২৪; ১০:৪; যাত্রাপুস্তক ১৯:১৬-২০; প্রেরিত ৭:৩৮, ৫৩) যিহোবার মহিমার কী এক প্রকাশ! ঈশ্বরের বাক্যের যে-প্রেমিকরা এই ঘটনাগুলো নিয়ে ধ্যান করে, তারা অবশ্যই ‘যিহোবার মর্যাদার গৌরবযুক্ত প্রতাপের’ দ্বারা প্রভাবিত হবে। অবশ্য, আজকে আমাদের কাছে পুরো বাইবেল আছে, যেটির মধ্যে বিভিন্ন গৌরবান্বিত দর্শন রয়েছে যা যিহোবার মহিমার প্রতি আমাদের প্রভাবিত করে।—যিহিষ্কেল ১:২৬-২৮; দানিয়েল ৭:৯, ১০; প্রকাশিত বাক্য, অধ্যায় ৪.
১৯. কী যিহোবার মর্যাদার প্রতি আমাদের উপলব্ধিকে বাড়াবে?
১৯ আরেকটা যে-উপায়ে দায়ূদ ঈশ্বরের মর্যাদার দ্বারা প্রভাবিত হতে পেরেছিলেন, সেটা হল ইস্রায়েলীয়দের প্রতি ঈশ্বরের দেওয়া আইনগুলো অধ্যয়ন করার মাধ্যমে। (দ্বিতীয় বিবরণ ১৭:১৮-২০; গীতসংহিতা ১৯:৭-১১) যিহোবার আইনগুলো মেনে চলা ইস্রায়েল জাতিকে মর্যাদাসম্পন্ন করেছিল এবং তাদের অন্যান্য সমস্ত জাতি থেকে আলাদা করেছিল। (দ্বিতীয় বিবরণ ৪:৬-৮) দায়ূদের ক্ষেত্রে যেমন সত্য ছিল, ঠিক তেমনই নিয়মিতভাবে শাস্ত্র পড়া, সেগুলো নিয়ে গভীরভাবে ধ্যান করা এবং অধ্যবসায়ের সঙ্গে অধ্যয়ন করা যিহোবার মর্যাদার প্রতি আমাদের উপলব্ধিকে বাড়াবে।
ঈশ্বরের নৈতিক গুণগুলো কত মহান!
২০, ২১. (ক) গীতসংহিতা ১৪৫:৭-৯ পদ কোন গুণগুলো সম্বন্ধে যিহোবার মহিমাকে মহিমান্বিত করে? (খ) যারা ঈশ্বরকে ভালবাসে তাদের সকলের ওপর এখানে উল্লেখিত গুণগুলোর কোন প্রভাব রয়েছে?
২০ আমরা যেমন দেখেছি যে, গীতসংহিতা ১৪৫ অধ্যায়ের প্রথম ছয়টা পদ আমাদেরকে যিহোবার অননুসন্ধেয় মহিমার সঙ্গে যুক্ত বিষয়গুলোর জন্য তাঁর প্রশংসা করার উপযুক্ত কারণগুলো জানায়। ৭ থেকে ৯ পদ ঈশ্বরের নৈতিক গুণগুলোর বিষয়ে উল্লেখ করে ঈশ্বরের মহিমাকে মহিমান্বিত করে। দায়ূদ গান করেন: “তাহারা তোমার মহৎ মঙ্গলভাবের খ্যাতি প্রচার করিবে, তোমার ধর্ম্মশীলতার বিষয় গান করিবে। সদাপ্রভু কৃপাময় ও স্নেহশীল [“সদয় ও করুণাময়, NW], ক্রোধে ধীর ও দয়াতে [“প্রেমপূর্ণ-দয়াতে,” NW] মহান্। সদাপ্রভু সকলের পক্ষে মঙ্গলময়, তাঁহার করুণা তাঁহার কৃত সমস্ত পদার্থের উপরে আছে।”
২১ এখানেই দায়ূদ প্রথম যিহোবার মঙ্গলভাব এবং ধর্মশীলতার বিষয়ে তুলে ধরেন, যে-গুণগুলো নিয়ে শয়তান দিয়াবল প্রশ্ন তুলেছিল। যারা ঈশ্বরকে ভালবাসে এবং তাঁর শাসনের বশীভূত হয়, তাদের ওপর এই গুণগুলোর কোন প্রভাব রয়েছে? যিহোবার মঙ্গলভাব এবং ধার্মিক উপায়ে শাসন করা তাঁর উপাসকদের জন্য এতটাই আনন্দ নিয়ে আসে যে, তারা তাঁর প্রশংসা করা বন্ধ করতে পারে না। সর্বোপরি, যিহোবার মঙ্গলভাব “সকলের পক্ষে” প্রসারিত হয়। আশা করা যায় যে, এটা আরও অনেককে অনুতপ্ত হতে এবং খুব বেশি দেরি হয়ে যাওয়ার আগেই সত্য ঈশ্বরের উপাসক হতে সাহায্য করবে।—প্রেরিত ১৪:১৫-১৭.
২২. যিহোবা তাঁর দাসদের সঙ্গে কেমন ব্যবহার করেন?
২২ দায়ূদ সেই গুণগুলোকেও মূল্য দেন, যেগুলো ঈশ্বর নিজে তুলে ধরেছিলেন যখন তিনি “[মোশির] সম্মুখ দিয়া গমন করতঃ এই ঘোষণা করিলেন, ‘সদাপ্রভু, সদাপ্রভু, স্নেহশীল ও কৃপাময় [“করুণাময় ও সদয়,” NW] ঈশ্বর, ক্রোধে ধীর এবং দয়াতে [“প্রেমপূর্ণ-দয়াতে,” NW] ও সত্যে মহান্।” (যাত্রাপুস্তক ৩৪:৬) তাই, দায়ূদ ঘোষণা করতে পেরেছিলেন: “সদাপ্রভু সদয় ও করুণাময়, ক্রোধে ধীর ও প্রেমপূর্ণ-দয়াতে মহান্।” যদিও যিহোবা অননুসন্ধেয়ভাবে মহান, তবুও তিনি তাঁর মনুষ্য দাসদের সঙ্গে সদয়ভাবে ব্যবহার করে তাদের মর্যাদা দেন। তিনি করুণায় পূর্ণ, যিশুর মুক্তির মূল্যের ভিত্তিতে অনুতপ্ত পাপীদের ক্ষমা করতে ইচ্ছুক। যিহোবা ক্রোধেও ধীর কারণ তিনি তাঁর দাসদের দুর্বলতাগুলো কাটিয়ে ওঠার সুযোগ দেন, যা তাঁর নতুন ধার্মিক জগতে প্রবেশ করার ক্ষেত্রে বাধা হতে পারে।—২ পিতর ৩:৯, ১৩, ১৪.
২৩. পরের প্রবন্ধে আমরা কোন মূল্যবান গুণ নিয়ে আলোচনা করব?
২৩ দায়ূদ যিহোবার প্রেমপূর্ণ-দয়া অথবা অনুগত প্রেমের বিষয়ে উচ্চপ্রশংসা করেছিলেন। বস্তুত, গীতসংহিতা ১৪৫ অধ্যায়ের বাকি পদগুলো দেখায় যে, যিহোবা কীভাবে এই গুণ দেখান এবং কীভাবে তাঁর অনুগত দাসেরা তাঁর প্রেমপূর্ণ-দয়ার প্রতি প্রতিক্রিয়া দেখায়। এই বিষয়গুলো পরের প্রবন্ধে আলোচনা করা হবে।
আপনি কীভাবে উত্তর দেবেন?
• “প্রতিদিন” যিহোবার প্রশংসা করার কোন সুযোগগুলো আমাদের রয়েছে?
• কোন উদাহরণগুলো দেখায় যে, যিহোবার মহিমা অননুসন্ধেয়?
• যিহোবার গৌরবান্বিত মর্যাদার প্রতি কীভাবে আমরা উপলব্ধি বাড়াতে পারি?
[১০ পৃষ্ঠার চিত্র]
বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের ছায়াপথগুলো যিহোবার মহিমার সাক্ষ্য দেয়
[সৌজন্যে]
Courtesy of Anglo-Australian Observatory, photograph by David Malin
[১২ পৃষ্ঠার চিত্র]
যিশু খ্রিস্টের ক্ষেত্রে যিহোবার মহিমা কীভাবে প্রকাশ পেয়েছে?
[১৩ পৃষ্ঠার চিত্র]
ইস্রায়েলীয়রা যখন সীনয় পর্বতে ব্যবস্থা পেয়েছিল, তখন তারা যিহোবার গৌরবান্বিত মর্যাদার প্রমাণ পেয়েছিল