প্রত্যাশায় যিহোবার অপেক্ষায় থাকুন এবং সাহসী হোন
“সদাপ্রভুর অপেক্ষায় থাক; সাহস কর, তোমার অন্তঃকরণ সবল হউক; হাঁ, সদাপ্রভুরই অপেক্ষায় থাক।”—গীতসংহিতা ২৭:১৪.
১. প্রত্যাশা কতটা গুরুত্বপূর্ণ আর এই শব্দটি শাস্ত্রে কীভাবে ব্যবহৃত হয়েছে?
অকৃত্রিম প্রত্যাশা হল এক উজ্জ্বল আলোর মতো। এটা আমাদের বর্তমান পরীক্ষাগুলোকে অতিক্রম করে দেখতে এবং সাহস ও আনন্দের সঙ্গে ভবিষ্যতের মুখোমুখি হতে সাহায্য করে। একমাত্র যিহোবাই আমাদের নিশ্চিত আশা প্রদান করতে পারেন, যা তিনি তাঁর অনুপ্রাণিত বাক্যের মাধ্যমে দিয়ে থাকেন। (২ তীমথিয় ৩:১৬) বস্তুতপক্ষে, ‘আশা’ বা ‘প্রত্যাশা’ শব্দগুলো বাইবেলে বহুবার এসেছে আর সেগুলো ভাল কিছুর জন্য আকুল ও নিশ্চিত প্রতীক্ষা ও সেইসঙ্গে সেই প্রতীক্ষার বিষয়বস্তু উভয়কেই নির্দেশ করে।a এই ধরনের আশা সেই নিছক আকাঙ্ক্ষা থেকে আরও শ্রেষ্ঠ, যা হয়তো পরিপূর্ণ হওয়ার কোনো ভিত্তি বা সম্ভাবনা নেই।
২. যিশুর জীবনে প্রত্যাশা কোন ভূমিকা পালন করেছিল?
২ যিশু যখন পরীক্ষা এবং কষ্টের মুখোমুখি হয়েছিলেন, তখন তিনি বর্তমান বিষয়গুলোকে অতিক্রম করে দেখেছিলেন এবং যিহোবাতে প্রত্যাশা রেখেছিলেন। “তিনিই আপনার সম্মুখস্থ আনন্দের নিমিত্ত ক্রুশ সহ্য করিলেন, অপমান তুচ্ছ করিলেন, এবং ঈশ্বরের সিংহাসনের দক্ষিণে উপবিষ্ট হইয়াছেন।” (ইব্রীয় ১২:২) যেহেতু তিনি যিহোবার সার্বভৌমত্বের সত্যতা প্রতিপাদন ও তাঁর নামকে পবিত্রীকৃত করার প্রত্যাশার ওপর গভীরভাবে মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করেছিলেন, তাই যে-ক্ষতিই তাঁকে ভোগ করতে হোক না কেন, তিনি কখনো ঈশ্বরের প্রতি বাধ্যতা থেকে সরে যাননি।
৩. ঈশ্বরের দাসদের জীবনে প্রত্যাশা কোন ভূমিকা পালন করে?
৩ রাজা দায়ূদ প্রত্যাশা নিয়ে অপেক্ষায় থাকার সঙ্গে সাহসকে সংযুক্ত করেছেন এই বলে: “সদাপ্রভুর অপেক্ষায় থাক; সাহস কর, তোমার অন্তঃকরণ সবল হউক; হাঁ, সদাপ্রভুরই অপেক্ষায় থাক।” (গীতসংহিতা ২৭:১৪) আমরা যদি আমাদের হৃদয়কে সবল করতে চাই, তা হলে আমরা কখনো আমাদের প্রত্যাশাকে অস্পষ্ট হয়ে পড়তে দেব না বরং সবসময় এটিকে মনের মধ্যে স্পষ্ট রাখব ও হৃদয়ে সঞ্চিত রাখব। তা করা আমাদেরকে যিশু তাঁর শিষ্যদের যে-কাজ করার দায়িত্ব দিয়েছিলেন, তাতে অংশগ্রহণ করার সময় সাহস ও উদ্যোগ দেখানোর ক্ষেত্রে তাঁকে অনুকরণ করতে সাহায্য করবে। (মথি ২৪:১৪; মথি ২৮:১৯, ২০) বস্তুতপক্ষে, বিশ্বাস ও প্রেমের পাশাপাশি প্রত্যাশাকেও এক গুরুত্বপূর্ণ ও স্থায়ী গুণ হিসেবে স্থাপন করা হয়েছে, যা ঈশ্বরের দাসেরা প্রচুররূপে দেখিয়ে থাকে।—১ করিন্থীয় ১৩:১৩.
আপনি কি “প্রত্যাশায় উপচিয়া” পড়েন?
৪. অভিষিক্ত খ্রিস্টান ও তাদের সহযোগী “আরও মেষ” কীসের জন্য ঐকান্তিকভাবে অপেক্ষা করছে?
৪ ঈশ্বরের লোকেদের সামনে এক অপূর্ব ভবিষ্যৎ রয়েছে। অভিষিক্ত খ্রিস্টানরা খ্রিস্টের সঙ্গে স্বর্গে সেবা করার জন্য ঐকান্তিকভাবে অপেক্ষা করে আছে আর অন্যদিকে “আরও মেষ” ‘ক্ষয়ের দাসত্ব হইতে মুক্ত হইয়া ঈশ্বরের [পার্থিব] সন্তানগণের প্রতাপের স্বাধীনতা পাইবার’ প্রত্যাশা করে। (যোহন ১০:১৬; রোমীয় ৮:১৯-২১; ফিলিপীয় ৩:২০) সেই ‘প্রতাপের স্বাধীনতার’ অন্তর্ভুক্ত পাপ ও এর ভয়ংকর পরিণতিগুলো থেকে মুক্তি। সত্যিই, যিহোবা—‘সমস্ত উত্তম দান এবং সমস্ত সিদ্ধ বরের’ দাতা—তাঁর অনুগত ব্যক্তিদেরকে কোনো অংশে কম দেবেন না।—যাকোব ১:১৭; যিশাইয় ২৫:৮.
৫. কীভাবে আমরা “প্রত্যাশায় উপচিয়া” পড়ি?
৫ আমাদের জীবনে খ্রিস্টীয় প্রত্যাশার কতটা বড় ভূমিকা পালন করা উচিত? রোমীয় ১৫:১৩ পদে আমরা পড়ি: “প্রত্যাশার ঈশ্বর তোমাদিগকে বিশ্বাস দ্বারা সমস্ত আনন্দে ও শান্তিতে পরিপূর্ণ করুন, যেন তোমরা পবিত্র আত্মার পরাক্রমে প্রত্যাশায় উপচিয়া পড়।” হ্যাঁ, প্রত্যাশাকে অন্ধকার স্থানে একটা মোমবাতির সঙ্গে নয় বরং সকালের সূর্যের অত্যুজ্জ্বল রশ্মির সঙ্গে তুলনা করা যেতে পারে, যা একজন ব্যক্তির জীবনকে শান্তি, সুখ, উদ্দেশ্য ও সাহসে পূর্ণ করে দেয়। লক্ষ করুন যে, আমরা যখন ঈশ্বরের লিখিত বাক্যে বিশ্বাস করি এবং তাঁর পবিত্র আত্মা লাভ করি, তখন “প্রত্যাশায় উপচিয়া” পড়ি। রোমীয় ১৫:৪ পদ বলে: “পূর্ব্বকালে যাহা যাহা লিখিত হইয়াছিল, সে সকল আমাদের শিক্ষার নিমিত্তে লিখিত হইয়াছিল, যেন শাস্ত্রমূলক ধৈর্য্য ও সান্ত্বনা দ্বারা আমরা প্রত্যাশা প্রাপ্ত হই।” তাই, নিজেকে জিজ্ঞেস করুন: ‘বাইবেলের উত্তম ছাত্র হওয়ার ও রোজ এটি পড়ার মাধ্যমে আমি কি আমার প্রত্যাশাকে উজ্জ্বল রাখছি? ঈশ্বরের আত্মার জন্য আমি কি প্রায়ই প্রার্থনা করি?’—লূক ১১:১৩.
৬. আমাদের প্রত্যাশাকে উজ্জ্বল রাখার জন্য আমাদের কীসের বিরুদ্ধে সাবধান থাকতে হবে?
৬ আমাদের আদর্শ যিশু ঈশ্বরের বাক্যের দ্বারা শক্তি লাভ করেছিলেন। তাঁর সম্বন্ধে নিবিড়ভাবে বিবেচনা করার মাধ্যমে আমরা ‘প্রাণের ক্লান্তিতে অবসন্ন হওয়া’ এড়াতে পারি। (ইব্রীয় ১২:৩) এটা যুক্তিযুক্ত যে, যদি আমাদের ঈশ্বরদত্ত প্রত্যাশা আমাদের মনে ও হৃদয়ে ম্লান হয়ে যায় অথবা আমাদের মনোযোগ অন্যদিকে চলে যায়—হতে পারে বস্তুগত বিষয় অথবা জাগতিক লক্ষ্যগুলোর দিকে—তা হলে শীঘ্রই আমরা আধ্যাত্মিকভাবে তন্দ্রাচ্ছন্ন হয়ে পড়তে পারি আর তা পরিশেষে নৈতিক নীতিগুলোর দ্বারা জীবনযাপন করার শক্তি ও সাহস হারানোর দিকে পরিচালিত করতে পারে। এইরকম মনোভাব থাকলে এমনকি “[আমাদের] বিশ্বাসরূপ নৌকা ভগ্ন” হতে পারে। (১ তীমথিয় ১:১৯) অন্যদিকে, প্রকৃত প্রত্যাশা আমাদের বিশ্বাসকে শক্তিশালী করে।
প্রত্যাশা—বিশ্বাসের জন্য অপরিহার্য
৭. কোন দিক দিয়ে বিশ্বাসের জন্য প্রত্যাশা অপরিহার্য?
৭ “বিশ্বাস প্রত্যাশিত বিষয়ের নিশ্চয়জ্ঞান, অদৃশ্য বিষয়ের প্রমাণপ্রাপ্তি,” বাইবেল বলে। (ইব্রীয় ১১:১) তাই, প্রত্যাশা কেবল বিশ্বাসের কোনো আনুষঙ্গিক বিষয় নয়; এটা বিশ্বাসের এক অপরিহার্য অংশ। অব্রাহামের কথা বিবেচনা করুন। মানুষের দৃষ্টিকোণ থেকে তিনি এবং তার স্ত্রী সারা সন্তানধারণের বয়স পার করে এসেছিলেন, যখন যিহোবা তাদের কাছে এক উত্তরাধিকার সম্বন্ধে প্রতিজ্ঞা করেছিলেন। (আদিপুস্তক ১৭:১৫-১৭) অব্রাহাম কেমন প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিলেন? “অব্রাহাম প্রত্যাশা না থাকিলেও প্রত্যাশাযুক্ত হইয়া বিশ্বাস করিলেন, যেন . . . তিনি বহুজাতির পিতা হন।” (রোমীয় ৪:১৮) হ্যাঁ, অব্রাহামের ঈশ্বরদত্ত প্রত্যাশা তার এই বিশ্বাসে দৃঢ় ভিত্তি জুগিয়েছিল যে, তার এক বংশধর হবে। এর ফলে, তার বিশ্বাস তার প্রত্যাশাকে উজ্জ্বল এবং শক্তিশালী করেছিল। হ্যাঁ, অব্রাহাম ও সারার এমনকি তাদের বাড়িঘর এবং তাদের আত্মীয়স্বজন ত্যাগ করার ও তাদের বাকি জীবন বিদেশে তাঁবুর মধ্যে কাটানোর সাহস ছিল!
৮. কীভাবে অটল ধৈর্য প্রত্যাশাকে শক্তিশালী করে?
৮ যিহোবার একান্ত বাধ্য থাকার মাধ্যমে অব্রাহাম তার আশাকে উজ্জ্বল রেখেছিলেন, এমনকি যখন তা থাকা কঠিন ছিল। (আদিপুস্তক ২২:২, ১২) একইভাবে, যিহোবার সেবায় বাধ্য হয়ে ও ধৈর্য ধরে আমরা আমাদের পুরস্কার সম্বন্ধে নিশ্চিত থাকতে পারি। পৌল লিখেছিলেন, ‘ধৈর্য্যর’ ফলে ‘পরীক্ষাসিদ্ধতা’ লাভ করা যায় আর এর ফলে তা প্রত্যাশাকে উৎপন্ন করে “আর প্রত্যাশা লজ্জাজনক হয় না।” (রোমীয় ৫:৪, ৫) আর এই কারণে পৌল আরও লিখেছিলেন: “আমাদের বাসনা এই, যেন তোমাদের প্রত্যেক জন একই প্রকার যত্ন দেখায়, যাহাতে শেষ পর্য্যন্ত প্রত্যাশার পূর্ণতা থাকিবে।” (ইব্রীয় ৬:১১) এই ধরনের এক ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি, যা যিহোবার সঙ্গে অন্তরঙ্গ সম্পর্কের ওপর ভিত্তি করে, তা আমাদের সাহস ও এমনকি আনন্দের সঙ্গে যেকোনো কষ্ট মোকাবিলা করতে সাহায্য করতে পারে।
“প্রত্যাশায় আনন্দ কর”
৯. নিয়মিতভাবে কী করা আমাদের ‘প্রত্যাশায় আনন্দ করিতে’ সাহায্য করতে পারে?
৯ আমাদের ঈশ্বরদত্ত আশা জগৎ যা কিছুই দিতে পারে না কেন, সেগুলোর সমস্তকিছু থেকে অপরিসীমভাবে শ্রেষ্ঠ। গীতসংহিতা ৩৭:৩৪ পদ বলে, “সদাপ্রভুর অপেক্ষায় থাক, তাঁহার পথে চল; তাহাতে তিনি তোমাকে দেশের অধিকার ভোগের জন্য উন্নত করিবেন; দুষ্টগণের উচ্ছেদ হইলে তুমি তাহা দেখিতে পাইবে।” হ্যাঁ, আমাদের ‘প্রত্যাশায় আনন্দ করিবার’ উপযুক্ত কারণ রয়েছে। (রোমীয় ১২:১২) কিন্তু, তা করার জন্য আমাদের প্রত্যাশাকে সবসময় মনের মধ্যে সতেজ রাখতে হবে। আপনি কি নিয়মিতভাবে আপনার ঈশ্বরদত্ত প্রত্যাশা নিয়ে চিন্তা করেন? আপনি কি নিজেকে পরমদেশে দেখতে পান, যেখানে উত্তম স্বাস্থ্য রয়েছে, কোনো উদ্বিগ্নতা নেই, চারপাশে এমন লোকেরা রয়েছে যাদেরকে আপনি ভালবাসেন এবং সত্যিকার অর্থেই পরিতৃপ্তিদায়ক কাজে রত আছেন? আমাদের প্রকাশনাগুলোতে পরমদেশের যে-দৃশ্যগুলো তুলে ধরা হয়, তা নিয়ে কি আপনি ধ্যান করেন? নিয়মিতভাবে এইরকম চিন্তা করা হয়তো এমন একটা জানালা পরিষ্কার করার মতো, যেখান থেকে এক চমৎকার দৃশ্য দেখা যায়। আমরা যদি সেই কাচ পরিষ্কার করতে অবহেলা করি, তা হলে শীঘ্রই ময়লা আমাদেরকে আকর্ষণীয় দৃশ্য স্পষ্টভাবে দেখার ক্ষেত্রে ব্যাঘাত সৃষ্টি করবে। তখন হয়তো অন্যান্য বিষয় আমাদের মনোযোগ হরণ করতে পারে। আমরা যেন কখনো তা ঘটতে না দিই!
১০. কেন পুরস্কারের প্রতি আমাদের দৃষ্টি রাখা যিহোবার সঙ্গে আমাদের সম্পর্কের ওপর অনুকূল প্রভাব ফেলে?
১০ অবশ্য, যিহোবাকে সেবা করার প্রধান কারণ হল তাঁর প্রতি আমাদের ভালবাসা। (মার্ক ১২:৩০) তা সত্ত্বেও, আমাদের ঐকান্তিকভাবে পুরস্কারের প্রতি দৃষ্টি রাখা উচিত। বস্তুতপক্ষে, যিহোবা চান যাতে আমরা তা করি! ইব্রীয় ১১:৬ পদ বলে: “বিনা বিশ্বাসে প্রীতির পাত্র হওয়া কাহারও সাধ্য নয়; কারণ যে ব্যক্তি ঈশ্বরের নিকটে উপস্থিত হয়, তাহার ইহা বিশ্বাস করা আবশ্যক যে ঈশ্বর আছেন, এবং যাহারা তাঁহার অন্বেষণ করে, তিনি তাহাদের পুরস্কারদাতা।” কেন যিহোবা চান যাতে আমরা তাঁকে একজন পুরস্কারদাতা হিসেবে দেখি? কারণ আমরা যখন সেভাবে দেখি, তখন আমরা দেখাই যে, আমরা আমাদের স্বর্গীয় পিতাকে ভালভাবে জানি। তিনি উদার এবং তাঁর সন্তানদের ভালবাসেন। চিন্তা করুন যে, আমাদের যদি “একটা ভবিষ্যৎ, একটা আশা” না থাকত, তা হলে আমরা কত অসুখী ও সহজেই নিরুৎসাহিত হয়ে পড়তাম।—যিরমিয় [যেরেমিয়া] ২৯:১১, বাংলা জুবিলী বাইবেল।
১১. কীভাবে তার ঈশ্বরদত্ত প্রত্যাশা মোশিকে বিজ্ঞ সিদ্ধান্তগুলো নিতে সাহায্য করেছিল?
১১ ঈশ্বরদত্ত প্রত্যাশার প্রতি মনোযোগ কেন্দ্রীভূত রেখেছিলেন, এমন এক উল্লেখযোগ্য উদাহরণ হলেন মোশি। মোশি “ফরৌণের কন্যার পুত্ত্র” হিসেবে মিশরে নিজের ইচ্ছেমতো ক্ষমতা, পদমর্যাদা ও ধনসম্পদ ব্যবহার করতে পারতেন। তিনি কি সেই বিষয়গুলোর অনুধাবন করবেন, নাকি যিহোবাকে সেবা করবেন? মোশি সাহসের সঙ্গে পরের বিষয়টা বেছে নিয়েছিলেন। কেন? কারণ তিনি “পুরস্কারদানের প্রতি দৃষ্টি রাখিতেন।” (ইব্রীয় ১১:২৪-২৬) হ্যাঁ, যিহোবা তার সামনে যে-প্রত্যাশা রেখেছিলেন, সেই বিষয়ে মোশি নিশ্চিতভাবেই উদাসীন ছিলেন না।
১২. কেন খ্রিস্টীয় প্রত্যাশা শিরস্ত্রাণের মতো?
১২ প্রেরিত পৌল প্রত্যাশাকে শিরস্ত্রাণের সঙ্গে তুলনা করেছিলেন। আমাদের রূপক শিরস্ত্রাণ আমাদের মানসিক ক্ষমতাকে রক্ষা করে ফলে আমরা বিজ্ঞ সিদ্ধান্ত নিতে, উপযুক্ত অগ্রাধিকারগুলো স্থাপন করতে এবং নীতিনিষ্ঠা বজায় রাখতে পারি। (১ থিষলনীকীয় ৫:৮) আপনি কি আপনার রূপক শিরস্ত্রাণ সবসময় পরে থাকেন? যদি থাকেন, তা হলে মোশি ও পৌলের মতো আপনি “ধনের অস্থিরতার উপরে নয়, কিন্তু যিনি ধনবানের ন্যায় সকলই আমাদের ভোগার্থে যোগাইয়া দেন, সেই ঈশ্বরেরই উপরে” আপনার প্রত্যাশা রাখবেন। এটা ঠিক যে, স্বার্থপর অনুধাবনগুলোকে প্রত্যাখ্যান করার মাধ্যমে জনপ্রিয় প্রবণতার বিরুদ্ধে যাওয়ার জন্য সাহসের প্রয়োজন কিন্তু সেই প্রচেষ্টা উপযুক্ত! বস্তুতপক্ষে, ‘প্রকৃতরূপে জীবনের’ চেয়ে কম কোনোকিছু কেন গ্রহণ করবেন, যেটি যিহোবাতে যারা প্রত্যাশা করে এবং তাঁকে ভালবাসে তাদের সকলের জন্য অপেক্ষা করছে?—১ তীমথিয় ৬:১৭, ১৯.
“আমি কোন ক্রমে তোমাকে ছাড়িব না”
১৩. যিহোবা তাঁর অনুগত দাসদের কোন আশ্বাস দেন?
১৩ যে-লোকেরা বর্তমান বিধিব্যবস্থার ওপর আশা রাখে, তাদেরকে অবশ্যই জগৎ যে-বৃদ্ধিরত ‘যাতনা’ ভোগ করছে, সেটার সঙ্গে সঙ্গে তাদের সামনে যে-ভয়ংকর বিষয়গুলো এগিয়ে আসছে, সেই সম্বন্ধে গুরুত্বের সঙ্গে চিন্তা করতে হবে। (মথি ২৪:৮) কিন্তু, যারা যিহোবাতে প্রত্যাশা রাখে, তাদের এইরকম কোনো ভয় নেই। তারা ক্রমাগত “নির্ভয়ে বাস করিবে, শান্ত থাকিবে, অমঙ্গলের আশঙ্কা করিবে না।” (হিতোপদেশ ১:৩৩) যেহেতু তাদের আশা বর্তমান বিধিব্যবস্থার ওপর নয়, তাই তারা আনন্দের সঙ্গে পৌলের এই পরামর্শে মনোযোগ দেয়: “তোমাদের আচার ব্যবহার ধনাসক্তিবিহীন হউক; তোমাদের যাহা আছে, তাহাতে সন্তুষ্ট থাক; কারণ তিনিই বলিয়াছেন, ‘আমি কোন ক্রমে তোমাকে ছাড়িব না, ও কোন ক্রমে তোমাকে ত্যাগ করিব না।’”—ইব্রীয় ১৩:৫.
১৪. কেন খ্রিস্টানদের তাদের বস্তুগত চাহিদাগুলো সম্বন্ধে অযথা উদ্বিগ্ন হওয়ার দরকার নেই?
১৪ “কোন ক্রমে”—অভিব্যক্তিটি এই বিষয়ে সন্দেহের কোনো অবকাশ রাখে না যে, ঈশ্বর আমাদের জন্য চিন্তা করবেন। এ ছাড়া, যিশুও এই বলে ঈশ্বরের প্রেমময় চিন্তা সম্বন্ধে আশ্বাস দিয়েছিলেন: “তোমরা প্রথমে তাঁহার রাজ্য ও তাঁহার ধার্ম্মিকতার বিষয়ে চেষ্টা কর, তাহা হইলে ঐ সকল দ্রব্যও [জীবনের প্রয়োজনীয় বস্তুগত বিষয়গুলো] তোমাদিগকে দেওয়া হইবে। অতএব কল্যকার নিমিত্ত ভাবিত হইও না, কেননা কল্য আপনার বিষয় আপনি ভাবিত হইবে।” (মথি ৬:৩৩, ৩৪) যিহোবা জানেন যে, তাঁর রাজ্যের জন্য উদ্যোগী হওয়া এবং একইসঙ্গে আমাদের দৈহিক চাহিদাগুলো পূরণ করার সম্পূর্ণ দায়িত্বভার বহন করা আমাদের জন্য অনেক কঠিন। তাই আসুন, আমরা তাঁর সামর্থ্যের ওপর এবং তিনি যে আমাদের চাহিদাগুলোর যত্ন নিতে চান, সেই বিষয়ে পূর্ণ নির্ভরতা রাখি।—মথি ৬:২৫-৩২; ১১:২৮-৩০.
১৫. কীভাবে খ্রিস্টানরা ‘সরল চক্ষু’ রাখে?
১৫ আমরা যখন ‘সরল চক্ষু’ রাখি, তখন আমরা যিহোবার ওপর আমাদের নির্ভরতা দেখাই। (মথি ৬:২২, ২৩) এক সরল চোখ হল আন্তরিক, শুদ্ধ মনোভাবাপন্ন এবং লোভ ও স্বার্থপর উচ্চাকাঙ্ক্ষা থেকে মুক্ত। এক সরল চোখ রাখার অর্থ এই নয় যে, চরম দারিদ্র্যের মধ্যে বাস করা অথবা আমাদের খ্রিস্টীয় দায়িত্বগুলোর যত্ন নেওয়ার ক্ষেত্রে অবহেলা করা। বরং, এর অর্থ হল যিহোবার সেবাকে আমাদের জীবনে প্রথম স্থানে রাখার সময় ‘সুবুদ্ধি’ প্রকাশ করা।—২ তীমথিয় ১:৭.
১৬. সরল চক্ষু রাখার জন্য কেন বিশ্বাস ও সাহসের প্রয়োজন?
১৬ সরল চোখ বজায় রাখার জন্য বিশ্বাস ও সাহসের প্রয়োজন। উদাহরণস্বরূপ, আপনার নিয়োগকর্তা যদি আপনাকে নিয়মিতভাবে এমন একটা সময়ে কাজ করার জন্য জোর করেন, যে-সময়টা খ্রিস্টীয় সভাগুলোর জন্য আগেই নির্ধারিত রয়েছে, তা হলে আপনি কি সাহসের সঙ্গে আপনার আধ্যাত্মিক অগ্রাধিকারগুলোর সঙ্গে লেগে থাকবেন? এই সম্বন্ধে কারো যদি সন্দেহ থাকে যে, যিহোবা তাঁর দাসদের যত্ন নেওয়ার বিষয়ে তাঁর প্রতিজ্ঞা পূর্ণ করবেন, তা হলে স্বাভাবিকভাবেই শয়তান চাপ বৃদ্ধি করবে এবং এই ধরনের একজন ব্যক্তি হয়তো পুরোপুরিভাবে সভাগুলোতে যোগদান করা বাদ দিয়ে দিতে পারেন। হ্যাঁ, আমাদের বিশ্বাসের অভাব আমাদেরকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য শয়তানকে সুযোগ করে দিতে পারে যাতে যিহোবা নয় বরং সে আমাদের অগ্রাধিকারগুলো স্থাপন করে। তা কত দুঃখজনকই না হবে!—২ করিন্থীয় ১৩:৫.
“সদাপ্রভুর অপেক্ষায় থাক”
১৭. যারা যিহোবার ওপর নির্ভর করে, তারা কীভাবে এমনকি এখনই আশীর্বাদ লাভ করে?
১৭ শাস্ত্র বার বার দেখায় যে, যারা যিহোবাতে প্রত্যাশা রাখে ও নির্ভর করে, তারা কখনো ব্যর্থ হয় না। (হিতোপদেশ ৩:৫, ৬; যিরমিয় ১৭:৭) এটা ঠিক যে, মাঝে মাঝে তাদের হয়তো অল্প বস্তুগত বিষয় নিয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হয় কিন্তু তারা এটাকে তাদের জন্য যে-আশীর্বাদগুলো সঞ্চিত রয়েছে, সেগুলোর তুলনায় ছোট ত্যাগস্বীকার হিসেবে দেখে থাকে। এভাবে তারা দেখায় যে, তারা প্রত্যাশায় ‘সদাপ্রভুর অপেক্ষায় থাকে’ এবং এই আস্থা রাখে যে, তিনি অবশেষে তাঁর অনুগত ব্যক্তিদের হৃদয়ের সমস্ত ধার্মিক ইচ্ছা পূরণ করবেন। (গীতসংহিতা ৩৭:৪, ৩৪) তাই, এমনকি এখনই তারা সত্যিই আনন্দিত। “ধার্ম্মিকদের প্রত্যাশা আনন্দজনক; কিন্তু দুষ্টদের আশ্বাস বিনাশ পাইবে।”—হিতোপদেশ ১০:২৮.
১৮, ১৯. (ক) যিহোবা আমাদের কোন প্রেমময় নিশ্চয়তা দেন? (খ) কীভাবে যিহোবাকে আমরা আমাদের “দক্ষিণে” রাখি?
১৮ একটা ছোট ছেলে যখন তার বাবার হাতে হাত ধরে হাঁটে, তখন সে নিরাপদ বোধ করে। আমরা যখন আমাদের স্বর্গীয় পিতার সঙ্গে হাঁটি, তখনও একই বিষয় সত্য। “ভয় করিও না,” যিহোবা ইস্রায়েলকে বলেছিলেন, “কারণ আমি তোমার সঙ্গে সঙ্গে আছি; . . . আমি তোমার সাহায্য করিব; . . . কেননা আমি সদাপ্রভু তোমার ঈশ্বর তোমার দক্ষিণ হস্ত ধারণ করিব; তোমাকে বলিব, ভয় করিও না, আমি তোমার সাহায্য করিব।”—যিশাইয় ৪১:১০, ১৩.
১৯ এটা কতই না প্রেমময় এক চিত্র তুলে ধরে—যিহোবা কারো হাত ধরে আছেন! “আমি সদাপ্রভুকে নিয়ত সম্মুখে রাখিয়াছি,” দায়ূদ লিখেছিলেন। “তিনি ত আমার দক্ষিণে, আমি বিচলিত হইব না।” (গীতসংহিতা ১৬:৮) কীভাবে যিহোবাকে আমরা আমাদের “দক্ষিণে” রাখি? আমরা অন্ততপক্ষে দুটো উপায়ে রেখে থাকি। প্রথমত, আমরা তাঁর বাক্যকে আমাদের জীবনের প্রতিটা দিককে পরিচালিত করতে দিই; আর দ্বিতীয়ত, যিহোবা আমাদের সামনে যে-গৌরবান্বিত পুরস্কার রেখেছেন, সেটার প্রতি দৃষ্টি রাখি। গীতরচক আসফ গেয়েছিলেন: “আমি নিরন্তর তোমার সঙ্গে সঙ্গে আছি; তুমি আমার দক্ষিণ হস্ত ধরিয়া রাখিয়াছ। তুমি নিজ মন্ত্রণায় আমাকে গমন করাইবে, শেষে সপ্রতাপে আমাকে গ্রহণ করিবে।” (গীতসংহিতা ৭৩:২৩, ২৪) এই ধরনের নিশ্চয়তা সহকারে আমরা সত্যিই আস্থার সঙ্গে ভবিষ্যতের সম্মুখীন হতে পারি।
“তোমাদের মুক্তি সন্নিকট”
২০, ২১. যারা সদাপ্রভুতে প্রত্যাশা করে, তাদের জন্য কোন ভবিষ্যৎ অপেক্ষা করছে?
২০ প্রতিটা দিন অতিবাহিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে যিহোবাকে আমাদের দক্ষিণে রাখা আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। শীঘ্রই মিথ্যা ধর্মের ধ্বংস দিয়ে শুরু করে শয়তানের জগৎ এমন এক ক্লেশ ভোগ করবে, যেমনটা আগে কখনো ভোগ করেনি। (মথি ২৪:২১) ভয় অবিশ্বস্ত মানবজাতিকে আচ্ছন্ন করবে। কিন্তু, সেই বিভ্রান্তিকর সময়ে যিহোবার সাহসী দাসেরা তাদের প্রত্যাশায় আনন্দ করবে! “এ সকল ঘটনা আরম্ভ হইলে” যিশু বলেছিলেন, “তোমরা ঊর্দ্ধ্বদৃষ্টি করিও, মাথা তুলিও, কেননা তোমাদের মুক্তি সন্নিকট।”—লূক ২১:২৮.
২১ তাই, আসুন আমরা আমাদের ঈশ্বরদত্ত প্রত্যাশায় আনন্দ করি এবং শয়তানের চাতুর্যপুর্ণ বিক্ষেপগুলোর দ্বারা প্রতারিত বা প্রলুব্ধ না হই। একইসঙ্গে, আসুন আমরা বিশ্বাস, প্রেম এবং ঈশ্বরীয় ভয় গড়ে তোলার জন্য কঠোর পরিশ্রম করি। তা করলে, সমস্ত পরিস্থিতিতে যিহোবার বাধ্য থাকার এবং দিয়াবলের প্রতিরোধ করার সাহস আমাদের থাকবে। (যাকোব ৪:৭, ৮) হ্যাঁ, “হে সদাপ্রভুর অপেক্ষাকারী সকলে, সাহস কর, তোমাদের অন্তঃকরণ সবল হউক।”—গীতসংহিতা ৩১:২৪.
[পাদটীকা]
a যদিও খ্রিস্টান গ্রিক শাস্ত্রে ‘প্রত্যাশা’ শব্দটি প্রায়ই স্বর্গীয় আশাসম্পন্ন অভিষিক্ত খ্রিস্টানদের বেলায় প্রয়োগ করা হয়েছে কিন্তু এই প্রবন্ধে প্রত্যাশা শব্দটি সাধারণ অর্থে আলোচনা করা হয়েছে।
আপনি কি উত্তর দিতে পারেন?
• কোন উপায়ে যিশুর আশা তাঁর সাহসের ক্ষেত্রে অবদান রেখেছিল?
• কীভাবে বিশ্বাস ও প্রত্যাশা পরস্পরের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত?
• কীভাবে বিশ্বাসের সঙ্গে প্রত্যাশাও একজন খ্রিস্টানকে জীবনে উপযুক্ত অগ্রাধিকারগুলো স্থাপন করার জন্য সাহস প্রদান করতে পারে?
• যারা প্রত্যাশায় ‘সদাপ্রভুর অপেক্ষায় থাকে,’ তারা কেন আস্থার সঙ্গে ভবিষ্যতের দিকে দৃষ্টি দিতে পারে?
[২৮ পৃষ্ঠার চিত্র]
যুবক বা বৃদ্ধ যে-ই হোন না কেন, আপনি কি নিজেকে পরমদেশে দেখতে পান?