আপনার প্রার্থনা আপনার সম্বন্ধে কী প্রকাশ করে?
“হে প্রার্থনা-শ্রবণকারী, তোমারই কাছে মর্ত্ত্যমাত্র আসিবে।”—গীত. ৬৫:২.
১, ২. কেন যিহোবার দাসেরা আস্থা সহকারে তাঁর কাছে প্রার্থনা করতে পারে?
যিহোবা কখনোই তাঁর বিশ্বস্ত দাসদের মিনতিগুলোকে উপেক্ষা করেন না। আমরা আস্থা রাখতে পারি যে, তিনি আমাদের মিনতিগুলো শোনেন। এমনকী লক্ষ লক্ষ যিহোবার সাক্ষি যদি একইসময়ে ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করে, তবুও যিহোবা তাদের প্রত্যেকের প্রার্থনা শোনেন।
২ ঈশ্বর তার অনুরোধগুলো শুনেছেন, এই আস্থা নিয়ে গীতরচক দায়ূদ গেয়েছিলেন: “হে প্রার্থনা-শ্রবণকারী, তোমারই কাছে মর্ত্ত্যমাত্র আসিবে।” (গীত. ৬৫:২) দায়ূদের প্রার্থনাগুলোর উত্তর দেওয়া হয়েছিল কারণ তিনি যিহোবার একজন অনুগত উপাসক ছিলেন। আমাদের নিজেদেরকে জিজ্ঞেস করা উচিত: ‘আমার বিনতিগুলো কি দেখায় যে, আমি যিহোবার ওপর নির্ভর করি এবং বিশুদ্ধ উপাসনাই হচ্ছে আমার প্রধান চিন্তার বিষয়? আমার প্রার্থনাগুলো আমার নিজের সম্বন্ধে কী প্রকাশ করে?’
নম্রতা সহকারে যিহোবার কাছে প্রার্থনা করুন
৩, ৪. (ক) কোন মনোভাব নিয়ে আমাদের ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করা উচিত? (খ) গুরুতর পাপ করার কারণে “চিন্তা সকল” দ্বারা জর্জরিত হলে আমাদের কী করা উচিত?
৩ আমরা যদি আমাদের প্রার্থনাগুলোর উত্তর পেতে চাই, তাহলে আমাদের অবশ্যই অবনতভাবে বা নম্রতা সহকারে ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করতে হবে। (গীত. ১৩৮:৬) আমাদের উচিত যিহোবাকে আমাদের পরীক্ষা করার জন্য অনুরোধ করা, যেমনটা দায়ূদ করেছিলেন, যখন তিনি বলেছিলেন: “হে ঈশ্বর, আমাকে অনুসন্ধান কর, আমার অন্তঃকরণ জ্ঞাত হও; আমার পরীক্ষা কর, আমার চিন্তা সকল জ্ঞাত হও; আর দেখ, আমাতে দুষ্টতার পথ পাওয়া যায় কি না, এবং সনাতন পথে আমাকে গমন করাও।” (গীত. ১৩৯:২৩, ২৪) আসুন আমরা যেন কেবল প্রার্থনা না করি, কিন্তু সেইসঙ্গে ঈশ্বরকে পরীক্ষা করতে দিই ও তাঁর বাক্যের পরামর্শের প্রতি বশীভূত থাকি। যিহোবা আমাদেরকে “সনাতন পথে” পরিচালিত করতে পারেন, আমাদেরকে এমন এক পথ অনুধাবন করতে সাহায্য করতে পারেন, যা অনন্তজীবনের দিকে নিয়ে যাবে।
৪ কী হবে যদি আমরা কোনো গুরুতর পাপ করার কারণে “চিন্তা সকল” দ্বারা জর্জরিত হই? (পড়ুন, গীতসংহিতা ৩২:১-৫.) এক দোষী বিবেককে দমিয়ে রাখার চেষ্টা করা আমাদের শক্তিকে নিঃশেষ করে দিতে পারে, ঠিক যেভাবে একটা বৃক্ষ গ্রীষ্মের প্রখর তাপে সরসতা বা আর্দ্রতা হারিয়ে ফেলে। পাপ করার কারণে দায়ূদ তার আনন্দ হারিয়ে ফেলেছিলেন এবং হয়তো অসুস্থও হয়ে পড়েছিলেন। কিন্তু, ঈশ্বরের কাছে পাপ স্বীকার করে তিনি কত স্বস্তিই না পেয়েছিলেন! দায়ূদের সেই আনন্দের বিষয়টা কল্পনা করুন যখন তিনি অনুভব করেছিলেন যে, ‘তাহার অধর্ম্ম ক্ষমা হইয়াছিল’ এবং যিহোবা তাকে ক্ষমা করে দিয়েছিলেন। ঈশ্বরের কাছে পাপ স্বীকার করা স্বস্তি নিয়ে আসতে পারে আর খ্রিস্টান প্রাচীনদের সহায়তা, ভুল করেছেন এমন একজন ব্যক্তির আধ্যাত্মিক স্বাস্থ্যের পুনরুদ্ধারেও সাহায্য করবে।—হিতো. ২৮:১৩; যাকোব ৫:১৩-১৬.
ঈশ্বরের কাছে বিনতি করুন এবং তাঁকে ধন্যবাদ দিন
৫. আমরা যখন অত্যন্ত উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ি, তখন আমাদের কী করা উচিত?
৫ কোনো কারণে আমরা যদি অত্যন্ত উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ি, তাহলে আমাদের পৌলের এই পরামর্শ প্রয়োগ করা উচিত: “কোন বিষয়ে ভাবিত হইও না, কিন্তু সর্ব্ববিষয়ে প্রার্থনা ও বিনতি দ্বারা ধন্যবাদ সহকারে তোমাদের যাচ্ঞা সকল ঈশ্বরকে জ্ঞাত কর।” (ফিলি. ৪:৬) বিশেষ করে বিপদ বা তাড়নার সময়ে সাহায্য এবং নির্দেশনার জন্য আমাদের যিহোবার কাছে বিনতি করা উচিত।
৬, ৭. কোন কারণগুলোর জন্য আমাদের প্রার্থনায় ধন্যবাদ দেওয়া উচিত?
৬ কিন্তু, আমরা যদি শুধুমাত্র আমাদের কিছু প্রয়োজন হলেই প্রার্থনা করি, তাহলে সেটা আমাদের উদ্দেশ্য সম্বন্ধে কী প্রকাশ করবে? পৌল বলেছিলেন যে, “ধন্যবাদ সহকারে” আমাদের যাচ্ঞাগুলো ঈশ্বরকে জ্ঞাত করা উচিত। নিশ্চিতভাবে আমাদের দায়ূদের মতো সেই একই অনুভূতি প্রকাশ করার কারণ রয়েছে, যিনি বলেছিলেন: “হে সদাপ্রভু, মহত্ত্ব, পরাক্রম, গৌরব, জয় ও প্রতাপ তোমারই; কেননা স্বর্গে ও পৃথিবীতে যাহা কিছু আছে, সকলই তোমার; হে সদাপ্রভু, রাজ্য তোমারই, এবং তুমি সকলের মস্তকরূপে উন্নত। . . . হে আমাদের ঈশ্বর, আমরা তোমার স্তব [“ধন্যবাদ,” বাংলা ইজি-টু-রিড ভারসন] করিতেছি, তোমার গৌরবান্বিত নামের প্রশংসা করিতেছি।”—১ বংশা. ২৯:১১-১৩.
৭ যিশু খাদ্য এবং প্রভুর সান্ধ্যভোজে ব্যবহৃত রুটি ও দ্রাক্ষারসের জন্য ঈশ্বরকে ধন্যবাদ দিয়েছিলেন। (মথি ১৫:৩৬; মার্ক ১৪:২২, ২৩) একইরকম কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করার সঙ্গে সঙ্গে ‘মনুষ্য-সন্তানদের জন্য তাঁহার আশ্চর্য্য কর্ম্মের,’ তাঁর “ধর্ম্মময় শাসনমালার” এবং বর্তমানে বাইবেলে প্রাপ্ত তাঁর বাক্য বা বার্তার জন্য আমাদের ‘সদাপ্রভুর স্তব করা [‘ধন্যবাদ দেওয়া,’ বাংলা ইজি-টু-রিড ভারসন]’ উচিত।—গীত. ১০৭:১৫; ১১৯:৬২, ১০৫.
অন্যদের জন্য প্রার্থনা করুন
৮, ৯. কেন আমাদের সহখ্রিস্টানদের জন্য প্রার্থনা করা উচিত?
৮ নিঃসন্দেহে, আমরা নিজেদের জন্য প্রার্থনা করে থাকি কিন্তু আমাদের প্রার্থনাগুলোতে অন্যদের—এমনকী আমরা নাম জানি না, এমন খ্রিস্টানদের—বিষয়ও অন্তর্ভুক্ত হওয়া উচিত। প্রেরিত পৌল যদিও কলসীর সমস্ত বিশ্বাসীকে চিনতেন না, তবুও তিনি লিখেছিলেন: “আমরা সর্ব্বদা তোমাদের নিমিত্তে প্রার্থনাকালে আমাদের প্রভু যীশু খ্রীষ্টের পিতা ঈশ্বরের ধন্যবাদ করিতেছি; কেননা খ্রীষ্ট যীশুতে যে বিশ্বাস এবং সমস্ত পবিত্র লোকের প্রতি যে প্রেম তোমাদের আছে, তাহার সংবাদ শুনিয়াছি।” (কল. ১:৩, ৪) এ ছাড়া, পৌল থিষলনীকীর খ্রিস্টানদের জন্যও প্রার্থনা করেছিলেন। (২ থিষল. ১:১১, ১২) এই ধরনের প্রার্থনা আমাদের এবং আমাদের বিশ্বাসী ভাইবোনদের আমরা কীভাবে দেখি, সেই সম্বন্ধে অনেক কিছু প্রকাশ করে।
৯ অভিষিক্ত খ্রিস্টানদের এবং তাদের সহযোগী ‘আরও মেষের’ জন্য প্রার্থনা করা প্রমাণ দেয় যে, ঈশ্বরের সংগঠনের জন্য আমাদের চিন্তা রয়েছে। (যোহন ১০:১৬) পৌল সহউপাসকদেরকে প্রার্থনা করতে বলেছিলেন যাতে ‘উপযুক্ত বক্তৃতা তাহাকে দেওয়া যায়, যাহাতে তিনি সেই সুসমাচারের নিগূঢ়তত্ত্ব জ্ঞাত করিতে পারেন।’ (ইফি. ৬:১৭-২০) আমরা কি ব্যক্তিগতভাবে অন্য খ্রিস্টানদের জন্য এভাবে প্রার্থনা করি?
১০. অন্যদের জন্য প্রার্থনা করা আমাদের ওপর কোন প্রভাব ফেলতে পারে?
১০ অন্যদের জন্য প্রার্থনা করা তাদের প্রতি আমাদের মনোভাবকে পরিবর্তন করতে পারে। আমরা যদি কোনো ব্যক্তিকে পছন্দ না করি অথচ তার জন্য প্রার্থনা করি, তাহলে কীভাবে আমরা সেই ব্যক্তির প্রতি প্রেম না দেখিয়ে থাকতে পারব? (১ যোহন ৪:২০, ২১) এই ধরনের প্রার্থনাগুলো হল গঠনমূলক আর এগুলো আমাদের ভাইবোনদের সঙ্গে একতাকে বৃদ্ধি করে। অধিকন্তু, এই ধরনের প্রার্থনা ইঙ্গিত করে যে, আমাদের খ্রিস্টতুল্য প্রেম রয়েছে। (যোহন ১৩:৩৪, ৩৫) এই গুণটা হল ঈশ্বরের আত্মার ফলের অংশ। আমরা কি ব্যক্তিগতভাবে প্রেম, আনন্দ, শান্তি, দীর্ঘসহিষ্ণুতা, মাধুর্য, মঙ্গলভাব, বিশ্বস্ততা, মৃদুতা এবং ইন্দ্রিয়দমনের মতো গুণগুলো প্রদর্শন করার জন্য সাহায্য চেয়ে যিহোবার কাছে পবিত্র আত্মার জন্য প্রার্থনা করি? (লূক ১১:১৩; গালা. ৫:২২, ২৩) যদি করি, তাহলে আমাদের কথাবার্তা ও কাজগুলো দেখাবে যে, আমরা আত্মার বশে চলছি এবং জীবনযাপন করছি।—পড়ুন, গালাতীয় ৫:১৬, ২৫.
১১. কেন আপনি বলবেন যে, অন্যদেরকে আমাদের জন্য প্রার্থনা করতে বলা উপযুক্ত?
১১ আমরা যদি জানতে পারি যে, আমাদের সন্তানরা স্কুলের পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বন করার জন্য প্রলোভিত হচ্ছে, তাহলে তাদের জন্য আমাদের প্রার্থনা করা উচিত এবং সেইসঙ্গে তাদেরকে আধ্যাত্মিক সাহায্য প্রদান করা উচিত, যাতে তারা সৎ আচরণ করে এবং ভুল কিছু না করে। পৌল করিন্থের খ্রিস্টানদের বলেছিলেন: “আমরা ঈশ্বরের কাছে এই প্রার্থনা করি, যেন তোমরা কোন মন্দ কার্য্য না কর।” (২ করি. ১৩:৭) এই ধরনের নম্র প্রার্থনাগুলো যিহোবাকে খুশি করে এবং আমাদের সম্বন্ধে ভালো ধারণা দেয়। (পড়ুন, হিতোপদেশ ১৫:৮.) আমরা অন্যদেরকে আমাদের জন্য প্রার্থনা করতে বলতে পারি, যেমন প্রেরিত পৌলও বলেছিলেন। “আমাদের নিমিত্ত প্রার্থনা কর,” তিনি লিখেছিলেন, “কেননা আমরা নিশ্চয় জানি, আমাদের সৎসংবেদ আছে, সর্ব্ববিষয়ে সদাচরণ করিতে বাঞ্ছা করিতেছি।”—ইব্রীয় ১৩:১৮.
আমাদের প্রার্থনা এমনকী আরও বেশি কিছু প্রকাশ করে
১২. আমাদের প্রার্থনায় কোন বিষয়গুলো গুরুত্বপূর্ণ হওয়া উচিত?
১২ আমাদের প্রার্থনাগুলো কি প্রকাশ করে যে, আমরা যিহোবার সুখী এবং উদ্যোগী সাক্ষি? আমাদের বিনতিগুলো কি মূলত ঈশ্বরের ইচ্ছা পালন করার, রাজ্যের বার্তা প্রচার করার, যিহোবার সার্বভৌমত্বের সত্যতা প্রতিপাদন করার এবং তাঁর নামকে পবিত্র করার ওপর কেন্দ্রীভূত? আমাদের প্রার্থনায় এগুলো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হওয়া উচিত, যেমনটা যিশুর আদর্শ প্রার্থনায় ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে, যেটি এই কথাগুলো দিয়ে শুরু হয়: “হে আমাদের স্বর্গস্থ পিতঃ, তোমার নাম পবিত্র বলিয়া মান্য হউক, তোমার রাজ্য আইসুক, তোমার ইচ্ছা সিদ্ধ হউক, যেমন স্বর্গে তেমনি পৃথিবীতেও হউক।”—মথি ৬:৯, ১০.
১৩, ১৪. আমাদের প্রার্থনাগুলো আমাদের সম্বন্ধে কী প্রকাশ করে?
১৩ ঈশ্বরের কাছে করা আমাদের প্রার্থনাগুলো আমাদের উদ্দেশ্য, আগ্রহ এবং আকাঙ্ক্ষাকে প্রকাশ করে। যিহোবা জানেন আমরা কী ধরনের ব্যক্তি। হিতোপদেশ ১৭:৩ পদ বলে: “মুষী রৌপ্যের জন্য ও হাফর সুবর্ণের জন্য, কিন্তু সদাপ্রভুই চিত্তের পরীক্ষা করেন।” ঈশ্বর দেখেন যে, আমাদের হৃদয়ে কী রয়েছে। (১ শমূ. ১৬:৭) তিনি জানেন যে, আমাদের সভাগুলো, আমাদের পরিচর্যা এবং আমাদের আধ্যাত্মিক ভাইবোনদের সম্বন্ধে আমরা কেমন বোধ করি। যিহোবা অবগত আছেন যে, খ্রিস্টের “ভ্রাতৃগণের” বিষয়ে আমরা কী চিন্তা করি। (মথি ২৫:৪০) তিনি জানেন যে, আমরা যে-বিষয়ে প্রার্থনা করি, তা সত্যিই চাই কি না নাকি একটা শব্দগুচ্ছকে আমরা নিছক পুনরুক্তি করছি। “প্রার্থনাকালে,” যিশু বলেছিলেন, “তোমরা অনর্থক পুনরুক্তি করিও না, যেমন জাতিগণ করিয়া থাকে; কেননা তাহারা [ভুলবশত] মনে করে, বাক্যবাহুল্যে তাহাদের প্রার্থনার উত্তর পাইবে।”—মথি ৬:৭.
১৪ এ ছাড়া, প্রার্থনায় আমাদের অভিব্যক্তিগুলো প্রকাশ করে যে, আমরা ঈশ্বরের ওপর কতখানি নির্ভর করি। “তুমি [সদাপ্রভু] হইয়াছ আমার আশ্রয়,” দায়ূদ বলেছিলেন, “শত্রু হইতে রক্ষাকারী দৃঢ় দুর্গ। আমি চিরকাল তোমার তাম্বুতে বাস করিব, তোমার পক্ষযুগের অন্তরালে আশ্রয় লইব।” (গীত. ৬১:৩, ৪) ঈশ্বর যখন রূপকভাবে ‘আমাদের উপরে আপন তাম্বু বিস্তার করেন,’ তখন আমরা নিরাপত্তা এবং তাঁর সুরক্ষামূলক যত্ন উপভোগ করি। (প্রকা. ৭:১৫) প্রার্থনায় এই দৃঢ়প্রত্যয়ের সঙ্গে যিহোবার নিকটবর্তী হওয়া কতই না সান্ত্বনাদায়ক যে, আমাদের বিশ্বাসের যেকোনো পরীক্ষার সময়ে তিনি ‘আমাদের সপক্ষ’!—পড়ুন, গীতসংহিতা ১১৮:৫-৯.
১৫, ১৬. পরিচর্যার বিশেষ সুযোগগুলো লাভ করার ক্ষেত্রে আমাদের আকাঙ্ক্ষা সম্বন্ধে প্রার্থনা আমাদেরকে কী নির্ণয় করতে সাহায্য করতে পারে?
১৫ আমাদের উদ্দেশ্যগুলো সম্বন্ধে যিহোবার কাছে করা আমাদের অকপট প্রার্থনা সেগুলো সম্বন্ধে সত্যটা নির্ণয় করতে আমাদেরকে সাহায্য করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, ঈশ্বরের লোকেদের মধ্যে তত্ত্বাবধান করার মতো অবস্থানে থেকে সেবা করার উৎসুক মনোভাব কি সত্যিই সাহায্যকারী হওয়ার এবং রাজ্যের বিষয়গুলোকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য আমাদের যথাসাধ্য করার ক্ষেত্রে এক নম্র আকাঙ্ক্ষা? নাকি আমরা “প্রাধান্যপ্রিয়” হতে চাই বা এমনকী অন্যদের ওপর “প্রভুত্ব” করতে চাই? যিহোবার লোকেদের মধ্যে এমনটা হওয়া উচিত নয়। (পড়ুন, ৩ যোহন ৯, ১০; লূক ২২:২৪-২৭.) আমাদের যদি মন্দ আকাঙ্ক্ষাগুলো থাকে, তাহলে যিহোবা ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করার সময় অকপটতা সেগুলোকে প্রকাশ করে দিতে এবং সেগুলো দৃঢ়ভাবে গেঁথে যাওয়ার আগেই আমাদেরকে পরিবর্তিত হতে সাহায্য করতে পারে।
১৬ খ্রিস্টান স্ত্রীরা হয়তো আকুলভাবে চাইতে পারে যে, তাদের স্বামীরা যেন পরিচারক দাস এবং পরে হয়তো একজন অধ্যক্ষ বা প্রাচীন হিসেবে সেবা করে। এই বোনেরা হয়তো এক উদাহরণযোগ্য উপায়ে আচরণ করার প্রচেষ্টা করার দ্বারা তারা তাদের ব্যক্তিগত প্রার্থনায় যে-অনুভূতিগুলো প্রকাশ করে থাকে, সেগুলোর সঙ্গে মিল রেখে কাজ করতে পারে। এটা গুরুত্বপূর্ণ কারণ একজন পুরুষের পরিবারের সদস্যদের কথাবার্তা এবং আচরণ, মণ্ডলীতে তাকে কীভাবে দেখা হয়, সেটার ওপর এক প্রভাব ফেলতে পারে।
জনসমক্ষে করা প্রার্থনায় অন্যদের প্রতিনিধিত্ব করা
১৭ আমরা যখন ব্যক্তিগতভাবে প্রার্থনা করি, তখন কেন নির্জন পরিবেশ কাম্য?
১৭ যিশু ব্যক্তিগতভাবে তাঁর পিতার কাছে প্রার্থনা করার জন্য প্রায়ই জনতার কাছ থেকে অন্য স্থানে চলে যেতেন। (মথি ১৪:১৩; লূক ৫:১৬; ৬:১২) আমাদেরও একইভাবে নির্জন পরিবেশের প্রয়োজন রয়েছে। শান্তিপূর্ণ পরিবেশে শান্তভাবে করা প্রার্থনায় আমরা সম্ভবত সেই সিদ্ধান্তগুলো নিতে পারি, যেগুলো যিহোবাকে খুশি করে এবং আমাদের আধ্যাত্মিক মঙ্গলের জন্য উপকারী। তবে, যিশুও জনসমক্ষে প্রার্থনা করেছিলেন আর কীভাবে এটা সঠিকভাবে করা যেতে পারে, তা বিবেচনা করা উত্তম।
১৮. জনসমক্ষে করা প্রার্থনায় একটা মণ্ডলীকে প্রতিনিধিত্ব করার সময়, ভাইদের কোন বিষয়গুলো মনে রাখা উচিত?
১৮ আমাদের সভাগুলোতে জনসমক্ষে করা প্রার্থনায় “শুচি [“অনুগত,” NW]” পুরুষরা মণ্ডলীকে প্রতিনিধিত্ব করে। (১ তীম. ২:৮) এই ধরনের প্রার্থনার শেষে সহবিশ্বাসীদের “আমেন” অর্থাৎ “তা-ই হোক” বলা উচিত। কিন্তু, এর জন্য তাদের অবশ্যই বলা বিষয়বস্তুর সঙ্গে একমত হতে হবে। যিশুর আদর্শ প্রার্থনায় আঘাতদায়ক বা বিবেচনাহীন কোনো কথা ছিল না। (লূক ১১:২-৪) অধিকন্তু, তিনি তাঁর শ্রোতাদের প্রত্যেকের প্রয়োজন বা সমস্যাগুলো সম্বন্ধে বিস্তারিতভাবে উল্লেখ করেননি। নিজস্ব উদ্বেগগুলো ব্যক্তিগত প্রার্থনার জন্য উপযুক্ত বিষয় কিন্তু জনসমক্ষে করা প্রার্থনার জন্য নয়। আর প্রার্থনায় কোনো দলকে প্রতিনিধিত্ব করার সময়, গোপন বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত করা থেকে আমাদের বিরত হওয়া উচিত।
১৯. জনসমক্ষে করা প্রার্থনায় আমাদের কেমন আচরণ করা উচিত?
১৯ আমরা যখন জনসমক্ষে করা প্রার্থনায় অন্যদের প্রতিনিধিত্ব করি, তখন আমাদের ‘ঈশ্বরের’ প্রতি সশ্রদ্ধ “ভয়” প্রদর্শন করতে হবে। (১ পিতর ২:১৭) কিছু বিষয়ের জন্য উপযুক্ত সময় ও স্থান থাকতে পারে, কিন্তু সেগুলো হয়তো খ্রিস্টীয় সভাতে অনুপযুক্ত হবে। (উপ. ৩:১) উদাহরণস্বরূপ, ধরুন একজন ব্যক্তি প্রার্থনার সময়ে দলের একে অপরের হাত ধরে প্রার্থনা করতে চাইতে পারেন। এইরকম করা হয়তো কাউকে কাউকে বিরক্ত বা বিক্ষিপ্ত করতে পারে, যাদের মধ্যে সেই পরিদর্শনকারীরাও থাকতে পারে, যারা আমাদের বিশ্বাসে বিশ্বাসী নয়। জনসমক্ষে করা প্রার্থনার সময় কিছু বিবাহ সাথি হয়তো বিচক্ষণতার সঙ্গে হাত ধরে প্রার্থনা করতে পারে কিন্তু তারা যদি একে অন্যকে আলিঙ্গন করে প্রার্থনা করে, তাহলে যারা এই ধরনের আচরণ দেখে, তারা হয়তো বিঘ্ন পেতে পারে। তারা হয়তো এইরকম চিন্তা করতে পারে বা এমন ধারণা লাভ করতে পারে যে, সেই দম্পতি যিহোবার প্রতি গভীর শ্রদ্ধার পরিবর্তে, তাদের রোমান্টিক সম্পর্কের ওপর অধিক মনোযোগ দিচ্ছে। তাই, তাঁর প্রতি গভীর সম্মানবশত আসুন আমরা ‘সকলই ঈশ্বরের গৌরবার্থে করি’ এবং এমন আচরণ করা এড়িয়ে চলি, যা কাউকে বিক্ষিপ্ত করতে, আঘাত দিতে বা বিঘ্ন জন্মাতে পারে।—১ করি. ১০:৩১, ৩২; ২ করি. ৬:৩.
কীসের জন্য প্রার্থনা করবেন?
২০. রোমীয় ৮:২৬, ২৭ পদকে আপনি কীভাবে ব্যাখ্যা করবেন?
২০ কখনো কখনো আমাদের ব্যক্তিগত প্রার্থনায় কী বলতে হবে, তা আমরা না-ও জানতে পারি। “উচিত মতে কি প্রার্থনা করিতে হয়, তাহা আমরা জানি না,” পৌল লিখেছিলেন, “কিন্তু [পবিত্র] আত্মা আপনি অবক্তব্য আর্ত্তস্বর দ্বারা আমাদের পক্ষে অনুরোধ করেন। আর [ঈশ্বর] যিনি হৃদয় সকলের অনুসন্ধান করেন, তিনি জানেন, আত্মার ভাব কি।” (রোমীয় ৮:২৬, ২৭) যিহোবা শাস্ত্রে অনেক প্রার্থনা লিপিবদ্ধ করিয়েছেন। তিনি এই অনুপ্রাণিত মিনতিগুলোকে আমাদের করা মিনতি হিসেবে গ্রহণ করেন আর তাই সেগুলো পূর্ণ করেন। ঈশ্বর আমাদের সম্বন্ধে জানেন এবং তাঁর আত্মাকে ব্যবহার করে বাইবেল লেখকদের মাধ্যমে তিনি যে-বিষয়গুলো বলিয়েছেন, সেগুলোর অর্থ জানেন। আত্মা যখন আমাদের পক্ষে “অনুরোধ” বা মধ্যস্থতা করে, তখন যিহোবা আমাদের বিনতিগুলোর উত্তর দেন। কিন্তু, আমরা যখন ঈশ্বরের বাক্যের সঙ্গে আরও পরিচিত হয়ে উঠি, তখন কীসের জন্য আমাদের প্রার্থনা করা উচিত, সেই বিষয়টা আরও তাড়াতাড়ি মনে পড়তে পারে।
২১. পরের প্রবন্ধে আমরা কী পরীক্ষা করে দেখব?
২১ আমরা যেমন শিখেছি, আমাদের প্রার্থনাগুলো আমাদের সম্বন্ধে অনেক কিছু প্রকাশ করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, সেগুলো হয়তো প্রকাশ করতে পারে যে, আমরা যিহোবার কতটা নিকটবর্তী হয়েছি এবং তাঁর বাক্যকে আমরা কতটা ভালোভাবে জানি। (যাকোব ৪:৮) পরের প্রবন্ধটিতে আমরা বাইবেলে লিপিবদ্ধ কয়েকটা প্রার্থনা এবং প্রার্থনাপূর্ণ অভিব্যক্তি পরীক্ষা করে দেখব। শাস্ত্র সম্বন্ধে এইরকম পরীক্ষা, প্রার্থনায় ঈশ্বরের নিকটবর্তী হওয়ার ক্ষেত্রে কোন প্রভাব ফেলতে পারে?
আপনি কীভাবে উত্তর দেবেন?
• কোন মনোভাব নিয়ে আমাদের যিহোবার কাছে প্রার্থনা করা উচিত?
• কেন সহবিশ্বাসীদের জন্য আমাদের প্রার্থনা করা উচিত?
• আমাদের প্রার্থনাগুলো আমাদের এবং আমাদের উদ্দেশ্যগুলো সম্বন্ধে কী প্রকাশ করতে পারে?
• জনসমক্ষে করা প্রার্থনায় আমাদের কেমন আচরণ করা উচিত?
[৪ পৃষ্ঠার চিত্র]
আপনি কি নিয়মিতভাবে যিহোবার প্রশংসা করেন এবং তাঁকে ধন্যবাদ দেন?
[৬ পৃষ্ঠার চিত্র]
জনসমক্ষে প্রার্থনার সময় আমাদের আচরণ সবসময় যিহোবার সম্মান নিয়ে আসা উচিত