অধ্যায় ৪
যীশু খ্রীষ্ট—ঈশ্বরবিষয়ক জ্ঞানের চাবি
১, ২. জগতের ধর্মগুলি ঈশ্বরবিষয়ক জ্ঞানের চাবিকে কিভাবে নষ্ট করে দিয়েছে?
আপনি আপনার গৃহের দরজায় দাঁড়িয়ে আছেন, চাবি দিয়ে খোলার চেষ্টা করছেন। ঠাণ্ডা পড়ছে এবং অন্ধকার, আর আপনি ভিতরে যেতে আগ্রহী—কিন্তু চাবিটি কাজ করছে না। সঠিক চাবিই মনে হচ্ছে, তবুও তালা কিছুতেই খুলছে না। কী হতাশাজনক! আপনি আবার চাবিটিকে দেখলেন। আপনি কী সঠিক চাবিটিই ব্যবহার করছেন? কেউ কী চাবিটিকে নষ্ট করে দিয়েছে?
২ এই জগতের ধর্মীয় বিভ্রান্তি ঈশ্বরবিষয়ক জ্ঞান সম্বন্ধে যা করেছে এটি তার এক উপযুক্ত উদাহরণ। বাস্তবে, অনেকেই নষ্ট করে দিয়েছে সেই চাবিটিকে যা ঈশ্বরবিষয়ক জ্ঞানকে উন্মুক্ত করে দেয় আমাদের উপলব্ধির জন্য—যীশু খ্রীষ্টকে। কিছু ধর্ম চাবিটিকে সরিয়ে দিয়েছে, সম্পূর্ণরূপে যীশুকে অগ্রাহ্য করে। অন্যেরা যীশুর ভূমিকাকে বিকৃত করেছে, তাঁকে সর্বশক্তিমান ঈশ্বর রূপে উপাসনা করে। যাই হোক না কেন, এই প্রধান চরিত্র, যীশু খ্রীষ্ট সম্বন্ধে এক নিখুঁত জ্ঞান ব্যতিরেকে ঈশ্বরবিষয়ক জ্ঞান আমাদের কাছে রুদ্ধ।
৩. যীশুকে কেন ঈশ্বরবিষয়ক জ্ঞানের চাবি বলা যেতে পারে?
৩ স্মরণ করতে পারেন যীশু যা বলেছিলেন: “ইহাই অনন্ত জীবন যে, তাহারা তোমাকে, একমাত্র সত্যময় ঈশ্বরকে, এবং তুমি যাঁহাকে পাঠাইয়াছ, তাঁহাকে, যীশু খ্রীষ্টকে, জানিতে পায়।” (যোহন ১৭:৩) এই বলে, যীশু গর্ব করছিলেন না। শাস্ত্র বারবার জোর দিয়েছে খ্রীষ্ট সম্বন্ধে নিখুঁত জ্ঞানের প্রয়োজনীয়তার উপরে। (ইফিষীয় ৪:১৩; কলসীয় ২:২; ২ পিতর ১:৮; ২:২০) “তাঁহার [যীশু খ্রীষ্টের] পক্ষে ভাববাদীরা সকলে এই সাক্ষ্য দেন,” প্রেরিত পিতর বলেছিলেন। (প্রেরিত ১০:৪৩) আর প্রেরিত পৌল লিখেছিলেন: “ইহাঁর [যীশুর] মধ্যে জ্ঞানের ও বিদ্যার সমস্ত নিধি গুপ্ত রহিয়াছে।” (কলসীয় ২:৩) পৌল এমনকি বলেছিলেন যে যীশুর জন্যই যিহোবার সকল প্রতিজ্ঞা সত্য হয়েছে। (২ করিন্থীয় ১:২০) তাই যীশু খ্রীষ্ট হলেন ঈশ্বরবিষয়ক জ্ঞানের সেই প্রকৃত চাবি। যীশুর স্বরূপ এবং ঈশ্বরের ব্যবস্থায় তাঁর ভূমিকা সম্পর্কে আমাদের জ্ঞানকে অবশ্যই মুক্ত হতে হবে কোনরকম বিকৃতি থেকে। কিন্তু যীশুর শিষ্যেরা ঈশ্বরের উদ্দেশ্য সকলের মধ্যে তাঁকে প্রধান হিসাবে মনে করেন কেন?
সেই প্রতিজ্ঞাত মশীহ
৪, ৫. কী আশা সকল মশীহের উপরে কেন্দ্রীভূত ছিল ও যীশুর শিষ্যেরা কোন্ দৃষ্টিভঙ্গিতে তাঁকে দেখেছিলেন?
৪ বিশ্বস্ত ব্যক্তি হেবলের সময় থেকেই, ঈশ্বরের সেবকগণ অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করেছিলেন সেই বংশের জন্য যা যিহোবা ঈশ্বর নিজে ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন। (আদিপুস্তক ৩:১৫; ৪:১-৮; ইব্রীয় ১১:৪) এটি প্রকাশ করা হয়েছিল যে সেই বংশ মশীহ, অর্থ “অভিষিক্ত ব্যক্তি,” রূপে ঈশ্বরের উদ্দেশ্য সাধন করবেন। তিনি “পাপ শেষ” করবেন এবং তাঁর রাজ্যের গৌরব সম্বন্ধে গীতসংহিতায় ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছিল। (দানিয়েল ৯:২৪-২৬; গীতসংহিতা ৭২:১-২০) মশীহ প্রমাণিত হবেন কে?
৫ কল্পনা করুন আন্দ্রিয় নামক এক যিহূদী যুবকের উত্তেজনা বোধ যখন তিনি নাসরতের যীশুর কথা শুনেছিলেন। আন্দ্রিয় সত্বর তার ভাই শিমোন পিতরের কাছে যান ও তাকে বলেছিলেন: “আমরা মশীহের দেখা পাইয়াছি।” (যোহন ১:৪১) যীশুর শিষ্যেরা নিশ্চিত হয়েছিলেন যে তিনিই সেই প্রতিজ্ঞাত মশীহ। (মথি ১৬:১৬) আর প্রকৃত খ্রীষ্টানগণ যীশু যে বাস্তবিকই পূর্বে বলা সেই মশীহ, অথবা খ্রীষ্ট, তাদের এই বিশ্বাসের জন্য মৃত্যু বরণ করতেও প্রস্তুত ছিলেন। তারা কী প্রমাণ পেয়েছিলেন? আসুন আমরা প্রমাণের তিনটি ক্ষেত্র বিবেচনা করি।
প্রমাণ যে যীশুই ছিলেন সেই মশীহ
৬. (ক) কোন্ বংশধারায় প্রতিজ্ঞাত বংশের উৎপন্ন হওয়ার ছিল এবং আমরা কিরূপে জানি যে যীশু সেই বংশধারার মাধ্যমে এসেছিলেন? (খ) সা.শ. ৭০ সালের পরে জীবিত থাকা কোন ব্যক্তির পক্ষে কেন অসম্ভব হবে দাবি করা যে তিনিই মশীহ?
৬ যীশুর বংশাবলিই প্রথম ভিত্তি স্থাপন করে তাঁকে প্রতিজ্ঞাত মশীহরূপে শনাক্ত করতে। যিহোবা তাঁর সেবক অব্রাহামকে বলেছিলেন যে সেই প্রতিজ্ঞাত বংশ আসবে তার পরিবার থেকে। অব্রাহামের পুত্র ইস্হাক, ইস্হাকের পুত্র যাকোব এবং যাকোবের পুত্র যিহূদা প্রত্যেকেই এক অনুরূপ প্রতিজ্ঞা পেয়েছিলেন। (আদিপুস্তক ২২:১৮; ২৬:২-৫; ২৮:১২-১৫; ৪৯:১০) মশীহের আগমনের বংশধারা আরও ছোট হয়ে এসেছিল যখন বহু শতাব্দী পরে রাজা দায়ূদকে বলা হয়েছিল যে তার বংশেই ইনি উৎপন্ন হবেন। (গীতসংহিতা ১৩২:১১; যিশাইয় ১১:১, ১০) মথি এবং মার্ক লিখিত সুসমাচার নিশ্চিত করে যে যীশু ঐ বংশধারায় আবির্ভূত হয়েছিলেন। (মথি ১:১-১৬; লূক ৩:২৩-৩৮) যদিও যীশুর বহু কদুঠার শত্রু ছিল, তাঁর সুপরিচিত বংশধারা সম্বন্ধে কেউ কখনও বিতর্ক উপস্থিত করেনি। (মথি ২১:৯, ১৫) স্পষ্টতই, তাহলে, তাঁর বংশাবলি হল প্রশ্নাতীত। কিন্তু, যিহূদীদের বংশ বিবরণ সমূহ নষ্ট করা হয়েছিল যখন রোমীয়েরা সা.শ. ৭০ সালে যিরূশালেম লুণ্ঠন করে। পরবর্তীকালে, প্রতিজ্ঞাত মশীহরূপে কেউ কখনও কোন দাবি প্রমাণ করতে পারেনি।
৭. (ক) সাক্ষ্যপ্রমাণের দ্বিতীয় ক্ষেত্রটি কী যে যীশুই ছিলেন মশীহ? (খ) মীখা ৫:২ পদ কিভাবে যীশুর সম্পর্কে পূর্ণ হয়েছিল?
৭ পরিপূর্ণ ভাববাণী প্রমাণের দ্বিতীয় ক্ষেত্র। ইব্রীয় শাস্ত্রাবলীর বহু বহু ভাববাণী মশীহের জীবন ইতিহাসের বিভিন্ন বিষয়কে বর্ণনা করে। সা.শ.পূ. অষ্টম শতাব্দীতে, ভাববাদী মীখা ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন যে এই মহান শাসক বৈৎলেহমের এক নগণ্য নগরে জন্ম নেবেন। ইস্রায়েলে দুটি নগরের নাম ছিল বৈৎলেহম, কিন্তু এই ভাববাণী নির্দিষ্ট করে দিয়েছিল কোনটি: বৈৎলেহম ইফ্রাথা, যেখানে রাজা দায়ূদ জন্ম নিয়েছিলেন। (মীখা ৫:২) যীশুর পিতামাতা, যোষেফ ও মরিয়ম, বাস করতেন নাসরতে, প্রায় ১৫০ কিলোমিটার বৈৎলেহমের উত্তরে। মরিয়ম গর্ভবতী থাকাকালীন, কিন্তু, রোমীয় শাসক কৈসর আগস্ত সকল প্রজাকে আদেশ দিয়েছিলেন তাদের নিজ নগরে গিয়ে নাম লিখাতে।a তাই যোষেফকে তার গর্ভবতী স্ত্রীকে নিয়ে আসতে হয়েছিল বৈৎলেহমে, যেখানে যীশু জন্ম নিয়েছিলেন।—লূক ২:১-৭.
৮. (ক) কখন এবং কোন্ ঘটনার সাথে ৬৯ “সপ্তাহ” শুরু হয়েছিল? (খ) কত দীর্ঘ ছিল এই ৬৯ “সপ্তাহ” ও কী ঘদুট যখন তা শেষ হয়েছিল?
৮ সা.শ.পূ. ষষ্ঠ শতাব্দীতে, ভাববাদী দানিয়েল ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন যে যিরূশালেমকে পুনঃস্থাপন এবং পুনর্নির্মাণ করার আজ্ঞা বার হওয়ার ৬৯ “সপ্তাহ” পরে মশীহ বা “অভিষিক্ত ব্যক্তি, নায়ক” আবির্ভূত হবেন।b বাইবেল এবং জাগতিক ইতিহাস অনুযায়ী, যিরূশালেম পুনর্নির্মাণের আজ্ঞা দেওয়া হয়েছিল সা.শ.পূ. ৪৫৫ সালে। (নহিমিয় ২:১-৮) তাই মশীহের আবির্ভাব হওয়ার ছিল সা.শ.পূ. ৪৫৫ থেকে ৪৮৩ (৬৯ গুণ ৭) বছর পরে। এটি আমাদের নিয়ে আসে সা.শ. ২৯ সালে, সেই বছরে যখন যিহোবা পবিত্র আত্মা দিয়ে যীশুকে অভিষিক্ত করেছিলেন। এইভাবে যীশু হয়েছিলেন “খ্রীষ্ট” (অর্থ “অভিষিক্ত ব্যক্তি”), অথবা মশীহ।—লূক ৩:১৫, ১৬, ২১, ২২.
৯. (ক) কিভাবে গীতসংহিতা ২:২ পদ পরিপূর্ণ হয়েছিল? (খ) আর কয়েকটি ভাববাণী কী যা যীশুতে পরিপূর্ণ হয়েছিল? (তালিকা দেখুন।)
৯ অবশ্য, প্রত্যেকেই যীশুকে প্রতিজ্ঞাত মশীহরূপে গ্রহণ করেনি, আর শাস্ত্র এটি ভবিষ্যদ্বাণীও করেছিল। যেমন গীতসংহিতা ২:২ পদে লিখিত আছে, রাজা দায়ূদ ঐশিকভাবে অনুপ্রাণিত হন ভবিষ্যদ্বাণী করতে: “পৃথিবীর রাজগণ দণ্ডায়মান হয়, নায়কগণ একসঙ্গে মন্ত্রণা করে, সদাপ্রভুর বিরুদ্ধে এবং তাঁহার অভিষিক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে।” এই ভাববাণী নির্দেশ করেছিল যে একের অধিক দেশগুলি থেকে নেতৃবৃন্দ যিহোবার অভিষিক্ত ব্যক্তি, অথবা মশীহকে আক্রমণ করতে একত্রিত হবে। আর ঠিক তাই ঘদুটছিল। যিহূদী ধর্মীয় নেতারা, রাজা হেরোদ এবং রোমীয় দেশাধ্যক্ষ পন্তীয় পীলাত সকলেই যীশুকে হত্যা করায় অংশ নিয়েছিল। পূর্বে শত্রুভাবাপন্ন হেরোদ এবং পীলাত তখন থেকে বিশ্বস্ত বন্ধু হয়ে উদুঠছিলেন। (মথি ২৭:১, ২; লূক ২৩:১০-১২; প্রেরিত ৪:২৫-২৮) যীশু যে মশীহ ছিলেন তার আরও প্রমাণের জন্য, সঙ্গে দেওয়া “কিছু বিশিষ্ট মশীহ-সম্বন্ধীয় ভাববাণী” নামক তালিকাটি দেখুন।
১০. কী কী উপায়ে যিহোবা সাক্ষ্য দিয়েছিলেন যে যীশু ছিলেন তাঁর প্রতিজ্ঞাত অভিষিক্ত ব্যক্তি?
১০ যিহোবা ঈশ্বরের সাক্ষ্য, প্রমাণের তৃতীয় ক্ষেত্র যা যীশুর মশীহ পরিচয়কে সমর্থন করে। যিহোবা স্বর্গদূতেদের পাঠিয়েছিলেন লোকেদের জানাতে যে যীশু ছিলেন প্রতিজ্ঞাত মশীহ। (লূক ২:১০-১৪) বাস্তবে, যীশুর পার্থিব জীবনকালে, যিহোবা নিজে স্বর্গ থেকে কথা বলেছিলেন, যীশুর প্রতি তাঁর সমর্থন রয়েছে প্রকাশ করে। (মথি ৩:১৬, ১৭; ১৭:১-৫) যিহোবা ঈশ্বর যীশুকে ক্ষমতা দিয়েছিলেন অলৌকিক ঘটনাবলি সম্পাদন করতে। এদের প্রত্যেকটিই ছিল আরও ঐশিক প্রমাণ যে যীশুই ছিলেন মশীহ, কারণ ঈশ্বর নিশ্চয়ই কোন প্রতারককে কখনই শক্তি দেবেন না অলৌকিক ঘটনাবলি সম্পাদন করতে। যিহোবা আরও তাঁর পবিত্র আত্মাকে ব্যবহার করেছিলেন সুসমাচারের বিবরণ লেখার অনুপ্রেরণা পতে, যাতে যীশুর মশীহ পরিচয়ের প্রমাণ বাইবেলের অংশ হয়েছিল, ইতিহাসে সবচেয়ে ব্যাপকরূপে অনুবাদিত এবং বিতরিত পুস্তক।—যোহন ৪:২৫, ২৬.
১১. যীশু যে মশীহ ছিলেন তার কত প্রমাণ আছে?
১১ একদুত্র, প্রমাণের এই ক্ষেত্রগুলি অন্তর্ভুক্ত করে শত শত তথ্য যা প্রতিজ্ঞাত মশীহরূপে যীশুকে শনাক্ত করে। স্পষ্টতই, তাহলে, প্রকৃত খ্রীষ্টানগণ যথার্থরূপেই ‘তাঁহার পক্ষে ভাববাদীরা সকলে এই সাক্ষ্য দেন’ এবং ঈশ্বরবিষয়ক জ্ঞানের চাবি বলে তাঁকে দেখেছিলেন। (প্রেরিত ১০:৪৩) কিন্তু তিনি যে মশীহ ছিলেন সেই সত্য ছাড়াও যীশু খ্রীষ্ট সম্বন্ধে আরও অনেক বেশি শেখার আছে। কোথায় তাঁর উদ্ভব হয়েছিল? তিনি কিরূপ ছিলেন?
যীশুর মনুষ্যপূর্ব অস্তিত্ব
১২, ১৩. (ক) আমরা কিভাবে জানি যে পৃথিবীতে আসার পূর্বে যীশু স্বর্গে অস্তিত্বে ছিলেন? (খ) “বাক্য” কে এবং এক মানব হওয়ার পূর্বে তিনি কী কাজ করেছিলেন?
১২ যীশুর জীবনকে তিনটি পর্যায়ে ভাগ করা যেতে পারে। প্রথমটি শুরু হয়েছিল পৃথিবীতে তাঁর জন্মের বহু পূর্বে। মীখা ৫:২ পদ বলে যে মশীহের উৎপত্তি হয়েছিল “প্রাক্কাল হইতে, অনাদিকাল হইতে।” আর যীশু স্পষ্টভাবে বলেছিলেন যে তিনি “ঊর্দ্ধস্থানের,” অর্থাৎ, স্বর্গ থেকে এসেছিলেন। (যোহন ৮:২৩; ১৬:২৮) পৃথিবীতে আসার পূর্বে তিনি কতদিন স্বর্গে অস্তিত্বে ছিলেন?
১৩ যীশুকে ঈশ্বরের “একজাত পুত্ত্র” বলা হয়েছিল কারণ যিহোবা নিজে সরাসরি তাঁকে সৃষ্টি করেছিলেন। (যোহন ৩:১৬) “সমুদয় সৃষ্টির প্রথমজাত” রূপে, তারপর ঈশ্বর যীশুকে ব্যবহার করেছিলেন অন্য সমস্ত কিছু সৃষ্টি করতে। (কলসীয় ১:১৫; প্রকাশিত বাক্য ৩:১৪) যোহন ১:১ পদ বলে যে “বাক্য” (যীশু তাঁর মনুষ্যপূর্ব অস্তিত্বে) ঈশ্বরের কাছে ছিলেন “আদিতে।” তাই বাক্য যিহোবার কাছে ছিলেন যখন “আকাশমণ্ডল ও পৃথিবীর” সৃষ্টি করা হয়েছিল। ঈশ্বর বাক্যকে সম্বোধন করেন যখন তিনি বলেছিলেন: “আমরা আমাদের প্রতিমূর্ত্তিতে, আমাদের সাদৃশ্যে মনুষ্য নির্ম্মাণ করি।” (আদিপুস্তক ১:১, ২৬) অনুরূপে, বাক্য নিশ্চয়ই ঈশ্বরের প্রিয় “কার্য্যকারী” ছিলেন, যাঁকে হিতোপদেশ ৮:২২-৩১ পদে রূপায়িত প্রজ্ঞা হিসাবে বর্ণনা করা হয়েছে, সমস্ত কিছু সৃষ্টি করতে যিহোবার পাশে কাজ করছিলেন। যিহোবা তাঁকে অস্তিত্বে আনার পর, পৃথিবীতে একজন মানুষ হয়ে জন্মাবার পূর্বে বাক্য স্বর্গে ঈশ্বরের সঙ্গে বহু বহু যুগ কাটিয়েছিলেন।
১৪. কেন যীশুকে বলা হয় “অদৃশ্য ঈশ্বরের প্রতিমূর্ত্তি?”
১৪ আশ্চর্য হওয়ার নয় কলসীয় ১:১৫ পদ যীশুকে বলে “অদৃশ্য ঈশ্বরের প্রতিমূর্ত্তি।” অগণিত যুগ ঘনিষ্ঠ সম্পর্কে থেকে, বাধ্য পুত্র হুবহু তাঁর পিতা, যিহোবার মত হয়েছিলেন। এটি আর একটি কারণ কেন যীশু হলেন জীবন-দায়ী ঈশ্বরবিষয়ক জ্ঞানের চাবি। পৃথিবীতে থাকাকালীন যীশু যা কিছু করেছিলেন তা যিহোবা যা করতেন ঠিক তাই ছিল। সুতরাং, যীশুকে জানার আরও অর্থ হল যিহোবা সম্পর্কে আমাদের জ্ঞান বৃদ্ধি করা। (যোহন ৮:২৮; ১৪:৮-১০) স্পষ্টতই, তাহলে, যীশু খ্রীষ্ট সম্বন্ধে আরও অধিক শেখা অতীব গুরুত্বপূর্ণ।
পৃথিবীতে যীশুর জীবনকাল
১৫. যীশু কিভাবে এক সম্পূর্ণ সিদ্ধ শিশুরূপে জন্ম নিয়েছিলেন?
১৫ যীশুর জীবনের দ্বিতীয় পর্যায় ছিল এখানে পৃথিবীর উপরে। তিনি স্বেচ্ছায় সমর্পণ করেন যখন ঈশ্বর তাঁর জীবনকে স্বর্গ থেকে মরিয়ম নামে এক বিশ্বস্ত যিহূদী কুমারীর গর্ভে স্থানান্তরিত করেছিলেন। যিহোবার শক্তিশালী পবিত্র আত্মা, অথবা সক্রিয় শক্তি, মরিয়মের উপরে ‘ছায়া ফেলেছিল,’ যার ফলে সে গর্ভবতী হয় এবং পরে এক সম্পূর্ণ সিদ্ধ শিশুর জন্ম দিয়েছিল। (লূক ১:৩৪, ৩৫) যীশু কোন অসিদ্ধতার উত্তরাধিকারী ছিলেন না, কারণ তাঁর জীবন এসেছিল এক নিখুঁত উৎস থেকে। সূত্রধর যোষেফের পালিত পুত্ররূপে এক নিরহঙ্কার গৃহে তিনি বড় হয়ে ওদুঠন এবং পরিবারে কয়েকটি সন্তানদের মধ্যে তিনি ছিলেন প্রথম।—যিশাইয় ৭:১৪; মথি ১:২২, ২৩; মার্ক ৬:৩.
১৬, ১৭. (ক) অলৌকিক কার্যাদি সম্পাদনের শক্তি যীশু কোথা থেকে পেয়েছিলেন এবং তার কয়েকটি কী ছিল? (খ) কয়েকটি গুণাবলি কী যা যীশু প্রদর্শন করেছিলেন?
১৬ যখন তাঁর বয়স ১২ বছর ছিল, তখনই যিহোবা ঈশ্বরের প্রতি যীশুর প্রগাঢ় ভক্তি দেখা গিয়েছিল। (লূক ২:৪১-৪৯) বড় হয়ে উদুঠ এবং ৩০ বছর বয়সে তাঁর পরিচর্যাকাজে প্রবৃত্ত হয়ে, যীশু তাঁর সহমানবের জন্য তাঁর গভীর প্রেমও দেখান। যখন ঈশ্বরের পবিত্র আত্মা অলৌকিক কার্য সম্পাদন করতে তাঁকে শক্তি দিয়েছিল, করুণা সহকারে তিনি রুগ্ন, খঞ্জ, পঙ্গু, অন্ধ, বোবা, কুষ্ঠদের সুস্থ করেছিলেন। (মথি ৮:২-৪; ১৫:৩০) হাজার হাজার ক্ষুধার্তকে যীশু খাইয়েছিলেন। (মথি ১৫:৩৫-৩৮) তাঁর বন্ধুদের নিরাপত্তার পক্ষে ভীতিস্বরূপ ছিল এরূপ এক ঝড়কে শান্ত করেছিলেন। (মার্ক ৪:৩৭-৩৯) বাস্তবে, এমনকি তিনি মৃতদের পুনরুত্থানও করেছিলেন। (যোহন ১১:৪৩; ৪৪) এই অলৌকিক কাজগুলি উত্তমরূপে প্রতিষ্ঠিত ইতিহাসের তথ্য। এমনকি যীশুর শত্রুরাও স্বীকার করেছিল যে তিনি ‘অনেক চিহ্ন-কার্য্য করেছিলেন।’—যোহন ১১:৪৭, ৪৮.
১৭ লোকেদের ঈশ্বরের রাজ্য সম্বন্ধে শিক্ষা দিয়ে যীশু তাঁর দেশের সর্বত্র ভ্রমণ করেছিলেন। (মথি ৪:১৭) ধৈর্য ও যৌক্তিকতার এক সর্বোচ্চ মানের উদাহরণও তিনি স্থাপন করেছিলেন। এমনকি যখন তাঁর শিষ্যেরাও তাঁকে নিরাশ করেছিল, তিনি সহানুভূতির সাথে মন্তব্য করেছিলেন: “আত্মা ইচ্ছুক বদুট, কিন্তু মাংস দুর্ব্বল।” (মার্ক ১৪:৩৭, ৩৮) তবুও, যীশু তাদের প্রতি সাহসী এবং দৃঢ় ছিলেন যারা সত্যকে অবজ্ঞা ও অসহায়দের উপরে তাড়না করত। (মথি ২৩:২৭-৩৩) সর্বোপরি, তাঁর পিতার প্রেমের উদাহরণকে তিনি নিখুঁতভাবে অনুকরণ করেছিলেন। এমনকি মৃত্যু বরণ করতেও যীশু ইচ্ছুক ছিলেন যাতে অসিদ্ধ মানবজাতির ভবিষ্যতের জন্য এক আশা থাকতে পারে। আশ্চর্য নয়, তাহলে, আমরা উত্তমরূপেই যীশুর প্রতি উদুল্লখ করতে পারি ঈশ্বরবিষয়ক জ্ঞানের চাবি রূপে! হ্যাঁ, তিনি হলেন জীবন্ত চাবি! কিন্তু একটি জীবন্ত চাবি কেন আমরা বলছি? এটি আমাদের নিয়ে আসে তাঁর জীবনাবস্থার তৃতীয় পর্যায়ে।
বর্তমান সময়ে যীশু
১৮. বর্তমানে যীশুকে কিভাবে আমাদের দেখা উচিত?
১৮ যদিও বাইবেল যীশুর মৃত্যু সম্বন্ধে লেখে, তিনি এখন জীবিত! বাস্তবে, সা.শ. প্রথম শতাব্দীতে বাস করত এমন শত শত লোকে এই তথ্যের চাক্ষুষ সাক্ষী যে তাঁকে পুনরুত্থিত করা হয়েছিল। (১ করিন্থীয় ১৫:৩-৮) যেমন ভাববাণী করা হয়েছিল, তারপরে তিনি তাঁর পিতার দক্ষিণে বসেন এবং স্বর্গে রাজকীয় ক্ষমতা পাওয়ার অপেক্ষা করেছিলেন। (গীতসংহিতা ১১০:১; ইব্রীয় ১০:১২, ১৩) সুতরাং বর্তমানে আমরা যীশুকে কিভাবে দেখব? একটি যাবপাদুত্র এক অসহায় শিশুরূপে তাঁকে চিন্তা করা কি আমাদের উচিত? অথবা যন্ত্রণাপীড়িত এক ব্যক্তিরূপে যাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে? না। তিনি এক বিক্রমশালী, রাজত্বকারী রাজা! আর এখন খুব শীঘ্রই, আমাদের অশান্তিপূর্ণ পৃথিবীর উপরে তাঁর শাসনক্ষমতা তিনি প্রদর্শন করবেন।
১৯. অদূর ভবিষ্যতে যীশু কোন্ কাজে হস্তক্ষেপ করবেন?
১৯ প্রকাশিত বাক্য ১৯:১১-১৫ পদে, রাজা যীশু খ্রীষ্টের সুস্পষ্ট বর্ণনা দেওয়া হয়েছে যেন অসীম ক্ষমতা নিয়ে দুষ্টের বিনাশ করতে আসছেন। এই প্রেমময় স্বর্গীয় শাসক অবশ্যই কত না আগ্রহী হবেন দুঃখদুর্দশার অবসান করতে যা বর্তমানে কোটি কোটি লোককে যন্ত্রণা দিচ্ছে! আর একইভাবে তিনি আগ্রহী তাদের সাহায্য করতে যারা প্রচেষ্টা করছে সেই আদর্শ অনুকরণ করতে যা পৃথিবীতে থাকাকালীন তিনি স্থাপন করেছিলেন। (১ পিতর ২:২১) ‘সর্ব্বশক্তিমান্ ঈশ্বরের সেই মহাদিনের যুদ্ধ,’ যাকে হর্মাগিদোন বলা হয়, তার মধ্য দিয়ে তিনি তাদের রক্ষা করতে চান, যাতে ঈশ্বরের স্বর্গীয় রাজ্যের পার্থিব প্রজারূপে তারা অনন্তকাল বেঁচে থাকতে পারে।—প্রকাশিত বাক্য ৭:৯, ১৪; ১৬:১৪, ১৬.
২০. তাঁর সহস্র বৎসর রাজত্বকালে যীশু মানবজাতির জন্য কী করবেন?
২০ ভবিষ্যদ্বাণী করা যীশুর সহস্র বৎসর শান্তির রাজত্বকালে, সমস্ত মানবজাতির জন্য তিনি অলৌকিক কার্যাবলি সম্পাদন করবেন। (যিশাইয় ৯:৬, ৭; ১১:১-১০; প্রকাশিত বাক্য ২০:৬) যীশু সমস্ত রোগব্যাধি আরোগ্য করবেন ও মৃত্যুর শেষ ঘটাবেন। শত শত কোটি মানুষকে তিনি পুনরুত্থান করবেন যেন পৃথিবীতে অনন্তকাল বাস করবার এক সুযোগ তাদেরও হতে পারে। (যোহন ৫:২৮, ২৯) পরের একটি অধ্যায়ে তাঁর মশীহ রাজ্য সম্বন্ধে আরও অধিক জেনে আপনি রোমাঞ্চিত হবেন। এ সম্বন্ধে নিশ্চিত থাকুন। আমরা কল্পনাও করতে পারি না রাজ্যের শাসনের অধীনে আমাদের জীবন কী অপূর্ব হবে। যীশু খ্রীষ্ট সম্বন্ধে আরও উত্তমরূপে জানা কত গুরুত্বপূর্ণ! হ্যাঁ, এটি অত্যাবশ্যক যে আমরা কখনও ভুলব না যীশুকে, ঈশ্বরবিষয়ক জ্ঞানের জীবন্ত চাবি যা অনন্ত জীবনে পরিচালিত করে।
[পাদটীকাগুলো]
a এই নাম লিখান রোমীয় সাম্রাজ্যকে কর আদায় করতে অধিক সুবিধা করে দিয়েছিল। তাই, আগস্ত না জেনেই এক ভাববাণী পূর্ণ করতে সাহায্য করেছিলেন সেই শাসক সম্বন্ধে যে ‘এক প্রজাপীড়ককে রাজ্যে প্রেরণ করিবে।’ একই ভাববাণী বলে যে “নিয়মের নায়ক,” অর্থাৎ মশীহ, “ভগ্ন হইবে” এই শাসকের উত্তরাধিকারীর সময়ে। আগস্তের উত্তরাধিকারী, তিবিরিয়ের রাজত্বকালে যীশুকে হত্যা করা হয়েছিল।—দানিয়েল ১১:২০-২২.
b প্রাচীন যিহূদীরা সাধারণত সপ্তাহের বৎসর রূপে চিন্তা করত। উদাহরণস্বরূপ, ঠিক যেমন প্রতি সপ্তম দিন একটি বিশ্রামদিন ছিল, প্রতি সপ্তম বৎসর ছিল এক বিশ্রাম বৎসর।—যাত্রাপুস্তক ২০:৮-১১; ২৩:১০; ১১.
আপনার জ্ঞান পরীক্ষা করুন
যীশুর বংশপরিচয় কিভাবে মশীহরূপে তাঁর দাবিকে সমর্থন করে?
কয়েকটি মশীহ সম্বন্ধীয় ভাববাণী কী যা যীশুতে পূর্ণ হয়েছিল?
ঈশ্বর কিরূপে সরাসরি দেখিয়েছিলেন যে যীশুই তাঁর অভিষিক্ত ব্যক্তি ছিলেন?
যীশু কেন ঈশ্বরবিষয়ক জ্ঞানের জীবন্ত চাবি?
[৩৭ পৃষ্ঠার তালিকা]
মশীহ সম্বন্ধীয় কিছু বিশিষ্ট ভবিষ্যদ্বাণী
ভবিষ্যদ্বাণী ঘটনা পরিপূর্ণতা
তাঁর প্রাথমিক জীবন
যিশাইয় ৭:১৪ এক কুমারীর গর্ভে জন্ম মথি ১:১৮-২৩
যিরমিয় ৩১:১৫ তাঁর জন্মের পরে শিশুদের হত্যা মথি ২:১৬-১৮
তাঁর পরিচর্যা
যিশাইয় ৬১:১, ২ ঈশ্বর হতে তাঁর কার্যভার লূক ৪:১৮-২১
যিশাইয় ৯:১, ২ পরিচর্যা লোকেদের এক মথি ৪:১৩-১৬
মহা আলোক দেখিয়েছিল
গীতসংহিতা ৬৯:৯ যিহোবার গৃহ নিমিত্তক উদ্যোগ যোহন ২:১৩-১৭
যিশাইয় ৫৩:১ বিশ্বাস করেনি যোহন ১২:৩৭, ৩৮
সখরিয় ৯:৯; এক গর্দভ-বৎসের উপরে যিরূশালেমে মথি ২১:১-৯
গীতসংহিতা ১১৮:২৬ প্রবেশ; রাজা এবং যিহোবার
নামে আসছেন এইরূপে
অভিবাদন
তাঁর প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা ও মৃত্যু
গীতসংহিতা ৪১:৯; ১০৯:৮ একজন প্রেরিত অবিশ্বস্ত; প্রেরিত ১:১৫-২০
যীশুকে ধরিয়ে দেয় ও
পরে বদলি করা হয়
সখরিয় ১১:১২ ত্রিশ রৌপ্যমুদ্রার বিনিময়ে মথি ২৬:১৪, ১৫
বিশ্বাসঘাতকতা
গীতসংহিতা ২৭:১২ তাঁর বিরুদ্ধে মিথ্যাসাক্ষী মথি ২৬:৫৯-৬১
ব্যবহৃত হয়েছিল
গীতসংহিতা ২২:১৮ তাঁর বস্ত্রের জন্য গুলিবাঁট করা হয়েছিল যোহন ১৯:২৩, ২৪
যিশাইয় ৫৩:১২ অধর্মীদের সাথে গণিত মথি ২৭:৩৮
গীতসংহিতা ২২:৭, ৮ মৃত্যুসময়ে বিদ্রূপ করা হয় মার্ক ১৫:২৯-৩২
গীতসংহিতা ৬৯:২১ অম্লরস দেওয়া হয়েছিল মার্ক ১৫:২৩, ৩৬
যিশাইয় ৫৩:৫; বিদ্ধ করা হয়েছিল যোহন ১৯:৩৪, ৩৭
সখরিয় ১২:১০
যিশাইয় ৫৩:৯ ধনবানের সাথে কবর মথি ২৭:৫৭-৬০
গীতসংহিতা ১৬:৮-১১ ক্ষয়ের পূর্বে উত্থিত প্রেরিত ২:২৫-৩২;
১৩:৩৪-৩৭
[৩৫ পৃষ্ঠার চিত্র]
ঈশ্বর যীশুকে শক্তি দিয়েছিলেন পীড়িতদের সুস্থ করতে