তোমার জীবনকে সফল করে তোলো!
“ধন্য সেই ব্যক্তি, যে দুষ্টদের মন্ত্রণায় চলে না, . . . সে যাহা কিছু করে, তাহাতেই কৃতকার্য্য হয়।”—গীতসংহিতা ১:১, ৩.
১. (ক) জগতের অনেক যুবক-যুবতীরা সাফল্যকে কীভাবে দেখে থাকে? (খ) বাইবেল একজন সফল ব্যক্তির বিষয়ে কী বলে?
সাফল্য—বলতে তুমি কী বোঝ? একজন যুবক বলে, “ব্যাবসায় সফল হওয়াই আমার জীবনের সবচেয়ে বড় লক্ষ্য।” একজন কিশোরী বলে: “আমার স্বপ্ন হল আমার একটা সুখের সংসার হবে।” কিন্তু আরেকজন কিশোরী বলে: “আমার একটা বিরাট বাড়ি হবে, সুন্দর গাড়ি থাকবে . . . আর আমি শুধু আমাকে নিয়েই ব্যস্ত থাকব।” কিন্তু সমস্যা হল এই যে টাকাপয়সা, পরিবার, ভাল চাকরি বা ব্যাবসা কিছুই সত্যিকারের সাফল্য এনে দিতে পারে না। গীতসংহিতা ১:১-৩ পদে আমরা পড়ি: “ধন্য সেই ব্যক্তি, যে দুষ্টদের মন্ত্রণায় চলে না, . . . কিন্তু সদাপ্রভুর ব্যবস্থায় আমোদ করে, . . . সে যাহা কিছু করে, তাহাতেই কৃতকার্য্য হয়।”
২. সত্যিকারের সাফল্য কোথায় পাওয়া যায় আর তা অর্জন করার একমাত্র পথ কী?
২ বাইবেল এখানে এমন কিছুর প্রতিজ্ঞা করে যা মানুষের পক্ষে দেওয়া অসাধ্য আর তা হল সত্যিকারের সাফল্য! কিন্তু টাকাপয়সা অর্জনে সফল হওয়ার কথা এখানে বলা হয়নি। বাইবেল সাবধান করে দেয়: “ধনাসক্তি সকল মন্দের একটা মূল।” (১ তীমথিয় ৬:১০) সত্যিকারের সফলতা আসে যিহোবাকে খুশি করার দ্বারা, তাঁর ব্যবস্থা মেনে চলার দ্বারা। শুধু এতেই সত্যিকারের পরিতৃপ্তি ও প্রকৃত সুখ পাওয়া যায়! যিহোবার ব্যবস্থা অনুসারে চলা ও এটা যা করতে বলে তা করার বিষয়টা হয়তো অনেকেরই পছন্দের নয়। কিন্তু, যীশু বলেছিলেন: “ধন্য যাহারা আত্মাতে দীনহীন [আধ্যাত্মিক বিষয়ে সচেতন]।” (মথি ৫:৩) তুমি বোঝ আর নাই বা বোঝ তোমাকে আধ্যাত্মিক চাহিদা দিয়েই সৃষ্টি করা হয়েছিল—ঈশ্বরকে জানার ও তাঁর উদ্দেশ্যগুলো বোঝার এক গভীর আকাঙ্ক্ষা তোমার মধ্যে আছে। তাই তুমি যদি ওই আকাঙ্ক্ষাকে মেটাও ও “সদাপ্রভুর ব্যবস্থা” মেনে চলো, তাহলে তুমি সত্যিকার সুখ পেতে পার।
কেন আমাদের ঈশ্বরের ব্যবস্থা দরকার
৩. যিহোবাকে আমাদের ‘পাদবিক্ষেপ স্থির’ করতে দিতে আমাদের কেন আনন্দিত হওয়া উচিত?
৩ ভাববাদী যিরমিয় লিখেছিলেন: “হে সদাপ্রভু আমি জানি, মনুষ্যের পথ তাহার বশে নয়, মনুষ্য চলিতে চলিতে আপন পাদবিক্ষেপ স্থির করিতে পারে না।” (যিরমিয় ১০:২৩) এটা যুবক-বৃদ্ধ সব মানুষের বেলায় সত্যি। আমাদের নিজেদের পাদবিক্ষেপ ঠিক করার জন্য আমাদের যে শুধু প্রজ্ঞা, অভিজ্ঞতা ও জ্ঞানেরই অভাব আছে তা নয় কিন্তু তা করার অধিকারও আমাদের নেই। প্রকাশিত বাক্য ৪:১১ পদে বাইবেল বলে: “‘হে আমাদের প্রভু ও আমাদের ঈশ্বর, তুমিই প্রতাপ ও সমাদর ও পরাক্রম গ্রহণের যোগ্য; কেননা তুমিই সকলের সৃষ্টি করিয়াছ, এবং তোমার ইচ্ছাহেতু সকলই অস্তিত্বপ্রাপ্ত ও সৃষ্ট হইয়াছে।’” যিহোবা আমাদের সৃষ্টি করেছেন, তাই তিনি হলেন আমাদের “জীবনের উনুই।” (গীতসংহিতা ৩৬:৯) অতএব, আমাদের জীবনকে কীভাবে কাজে লাগানো উচিত তা তাঁর চেয়ে ভাল আর কেউই জানে না। তাই, তিনি যে ব্যবস্থা দিয়েছিলেন তা আমাদের আনন্দ কেড়ে নেওয়ার জন্য নয় বরং আমাদের ভালর জন্য। (যিশাইয় ৪৮:১৭) ঈশ্বরের ব্যবস্থা না মানলে তোমার জীবন ব্যর্থতার অন্ধকারে ডুবে যাবে।
৪. কেন অনেক যুবক-যুবতীরা তাদের জীবনকে নষ্ট করে?
৪ উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, তুমি কি কখনও ভেবে দেখেছ যে কেন এত যুবক-যুবতীরা মাদক দ্রব্য সেবন করে, যৌন অনৈতিকতায় জড়িয়ে পড়ে ও অন্যান্য খারাপ কাজ করে নিজেদের জীবনকে নষ্ট করছে? গীতসংহিতা ৩৬:১, ২ পদ বলে: “দুষ্টের হৃদয়মধ্যে অধর্ম্ম তাহার কাছে কথা বলে, ঈশ্বর-ভয় তাহার চক্ষুর অগোচর। সে নিজের দৃষ্টিতে আত্মশ্লাঘা করিয়া বলে, আমার অধর্ম্ম আবিষ্কৃত ও ঘৃণিত হইবে না।” ঈশ্বরের প্রতি স্বাস্থ্যকর ‘ভয়’ নেই বলে অনেক যুবক-যুবতীরা এই ভেবে নিজেদেরকে বোকা বানায় যে তাদের এইরকম ঝুঁকিপূর্ণ জীবনযাপনের ফল খারাপ কিছু হবে না। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাদেরকে এই বাস্তব নীতিটা মানতেই হয়: “মনুষ্য যাহা কিছু বুনে তাহাই কাটিবে। ফলতঃ আপন মাংসের উদ্দেশে যে বুনে, সে মাংস হইতে ক্ষয়রূপ শস্য পাইবে; কিন্তু আত্মার উদ্দেশে যে বুনে, সে আত্মা হইতে অনন্ত জীবনরূপ শস্য পাইবে।”—গালাতীয় ৬:৭, ৮.
‘দিন গণনা করা’
৫, ৬. (ক) কেন যুবক-যুবতীদের ‘তাহাদের দিন গণনা করা’ উচিত আর তা করার মানে কী? (খ) ‘আমাদের সৃষ্টিকর্ত্তাকে স্মরণ করার’ মানে কী?
৫ তুমি কীভাবে তোমার জীবনকে সফল করে তুলতে পার ও ‘অনন্ত জীবন’ পেতে পার? মোশি লিখেছিলেন: “আমাদের আয়ুর পরিমাণ সত্তর বৎসর; বলযুক্ত হইলে আশী বৎসর হইতে পারে; . . . তাহা বেগে পলায়ন করে, এবং আমরা উড়িয়া যাই।” (গীতসংহিতা ৯০:১০) মৃত্যুর বিষয়ে তুমি হয়তো কখনও চিন্তাই করনি। আর সেইজন্য অনেক যুবক-যুবতীদের হাবভাব এমন যেন তাদের কোন কিছুই হবে না। কিন্তু মোশি আমাদের কাছে এই দুঃখজনক সত্যটা খুব পরিষ্কারভাবে তুলে ধরেন যে আমাদের জীবন খুবই ছোট। আর এমন কোন নিশ্চয়তাও নেই যে আমরা ৭০ কিংবা ৮০ বছরই বেঁচে থাকব। “কাল ও দৈব,” এমনকি অল্পবয়সী ও ভাল স্বাস্থ্যের লোকেদের জীবনও কেড়ে নিতে পারে। (উপদেশক ৯:১১) তাহলে তোমার এই মূল্যবান জীবনকে তুমি কীভাবে কাজে লাগাবে? মোশি প্রার্থনা করেছিলেন: “এরূপে আমাদের দিন গণনা করিতে শিক্ষা দেও, যেন আমরা প্রজ্ঞার চিত্ত লাভ করি।”—গীতসংহিতা ৯০:১২.
৬ তাহলে তোমার দিন গণনা করার মানে কী? এর মানে এই নয় যে তুমি শুধু সারাক্ষণ এটাই ভাবতে থাকবে যে তুমি কত দিন বেঁচে থাকবে। মোশি প্রার্থনা করেছিলেন যে যিহোবা যেন তাঁর লোকেদের শিক্ষা দেন যে তাদের জীবনের বাকি সময়কে তারা কীভাবে কাজে লাগাবে যাতে তা যিহোবার সম্মান নিয়ে আসে। তুমি কি তোমার জীবনের দিন গণনা করছ—একেকটা দিনকে ঈশ্বরের প্রশংসা করার জন্য এক সুযোগ হিসেবে দেখছ? যুবক-যুবতীদেরকে বাইবেল এই উৎসাহজনক পরামর্শ দেয়: “তোমার হৃদয় হইতে বিরক্তি দূর কর, শরীর হইতে দুঃখ অপসারণ কর, কেননা তরুণ বয়স ও জীবনের অরুণোদয়কাল অসার। আর তুমি যৌবনকালে আপন সৃষ্টিকর্ত্তাকে স্মরণ কর।” (উপদেশক ১১:১০-১২:১) আমাদের সৃষ্টিকর্তাকে স্মরণ করার মানে শুধু এটুকুই মনে রাখা নয় যে তিনি আছেন। একজন অপরাধী যখন যীশুকে অনুরোধ করেছিলেন, “আপনি যখন আপন রাজ্যে আসিবেন, তখন আমাকে স্মরণ করিবেন,” তখন তা বলে তিনি শুধু যীশুকে তার নাম মনে রাখার কথাই বোঝাতে চাননি। তিনি যীশুকে তার জন্য কাজ করার অর্থাৎ তাকে পুনরুত্থিত করার জন্য অনুরোধ জানিয়েছিলেন! (লূক ২৩:৪২. আদিপুস্তক ৪০:১৪, ২৩; ইয়োব ১৪:১৩ পদগুলোর সঙ্গে তুলনা কর।) একইভাবে যিহোবাকে স্মরণ করার মানে কিছু করা অর্থাৎ তিনি খুশি হন এমন কাজ করা। তাহলে তোমার ক্ষেত্রে কি বলা যেতে পারে যে তুমি যিহোবাকে স্মরণ করছ?
অন্যায়কারীদের ঈর্ষা করো না
৭. কিছু কিছু যুবক-যুবতী কেন তাদের সৃষ্টিকর্তাকে ভুলে যেতে চায়? একটা উদাহরণ দাও।
৭ অনেক যুবক-যুবতীরা যিহোবাকে ভুলে যেতে চায় কারণ তারা মনে করে যে সাক্ষি হওয়ার মানে হাজার বিধিনিষেধের মধ্যে আটকে পড়া। স্পেনের একজন ভাই তার কিশোর বয়সের কথা মনে করে বলেন: “সত্য আমার কাছে এতই কঠিন ও কঠোর মনে হতো যে বাইরের জগতের চাকচিক্য আমাকে টানত। আসলে চুপ করে বসে থাকা, অধ্যয়ন করা, সভাতে যাওয়া, টাই পরে ফিটফাট থাকা আমার একেবারেই ভাল লাগত না।” মাঝে মাঝে তোমারও কি মনে হয় যে যিহোবাকে সেবা করতে গিয়ে তুমিও কিছু হারাচ্ছ? তুমি হয়তো শুনে অবাক হবে যে বাইবেলের একজন লেখকেরও ঠিক এইরকমই মনে হয়েছিল। দয়া করে তোমার বাইবেলের গীতসংহিতা ৭৩ অধ্যায় খোল।
৮. কেন আসফ “গর্ব্বিতদের প্রতি ঈর্ষা” করেছিলেন?
৮ এসো আমরা এই অধ্যায়টা মন দিয়ে আলোচনা করি। ২ ও ৩ পদ বলে: “আমার চরণ প্রায় টলিয়াছিল; আমার পাদবিক্ষেপ প্রায় স্খলিত হইয়াছিল। কারণ যখন দুষ্টদের কল্যাণ দেখিয়াছিলাম, তখন গর্ব্বিতদের প্রতি ঈর্ষা করিয়াছিলাম।” এই অধ্যায়ের শিরোনাম পড়লেই জানা যায় যে এই গীত আসফ লিখেছিলেন। তিনি ছিলেন একজন লেবীয় গায়ক ও রাজা দায়ূদের সময়ের একজন লোক। (১ বংশাবলি ২৫:১, ২; ২ বংশাবলি ২৯:৩০) যদিও ঈশ্বরের মন্দিরে সেবা করার বিরাট সুযোগ তিনি পেয়েছিলেন, তবুও তিনি সেই লোকেদের দেখে ‘ঈর্ষান্বিত’ হয়েছিলেন যারা তাদের দুষ্টতার জন্য গর্বিত ছিল। মনে হতো যে তারা যেন সুখে জীবনযাপন করছে; তাদের সুখ, শান্তি ও নিরাপত্তা সমস্ত কিছু আছে। আসলে তাদের ক্ষণিক সাফল্য দেখে মনে হয়েছিল “তাহাদের মনের সঙ্কল্প অপরিমিত।” (৫, ৭ পদ) তারা তাদের কৃতিত্ব নিয়ে ‘দর্প’ করত অর্থাৎ খুবই উদ্ধতভাবে কথা বলত। (৮ পদ) “তাহারা আকাশে মুখ রাখিয়াছে, এবং তাহাদের জিহ্বা পৃথিবীতে বিহার করে,” অর্থাৎ স্বর্গের বা পৃথিবীর কাউকেই তারা সম্মান করত না।—৯ পদ।
৯. আজকে কিছু খ্রীষ্টান যুবক-যুবতী কীভাবে আসফের মতো মনে করতে পারে?
৯ স্কুলে তোমাদের সহপাঠীরাও হয়তো এরকম। তুমি হয়তো শুনতে পাবে যে তারা নির্লজ্জের মতো তাদের যৌন আকাঙ্ক্ষার কথা, উদ্দাম পার্টির গল্প, মদ খাওয়া ও মাদক দ্রব্য নেওয়ার কথা সবার কাছে বলে বেড়াচ্ছে। তাদের ওই আপাত খুশির সঙ্গে তুমি যখন তোমার খ্রীষ্টীয় জীবনের সংকীর্ণ পথকে তুলনা করবে তখন তোমারও হয়তো মাঝে মাঝে “গর্ব্বিতদের প্রতি ঈর্ষা” করার ইচ্ছা হতে পারে। (মথি ৭:১৩, ১৪) আসফ জোর দিয়ে বলেছিলেন “নিশ্চয় আমি বৃথাই চিত্ত পরিষ্কার করিয়াছি, নির্দ্দোষতায় হস্ত প্রক্ষালন করিয়াছি। কেননা আমি সমস্ত দিন আহত হইয়াছি।” (১৩, ১৪ পদ) হ্যাঁ, তিনি ঈশ্বরের সেবা করা এবং সৎ জীবনযাপন করার মূল্য সম্বন্ধে সন্দেহ করতে শুরু করেছিলেন।
১০, ১১. (ক) কী আসফকে তার মনোভাব পাল্টাতে সাহায্য করেছিল? (খ) অন্যায়কারীরা কীভাবে “পিচ্ছিল স্থানে” আছে? উদাহরণ দাও।
১০ আনন্দের ব্যাপার হল, আসফ এই বিষয় ভেবে অনেক সময় ধরে দুঃখ পাননি। খুব তাড়াতাড়ি তিনি বুঝতে পেরেছিলেন যে দুষ্টদের আপাত সুখ আসলে ছিল এক বিভ্রান্তি অর্থাৎ যা কিনা খুবই ক্ষণস্থায়ী! তিনি বলেছিলেন: “তুমি তাহাদিগকে পিচ্ছিল স্থানেই রাখিতেছ, তাহাদিগকে বিনাশে ফেলিয়া দিতেছ। তাহারা নিমিষকাল মধ্যে কেমন উচ্ছিন্ন হয়, নানা ত্রাসে কেমন নিঃশেষে সংহার পায়।” (১৮, ১৯ পদ) তেমনই তোমার অনেক সঙ্গীসাথিরাও ‘পিচ্ছিল স্থানেই’ আছে। এখনই হোক বা পরে, তাদের নোংরা আচরণের পরিণতি তাদেরকে ভোগ করতেই হবে, হতে পারে তা অবাঞ্ছিত মাতৃত্বের বোঝা বয়ে, যৌন সংক্রামক রোগে ভুগে কিংবা হয়তো জেলে গিয়ে বা এমনকি মৃত্যুভোগ করে! কিন্তু এর চেয়েও দুঃখজনক যে তারা ঈশ্বরের কাছ থেকে দূরে সরে যায়।—যাকোব ৪:৪.
১১ স্পেনের একজন যুবতী সাক্ষি নিজের জীবনে এটাকে সত্যি হতে দেখেছিলেন। তিনি যখন যুবতী ছিলেন তিনি দ্বৈত জীবনযাপন করতেন, তিনি কিছু খারাপ যুবক-যুবতীদের পাল্লায় পড়েছিলেন। এরপর তিনি তাদের মধ্যেই একজনের প্রেমে পড়েন যে ছেলেটা ছিল মাদকাসক্ত। যদিও বোন নিজে নেশা করতেন না কিন্তু তিনি তার প্রেমিককে মাদক দ্রব্য কিনে দিতেন। তিনি স্বীকার করেন, “এমনকি তার শরীরে ইঞ্জেকশন নিতে আমি সাহায্য করতাম।” শেষ পর্যন্ত এই বোন তার ভুল বুঝতে পারেন এবং আবার সত্যের পথে ফিরে আসেন। কয়েক মাস পর তিনি যখন জানতে পারেন যে তার সেই মাদকাসক্ত প্রেমিক এইডসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে তখন কত বড় আঘাতই না তিনি পেয়েছিলেন! হ্যাঁ, গীতরচক বলেছিলেন যে দুষ্ট লোকেরা “পিচ্ছিল স্থানেই” আছে। কেউ কেউ হয়তো তাদের নোংরা জীবনযাপনের জন্য হঠাৎ করে মারাও যেতে পারে। আর অন্যান্যরা যদি তাদের পথ না বদলায়, তাহলে খুব তাড়াতাড়িই তাদেরকে “প্রভু যীশু স্বর্গ হইতে আপনার পরাক্রমের দূতগণের সহিত জ্বলন্ত অগ্নিবেষ্টনে প্রকাশিত হইবেন, এবং যাহারা ঈশ্বরকে জানে না ও যাহারা আমাদের প্রভু যীশুর সুসমাচারের আজ্ঞাবহ হয় না, তাহাদিগকে সমুচিত দণ্ড দিবেন।”—২ থিষলনীকীয় ১:৭, ৮.
১২. জাপানের একজন যুবক কীভাবে বুঝতে পেরেছিল যে অন্যায়কারীদের ঈর্ষা করা বোকামি?
১২ অতএব, যারা “ঈশ্বরকে জানে না” তাদেরকে ঈর্ষা করা কতই না বোকামি হবে! সত্যিই, যারা যিহোবাকে জানেন এবং যাদের চিরকাল বেঁচে থাকার আশা আছে তারাই হলেন ঈর্ষার পাত্র। জাপানের একজন খ্রীষ্টান যুবক তা বুঝতে পেরেছিল। যুবক অবস্থায় সেও “আরও বেশি স্বাধীনতা চেয়েছিল।” সে বলে: “আমি ভেবেছিলাম কিছু থেকে আমি বঞ্চিত হচ্ছিলাম। তারপর আমি বুঝতে পেরেছিলাম যে সত্যে না থাকলে আমার জীবন কেমন হবে। আমি চিন্তা করেছিলাম যে ৭০ অথবা ৮০ বছর বেঁচে থেকে একসময় আমি মারা যাব। কিন্তু যিহোবা অনন্ত জীবনের আশা দিয়েছেন! এই বিষয়টা থেকেই আমি উপলব্ধি করেছি যে আমার কাছে যে সত্য আছে তা কত অমূল্য।” কিন্তু, যারা ঈশ্বরের ব্যবস্থা মানে না এমন লোকেদের মধ্যে থেকে বিশ্বস্ত থাকা সহজ নয়। ওই চাপগুলোর মোকাবিলা করার জন্য তুমি কী করতে পার?
তোমার বন্ধুবান্ধব বাছাইয়ের ব্যাপারে সাবধান হও!
১৩, ১৪. বন্ধুবান্ধব বাছাই করা কেন জরুরি?
১৩ গীতসংহিতা ১:১-৩ পদে একজন সফল ব্যক্তির যে বর্ণনা দেওয়া হয়েছে তা আরেকবার পড়া যাক: “ধন্য সেই ব্যক্তি, যে দুষ্টদের মন্ত্রণায় চলে না, পাপীদের পথে দাঁড়ায় না, নিন্দকদের সভায় বসে না। কিন্তু সদাপ্রভুর ব্যবস্থায় আমোদ করে, তাঁহার ব্যবস্থা দিবারাত্র ধ্যান করে। সে জলস্রোতের তীরে রোপিত বৃক্ষের সদৃশ হইবে, যাহা যথাসময়ে ফল দেয়, যাহার পত্র ম্লান হয় না; আর সে যাহা কিছু করে, তাহাতেই কৃতকার্য্য হয়।”
১৪ সবচেয়ে প্রথমে মনে রাখ যে তোমার বন্ধুবান্ধবরা তোমার ওপর এক বিরাট প্রভাব ফেলে। হিতোপদেশ ১৩:২০ পদ বলে: “জ্ঞানীদের সহচর হও, জ্ঞানী হইবে; কিন্তু যে হীনবুদ্ধিদের বন্ধু, সে ভগ্ন হইবে।” এটা বলতে বোঝায় না যে যারা যিহোবার সাক্ষি নয় তাদের সঙ্গে তুমি খারাপ ব্যবহার করবে, তাদের প্রতি কঠোর বা রূঢ় হবে। বাইবেল আমাদের প্রতিবেশীদেরকে ভালবাসতে এবং “মনুষ্যমাত্রের সহিত শান্তিতে” থাকতে বলে। (রোমীয় ১২:১৮; মথি ২২:৩৯) কিন্তু যারা বাইবেলের মানদণ্ডগুলোকে মেনে চলে না তাদের সঙ্গে তুমি যদি খুব ঘনিষ্ঠভাবে মেলামেশা কর, তাহলে তুমিও তাদের ‘মন্ত্রণায় চলতে পার।’
বাইবেল পড়ার উপকারগুলো
১৫. যুবক-যুবতীরা কীভাবে বাইবেল পড়ার জন্য লালসা গড়ে তুলতে পারে?
১৫ গীতরচক এও বলেছিলেন একজন সফল ব্যক্তি ঈশ্বরের ব্যবস্থা “দিবারাত্র ধ্যান করে” আনন্দ পান। (গীতসংহিতা ১:১, ২) এটা মানতেই হবে যে বাইবেল পড়া এত সহজ নয় আর এর কিছু কিছু বিষয় “বুঝা কষ্টকর।” (২ পিতর ৩:১৬) বাইবেল পড়াকে বোঝা বলে মনে করো না। ঈশ্বরের বাক্যের “পারমার্থিক অমিশ্রিত দুগ্ধের” প্রতি লালসা গড়ে তোলো। (১ পিতর ২:২) প্রতিদিন অন্তত অল্প কিছুটা অংশ হলেও পড়ার চেষ্টা কর। কোন বিষয় যদি তুমি বুঝতে না পার, তাহলে গবেষণা কর। এরপর, তুমি যা পড়েছ তা নিয়ে চিন্তা কর। (গীতসংহিতা ৭৭:১১, ১২) যদি মনে হয় যে তুমি মন দিতে পারছ না, তাহলে জোরে জোরে পড় আর “ধ্যান” করার চেষ্টা কর। তাহলে এক সময় দেখবে যে বাইবেল পড়ার প্রতি তোমার ভালবাসা জন্মে গিয়েছে। ব্রাজিলের একজন খ্রীষ্টান যুবতী মনে করে বলে: “আমার সবসময়ই মনে হতো যিহোবা আমার কাছ থেকে অনেক দূরে। কিন্তু কয়েক মাস ধরে আমি বেশি করে ব্যক্তিগত অধ্যয়ন করেছি ও বাইবেল পড়েছি। এখন আমার মনে হয় যে যিহোবার সঙ্গে আমার সম্পর্ক আরও অটুট হয়েছে। তিনি এখন আমার কাছে আরও অনেক বেশি জীবন্ত।”
১৬. মণ্ডলীর সভাগুলো থেকে আমরা কীভাবে আরও বেশি উপকার পেতে পারি?
১৬ মণ্ডলীর সভাগুলোতে যোগ দেওয়া তোমার আধ্যাত্মিক বৃদ্ধির জন্য খুবই জরুরি। যদি তুমি “কিরূপে শুন” তা ‘দেখো,’ তাহলে সভা থেকে তুমি অনেক উৎসাহ পাবে। (লূক ৮:১৮) তোমার কি মাঝে মাঝে মনে হয় যে সভাগুলোতে যেন কোন প্রাণ নেই? তাহলে নিজেকে জিজ্ঞাসা কর, ‘সভাগুলোকে প্রাণবন্ত করে তোলার জন্য আমি কী করতে পারি? আমি কি সভাতে মন দিই? আমি কি সভার জন্য তৈরি হই? আমি কি সভাতে উত্তর দিই?’ সবচেয়ে বড় কথা হল, বাইবেল আমাদের বলে আমরা যেন “প্রেম ও সৎক্রিয়ার সম্বন্ধে পরস্পরকে উদ্দীপিত করিয়া তুলিতে . . . পরস্পরকে চেতনা” দিই। (ইব্রীয় ১০:২৪, ২৫) আর তা করার জন্য তোমাকে সভাতে আসতে হবে! আর সভাতে উত্তর দেওয়ার জন্য তোমাকে আগে থেকে তৈরি হতে হবে। একজন খ্রীষ্টান যুবতী বলে: “আগে থেকে তৈরি হলে সভাতে উত্তর দেওয়া খুব সহজ।”
ঈশ্বরের পথে চললে সফল হওয়া যায়
১৭. বাইবেলের একজন অধ্যবসায়ী পাঠক কীভাবে “জলস্রোতের তীরে রোপিত বৃক্ষের সদৃশ”?
১৭ গীতরচক আরও বলেন যে সফল ব্যক্তি “জলস্রোতের তীরে রোপিত বৃক্ষের সদৃশ।” জলস্রোত বলতে হয়তো ক্ষেতে বা ফলের বাগানে জল দেওয়ার জন্য যে সরু নালা কাটা হয় সেটাকে বোঝায়। (যিশাইয় ৪৪:৪) সেইরকম প্রতিদিন বাইবেল পড়াও যেন এমন যে তার থেকে তুমি অফুরন্ত পুষ্টি ও সতেজতা পাবে। (যিরমিয় ১৭:৮) বিভিন্ন পরীক্ষা ও চাপ সহ্য করার জন্য তুমি প্রতিদিন শক্তি পাবে। যিহোবার চিন্তাধারা জেনে তুমি প্রজ্ঞা লাভ করতে পারবে, যা তোমাকে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করবে।
১৮. যিহোবার সেবায় একজন যুবক কীভাবে সাফল্য পেতে পারে?
১৮ মাঝে মাঝে যিহোবাকে সেবা করা কঠিন বলে মনে হতে পারে। কিন্তু কখনও ভাববে না যে তা করা অসম্ভব। (দ্বিতীয় বিবরণ ৩০:১১) বাইবেল তোমার জন্য প্রতিজ্ঞা করে যে যতক্ষণ পর্যন্ত তোমার মূল লক্ষ্য থাকবে যিহোবাকে খুশি করা ও তার হৃদয়কে আনন্দিত করা ততক্ষণ পর্যন্ত ‘তুমি যাহা কিছু করিবে, তাহাতেই কৃতকার্য্য’ হবে! (হিতোপদেশ ২৭:১১) আর এটাও মনে রেখ, তুমি একা নও। যিহোবা ও যীশু খ্রীষ্ট তোমার সঙ্গে সঙ্গে আছেন। (মথি ২৮:২০; ইব্রীয় ১৩:৫) তাঁরা জানেন যে তোমাকে অনেক চাপের মুখোমুখি হতে হয় আর তাঁরা কখনও তোমাকে ছেড়ে দেবেন না। (গীতসংহিতা ৫৫:২২) এছাড়াও, পুরো ‘ভ্রাতৃসমাজ’ ও তোমার বাবামা যদি সত্যে থাকেন, তাহলে তারাও তোমার সঙ্গে সঙ্গে আছেন, তারা তোমাকে সাহায্য করবেন। (১ পিতর ২:১৭) এইরকম সাহায্যের সঙ্গে তোমার ইচ্ছা আর পরিশ্রম তোমাকে শুধু এখনই নয় কিন্তু চিরকালের জন্য এক সফল জীবন দেবে!
পুনরালোচনার প্রশ্নগুলো
◻ সত্যিকারের সাফল্য কী?
◻ কেন যিহোবাকে আমাদের পাদবিক্ষেপ স্থির করতে দেওয়া উচিত?
◻ যুবক-যুবতীরা কীভাবে ‘তাহাদের দিন গণনা’ করতে পারে?
◻ অন্যায়কারীদের ঈর্ষা করা কেন বোকামি?
◻ প্রতিদিন বাইবেল পড়া ও সভাতে নিয়মিত উপস্থিত হওয়া কীভাবে যুবক-যুবতীদের সফল জীবন পেতে সাহায্য করে?
[২০ পৃষ্ঠার চিত্র]
অনেক যুবক-যুবতীদের ঈশ্বরের প্রতি স্বাস্থ্যকর ‘ভয়’ নেই বলে তারা তাদের জীবনকে নষ্ট করে
[২২ পৃষ্ঠার চিত্র]
যুবক-যুবতীরা প্রায়ই তাদের কাজের পরিণতি কী হতে পারে তা ভুলে যায়
[২৩ পৃষ্ঠার চিত্র]
বাইবেল পড়ার প্রতি ভালবাসা গড়ে তোলো
[২৩ পৃষ্ঠার চিত্র]
সভাতে উত্তর দিলে তুমি সভা থেকে আরও বেশি আনন্দ পাবে