বৃদ্ধ বয়সে আধ্যাত্মিকভাবে ফল উৎপন্ন করা
“যাহারা সদাপ্রভুর বাটীতে রোপিত, . . . তাহারা বৃদ্ধ বয়সেও ফল উৎপন্ন করিবে।” —গীতসংহিতা ৯২:১৩, ১৪.
১, ২. (ক) বৃদ্ধ বয়সকে প্রায়ই কীভাবে বর্ণনা করা হয়ে থাকে? (খ) আদমের পাপের প্রভাবগুলো সম্বন্ধে শাস্ত্র কী প্রতিজ্ঞা করে?
বৃদ্ধ বয়স—এই অভিব্যক্তিটা আপনার মনে কোন চিত্র তুলে ধরে? কুঞ্চিত ত্বক? ক্ষীণ শ্রবণশক্তি? দুর্বল হাত-পা? নাকি উপদেশক ১২:১-৭ পদে সুস্পষ্টভাবে বর্ণিত ‘দুঃসময়ের’ অন্য কোনো বৈশিষ্ট্য? যদি তা-ই হয়, তা হলে এটা মনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ যে, উপদেশক ১২ অধ্যায়ে যে-বর্ণনা পাওয়া যায়, সেগুলো বয়স্ক অবস্থাকে সৃষ্টিকর্তা যিহোবা ঈশ্বরের আদি উদ্দেশ্য হিসেবে নয় বরং মানবদেহে আদমের পাপের পরিণতি হিসেবে তুলে ধরে।—রোমীয় ৫:১২.
২ বয়স্ক হওয়াটা কোনো অভিশাপ নয় কারণ ক্রমাগত বেঁচে থাকতে হলে বছর অতিবাহিত হবেই। বস্তুতপক্ষে, বৃদ্ধি পাওয়া ও পরিপক্বতা হল সমস্ত জীবিত বস্তুর কাঙ্ক্ষিত বৈশিষ্ট্য। ছয় হাজার বছর ধরে পাপ ও অসিদ্ধতার ধ্বংসাত্মক পরিণতি খুব শীঘ্রই অতীতের এক বিষয় হবে এবং সমস্ত বাধ্য মানবজাতি সেই জীবন উপভোগ করবে, যেমনটা চাওয়া হয়েছিল আর তা হল, বার্ধক্য ও মৃত্যুর যন্ত্রণাহীন এক জীবন। (আদিপুস্তক ১:২৮; প্রকাশিত বাক্য ২১:৪, ৫) সেই সময়ে “নগরবাসী কেহ বলিবে না, আমি পীড়িত।” (যিশাইয় ৩৩:২৪) বয়স্ক ব্যক্তিরা তাদের “যৌবনকালে” ফিরে যাবে আর তাদের মাংস “বালকের অপেক্ষাও সতেজ” হবে। (ইয়োব ৩৩:২৫) কিন্তু, বর্তমানে সকলকে আদমের কাছ থেকে উত্তরাধিকারসূত্রে পাওয়া পাপের সঙ্গে লড়াই করতে হবে। তবে, যিহোবার দাসেরা যখন দিন দিন বয়স্ক অবস্থার দিকে পৌঁছায়, তখন তারা বিশেষ উপায়গুলোতে আশীর্বাদ লাভ করে থাকে।
৩. কোন কোন উপায়ে খ্রিস্টানরা ‘বৃদ্ধ বয়সেও ফল উৎপন্ন করিয়া’ চলতে পারে?
৩ ঈশ্বরের বাক্য আমাদের আশ্বাস দেয় যে, “যাহারা সদাপ্রভুর বাটীতে রোপিত, . . . তাহারা বৃদ্ধ বয়সেও ফল উৎপন্ন করিবে।” (গীতসংহিতা ৯২:১৩, ১৪) রূপক ভাষায়, গীতরচক এই মৌলিক সত্যকে তুলে ধরেছেন যে, ঈশ্বরের বিশ্বস্ত দাসেরা ক্রমাগত আধ্যাত্মিকভাবে অগ্রগতি, সমৃদ্ধি এবং উন্নতি লাভ করতে পারে, এমনকি যদিও তারা শারীরিকভাবে অক্ষম হতে থাকে। বাইবেলের ও সেইসঙ্গে আধুনিক দিনের অনেক উদাহরণ এই বিষয়টাকে নিশ্চিত করে।
‘প্রস্থান করিতেন না’
৪. কীভাবে বয়স্কা ভাববাদিনী হান্না ঈশ্বরের প্রতি তার ভক্তি প্রদর্শন করেছিলেন এবং কীভাবে তিনি পুরস্কৃত হয়েছিলেন?
৪ প্রথম শতাব্দীর ভাববাদিনী হান্নার কথা বিবেচনা করুন। ৮৪ বছর বয়সে তিনি “ধর্ম্মধাম হইতে প্রস্থান না করিয়া উপবাস ও প্রার্থনা সহকারে রাতদিন উপাসনা করিতেন।” হান্না একজন নারী হয়ে আক্ষরিকভাবে মন্দিরে বাস করতে পারতেন না, যার বাবা “আশেরবংশজাত” একজন ন-লেবীয় ছিলেন। কল্পনা করুন যে, প্রতিদিন সকালের পরিচর্যার সময় থেকে শুরু করে সন্ধ্যার পরিচর্যার সময় পর্যন্ত থাকার জন্য তাকে নিশ্চয়ই কত প্রচেষ্টাই না করতে হতো! কিন্তু, তার ভক্তির জন্য হান্না প্রচুররূপে পুরস্কৃত হয়েছিলেন। যোষেফ ও মরিয়ম যখন ব্যবস্থা অনুসারে যিহোবার কাছে উপস্থিত করার জন্য শিশু যিশুকে মন্দিরে নিয়ে এসেছিল, তখন হান্না সেখানে উপস্থিত থাকার বিশেষ সুযোগ পেয়েছিলেন। যিশুকে দেখার পর হান্না “ঈশ্বরের ধন্যবাদ করিলেন, এবং যত লোক যিরূশালেমের মুক্তির অপেক্ষা করিতেছিল, তাহাদিগকে যীশুর কথা বলিতে লাগিলেন।”—লূক ২:২২-২৪, ৩৬-৩৮; গণনাপুস্তক ১৮:৬, ৭.
৫, ৬. কোন কোন উপায়ে অনেক বয়স্ক ব্যক্তি আজকে হান্নার মতো মনোভাব দেখাচ্ছে?
৫ আজকে আমাদের মধ্যে অনেক বয়স্ক ব্যক্তি নিয়মিতভাবে সভায় উপস্থিতি, সত্য উপাসনাকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য তাদের আন্তরিক বিনতি এবং সুসমাচার প্রচার করার জন্য তাদের অদম্য আকাঙ্ক্ষার ব্যাপারে হান্নার মতো একই মনোভাব দেখিয়ে থাকে। ৮০-র কোঠায় বয়সি একজন ভাই, যিনি তার স্ত্রীর সঙ্গে নিয়মিতভাবে খ্রিস্টীয় সভাগুলোতে যোগ দেন, তিনি বলেছিলেন: “আমরা সভাতে যাওয়ার অভ্যাস গড়ে তোলার প্রচেষ্টা করেছি। আমরা অন্য আর কোথাও থাকতে চাই না। যেখানে ঈশ্বরের লোকেরা আছে, সেখানেই আমরা থাকতে চাই। সেখানেই আমরা স্বচ্ছন্দ বোধ করি।” সকলের জন্য কতই না উৎসাহজনক এক উদাহরণ!—ইব্রীয় ১০:২৪, ২৫.
৬ “যদি আধ্যাত্মিক বিষয়ের সঙ্গে যুক্ত কোনো কিছু দেখি আর তাতে যদি আমার অংশ নেওয়ার সুযোগ থাকে, তা হলে আমি সেটাতে অংশ নিতে চাই।” এটাই হল জিন নামে একজন খ্রিস্টান বিধবার আদর্শবাক্য, যার বয়স ৮০-র কোঠায়। “এটা ঠিক যে, আমার জীবনেও দুঃখজনক মুহূর্ত রয়েছে,” তিনি বলে চলেন, “কিন্তু তাই বলে আমি যখন দুঃখিত হই, তখন আমার চারপাশের সকলেও কেন দুঃখিত হবে?” উজ্জ্বল চোখে তিনি গঠনমূলক আধ্যাত্মিক উপলক্ষগুলোর জন্য অন্যান্য দেশ পরিদর্শন করার আনন্দ প্রকাশ করেন। সাম্প্রতিক এক ভ্রমণে, তিনি তার সঙ্গীদের বলেছিলেন, “আমি আর কোনো দুর্গ দেখতে চাই না; আমি ক্ষেত্রের পরিচর্যায় যেতে চাই!” যদিও জিন স্থানীয় ভাষা জানতেন না, তবুও তিনি বাইবেলের বার্তার প্রতি লোকেদের আগ্রহ জাগিয়ে তুলতে পেরেছিলেন। এ ছাড়া, বেশ কয়েক বছর তিনি সাহায্যের প্রয়োজন রয়েছে এমন একটা মণ্ডলীর সঙ্গে কাজ করেছেন, যদিও এর অর্থ ছিল একটা নতুন ভাষা শেখা এবং সভাতে আসতে ও যেতে প্রতিবার এক ঘন্টা করে যাত্রা করা।
মনকে সক্রিয় রাখা
৭. বৃদ্ধ বয়সে কীভাবে মোশি ঈশ্বরের সঙ্গে তার সম্পর্ককে বৃদ্ধি করার জন্য আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করেছিলেন?
৭ সময় অতিবাহিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে জীবনে বিভিন্ন অভিজ্ঞতা আসে। (ইয়োব ১২:১২) অন্যদিকে, আধ্যাত্মিক উন্নতি বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এমনি এমনিই আসে না। তাই, কেবল অতীতে অর্জিত জ্ঞানের ভাণ্ডারের ওপর নির্ভর করার চেয়ে বরং ঈশ্বরের অনুগত দাসেরা বছর পেরিয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে “পাণ্ডিত্য বৃদ্ধি” করার প্রচেষ্টা করে। (হিতোপদেশ ৯:৯) যিহোবা যখন মোশিকে একটা কার্যভার দিয়েছিলেন, তখন তার বয়স ছিল ৮০ বছর। (যাত্রাপুস্তক ৭:৭) তার সময়ে সেই বয়স পর্যন্ত বেঁচে থাকা স্পষ্টতই অস্বাভাবিক বলে মনে করা হতো, কারণ তিনি লিখেছিলেন: “আমাদের আয়ুর পরিমাণ সত্তর বৎসর; বলযুক্ত হইলে আশী বৎসর হইতে পারে।” (গীতসংহিতা ৯০:১০) তা সত্ত্বেও, মোশি কখনো এইরকম মনে করেননি যে, তার শেখার বয়স পার হয়ে গিয়েছে। কয়েক দশক ঈশ্বরকে সেবা করার, অনেক বিশেষ সুযোগ উপভোগ করার এবং বিভিন্ন গুরু দায়িত্ব পালন করার পর, মোশি যিহোবার কাছে মিনতি করেছিলেন: “বিনয় করি, আমি যেন তোমাকে জানিয়া তোমার দৃষ্টিতে অনুগ্রহ পাই।” (যাত্রাপুস্তক ৩৩:১৩) যিহোবার সঙ্গে তার সম্পর্ককে বৃদ্ধি করার জন্য মোশি সবসময় আকাঙ্ক্ষী ছিলেন।
৮. তার বয়স যখন ৯০ এর কোঠায় ছিল, তখন দানিয়েল কীভাবে তার মনকে সক্রিয় রেখেছিলেন আর এর ফল কী হয়েছিল?
৮ ভাববাদী দানিয়েলকে সেই সময়ও পবিত্র শাস্ত্রকলাপ নিয়ে ধ্যান করতে দেখা যেত, যখন তার বয়স সম্ভবত ৯০ এর কোঠায় ছিল। “গ্রন্থাবলি”—সম্ভবত যার অন্তর্ভুক্ত ছিল লেবীয় পুস্তক, যিশাইয়, যিরমিয়, হোশেয় এবং আমোষ—অধ্যয়ন করার দ্বারা তিনি যা বুঝতে পেরেছিলেন, তা তাকে আন্তরিক প্রার্থনায় যিহোবার অন্বেষণ করতে অনুপ্রাণিত করেছিল। (দানিয়েল ৯:১, ২) মশীহের আগমন এবং বিশুদ্ধ উপাসনার ভবিষ্যৎ সম্বন্ধে অনুপ্রাণিত তথ্য জানানোর মাধ্যমে সেই প্রার্থনার উত্তর দেওয়া হয়েছিল।—দানিয়েল ৯:২০-২৭.
৯, ১০. মনকে সক্রিয় রাখার জন্য কিছু ব্যক্তি কী করেছে?
৯ আমাদের পক্ষে যতদিন সম্ভব, ততদিন আধ্যাত্মিক বিষয়গুলোর ওপর মনোযোগ কেন্দ্রীভূত রাখার মাধ্যমে আমরাও মোশি ও দানিয়েলের মতো আমাদের মনকে সক্রিয় রাখার প্রচেষ্টা করতে পারি। অনেকে ঠিক তা-ই করছে। ওয়ার্থ নামে একজন খ্রিস্টান প্রাচীন, যার বয়স ৮০-র কোঠায়, তিনি ‘বিশ্বস্ত ও বুদ্ধিমান্ দাসের’ দ্বারা বিতরিত আধ্যাত্মিক খাদ্যের চলতি তথ্য সম্বন্ধে অবগত থাকার আপ্রাণ চেষ্টা করে থাকেন। (মথি ২৪:৪৫) তিনি বলেন, “আমি সত্যকে অত্যন্ত মূল্যবান বলে গণ্য করি আর কীভাবে সত্যের জ্যোতি দিন দিন আরও উজ্জ্বল হচ্ছে, সেটা দেখেও আমি রোমাঞ্চিত।” (হিতোপদেশ ৪:১৮) একইভাবে ফ্রেড নামে একজন ভাই, যিনি ৬০ বছরেরও বেশি সময় পূর্ণসময়ের পরিচর্যায় ব্যয় করেছেন, তিনি সহবিশ্বাসীদের সঙ্গে বাইবেলের বিষয় নিয়ে আলোচনা শুরু করাকে আধ্যাত্মিকভাবে উদ্দীপনামূলক হিসেবে দেখতে পেয়েছেন। “বাইবেলকে সবসময় আমার মনে জীবন্ত রাখতে হয়েছে,” তিনি বলেন। “আপনি যদি বাইবেলকে জীবন্ত—এটিকে অর্থপূর্ণ—করে তুলতে পারেন এবং যা শিখেছেন, তা ‘নিরাময় বাক্য সমূহের আদর্শের’ সঙ্গে সমন্বয় করতে পারেন, তা হলে আপনি শুধু তথ্যের টুকরো টুকরো অংশই জানবেন না। আপনি দেখতে পাবেন যে, প্রত্যেকটা অংশ কীভাবে এর সঠিক স্থানে আলো ছড়াচ্ছে।”—২ তীমথিয় ১:১৩.
১০ নতুন ও কঠিন ধারণা শেখার ক্ষেত্রে সবসময় বয়সই বাধা নয়। ৬০, ৭০ এমনকি ৮০-র কোঠায় বয়সি লোকেরাও নিরক্ষরতার সমস্যাকে কাটিয়ে উঠেছে অথবা নতুন নতুন ভাষা শিখেছে। কিছু যিহোবার সাক্ষি ভিন্ন জাতির লোকেদেরকে সুসমাচার জানানোর উদ্দেশ্যে তা করেছে। (মার্ক ১৩:১০) হ্যারি ও তার স্ত্রী যখন পর্তুগিজ ভাষার প্রচারের ক্ষেত্রে সাহায্য করার জন্য সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, তখন তাদের বয়স ছিল ৬০ এর কোঠায়। “এটা স্বীকার করতেই হবে যে,” হ্যারি বলেন, “বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে জীবনে যেকোনো কাজই আরও কঠিন হয়ে পড়ে।” তা সত্ত্বেও, প্রচেষ্টা ও অধ্যবসায় সহকারে তারা পর্তুগিজ ভাষায় বাইবেল অধ্যয়ন পরিচালনা করতে সমর্থ হয়েছে। এখন অনেক বছর ধরে, হ্যারি তার নতুন ভাষায় জেলা সম্মেলনে বক্তৃতাও দিয়ে থাকেন।
১১. বিশ্বস্ত বয়স্ক ব্যক্তিরা যা সম্পাদন করেছে, তা কেন বিবেচনা করব?
১১ অবশ্য, এই ধরনের প্রতিদ্বন্দ্বিতা গ্রহণ করার মতো স্বাস্থ্য বা পরিস্থিতি সবার থাকে না। তা হলে, কিছু বয়স্ক ব্যক্তি যা সম্পাদন করেছে, তা কেন বিবেচনা করব? নিশ্চিতভাবেই এটা এই জন্য বলা হচ্ছে না যে, সকলের একই বিষয় সম্পন্ন করার প্রচেষ্টা করা উচিত। বরং, মণ্ডলীর বিশ্বস্ত প্রাচীনদের সম্বন্ধে প্রেরিত পৌল ইব্রীয় খ্রিস্টানদেরকে যা লিখেছিলেন, সেই মনোভাব সহকারে বিবেচনা করব: “তাঁহাদের আচরণের শেষগতি আলোচনা করিতে করিতে তাঁহাদের বিশ্বাসের অনুকারী হও।” (ইব্রীয় ১৩:৭) আমরা যখন উদ্যোগের এই উদাহরণগুলো নিয়ে আলোচনা বা মনোযোগের সঙ্গে বিবেচনা করি, তখন আমরা সেই দৃঢ় বিশ্বাসকে অনুকরণ করার জন্য উৎসাহিত হতে পারি, যা এই বয়স্ক ব্যক্তিদের ঈশ্বরকে সেবা করার ক্ষেত্রে অনুপ্রাণিত করে থাকে। কোন বিষয়টা তাকে অনুপ্রাণিত করেছে, সেই সম্বন্ধে ব্যাখ্যা করে ৮৭ বছর বয়স্ক হ্যারি বলেন, “আমি আমার জীবনের বাকি সময়টুকু বিজ্ঞতার সঙ্গে কাজে লাগাতে চাই এবং যিহোবার সেবায় যতটা সম্ভব ব্যবহৃত হতে চাই।” পূর্বে উল্লেখিত ফ্রেড তার বেথেলের কার্যভার পালন করে প্রচুর পরিতৃপ্তি লাভ করেন। তিনি বলেন, “আপনাকে খুঁজে বের করতে হবে যে, কীভাবে আপনি সর্বোত্তম উপায়ে যিহোবাকে সেবা করতে ও তা চালিয়ে যেতে পারেন।”
পরিবর্তিত পরিস্থিতি সত্ত্বেও একান্তভাবে নিয়োজিত থাকা
১২, ১৩. কীভাবে বর্সিল্লয় তার পরিবর্তিত পরিস্থিতি সত্ত্বেও ঈশ্বরীয় ভক্তি দেখিয়েছিলেন?
১২ শারীরিক পরিবর্তন মেনে নেওয়া ও তার সঙ্গে মোকাবিলা করা অনেক কঠিন হতে পারে। কিন্তু, এই ধরনের পরিবর্তন সত্ত্বেও ঈশ্বরীয় ভক্তি দেখানো সম্ভব। এই ক্ষেত্রে গিলিয়দীয় বর্সিল্লয় এক উত্তম উদাহরণ। ৮০ বছর বয়সে তিনি অবশালোমের বিদ্রোহের সময় দায়ূদ ও তার সৈন্যদের প্রতি অসাধারণ আতিথেয়তা দেখিয়েছিলেন, তাদের জন্য খাবার ও বাসস্থান জুগিয়েছিলেন। দায়ূদ যখন যিরূশালেমে ফিরে যাচ্ছিলেন, তখন বর্সিল্লয় সঙ্গীদের সঙ্গে যদর্ন নদী পর্যন্ত গিয়েছিলেন। দায়ূদ বর্সিল্লয়কে রাজদরবারের একজন অংশী হওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। বর্সিল্লয় কেমন প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিলেন? “অদ্য আমার বয়স আশী বৎসর; . . . যাহা ভোজন করি বা যাহা পান করি, আপনার দাস আমি কি তাহার আস্বাদ বুঝিতে পারি? এখন কি আর গায়ক ও গায়িকাদের গানের শব্দ শুনিতে পাই? . . . এই আপনার দাস কিম্হম; এ আমার প্রভু মহারাজের সহিত পার হইয়া যাউক; আপনার যাহা ভাল বোধ হয়, ইহার প্রতি করিবেন।”—২ শমূয়েল ১৭:২৭-২৯; ১৯:৩১-৪০.
১৩ তার পরিবর্তিত পরিস্থিতি সত্ত্বেও, বর্সিল্লয় যিহোবার মনোনীত রাজাকে সমর্থন করার জন্য তার যথাসাধ্য করেছিলেন। যদিও তিনি বুঝতে পেরেছিলেন যে, তার আস্বাদন ও শোনার ক্ষমতা আর আগের মতো নেই, তবুও তিনি তিক্তবিরক্ত হয়ে পড়েননি। এর পরিবর্তে, যে-সুবিধাগুলো দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছিল, সেগুলো নিঃস্বার্থভাবে কিম্হমকে দেওয়ার সুপারিশ করে বর্সিল্লয় তার ভিতরের ব্যক্তিত্বকে প্রকাশ করেছিলেন। বর্সিল্লয়ের মতো আজকে অনেক বয়স্ক ব্যক্তি নিঃস্বার্থ ও উদার মনোভাব দেখিয়ে থাকে। সত্য উপাসনাকে সমর্থন করার জন্য তারা তাদের যথাসাধ্য করে থাকে এটা জেনে যে, “সেই প্রকার যজ্ঞে ঈশ্বর প্রীত হন।” আমাদের মাঝে অনুগত ব্যক্তিদের পাওয়া কী এক আশীর্বাদ!—ইব্রীয় ১৩:১৬.
১৪. কীভাবে দায়ূদের বৃদ্ধ বয়স গীতসংহিতা ৩৭:২৩-২৫ পদে লিপিবদ্ধ কথাগুলোকে আরও অর্থপূর্ণ করে তুলেছে?
১৪ যদিও বছরের পর বছর ধরে দায়ূদের পরিস্থিতি অনেক বার পরিবর্তিত হয়েছিল, তবুও তিনি এই বিষয়ে দৃঢ়প্রত্যয়ী ছিলেন যে, যিহোবার অনুগত দাসদের প্রতি তাঁর যত্ন কখনো পরিবর্তিত হয় না। তার জীবনের শেষ দিকে দায়ূদ সেই গীত রচনা করেছিলেন, যা আজকে ৩৭ গীত নামে পরিচিত। শুধু কল্পনা করুন যে, দায়ূদ চিন্তামগ্ন অবস্থায় আছেন, তার সঙ্গে বীণা রয়েছে এবং তিনি এই কথাগুলো বলে গান গাচ্ছেন: “সদাপ্রভু কর্ত্তৃক মনুষ্যের পাদক্ষেপ সকল স্থিরীকৃত হয়, তাহার পথে তিনি প্রীত। পতিত হইলেও সে ভূতলশায়ী হইবে না; কেননা সদাপ্রভু তাহার হস্ত ধরিয়া রাখেন। আমি যুবক ছিলাম, এখন বৃদ্ধ হইয়াছি, কিন্তু ধার্ম্মিককে পরিত্যক্ত দেখি নাই, তাহার বংশকে খাদ্য ভিক্ষা করিতে দেখি নাই।” (গীতসংহিতা ৩৭:২৩-২৫) এই অনুপ্রাণিত গীতে দায়ূদের বয়স সম্বন্ধে উল্লেখ করাকে যিহোবা উপযুক্ত বলে মনে করেছিলেন। এটি সেই হৃদয়গ্রাহী কথাগুলোতে কতই না গভীর অনুভূতি যুক্ত করেছিল!
১৫. কীভাবে পরিবর্তিত পরিস্থিতি এবং বৃদ্ধ বয়স সত্ত্বেও প্রেরিত যোহন বিশ্বস্ততার এক উত্তম উদাহরণ স্থাপন করেছিলেন?
১৫ পরিবর্তিত পরিস্থিতি এবং বৃদ্ধ বয়স সত্ত্বেও বিশ্বস্ততার আরেকটা উত্তম উদাহরণ হলেন প্রেরিত যোহন। প্রায় ৭০ বছর ঈশ্বরের সেবা করার পর, যোহনকে “ঈশ্বরের বাক্য ও যীশুর সাক্ষ্য প্রযুক্ত” পাট্ম দ্বীপে নির্বাসিত করা হয়েছিল। (প্রকাশিত বাক্য ১:৯) কিন্তু, তার কাজ শেষ হয়ে যায়নি। বস্তুতপক্ষে, যোহনের লিখিত বাইবেলের সমস্ত লেখা তার জীবনের শেষ বছরগুলোতে লেখা হয়েছিল। পাট্ম দ্বীপে থাকাকালীন তাকে প্রকাশিত বাক্য বই সম্বন্ধে বিস্ময়কর দর্শন দেওয়া হয়েছিল, যা তিনি সতর্কতার সঙ্গে লিখে রেখেছিলেন। (প্রকাশিত বাক্য ১:১, ২) সাধারণত মনে করা হয় যে, রোমীয় সম্রাট নির্ভার রাজত্বের সময়ে তাকে নির্বাসন থেকে মুক্তি দেওয়া হয়েছিল। তারপর, সা.কা. প্রায় ৯৮ সালে, যখন তার বয়স হয়তো ৯০ কিংবা ১০০ বছর, তখন যোহন তার নামের সুসমাচারের বই ও তিনটে পত্র লিখেছিলেন।
ধৈর্যের এক চিরঅম্লান নথি
১৬. যারা ভাববিনিময় করার ক্ষেত্রে দুর্বল হয়ে পড়েছে, তারা কীভাবে যিহোবার প্রতি তাদের ভক্তি দেখাতে পারে?
১৬ সীমাবদ্ধতা অনেক প্রকারে ও বিভিন্ন মাত্রায় আসতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, কিছু ব্যক্তি এমনকি ভাববিনিময় করার ক্ষেত্রে দুর্বল হয়ে পড়েছে। কিন্তু, এখনও তারা ঈশ্বরের প্রেম ও অযাচিত দয়ার আনন্দদায়ক স্মৃতিগুলোকে মূল্যবান বলে গণ্য করে। যদিও মুখে বলার ক্ষেত্রে তাদের সীমাবদ্ধতা রয়েছে কিন্তু হৃদয়ে তারা যিহোবাকে এই কথা বলছে: “আমি তোমার ব্যবস্থা কেমন ভালবাসি! তাহা সমস্ত দিন আমার ধ্যানের বিষয়।” (গীতসংহিতা ১১৯:৯৭) আর যিহোবা সেই ব্যক্তিদের জানেন, যারা “তাঁহার নাম ধ্যান” করে আর তিনি উপলব্ধি করেন যে, এই ধরনের ব্যক্তিরা সেই বিরাট সংখ্যক মানবজাতি থেকে কতই না আলাদা, যারা তাঁর পথ সম্বন্ধে কোনো চিন্তাই দেখায় না। (মালাখি ৩:১৬; গীতসংহিতা ১০:৪) এটা জানা কতই না সান্ত্বনাদায়ক যে, যিহোবা আমাদের হৃদয়ের ধ্যানে আনন্দিত হন!—১ বংশাবলি ২৮:৯; গীতসংহিতা ১৯:১৪.
১৭. যিহোবার দীর্ঘসময়ের দাসেরা এমন কী অর্জন করেছে, যা সত্যিই অদ্বিতীয়?
১৭ এই বিষয়টাকেও উপেক্ষা করা যায় না যে, যারা কয়েক দশক ধরে যিহোবাকে বিশ্বস্তভাবে সেবা করছে, তারা এমন কিছু অর্জন করেছে, যা সত্যিই অদ্বিতীয় এবং যা অন্য আর কোনো উপায়ে অর্জন করা যেতে পারে না আর তা হল, ধৈর্যের এক চিরঅম্লান নথি। যিশু বলেছিলেন: “তোমরা নিজ নিজ ধৈর্য্যে আপন আপন প্রাণ লাভ করিবে।” (লূক ২১:১৯) অনন্তজীবন পাওয়ার জন্য ধৈর্য অপরিহার্য। আপনারা যারা ‘ঈশ্বরের ইচ্ছা পালন করিয়াছেন’ এবং নিজেদের জীবনধারার মাধ্যমে আনুগত্যের প্রমাণ দিয়েছেন, তারা “প্রতিজ্ঞার ফল” লাভ করার আশা করতে পারেন।—ইব্রীয় ১০:৩৬.
১৮. (ক) বয়স্ক ব্যক্তিদের কী দেখে যিহোবা আনন্দিত হন? (খ) পরের প্রবন্ধে আমরা কী বিবেচনা করব?
১৮ যিহোবা আপনার পূর্ণসময়ের সেবাকে মূল্যবান বলে গণ্য করেন, তা আপনি যত বেশি বা যত কমই দিন না কেন। একজন ব্যক্তির বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তার ‘বাহ্য মনুষ্যের’ প্রতি যা-ই ঘটুক না কেন, তার “আন্তরিক মনুষ্য” দিন দিন নতুনীকৃত হতে পারে। (২ করিন্থীয় ৪:১৬) কোনো সন্দেহ নেই যে, অতীতে আপনি যা সম্পাদন করেছেন, সেটাকে যিহোবা মূল্যবান বলে গণ্য করেন কিন্তু সেইসঙ্গে এটাও খুবই স্পষ্ট যে, তাঁর নামের জন্য ঠিক এখনই আপনি যা করছেন, সেটাকেও তিনি মূল্যবান বলে গণ্য করেন। (ইব্রীয় ৬:১০) পরের প্রবন্ধে আমরা এই ধরনের বিশ্বস্ততার সুদূরপ্রসারী প্রভাবগুলো সম্বন্ধে বিবেচনা করব।
আপনি কীভাবে উত্তর দেবেন?
• আজকে বয়স্ক খ্রিস্টানদের জন্য হান্না কোন উত্তম উদাহরণ স্থাপন করেছেন?
• একজন ব্যক্তি যা সম্পাদন করতে পারেন, সেই ক্ষেত্রে কেন বয়স সবসময় সীমা আরোপ করে না?
• কীভাবে বয়স্ক ব্যক্তিরা ক্রমাগত ঈশ্বরীয় ভক্তি দেখিয়ে চলতে পারে?
• বয়স্ক ব্যক্তিরা যিহোবাকে যে-সেবা প্রদান করে থাকে, সেটাকে তিনি কীভাবে দেখেন?
[২৩ পৃষ্ঠার চিত্র]
বৃদ্ধ দানিয়েল ‘গ্রন্থাবলির’ মাধ্যমে যিহূদার বন্দিত্বের সময়কাল সম্বন্ধে বুঝতে পেরেছিলেন
[২৫ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]
অনেক বয়স্ক ব্যক্তি নিয়মিতভাবে সভায় উপস্থিতি, উদ্যোগী প্রচার কাজ এবং শেখার জন্য উৎসুক মনোভাব দেখানোর ক্ষেত্রে উদাহরণযোগ্য