“হে আমার প্রাণ, যিহোবার ধন্যবাদ কর”
ন্যান্সী বলেন, “আজকাল প্রচারে আমার খুব অনীহা, একেবারে আনন্দ পাই না।”a প্রায় দশ বছর ধরে তিনি পূর্ণ-সময়ের সুসমাচার প্রচারিকা হিসেবে, অগ্রগামীর কাজ করছেন। তিনি আরও বলেন: “আমার যে কী হয়েছে, তা আমার নিজেরই ভাল লাগে না। প্রচার করা আমার কাছে যেন একটা একঘেয়ে ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে, আমি যেন মন থেকে কোন সাড়া পাই না। আমার কী করা উচিত?”
এবার কিথের উদাহরণ দেখা যাক যিনি যিহোবার সাক্ষিদের মণ্ডলীর একজন প্রাচীন। তিনি একেবারে অবাক হয়ে গিয়েছিলেন যখন তার স্ত্রী বলেন: “তুমি নিশ্চয়ই কোন একটা ব্যাপারে চিন্তিত। তুমি এইমাত্র যে প্রার্থনা করলে তা খাবারের আগের প্রার্থনা নয় তবুও তুমি খাবারের জন্য ধন্যবাদ দিলে!” কিথ কথাটা স্বীকার করে বলেন: “সত্যিই আমিও দেখেছি যে আজকাল আমার প্রার্থনা যেন কেমন যান্ত্রিক হয়ে পড়ছে।”
আপনি নিশ্চয়ই চান না যে যিহোবা ঈশ্বরের প্রশংসা করার জন্য আপনার কথা আন্তরিকতা শূন্য বা যান্ত্রিক হয়ে পড়ুক। বরং আপনি কৃতজ্ঞ মনে হৃদয় থেকে প্রার্থনা করতে চান। কিন্তু অনুভূতি কাপড়ের মতো পরা যায় না বা খুলে ফেলাও যায় না। এটা ব্যক্তির ভিতর থেকে আসে। কীভাবে একজন ব্যক্তি হৃদয় থেকে কৃতজ্ঞ হতে পারেন? গীতসংহিতা ১০৩ অধ্যায় আমাদেরকে এটা বুঝতে সাহায্য করে।
এই ১০৩ গীত প্রাচীন ইস্রায়েলের রাজা দায়ূদ রচনা করেছিলেন। তিনি এই কথাগুলো বলে শুরু করেন: “হে আমার প্রাণ, সদাপ্রভুর [যিহোবার] ধন্যবাদ কর; হে আমার অন্তরস্থ সকল, তাঁহার পবিত্র নামের ধন্যবাদ কর।” (গীতসংহিতা ১০৩:১) একটা বই বলে যে “ধন্যবাদ শব্দ যা ঈশ্বরের জন্য ব্যবহার করা হয়েছে” তা ঈশ্বরের প্রশংসা করাকে বোঝায়, সবসময়ের জন্য তার প্রতি কৃতজ্ঞ হৃদয়ে গভীর ভালবাসাকে বোঝায়। হৃদয় ভরা ভালবাসা ও কৃতজ্ঞতা নিয়ে যিহোবার প্রশংসা করতে চেয়ে দায়ূদ তার প্রাণকে অর্থাৎ নিজেকে বলেছিলেন—“যিহোবার ধন্যবাদ কর।” কিন্তু কী দায়ূদের হৃদয়কে তার উপাস্য ঈশ্বরের প্রতি এমন আন্তরিক অনুভূতিতে ভরিয়ে দিয়েছিল?
দায়ূদ বলে চলেছিলেন: “তাঁহার [যিহোবার] সকল উপকার [কাজ] ভুলিয়া যাইও না।” (গীতসংহিতা ১০৩:২) প্রকৃতই ‘তাঁহার সকল কাজকে’ উপলব্ধি নিয়ে চিন্তা করলে আমাদের হৃদয় যিহোবার প্রতি কৃতজ্ঞ হয়ে ওঠে। প্রকৃতপক্ষে যিহোবার কোন্ কাজগুলোর কথা দায়ূদের মনে ছিল যখন তিনি এই কথাগুলো বলেছিলেন? যিহোবা ঈশ্বরের সৃষ্টি যেমন মেঘমুক্ত রাতে তারায় ভরা আকাশের দিকে তাকালে তা সত্যিই সৃষ্টিকর্তার জন্য আমাদের হৃদয় কৃতজ্ঞতায় ভরিয়ে দেয়। তারায় ভরা আকাশ দায়ূদের মনকে গভীরভাবে ছুঁয়েছিল। (গীতসংহিতা ৮:৩, ৪; ১৯:১) কিন্তু গীতসংহিতা ১০৩ অধ্যায়ে, দায়ূদ যিহোবার কাজের অন্য একটা দিকের কথা চিন্তা করেছিলেন।
যিহোবা “তোমার সমস্ত অধর্ম্ম ক্ষমা করেন”
এই গীতে দায়ূদ ঈশ্বরের প্রেমপূর্ণ দয়ার কাজগুলোর বিষয়ে বলেছিলেন। এগুলোর মধ্যে প্রথম এবং সবচেয়ে বড় কাজটার কথা উল্লেখ করে তিনি গেয়েছিলেন: ‘যিহোবা তোমার সমস্ত অধর্ম্ম ক্ষমা করেন।’ (গীতসংহিতা ১০৩:৩) দায়ূদ তার পাপী অবস্থার বিষয়ে জানতেন। যখন ভাববাদী নাথন বৎশেবার সঙ্গে পারদারিকতার জন্য দায়ূদকে দোষী করেন, তখন দায়ূদ স্বীকার করেছিলেন: “তোমার [যিহোবার] বিরুদ্ধে, কেবল তোমারই বিরুদ্ধে আমি পাপ করিয়াছি, তোমার দৃষ্টিতে যাহা কুৎসিত, তাহাই করিয়াছি।” (গীতসংহিতা ৫১:৪) ভগ্নহৃদয়ে তিনি বিনতি করেছিলেন: “হে ঈশ্বর, তোমার দয়ানুসারে আমার প্রতি কৃপা কর; তোমার করুণার বাহুল্য অনুসারে আমার অধর্ম্ম সকল মার্জনা কর। আমার অপরাধ হইতে আমাকে নিঃশেষে ধৌত কর, আমার পাপ হইতে আমাকে শুচি কর।” (গীতসংহিতা ৫১:১, ২) ক্ষমা পেয়ে দায়ূদ কতই না কৃতজ্ঞ হয়েছিলেন! অসিদ্ধ হওয়ায় তিনি জীবনে আরও পাপ করেছিলেন কিন্তু অনুশোচনা করতে, শাসন মেনে নিতে ও ভুল পথকে শুধরে নিতে তিনি কখনও পিছপা হননি। তার প্রতি ঈশ্বর যে অতুলনীয় দয়া দেখিয়েছিলেন তাই-ই দায়ূদকে যিহোবার ধন্যবাদ করার জন্য উৎসাহিত করেছিল।
আমরাও কি পাপী নই? (রোমীয় ৫:১২) এমনকি প্রেরিত পৌল দুঃখ করে বলেছিলেন: “বস্তুতঃ আন্তরিক মানুষের ভাব অনুসারে আমি ঈশ্বরের ব্যবস্থায় আমোদ করি। কিন্তু আমার অঙ্গপ্রত্যঙ্গে অন্য প্রকার এক ব্যবস্থা দেখিতে পাইতেছি; তাহা আমার মনের ব্যবস্থার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে, এবং পাপের যে ব্যবস্থা আমার অঙ্গপ্রত্যঙ্গে আছে, আমাকে তাহার বন্দি দাস করে। দুর্ভাগ্য মনুষ্য আমি! এই মৃত্যুর দেহ হইতে কে আমাকে নিস্তার করিবে?” (রোমীয় ৭:২২-২৪) আমরা কতই না কৃতজ্ঞ যে যিহোবা আমাদের অপরাধ ধরে রাখেন না! যখন আমরা অনুতপ্ত হই ও ক্ষমা চাই তিনি খুশি মনে সেগুলো মুছে ফেলেন।
দায়ূদ নিজেকে মনে করিয়ে দিয়েছিলেন: “[যিহোবা] তোমার সমস্ত রোগের প্রতীকার করেন।” (গীতসংহিতা ১০৩:৩) যেহেতু প্রতিকারের অর্থ হল আবার সুস্থ করে তোলা, তাই এটা শুধুই অপরাধ মুছে ফেলার চেয়ে আরও বেশি কিছুকে বোঝায়। এটা ‘রোগ’ থেকে সুস্থ করাকেও বোঝায় অর্থাৎ আমাদের ভুল কাজ যে খারাপ ফল বয়ে আনে তার থেকে মুক্তি। যিহোবা পাপের ফলে যে শারীরিক সমস্যাগুলো এসেছে যেমন অসুস্থতা এবং মৃত্যু তা অবশ্যই তাঁর তৈরি নতুন জগতে চিরকালের জন্য দূর করে দেবেন। (যিশাইয় ২৫:৮; প্রকাশিত বাক্য ২১:১-৪) আজকে ঈশ্বর আমাদের আধ্যাত্মিক রোগের প্রতিকার করেন। কারও কারও জন্য এই রোগ হল দুষ্ট বিবেক ও তাঁর সঙ্গে এক ভেঙে পড়া সম্পর্ক। যিহোবা আমাদের সবার জন্য যা করেছেন তা কখনও ‘ভুলে যাবেন না।’
তিনি “তোমার জীবন মুক্ত করেন”
দায়ূদ গেয়েছেন: “[যিহোবা] কূপ হইতে তোমার জীবন মুক্ত করেন।” (গীতসংহিতা ১০৩:৪) “কূপ” হচ্ছে মানবজাতির সাধারণ কবর অর্থাৎ শিওল বা হেডিস। এমনকি ইস্রায়েলের রাজা হওয়ার আগেও, দায়ূদ মৃত্যুর করাল ছায়ার মধ্যে নিজেকে দেখেছিলেন। উদাহরণ হিসেবে আমরা দেখি যে, ইস্রায়েলের রাজা শৌল মনে মনে দায়ূদকে অত্যন্ত ঘৃণা করতেন আর অনেক বার তাকে হত্যা করারও চেষ্টা করেছিলেন। (১ শমূয়েল ১৮:৯-২৯; ১৯:১০; ২৩:৬-২৯) পলেষ্টীয়রাও দায়ূদকে মেরে ফেলতে চেয়েছিল। কিন্তু প্রত্যেক বার যিহোবা তাকে “কূপ” থেকে রক্ষা করেছিলেন। দায়ূদ যখন যিহোবার এই সমস্ত কাজগুলো মনে করেছিলেন, যিহোবার প্রতি কৃতজ্ঞতায় তার হৃদয় একেবারে ভরে উঠেছিল!
আপনার বেলায় কী বলা যায়? যিহোবা কি আপনার হতাশায় বা কোন কিছু হারানোর বেদনায় সান্ত্বনা দেননি? অথবা আপনি কি জানেন যে আমাদের দিনেও যিহোবা তাঁর বিশ্বস্ত সাক্ষিদের মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরিয়ে এনেছেন? এই পত্রিকার পাতায় পাতায় তাঁর উদ্ধার কাজ সম্বন্ধে আপনি নিশ্চয়ই কিছু পড়েছেন যা আপনাকে স্পর্শ করেছে। সত্য ঈশ্বরের এই সমস্ত কাজের জন্য কৃতজ্ঞতা দেখাতে একটু সময় করে নিন না কেন? আর পুনরুত্থানের আশার জন্য অবশ্যই আমাদের সবার যিহোবার প্রতি কৃতজ্ঞ হওয়ার কারণ রয়েছে।
যিহোবা আমাদের জীবন দিয়েছেন আর সেই সঙ্গে জীবনকে উপভোগ্য করে তোলা, সুন্দর করে তোলার জন্য দরকারি সমস্ত কিছু দিয়েছেন। গীতরচক ঘোষণা করেছিলেন যে ঈশ্বর “দয়া ও করুণার মুকুটে তোমাকে ভূষিত করেন।” (গীতসংহিতা ১০৩:৪) আমাদের প্রয়োজনের সময়ে যিহোবা আমাদের ছেড়ে দেন না কিন্তু তাঁর দৃশ্য সংগঠন, নিযুক্ত প্রাচীন বা মণ্ডলীর পালকদের মাধ্যমে আমাদের সাহায্য করেন। আর এই সাহায্য আমাদের আত্মসম্মান ও আত্মমর্যাদা না হারিয়েই খারাপ সময়ের মোকাবিলা করতে শক্তি দেয়। খ্রীষ্টীয় পালকেরা খুব যত্ন নিয়ে মেষেদের দেখাশোনা করেন। তারা অসুস্থ ও হতাশদের উৎসাহ দেন আর যারা পতিত হয়েছেন তাদের আবার ওঠাবার জন্য সবরকম চেষ্টা করেন। (যিশাইয় ৩২:১, ২; ১ পিতর ৫:২, ৩; যিহূদা ২২, ২৩) যিহোবার পবিত্র আত্মা এই পালকদের পালের প্রতি দয়া ও প্রেম দেখাতে প্রেরণা যোগায়। ঈশ্বরের “দয়া ও করুণা” সত্যিই মুকুটের মতো যা আমাদের সাজায় ও আমাদের জন্য সম্মান এনে দেয়! তাই যিহোবা আমাদের জন্য যা করেছেন তা যেন আমরা কখনও ভুলে না যাই আর আসুন আমরা যিহোবা ও তাঁর পবিত্র নামের প্রশংসা করি।
গীতরচক দায়ূদ নিজেকে আরও বোঝাতে গিয়ে গেয়েছিলেন: “[যিহোবা] উত্তম দ্রব্যে তোমার মুখ তৃপ্ত করেন, ঈগল পক্ষীর ন্যায় তোমার নূতন যৌবন হয়।” (গীতসংহিতা ১০৩:৫) জীবন দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে যিহোবা আমাদের পরিতৃপ্তি ও আনন্দও দিয়েছেন। শুধু সত্য জানাই এক সম্পদ পাওয়ার সমান যার তুলনা কোন কিছুর সঙ্গে হয় না আর যা অফুরন্ত আনন্দ নিয়ে আসে! আর এই কথাটাও ভেবে দেখুন যে যিহোবা আমাদের প্রচার করা ও শিষ্য বানানোর যে কাজ দিয়েছেন তা আমাদের কতই না পরিতৃপ্তি এনে দেয়। সেই ব্যক্তিকে খুঁজে পেয়ে আমরা কতই না খুশি হই যিনি সত্য ঈশ্বরের বিষয়ে শিখতে চান আর তাকে যিহোবার কথা জানিয়ে ও তাঁর প্রশংসা করতে শিখিয়েও আমরা কতই না খুশি হই! আপনার এলাকায় কেউ শুনুক বা না শুনুক, এই মহান কাজ করে চলা আমাদের জন্য আশীর্বাদের যার সঙ্গে যিহোবার নামের পবিত্রতা ও তাঁর সার্বভৌমত্বের মহিমা করা জড়িয়ে আছে।
ঈশ্বরের রাজ্যের প্রচার করতে করতে মাঝে মধ্যে আমরা সবাই কি ক্লান্ত কিংবা শ্রান্ত হয়ে পড়ি না? কিন্তু যিহোবা তাঁর দাসেদের নতুন শক্তি দেন তাদেরকে তিনি “ঈগল পক্ষীর ন্যায়” করে দেন যাদের শক্ত পাখা আছে আর যারা আকাশে অনেক উঁচুতে উড়ে চলে। আমরা আমাদের স্বর্গীয় পিতার প্রতি কতই না কৃতজ্ঞ হতে পারি যে তিনি আমাদের “বল” দেন যেন আমরা বিশ্বস্তভাবে দিনের পর দিন আমাদের প্রচার কাজ করে চলতে পারি!—যিশাইয় ৪০:২৯-৩১.
ক্লেরার উদাহরণ দেখায় যে তিনি পুরো সময়ের চাকরি করতেন আর সেইসঙ্গে তিনি প্রত্যেক মাসে প্রায় ৫০ ঘন্টা প্রচার করতেন। তিনি বলেছিলেন: “কখনও কখনও আমি এত ক্লান্ত হয়ে পড়তাম যে, আমি জোর করে প্রচারে বের হতাম এই কারণে যে আমি সবসময়ই কারও না কারও সঙ্গে যাওয়ার জন্য আগে থেকে বলে রাখতাম। কিন্তু একবার ঘর থেকে বের হওয়ার পর সবসময় আমার মনে হতো যে আমি শক্তি ফিরে পেয়েছি।” আপনারও হয়তো এইরকম অভিজ্ঞতা আছে যা ঈশ্বর দেন যখন আমরা খ্রীষ্টীয় পরিচর্যা করতে থাকি। তাই আপনিও হয়তো এই কথাটা বলতে চাইবেন যেমন দায়ূদ এই গীতের শুরুতে বলেছিলেন: “হে আমার প্রাণ, যিহোবার ধন্যবাদ কর; হে আমার অন্তরস্থ সকল, তাঁহার পবিত্র নামের ধন্যবাদ কর।”
যিহোবা তাঁর লোকেদের মুক্ত করেন
এছাড়াও গীতরচক গেয়েছেন: “সদাপ্রভু [যিহোবা] ধর্ম্মকার্য্য সাধন করেন, উপদ্রুত লোকদের পক্ষে বিচার নিষ্পতি করেন। তিনি জানাইলেন মোশিকে আপনার পথ, ইস্রায়েল-সন্তানগণকে আপনার কার্য্য সকল।” (গীতসংহিতা ১০৩:৬, ৭) দায়ূদ হয়ত মোশির দিনের ইস্রায়েলীয়দের মিশরীয় অত্যাচারীদের হাতে “উপদ্রুত” হওয়ার বিষয়ে চিন্তা করেছিলেন। আর যিহোবা কীভাবে মোশিকে মুক্তির পথ জানিয়েছিলেন সে কথা চিন্তা করে দায়ূদের মন নিশ্চয়ই যিহোবার প্রতি কৃতজ্ঞতায় ভরে গিয়েছিল।
ইস্রায়েলীয়দের সঙ্গে ঈশ্বরের ব্যবহার দেখে আমরাও একইরকমভাবে কৃতজ্ঞ হয়ে উঠি। আর সেইসঙ্গে আমরা যিহোবার আধুনিক-দিনের দাসেদের উদাহরণগুলোর বিষয়ে চিন্তা করতেও যেন ভুলে না যাই যাদের সম্বন্ধে যিহোবার সাক্ষীবৃন্দ—ঈশ্বরের রাজ্যের ঘোষণাকারী (ইংরেজি) বইয়ের ২৯ ও ৩০ অধ্যায়ে বলা রয়েছে। এই বই ও সেইসঙ্গে ওয়াচ টাওয়ার সোসাইটির অন্য আরও প্রকাশনা আমাদের দেখতে সাহায্য করে যে কীভাবে আজও যিহোবা তাঁর লোকেদের কারাবরণ, উচ্ছৃঙ্খল জনতার আক্রমণ, নিষেধাজ্ঞা, কনসেনট্রেশন ক্যাম্প আর দাস-শ্রমিক শিবিরের যাতনা সহ্য করতে শক্তি যুগিয়েছেন। বুরুণ্ডি, লাইবেরিয়া, রুয়াণ্ডা আর পূর্বতন যুগোস্লাভিয়ার মতো যুদ্ধগ্রস্ত দেশগুলোতে তারা কষ্টের মুখোমুখি হয়েছেন। কিন্তু যখনই তাড়না এসেছে যিহোবার হাত সবসময় তাঁর বিশ্বস্ত দাসেদের রক্ষা করেছে। আমাদের মহান ঈশ্বর যিহোবার এইসমস্ত কাজের বিষয়ে গভীরভাবে চিন্তা করলে তা আমাদের মনকে একইভাবে নাড়া দেবে যেমন মিশরীয়দের হাত থেকে উদ্ধারের বিষয়ে চিন্তা করে দায়ূদের মনে হয়েছিল।
এছাড়াও ভেবে দেখুন যে যিহোবা কত সহজে আমাদের পাপের বোঝা থেকে আমাদের মুক্তি দিয়েছেন। তিনি ‘আমাদের সংবেদকে মৃত ক্রিয়াকলাপ হইতে শুচি’ করার জন্য ‘খ্রীষ্টের রক্তের’ ব্যবস্থা করেছেন। (ইব্রীয় ৯:১৪) খ্রীষ্টের পাতিত রক্তে বিশ্বাস দেখিয়ে যখন আমরা আমাদের পাপের জন্য অনুতপ্ত হই ও ক্ষমা প্রার্থনা করি তখন ঈশ্বর আমাদের সব অপরাধ মুছে ফেলেন—“পশ্চিম দিক্ হইতে পূর্ব দিক্ যেমন দূরবর্ত্তী”। এছাড়াও খ্রীষ্টীয় সভা, গঠনমূলক মেলামেশা, মণ্ডলীর পালকেরা ও “বিশ্বস্ত ও বুদ্ধিমান্ দাস” শ্রেণীর দেওয়া বাইবেল ভিত্তিক প্রকাশনা যা যিহোবা আমাদেরকে যুগিয়ে চলেছেন সেগুলোর কথা চিন্তা করুন। (মথি২৪:৪৫) যিহোবার এই সমস্ত কাজগুলো কি তাঁর সঙ্গে আমাদের সম্পর্ককে আরও গভীর করে তোলে না? দায়ূদ বলেছিলেন: “সদাপ্রভু স্নেহশীল ও কৃপাময়, ক্রোধে ধীর ও দয়াতে মহান। . . . তিনি আমাদের প্রতি আমাদের পাপানুযায়ী ব্যবহার করেন নাই, আমাদের অধর্ম্মানুযায়ী প্রতিফল আমাদিগকে দেন নাই।” (গীতসংহিতা ১০৩:৮-১৪) যিহোবার প্রেমপূর্ণ যত্নের বিষয়ে ধ্যান করলে আমরা নিশ্চয়ই তাঁর প্রশংসা করতে ও তাঁর নামকে মহিমান্বিত করতে ভিতর থেকে প্রেরণা পাই।
“সদাপ্রভুর সমস্ত নির্ম্মিত বস্তু! তাঁহার ধন্যবাদ কর”
“অনাদি অনন্ত ঈশ্বর” যিহোবার অনন্তকালীনতার তুলনায় ‘মর্ত্ত্যমাত্রের’ “আয়ু” খুবই অল্প যেন “তৃণ সদৃশ।” কিন্তু দায়ূদ উপলব্ধি দেখিয়ে বলেছিলেন: “সদাপ্রভুর দয়া, যাহারা তাঁহাকে ভয় করে, তাহাদের উপরে অনাদিকাল অবধি অনন্তকাল পর্য্যন্ত থাকে; এবং তাঁহার ধর্ম্মশীলতা পুত্ত্র পৌত্ত্রদের প্রতি বর্ত্তে, তাহাদের প্রতি, যাহারা তাঁহার নিয়ম রক্ষা করে, ও তাঁহার বিধি সকল পালনার্থে স্মরণ করে।” (আদিপুস্তক ২১:৩৩, ফুটনোট, NW; গীতসংহিতা ১০৩:১৫-১৮) যিহোবা তাদেরকে ভুলে যাবেন না যারা তাঁকে ভয় করেন। তাঁর নিরূপিত সময়ে তিনি তাদেরকে অনন্ত জীবন দেবেন।—যোহন ৩:১৬; ১৭:৩.
যিহোবার রাজপদের প্রতি উপলব্ধি দেখিয়ে দায়ূদ বলেছিলেন: “সদাপ্রভু স্বর্গে আপন সিংহাসন স্থাপন করিয়াছেন, তাঁহার রাজ্য কর্ত্তৃত্ব করে সমস্তের উপরে।” (গীতসংহিতা ১০৩:১৯) যদিও যিহোবার রাজপদ ইস্রায়েলীয়দের রাজ্যে স্পষ্টভাবে দেখা যেত কিন্তু তাঁর সিংহাসন আসলে স্বর্গে। সৃষ্টিকর্তা হওয়ায় যিহোবা নিখিলবিশ্বের সার্বভৌম শাসক আর তিনি তাঁর উদ্দেশ্য অনুসারে তাঁর ঐশিক ইচ্ছা স্বর্গে ও পৃথিবীতে পূর্ণ করেন।
দায়ূদ এমনকি দূতেদেরও উৎসাহিত করেছেন। তিনি গেয়েছিলেন: “সদাপ্রভুর দূতগণ! তাঁহার ধন্যবাদ কর, তোমরা বলে বীর, তাঁহার বাক্য-সাধক, তাঁহার বাক্যের রব শ্রবণে নিবিষ্ট। সদাপ্রভুর সমস্ত বাহিনি! তাঁহার ধন্যবাদ কর, তোমরা তাঁহার পরিচারক, তাঁহার অভিমত-সাধক। সদাপ্রভুর সমস্ত নির্ম্মিত বস্তু! তাঁহার ধন্যবাদ কর, তাঁহার অধিকারের সমস্ত স্থানে। হে আমার প্রাণ, সদাপ্রভুর ধন্যবাদ কর।” (গীতসংহিতা ১০৩:২০-২২) আমাদের প্রতি যিহোবার প্রেমপূর্ণ দয়ার কাজগুলো সম্বন্ধে যখন আমরা চিন্তা করি তখন তা কি আমাদেরকেও তাঁর ধন্যবাদ করতে উৎসাহিত করে না? অবশ্যই করে! আর আমরা নিশ্চিত হতে পারি যে ঈশ্বরের জন্য আমাদের প্রশংসা গান সেইসমস্ত অসংখ্য প্রশংসাকারী যাদের মধ্যে ধার্মিক দূতেরাও রয়েছেন তাদের মহান ঐক্যতানের মাঝে হারিয়ে যাবে না। তাই আসুন আমরা আমাদের সম্পূর্ণ হৃদয় দিয়ে আমাদের স্বর্গীয় পিতার প্রশংসা করি, সবসময় তাঁর গুণগান করি। আমরা দায়ূদের কথাগুলো হৃদয়ে গেঁথে নিই: “হে আমার প্রাণ, যিহোবার ধন্যবাদ কর।”
[পাদটীকাগুলো]
a কিছু নাম পরিবর্তন করা হয়েছে।
[২৩ পৃষ্ঠার চিত্র]
দায়ূদ যিহোবার প্রেমপূর্ণ দয়ার কাজগুলোর কথা চিন্তা করেছিলেন। আপনিও কি করেন?