ধার্মিক ব্যক্তিরা চিরকাল ঈশ্বরের প্রশংসা করবে
“ধার্ম্মিক . . . স্মরণে থাকিবে। তাহার ধার্ম্মিকতা নিত্যস্থায়ী।”—গীত. ১১২:৬, ৯.
১. (ক) যে-ব্যক্তিদের ঈশ্বর ধার্মিক হিসেবে দেখেন, তাদের সকলের জন্য কোন সুখী ভবিষ্যৎ অপেক্ষা করে আছে? (খ) কোন প্রশ্ন উত্থাপিত হয়?
সেইসমস্ত মানুষের জন্য কী এক অপূর্ব ভবিষ্যৎই না অপেক্ষা করে আছে, যাদেরকে ঈশ্বর ধার্মিক হিসেবে দেখে থাকেন! যিহোবার চমৎকার গুণাবলি সম্বন্ধে আরও বেশি জানার জন্য তারা চিরকাল আমোদ করবে। তারা ঈশ্বরের সৃজনশীল কাজগুলো সম্বন্ধে যত বেশি জানে, ততই তাদের হৃদয় প্রশংসায় উদ্বেলিত হয়ে ওঠে। এই ধরনের এক গৌরবান্বিত ভবিষ্যতের প্রধান চাহিদা হচ্ছে “ধার্ম্মিকতা,” যে-সম্বন্ধে গীতসংহিতার ১১২ গীতে জোর দেওয়া হয়েছে। কিন্তু, কীভাবে পবিত্র ও ধার্মিক ঈশ্বর যিহোবা পাপী মানুষদের ধার্মিক হিসেবে দেখতে পারেন? যা সঠিক, তা করার জন্য আমরা যত প্রচেষ্টাই করি না কেন, আমরা বিভিন্ন ভুল এবং মাঝে মাঝে গুরুতর ভুল করে থাকি।—রোমীয় ৩:২৩; যাকোব ৩:২.
২. প্রেমবশত যিহোবা কোন দুটো অলৌকিক কাজ সম্পাদন করেছেন?
২ প্রেমের সঙ্গে যিহোবা এক নিখুঁত সমাধান জুগিয়েছেন। কীভাবে? প্রথমত, তাঁর স্বর্গীয় প্রিয় পুত্রের জীবন এক কুমারীর গর্ভে স্থানান্তরিত করার মতো এক অলৌকিক কাজ সম্পাদন করে, যাতে তাঁর পুত্র এক সিদ্ধ মানুষ হিসেবে জন্মগ্রহণ করতে পারেন। (লূক ১:৩০-৩৫) এরপর, যিশুর শত্রুরা তাঁকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার পর, যিহোবা আরেকটা উল্লেখযোগ্য অলৌকিক কাজ সম্পাদন করেছেন। ঈশ্বর যিশুকে এক গৌরবান্বিত আত্মিক প্রাণী হিসেবে জীবনে ফিরিয়ে এনেছিলেন।—১ পিতর ৩:১৮.
৩. কেন ঈশ্বর তাঁর পুত্রকে স্বর্গীয় জীবন দিয়ে পুরস্কৃত করে আনন্দিত ছিলেন?
৩ যিহোবা যিশুকে এমন কিছু দিয়ে পুরস্কৃত করেছিলেন, যা মনুষ্যপূর্ব অস্তিত্বের আগে তাঁর পুত্রের ছিল না আর তা হল, স্বর্গে অলোপ্য জীবন। (ইব্রীয় ৭:১৫-১৭, ২৮) তা করে যিহোবা আনন্দিত ছিলেন কারণ চরম পরীক্ষাগুলোর মধ্যে যিশু নিখুঁত নীতিনিষ্ঠা বজায় রেখেছিলেন। এভাবে যিশু তাঁর পিতাকে শয়তানের এই মিথ্যা দাবির সর্বোত্তম, হ্যাঁ সম্পূর্ণ উত্তর জুগিয়েছিলেন যে, মানুষ স্বার্থপর মনোভাব নিয়ে ঈশ্বরের সেবা করে, অটল প্রেম সহকারে নয়।—হিতো. ২৭:১১.
৪. (ক) স্বর্গে ফিরে গিয়ে যিশু আমাদের জন্য কী করেছেন আর যিহোবা কেমন প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন? (খ) যিহোবা ও যিশু আমাদের জন্য যা করেছেন, সেই সম্বন্ধে আপনি কেমন বোধ করেন?
৪ স্বর্গে যিশু আরও বেশি কিছু করেছিলেন। তিনি “নিজ রক্তের” মূল্য নিয়ে ‘আমাদের জন্য ঈশ্বরের সাক্ষাতে প্রকাশমান হইয়াছিলেন।’ আমাদের প্রেমময় স্বর্গীয় পিতা সদয়ভাবে “আমাদের পাপার্থক প্রায়শ্চিত্ত” হিসেবে যিশুর মূল্যবান বলিদান গ্রহণ করেছিলেন। তাই, ‘শুচি সংবেদ’ সহকারে আমরা ‘জীবন্ত ঈশ্বরের আরাধনা’ করতে পারি। গীতসংহিতার ১১২ গীতের শুরুর এই কথাগুলোর সঙ্গে সুর মেলানোর কী এক কারণই না রয়েছে, “তোমরা সদাপ্রভুর প্রশংসা কর”!—ইব্রীয় ৯:১২-১৪, ২৪; ১ যোহন ২:২.
৫. (ক) ঈশ্বরের সামনে এক ধার্মিক অবস্থান বজায় রাখার জন্য আমাদের কী করতে হবে? (খ) গীতসংহিতার ১১১ ও ১১২ গীত কীভাবে সুবিন্যস্ত করা হয়েছে?
৫ আমরা যদি ঈশ্বরের সামনে এক ধার্মিক অবস্থান বজায় রাখতে চাই, তাহলে আমাদেরকে অবশ্যই যিশুর পাতিত রক্তে বিশ্বাস অনুশীলন করে চলতে হবে। আমাদেরকে এতটা প্রেম করার জন্য যিহোবাকে আমাদের ধন্যবাদ না দিয়ে একটা দিনও অতিবাহিত করা উচিত নয়। (যোহন ৩:১৬) এ ছাড়া, আমাদের ঈশ্বরের বাক্য অধ্যয়ন করে চলতে হবে এবং এটির বার্তার সঙ্গে মিল রেখে জীবনযাপন করার জন্য আমাদের সর্বোত্তমটা করতে হবে। যারা ঈশ্বরের সামনে এক শুচি সংবেদ বজায় রাখতে চায়, তাদের সকলের জন্য গীতসংহিতার ১১২ গীতে উত্তম উপদেশ রয়েছে। এই গীত ১১১ গীতের পরিপূরক। মূল ইব্রীয় ভাষায় দুটো গীতই এই উক্তি দিয়ে শুরু হয়েছে, “তোমরা সদাপ্রভুর প্রশংসা কর” অথবা “হাল্লিলূয়া” আর এর পরে ২২টি লাইন রয়েছে এবং প্রতিটি লাইন ইব্রীয় বর্ণমালার ২২টি অক্ষরের একটি দিয়ে শুরু হয়েছে।a
সুখী হওয়ার ভিত্তি
৬. কীভাবে গীতসংহিতার ১১২ গীতে বর্ণিত ঈশ্বরভয়শীল “সেই মানুষ” আশীর্বাদ লাভ করে?
৬ “সুখী সেই মানুষ, যে প্রভুকে করে ভয়, তাঁর আজ্ঞাবলিতে যার পরম প্রীতি। তার বংশ পৃথিবীতে শক্তিশালী হবে, ন্যায়নিষ্ঠদের কুল আশিসধন্য হবে।” (গীত. [সামসঙ্গীত-মালা] ১১২:১, ২, বাংলা জুবিলী বাইবেল) লক্ষ করুন যে, গীতরচক প্রথমে ব্যক্তি বিশেষ “সেই মানুষ” এবং পরে তা পরিবর্তন করে ২ পদের শেষাংশে বহুবচনে “ন্যায়নিষ্ঠদের” বলে উল্লেখ করেছেন। এটা ইঙ্গিত দেয় যে, ১১২ গীত এক যৌথ দলকে নির্দেশ করতে পারে, যা অনেক ব্যক্তি বিশেষ নিয়ে গঠিত। আগ্রহের বিষয় হল, প্রেরিত পৌল গীতসংহিতা ১১২:৯ পদটিকে প্রথম শতাব্দীর খ্রিস্টানদের ওপর প্রয়োগ করতে অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন। (পড়ুন, ২ করিন্থীয় ৯:৮, ৯.) আজকে পৃথিবীতে খ্রিস্টের অনুসারীরা কীভাবে সুখী হতে পারে, তা এই গীত কত উত্তমভাবেই না বর্ণনা করে!
৭. কেন ঈশ্বরের দাসদের তাঁর প্রতি এক গঠনমূলক ভয় রাখতে হবে আর ঈশ্বরের আজ্ঞাগুলো সম্বন্ধে আপনি কেমন বোধ করেন?
৭ গীতসংহিতা ১১২:১ পদে যেমন নির্দেশ করা হয়েছে যে, এই সত্য খ্রিস্টানরা প্রচুর সুখ লাভ করে, যখন তারা “প্রভুকে ভয় করে।” তাঁকে অখুশি করার এই গঠনমূলক ভয় তাদেরকে শয়তানের জগতের আত্মাকে প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। তারা ঈশ্বরের বাক্য অধ্যয়ন ও তাঁর আজ্ঞাগুলো পালন করায় ‘পরম প্রীত।’ এর অন্তর্ভুক্ত সারা পৃথিবীতে রাজ্যের সুসমাচার প্রচার করার আজ্ঞা। তারা সমস্ত জাতির লোকদের শিষ্য তৈরি করার চেষ্টা করে আর একইসঙ্গে দুষ্টদের ঈশ্বরের আসন্ন বিচার দিন সম্বন্ধে সাবধান করে।—যিহি. ৩:১৭, ১৮; মথি ২৮:১৯, ২০.
৮. (ক) কীভাবে আজকে ঈশ্বরের একনিষ্ঠ ব্যক্তিরা তাদের উদ্যোগের জন্য পুরস্কৃত হয়েছে? (খ) পার্থিব আশাসম্পন্ন ব্যক্তিদের জন্য কোন ভাবী আশীর্বাদগুলো রয়েছে?
৮ এই আজ্ঞাগুলোর বাধ্য থাকার কারণে আজকে পৃথিবীতে ঈশ্বরের দাসদের সংখ্যা এখন প্রায় ৭০ লক্ষ। তাঁর লোকেরা যে “পৃথিবীতে শক্তিশালী” হয়েছে, তা কে অস্বীকার করতে পারে? (যোহন ১০:১৬; প্রকা. ৭:৯, ১৪) আর ঈশ্বর যখন তাঁর উদ্দেশ্য সম্পাদিত করবেন, তখন তারা কতই না “আশিসধন্য” হবে বা আশীর্বাদ লাভ করবে! একটা দল হিসেবে যাদের পার্থিব আশা রয়েছে, তারা “ধার্ম্মিকতা বসতি করে” এমন এক ‘নূতন পৃথিবী’ গঠন করার জন্য আসন্ন ‘মহাক্লেশ’ থেকে রক্ষা পাবে। পরে, আরমাগিদোন থেকে রক্ষাপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা আরও “আশিসধন্য হবে” বা আশীর্বাদ লাভ করবে। তারা লক্ষ লক্ষ পুনরুত্থিত ব্যক্তিদের অভ্যর্থনা জানানোর জন্য সেখানে থাকবে। কী এক রোমাঞ্চকর প্রত্যাশা! পরিশেষে, যারা ঈশ্বরের আজ্ঞাগুলোতে ‘পরম প্রীত’ হয়, তারা মানব সিদ্ধতায় পৌঁছাবে এবং চিরকাল “ঈশ্বরের সন্তানগণের প্রতাপের স্বাধীনতা” উপভোগ করবে।—২ পিতর ৩:১৩; রোমীয় ৮:২১.
ধনসম্পদের বিজ্ঞ ব্যবহার
৯, ১০. কীভাবে সত্য খ্রিস্টানরা তাদের আধ্যাত্মিক ধনসম্পদ ব্যবহার করেছে আর কীভাবে তাদের ধার্মিকতা নিত্যস্থায়ী?
৯ “তাহার গৃহে ধন ও ঐশ্বর্য্য থাকে, তাহার ধার্ম্মিকতা নিত্যস্থায়ী। সরল লোকের জন্য অন্ধকারে জ্যোতি উদিত হয়; সে কৃপাময়, স্নেহশীল ও ধার্ম্মিক।” (গীত. ১১২:৩, ৪) বাইবেলের সময়ে ঈশ্বরের কিছু দাস তাদের বস্তুগত ধনসম্পদের জন্য উল্লেখযোগ্য ছিল। আর আরেকটা অর্থে, যাদেরকে ঈশ্বর অনুমোদন করেন, তারাও প্রকৃত ধনী হয়ে উঠতে পারে, এমনকী তা যদি বস্তুগত অর্থে না-ও হয়ে থাকে। প্রকৃত বিষয়টা হল, যারা ঈশ্বরের সামনে নিজেদের নম্র করে, তাদের বেশিরভাগই হয়তো দরিদ্র এবং অবজ্ঞাত হতে পারে, যেমনটা যিশুর দিনেও সত্য ছিল। (লূক ৪:১৮; ৭:২২; যোহন ৭:৪৯) কিন্তু, একজন ব্যক্তির বস্তুগত দিক দিয়ে অনেক অথবা কম যা-ই থাকুক না কেন, আধ্যাত্মিকভাবে ধনী হওয়া সম্ভব।—মথি ৬:২০; ১ তীম. ৬:১৮, ১৯; পড়ুন, যাকোব ২:৫.
১০ অভিষিক্ত খ্রিস্টানরা ও সেইসঙ্গে তাদের সহযোগীরা নিজেদের কাছে তাদের আধ্যাত্মিক ধনসম্পদ রেখে দেয় না। এর পরিবর্তে, তারা শয়তানের অন্ধকার জগতে “সরল লোকের জন্য . . . জ্যোতি” হিসেবে “উদিত” হয়েছে। ঈশ্বরের প্রজ্ঞা ও জ্ঞানের আধ্যাত্মিক সম্পদ থেকে উপকার লাভ করার জন্য অন্যদেরকে সাহায্য করার মাধ্যমে তারা তা হয়ে থাকে। বিরোধীরা রাজ্যের প্রচার কাজকে বন্ধ করে দেওয়ার চেষ্টা করেছে কিন্তু ব্যর্থ হয়েছে। বরং, এই ধার্মিক কাজের ফল “নিত্যস্থায়ী” হবে। ধার্মিকতার পথে ধৈর্য ধরে থাকার মাধ্যমে ঈশ্বরের দাসেরা স্থায়ীভাবে বাস করার, “নিত্যস্থায়ী” হওয়ার আশ্বাস পেতে পারে।
১১, ১২. ঈশ্বরের লোকেদের যে-বস্তুগত বিষয়গুলো রয়েছে, সেগুলো তারা কোন কোন উপায়ে ব্যবহার করে?
১১ ঈশ্বরের লোকেরা অর্থাৎ অভিষিক্ত দাস শ্রেণী ও যাদের নিয়ে “আরও মেষ” গঠিত, তারা উভয়েই বস্তুগত বিষয়গুলোর ক্ষেত্রে উদার প্রমাণিত হয়েছে। গীতসংহিতা ১১২:৯ পদ বলে: “সে বিতরণ করিয়াছে, দরিদ্রদিগকে দান করিয়াছে।” সত্য খ্রিস্টানরা আজকে প্রায়ই সহখ্রিস্টানদের আর এমনকী অভাবী প্রতিবেশীদেরও বস্তুগত দান দিয়ে থাকে। এ ছাড়া, তারা প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময়গুলোতে ত্রাণসামগ্রী বিতরণের অভিযানকে সমর্থন করার জন্য বস্তুগত সম্পদগুলো ব্যবহার করে থাকে। যিশু যেমনটা হবে বলে ইঙ্গিত দিয়েছিলেন, তেমনই তা “ধন্য হইবার [‘সুখের,’ বাংলা জুবিলী বাইবেল]” এক উৎস হয়ে থাকে।—পড়ুন, প্রেরিত ২০:৩৫; ২ করিন্থীয় ৯:৭.
১২ অধিকন্তু, এই পত্রিকা ১৭২টি ভাষায় প্রকাশ করার ব্যয়ভার সম্বন্ধে চিন্তা করুন, যে-ভাষাগুলোর মধ্যে অনেক ভাষায় এমন লোকেরা কথা বলে থাকে, যারা অপেক্ষাকৃত দরিদ্র। এ ছাড়া, এই বিষয়টাও বিবেচনা করুন যে, এই পত্রিকা বিভিন্ন সাংকেতিক ভাষা ও ব্রেইল অক্ষরেও পাওয়া যাচ্ছে।
সদয় ও ন্যায্য
১৩. কারা সদয় দানের সর্বোত্তম উদাহরণ স্থাপন করেছে এবং কীভাবে আমরা তাদের উদাহরণ অনুকরণ করতে পারি?
১৩ “যে জন কৃপা করে [“সদয়,” NW] ও ঋণ দেয়, তাহার মঙ্গল হয়।” (গীত. ১১২:৫) নিঃসন্দেহে আপনি লক্ষ করেছেন, যে-লোকেরা অন্যদের সাহায্য প্রদান করে, তারা সবসময় সদয় নয়। কেউ কেউ তাদের যে অন্যদের চেয়ে বেশি রয়েছে, সেটা দেখানোর জন্য দান করে থাকে অথবা অন্যেরা বিরক্তি নিয়ে দান করে। এমন একজন ব্যক্তির কাছ থেকে সাহায্য গ্রহণ করা আনন্দদায়ক নয়, যিনি আপনাকে হেয় বলে মনে করতে পরিচালিত করেন অথবা যিনি আপনাকে এইরকম মনে করতে পরিচালিত করেন যে, আপনি একটা ঝামেলা বা বোঝা। এর বৈসাদৃশ্যে, এমন একজন ব্যক্তির কাছ থেকে সাহায্য লাভ করা কতই না সতেজতাদায়ক, যিনি সদয়। যিহোবা সদয় ও “সুখী” দাতার উল্লেখযোগ্য উদাহরণ। (১ তীম ১:১১, NW; যাকোব ১:৫, ১৭) যিশু খ্রিস্ট নিখুঁতভাবে তাঁর পিতার সদয় উদাহরণ প্রতিফলিত করেছিলেন। (মার্ক ১:৪০-৪২) তাই, ঈশ্বর যেন আমাদেরকে ধার্মিক হিসেবে দেখেন, সেইজন্য আমরা আনন্দের সঙ্গে ও সদয়ভাবে দান করি, বিশেষভাবে ক্ষেত্রের পরিচর্যায়, যখন আমাদের প্রতিবেশীদের আধ্যাত্মিক সাহায্য প্রদান করি।
১৪. কিছু উপায় কী, যেগুলোতে ‘আমরা ন্যায়ের সঙ্গে কাজ সম্পাদন করতে পারি’?
১৪ “সে ন্যায়ের সঙ্গে কাজ সম্পাদন করে।” (গীত. [সামসঙ্গীত-মালা] ১১২:৫, বাংলা জুবিলী বাইবেল) ভবিষ্যদ্বাণী অনুযায়ী বিশ্বস্ত গৃহাধ্যক্ষ শ্রেণী যিহোবার ন্যায় বা ন্যায়বিচারের সঙ্গে মিল রেখে প্রভুর সর্বস্বের যত্ন নেয়। (পড়ুন, লূক ১২:৪২-৪৪.) এটা সেই প্রাচীনদের প্রতি প্রদত্ত শাস্ত্রীয় নির্দেশনার মধ্যে প্রতিফলিত হয়েছে, যাদেরকে মাঝে মাঝে মণ্ডলীতে গুরুতর পাপ সংক্রান্ত বিষয়গুলো মীমাংসা করতে হয়। এ ছাড়া, সমস্ত মণ্ডলী, মিশনারি হোম এবং বেথেল হোমগুলোর কীভাবে কাজ করা উচিত, সেই সম্বন্ধে বিশ্বস্ত দাস শ্রেণী যে-বাইবেলভিত্তিক নির্দেশনা জোগান, সেটার মধ্যেও বিভিন্ন বিষয় ন্যায়ের সঙ্গে পরিচালনা করার উপায় স্পষ্ট হয়। কেবলমাত্র প্রাচীনদেরই নয় কিন্তু সেইসঙ্গে অন্যান্য খ্রিস্টানদেরও ব্যবসায়িক বিষয়সহ পরস্পরের এবং অবিশ্বাসীদের সঙ্গে আচরণের সময় ন্যায়বিচার দেখানো প্রয়োজন।—পড়ুন, মীখা ৬:৮, ১১.
ধার্মিক ব্যক্তির জন্য আশীর্বাদ
১৫, ১৬. (ক) ধার্মিক ব্যক্তিদের ওপর জগতের দুঃসংবাদগুলোর কোন প্রভাব রয়েছে? (খ) ঈশ্বরের দাসেরা কী করে চলার জন্য সংকল্পবদ্ধ?
১৫ “কারণ সে কোন কালে বিচলিত হইবে না; ধার্ম্মিক চিরকাল স্মরণে থাকিবে। অশুভ সংবাদেও সে ভয় করিবে না; তাহার চিত্ত স্থির, তাহা সদাপ্রভুতে নির্ভর করে। তাহার চিত্ত সুস্থির; সে ভয় করে না, শেষে সে আপন বিপক্ষদের দশা দেখিবে।” (গীত. ১১২:৬-৮) ইতিহাসে আর কখনো এত অশুভ সংবাদ বা দুঃসংবাদ ছিল না, যেগুলোর মধ্যে রয়েছে যুদ্ধ, সন্ত্রাস, নতুন নতুন রোগ এবং পুরোনো রোগের প্রাদুর্ভাব, অপরাধ, দারিদ্র ও ধ্বংসাত্মক দূষণ। যাদেরকে ঈশ্বর ধার্মিক হিসেবে দেখে থাকেন, তারা এই দুঃসংবাদের প্রভাবগুলো থেকে রেহাই পেতে পারে না কিন্তু এটা তাদেরকে ভয়ে আতঙ্কগ্রস্ত করে তোলে না। এর পরিবর্তে, তারা যখন আস্থা সহকারে ভবিষ্যতের দিকে তাকায়, তাদের চিত্ত “স্থির” থাকে বা “সুস্থির” হয়, এটা জেনে যে, ঈশ্বরের ধার্মিক নতুন জগৎ নিকটে। যদি প্রাকৃতিক দুর্যোগ ঘটে, তাহলে তারা পরিস্থিতির সঙ্গে আরও ভালোভাবে মোকাবিলা করতে পারে কারণ তারা সমর্থনের জন্য যিহোবার ওপর নির্ভর করে। তিনি কখনো তাঁর ধার্মিক ব্যক্তিদের “বিচলিত” হতে দেন না—তিনি ধৈর্য ধরার জন্য সাহায্য করেন ও শক্তি দেন।—ফিলি. ৪:১৩.
১৬ এ ছাড়া, ঈশ্বরের ধার্মিক ব্যক্তিদের বিরোধীদের দ্বারা ছড়ানো ঘৃণা ও মিথ্যাগুলো সহ্য করতে হয় কিন্তু এটা সত্য খ্রিস্টানদের চুপ করাতে ব্যর্থ হয়েছে এবং সবসময় ব্যর্থ হবে। এর পরিবর্তে, যিহোবা ঈশ্বরের দাসদের যে-কাজ—রাজ্যের সুসমাচার প্রচার করা এবং যারা সাড়া দেয়, তাদেরকে শিষ্য করার কাজ—দিয়েছেন, সেই কাজে ক্রমাগত সুস্থির ও অবিচলিত রয়েছে। কোনো সন্দেহ নেই যে, শেষ যতই নিকটবর্তী হচ্ছে, ধার্মিক ব্যক্তিরা ক্রমবর্ধমান বিরোধিতা ভোগ করবে। মাগোগ দেশীয় গোগ হিসেবে তার ভূমিকায় শয়তান দিয়াবলের বিশ্বব্যাপী আক্রমণের সময় এই ঘৃণা চূড়ান্ত পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছাবে। এরপর অবশেষে, আমাদের শত্রুরা যখন সম্পূর্ণভাবে পরাজিত হবে, তখন আমরা “আপন বিপক্ষদের দশা” দেখব। যিহোবার নামের সম্পূর্ণ পবিত্রীকরণ হতে দেখা কী এক অভিজ্ঞতাই না হবে!—যিহি. ৩৮:১৮, ২২, ২৩.
“গৌরবে উন্নত”
১৭. কীভাবে ধার্মিক ব্যক্তিরা “গৌরবে উন্নত হইবে”?
১৭ দিয়াবল ও তার জগতের কাছ থেকে আসা কোনো বিরোধিতা ছাড়াই, ঐক্যবদ্ধভাবে যিহোবার প্রশংসা করা কতই না উপভোগ্য হবে! যারা ঈশ্বরের সামনে এক ধার্মিক মান বজায় রাখে, তারা সকলে আনন্দের সঙ্গে চিরকাল যিহোবার প্রশংসা করবে। তাদের মর্যাদাহানি হবে না বা তারা পরাজিত হবে না কারণ যিহোবা এও প্রতিজ্ঞা করেছেন যে, তাঁর ধার্মিক ব্যক্তিদের “শৃঙ্গ গৌরবে উন্নত হইবে।” (গীত. ১১২:৯) যিহোবার সার্বভৌমত্বের সমস্ত শত্রুদের পরাজিত হতে দেখে যিহোবার ধার্মিক ব্যক্তিরা বিজয়ের সঙ্গে উল্লসিত হবে।
১৮. কীভাবে গীতসংহিতার ১১২ গীতের শেষ কথাগুলো পরিপূর্ণ হবে?
১৮ “দুষ্ট লোক তাহা দেখিয়া বিরক্ত হইবে; সে দন্ত ঘর্ষণ করিবে, ও গলিয়া যাইবে; দুষ্টগণের অভীষ্ট বিনষ্ট হইবে।” (গীত. ১১২:১০) যারা ঈশ্বরের লোকেদের বিরোধিতা করেই চলে, তারা শীঘ্র তাদের হিংসা ও ঘৃণায় “গলিয়া” যাবে। আমাদের কাজের শেষ আসতে দেখার বিষয়ে তাদের কামনা আসন্ন ‘মহাক্লেশের’ সময় তাদের সঙ্গে বিনষ্ট হবে।—মথি ২৪:২১.
১৯. আমরা কোন বিষয়ে আস্থা রাখতে পারি?
১৯ আপনি কি সেই মহান বিজয়ের সুখী রক্ষাপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের মধ্যে থাকবেন? অথবা শয়তানের জগতের শেষ আসার আগে আপনাকে যদি অসুস্থতা বা বার্ধক্যের কাছে নতি স্বীকার করতে হয়, তাহলে আপনি কি সেই “ধার্ম্মিক” ব্যক্তিদের মধ্যে থাকবেন, যারা পুনরুত্থিত হবে? (প্রেরিত ২৪:১৫) এর উত্তর হ্যাঁ হতে পারে, যদি আপনি ক্রমাগত যিশুর মুক্তির মূল্যরূপ বলিদানে বিশ্বাস দেখান এবং যিহোবাকে অনুকরণ করেন, যেমনটা গীতসংহিতার ১১২ গীতে বর্ণিত ধার্মিক “মানুষ” দ্বারা চিত্রিত সেই ব্যক্তিরা করে থাকে। (পড়ুন, ইফিষীয় ৫:১, ২.) যিহোবা লক্ষ রাখবেন যেন এই ধরনের ব্যক্তিদের “স্মরণে” রাখার বিষয়টা কখনো ভুলে যাওয়া না হয় অথবা তাদের ধার্মিক কাজগুলো যেন উপেক্ষিত না হয়। তাদেরকে যিহোবা অনন্ত অনন্ত কাল ধরে মনে রাখবেন এবং তাদেরকে প্রেম করবেন।—গীত. ১১২:৩, ৬, ৯.
[পাদটীকা]
a এই দুটো গীত যে-পরিপূরক, তা এদের গঠন ও সেইসঙ্গে বিষয়বস্তুর মধ্যে দিয়ে দেখা যায়। গীতসংহিতার ১১১ গীতে ঈশ্বরের গুণাবলির যে-উচ্চপ্রশংসা করা হয়েছে, তা গীতসংহিতার ১১২ গীতের ঈশ্বরভয়শীল “মানুষ” অনুকরণ করেছেন, যা গীতসংহিতা ১১১:৩, ৪ পদের সঙ্গে গীতসংহিতা ১১২:৩, ৪ পদের তুলনা করার দ্বারা দেখা যেতে পারে।
ধ্যানের জন্য প্রশ্নগুলো
• আমাদের উচ্চৈঃস্বরে “হাল্লিলূয়া” বলে ঘোষণা করার কিছু কারণ কী?
• আধুনিক দিনের কোন ঘটনাগুলো সত্য খ্রিস্টানদের এত সুখী করে?
• যিহোবা কোন ধরনের দাতাদের ভালবাসেন?
[২৫ পৃষ্ঠার চিত্র]
ঈশ্বরের সামনে এক ধার্মিক অবস্থান বজায় রাখতে হলে আমাদেরকে অবশ্যই যিশুর পাতিত রক্তে বিশ্বাস অনুশীলন করতে হবে
[২৬ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]
স্বেচ্ছাকৃত দান ত্রাণকাজে ও বাইবেলভিত্তিক প্রকাশনা বিতরণে সাহায্য করতে পারে