জীবন ও পরিচর্যা সভার জন্য অধ্যয়ন পুস্তিকা-র রেফারেন্স
জুলাই ৬-১২
ঈশ্বরের বাক্যের গুপ্তধন | যাত্রাপুস্তক ৬-৭
“আমি ফরৌণের প্রতি যাহা করিব, তাহা তুমি এখন দেখিবে”
অন্তর্দৃষ্টি-২ ৪৩৬ অনু. ৩, ইংরেজি
মোশি
ইস্রায়েলীয়দের মধ্যেও এক উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন দেখা দেয়। প্রথমে তারা মোশির কথা মেনে নিয়েছিল। কিন্তু, পরে যখন ফরৌণের আদেশ অনুযায়ী তাদের প্রচুর কঠোর পরিশ্রম করতে হয়, তখন তারা মোশিকে দোষারোপ করে। এর ফলে তিনি এতটাই ভেঙে পড়েন যে, যিহোবার কাছে সাহায্য ভিক্ষা করেন। (যাত্রা ৪:২৯-৩১; ১৫:১৯-২৩) সেই সময় সর্বশক্তিমান ঈশ্বর তাকে শক্তি প্রদান করেন আর এই আশ্বাস দেন যে, তিনি এমন কিছু করতে চলেছেন, যা অব্রাহাম, ইস্হাক ও যাকোব আশা করেছিলেন। এর মানে ছিল, ইস্রায়েলীয়দের দাসত্ব থেকে মুক্ত করে প্রতিজ্ঞাত দেশে তাদের এক মহাজাতিতে পরিণত করার মাধ্যমে ঈশ্বর পুরোপুরিভাবে তাঁর নামের অর্থ প্রকাশ করতেন। (যাত্রা ৬:১-৮) তারপরও ইস্রায়েলীয়রা মোশির কথা শোনে না। কিন্তু, নবম আঘাতের পর তাকে তারা ভালোভাবে অনুসরণ ও তার সহযোগিতা করে, যাতে দশম আঘাতের পর মোশি তাদের সুসংগঠিতভাবে নেতৃত্ব দিতে পারেন এবং “সসজ্জ” করতে পারেন।—যাত্রা ১৩:১৮.
অন্তর্দৃষ্টি-২ ৪৩৬ অনু. ১-২, ইংরেজি
মোশি
মিশরের ফরৌণের সামনে। এই লড়াই ছিল মিশরের দেবতা ও যিহোবার মধ্যে। এক দিকে মোশি ও হারোণ ছিলেন আর অন্য দিকে ফরৌণের প্রধান মন্ত্রবেত্তা যান্নি ও যাম্ব্রি। (২তীম ৩:৮) তখন ফরৌণ এই মন্ত্রবেত্তাদের মাধ্যমে মিশরের সমস্ত দেবতাদের যিহোবার বিরুদ্ধে তাদের ক্ষমতা প্রমাণ করার জন্য প্রার্থনা করতে শুরু করেন। মোশির নির্দেশনায় হারোণ ফরৌণের সামনে প্রথম যে-অলৌকিক কাজ করেন, তাতে এটা প্রমাণিত হয় যে, যিহোবা সেই দেবতাদের চেয়ে বহু গুণ বেশি শক্তিশালী। কিন্তু ফরৌণ তখনও একগুঁয়ে হয়ে থাকেন। (যাত্রা ৭:৮-১৩) পরে, তৃতীয় আঘাতের পর সেই মন্ত্রবেত্তারাও এটা মেনে নিতে বাধ্য হয় যে, “এ ঈশ্বরের অঙ্গুলি।” তারপর যখন যিহোবা আরেকটা আঘাত আনেন, তখন সেই মন্ত্রবেত্তাদের পুরো শরীরে ফোঁড়া হয়। আর তাদের অবস্থা এতটাই খারাপ হয়ে যায় যে, তারা এমনকী ফরৌণের সামনে যেতে পারে না এবং সেই আঘাতের সময় মোশির বিরোধিতাও করতে পারে না।—যাত্রা ৮:১৬-১৯; ৯:১০-১২.
আঘাতের দ্বারা কারো হৃদয় নরম হয় এবং কারো কঠিন। মোশি ও হারোণ প্রত্যেক আঘাতের আগে ঘোষণা করেন। তারা যেমন বলেছিলেন ঠিক তেমনই হয়। তাতে এটা প্রমাণিত হয় যে, যিহোবাই মোশিকে পাঠিয়েছেন। মিশরের সমস্ত জায়গায় যিহোবার নামের ঘোষণা করা হয় এবং তাঁর নামের কীর্তিত হয়। এর ফলে লোকেদের মধ্যে দুই ধরনের প্রবৃত্তি দেখা দেয়। ইস্রায়েলীয় ও কিছু মিশরীয়দের হৃদয় নরম হয় এবং ফরৌণ, তার পরামর্শদাতা ও তার সমর্থকদের হৃদয় কঠিন হয়। (যাত্রা ৯:১৬; ১১:১০; ১২:২৯-৩৯) মিশরীয়রা এটা ভালোভাবে জানত, তাদের দেবতারা তাদের উপর অসন্তুষ্ট হয়েছে বলে এই আঘাত আসেনি বরং যিহোবা তাদের দেবতাদের শাস্তি দিচ্ছেন বলে এই আঘাত এসেছে। ন-টা আঘাতের পর মোশিও “ফরৌণের দাসদের ও প্রজাদের দৃষ্টিতে অতি মহান্ ব্যক্তি হইয়া উঠিলেন।”—যাত্রা ১১:৩.
আধ্যাত্মিক রত্ন খুঁজে বের করুন
অন্তর্দৃষ্টি-১ ৭৮ অনু. ৩-৪, ইংরেজি
সর্বশক্তিমান
যখন যিহোবা অব্রাহামের কাছে প্রতিজ্ঞা করেছিলেন, ইস্হাক তার ছেলে হিসেবে জন্মগ্রহণ করবেন, তখন যিহোবা নিজের জন্য “সর্ব্বশক্তিমান্ ঈশ্বর” (ইব্রীয় ভাষায় এল শাদ্দাই) উপাধি ব্যবহার করেছিলেন। তাই, অব্রাহামকে এটার উপর পূর্ণ বিশ্বাস দেখাতে হত যে, যিহোবার কাছে নিজের প্রতিজ্ঞা পরিপূর্ণ করার ক্ষমতা রয়েছে। এরপর অব্রাহামের সঙ্গে স্থাপন করা চুক্তির উপর ভিত্তি করে ঈশ্বর ইস্হাক ও যাকোবকে অব্রাহামের উত্তরাধিকারী হিসেবে আশীর্বাদ করেন এবং তখনও তিনি এই উপাধি ব্যবহার করেন।—আদি ১৭:১; ২৮:৩; ৩৫:১১; ৪৮:৩.
এই বিষয়টা মনে রেখে, পরে যিহোবা মোশিকে বলেছিলেন: “আমি অব্রাহামকে, ইস্হাককে ও যাকোবকে ‘সর্ব্বশক্তিমান্ ঈশ্বর’ [বি-এল শাদ্দাই] বলিয়া দর্শন দিতাম, কিন্তু আমার যিহোবা [সদাপ্রভু] নাম লইয়া তাহাদিগকে আমার পরিচয় দিতাম না।” (যাত্রা ৬:৩) এর অর্থ এই নয় যে, এই কুলপতিরা যিহোবার নাম জানতেন না কারণ তারা ও অন্যেরা অনেক বার এই নাম ব্যবহার করেছিল। (আদি ৪:১, ২৬; ১৪:২২; ২৭:২৭; ২৮:১৬) আসলে, আদিপুস্তকে যে-কুলপতিদের জীবন সম্বন্ধে নথি রয়েছে, সেখানে “সর্ব্বশক্তিমান্ ঈশ্বর” উপাধিটা শুধুমাত্র ৬ বার ব্যবহার করা হয়েছে। কিন্তু, এই বইয়ের ইব্রীয় মূল পাঠ্যাংশে যিহোবার নাম ১৭২ বার ব্যবহার করা হয়েছিল। তারা যদিও যিহোবার নাম ব্যবহার করতেন এবং জানতেন যে, একমাত্র যিহোবাই হলেন “সর্ব্বশক্তিমান্ ঈশ্বর,” তবুও তারা সেই নামের প্রকৃত অর্থ জানতেন না। এই বিষয়ে ১৯৮০ সালে সম্পাদক জে. ডি. ডগলাস দি ইলাসট্রেটেড বাইবেল ডিকশনারি-তে লিখেছিলেন: “যিহোবা সেই কুলপতিদের কাছে ভবিষ্যৎ সম্বন্ধে অনেক প্রতিজ্ঞা করেছিলেন এবং সর্বশক্তিমান হিসেবে তাঁর কাছে সেগুলো পরিপূর্ণ করার ক্ষমতাও রয়েছে। যখন যিহোবা জলন্ত ঝোপ থেকে মোশির সঙ্গে কথা বলেছিলেন, তখন তিনি দূর ভবিষ্যতের কোনো বিষয়ে কথা বলছিলেন না। এ ছাড়া, ইয়াওয়ে নামের অর্থ অনুযায়ী তিনি মোশিকে এই আশ্বাস দেন যে, তিনি তাকে প্রয়োজনীয় শক্তি প্রদান করবেন এবং তার সহবর্ত্তী হবেন।”
অন্তর্দৃষ্টি-২ ৪৩৫ অনু. ৫, ইংরেজি
মোশি
মোশি ইতস্তত বোধ করা সত্ত্বেও যিহোবা তাকে প্রত্যাখ্যান করেননি। ৪০ বছর আগে মোশি এই ভেবে পদক্ষেপ নেওয়ার চেষ্টা করেন যে, তিনি ইস্রায়েল জাতির উদ্ধারকর্তা হবেন। কিন্তু এখন তার মধ্যে কত বড়ো পরিবর্তন দেখা দেয়! তিনি নিজেকে সেই কার্যভার সম্পন্ন করার জন্য অযোগ্য বলে মনে করেন। তিনি ক্রমাগত বলতে থাকেন যে, তিনি সেই কাজ করতে পারবেন না আর এমনকী তিনি যিহোবার কাছে অনুরোধ করেন যেন এই কার্যভার তিনি অন্য কাউকে দেন। যদিও যিহোবা এটা শুনে রেগে যান, কিন্তু তিনি তাকে প্রত্যাখ্যান করেননি বরং মোশির হয়ে কথা বলার জন্য যিহোবা তার ভাই হারোণকে বেছে নেন। মোশি যিহোবার কাছ থেকে যে-আজ্ঞা ও নির্দেশনা লাভ করেন, সেগুলো তিনি হারোণকে জানান। পরে যখন মোশি ও হারোণ ইস্রায়েলীয়দের প্রধান ও ফরৌণের কাছে যান, (তিনি সেই ফরৌণের বংশধর ছিলেন, যার কাছ থেকে মোশি ৪০ বছর আগে পালিয়ে এসেছিলেন) তখন হারোণ তাদের সমস্ত কথা বলেন। (যাত্রা ২:২৩; ৪:১০-১৭) এভাবে যিহোবা হারোণকে মোশির “ভাববাদী” বলেন। এর অর্থ হল, যেভাবে মোশি ঈশ্বরের ভাববাদী ছিলেন এবং তাঁর নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করতেন, ঠিক একইভাবে হারোণকেও মোশির নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করতে হত। এ ছাড়া, যিহোবা ফরৌণের কাছে মোশিকে “ঈশ্বরস্বরূপ” করেন কারণ তিনি তাকে শক্তি ও ফরৌণের উপর কর্তৃত্ব প্রদান করবেন। আর তাই মিশরের রাজার কাছে মোশির ভয় পাওয়া কোনো প্রয়োজন ছিল না।—যাত্রা ৭:১,২.
জুলাই ১৩-১৯
ঈশ্বরের বাক্যের গুপ্তধন | যাত্রাপুস্তক ৮-৯
“গর্বিত ফরৌণ অজান্তেই ঈশ্বরের উদ্দেশ্য পূরণ করেন”
অন্তর্দৃষ্টি-২ ১০৪০-১০৪১, ইংরেজি
একগুঁয়েমি
অনেক সময় কিছু ব্যক্তি বা কোনো জাতি মৃত্যুর যোগ্য ছিল, কিন্তু তা সত্ত্বেও যিহোবা তাদের প্রতি ধৈর্য ধরেন ও বাঁচিয়ে রাখেন। (আদি ১৫:১৬; ২পিতর ৩:৯) কিছু ব্যক্তি আবার যিহোবার অনুগ্রহ লাভ করার জন্য নিজেদের পুরোপুরি পরিবর্তন করে। (যিহো ২:৮-১৪; ৬:২২, ২৩; ৯:৩-১৫) কিন্তু, কিছু লোক নিজেদের হৃদয় কঠোর করে আর যিহোবা ও তাঁর লোকেদের বিরোধিতা করে। (দ্বিতীয় ২:৩০-৩৩; যিহো ১১:১৯, ২০) যিহোবা লোকেদের একগুঁয়ে হওয়া থেকে বাধা দেননি। তাই এটা বলা যেতে পারে, যিহোবাই যেন “তাদের একগুঁয়ে হয়ে থাকতে দিলেন” বা ‘তাহার হৃদয় কঠিন করিলেন।’ সঠিক সময়ে একগুঁয়ে লোকেদের বিনষ্ট করার মাধ্যমে যিহোবা দেখান যে, তাঁর কাছে অনেক শক্তি রয়েছে। আর এর পাশাপাশি তিনি তাঁর নামের ঘোষণাও করেন।—যাত্রা ৪:২১; যোহন ১২:৪০; রোমীয় ৯:১৪-১৮.
অন্তর্দৃষ্টি-২ ১১৮১ অনু. ৩-৫, ইংরেজি
দুষ্টতা
শুধু তা-ই নয়, যিহোবা পরিস্থিতিকে এমনভাবে পালটে দিতে পারেন যে, এমনকী দুষ্ট ব্যক্তিরাও অজান্তে তাঁর উদ্দেশ্য পূরণ করে। যদিও তারা যিহোবার বিরোধিতা করে থাকে, কিন্তু তিনি তাঁর অনুগত দাসদের মেরে ফেলার অধিকার তাদের দেন না। আর তিনি তাদের মন্দ কাজের দ্বারাও নিজেকে ধার্মিক হিসেবে প্রমাণিত করতে পারেন। (রোমীয় ৩:৩-৫, ২৩-২৬; ৮:৩৫-৩৯; গীত ৭৬:১০) হিতোপদেশ ১৬:৪ পদে এই বিষয়ে লেখা রয়েছে: “সদাপ্রভু সকলই স্ব স্ব উদ্দেশ্যে করিয়াছেন, দুষ্টকেও দুর্দ্দশাদিনের নিমিত্ত করিয়াছেন।”
ফরৌণের কথা চিন্তা করুন। মোশি ও হারোণের মাধ্যমে যিহোবা তাকে দাসত্বে থাকা ইস্রায়েলীয়দের মুক্ত করতে বলেছিলেন। ঈশ্বর ফরৌণকে দুষ্ট ব্যক্তিতে পরিণত করেননি বরং ফরৌণকে জীবিত রাখেন এবং পরিস্থিতিকে এমনভাবে পালটে দেন যে, ফরৌণ দুষ্ট ও মৃত্যুদণ্ড পাওয়ার যোগ্য বলে প্রমাণিত হন। যাত্রাপুস্তক ৯:১৬ পদ যিহোবার উদ্দেশ্য এভাবে প্রকাশ করে: “বাস্তবিক আমি এই জন্যই তোমাকে স্থাপন করিয়াছি, যেন আমার প্রভাব তোমাকে দেখাই ও সমস্ত পৃথিবীতে আমার নাম কীর্ত্তিত হয়।”
মিশরে দশটা আঘাত আসে। তারপর যিহোবা সূফসাগরে ফরৌণ ও তার সেনাবাহিনীকে বিনষ্ট করেন। এটা যিহোবার শক্তির এক অসাধারণ প্রমাণ ছিল। (যাত্রা ৭:১৪–১২:৩০; গীত ৭৮:৪৩-৫১; ১৩৬:১৫) এই ঘটনার বহু বছর পরও মিশরের আশেপাশের জাতির লোকেরা যিহোবা কীভাবে তাঁর লোকেদের উদ্ধার করেছিলেন, তা নিয়ে কথা বলত। আর এভাবে পুরো পৃথিবীতে যিহোবার নাম প্রকাশ পায়। (যিহো ২:১০,১১; ১শমূ ৪:৮) যিহোবা যদি প্রথমেই ফরৌণকে মেরে ফেলতেন, তা হলে এত অসাধারণ উপায়ে তাঁর শক্তি প্রকাশ পেত না। আর এর পাশাপাশি এমনভাবে তাঁর নামের গৌরবও হত না এবং এত চমৎকার উপায়ে তাঁর লোকেরা মুক্তিও লাভ করত না।
আধ্যাত্মিক রত্ন খুঁজে বের করুন
অন্তর্দৃষ্টি-১ ৮৭৮, ইংরেজি
দংশক
মিশরে চতুর্থ আঘাত ছিল বড়ো বড়ো দংশক, যা ঝাঁকে ঝাঁকে সমস্ত মিশরীয়দের বাড়িতে ঢুকে গিয়েছিল (চতুর্থ ও এরপর বাকি আঘাতের মধ্যে কোনোটাও গোশন প্রদেশে বসবাসরত ইস্রায়েলীয়দের উপর আসেনি)। দংশকের জন্য ইব্রীয় মূল পাঠ্যাংশে ‘এরোব’ শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। কিন্তু আসলে এটা কী, তা স্পষ্টভাবে বলা নেই। (যাত্রা ৮:২১, ২২, ২৪, ২৯, ৩১; গীত ৭৮:৪৫; ১০৫:৩১) ‘এরোব’ শব্দের বিভিন্ন অনুবাদ রয়েছে, যার মধ্যে একটা হল “পোকা [বাংলা কমন ল্যাঙ্গুয়েজ ভারশন]” ও “মাছি [ইজি-টু-রিড ভারশন]।”
দংশক সম্ভবত এক ধরনের মাছি কিংবা ডাঁশ জাতীয় পতঙ্গ ছিল। স্ত্রী জাতীয় মাছি মানুষের ও পশুর শরীর থেকে রক্ত চুষে খেত। এই পোকার লার্ভা পশুর বা মানুষের শরীরে হয়তো পরজীবী হয়ে থাকত। সাধারণত গরম এলাকায় থাকা এই পোকা মানুষদের খুবই বিরক্ত করে। তাই আমরা বুঝতে পারি যে, মিশরীয় ও তাদের পশুপালের উপর যখন দংশকের আঘাত এসেছিল, তখন তা তাদের সহ্য করা খুবই কঠিন হয়ে গিয়েছিল আর এমনকী কিছু লোকের মৃত্যুও হয়েছিল।
যাত্রাপুস্তকের প্রধান বিষয়গুলো
৮:২৬, ২৭—কেন মোশি বলেছিলেন যে, ইস্রায়েলের বলিদানগুলো “মিস্রীয়দের ঘৃণাজনক” হবে? মিশরে বিভিন্ন ধরনের জীবজন্তুর উপাসনা করা হতো। তাই, বলিদানের বিষয়ে উল্লেখ করা মোশির এই দৃঢ়তাকে ন্যায্য ও প্রত্যয়ী করেছিল যে, যিহোবার উদ্দেশে বলিদান করার জন্য ইস্রায়েলকে যেন দূরে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়।
জুলাই ২০-২৬
ঈশ্বরের বাক্যের গুপ্তধন | যাত্রাপুস্তক ১০-১১
“মোশি ও হারোণ প্রচুর সাহস দেখান”
যিশুকে অনুকরণ করুন—সাহসের সঙ্গে প্রচার করুন
৬ এ ছাড়া, মোশির সাহসের কথাও বিবেচনা করুন, যা তিনি ফরৌণের সঙ্গে কথা বলার সময় দেখিয়েছিলেন, যে-ফরৌণ এমন একজন শাসক ছিলেন, যাকে দেবতাদের শুধু একজন প্রতিনিধিই নয় কিন্তু সূর্য দেবতা রা-এর পুত্র হিসেবে স্বয়ং এক দেবতার মতোই দেখা হতো। এইরকম হতে পারে যে, অন্য ফরৌণদের মতো তিনি নিজেও তার নিজ প্রতিকৃতিকে উপাসনা করতেন। ফরৌণের কথাই ছিল আইন; তিনি শুধু হুকুম করতেন। কী করতে হবে, তা অন্যেরা তাকে বলে দেবে, এইরকম বিষয় এই ক্ষমতাবান, উদ্ধত এবং একগুঁয়ে ফরৌণের চরিত্রের সঙ্গে মিলত না। এইরকম একজন ব্যক্তির সামনেই এক মৃদুশীল মেষপালক মোশি কোনোরকম আমন্ত্রণ বা অভ্যর্থনা ছাড়াই বার বার গিয়েছিলেন। আর মোশি কোন বিষয়ে ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন? মারাত্মক কয়েকটা আঘাত সম্বন্ধে। এ ছাড়া, তিনি কী চেয়েছিলেন? ফরৌণের লক্ষ লক্ষ দাসকে সেই দেশ ছেড়ে চলে যেতে দেওয়ার অনুমতি! এর জন্য কি মোশির সাহসের প্রয়োজন ছিল? অবশ্যই!—গণনা. ১২:৩; ইব্রীয় ১১:২৭.
অন্তর্দৃষ্টি-২ ৪৩৬ অনু. ৪, ইংরেজি
মোশি
ফরৌণের সামনে উপস্থিত হওয়ার জন্য সাহস ও বিশ্বাসের প্রয়োজন হয়েছিল। মোশি ও হারোণ যিহোবার শক্তিতেই ফরৌণের সামনে উপস্থিত হতে পেরেছিলেন। তারা যিহোবার পবিত্র আত্মার সাহায্যে কাজ করেছিলেন। কল্পনা করুন, আপনি ফরৌণের রাজপ্রাসাদে আছেন। তিনি তার সিংহাসনে বসে রয়েছেন। মিশর সেই সময়ের বিশ্বশক্তি ছিল। ফরৌণের প্রতাপ উল্লেখযোগ্য ছিল। গর্বিত ফরৌণ নিজেকে ঈশ্বর বলে মনে করেন। পাশে তার পরামর্শদাতা, সৈনাধ্যক্ষ, প্রহরী ও দাসেরাও দাঁড়িয়ে রয়েছে। এ ছাড়া, সেখানে মোশির বিরুদ্ধে ধর্মীয় নেতারা, মন্ত্রবেত্তারা ও তাদের প্রধানরাও রয়েছে। তাদের দেখে মিশরে সবাই ভয় পায় আর তারা মনে করে যে, ফরৌণের হয়ে কাজ করে তারা আসলে মিশরের দেব-দেবীর উপাসনা করছে। মোশি ও হারোণ ফরৌণের সামনে এক বার নয় বরং বার বার এসেছেন। কিন্তু ফরৌণ এক বারও তাদের কথা শোনেন না বরং নিজের হৃদয় আরও কঠিন করেন। তিনি চান যেন ইস্রায়েলীয়রা সবসময় তার দাসত্ব করে। মোশি ও হারোণ যখন তার রাজপ্রাসাদে অষ্টম আঘাতের বিষয়ে জানাতে আসেন, তখন তাদের সেখান থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়। নবম আঘাতের পর ফরৌণ তাদের সাবধান করেন যে, যদি তারা দ্বিতীয় বার তার রাজপ্রাসাদে পা দেন, তা হলে তাদের মৃত্যুর মুখে ফেলে দেওয়া হবে।—যাত্রা ১০:১১, ২৮.
আধ্যাত্মিক রত্ন খুঁজে বের করুন
মিথ্যা ঈশ্বরগুলির বিরুদ্ধে সাক্ষীবৃন্দেরা
১১ যখন ইস্রায়েলজাতি মিশরে ছিল, তখন যিহোবা মোশিকে ফরৌণের কাছে পাঠিয়ে বলেছিলেন: “তুমি ফরৌণের নিকটে যাও; কেননা আমি তাহার ও তাহার দাসগণের হৃদয় ভারী করিলাম, যেন আমি তাহাদের মধ্যে আমার এই সকল চিহ্ন প্রদর্শন করি, এবং আমি মিস্রীয়দের প্রতি যাহা যাহা করিয়াছি, ও তাহাদের মধ্যে আমার যে যে চিহ্ন-কার্য্য করিয়াছি, তাহার বৃত্তান্ত যেন তুমি আপন পুত্ত্রের ও পৌত্ত্রের কর্ণগোচরে বল, এবং আমি যে সদাপ্রভু, ইহা তোমরা জ্ঞাত হও।” (যাত্রাপুস্তক ১০:১, ২) বাধ্য ইস্রায়েলীয়রা তাদের ছেলে-মেয়েদের যিহোবার মহান কার্যগুলি সম্বন্ধে বলবে। পর্যায়ক্রমে, তাদের ছেলে-মেয়েরা তাদের সম্বন্ধে তাদের নিজেদের ছেলে-মেয়েদের বলবে এবং এভাবে বংশের পর বংশ তা চলতে থাকবে। একইভাবে, যিহোবার শক্তিশালী কাজগুলি স্মৃতিতে থাকবে। এইরকমভাবে আজকেও, পিতা-মাতাদের তাদের ছেলে-মেয়েদের কাছে সাক্ষ্য দেওয়ার দায়িত্ব রয়েছে।—দ্বিতীয় বিবরণ ৬:৪-৭; হিতোপদেশ ২২:৬.
অন্তর্দৃষ্টি-১ ৭৮৩ অনু. ৫, ইংরেজি
ইস্রায়েলীদের যাত্রা
যিহোবা এক চমৎকার উপায়ে ইস্রায়েলীয়দের উদ্ধার করেন এবং জয়ী হন আর নিজের নামকে গৌরবান্বিত করেন। ইস্রায়েলীয়দের সঙ্গে সূফসাগর পার করার পর, মোশি তাদের সঙ্গে গান করেন। তখন তার বোন মরিয়ম, যিনি একজন ভাববাদিনী ছিলেন, বাকি সমস্ত স্ত্রীদের সঙ্গে মৃদঙ্গ বাজান ও নাচ করতে শুরু করেন। (যাত্রা ১৫:১, ২০, ২১) ইস্রায়েলীয়রা এখন তাদের শত্রুদের কাছ থেকে পুরোপুরিভাবে মুক্ত ছিল। তারা যখন মিশর থেকে চলে আসছিল, তখন তাদের ‘বিরুদ্ধে একটা কুকুরও জিহ্বা দোলাইয়া ছিল না।’ তাদের কোনো মানুষ বা পশু কোনো রকমের ক্ষতি করেনি। (যাত্রা ১১:৭) যাত্রাপুস্তকে এটা কোথাও উল্লেখ করা হয়নি যে, ফরৌণ তার লোকেদের সঙ্গে সূফসাগরে মারা গিয়েছিলেন। কিন্তু গীতসংহিতা ১৩৬:১৫ পদ বলে, যিহোবা “ফরৌণ ও তাঁহার বাহিনীকে সূফ-সাগরে ঠেলিয়া দিলেন।”
জুলাই ২৭–আগস্ট ২
ঈশ্বরের বাক্যের গুপ্তধন | যাত্রাপুস্তক ১২
“নিস্তারপর্ব থেকে খ্রিস্টানরা যা শিখতে পারে”
“তুমি সম্পূর্ণরূপে আনন্দিত হইবে”
৪ যিশু সা.কা. ৩৩ সালের ১৪ই নিশান মারা গিয়েছিলেন। ইস্রায়েলে, ১৪ই নিশান নিস্তারপর্ব উদ্যাপনের এক আনন্দময় দিন ছিল। প্রতি বছর সেই দিনে পরিবারগুলো একসঙ্গে খাবার খেত, যে-খাবারের অন্তর্ভুক্ত ছিল নির্দোষ মেষশাবক। এভাবে তারা সা.কা.পূ. ১৫১৩ সালের ১৪ই নিশান একজন মৃত্যুদূত যখন মিশরীয়দের প্রথমজাতকে হত্যা করেছিল, তখন ইস্রায়েলীয়দের প্রথমজাতকে উদ্ধারের ক্ষেত্রে মেষশাবকের রক্ত যে-ভূমিকা পালন করেছিল, তা তারা স্মরণ করত। (যাত্রাপুস্তক ১২:১-১৪) নিস্তারপর্বের মেষশাবক যিশু সম্বন্ধে পূর্বাভাস দিয়েছিল, যাঁর সম্বন্ধে প্রেরিত পৌল বলেছিলেন: “আমাদের নিস্তারপর্ব্বীয় মেষশাবক বলীকৃত হইয়াছেন, তিনি খ্রীষ্ট।” (১ করিন্থীয় ৫:৭) নিস্তারপর্বের মেষশাবকের রক্তের মতো যিশুর পাতিত রক্ত অনেকের জন্য পরিত্রাণ নিয়ে আসে।—যোহন ৩:১৬, ৩৬.
অন্তর্দৃষ্টি-২ ৫৮৩ অনু. ৬, ইংরেজি
নিস্তারপর্ব
নিস্তারপর্ব ও যিশুর বলিদানের মধ্যে অনেক মিল রয়েছে। উদাহরণ স্বরূপ, মিশরে থাকা ইস্রায়েলীয় পরিবারকে তাদের দরজায় রক্ত লেপন করতে হয়েছিল। আর যখন কোনো স্বর্গদূত তাদের বাড়ির সামনে দিয়ে যেত, তাদের প্রথমজাত সন্তান রক্ষা পেত। প্রথম শতাব্দীতে পৌলও অভিষিক্ত খ্রিস্টানদের প্রথমজাতদের মণ্ডলী বলেছিলেন, যাদের যিশুর রক্ত দিয়ে ক্রয় করা হয়েছিল। (ইব্রীয় ১২:২৩; ১থিষল ১:১০; ইফি ১:৭) এ ছাড়া, নিস্তারপর্বে ব্যবহার করা মেষশাবকের কোনো হাড় ভাঙা হত না। আর এই ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছিল যে, যিশুরও কোনো হাড় ভাঙা হবে না, যেটা তাঁর মৃত্যুর সময় পরিপূর্ণ হয়। (গীত ৩৪:২০; যোহন ১৯:৩৬) প্রাচীন কাল থেকে যে-নিস্তারপর্ব উদ্যাপন করা হত, তা ব্যবস্থার কিছু ভবিষ্যদ্বাণীর ছায়া স্বরূপ ছিল এবং “ঈশ্বরের মেষশাবক” যিশু খ্রিস্টের উপর পরিপূর্ণ হত।—ইব্রীয় ১০:১; যোহন ১:২৯.
প্রহরীদুর্গ ১৩ ১২/১৫ ১৯-২০ অনু. ১৩-১৪
“আমার স্মরণার্থে ইহা করিও”
১৩ নতুন প্রজন্ম বড়ো হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এভাবে গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষাগুলোর ওপর জোর দেওয়া হবে, যা বাবারা তাদের সন্তানদের শেখাবে। এর মধ্যে একটা ছিল, যিহোবা তাঁর উপাসকদের সুরক্ষা করতে পারেন। সন্তানরা শিখতে পেরেছিল যে, তিনি কোনো অস্পষ্ট, নৈর্ব্যক্তিক দেবতা নন। যিহোবা এক বাস্তব এবং জীবন্ত ঈশ্বর, যিনি তাঁর লোকেদের প্রতি আগ্রহী এবং যিনি তাদের পক্ষে কাজ করেন। তিনি সেই সময় এর প্রমাণ দিয়েছিলেন, যখন তিনি ‘মিস্রীয়দিগকে আঘাত করিবার’ সময় ইস্রায়েলীয় প্রথমজাতদের সুরক্ষা করেছিলেন। তিনি প্রথমজাতদের জীবিত রেখেছিলেন।
১৪ খ্রিস্টান বাবা-মায়েরা প্রতি বছর তাদের ছেলে-মেয়েদের কাছে নিস্তারপর্বের অর্থ সম্বন্ধে ব্যাখ্যা করে না। কিন্তু, আপনারা কি আপনাদের সন্তানদের একই শিক্ষা প্রদান করেন—যে, ঈশ্বর তাঁর লোকেদের সুরক্ষা করেন? আপনারা কি তাদের কাছে এই দৃঢ়প্রত্যয় প্রকাশ করেন যে, যিহোবা এখনও তাঁর লোকেদের জন্য এক বাস্তব সুরক্ষাকারী হিসেবে কাজ করেন? (গীত. ২৭:১১; যিশা. ১২:২) বিষয়টা কি আপনারা এক নিষ্প্রাণ বক্তৃতা হিসেবে তুলে না ধরে বরং আপনাদের এবং সন্তানদের মধ্যে এক উপভোগ্য আলোচনা হিসেবে তুলে ধরেন? আপনাদের পরিবারের আধ্যাত্মিকতাকে আরও বৃদ্ধি করার জন্য এই শিক্ষাটা অন্তর্ভুক্ত করার প্রচেষ্টা করুন।
আধ্যাত্মিক রত্ন খুঁজে বের করুন
অন্তর্দৃষ্টি-২ ৫৮২ অনু. ২, ইংরেজি
নিস্তারপর্ব
মিশরে আসা দশ আঘাত সেখানকার দেব-দেবীদের এক জোরালো পরাজয় নিয়ে আসে, বিশেষভাবে দশম আঘাতের সময়, যখন প্রথমজাত মারা যায়। (যাত্রা ১২:১২) এমনটা বলা যেতে পারে কারণ মিশরীয় দেবতা রায়ের উপাসকরা মেষকে পবিত্র বলে মনে করত। আর তাই, কোনো মেষশাবকের রক্ত দরজার বাজুতে লেপন করার অর্থ তাদের জন্য দেবতা রায়ের অপমান করার মতো ছিল। এ ছাড়া, মিশরীয়রা ষাঁড়কেও পবিত্র বলে মনে করত। তাই, যখন ষাঁড়ের প্রথমজাত মারা যায়, তখন হয়তো দেবতা ওসাইরাসের অপমান হয়েছিল। সেখানকার লোকেরা ফরৌণকে দেবতা রায়ের পুত্র বলে বিশ্বাস করত এবং তার উপাসনাও করত। তাই যখন ফরৌণের প্রথমজাত সন্তানের মৃত্যু হয়, তখন এটা প্রমাণিত হয় যে, ফরৌণ ও দেবতা রা কতটা অসহায় ছিলেন।
অন্তর্দৃষ্টি-১ ৫০৪ অনু. ১, ইংরেজি
পবিত্র সভা
‘পবিত্র সভার’ এক অদ্বিতীয় বৈশিষ্ট্য ছিল যে, লোকদের সেই সময় কঠোর পরিশ্রম করা থেকে বিরত থাকতে হতো। উদাহরণ স্বরূপ, প্রথম ও সপ্তম দিনে তাড়িশূন্য রুটির পর্বের সময় ‘পবিত্র সভার’ আয়োজন করা হত। যিহোবা বলেছিলেন: “সেই দুই দিন প্রত্যেক প্রাণীর খাদ্য আয়োজন ব্যতিরেকে অন্য কোন কর্ম্ম করিবে না, কেবল সেই কর্ম্ম করিতে পারিবে।” (যাত্রা ১২:১৫, ১৬) এই ‘পবিত্র সভার’ সময় যাজকেরা যিহোবার জন্য বলি উৎসর্গ করতেন। (লেবীয় ২৩: ৩৭, ৩৮) কিন্তু এর অর্থ এমনটা একেবারে ছিল না, তিনি কাজ না করার আজ্ঞাকে অমান্য করতেন। এই আজ্ঞার অর্থ এও ছিল না যে, লোকেরা কোনো কাজ করবে না বরং সেই সময়কে তাদের ভালোভাবে ব্যয় করতে হত। প্রত্যেক সপ্তাহে বিশ্রামবারে লোকেরা মিলিত হয়ে শিক্ষা লাভ করত ও উপাসনা করত। তাদের ঈশ্বরের বাক্য পড়ে শোনানো হত এবং সেটির অর্থ নিয়ে গভীরভাবে আলোচনা করা হত। পরে সমাজগৃহেও এভাবেই শেখানো শুরু করা হয়। (প্রেরিত ১৫:২১) এই সমস্ত কিছু থেকে আমরা বুঝতে পারি যে, বিশ্রামবারে বা ‘পবিত্র সভার’ সময় লোকেদের অন্যান্য কাজে বেশি মনোযোগ দেওয়ার প্রয়োজন ছিল না বরং তাদের সেই সময়টা প্রার্থনা করা, ঈশ্বরকে ভালোভাবে জানার এবং তাঁর উদ্দেশ্য সম্বন্ধে আরও গভীরভাবে চিন্তা করার জন্য ব্যয় করতে হত।