প্রজ্ঞা লাভ করুন এবং উপদেশ শুনুন
যিহোবা ঈশ্বর হলেন তাঁর লোকেদের মহান শিক্ষক। তিনি তাদেরকে শুধু তাঁর নিজের বিষয়েই নয় কিন্তু জীবনের বিষয়েও শিক্ষা দেন। (যিশাইয় ৩০:২০; ৫৪:১৩; গীতসংহিতা ২৭:১১) উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, ইস্রায়েল জাতিকে শিক্ষা দেওয়ার জন্য তিনি জ্ঞানী ব্যক্তিদের দিয়েছিলেন আর তাদের মধ্যে ভাববাদী, লেবীয় ও বিশেষ করে যাজকেরা ছিলেন। (২ বংশাবলি ৩৫:৩; যিরমিয় ১৮:১৮) ভাববাদীরা লোকেদেরকে ঈশ্বরের উদ্দেশ্য ও গুণাবলি সম্বন্ধে এবং সেইসঙ্গে সঠিক পথে চলার জন্য শিক্ষা দিতেন। যাজক ও লেবীয়দের দায়িত্ব ছিল যিহোবার আইন সম্বন্ধে শিক্ষা দেওয়া। আর জ্ঞানী লোকেরা অথবা প্রাচীনেরা রোজকার জীবনের জন্য তাদেরকে বিচক্ষণ পরামর্শ দিতেন।
দায়ূদের পুত্র শলোমন ছিলেন ইস্রায়েলের মধ্যে সবচেয়ে জ্ঞানী ব্যক্তি। (১ রাজাবলি ৪:৩০, ৩১) তার মহিমা এবং প্রাচুর্য দেখে তার একজন সম্মানিত অতিথি শিবার রানি স্বীকার করেছিলেন যে “অর্দ্ধেকও আমাকে বলা হয় নাই; আমি যে খ্যাতি শুনিয়াছিলাম, তাহা হইতেও আপনার জ্ঞান ও মঙ্গল অধিক।” (১ রাজাবলি ১০:৭) শলোমন এই জ্ঞান কোথা থেকে পেয়েছিলেন? সা.কা.পূ. ১০৩৭ সালে যখন শলোমন ইস্রায়েলের রাজা হন তখন তিনি ‘বুদ্ধি এবং জ্ঞানের’ জন্য প্রার্থনা করেছিলেন। তার বিনতিতে খুশি হয়ে যিহোবা তাকে জ্ঞান, প্রজ্ঞা এবং বোঝার মতো এক হৃদয় দিয়েছিলেন। (২ বংশাবলি ১:১০-১২; ১ রাজাবলি ৩:১২) তাই এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই যে শলোমন ‘তিন সহস্র প্রবাদ বাক্য বলিতে’ পেরেছিলেন! (১ রাজাবলি ৪:৩২) এইগুলোর মধ্যে কিছু ও সেইসঙ্গে “আগূরের কথা” এবং “লমূয়েল রাজার কথা” বাইবেলের হিতোপদেশ বইয়ে লেখা রয়েছে। (হিতোপদেশ ৩০:১; ৩১:১) এই হিতোপদেশগুলোতে ঈশ্বরের প্রজ্ঞা দেখতে পাওয়া যায় এবং এগুলো চিরকালের জন্য উপকারী। (১ রাজাবলি ১০:২৩, ২৪) কেউ যদি জীবনে সুখ এবং সফলতা পেতে চান, তাহলে আজকেও এই হিতোপদেশগুলো মেনে চলা ততটাই দরকারি যতটা এগুলো যখন বলা হয়েছিল তখন ছিল।
সফলতা এবং নৈতিক শুদ্ধতা—কীভাবে?
হিতোপদেশ বইয়ের উদ্দেশ্যের শুরুতেই বলা হয়েছে: “শলোমনের হিতোপদেশ; তিনি দায়ূদের পুত্ত্র, ইস্রায়েল-রাজ। এতদ্দ্বারা প্রজ্ঞা ও উপদেশ পাওয়া যায়, বুদ্ধির কথা বুঝা যায়; উপদেশ পাওয়া যায় বিজ্ঞতার আচরণ সম্বন্ধে, ধার্ম্মিকতা, বিচার ও ন্যায় সম্বন্ধে; অবোধদিগকে চতুরতা প্রদান করা যায়, যুবক জ্ঞান ও পরিণামদর্শিতা প্রাপ্ত হয়।”—হিতোপদেশ ১:১-৪.
‘শলোমনের হিতোপদেশের’ পিছনে কতই না মহৎ উদ্দেশ্য রয়েছে! এইগুলো এইজন্য বলা হয়েছিল যাতে এর থেকে “প্রজ্ঞা ও উপদেশ পাওয়া যায়।” প্রজ্ঞা মানে কোন বিষয় সম্বন্ধে সঠিক তথ্য জানা এবং সেই তথ্যকে ব্যবহার করে সমস্যার সমাধান করা, লক্ষ্যে পৌঁছানো, বিপদ এড়ানো বা দূর করা ও অন্যদেরকেও এইরকম করতে সাহায্য করা। একটা বই বলে “হিতোপদেশের পুস্তকে ‘প্রজ্ঞা’ বলতে জীবনে বুদ্ধিপূর্বক চলাকে বোঝায় যার অর্থ সঠিকভাবে বেছে নেওয়ার ক্ষমতা এবং সফলভাবে জীবনযাপন করা।” তাই প্রজ্ঞা লাভ করা কতই না গুরুত্বপূর্ণ!—হিতোপদেশ ৪:৭.
শলোমনের হিতোপদেশ থেকে উপদেশও পাওয়া যায়। আমাদের কী সত্যিই এইরকম প্রশিক্ষণের প্রয়োজন আছে? বাইবেলে উপদেশ বলতে সংশোধন করা, ভর্ৎসনা করা অথবা শাস্তি দেওয়াকে বোঝায়। একজন বাইবেল পণ্ডিত বলেন, “এর মানে হল নৈতিক গুণ গড়ে তুলতে শেখানো যা একজনের অন্যায় করার প্রবণতাকে সংশোধন করে।” উপদেশ আমরা নিজেরাই নিজেদের দিই কিংবা অন্যেরাই আমাদের দিক তা আমাদেরকে শুধু অন্যায় কাজ করতেই বাধা দেয় না কিন্তু সেইসঙ্গে ভাল কাজ করার জন্যও প্রেরণা দেয়। তাই আমরা যদি নৈতিকভাবে শুদ্ধ থাকতে চাই, তাহলে আমাদের উপদেশ প্রয়োজন।
হিতোপদেশের বইয়ের দুটো উদ্দেশ্য আছে—প্রজ্ঞা এবং উপদেশ পাওয়া। নৈতিক গুণ এবং মানসিক দক্ষতার সঙ্গে অনেক বিষয় জড়িয়ে আছে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় ধার্মিকতা এবং ন্যায্যতা হলো নৈতিক গুণাবলি এবং যদি আমাদের মধ্যে এগুলো থাকে, তাহলে আমাদের পক্ষে যিহোবার উচ্চ মানগুলো অনুসারে চলা অনেক সহজ হবে।
প্রজ্ঞার সঙ্গে অনেক কিছু জড়িত রয়েছে যেমন বোধশক্তি, অন্তর্দৃষ্টি, বিচক্ষণতা এবং চিন্তা করার ক্ষমতা। বোধশক্তি হলো একটা বিষয়কে খুঁটিয়ে দেখা এবং পুরোপুরি বোঝার জন্য সেটা পরীক্ষা করা ও এর একেকটা বৈশিষ্ট্য কীভাবে আরেকটার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত তা বুঝতে পারার ক্ষমতা। অন্তর্দৃষ্টির মানে হল যুক্তি করার জন্য জ্ঞান থাকা এবং কোন কাজ কেন ঠিক অথবা ভুল তা বোঝা। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, কেউ যদি ভুল পথে যান তখন একজন বিচক্ষণ ব্যক্তি তা বুঝতে পারেন এবং তিনি হয়তো সঙ্গে সঙ্গে তাকে সেই বিপদ সম্বন্ধে সতর্ক করতে পারেন। কিন্তু সেই ব্যক্তি কেন সেই পথে যাচ্ছেন তা বোঝার এবং তাকে সেই পথ থেকে সরিয়ে আনার জন্য অন্তর্দৃষ্টির প্রয়োজন।
বিচক্ষণ ব্যক্তিরা আগে থেকে বিষয়গুলো বুঝতে পারেন ও সহজে ধোঁকা খান না। (হিতোপদেশ ১৪:১৫) তারা আগে থেকেই বিপদ বুঝতে পেরে সেগুলো সামলানোর জন্য তৈরি থাকেন। আর প্রজ্ঞা আমাদেরকে গঠনমূলক চিন্তা এবং ধারণা গড়ে তুলতে সাহায্য করে যাতে আমাদের জীবনে এক উদ্দেশ্য থাকে। বাইবেলে লেখা হিতোপদেশগুলো পড়া সত্যিই উপকারজনক কারণ এগুলো এইজন্যই লিখে রাখা হয়েছে যেন আমরা প্রজ্ঞা এবং উপদেশ লাভ করতে পারি। এই হিতোপদেশগুলোতে মন দিলে এমনকি ‘অবোধেরাও’ বিচক্ষণতা লাভ করতে পারবে এবং ‘যুবকেরা’ জ্ঞান ও চিন্তা করার ক্ষমতা পাবে।
জ্ঞানীদের জন্য হিতোপদেশ
কিন্তু বাইবেলের হিতোপদেশগুলো শুধু অনভিজ্ঞ এবং যুবকদের জন্যই নয়। এইগুলো সেইসব জ্ঞানী ব্যক্তিদের জন্যও যারা তা শোনেন। রাজা শলোমন বলেছিলেন, “জ্ঞানবান শুনিবে ও পান্ডিত্য বৃদ্ধি পাইবে, বুদ্ধিমান সুমন্ত্রণা লাভ করিবে; এতদ্দ্বারা দৃষ্টান্ত কথা ও রূপক বুঝা যায়, জ্ঞানবানদের বাক্য ও তাহাদের সমস্যা বুঝা যায়।” (হিতোপদেশ ১:৫, ৬) জ্ঞানী ব্যক্তিরাও এই হিতোপদেশগুলোর প্রতি মন দিয়ে তাদের জ্ঞানকে আরও বাড়াতে পারেন এবং যে সব লোকেরা বুঝেশুনে কাজ করেন তারা তাদের জ্ঞানকে আরও বাড়িয়ে জীবনকে সফল করতে পারেন।
বেশির ভাগ হিতোপদেশই খুব কম কথায় অনেক বড় সত্যকে প্রকাশ করে। বাইবেলে লেখা কিছু হিতোপদেশ হয়তো এমন যা বোঝা কঠিন হয়। (হিতোপদেশ ১:১৭-১৯) কিছু হিতোপদেশ হল ধাঁধার মতো অর্থাৎ জটিল এবং বিভ্রান্তিজনক উক্তির মতো যার জন্য সেগুলো বুঝতে অন্য কারও সাহায্যের দরকার। এছাড়াও হিতোপদেশগুলোর মধ্যে উপমা, রূপক এবং অন্যান্য কথাবার্তাও রয়েছে। এইগুলো বোঝার জন্য সময় এবং ধ্যান করার প্রয়োজন। অনেক হিতোপদেশের রচয়িতা শলোমন নিশ্চয়ই জানতেন যে এই হিতোপদেশগুলোর অর্থ বোঝার চাবি কী। এইগুলোকে বোঝার এই চাবি সম্বন্ধে তিনি হিতোপদেশ বইয়ে তার পাঠকদের বলেছেন, যার প্রতি একজন বুদ্ধিমান ব্যক্তি মন দিতে চাইবেন।
শুরুতেই যা লক্ষ্যে পৌঁছে দেয়
প্রজ্ঞা ও উপদেশ পাওয়ার জন্য একজন ব্যক্তি কোথা থেকে শুরু করতে পারেন? শলোমন উত্তর দিয়েছেন: “সদাপ্রভুর ভয় জ্ঞানের আরম্ভ; অজ্ঞানেরা প্রজ্ঞা ও উপদেশ তুচ্ছ করে।” (হিতোপদেশ ১:৭) যিহোবাকে ভয় করার মধ্যেই জ্ঞানের শুরু। জ্ঞান ছাড়া প্রজ্ঞা অথবা উপদেশ পাওয়া যেতে পারে না। তাই ঈশ্বরকে ভয় করলেই প্রজ্ঞা ও উপদেশ পাওয়া যায়।—হিতোপদেশ ৯:১০; ১৫:৩৩.
ঈশ্বরকে ভয় করার মানে তাঁকে ভীষণ ভয় পাওয়া নয়। বরং এর মানে হল তাঁকে শ্রদ্ধা করা এবং তাঁর প্রতি সশ্রদ্ধ ভয় রাখা। এইরকম ভয় ছাড়া প্রকৃত জ্ঞান পাওয়া সম্ভব নয়। আমাদের জীবন যিহোবা ঈশ্বরের কাছ থেকে এসেছে আর তাই জ্ঞান পাওয়ার জন্য আমাদের বেঁচে থাকা জরুরি। (গীতসংহিতা ৩৬:৯; প্রেরিত ১৭:২৫, ২৮) এছাড়াও ঈশ্বরই সমস্ত কিছু সৃষ্টি করেছেন তাই তাঁর সৃষ্টি কাজ সম্বন্ধে জ্ঞান নেওয়ার ওপরই মানুষের সমস্ত জ্ঞান নির্ভর করে। (গীতসংহিতা ১৯:১, ২; প্রকাশিত বাক্য ৪:১১) ঈশ্বর তাঁর লিখিত অনুপ্রাণিত বাক্যও দিয়েছেন যা “শিক্ষার, অনুযোগের, সংশোধনের, ধার্ম্মিকতা সম্বন্ধীয় শাসনের নিমিত্ত উপকারী।” (২ তীমথিয় ৩:১৬) তাই মূল বিষয় হলো প্রকৃত জ্ঞান যিহোবার কাছ থেকে আসে আর একজন ব্যক্তি তা লাভ করতে চাইলে তাকে অবশ্যই যিহোবাকে শ্রদ্ধা করতে হবে ও তাঁর প্রতি ভয় রাখতে হবে।
যদি একজন ব্যক্তি ঈশ্বরকে ভয় না করেন, তাহলে তার সমস্ত জ্ঞান এবং জাগতিক প্রজ্ঞার কী মূল্য আছে? প্রেরিত পৌল লিখেছিলেন: “জ্ঞানবান্ কোথায়? অধ্যাপক কোথায়? এই যুগের বাদানুবাদকারী কোথায়? ঈশ্বর কি জগতের জ্ঞানকে মূর্খতায় পরিণত করেন নাই?” (১ করিন্থীয় ১:২০) জগতের দৃষ্টিতে যারা জ্ঞানী তারা ঈশ্বরকে ভয় করেন না আর তাই তারা নিজেদের জ্ঞানে ভুল উপসংহারে পৌঁছান এবং শেষে ‘মূর্খ’ বলে প্রমাণিত হন।
“তোমার কণ্ঠদেশের হারস্বরূপ”
এরপর জ্ঞানী রাজা যুবকদের উদ্দেশে বলেন: “বৎস, তুমি তোমার পিতার উপদেশ শুন, তোমার মাতার ব্যবস্থা ছাড়িও না। কারণ সেই উভয় তোমার মস্তকের লাবণ্যভূষণ, ও তোমার কণ্ঠদেশের হারস্বরূপ হইবে।”—হিতোপদেশ ১:৮, ৯.
প্রাচীন ইস্রায়েলে ঈশ্বর বাবামাদের দায়িত্ব দিয়েছিলেন তারা যেন তাদের সন্তানদের শিক্ষা দেয়। মোশি বাবাদের পরামর্শ দিয়েছিলেন: “এই যে সকল কথা আমি অদ্য তোমাকে আজ্ঞা করি, তাহা তোমার হৃদয়ে থাকুক। আর তোমরা প্রত্যেকে আপন আপন সন্তানগণকে এ সকল যত্নপূর্ব্বক শিক্ষা দিবে, এবং গৃহে বসিবার কিম্বা পথে চলিবার সময়ে এবং শয়ন কিম্বা গাত্রোত্থান কালে ঐ সমস্তের কথোপকথন করিবে।” (দ্বিতীয় বিবরণ ৬:৬, ৭) মায়েদেরও বেশ কিছু দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। স্বামীর অধীনে থেকে একজন ইব্রীয় স্ত্রী পরিবার সম্বন্ধে ঈশ্বরের নিয়মকে পরিবারের কাজে লাগাতে পারত।
সারা বাইবেল জুড়ে বলা হয়েছে যে পরিবারই হল শিক্ষা দেওয়ার প্রধান জায়গা। (ইফিষীয় ৬:১-৩) সন্তানেরা যখন তাদের বিশ্বাসী বাবামায়ের বাধ্য হয় তখন তা যেন তাদের মাথার মুকুট ও তাদের গলার সুন্দর হার হয়।
“সেই ধন তৎ-গ্রাহকদেরই প্রাণ নষ্ট করে”
এশিয়ার একজন বাবা তার ১৬ বছর বয়সী ছেলেকে উচ্চ শিক্ষা নেওয়ার জন্য আমেরিকায় পাঠানোর আগে উপদেশ দিয়েছিলেন যে সে যেন সেখানে কোন খারাপ ছেলেদের সঙ্গে না মেশে। এই উপদেশ অনেকটা শলোমনের সতর্কবাণীর মতো: “বৎস, যদি পাপীরা তোমাকে প্রলোভন দেখায়, তুমি সম্মত হইও না।” (হিতোপদেশ ১:১০) কিন্তু তারা যে সব প্রলোভন দেখায় সেই সম্বন্ধেও শলোমন বলে দিয়েছেন: “তাহারা . . . বলে, ‘আমাদের সঙ্গে আইস, আমরা রক্তপাত করিবার জন্য লুকাইয়া থাকি, নির্দ্দোষদিগকে অকারণে ধরিবার জন্য গুপ্ত থাকি, পাতালের ন্যায় তাহাদিগকে জীবন্ত গ্রাস করি, গর্ত্তগামীদের ন্যায় সর্ব্বাঙ্গীণ গ্রাস করি, আমরা সর্ব্বপ্রকার বহুমূল্য ধন পাইব, লুটিত দ্রব্যে স্ব স্ব গৃহ পরিপূর্ণ করিব, তুমি আমাদের মধ্যে এক জন অংশী হইবে, আমাদের সকলেরই এক তোড়া হইবে।’”—হিতোপদেশ ১:১১-১৪.
এটা স্পষ্ট যে তারা ধনের লোভ দেখায়। তাড়াতাড়ি লাভবান হওয়ার লোভ দেখিয়ে “পাপীরা” অন্যদেরকে তাদের খারাপ কাজে অথবা অন্যায় পরিকল্পনার মধ্যে জড়িয়ে নেয়। বস্তুগত সম্পদ লাভ করার জন্য এই দুষ্ট লোকেরা এমনকি হত্যা করতেও পিছপা হয় না। তারা তাদের শিকারকে ‘পাতালের ন্যায় জীবন্ত গ্রাস করে, . . . সর্ব্বাঙ্গীণ গ্রাস করে’ তার কাছে যা আছে সবই জোর করে কেড়ে নেয় ঠিক যেমন কবর সমস্ত দেহকে তার ভিতরে নিয়ে নেয়। তারা অপরাধকে পেশা হিসেবে বেছে নেওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানায়—“লুটিত দ্রব্যে স্ব স্ব গৃহ পরিপূর্ণ” করতে চায় এবং অবোধ লোকেদের ‘তোড়াকে তাদের সকলের’ করতে চায়। আমাদের জন্য কতই না সময়োপযোগী সাবধানবাণী! আজকের যুবকেরা এবং মাদকদ্রব্য ব্যাবসায়ীরা কি এই একই পদ্ধতি ব্যবহার করে না? তাড়াতাড়ি ধনী হওয়ার লোভে অনেক লোকেরা কি ব্যাবসায় অসততা করে না?
জ্ঞানী রাজা পরামর্শ দিয়েছিলেন: “বৎস, তাহাদের সঙ্গে সেই পথে চলিও না, তাহাদের মার্গ হইতে তোমার চরণ নিবৃত্ত কর; কারণ তাহাদের চরণ অনিষ্টের দিকে দৌড়ে, তাহারা রক্তপাত করিতে বেগে ধাবমান হয়।” তাদের সর্বনাশা ভবিষ্যৎ সম্বন্ধে তিনি আরও বলেন: “জাল পাতা হয় অনর্থক, কোন পক্ষীর দৃষ্টিগোচরে। আর উহারা আপনাদেরই রক্তপাত করিতে লুকাইয়া থাকে, আপনাদেরই প্রাণ ধরিতে গুপ্ত থাকে। পরধন-অপহারক সকলেরই এই গতি, সেই ধন তৎ-গ্রাহকদেরই প্রাণ নষ্ট করে।”—হিতোপদেশ ১:১৫-১৯.
‘পরধন-অপহারক সকলেই’ সময় মতো ধ্বংস হয়ে যাবে। দুষ্ট লোকেরা গোপনে অন্যদের জন্য যে ওত পেতে থাকে তা তাদের নিজেদের জন্যই ফাঁদস্বরূপ হবে। এই স্বেচ্ছাকৃত পাপীরা কি তাদের জীবনধারা পরিবর্তন করবে? না। কারণ যেমন জাল দেখতে পেয়েও পাখিরা তাতে ধরা দেয়, একইভাবে দুষ্ট লোকেরা তাদের লোভে অন্ধ হয়ে থাকে, তারা অন্যায় করতেই থাকে আর পরে ধরাও পড়ে।
কে প্রজ্ঞার স্বর শুনবে?
পাপীরা কি প্রকৃতই জানে যে তারা সর্বনাশের পথে চলছে? তাদের কি সতর্ক করা হয়েছে যে তাদের কাজের পরিণাম খারাপ হবে? অবশ্যই করা হয়েছে। তারা অজুহাত দেখিয়ে বলতে পারবে না যে কেউ তাদের বলেনি কারণ আজ সমস্ত জায়গায় এক জরুরি খবর শোনানো হচ্ছে।
শলোমন ঘোষণা করেছিলেন: “প্রজ্ঞা বাহিরে উচ্চৈঃস্বরে ডাকে, চকে চকে নিজ রব ছাড়ে; সে জনাকীর্ণ পথের মস্তকে আহ্বান করে, নগর-দ্বার সকলের প্রবেশ-স্থানে, নগরে, সে এই কথা বলে।” (হিতোপদেশ ১:২০, ২১) সবাই যেন শুনতে পায় এমন উচ্চৈঃস্বরে ও স্পষ্টভাবে প্রজ্ঞা সকলকে ডাকছে। প্রাচীন ইস্রায়েলে প্রাচীনেরা নগরের দ্বারে বসে লোকেদেরকে বিজ্ঞ পরামর্শ দিতেন এবং বিচার করতেন। যিহোবা আমাদের জন্য প্রকৃত প্রজ্ঞাকে তাঁর বাক্য বাইবেলে লিখে রেখেছেন যা সব জায়গায় পাওয়া যায়। আর আজকে তাঁর দাসেরা সব জায়গায় এই খবর প্রচার করায় ব্যস্ত। সত্যিই, ঈশ্বর সকলকে তাঁর প্রজ্ঞা জানিয়েছেন।
প্রকৃত প্রজ্ঞা কী বলে? সে বলে: “অবোধেরা, কত দিন নির্বুদ্ধিতা ভালবাসিবে? নিন্দকেরা কত দিন নিন্দায় রত থাকিবে? . . . আমি ডাকিলে তোমরা অসম্মত হইলে, আমি হস্ত বিস্তার করিলে কেহ মনোযোগ করিলে না।” হীনবুদ্ধিরা প্রজ্ঞার ডাকে মন দেয় না। ফলে “তাহারা স্ব স্ব আচরণের ফল ভোগ করিবে,” তাদের নিজেদের ‘বিপথগমন এবং নিশ্চিন্ততা তাহাদিগকে বিনষ্ট করিবে।’—হিতোপদেশ ১:২২-৩২.
কিন্তু যদি কেউ প্রজ্ঞার ডাক শোনার জন্য সময় করে নেন, তাহলে তার কী হবে? “সে নির্ভয়ে বাস করিবে, শান্ত থাকিবে, অমঙ্গলের আশঙ্কা করিবে না।” (হিতোপদেশ ১:৩৩) আপনি কি তাদের মধ্যে একজন হতে চান যারা বাইবেলের হিতোপদেশের প্রতি মন দিয়ে প্রজ্ঞা লাভ করবেন এবং উপদেশ শুনবেন?
[১৫ পৃষ্ঠার চিত্র]
প্রকৃত প্রজ্ঞা প্রচুরভাবে ছড়িয়ে আছে