“আমার আজ্ঞা সকল পালন কর, জীবন পাইবে”
তিনি ছিলেন বুদ্ধিমান, “রূপবান্ ও সুন্দর” যুবক। আর তার প্রভুর স্ত্রী ছিল কামলালসাপূর্ণ ও নির্লজ্জ বেহায়া। ওই যুবকের ওপর তার চোখ পড়েছিল এবং রোজ রোজ সে তাকে ভোলানোর চেষ্টা করত। “এক দিন যোষেফ কার্য্য করিবার জন্য গৃহমধ্যে গেলেন, বাটীর লোকদের মধ্যে অন্য কেহ তথায় ছিল না, তখন সে যোষেফের বস্ত্র ধরিয়া বলিল, আমার সহিত শয়ন কর।” কিন্তু কুলপতি যাকোবের ছেলে যোষেফ, পোটীফরের স্ত্রীর হাতে তার কাপড় ফেলে রেখে পালিয়ে যান।—আদিপুস্তক ৩৯:১-১২.
কিন্তু, এই ধরনের চাপের মুখে সবাই-ই পালিয়ে যেতে পারে না। উদাহরণ হিসেবে সেই যুবকের কথাই ধরুন, যাকে ইস্রায়েলের রাজা শলোমন রাতের বেলায় রাস্তায় দেখতে পেয়েছিলেন। একজন নষ্টা স্ত্রীর ছলাকলায় ভুলে “অমনি সে তাহার পশ্চাতে গেল, যেমন গোরু হত হইতে যায়।”—হিতোপদেশ ৭:২১, ২২.
খ্রীষ্টানদেরকে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে তারা যেন “ব্যভিচার হইতে পলায়ন” করে। (১ করিন্থীয় ৬:১৮) খ্রীষ্টান যুবক, তীমথিয়কে প্রেরিত পৌল লিখেছিলেন: “যৌবনকালের অভিলাষ হইতে পলায়ন কর।” (২ তীমথিয় ২:২২) যোষেফ যেমন পোটীফরের স্ত্রীর কাছ থেকে পালিয়ে গিয়েছিলেন ঠিক তেমনই আমরা যখন ব্যভিচার, পারদারিকতা অথবা অনৈতিক পরিস্থিতিতে পড়ি তখন আমাদেরও সেখান থেকে পালিয়ে যেতে হবে। এইরকম সংকল্প নিতে কী আমাদেরকে সাহায্য করবে? হিতোপদেশ বইয়ের ৭ অধ্যায়ে শলোমন আমাদেরকে কিছু মূল্যবান পরামর্শ দিয়েছেন। খারাপ লোকেদের ছলাকলা থেকে কীভাবে আমরা নিজেদেরকে রক্ষা করতে পারব, এখানে তিনি শুধু সেই শিক্ষাই দেননি সেইসঙ্গে তিনি একটা ঘটনা তুলে ধরেছেন, যেখানে একজন নষ্টা স্ত্রী ভুলিয়ে ভালিয়ে একজন যুবককে ভুল পথে নিয়ে গিয়েছিল। আর এই ঘটনার মাধ্যমে তিনি আমাদেরকে বুঝিয়ে দিয়েছেন যে, তাদের ভোলানোর উপায়গুলো কেমন হতে পারে।
‘তোমার অঙ্গুলি-কলাপে আমার ব্যবস্থা বাঁধিয়া রাখ’
একজন বাবার মতো উপদেশ দিয়ে রাজা শুরু করেন: “বৎস, আমার কথা সকল পালন কর, আমার আজ্ঞা সকল তোমার কাছে সঞ্চয় কর। আমার আজ্ঞা সকল পালন কর, জীবন পাইবে, নয়ন-তারার ন্যায় আমার ব্যবস্থা রক্ষা কর।”—হিতোপদেশ ৭:১, ২.
বাবামায়েদের, বিশেষ করে বাবাদেরকে ঈশ্বর দায়িত্ব দিয়েছেন তারা যেন তাদের ছেলেমেয়েদের ঈশ্বরের নিয়মনীতি অর্থাৎ কোন্টা ঠিক আর কোন্টা ভুল তা শেখান। মোশি বাবাদেরকে পরামর্শ দিয়েছিলেন: “এই যে সকল কথা আমি অদ্য তোমাকে আজ্ঞা করি, তাহা তোমার হৃদয়ে থাকুক। আর তোমরা প্রত্যেকে আপন আপন সন্তানগণকে এ সকল যত্নপূর্ব্বক শিক্ষা দিবে, এবং গৃহে বসিবার কিম্বা পথে চলিবার সময়ে এবং শয়ন কিম্বা গাত্রোত্থান কালে ঐ সমস্তের কথোপকথন করিবে।” (দ্বিতীয় বিবরণ ৬:৬, ৭) আর প্রেরিত পৌল লিখেছিলেন: “পিতারা, তোমরা আপন আপন সন্তানদিগকে ক্রুদ্ধ করিও না, বরং প্রভুর শাসনে ও চেতনা প্রদানে তাহাদিগকে মানুষ করিয়া তুল।” (ইফিষীয় ৬:৪) তাই, যে বিষয়গুলো বাবামায়েরা আমাদের মনে করিয়ে দেন ও যে আজ্ঞাগুলো দেন এবং ঈশ্বরের বাক্য বাইবেলের নিয়মগুলো জানান সেগুলোকে আমাদের মূল্যবান মনে করা বা গুরুত্ব দেওয়া উচিত।
এছাড়াও, বাবামায়েরা পরিবারের জন্য কিছু নিয়মনীতি তৈরি করতে পারেন। কারণ সেগুলো পরিবারের সদস্যদের জন্য উপকারী। এটা ঠিক যে দরকার মতো বিভিন্ন পরিবারে বিভিন্ন নিয়মনীতি থাকে। তাই বাবামায়েরা ঠিক করবেন, কোন্ নিয়মগুলো পরিবারের জন্য সবচেয়ে বেশি উপকারী। আর তারা যে নিয়মগুলো দেবেন, তা থেকে যেন বোঝা যায় যে পরিবারকে তারা সত্যিকারের ভালবাসেন এবং তাদের জন্য চিন্তা করেন। ছেলেমেয়েদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে তারা যেন এই পরামর্শগুলো আর সেইসঙ্গে বাবামায়েরা বাইবেল থেকে যে শিক্ষাগুলো তাদেরকে দেন, তা পালন করে। হ্যাঁ, বাবামায়ের দেওয়া নির্দেশনাগুলোকে তাদের “নয়ন-তারার ন্যায়” দেখা জরুরি, যা তাদেরকে সব দিক দিয়ে রক্ষা করবে। যিহোবার নিয়মনীতি মেনে না চলার মারাত্মক পরিণতি এড়ানোর এবং ‘জীবন পাওয়ার’ জন্য এটাই হচ্ছে সবচেয়ে ভাল উপায়।
“তোমার অঙ্গুলি-কলাপে সেগুলি [আমার আজ্ঞা সকল] বাঁধিয়া রাখ, তোমার হৃদয়-ফলকে তাহা লিখিয়া রাখ।” (হিতোপদেশ ৭:৩) আমাদের হাতের আঙুলগুলো যেমন সবসময় আমাদের চোখের সামনেই থাকে ও কাজ করার জন্য খুবই জরুরি, তেমনই আমরা যা কিছুই করি না কেন, আমাদের সবসময় বাইবেলের শিক্ষা বা জ্ঞানকে মনে রাখা ও কাজে লাগানো উচিত। সেগুলোকে আমাদের হৃদয় ফলকে লিখে রাখতে হবে এবং আমাদের ব্যক্তিত্বের একটা বৈশিষ্ট্য করে তুলতে হবে।
প্রজ্ঞা এবং সুবিবেচনা যে কতটা জরুরি সে সম্পর্কে রাজা পরামর্শ দিয়েছেন: “প্রজ্ঞাকে বল, তুমি আমার ভগিনী, সুবিবেচনাকে তোমার সখী বল।” (হিতোপদেশ ৭:৪) ঈশ্বরের কাছ থেকে পাওয়া জ্ঞানকে সঠিকভাবে কাজে লাগানোর ক্ষমতাই হল প্রজ্ঞা। নিজের বোনকে আমরা যেরকম ভালবাসি প্রজ্ঞাকেও ঠিক সেইরকমভাবে ভালবাসতে হবে। কিন্তু সুবিবেচনা বলতে কী বোঝায়? সুবিবেচনা হল কোন বিষয়কে খুঁটিয়ে দেখা এবং পুরোপুরি বোঝার জন্য সেটা পরীক্ষা করা ও এর একেকটা বৈশিষ্ট্য কীভাবে আরেকটার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত, তা বুঝতে পারার ক্ষমতা। খুব কাছের বন্ধুর সঙ্গে আমাদের যেরকম সম্পর্ক থাকে, সুবিবেচনাকেও আমাদের সেভাবে দেখা উচিত।
কেন আমরা বাইবেলের পরামর্শ মেনে চলব এবং প্রজ্ঞা ও সুবিবেচনা গড়ে তুলব? কারণ এতে করে আমরা ‘[অপরিচিতা] স্ত্রী হইতে [নিজেদেরকে] রক্ষা করিতে পারিব ও চাটুভাষিণী বিজাতীয়া হইতে রক্ষা পাইব।’ (হিতোপদেশ ৭:৫) হ্যাঁ, আমরা যদি তা করি, তাহলে আমরা অপরিচিত অথবা বিজাতীয় লোকের অর্থাৎ একজন দুশ্চরিত্র লোকের মন ভোলানো কথা এবং ছলচাতুরী থেকে রক্ষা পাব।a
যুবক ‘একজন চতুর স্ত্রীর’ দেখা পায়
এরপর ইস্রায়েলের রাজা যা দেখেছিলেন সেই সম্বন্ধে বলেন: “আমি আপন গৃহের বাতায়ন হইতে খড়খড়ি দিয়া নিরীক্ষণ করিতেছিলাম; অবোধদের মধ্যে আমার দৃষ্টি পড়িল, আমি যুবকগণের মধ্যে এক জনকে দেখিলাম, সে বুদ্ধিবিহীন যুবক। সে গলিতে গেল, ঐ স্ত্রীর কোণের নিকটে আসিল, তাহার বাটীর পথে চলিল। তখন সন্ধ্যাকাল, দিবাবসান হইয়াছিল, রাত্রিও অন্ধকার হইয়াছিল।”—হিতোপদেশ ৭:৬-৯.
যে জানালা দিয়ে শলোমন এই দৃশ্য দেখেছিলেন, তার মধ্যে সরু পাতলা কাঠের তৈরি নানারকমের কারুকার্য করা খড়খড়ি ছিল। যেহেতু সন্ধ্যা হয়ে আসছিল তাই রাস্তায় ধীরে ধীরে অন্ধকার নেমে আসে। এই সময় তিনি একজন যুবককে দেখতে পান যাকে দেখে বোঝা যাচ্ছিল, যে কোন সময় তার ওপর একটা বিপদ আসতে পারে। সে ছিল বোকা কারণ তার বিচক্ষণতা অথবা বোধশক্তি বলে কিছু ছিল না। সে কোন্ এলাকায় গিয়েছে বা সেখানে গেলে কী হতে পারে, তা সম্ভবত সে জানত। সেই যুবক “ঐ স্ত্রীর কোণের” কাছে, যে পথ দিয়ে তার বাড়িতে যাওয়া যায় সেই পথে গেল। কিন্তু ওই স্ত্রী আসলে কে? আর সে কী-ই বা করে?
রাজা বলে চলেন: “দেখ, এক স্ত্রী তাহার সম্মুখে আসিল, সে বেশ্যা-বেশধারিণী ও চতুর-চিত্তা; সে কলহকারিণী ও অবাধ্যা, তাহার চরণ ঘরে থাকে না; সে কখনও সড়কে, কখনও চকে, কোণে কোণে অপেক্ষাতে থাকে।”—হিতোপদেশ ৭:১০-১২.
ওই মহিলার পোশাকআশাক দেখেই বোঝা যাচ্ছিল যে তার স্বভাবচরিত্র কেমন। (আদিপুস্তক ৩৮:১৪, ১৫) একজন বেশ্যার মতো সে অশালীন পোশাক পরে আছে। এছাড়াও, তার মন চতুরতায় অর্থাৎ “ছলনায়” ভরা এবং সে “কুমতলবি।” (আ্যন আ্যমেরিকান ট্রান্সলেশন; নিউ ইন্টারন্যাশনাল ভারসন) সে উচ্ছৃঙ্খল ও অবাধ্যা, বাচাল ও জেদী, অমার্জিত ও স্বেচ্ছাচারী এবং দুঃসাহসী ও বেহায়া। ঘরে না থেকে সে রাস্তায় রাস্তায় ঘোরাফেরা করে এবং শিকার ধরার জন্য সে রাস্তার মোড়ে ওত পেতে থাকে। ওই যুবকের মতো কাউকে ভোলানোর জন্য সে অপেক্ষা করে আছে।
‘অনেক মধুর বাক্য’
এভাবেই সেই যুবক ওই নষ্টা স্ত্রীলোকের ছলচাতুরীতে ধরা পড়েছিল। আর সে যেভাবে তা করেছিল, তা শলোমনের নজর কেড়ে নিয়েছিল! তিনি বলেন: ‘সে তাহাকে ধরিয়া চুম্বন করিল, নির্লজ্জ মুখে তাহাকে কহিল, আমাকে মঙ্গলার্থক বলিদান করিতে হইয়াছে, আজ আমি আপন মানত পূর্ণ করিয়াছি; তাই তোমার সহিত সাক্ষাৎ করিতে বাহিরে আসিয়াছি, সযত্নে তোমার মুখ দেখিতে আসিয়াছি, তোমাকে পাইয়াছি।’—হিতোপদেশ ৭:১৩-১৫.
সেই মহিলা মন ভোলানো কথা বলেছিল। চেহারার মধ্যে সাহসী ভাব ফুটিয়ে তুলে খুব আস্থা নিয়ে সে ওই যুবকের সঙ্গে কথা বলেছিল। সে খুব সাবধানে কথা বলছিল যাতে করে ওই যুবককে সে ভোলাতে পারে। সে ঠিক ওই দিনই মঙ্গলার্থক বলি উৎসর্গ করছে এবং তার মানত পূর্ণ করেছে বলে বোঝাতে চেয়েছে যে, সে অধার্মিক নয় কিন্তু একজন ধার্মিক মহিলা। যিরূশালেম মন্দিরে মাংস, ময়দা তেল এবং দ্রাক্ষারস দিয়ে মঙ্গলার্থক বলি উৎসর্গ করা হতো। (লেবীয় পুস্তক ১৯:৫, ৬; ২২:২১; গণনাপুস্তক ১৫:৮-১০) আর যে বলি দিত সে এবং তার পরিবারের লোকেরা ওই উৎসর্গ থেকে খাবার খেতে পারত, তাই এই বলির কথা বলে সে যুবককে বোঝাতে চেয়েছিল যে তার ঘরে প্রচুর খাবার এবং মদ রয়েছে। এ কথা থেকে পরিষ্কার বোঝা যায়: সেখানে ওই যুবক খুব আনন্দ-ফূর্তি করে সময় কাটাতে পারবে। সে ওই যুবকের সঙ্গে এমনভাবে কথা বলছে যেন তার সঙ্গে দেখা করার জন্যই সে ঘর থেকে বের হয়ে এসেছে। এইধরনের বানানো গল্পে কেউ যদি বিশ্বাস করে, তাহলে তা কত দুঃখজনকই হবে। একজন বাইবেল পণ্ডিত লেখেন, ‘এটা ঠিক যে সে কাউকে খোঁজার জন্যই বের হয়ে এসেছে। কিন্তু, সে কি আসলেই বিশেষ করে ওই যুবকের জন্যই সেখানে এসেছিল? এই যুবকের মতো যারা বোকা শুধু তারাই তার কথা বিশ্বাস করবে।’
পোশাকআশাকে নিজেকে আকর্ষণীয় করে তোলার, মিষ্টি মিষ্টি কথা বলার, জড়িয়ে ধরার, এবং চুমো দেওয়ার পর ওই ছলনাময়ী বিভিন্ন সুগন্ধি দ্রব্যের কথা বলে। সে বলে: “আমি খাটে বুটাদার চাদর পাড়িয়াছি, মিস্রীয় সূত্রের চিত্রবিচিত্র বস্ত্র পাড়িয়াছি। আমি গন্ধরস, অগুরু ও দারুচিনি দিয়া আপন শয্যা আমোদিত করিয়াছি।” (হিতোপদেশ ৭:১৬, ১৭) মিশর দেশ থেকে আনা রংবেরঙের কাপড়ের তৈরি চাদর দিয়ে সে সুন্দর করে তার বিছানা সাজিয়েছে এবং তাতে গন্ধরস, অগুরু ও দারুচিনির মিষ্টি সুবাস ছড়িয়ে দিয়েছে।
সে আরও বলে “চল, আমরা প্রভাত পর্য্যন্ত কামরসে মত্ত হই, আমরা প্রেম বাহুল্যে বিলাস করি।” তার এই আমন্ত্রণ শুধু দুজনে মিলে রাতের খাবারের জন্যই ছিল না। সে ওই যুবককে কথা দেয় যে তারা যৌনমিলন করবে। এই আমন্ত্রণে ওই যুবকের উত্তেজনা আরও বেড়ে যায় ও তার কাছে খুবই রোমাঞ্চকর মনে হয়! এই কথাগুলো বলে সে তাকে আবারও এই বলে প্ররোচিত করে: “কেননা কর্ত্তা ঘরে নাই, তিনি দূরে যাত্রা করিয়াছেন; টাকার তোড়া সঙ্গে লইয়া গিয়াছেন, পূর্ণিমার দিন ঘরে আসিবেন।” (হিতোপদেশ ৭:১৮-২০) সে তাকে আশ্বাস দিয়ে বলে যে, তারা সম্পূর্ণ নিরাপদ কারণ তার স্বামী ব্যাবসার কাজে বাইরে গেছে এবং কিছুদিনের মধ্যে তার বাড়ি ফেরার কোন সম্ভাবনাই নেই। যুবকদের ভোলাতে সে কতটা পটু! “অনেক মধুর বাক্যে সে তাহার চিত্ত হরণ করিল, ওষ্ঠাধরের চাটুবাদে তাহাকে আকর্ষণ করিল।” (হিতোপদেশ ৭:২১) এই প্রলোভনকে ঠেকাতে ওই যুবকের যোষেফের মতো দৃঢ়তার দরকার ছিল। (আদিপুস্তক ৩৯:৯, ১২) সেই গুণ কি তার ছিল?
“গোরু যেমন হত হইতে যায়”
শলোমন বলেন: “অমনি সে তাহার পশ্চাতে গেল, যেমন গোরু হত হইতে যায়, যেমন শৃঙ্খলবদ্ধ ব্যক্তি নির্ব্বোধের শাস্তি পাইতে যায়; শেষে তাহার যকৃৎ বাণে বিদ্ধ হইল; যেমন পক্ষী ফাঁদে পড়িতে বেগে ধাবিত হয়, আর জানে না যে, তাহা প্রাণনাশক।”—হিতোপদেশ ৭:২২, ২৩.
ওই যুবক এই আমন্ত্রণে সাড়া না দিয়ে থাকতে পারেনি। সমস্ত বিচার-বুদ্ধিকে পেছনে ফেলে “গোরু যেমন হত হইতে যায়” তেমনই সেও ওই মহিলার পেছন পেছন গিয়েছিল। শেকলে বাঁধা থাকলে একজন মানুষ যেমন তার শাস্তি থেকে রেহাই পেতে পারে না ঠিক তেমনই ওই যুবক পাপ না করে থাকতে পারেনি। যতক্ষণ পর্যন্ত না “তাহার যকৃৎ বাণে বিদ্ধ হইল” অর্থাৎ মৃত্যুর আঘাত না পাওয়া পর্যন্ত সে তার বিপদ বুঝতে পারেনি। এই অর্থে তার মৃত্যু হতে পারে যে, যৌন সম্পর্ক করায় সে তার নিজের শরীরে যৌন রোগ নিয়ে এসেছে, যা তাকে মৃত্যুর দিকে নিয়ে যায়।b আর এইজন্য সে আধ্যাত্মিক দিক দিয়েও মারা যেতে পারে কারণ “তাহা প্রাণনাশক।” এতে তার নিজের ও তার পুরো জীবনের ক্ষতি হয় এবং ঈশ্বরের বিরুদ্ধে সে গুরুতর পাপ করে। একটা পাখি যেমন ফাঁদে ধরা পড়ে, তেমনই সে দ্রুত মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যায়।
“উহার মার্গে গমন করিও না”
এই ঘটনা থেকে শিখে জ্ঞানী রাজা শলোমন পরামর্শ দেন: “এখন বৎসগণ, আমার বাক্য শুন, আমার মুখের কথায় অবধান কর। তোমার চিত্ত উহার পথে না যাউক, তুমি উহার মার্গে ভ্রমণ করিও না। কেননা সে অনেককে আঘাত করিয়া নিপাত করিয়াছে, তাহার নিহত লোকেরা বৃহৎ দল। তাহার গৃহ পাতালের পথ, যে পথ মৃত্যুর অন্তঃপুরে নামিয়া যায়।”—হিতোপদেশ ৭:২৪-২৭.
শলোমন পরামর্শ দিয়েছেন আমরা যেন সেই সমস্ত ব্যক্তিদের থেকে দূরে থাকি যাদের পথে গেলে আমরা মারা যাব আর এই পরামর্শ মেনে চললে আমরা “জীবন” পাব। (হিতোপদেশ ৭:২) আমাদের দিনের জন্য কত উপযুক্ত পরামর্শ! মিথ্যা কথা বলে ফাঁদে ফেলার জন্য যারা বিভিন্ন জায়গাগুলোতে অপেক্ষা করে থাকে সেই জায়গাগুলোকে এড়িয়ে চলা খুবই জরুরি। তাহলে, সেইধরনের জায়গাগুলোতে গিয়ে তাদের ফাঁদে জড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি তুমি কেন নিতে চাও? কেন তুমি ‘বুদ্ধিবিহীন’ হবে এবং ‘বিজাতীয়া’ লোকেদের পথে ঘোরাফেরা করবে?
রাজা যে ‘অপরিচিতা স্ত্রীকে’ দেখেছিলেন, সে ওই যুবককে “প্রেম বাহুল্যে বিলাস” করার লোভ দেখিয়েছিল। অনেক যুবক-যুবতী বিশেষ করে যুবতীদের কি এইভাবে প্রলোভন দেখানো হয়নি? একটু ভাব: কেউ যখন তোমাকে ব্যভিচার করার লোভ দেখায় তখন তার মধ্যে কি সত্যিকারের ভালবাসা থাকে, নাকি সে তার নিজের স্বার্থের জন্য তা করতে চায়? কোন ছেলে যদি একটা মেয়েকে সত্যিই ভালবাসে, তাহলে সে কি কখনও ওই মেয়ের বাইবেলের শিক্ষাকে লঙ্ঘন করার ও তার খ্রীষ্টীয় বিবেককে জলাঞ্জলি দেওয়ার জন্য চাপ দেবে? শলোমন পরামর্শ দেন “তোমার চিত্ত উহার পথে না যাউক।”
যারা প্রলোভন দেখাতে আসে তারা সাধারণত মিষ্টি করে এবং খুব গুছিয়ে কথা বলে। আমরা যদি প্রজ্ঞা এবং সুবিবেচনা গড়ে তুলি, তাহলে এই লোকেদের মনে কী আছে আমরা তা বুঝতে পারব। সবসময় মনে রাখবেন, যিহোবা আমাদেরকে যে আদেশ দিয়েছেন তা আমাদেরকে রক্ষা করবে। আসুন আমরা সবসময় ‘ঈশ্বরের ইচ্ছা পালন করে, অনন্তকালস্থায়ী’ হওয়ার চেষ্টা করি।—১ যোহন ২:১৭.
[পাদটীকাগুলো]
a বাইবেলের সময়ে যারা যিহোবার উপাসনা থেকে সরে যেত আর ব্যবস্থা মেনে চলত না, তাদের জন্য ‘অপরিচিত’ শব্দ ব্যবহার করা হতো। তাই একজন দুশ্চরিত্রা স্ত্রীকে, যেমন একজন বেশ্যাকে এখানে ‘অপরিচিতা স্ত্রী’ বলা হয়েছে।
b কিছু কিছু যৌন রোগ লিভারের ক্ষতি করে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, সিফিলিসের প্রাথমিক পর্যায়ে লিভারের মধ্যে ব্যাকটেরিয়া ছড়িয়ে পড়ে। আর এর ফলে গনরিয়াও হতে পারে, যা লিভারে ক্ষত সৃষ্টি করে।
[২৯ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]
বাবামায়ের তৈরি নিয়মনীতিগুলোকে তুমি কীভাবে দেখ?
[৩১ পৃষ্ঠার চিত্র]
ঈশ্বরের ইচ্ছা পালন করে জীবন পাওয়া যায়