‘আমার পশ্চাদ্গামী হও’
“তোমরা ইহারই নিমিত্ত আহূত হইয়াছ; কেননা খ্রীষ্টও তোমাদের নিমিত্ত দুঃখ ভোগ করিলেন, এ বিষয়ে তোমাদের জন্য এক আদর্শ রাখিয়া গিয়াছেন, যেন তোমরা তাঁহার পদচিহ্নের অনুগমন কর।” —১ পিতর ২:২১.
১, ২. একজন শিক্ষক হিসেবে, যীশুর নিখুঁত উদাহরণ অনুকরণ করা কেন আমাদের জন্য কঠিন নয়?
যীশু খ্রীষ্ট ছিলেন পৃথিবীতে সর্বশ্রেষ্ঠ শিক্ষক। এ ছাড়াও তিনি সিদ্ধ ছিলেন, মানুষ হিসেবে তাঁর পুরো জীবনে কখনও পাপ করেননি। (১ পিতর ২:২২) কিন্তু, তার মানে কি এই যে, একজন শিক্ষক হিসেবে যীশুর উদাহরণ অনুকরণ করা আমাদের মতো অসিদ্ধ মানুষের জন্য কঠিন? অবশ্যই তা নয়।
২ আগের প্রবন্ধে আমরা যেমন দেখেছি যে, যীশুর শিক্ষার ভিত্তি ছিল প্রেম। আর প্রেম হল এমন কিছু, যা আমরা সকলে গড়ে তুলতে পারি। ঈশ্বরের বাক্য প্রায়ই অন্যদের প্রতি প্রেমে বৃদ্ধি পেতে ও এর মানকে উন্নত করতে আমাদের পরামর্শ দেয়। (ফিলিপীয় ১:৯; কলসীয় ৩:১৪) যিহোবা তাঁর সৃষ্টির কাছ থেকে কখনও এমন কিছু আশা করেন না, যা তারা তাঁকে দিতে পারবে না। আসলে, যেহেতু “ঈশ্বর প্রেম” এবং তিনি আমাদের তাঁর নিজের প্রতিমূর্তিতে সৃষ্টি করেছেন, তাই বলা যেতে পারে যে তিনি আমাদের এমনভাবে তৈরি করেছেন, যাতে আমরা ভালবাসা দেখাতে পারি। (১ যোহন ৪:৮; আদিপুস্তক ১:২৭) তাই, মূল শাস্ত্রপদে লেখা পিতরের কথাগুলো পড়ার সময় আমরা হয়তো আস্থার সঙ্গে উত্তর দিতে পারি। আমরা খ্রীষ্টের পদচিহ্ন নিবিড়ভাবে অনুসরণ করতে পারি। আসলে, আমরা যীশুর এই আদেশের বাধ্য হতে পারি: ‘আমার পশ্চাদ্গামী হও।’ (লূক ৯:২৩) আসুন আমরা বিবেচনা করি যে, খ্রীষ্ট যে-প্রেম দেখিয়েছিলেন তা আমরা কীভাবে অনুকরণ করতে পারি, প্রথমে তিনি যে-সত্য শিখিয়েছিলেন সেটার প্রতি এবং এরপর তিনি যে-লোকেদের শিক্ষা দিয়েছিলেন তাদের প্রতি।
আমরা যে-সত্যগুলো শিখি সেগুলোর প্রতি ভালবাসা গড়ে তোলা
৩. কেন কেউ কেউ অধ্যয়ন করাকে কঠিন বলে মনে করে কিন্তু হিতোপদেশ ২:১-৫ পদে কোন্ পরামর্শ পাওয়া যায়?
৩ আমরা যে-সত্যগুলো অন্যদের শিক্ষা দিই, সেগুলোকে ভালবাসতে হলে আমাদের অবশ্যই প্রথমে নিজেদের এই সত্যগুলোকে ভালবাসতে শিখতে হবে। আজকের জগতে, সেইরকম ভালবাসা গড়ে তোলা সবসময় এত সহজ নয়। অপর্যাপ্ত শিক্ষা এবং যুবক-যুবতীদের মধ্যে খারাপ অভ্যাসগুলো দেখে অনেকের মধ্যে অধ্যয়নের প্রতি এক স্থায়ী অনীহা গড়ে উঠতে পারে। কিন্তু, যিহোবার কাছ থেকে শেখা খুবই জরুরি। হিতোপদেশ ২:১-৫ পদ বলে: “বৎস, তুমি যদি আমার কথা সকল গ্রহণ কর, যদি আমার আজ্ঞা সকল তোমার কাছে সঞ্চয় কর, যদি প্রজ্ঞার দিকে কর্ণপাত কর, যদি বুদ্ধিতে মনোনিবেশ কর; হাঁ, যদি সুবিবেচনাকে আহ্বান কর, যদি বুদ্ধির জন্য উচ্চৈঃস্বর কর; যদি রৌপ্যের ন্যায় তাহার অন্বেষণ কর, গুপ্ত ধনের ন্যায় তাহার অনুসন্ধান কর; তবে সদাপ্রভুর ভয় বুঝিতে পারিবে, ঈশ্বরবিষয়ক জ্ঞান প্রাপ্ত হইবে।”
৪. “মনোনিবেশ’ করার মানে কী এবং কোন্ দৃষ্টিভঙ্গি আমাদের তা করতে সাহায্য করবে?
৪ লক্ষ করুন যে, ১ থেকে ৪ পদের মধ্যে আমাদের বারবার শুধু ‘গ্রহণ করিতে’ ও ‘সঞ্চয় করিতে’ চেষ্টা করতে বলা হয়নি কিন্তু সেইসঙ্গে “অন্বেষণ” এবং “অনুসন্ধান” করতেও বলা হয়েছে। কিন্তু, কী আমাদের এই সমস্ত কিছু করতে পরিচালিত করে? এই বাক্যাংশটা লক্ষ করুন, “বুদ্ধিতে মনোনিবেশ কর।” একটা বই বলে যে, এই পরামর্শ “শুধুমাত্র মন দিতেই অনুরোধ করছে না; এটা এইরকম মনোভাব রাখার জন্য একটা দাবি: শিক্ষাগুলো গ্রহণ করার প্রতি এক আকুল আকাঙ্ক্ষা।” আর যিহোবা আমাদের যা শিক্ষা দেন, তা গ্রহণ করতে এবং শেখার আগ্রহ গড়ে তুলতে কী আমাদের সাহায্য করতে পারে? আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি। ‘ঈশ্বরবিষয়ক জ্ঞানের’ প্রতি আমাদের ‘রৌপ্য’ এবং “গুপ্ত ধনের ন্যায়” দৃষ্টিভঙ্গি রাখা দরকার।
৫, ৬. (ক) সময়ের সঙ্গে সঙ্গে কী হতে পারে এবং কীভাবে আমরা তা হওয়া রোধ করতে পারি? (খ) বাইবেলে আমরা যে-জ্ঞানরূপ ধন পেয়েছি, সেটাকে কেন আমরা বাড়িয়ে চলব?
৫ এইরকম দৃষ্টিভঙ্গি অর্জন করা তেমন কঠিন কিছু নয়। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, আপনি যে-“ঈশ্বরবিষয়ক জ্ঞান” শিখেছেন তার মধ্যে সম্ভবত সেই সত্য রয়েছে যে, যিহোবার উদ্দেশ্য হল বিশ্বস্ত মানবজাতি চিরকাল পরমদেশ পৃথিবীতে বেঁচে থাকবে। (গীতসংহিতা ৩৭:২৮, ২৯) কোন সন্দেহ নেই যে, আপনি প্রথম যখন সত্য শিখেছেন, তখন এটাকে এক প্রকৃত ধন হিসেবে দেখেছিলেন, এমন এক জ্ঞান যা আপনার মন ও হৃদয়কে আশা ও আনন্দে ভরিয়ে দিয়েছিল। এখন আপনার অবস্থা সম্বন্ধে কী বলা যায়? সময় গড়িয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ধনের প্রতি আপনার উপলব্ধি কি ম্লান হয়ে গেছে? যদি তা-ই হয়, তা হলে দুটো কাজ করার চেষ্টা করুন। প্রথমে আপনার উপলব্ধিকে পুনরুজ্জীবিত করুন অর্থাৎ নিয়মিত আপনার মনকে সতেজ করুন যে, যিহোবা আপনাকে যে-সত্য শিক্ষা দিয়েছেন, সেগুলোকে কেন আপনি মূল্যবান মনে করেন, এমনকি তা অনেক অনেক বছর আগে শিখলেও।
৬ দ্বিতীয়ত, আপনার ধনকে বাড়িয়ে চলুন। আপনি যদি হঠাৎ কোথাও মাটি খুঁড়ে মূল্যবান কোন রত্ন পেয়ে যান, তা হলে আপনি কি কেবল সেটা পকেটে ভরে নিয়ে সেখান থেকে সন্তুষ্ট হয়ে চলে যাবেন? নাকি সেখানে আরও কিছু আছে কি না, তা দেখার জন্য আরেকটু বেশি জায়গা খুঁড়ে দেখবেন? ঈশ্বরের বাক্য রুপো এবং গুপ্তধনের মতো মূল্যবান সত্যে ভরপুর। আপনি যতই পেয়ে থাকুন না কেন, আরও বেশি পেতে পারেন। (রোমীয় ১১:৩৩) সত্য সম্বন্ধে একটা নতুন বিষয় শেখার পর, নিজেকে জিজ্ঞেস করুন: ‘কী কারণে এটা এক ধন? এটা কি আমাকে যিহোবার ব্যক্তিত্ব বা তাঁর উদ্দেশ্যগুলোর প্রতি আরও গভীর অন্তর্দৃষ্টি দেয়? এটা কি কিছু ব্যবহারিক নির্দেশনা জোগায়, যা আমাকে যীশুর পদচিহ্ন অনুসরণ করতে সাহায্য করতে পারে?’ এই প্রশ্নগুলো নিয়ে ধ্যান করলে তা আপনাকে সেই সত্যগুলোর প্রতি ভালবাসা গড়ে তুলতে সাহায্য করবে, যা যিহোবা আপনাকে শিখিয়েছেন।
আমরা যে-সত্যগুলো শিক্ষা দিই সেগুলোর প্রতি ভালবাসা দেখানো
৭, ৮. কোন্ কোন্ উপায়ে আমরা অন্যদের দেখাতে পারি যে, বাইবেল থেকে আমরা যে-সত্যগুলো শিখেছি সেগুলোকে আমরা ভালবাসি? একটা উদাহরণ দিন।
৭ অন্যদের শিক্ষা দেওয়ার সময় কীভাবে আমরা দেখাতে পারি যে, ঈশ্বরের বাক্যের সত্যগুলোকে আমরা ভালবাসি? যীশুর উদাহরণ অনুসরণ করে, আমরা আমাদের প্রচার ও শিক্ষা দেওয়ার সময় পুরোপুরিভাবে বাইবেলের ওপর নির্ভর করি। সম্প্রতি, সারা পৃথিবীতে ঈশ্বরের লোকেদের উৎসাহ দেওয়া হয়েছে, যেন তারা জনসাধারণ্যে পরিচর্যার সময় বেশি করে বাইবেল ব্যবহার করে। সেই পরামর্শ প্রয়োগ করার সময় এমন সুযোগ খুঁজুন, যাতে গৃহকর্তা বুঝতে পারেন যে বাইবেল থেকে অন্যদের আপনি যা জানাচ্ছেন, তা আপনি নিজেও মূল্যবান বলে মনে করেন।—মথি ১৩:৫২.
৮ উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, গত বছর নিউ ইয়র্কে সন্ত্রাসী হামলার পর একজন খ্রীষ্টান বোন পরিচর্যায় যে-লোকেদের পেয়েছিলেন তাদের সামনে তিনি গীতসংহিতা ৪৬:১, ১১ পদ পড়ছিলেন। তিনি প্রথমে লোকেদের জিজ্ঞেস করেছিলেন যে, এই দুঃখজনক ঘটনার পরিণতির সঙ্গে তারা কীভাবে মোকাবিলা করছে। তিনি মন দিয়ে তাদের উত্তর শুনেছিলেন, তাদের কথার সঙ্গে একমত হয়ে বলেছিলেন: “এই কঠিন সময়ে যে-শাস্ত্রপদটা আমাকে সত্যিই অনেক সান্ত্বনা দিয়েছে, সেটা কি আপনাদেরকে দেখাতে পারি?” কম লোকই প্রত্যাখ্যান করেছিল এবং অনেক চমৎকার আলোচনা শুরু হয়েছিল। যুবক-যুবতীদের সঙ্গে কথা বলার সময় ওই একই বোন প্রায়ই বলেন: “আমি গত ৫০ বছর ধরে বাইবেল শেখাচ্ছি। কখনও এমন কোন সমস্যার মুখোমুখি হইনি, যেটা সমাধান করতে এই বই সাহায্য করতে পারেনি।” আন্তরিকতা ও উদ্যমের সঙ্গে বাইবেল ব্যবহার করে আমরা লোকেদের দেখাই যে, ঈশ্বরের বাক্য থেকে আমরা যা শিখেছি সেগুলোকে আমরা মূল্যবান মনে করি এবং ভালবাসি।—গীতসংহিতা ১১৯:৯৭, ১০৫.
৯, ১০. আমাদের বিশ্বাস সম্বন্ধে উত্তর দেওয়ার সময় বাইবেল ব্যবহার করা কেন গুরুত্বপূর্ণ?
৯ লোকেরা যখন আমাদের বিশ্বাস সম্বন্ধে বিভিন্ন প্রশ্ন জিজ্ঞেস করে, তখন আমাদের দেখানোর এক ভাল সুযোগ থাকে যে আমরা ঈশ্বরের বাক্যকে ভালবাসি। যীশুর উদাহরণ অনুসরণ করে, আমরা কেবল নিজেদের ধারণার ওপর ভিত্তি করে উত্তর দিই না। (হিতোপদেশ ৩:৫, ৬) বরং, উত্তর দেওয়ার সময় আমরা বাইবেল ব্যবহার করি। আপনি কি এই ভেবে ভয় পান যে, কেউ হয়তো এমন একটা প্রশ্ন করবে, যেটার উত্তর আপনি দিতে পারবেন না? সেই ভয় কাটিয়ে উঠতে আপনি দুটো ইতিবাচক পদক্ষেপ বিবেচনা করুন।
১০ প্রস্তুত হওয়ার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করুন। প্রেরিত পিতর লিখেছিলেন: “হৃদয়মধ্যে খ্রীষ্টকে প্রভু বলিয়া পবিত্র করিয়া মান। যে কেহ তোমাদের অন্তরস্থ প্রত্যাশার হেতু জিজ্ঞাসা করে, তাহাকে উত্তর দিতে সর্ব্বদা প্রস্তুত থাক। কিন্তু মৃদুতা ও ভয় [“গভীর সম্মান,” NW] সহকারে উত্তর দিও।” (১ পিতর ৩:১৫) আপনি কি আপনার বিশ্বাসের পক্ষ সমর্থন করার জন্য তৈরি আছেন? উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, কেউ যদি জানতে চায় যে কেন আপনি কিছু অশাস্ত্রীয় রীতিনীতি বা অনুষ্ঠানে অংশ নেন না, তা হলে শুধুমাত্র এই কথা বলবেন না যে, “কারণ এটা আমার ধর্মের বিরুদ্ধে।” এইরকম উত্তর থেকে মনে হতে পারে যে, অন্যরা আপনার ওপর সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিয়েছে এবং আপনি নিশ্চয় কোন কাল্ট এর সদস্য। এর বদলে এই কথা বলা ভাল যে, “ঈশ্বরের বাক্য, বাইবেল এটা করতে নিষেধ করে” অথবা “এটা করলে আমার ঈশ্বর অসন্তুষ্ট হন।” এরপর কেন এমনটা বলেছেন সেই সম্বন্ধে যুক্তিসংগত উত্তর দিন।—রোমীয় ১২:১.
১১. ঈশ্বরের বাক্যের সত্যগুলো সম্বন্ধে প্রশ্নের উত্তর দিতে তৈরি থাকার জন্য গবেষণার কোন্ হাতিয়ার আমাদের সাহায্য করতে পারে?
১১ আপনি যদি মনে করেন যে আপনি প্রস্তুত নন, তা হলে আলোচনার জন্য বাইবেল প্রসঙ্গ পুস্তিকাটা অধ্যয়ন করার জন্য কিছু সময় দিন না কেন?a যে-বিষয়গুলোর ওপর প্রশ্ন উঠতে পারে এমন কয়েকটা বিষয় বাছাই করুন এবং কয়েকটা শাস্ত্রীয় বিষয় মনে রাখুন। আপনার বাইবেল প্রসঙ্গ পুস্তিকা এবং বাইবেল হাতের কাছেই রাখুন। দুটোই ব্যবহার করতে দ্বিধা বোধ করবেন না, ব্যক্তিকে বলুন যে, আপনার কাছে গবেষণার জন্য একটা হাতিয়ার আছে যেটা থেকে আপনি বাইবেলের প্রশ্নগুলোর উত্তর খুঁজে পেতে সাহায্য নিতে চান।
১২. বাইবেলের কোন প্রশ্নের উত্তর যদি আমরা না জানি, তা হলে আমরা হয়তো কীভাবে উত্তর দিতে পারি?
১২ অযথা দুশ্চিন্তা করবেন না। কোন অসিদ্ধ মানুষের কাছে সব প্রশ্নের উত্তর থাকে না। তাই, আপনাকে যদি এমন কোন প্রশ্ন করা হয়, যেটার উত্তর আপনার জানা নেই, তা হলে আপনি এভাবে বলতে পারেন: “এই আগ্রহজনক প্রশ্নটা করার জন্য ধন্যবাদ। সত্যি বলতে কী, আমি উত্তরটা জানি না, তবে আমি নিশ্চিত যে বাইবেলে এই বিষয়টা সম্বন্ধে বলা আছে। আমি বাইবেল নিয়ে কিছু গবেষণা করতে পছন্দ করি, তাই আমি আপনার প্রশ্নটা নিয়ে গবেষণা করব এবং আপনার কাছে ফিরে এসে উত্তর দেব।” এইরকম অকপট, বিনয়ী উত্তর হয়তো আরও আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার পথ প্রস্তুত করবে।—হিতোপদেশ ১১:২.
আমরা যে-লোকেদের শিক্ষা দিই তাদের জন্য ভালবাসা
১৩. আমরা যাদের কাছে প্রচার করি, তাদের সম্বন্ধে কেন আমাদের এক ইতিবাচক মনোভাব রাখা উচিত?
১৩ যীশু যে-লোকেদের শিক্ষা দিয়েছিলেন তাদের প্রতি তিনি ভালবাসা দেখিয়েছিলেন। এই ক্ষেত্রে আমরা কীভাবে তাঁকে অনুকরণ করতে পারি? আমাদের চারপাশের লোকেদের প্রতি আমাদের কখনও উদাসীন মনোভাব গড়ে তোলা উচিত নয়। এটা স্বীকার করতেই হবে যে, ‘সর্ব্বশক্তিমান্ ঈশ্বরের সেই মহাদিনের যুদ্ধ’ যেকোন সময়ের চেয়ে আরও বেশি নিকটবর্তী হচ্ছে এবং মানবজাতির মধ্যে থেকে কোটি কোটি লোক ধ্বংস হয়ে যাবে। (প্রকাশিত বাক্য ১৬:১৪; যিরমিয় ২৫:৩৩) কিন্তু, আমরা জানি না যে, কারা বেঁচে থাকবে এবং কারা মারা যাবে। সেই বিচার ভবিষ্যতের বিষয় এবং তা যিহোবার নিযুক্ত ব্যক্তি, যীশু খ্রীষ্টের মাধ্যমে সম্পন্ন হবে। সেই বিচার না হওয়া পর্যন্ত আমরা প্রত্যেক ব্যক্তিকে এমনভাবে দেখি যে, যিহোবার একজন দাস হওয়ার সম্ভাবনা তার রয়েছে।—মথি ১৯:২৪-২৬; ২৫:৩১-৩৩; প্রেরিত ১৭:৩১.
১৪. (ক) আমরা লোকেদের প্রতি সমবেদনা দেখাই কি না, সেই বিষয়ে নিজেদের কীভাবে পরীক্ষা করতে পারি? (খ) কোন্ বাস্তবসম্মত উপায়গুলোতে আমরা হয়তো অন্যদের প্রতি সমবেদনা এবং ব্যক্তিগত আগ্রহ দেখাতে পারি?
১৪ তাই, যীশুর মতো আমরাও লোকেদের প্রতি সমবেদনা দেখানোর চেষ্টা করি। আমরা হয়তো নিজেদের জিজ্ঞেস করতে পারি: ‘যে-লোকেরা এই জগতের ধর্মীয়, রাজনৈতিক ও বাণিজ্যিক বিষয়গুলোর চাতুর্যপূর্ণ মিথ্যা ও ভ্রান্তির মাধ্যমে প্রবঞ্চিত হয়েছে, তাদের প্রতি কি আমার সহানুভূতি রয়েছে? আমরা যে-বার্তা নিয়ে যাই, তারা যদি এর প্রতি সাড়া না দেয়, তা হলে আমি কি বোঝার চেষ্টা করি যে, কেন তারা এইরকম আচরণ করছে? আমি কি বুঝতে পারি যে, আমি বা অন্যেরা যারা বর্তমানে বিশ্বস্তভাবে যিহোবার সেবা করছে, এক সময় এইরকম বোধ করেছিলাম? আমি কি আমার প্রচারের ধরনকে সেভাবে উপযোগী করেছি? নাকি তাদের আমি এভাবে দেখি যে, তাদের নিয়ে কোন আশাই নেই?’ (প্রকাশিত বাক্য ১২:৯) যখন লোকেরা আমাদের প্রকৃত সমবেদনা বুঝতে পারে, তখন তারা আমাদের বার্তার প্রতি আরও বেশি করে সাড়া দেয়। (১ পিতর ৩:৮) এ ছাড়া সমবেদনা, পরিচর্যায় আমরা যে-লোকেদের দেখা পাই, তাদের প্রতি আরও বেশি আগ্রহ দেখাতে পরিচালিত করে। আমরা হয়তো তাদের প্রশ্ন ও উদ্বেগগুলোর বিষয়ে লিখে নিতে পারি। আমরা যখন ফিরে যাই, তখন আমরা হয়তো তাদের দেখাতে পারি যে, আগের সাক্ষাতে তারা যে-মন্তব্য করেছিল, সেগুলো নিয়ে আমরা চিন্তা করেছি। আর সেই মুহূর্তে যদি তাদের কোন জরুরি দরকার থাকে, তা হলে আমরা কিছু বাস্তবসম্মত সাহায্য দিতে পারি।
১৫. আমাদের কেন লোকেদের মধ্যে ভাল কিছু দেখা উচিত এবং কীভাবে আমরা তা করতে পারি?
১৫ যীশুর মতো আমরাও লোকেদের মধ্যে ভাল কিছু দেখার চেষ্টা করি। সম্ভবত একজন একক মা তার সন্তানদের মানুষ করে তোলার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করছেন। একজন ব্যক্তি তার পরিবারকে চালানোর জন্য কঠোর প্রচেষ্টা করছেন। একজন বয়স্ক ব্যক্তি আধ্যাত্মিক বিষয়গুলোর প্রতি আগ্রহ দেখাচ্ছেন। আমরা কি লোকেদের মধ্যে এই গুণগুলো লক্ষ করি ও এর জন্য তাদের প্রশংসা করি? তা করে, আমরা ও তারা যে-বিষয়গুলোর সঙ্গে একমত, সেগুলোর ওপর জোর দিই আর তা হয়তো রাজ্য সম্বন্ধে সাক্ষ্য দেওয়ার পথ খুলে দিতে পারে।—প্রেরিত ২৬:২, ৩.
প্রেম দেখানোর ক্ষেত্রে নম্রতা জরুরি
১৬. আমরা যাদের কাছে প্রচার করি, তাদের প্রতি মৃদুতা ও সম্মান দেখানো কেন গুরুত্বপূর্ণ?
১৬ যে-লোকেদের আমরা শিক্ষা দিই, তাদের প্রতি প্রেম, বাইবেলের এই বিজ্ঞ সাবধানবাণীতে মন দিতে আমাদের চালিত করবে: “জ্ঞান গর্ব্বি
ত করে, কিন্তু প্রেমই গাঁথিয়া তুলে।” (১ করিন্থীয় ৮:১) যীশুর প্রচুর জ্ঞান ছিল, তবুও তিনি কখনোই অহংকারী ছিলেন না। তাই, আপনি যখন আপনার বিশ্বাসকে অন্যদের কাছে বলেন, তখন তর্ক করা বা নিজেকে শ্রেষ্ঠ দেখানো এড়িয়ে চলুন। আমাদের লক্ষ্য হল, আমরা যে-সত্যগুলোকে এত ভালবাসি সেগুলো লোকেদের হৃদয়ে পৌঁছে দেওয়া ও তাদের আকৃষ্ট করা। (কলসীয় ৪:৬) মনে রাখবেন, পিতর যখন খ্রীষ্টানদের উত্তর দিতে প্রস্তুত থাকতে পরামর্শ দিয়েছিলেন, তখন তিনি এই বিষয়ও মনে করিয়ে দিয়েছিলেন যে, আমাদের “মৃদুতা ও গভীর সম্মান সহকারে” উত্তর দেওয়া উচিত। (১ পিতর ৩:১৫) যদি আমরা মৃদুতা ও সম্মান দেখাই, তা হলে আমরা হয়তো আরও বেশি লোকেদের ঈশ্বরের সেবার প্রতি আকৃষ্ট করতে পারব।
১৭, ১৮. (ক) পরিচারক হিসেবে আমাদের যোগ্যতা সম্বন্ধে সমালোচনা করা হলে এর প্রতি আমাদের কীভাবে সাড়া দেওয়া উচিত? (খ) বাইবেল ছাত্রদের জন্য বাইবেলের প্রাচীন ভাষাগুলোর সম্বন্ধে জ্ঞান নেওয়া অত্যাবশ্যক নয় কেন?
১৭ আমাদের জ্ঞান বা শিক্ষার দ্বারা লোকেদের তাক লাগিয়ে দেওয়ার কোন দরকার নেই। আপনার প্রচারের এলাকার কেউ কেউ যদি নির্দিষ্ট কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি বা খেতাব নেই বলে কারও কথা শুনতে না চান, তা হলে তাদের মনোভাব যেন আপনাকে নিরুৎসাহিত না করে। যীশু তাঁর সময়ের রব্বিদের বিখ্যাত স্কুলে যাননি বলে যে-আপত্তি উঠেছিল, সেটাকে তিনি গ্রাহ্য করেননি; কিংবা তাঁর প্রগাঢ় জ্ঞানের দ্বারা লোকেদের তাক লাগিয়ে দেওয়ার জন্য প্রচলিত ভুল ধারণাগুলোকেও মেনে নেননি।—যোহন ৭:১৫.
১৮ যেকোন স্তরের জাগতিক শিক্ষার চেয়ে বরং নম্রতা এবং প্রেম হল খ্রীষ্টান পরিচারকদের জন্য আরও অনেক অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সর্বমহান শিক্ষক যিহোবা পরিচর্যার জন্য আমাদের যোগ্য করে তোলেন। (২ করিন্থীয় ৩:৫, ৬) আর খ্রীষ্টীয়জগতের কিছু পাদরিরা যা-ই বলুন না কেন, ঈশ্বরের বাক্যের শিক্ষক হয়ে ওঠার জন্য আমাদের বাইবেলের প্রাচীন ভাষাগুলো শেখার দরকার নেই। যিহোবা বাইবেলকে এতটা স্পষ্ট, নির্দিষ্ট ভাষায় লিখতে অনুপ্রাণিত করেছিলেন যে, প্রায় প্রত্যেকেই এর মূল্যবান সত্যগুলো বুঝতে পারে। এমনকি শত শত ভাষায় অনুবাদও করা সত্ত্বেও, ওই সত্যগুলো একই থেকে গেছে। তাই, প্রাচীন ভাষাগুলো সম্বন্ধে জ্ঞান নেওয়া যদিও মাঝে মাঝে উপকারজনক কিন্তু তা একেবারে অত্যাবশ্যক নয়। এ ছাড়া, ভাষা সম্বন্ধে জ্ঞান থাকার অহংকার একজনের সেই বৈশিষ্ট্য উপেক্ষা করার কারণ হতে পারে, যা প্রকৃত খ্রীষ্টানদের জন্য অত্যাবশ্যক আর তা হল শিক্ষা গ্রহণ করার ক্ষমতা।—১ তীমথিয় ৬:৪.
১৯. কোন্ অর্থে আমাদের খ্রীষ্টীয় পরিচর্যা এক সেবা?
১৯ কোন সন্দেহ নেই যে, আমাদের খ্রীষ্টীয় পরিচর্যা হল এমন একটা কাজ, যার জন্য নম্র মনোভাবের দরকার। আমরা নিয়মিত বিরোধিতা, উদাসীনতা ও এমনকি তাড়নার শিকার হই। (যোহন ১৫:২০) কিন্তু, বিশ্বস্তভাবে আমাদের পরিচর্যা সম্পন্ন করে আমরা এক গুরুত্বপূর্ণ সেবা করছি। আমরা যদি এই কাজে নম্রভাবে অন্যদের সেবা করে চলি, তা হলে আমরা লোকেদের প্রতি যীশু যে-প্রেম দেখিয়েছেন, তা অনুকরণ করি। ভেবে দেখুন: একজন মেষতুল্য ব্যক্তির কাছে যাওয়ার জন্য আমাদের যদি এক হাজার উদাসীন বা বিরোধী লোকের কাছে প্রচার করতে হয়, তা হলে সেই চেষ্টা কি সার্থক হবে না? অবশ্যই! তাই, এই কাজ করে চলে, কখনও হাল ছেড়ে না দিয়ে আমরা বিশ্বস্তভাবে সেই মেষতুল্য লোকেদের সেবা করছি, যাদের কাছে এখনও আমরা পৌঁছাতে পারিনি। কোন সন্দেহ নেই, যিহোবা এবং যীশু নিশ্চিতভাবে দেখবেন যাতে করে শেষ আসার আগে এইরকম আরও অনেক মূল্যবান ব্যক্তিদের পাওয়া যায় এবং তাদের সাহায্য করা যায়।—হগয় ২:৭.
২০. কিছু উপায় কী যেখানে আমরা উদাহরণের মাধ্যমে শিক্ষা দিতে পারি?
২০ আমরা যে অন্যদের সেবা করতে চাই সেটা দেখানোর আরেকটা উপায় হল, উদাহরণের মাধ্যমে শিক্ষা দেওয়া। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, আমরা লোকেদের শেখাতে চাই যে, ‘ধন্য [“সুখী,” NW] ঈশ্বর’ যিহোবাকে সেবা করা হল সম্ভাব্য সবচেয়ে উত্তম ও পরিপূর্ণ জীবন। (১ তীমথিয় ১:১১) তারা যখন প্রতিবেশী, সহপাঠী ও সহকর্মীদের প্রতি আমাদের আচরণ লক্ষ করে, তখন তারা কি দেখতে পায় যে, আমরা সুখী ও পরিতৃপ্ত? একইভাবে, আমরা বাইবেল ছাত্রদের শেখাই যে খ্রীষ্টীয় মণ্ডলী হল, বর্তমানের অনুভূতিহীন ও হিংস্র জগতে প্রেমের এক আশ্রয়। আমাদের ছাত্রছাত্রীরা কি সঙ্গে সঙ্গে দেখতে পায় যে, আমরা মণ্ডলীর সকলকে ভালবাসি এবং একে অন্যের সঙ্গে শান্তি বজায় রাখার জন্য অধ্যবসায়ের সঙ্গে কাজ করি?—১ পিতর ৪:৮.
২১, ২২. (ক) আমাদের পরিচর্যা সম্বন্ধে আত্মপরীক্ষা আমাদের কোন্ সুযোগগুলোকে গ্রহণ করতে চালিত করবে? (খ) পরবর্তী প্রহরীদুর্গ এর প্রবন্ধগুলোতে কোন্ বিষয় আলোচনা করা হবে?
২১ মাঝে মাঝে আমাদের পরিচর্যার প্রতি ইচ্ছুক মনোভাব আমাদের আরেকবার নিজেদের পরীক্ষা করে দেখতে চালিত করে। সৎভাবে তা করে অনেকে দেখতে পান যে, তারা পূর্ণ-সময়ের পরিচর্যা গ্রহণ করে বা যেখানে বেশি দরকার সেখানে গিয়ে তাদের সেবাকে বাড়ানোর মতো অবস্থানে আছেন। অন্যেরা তাদের নিজেদের দেশের এলাকায় অভিবাসী ব্যক্তিদের সংখ্যা দিন-দিন বেড়ে চলেছে দেখে তাদের সেবা করার জন্য কোন বিদেশি ভাষা শেখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। আপনার সামনে যদি এইরকম সুযোগ খোলা থাকে, তা হলে মন দিয়ে ও প্রার্থনাপূর্বক বিষয়গুলো ভেবে দেখুন। সেবায় রত এক জীবন প্রচুর আনন্দ, পরিতৃপ্তি এবং মনের শান্তি নিয়ে আসে।—উপদেশক ৫:১২.
২২ সর্বোপরি, আসুন যে-সত্যগুলো আমরা শেখাই, সেগুলোর প্রতি এবং যাদের আমরা শিক্ষা দিই তাদের প্রতি ভালবাসা গড়ে তুলে যীশু খ্রীষ্টকে অনুকরণ করে চলি। এই দুটো ক্ষেত্রে ভালবাসা গড়ে তোলা ও প্রকাশ করা আমাদের খ্রীষ্টের মতো শিক্ষক হওয়ার ভিত্তি স্থাপন করতে সাহায্য করবে। কিন্তু, কীভাবে আমরা সেই ভিত্তি গড়ে তুলতে পারি? পরবর্তী সংখ্যার প্রহরীদুর্গ এর ধারাবাহিক প্রবন্ধগুলো, যীশু শিক্ষা দেওয়ার সময় যে-নির্দিষ্ট পদ্ধতিগুলো ব্যবহার করতেন, সেগুলোর কয়েকটা নিয়ে আলোচনা করবে।
[পাদটীকা]
a যিহোবার সাক্ষিদের দ্বারা প্রকাশিত।
আপনি কীভাবে উত্তর দেবেন?
• একজন শিক্ষক হিসেবে, যীশুর উদাহরণ অনুকরণ করা যে আমাদের জন্য কঠিন নয়, সেই সম্বন্ধে আমাদের কোন্ আশ্বাস রয়েছে?
• কীভাবে আমরা দেখাতে পারি যে, বাইবেল থেকে যে-সত্যগুলো আমরা শিখেছি, সেগুলোকে আমরা ভালবাসি?
• জ্ঞানে বৃদ্ধি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নম্র থাকা কেন গুরুত্বপূর্ণ?
• আমরা যে-লোকেদের শিক্ষা দিতে চাই, তাদের প্রতি ভালবাসা দেখানোর কয়েকটা উপায় কী?
[১৬ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]
প্রস্তুত হওয়ার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করুন
[১৭ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]
যদি ‘ঈশ্বর-বিষয়ক জ্ঞানকে’ আপনি মূল্যবান মনে করেন, তা হলে আপনি কার্যকারীভাবে বাইবেল ব্যবহার করতে পারেন
[১৮ পৃষ্ঠার চিত্র]
লোকেদের কাছে সুসমাচার প্রচার করে আমরা তাদের প্রতি ভালবাসা দেখাই