‘সরলতার পথে’ চলুন
ভাববাদী যিশাইয় ঘোষণা করেছিলেন, “ধার্ম্মিকের . . . মঙ্গল হইবে; কেননা তাহারা আপন আপন ক্রিয়ার ফলভোগ করিবে।” তিনি আরও বলেছিলেন: “ধার্ম্মিকের পথ সরলতায়।” (যিশাইয় ৩:১০; ২৬:৭) এটা স্পষ্ট যে, আমরা যদি কাজ করে ভাল ফল পেতে চাই, তাহলে আমাদের অবশ্যই ঈশ্বরের চোখে যা সঠিক, তা করতে হবে।
কিন্তু, কীভাবে আমরা সরলতার পথে চলতে পারি? এই পথে চলে আমরা কী কী আশীর্বাদ আশা করতে পারি? আর আমরা ঈশ্বরের ধার্মিক মানগুলো মেনে চললে, এর থেকে অন্যেরা কীভাবে উপকৃত হতে পারে? বাইবেলের হিতোপদেশ বইয়ের ১০ অধ্যায়ে প্রাচীন ইস্রায়েলের রাজা শলোমন, ধার্মিক ও দুষ্টের মধ্যে পার্থক্য তুলে ধরার সময় এই প্রশ্নগুলোর উত্তর দেন। এই বিষয়টা তুলে ধরতে গিয়ে তিনি ‘ধার্ম্মিক[দের]’ শব্দগুলো মোট ১৩ বার ব্যবহার করেছেন। এর মধ্যে ১৫ থেকে ৩২ পদেই নয়বার এই শব্দগুলো পাওয়া যায়। তাই, হিতোপদেশ ১০:১৫-৩২ পদ আলোচনা করা উৎসাহজনক হবে।a
শাসন মেনে চলুন
শলোমন ধার্মিকতার গুরুত্ব সম্বন্ধে তুলে ধরেন। তিনি বলেন: “ধনবানের ধনই তাহার দৃঢ় নগর, দরিদ্রদিগের দরিদ্রতাই তাহাদের সর্ব্বনাশ। ধার্ম্মিকের শ্রম জীবনজনক, দুর্জ্জনের উপস্বত্ব পাপজনক।”—হিতোপদেশ ১০:১৫, ১৬.
জীবনে হঠাৎ করে ঘটে যাওয়া দুর্ঘটনার সময় ধন সুরক্ষার কাজ করে, ঠিক যেমন একটা দৃঢ় নগর সেখানকার বাসিন্দাদের কিছু দিক দিয়ে নিরাপত্তা এনে দেয়। আর অপ্রত্যাশিত ঘটনাগুলো ঘটলে দরিদ্রতা ধ্বংসাত্মক হতে পারে। (উপদেশক ৭:১২) কিন্তু, ধন ও দরিদ্রতা এই দুটোর বিপদ সম্বন্ধে জ্ঞানী রাজা ইঙ্গিত করছিলেন। একজন ধনী ব্যক্তির হয়তো তার ধনের ওপরই পূর্ণ আস্থা রাখার ঝোঁক থাকতে পারে, তার দামি দামি জিনিসগুলোকে তিনি “উচ্চ প্রাচীর” বলে মনে করতে পারেন। (হিতোপদেশ ১৮:১১) আর একজন দরিদ্র ব্যক্তি হয়তো এই ভুল ধারণা পোষণ করতে পারে যে, দরিদ্রতার কারণে তার ভবিষ্যৎ একেবারে অন্ধকার। তাই, দুটোই ঈশ্বরের সঙ্গে ভাল নাম গড়ে তুলতে বিফল হয়।
অন্যদিকে, একজন ধার্মিক ব্যক্তি তা সে ধনী হোন বা না হোন, তার সরল কাজ জীবনের পথে নিয়ে যায়। কীভাবে? তার যা আছে তাতেই তিনি সন্তুষ্ট থাকেন। ঈশ্বরের সঙ্গে তার সুন্দর সম্পর্কে, আর্থিক অবস্থাকে তিনি বাধা হতে দেন না। ধনী বা দরিদ্র যা-ই হোন না কেন, একজন ধার্মিক ব্যক্তির জীবনযাপন তার জন্য এখন সুখ নিয়ে আসে এবং ভবিষ্যতে অনন্ত জীবনের আশা এনে দেয়। (ইয়োব ৪২:১০-১৩) দুষ্ট লোক প্রচুর ধন অর্জন করলেও উপকার পায় না। ধনের সুরক্ষা দেওয়ার মূল্যের প্রতি উপলব্ধি না দেখিয়ে এবং ঈশ্বরের ইচ্ছার সঙ্গে মিল না রেখে চলে বরং সে তার ধনকে পাপের জন্য কাজে লাগায়।
ইস্রায়েলের রাজা বলেন, “যে শাসন মানে, সে জীবন-পথে চলে; কিন্তু যে অনুযোগ ত্যাগ করে, সে ভ্রান্ত হয়।” (হিতোপদেশ ১০:১৭) একজন বাইবেল পণ্ডিত পরামর্শ দেন যে, এই পদটাকে দুভাবে বোঝা যায়। একটা হতে পারে, যে ব্যক্তি শাসন মানেন ও ধার্মিকতার পথে চলেন তিনি জীবনের পথে রয়েছেন কিন্তু অন্য দিকে, যে অনুযোগ ত্যাগ করে সে ওই পথ থেকে ভ্রষ্ট হয়। এই পদের মানে এমনও হতে পারে, “যে শাসন মেনে চলে সে [অন্যদেরকে] জীবনের পথ দেখায় [কারণ তার সুন্দর উদাহরণ অন্যদের উপকার করে], কিন্তু যে সংশোধন অগ্রাহ্য করে, সে অন্যদেরকে বিপথে নিয়ে যায়।” (হিতোপদেশ ১০:১৭, নিউ ইন্টারন্যাশনাল ভারসন) তাই, শাসন মেনে চলা ও অনুযোগ ত্যাগ না করা দুটোই কত জরুরি!
দ্বেষ না করে প্রেম করুন
এরপর শলোমন দুই অংশের একটা প্রবাদ বলেন যেটাতে একই ধারণা রয়েছে আর এর দ্বিতীয় অংশ প্রথম অংশটার ওপর জোর দেয়। তিনি বলেন: “যে দ্বেষ ঢাকিয়া রাখে, তাহার ওষ্ঠাধর মিথ্যাবাদী।” যদি কোন ব্যক্তির হৃদয়ে অন্যের প্রতি দ্বেষ থাকে এবং মিষ্টি মিষ্টি কথা বলে বা তোষামোদ করে সেটাকে সে ঢেকে রাখে, তাহলে সে প্রতারক অর্থাৎ তার “ওষ্ঠাধর মিথ্যাবাদী।” এই বিষয়ে জ্ঞানী রাজা আরও বলেন: “যে পরীবাদ রটায়, সে হীনবুদ্ধি।” (হিতোপদেশ ১০:১৮) অন্যের বিরুদ্ধে নিজেদের দ্বেষকে লুকিয়ে না রেখে কিছু ব্যক্তিরা যাকে তারা দ্বেষ করে তার সম্বন্ধে মিথ্যা রটায় বা অবজ্ঞাসূচক কথা ছড়ায়। আর এটা হল বোকামি কারণ অপবাদ সেই ব্যক্তির আসল ব্যক্তিত্বকে বদলে দিতে পারে না। আর যে শোনে সে যদি বুদ্ধিমান হয়, তাহলে সে অপবাদকারীর বিদ্বেষ ভরা মনোভাবটা বুঝতে পারবে এবং সেই ব্যক্তির প্রতি তার সম্মান কমে যাবে। এভাবে যে খারাপ কিছু ছড়ায় সে নিজেকে দুঃখ দেয়।
ধার্মিক কাজ হল, প্রতারণা বা অপবাদ না করা। ইস্রায়েলীয়দেরকে ঈশ্বর বলেছিলেন: “তুমি হৃদয়মধ্যে আপন ভ্রাতাকে ঘৃণা করিও না।” (লেবীয় পুস্তক ১৯:১৭) আর যীশু তাঁর উপদেশ শুনতে আসা লোকেদেরকে পরামর্শ দিয়েছিলেন: “[এমনকি] তোমরা আপন আপন শত্রুদিগকে প্রেম করিও, এবং যাহারা তোমাদিগকে তাড়না করে তাহাদের জন্য প্রার্থনা করিও; যেন তোমরা আপনাদের স্বর্গস্থ পিতার সন্তান হও।” (মথি ৫:৪৪, ৪৫) তাই, আমাদের হৃদয়কে ঘৃণার বদলে প্রেমে ভরে রাখা কতই না উত্তম!
‘ওষ্ঠ দমন করুন’
জিহ্বাকে বশে রাখার প্রয়োজনের ওপর জোর দিয়ে জ্ঞানী রাজা বলেন: “বাক্যের বাহুল্যে অধর্ম্মের অভাব নাই; কিন্তু যে ওষ্ঠ দমন করে, সে বুদ্ধিমান।”—হিতোপদেশ ১০:১৯.
“অজ্ঞান লোক অনেক কথা কহে।” (উপদেশক ১০:১৪) তার মুখ “অজ্ঞানতা উদ্গার করে।” (হিতোপদেশ ১৫:২) তার মানে এই নয় যে, প্রত্যেক বাচাল ব্যক্তিই বোকা। কিন্তু, যে ব্যক্তি অতিরিক্ত কথা বলে সে কত সহজেই না ক্ষতিকর সমালোচনা অথবা গুজব ছড়ানোর এক মাধ্যম হয়ে পড়তে পারে! প্রায়ই বোকার মতো কথা বলার ফলে সুনাম নষ্ট হয়, দুঃখ পেতে হয়, সম্পর্ক খারাপ হয় ও এমনকি শারীরিক দিক দিয়েও ক্ষতি হতে পারে। “বেশি কথার মধ্যে পাপ উপস্থিত।” (হিতোপদেশ ১০:১৯, আ্যন আ্যমেরিকান ট্রান্সলেশন) এছাড়া, যে ব্যক্তি সব ব্যাপারে কথা বলতে চায়, এইরকম ব্যক্তির উপস্থিতি খুবই বিরক্তিকর। তাই, আসুন আমরা যেন অতিরিক্ত কথা না বলি।
মিথ্যা বলা এড়িয়ে চলা ছাড়াও, যে ব্যক্তি তার ওষ্ঠ দমন করেন তিনি বুদ্ধিমান। কিছু বলার আগে তিনি চিন্তা করেন। যিহোবার মানগুলোকে ভালবাসার ও তার সহ মানবদেরকে সাহায্য করার আন্তরিক ইচ্ছার দ্বারা প্রেরণা পেয়ে তিনি অন্যদেরকে কিছু বলার আগে ভেবে দেখেন যে, সেই কথাগুলো তাদের ওপর কেমন প্রভাব ফেলবে। তার কথার মধ্যে প্রেম ও দয়া থাকে। তিনি যা বলেন সেই কথাগুলোকে কীভাবে আগ্রহজনক ও গঠনমূলক করা যায়, তা নিয়ে তিনি গভীরভাবে চিন্তা করেন। তার কথাগুলো “রৌপ্যের ডালিতে সুবর্ণ নাগরঙ্গ ফলের” মতো অর্থাৎ সবসময়ই বিচক্ষণতা ও মর্যাদার সঙ্গে বলা।—হিতোপদেশ ২৫:১১.
“অনেককে প্রতিপালন করে”
শলোমন বলেন, “ধার্ম্মিকের জিহ্বা উৎকৃষ্ট রৌপ্যবৎ, দুষ্টদের অন্তঃকরণ স্বল্পমূল্য।” (হিতোপদেশ ১০:২০) ধার্মিক ব্যক্তি যা বলেন তা খাঁটি, অত্যন্ত উচ্চ মানের, পরিশোধিত রুপোর মতো, যেটাতে কোন খাদ নেই। এটা বিশেষ করে যিহোবার দাসদের প্রতি সত্য যখন তারা ঈশ্বরের বাক্যের জীবন-রক্ষাকারী জ্ঞান অন্যদেরকে জানান। তাদের সর্বমহান শিক্ষক যিহোবা ঈশ্বর তাদেরকে শিক্ষিত করেছেন এবং ‘তাহাদের শিক্ষাগ্রাহীদের জিহ্বা দিয়াছেন, যেন তারা বুঝিতে পারে, কিরূপে ক্লান্ত লোককে বাক্য দ্বারা সুস্থির করিতে হয়।’ (যিশাইয় ৩০:২০; ৫০:৪) সত্যিই, তাদের জিহ্বা যখন অন্যদেরকে বাইবেলের সত্য জানায়, তখন তা উচ্চ মানের রুপোর মতোই হয়। দুষ্ট লোকেদের কুমন্ত্রণার চেয়ে সৎ ব্যক্তিদের জন্য তাদের কথাগুলো কত হাজার গুণ বেশি মূল্যবান! আসুন আমরা ঈশ্বরের রাজ্য ও তাঁর চমৎকার কাজগুলো সম্বন্ধে বলতে তৎপর হই।
ধার্মিক ব্যক্তিরা তাদের আশেপাশের লোকেদের কাছে আশীর্বাদস্বরূপ। শলোমন বলেন, “ধার্ম্মিকের ওষ্ঠাধর অনেককে প্রতিপালন করে, কিন্তু অজ্ঞানেরা বুদ্ধির অভাবে মারা পড়ে।”—হিতোপদেশ ১০:২১
কীভাবে ‘ধার্ম্মিক অনেককে প্রতিপালন করে’? এখানে যে ইব্রীয় শব্দটা ব্যবহার করা হয়েছে এর মানে হল “চরানো।” (হিতোপদেশ ১০:২১, পাদটীকা, NW) এর অর্থ পরিচালনা করা ও সেইসঙ্গে পুষ্টিবিধান করাকে বোঝায়, অনেকটা প্রাচীন কালের মেষপালকদের মতো, যারা তাদের মেষদের যত্ন নিত। (১ শমূয়েল ১৬:১১; গীতসংহিতা ২৩:১-৩; পরমগীত ১:৭) ধার্মিক ব্যক্তি অন্যদেরকে ধার্মিকতার পথে পরিচালিত করে বা নিয়ে যায়, তার কথাবার্তা শ্রোতাদের পুষ্টিবিধান করে। ফলে, তারা আরও সুখী, পরিতৃপ্তিজনক জীবন ও এমনকি অনন্ত জীবনও লাভ করতে পারেন।
কিন্তু, একজন বোকা ব্যক্তির সম্বন্ধে কী বলা যায়? বুদ্ধির অভাব থাকায় কাজের পরিণতি সম্পর্কে তার মধ্যে ভাল উদ্দেশ্য বা চিন্তা কোনটাই দেখা যায় না। এইরকম ব্যক্তি শুধু তার ইচ্ছেখুশি মতো কাজ করে, কাজের পরিণতি সম্বন্ধে ভেবে দেখে না। তাই, তার কাজের জন্য সে শাস্তি ভোগ করে। ধার্মিক ব্যক্তি অন্যদেরকে বাঁচাতে সাহায্য করেন কিন্তু যার বুদ্ধির অভাব রয়েছে, সে এমনকি নিজেকেও বাঁচাতে পারে না।
কুকর্ম পরিহার করুন
একজন ব্যক্তির পছন্দ অপছন্দ দেখে প্রায়ই বোঝা যায় যে তার ব্যক্তিত্ব কেমন। এই বিষয়টা উল্লেখ করে ইস্রায়েলের রাজা বলেন: “কুকর্ম্ম করা অজ্ঞানের আমোদ, আর প্রজ্ঞা বুদ্ধিমানের আমোদ।”—হিতোপদেশ ১০:২৩.
কেউ কেউ কুকর্মকে আমোদ বা খেলার মতো দেখে আর শুধু “মজা” করার জন্য তারা কুকর্ম করে। এইধরনের ব্যক্তিরা যাঁর কাছে সকলকে নিকাশ দিতে হবে সেই ঈশ্বরকে অবজ্ঞা করে এবং নিজেদের অন্যায় কাজের প্রতি তারা অন্ধ হয়ে থাকে। (রোমীয় ১৪:১২) তারা বিকৃত যুক্তি দেখিয়ে এই বলে নিজেদেরকে ভোলায় যে, ঈশ্বর তাদের অন্যায় দেখতে পাচ্ছেন না। তাদের কাজের দ্বারা তারা আসলে বলে: “ঈশ্বর নাই।” (গীতসংহিতা ১৪:১-৩; যিশাইয় ২৯:১৫, ১৬) কত বোকা!
অন্যদিকে, বিচক্ষণ ব্যক্তি জানেন যে কুকর্ম করা কোন খেলা নয়। তিনি জানেন যে এটা ঈশ্বরকে অখুশি করে এবং একজন ব্যক্তির সঙ্গে তাঁর সম্পর্ককে নষ্ট করতে পারে। এইধরনের আচরণ হল বোকামি কারণ এটা লোকেদের আত্ম-সম্মানকে হরণ করে, বিয়ে ভেঙে দেয়, মন ও শরীর উভয়কেই কলুষিত করে এবং আধ্যাত্মিক বিষয়গুলোর প্রতি উপলব্ধি কমিয়ে দেয়। কুকর্মকে পরিহার করলে এবং এক প্রিয় বোনের প্রতি যেমন ভালবাসা গড়ে তুলি তেমনই প্রজ্ঞার জন্য ভালবাসা গড়ে তুললে আমরা বিজ্ঞ।—হিতোপদেশ ৭:৪.
সঠিক ভিত্তিমূলের ওপর গেঁথে তুলুন
একজনের জীবনকে সঠিক ভিত্তিমূলের ওপর গেঁথে তোলার গুরুত্বের ওপর জোর দিয়ে শলোমন বলেন: “দুষ্ট যাহা ভয় করে, তাহার প্রতি তাহাই ঘটিবে; কিন্তু ধার্ম্মিকদের বাসনা সফল হইবে। যখন ঘূর্ণবায়ু বহিয়া যায়, দুষ্ট আর নাই; কিন্তু ধার্ম্মিক নিত্যস্থায়ী ভিত্তিমূলস্বরূপ।”—হিতোপদেশ ১০:২৪, ২৫.
দুষ্ট লোক হয়তো অন্যদের ভয়ের কারণ হতে পারে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেই ভয় তার নিজের ওপরই এসে পড়ে। ভিত্তিমূল ধার্মিক নীতিগুলোর ওপর গেঁথে না ওঠায় সে দুর্বল এক বিল্ডিংয়ের মতো হয়, যেটা বড় কোন ঝড় এলেই ভেঙে পড়ে। সে চাপকে প্রতিরোধ করতে পারে না। অন্যদিকে, ধার্মিক ব্যক্তি এমন একজন ব্যক্তির মতো, যিনি যীশুর কথা অনুযায়ী কাজ করেন। তিনি ‘একজন বুদ্ধিমান লোক . . . যিনি পাষাণের উপরে আপন গৃহ নির্ম্মাণ করিলেন।’ যীশু বলেছিলেন, “পরে বৃষ্টি নামিল, বন্যা আসিল, বায়ু বহিল, এবং সেই গৃহে লাগিল, তথাপি তাহা পড়িল না, কারণ পাষাণের উপরে তাহার ভিত্তিমূল স্থাপিত হইয়াছিল।” (মথি ৭:২৪, ২৫) এইরকমের ব্যক্তি দৃঢ় অর্থাৎ ঈশ্বরের নীতিগুলোর ওপর তার চিন্তা ও কাজগুলোর দৃঢ় ভিত্তি আছে।
দুষ্ট ও ধার্মিক ব্যক্তির মধ্যে আরও পার্থক্য তুলে ধরার আগে জ্ঞানী রাজা সংক্ষিপ্ত অথচ গুরুত্বপূর্ণ এক সাবধানবাণী জানান। তিনি বলেন: “যেমন দন্তের পক্ষে অম্লরস ও চক্ষের পক্ষে ধূম, তেমনি আপন প্রেরণকর্ত্তাদের পক্ষে অলস।” (হিতোপদেশ ১০:২৬) অম্লরস দাঁতের জন্য খুবই ক্ষতিকর। এর মধ্যে যে এসিটিক এসিড রয়েছে তার স্বাদ টক এবং এর ফলে একজনের দাঁত শিরশির করতে পারে। ধোঁয়ার জন্য চোখ জ্বলে ও ব্যথা করে। ঠিক একইভাবে কেউ যদি কাজের জন্য কোন অলস ব্যক্তিকে রাখেন অথবা তাকে দিয়ে কোন কাজ করান, তাহলে সেই ব্যক্তির জন্য সেটা সত্যিই বিরক্তিকর হবে ও আর্থিকভাবে তার অনেক লোকসান হবে।
“সদাপ্রভুর পথ . . . দুর্গ”
ইস্রায়েলের রাজা বলে চলেন: “সদাপ্রভুর ভয় আয়ুবৃদ্ধি করে; কিন্তু দুষ্টদের বৎসর-সংখ্যা হ্রাস পাইবে। ধার্ম্মিকদের প্রত্যাশা আনন্দজনক; কিন্তু দুষ্টদের আশ্বাস বিনাশ পাইবে।”—হিতোপদেশ ১০:২৭, ২৮.
ধার্মিক ব্যক্তি ঈশ্বরীয় ভয়ে চলেন এবং তার চিন্তা, কথা ও কাজগুলোর দ্বারা যিহোবাকে খুশি করতে চান। ঈশ্বর তার জন্য চিন্তা করেন এবং তার ধার্মিক ইচ্ছাগুলোকে পূর্ণ করেন। কিন্তু, দুষ্ট লোক নোংরা জীবনযাপন করে। কখনও মনে হতে পারে যে তার আশাগুলো পূর্ণ হচ্ছে বলে কিন্তু তা আসলে কিছু সময়ের জন্য হয় কারণ হিংসা বা নোংরা জীবনযাপনের জন্য কোন অসুখে পড়ে তার আয়ু কমে যেতে পারে। মারা যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তার সমস্ত আশা নষ্ট হয়ে যায়।—হিতোপদেশ ১১:৭.
শলোমন বলেন, “সদাপ্রভুর [যিহোবার, NW] পথ সিদ্ধের পক্ষে দুর্গ, কিন্তু তাহা অধর্ম্মাচারীদের পক্ষে সর্ব্বনাশ।” (হিতোপদেশ ১০:২৯) যিহোবার পথ বলতে এখানে আমাদের যে পথে চলা উচিত জীবনের সেই পথকে বোঝাচ্ছে না বরং মানুষের সঙ্গে ঈশ্বর যেভাবে ব্যবহার করেন সেটাকে বোঝাচ্ছে। মোশি বলেছিলেন, “তিনি শৈল, তাঁহার কর্ম্ম সিদ্ধ, কেননা তাঁহার সমস্ত পথ ন্যায্য।” (দ্বিতীয় বিবরণ ৩২:৪) ঈশ্বরের ধার্মিক পথগুলোর মানে ধার্মিকদের জন্য নিরাপত্তা এবং দুষ্টদের জন্য সর্বনাশ।
যিহোবা তাঁর লোকদের জন্য কত দৃঢ় দুর্গ বলেই না প্রমাণিত হন! “ধার্ম্মিক লোক কখনও বিচলিত হইবে না; কিন্তু দুষ্টগণ দেশে বাস করিবে না। ধার্ম্মিকের মুখ প্রজ্ঞা-ফলে ফলবান; কিন্তু কুটিল জিহ্বা ছেদন করা যাইবে। ধার্ম্মিকের ওষ্ঠাধর সন্তোষের বিষয় জানে, কিন্তু দুষ্টদের মুখ কুটিলতামাত্র।”—হিতোপদেশ ১০:৩০-৩২.
ধার্মিক ব্যক্তিরা সরলতার পথে চলেন বলে তারা সফল হন এবং অনেক আশীর্বাদ পান। সত্যিই, “সদাপ্রভুর আশীর্ব্বাদই ধনবান করে, এবং তিনি তাহার সহিত মনোদুঃখ দেন না।” (হিতোপদেশ ১০:২২) অতএব, আমরা যেন সবসময় ঈশ্বরের নীতিগুলোর সঙ্গে মিল রেখে কাজ করতে মনকে স্থির করি। এছাড়াও, আসুন আমরা নিজেদের ওষ্ঠকে দমন করি এবং অন্যদেরকে ঈশ্বরের বাক্যের জীবন-রক্ষাকারী সত্য শেখানোর জন্য ও ধার্মিকতার পথে তাদেরকে পরিচালিত করার জন্য আমাদের জিহ্বাকে কাজে লাগাই।
[পাদটীকা]
a হিতোপদেশ ১০:১-১৪ পদের ওপর বিস্তারিত আলোচনার জন্য ২০০১ সালের ১৫ই জুলাই প্রহরীদুর্গ এর ২৪-৭ পৃষ্ঠা দেখুন।
[২৬ পৃষ্ঠার চিত্র]
জিহ্বা “উৎকৃষ্ট রৌপ্যবৎ” হতে পারে