নীতিনিষ্ঠা ন্যায়পরায়ণ ব্যক্তিদের পথ দেখায়
বাইবেল বলে, “মনুষ্য, অবলাজাত সকলে, অল্পায়ু ও উদ্বেগে পরিপূর্ণ।” (ইয়োব ১৪:১) যন্ত্রণা এবং দুঃখকষ্ট মানুষের জীবনে খুবই সাধারণ বিষয় হয়ে উঠেছে বলে মনে হয়। এমনকি রোজকার জীবনও উদ্বেগ এবং অশান্তিপূর্ণ হতে পারে! কষ্টকর পরিস্থিতিগুলোর সময় কোন্ বিষয়টা আমাদেরকে সফলভাবে পথ দেখাবে এবং ঈশ্বরের সামনে এক ধার্মিক মান বজায় রাখতে সাহায্য করবে?
ইয়োব নামে এক ধনী ব্যক্তির কথা বিবেচনা করুন, যিনি প্রায় ৩,৫০০ বছর আগে যেখানে বাস করতেন, তা বর্তমানে আরব দেশ নামে পরিচিত। ঈশ্বর ভয়শীল এই ব্যক্তির ওপর শয়তান কত দুর্দশাই না নিয়ে এসেছিল! তিনি তার সমস্ত পশুপাল হারিয়েছিলেন এবং মৃত্যুতে তার প্রিয় ছেলেমেয়েদের হারানোর কষ্ট ভোগ করেছিলেন। এর পরপরই শয়তান ইয়োবের পা থেকে মাথা পর্যন্ত মারাত্মক ফোঁড়া দিয়ে তার ওপর আঘাত এনেছিল। (ইয়োব ১ ও ২ অধ্যায়) ইয়োবের প্রতি কেন এই দুর্যোগ নেমে এসেছিল, সেই সম্বন্ধে তার কোন ধারণাই ছিল না। তবুও, “ইয়োব আপন ওষ্ঠাধরে পাপ করিলেন না।” (ইয়োব ২:১০) তিনি বলেছিলেন “প্রাণ থাকিতে আমি আপন সিদ্ধতা [“নীতিনিষ্ঠা,” NW] ত্যাগ করিব না।” (ইয়োব ২৭:৫) হ্যাঁ, ইয়োবের নীতিনিষ্ঠা তার পরীক্ষার সময়ে তাকে পথ দেখিয়েছিল।
নীতিনিষ্ঠাকে নৈতিক দৃঢ়তা বা সম্পূর্ণতা হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা হয় এবং ঈশ্বরের দৃষ্টিতে নির্দোষ ও ত্রুটিহীন থাকাকেও বোঝায়। কিন্তু এর মানে এই নয় যে, অসিদ্ধ মানুষ তাদের কথায় ও কাজে একেবারে নিখুঁত হবে, যাদের পক্ষে ঈশ্বরের মানগুলো পুরোপুরি মেনে চলা সম্ভব নয়। এর বদলে মানুষের নীতিনিষ্ঠা বলতে পূর্ণ বা সম্পূর্ণ হৃদয়ে যিহোবা এবং তাঁর ইচ্ছা ও উদ্দেশ্যগুলোর প্রতি ভক্তি থাকাকে বোঝায়। এইধরনের ঈশ্বরীয় ভক্তি, ন্যায়পরায়ণ ব্যক্তিদের সব পরিস্থিতিতে এবং সবসময় পরিচালনা দেয় বা পথ দেখায়। হিতোপদেশ বইয়ের ১১ অধ্যায়ের প্রথম অংশ দেখায় যে, কীভাবে আমাদের নীতিনিষ্ঠা জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে পরিচালনা দিতে পারে ও এর ফলে যে-আশীর্বাদগুলো আসে সেই বিষয়ে নিশ্চয়তা দেয়। তাই আসুন, সেখানে কী লেখা আছে তা অত্যন্ত আগ্রহ নিয়ে দেখি।
নীতিনিষ্ঠা ব্যাবসায় সৎ হতে পরিচালিত করে
সততার নীতির ওপর জোর দিতে গিয়ে, আইনের ভাষার বদলে কাব্যিক ভাষা ব্যবহার করে প্রাচীন ইস্রায়েলের রাজা শলোমন বলেন: “ছলনার নিক্তি সদাপ্রভুর ঘৃণিত; কিন্তু ন্যায্য বাট্খারা তাঁহার তুষ্টিকর।” (হিতোপদেশ ১১:১) যিহোবা চান যেন তাঁর উপাসকরা তাদের ব্যাবসায়িক লেনদেনের ক্ষেত্রে সৎ হয় আর এটা বোঝাতে গিয়ে হিতোপদেশ বইয়ে নিক্তি বা দাঁড়িপাল্লা এবং বাটখারার বিষয়ে যে-চার বার উল্লেখ রয়েছে, তার মধ্যে এটাই হল প্রথমবার।—হিতোপদেশ ১৬:১১; ২০:১০, ২৩.
যারা ছলনার দাঁড়িপাল্লা ব্যবহার করে—বা অসৎ উপায়ে ধনসম্পদ অর্জন করে তাদের সমৃদ্ধি ছলনাদায়ক হতে পারে। অসাধু ব্যাবসা করে আমরা কি ন্যায়-অন্যায় সম্বন্ধে ঈশ্বরের মানকে পরিত্যাগ করতে চাই? আমরা যদি নীতিনিষ্ঠার দ্বারা পরিচালিত হই, তা হলে আমরা তা করব না। আমরা অসততা এড়িয়ে চলি কারণ ন্যায্য বাটখারা এবং সঠিক দাঁড়িপাল্লা সততাকে বোঝায় আর তা যিহোবাকে খুশি করে।
“প্রজ্ঞাই নম্রদিগের সহচরী”
রাজা শলোমন বলে চলেন: “অহঙ্কার আসিলে অপমানও আইসে; কিন্তু প্রজ্ঞাই নম্রদিগের সহচরী।” (হিতোপদেশ ১১:২) অহংকার—তা সেটা গর্ব, অবাধ্যতা বা ঈর্ষার মধ্যে দিয়েই প্রকাশ পেয়ে থাকুক না কেন—লজ্জা নিয়ে আসে। অন্যদিকে, নম্রভাবে আমাদের সীমাবদ্ধতা স্বীকার করা হল প্রজ্ঞার কাজ। এই প্রবাদের সত্যতা সম্বন্ধে শাস্ত্রের উদাহরণগুলো কত সুন্দরভাবে তুলে ধরে!
একজন ঈর্ষাপরায়ণ লেবীয় কোরহ, একদল বিদ্রোহী জনতাকে যিহোবার নিযুক্ত দাস মোশি এবং হারোণের কর্তৃত্বের বিরুদ্ধে উসকে দিয়েছিল। সেই অহংকারী কাজের পরিণতি কী হয়েছিল? ‘পৃথিবী আপন মুখ বিস্তার করিয়া’ কয়েকজন বিদ্রোহীকে ‘গ্রাস করিয়াছিল’ এবং কোরহ সহ অন্যদেরকে আগুন গ্রাস করেছিল। (গণনাপুস্তক ১৬:১-৩, ১৬-৩৫; ২৬:১০; দ্বিতীয় বিবরণ ১১:৬) কত বড় অপমান! উষের কথাও বিবেচনা করুন, যে অহংকারী মনোভাব নিয়ে হাত বাড়িয়ে নিয়ম সিন্দুক ধরেছিল, যাতে সেটা পড়ে না যায়। সে সঙ্গে সঙ্গে মারা গিয়েছিল। (২ শমূয়েল ৬:৩-৮) অহংকারী মনোভাব এড়িয়ে চলা আমাদের জন্য কত জরুরি!
একজন নম্র বা বিনয়ী ব্যক্তি ভুল করলেও অপমানিত হন না। ইয়োব যদিও অনেক দিক দিয়ে ভাল উদাহরণ কিন্তু তিনি অসিদ্ধ ছিলেন। তার ওপর আসা পরীক্ষাগুলো তার কিছু কিছু চিন্তাভাবনায় যে-গুরুতর দোষ ছিল, সেটা প্রকাশ করে দিয়েছিল। তার দোষারোপকারীদের অভিযোগের জবাব দিতে গিয়ে ইয়োব কিছুটা ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েছিলেন। এমনকি তিনি বোঝাতে চেয়েছিলেন যে, ঈশ্বরের চেয়েও তিনি ধার্মিক। (ইয়োব ৩৫:২, ৩) যিহোবা কীভাবে ইয়োবের চিন্তাধারাকে শুধরে দিয়েছিলেন?
পৃথিবী, সমুদ্র, তারায় ভরা আকাশ, পশুপাখি এবং আরও অনেক বিস্ময়কর সৃষ্টি সম্বন্ধে বলে ইয়োবকে যিহোবা শিখিয়েছিলেন যে, ঈশ্বরের মহত্ত্বের তুলনায় মানুষ কত ক্ষুদ্র। (ইয়োব ৩৮-৪১ অধ্যায়) যিহোবা তাঁর কোন কথায়ই প্রকাশ করেনি যে, কেন ইয়োব কষ্টভোগ করছেন। আসলে তা করার দরকারও তাঁর ছিল না। ইয়োব একজন নম্র ব্যক্তি ছিলেন। তিনি নম্রভাবে স্বীকার করেছিলেন যে, তার এবং ঈশ্বরের মধ্যে, তার নিজের অসিদ্ধতা ও দুর্বলতা এবং যিহোবার ধার্মিকতা ও ক্ষমতার মধ্যে বিরাট পার্থক্য রয়েছে। তিনি বলেছিলেন, “আমি আপনাকে ঘৃণা করিতেছি, ধূলায় ও ভস্মে বসিয়া অনুতাপ করিতেছি।” (ইয়োব ৪২:৬) ইয়োবের নীতিনিষ্ঠা তাকে সহজেই সংশোধন মেনে নিতে পরিচালনা দিয়েছিল। আমাদের সম্বন্ধে কী বলা যায়? নীতিনিষ্ঠার দ্বারা পরিচালিত হয়ে আমরা কি যখন প্রয়োজন, তখন সহজেই তিরস্কার বা সংশোধন মেনে নিই?
মোশিও একজন বিনয়ী বা নম্র ব্যক্তি ছিলেন। তিনি যখন অন্যদের সমস্যা মীমাংসা করতে করতে ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলেন তখন তার শ্বশুর যিথ্রো তাকে বাস্তবসম্মত সমাধান বলে দিয়েছিলেন: কিছু কিছু দায়িত্ব অন্যান্য যোগ্য ব্যক্তিদের সঙ্গে ভাগ করে নাও। নিজের সীমাবদ্ধতা বুঝতে পেরে মোশি বুদ্ধির সঙ্গে পরামর্শ মেনে নিয়েছিলেন। (যাত্রাপুস্তক ১৮:১৭-২৬; গণনাপুস্তক ১২:৩) একজন নম্র ব্যক্তি অন্যদের সঙ্গে কর্তৃত্ব ভাগ করে নিতে অনিচ্ছা প্রকাশ করেন না বা এই ভেবে ভয় পান না যে, অন্যান্য যোগ্য ব্যক্তিদের মধ্যে উপযুক্ত দায়িত্বগুলো ভাগ করে দিলে তিনি কিছুটা হলেও তার ক্ষমতা হারাবেন। (গণনাপুস্তক ১১:১৬, ১৭, ২৬-২৯) এর বদলে তাদের আধ্যাত্মিক উন্নতিতে সাহায্য করতে তিনি অত্যন্ত আগ্রহী। (১ তীমথিয় ৪:১৫) আমাদের বেলায়ও কি তা সত্য হওয়া উচিত নয়?
‘নির্দোষ ব্যক্তির পথ সরল’
নীতিনিষ্ঠা যে, ন্যায়পরায়ণ ব্যক্তিদের সবসময় বিপদ বা দুর্দশা থেকে রক্ষা করে না, তা বুঝতে পেরে শলোমন বলেন: “সরলদের সিদ্ধতা [“ন্যায়পরায়ণ ব্যক্তিদের নীতিনিষ্ঠা,” NW] তাহাদিগকে পথ দেখাইবে; কিন্তু বিশ্বাসঘাতকদের বক্রতা তাহাদিগকে নষ্ট করিবে।” (হিতোপদেশ ১১:৩) নীতিনিষ্ঠা আসলেই ন্যায়পরায়ণ ব্যক্তিদের এমনকি কঠিন পরিস্থিতিতেও ঈশ্বরের চোখে যা সঠিক তা করতে পরিচালিত করে এবং শেষে উপকার নিয়ে আসে। ইয়োব তার নীতিনিষ্ঠা ত্যাগ করতে অস্বীকার করেছিলেন এবং যিহোবা “ইয়োবের প্রথম অবস্থা হইতে শেষাবস্থা অধিক আশীর্ব্বাদযুক্ত করিলেন।” (ইয়োব ৪২:১২) যারা বিশ্বাসঘাতকতা করে তারা মনে করে যে, অন্যের ক্ষতি করে তারা ভাল অবস্থায় রয়েছে ও এমনকি কিছু সময়ের জন্য তারা উন্নতি করেছে বলে মনে হয়। কিন্তু আজ হোক বা কাল হোক, নিজেদের প্রতারণা তাদেরকে ধ্বংস করে দেবে।
জ্ঞানী রাজা বলেন, “ক্রোধের দিনে ধন উপকার করে না; কিন্তু ধার্ম্মিকতা মৃত্যু হইতে রক্ষা করে।” (হিতোপদেশ ১১:৪) বস্তুগত ধনসম্পত্তি অর্জনের জন্য পরিশ্রম করা কিন্তু ব্যক্তিগত অধ্যয়ন, প্রার্থনা, সভায় উপস্থিতি ও ক্ষেত্রের পরিচর্যাকে—যে-কাজগুলো ঈশ্বরের প্রতি আমাদের প্রেমকে আরও গভীর করে ও তাঁর প্রতি আমাদের ভক্তিকে আরও শক্তিশালী করে—অবহেলা করা কত বড় বোকামি! যত সম্পদই থাকুক না কেন, তা আসন্ন মহাক্লেশ থেকে আমাদেরকে রক্ষা করতে পারবে না। (মথি ২৪:২১) একমাত্র ন্যায়পরায়ণ ব্যক্তিদের ধার্মিকতা তা করতে পারবে। (প্রকাশিত বাক্য ৭:৯, ১৪) তাই, সফনিয়ের এই অনুরোধে মনোযোগ দিলে আমরা বিজ্ঞের কাজ করব: “সদাপ্রভুর ক্রোধাগ্নি তোমাদের উপরে আসিয়া পড়িল, সদাপ্রভুর ক্রোধের দিন তোমাদের উপরে আসিয়া পড়িল। হে দেশস্থ সমস্ত নম্র লোক, তাঁহার শাসন পালন করিয়াছ যে তোমরা, তোমরা সদাপ্রভুর অন্বেষণ কর, ধর্ম্মের অনুশীলন কর, নম্রতার অনুশীলন কর।” (সফনিয় ২:২, ৩) তাই, এই সময়ের মধ্যে আসুন আমরা ‘আপনার ধনে সদাপ্রভুর সম্মান করাকে’ আমাদের লক্ষ্য করি।—হিতোপদেশ ৩:৯.
ধার্মিকতা অনুধাবন করার মূল্য সম্বন্ধে আরও জোর দিয়ে শলোমন নির্দোষ ব্যক্তি এবং দুষ্ট লোকের পরিণতির বিষয়ে পার্থক্য তুলে ধরেছেন এই বলে: “সিদ্ধের [“নির্দোষ ব্যক্তির,” NW] ধার্ম্মিকতা তাহার পথ সরল করে; কিন্তু দুষ্ট নিজ দুষ্টতায় পতিত হয়। সরলদের [“ন্যায়পরায়ণ ব্যক্তিদের,” NW] ধার্ম্মিকতা তাহাদিগকে উদ্ধার করে; কিন্তু বিশ্বাসঘাতকেরা নিজ নিজ কামনায় ধরা পড়ে। দুষ্ট মরিলে তাহার আশ্বাস নষ্ট হয়; আর অধর্ম্মের প্রত্যাশা বিনাশ পায়। ধার্ম্মিক সঙ্কট হইতে উদ্ধার পায়, আর দুষ্ট তাহার স্থানে উপস্থিত হয়।” (হিতোপদেশ ১১:৫-৮) নির্দোষ ব্যক্তি কখনও তার নিজ পথে হোঁচট খায় না বা নিজ আচরণের ফাঁদে পড়ে না। তার পথ সরল। শেষে ন্যায়পরায়ণ ব্যক্তি দুর্দশা থেকে মুক্ত হয়। দুষ্টদেরকে ক্ষমতাবান বলে মনে হয় কিন্তু তাদের জন্য এইরকম কোন মুক্তিই অপেক্ষা করে না।
“নগরে উল্লাস হয়”
ন্যায়পরায়ণ ব্যক্তির নীতিনিষ্ঠা এবং মন্দ লোকের দুষ্টতা অন্যদের ওপর প্রভাব ফেলে। ইস্রায়েলের রাজা বলেন, “মুখ দ্বারা পাষণ্ড আপন প্রতিবাসীকে নষ্ট করে; কিন্তু জ্ঞান দ্বারা ধার্ম্মিকগণ উদ্ধার পায়।” (হিতোপদেশ ১১:৯) অপবাদ, ক্ষতিকর সমালোচনা, অশ্লীল কথাবার্তা এবং ভিত্তিহীন গল্পগুজব যে অন্যদের ক্ষতি করে, তা কে অস্বীকার করতে পারে? অন্যদিকে একজন ধার্মিক ব্যক্তির কথাবার্তা হল বিশুদ্ধ এবং তিনি সব দিক ভেবে ও চিন্তা করে কথা বলেন। জ্ঞান দ্বারা তিনি উদ্ধার পান কারণ তার দোষারোপকারীরা যে মিথ্যা বলছে, তা দেখানোর জন্য নীতিনিষ্ঠা তাকে প্রয়োজনীয় প্রমাণ তুলে ধরতে সুসজ্জিত করে।
রাজা বলে চলেন, “ধার্ম্মিকদের মঙ্গল হইলে নগরে উল্লাস হয়; দুষ্টদের বিনাশ হইলে আনন্দগান হয়।” (হিতোপদেশ ১১:১০) সাধারণত ধার্মিকরা অন্যের ভালবাসা পান এবং তারা তাদের প্রতিবেশীদের উল্লাসিত অর্থাৎ সুখী ও আনন্দিত করেন। “দুষ্টদের” কেউই পছন্দ করে না। সাধারণত দুষ্টরা মারা গেলে লোকেরা তাদের জন্য শোক করে না। এটা নিশ্চিত যে, যিহোবা যখন ‘দুষ্টদের দেশ হইতে উচ্ছিন্ন করিবেন এবং বিশ্বাসঘাতকেরা তথা হইতে উন্মূলিত হইবে,’ তখন কেউই শোক করবে না। (হিতোপদেশ ২:২১, ২২) এর বদলে তখন আনন্দ হবে কারণ তারা ধ্বংস হয়ে গেছে। কিন্তু আমাদের সম্বন্ধে কী বলা যায়? আমাদের বিবেচনা করে দেখা উচিত যে, আমরা যেভাবে আচরণ করি তা অন্যদের জন্য আনন্দ নিয়ে আসে কি না।
“নগর উন্নত হয়”
এ ছাড়া, সমাজের ওপর ন্যায়পরায়ণ ব্যক্তি এবং দুষ্টদের প্রভাব কত ভিন্ন সেই সম্বন্ধে বলতে গিয়ে শলোমন বলেন, “সরলদিগের [“ন্যায়পরায়ণ ব্যক্তিদের,” NW] আশীর্ব্বাদে নগর উন্নত হয়; কিন্তু দুষ্টদের বাক্যে তাহা উৎপাটিত হয়।”—হিতোপদেশ ১১:১১.
যে-নগরের লোকেরা ন্যায্য কাজ করে, তারা শান্তি বাড়ায় ও মঙ্গল নিয়ে আসে এবং সমাজের লোকেদের গড়ে তোলে। এভাবে একটা নগর উন্নত হয় অর্থাৎ উন্নতি করে চলে। যারা অপবাদ দেয়, আঘাত দেয় এবং আজেবাজে কথা বলে তারা গণ্ডগোল, দুঃখ, অনৈক্য এবং সমস্যার কারণ হয়। আর বিশেষ করে এই ব্যক্তিরা যদি গণমান্য ব্যক্তি হন, তা হলে এইরকম হয়ে থাকে। এইধরনের শহর বিশৃঙ্খলা, কলুষতা এবং নৈতিক ও এমনকি অর্থনৈতিক মন্দা ভোগ করে।
হিতোপদেশ ১১:১১ পদের নীতি যিহোবার লোকেদের বেলায়ও খাটে, যখন তারা নগরতুল্য মণ্ডলীতে একে অপরের সঙ্গে মেলামেশা করেন। যে-মণ্ডলীতে আধ্যাত্মিকমনা ব্যক্তিদের—নীতিনিষ্ঠার দ্বারা পরিচালিত ন্যায়পরায়ণ ব্যক্তিদের—প্রভাব রয়েছে, সেখানে সুখী, সক্রিয় এবং সাহায্যকারী লোকেরা রয়েছে এবং তারা যিহোবার সম্মান নিয়ে আসে। যিহোবা মণ্ডলীর ওপর আশীর্বাদ করেন এবং এটা আধ্যাত্মিক দিক দিয়ে উন্নতি করে চলে। যে-অল্প কিছু ব্যক্তি মাঝেমাঝে অসন্তুষ্ট এবং অপরিতৃপ্ত হয়ে পড়ে এবং বিভিন্ন কাজ যেভাবে করা হয়েছে, সেই সম্বন্ধে দোষ খুঁজে বেড়ায় ও কটু মন্তব্য করে, তারা ‘তিক্ততার মূলের’ মতো যা ছড়িয়ে পড়তে পারে এবং প্রথমে ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি এমন ব্যক্তিদের ওপরও ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। (ইব্রীয় ১২:১৫) এইধরনের ব্যক্তিরা প্রায়ই আরও ক্ষমতা এবং সম্মান চায়। তারা এইরকম গুজব ছড়ায় যে, মণ্ডলীতে বা প্রাচীনদের মধ্যে অবিচার, জাতিগত বিদ্বেষ বা এইরকম কিছু রয়েছে। তাদের কথাবার্তা মণ্ডলীতে আসলেই বিভক্তের সৃষ্টি করতে পারে। আমাদের কি এই ব্যক্তিদের কথা না শোনা এবং শান্তি ও একতা বাড়াতে অবদান রাখতে পারি এমন আধ্যাত্মিক-মনা ব্যক্তি হওয়ার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করা উচিত নয়?
শলোমন আরও বলে চলেন: “যে প্রতিবাসীকে তুচ্ছ করে, সে বুদ্ধিবিহীন; কিন্তু বুদ্ধিমান নীরব হইয়া থাকে। কর্ণেজপ গুপ্ত কথা ব্যক্ত করে; কিন্তু যে আত্মায় বিশ্বস্ত, সে কথা গোপন করে।”—হিতোপদেশ ১১:১২, ১৩.
যার উত্তম বিচার-বিবেচনা নেই বা “বুদ্ধিবিহীন” সে কত বড় ক্ষতি নিয়ে আসে! অপবাদ এবং গালিগালাজ করে সে অসংযত কথা বলে। এইধরনের খারাপ প্রভাব বন্ধ করার জন্য নিযুক্ত প্রাচীনরা তাড়াতাড়ি পদক্ষেপ নেবেন। একজন বিচক্ষণ ব্যক্তি “বুদ্ধিবিহীন” ব্যক্তির মতো নন, তিনি জানেন যে কখন চুপ থাকতে হবে। গোপন কথা ফাঁস না করে তিনি বিষয়টা গোপন রাখেন। অসতর্ক জিহ্বা যে অনেক ক্ষতি করে, তা জানেন বলে একজন বিচক্ষণ ব্যক্তি “আত্মায় বিশ্বস্ত” থাকেন। সহ বিশ্বাসীদের প্রতি তিনি অনুগত থাকেন এবং গোপন বিষয়গুলো ফাঁস করে দেন না, যা কিনা তাদের বিপদে ফেলতে পারে। নীতিনিষ্ঠা রক্ষাকারী এই ব্যক্তিরা মণ্ডলীর জন্য কত বড় আশীর্বাদ!
নির্দোষ ব্যক্তিদের পথে চলার জন্য সাহায্য করতে যিহোবা আমাদের জন্য “বিশ্বস্ত ও বুদ্ধিমান্ দাস” এর নির্দেশনায় প্রস্তুতকৃত প্রচুর আধ্যাত্মিক খাবার জোগান।” (মথি ২৪:৪৫) এ ছাড়া, নগরতুল্য মণ্ডলীর খ্রীষ্টান প্রাচীনদের কাছ থেকে আমরা অনেক ব্যক্তিগত সাহায্য পাই। (ইফিষীয় ৪:১১-১৩) এগুলোর জন্য আমরা সত্যিই কৃতজ্ঞ কারণ “সুমন্ত্রণার অভাবে প্রজালোক পতিত হয়; কিন্তু মন্ত্রি-বাহুল্যে জয় হয়।” (হিতোপদেশ ১১:১৪) যা কিছুই হোক না কেন, আসুন আমরা ‘নিজ সিদ্ধতায় [“নীতিনিষ্ঠায়,” NW] চলিবার’ জন্য দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ হই।—গীতসংহিতা ২৬:১.
[২৬ পৃষ্ঠার ব্লার্ব]
বস্তুগত ধনসম্পত্তি অর্জনের জন্য পরিশ্রম করা অথচ ঐশিক কাজগুলোকে অবহেলা করা কত বড় বোকামি!
[২৪ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]
ইয়োব তার নিজ নীতিনিষ্ঠার দ্বারা পরিচালিত হয়েছিলেন এবং যিহোবা তাকে আশীর্বাদ করেছিলেন
[২৫ পৃষ্ঠার চিত্র]
উষ তার অহংকারী মনোভাবের জন্য মারা গিয়েছিল