ধার্মিকতার বীজ বুনুন, ঈশ্বরের প্রেমপূর্ণ-দয়ার শস্য কাটুন
“যেঅপরের জামিন হয়, সে নিশ্চয় ক্লেশ পায়; কিন্তু যে জামিনের কর্ম্ম ঘৃণা করে, সে নিরাপদ।” (হিতোপদেশ ১১:১৫) এই সংক্ষিপ্ত প্রবাদবাক্য কত দৃঢ়প্রত্যয়ের সঙ্গে দায়িত্বপূর্ণ কাজ করতে উৎসাহ দেয়! দেনা শোধ করতে পারবে না এমন ব্যক্তির পক্ষে সাক্ষর করার মানে বিপদ ডেকে আনা। জামিনের কর্ম—প্রাচীন ইস্রায়েলে কোন চুক্তিতে সাক্ষর করার অঙ্গভঙ্গি—এড়িয়ে চলুন আর টাকাপয়সার ফাঁদে আটকা পড়া থেকে মুক্ত থাকুন।
স্পষ্টত, যে-নীতিটা এখানে প্রযোজ্য তা হল: “মনুষ্য যাহা কিছু বুনে তাহাই কাটিবে।” (গালাতীয় ৬:৭) ভাববাদী হোশেয় বলেছিলেন, “তোমরা আপনাদের জন্য ধার্ম্মিকতার বীজ বপন কর, দয়ানুযায়ী [“প্রেমপূর্ণ-দয়ার,” NW] শস্য কাট।” (হোশেয় ১০:১২) হ্যাঁ, ঈশ্বরের পথে কাজগুলো করে ধার্মিকতার বীজ বুনুন এবং তাঁর প্রেমপূর্ণ-দয়ার শস্য কাটুন। এই নীতিকে বারবার কাজে লাগিয়ে ইস্রায়েলের রাজা শলোমন জোরালোভাবে সঠিক কাজ করতে, ন্যায্য কথা বলতে এবং সঠিক মনোভাব বজায় রাখতে উৎসাহ দেন। তার প্রজ্ঞার বাক্যগুলো গভীরভাবে পরীক্ষা করা সত্যিই নিজেদের জন্য ধার্মিকতার বীজ বুনতে আমাদের উৎসাহ দেয়।—হিতোপদেশ ১১:১৫-৩১.
‘শোভা’ বুনুন, “সম্মান” কাটুন
জ্ঞানী রাজা বলেন, “অনুগ্রহশালিনী [“শোভাময়ী,” NW] স্ত্রী সম্মান ধরিয়া রাখে, আর দুর্দ্দান্তেরা ধন ধরিয়া রাখে।” (হিতোপদেশ ১১:১৬) এই পদ একজন শোভাময়ী স্ত্রী অর্থাৎ “একজন সদয় স্ত্রী” যে-স্থায়ী সম্মান অর্জন করেন সেটার সঙ্গে একজন দুর্দান্ত ব্যক্তি যে-অস্থায়ী ধনলাভ করে এর স্পষ্ট পার্থক্য তুলে ধরে।—আ্যন আ্যমেরিকান ট্রান্সলেশন।
কীভাবে একজন ব্যক্তি এই শোভা অর্জন করতে পারেন, যা সম্মান নিয়ে আসে? শলোমন পরামর্শ দিয়েছিলেন, “তুমি সূক্ষ্ম বুদ্ধি ও পরিণামদর্শিতা রক্ষা কর। তাহাতে সে সকল . . . তোমার কণ্ঠের শোভাস্বরূপ হইবে।” (হিতোপদেশ ৩:২১, ২২) আর গীতরচক ‘একজন রাজার ওষ্ঠাধরে অনুগ্রহ [“শোভা,” NW] সেচিত হইবার’ বিষয়ে বলেছিলেন। (গীতসংহিতা ৪৫:১, ২) হ্যাঁ, সূক্ষ্ম বুদ্ধি, পরিণামদর্শিতা এবং জিহ্বার সঠিক ব্যবহার একজন ব্যক্তির মূল্য ও শোভা বাড়ায়। একজন বুদ্ধিমতী স্ত্রীর ক্ষেত্রে তা অবশ্যই সত্যি। মূর্খ নাবলের স্ত্রী অবীগল হলেন এর একটা উদাহরণ। তিনি “সুবুদ্ধি ও সুবদনা” ছিলেন এবং তার ‘সুবিচারের’ জন্য রাজা দায়ূদ তার প্রশংসা করেছিলেন।—১ শমূয়েল ২৫:৩, ৩৩.
একজন ধার্মিক স্ত্রীলোক যার সত্যিকারের শোভা রয়েছে তিনি অবশ্যই সম্মান পাবেন। অন্যেরা তার সুনাম করবে। তিনি যদি বিবাহিতা হন, তা হলে তার স্বামীর চোখে তিনি নিজের জন্য সম্মান অর্জন করবেন। বস্তুতপক্ষে, তিনি পুরো পরিবারের জন্য সম্মান নিয়ে আসবেন। আর তার এই সম্মান ক্ষণস্থায়ী সম্মান নয়। “প্রচুর ধন অপেক্ষা সুখ্যাতি বরণীয়; রৌপ্য ও সুবর্ণ অপেক্ষা প্রসন্নতা ভাল।” (হিতোপদেশ ২২:১) ঈশ্বরের কাছে তিনি যে-সুনাম অর্জন করেন তার স্থায়ী মূল্য রয়েছে।
কিন্তু একজন দুর্দান্ত অর্থাৎ ‘একজন নির্মম ব্যক্তির’ বেলায় পরিস্থিতি বিপরীত। (হিতোপদেশ ১১:১৬, নিউ ইন্টারন্যাশনাল ভারসন) একজন দুর্দান্ত ব্যক্তি দুষ্ট লোক এবং যিহোবার উপাসকদের শত্রুদের পর্যায়ে পড়ে। (ইয়োব ৬:২৩; ২৭:১৩) এইরকম একজন ব্যক্তি ‘ঈশ্বরকে তাহার সম্মুখে রাখে নাই।’ (গীতসংহিতা ৫৪:৩) নির্দোষ ব্যক্তিকে দমিয়ে রেখে এবং স্বীয় স্বার্থে তাকে কাজে লাগিয়ে এইরকম একজন ব্যক্তি হয়তো “ধূলির ন্যায় রৌপ্য সঞ্চয় করে।” (ইয়োব ২৭:১৬) কিন্তু কালক্রমে, সে হয়তো মারা যায়। (ইয়োব ২৭:১৯) তার সমস্ত ধনদৌলত এবং প্রাপ্তি তার কাছে কোন মূল্যই রাখবে না।—লূক ১২:১৬-২১.
হিতোপদেশ ১১:১৬ পদ কত গুরুত্বপূর্ণ এক শিক্ষাই না দেয়! শোভা ও নিষ্ঠুরতা যে-বিষয়গুলো কাটবে তা আমাদের সামনে অল্প কথায় তুলে ধরে ইস্রায়েলের রাজা আমাদেরকে ধার্মিকতার বীজ বুনতে পরামর্শ দেন।
‘প্রেমপূর্ণ-দয়া’ অনেক পুরস্কার নিয়ে আসে
মানুষের সম্পর্কের ক্ষেত্রে আরও একটা শিক্ষা দিতে গিয়ে শলোমন বলেন: “দয়ালু আপন প্রাণের উপকার করে; কিন্তু নির্দ্দয় আপন মাংসের কন্টক।” (হিতোপদেশ ১১:১৭) একজন পণ্ডিত ব্যক্তি বলেন, “এই প্রবাদবাক্যের সারমর্ম হল যে, অন্যদের প্রতি একজনের আচরণ, তা সে ভাল বা মন্দ যা-ই হোক না কেন, নিজের জন্য অনিচ্ছাকৃত অথবা অপ্রত্যাশিত পরিণাম নিয়ে আসে।” লিসা নামের একজন অল্পবয়সী মেয়ের কথা চিন্তা করুন।a যদিও তার উদ্দেশ্য ভাল কিন্তু তিনি তার কাজে সবসময় দেরি করেন। প্রচার কাজের জন্য অন্যান্য রাজ্য ঘোষণাকারীদের সঙ্গে মিলিত হতে ৩০ মিনিট কিংবা তার বেশি সময় দেরি করা তার কাছে অস্বাভাবিক কিছু নয়। লিসা নিজে কোন উপকার পাচ্ছেন না। অন্যেরা যদি তাদের মূল্যবান সময় নষ্ট হওয়ায় অধৈর্য হয়ে পড়েন এবং তার সঙ্গে কোন জায়গায় যেতে না চান, তা হলে তিনি কি তাদের দোষ দিতে পারেন?
সবকিছু একেবারে নিখুঁত চায় এমন ব্যক্তি অর্থাৎ কোন কিছু করতে গিয়ে কেউ যদি অত্যধিক উচ্চ মান স্থাপন করে, তা হলে সে নিজের প্রতি নিষ্ঠুর হয়। উপনীত হওয়া সম্ভব নয় এমন লক্ষ্যগুলোতে পৌঁছানোর চেষ্টা করে চলে সে নিজেকে এমন এক পরিস্থিতিতে ফেলে, যার ফল হয় ক্লান্তি ও হতাশা। অন্যদিকে, আমরা যখন বাস্তবধর্মী ও যুক্তিসংগত লক্ষ্যগুলো স্থাপন করি, তখন আমরা নিজেরা উপকার লাভ করি। আমরা হয়তো অন্যদের মতো সঙ্গে সঙ্গে বিষয়বস্তুগুলো বুঝতে পারি না। অথবা হয়তো অসুস্থতা বা বার্ধক্য আমাদের ওপর সীমাবদ্ধতা চাপিয়ে দিয়েছে। তাই, আসুন আমরা যেন আমাদের আধ্যাত্মিক উন্নতিতে কখনও অতিরিক্ত আবেগপ্রবণ হয়ে না পড়ি বরং আমাদের সীমাবদ্ধতার মুখোমুখি হওয়ার সময় সবসময় যুক্তিবাদী হই। আমাদের ক্ষমতার মধ্যে আমরা যখন ‘যত্ন [“যথাসাধ্য,” NW] করি,’ তখন আমরা আনন্দিত হই।—২ তীমথিয় ২:১৫; ফিলিপীয় ৪:৫.
একজন ধার্মিক ব্যক্তি কীভাবে নিজে উপকৃত হয় ও নির্দয় ব্যক্তি কীভাবে নিজেকে আঘাত করে তার বিস্তারিত বর্ণনা দিতে গিয়ে জ্ঞানী রাজা বলেন: “দুষ্ট মিথ্যা বেতন উপার্জ্জন করে; কিন্তু যে ধার্ম্মিকতার বীজ বুনে, সে সত্য বেতন পায়। যে ধার্ম্মিকতায় অটল, সে জীবন পায়; কিন্তু যে দুষ্টতার পিছনে দৌড়ে, সে নিজ মৃত্যু ঘটায়। বক্রচিত্তেরা সদাপ্রভুর ঘৃণার পাত্র; কিন্তু যাহারা আপন পথে সিদ্ধ, তাহারা তাঁহার সন্তোষের পাত্র। হস্তে হস্ত দিলেও দুষ্ট অদণ্ডিত থাকিবে না; কিন্তু ধার্ম্মিকদের বংশ রক্ষা পাইবে।”—হিতোপদেশ ১১:১৮-২১.
বিভিন্নভাবে পদগুলো এই মূল বিষয়টার ওপর জোর দেয়: ধার্মিকতার বীজ বুনুন এবং এর আশীর্বাদের শস্য কাটুন। মূল্যহীন কোন কিছু পাওয়ার জন্য দুষ্ট ব্যক্তি হয়তো প্রতারণা অথবা জুয়াখেলার আশ্রয় নিতে পারে। যেহেতু এইধরনের উপার্জন মিথ্যা, তাই সে হয়তো হতাশ হতে পারে। কিন্তু একজন সৎ কর্মী সত্য বেতন পান আর তিনি নিরাপদে থাকেন। ঈশ্বরের অনুমোদন থাকায় সিদ্ধ ব্যক্তির অনন্ত জীবনের আশা রয়েছে। কিন্তু একজন খারাপ ব্যক্তি কীভাবে ক্লেশ পাবে? কুচক্রী প্রতারণার কাজে “হস্তে হস্ত দিলেও” দুষ্ট ব্যক্তি শাস্তি থেকে রেহাই পাবে না। (হিতোপদেশ ২:২১, ২২) ধার্মিকতার বীজ বোনার জন্য কতই না উত্তম এক পরামর্শ!
বিচক্ষণ ব্যক্তির জন্য সত্যিকারের সৌন্দর্য
শলোমন বলে চলেন, “যেমন শূকরের নাসিকায় সুবর্ণের নথ, তেমনি সুবিচার-ত্যাগিনী সুন্দরী স্ত্রী।” (হিতোপদেশ ১১:২২) বাইবেলের সময়ে, নাকের নথ একটা জনপ্রিয় অলংকার ছিল। স্ত্রীর নাক ফুড়িয়ে অথবা নাকের দুটো ফুটোর মাঝখানে ছিদ্র করে সোনার নথ ঢোকানো হতো আর সেটা স্পষ্টভাবে দেখা যেত। এইরকম চমৎকার একটা অলংকার শূকরের নাকে ঢোকানো কতই না অনুপযুক্ত! যার “সুবিচার” নেই এমন বাইরে থেকে দেখতে সুন্দর ব্যক্তির ক্ষেত্রেও একই বিষয় বলা যায়। পুরুষ অথবা নারী যেই হোক না কেন, অলংকার এই ব্যক্তির ক্ষেত্রে শোভা পায় না। এটা অনুপযুক্ত—একটুও আকর্ষণীয় নয়।
এটা ঠিক যে, অন্যেরা আমাদের চেহারাকে কোন্ দৃষ্টিতে দেখে সে বিষয়ে চিন্তা করা স্বাভাবিক। কিন্তু আমাদের চেহারা নিয়ে বা শারীরিক গঠন নিয়ে আমরা কেন এত বেশি উদ্বিগ্ন অথবা অসন্তুষ্ট হব? আমাদের চেহারার অনেক বিষয়ের ওপর আমাদের নিজেদের কোন নিয়ন্ত্রণ নেই। আর দৈহিক চেহারাই সব নয়। এ কথা কি ঠিক নয় যে, যে-লোকেদের আমরা পছন্দ করি এবং যাদের প্রশংসা করি তাদের অধিকাংশই দেখতে খুবই সাধারণ? শারীরিক সৌন্দর্যই সুখের চাবি নয়। যা সত্যিই মূল্যবান তা হল, ভিতরের সৌন্দর্য, যা স্থায়ী ঈশ্বরীয় গুণগুলোর মাধ্যমে আসে। তাই, আমরা যেন বিচক্ষণ হই এবং এই গুণগুলোকে গড়ে তুলি।
“দানশীল ব্যক্তি পরিতৃপ্ত হয়”
রাজা শলোমন বলেন, “ধার্ম্মিকদের মনোভিলাষ কেবল উত্তম, দুষ্টদের প্রত্যাশা ক্রোধমাত্র।” কী করে তা হয় সে বিষয়ে বর্ণনা করতে গিয়ে তিনি আরও বলেন: “কেহ কেহ বিতরণ করিয়া আরও বৃদ্ধি পায়; কেহ কেহ বা ন্যায্য ব্যয় অস্বীকার করিয়া কেবল অভাবে পড়ে।”—হিতোপদেশ ১১:২৩, ২৪.
আমরা যখন ঈশ্বরের বাক্যের জ্ঞান অধ্যবসায়ের সঙ্গে বিতরণ করি অর্থাৎ অন্যদের মনে গেঁথে দিই, নিশ্চিতভাবে তখন আমরা এর “প্রশস্ততা, দীর্ঘতা, উচ্চতা ও গভীরতা” সম্বন্ধে আমাদের নিজেদের বোধগম্যতাকে বাড়াই। (ইফিষীয় ৩:১৮) অন্যদিকে, যে-ব্যক্তি তার জ্ঞানকে কাজে লাগায় না, তার যা আছে সেটাও হারিয়ে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে। হ্যাঁ, “যে অল্প পরিমাণে বীজ বুনে, সে অল্প পরিমাণে শস্যও কাটিবে; আর যে ব্যক্তি আশীর্ব্বাদের সহিত [“প্রচুর,” NW] বীজ বুনে, সে আশীর্ব্বাদের সহিত [“প্রচুর,” NW] শস্যও কাটিবে।”—২ করিন্থীয় ৯:৬.
রাজা বলে চলেন, “দানশীল ব্যক্তি পরিতৃপ্ত হয় [উন্নতি করে], জল-সেচনকারী আপনিও জলে সিক্ত হয়।” (হিতোপদেশ ১১:২৫) সত্য উপাসনাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে আমরা যখন উদারভাবে আমাদের সময় ও বস্তুগত সম্পদ কাজে লাগাই, তখন যিহোবা আমাদের প্রতি খুশি হন। (ইব্রীয় ১৩:১৫, ১৬) তিনি ‘আকাশের দ্বার সকল মুক্ত করিয়া আমাদের প্রতি অপরিমেয় আশীর্ব্বাদ বর্ষণ’ করবেন। (মালাখি ৩:১০) আজকে, তাঁর দাসদের আধ্যাত্মিক উন্নতির দিকে একটু তাকিয়ে দেখুন!
ধার্মিক ও দুষ্টের বিপরীত আকাঙ্ক্ষার আরেকটা উদাহরণ দিয়ে শলোমন বলেন: “যে শস্য আটক করিয়া রাখে, লোকে তাহাকে শাপ দেয়; কিন্তু যে শস্য বিক্রয় করে, তাহার মস্তকে আশীর্ব্বাদ বর্ত্তে।” (হিতোপদেশ ১১:২৬) যখন বাজারে জিনিসপত্রের দাম কম থাকে, সেই সময় বেশি করে জিনিসপত্র কিনে সেগুলোকে জমিয়ে রেখে বাজারে যখন জিনিসপত্রের জোগান কম থাকে, তখন সেগুলো বেশি দামে বিক্রি করা লাভজনক হতে পারে। এমনকি খরচা করা কমিয়ে দেওয়ায় এবং সেগুলোকে জমিয়ে রাখায় হয়তো কিছু উপকার আছে কিন্তু লোকেরা সাধারণত সেটাকে একজন ব্যক্তির স্বার্থপরতা হিসেবেই দেখবে। অন্যদিকে, যে-ব্যক্তি জরুরি অবস্থায় মুনাফা লাভ করা থেকে দূরে থাকেন তিনি লোকেদের অনুগ্রহ লাভ করেন।
যা ভাল অথবা ন্যায্য সবসময় সেটার আকাঙ্ক্ষা করতে আমাদের উৎসাহ দিয়ে ইস্রায়েলের রাজা বলেন: “যে সযত্নে মঙ্গল চেষ্টা করে, সে প্রীতির অন্বেষণ করে; কিন্তু যে অমঙ্গল খুঁজিয়া বেড়ায়, তাহারই প্রতি তাহা ঘটে। যে আপন ধনে নির্ভর করে, সে পতিত হয়; কিন্তু ধার্ম্মিকগণ সতেজ পল্লবের ন্যায় প্রফুল্ল হয়।”—হিতোপদেশ ১১:২৭, ২৮.
ধার্মিক ব্যক্তি অন্যদের প্রাণ লাভ করেন
মূর্খের মতো কাজ করা কত খারাপ পরিণতি নিয়ে আসে তা বর্ণনা করতে গিয়ে শলোমন বলেন: “যে নিজ পরিবারের কন্টক, সে বায়ু অধিকার করে।” (হিতোপদেশ ১১:২৯ক) আখনের অন্যায় কাজ ‘নিজের কন্টক’ হয়েছিল আর তাকে ও তার পরিবারের সদস্যদের পাথর ছুঁড়ে মেরে ফেলা হয়েছিল। (যিহোশূয়ের পুস্তক, ৭ অধ্যায়) আজকে, খ্রীষ্টীয় পরিবারের একজন মস্তক এবং তার পরিবারের অন্যেরা হয়তো অন্যায় কাজে জড়িয়ে পড়তে পারেন, যার ফলে খ্রীষ্টীয় মণ্ডলী থেকে তাদের সমাজচ্যুত করা হয়। ব্যক্তিগতভাবে ঈশ্বরের আজ্ঞাগুলো মেনে চলতে ব্যর্থ হয়ে এবং তার পরিবারের মধ্যে গুরুতর অন্যায়কে প্রশ্রয় দিয়ে একজন ব্যক্তি তার নিজ পরিবারের কন্টক হয়। তাকে এবং তার পরিবারের অন্যান্যদের হয়তো অনুতাপহীন অন্যায়কারী হিসেবে, খ্রীষ্টীয় মেলামেশায় অনুমোদন করা হয় না। (১ করিন্থীয় ৫:১১-১৩) আর সে কী অর্জন করবে? কেবল বায়ু—এমন কিছু যেটার সত্যিকারের সত্তা অথবা মূল্য নেই।
পদটা বলে চলে: “অজ্ঞান বিজ্ঞচিত্তের দাস হয়।” (হিতোপদেশ ১১:২৯খ) যেহেতু একজন মূর্খের ব্যবহারিক প্রজ্ঞা থাকে না, তাই তার ওপর বড় দায়িত্ব দেওয়া যায় না। এ ছাড়া, ব্যক্তিগত বিষয়গুলো ভুলভাবে করা হয়তো কোন না কোন ভাবে তাকে অন্য ব্যক্তির অধীন করবে। এইরকম একজন বোকা ব্যক্তি হয়তো “বিজ্ঞচিত্তের দাস” হয়। তাই এটা স্পষ্ট যে, আমাদের সমস্ত কাজকর্মে উত্তম বিচারবুদ্ধি ও ব্যবহারিক প্রজ্ঞা কাজে লাগানো জরুরি।
জ্ঞানী রাজা আমাদের আশ্বাস দেন, “ধার্ম্মিকের ফল জীবনবৃক্ষ; এবং জ্ঞানবান [অপরদের] প্রাণ লাভ করে।” (হিতোপদেশ ১১:৩০) কীভাবে এটা হয়? কথাবার্তা ও আচরণের দ্বারা একজন ধার্মিক ব্যক্তি অন্যদের কাছে আধ্যাত্মিক পুষ্টি নিয়ে আসেন। তারা যিহোবাকে সেবা করতে উৎসাহ পায় আর পরিশেষে তারা হয়তো সেই জীবন লাভ করতে পারে, যা ঈশ্বর দেবেন।
‘পাপী আরও বেশি প্রতিফল পাইবে’
আগে উল্লেখিত প্রবাদবাক্যগুলো কত প্রত্যয়ের সঙ্গেই না আমাদের ধার্মিকতার বীজ বুনতে উৎসাহ দেয়! “মনুষ্য যাহা কিছু বুনে তাহাই কাটিবে” এই নীতিকে অন্যভাবে প্রয়োগ করে শলোমন বলেন: “দেখ, পৃথিবীতে ধার্ম্মিক প্রতিফল পায়, তবে দুর্জ্জন ও পাপী আরও কত না পাইবে!”—হিতোপদেশ ১১:৩১.
এমনকি যদিও একজন ধার্মিক ব্যক্তি যা সঠিক তা করার চেষ্টা করেন, তবুও কখনও কখনও তিনি ভুল করেন। (উপদেশক ৭:২০) আর তার ভুলগুলোর জন্য তিনি শাসনের মাধ্যমে “প্রতিফল” পাবেন। কিন্তু, যে-দুষ্ট ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে ভুল পথ বেছে নেয় এবং ধার্মিকতার পথে ফিরে আসার কোন চেষ্টা করে না, তার সম্বন্ধে কী বলা যায়? সে কি আরও বড় “প্রতিফল” অর্থাৎ কঠোর শাস্তি পাওয়ার যোগ্য নয়? প্রেরিত পিতর লিখেছিলেন, “ধার্ম্মিকের পরিত্রাণ যদি কষ্টে হয়, তবে ভক্তিহীন ও পাপী কোথায় মুখ দেখাইবে?” (১ পিতর ৪:১৮) তাই, আসুন আমরা সবসময় নিজেদের জন্য ধার্মিকতার বীজ বুনতে দৃঢ়সংকল্প হই।
[পাদটীকা]
a এখানে একটা বিকল্প নাম ব্যবহার করা হয়েছে।
[২৮ পৃষ্ঠার চিত্র]
‘শোভা’ অবিগলের জন্য “সম্মান” নিয়ে এসেছিল
[৩০ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]
‘দুষ্ট মিথ্যা বেতন উপার্জ্জন করে; কিন্তু ধার্ম্মিক সত্য বেতন পায়’
[৩১ পৃষ্ঠার চিত্র]
‘প্রচুর বুনুন, প্রচুর শস্য কাটুন’