ঈশ্বরের প্রতি ভয় “প্রজ্ঞার শাসন”
প্রকৃত প্রজ্ঞা এক বিরাট ভোজের আয়োজন করেছে। এটা “আপন দাসীদিগকে পাঠাইয়াছে, সে নগরের উচ্চতম স্থান হইতে ডাকিয়া বলে, ‘যে অবোধ, সে এই স্থানে আইসুক’; যে বুদ্ধিবিহীন, সে তাহাকে বলে, ‘আইস, আমার ভক্ষ্য দ্রব্য ভোজন কর, আমার মিশ্রিত দ্রাক্ষারস পান কর।’ অবোধদের সঙ্গ ছাড়িয়া জীবন ধারণ কর, সুবিবেচনার পথে চরণ চালাও।”—হিতোপদেশ ৯:১-৬.
প্রজ্ঞার মেজ থেকে ভোজন করা এমন কোনো বিষয়ের দিকে পরিচালিত করে না, যা মন্দ অথবা বেদনাদায়ক। অনুপ্রাণিত হিতোপদেশের মধ্যে পাওয়া ঈশ্বরীয় প্রজ্ঞা মনোযোগ দিয়ে শোনা এবং এর শাসন মেনে নেওয়া কেবল উত্তম ফলই নিয়ে আসে। হিতোপদেশ ১৫:১৬-৩৩ পদে লিপিবদ্ধ প্রজ্ঞার নীতিবাক্যগুলো এর ব্যতিক্রম নয়।a সংক্ষিপ্ত এই নীতিবাক্যগুলোর উপদেশে মনোযোগ দেওয়া আমাদের অল্পতেই সন্তুষ্ট থাকতে, উন্নতি করে চলতে এবং এইরকম জীবনযাপনে আনন্দ উপভোগ করায় সাহায্য করতে পারে। এ ছাড়া, তা করা আমাদের উত্তম সিদ্ধান্তগুলো নিতে সাহায্য করতে এবং জীবনের পথে থাকতে সমর্থ করতে পারে।
যখন অল্পও ভাল
“সদাপ্রভুর ভয়ের সহিত অল্পও ভাল, তবু উদ্বেগের সহিত প্রচুর ধন ভাল নয়,” প্রাচীন ইস্রায়েলের রাজা শলোমন বলেন। (হিতোপদেশ ১৫:১৬) সৃষ্টিকর্তাকে অবজ্ঞা করা এবং বস্তুগত ধনসম্পদের পিছনে ছোটাকে একজন ব্যক্তির জীবনে প্রধান লক্ষ্য করা হল বোকামি। এই ধরনের এক জীবন ক্লান্তিকর প্রচেষ্টা ও প্রচুর উদ্বেগে পরিপূর্ণ। একজন ব্যক্তির পুরো জীবনটাই যে শূন্য ও অর্থহীন হয়েছে, বৃদ্ধ বয়সে এই বিষয়টা উপলব্ধি করা কত লজ্জাজনকই না হবে! “উদ্বেগের” সঙ্গে অনেক ধনসম্পদ সঞ্চয় করা নিশ্চিতভাবেই বিজ্ঞতার কাজ নয়। সন্তুষ্টির রহস্য জানা ও সেই অনুযায়ী জীবনযাপন করা আরও কতই না উত্তম! বস্তুগত ধনসম্পদের মধ্যে নয়, বরং যিহোবার প্রতি ভয় এবং তাঁর সঙ্গে আমাদের সম্পর্কের মধ্যেই অকৃত্রিম সন্তুষ্টি খুঁজে পাওয়া যায়।—১ তীমথিয় ৬:৬-৮.
অঢেল বস্তুগত সম্পদের চেয়ে অন্যদের সঙ্গে উত্তম সম্পর্ক থাকার যে আরও অনেক বেশি মূল্য রয়েছে, সেই বিষয়ে জোর দিয়ে শলোমন বলেন: “প্রণয়ভাবের সহিত শাক ভক্ষণ ভাল, তবু দ্বেষভাবের সহিত পুষ্ট গোরু ভাল নয়।” (হিতোপদেশ ১৫:১৭) হ্যাঁ, সুস্বাদু অনেক ধরনের খাবারের চেয়ে পরিবারের মধ্যে এক প্রেমপূর্ণ পরিবেশ আরও বেশি কাম্য। একক অভিভাবক পরিবারে আয় অনেক সীমিত হতে পারে। অনেক দেশে হয়তো একজন ব্যক্তি কেবল সাধারণ খাবারই জোগাড় করতে সক্ষম হন। কিন্তু, সেই পরিবারই সমৃদ্ধি লাভ করে, যেখানে প্রেম ও স্নেহ রয়েছে।
এমনকি যেখানে সাধারণত প্রেমপূর্ণ পরিবেশ থাকে, সেই পরিবারগুলোর মধ্যেও কঠিন পরিস্থিতি দেখা দিতে পারে। পরিবারের একজন সদস্য হয়তো এমন কিছু বলতে বা করতে পারেন, যা অন্যজনকে অসন্তুষ্ট করে। সেই অসন্তুষ্ট ব্যক্তির কেমন প্রতিক্রিয়া দেখানো উচিত? হিতোপদেশ ১৫:১৮ পদ বলে: “যে ব্যক্তি ক্রোধী, সে বিবাদ উত্তেজিত করে; কিন্তু যে ক্রোধে ধীর, সে বিবাদ ক্ষান্ত করে।” রাগ হয়ে নয় বরং কোমলভাবে দেওয়া উত্তরই সুখশান্তি বৃদ্ধি করে। এই হিতোপদেশটি মণ্ডলীর বিভিন্ন কাজ ও জনসাধারণ্যে পরিচর্যাসহ জীবনের অন্যান্য ক্ষেত্রেও সমভাবে প্রযোজ্য।
যখন ‘এক পথ রাজপথ হয়’
পরের হিতোপদেশটি, যে-ব্যক্তি প্রজ্ঞার প্রতি মনোযোগ দেন না এবং যারা দিয়ে থাকে, তাদের মধ্যে বৈসাদৃশ্য তুলে ধরে। “অলসের পথ কন্টকের বেড়ার ন্যায়,” বিজ্ঞ রাজা বলেন, “কিন্তু সরলদের পথ রাজপথ।”—হিতোপদেশ ১৫:১৯.
কোনো কাজ শুরু করার আগেই একজন অলস ব্যক্তি সকল ধরনের বাধা সম্বন্ধে চিন্তা করেন এবং সেই কাজ শুরু করার ক্ষেত্রে তার ব্যর্থতার পক্ষসমর্থন করার জন্য সেগুলোকে এক অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করেন। অন্যদিকে, সরল ব্যক্তিরা সেইসমস্ত প্রতিবন্ধকতার ব্যাপারে উদ্বিগ্ন হয় না, যেগুলো হয়তো তাদেরকে বাধা দিতে পারে। তারা তাদের কাজে অধ্যবসায়ী এবং তাদের হাতে যে-কাজ রয়েছে, সেটার প্রতি মনোযোগ দিয়ে থাকে। এভাবে তারা কন্টকতুল্য এমন অনেক সমস্যা এড়াতে পারে, যেগুলোর মুখোমুখি তারা হতো যদি কিনা উক্ত বিষয়গুলো তারা অবহেলা করত। তাদের পথ এই অর্থে “রাজপথ” যে, তা অগ্রগতিশীল। তারা তাদের কাজে এগিয়ে চলে আর এর অগ্রগতিতে আনন্দিত হয়।
উদাহরণস্বরূপ, ঈশ্বরের বাক্য সম্বন্ধে সঠিক জ্ঞান লাভ করার এবং পরিপক্বতার দিকে অগ্রসর হওয়ার বিষয়ে বিবেচনা করুন। প্রচেষ্টা অপরিহার্য। একজন ব্যক্তি সহজেই তার সীমিত শিক্ষাগত যোগ্যতা, ভালভাবে পড়তে না পারা অথবা দুর্বল স্মরণশক্তিকে অধ্যবসায়ের সঙ্গে ব্যক্তিগত বাইবেল অধ্যয়ন না করার ক্ষেত্রে এক অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন। এই ধরনের বিষয়গুলোকে জ্ঞান লাভের পথে বাধা হিসেবে চিন্তা না করা কতই না উত্তম! এমনকি সীমিত ক্ষমতা থাকলেও প্রয়োজনে আমরা হয়তো একটি অভিধান ব্যবহার করে, আমাদের পড়ার দক্ষতায় ও যা পড়ছি সেগুলো বোঝার ক্ষেত্রে উন্নতি করার জন্য প্রচেষ্টা করতে পারি। এক ইতিবাচক মনোভাব আমাদের জ্ঞান অর্জন ও আধ্যাত্মিক অগ্রগতি করতে সাহায্য করে।
যখন ‘একজন পিতা আনন্দিত হন’
“জ্ঞানবান পুত্ত্র পিতার আনন্দ জন্মায়,” ইস্রায়েলের রাজা বলেন, “কিন্তু হীনবুদ্ধি লোক মাতাকে তুচ্ছ করে।” (হিতোপদেশ ১৫:২০) সন্তানরা যখন বিজ্ঞতার সঙ্গে কাজ করে, তখন বাবামারা কি আনন্দিত হয় না? এটা ঠিক যে, এই ধরনের উত্তম ফলাফল লাভ করার জন্য বাবামার কাছ থেকে প্রশিক্ষণ ও শাসন প্রয়োজন। (হিতোপদেশ ২২:৬) তা সত্ত্বেও, জ্ঞানবান পুত্র তার বাবামার জন্য কতই না আনন্দের উৎস হয়! কিন্তু, মূর্খ সন্তান তাদের সীমাহীন দুঃখের কারণ হয়।
অন্য আরেকটা ক্ষেত্রে “আনন্দ” শব্দটা ব্যবহার করে বিজ্ঞ রাজা বলেন: “নির্ব্বোধ অজ্ঞানতায় আনন্দ করে, কিন্তু বুদ্ধিমান লোক সরল পথে চলে।” (হিতোপদেশ ১৫:২১) যারা নির্বোধ তারা অর্থহীন হাসিঠাট্টা ও আমোদফূর্তিতে আনন্দ পায়, যা আসলে প্রকৃত পরিতৃপ্তি বা সুখ নিয়ে আসে না। কিন্তু, বুদ্ধিমান বা বিচক্ষণ ব্যক্তি “ঈশ্বরপ্রিয় নয়, বরং বিলাসপ্রিয়” হয়ে ওঠাকে বোকামি হিসেবে দেখে থাকেন। (২ তীমথিয় ৩:১, ৪) ঈশ্বরীয় নীতিগুলোর প্রতি অনুগত থাকা তাকে সরল থাকতে এবং তার পথকে সরল রাখতে সাহায্য করে।
যখন “সে সকল সুস্থির হয়”
ঐশিক নীতিগুলো অনুযায়ী জীবনযাপন করা আমাদের জীবনের অন্যান্য ক্ষেত্রে উপকার নিয়ে আসে। হিতোপদেশ ১৫:২২ পদ বলে: “মন্ত্রণার অভাবে সঙ্কল্প সকল ব্যর্থ হয়; কিন্তু মন্ত্রিরাহুল্যে সে সকল সুস্থির হয়।”
মন্ত্রণার অর্থ ব্যক্তি বিশেষদের মধ্যে একান্তে কিন্তু খোলামেলা ভাববিনিময়। যে-ইব্রীয় শব্দকে “মন্ত্রণা” হিসেবে অনুবাদ করা হয়েছে, তা অন্তরঙ্গ ভাববিনিময়কে ইঙ্গিত করে। মন্ত্রণা বলতে নিছক ওপর ওপর আলোচনার চেয়ে বরং অকৃত্রিম চিন্তাভাবনা ও অনুভূতির বিনিময়কে বোঝায়। স্বামী-স্ত্রী এবং সেইসঙ্গে বাবামা ও সন্তানরা যদি এভাবে খোলাখুলিভাবে ভাববিনিময় করে, তা হলে তাদের মধ্যে শান্তি ও একতা থাকে। কিন্তু, মন্ত্রণার অভাবে পরিবারে হতাশা ও বিভিন্ন সমস্যা আসে।
আমরা যখন গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তগুলো নিই, তখন এই উপদেশে মনোযোগ দেওয়া বিজ্ঞতার কাজ: “মন্ত্রিরাহুল্যে সে সকল সুস্থির হয়।” উদাহরণস্বরূপ, কোনো চিকিৎসা পদ্ধতি বাছাই করার সময়, বিশেষভাবে যদি এর সঙ্গে গুরুতর বিষয়গুলো জড়িত থাকে, তা হলে দুই বা তিনজন চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া কি বিজ্ঞতার কাজ হবে না?
আধ্যাত্মিক বিষয়গুলো দেখাশোনা করার ক্ষেত্রে অনেক মন্ত্রণাকারী থাকার মূল্যকে অবহেলা করা যায় না। প্রাচীনরা যখন একে অন্যের সঙ্গে আলোচনা করে এবং তাদের সম্মিলিত প্রজ্ঞার বাক্যকে কাজে লাগায়, তখন “সে সকল সুস্থির হয়।” অধিকন্তু, নবনিযুক্ত অধ্যক্ষদেরকে তাদের চেয়ে বয়স্ক ও আরও অভিজ্ঞ প্রাচীনদের কাছ থেকে উপদেশ চাওয়ার ব্যাপারে দ্বিধাবোধ করা উচিত নয়, বিশেষভাবে তাদের যে-কাজটার দেখাশোনা করতে হয়, সেটা যদি কঠিন হয়ে থাকে।
যখন “উত্তরে আনন্দ” থাকে
বুদ্ধিপূর্বক কথা বললে কোন উত্তম ফল পাওয়া যায়? “মানুষ আপন মুখের উত্তরে আনন্দ পায়,” ইস্রায়েলের রাজা বলেন, “আর যথাকালে কথিত বাক্য কেমন উত্তম।” (হিতোপদেশ ১৫:২৩) আমাদের উত্তর অথবা উপদেশ যখন কেউ মেনে চলে এবং তা থেকে উত্তম ফলাফল পায়, তখন আমরা কি আনন্দিত হই না? কিন্তু, আমাদের পরামর্শকে কার্যকারী করার জন্য আমাদের অবশ্যই দুটো চাহিদা পূরণ করতে হবে।
প্রথমত, উপদেশের দৃঢ় ভিত্তি হওয়া উচিত ঈশ্বরের বাক্য বাইবেল। (গীতসংহিতা ১১৯:১০৫; ২ তীমথিয় ৩:১৬, ১৭) এরপর, তা অবশ্যই উপযুক্ত সময়ে বলতে হবে। এমনকি অনুপযুক্ত সময়ে বলা সত্য কথাও ক্ষতিকারক হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, কারো কথা শোনার আগেই তাকে উপদেশ দেওয়া বিজ্ঞতার কাজ নয় অথবা তা সাহায্যকারীও নয়। আমাদের পক্ষে “শ্রবণে সত্বর, কথনে ধীর” হওয়া কতই না গুরুত্বপূর্ণ!—যাকোব ১:১৯.
“জীবনের পথ ঊর্দ্ধ্বগামী”
হিতোপদেশ ১৫:২৪ পদ বলে: “বুদ্ধিমানের জন্য জীবনের পথ ঊর্দ্ধ্বগামী, যেন সে অধঃস্থিত পাতাল হইতে সরিয়া যায়।” একজন বুদ্ধিমান ব্যক্তি সেই পথে থাকেন, যা তাকে পাতাল অর্থাৎ মানবজাতির সাধারণ কবর থেকে দূরে রাখে। তিনি বিভিন্ন ধরনের ক্ষতিকর অভ্যাস যেমন, বাছবিচারহীন যৌনসম্পর্ক, মাদকদ্রব্যের অপব্যবহার ও মত্ততা পরিহার করেন—আর এভাবে অকালমৃত্যু এড়িয়ে চলেন। তার পথ তাকে জীবনের দিকে পরিচালিত করে।
এর বিপরীতে, যাদের বুদ্ধির অভাব রয়েছে, তাদের পথ সম্বন্ধে লক্ষ করুন: “সদাপ্রভু অহঙ্কারীদের বাটী উপড়াইয়া ফেলেন, কিন্তু বিধবার সীমা স্থির রাখেন। কুসঙ্কল্প সকল সদাপ্রভুর ঘৃণাস্পদ, কিন্তু মনোহর কথা সকল শুচি। ধনলোভী আপন পরিজনের কন্টক; কিন্তু যে উৎকোচ ঘৃণা করে, সে জীবিত থাকে।”—হিতোপদেশ ১৫:২৫-২৭.
কীভাবে এক সাধারণ ফাঁদ এড়ানো যায় আমাদেরকে তা দেখিয়ে ইস্রায়েলের রাজা বলেন: “ধার্ম্মিকের মন উত্তর করিবার নিমিত্ত চিন্তা করে; কিন্তু দুষ্টদের মুখ হিংসার কথা উদ্গার করে।” (হিতোপদেশ ১৫:২৮) এই হিতোপদেশটি কতই না মূল্যবান! অর্থহীন ও মূর্খতাপূর্ণ কথা উদ্গার করা বা উত্তর দেওয়া কদাচিৎ ভাল ফল নিয়ে আসে। একটা বিষয়ের পিছনে বিভিন্ন পরিস্থিতি ও অন্যদের অনুভূতিসহ যে-কারণগুলো থাকতে পারে সেগুলো বিবেচনা করলে, আমরা সম্ভবত এমন কিছু বলতে চাইব না, যেটার জন্য পরে আমরা অনুশোচনা করতে পারি।
তা হলে ঈশ্বরকে ভয় করার এবং তাঁর শাসন মেনে নেওয়ার উপকার কী? বিজ্ঞ ব্যক্তি উত্তর দেন: “সদাপ্রভু দুষ্টদের হইতে দূরে থাকেন, কিন্তু তিনি ধার্ম্মিকদের প্রার্থনা শুনেন।” (হিতোপদেশ ১৫:২৯) সত্য ঈশ্বর দুষ্টদের নিকটবর্তী নন। “যে ব্যবস্থা শ্রবণ হইতে আপন কর্ণ ফিরাইয়া লয়,” বাইবেল বলে, “তাহার প্রার্থনাও ঘৃণাস্পদ।” (হিতোপদেশ ২৮:৯) যারা ঈশ্বরকে ভয় করে এবং তাঁর দৃষ্টিতে যা সঠিক তা করার জন্য কঠোর প্রচেষ্টা করে, তারা এই পূর্ণ আস্থা নিয়ে নির্দ্বিধায় তাঁর নিকটবর্তী হতে পারে যে, তিনি তাদের প্রার্থনা শুনবেন।
যা “চিত্তকে আনন্দিত করে”
ভাবিয়ে তোলার মতো একটা তুলনা ব্যবহার করে শলোমন বলেন: “চক্ষুর জ্যোতিঃ চিত্তকে আনন্দিত করে, মঙ্গল-সমাচার অস্থি সকল পুষ্ট করে।” (হিতোপদেশ ১৫:৩০) অস্থি “পুষ্ট” হয়, যখন তা মজ্জা দিয়ে পরিপূর্ণ থাকে। এটা পুরো দেহকে শক্তিশালী করে এবং হৃদয়কে আনন্দিত করে। আর হৃদয়ের আনন্দ চোখের জ্যোতিতে প্রতিফলিত হয়। মঙ্গল সমাচারের প্রভাব এইরকমই!
বিশ্বব্যাপী যিহোবার উপাসনা সম্প্রসারণের সমাচার বা রিপোর্টগুলো কি আমাদের কাছে অকৃত্রিম উৎসাহের এক উৎস নয়? বস্তুত, রাজ্যের প্রচার ও শিষ্য তৈরির কাজে যা সম্পাদিত হচ্ছে, সেই সমস্তকিছু জানা আমাদেরকে পরিচর্যায় আরও বেশি অংশ নিতে শক্তিশালী করে। (মথি ২৪:১৪; ২৮:১৯, ২০) যারা যিহোবাকে তাদের ঈশ্বর করে এবং সত্য উপাসনাকে গ্রহণ করে, তাদের অভিজ্ঞতাগুলো আমাদের হৃদয়কে আনন্দে পূর্ণ করে। যেহেতু ‘দূরদেশ হইতে প্রাপ্ত মঙ্গল সংবাদের’ শক্তিশালী প্রভাব রয়েছে, তাই পরিচর্যায় আমরা যতটুকু করি তার সঠিক ও পুঙ্খানুপুঙ্খ রিপোর্ট দেওয়া কতই না গুরুত্বপূর্ণ!—হিতোপদেশ ২৫:২৫.
“সম্মানের অগ্রে নম্রতা থাকে”
বিভিন্ন ধরনের শাসন মেনে নেওয়ার মূল্যের ওপর গুরুত্ব দিয়ে বিজ্ঞ রাজা বলেন: “যাহার কর্ণ জীবনদায়ক অনুযোগ শুনে, সে জ্ঞানীদের মধ্যে অবস্থিতি করিবে। যে শাসন অমান্য করে, সে আপন প্রাণকে তুচ্ছ করে; কিন্তু যে অনুযোগ শুনে, সে বুদ্ধি উপার্জ্জন করে।” (হিতোপদেশ ১৫:৩১, ৩২) অনুযোগ বা শাসন একজন ব্যক্তির হৃদয়ে পৌঁছে এর সমন্বয়সাধন করে এবং ব্যক্তিকে উত্তম বিচারবুদ্ধি প্রদান করে। এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই যে, “বালকের হৃদয়ে” যে-‘অজ্ঞানতা বাঁধা থাকে, শাসন-দণ্ড’ তা দূর করে দেয়! (হিতোপদেশ ২২:১৫) যে-ব্যক্তি শাসন শোনেন, তিনি বুদ্ধি উপার্জন অর্থাৎ সঠিক প্রেরণা লাভ করেন। অন্যদিকে, শাসন পরিহার করা হল জীবনকে প্রত্যাখ্যান করা।
বস্তুত, প্রজ্ঞার শাসনকে সানন্দে স্বীকার করা এবং তা নম্রভাবে মেনে নেওয়া উপকারজনক। তা করা শুধুমাত্র সন্তুষ্টি, অগ্রগতি, আনন্দ ও কোনোকিছু সম্পাদন করার দিকেই পরিচালিত করে না বরং সেইসঙ্গে গৌরব বা সম্মান ও জীবনের দিকেও পরিচালিত করে। হিতোপদেশ ১৫:৩৩ পদ এই বলে শেষ হয়: “সদাপ্রভুর ভয় প্রজ্ঞার শাসন, আর সম্মানের অগ্রে নম্রতা থাকে।”
[পাদটীকা]
a হিতোপদেশ ১৫:১-১৫ পদ সম্বন্ধে বিস্তারিত আলোচনার জন্য ২০০৬ সালের ১লা জুলাই প্রহরীদুর্গ পত্রিকার ১৩-১৬ পৃষ্ঠা দেখুন।
[১৭ পৃষ্ঠার চিত্র]
সুস্বাদু অনেক ধরনের খাবারের চেয়ে পরিবারের মধ্যে এক প্রেমপূর্ণ পরিবেশ আরও বেশি কাম্য
[১৮ পৃষ্ঠার চিত্র]
এমনকি আমাদের সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও, এক ইতিবাচক মনোভাব আমাদের জ্ঞান অর্জন করতে সাহায্য করে
[১৯ পৃষ্ঠার চিত্র]
মন্ত্রণা বলতে অকৃত্রিম চিন্তাভাবনা ও অনুভূতির বিনিময়কে বোঝায়
[২০ পৃষ্ঠার চিত্র]
আপনি কি জানেন যে, কীভাবে “মঙ্গল-সমাচার অস্থি সকল পুষ্ট করে”?