ঈশ্বরের বাক্য পড়ুন ও সত্যে তাঁর সেবা করুন
“হে সদাপ্রভু, তোমার পথ আমাকে শিক্ষা দেও, আমি তোমার সত্যে চলিব।”—গীতসংহিতা ৮৬:১১.
১. মূলত এই পত্রিকার প্রথম সংখ্যাটি সত্য সম্বন্ধে কী বলেছিল?
যিহোবা দীপ্তি ও সত্য প্রেরণ করেন। (গীতসংহিতা ৪৩:৩) এছাড়াও তিনি আমাদের তাঁর বাক্য, বাইবেল পাঠ করা ও সত্য শিক্ষা করার ক্ষমতাও প্রদান করেন। এই পত্রিকার প্রথম সংখ্যাটি—১৮৭৯ সালের জুলাই—জানিয়েছিল: “সত্য, জীবনের প্রান্তরে একটি নির্মল ছোট ফুলের মত, যা ভুলের আগাছার প্রাচুর্যপূর্ণ বৃদ্ধির দ্বারা পরিবৃত ও প্রায় আঘাতপ্রাপ্ত। যদি আপনি এটিকে খুঁজতে চান, আপনাকে অবশ্যই তার সন্ধান করতে হবে। আপনি যদি এর সৌন্দর্য দেখতে চান, আপনাকে অবশ্যই ভুলের আগাছাগুলিকে, গোঁড়ামির কাঁটাঝোপগুলিকে একপাশে সরিয়ে দিতে হবে। যদি আপনি এর অধিকারী হতে চান, এটি পেতে অবশ্যই আপনাকে এর বশ্যতাস্বীকার করতে হবে। সত্যের একটি ফুলে সন্তুষ্ট হবেন না। যদি একটিই যথেষ্ট হত তাহলে আরও বেশির প্রয়োজন হত না। এটি সংগ্রহ করতে থাকুন, আরও বেশির জন্য অন্বেষণ করুন।” পাঠ ও অধ্যয়ন করা আমাদের সক্ষম করে সঠিক জ্ঞান অর্জন করতে ও তাঁর সত্যে চলতে।—গীতসংহিতা ৮৬:১১.
২. প্রাচীন যিরূশালেমে যিহূদীদের কাছে যখন ইষ্রা ও অন্যান্যেরা ঈশ্বরের ব্যবস্থা পাঠ করেছিল, তার ফল কী হয়েছিল?
২ সা.শ.পূ. ৪৫৫ সালে যিরূশালেমের প্রাচীর পুনর্নির্মাণ হওয়ার পর অধ্যাপক ইষ্রা ও অন্যান্যেরা ঈশ্বরের ব্যবস্থা যিহূদীদের কাছে পাঠ করেন। এটি অনুসৃত হয়েছিল আনন্দপূর্ণ কুটীরপর্ব পালন, পাপ স্বীকার দ্বারা ও সমাপ্ত হয়েছিল এক “নিশ্চিত নিয়ম” দিয়ে। (নহিমিয় ৮:১–৯:৩৮) আমরা পড়ি: “তাহারা স্পষ্ট উচ্চারণপূর্ব্বক সেই পুস্তক, ঈশ্বরের ব্যবস্থা, পাঠ করিল, এবং তাহার অর্থ করিয়া লোকদিগকে পাঠ বুঝাইয়া দিল।” (নহিমিয় ৮:৮) কিছুজন প্রস্তাব করেন যে যিহূদীরা ইব্রীয় ভালভাবে বুঝত না এবং তাই অরামিক ভাষায় শব্দান্তরিত করা হত। কিন্তু এটি কেবলমাত্র ভাষাতাত্ত্বিক পরিভাষার সরলীকরণ ছিল না। ইষ্রা ও অন্যান্যেরা ব্যবস্থার অর্থপ্রকাশ করতেন যেন লোকেরা এর নীতিগুলি আয়ত্ত করতে ও সেগুলি কাজে লাগাতে পারে। খ্রীষ্টীয় প্রকাশনা ও সভাগুলিও ঈশ্বরের বাক্যের ‘অর্থ’ প্রকাশ করার ভূমিকা পালন করে। নিযুক্ত প্রাচীনেরাও তা করেন যারা “শিক্ষাদানে নিপুণ।”—১ তীমথিয় ৩:১, ২; ২ তীমথিয় ২:২৪.
স্থায়ী উপকারগুলি
৩. কিছু উপকারগুলি কী যা বাইবেল পাঠ থেকে সঞ্চয় করা যায়?
৩ যখন খ্রীষ্টীয় পরিবারগুলি একসাথে বাইবেল পাঠ করে, সম্ভবত তারা স্থায়ী উপকারগুলি উপভোগ করে। তারা ঈশ্বরের নিয়মগুলির সাথে পরিচিত হয় এবং মতবাদ, ভবিষ্যদ্বাণী ও অন্যান্য বিষয়গুলি সম্বন্ধীয় সত্য শিক্ষা করে। বাইবেলের একটি অংশ পাঠ করার পরে, গৃহের মস্তক হয়ত জিজ্ঞাসা করতে পারেন: কিভাবে এটি আমাদের প্রভাবিত করা উচিত? কিভাবে এটি অন্য বাইবেল শিক্ষাগুলির সাথে সম্বন্ধযুক্ত? সুসমাচার প্রচারের ক্ষেত্রে আমরা কিভাবে এই বিষয়গুলিকে ব্যবহার করতে পারি? একটি পরিবার আরও অতিরিক্ত অন্তর্দৃষ্টি লাভ করতে পারে যদি বাইবেল পাঠ করার সময় তারা ওয়াচ টাওয়ার পাবলিকেশন ইনডেক্স অথবা অন্যান্য ইনডেক্স ব্যবহার করে গবেষণা করে। উপকারের জন্য শাস্ত্রের প্রতি অন্তর্দৃষ্টি (ইংরাজি) বইটির দুটি খণ্ড পরামর্শ করা যেতে পারে।
৪. যিহোশূয়ের পুস্তক ১:৮ পদে লিপিবদ্ধ বিবরণ অনুসারে কিভাবে যিহোশূয়কে নির্দেশটি প্রয়োগ করতে হয়েছিল?
৪ শাস্ত্র থেকে নিহিত নীতিগুলি আমাদের জীবনকে পরিচালিত করতে পারে। এছাড়াও, তা পাঠ ও অধ্যয়ন করার দ্বারা ‘পবিত্র শাস্ত্রকলাপ আমাদের পরিত্রাণের নিমিত্ত জ্ঞানবান্ করিতে পারে।’ (২ তীমথিয় ৩:১৫) যদি ঈশ্বরের বাক্যকে আমরা আমাদের পরিচালক হতে দিই, আমরা তাঁর সত্যে চলতে থাকব এবং আমাদের ধার্মিক ইচ্ছাগুলি উপলব্ধ হবে। (গীতসংহিতা ২৬:৩; ১১৯:১৩০) কিন্তু, আমাদের বোধগম্যতার অন্বেষণ করা প্রয়োজন যেমন মোশির উত্তরাধিকারী যিহোশূয় করেছিলেন। “ব্যবস্থা পুস্তক” তার মুখ থেকে বিচলিত হয়নি এবং তিনি দিবারাত্র তা পাঠ করেছিলেন। (যিহোশূয় পুস্তক ১:৮) “ব্যবস্থা পুস্তক” তার মুখ থেকে বিচলিত না হওয়ার অর্থ এটি যে জ্ঞানালোকপ্রাপ্ত বিষয় সম্বন্ধে বলে, যিহোশূয় তা অন্যদের জানানো পরিত্যাগ করেননি। ব্যবস্থা দিবারাত্র পাঠ করার অর্থ যিহোশূয় এটির উপর ধ্যান করেছিলেন, এটি অধ্যয়ন করেছিলেন। অনুরূপভাবে, প্রেরিত পৌল তীমথিয়কে উৎসাহিত করেছিলেন “চিন্তা কর”—ধ্যান কর—আচরণ, পরিচর্যা ও শিক্ষার বিষয়ে। এক খ্রীষ্টীয় প্রাচীন হিসাবে তীমথিয়ের বিশেষভাবে সতর্ক হওয়ার প্রয়োজন ছিল যেন তার জীবন উদাহরণযোগ্য হয় এবং যেন তিনি শাস্ত্রীয় সত্য শেখাতে পারেন।—১ তীমথিয় ৪:১৫.
৫. যদি আমরা ঈশ্বরের সত্য খুঁজি তাহলে কিসের প্রয়োজন?
৫ ঈশ্বরের সত্য এক অমূল্য সম্পদ। এটি খুঁজে পাওয়ার জন্য খনন করা, অনবরত শাস্ত্রকে অনুসন্ধান করা প্রয়োজন। একমাত্র মহান্ নির্দেশদাতার কাছে শিশুতুল্য ছাত্র হওয়ার দ্বারা আমরা প্রজ্ঞা অর্জন করতে ও যিহোবা বিষয়ক শ্রদ্ধাযুক্ত ভয় সম্বন্ধে বুঝতে পারি। (হিতোপদেশ ১:৭; যিশাইয় ৩০:২০, ২১) অবশ্যই, শাস্ত্র অনুযায়ী আমাদের নিজেদের তা প্রমাণ করা উচিত। (১ পিতর ২:১, ২) বিরয়ার যিহূদীদের সম্বন্ধে বলা হয় “থিষলনীকীর যিহূদীদের অপেক্ষা ইহারা ভদ্র ছিল; কেননা ইহারা সম্পূর্ণ আগ্রহপূর্ব্বক বাক্য গ্রহণ করিল, আর এ সকল [পৌল দ্বারা কথিত] বাস্তবিকই এইরূপ কি না তাহা জানিবার জন্য প্রতিদিন শাস্ত্র পরীক্ষা করিতে লাগিল।” তিনি বিরয়াবাসীদের এই বিষয় করার জন্য প্রশংসা করেছিলেন, তিরস্কার নয়।—প্রেরিত ১৭:১০, ১১.
৬. কেন যীশু কিছু নির্দিষ্ট যিহূদীদের জন্য ইঙ্গিত করেছিলেন যে তাদের জন্য শাস্ত্রের অনুসন্ধান উত্তম নয়?
৬ যীশু কিছু নির্দিষ্ট যিহূদীদের বলেছিলেন: “তোমরা শাস্ত্র অনুসন্ধান করিয়া থাক, কারণ তোমরা মনে করিয়া থাক যে, তাহাতেই তোমাদের অনন্ত জীবন রহিয়াছে; আর তাহাই আমার বিষয়ে সাক্ষ্য দেয়; আর তোমরা জীবন পাইবার নিমিত্ত আমার নিকটে আসিতে ইচ্ছা কর না।” (যোহন ৫:৩৯, ৪০) তারা শাস্ত্র অনুসন্ধান করেছিল সঠিক ধারণা নিয়ে—যে তা তাদের জীবনকে পরিচালিত করবে। অবশ্যই, শাস্ত্র অন্তর্ভুক্ত করে মশীহ সম্বন্ধীয় ভবিষ্যদ্বাণীগুলিকে যা যীশুকে জীবনের প্রবন্ধক হিসাবে নির্দেশ করে। কিন্তু যিহূদীরা তাঁকে প্রত্যাখ্যান করে। সুতরাং শাস্ত্রের অনুসন্ধান তাদের জন্য উত্তম কিছু সাধন করতে পারেনি।
৭. বাইবেলের বোধগম্যতায় বৃদ্ধি পেতে কিসের প্রয়োজন এবং কেন?
৭ বাইবেল সম্বন্ধে আমাদের বোধগম্যতা বৃদ্ধি করতে, আমাদের ঈশ্বরের আত্মা অথবা কার্যকারী শক্তির পরিচালনার প্রয়োজন। “আত্মা সকলই অনুসন্ধান করেন, ঈশ্বরের গভীর বিষয় সকলও অনুসন্ধান করেন” যেন সেগুলির অর্থ প্রকাশিত হয়। (১ করিন্থীয় ২:১০) থিষলনীকীয়ের খ্রীষ্টানেরা, যে কোন ভবিষ্যদ্বাণী শুনত তারা ‘সর্ব্ববিষয়ের পরীক্ষা করত।’ (১ থিষলনীকীয় ৫:২০, ২১) যখন পৌল থিষলনীকীয়দের লিখেছিলেন (সা.শ. ৫০ সালের কাছাকাছি সময়ে), গ্রীক শাস্ত্রের একমাত্র অংশ মথি লিখিত সুসমাচার ইতিমধ্যেই লেখা হয়েছিল। সুতরাং থিষলনীকীয় ও বিরয়াবাসীরা সর্ববিষয়ে পরীক্ষা করতে পেরেছিল সম্ভবত ইব্রীয় শাস্ত্রের গ্রীক সেপ্টুয়াজেন্ট ভারসন থেকে অনুসন্ধান করে। তাদের প্রয়োজন হয়েছিল শাস্ত্র পাঠ ও অধ্যয়ন করার এবং আমাদের ক্ষেত্রেও তা প্রযোজ্য।
প্রত্যেকের জন্য জরুরি
৮. কেন নিযুক্ত প্রাচীনদের বাইবেলের জ্ঞানে উৎকৃষ্ট হওয়া উচিত?
৮ মনোনীত প্রাচীনদের বাইবেলের জ্ঞানে উৎকৃষ্টতর হওয়া উচিত। তারা অবশ্যই “শিক্ষাদানে নিপুণ” হবেন ও ‘বিশ্বসনীয় বাক্য ধরিয়া থাকিবেন।’ অধ্যক্ষ তীমথিয় ছিলেন এমন একজন যিনি ‘সত্যের বাক্য যথার্থ রূপে ব্যবহার করিতে জানতেন।’ (১ তীমথিয় ৩:২; তীত ১:৯; ২ তীমথিয় ২:১৫) তার মা উনীকী ও মতামহী লোয়ী তাকে শিশুকাল থেকে পবিত্র শাস্ত্রকলাপ শিখিয়েছিলেন, তার মধ্যে ‘অকল্পিত বিশ্বাস’ অনুপ্রবেশ করিয়েছিলেন, যদিও তার পিতা ছিলেন একজন অবিশ্বাসী। (২ তীমথিয় ১:৫; ৩:১৫) বিশ্বাসী পিতারা তাদের সন্তানদের “প্রভুর শাসনে ও চেতনা প্রদানে,” মানুষ করে তুলবেন আর বিশেষভাবে সেই সমস্ত প্রাচীনেরা যারা পিতা তাদের অবশ্যই “সন্তানগণ বিশ্বাসী, নষ্টামি দোষে অপবাদিত বা অদম্য নয়” এমন সন্তান থাকবে। (ইফিষীয় ৬:৪; তীত ১:৬) তাহলে, আমাদের পরিস্থিতি নির্বিশেষে, পাঠ করা, অধ্যয়ন করা ও ঈশ্বরের বাক্য প্রয়োগ করার প্রয়োজনীয়তাকে আমাদের খুব গুরুত্বপূর্ণভাবে গ্রহণ করা উচিত।
৯. কেন সহখ্রীষ্টীয়দের সঙ্গে বাইবেল অধ্যয়ন করবেন?
৯ আমাদের সহবিশ্বাসীদের সাথেও বাইবেল অধ্যয়ন করা উচিত। পৌল চেয়েছিলেন থিষলনীকীয়ের খ্রীষ্টানেরা যেন একে অপরের সাথে তার দেওয়া পরামর্শ আলোচনা করে। (১ থিষলনীকীয় ৪:১৮) সত্যের প্রতি আমাদের বোধগম্যতাকে তীক্ষ্ণ করতে, শাস্ত্র পরীক্ষা করতে অন্য নিবিষ্ট ছাত্রের সাথে যোগ দেওয়ার চেয়ে ভাল বিষয় আর কিছুই নেই। এই প্রবাদবাক্যটি সত্য, যা বলে: “লৌহ লৌহকে সতেজ করে, তদ্রুপ মনুষ্য আপন মিত্রের মুখ সতেজ করে।” (হিতোপদেশ ২৭:১৭) একটি লোহার যন্ত্রে মরিচা পড়তে পারে যদি তা ব্যবহার ও তীক্ষ্ণ না করা হয়। অনুরূপভাবে, আমাদেরও প্রয়োজন আছে জ্ঞান বন্টন করে নেওয়ার মাধ্যমে পরস্পরের সাথে নিয়মিতভাবে মিলিত হওয়া ও সতেজ করা, যা আমরা ঈশ্বরের সত্যের বাক্য পাঠ করা, অধ্যয়ন করা ও ধ্যান করার দ্বারা অর্জন করেছি। (ইব্রীয় ১০:২৪, ২৫) এছাড়াও, এটি হচ্ছে, আমরা যে আধ্যাত্মিক আলোর ঝলক থেকে উপকৃত হচ্ছি, সে বিষয়ে নিশ্চিত হওয়ার একটি পথ।—গীতসংহিতা ৯৭:১১; হিতোপদেশ ৪:১৮.
১০. সত্যে চলা বলতে কী বোঝায়?
১০ শাস্ত্র অধ্যয়নের সময়ে আমরা উপযুক্তভাবে ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করতে পারি, যেমন গীতরচক করেছিলেন: “তোমার দীপ্তি ও তোমার সত্য প্রেরণ কর; তাহারাই আমার পথপ্রদর্শক হউক।” (গীতসংহিতা ৪৩:৩) যদি আমরা ঈশ্বরের অনুমোদন পেতে ইচ্ছুক হই, তাহলে আমাদের অবশ্যই তাঁর সত্যে চলতে হবে। (৩ যোহন ৩, ৪) এটির অন্তর্ভুক্ত হল তাঁর চাহিদাগুলির সম্মুখীন হওয়া এবং বিশ্বস্ততা ও আন্তরিকতা সহকারে তাঁর সেবা করা। (গীতসংহিতা ২৫:৪, ৫; যোহন ৪:২৩, ২৪) আমাদের অবশ্যই যিহোবাকে সত্যে উপাসনা করতে হবে, যেমন তাঁর বাক্যে প্রকাশ করা হয়েছে ও “বিশ্বস্ত ও বুদ্ধিমান্ দাস” দ্বারা পরিকল্পিত প্রকাশনাদিতে পরিষ্কার করা হয়েছে। (মথি ২৪:৪৫-৪৭) এর জন্য শাস্ত্র সম্বন্ধে সঠিক জ্ঞান প্রয়োজন। তাহলে, কিভাবে আমাদের ঈশ্বরের বাক্য পাঠ ও অধ্যয়ন করা উচিত? আমাদের কি আদিপুস্তক ১ অধ্যায়ের ১ পদ থেকে শুরু করে পর্যায়ক্রমে ৬৬টি পুস্তক পাঠ করা উচিত? হ্যাঁ, প্রত্যেক খ্রীষ্টান যার কাছে তার নিজস্ব ভাষায় সম্পূর্ণ বাইবেল আছে তার আদিপুস্তক থেকে প্রকাশিত বাক্য পর্যন্ত পাঠ করা উচিত। আর বাইবেল ও খ্রীষ্টীয় প্রকাশনা পাঠ করায় আমাদের লক্ষ্য হওয়া উচিত ‘বিশ্বস্ত দাসের’ মাধ্যমে ঈশ্বর যা প্রাপ্তিসাধ্য করেছেন সেই শাস্ত্রীয় সত্যের প্রতি প্রচুররূপে আমাদের উপলব্ধি বাড়িয়ে তোলা।
উচ্চৈঃস্বরে ঈশ্বরের বাক্য পাঠ করুন
১১, ১২. সভাগুলিতে উচ্চৈঃস্বরে বাইবেল পাঠ করা কেন উপকারী?
১১ আমরা যখন একা থাকি তখন নীরবে পাঠ করতে পারি। প্রাচীনকালে, কিন্তু, ব্যক্তিগত পাঠ উচ্চৈঃস্বরে করা হত। যখন ইথিয়পীয় নপুংসক তার রথে করে যাচ্ছিলেন, তখন সুসমাচার প্রচারক ফিলিপ তাকে যিশাইয়ের ভবিষ্যদ্বাণী থেকে পাঠ করতে শুনেছিলেন। (প্রেরিত ৮:২৭-৩০) যে ইব্রীয় শব্দ “পাঠ করা” হিসাবে অনুবাদিত হয়েছে, প্রাথমিকভাবে তা বোঝায় “ডাকা।” সুতরাং যারা প্রাথমিকভাবে নীরবে পাঠ করতে ও তার অর্থ অনুধাবন করতে অসমর্থ হয়, তাদের প্রত্যেকটি শব্দ উচ্চৈঃস্বরে উচ্চারণ করতে নিরুৎসাহিত হওয়া উচিত নয়। মুখ্য বিষয়টি হচ্ছে ঈশ্বরের লিখিত বাক্য পাঠ করার দ্বারা সত্য শিক্ষা লাভ করা।
১২ খ্রীষ্টীয় সভায় উচ্চৈঃস্বরে বাইবেল পাঠ করা উপকারী। প্রেরিত পৌল তার সহ কার্যকারী তীমথিয়কে উৎসাহিত করেছিলেন: “তুমি পাঠ করিতে এবং প্রবোধ ও শিক্ষা দিতে নিবিষ্ট থাক।” (বাঁকা অক্ষরে মুদ্রণ আমাদের।) (১ তীমথিয় ৪:১৩) পৌল কলসীয়দের বলেছিলেন: “তোমাদের মধ্যে এই পত্র পাঠ হইলে পর দেখিও, যেন, লায়দিকেয়াস্থ মণ্ডলীতেও ইহা পাঠ করা হয়; এবং লায়দিকেয়া হইতে যে পত্র পাইবে, তাহা যেন তোমরাও পাঠ কর।” (কলসীয় ৪:১৬) আর প্রকাশিত বাক্য ১:৩ পদ বলে: “ধন্য, [“সুখী,” NW] যে এই ভাববাণীর বাক্য সকল পাঠ করে, ও যাহারা শ্রবণ করে, এবং ইহাতে লিখিত কথা সকল পালন করে; কেননা কাল সন্নিকট।” তাই, এক জনসাধারণের বক্তার মণ্ডলীর প্রতি তিনি যা বলেন তা সমর্থনের জন্য বাইবেল থেকে শাস্ত্র পাঠ করা উচিত।
অধ্যয়নের প্রাসঙ্গিক পদ্ধতি
১৩. বাইবেল সত্য শিক্ষা করার সর্বাপেক্ষা উন্নতিশীল পদ্ধতি কী এবং কী আমাদের শাস্ত্রের অবস্থান নির্ণয় করতে সাহায্য করতে পারে?
১৩ শাস্ত্রীয় সত্য শিক্ষা করার ক্ষেত্রে প্রাসঙ্গিক অধ্যয়ন হচ্ছে সর্বাপেক্ষা উন্নতিশীল পদ্ধতি। বর্ণানুক্রমিক সূচি, প্রসঙ্গ এবং পুস্তক, অধ্যায় ও পদ অনুসারে বাইবেলের শব্দগুলিকে বর্ণানুক্রমিকভাবে তালিকাভুক্ত করে যা কোন একটি নির্দিষ্ট বিষয়ের সাথে সম্পর্কযুক্ত শাস্ত্রের অবস্থান নির্ণয় করা সহজ করে তোলে। আর এই শাস্ত্রগুলি একে অপরের সাথে মিলযুক্ত হয় কারণ বাইবেল লেখক পরস্পরবিরোধী নন। পবিত্র আত্মার মাধ্যমে, তিনি বাইবেল লিখতে ৪০ জন ব্যক্তিকে ১৬ শতাব্দীরও বেশি সময় ধরে অনুপ্রাণিত করেছিলেন আর তাই প্রাসঙ্গিকভাবে অধ্যয়ন সত্য শিক্ষা করার জন্য বহু সময় ধরে পরীক্ষিত এক প্রভাবশালী পদ্ধতি।
১৪. কেন ইব্রীয় ও খ্রীষ্টান গ্রীক শাস্ত্র একসাথে অধ্যয়ন করবেন?
১৪ বাইবেল সত্যের প্রতি আমাদের উপলব্ধিবোধের, আমাদের খ্রীষ্টীয় গ্রীক শাস্ত্র ও সাথে সাথে ইব্রীয় শাস্ত্রও পাঠ ও অধ্যয়ন করতে পরিচালিত করা উচিত। এটি দেখাবে কিভাবে গ্রীক শাস্ত্র ঈশ্বরের উদ্দেশ্যের সাথে সম্পর্কযুক্ত এবং তা ইব্রীয় শাস্ত্রের ভবিষ্যদ্বাণীগুলির প্রতি কিভাবে আলোকপাত করে। (রোমীয় ১৬:২৫-২৭; ইফিষীয় ৩:৪-৬; কলসীয় ১:২৬) পবিত্র শাস্ত্রের নতুন জগৎ অনুবাদ (ইংরাজি) এই ক্ষেত্রে খুবই সাহায্যকারী। এটি ঈশ্বরের উৎসর্গীকৃত সেবকদের দ্বারা প্রস্তুত করা হয়েছে, যারা বর্ধিত জ্ঞানের সুযোগ গ্রহণ করেছে যা উপলব্ধ প্রকৃত বাইবেল শাস্ত্র, অনুরূপভাবে এর পশ্চাদপট এবং বাগ্বৈশিষ্ট্যগত অভিব্যক্তিতে। এছাড়া “বিশ্বস্ত ও বুদ্ধিমান্ দাস” এর মাধ্যমে যিহোবা যা সরবরাহ করেছেন সেই বাইবেল অধ্যয়ন সহায়কগুলিও জরুরি।
১৫. কিভাবে আপনি প্রমাণ করবেন যে বাইবেলের বিভিন্ন জায়গা থেকে উদ্ধৃতি করা উপযুক্ত?
১৫ কিছু জন হয়ত বলতে পারেন, ‘আপনাদের প্রকাশনা বাইবেল থেকে সহস্রাধিক উদ্ধৃতি নিয়ে থাকে, কিন্তু কেন আপনারা এগুলি বাইবেলের বিভিন্ন জায়গা থেকে নিয়েছেন?’ ৬৬টি বাইবেলের বইয়ের বিভিন্ন জায়গা থেকে উদ্ধৃতি করার দ্বারা প্রকাশনাগুলি একটি শিক্ষার সত্যতা প্রমাণ করার ক্ষেত্রে বিভিন্ন অনুপ্রাণিত সাক্ষ্যের প্রতি আকর্ষিত করে। যীশু নিজে নির্দেশ দেওয়ার ক্ষেত্রে এই পদ্ধতি প্রয়োগ করেছিলেন। যখন তিনি তাঁর পর্বতে দত্ত উপদেশ দেন, তিনি ইব্রীয় শাস্ত্র থেকে ২১ বার উদ্ধৃতি করেছিলেন। সেই আলোচনার অন্তর্ভুক্ত ছিল যাত্রাপুস্তক থেকে তিনটি, লেবীয় পুস্তক থেকে দুটি, গণনাপুস্তক থেকে একটি, দ্বিতীয় বিবরণ থেকে ছটি, দ্বিতীয় রাজাবলি থেকে একটি, গীতসংহিতা থেকে চারটি, যিশাইয় থেকে তিনটি এবং যিরমিয় থেকে একটি উদ্ধৃতি। এটি করার দ্বারা, যীশু কি কেবলমাত্র ‘কিছু বিষয় প্রমাণ করার চেষ্টা করছিলেন’? না, কারণ “তিনি ক্ষমতাপন্ন ব্যক্তির ন্যায় তাহাদিগকে উপদেশ দিতেন, তাহাদের অধ্যাপকদের ন্যায় নয়।” এটি এইরকম ছিল, কারণ যীশু তাঁর শিক্ষাকে ঈশ্বরের লিখিত বাক্যের কর্তৃত্ব দ্বারা সমর্থন করেছিলেন। (মথি ৭:২৯) প্রেরিত পৌলও এইরকমই করেছিলেন।
১৬. রোমীয় ১৫:৭-১৩ পদে পৌল কোন্ শাস্ত্রীয় উদ্ধৃতি করেছিলেন?
১৬ রোমীয় ১৫:৭-১৩ পদে যে শাস্ত্র বচন দেখা যায়, পৌল তা উদ্ধৃতি করেন ইব্রীয় শাস্ত্রের তিনটি বিভাগ—ব্যবস্থা পুস্তক, ভাববাদীগ্রন্থ ও গীতসংহিতা থেকে। তিনি দেখিয়েছিলেন যে যিহূদীরা ও পরজাতিয়েরা ঈশ্বরকে গৌরবান্বিত করতে পারে আর তাই খ্রীষ্টানদের সমস্ত জাতির লোকেদের আমন্ত্রণ জানানো উচিত। পৌল বলেছিলেন: “যেমন খ্রীষ্ট তোমাদিগকে গ্রহণ করিলেন, তেমনি ঈশ্বরের গৌরবের জন্য তোমরা এক জন অন্যকে গ্রহণ কর। কেননা আমি বলি যে, ঈশ্বরের সত্যের জন্যই খ্রীষ্ট ত্বক্ছেদ সম্বন্ধীয় পরিচারক হইয়াছেন, যেন তিনি পিতৃপুরুষদিগকে দত্ত প্রতিজ্ঞা সকল স্থির করেন, এবং পরজাতীয়েরা যেন ঈশ্বরের দয়ার জন্যই তাঁহার গৌরব করে; যেমন লিখিত আছে, [গীতসংহিতা ১৮:৪৯ পদে]: ‘এই জন্য আমি জাতিগণের মধ্যে তোমার গৌরব স্বীকার করিব, তোমার নামের উদ্দেশে স্তোত্র গান করিব।’ আবার তিনি বলেন, [দ্বিতীয় বিবরণ ৩২:৪৩ পদে]: ‘জাতিগণ! তাঁহার প্রজাদের সহিত হর্ষনাদ কর।’ আবার, [গীতসংহিতা ১১৭:১ পদে]: ‘সমস্ত জাতি, প্রভুর [“যিহোবার,” NW] প্রশংসা কর, সমস্ত লোকবৃন্দ তাঁহার প্রশংসা করুক।’ আবার যিশাইয় বলেন, [১১:১, ১০ পদে]: ‘যিশয়ের মূল থাকিবে, আর জাতিগণের উপরে কর্ত্তৃত্ব করিতে এক জন দাঁড়াইবেন, তাঁহারই উপরে জাতিগণ প্রত্যাশা রাখিবে।’ প্রত্যাশার ঈশ্বর তোমাদিগকে বিশ্বাস দ্বারা সমস্ত আনন্দে ও শান্তিতে পরিপূর্ণ করুন, যেন তোমরা পবিত্র আত্মার পরাক্রমে প্রত্যাশায় উপচিয়া পড়।” এই প্রাসঙ্গিক পদ্ধতির দ্বারা পৌল দেখিয়েছিলেন বাইবেল সত্যকে প্রতিষ্ঠিত করতে কিভাবে শাস্ত্রের উদ্ধৃতি করা প্রয়োজন।
১৭. কোন্ পূর্ববর্তী নজিরের সাথে সামঞ্জস্য রেখে খ্রীষ্টানেরা সম্পূর্ণ বাইবেলের বিভিন্ন জায়গা থেকে উদ্ধৃতি করে?
১৭ প্রেরিত পৌলের প্রথম অনুপ্রাণিত পত্রটি, ব্যবস্থা পুস্তক, ভাববাদীগ্রন্থ ও গীতসংহিতার দশটি পুস্তক থেকে ৩৪টি উদ্ধৃতি অন্তর্ভুক্ত করে। তার দ্বিতীয় পত্রটিতে, পিতর তিনটি পুস্তক থেকে ছয়বার উদ্ধৃতি করেন। আদিপুস্তক থেকে মালাখি পর্যন্ত, এই ইব্রীয় শাস্ত্রগুলি থেকে ১২২টি উদ্ধৃতি মথি লিখিত সুসমাচারে আছে। গ্রীক শাস্ত্রের ২৭টি পুস্তকে আদিপুস্তক থেকে মালাখি পর্যন্ত, এই ইব্রীয় শাস্ত্রগুলি থেকে ৩২০টি সরাসরি উদ্ধৃতি এবং তার সাথে ইব্রীয় শাস্ত্রের আরও অন্যান্য শতাধিক উল্লেখও আছে। যীশুর দ্বারা স্থাপিত ও তাঁর শিষ্যদের দ্বারা অনুসৃত এই উদাহরণের সাথে সামঞ্জস্য রেখে, যখন আধুনিক-দিনের খ্রীষ্টানেরা কোন একটি শাস্ত্রীয় বিষয়ের প্রাসঙ্গিক অধ্যয়ন করে, তারা সম্পূর্ণ বাইবেলের বিভিন্ন জায়গা থেকে উদ্ধৃতি করে। এটি বিশেষত এই ‘শেষ কাল’ এর জন্য উপযুক্ত, যখন অধিকাংশ ইব্রীয় ও গ্রীক শাস্ত্র পরিপূর্ণ হচ্ছে। (২ তীমথিয় ৩:১) ‘বিশ্বস্ত দাস’ তাদের প্রকাশনাগুলিতে বাইবেলের এইধরনের প্রয়োগ করে থাকে, কিন্তু ঈশ্বরের বাক্যের সাথে কিছু যোগ অথবা এর থেকে কিছু হরণ তারা করে না।—হিতোপদেশ ৩০:৫, ৬; প্রকাশিত বাক্য ২২:১৮, ১৯.
সর্বদা সত্যে চলুন
১৮. কেন আমাদের ‘সত্যে চলা’ উচিত?
১৮ আমরা অবশ্যই বাইবেল থেকে কিছু হরণ করব না, কারণ ঈশ্বরের বাক্যের সমস্ত খ্রীষ্টীয় শিক্ষা হল “সত্য” অথবা “সুসমাচারের সত্য।” এই সত্যে লেগে থাকা—এতে “চলা”—পরিত্রাণের জন্য জরুরি। (গালাতীয় ২:৫; ২ যোহন ৪; ১ তীমথিয় ২:৩, ৪) যেহেতু খ্রীষ্টতত্ত্ব “সত্যের পথ,” তাই এর আগ্রহের উন্নতিবিধান করতে অন্যদের সহায়তা করার দ্বারা আমরা “সত্যের সহকারী” হই।—২ পিতর ২:২; ৩ যোহন ৮.
১৯. কিভাবে আমরা ‘সত্যে চলতে’ পারি?
১৯ যদি আমরা ‘সত্যে চলতে’ থাকি, আমাদের অবশ্যই বাইবেল পাঠ করতে ও নিজেদের ‘বিশ্বস্ত দাস’ এর মাধ্যমে ঈশ্বরের সরবরাহকৃত আধ্যাত্মিক সাহায্য গ্রহণের উপযোগী হতে হবে। (৩ যোহন ৪) আমরা এটি করি আমাদের নিজেদের মঙ্গলার্থে এবং অন্যদের যিহোবা ঈশ্বর, যীশু খ্রীষ্ট ও ঐশিক উদ্দেশ্য সম্বন্ধে শিক্ষা দেওয়ার উপযুক্ত পরিস্থিতিতে থাকতে। আর আসুন আমরা কৃতজ্ঞ হই যে যিহোবার আত্মা তাঁর বাক্য বুঝতে ও সত্যে তাঁর সেবা করার ক্ষেত্রে সফল হতে আমাদের সাহায্য করে।
আপনার উত্তর কী?
◻ বাইবেল পাঠ করার কিছু স্থায়ী উপকারগুলি কী?
◻ কেন সহবিশ্বাসীদের সঙ্গে বাইবেল অধ্যয়ন করবেন?
◻ বাইবেলের বিভিন্ন জায়গা থেকে উদ্ধৃতি করা কেন উপযুক্ত?
◻ ‘সত্যে চলা’ বলতে কী বোঝায় ও কিভাবে আমরা সেইরূপ করতে পারি?
[১৭ পৃষ্ঠার চিত্র]
পিতামাতারা, আপনাদের সন্তানদের শাস্ত্র থেকে শিক্ষা দিন
[১৮ পৃষ্ঠার চিত্র]
পর্বতে দত্ত তাঁর উপদেশে যীশু ইব্রীয় শাস্ত্রের বিভিন্ন অংশ থেকে উদ্ধৃতি করেছিলেন