বিচক্ষণতায় মনোনিবেশ করুন
“সদাপ্রভুই প্রজ্ঞা দান করেন, তাঁহারই মুখ হইতে জ্ঞান ও বুদ্ধি [“বিচক্ষণতা,” NW] নির্গত হয়।”—হিতোপদেশ ২:৬.
১. কিভাবে আমরা বিচক্ষণতায় মনোনিবেশ করতে পারি?
যিহোবা হলেন আমাদের মহান নির্দেশদাতা। (যিশাইয় ৩০:২০, ২১) কিন্তু তাঁর বাক্যে প্রকাশিত “ঈশ্বরবিষয়ক জ্ঞান” থেকে উপকার লাভ করতে হলে আমাদের অবশ্যই কী করতে হবে? অংশতঃ, আমাদের অবশ্যই ‘বিচক্ষণতায় মনোনিবেশ’ করতে হবে—এই গুণ অর্জন এবং প্রদর্শন করার জন্য এক আন্তরিক ইচ্ছা থাকতে হবে। এইজন্য, আমাদের অবশ্যই ঈশ্বরের প্রতি তাকাতে হবে, কেননা বিজ্ঞ ব্যক্তি বলেছিলেন: “সদাপ্রভুই প্রজ্ঞা দান করেন, তাঁহারই মুখ হইতে জ্ঞান ও বুদ্ধি [“বিচক্ষণতা,” NW] নির্গত হয়।” (হিতোপদেশ ২:১-৬) জ্ঞান, প্রজ্ঞা এবং বিচক্ষণতা কী?
২. (ক) জ্ঞান কী? (খ) কিভাবে আপনি প্রজ্ঞাকে সংজ্ঞায়িত করবেন? (গ) বিচক্ষণতা কী?
২ জ্ঞান হল তথ্যের সাথে সম্পর্কযুক্ত যা অভিজ্ঞতা, পর্যবেক্ষণ অথবা অধ্যয়নের মাধ্যমে অর্জন করা হয়। প্রজ্ঞা হচ্ছে জ্ঞানকে কার্যে প্রয়োগ করার ক্ষমতা। (মথি ১১:১৯) রাজা শলোমন প্রজ্ঞা প্রদর্শন করেছিলেন যখন দুই জন স্ত্রীলোক একই শিশুকে নিজের বলে দাবি করেছিল এবং তিনি বিবাদটির মীমাংসা করতে সন্তানের প্রতি একজন মায়ের গভীর অনুরাগ সম্বন্ধে তার জ্ঞানকে ব্যবহার করেছিলেন। (১ রাজাবলি ৩:১৬-২৮) বিচক্ষণতা হচ্ছে “বিচারের সূক্ষ্মতা।” এটি হল “মনের শক্তি অথবা ক্ষমতা যার মাধ্যমে এটি একটি বিষয় থেকে অন্যটিকে প্রভেদ করে।” (ওয়েবস্টারস্ ইউনিভার্সাল ডিক্সনারী) আমরা যদি বিচক্ষণতায় মনোনিবেশ করি, তাহলে যিহোবা তাঁর পুত্রের মাধ্যমে আমাদের তা দান করবেন। (২ তীমথিয় ২:১, ৭) কিন্তু বিচক্ষণতা কিভাবে জীবনের বিভিন্ন দিকগুলিকে প্রভাবিত করতে পারে?
বিচক্ষণতা এবং আমাদের কথাবার্তা
৩. হিতোপদেশ ১১:১২, ১৩ পদকে আপনি কিভাবে ব্যাখ্যা করবেন এবং “বুদ্ধিবিহীন” হওয়ার অর্থ কী?
৩ বিচক্ষণতা আমাদের উপলব্ধি করতে সাহায্য করে যে “নীরব থাকিবার কাল ও কথা কহিবার কাল” আছে। (উপদেশক ৩:৭) এই গুণটি আমরা যা বলি সেই সম্পর্কেও আমাদের সতর্ক করে থাকে। হিতোপদেশ ১১:১২, ১৩ পদ জানায়: “যে প্রতিবাসীকে তুচ্ছ করে, সে বুদ্ধিবিহীন; কিন্তু বুদ্ধিমান [“বিচক্ষণ ব্যক্তি,” NW] নীরব হইয়া থাকে। কর্ণেজপ গুপ্ত কথা ব্যক্ত করে; কিন্তু যে আত্মায় বিশ্বস্ত, সে কথা গোপন করে।” হ্যাঁ, একজন পুরুষ অথবা নারী যে অন্য ব্যক্তিকে তুচ্ছ করে সে “বুদ্ধিবিহীন।” আভিধানিক উইলিয়াম জেসেনিওসের মন্তব্য অনুসারে, এইরূপ একজন ব্যক্তি হলেন “বোধশক্তিহীন।” তার (পুরুষ অথবা নারী) সুবিচারের অভাব রয়েছে এবং “হৃদয়” শব্দটির ব্যবহার দেখায় যে ব্যক্তির অভ্যন্তরস্থ ইতিবাচক গুণগুলি অসম্পূর্ণ। যদি একজন স্বীকৃত খ্রীষ্টান তার (পুরুষ অথবা নারী) অসংলগ্ন কথাবার্তাকে মিথ্যা অপবাদ অথবা গালাগালি পর্যন্ত নিয়ে যায়, তবে নিযুক্ত প্রাচীনদের অবশ্যই মণ্ডলীর এই অনিষ্টকর পরিস্থিতির শেষ নিয়ে আসার জন্য কাজ করতে হবে।—লেবীয় পুস্তক ১৯:১৬; গীতসংহিতা ১০১:৫; ১ করিন্থীয় ৫:১১.
৪. গোপন তথ্য সম্পর্কে বিচক্ষণ এবং বিশ্বস্ত খ্রীষ্টানেরা কী করেন?
৪ “বুদ্ধিবিহীন”-দের বৈসাদৃশ্যে, ‘বিচক্ষণ’ ব্যক্তিরা নীরব থাকে যখন তা করা উপযুক্ত হয়। তারা এক গোপনীয়তার প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা করে না। (হিতোপদেশ ২০:১৯) অসতর্ক কথাবার্তা ক্ষতির কারণ হতে পারে তা জেনে, বিচক্ষণ ব্যক্তিরা “আত্মায় বিশ্বস্ত” থাকে। তারা সহবিশ্বাসীদের প্রতি নিষ্ঠাবান এবং গোপন বিষয়গুলি প্রকাশ করে দেয় না যা তাদের হয়ত বিপদগ্রস্ত করতে পারে। যদি বিচক্ষণ খ্রীষ্টানেরা মণ্ডলীর সাথে সম্পর্কযুক্ত কোন ধরনের গোপনীয় তথ্য পেয়ে থাকে, তারা যতক্ষণ পর্যন্ত না যিহোবার সংগঠন এটিকে এর নিজস্ব প্রকাশনার মাধ্যমে জানানোকে উপযুক্ত বলে মনে করছে ততক্ষণ পর্যন্ত নিজেদের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখে।
বিচক্ষণতা এবং আমাদের আচরণ
৫. লম্পটতাকে ‘অজ্ঞানেরা’ কিভাবে দেখে এবং কেন?
৫ বাইবেলের হিতোপদেশ আমাদের বিচক্ষণতা ব্যবহার এবং অনুপযুক্ত আচরণ পরিহার করতে সাহায্য করে। উদাহরণস্বরূপ, হিতোপদেশ ১০:২৩ পদ বলে: “কুকর্ম্ম [“লম্পটতা,” NW] করা অজ্ঞানের আমোদ, আর প্রজ্ঞা বুদ্ধিমানের [“বিচক্ষণ ব্যক্তির,” NW] আমোদ।” যাদের কাছে লম্পটতা “আমোদ” এর মত তারা তাদের অন্যায় পথ সম্বন্ধে অন্ধ এবং তারা ঈশ্বরকে অবজ্ঞা করে যাঁর নিকটে সকলকে অবশ্যই নিকাশ দিতে হবে। (রোমীয় ১৪:১২) এইরূপ ‘অজ্ঞানেরা’ তাদের যুক্তির ক্ষেত্রে ধৃষ্টতার এমন পর্যায়ে পৌঁছায় যে তারা ধরে নেয় যে ঈশ্বর তাদের অন্যায়কে দেখতে পান না। তাদের কার্যাবলীর মাধ্যমে, তারা বস্তুতপক্ষে বলে: “ঈশ্বর নাই।” (গীতসংহিতা ১৪:১-৩; যিশাইয় ২৯:১৫, ১৬) ধার্মিক নীতিগুলির দ্বারা পরিচালিত না হওয়ার দরুন, তাদের বিচক্ষণতার অভাব থাকে এবং বিষয়গুলিকে সঠিকভাবে বিচার করতে পারে না।—হিতোপদেশ ২৮:৫.
৬. কেন লম্পটতা অজ্ঞানতাযুক্ত এবং যদি আমাদের বিচক্ষণতা থাকে তবে কিভাবে আমরা এটিকে দেখব?
৬ “বিচক্ষণ ব্যক্তি” উপলব্ধি করেন যে লম্পটতা “আমোদ” বা একটি খেলা নয়। তিনি জানেন যে এটি ঈশ্বরকে অসন্তুষ্ট করে এবং তাঁর সাথে আমাদের সম্পর্ক নষ্ট করে দিতে পারে। এইরূপ আচরণ অজ্ঞানতাযুক্ত কারণ তা লোকেদের আত্ম-সম্মান হরণ করে, বিবাহ ভেঙ্গে দেয়, মন ও দেহ উভয়ের ক্ষতি করে এবং আধ্যাত্মিক অধঃপতনে পরিচালিত করে। তাই আসুন আমরা বিচক্ষণতায় মনোনিবেশ করি এবং লম্পটতা অথবা যে কোন ধরনের অনৈতিকতাকে পরিহার করি।—হিতোপদেশ ৫:১-২৩.
বিচক্ষণতা এবং আমাদের মনোভাব
৭. ক্রোধের কয়েকটি শারীরিক প্রভাব কী?
৭ বিচক্ষণতায় মনোনিবেশ করা আমাদের মনোভাবকে নিয়ন্ত্রণ করতেও সাহায্য করে থাকে। হিতোপদেশ ১৪:২৯ পদ বলে, “যে ক্রোধে ধীর, সে বড় বুদ্ধিমান [“বিচক্ষণ,” NW]; কিন্তু আশুক্রোধী অজ্ঞানতা তুলিয়া ধরে।” কেন একজন ব্যক্তি অনিয়ন্ত্রিত ক্রোধ এড়িয়ে চলতে কঠোরভাবে প্রচেষ্টা করে থাকে তার একটি কারণ হল যে শরীরিকভাবে আমাদের উপর এর প্রতিকূল প্রভাবগুলি রয়েছে। এটি রক্ত চাপ বৃদ্ধি করে এবং শ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যা সৃষ্টি করে। চিকিৎসকেরা ক্রোধ ও ক্ষিপ্ততাকে আবেগগত উত্ত্যক্ত অবস্থা অথবা এইরূপ রোগগুলি যেমন হাঁপানি, চর্ম রোগ, হজমের সমস্যা এবং আলসারের কারণ হিসাবে উল্লেখ করেছেন।
৮. অধৈর্য হওয়া কোথায় পরিচালিত করতে পারে, কিন্তু এই ক্ষেত্রে বিচক্ষণতা কিভাবে আমাদের সাহায্য করতে পারে?
৮ এটি কেবলমাত্র এমন নয় যে আমাদের স্বাস্থ্যের ক্ষতি এড়ানোর জন্য আমাদের বিচক্ষণতা ব্যবহার করা এবং “ক্রোধে ধীর” হওয়া উচিত। অধৈর্য হওয়া মূর্খতাপূর্ণ কাজগুলি করতে পরিচালিত করে যার জন্য আমাদের আক্ষেপ প্রকাশ করতে হবে। অসংযত কথোপকথন অথবা হঠকারিতাপূর্ণ আচরণ থেকে কী ফল হতে পারে তা বিবেচনা করতে বিচক্ষণতা আমাদের পরিচালিত করে এবং এইভাবে অবিবেচনাপূর্ণ কিছু করার মাধ্যমে ‘অজ্ঞানতা তুলিয়া ধরা’ থেকে বিরত করে। বিশেষভাবে বিচক্ষণতা আমাদের উপলব্ধি করতে সাহায্য করে যে ক্ষিপ্ততা আমাদের চিন্তন প্রক্রিয়াগুলিকে বিপর্যস্ত করতে পারে, ফলে আমরা সুযুক্তিপূর্ণ বিচার ব্যবহার করতে পারি না। এটি ঐশিক ইচ্ছা পালন করতে এবং ঈশ্বরের ধার্মিক নীতি অনুসারে জীবনযাপন করতে আমাদের সামর্থ্যকে দুর্বল করে দেয়। হ্যাঁ, অনিয়ন্ত্রিত ক্রোধের প্রতি বশ্যতাস্বীকার আধ্যাত্মিকভাবে ক্ষতিকর। বস্তুতপক্ষে, ঘৃণাস্পদ “মাংসের কার্য্য সকল” এর মধ্যে “রাগ” শ্রেণীভুক্ত যা ঈশ্বরের রাজ্যে অধিকার পাওয়া থেকে আমাদের বিরত করবে। (গালাতীয় ৫:১৯-২১) অতএব, বিচক্ষণ খ্রীষ্টান হিসাবে, আসুন আমরা “শ্রবণে সত্বর, কথনে ধীর, ক্রোধে ধীর” হই।—যাকোব ১:১৯.
৯. কিভাবে বিচক্ষণতা এবং ভ্রাতৃপ্রেম বিবাদগুলির মীমাংসা করতে আমাদের সাহায্য করতে পারে?
৯ আমরা যদি ক্রুদ্ধ হই, বিচক্ষণতা হয়ত নির্দেশ করতে পারে যে আমাদের চুপ করে থাকা উচিত যাতে করে প্রচণ্ড সংঘর্ষ এড়ানো যেতে পারে। হিতোপদেশ ১৭:২৭ পদ বলে: “যে বাক্য সম্বরণ করে, সে জ্ঞানবান; আর যে শীতলাত্মা, সে বুদ্ধিমান [“বিচক্ষণ,” NW]।” বিচক্ষণতা এবং ভ্রাতৃপ্রেম বোকার মত আঘাতকারী কিছু বলে ফেলার প্রবণতাকে নিয়ন্ত্রণ করার প্রয়োজনীয়তাকে উপলব্ধি করতে আমাদের সাহায্য করে। যদি ইতিমধ্যেই ক্রোধের বহিঃপ্রকাশ ঘটে থাকে, তবে প্রেম ও নম্রতা আমাদের দোষ স্বীকার এবং সংশোধন করতে পরিচালিত করে। কিন্তু ধরুন কেউ আমাদের অসন্তুষ্ট করেছে। তাহলে আসুন আমরা তার সাথে একাকী মৃদু ও নম্রভাবে এবং শান্তি স্থাপনের মুখ্য উদ্দেশ্য নিয়ে কথা বলি।—মথি ৫:২৩, ২৪; ১৮:১৫-১৭.
বিচক্ষণতা এবং আমাদের পরিবার
১০. পারিবারিক জীবনে প্রজ্ঞা এবং বিচক্ষণতা কোন্ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে?
১০ পরিবারের সদস্যদের প্রজ্ঞা এবং বিচক্ষণতা প্রদর্শন করা প্রয়োজন, কেননা এই গুণাবলি একটি গৃহকে গড়ে তোলে। হিতোপদেশ ২৪:৩, ৪ পদ বলে: “প্রজ্ঞা দ্বারা গৃহ নির্ম্মিত হয়, আর বুদ্ধি [“বিচক্ষণতা,” NW] দ্বারা তাহা স্থিরীকৃত হয়; জ্ঞান দ্বারা কুঠরী সকল পরিপূর্ণ হয়, বহুমূল্য ও মনোরম্য সমস্ত দ্রব্যে।” সফল পারিবারিক জীবনের জন্য প্রজ্ঞা এবং বিচক্ষণতা হল উত্তম নির্মাণ উপাদানগুলির মত। বিচক্ষণতা খ্রীষ্টীয় পিতামাতাদের, তাদের সন্তানদের অনুভূতি ও উদ্বেগগুলিকে বের করে আনতে সাহায্য করে। একজন বিচক্ষণ ব্যক্তি ভাববিনিময় করতে, শুনতে, তার (পুরুষ অথবা স্ত্রী) বিবাহ সঙ্গীর অনুভূতি এবং চিন্তাগুলির অন্তর্দৃষ্টি লাভ করতে সক্ষম।—হিতোপদেশ ২০:৫.
১১. কিভাবে একজন বিবাহিতা বিচক্ষণ স্ত্রীলোক ‘তার গৃহ গেঁথে তুলতে’ পারে?
১১ প্রজ্ঞা এবং বিচক্ষণতা সুখী পারিবারিক জীবনের জন্য প্রশ্নাতীতভাবে অত্যাবশ্যকীয়। উদাহরণস্বরূপ, হিতোপদেশ ১৪:১ পদ বলে: “স্ত্রীলোকদের বিজ্ঞতা তাহাদের গৃহ গাঁথে; কিন্তু অজ্ঞানতা স্বহস্তে তাহা ভাঙ্গিয়া ফেলে।” তার স্বামীর প্রতি যথাযথ বশীভূত একজন বিজ্ঞ ও বিচক্ষণ বিবাহিতা স্ত্রীলোক গৃহের মঙ্গলের জন্য কঠোর পরিশ্রম করবে আর এইভাবে তার পরিবারকে গড়ে তুলতে সাহায্য করবে। একটি বিষয় যা ‘তার গৃহকে গেঁথে তুলবে’ তা হল যে সে সর্বদাই তার স্বামীর বিষয়ে সুখ্যাতিযুক্ত কথা বলে আর এইভাবে তার প্রতি অন্যান্যদের সম্মানকে বৃদ্ধি করে। আর একজন গুণবতী, বিচক্ষণ স্ত্রী যার যিহোবার প্রতি সশ্রদ্ধ ভয় রয়েছে সে নিজের জন্যও প্রশংসা অর্জন করে।—হিতোপদেশ ১২:৪; ৩১:২৮, ৩০.
বিচক্ষণতা এবং আমাদের জীবনের পথ
১২. ‘বুদ্ধিবিহীনেরা’ অজ্ঞানতাকে কিভাবে দেখে এবং কেন?
১২ বিচক্ষণতা আমাদের সমস্ত বিষয়ে এক সঠিক পথ বজায় রাখতে সাহায্য করে থাকে। এটি হিতোপদেশ ১৫:২১ পদে নির্দেশ করা আছে, যেটি বলে: “নির্ব্বোধ অজ্ঞানতায় আনন্দ করে, কিন্তু বুদ্ধিমান [“বিচক্ষণ,” NW] লোক সরল পথে চলে।” এই প্রবাদবাক্যটি আমাদের কিভাবে বুঝতে হবে? অজ্ঞানতার পথ অথবা মূর্খতা, নির্বোধ পুরুষ, নারী এবং যুবক-যুবতীদের আনন্দের কারণস্বরূপ হয়। তারা “বুদ্ধিবিহীন,” উত্তম অভিপ্রায়ের অভাবযুক্ত এবং এত অজ্ঞ যে তারা অজ্ঞানতায় আনন্দ করে।
১৩. শলোমন হাসি এবং চপলতা সম্বন্ধে কী উপলব্ধি করেছিলেন?
১৩ ইস্রায়েলের বিচক্ষণ রাজা শলোমন শিখেছিলেন যে চপলতার অর্থ অত্যন্ত নগণ্য। তিনি স্বীকার করেছিলেন: “আমি মনে মনে বলিলাম, ‘আইস, আমি এক বার আমোদের দ্বারা তোমার পরীক্ষা করি, তুমি সুখভোগ কর,’ আর দেখ, তাহাও অসার। আমি হাস্যের বিষয়ে কহিলাম, উহা ক্ষিপ্ত; এবং আমোদের বিষয়ে কহিলাম, উহা কি করিবে?” (উপদেশক ২:১, ২) একজন বিচক্ষণ ব্যক্তি হিসাবে, শলোমন দেখেছিলেন যে কেবল উল্লাস ও হাসি সন্তোষদায়ক নয়, কারণ সেগুলি প্রকৃত ও স্থায়ী সুখ উৎপন্ন করতে পারে না। হাসি হয়ত আমাদের সমস্যাগুলিকে সাময়িকভাবে ভুলে থাকার জন্য সাহায্য করতে পারে, কিন্তু পরে সেগুলি হয়ত আরও অধিকতর পরিমাণে উদ্ভুত হতে পারে। শলোমন সঠিকভাবেই হাসিকে “ক্ষিপ্ত” হিসাবে উল্লেখ করতে পেরেছিলেন। কেন? কারণ অবিবেচনাপূর্ণ হাসি সুযুক্তিপূর্ণ বিচারকে মেঘাচ্ছন্ন করে। এটি হয়ত অত্যন্ত গুরুতর বিষয়গুলিকে হাল্কাভাবে নিতে আমাদের পরিচালিত করতে পারে। আনন্দের ধরণটি যা রাজসভার রসিকের বাক্য এবং কার্যাবলীর সাথে সম্বন্ধযুক্ত, তা এইভাবে নির্দেশিত হতে পারে না যে তা মূল্যবান কিছু উৎপন্ন করে। হাসি এবং উল্লাস সম্পর্কে শলোমনের পরীক্ষার অর্থ উপলব্ধি করা আমাদের “ঈশ্বরপ্রিয় নয়, বরং বিলাসপ্রিয়” হওয়া এড়াতে সাহায্য করে।—২ তীমথিয় ৩:১, ৪.
১৪. কিভাবে বিচক্ষণ ব্যক্তি ‘সরল পথে চলে’?
১৪ কিভাবে বিচক্ষণ ব্যক্তি ‘সরল পথে চলে?’ আধ্যাত্মিক বিচক্ষণতা এবং ধার্মিক নীতিগুলির প্রয়োগ লোকেদের সরল, অকপট পথে চলতে পরিচালিত করে। বাইংটনের অনুবাদ স্পষ্টভাবে বলে: “অজ্ঞানতা বুদ্ধিবিহীন লোকের কাছে পরম সুখের, কিন্তু বুদ্ধিমান লোক সরল পথে চলবে।” ‘বিচক্ষণ ব্যক্তি’ তার চরণের জন্য সরল পথ প্রস্তুত করে এবং জীবনে ঈশ্বরের বাক্য প্রয়োগ করার দরুন সঠিক ও ভুলের মধ্যে প্রভেদ বুঝতে সক্ষম হয়।—ইব্রীয় ৫:১৪; ১২:১২, ১৩.
বিচক্ষণতার জন্য সর্বদাই যিহোবার প্রতি তাকান
১৫. হিতোপদেশ ২:৬-৯ পদ থেকে আমরা কী শিখতে পারি?
১৫ জীবনে সরল পথ অনুসরণ করার জন্য, আমাদের সকলের আমাদের অসিদ্ধতা সম্বন্ধে স্বীকার করা এবং আধ্যাত্মিক বিচক্ষণতার জন্য যিহোবার প্রতি তাকান প্রয়োজন। হিতোপদেশ ২:৬-৯ পদ বলে: “সদাপ্রভুই প্রজ্ঞা দান করেন, তাঁহারই মুখ হইতে জ্ঞান ও বুদ্ধি [“বিচক্ষণতা,” NW] নির্গত হয়। তিনি সরলদিগের জন্য সূক্ষ্ম বুদ্ধি রাখেন, যাহারা সিদ্ধতায় চলে, তিনি তাহাদের ঢাল। তিনি বিচারের মার্গ সকল রক্ষা করেন, আপন সাধুদের পথ সংরক্ষণ করেন। অতএব তুমি ধার্ম্মিকতা ও বিচার বুঝিবে, ন্যায় ও সমস্ত উত্তম পথ বুঝিবে।”—তুলনা করুন যাকোব ৪:৬.
১৬. কেন যিহোবার বিরুদ্ধে কোন প্রজ্ঞা, বিচক্ষণতা এবং পরামর্শ নেই?
১৬ যিহোবার উপর আমাদের নির্ভরতা স্বীকার করে আসুন আমরা তাঁর বাক্য গভীরভাবে গবেষণা করার মাধ্যমে তাঁর ইচ্ছা উপলব্ধি করতে নম্রভাবে অনুসন্ধান করি। তিনি পূর্ণ অর্থে প্রজ্ঞার অধিকারী এবং তাঁর পরামর্শ সর্বদাই উপকারজনক। (যিশাইয় ৪০:১৩; রোমীয় ১১:৩৪) বস্তুতপক্ষে, যে কোন উপদেশ যা তাঁর বিরুদ্ধাচারণ করে তা মূল্যহীন। হিতোপদেশ ২১:৩০ পদ বলে: “নাহি জ্ঞান, নাহি বুদ্ধি, নাহি মন্ত্রণা—সদাপ্রভুর বিরুদ্ধে।” (তুলনা করুন হিতোপদেশ ১৯:২১.) কেবলমাত্র “বিশ্বস্ত ও বুদ্ধিমান্ দাস” এর মাধ্যমে সরবরাহকৃত প্রকাশনাদির সাহায্যে ঈশ্বরের বাক্য অধ্যয়নের দ্বারা বৃদ্ধিপ্রাপ্ত আধ্যাত্মিক বিচক্ষণতাই আমাদের জীবনে এক যথার্থ পথ অনুধাবন করতে সাহায্য করবে। (মথি ২৪:৪৫-৪৭) বিপরীত উপদেশ যতই বিশ্বাসযোগ্য বলে মনে হোক না কেন, তা তাঁর বাক্যের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে পারে না এটা জেনে আসুন আমরা যিহোবার পরামর্শের সাথে সঙ্গতি রেখে আমাদের জীবনের পথ পরিচালনা করি।
১৭. ভুল পরামর্শ দেওয়া হলে কী ফল হতে পারে?
১৭ বিচক্ষণ খ্রীষ্টানেরা যারা পরামর্শ দেন, উপলব্ধি করেন যে এটি দৃঢ়ভাবে ঈশ্বরের বাক্য ভিত্তিক হওয়া উচিত আর তাই কোন প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার পূর্বে বাইবেল অধ্যয়ন ও ধ্যান প্রয়োজনীয়। (হিতোপদেশ ১৫:২৮) যদি গুরুতর বিষয় সম্পর্কিত প্রশ্নগুলির ভুলভাবে উত্তর দেওয়া হয়, তাহলে তার ফলে অত্যন্ত ক্ষতি হতে পারে। তাই, খ্রীষ্টীয় প্রাচীনদের আধ্যাত্মিক বিচক্ষণতা প্রয়োজন এবং যিহোবার পরিচালনার জন্য প্রার্থনা করা উচিত যখন তারা আধ্যাত্মিকভাবে সহবিশ্বাসীদের সাহায্য করতে প্রাণপণ চেষ্টা করেন।
আধ্যাত্মিক বিচক্ষণতায় উপচিয়ে পড়া
১৮. মণ্ডলীতে যদি কোন সমস্যা উত্থিত হয়, তাহলে কিভাবে বিচক্ষণতা আমাদের আধ্যাত্মিক ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করতে পারে?
১৮ যিহোবাকে সন্তুষ্ট করতে, আমাদের “সর্ব্ববিষয়ে . . . বুদ্ধি [“বিচক্ষণতা,” NW]” প্রয়োজন। (২ তীমথিয় ২:৭) বাইবেলের আগ্রহপূর্ণ অধ্যয়ন এবং ঈশ্বরের আত্মা ও সংগঠনের পরিচালনার সাথে একমত হওয়া, আমাদের উপলব্ধি করতে সাহায্য করবে যে যখন আমরা সেই পরিস্থিতিগুলির সম্মুখীন হই যা আমাদের ভুলপথে পরিচালিত করতে পারে, তখন আমাদের কী করা উচিত। উদাহরণস্বরূপ, মনে করুন আমরা যেভাবে করা উচিত বলে মনে করি সেইভাবে হয়ত মণ্ডলীর কোন একটি বিষয় পরিচালিত হয়নি। আধ্যাত্মিক বিচক্ষণতা আমাদের এটি দেখতে সাহায্য করবে যে যিহোবার লোকেদের সাথে মেলামেশা বন্ধ এবং ঈশ্বরকে সেবা করা ছেড়ে দেওয়ার জন্য এটি কোন কারণ নয়। যিহোবাকে সেবা করার ক্ষেত্রে আমাদের বিশেষ সুযোগ, আধ্যাত্মিক স্বাধীনতা যা আমরা উপভোগ করি, রাজ্যের ঘোষণাকারী হিসাবে আমাদের পরিচর্যা থেকে যে আনন্দ আমরা আহরণ করি, সেই সম্বন্ধে চিন্তা করুন। আধ্যাত্মিক বিচক্ষণতা আমাদের সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি অনুধাবন করতে এবং উপলব্ধি করতে সক্ষম করবে যে অন্যেরা যাই করুক না কেন আমরা ঈশ্বরের কাছে উৎসর্গীকৃত এবং তাঁর সাথে আমাদের যে সম্পর্ক তা আমাদের উপভোগ করা উচিত। যদি একটি সমস্যা ঐশিকভাবে মোকাবিলা করার ক্ষেত্রে আমাদের কিছুই না করার থাকে, তাহলে পরিস্থিতিটির প্রতিকারের জন্য আমাদের ধৈর্য সহকারে যিহোবার জন্য অপেক্ষা করা প্রয়োজন। পরিত্যাগ করা অথবা হতাশার কাছে নতি স্বীকার করার পরিবর্তে, আসুন আমরা “ঈশ্বরের অপেক্ষা” করি।—গীতসংহিতা ৪২:৫, ১১.
১৯. (ক) ফিলিপীয়দের জন্য পৌলের প্রার্থনার মূল উপাদান কী ছিল? (খ) যদি আমরা কোন বিষয় সম্পূর্ণভাবে বুঝতে না পারি, তাহলে বিচক্ষণতা কিভাবে আমাদের সাহায্য করতে পারে?
১৯ আধ্যাত্মিক বিচক্ষণতা ঈশ্বরের এবং তাঁর লোকেদের প্রতি নিষ্ঠা বজায় রাখতে আমাদের সাহায্য করে থাকে। পৌল ফিলিপীর খ্রীষ্টানদের বলেছিলেন: “আমি এই প্রার্থনা করিয়া থাকি, তোমাদের প্রেম যেন তত্ত্বজ্ঞানে ও সর্ব্বপ্রকার সূক্ষ্মচৈতন্যে [“বিচক্ষণতায়,” NW] উত্তর উত্তর উপচিয়া পড়ে; এইরূপে তোমরা যেন, যাহা যাহা ভিন্ন প্রকার, তাহা পরীক্ষা করিয়া চিনিতে পার, খ্রীষ্টের দিন পর্য্যন্ত যেন তোমরা সরল ও বিঘ্নরহিত থাক।” (ফিলিপীয় ১:৯, ১০) যথার্থভাবে যুক্তি করতে, আমাদের ‘তত্ত্বজ্ঞান এবং সর্ব্বপ্রকার বিচক্ষণতা’ প্রয়োজন। যে গ্রীক শব্দটি এখানে “বিচক্ষণতা” হিসাবে অনুবাদ করা হয়েছে তা “সূক্ষ্ম নৈতিক উপলব্ধি”-কে নির্দেশ করে। যখন আমরা কিছু শিখি, তখন আমরা ঈশ্বর ও খ্রীষ্টের সাথে এর সম্পর্ক উপলব্ধি এবং এটি কিভাবে যিহোবার ব্যক্তিত্ব ও ব্যবস্থাগুলিকে মহিমান্বিত করে তার উপর ধ্যান করতে চাই। এটি আমাদের বিচক্ষণতা এবং যিহোবা ও যীশু খ্রীষ্ট আমাদের জন্য যা করেছেন তার প্রতি আমাদের উপলব্ধিবোধ বৃদ্ধি করে। যদি আমরা কোন কিছু সম্পূর্ণরূপে বুঝতে না পারি, তাহলে বিচক্ষণতা আমাদের উপলব্ধি করতে সাহায্য করবে যে আমরা অবশ্যই ঈশ্বর, খ্রীষ্ট এবং ঐশিক উদ্দেশ্য সম্পর্কে যে সকল গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলি শিখেছি সেই বিষয়ে আমাদের বিশ্বাসকে পরিত্যাগ করব না।
২০. আমরা কিভাবে আধ্যাত্মিক বিচক্ষণতায় উপচিয়ে পড়তে পারি?
২০ আমরা আধ্যাত্মিক বিচক্ষণতায় উপচিয়ে পড়ব, যদি আমরা সর্বদা ঈশ্বরের বাক্যের সাথে আমাদের চিন্তাধারা এবং কাজগুলির সঙ্গতি বজায় রাখি। (২ করিন্থীয় ১৩:৫) এক গঠনমূলক উপায়ে এটি করা একগুঁয়ে এবং অন্যদের প্রতি সমালোচনামূলক নয়, কিন্তু আমাদের নম্র হতে সাহায্য করে। বিচক্ষণতা আমাদের সংশোধন থেকে উপকার লাভ করতে এবং অধিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলি সম্বন্ধে নিশ্চিত হতে সাহায্য করবে। (হিতোপদেশ ৩:৭) তাই, যিহোবাকে সন্তুষ্ট করার আকাঙ্ক্ষা নিয়ে, আসুন আমরা তাঁর বাক্যের যথার্থ জ্ঞানে পরিপূর্ণ হতে চেষ্টা করি। এটি আমাদের ভুল থেকে সঠিককে নির্ণয় করতে, যা সত্যই গুরুত্বপূর্ণ তা নির্ধারণ করতে এবং যিহোবার সাথে আমাদের মহামূল্যবান সম্পর্ক নিষ্ঠার সাথে বজায় রাখতে সক্ষম করবে। এই সমস্ত কিছুই সম্ভব হবে যদি আমরা বিচক্ষণতায় মনোনিবেশ করি। তথাপি, আরও কিছুর প্রয়োজন রয়েছে। আমরা অবশ্যই বিচক্ষণতাকে আমাদের রক্ষা করতে দেব।
আপনি কিভাবে সাড়া দেবেন?
◻ আমাদের কেন বিচক্ষণতার প্রতি মনোনিবেশ করা উচিত?
◻ কিভাবে বিচক্ষণতা আমাদের কথাবার্তা এবং আচরণকে প্রভাবিত করতে পারে?
◻ আমাদের মনোভাবের উপর বিচক্ষণতা কী প্রভাব ফেলতে পারে?
◻ বিচক্ষণতার জন্য কেন আমাদের সর্বদা যিহোবার প্রতি তাকান উচিত?
[১৩ পৃষ্ঠার চিত্র]
বিচক্ষণতা আমাদের মনোভাবকে নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে
[১৫ পৃষ্ঠার চিত্র]
বিচক্ষণ রাজা শলোমন উপলব্ধি করেছিলেন যে চপলতা প্রকৃতপক্ষে সন্তোষদায়ক নয়