জীবন ও পরিচর্যা সভার জন্য অধ্যয়ন পুস্তিকা-র রেফারেন্স
জানুয়ারি ২-৮
ঈশ্বরের বাক্যের গুপ্তধন | যিশাইয় ২৪-২৮
“যিহোবা তাঁর লোকেদের যত্ন নেন”
(যিশাইয় ২৫:৪, ৫) কেননা তুমি দরিদ্রের দৃঢ় দুর্গ, সঙ্কটে দীনহীনের দৃঢ় দুর্গ ঝটিকানিবারক আশ্রয়, রৌদ্রনিবারক ছায়া হইয়াছ, যখন দুর্দ্দান্তদের নিঃশ্বাস ভিত্তিতে ঝটিকার ন্যায় হয়। ৫ যেমন শুষ্ক দেশে রৌদ্র, তেমনি তুমি বিদেশীয়দের কোলাহল থামাইবে; যেমন মেঘের ছায়াতে রৌদ্র, তেমনি দুর্দ্দান্তদের হর্ষগান ক্ষান্ত হইবে।
যিশাইয়ের ভবিষ্যদ্বাণী-১ ২৭২ অনু. ৫, ইংরেজি
যিহোবা হস্ত উত্তোলন করেন
৫ যদিও যিহোবা তাঁর শত্রুদের দ্বারা ভয়ংকর বলে বিবেচিত হন, কিন্তু যারা তাঁকে সেবা করতে চায়, সেই মৃদুশীল ও নম্র ব্যক্তিদের কাছে তিনি হলেন এক আশ্রয়। ধর্মীয় ও রাজনৈতিক দুর্দান্ত ব্যক্তিরা বা অত্যাচারী নেতারা হয়তো সত্য উপাসকদের বিশ্বাস ভেঙে ফেলার জন্য সব ধরনের চেষ্টা করে, কিন্তু তারা ব্যর্থ হয় কারণ যিহোবার প্রতি তাঁর উপাসকদের পূর্ণ আস্থা রয়েছে। অবশেষে, তিনি সহজেই তাঁর বিরোধীদের ক্ষান্ত করেন বা থামিয়ে দেন, ঠিক যেন তিনি এক খণ্ড মেঘ দ্বারা মরুভূমির প্রখর রোদকে ঢেকে দেন অথবা দেওয়াল দ্বারা ঝড় আটকে দেন।—পড়ুন, যিশাইয় ২৫:৪, ৫.
(যিশাইয় ২৫:৬) আর বাহিনীগণের সদাপ্রভু এই পর্ব্বতে সর্ব্বজাতির নিমিত্ত উত্তম খাদ্য দ্রব্যের এক ভোজ, পুরাতন দ্রাক্ষারসের, মেদোযুক্ত উত্তম উত্তম খাদ্য দ্রব্যের ও নির্ম্মলীকৃত পুরাতন দ্রাক্ষারসের এক ভোজ প্রস্তুত করিবেন।
যিহোবার ব্যবস্থা থেকে পূর্ণরূপে উপকার লাভ করুন
৪ আমাদের অনেক প্রকাশনা সাধারণত সমস্ত যিহোবার সাক্ষির জন্য লেখা হয়। তবে, কিছু প্রকাশনা বিশেষ দল যেমন, অল্পবয়সিদের অথবা বাবা-মায়েদের জন্য লেখা হয়। আমাদের ওয়েবসাইটের অধিকাংশ প্রবন্ধ ও ভিডিও বিশেষভাবে সেই লোকেদের জন্য তৈরি করা হয়, যারা যিহোবার সাক্ষি নয়। আমরা যে বিভিন্ন ধরনের বিষয়বস্তু পাচ্ছি, সেটা প্রমাণ করে, সমস্ত লোকের জন্য প্রচুর নির্দেশনা জোগানোর বিষয়ে যিহোবা যে-প্রতিজ্ঞা করেছিলেন, তা তিনি রক্ষা করেছেন।—যিশা. ২৫:৬.
যিশাইয়ের ভবিষ্যদ্বাণী-১ ২৭৩ অনু. ৬-৭, ইংরেজি
যিহোবা হস্ত উত্তোলন করেন
“সর্ব্বজাতির নিমিত্ত . . . এক ভোজ”
৬ একজন প্রেমময় বাবার মতো, যিহোবা তাঁর সন্তানদের শুধু সুরক্ষাই করেন না কিন্তু সেইসঙ্গে তাদের খাদ্য দেন, বিশেষভাবে আধ্যাত্মিক উপায়ে। ১৯১৯ সালে তাঁর লোকেদের মুক্ত করার পর, তিনি তাদের সামনে বিজয়ের আনন্দে এক ভোজের ব্যবস্থা করেছিলেন অর্থাৎ প্রচুর পরিমাণ আধ্যাত্মিক খাদ্য সরবরাহ করেছিলেন: “বাহিনীগণের সদাপ্রভু এই পর্ব্বতে সর্ব্বজাতির নিমিত্ত উত্তম খাদ্য দ্রব্যের এক ভোজ, পুরাতন দ্রাক্ষারসের, মেদোযুক্ত উত্তম উত্তম খাদ্য দ্রব্যের ও নির্ম্মলীকৃত পুরাতন দ্রাক্ষারসের এক ভোজ প্রস্তুত করিবেন।”—যিশাইয় ২৫:৬.
৭ সেই ভোজ যিহোবার “পর্ব্বতে” পরিব্যাপ্ত। এই পর্বত কী? এটা হল “সদাপ্রভুর গৃহের পর্ব্বত,” যেটার দিকে “শেষকালে” সমস্ত জাতি স্রোতের মতো প্রবাহিত হয়। এটা হল যিহোবার ‘পবিত্র পর্ব্বত,’ যেখানে তাঁর বিশ্বস্ত উপাসকরা কোনো ক্ষতি কিংবা বিনাশ করে না। (যিশাইয় ২:২; ১১:৯) এই অত্যুচ্চ উপাসনাস্থলে যিহোবা বিশ্বস্ত ব্যক্তিদের জন্য মহাভোজ পরিবেশন করেন। আর এখন যে-সমস্ত উত্তম আধ্যাত্মিক বিষয় প্রচুর পরিমাণে সরবরাহ করা হচ্ছে, সেগুলো হল সেইসমস্ত আক্ষরিক উত্তম বিষয়ের পূর্বাভাস, যেগুলো সেই সময়ে প্রদান করা হবে, যখন ঈশ্বরের রাজ্যই মানবজাতির একমাত্র সরকার হবে। তখন ক্ষুধা আর থাকবে না। “দেশমধ্যে পর্ব্বত-শিখরে প্রচুর শস্য হইবে।”—গীতসংহিতা ৭২:৮, ১৬.
(যিশাইয় ২৫:৭, ৮) আর সর্ব্বদেশীয় লোকেরা যে ঘোমটায় আচ্ছাদিত আছে, ও সর্ব্বজাতীয় লোকদের সম্মুখে যে আবরক বস্ত্র টাঙ্গান আছে, সদাপ্রভু এই পর্ব্বতে তাহা বিনষ্ট করিবেন। ৮ তিনি মৃত্যুকে অনন্তকালের জন্য বিনষ্ট করিয়াছেন, ও প্রভু সদাপ্রভু সকলের মুখ হইতে চক্ষুর জল মুছিয়া দিবেন; এবং সমস্ত পৃথিবী হইতে আপন প্রজাদের দুর্নাম দূর করিবেন; কারণ সদাপ্রভুই এই কথা কহিয়াছেন।
প্রহরীদুর্গ ১৪ ৯/১৫ ২৬ অনু. ১৫
শেষ শত্রু, মৃত্যুকে বিলুপ্ত করা হবে
১৫ এক হাজার বছর পর, বাধ্য লোকেরা পাপ ও অসিদ্ধতা থেকে মুক্ত হবে। পৌল ব্যাখ্যা করেন: “আদমে যেমন সকলে মরে, তেমনি আবার খ্রীষ্টেই সকলে জীবনপ্রাপ্ত হইবে। কিন্তু প্রত্যেক জন আপন আপন শ্রেণীতে; খ্রীষ্ট অগ্রিমাংশ, পরে খ্রীষ্টের লোক সকল [যে-ব্যক্তিরা তাঁর সঙ্গে রাজত্ব করবে] তাঁহার আগমনকালে। তৎপরে পরিণাম হইবে; তখন তিনি সমস্ত আধিপত্য এবং সমস্ত কর্ত্তৃত্ব ও পরাক্রম লোপ করিলে পর পিতা ঈশ্বরের হস্তে রাজ্য সমর্পণ করিবেন। কেননা যাবৎ তিনি ‘সমস্ত শত্রুকে তাঁহার পদতলে না রাখিবেন,’ তাঁহাকে রাজত্ব করিতেই হইবে। শেষ শত্রু যে মৃত্যু, সেও বিলুপ্ত হইবে।” (১ করি. ১৫:২২-২৬) অবশেষে, আদমের কাছ থেকে উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত মৃত্যুকে দূর করে দেওয়া হবে। যে-“আবরক” মানবজাতিকে আচ্ছাদন করে রেখেছিল, তা চিরকালের জন্য দূর হয়ে যাবে।—যিশা. ২৫:৭, ৮.
যিশাইয়ের ভবিষ্যদ্বাণী-১ ২৭৩-২৭৪ অনু. ৮-৯, ইংরেজি
যিহোবা হস্ত উত্তোলন করেন
৮ ঈশ্বরের দ্বারা প্রস্তুতকৃত আধ্যাত্মিক ভোজে যারা অংশ নেয়, তাদের চমৎকার প্রত্যাশা রয়েছে। যিশাইয়ের পরের কথাগুলো শুনুন। পাপ ও মৃত্যুকে শ্বাসরুদ্ধকর “আবরক বস্ত্র” বা ‘আচ্ছাদনের’ সঙ্গে তুলনা করে তিনি বলেন: “সর্ব্বদেশীয় লোকেরা যে ঘোমটায় আচ্ছাদিত আছে, ও সর্ব্বজাতীয় লোকদের সম্মুখে যে আবরক বস্ত্র টাঙ্গান আছে, সদাপ্রভু এই পর্ব্বতে তাহা বিনষ্ট করিবেন। তিনি মৃত্যুকে অনন্তকালের জন্য বিনষ্ট করিয়াছেন, ও প্রভু সদাপ্রভু সকলের মুখ হইতে চক্ষুর জল মুছিয়া দিবেন; এবং সমস্ত পৃথিবী হইতে আপন প্রজাদের দুর্নাম দূর করিবেন; কারণ সদাপ্রভুই এই কথা কহিয়াছেন।”—যিশাইয় ২৫:৭, ৮ক.
৯ হ্যাঁ, পাপ ও মৃত্যু আর থাকবে না! (প্রকাশিত বাক্য ২১:৩, ৪) এ ছাড়া, যিহোবার দাসেরা হাজার হাজার বছর ধরে যে-দুর্নাম সহ্য করেছে, তা-ও দূর করা হবে। “সমস্ত পৃথিবী হইতে আপন প্রজাদের দুর্নাম দূর করিবেন; কারণ সদাপ্রভুই এই কথা কহিয়াছেন।” (যিশাইয় ২৫:৮খ) কীভাবে তা করা হবে? যিহোবা সেই দুর্নামকারীকে অর্থাৎ শয়তান ও তার বংশকে সরিয়ে দেবেন। (প্রকাশিত বাক্য ২০:১-৩) তাই এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই যে, ঈশ্বরের লোকেরা চিৎকার করে বলে উঠবে: “এই দেখ, ইনিই আমাদের ঈশ্বর; আমরা ইহাঁরই অপেক্ষায় ছিলাম, ইনি আমাদিগকে ত্রাণ করিবেন; ইনিই সদাপ্রভু; আমরা ইহাঁরই অপেক্ষায় ছিলাম, আমরা ইহাঁর কৃত পরিত্রাণে উল্লাসিত হইব, আনন্দ করিব।”—যিশাইয় ২৫:৯.
আধ্যাত্মিক রত্ন খুঁজে বের করুন
(যিশাইয় ২৬:১৫) তুমি এই জাতির বৃদ্ধি করিয়াছ, হে সদাপ্রভু, তুমি এই জাতির বৃদ্ধি করিয়াছ; তুমি গৌরবান্বিত হইয়াছ, তুমি দেশের সকল সীমা বিস্তার করিয়াছ।
প্রহরীদুর্গ ১৫ ৭/১৫ ১১ অনু. ১৮
আধ্যাত্মিক পরমদেশকে প্রসারিত করার জন্য কাজ করুন
আমরা যেভাবে আধ্যাত্মিক পরমদেশকে আরও সুন্দর করে তোলার ক্ষেত্রে সাহায্য করতে পারি
১৮ যিহোবা আমাদের সুযোগ দিয়েছেন, যেন আমরা আধ্যাত্মিক পরমদেশকে আরও সুন্দর করে তোলার ক্ষেত্রে সাহায্য করতে পারি আর এটা আমাদের জন্য এক সম্মানের বিষয়। কিন্তু, আমরা কীভাবে এই কাজে সাহায্য করতে পারি? উদ্যোগের সঙ্গে রাজ্যের সুসমাচার প্রচার করার এবং আরও শিষ্য তৈরি করার মাধ্যমে আমরা তা করতে পারি। প্রতি বার আমরা যখন কোনো ব্যক্তিকে ঈশ্বরের দাস হয়ে ওঠার জন্য সাহায্য করি, তখন আমরা এই আধ্যাত্মিক পরমদেশকে প্রসারিত করি।—যিশা. ২৬:১৫; ৫৪:২.
(যিশাইয় ২৬:২০) হে আমার জাতি, চল, তোমার অন্তরাগারে প্রবেশ কর, তোমার দ্বার সকল রুদ্ধ কর; অল্পক্ষণ মাত্র লুক্কায়িত থাক, যে পর্য্যন্ত ক্রোধ অতীত না হয়।
প্রহরীদুর্গ ১৩ ৩/১৫ ২৩ অনু. ১৫-১৬
যিহোবা—আমাদের বাসস্থান
যিহোবা সবসময় আমাদের বাসস্থান হিসেবে থাকবেন
১৫ শয়তানের জগতের শেষ নিকটবর্তী হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এর ‘যাতনাও’ বৃদ্ধি পাবে। (মথি ২৪:৭, ৮) নিশ্চিতভাবেই, মহাক্লেশের সময় পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে। মৌলিক সুযোগসুবিধা বন্ধ হয়ে যাবে এবং লোকেরা নিজেদের জীবন নিয়ে আতঙ্কিত হয়ে পড়বে। (হবক্. ৩:১৬, ১৭) একেবারে নিরাশ হয়ে তারা রূপকভাবে “গুহাতে ও পর্ব্বতীয় শৈলে” আশ্রয় খুঁজবে। (প্রকা. ৬:১৫-১৭) কিন্তু, আক্ষরিক গুহা কিংবা পর্বততুল্য রাজনৈতিক ও বাণিজ্যিক সংগঠন কোনো সুরক্ষা জোগাতে পারবে না।
১৬ কিন্তু, যিহোবার লোকেরা ক্রমাগত তাদের “বাসস্থান” যিহোবা ঈশ্বরের কাছ থেকে প্রাপ্ত নিরাপত্তা লাভ করবে। ভাববাদী হবক্কূকের মতো তারা ‘সদাপ্রভুতে আনন্দ করিবে।’ তারা ‘তাহাদের ত্রাণেশ্বরে উল্লাসিত হইবে।’ (হবক্. ৩:১৮) সেই অশান্ত সময়ে কোন কোন উপায়ে যিহোবা “বাসস্থান” হিসেবে প্রমাণিত হবেন? কী ঘটে, তা দেখার জন্য আমাদের অপেক্ষা করতে হবে। কিন্তু, এই বিষয়ে আমরা নিশ্চিত থাকতে পারি: যাত্রার সময়ের ইস্রায়েলীয়দের মতো, ‘বিস্তর লোকও’ সংগঠিত থাকবে, ঐশিক নির্দেশনার প্রতি আগের চেয়ে আরও বেশি সতর্ক থাকবে। (প্রকা. ৭:৯; পড়ুন, যাত্রাপুস্তক ১৩:১৮.) সেই নির্দেশনা ঈশতান্ত্রিক উপায়ে, সম্ভবত মণ্ডলীর ব্যবস্থার মাধ্যমে আসবে। বস্তুতপক্ষে, সারা পৃথিবীর হাজার হাজার মণ্ডলী, যিশাইয় ২৬:২০ পদে ভবিষ্যদ্বাণীকৃত সুরক্ষামূলক ‘অন্তরাগার’ হিসেবে প্রতীয়মান হবে বলে মনে হয়। (পড়ুন।) মণ্ডলীর সভাগুলোকে কি আপনি মূল্যবান বলে গণ্য করেন? মণ্ডলীর ব্যবস্থার মাধ্যমে যিহোবা যে-নির্দেশনা প্রদান করেন, সেটার প্রতি কি আপনি সঙ্গেসঙ্গে সাড়া দেন?—ইব্রীয় ১৩:১৭.
বাইবেল পাঠ
(যিশাইয় ২৮:১-১৩) হায়! ইফ্রয়িমের মাতালদের দর্পমুকুট; হায়! তাহার তেজোময় শোভার ম্লানপ্রায় পুষ্প, যাহা দ্রাক্ষারসে পরাভূতদের ফলশালী উপত্যকার মস্তকে রহিয়াছে! ২ দেখ, প্রভুর একজন বলবান ও বীর্য্যশালী লোক আছে; সে শিলাযুক্ত ধারাসম্পাতের, প্রলয়কারী ঝটিকার ন্যায়, অতি বেগে ধাবমান প্রবল ধারাসম্পাতের ন্যায়, বলপূর্ব্বক [সকলই] ভূমিতে নিক্ষেপ করিবে। ৩ ইফ্রয়িমের মাতালদের দর্প-মুকুট পদতলে দলিত হইবে; ৪ এবং ফলশালী উপত্যকার মস্তকে স্থিত তাহাদের তেজোময় শোভার ম্লানপ্রায় যে পুষ্প, তাহা ফলসংগ্রহ-কালের পূর্ব্ববর্ত্তী এমন আশুপক্ব ডুমুরফলের সদৃশ হইবে, যাহা লোকে দেখিবামাত্র লক্ষ্য করে, করতলে করিবামাত্র গ্রাস করে। ৫ সেই দিন বাহিনীগণের সদাপ্রভুই আপন প্রজাদের অবশিষ্টাংশের জন্য শোভার মুকুট ও তেজের কিরীট হইবেন; ৬ আর বিচারার্থে উপবিষ্ট ব্যক্তির বিচারের আত্মা, ও যাহারা নগর-দ্বারে যুদ্ধ ফিরায়, তাহাদের বিক্রমস্বরূপ হইবেন। ৭ কিন্তু ইহারাও দ্রাক্ষারসে ভ্রান্ত ও সুরাপানে টলটলায়মান হইয়াছে; যাজক ও ভাববাদী সুরাপানে ভ্রান্ত হইয়াছে; তাহারা দ্রাক্ষারসে কবলিত ও সুরাপানে টলটলায়মান হয়, তাহারা দর্শনে ভ্রান্ত ও বিচারে বিচলিত হয়। ৮ বস্তুতঃ সকল মেজ বমিতে ও মলে পরিপূর্ণ হইয়াছে, স্থান মাত্র নাই। ৯ ‘সে কাহাকে জ্ঞান শিক্ষা দিবে? কাহাকে বার্ত্তা বুঝাইয়া দিবে? কি তাহাদিগকে, যাহারা দুধ ছাড়িয়াছে ও স্তন্যপানে নিবৃত্ত হইয়াছে? ১০ কেননা বিধির উপরে বিধি, বিধির উপরে বিধি; পাঁতির উপরে পাঁতি, পাঁতির উপরে পাঁতি; এখানে একটুকু, সেখানে একটুকু।’ ১১ শুন, তিনি অস্পষ্টবাক্ ওষ্ঠ ও পরভাষা দ্বারা এই লোকদের সহিত কথাবার্ত্তা কহিবেন, ১২ যাহাদিগকে তিনি বলিলেন, ‘এই বিশ্রামস্থানে, তোমরা ক্লান্তকে বিশ্রাম দেও, আর এই প্রাণ জুড়াইবার স্থান;’ তথাপি তাহারা শুনিতে সম্মত হইল না। ১৩ সেই জন্য তাহাদের প্রতি সদাপ্রভুর বাক্য ‘বিধির উপরে বিধি, বিধির উপরে বিধি; পাঁতির উপরে পাঁতি, পাঁতির উপরে পাঁতি; এখানে একটুকু, সেখানে একটুকু’ হইবে; যেন তাহারা গিয়া পশ্চাতে পড়িয়া ভগ্ন হয়, ও ফাঁদে বদ্ধ হইয়া ধরা পড়ে।
জানুয়ারি ৯-১৫
ঈশ্বরের বাক্যের গুপ্তধন | যিশাইয় ২৯-৩৩
“এক রাজা ধার্ম্মিকতায় রাজত্ব করিবেন”
(যিশাইয় ৩২:১) দেখ, এক রাজা ধার্ম্মিকতায় রাজত্ব করিবেন, ও শাসনকর্ত্তৃগণ ন্যায়ে শাসন করিবেন।
গৌরবান্বিত রাজা খ্রিস্টের প্রশংসা করুন!
১৩ এ ছাড়া, খ্রিস্ট ‘ধার্ম্মিকতার পক্ষে’ বের হন। রাজা যে-সত্যের পক্ষসমর্থন করেন, তা হল সেই ধার্মিকতা, যেটাকে ঈশ্বর “ধার্ম্মিকতা” বলে মনে করেন আর তা হল, কোনটা সঠিক এবং কোনটা ভুল সেই বিষয়ে যিহোবার মান। (রোমীয় ৩:২১; দ্বিতীয়. ৩২:৪) রাজা যিশু খ্রিস্ট সম্বন্ধে যিশাইয় ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন: “এক রাজা ধার্ম্মিকতায় রাজত্ব করিবেন।” (যিশা. ৩২:১) যিশুর শাসন প্রতিজ্ঞাত ‘নূতন আকাশমণ্ডল’ এবং ‘নূতন পৃথিবী’ নিয়ে আসবে, যেখানে “ধার্ম্মিকতা বসতি করে।” (২ পিতর ৩:১৩) সেই নতুন জগতের প্রত্যেক বাসিন্দাকে যিহোবার মান অনুযায়ী জীবনযাপন করতে হবে।—যিশা. ১১:১-৫.
(যিশাইয় ৩২:২) যেমন বাত্যা হইতে আচ্ছাদন, ও ঝটিকা হইতে অন্তরাল, যেমন শুষ্ক স্থানে জলস্রোত ও শ্রান্তিজনক ভূমিতে কোন প্রকাণ্ড শৈলের ছায়া, এক জন মনুষ্য তদ্রূপ হইবেন।
যিশাইয়ের ভবিষ্যদ্বাণী-১ ৩৩২-৩৩৪ অনু. ৭-৮, ইংরেজি
রাজা ও তাঁর শাসনকর্তারা
৭ সংকটময় “যুগান্ত” সম্বন্ধে তাঁর গুরুত্বপূর্ণ ভবিষ্যদ্বাণীতে যিশু বলেছিলেন: “দেখিও, ব্যাকুল হইও না।” (মথি ২৪:৩-৮) কেন যিশুর অনুসারীরা বর্তমানের বিপদসংকুল পরিস্থিতিতে ব্যাকুল হয় না বা ভয় পায় না? একটা কারণ হল “শাসনকর্ত্তৃগণ”—অভিষিক্ত ব্যক্তিরাই হোক কিংবা “আরও মেষ” হোক—তারা অনুগতভাবে পালের সুরক্ষা করছেন। (যোহন ১০:১৬) তারা নির্ভীকভাবে তাদের ভাই-বোনদের যত্ন নেন, এমনকী জাতিগত যুদ্ধ ও গণহত্যার মতো আতঙ্কজনক পরিস্থিতির মধ্যেও। আধ্যাত্মিকভাবে বিধ্বস্ত এক জগতে, তারা লক্ষ রাখেন যেন বিষণ্ণ ব্যক্তিরা ঈশ্বরের বাক্য বাইবেলের গঠনমূলক সত্যগুলোর দ্বারা সতেজ হয়।
৮ বিগত ৫০ বছরে “শাসনকর্ত্তৃগণ” স্পষ্টভাবে প্রকাশ পেয়েছেন। ‘শাসনকর্ত্তৃগণের’ মধ্যে যারা আরও মেষ, তাদের “অধ্যক্ষ” শ্রেণি হিসেবে গড়ে তোলার জন্য প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে, যাতে মহাক্লেশের পর তাদের মধ্যে যোগ্য ব্যক্তিরা ‘নতুন পৃথিবীর’ প্রশাসনিক কার্যভারে নিযুক্ত হওয়ার জন্য প্রস্তুত থাকেন। (যিহিষ্কেল ৪৪:২, ৩; ২ পিতর ৩:১৩) রাজ্যের কাজে নেতৃত্ব দেওয়ার সময়ে তারা আধ্যাত্মিক নির্দেশনা ও সতেজতা প্রদান করার মাধ্যমে নিজেদের “কোনো প্রকাণ্ড শৈলের ছায়া” হিসেবে প্রমাণ করছেন অর্থাৎ উপাসনার ক্ষেত্রে পালের জন্য স্বস্তি নিয়ে আসছেন।
(যিশাইয় ৩২:৩, ৪) তখন দর্শকদের চক্ষু মুদ্রিত থাকিবে না, আর শ্রোতাদের কর্ণ অবধান করিবে। ৪ আর চপল লোকদের চিত্ত জ্ঞান পাইবে, এবং তোৎলাদের জিহ্বা সহজে স্পষ্ট কথা কহিবে।
যিশাইয়ের ভবিষ্যদ্বাণী-১ ৩৩৪-৩৩৫ অনু. ১০-১১, ইংরেজি
রাজা ও তাঁর শাসনকর্তারা
চোখ, কান ও হৃদয় দিয়ে অবধান করা
১০ কীভাবে বিস্তর লোক যিহোবার ঈশতান্ত্রিক ব্যবস্থার প্রতি সাড়া দিয়েছে? ভবিষ্যদ্বাণীটা আরও বলে: “তখন দর্শকদের চক্ষু মুদ্রিত থাকিবে না, আর শ্রোতাদের কর্ণ অবধান করিবে।” (যিশাইয় ৩২:৩) বছরের পর বছর ধরে, যিহোবা তাঁর প্রিয় দাসদের নির্দেশনা দিয়েছেন ও তাদের পরিপক্ব করে তুলেছেন। বিশ্বব্যাপী যিহোবার সাক্ষিদের মণ্ডলীগুলোতে পরিচালিত ঐশিক পরিচর্যা বিদ্যালয় ও অন্যান্য সভা; জেলা সম্মেলন, জাতীয় সম্মেলন ও আন্তর্জাতিক সম্মেলন; সেইসঙ্গে পালের সঙ্গে প্রেমপূর্ণ আচরণ করার জন্য ‘শাসনকর্ত্তৃগণকে’ বিশেষ প্রশিক্ষণদান, এই সবই লক্ষ লক্ষ ব্যক্তিকে নিয়ে এক একতাবদ্ধ ভ্রাতৃসমাজ গড়ে তোলায় অবদান রেখেছে। এই পালকরা পৃথিবীর যেখানেই থাকুন না কেন, তারা সত্যের বাক্যের অগ্রগতির জন্য বোধগম্যতায় যে-সমস্ত রদবদল করা হয়, সেগুলোর প্রতি তাদের কান খোলা রেখেছেন। বাইবেল প্রশিক্ষিত বিবেক থাকায়, তারা শোনার জন্য ও বাধ্য হওয়ার জন্য সদাপ্রস্তুত।—গীতসংহিতা ২৫:১০.
১১ এরপর সেই ভবিষ্যদ্বাণী সতর্ক করে: “আর চপল লোকদের চিত্ত জ্ঞান পাইবে, এবং তোৎলাদের জিহ্বা সহজে স্পষ্ট কথা কহিবে।” (যিশাইয় ৩২:৪) কেউ যেন চপল হয়ে বা তাড়াহুড়ো করে কোনটা সঠিক ও কোনটা ভুল সেই সিদ্ধান্তে চলে না আসে। বাইবেল বলে: “তুমি কি হঠকারী” বা ভেবে-চিন্তে কাজ করে না এমন “লোককে দেখিতেছ? তাহার অপেক্ষা বরং হীনবুদ্ধির বিষয়ে অধিক আশা আছে।” (হিতোপদেশ ২৯:২০; উপদেশক ৫:২) ১৯১৯ সালের আগে, এমনকী যিহোবার লোকেরাও বাবিলীয় ধারণাগুলোর দ্বারা কলুষিত ছিল। কিন্তু সেই বছর থেকে যিহোবা তাঁর উদ্দেশ্য সম্বন্ধে তাদের আরও স্পষ্ট এক বোধগম্যতা দান করেছেন। তিনি যে-সত্যগুলো প্রকাশ করেছেন, সেগুলো তারা তাড়াহুড়ো করে নয় বরং ভালোভাবে চিন্তাভাবনা করে বুঝতে পেরেছে আর এখন তারা অনিশ্চয়তা সহকারে তোতলাদের মতো নয় বরং নিশ্চয়তা সহকারে কথা বলছে।
আধ্যাত্মিক রত্ন খুঁজে বের করুন:
(যিশাইয় ৩০:২১) আর দক্ষিণে কি বামে ফিরিবার সময়ে তোমার কর্ণ পশ্চাৎ হইতে এই বাণী শুনিতে পাইবে, এই পথ, তোমরা এই পথেই চল।
যেখানেই থাকুন, যিহোবার রব শুনুন
২ বর্তমানে যিহোবা বাইবেল, তাঁর পবিত্র আত্মা এবং মণ্ডলীকে ব্যবহার করে আমাদের নির্দেশনা দেন। (প্রেরিত ৯:৩১; ১৫:২৮; ২ তীম. ৩:১৬, ১৭) তাঁর নির্দেশনা এতই স্পষ্ট, যেন আমরা তাঁকে এই কথা বলতে শুনি: “এই পথ, তোমরা এই পথেই চল।” (যিশা. ৩০:২১) এ ছাড়া, যিহোবা যিশুর মাধ্যমে আমাদের কাছে তাঁর রব প্রকাশ করেন। তিনি যিশুকে নিযুক্ত করেছেন, যিনি ‘বিশ্বস্ত ও বুদ্ধিমান্ দাসের’ মাধ্যমে মণ্ডলীকে নেতৃত্ব দেন। (মথি ২৪:৪৫) এই নির্দেশনা ও পরিচালনাকে আমাদের গুরুত্বের সঙ্গে নিতে হবে কারণ তা করার ওপরই আমাদের অনন্তজীবন নির্ভর করে।—ইব্রীয় ৫:৯.
(যিশাইয় ৩৩:২২) কেননা সদাপ্রভু আমাদের বিচারকর্ত্তা, সদাপ্রভু আমাদের ব্যবস্থাপক, সদাপ্রভু আমাদের রাজা; তিনিই আমাদিগকে পরিত্রাণ করিবেন।
প্রহরীদুর্গ ১৪ ১০/১৫ ১৪ অনু. ৪
তোমরা “যাজকদের এক রাজ্য” হবে
৪ ব্যবস্থা চুক্তি খ্রিস্টপূর্ব ১৫১৩ সালে কার্যকর হয়েছিল। সেই চুক্তির মাধ্যমে যিহোবা প্রাচীন ইস্রায়েল জাতিকে এক বিশেষ উদ্দেশ্যের জন্য বেছে নিয়েছিলেন। ঈশ্বর তাদের বিচারকর্তা, ব্যবস্থাপক এবং রাজা হবেন। (যিশা. ৩৩:২২) লোকেরা যখন ঈশ্বরের ধার্মিক মানের প্রতি বাধ্য অথবা অবাধ্য হয়, তখন কী ঘটে, ইস্রায়েলের ইতিহাস তা তুলে ধরে। ঈশ্বরের ব্যবস্থার প্রতি বাধ্যতার অর্থ ছিল, ইস্রায়েলীয়রা পৌত্তলিকদের বিয়ে করতে পারবে না অথবা অন্য দেব-দেবীর উপাসনা করতে পারবে না। এই ব্যবস্থা অব্রাহামের বংশকে কলুষতা থেকে সুরক্ষা করার জন্য তৈরি করা হয়েছিল।—যাত্রা. ২০:৪-৬; ৩৪:১২-১৬.
বাইবেল পাঠ
(যিশাইয় ৩০:২২-৩৩) আর তোমরা আপনাদের ক্ষোদিত রৌপ্যপ্রতিমার সাজ ও ছাঁচে ঢালা স্বর্ণ-প্রতিমার আভরণ অশুচি করিবে, তুমি তাহা অশুচি বস্তুর ন্যায় ফেলিয়া দিবে, বলিবে, দূর, দূর। ২৩ আর তিনি তোমার বীজের জন্য বৃষ্টি দিবেন, তাহাতে তুমি ভূমিতে বপন করিতে পারিবে; এবং ভূমিজাত ভক্ষ্য দিবেন, তাহা উত্তম ও পুষ্টিকর হইবে; সেই দিন তোমার পশুপাল প্রশস্ত মাঠে চরিবে। ২৪ চাষকারী গোরু ও গর্দ্দভ সকল কুলাতে ও চালুনীতে ঝাড়া ও সুস্বাদু দ্রব্যে মিশ্রিত কলায় খাইবে। ২৫ পরন্তু যে মহাহত্যার দিনে দুর্গ সকল পতিত হইবে, সেই দিন প্রত্যেক তুঙ্গ পর্ব্বতে ও প্রত্যেক উচ্চ গিরিতে জলের প্রবাহ ও স্রোত হইবে। ২৬ আর যে দিন সদাপ্রভু আপন প্রজাদের ভগ্ন অবয়ব জোড়া দিবেন, ও প্রহারজাত ক্ষত সুস্থ করিবেন, সেই দিন চন্দ্রের দীপ্তি সূর্য্যের দীপ্তির তুল্য হইবে, এবং সূর্য্যের দীপ্তি সপ্তগুণ অধিক, অর্থাৎ সপ্ত দিবসের দীপ্তির সমান হইবে। ২৭ দেখ, সদাপ্রভুর নাম দূর হইতে আসিতেছে, তাঁহার ক্রোধাগ্নি জ্বলিতেছে, ও ঘন ধূমরাশি উঠিতেছে; তাঁহার ওষ্ঠাধর তাপে পরিপূর্ণ তাঁহার জিহ্বা সর্ব্বগ্রাসক অগ্নিস্বরূপ। ২৮ তাঁহার নিঃশ্বাস প্লাবক বন্যার সদৃশ, তাহা কণ্ঠ পর্য্যন্ত উঠিবে; তাহা সর্ব্বদেশীয় লোকদিগকে বিনাশের কুলাতে ঝাড়িতে উদ্যত; আর জাতিগণের মুখে ভ্রান্তিজনক বল্গা দেওয়া যাইবে। ২৯ পবিত্র উৎসব-রাত্রির ন্যায় তোমাদের গীত হইবে, এবং লোকে যেমন সদাপ্রভুর পর্ব্বতে ইস্রায়েলের শৈলের কাছে গমন কালে বাঁসী বাজায়, তদ্রূপ তোমাদের চিত্তের আনন্দ হইবে। ৩০ সদাপ্রভু প্রচণ্ড ক্রোধ, সর্ব্বগ্রাসক অগ্নিশিখা, বাত্যা, ঝটিকা ও করকা দ্বারা আপনার প্রতাপান্বিত রব শুনাইবেন, ও আপনার হস্তাবতারণ দেখাইবেন। ৩১ কারণ সদাপ্রভুর রবে অশূর ভগ্ন হইবে, তিনি তাহাকে দণ্ডাঘাত করিবেন। ৩২ আর সদাপ্রভু নিরূপিত দণ্ডের যত আঘাত তাহার উপরে অবতারণ করিবেন, সে সকল তবল ও বীণা সহকারে ঘটিবে; এবং তিনি ঐ জাতির সহিত তুমুল যুদ্ধ করিবেন। ৩৩ কেননা তোফৎ [অগ্নিকুণ্ড] পূর্ব্বকালাবধি সাজান রহিয়াছে, তাহাই রাজার জন্য প্রস্তুত আছে; তিনি তাহা গভীর ও প্রশস্ত করিয়াছেন; তাহার চিতা অগ্নি ও প্রচুর কাষ্ঠময়; সদাপ্রভুর ফুৎকার গন্ধকস্রোতের ন্যায় তাহা প্রজ্বলিত করিবে।
জানুয়ারি ১৬-২২
ঈশ্বরের বাক্যের গুপ্তধন | যিশাইয় ৩৪-৩৭
“হিষ্কিয় তার বিশ্বাসের জন্য পুরস্কার লাভ করেন”
(যিশাইয় ৩৬:১) হিষ্কিয় রাজার চতুর্দ্দশ বৎসরে অশূররাজ সন্হেরীব যিহূদার প্রাচীর-বেষ্টিত সমস্ত নগরের বিরুদ্ধে আসিয়া সে সকল হস্তগত করিতে লাগিলেন।
(যিশাইয় ৩৬:৪-১০) রব্শাকি তাঁহাদিগকে কহিলেন, “তোমরা হিষ্কিয়কে এই কথা বল, রাজাধিরাজ অশূর-রাজ এই কথা কহেন, তুমি যে সাহস করিতেছ, সে কেমন সাহস? ৫ আমি বলি, তোমার সংগ্রামের বুদ্ধি ও পরাক্রম ওষ্ঠের কথা মাত্র; বল দেখি, তুমি কাহার উপরে নির্ভর করিয়া আমার বিদ্রোহী হইলে? ৬ দেখ, তুমি ঐ থেৎলা নলরূপ যষ্টির, অর্থাৎ মিসরের উপরে নির্ভর করিতেছ; কিন্তু যে কেহ তাহার উপরে নির্ভর করে, সে তাহার হস্তে ফুটিয়া তাহা বিদ্ধ করে; যত লোক মিসর-রাজ ফরৌণের উপরে নির্ভর করে, সেই সকলের পক্ষে সে তদ্রূপ। ৭ আর যদি আমাকে বল, আমরা আপন ঈশ্বর সদাপ্রভুতে বিশ্বাস করি, তবে তিনি কি সেই নহেন, যাঁহার উচ্চস্থলী ও যজ্ঞবেদি সকল হিষ্কিয় দূর করিয়াছে, এবং যিহূদার ও যিরূশালেমের লোকদিগকে বলিয়াছে, ‘তোমরা এই যজ্ঞবেদির কাছে প্রণিপাত করিবে’? ৮ তুমি এক বার আমার প্রভু অশূর-রাজের কাছে পণ কর; আমি তোমাকে দুই সহস্র অশ্ব দিই, যদি তুমি তদারোহী লোক দিতে পার। ৯ তবে কেমন করিয়া আমার প্রভুর ক্ষুদ্রতম দাসগণের মধ্যে এক জন সেনাপতিকে হটাইয়া দিবে, এবং রথ সকলের ও অশ্বারোহীদের জন্য মিসরের উপরে বিশ্বাস করিবে? ১০ বল দেখি, আমি কি সদাপ্রভুর সম্মতি ব্যতিরেকে এই দেশ ধবংস করিতে আসিয়াছি? সদাপ্রভুই আমাকে বলিয়াছেন, তুমি ঐ দেশে গিয়া উহা ধবংস কর।”
(যিশাইয় ৩৬:১৫) আর হিষ্কিয় এই কথা বলিয়া সদাপ্রভুতে তোমাদের বিশ্বাস না জন্মাউক যে, সদাপ্রভু আমাদিগকে নিশ্চয়ই উদ্ধার করিবেন, এই নগর কখনও অশূর-রাজের হস্তগত হইবে না।
(যিশাইয় ৩৬:১৮-২০) সদাপ্রভু আমাদিগকে উদ্ধার করিবেন, এই বলিয়া যেন হিষ্কিয় তোমাদিগকে না ভুলায়। জাতিগণের দেবতারা কি কেহ অশূররাজের হস্ত হইতে আপন আপন দেশ রক্ষা করিয়াছে? ১৯ হমাতের ও অর্পদের দেবগণ কোথায়? সফর্বয়িমের দেবগণ কোথায়? উহারা কি আমার হস্ত হইতে শমরিয়াকে রক্ষা করিয়াছে? ২০ ভিন্ন ভিন্ন দেশের সমস্ত দেবতার মধ্যে কোন্ দেবগণ আমার হস্ত হইতে আপনাদের দেশ উদ্ধার করিয়াছে? তবে সদাপ্রভু আমার হস্ত হইতে যিরূশালেমকে উদ্ধার করিবেন, ইহা কি সম্ভব?”
যিশাইয়ের ভবিষ্যদ্বাণী-১ ৩৮৬-৩৮৮ অনু. ৭-১৪, ইংরেজি
একজন রাজার বিশ্বাস পুরস্কৃত হয়
রব্শাকি তার বক্তব্য তুলে ধরেন
৭ যিরূশালেম যেন আত্মসমর্পণ করে সেই দাবি জানানোর জন্য সন্হেরীব সেই নগরে রব্শাকি (সেনাবাহিনীর একটা পদের নাম, কোনো ব্যক্তিগত নাম নয়) ও আরও দু-জন উচ্চপদস্থ ব্যক্তিকে পাঠান। (২ রাজাবলি ১৮:১৭) এই ব্যক্তিরা হিষ্কিয়ের তিন জন প্রতিনিধি, ইলিয়াকীম, শিব্ন লেখক ও আসফের ছেলে যোয়াহ নামে ইতিহাসরচকের সঙ্গে নগর প্রাচীরের বাইরে দেখা করেন।—যিশাইয় ৩৬:২, ৩.
৮ রব্শাকির উদ্দেশ্য বেশ সোজাসাপটা—যিরূশালেমকে যুদ্ধ না করেই আত্মসমর্পণ করানোর জন্য প্ররোচিত করা। তিনি প্রথমে ইব্রীয় ভাষায় চিৎকার করে বলেন: “তুমি যে সাহস করিতেছ, সে কেমন সাহস? . . . বল দেখি, তুমি কাহার উপরে নির্ভর করিয়া আমার বিদ্রোহী হইলে? (যিশাইয় ৩৬:৪, ৫) তারপর রব্শাকি আতঙ্কগ্রস্ত যিহুদিদের বিদ্রূপ করেন, তাদের মনে করিয়ে দেন, তারা পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন। তারা কার কাছে সাহায্য চাইবে? সেই “থেৎলা নলরূপ যষ্টির” অর্থাৎ মিশরের কাছে? (যিশাইয় ৩৬:৬) মিশর এখন থেৎলা নলের সমরূপ; কারণ প্রাক্তন এই বিশ্বশক্তি সাময়িকভাবে কূশের কাছে পরাজিত হয়েছে আর মিশরের বর্তমান ফরৌণ কোনো মিশরীয় ব্যক্তি নন বরং কূশীয় রাজা তির্হক। আর সেই রাজা অশূরের কাছে পরাজিত হতে যাচ্ছেন। (২ রাজাবলি ১৯:৮, ৯) মিশর যেহেতু নিজেকেই রক্ষা করতে পারেনি, তাই এটা যিহূদাকে সামান্যই সাহায্য করতে পারবে।
৯ রব্শাকি এখন যুক্তি করেন, যিহোবা তাঁর লোকেদের জন্য যুদ্ধ করবেন না কারণ তিনি তাদের প্রতি অসন্তুষ্ট হয়েছেন। রব্শাকি বলেন: “যদি আমাকে বল, আমরা আপন ঈশ্বর সদাপ্রভুতে বিশ্বাস করি, তবে তিনি কি সেই নহেন, যাঁহার উচ্চস্থলী ও যজ্ঞবেদি সকল হিষ্কিয় দূর করিয়াছে?” (যিশাইয় ৩৬:৭) অবশ্য, উচ্চস্থলী ও যজ্ঞবেদি সকল ভেঙে ফেলার মাধ্যমে যিহুদিরা আসলে যিহোবাকে প্রত্যাখ্যান করেনি বরং যিহোবার কাছে ফিরে এসেছে।
১০ এরপর রব্শাকি যিহুদিদের মনে করিয়ে দেন, তাদের সেনাবাহিনীর অবস্থা খুবই করুণ। তিনি উদ্ধতভাবে এই প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আহ্বান করেন: “আমি তোমাকে দুই সহস্র অশ্ব দিই, যদি তুমি তদারোহী লোক দিতে পার।” (যিশাইয় ৩৬:৮) কিন্তু বাস্তবে, যিহূদার প্রশিক্ষিত অশ্বারোহীর সংখ্যা বেশি না কি কম, তাতে কি কিছু যায়-আসে? না, কারণ যিহূদার পরিত্রাণ আরও উন্নত সেনাবাহিনীর শক্তির উপর নির্ভর করে না। হিতোপদেশ ২১:৩১ পদ বিষয়টাকে এভাবে ব্যাখ্যা করে: “যুদ্ধের দিনের জন্য অশ্ব সুসজ্জিত হয়; কিন্তু বিজয় সদাপ্রভু হইতে হয়।” তারপর রব্শাকি দাবি করেন, যিহোবার আশীর্বাদ যিহুদিদের উপর নয় বরং অশূরীয়দের উপর রয়েছে। তা না হলে অশূরীয়রা কখনোই যিহূদার এলাকায় বলপূর্বক ঢুকতে পারত না, তিনি যুক্তি করেন।—যিশাইয় ৩৬:৯, ১০.
১১ যারা নগর প্রাচীরের উপর থেকে রব্শাকির কথা শুনছিল, তাদের উপর তার যুক্তি কেমন প্রভাব ফেলবে তা নিয়ে হিষ্কিয়ের প্রতিনিধিরা চিন্তিত হন। এই যিহুদি কর্মচারীরা অনুরোধ করেন: “বিনয় করি, আপনার দাসদিগকে অরামীয় ভাষায় বলুন, কেননা আমরা তাহা বুঝিতে পারি; প্রাচীরের উপরিস্থ লোকদের কর্ণগোচরে আমাদের কাছে যিহূদী ভাষায় কথা বলিবেন না।” (যিশাইয় ৩৬:১১) কিন্তু অরামীয় ভাষায় কথা বলার কোনো উদ্দেশ্যই রব্শাকির নেই। তিনি যিহুদিদের মনে সন্দেহ ও ভয়ের বীজ ঢোকাতে চান, যাতে তারা আত্মসমর্পণ করে এবং কোনো যুদ্ধ না করেই যিরূশালেম জয় করা যায়! (যিশাইয় ৩৬:১২) তাই সেই অশূরীয় ব্যক্তি আবারও “যিহূদী ভাষায়” কথা বলতে থাকেন। তিনি যিরূশালেমের অধিবাসীদের সতর্ক করেন: “হিষ্কিয় তোমাদের ভ্রান্তি না জম্মাউক; কেননা তোমাদিগকে রক্ষা করিতে তাহার সাধ্য নাই।” এরপর, যারা কথা শুনছিল তাদের প্রলুব্ধ করার চেষ্টায় তিনি অশূরীয় শাসনের অধীনে যিহুদিদের জীবন কেমন হবে, সেটার একটা চিত্র তুলে ধরেন: “তোমরা আমার সঙ্গে সন্ধি কর, বাহির হইয়া আমার কাছে আইস; তোমরা প্রত্যেক জন আপন আপন দ্রাক্ষাফল ও ডুমুর ফল ভোজন কর, এবং আপন আপন কূপের জল পান কর; পরে আমি আসিয়া তোমাদের নিজ দেশের ন্যায় এক দেশে, শস্য ও দ্রাক্ষারসের দেশে, রুটী ও দ্রাক্ষাক্ষেত্রের দেশে তোমাদিগকে লইয়া যাইব।”—যিশাইয় ৩৬:১৩-১৭.
১২ এই বছর যিহুদিদের কোনো শস্যচ্ছেদনের কাজ নেই—অশূরীয়দের আক্রমণের কারণে তারা শস্য রোপণ করতে পারেনি। রসালো আঙুর খাওয়ার ও ঠাণ্ডা জলপানের প্রত্যাশা নিশ্চয়ই সেই ব্যক্তিদের হৃদয়কে নাড়া দেয়, যারা প্রাচীরের উপর থেকে কথা শুনছিল। কিন্তু, রব্শাকি এখনও যিহুদিদের দুর্বল করার চেষ্টা থামাননি।
১৩ রব্শাকি এরপর তার যুক্তির ভাণ্ডার থেকে আরেকটা মৌখিক অস্ত্র বের করে আনেন। তিনি যিহুদিদের সতর্ক করেন যেন তারা হিষ্কিয়ের এই কথা বিশ্বাস না করে: “সদাপ্রভু আমাদিগকে উদ্ধার করিবেন।” রব্শাকি যিহুদিদের মনে করিয়ে দেন, শমরিয়ার দেবতারা দশ বংশের উপর অশূরীয়দের জয় থামাতে পারেনি। আর অন্য যে-সমস্ত জাতিকে অশূরীয়রা পরাজিত করেছে, তাদের দেবতাদের বিষয়ে কী বলা যায়? “হমাতের ও অর্পদের দেবগণ কোথায়?” তিনি জানতে চান। “সফর্বয়িমের দেবগণ কোথায়? উহারা কি আমার হস্ত হইতে শমরিয়াকে রক্ষা করিয়াছে?”—যিশাইয় ৩৬:১৮-২০.
১৪ মিথ্যা দেবতাদের উপাসক রব্শাকি নিশ্চিতভাবেই ধর্মভ্রষ্ট শমরিয়া এবং হিষ্কিয়ের অধীনে থাকা যিরূশালেমের মধ্যে যে-বিশাল পার্থক্য রয়েছে, তা বোঝেন না। দশ বংশের রাজ্যকে রক্ষা করার কোনো ক্ষমতা শমরিয়ার মিথ্যা দেবতাদের ছিল না। (২ রাজাবলি ১৭:৭, ১৭, ১৮) অন্যদিকে, হিষ্কিয়ের অধীনে থাকা যিরূশালেম মিথ্যা দেবতাদের কাছ থেকে সরে এসেছে এবং যিহোবার সেবা করার জন্য ফিরে এসেছে। কিন্তু, তিন যিহুদি প্রতিনিধি রব্শাকির কাছে এটা ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করেন না। “লোকেরা নীরব হইয়া থাকিল, তাহার এক কথারও উত্তর করিল না, কারণ রাজার এই আজ্ঞা ছিল যে, তাহাকে উত্তর দিও না।” (যিশাইয় ৩৬:২১) ইলিয়াকীম, শিব্ন ও যোয়াহ হিষ্কিয়ের কাছে ফিরে যান এবং রব্শাকির কথা তাকে জানান।—যিশাইয় ৩৬:২২.
(যিশাইয় ৩৭:১, ২) তাহা শুনিয়া হিষ্কিয় রাজা আপন বস্ত্র ছিঁড়িয়া চট পরিধান করিয়া সদাপ্রভুর গৃহে গমন করিলেন। ২ আর রাজবাটীর অধ্যক্ষ ইলীয়াকীমকে ও শিব্ন লেখককে এবং যাজকদের প্রাচীনবর্গকে চট পরিধান করাইয়া আমোসের পুত্ত্র যিশাইয় ভাববাদীর নিকটে পাঠাইয়া দিলেন।
(যিশাইয় ৩৭:১৪-২০) হিষ্কিয় দূতগণের হস্ত হইতে পত্রখানি লইয়া পাঠ করিলেন; পরে হিষ্কিয় সদাপ্রভুর গৃহে উঠিয়া গেলেন, এবং সদাপ্রভুর সম্মুখে তাহা বিস্তার করিলেন। ১৫ আর হিষ্কিয় সদাপ্রভুর কাছে প্রার্থনা করিলেন, ১৬ কহিলেন, হে বাহিনীগণের সদাপ্রভু, ইস্রায়েলের ঈশ্বর, করূবদ্বয়ে আসীন, তুমি, কেবল মাত্র তুমিই পৃথিবীর সমস্ত রাজ্যের ঈশ্বর; তুমিই আকাশমণ্ডল ও পৃথিবী নির্ম্মাণ করিয়াছ। ১৭ হে সদাপ্রভু, কর্ণপাত করিয়া শুন, হে সদাপ্রভু চক্ষু উন্মীলন করিয়া দেখ; জীবন্ত ঈশ্বরকে টিটকারি দিবার জন্য সন্হেরীব যে সকল কথা বলিয়া পাঠাইয়াছে, তাহা শুন। ১৮ সত্য বটে, হে সদাপ্রভু, অশূরের রাজারা সর্ব্বদেশীয় লোকদিগকে ও তাহাদের দেশ সকল বিনষ্ট করিয়াছে, ১৯ এবং তাহাদের দেবগণকে অগ্নিতে নিক্ষেপ করিয়াছে, কারণ তাহারা ঈশ্বর নয়, কিন্তু মনুষ্যের হস্তের কার্য্য, কাষ্ঠ ও প্রস্তর; এই জন্য উহারা তাহাদিগকে বিনষ্ট করিয়াছে। ২০ অতএব এখন, হে আমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু, তুমি তাহার হস্ত হইতে আমাদিগকে নিস্তার কর; তাহাতে পৃথিবীর সমস্ত রাজ্য জানিতে পারিবে যে, তুমি, কেবল মাত্র তুমিই সদাপ্রভু।
যিশাইয়ের ভবিষ্যদ্বাণী-১ ৩৮৯-৩৯১ অনু. ১৫-১৭, ইংরেজি
একজন রাজার বিশ্বাস পুরস্কৃত হয়
হিষ্কিয় একটা সিদ্ধান্ত নেন
১৫ রাজা হিষ্কিয়কে এখন একটা সিদ্ধান্ত নিতে হবে। যিরূশালেম কি অশূরীয়দের কাছে আত্মসমর্পণ করবে? মিশরের সেনাবাহিনীর সঙ্গে যোগ দেবে? না কি নিজের অবস্থান ধরে রেখে যুদ্ধ করবে? হিষ্কিয় অনেক চাপের মধ্যে আছেন। তিনি যিহোবার মন্দিরে যান আর একই সময়ে ভাববাদী যিশাইয়ের মাধ্যমে যিহোবার কাছে অনুসন্ধান করার জন্য ইলিয়াকীম এবং শিব্নকে আরও যাজক ও প্রাচীনবর্গের সঙ্গে যিশাইয়ের কাছে পাঠান। (যিশাইয় ৩৭:১, ২) রাজার প্রতিনিধিরা চট পরিধান করে যিশাইয়ের সামনে যান ও তাকে বলেন: “অদ্যকার দিন সঙ্কটের, অনুযোগের ও অপমানের দিন, . . . জীবন্ত ঈশ্বরকে টিটকারি দিবার জন্য আপন প্রভু অশূররাজের প্রেরিত রব্শাকি যে সকল কথা কহিয়াছে, হয় ত আপনার ঈশ্বর সদাপ্রভু তাহা শুনিবেন, এবং তাঁহাকে সেই সকল কথার জন্য তিরস্কার করিবেন, যাহা আপনার ঈশ্বর সদাপ্রভু শুনিয়াছেন।” (যিশাইয় ৩৭:৩-৫) হ্যাঁ, অশূরীয়রা জীবন্ত ঈশ্বরকে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আহ্বান করছে! যিহোবা কি তাদের টিটকারির প্রতি মনোযোগ দেবেন? যিশাইয়ের মাধ্যমে যিহোবা যিহুদিদের আশ্বাস দেন: “তুমি যাহা শুনিয়াছ, ও যাহা বলিয়া অশূর-রাজের দাসেরা আমার নিন্দা করিয়াছে, সেই সকল কথায় ভীত হইও না। দেখ, আমি তাহার মধ্যে এক আত্মা দিব, এবং সে কোন সংবাদ শুনিবে, শুনিয়া আপন দেশে ফিরিয়া যাইবে, পরে আমি তাহারই দেশে তাহাকে খড়্গ দ্বারা নিপাত করিব।”—যিশাইয় ৩৭:৬, ৭.
১৬ ইতিমধ্যে, রাজা সন্হেরীব লিব্নার বিপক্ষে যুদ্ধ করার সময় রব্শাকিকে ডেকে আনেন, যেন তিনি রাজার পাশে থাকতে পারেন। যিরূশালেমের বিষয়টা সন্হেরীব পরে মীংমাসা করবেন। (যিশাইয় ৩৭:৮) কিন্তু, রব্শাকি চলে যাওয়া সত্ত্বেও হিষ্কিয়ের উপর থেকে চাপ কমে যায়নি। সন্হেরীব হুমকি দিয়ে চিঠি পাঠাতে থাকেন, যেগুলোতে বর্ণনা করা হয়, যিরূশালেমের অধিবাসীরা আত্মসমর্পণ করতে প্রত্যাখ্যান করলে কী হতে পারে: “সমুদয় দেশ নিঃশেষে বিনষ্ট করিয়া অশূরের রাজারা সমস্ত দেশের প্রতি যাহা যাহা করিয়াছেন, তাহা তুমি শুনিয়াছ; তবে তুমি কি উদ্ধার পাইবে? আমার পিতৃপুরুষগণ যে সকল জাতিকে বিনষ্ট করিয়াছেন . . . তাহাদের দেবগণ কি তাহাদিগকে উদ্ধার করিয়াছে? হমাতের রাজা, অর্পদের রাজা, এবং সফর্বয়িম নগরের, হেনার ও ইব্বার রাজা কোথায়?” (যিশাইয় ৩৭:৯-১৩) অশূরীয়রা মূলত বলতে চাচ্ছে, প্রতিরোধ করার চেষ্টা করা বৃথা—প্রতিরোধ করলে সমস্যা কেবল আরও বাড়বে!
১৭ হিষ্কিয়কে যে-সিদ্ধান্ত নিতে হবে সেটার পরিণতি সম্বন্ধে অত্যন্ত চিন্তিত হয়ে তিনি সন্হেরীবের চিঠিগুলো মন্দিরে যিহোবার সামনে রাখেন। (যিশাইয় ৩৭:১৪) যিহোবার কাছে করা আন্তরিক প্রার্থনায় তিনি তাঁকে অশূরীয়দের হুমকি শোনার জন্য মিনতি করেন আর এই কথা বলে তার প্রার্থনা শেষ করেন: “অতএব এখন, হে আমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু, তুমি তাহার হস্ত হইতে আমাদিগকে নিস্তার কর; তাহাতে পৃথিবীর সমস্ত রাজ্য জানিতে পারিবে যে, তুমি, কেবল মাত্র তুমিই সদাপ্রভু।” (যিশাইয় ৩৭:১৫-২০) এখান থেকে স্পষ্ট হয়, হিষ্কিয় মূলত নিজের উদ্ধারের বিষয়ে নয়, বরং অশূরীয়রা যিরূশালেমকে পরাজিত করলে যিহোবার নামের উপর যে-দুর্নাম আসবে, সেই বিষয়ে চিন্তিত।
(যিশাইয় ৩৭:৩৩-৩৮) অতএব অশূর-রাজের বিষয়ে সদাপ্রভু এই কথা কহেন, সে এ নগরে আসিবে না, এখানে বাণ ছাড়িব না, ঢাল লইয়া ইহার সম্মুখে আসিবে না, ইহার বিরুদ্ধে জাঙ্গাল বাঁধিবে না। ৩৪ সে যে পথ দিয়া আসিয়াছে, সেই পথ দিয়াই ফিরিয়া যাইবে, এ নগরে আসিবে না, ইহা সদাপ্রভু কহেন। ৩৫ কারণ আমি আপনার নিমিত্ত ও আপন দাস দায়ূদের নিমিত্ত এই নগরের রক্ষার্থে ইহার ঢালস্বরূপ হইব। ৩৬ পরে সদাপ্রভুর দূত যাত্রা করিয়া অশূরীয়দের শিবিরে এক লক্ষ পঁচাশী সহস্র লোককে বধ করিলেন; লোকেরা প্রত্যূষে উঠিল, আর দেখ, সমস্তই মৃত দেহ। ৩৭ অতএব অশূর-রাজ সন্হেরীব প্রস্থান করিলেন, এবং নীনবীতে ফিরিয়া গিয়া বাস করিলেন। ৩৮ পরে তিনি যখন আপনার দেবতা নিষ্রোকের গৃহে প্রণিপাত করিতেছিলেন, তখন অদ্রম্মেলক ও শরেৎসর নামক তাঁহার দুই পুত্ত্র খড়্গ দ্বারা তাঁহাকে আঘাত করিল; পরে তাহারা অরারট দেশে পলায়ন করিল। আর এসর-হদ্দোন নামক তাঁহার পুত্ত্র তাঁহার পদে রাজা হইলেন।
যিশাইয়ের ভবিষ্যদ্বাণী-১ ৩৯১-৩৯৪ অনু. ১৮-২২, ইংরেজি
একজন রাজার বিশ্বাস পুরস্কৃত হয়
১৮ যিহোবা যিশাইয়ের মাধ্যমে হিষ্কিয়ের প্রার্থনার উত্তর দেন। যিরূশালেম অশূরীয়দের কাছে আত্মসমর্পণ করবে না; এটা নিজের অবস্থান ধরে রাখবে। যেন সন্হেরীবের উদ্দেশে কথা বলছেন এমনভাবে যিশাইয় সাহসের সঙ্গে যিহোবার এই বার্তা অশূরীয়দের জানান: “অনূঢ়া সিয়োন-কন্যা তোমাকে তুচ্ছ করিতেছে ও তোমাকে পরিহাস করিতেছে; যিরূশালেম-কন্যা তোমার দিকে [উপহাস করে] মাথা নাড়িতেছে।” (যিশাইয় ৩৭:২১, ২২) এরপর যিহোবা যেন এমনটা বলেন: ‘ইস্রায়েলের পবিত্রতমকে টিটকারি দেওয়ার তুমি কে? আমি তোমার কার্যকলাপ জানি। তোমার অনেক উচ্চাকাঙ্ক্ষা রয়েছে; তুমি অনেক বড়াই করো। তুমি তোমার সেনাবাহিনীর শক্তির উপর নির্ভর করে অনেক দেশ জয় করেছ। কিন্তু তুমি অজেয় নও। আমি তোমার পরিকল্পনা ব্যর্থ করব। আমি তোমাকে পরাজিত করব। তখন আমি তোমার সঙ্গে সেটাই করব, যা তুমি অন্যদের সঙ্গে করেছ। আমি তোমার নাকে কড়া লাগাব ও তোমাকে অশূরে ফিরিয়ে নিয়ে যাব!’—যিশাইয় ৩৭:২৩-২৯.
“তোমার জন্য এই চিহ্ন হইবে”
১৯ যিশাইয়ের ভবিষ্যদ্বাণী যে পরিপূর্ণ হবে, সেই বিষয়ে হিষ্কিয়ের কোন নিশ্চয়তা রয়েছে? যিহোবা উত্তর দেন: “তোমার জন্য এই চিহ্ন হইবে, তোমরা এই বৎসর স্বতঃ উৎপন্ন শস্য, ও দ্বিতীয় বৎসর তাহার মূলোৎপন্ন শস্য, ভোজন করিবে; পরে তোমরা তৃতীয় বৎসরে বীজ বপন করিয়া শস্য কাটিবে, এবং দ্রাক্ষাক্ষেত্র করিয়া তাহার ফলভোগ করিবে।” (যিশাইয় ৩৭:৩০) যিহোবা অবরুদ্ধ যিহুদিদের জন্য খাদ্য জোগাবেন। অশূরীয়রা নগর দখল করার কারণে তারা যদিও বীজ বপন করতে পারেনি, কিন্তু তারা স্বতঃ উৎপন্ন শস্য বা আগের বছরের শস্যচ্ছেদনের পর ভূমিতে পড়ে থাকা শস্য থেকে যা জন্মাবে সেগুলো কুড়িয়ে খেতে পারবে। পরের বছর হল বিশ্রাম বছর, তাই কঠিন পরিস্থিতি সত্ত্বেও তাদের অবশ্যই ভূমি ফেলে রাখতে হবে। (যাত্রাপুস্তক ২৩:১১) যিহোবা প্রতিজ্ঞা করেন, লোকেরা যদি তাঁর কথার বাধ্য হয়, তা হলে তাদের বাঁচিয়ে রাখার জন্য ভূমি থেকে যথেষ্ট পরিমাণ শস্য উৎপন্ন হবে। এর পরের বছর, লোকেরা স্বাভাবিক উপায়ে বীজ বপন করবে এবং তাদের পরিশ্রমের ফল উপভোগ করবে।
২০ যিহোবা এখন তাঁর লোকেদের এমন একটা গাছের সঙ্গে তুলনা করেন, যেটার মূল সহজে উৎপাটন করা যায় না: “যিহূদা কুলের যে উত্তীর্ণগণ . . . আছে, তাহারা আবার নীচে মূল বাঁধিবে, ও উপরে ফল দিবে।” (যিশাইয় ৩৭:৩১, ৩২) হ্যাঁ, যারা যিহোবার উপর নির্ভর করে, তাদের ভয় পাওয়ার কোনো কারণ নেই। তারা ও তাদের বংশধরেরা সেই দেশেই প্রতিষ্ঠিত হবে।
২১ যিরূশালেমের বিরুদ্ধে অশূরীয়দের হুমকি সম্বন্ধে কী বলা যায়? যিহোবা উত্তর দেন: “সে এ নগরে আসিবে না, এখানে বাণ ছাড়িব না, ঢাল লইয়া ইহার সম্মুখে আসিবে না, ইহার বিরুদ্ধে জাঙ্গাল বাঁধিবে না। সে যে পথ দিয়া আসিয়াছে, সেই পথ দিয়াই ফিরিয়া যাইবে, এ নগরে আসিবে না।” (যিশাইয় ৩৭:৩৩, ৩৪) অশূর ও যিরূশালেমের মধ্যে আসলে কোনো যুদ্ধই হবে না। অবাক করার মতো বিষয়টা হল, যিহুদিরা নয় বরং অশূরীয়রাই কোনো যুদ্ধ ছাড়া পরাজিত হবে।
২২ যিহোবা তাঁর বাক্যের পরিপূর্ণতা স্বরূপ, একজন স্বর্গদূতকে পাঠান, যিনি সন্হেরীবের সেরা সৈন্যদলকে—১,৮৫,০০০ লোককে—হ্ত্যা করেন। এটা স্পষ্টতই লিব্নায় ঘটে আর সন্হেরীব ঘুম থেকে জেগে তার সেনাবাহিনীর দলনেতাদের, অধ্যক্ষদের ও বীরদের মৃত অবস্থায় দেখেন। তিনি লজ্জিত হয়ে নীনবীতে ফিরে যান, কিন্তু নিজের নিশ্চিত পরাজয় সত্ত্বেও একগুঁয়েভাবে তার মিথ্যা দেবতা নিষ্রোকের প্রতি অনুগত থাকেন। কয়েক বছর পর, সন্হেরীব যখন নিষ্রোকের মন্দিরে উপাসনা করতে থাকেন, তখন তার নিজের দুই ছেলেই তাকে হত্যা করে। নিষ্প্রাণ নিষ্রোক রক্ষা করার ক্ষেত্রে আরও একবার শক্তিহীন বলে প্রমাণিত হয়।—যিশাইয় ৩৭:৩৫-৩৮.
আধ্যাত্মিক রত্ন খুঁজে বের করুন:
(যিশাইয় ৩৫:৮) আর সেই স্থানে এক জাঙ্গাল ও রাজপথ হইবে; তাহা পবিত্রতার পথ বলিয়া আখ্যাত হইবে; তাহা দিয়া কোন অশুচি লোক যাতায়াত করিবে না, কিন্তু তাহা উহাদের জন্য হইবে; সে পথে পথিকগণ, অজ্ঞানেরাও পরিভ্রমণ করিবে না।
“ঈশ্বরভয়ে পবিত্রতা” বজায় রাখুন
‘সেই স্থানে পবিত্রতার পথ হইবে’
যিহোবা ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন যে, তাঁর লোকেরা যারা বাবিলে বন্দি ছিল, তারা তাদের নিজেদের দেশে পুনরায় ফিরে আসবে। পুনর্স্থাপন সংক্রান্ত সেই ভবিষ্যদ্বাণী এই নিশ্চয়তা প্রদান করেছিল: “সেই স্থানে এক জাঙ্গাল ও রাজপথ হইবে; তাহা পবিত্রতার পথ বলিয়া আখ্যাত হইবে।” (যিশা. ৩৫:৮ক) এই বাক্যগুলো দেখায় যে, যিহোবা যিহুদিদের জন্য কেবল নিজেদের দেশে ফিরে আসার পথই খুলে দেননি কিন্তু সেইসঙ্গে তাদেরকে পুরো পথজুড়ে তাঁর সুরক্ষার আশ্বাসও দিয়েছিলেন।
“ঈশ্বরভয়ে পবিত্রতা” বজায় রাখুন
“তাহা দিয়া কোনো অশুচি লোক যাতায়াত করিবে না”
সাধারণ কাল পূর্ব ৫৩৭ সালে, ফিরে আসা যিহুদিদেরকে একটা গুরুত্বপূর্ণ চাহিদা পূরণ করতে হয়েছিল। যারা ‘পবিত্রতার পথে’ চলার যোগ্য, তাদের সম্বন্ধে যিশাইয় ৩৫:৮খ বলে: “তাহা দিয়া কোন অশুচি লোক যাতায়াত করিবে না, কিন্তু তাহা উহাদের জন্য হইবে; সে পথে পথিকগণ, অজ্ঞানেরাও পরিভ্রমণ করিবে না।” যেহেতু যিহুদিদের যিরূশালেমে ফিরে আসার উদ্দেশ্য ছিল বিশুদ্ধ উপাসনাকে পুনর্প্রতিষ্ঠিত করা, তাই সেখানে এমন লোকেদের কোনো স্থান থাকবে না, যাদের স্বার্থপর উদ্দেশ্য, পবিত্র বিষয়গুলোর প্রতি সম্মানের অভাব ছিল কিংবা যারা আধ্যাত্মিকভাবে অশুচি ছিল। ফিরে আসা ব্যক্তিদের যিহোবার উচ্চ নৈতিক মানগুলো বজায় রাখতে হতো। আজকে যারা ঈশ্বরের অনুগ্রহ পেতে চায়, তাদেরও সেই একই চাহিদা পূরণ করতে হবে। তাদেরকে অবশ্যই “ঈশ্বরভয়ে পবিত্রতা” বজায় রাখতে হবে। (২ করি. ৭:১) তাহলে, কোন অশুচি অভ্যাসগুলো আমাদের এড়িয়ে চলা উচিত?
(যিশাইয় ৩৬:২, ৩) পরে অশূরের রাজা লাখীশ হইতে রব্শাকিকে বৃহৎ সৈন্যদলের সহিত যিরূশালেমে হিষ্কিয় রাজার কাছে প্রেরণ করিলেন; তাহাতে তিনি [আসিয়া] উচ্চতর পুষ্করিণীর প্রণালীর কাছে রজক-ভূমির রাজপথে অবস্থিতি করিলেন। ৩ পরে হিল্কিয়ের পুত্ত্র ইলিয়াকীম নামে রাজবাটীর অধ্যক্ষ শিব্ন লেখক ও আসফের পুত্ত্র যোয়াহ নামক ইতিহাসরচক বাহির হইয়া তাঁহার কাছে গেলেন।
(যিশাইয় ৩৬:২২) পরে হিল্কিয়ের পুত্ত্র রাজবাটীর অধ্যক্ষ ইলিয়াকীম, শিব্ন লেখক ও আসফের পুত্ত্র ইতিহাস-রচক যোয়াহ আপন আপন বস্ত্র ছিঁড়িয়া হিষ্কিয়ের নিকটে আসিয়া রব্শাকির কথা জ্ঞাত করিলেন।
যিশাইয় বইয়ের দ্বিতীয় বিভাগের প্রধান বিষয়গুলো
আমাদের জন্য শিক্ষা:
৩৬:২, ৩, ২২. যদিও অধ্যক্ষপদ থেকে শিব্নকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল কিন্তু তার স্থলাভিষিক্ত অধ্যক্ষের জায়গায় তাকে একজন লেখক বা সচিব হিসেবে রাজাকে সেবা করার সুযোগ দেওয়া হয়েছিল। (যিশাইয় ২২:১৫, ১৯) যিহোবার সংগঠনে কোনো কারণে যদি আমাদের দায়িত্বপূর্ণ পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়, তা হলে তিনি আমাদেরকে যেকোনো পদে সেবা করার সুযোগ দিন না কেন, আমাদের কি ঈশ্বরকে সেবা করে চলা উচিত নয়?
বাইবেল পাঠ
(যিশাইয় ৩৬:১-১২) হিষ্কিয় রাজার চতুর্দ্দশ বৎসরে অশূররাজ সন্হেরীব যিহূদার প্রাচীর-বেষ্টিত সমস্ত নগরের বিরুদ্ধে আসিয়া সে সকল হস্তগত করিতে লাগিলেন। ২ পরে অশূরের রাজা লাখীশ হইতে রব্শাকিকে বৃহৎ সৈন্যদলের সহিত যিরূশালেমে হিষ্কিয় রাজার কাছে প্রেরণ করিলেন; তাহাতে তিনি [আসিয়া] উচ্চতর পুষ্করিণীর প্রণালীর কাছে রজক-ভূমির রাজপথে অবস্থিতি করিলেন। ৩ পরে হিল্কিয়ের পুত্ত্র ইলিয়াকীম নামে রাজবাটীর অধ্যক্ষ শিব্ন লেখক ও আসফের পুত্ত্র যোয়াহ নামক ইতিহাসরচক বাহির হইয়া তাঁহার কাছে গেলেন। ৪ রব্শাকি তাঁহাদিগকে কহিলেন, “তোমরা হিষ্কিয়কে এই কথা বল, রাজাধিরাজ অশূর-রাজ এই কথা কহেন, তুমি যে সাহস করিতেছ, সে কেমন সাহস? ৫ আমি বলি, তোমার সংগ্রামের বুদ্ধি ও পরাক্রম ওষ্ঠের কথা মাত্র; বল দেখি, তুমি কাহার উপরে নির্ভর করিয়া আমার বিদ্রোহী হইলে? ৬ দেখ, তুমি ঐ থেৎলা নলরূপ যষ্টির, অর্থাৎ মিসরের উপরে নির্ভর করিতেছ; কিন্তু যে কেহ তাহার উপরে নির্ভর করে, সে তাহার হস্তে ফুটিয়া তাহা বিদ্ধ করে; যত লোক মিসর-রাজ ফরৌণের উপরে নির্ভর করে, সেই সকলের পক্ষে সে তদ্রূপ। ৭ আর যদি আমাকে বল, আমরা আপন ঈশ্বর সদাপ্রভুতে বিশ্বাস করি, তবে তিনি কি সেই নহেন, যাঁহার উচ্চস্থলী ও যজ্ঞবেদি সকল হিষ্কিয় দূর করিয়াছে, এবং যিহূদার ও যিরূশালেমের লোকদিগকে বলিয়াছে, ‘তোমরা এই যজ্ঞবেদির কাছে প্রণিপাত করিবে’? ৮ তুমি এক বার আমার প্রভু অশূর-রাজের কাছে পণ কর; আমি তোমাকে দুই সহস্র অশ্ব দিই, যদি তুমি তদারোহী লোক দিতে পার। ৯ তবে কেমন করিয়া আমার প্রভুর ক্ষুদ্রতম দাসগণের মধ্যে এক জন সেনাপতিকে হটাইয়া দিবে, এবং রথ সকলের ও অশ্বারোহীদের জন্য মিসরের উপরে বিশ্বাস করিবে? ১০ বল দেখি, আমি কি সদাপ্রভুর সম্মতি ব্যতিরেকে এই দেশ ধবংস করিতে আসিয়াছি? সদাপ্রভুই আমাকে বলিয়াছেন, তুমি ঐ দেশে গিয়া উহা ধ্বংস কর।” ১১ তখন ইলিয়াকীম, শিব্ন ও যোয়াহ রব্শাকিকে কহিলেন, বিনয় করি, আপনার দাসদিগকে অরামীয় ভাষায় বলুন, কেননা আমরা তাহা বুঝিতে পারি; প্রাচীরের উপরিস্থ লোকদের কর্ণগোচরে আমাদের কাছে যিহূদী ভাষায় কথা বলিবেন না। ১২ কিন্তু রব্শাকি বলিলেন, আমার প্রভু কি তোমার প্রভুরই কাছে এবং তোমারই কাছে এই কথা কহিতে আমাকে পাঠাইয়াছেন? ঐ যে লোকেরা তোমাদের সহিত আপন আপন বিষ্ঠা খাইতে ও আপন আপন মূত্র করিতে প্রাচীরের উপরে বসিয়া আছে, উহাদেরই কাছে কি তিনি পাঠান নাই?
জানুয়ারি ২৩-২৯
ঈশ্বরের বাক্যের গুপ্তধন | যিশাইয় ৩৮-৪২
“যিহোবা ক্লান্ত ব্যক্তিকে শক্তি দেন”
(যিশাইয় ৪০:২৫, ২৬) অতএব তোমরা কাহার সহিত আমার উপমা দিবে যে আমি তাহার সদৃশ হইব? ২৬ ইহা পবিত্রতম কহেন। ঊর্দ্ধ্বদিকে চক্ষু তুলিয়া দেখ, ঐ সকলের সৃষ্টি কে করিয়াছে? তিনি বাহিনীর ন্যায় সংখ্যানুসারে তাহাদিগকে বাহির করিয়া আনেন, সকলের নাম ধরিয়া তাহাদিগকে আহ্বান করেন; তাঁহার সামর্থ্যের আধিক্য ও শক্তির প্রাবল্য প্রযুক্ত তাহাদের একটাও অনুপস্থিত থাকে না।
যিশাইয়ের ভবিষ্যদ্বাণী-১ ৪০৯-৪১০ অনু. ২৩-২৫, ইংরেজি
“আমার প্রজাদিগকে সান্ত্বনা কর”
“ঐ সকলের সৃষ্টি কে করিয়াছে?”
২৩ তবে আরেকটা কারণ রয়েছে, যেজন্য নির্বাসিত যিহুদিরা আশাবাদী হতে পারে। যিনি উদ্ধার করার প্রতিজ্ঞা করেছেন, তিনি হলেন সমস্ত কিছুর সৃষ্টিকর্তা এবং সমস্ত শক্তির উৎস। যিহোবা নিজের বিস্ময়কর ক্ষমতার উপর জোর দেওয়ার জন্য সৃষ্টিকাজের মধ্যে প্রকাশিত তাঁর সামর্থ্যের প্রতি মনোযোগ আকর্ষণ করেন: “তোমরা কাহার সহিত আমার উপমা দিবে যে আমি তাহার সদৃশ হইব? ইহা পবিত্রতম কহেন। ঊর্দ্ধ্বদিকে চক্ষু তুলিয়া দেখ, ঐ সকলের সৃষ্টি কে করিয়াছে? তিনি বাহিনীর ন্যায় সংখ্যানুসারে তাহাদিগকে বাহির করিয়া আনেন, সকলের নাম ধরিয়া তাহাদিগকে আহ্বান করেন; তাঁহার সামর্থ্যের আধিক্য ও শক্তির প্রাবল্য প্রযুক্ত তাহাদের একটাও অনুপস্থিত থাকে না।”—যিশাইয় ৪০:২৫, ২৬.
২৪ ইস্রায়েলের পবিত্রতম নিজের পক্ষে কথা বলছেন। তাঁর সমতুল্য কেউ নেই তা দেখানোর জন্য যিহোবা আকাশের তারাদের প্রতি মনোযোগ আকর্ষণ করেন। একজন সেনাপতি যেমন নিজের বাহিনীকে নির্দেশনা দিতে পারেন, তেমনই যিহোবা তারাদের নির্দেশ দেন। তিনি যদি তাদের জড়ো হতে বলতেন, তা হলে ‘তাহাদের একটাও অনুপস্থিত থাকত না।’ যদিও তারার সংখ্যা প্রচুর কিন্তু তিনি সেগুলোর প্রত্যেকটাকে নাম ধরে ডাকেন, তা সেটা স্বতন্ত্র নাম হোক কিংবা কোনো পদের নাম হোক। বাধ্য সৈন্যদের মতো, সেগুলো নিজ নিজ স্থানে থাকে এবং উপযুক্ত আদেশের প্রতি লক্ষ রাখে কারণ তাদের নেতার প্রচুর ‘সামর্থ্য’ ও “শক্তির প্রাবল্য” রয়েছে। তাই, নির্বাসিত যিহুদিদের আস্থা রাখার কারণ রয়েছে। সৃষ্টিকর্তা, যিনি তারাদের নির্দেশ দেন, তাঁর দাসদের সমর্থন করার শক্তি তাঁর রয়েছে।
২৫ আমাদের মধ্যে কেই-বা যিশাইয় ৪০:২৬ পদে উল্লেখিত ঈশ্বরের এই আমন্ত্রণ উপেক্ষা করতে পারি: “ঊর্দ্ধ্বদিকে চক্ষু তুলিয়া দেখ”? আধুনিক দিনের জ্যোতির্বিদদের বিভিন্ন আবিষ্কার প্রকাশ করেছে, যিশাইয়ের দিনে যতটা দেখা যেত তার চেয়ে এখন তারাভরা আকাশ এমনকী আরও বেশি বিস্ময়কর। জ্যোতির্বিদরা, যারা শক্তিশালী দূরবীক্ষণ যন্ত্র দিয়ে আকাশ নিরীক্ষণ করেন, তারা অনুমান করে বলেন, নিখিলবিশ্বের যতটুকু দেখা যায়, সেখানে প্রায় ১২,৫০০ কোটি ছায়াপথ রয়েছে। আর কেউ কেউ অনুমান করেন, এগুলোর মধ্যে কেবল একটায়—মিল্কিওয়ে ছায়াপথেই—১০,০০০ কোটি তারা রয়েছে! এই ধরনের জ্ঞান যেন আমাদের হৃদয়ে আমাদের সৃষ্টিকর্তার প্রতি শ্রদ্ধা জাগিয়ে তোলে এবং তাঁর বাক্যের প্রতিজ্ঞার প্রতি পূর্ণ নির্ভরতা গড়ে তোলে।
(যিশাইয় ৪০:২৭, ২৮) হে যাকোব, তুমি কেন কহিতেছ, হে ইস্রায়েল, কেন তুমি বলিতেছ, আমার পথ সদাপ্রভু হইতে লুক্কায়িত, আমার বিচার আমার ঈশ্বর হইতে সরিয়া গিয়াছে? ২৮ তুমি কি জ্ঞাত হও নাই? তুমি কি শুন নাই? অনাদি অনন্ত ঈশ্বর, সদাপ্রভু, পৃথিবীর প্রান্ত সকলের সৃষ্টিকর্ত্তা ক্লান্ত হন না, শ্রান্ত হন না; তাঁহার বুদ্ধির অনুসন্ধান করা যায় না।
যিশাইয়ের ভবিষ্যদ্বাণী-১ ৪১৩ অনু. ২৭, ইংরেজি
“আমার প্রজাদিগকে সান্ত্বনা কর”
২৭ যারা নিজেদের দেশ থেকে শত শত কিলোমিটার দূরে অবস্থিত বাবিলে নির্বাসিত ছিল, তাদের অনুভূতি বর্ণনা করে যিহোবা যা বলেছিলেন, তা যিশাইয় লিখে রাখেন। কেউ কেউ মনে করে, তাদের “পথ”—তাদের জীবনের কঠিন পরিস্থিতি—তাদের ঈশ্বর দেখেন না বা তাঁর কাছে অজানা। তারা মনে করে, তারা যে-সমস্ত অবিচার ভোগ করছে, সেগুলোর প্রতি যিহোবা উদাসীন। তাদের সেই বিষয়গুলো মনে করিয়ে দেওয়া হয়, যেগুলো তাদের জানা উচিত, যদি ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে জানা না-ও থাকে, অন্ততপক্ষে যে-তথ্য তাদের দেওয়া হয়েছে সেখান থেকে জানা উচিত। যিহোবা তাঁর লোকেদের উদ্ধার করতে সমর্থ এবং ইচ্ছুক। তিনি হলেন অনন্তকালীন ঈশ্বর এবং পুরো পৃথিবীর সৃষ্টিকর্তা। তাই, সৃষ্টিকাজে তিনি যে-শক্তি প্রকাশ করেছেন, তিনি এখনও সেই শক্তির অধিকারী আর পরাক্রমী বাবিল তাঁর নাগালের বাইরে নয়। এইরকম একজন ঈশ্বর ক্লান্ত হতে পারেন না ও তাঁর লোকেদের ব্যর্থ হতে দিতে পারেন না। তাদের এমনটা আশা করা উচিত নয় যে, তারা যিহোবার কাজ পুরোপুরি বুঝতে সমর্থ হবে কারণ তাঁর বোধগম্যতা—বা অন্তর্দৃষ্টি, বিচক্ষণতা ও উপলব্ধিবোধ—তাদের বোঝার ক্ষমতার বাইরে।
(যিশাইয় ৪০:২৯-৩১) তিনি ক্লান্ত ব্যক্তিকে শক্তি দেন, ও শক্তিহীন লোকের বল বৃদ্ধি করেন। ৩০ তরুণেরা ক্লান্ত ও শ্রান্ত হয়, যুবকেরা স্খলিত, স্খলিত হয়; ৩১ কিন্তু যাহারা সদাপ্রভুর অপেক্ষা করে, তাহারা উত্তরোত্তর নূতন শক্তি পাইবে; তাহারা ঈগল পক্ষীর ন্যায় পক্ষসহকারে ঊর্দ্ধ্বে উঠিবে; তাহারা দৌড়িলে শ্রান্ত হইবে না; তাহারা গমন করিলে ক্লান্ত হইবে না।
যিশাইয়ের ভবিষ্যদ্বাণী-১ ৪১৩-৪১৫ অনু. ২৯-৩১, ইংরেজি
“আমার প্রজাদিগকে সান্ত্বনা কর”
২৯ ক্লান্ত ব্যক্তিদের শক্তি প্রদান করার প্রয়োজনীয়তা সম্বন্ধে বলতে গিয়ে যিহোবার হয়তো সেই কষ্টকর যাত্রার কথা মনে আসে, যা নির্বাসিত ব্যক্তিদের নিজেদের দেশে ফিরে আসার জন্য করতে হবে। যিহোবা তাঁর লোকেদের মনে করিয়ে দেন, যারা সাহায্যের জন্য তাঁর উপর নির্ভর করে সেই শ্রান্ত ব্যক্তিদের সহযোগিতা করা তাঁর চরিত্রের বৈশিষ্ট্য। এমনকী প্রাণপ্রাচুর্যে ভরা মানুষেরা—“তরুণেরা” ও “যুবকেরা”—হয়তো অবসন্নতার দ্বারা জর্জরিত হবে ও পরিশ্রান্ত হয়ে স্খলিত হবে বা হোঁচট খাবে। কিন্তু, যারা যিহোবার উপর নির্ভর করে তাদের তিনি শক্তি—দৌড়ানোর ও হাঁটার জন্য অক্লান্ত শক্তি—প্রদান করার প্রতিজ্ঞা করেন। যিহোবা তাঁর দাসদের যেভাবে শক্তি দেন তা তুলে ধরার জন্য ঈগলের—ঘন্টার পর ঘন্টা শূন্যে ভেসে থাকতে পারে এমন এক শক্তিশালী পাখির—ওড়ার প্রক্রিয়া ব্যবহার করা হয়েছে, যে-প্রক্রিয়াকে আপাতদৃষ্টিতে প্রচেষ্টাহীন বলে মনে হয়। ঈশ্বরের কাছ থেকে এই ধরনের সাহায্যের প্রত্যাশা থাকায়, নির্বাসিত যিহুদিদের হতাশ হওয়ার কোনো কারণই নেই।
৩০ যিশাইয় ৪০ অধ্যায়ের এই শেষ পদগুলোতে সেই সত্য খ্রিস্টানদের জন্য সান্ত্বনার বাক্য রয়েছে, যারা শেষকালের দুষ্ট বিধিব্যবস্থায় বাস করছে। মনোবল ভেঙে দিতে পারে এমন অনেক চাপ ও সমস্যার মধ্যেও এটা জানা খুবই আশ্বাসদায়ক যে, আমরা যে-সমস্ত কষ্ট সহ্য করি ও অবিচার ভোগ করি, সেগুলো আমাদের ঈশ্বরের অলক্ষিত নয়। আমরা নিশ্চিত থাকতে পারি, সমস্ত কিছুর সৃষ্টিকর্তা, যাঁর “বুদ্ধির ইয়ত্তা নাই,” তিনি নিজের সময়ে ও উপায়ে সমস্ত অবিচার সংশোধন করবেন। (গীতসংহিতা ১৪৭:৫, ৬) এই সময়ের মধ্যে, আমাদের যে নিজেদের শক্তিতে টিকে থাকতে হবে এমন নয়। যিহোবা, যাঁর অফুরন্ত ক্ষমতা রয়েছে, তিনি পরীক্ষার সময়ে তাঁর দাসদের শক্তি—এমনকী “পরাক্রমের উৎকর্ষ [“অসাধারণ মহাশক্তি,” বাংলা কমন ল্যাঙ্গুয়েজ ভারশন ]” দিতে পারেন।—২ করিন্থীয় ৪:৭.
৩১ খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতাব্দীতে বাবিলে বন্দি থাকা যিহুদিদের কথা চিন্তা করুন। শত শত কিলোমিটার দূরে তাদের প্রিয় যিরূশালেম জনশূন্য অবস্থায় পড়ে আছে, সেখানকার মন্দির ধ্বংস হয়ে গিয়েছে। তাদের কাছে, যিশাইয়ের ভবিষ্যদ্বাণীতে জ্যোতি ও আশার এক সান্ত্বনাদায়ক প্রতিজ্ঞা রয়েছে—যিহোবা তাদের নিজেদের দেশে পূর্বাবস্থায় ফিরিয়ে নিয়ে যাবেন! ৫৩৭ খ্রিস্টাব্দে যিহোবা তাঁর লোকেদের নিজেদের দেশে নিয়ে গিয়েছিলেন আর এভাবে প্রমাণ করেছিলেন, তিনি প্রতিজ্ঞা পরিপূর্ণকারী। আমরাও যিহোবার উপর পূর্ণ আস্থা রাখতে পারি। তাঁর রাজ্যের প্রতিজ্ঞাগুলো, যেগুলো যিশাইয়ের ভবিষ্যদ্বাণীতে খুব সুন্দরভাবে বর্ণনা করা আছে, সেগুলো বাস্তবে পরিপূর্ণ হবেই। এটা সত্যিই সুসমাচার—মানবজাতির জন্য জ্যোতির এক বার্তা!
আধ্যাত্মিক রত্ন খুঁজে বের করুন:
(যিশাইয় ৩৮:১৭) দেখ, আমার শান্তির নিমিত্তই আমার তিক্ততা, তিক্ততা উপস্থিত হইল; কিন্তু তুমি প্রেমেই আমার প্রাণকে বিনাশকূপ হইতে উদ্ধার করিলে, তুমি ত আমার সমস্ত পাপ তোমার পশ্চাতে ফেলিয়াছ।
“ঈশ্বর প্রেম”
১৭ কৃতজ্ঞতার এক মর্মস্পর্শী গান, যা হিষ্কিয় এক মারাত্মক রোগ থেকে মুক্তি পাওয়ার পর রচনা করেছিলেন, তাতে তিনি যিহোবাকে বলেছিলেন: “তুমি ত আমার সমস্ত পাপ তোমার পশ্চাতে ফেলিয়াছ।” (বাঁকা অক্ষরে মুদ্রণ আমাদের।) (যিশাইয় ৩৮:১৭) এখানে যিহোবাকে এমনভাবে বর্ণনা করা হয়েছে, যিনি একজন অনুতপ্ত অপরাধীর পাপগুলো মুছে ফেলছেন এবং তাঁর পিছনে ফেলে দিচ্ছেন, যেখানে তিনি ফিরে আর সেগুলোকে দেখেন না বা আর মনে রাখেন না। একটা তথ্যগ্রন্থ অনুসারে, যে-ধারণা দেওয়া হয়েছে সেটাকে হয়তো এভাবে প্রকাশ করা যেতে পারে: “তুমি [আমার পাপগুলোকে] এমন করেছ যেন সেগুলো কখনো করাই হয়নি।” তা কি সান্ত্বনাজনক নয়?
(যিশাইয় ৪২:৩) তিনি থেৎলা নল ভাঙ্গিবেন না; সধূম শলিতা নির্ব্বাণ করিবেন না; সত্যে তিনি ন্যায়বিচার প্রচলিত করিবেন।
যিশুর নম্রতা এবং কোমলতা অনুকরণ করুন
১৩ তাঁর কোমল কথাবার্তা। যিশুর সমবেদনা তাঁকে অন্যদের সঙ্গে, বিশেষভাবে নিপীড়িত ব্যক্তিদের সঙ্গে কোমলভাবে কথা বলতে অনুপ্রাণিত করেছিল। প্রেরিত মথি, যিশাইয় বই থেকে উদ্ধৃত করে যিশু সম্বন্ধে বলেছিলেন। যিশাইয় এই কথা বলেছিলেন: “তিনি থেৎলা নল ভাঙ্গিবেন না; সধূম শলিতা নির্ব্বাণ করিবেন না।” (যিশা. ৪২:৩; মথি ১২:২০) এর অর্থ কী? যিশু লোকেদের সঙ্গে খারাপভাবে কথা বলতেন না অথবা খারাপ আচরণ করতেন না। এর পরিবর্তে, তিনি এমনভাবে কথা বলতেন, যা তাদেরকে সতেজ করত। তিনি “ভগ্নান্তঃকরণ লোকদের” কাছে আশার বার্তা প্রচার করতেন। (যিশা. ৬১:১) তিনি “পরিশ্রান্ত ও ভারাক্রান্ত” লোকেদের তাঁর কাছে আসার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন, যাতে তারা “বিশ্রাম” বা সতেজতা পেতে পারে। (মথি ১১:২৮-৩০) তিনি তাঁর শিষ্যদের এই আশ্বাস দিয়েছিলেন, তাঁর সমস্ত উপাসকের প্রতি ঈশ্বরের কোমল চিন্তা রয়েছে, যাদের অন্তর্ভুক্ত এমন ‘ক্ষুদ্রগণ’ অথবা সেই ব্যক্তিরা, যাদেরকে জগৎ তুচ্ছ বলে মনে করত।—মথি ১৮:১২-১৪; লূক ১২:৬, ৭.
বাইবেল পাঠ
(যিশাইয় ৪০:৬-১৭) এক জনের রব, সে বলিতেছে, ‘ঘোষণা কর,’ এক জন কহিল, ‘কি ঘোষণা করিব?’ ‘মর্ত্ত্যমাত্র তৃণস্বরূপ, তাহার সমস্ত কান্তি ক্ষেত্রস্থ পুষ্পের তুল্য। ৭ তৃণ শুষ্ক হইয়া যায়, পুষ্প ম্লান হইয়া পড়ে, কারণ তাহার উপরে সদাপ্রভুর নিঃশ্বাস বহে; সত্যই লোকেরা তৃণস্বরূপ। ৮ তৃণ শুষ্ক হইয়া যায়, পুষ্প ম্লান হইয়া পড়ে, কিন্তু আমাদের ঈশ্বরের বাক্য চিরকাল থাকিবে।’ ৯ হে সিয়োনের কাছে সুসমাচার-প্রচারকারিণি! উচ্চ পর্ব্বতে আরোহণ কর; হে যিরূশালেমের কাছে সুসমাচার-প্রচারকারিণি! সবলে উচ্চৈঃস্বর কর, উচ্চৈঃস্বর কর, ভয় করিও না; যিহূদার নগর সকলকে বল, দেখ, তোমাদের ঈশ্বর! ১০ দেখ, প্রভু সদাপ্রভু সপরাক্রমে আসিতেছেন, তাঁহার বাহু তাঁহার জন্য কর্ত্তৃত্ব করে; দেখ, তাঁহার সঙ্গে তাঁহার [দাতব্য] বেতন আছে, তাঁহার অগ্রে তাঁহার [দাতব্য] পুরস্কার আছে। ১১ তিনি মেষপালকের ন্যায় আপন পাল চরাইবেন, তিনি শাবকদিগকে বাহুতে সংগ্রহ করিবেন, এবং কোলে করিয়া বহন করিবেন; দুগ্ধবতী সকলকে তিনি ধীরে ধীরে চালাইবেন। ১২ কে আপন করতলে জলরাশি মাপিয়াছে, বিঘত দিয়া আকাশমণ্ডল পরিমাণ করিয়াছে, পৃথিবীর ধূলা পালিতে ভরিয়াছে, পাল্লাতে পর্ব্বতগণকে, ও নিক্তিতে উপপর্ব্বতগণকে তৌল করিয়াছে? ১৩ কে সদাপ্রভুর আত্মার পরিমাণ করিয়াছে? কিম্বা তাঁহার মন্ত্রী হইয়া তাঁহাকে শিক্ষা দিয়াছে? ১৪ তিনি কাহার কাছে মন্ত্রণা গ্রহণ করিয়াছেন? কে তাঁহাকে বুদ্ধি দিয়াছে, ও বিচারপথ দেখাইয়াছে, তাঁহাকে জ্ঞান শিক্ষা দিয়াছে, ও বিবেচনার মার্গ জানাইয়াছে? ১৫ দেখ, জাতিগণ কলসের একটী জলবিন্দুর তুল্য, আর পাল্লাতে লগ্ন ধূলিকণার ন্যায় গণ্য; দেখ, তিনি দ্বীপ সকলকে একটী পরমাণুর ন্যায় তুলেন। ১৬ আর জ্বাল দিবার নিমিত্তে লিবানোনে, হোমবলির নিমিত্ত তাহার জন্তু সকলে কুলায় না। ১৭ তাঁহার সম্মুখে সমস্ত জাতি অবস্তুবৎ, তিনি তাহাদিগকে অসার ও শূন্য জ্ঞান করেন।
জানুয়ারি ৩০–ফেব্রুয়ারি ৫
ঈশ্বরের বাক্যের গুপ্তধন | যিশাইয় ৪৩-৪৬
“যিহোবা হলেন সত্য ভবিষ্যদ্বাণীর ঈশ্বর”
(যিশাইয় ৪৪:২৬-২৮) তিনি আপন দাসের বাক্য স্থির করেন, ও আপন দূতগণের মন্ত্রণা সিদ্ধ করেন; তিনি যিরূশালেমের বিষয়ে কহেন, তাহা বসতিবিশিষ্ট হইবে, আর যিহূদার নগর সকলের বিষয়ে কহেন, সে গুলি পুনর্নির্ম্মিত হইবে, আর আমি দেশের উৎসন্ন স্থান সকল পুনর্ব্বার উঠাইব। ২৭ তিনি অগাধ জলকে বলেন, শুষ্ক হও, আমি তোমার নদনদী শুকাইয়া ফেলিব। ২৮ তিনি কোরসের উদ্দেশে কহেন, আমার পালরক্ষক, সে আমার সমস্ত মনোরথ সিদ্ধ করিবে। তিনি যিরূশালেমের বিষয়ে বলেন, সে পুনর্নির্ম্মিত হইবে, এবং মন্দিরকে বলেন, তোমার ভিত্তিমূল স্থাপিত হইবে।
যিশাইয়ের ভবিষ্যদ্বাণী-২ ৭১-৭২ অনু. ২২-২৩, ইংরেজি
সত্য ঈশ্বর উদ্ধার করার বিষয়ে ভবিষ্যদ্বাণী করেন
২২ মন্ত্রজ্ঞরা বা ঈশ্বরের দ্বারা অনুপ্রাণিত নয় এমন ভবিষ্যদ্বক্তারা সাধারণত সুনির্দিষ্ট ভবিষ্যদ্বাণী করার সাহস দেখায় না কারণ তারা এই ভয় পায়, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সেগুলো ভুল বলে প্রমাণিত হবে। অন্যদিকে, যিশাইয়ের মাধ্যমে যিহোবা সেই ব্যক্তির নাম প্রকাশ করেন, যিনি তাঁর লোকেদের বন্দিত্ব থেকে মুক্ত করবেন, যাতে তারা নিজেদের দেশে ফিরে যেতে পারে এবং যিরূশালেম ও সেখানকার মন্দির পুনর্নির্মাণ করতে পারে। তার নাম হল কোরস আর তিনি পারস্য-রাজ মহান কোরস বলে পরিচিত। এ ছাড়া, বাবিলের দুর্ভেদ্য প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ভেদ করার জন্য কোরস যে-কৌশল ব্যবহার করবেন, সেটাও যিহোবা পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে বর্ণনা করেন। বাবিল উঁচু প্রাচীর ও নগরের চারপাশে বয়ে চলা জলপথ দ্বারা সুরক্ষিত থাকবে। কোরস সেই প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার এক প্রধান উৎসকে—ইউফ্রেটিস নদীকে—নিজের সুবিধার জন্য ভিন্নমুখী করে দেবেন। প্রাচীন কালের ইতিহাসবিদ হেরোডোটাস ও জেনোফোনের মতে, কোরস বাবিলের দিকে বয়ে চলা ইউফ্রেটিস নদীর জল ততক্ষণ পর্যন্ত ভিন্নমুখী করে রেখেছিলেন, যতক্ষণ পর্যন্ত না সেখানকার জল এতটা কমে যায় যে, এর ফলে তার সৈন্যরা হেঁটে পার হতে পারে। বাবিলের সুরক্ষাকারী প্রমত্তা নদী ইউফ্রেটিস শুকিয়ে যায়।
২৩ কোরস যে ঈশ্বরের লোকেদের মুক্ত করবেন এবং যিরূশালেম ও সেখানকার মন্দির যাতে পুনর্নির্মাণ করা হয় তা দেখবেন, সেই প্রতিজ্ঞার বিষয়ে কী বলা যায়? একটা ঘোষণাপত্রে কোরস নিজে এই আজ্ঞা দেন, যা বাইবেলে সংরক্ষিত রয়েছে: “পারস্য-রাজ কোরস এই কথা কহেন, স্বর্গের ঈশ্বর সদাপ্রভু পৃথিবীর সমস্ত রাজ্য আমাকে দান করিয়াছেন, আর তিনি যিহূদা দেশস্থ যিরূশালেমে তাঁহার জন্য এক গৃহ নির্ম্মাণ করিবার ভার আমাকে দিয়াছেন। তোমাদের মধ্যে, তাঁহার সমস্ত প্রজার মধ্যে, যে কেহ হউক, তাহার ঈশ্বর তাহার সহবর্ত্তী হউন; সে যিহূদা দেশস্থ যিরূশালেমে যাউক, ইস্রায়েলের ঈশ্বর সদাপ্রভুর যিরূশালেমস্থ গৃহ নির্ম্মাণ করুক; তিনিই [“সত্য,” NW ] ঈশ্বর।” (ইষ্রা ১:১-৩) যিশাইয়ের মাধ্যমে বলা যিহোবার বাক্য নিখুঁতভাবে পরিপূর্ণ হয়!
(যিশাইয় ৪৫:১, ২) সদাপ্রভু আপন অভিষিক্ত ব্যক্তি, কোরসের, বিষয়ে এই কথা কহেন, আমি তাহার দক্ষিণ হস্ত ধরিয়াছি, আমি তাহার সম্মুখে নানা জাতিকে পরাভব করিব, আর রাজগণের কটিবন্ধ খুলিয়া ফেলিব; আমি তাহার অগ্রে কবাট সকল মুক্ত করিব, আর পুরদ্বার সকল বদ্ধ থাকিবে না। ২ আমি তোমার অগ্রে অগ্রে গমন করিয়া উচ্চনীচ স্থান সমান করিব, আমি পিত্তলের কবাট ভগ্ন করিব, ও লৌহের হুড়কা কাটিয়া ফেলিব।
যিশাইয়ের ভবিষ্যদ্বাণী-২ ৭৭-৭৮ অনু. ৪-৬, ইংরেজি
যিহোবা—“ধর্ম্মশীল ও ত্রাণকারী ঈশ্বর”
৪ যিশাইয়ের মাধ্যমে যিহোবা এমনভাবে কোরসের সঙ্গে কথা বলেন যেন কোরস বেঁচে আছেন, যদিও যিশাইয়ের সময়ে কোরসের জন্মও হয়নি। (রোমীয় ৪:১৭) যেহেতু যিহোবা সুনির্দিষ্ট একটা কাজ সম্পাদন করার জন্য কোরসকে নিযুক্ত করেন, তাই কোরসকে ঈশ্বরের “অভিষিক্ত ব্যক্তি” বলা যেতে পারে। ঈশ্বরের পরিচালনায় তিনি বিভিন্ন জাতিকে পরাভূত করবেন, রাজাদের শক্তিহীন করে ফেলবেন ও তাদের প্রতিরোধ ব্যবস্থা দুর্বল করে ফেলবেন। তারপর, কোরস যখন বাবিল আক্রমণ করবেন, তখন যিহোবা লক্ষ রাখবেন যেন নগরের দ্বারগুলো খোলা থাকে আর এভাবে সেগুলো ভেঙে পড়া দ্বারের মতোই অকেজো হয়ে যায়। তিনি কোরসের আগে আগে যাবেন, তার সমস্ত প্রতিবন্ধকতা দূর করে দেবেন। সব শেষে, কোরসের বাহিনী নগর জয় করবে এবং “গুপ্ত স্থানে সঞ্চিত নিধি” অর্থাৎ অন্ধকার ভাণ্ডারে সঞ্চয় করে রাখা ধনসম্পদ অধিকার করে নেবে। যিশাইয় এই বিষয়েই ভবিষ্যদ্বাণী করেন। তার কথাগুলো কি সত্য হয়েছে?
৫ খ্রিস্টপূর্ব ৫৩৯ সালে—যিশাইয় এই ভবিষ্যদ্বাণী লিখে রাখার প্রায় ২০০ বছর পর—কোরস সত্যিই সেই নগর আক্রমণ করার জন্য বাবিলের প্রাচীরের সামনে উপস্থিত হন। (যিরমিয় ৫১:১১, ১২) কিন্তু, বাবিলীয়রা উদ্বিগ্ন হয় না। তারা মনে করে, তাদের নগর হল অজেয়। ইউফ্রেটিস নদীর জলে পরিপূর্ণ গভীর পরিখার উপর দাঁড়িয়ে থাকা উঁচু প্রাচীর এই নগরের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার একটা অংশ। এক-শো বছরেরও বেশি সময় ধরে কোনো শত্রুই বাবিল আক্রমণ করতে পারেনি! আসলে, বাবিলের শাসক বেল্শৎসর তার বাসভবনে এতটাই নিরপদ বোধ করেন যে, তিনি তার রাজসভার সদস্যদের সঙ্গে ভোজে অংশ নেন। (দানিয়েল ৫:১) সেই রাতে—অক্টোবর মাসের ৫/৬ তারিখ রাতের বেলা—কোরস দক্ষতার সঙ্গে এক সামরিক অভিযান সম্পন্ন করেন।
৬ কোরসের প্রকৌশলীরা ইউফ্রেটিস নদী থেকে বাবিলের দিকে বয়ে চলা জলস্রোতে একটা বাঁক তৈরি করে দেয় আর এভাবে নদীর জল ভিন্নমুখী করে দেয়, যাতে জল আর দক্ষিণে নগরের দিকে প্রবাহিত হতে না পারে। অল্পসময়ের মধ্যে বাবিলের আশেপাশের নদীর জল এতটাই কমে যায় যে, কোরসের বাহিনী নদীগর্ভের কাদাজলের মধ্য দিয়ে নগরের কেন্দ্রের দিকে যেতে পারে। (যিশাইয় ৪৪:২৭; যিরমিয় ৫০:৩৮) আশ্চর্যের বিষয় হল, যিশাইয়ের ভবিষ্যদ্বাণী অনুযায়ী, নদী বরাবর যে-দ্বার রয়েছে, সেটাও খোলা থাকে। কোরসের বাহিনী দল বেঁধে বাবিলে ঢুকে পড়ে, রাজপ্রাসাদ অধিকার করে এবং রাজা বেল্শৎসরকে হত্যা করে। (দানিয়েল ৫:৩০) এক রাতের মধ্যে জয় সম্পন্ন হয়। বাবিলের পতন হয় আর সেই ভবিষ্যদ্বাণী অক্ষরে অক্ষরে পরিপূর্ণ হয়।
(যিশাইয় ৪৫:৩-৬) আর আমি তোমাকে অন্ধকারাবৃত ধনকোষ ও গুপ্ত স্থানে সঞ্চিত নিধি দিব; যেন তুমি জানিতে পার, আমি সদাপ্রভুই তোমার নাম ধরিয়া ডাকি, আমি ইস্রায়েলের ঈশ্বর। ৪ আমার দাস যাকোবের ও আমার মনোনীত ইস্রায়েলের নিমিত্ত আমি তোমার নাম ধরিয়া তোমাকে ডাকিয়াছি; তুমি আমাকে না জানিলেও তোমাকে উপাধি দিয়াছি। ৫ আমিই সদাপ্রভু, আর কেহ নয়; আমি ব্যতীত অন্য ঈশ্বর নাই; তুমি আমাকে না জানিলেও আমি তোমার কটি বন্ধ করিব; ৬ যেন সূর্য্যোদয়ের স্থানাবধি পশ্চিম দিক্ পর্য্যন্ত লোকে জানিতে পারে যে, আমি ব্যতীত অন্য নাই; আমিই সদাপ্রভু, আর কেহ নয়।
যিশাইয়ের ভবিষ্যদ্বাণী-২ ৭৯-৮০ অনু. ৮-১০, ইংরেজি
যিহোবা—“ধর্ম্মশীল ও ত্রাণকারী ঈশ্বর”
যে-কারণে যিহোবা কোরসকে সমর্থন করবেন
৮ কে বাবিল জয় করবেন ও কীভাবে তা করা হবে, সেই সম্বন্ধে বলার পর যিহোবা যে-কারণে কোরসকে বিজয়ী হতে দেবেন, সেটার একটা কারণ ব্যাখ্যা করেন। যিহোবা কোরসের কাছে ভবিষ্যদ্বাণী করে বলেন, “যেন তুমি জানিতে পার, আমি সদাপ্রভুই তোমার নাম ধরিয়া ডাকি, আমি ইস্রায়েলের ঈশ্বর।” (যিশাইয় ৪৫:৩খ) এটা উপযুক্ত, কারণ বাইবেলের ইতিহাসের চতুর্থ বিশ্বশক্তির শাসকের এটা বোঝা প্রয়োজন যে, তাঁর মহৎ বিজয় তার চেয়ে আরও মহান একজন ব্যক্তির—নিখিলবিশ্বের সার্বভৌম প্রভু যিহোবার—সমর্থনের ফল। কোরসের এটা স্বীকার করা উচিত, যিনি তাকে ডাকেন বা কার্যভার দেন, তিনি হলেন ইস্রায়েলের ঈশ্বর যিহোবা। বাইবেলের নথি প্রকাশ করে, কোরসের মহৎ বিজয় যে যিহোবার কাছ থেকে এসেছে, তা তিনি সত্যিই স্বীকার করেছিলেন।—ইষ্রা ১:২, ৩.
৯ যিহোবা যে-কারণে কোরসকে বাবিল জয় করতে দেন, সেটার দ্বিতীয় কারণ তিনি ব্যাখ্যা করেন: “আমার দাস যাকোবের ও আমার মনোনীত ইস্রায়েলের নিমিত্ত আমি তোমার নাম ধরিয়া তোমাকে ডাকিয়াছি; তুমি আমাকে না জানিলেও তোমাকে উপাধি দিয়াছি।” (যিশাইয় ৪৫:৪) কোরসের বাবিল জয় হল পৃথিবীতে আলোড়ন সৃষ্টিকারী এক ঘটনা। এই ঘটনা এক বিশ্বশক্তির পতন ও আরেক বিশ্বশক্তির উত্থানকে চিহ্নিত করে আর এটা আসন্ন প্রজন্মের কাছে ইতিহাসের এক স্বাক্ষর রেখে যায়। তবে, আশেপাশের বিভিন্ন জাতি যারা উদ্বিগ্নতা নিয়ে ঘটনাগুলো লক্ষ করছে, তারা হয়তো এটা জেনে অবাক হবে, এসবই ঘটছে বাবিলে নির্বাসিত থাকা ‘সামান্য’ ব্যক্তিদের—যাকোবের বংশধর যিহুদিদের—জন্য, যাদের সংখ্যা কয়েক হাজার। কিন্তু যিহোবার চোখে, প্রাচীন ইস্রায়েল জাতির এই রক্ষাপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা সামান্য নয়। তারা তাঁর “দাস।” পৃথিবীর সমস্ত জাতির মধ্যে তারা হল তাঁর “মনোনীত।” যদিও কোরস আগে যিহোবাকে জানতেন না, কিন্তু যিহোবা সেই নগরকে ধ্বংস করার জন্য তাকে তাঁর অভিষিক্ত ব্যক্তি হিসেবে ব্যবহার করেছেন, যে-নগর এর বন্দিদের মুক্ত করতে প্রত্যাখ্যান করত। তাঁর মনোনীত লোকেরা চিরকাল বিদেশের মাটিতে কষ্টভোগ করবে, তা ঈশ্বরের উদ্দেশ্য নয়।
১০ যিহোবা যে-কারণে বাবিলকে ধ্বংস করার জন্য কোরসকে ব্যবহার করেন, সেটার তৃতীয় আর এমনকী আরও গুরুত্বপূর্ণ কারণ রয়েছে। যিহোবা বলেন: “আমিই সদাপ্রভু [“যিহোবা,” NW ], আর কেহ নয়; আমি ব্যতীত অন্য ঈশ্বর নাই; তুমি আমাকে না জানিলেও আমি তোমার কটি বন্ধ করিব; যেন সূর্য্যোদয়ের স্থানাবধি পশ্চিম দিক্ পর্য্যন্ত লোকে জানিতে পারে যে, আমি ব্যতীত অন্য নাই; আমিই সদাপ্রভু [“যিহোবা,” NW ], আর কেহ নয়।” (যিশাইয় ৪৫:৫, ৬) হ্যাঁ, বাবিলীয় বিশ্বশক্তির পতন হল যিহোবার ঈশ্বরত্বের এক প্রকাশ অর্থাৎ সকলের কাছে এক প্রমাণ যে, একমাত্র তাঁরই উপাসনা পাওয়ার অধিকার রয়েছে। ঈশ্বরের লোকেরা যেহেতু মুক্ত হয়েছে, তাই পূর্ব দিক হতে পশ্চিম দিকের বিভিন্ন জাতির ব্যক্তি-বিশেষরা জানতে পারবে, যিহোবাই হলেন একমাত্র সত্য ঈশ্বর।—মালাখি ১:১১.
আধ্যাত্মিক রত্ন খুঁজে বের করুন:
(যিশাইয় ৪৩:১০-১২) সদাপ্রভু কহেন, তোমরাই আমার সাক্ষী, এবং আমার মনোনীত দাস; যেন তোমরা জানিতে ও আমাতে বিশ্বাস করিতে পার, এবং বুঝিতে পার যে, আমিই তিনি; আমার পূর্ব্বে কোন ঈশ্বর নির্ম্মিত হয় নাই, এবং আমার পরেও হইবে না। ১১ আমি, আমিই সদাপ্রভু; আমি ভিন্ন আর ত্রাণকর্ত্তা নাই। ১২ আমিই সংবাদ দিয়াছি, পরিত্রাণ করিয়াছি, ঘোষণা করিয়াছি, কোন ইতর [দেবতা] তোমাদের মধ্যে ছিল না; অতএব তোমরাই আমার সাক্ষী, ইহা সদাপ্রভু কহেন, আর আমিই ঈশ্বর।
প্রহরীদুর্গ ১৪ ১১/১৫ ২১-২২ অনু. ১৪-১৬
“সেই জাতি, সদাপ্রভু যাহার ঈশ্বর”
এক সাক্ষি জাতি
১৪ ইস্রায়েলীয়রা তাদের ঈশ্বর যিহোবার সেবা করত, কিন্তু অন্যান্য জাতির লোকেরা তাদের দেব-দেবীর উপাসনা করত। তাই, একটা গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের উত্তর দেওয়া প্রয়োজন ছিল আর তা হল: সত্য ঈশ্বর কে? যিশাইয়ের দিনে যিহোবা বলেছিলেন, এই প্রশ্নের উত্তর ঠিক সেভাবে দেওয়া হবে, যেমনটা আদালতে কোনো বিচারের সময় প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হয়। তিনি বলেছিলেন, অন্যান্য জাতির দেব-দেবী যদি বাস্তব হয়ে থাকে, তাহলে তাদেরকে এই বিচারে নিজ নিজ সাক্ষি নিয়ে আসা উচিত। তিনি এই কথা বলেছিলেন: “তাহারা আপনাদের সাক্ষীদিগকে উপস্থিত করুক, তাহাতে নির্দ্দোষীকৃত হইবে; অথবা তাহারা শ্রবণ করুক, ও বলুক, সত্য বটে।”—যিশা. ৪৩:৯.
১৫ অন্যান্য জাতির দেব-দেবী প্রমাণ করতে পারেনি যে, তারা বাস্তব। তারা ছিল এমন প্রতিমা, যা কথা বলতে পারে না এবং অন্য কেউ বহন না করলে নড়তেও পারে না। (যিশা. ৪৬:৫-৭) কিন্তু, যিহোবা তাঁর প্রজা ইস্রায়েলীয়দের বলেছিলেন: “তোমরাই আমার সাক্ষী, এবং আমার মনোনীত দাস; যেন তোমরা জানিতে ও আমাতে বিশ্বাস করিতে পার, এবং বুঝিতে পার যে, আমিই তিনি; আমার পূর্ব্বে কোন ঈশ্বর নির্ম্মিত হয় নাই, এবং আমার পরেও হইবে না। আমি, আমিই সদাপ্রভু [“যিহোবা,” NW ]; আমি ভিন্ন আর ত্রাণকর্ত্তা নাই। . . . অতএব তোমরাই আমার সাক্ষী, . . . আর আমিই ঈশ্বর।”—যিশা. ৪৩:১০-১২.
১৬ আদালতের একজন সাক্ষির মতো, যিহোবার লোকেদেরও এই সাক্ষ্য দেওয়ার সম্মাননীয় সুযোগ ছিল, যিহোবা হচ্ছেন একমাত্র সত্য ঈশ্বর। তাদের সম্বন্ধে তিনি বলেছিলেন, “সেই . . . প্রজাবৃন্দকে আমি আপনার নিমিত্ত নির্ম্মাণ করিয়াছি, তাহারা আমার প্রশংসা প্রচার করিবে।” (যিশা. ৪৩:২১) তারা যিহোবার প্রজা বা লোক হিসেবে পরিচিত ছিল। যেহেতু যিহোবা ইস্রায়েলীয়দের মিশর থেকে মুক্ত করেছিলেন, তাই তিনি চেয়েছিলেন যেন তারা স্বেচ্ছায় তাঁর বাধ্য হয় এবং তাঁকে তাদের সার্বভৌম প্রভু হিসেবে গৌরবান্বিত করে। যিহোবা বর্তমানেও তাঁর লোকেদের কাছ থেকে একই বিষয় চান। ঈশ্বরের লোকেদের কেমন মনোভাব থাকা উচিত, সেই বিষয়ে ভাববাদী মীখা প্রকাশ করেন: “জাতিমাত্র প্রত্যেকে আপন আপন দেবের নামে চলে; আর আমরা যুগে যুগে চিরকাল আমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর নামে চলিব।”—মীখা ৪:৫.
(যিশাইয় ৪৩:২৫) আমি, আমিই আমার নিজের অনুরোধে তোমার অধর্ম্ম সকল মার্জ্জনা করি, তোমার পাপ সকল মনে রাখিব না।
যিশাইয়ের ভবিষ্যদ্বাণী-২ ৬০ অনু. ২৪, ইংরেজি
“তোমরাই আমার সাক্ষী”!
২৪ কিন্তু লক্ষ করুন, শুধুমাত্র ইস্রায়েল অনুশোচনা প্রকাশ করেছে বলে ঈশ্বর করুণা দেখাবেন এমন নয়; যিহোবার নিজের অনুরোধে তা দেখাবেন। হ্যাঁ, এতে তাঁর নাম জড়িত রয়েছে। তিনি যদি ইস্রায়েলকে স্থায়ীভাবে নির্বাসনে থাকতে দেন, তা হলে যারা সেটা দেখবে, তারা তাঁর নামের দুর্নাম করবে। (গীতসংহিতা ৭৯:৯; যিহিষ্কেল ২০:৮-১০) একইভাবে বর্তমানে, যিহোবার নাম পবিত্রীকরণ ও তাঁর সার্বভৌমত্বের ন্যায্যতা প্রতিপাদনের কাছে মানুষের পরিত্রাণ হল গৌণ বিষয়। তা সত্ত্বেও, যিহোবা সেই ব্যক্তিদের ভালোবাসেন, যারা নিঃশর্তে তাঁর শাসন মেনে নেয় এবং আত্মায় ও সত্যে তাঁর উপাসনা করে। তিনি যিশু খ্রিস্টের বলিদানের ভিত্তিতে এই ব্যক্তিদের অধর্ম বা পাপ মুছে ফেলার মাধ্যমে তাদের প্রতি নিজের ভালোবাসা প্রকাশ করেন, তা তারা অভিষিক্ত ব্যক্তি কিংবা আরও মেষ যা-ই হোক না কেন।—যোহন ৩:১৬; ৪:২৩, ২৪.
বাইবেল পাঠ
(যিশাইয় ৪৬:১-১৩) বেল নত হইল, নবো উবুড় হইয়া পড়িল; তাহাদের প্রতিমাগণ জন্তুদের উপরে ও পশুদের উপরে; তোমরা যাহাদিগকে তুলিয়া লইয়া বেড়াইতে, তাহারা বোঝা হইল, ক্লান্ত পশুর ভার হইল। ২ তাহারা একসঙ্গে উবুড় হইল, নত হইয়া পড়িল, বোঝা রক্ষা করিতে পারিল না, বরং আপনারা বন্দি হইয়া চলিয়া গেল। ৩ হে যাকোবের কুল, হে ইস্রায়েলকুলের সমস্ত অবশিষ্টাংশ, আমার কথা শুন; গর্ব্ভ হইতে আমি তোমাদিগকে বহন করিয়া আসিতেছি; মাতার উদর হইতে তোমাদিগকে বহন করিয়া আসিতেছি। ৪ আর তোমাদের বৃদ্ধ বয়স পর্য্যন্ত আমি যে সেই থাকিব, পক্বকেশ হওয়া পর্য্যন্ত আমিই তুলিয়া বহন করিব; আমিই নির্ম্মাণ করিয়াছি, আমিই বহন করিব; হাঁ, আমিই তুলিয়া বহন করিব, রক্ষা করিব। ৫ তোমরা আমাকে কাহার সদৃশ ও কাহার সমান বলিবে, কিম্বা কাহার সহিত আমার উপমা দিলে আমরা পরম্পর সমান হইব? ৬ তাহারা তোড়া হইতে স্বর্ণ ঢালে, নিক্তিতে রৌপ্য তৌল করে, স্বর্ণকারকে বানি দেয়, আর সে তাহার দ্বারা এক দেবতা নির্ম্মাণ করে, পরে তাহারা দণ্ডবৎ হইয়া প্রণিপাত করে। ৭ তাহারা তাহাকে স্কন্ধে তুলিয়া বহন করে, স্বস্থানে বসাইয়া দেয়, তাহাতে সে দাঁড়াইয়া থাকে, আপন স্থান হইতে সরে না; আবার এক জন তাহার কাছে ত্রুন্দন করে, কিন্তু সে উত্তর দিতে পারে না, কাহাকেও সঙ্কট হইতে নিস্তার করিতে পারে না। ৮ তোমরা ইহা স্মরণ কর, ও পুরুষত্ব দেখাও; হে অধর্ম্মাচারিগণ, মনোযোগ কর। ৯ সেকালের পুরাতন কার্য্য সকল স্মরণ কর; কারণ আমিই ঈশ্বর, আর কেহ নয়; আমি ঈশ্বর, আমার তুল্য কেহ নাই। ১০ আমি শেষের বিষয় আদি অবধি জ্ঞাত করি, যাহা সাধিত হয় নাই, তাহা পূর্ব্বে জানাই, আর বলি, আমার মন্ত্রণা স্থির থাকিবে, আমি আপনার সমস্ত মনোরথ সিদ্ধ করিব। ১১ আমি পূর্ব্ব দিক্ হইতে হিংস্র পক্ষীকে, দূরদেশ হইতে আমার মন্ত্রণার মনুষ্যকে, আহ্বান করি; আমি বলিয়াছি, আর আমি সফল করিব; আমি কল্পনা করিয়াছি, আর আমি সিদ্ধ করিব। ১২ হে কঠিন-চিত্তেরা, তোমরা যাহারা ধার্ম্মিকতা হইতে দূরবর্ত্তী, আমার কথা শুন; ১৩ আমি নিজ ধর্ম্মশীলতা নিকটস্থ করিলাম; তাহা দূরে থাকিবে না, আর আমার পরিত্রাণের বিলম্ব হইবে না; আমার শোভাস্বরূপ ইস্রায়েলের জন্য আমি সিয়োনে পরিত্রাণ স্থাপন করিব।