অধ্যায় দশ
এক রাজ্য “তাহা কখনও বিনষ্ট হইবে না”
১. মানবজাতির ইতিহাসে জগতের ঘটনাগুলো কোন সত্যকে জোরালো করে?
জগতের ঘটনাগুলো প্রতিদিন এই সত্যকে আরও জোরালো করে যে, মানুষ যিহোবার সার্বভৌমত্বকে অস্বীকার করে এবং নিজেরা নিজেদের শাসন করার চেষ্টা করে সুখ পায়নি। কোনো ধরনের মানব সরকারই মানবজাতির জন্য নিরপেক্ষভাবে সুযোগ-সুবিধা দিতে পারেনি। যদিও মানুষ বিজ্ঞানবিষয়ক জ্ঞানের ক্ষেত্রে অসাধারণ উন্নতি করেছে কিন্তু তারা এমনকি একজন ব্যক্তির অসুস্থতাকে জয় করতে বা তার মৃত্যুর শেষ ঘটাতে পারেনি। মানুষের শাসন যুদ্ধ, হিংস্রতা, অপরাধ, দুর্নীতি বা দরিদ্রতা দূর করতে পারেনি। এখনও অনেক দেশে অত্যাচারী সরকারগুলো লোকেদের ওপর কর্তৃত্ব করছে। (উপদেশক ৮:৯) প্রযুক্তিবিদ্যা, লোভ এবং অজ্ঞানতা সমস্ত কিছু একত্রে স্থল, জল ও বায়ুকে দূষিত করছে। সরকারি কর্মকর্তারা অর্থনীতিকে ভুলভাবে পরিচালনা করায় অনেকের পক্ষে জীবনের প্রয়োজনীয় বস্তুগুলো পাওয়াও কষ্টকর হয়ে পড়ে। হাজার হাজার বছর ধরে মানুষের শাসন এই সত্যকে সুস্পষ্ট করেছে: “মনুষ্যের পথ তাহার বশে নয়, মনুষ্য চলিতে চলিতে আপন পাদবিক্ষেপ স্থির করিতে পারে না।”—যিরমিয় ১০:২৩.
২. মানবজাতির সমস্যাগুলোর একমাত্র সমাধান কী?
২ এর সমাধান কী? ঈশ্বরের রাজ্য, যেটার জন্য যীশু তাঁর অনুসারীদের প্রার্থনা করতে শিখিয়েছিলেন: “তোমার রাজ্য আইসুক, তোমার ইচ্ছা সিদ্ধ হউক, যেমন স্বর্গে তেমনি পৃথিবীতেও হউক।” (মথি ৬:৯, ১০) ২ পিতর ৩:১৩ পদে ঈশ্বরের স্বর্গীয় রাজ্যকে ‘নূতন আকাশমণ্ডল’ বলা হয়েছে, যেটা “নূতন পৃথিবীর” অর্থাৎ ধার্মিক মানবসমাজের ওপর শাসন করবে। ঈশ্বরের স্বর্গীয় রাজ্য এতটাই গুরুত্বপূর্ণ যে, যীশু এটাকে তাঁর প্রচারের মুখ্য বিষয় করেছিলেন। (মথি ৪:১৭) আমাদের জীবনে এর স্থান কোথায় হওয়া উচিত, তা তিনি এই পরামর্শের মাধ্যমে দেখিয়েছিলেন: “তোমরা প্রথমে তাঁহার রাজ্য ও তাঁহার ধার্ম্মিকতার বিষয়ে চেষ্টা কর।”—মথি ৬:৩৩.
৩. ঈশ্বরের রাজ্য সম্বন্ধে জানা কেন এখন সবচেয়ে বেশি জরুরি?
৩ ঈশ্বরের রাজ্য সম্বন্ধে জানা এখন সবচেয়ে বেশি জরুরি কারণ খুব শীঘ্রই সেই রাজ্য এই পৃথিবীর শাসনব্যবস্থাকে চিরকালের জন্য পরিবর্তন করতে পদক্ষেপ নেবে। দানিয়েল ২:৪৪ পদ ভবিষ্যদ্বাণী করে: “সেই রাজগণের [যে-সরকারগুলো এখন শাসন করছে] সময়ে স্বর্গের ঈশ্বর [স্বর্গে] এক রাজ্য স্থাপন করিবেন, তাহা কখনও বিনষ্ট হইবে না, এবং সেই রাজত্ব অন্য জাতির হস্তে সমর্পিত হইবে না [মানুষ আর কখনও পৃথিবীকে শাসন করবে না]; তাহা ঐ সকল [বর্তমান] রাজ্য চূর্ণ ও বিনষ্ট করিয়া আপনি চিরস্থায়ী হইবে।” এভাবে ওই রাজ্য এই সম্পূর্ণ দুষ্ট বিধিব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দিয়ে এই শেষকালের শেষ নিয়ে আসবে। তখন পৃথিবীর ওপর স্বর্গীয় রাজ্যের শাসন করা নিয়ে কোনো প্রশ্ন থাকবে না। আমাদের কতই না কৃতজ্ঞ হওয়া উচিত যে, এটা যে-স্বস্তি নিয়ে আসবে তা এখন খুবই কাছে!
৪. রাজ্যের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত কোন ঘটনা ১৯১৪ সালে স্বর্গে ঘটেছিল আর কেন তা আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ?
৪ খ্রীষ্ট যীশু ১৯১৪ সালে, রাজা হিসেবে অধিষ্ঠিত হয়েছেন আর তাঁকে ‘[তাঁহার] শত্রুদের মধ্যে কর্ত্তৃত্ব করিবার’ ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। (গীতসংহিতা ১১০:১, ২) এ ছাড়া, সেই বছর এই বর্তমান দুষ্ট বিধিব্যবস্থার ‘শেষ কাল’ শুরু হয়েছে। (২ তীমথিয় ৩:১-৫, ১৩) আর ওই একই সময়ে, ভবিষ্যদ্বাণীমূলক দর্শনে দানিয়েল যে-ঘটনাগুলো দেখেছিলেন, তা স্বর্গে ঘটেছিল। ‘অনেক দিনের বৃদ্ধ’ যিহোবা ঈশ্বর, মনুষ্যপুত্র যীশু খ্রীষ্টকে “কর্ত্তৃত্ব, মহিমা ও রাজত্ব” দিয়েছিলেন আর “লোকবৃন্দ, জাতি ও ভাষাবাদীকে তাঁহার সেবা করিতে হইবে।” দর্শন সম্বন্ধে বলতে গিয়ে, দানিয়েল লিখেছিলেন: “তাঁহার কর্ত্তৃত্ব অনন্তকালীন কর্ত্তৃত্ব, তাহা লোপ পাইবে না, এবং তাঁহার রাজ্য বিনষ্ট হইবে না।” (দানিয়েল ৭:১৩, ১৪) ঈশ্বর খ্রীষ্টের অধীনস্থ এই স্বর্গীয় রাজ্যের মাধ্যমেই ধার্মিকতার প্রেমিকদের অগণিত ভাল ভাল জিনিস উপভোগ করতে দেবেন, যা তিনি প্রথম মানব পিতামাতাকে পরমদেশে রাখার সময় স্থির করেছিলেন।
৫. রাজ্য সম্বন্ধে কোন বিস্তারিত বর্ণনা আমাদের গভীর আগ্রহের বিষয় এবং কেন?
৫ আপনি কি এই রাজ্যের একজন অনুগত প্রজা হতে চান? যদি চান, তা হলে এই স্বর্গীয় সরকারের গঠন ও কাজ সম্বন্ধে আপনার গভীর আগ্রহ থাকবে। আপনি জানতে চাইবেন যে এটা এখন কী করছে, ভবিষ্যতে কী করবে এবং এটা আপনার কাছ থেকে কী চায়। আপনি যখন আরও গভীরভাবে রাজ্যকে পরীক্ষা করবেন, তখন এটার প্রতি আপনার কৃতজ্ঞতা বাড়বে। আপনি যদি এর শাসনব্যবস্থাকে সমর্থন করেন, তা হলে ঈশ্বরের রাজ্য বাধ্য মানবজাতির জন্য যে-চমৎকার বিষয়গুলো সাধন করবে, সেই সম্বন্ধে অন্যদের বলার জন্য আপনি আরও ভালভাবে সুসজ্জিত হবেন।—গীতসংহিতা ৪৮:১২, ১৩.
ঈশ্বরের রাজ্যের শাসকরা
৬. (ক) মশীহ রাজ্যের মাধ্যমে কার সার্বভৌমত্ব প্রকাশ পেয়েছে, তা শাস্ত্রপদগুলো কীভাবে দেখায়? (খ) রাজ্য সম্বন্ধে আমরা যা জানি, সেগুলো দ্বারা আমাদের কীভাবে প্রভাবিত হওয়া উচিত?
৬ এভাবে পরীক্ষা করলে যে-বিষয়টা প্রথমে জানা যায় তা হল, এই মশীহ রাজ্য যিহোবার নিজের সার্বভৌমত্বের এক প্রকাশ। যিহোবাই তাঁর পুত্রকে “কর্ত্তৃত্ব, মহিমা ও রাজত্ব” দিয়েছিলেন। ঈশ্বরের পুত্র রাজা হিসেবে শাসন শুরু করার ক্ষমতা পাওয়ার পর, স্বর্গে উপযুক্তভাবেই এই ঘোষণা শোনা গিয়েছিল: “জগতের রাজ্য আমাদের প্রভুর [যিহোবা ঈশ্বরের] ও তাঁহার খ্রীষ্টের হইল, এবং তিনি [যিহোবা] যুগপর্য্যায়ের যুগে যুগে রাজত্ব করিবেন।” (প্রকাশিত বাক্য ১১:১৫) অতএব, এই রাজ্য সম্বন্ধে যে-বিষয়গুলো আমরা লক্ষ করি এবং এটা যা যা সম্পন্ন করে সেগুলোর সমস্তই আমাদের, যিহোবার আরও কাছে নিয়ে যেতে পারে। আমরা যে-বিষয়গুলো শিখি, সেগুলো তাঁর সার্বভৌমত্বের প্রতি চিরকাল বশীভূত থাকার আকাঙ্ক্ষা আমাদের মনে গেঁথে দেবে।
৭. যীশু খ্রীষ্ট যে যিহোবার প্রতিনিধি শাসক, তা আমাদের জন্য কেন বিশেষ আগ্রহের বিষয়?
৭ এ ছাড়া, ভেবে দেখুন যে যীশু খ্রীষ্টকে যিহোবা তাঁর প্রতিনিধি শাসক হিসেবে সিংহাসনে অধিষ্ঠিত করেছেন। প্রধান কার্যকারী হিসেবে যীশু আমাদের প্রয়োজনগুলো সম্বন্ধে আমাদের সকলের চেয়ে আরও ভাল জানেন, যাঁকে ঈশ্বর পৃথিবী ও মানুষ সৃষ্টি করতে ব্যবহার করেছিলেন। এ ছাড়াও, মানব ইতিহাসের শুরু থেকে তিনি ‘মনুষ্য-সন্তানগণের জন্য আনন্দ’ প্রকাশ করেছিলেন। (হিতোপদেশ ৮:৩০, ৩১; কলসীয় ১:১৫-১৭) মানুষের জন্য তাঁর এতটাই ভালবাসা ছিল যে তিনি নিজে পৃথিবীতে এসেছিলেন এবং আমাদের জন্য তাঁর জীবন মুক্তির মূল্য হিসেবে দিয়েছিলেন। (যোহন ৩:১৬) এভাবে তিনি আমাদের জন্য পাপ ও মৃত্যুর দাসত্ব থেকে মুক্ত হওয়ার উপায় এবং অনন্ত জীবন পাওয়ার সুযোগ করে দিয়েছিলেন।—মথি ২০:২৮.
৮. (ক) মানব শাসকদের বিপরীতে, কেন ঈশ্বরের সরকার স্থায়ী হবে? (খ) স্বর্গীয় সরকারের সঙ্গে “বিশ্বস্ত ও বুদ্ধিমান্ দাস” এর কী সম্পর্ক রয়েছে?
৮ ঈশ্বরের রাজ্য এক অপরিবর্তনীয়, স্থায়ী সরকার। যিহোবা নিজে যে মৃত্যুর অধীন নন, সেটাই এই রাজ্যের স্থায়িত্বকে নিশ্চিত করে। (গীতসংহিতা ১৪৬:৩-৫, ১০) মানব রাজাদের বৈসাদৃশ্যে যীশু খ্রীষ্ট, যাঁকে ঈশ্বর রাজপদ দিয়েছেন তিনি নিজেও অমর। (রোমীয় ৬:৯; ১ তীমথিয় ৬:১৫, ১৬) খ্রীষ্টের সঙ্গে স্বর্গীয় সিংহাসনে ১,৪৪,০০০ জন থাকবে, যারা “সমুদয় বংশ ও ভাষা ও জাতি ও লোকবৃন্দ হইতে” আসা ঈশ্বরের অনুগত দাস। তাদেরও অমর জীবন দান করা হয়েছে। (প্রকাশিত বাক্য ৫:৯, ১০; ১৪:১-৪; ১ করিন্থীয় ১৫:৪২-৪৪, ৫৩) তাদের বেশির ভাগই ইতিমধ্যে স্বর্গে আছে আর অবশিষ্টাংশরা যারা এখনও এই পৃথিবীতে আছে তাদের নিয়ে “বিশ্বস্ত ও বুদ্ধিমান্ দাস” গঠিত, যারা এখানে আনুগত্যের সঙ্গে রাজ্যের বিষয়গুলোকে এগিয়ে নিয়ে চলেছে।—মথি ২৪:৪৫-৪৭.
৯, ১০. (ক) রাজ্য কোন বিভেদ সৃষ্টিকারী, কলুষিত প্রভাবগুলো সরিয়ে দেবে? (খ) আমরা যদি ঈশ্বরের রাজ্যের শত্রু হতে না চাই, তা হলে কোন বিষয়গুলোতে জড়িত হওয়া উচিত নয়?
৯ খুব শীঘ্রই, যিহোবা তাঁর নিরূপিত সময়ে তাঁর দণ্ডদানকারী বাহিনীকে পৃথিবী পরিষ্কার করতে পাঠাবেন। তারা সেই সমস্ত মানুষদের চিরকালের জন্য ধ্বংস করবে, যারা স্বেচ্ছায় যিহোবার সার্বভৌমত্বকে অস্বীকার করে এবং যীশু খ্রীষ্টের মাধ্যমে যে-প্রেমময় ব্যবস্থাগুলো তিনি করেছেন সেগুলো অবজ্ঞা করে। (২ থিষলনীকীয় ১:৬-৯) সেটা হবে যিহোবার দিন, নিখিলবিশ্বের সার্বভৌম শাসক হিসেবে তাঁর ন্যায্যতা প্রতিপাদন করার দীর্ঘ আকাঙ্ক্ষিত সময়। “দেখ, সদাপ্রভুর দিন আসিতেছে; . . . তথাকার [পৃথিবীর] পাপীদিগকে তাহার মধ্য হইতে উচ্ছিন্ন করিবার নিমিত্ত সেই দিন দারুণ এবং ক্রোধ ও প্রজ্বলিত কোপসমন্বিত।” (যিশাইয় ১৩:৯) “সেই দিন ক্রোধের দিন, সঙ্কটের ও সঙ্কোচের দিন, নাশের ও সর্ব্বনাশের দিন, অন্ধকারের ও তিমিরের দিন।”—সফনিয় ১:১৫.
১০ সমস্ত মিথ্যা ধর্ম এবং মানব সরকারগুলো ও তাদের সেনাবাহিনী, যারা এই জগতের অদৃশ্য শাসকের দ্বারা পরিচালিত হয়েছে, তারা চিরকালের জন্য ধ্বংস হয়ে যাবে। যারা আত্মকেন্দ্রিক, অসৎ, অনৈতিক জীবনযাপন করে নিজেদের এই জগতের বলে দেখায়, তারা ধ্বংস হয়ে যাবে। শয়তান ও তার মন্দ দূতেরা যাতে পৃথিবীর অধিবাসীদের সংস্পর্শে আসতে না পারে, এর জন্য তাদের সরিয়ে ফেলা হবে এবং হাজার বছরের জন্য অগাধলোকে আটকে রাখা হবে। সেই সময় পৃথিবীর সমস্ত কিছু পুরোপুরি ঈশ্বরের রাজ্যের নিয়ন্ত্রণে থাকবে। যারা ধার্মিকতা ভালবাসে, তাদের সকলের জন্য কী এক স্বস্তিই না তা হবে!—প্রকাশিত বাক্য ১৮:২১, ২৪; ১৯:১১-১৬, ১৯-২১; ২০:১, ২.
রাজ্যের লক্ষ্যগুলো যেভাবে অর্জিত হচ্ছে
১১. (ক) কীভাবে মশীহ রাজ্য পৃথিবীর জন্য যিহোবার উদ্দেশ্য পরিপূর্ণ করবে? (খ) সেই সময় পৃথিবীতে যে-লোকেরা বেঁচে থাকবে, তাদের জন্য রাজ্যের শাসনের অর্থ কী হবে?
১১ মশীহ রাজ্য পৃথিবীর জন্য ঈশ্বরের আদি উদ্দেশ্যকে পুরোপুরিভাবে পরিপূর্ণ করবে। (আদিপুস্তক ১:২৮; ২:৮, ৯, ১৫) এই বর্তমান দিন পর্যন্ত মানবজাতি সেই উদ্দেশ্য সমর্থন করতে ব্যর্থ হয়েছে। কিন্তু, ‘ভাবী জগৎ’ মনুষ্যপুত্র যীশু খ্রীষ্টের বশীভূত হবে। যারা এই পুরনো বিধিব্যবস্থায় যিহোবার বিচারদণ্ড থেকে রক্ষা পাবে, তারা সবাই রাজা খ্রীষ্টের অধীনে একতাবদ্ধভাবে কাজ করবে, যাতে করে সারা পৃথিবী এক পরমদেশে পরিণত হয়। (ইব্রীয় ২:৫-৯) সমস্ত মানবজাতি তাদের কাজ উপভোগ করবে এবং পৃথিবীর প্রচুর উৎপাদন ক্ষমতা থেকে পুরোপুরি উপকার লাভ করবে।—গীতসংহিতা ৭২:১, ৭, ৮, ১৬-১৯; যিশাইয় ৬৫:২১, ২২.
১২. কীভাবে রাজ্যের প্রজাদের মন ও শরীরকে সিদ্ধ অবস্থায় নিয়ে আসা হবে?
১২ যখন আদম ও হবাকে সৃষ্টি করা হয়েছিল, তখন তারা সিদ্ধ ছিল আর ঈশ্বরের উদ্দেশ্য ছিল যে এই পৃথিবী তাদের সন্তানসন্ততিতে পরিপূর্ণ হবে, সবাই সিদ্ধ মন ও শরীর উপভোগ করবে। রাজ্যের শাসনাধীনে সেই উদ্দেশ্য চমৎকারভাবে বাস্তবে পরিণত হবে। এর জন্য পাপের সমস্ত প্রভাব সরিয়ে ফেলা দরকার আর তাই খ্রীষ্ট শুধু রাজা নন সেইসঙ্গে মহাযাজক হিসেবেও কাজ করেন। ধৈর্য ধরে, তিনি তাঁর বাধ্য প্রজাদের তাঁর নিজের মানব জীবনের পাপের প্রায়শ্চিত্তমূলক বলিদানের মূল্য থেকে উপকার লাভ করতে সাহায্য করবেন।
১৩. রাজ্যের শাসনাধীনে কোন শারীরিক উপকারগুলো লাভ করা যাবে?
১৩ রাজ্যের শাসনাধীনে, পৃথিবীর অধিবাসীরা চমৎকার শারীরিক উপকারগুলো লাভ করবে। “তৎকালে অন্ধদের চক্ষু খোলা যাইবে, আর বধিরদের কর্ণ মুক্ত হইবে। তৎকালে খঞ্জ হরিণের ন্যায় লম্ফ দিবে, ও গোঙ্গাদের জিহ্বা আনন্দগান করিবে।” (যিশাইয় ৩৫:৫, ৬) বার্ধক্য বা রোগের কারণে বিকৃত হয়ে যাওয়া মাংস, শিশুদের চেয়ে আরও কোমল হবে আর দীর্ঘস্থায়ী দুর্বলতাগুলোর জায়গায় চমৎকার স্বাস্থ্য হবে। “তাহার মাংস বালকের অপেক্ষাও সতেজ হইবে, সে যৌবনকাল ফিরিয়া পাইবে।” (ইয়োব ৩৩:২৫) এমন সময় আসবে যখন কারও “আমি পীড়িত” বলার কারণ থাকবে না। কেন? কারণ ঈশ্বর-ভয়শীল মানুষেরা পাপ ও এর যন্ত্রণাদায়ক প্রভাবগুলো থেকে মুক্ত হবে। (যিশাইয় ৩৩:২৪; লূক ১৩:১১-১৩) হ্যাঁ, ঈশ্বর “তাহাদের সমস্ত নেত্রজল মুছাইয়া দিবেন; এবং মৃত্যু আর হইবে না; শোক বা আর্ত্তনাদ বা ব্যথাও আর হইবে না; কারণ প্রথম বিষয় সকল লুপ্ত হইল।”—প্রকাশিত বাক্য ২১:৪.
১৪. মানব সিদ্ধতায় পৌঁছানোর সঙ্গে কী জড়িত?
১৪ কিন্তু, সিদ্ধতায় পৌঁছানো বলতে শুধু সুস্থ শরীর ও সুস্থ মন থাকার চেয়েও আরও বেশি কিছু জড়িত। এর মধ্যে যিহোবার গুণগুলো সঠিকভাবে প্রদর্শন করাও জড়িত কারণ আমাদের ‘ঈশ্বরের প্রতিমূর্ত্তিতে, তাঁহার সাদৃশ্যে’ সৃষ্টি করা হয়েছিল। (আদিপুস্তক ১:২৬) সেটা অর্জন করার জন্য অনেক শিক্ষার দরকার হবে। নতুন জগতে “ধার্ম্মিকতা বসতি করে।” তাই, যিশাইয় ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন, “জগন্নিবাসীরা ধার্ম্মিকতা শিক্ষা করিবে।” (২ পিতর ৩:১৩; যিশাইয় ২৬:৯) এই গুণ সমস্ত জাতির লোকেদের, ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের, পরিবারে এবং সবচেয়ে বড় কথা হল ঈশ্বরের সঙ্গে শান্তি নিয়ে আসে। (গীতসংহিতা ৮৫:১০-১৩; যিশাইয় ৩২:১৭) যারা ধার্মিকতা শেখে তারা ধীরে ধীরে তাদের জন্য ঈশ্বরের ইচ্ছা সম্বন্ধে শিখবে। যিহোবার প্রতি প্রেম তাদের হৃদয়ে যতই গভীর হবে, ততই তারা তাদের জীবনের প্রতিটা বিষয়ে তাঁর মানগুলো মেনে চলবে। তারা যীশুর মতো বলতে পারবে, ‘আমি সর্ব্বদা আমার পিতার সন্তোষজনক কার্য্য করি।’ (যোহন ৮:২৯) এটা যখন সমস্ত মানবজাতির ক্ষেত্রে সত্য হবে, তখন জীবন কতই না আনন্দের হবে!
সম্পাদিত কাজগুলো ইতিমধ্যেই স্পষ্ট
১৫. এই অনুচ্ছেদের প্রশ্নগুলো ব্যবহার করে রাজ্যের কাজগুলো তুলে ধরুন এবং দেখান যে, আমাদের এখন কী করা উচিত।
১৫ ঈশ্বরের রাজ্যের দ্বারা সম্পাদিত চমৎকার কাজগুলো এবং এর প্রজারা ইতিমধ্যেই স্পষ্ট। নিচের প্রশ্ন ও শাস্ত্রপদগুলো আপনাকে এই কাজগুলোর কয়েকটা ও সেইসঙ্গে রাজ্যের সমস্ত প্রজারা যে-বিষয়গুলো করতে পারে ও এখন করে যাওয়া উচিত, তা মনে করিয়ে দেবে।
রাজ্য প্রথমে কার বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেয় এবং এর ফল কী হয়েছে? (প্রকাশিত বাক্য ১২:৭-১০, ১২)
খ্রীষ্ট সিংহাসনে অধিষ্ঠিত হওয়ার সময় থেকে কোন দলের অবশিষ্টাংশের একত্রীকরণের দিকে মনোযোগ দেওয়া হচ্ছে? (প্রকাশিত বাক্য ১৪:১-৩)
মথি ২৫:৩১-৩৩ পদে লেখা মহাক্লেশ শুরু হওয়ার পরে যীশু কোন কাজ করবেন বলে জানিয়েছিলেন?
আজকে কোন প্রাথমিক কাজ সম্পন্ন হচ্ছে? কারা এতে অংশ নিচ্ছেন? (গীতসংহিতা ১১০:৩; মথি ২৪:১৪; প্রকাশিত বাক্য ১৪:৬, ৭)
কেন রাজনৈতিক ও ধর্মীয় বিরোধীরা প্রচার কাজ বন্ধ করতে পারেনি? (সখরিয় ৪:৬; প্রেরিত ৫:৩৮, ৩৯)
যারা রাজ্যের শাসনের বশীভূত হয় তাদের জীবনে কোন পরিবর্তনগুলো ঘটেছে? (যিশাইয় ২:৪; ১ করিন্থীয় ৬:৯-১১)
হাজার বছরের রাজ্য
১৬. (ক) খ্রীষ্ট কতদিন শাসন করবেন? (খ) সেই সময়ে এবং এর পরে কোন চমৎকার বিষয়গুলো করা হবে?
১৬ শয়তান ও তার মন্দ দূতেদের অগাধলোকে বন্দি করার পর, যীশু খ্রীষ্ট ও তাঁর ১,৪৪,০০০ জন সহ উত্তরাধিকারীরা রাজা ও যাজক হিসেবে হাজার বছর রাজত্ব করবেন। (প্রকাশিত বাক্য ২০:৬) সেই সময়ে, মানবজাতিকে সিদ্ধ অবস্থায় নিয়ে আসা হবে, পাপ ও আদমজাত মৃত্যুকে চিরকালের জন্য দূর করা হবে। হাজার বছরের রাজত্বের শেষে, মশীহ রাজা ও যাজক হিসেবে যীশু তাঁর কাজ সফলভাবে সম্পাদনের পর তাঁর পিতার “হস্তে রাজ্য সমর্পণ করিবেন . . . যেন ঈশ্বরই সর্ব্বেসর্ব্বা হন।” (১ করিন্থীয় ১৫:২৪-২৮) সেই সময়ে, উদ্ধারকৃত মানবজাতি যিহোবার সার্বিক সার্বভৌমত্বকে সমর্থন করে কি না, সেই বিষয়ে তাদের পরীক্ষা করার জন্য শয়তানকে অল্প সময়ের জন্য ছেড়ে দেওয়া হবে। ওই চূড়ান্ত পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর, শয়তান ও তার পক্ষ নেওয়া বিদ্রোহীদের যিহোবা ধ্বংস করবেন। (প্রকাশিত বাক্য ২০:৭-১০) যারা যিহোবার সার্বভৌমত্বকে অর্থাৎ তাঁর শাসন করার অধিকারকে সমর্থন করে, তারা তাদের অটল আনুগত্য সম্পূর্ণভাবে প্রদর্শন করবে। এরপর যিহোবার সঙ্গে তাদের এক সঠিক সম্পর্কে নিয়ে আসা হবে, তিনি তাঁর পুত্র-কন্যা হিসেবে তাদের গ্রহণ করার ফলে তারা অনন্ত জীবনের জন্য ঐশিক অনুমোদন পাবে।—রোমীয় ৮:২১.
১৭. (ক) হাজার বছরের রাজত্বের শেষে রাজ্যের কী হবে? (খ) কোন অর্থে এটা সত্য যে, রাজ্য “কখনও বিনষ্ট হইবে না”?
১৭ এরপর, পৃথিবীর সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত যীশুর নিজের ও ১,৪৪,০০০ জনের কাজে পরিবর্তন আসবে। এর পরে তাদের কাজ কী হবে? বাইবেল এই বিষয়ে কিছু বলে না। কিন্তু আমরা যদি বিশ্বস্তভাবে যিহোবার সার্বভৌমত্বকে সমর্থন করি, তা হলে যিহোবা তাদের জন্য ও সেইসঙ্গে তাঁর বিস্ময়কর নিখিলবিশ্বের জন্য কোন উদ্দেশ্য স্থির করেছেন, তা জানার জন্য আমরা হাজার বছরের রাজত্বের শেষে বেঁচে থাকব। তবুও, খ্রীষ্টের হাজার বছরের কর্তৃত্ব “অনন্তকালীন কর্ত্তৃত্ব” হবে এবং তাঁর রাজ্য “বিনষ্ট হইবে না।” (দানিয়েল ৭:১৪) কোন অর্থে? একটা কারণ হল, শাসন করার অধিকার এমন কাউকে দেওয়া হবে না, যাদের ভিন্ন লক্ষ্য রয়েছে বরং যিহোবা নিজেই শাসক হবেন। এ ছাড়াও, রাজ্য “কখনও বিনষ্ট হইবে না” কারণ এটা যা যা করবে তা অনন্তকাল স্থায়ী হবে। (দানিয়েল ২:৪৪) আর যিহোবাকে বিশ্বস্তভাবে সেবা করেছেন বলে মশীহ রাজা ও যাজক এবং তাঁর সহ রাজা ও যাজকদের চিরকালের জন্য সম্মানিত করা হবে।
পুনরালোচনা
• কেন ঈশ্বরের রাজ্যই হল মানবজাতির সমস্যাগুলোর একমাত্র সমাধান? ঈশ্বরের রাজ্যের রাজা কখন শাসন শুরু করেছেন?
• ঈশ্বরের রাজ্য ও এটা যা সম্পন্ন করবে, সেই সম্বন্ধে কোন বিষয়টা আপনার মনে বিশেষভাবে নাড়া দেয়?
• রাজ্যের কোন কোন কাজ আমরা ইতিমধ্যে দেখতে পাই আর এতে আমাদের কোন অংশ আছে?
[৯৩ পৃষ্ঠার চিত্র]
ঈশ্বরের রাজ্যের অধীনে, সমস্ত লোক ধার্মিকতা শিখবে