আনন্দিত এখন ও অনন্তকালের জন্য
“আমি যাহা সৃষ্টি করি, তোমরা তাহাতে চিরকাল আমোদ ও উল্লাস কর; কারণ দেখ আমি যিরূশালেমকে উল্লাসভূমি ও তাহার প্রজাদিগকে আনন্দ-ভূমি করিয়া সৃষ্টি করি।”—যিশাইয় ৬৫:১৮.
১. শতাব্দী ধরে কিভাবে সত্য উপাসনা ব্যক্তিবিশেষকে প্রভাবিত করেছে?
শতাব্দী ধরে অগণিত ব্যক্তিরা সত্য ঈশ্বর যিহোবার সেবা করে প্রচুর আনন্দ খুঁজে পেয়েছেন। দায়ূদ এমনই একজন ব্যক্তি যিনি সত্য উপাসনায় আনন্দিত ছিলেন। বাইবেল বর্ণনা দেয় যখন নিয়ম সিন্দুক যিরূশালেমে নিয়ে আসা হয়েছিল, তখন “দায়ূদ ও ইস্রায়েলের সমস্ত কুল জয়ধ্বনি তুরীধ্বনি পুরঃসর সদাপ্রভুর সিন্দুক আনিলেন।” (২ শমূয়েল ৬:১৫) যিহোবার উপাসনায় এই আনন্দ কেবলমাত্র অতীতের বিষয়ই ছিল না। আপনিও এতে অংশ গ্রহণ করতে পারেন। আর এমনকি আনন্দের এক নতুন অংশ শীঘ্রই আপনার নিজস্ব হতে পারে!
২. যিহূদী প্রত্যাবর্তিতদের প্রতি যিশাইয় ৩৫ অধ্যায়ের প্রকৃত পরিপূর্ণতা ঘটার পর কারা আজকে অপর পরিপূর্ণতার সাথে জড়িত?
২ পূর্ববর্তী প্রবন্ধে, আমরা যিশাইয় ৩৫ অধ্যায়ে লিপিবদ্ধ উদ্দীপনা সঞ্চারকারী ভবিষ্যদ্বাণীর প্রাথমিক পরিপূর্ণতা পরীক্ষা করেছিলাম। এটিকে আমরা সঠিকভাবেই পুনর্স্থাপনমূলক ভবিষ্যদ্বাণী বলতে পারি কারণ প্রকৃতই তা প্রাচীন যিহূদীদের প্রতি ঘটেছিল। আমাদের সময়েও এর সমরূপ পরিপূর্ণতা ঘটার আছে। কিভাবে? সা.শ. ৩৩ খ্রীষ্টাব্দের পঞ্চাশত্তমীতে যীশুর প্রেরিত ও অন্যান্যদের থেকে শুরু করে যিহোবা আত্মিক ইস্রায়েলদের সাথে সম্বন্ধ রক্ষা করে আসছেন। এরা সেই মনুষ্য যারা ঈশ্বরের পবিত্র আত্মার দ্বারা অভিষিক্ত ও প্রেরিত পৌল দ্বারা উক্ত “ঈশ্বরের ইস্রায়েল” এর অংশ হয়। (গালাতীয় ৬:১৬; রোমীয় ৮:১৫-১৭) আরও স্মরণ করুন ১ পিতর ২:৯ পদে এই খ্রীষ্টানদের বলা হয়েছে “মনোনীত বংশ, রাজকীয় যাজকবর্গ, পবিত্র জাতি, [ঈশ্বরের] নিজস্ব প্রজাবৃন্দ।” এই আত্মিক ইস্রায়েলদের যে কার্যভার দেওয়া হয়েছে তা চিহ্নিত করতে গিয়ে পিতর বলে চলেন “‘যেন তাহারই গুণকীর্ত্তন কর,’ যিনি তোমাদিগকে অন্ধকার হইতে আপনার আশ্চর্য্য জ্যোতির মধ্যে আহ্বান করিয়াছেন।”
আমাদের সময়ে পরিপূর্ণতা
৩, ৪. যখন আধুনিক সময়ে যিশাইয় ৩৪ অধ্যায়ের পরিপূর্ণতা ঘটে তখন কোন পরিস্থিতি ছিল?
৩ এই শতাব্দীর প্রথমদিকে একটি সময়ে পৃথিবীতে আত্মিক ইস্রায়েলের অবশিষ্টাংশেরা সঙ্গতিপূর্ণভাবে এই সংবাদ ঘোষণার কাজে সক্রিয় ছিল না। তারা ঈশ্বরের আশ্চর্য জ্যোতিতে সম্পূর্ণভাবে আনন্দ করছিল না। বস্তুতপক্ষে, তারা এক গভীর অন্ধকারের মধ্যে ছিল। এটি কখন ঘটেছিল? আর যিহোবা ঈশ্বর এই সম্বন্ধে কী করেছিলেন?
৪ এটি ঘটেছিল ১ম বিশ্বযুদ্ধের সময়, ১৯১৪ সালে ঈশ্বরের মশীহ রাজ্য স্বর্গে স্থাপিত হওয়ার অল্প কিছু পরেই। বিভিন্ন দেশে গির্জার পাদ্রিদের সমর্থনে জাতিগণ পরস্পরের প্রতি ক্রুদ্ধ হয়েছিল। (প্রকাশিত বাক্য ১১:১৭, ১৮) ঈশ্বর অবশ্যই, এর খ্যাতিসম্পন্ন পাদ্রিশ্রেণী সহ ধর্মভ্রষ্ট খ্রীষ্টীয় জগতকে প্রতিরোধ করেন যেমন তিনি অহংকারী জাতি ইদোমের প্রতি করেছিলেন। অতএব, রূপক ইদোম, খ্রীষ্টীয় জগত যিশাইয় ৩৪ অধ্যায়ের আধুনিক-দিনের পরিপূর্ণতা ভোগ করার অপেক্ষায় আছে। প্রাচীন ইদোমের প্রতি প্রাথমিক পরিপূর্ণতা যেমন ছিল ঠিক ততখানি নিশ্চিতরূপেই এই পরিপূর্ণতার অর্থ হবে স্থায়ী, সম্পূর্ণ ধ্বংস।—প্রকাশিত বাক্য ১৮:৪-৮, ১৯-২১.
৫. আমাদের সময়ে যিশাইয় ৩৫ অধ্যায়ের কী ধরনের পরিপূর্ণতা ঘটেছিল?
৫ যিশাইয় ৩৫ অধ্যায়ের ভবিষ্যদ্বাণীতে আনন্দের উপর যে জোর দেওয়া হয়েছে সে সম্বন্ধে কী বলা যায়? সেটিও আমাদের সময়ে পরিপূর্ণতা লাভ করেছে। কিভাবে তা ঘটে? এটি আধ্যাত্মিক ইস্রায়েলের এক প্রকার বন্দীত্ব থেকে পুনরুদ্ধার হওয়ার মাধ্যমে পরিপূর্ণ হয়েছে। আসুন আমরা পরীক্ষা করে দেখি সেই বিষয়গুলি যা প্রকৃতপক্ষে সাম্প্রতিক ঐশিক ইতিহাস, যা এখনও জীবিত আছেন এমন অনেকের জীবদ্দশায় ঘটেছে।
৬. কেন এটি বলা যেতে পারে যে আত্মিক ইস্রায়েলের অবশিষ্টাংরা বন্দিদশায় গিয়েছিল?
৬ প্রথম বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন আপেক্ষিকভাবে অল্প সময়ে জন্য আত্মিক ইস্রায়েলের অবশিষ্টাংশেরা সম্পূর্ণভাবে শুদ্ধ এবং যিহোবার ইচ্ছার সাথে সামঞ্জস্য রেখে চলতে পারেনি। তাদের মধ্যে কিছুজন মতবাদ সংক্রান্ত ভুল দ্বারা নিজেদের কলঙ্কিত করেছিল এবং যুদ্ধরত জাতিগণকে সমর্থন করার ক্ষেত্রে চাপের সম্মুখীন হয়ে যিহোবার পক্ষে দৃঢ় পদক্ষেপ না নিয়ে আপোষ করেছিল। যুদ্ধের ওই বছরগুলিতে তারা বিভিন্ন ধরনের তাড়না ভোগ করেছিল, এমনকি অনেক জায়গায় তাদের সাহিত্যাদি নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। পরিশেষে, উল্লেখযোগ্য কিছু ভায়েদের মিথ্যা দায়ে অভিযুক্ত ও কারারুদ্ধ করা হয়েছিল। পিছন দিকে ফিরে তাকালে এটি দেখা কঠিন নয় যে একটি অর্থে ঈশ্বরের লোকেরা স্বাধীন হওয়ার পরিবর্তে বন্দী অবস্থাতেই ছিল। (তুলনা করুন যোহন ৮:৩১, ৩২) তাদের গুরুতরভাবে আধ্যাত্মিক দৃষ্টির অভাব ছিল। (ইফিষীয় ১:১৬-১৮) তারা যিহোবাকে প্রশংসা করার ক্ষেত্রে আপেক্ষিক নীরবতা দেখিয়েছিল যার ফলস্বরূপ তারা আধ্যাত্মিকভাবে ফলহীন ছিল। (যিশাইয় ৩২:৩, ৪; রোমীয় ১৪:১১; ফিলিপীয় ২:১১) আপনি কি দেখেছেন কিভাবে এটি বাবিলনের বন্দীত্বে থাকা প্রাচীন যিহূদীদের অবস্থার সমতুল্য?
৭, ৮. আধুনিক-দিনের অবশিষ্টাংশরা কি ধরনের পুনর্স্থাপন উপভোগ করেছিল?
৭ কিন্তু ঈশ্বর কি তার আধুনিক-দিনের দাসেদের ওই অবস্থায় ছেড়ে দেবেন? না, যিশাইয় যে ভাববাণী করেছিলেন তার সাথে সমতা রেখে তিনি তাদের পুনরুদ্ধার করতে দৃঢ়সঙ্কল্পবদ্ধ ছিলেন। সেই কারণে ৩৫ অধ্যায়ের সেই একই ভবিষ্যদ্বাণী আমাদের সময়ে বৈশিষ্ট্যপূর্ণভাবে পরিপূর্ণতা লাভ করে, আধ্যাত্মিক পরমদেশে সমৃদ্ধি ও প্রাচুর্য সহকারে আধ্যাত্মিক ইস্রায়েলের অবশিষ্টাংশদের পুনর্স্থাপনের মাধ্যমে। ইব্রীয় ১২:১২ পদে, পৌল যিশাইয় ৩৫:৩ পদ রূপক অর্থে ব্যবহার করেন, যা যিশাইয়ের ভবিষ্যদ্বাণীর এই অংশের আধ্যাত্মিক প্রয়োগ করার ক্ষেত্রে আমাদের প্রয়োজনীয়তাকে সমর্থন করে।
৮ যুদ্ধ শেষ হয়ে যাওয়ার পরবর্তী সময়ে, রূপক অর্থে আধ্যাত্মিক ইস্রায়েলের অবশিষ্ট অভিষিক্তজনেরা বন্দীত্ব থেকে মুক্তি পায়। যিহোবা ঈশ্বর তাদের স্বাধীন করতে মহান কোরস যীশু খ্রীষ্টকে ব্যবহার করেছিলেন। এই অবশিষ্টাংশেরা পুনর্নির্মাণের কাজ করতে পারে, যা অবশিষ্ট প্রাচীন যিহূদীদের কাজের সাথে তুলনীয় যারা আক্ষরিক যিরূশালেম মন্দির পুনর্নির্মাণের জন্য তাদের দেশে ফিরে এসেছিল। তারপর এই আধুনিক সময়ের আধ্যাত্মিক ইস্রায়েলেরা কর্ষণ ও উৎপাদন শুরু করেছিল রূপক এদনোদ্যান এক সজীব আত্মিক পরমদেশ গড়ে তুলতে।
৯. যিশাইয় ৩৫:১, ২, ৫-৭ পদে যেমন বর্ণিত হয়েছিল তার কিছু বিষয় কিভাবে আমাদের সময়ে বৃদ্ধি পেয়েছিল?
৯ এই প্রসঙ্গটিকে স্মরণে রেখে আসুন আমরা আর একবার যিশাইয় ৩৫ অধ্যায়টি বিবেচনা করি, এবং প্রথমে ১ ও ২ পদের প্রতি দৃষ্টি দিই। এক সময় যা জলশূন্য স্থান বলে মনে হয়েছিল কিভাবে তা সত্যিই পুষ্পবাহুল্যে উৎফুল্ল এবং প্রাচীন শারোণ সমভূমির মত উৎপাদক হতে শুরু করেছিল। তারপর ৫ থেকে ৭ পদ দেখুন। অবশিষ্টাংশরা যাদের কিছু সংখ্যক এখনও জীবিত ও যিহোবার সেবায় সক্রিয় তাদের বোধগম্যতার চক্ষু খুলে গিয়েছিল। ১৯১৪ সাল ও তার পরে যা ঘটেছিল তার অর্থ তারা আরও ভালভাবে বুঝতে পেরেছিল। এই বিষয়টির এক প্রভাব ছিল আমাদের অনেকের উপর যাদের নিয়ে “বিস্তর লোক” গঠিত হয়েছে এবং এখন অবশিষ্টাংশদের সহকারী হিসাবে কাজ করছে—প্রকাশিত বাক্য ৭:৯.
আপনি কি এই পরিপূর্ণতার অংশস্বরূপ?
১০, ১১. (ক) যিশাইয় ৩৫:৫-৭ পদের দৃষ্টিভঙ্গীর সাথে কিভাবে আপনি জড়িত? (খ) কিভাবে আপনি ব্যক্তিগতভাবে এই পরিবর্তনগুলি সম্বন্ধে অনুভব করেন?
১০ উদাহরণ হিসাবে নিজের বিষয়ে চিন্তা করুন। যিহোবার সাক্ষীদের সংস্পর্শে আসার আগে আপনি কি নিয়মিতভাবে বাইবেল পড়তেন? যদি আপনি পড়তেনও, কতখানি বোধগম্যতা আপনার ছিল? উদাহরণস্বরূপ, মৃতদের অবস্থা সম্পর্কে সত্য বিষয়টি কী সে সম্বন্ধে আপনি এখন জানেন। সম্ভবত আপনি আগ্রহী কোন ব্যক্তির কাছে এই সম্বন্ধে আদিপুস্তক ২ অধ্যায়ের, উপদেশক ৯ অধ্যায়ের, যিহিষ্কেল ১৮ অধ্যায়ের ও এছাড়াও আরও অন্যান্য অনেক প্রাসঙ্গিক শাস্ত্রপদগুলি উল্লেখ করতে পারেন। হ্যাঁ, সম্ভবত আপনি বুঝেছেন অনেক বিষয়ে অথবা অনেক ক্ষেত্রে বাইবেল কী শিক্ষা দেয়। সাধারণভাবে বলা যায়, বাইবেল আপনার বোধশক্তি গঠন করে এবং তার ফলে আপনি এই সম্বন্ধে অনেক কিছু অন্যের কাছে ব্যাখ্যা করতে পারেন যে সম্বন্ধে আপনি সন্দেহাতীতভাবে করে থাকেন।
১১ আমাদের প্রত্যেকের নিজেকে প্রশ্ন করা ভাল হবে, ‘বাইবেলের সত্য সম্বন্ধে আমি যা জানি আমি কিভাবে তা শিখেছিলাম? যিহোবার লোকেদের সাথে অধ্যয়ন করার আগে উল্লিখিত শাস্ত্রপদগুলি কি আমি পড়েছিলাম? আমি কি সেগুলির অর্থ বুঝতে পারতাম ও সেগুলির গুরুত্ব সম্পর্কে সঠিক সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারতাম?’ এই প্রশ্নগুলির খোলাখুলি উত্তর সম্ভবত না। এই মন্তব্যের জন্য কেওই অসন্তুষ্ট হন না কারণ এটি বলা যায় যে প্রকৃত অর্থে আপনি এই পদগুলি ও তাদের অর্থ সম্পর্কে অন্ধ ছিলেন। তাই নয় কি? সেগুলি বাইবেলে ছিল কিন্তু আপনি সেগুলি বোঝেননি বা তাদের তাৎপর্য উপলব্ধি করেননি। তাহলে কিভাবে তখন আপনার চোখ আত্মিকভাবে খোলা থাকতে পারে? এটি হয়েছিল যিহোবা যা করেছিলেন অভিষিক্ত অবশিষ্টাংশদের প্রতি যিশাইয় ৩৫:৫ পদের পরিপূর্ণতাস্বরূপ। এই জন্য আপনার চোখ খোলা রাখার প্রয়োজন ছিল। আপনি আর আধ্যাত্মিক অন্ধকারে নেই। আপনি দেখতে পারেন।—তুলনা করুন প্রকাশিত বাক্য ৩:১৭, ১৮.
১২. (ক) কেন আমরা বলতে পারি যে এটি অলৌকিকভাবে দৈহিক সুস্থতার সময় নয়? (খ) ভাই এফ. ডব্লিউ. ফ্রাঙ্ক এর বিষয়টি কিভাবে যিশাইয় ৩৫:৫ পদ আমাদের সময়ে পরিপূর্ণ হওয়ার পদ্ধতি সম্বন্ধে ব্যাখ্যা করে?
১২ তীক্ষ্ণদৃষ্টিসম্পন্ন বাইবেলের ছাত্র হওয়া ও শতাব্দীব্যাপী যিহোবার ব্যবহার জানায় যে এটি ইতিহাসের সেই সময় নয় যখন অলৌকিকভাবে দৈহিক সুস্থতা প্রদান করা হবে। (১ করিন্থীয় ১৩:৮-১০) সুতরাং আমরা আশা করি না যে যীশু খ্রীষ্ট নিজেকে মশীহ, ঈশ্বরের ভাববাদী প্রমাণ করার জন্য অন্ধদের চক্ষু খুলে দেবেন। (যোহন ৯:১-৭, ৩০-৩৩) অথবা তিনি সমস্ত বধিরদের আবার শুনতে সক্ষম করবেন। যতই তিনি ১০০ বছর বয়সের দিকে এগিয়ে যান ফ্রেডারিক ডব্লিউ. ফ্রান্স, একজন অভিষিক্ত ও পরে ওয়াচ টাওয়ার সমিতির সভাপতি, সম্পূর্ণ অন্ধ হয়ে যেতে থাকেন ও শোনার জন্যও তাকে বৈদ্যুতিক ধ্বনি সম্প্রসারক যন্ত্র ব্যবহার করতে হত। কিছু বছর তিনি দেখতে না পাওয়ার কারণে পড়তে পারতেন না; তবুও কে এমন চিন্তা করবে যে যিশাইয় ৩৫:৫ পদে যে অর্থে অন্ধ ও বধিরদের সম্বন্ধে বলা হয়েছে তা তার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য? তার তীক্ষ্ণ আধ্যত্মিক দৃষ্টি পৃথিবীব্যাপী ঈশ্বরের লোকেদের জন্য আশীর্বাদস্বরূপ ছিল।
১৩. কোন পুনরুদ্ধার বা পুনর্স্থাপনের ঘটনা আধুনিক-দিনের লোকেরা অভিজ্ঞতা করেছিল?
১৩ অথবা আপনার জিহ্বা সম্বন্ধে কী? ঈশ্বরের অভিষিক্তজনেরা তাদের আধ্যত্মিক বন্দীত্বের সময় নীরব ছিলেন। কিন্তু একবার ঈশ্বর যখন পরিস্থিতির পরিবর্তন করেন, তাদের জিহ্বা উল্লাসে জয়ধ্বনি করতে শুরু করে ঈশ্বরের প্রতিষ্ঠিত রাজ্য ও ভবিষ্যৎ সম্পর্কে তাঁর প্রতিজ্ঞাগুলি সম্বন্ধে জেনে। তারা হয়ত আপনাকে সাহায্য করতে পারে আপনার জিহ্বাকেও এর সাথে একত্রিত করতে। পূর্বে কতখানি আপনি অন্যদের কাছে বাইবেলের সত্য সম্বন্ধে বলতেন? হয়ত একসময় আপনি মনে করতেন, ‘আমি অধ্যয়ন উপভোগ করি কিন্তু আমি কখনও অপরিচিতদের সাথে কথা বলতে যেতে পারব না।’ কিন্তু এটি কি সত্য নয় যে, “গোঙ্গাদের জিহ্বা” এখন ‘আনন্দগান করছে’?—যিশাইয় ৩৫:৬.
১৪, ১৫. আমাদের সময়ে কিভাবে অনেকে “পবিত্রতার পথে” হাঁটছে?
১৪ প্রাচীন ইস্রায়েলরা বাবিলন থেকে মুক্তি পেয়েছিল আর একটি দীর্ঘ পথ যাত্রা করে তারা তাদের স্বদেশে ফিরে এসেছিল। এটি কিভাবে আমাদের সময়ের সাথে সম্পর্কযুক্ত? যিশাইয় ৩৫:৮ পদের প্রতি দৃষ্ট দিন: “সেই স্থানে এক জাঙ্গাল ও রাজপথ হইবে; তাহা পবিত্রতার পথ বলিয়া আখ্যাত হইবে; তাহা দিয়া কোন অশুচি লোক যাতায়াত করিবে না।”
১৫ আধ্যাত্মিক বন্দীত্ব থেকে মুক্তি পাওয়ার পর থেকে অভিষিক্ত অবশিষ্টাংশরা এখন লক্ষ লক্ষ অপর মেষেদের সাথে সঙ্গবদ্ধ হয়ে মহতি বাবিল থেকে বার হয়ে এসেছে রূপক রাজপথ, পবিত্রতার পথে যা একজনকে আধ্যাত্মিক পরমদেশে পরিচালিত করে। আমরা সেই পবিত্রতার রাজপথের যোগ্য হওয়ার জন্য ও সেখানে স্থির থাকার জন্য সমস্ত রকম প্রচেষ্টা করি। নিজের কথা চিন্তা করুন। যখন আপনি জগতের অংশ ছিলেন তখনকার চেয়ে আপনার নৈতিক মান ও আদর্শ কি এখন আরও উন্নত হয়নি? ঈশ্বরের অনুযায়ী আপনার চিন্তা ও আচরণকে পরিচালিত করার জন্য আপনি কি কঠোর প্রচেষ্টা করেননা?—রোমীয় ৮:১২, ১৩; ইফিষীয় ৪:২২-২৪.
১৬. পবিত্রতার পথে চলার সময় আমরা কী ধরনের পরিস্থিতি উপভোগ করতে পারি?
১৬ যতই আপনি পবিত্রতার পথে চলতে থাকবেন আপনি মূলত পশুতুল্য মানুষ সম্বন্ধীয় আশঙ্কা থেকে মুক্ত থাকবেন। এটি সত্য যে জগতে আপনি লক্ষ্য করে থাকবেন লোভী ও ঘৃনিত লোকেরা রূপকভাবে আপনাকে গ্রাস করে না। অনেক লোকেরা অন্যদের সাথে ব্যবহারের ক্ষেত্রে লোভাতুর মনোভাব দেখিয়ে থাকে। ঈশ্বরের লোকেদের মধ্যে কতই না বৈপরীত্য দেখা যায়! আপনি একটি সুরক্ষিত পরিবেশ অনুভব করবেন। অবশ্যই আপনার সহ খ্রীষ্টানরা সিদ্ধ নয়; কখনও কখনও হয়ত একজন ভুল করে ও অন্যের বিরক্তির কারণ হয়। কিন্তু আপনি জানেন যে আপনার ভাই উদ্দেশ্যপূর্ণভাবে আপনাকে আঘাত দেবার বা পীড়িত করার চেষ্টা করে না। (গীতসংহিতা ৫৭:৪; যিহিষ্কেল ২২:২৫; লূক ২০:৪৫-৪৭; প্রেরিত ২০:২৯; ২ করিন্থীয় ১১:১৯, ২০; গালাতীয় ৫:১৫) পরিবর্তে, তারা আপনার প্রতি আগ্রহ প্রকাশ করে; তারা আপনাকে সাহায্য করেছে; তারা আপনার সাথে সেবা করতে চায়।
১৭, ১৮. কোন্ অর্থে এখন পরমদেশ অস্তিত্বে আছে, এবং আমাদের উপর এর কী প্রভাব আছে?
১৭ সুতরাং আমরা যিশাইয় ৩৫ অধ্যায়ের প্রতি দৃষ্টি দিতে পারি ১ থেকে ৮ পদের সাম্প্রতিক পরিপূর্ণতাকে মনে রেখে। এটি কি স্পষ্ট নয় যে আমরা সঠিকভাবে যাকে আত্মিক পরমদেশ বলে তা দেখেছি? না এটি সিদ্ধ নয়—এখনও পর্যন্ত নয়। কিন্তু এটি সত্যই একটি পরমদেশ যেমন ইতিমধ্যেই ২ পদে উল্লেখ করা হয়েছিল, “তাহারা দেখিতে পাইবে সদাপ্রভুর প্রতাপ, আমাদের ঈশ্বরের শোভা।” আর এর ফল কি হয়? ১০ পদ বলে: “সদাপ্রভুর নিস্তারিত লোকেরা ফিরিয়া আসিবে, আনন্দগান পুরঃসর সিয়োনে আসিবে, এবং তাহাদের মস্তকে নিত্যস্থায়ী হর্ষমুকুট থাকিবে; তাহারা আমোদ ও আনন্দ প্রাপ্ত হইবে, এবং খেদ ও আর্ত্তস্বর দূরে পলায়ন করিবে।” সত্যই, মিথ্যা ধর্ম থেকে আমাদের বার হয়ে আসা ও ঈশ্বরের অনুমোদনযোগ্য সত্য উপাসনা সম্পন্ন করা আনন্দ বর্দ্ধক।
১৮ সত্য উপাসনার সাথে সম্পর্কযুক্ত আনন্দ বাড়তেই থাকে, তাই নয় কি? আপনি দেখেন নতুন আগ্রহী ব্যক্তি পরিবর্তন করছে ও প্রাথমিক বাইবেল সত্য সম্বন্ধে শিক্ষা দিতে পারছে। আপনি লক্ষ্য করেন যুবকেরা বেড়ে উঠছে ও মণ্ডলীতে আধ্যাত্মিক উন্নতি করছে। বাপ্তিস্ম নেওয়ার ক্ষেত্রে আপনি লক্ষ্য করছেন আপনি জানেন এমন একজন বাপ্তিস্ম নিচ্ছে। আজকে কি এই বিষয়গুলি আনন্দের, অফুরন্ত আনন্দের কারণস্বরূপ নয়? হ্যাঁ, আমাদের আধ্যাত্মিক স্বাধীনতা ও পরমদেশ পরিস্থিতিতে আমাদের সাথে যোগ দিয়ে অন্যেরাও আনন্দিত হয়!
সম্মুখে আরও এক পরিপূর্ণতা!
১৯. যিশাইয় ৩৫ অধ্যায় আমাদের কোন আশাপূর্ণ প্রতীক্ষা পূর্ণ করে?
১৯ আমরা এতক্ষণ পর্যন্ত যিশাইয় ৩৫ অধ্যায়ের প্রাথমিক পরিপূর্ণতা হিসাবে যিহূদীদের প্রত্যাবর্তন এবং আজকের দিনে যে আধ্যাত্মিক পরিপূর্ণতা ঘটে চলেছে সে সম্বন্ধে বিবেচনা করেছি। কিন্তু এটিই শেষ নয়। আরও কিছু আছে। এটি পৃথিবীতে আগত আক্ষরিক পরমদেশের পুনর্স্থাপন সম্বন্ধীয় বাইবেলের প্রতিজ্ঞা তার সাথে সম্পর্কযুক্ত।—গীতসংহিতা ৩৭:১০, ১১; প্রকাশিত বাক্য ২১:৪, ৫.
২০, ২১. কেন এটি বিশ্বাস করা যুক্তিপূর্ণ ও শাস্ত্রীয় যে যিশাইয় ৩৫ অধ্যায়ের অপর এক পরিপূর্ণতা এখনও ঘটবে?
২০ এটি করা যিহোবার পক্ষে সঙ্গতিপূর্ণ নয় যে পরমদেশ সম্বন্ধে বিস্তৃত বর্ণনা দেওয়ার পর তিনি আধ্যাত্মিক বিষয়ের মধ্যেই পরিপূর্ণতাকে সীমাবদ্ধ রাখবেন না। এটি অবশ্যই বলা যায় না যে আধ্যাত্মিক পরিপূর্ণতা তাৎপর্যপূর্ণ নয়। এমনকি যদি আক্ষরিক পরমদেশ স্থাপিত হয় তবুও এটি আমাদের সন্তুষ্ট করতে পারবে না, যদি সুন্দর দৃশ্য ও শান্তিপূর্ণ পশুদের মধ্যে আমরা আধ্যত্মিকভাবে কলুষিত ব্যক্তিদের, সেইসব ব্যক্তি যারা পশুর মত আচরণ করে তাদের দ্বারা পরিবেষ্টিত থাকি। (তুলনা করুন তীত ১:১২.) হ্যাঁ, আধ্যাত্মিকতা অবশ্যই আগে আসবে যেহেতু এটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
২১ যাইহোক, আগত পরমদেশ তার আধ্যাত্মিক সমৃদ্ধি সহ কখনও শেষ হবে না যা আমরা এখন উপভোগ করছি এবং এমনকি আরও বেশি ভবিষ্যতে উপভোগ করব। আমাদের যিশাইয় ৩৫ অধ্যায়ের মত ভবিষ্যদ্বাণীগুলির আক্ষরিক পরিপূর্ণতা আশা করার উত্তম কারণ আছে। কেন? কারণ ৬৫ অধ্যায়ে যিশাইয় ভাববাণী করেন “নতুন আকাশ ও নতুন পৃথিবী” সম্বন্ধে। প্রেরিত পিতর ওই শাস্ত্রপদ প্রয়োগ করেন যখন তিনি বর্ণনা করেন যিহোবার দিনের পরে কি ঘটবে। (যিশাইয় ৬৫:১৭; ২ পিতর ৩:১০-১৩) পিতর ইঙ্গিত করেছেন, যিশাইয় যে বিষয়ের বর্ণনা দিয়েছেন তা ঘটবে যখন “নতুন পৃথিবী” বাস্তবে অস্তিত্বপ্রাপ্ত হবে। এটি এই বর্ণনাগুলিকে অন্তর্ভুক্ত করে যার সাথে আপনি পরিচিত—গৃহ নির্মাণ করে বাস করবে; দ্রাক্ষাক্ষেত্র প্রস্তুত করে তার ফল ভোগ করবে; দীর্ঘকাল আপন হস্তের শ্রমফল ভোগ করবে; নেকড়ে ও ভেড়া একসাথে চড়বে; আর পৃথিবীব্যপী কোন হিংসা থাকবে না। অন্য কথায় দীর্ঘ জীবন, নিরাপদ গৃহ, প্রচুর খাদ্য, তৃপ্তিজনক কাজ এবং পশুদের মধ্যে ও মানুষ আর পশুদের মধ্যে শান্তি বিরাজ করবে।
২২, ২৩. যিশাইয় ৩৫ অধ্যায়ের ভবিষ্যৎ পরিপূর্ণতায় আনন্দ করার কোন্ ভিত্তি আছে?
২২ এই বিষয়গুলি কি আপনাকে আনন্দে পরিপূর্ণ করে না? নিশ্চয়ই করা উচিত, কারণ সেইভাবেই যিহোবা আমাদের সজীব প্রাণী হিসাবে সৃষ্টি করেছেন। (আদিপুস্তক ২:৭-৯) সুতরাং যিশাইয় ৩৫ অধ্যায়ের ভবিষ্যদ্বাণী যা আমরা বিবেচনা করলাম তা কি অর্থ বহন করে? এটি বোঝায় যে আমাদের আনন্দে জয়ধ্বনি করার এক অতিরিক্ত কারণ আছে। আক্ষরিক মরুভূমি ও জলশূন্য স্থান উৎফুল্লিত হবে যা আমাদের উল্লাসের কারণ হবে। তখন নীল চোখ, বাদামী চোখ ও আরও অন্যান্য মনোরম বর্ণের চোখের লোকেরা থাকবে, কিন্তু এখন যারা অন্ধ তারা দেখতে পাবে। আমাদের সহখ্রীষ্টীয়রা যারা বধির অথবা যাদের শুনতে অসুবিধা হয় তারা স্পষ্টভাবে শুনতে পাবে। সেই ক্ষমতাকে ঈশ্বরের বাক্য শুনতে পড়তে ও ব্যাখ্যা করতে ব্যবহার করা কত আনন্দের হবে ঠিক যেমন বাতাসের শব্দ, শিশুর হাসি ও পাখির গান শোনাও অত্যন্ত আনন্দের হবে!
২৩ এটি আরও বোঝায় যে খঞ্জেরা ও যারা এখন আরথ্রাইটিস রোগে আক্রান্ত তারাও সচ্ছন্দে ঘুরে বেড়াতে পারবে। কত স্বস্তি! তখন আক্ষরিক জলস্রোত প্রচুরভাবে মরুভূমির উপর দিয়ে প্রবাহিত হবে। আমরা তরঙ্গায়িত জলস্রোত দেখতে ও তার কলধ্বনি শুনতে পাব। আমরা সেখানে হাঁটতে পারব ও সবুজ ঘাস আর প্যাপিরাস গাছ স্পর্শ করতে পারব। এটি প্রকৃতই পুনস্থাপিত পরমদেশ হবে। সিংহ ও ওইরকম বন্য পশুদের সাথে ভয়শূন্যভাবে থাকা কত আনন্দেরই না হবে? আমাদের তা বর্ণনা করার প্রয়োজন নেই কারণ আমরা প্রত্যেকেই সেই দৃশ্য কল্পনা ও উপভোগ ইতিমধ্যেই করেছি।
২৪. যিশাইয় ৩৫:১০ পদের অভিব্যক্তির সাথে কেন আপনি একমত হতে পারেন?
২৪ যিশাইয় আমাদের আশ্বস্ত করেন: “আর যিহোবার নিস্তারিত লোকেরা ফিরিয়া আসিবে, আনন্দগান পুরঃসর সিয়োনে আসিবে, এবং তাহাদের মস্তকে নিত্যস্থায়ী হর্ষমুকুট থাকিবে।” সুতরাং আমরা একমত হতে পারি যে আমাদের আনন্দে জয়ধ্বনি করার কারণ আছে। আধ্যাত্মিক পরমদেশে যিহোবা ইতিমধ্যেই তাঁর লোকেদের জন্য যা করছেন তার জন্য আনন্দ ও নিকটবর্তী আক্ষরিক পরমদেশে আমরা যা প্রত্যাশা করতে পারি তার জন্য আনন্দ। আনন্দিত ব্যক্তিদের সম্পর্কে—আমাদের সম্পর্কে যিশাইয় লেখেন: “তাহারা আমোদ ও আনন্দ প্রাপ্ত হইবে, এবং খেদ ও আর্ত্তস্বর দূরে পলায়ন করিবে।”—যিশাইয় ৩৫:১০.
আপনি কি লক্ষ্য করেছেন?
◻ যিশাইয় ৩৫ অধ্যায়ের কোন্ দ্বিতীয় পরিপূর্ণতা ঘটেছিল?
◻ যিশাইয় যে অলৌকিক পরিবর্তনগুলি সম্বন্ধে ভাববাণী করেছেন আধ্যাত্মিকভাবে তা কোন্ বিষয়টির সমরূপ?
◻ এই ভবিষ্যদ্বাণীর পরিপূর্ণতায় আপনি কিভাবে অংশগ্রহণ করেছেন?
◻ কেন আমরা বলতে পারি যে যিশাইয় ৩৫ অধ্যায় ভবিষ্যতের জন্য আমাদের আশায় পূর্ণ করে
[১৫ পৃষ্ঠার চিত্র]
ব্রুকলিনের রেমন্ড স্ট্রীটের জেল যেখানে প্রধান ভাইয়েরা ১৯১৮ সালের জুন মাস পর্যন্ত বন্দী ছিলেন
[১৬ পৃষ্ঠার চিত্র]
পরবর্তী বছরগুলিতে যদিও তিনি অন্ধ হয়ে গিয়েছিলেন কিন্তু ভাই ফ্রাঙ্কের আধ্যাত্মিক দৃষ্টি তীক্ষ্ণ ছিল
[১৭ পৃষ্ঠার চিত্র]
আধ্যত্মিক বৃদ্ধি ও অগ্রগতি আনন্দের কারণ হয়