সঠিক ধরনের বার্তাবাহককে শনাক্ত করা
“[সদাপ্রভু] . . . আপন দাসের বাক্য স্থির করেন, ও আপন দূতগণের মন্ত্রণা সিদ্ধ করেন।”—যিশাইয় ৪৪:২৫, ২৬.
১. যিহোবা কিভাবে সঠিক ধরনের বার্তাবাহকদের শনাক্ত করান এবং কিভাবে তিনি মিথ্যাদের প্রকাশ করেন?
যিহোবা ঈশ্বর হলেন তাঁর সত্য বার্তাবাহকগণের মহান শনাক্তিকারক। তাদের মাধ্যমে যে বার্তা তিনি প্রদান করেন তা সত্যে পরিণত করার দ্বারা তিনি তাদের শনাক্ত করান। যিহোবা মিথ্যা বার্তাবাহকগণের মহান প্রকাশকারী। তিনি কিভাবে তাদের প্রকাশ করেন? তিনি তাদের চিহ্ন এবং ভবিষ্যদ্বাণীগুলিকে বিফল করেন। এইভাবে তিনি দেখান যে তারা স্ব-নিযুক্ত ভবিষ্যদ্বক্তা, যাদের বার্তা প্রকৃতই তাদের নিজস্ব মিথ্যা যুক্তি থেকে নির্গত হয়—হ্যাঁ, তাদের মূর্খ, মাংসিক চিন্তা থেকে!
২. ইস্রায়েলীয়দের সময়ে বার্তাবাহকগণের মধ্যে কোন্ সংঘর্ষ দেখা দিয়েছিল?
২ যিশাইয় এবং যিহিষ্কেল উভয়েই যিহোবা ঈশ্বরের বার্তাবাহক হিসাবে দাবি করেছিলেন। তারা কি তাই ছিলেন? আসুন দেখা যাক। যিশাইয় প্রায় সা.শ.পূ. ৭৭৮ থেকে সা.শ.পূ. ৭৩২ সালের কিছু সময় পর পর্যন্ত যিরূশালেমে ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন। সা.শ.পূ. ৬১৭ সালে যিহিষ্কেল বাবিলে নির্বাসিত হয়েছিলেন। তিনি সেখানে তার যিহূদী ভাইয়েদের কাছে ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন। এই উভয় ভাববাদীই সাহসের সাথে ঘোষণা করেছিলেন যে যিরূশালেম ধ্বংস হবে। অন্যান্য ভাববাদীরা বলেছিলেন যে ঈশ্বর তা ঘটতে দেবেন না। কারা সঠিক ধরনের বার্তাবাহকগণ হিসাবে প্রমাণিত হয়েছিলেন?
যিহোবা মিথ্যা ভাববাদীদের প্রকাশ করেন
৩, ৪. (ক) বাবিলে কোন্ দুই ধরনের বিপরীত বার্তা ইস্রায়েলীয়দের প্রদান করা হয়েছিল এবং কিভাবে যিহোবা একজন মিথ্যা বার্তাবাহককে প্রকাশ করেছিলেন? (খ) যিহোবা কী বলেছিলেন যা মিথ্যা ভাববাদীদের প্রতি ঘটবে?
৩ বাবিলে থাকাকালীন যিহিষ্কেলকে, যিরূশালেমের মন্দিরে কী ঘটে চলেছিল সেই সম্বন্ধে একটি দর্শন দেওয়া হয়েছিল। এর পূর্বদ্বারের প্রবেশপথে ২৫ জন পুরুষ ছিল। তাদের মধ্যে দু’জন রাজকুমার ছিলেন, যাসনিয় ও প্লটিয়। যিহোবা তাদের কোন্ দৃষ্টিতে দেখেছিলেন? যিহিষ্কেল ১১:২, ৩ পদ উত্তর দেয়: “হে মনুষ্য-সন্তান, এই নগরের মধ্যে ইহারা অধর্ম্মের সঙ্কল্পকারী ও কুমন্ত্রণাদায়ক; ইহারাই বলে, গৃহ সকল গাঁথিবার সময় সন্নিকট হয় নাই।” এই দুঃসাহসী শান্তির বার্তাবাহকগণ বলছিল, ‘যিরূশালেমের কোন বিপদ নেই। সেইজন্য, আমরা শীঘ্র এর মধ্যে আরও গৃহ নির্মাণ করতে যাচ্ছি!’ তাই ঈশ্বর যিহিষ্কেলকে এই মিথ্যা ভাববাদীদের বিরুদ্ধে বিপরীত ভবিষ্যদ্বাণী করতে বলেছিলেন। ১১ অধ্যায়ের ১৩ পদে, তাদের একজনের প্রতি যা ঘটেছিল সেই সম্বন্ধে যিহিষ্কেল আমাদের বলেন: “আমি ভাববাণী বলিতেছিলাম, এমন সময়ে বনায়ের পুত্র প্লটিয় মরিল।” এটি সম্ভবত ঘটেছিল কারণ প্লটিয় ছিলেন সর্বাপেক্ষা বিখ্যাত এবং প্রভাবশালী রাজকুমার এবং বিশিষ্ট প্রতিমাপূজক। তার আকস্মিক মৃত্যু প্রমাণ করেছিল যে তিনি একজন মিথ্যা ভাববাদী ছিলেন!
৪ প্লটিয়ের প্রতি যিহোবার মৃত্যু দণ্ডাজ্ঞা অন্যান্য মিথ্যা ভাববাদীদের ঈশ্বরের নামে মিথ্যা বলা থেকে বিরত করেনি। এই প্রবঞ্চকেরা ঈশ্বরের ইচ্ছার বিরুদ্ধে বিষয়গুলি সম্বন্ধে ভবিষ্যদ্বাণী করার ক্ষেত্রে তাদের অসংযত ধারা ক্রমাগত বজায় রেখেছিল। তাই যিহোবা ঈশ্বর যিহিষ্কেলকে বলেছিলেন: “ধিক্ সেই নির্ব্বোধ ভাববাদীগণকে, যাহারা আপন আপন আত্মার অনুগমন করে, কিছুই দেখে নাই।” প্লটিয়ের মত, তারা “আর নাই” কারণ যিরূশালেমের জন্য এমন এক অবজ্ঞাপূর্ণ, বিরোধিতামূলক দর্শন পাওয়ায় “শান্তি না হইলেও তাহার জন্য শান্তির দর্শন পায়।”—যিহিষ্কেল ১৩:৩, ১৫, ১৬.
৫, ৬. সমস্ত মিথ্যা বার্তাবাহকদের বিপরীতে, যিশাইয় কিভাবে সত্য ভাববাদী হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলেন?
৫ যিশাইয়ের ক্ষেত্রে, যিরূশালেম সম্বন্ধে তার সমস্ত ঐশিক বার্তা সত্য হয়েছিল। সা.শ.পূ. ৬০৭ সালের গ্রীষ্মকালে, বাবিলনীয়রা নগরটিকে ধ্বংস করেছিল এবং যিহূদী অবশিষ্টাংশদের বন্দী হিসাবে বাবিলে নিয়ে গিয়েছিল। (২ বংশাবলি ৩৬১৫-২১; যিহিষ্কেল ২২:২৮; দানিয়েল ৯:২) এই চরম বিপর্যয় কি মিথ্যা ভাববাদীদের অসার কথার দ্বারা ঈশ্বরের লোকেদের আক্রমণ করা থেকে বিরত করেছিল? না, ঐ মিথ্যা বার্তাবাহকেরা এটি করা অব্যাহত রেখেছিল!
৬ এগুলিই যেন যথেষ্ট ছিল না, নির্বাসিত ইস্রায়েলীয়দের বাবিলের গর্বিত গণক, মন্ত্রবেত্তা এবং জ্যোতিষীদের প্রকাশ করতেও হয়েছিল। যাইহোক, যা ঘটবে তার বিপরীতে বিষয়গুলিকে পরিচালিত করে, যিহোবা এই সমস্ত মিথ্যা ভাববাদীদের পরাজিত মূর্খ হিসাবে প্রমাণিত করেছিলেন। কালক্রমে, তিনি দেখিয়েছিলেন যেমন যিশাইয় ছিলেন, তেমনই যিহিষ্কেল তাঁর সত্য বার্তাবাহক ছিলেন। তাদের মাধ্যমে তিনি যা বলেছিলেন যিহোবা তাঁর সেই সমস্ত বাক্যগুলি পরিপূর্ণ করেছিলেন, ঠিক যেমন তিনি প্রতিজ্ঞা করেছিলেন: “[সদাপ্রভু] বাচালদিগের চিহ্ন সকল ব্যর্থ করেন, ও মন্ত্রজ্ঞদিগকে উন্মত্ত করেন, তিনি জ্ঞানবানদিগকে হটাইয়া দেন, ও তাহাদের জ্ঞান মূর্খতাস্বরূপ করেন। তিনি আপন দাসের বাক্য স্থির করেন, ও আপন দূতগণের মন্ত্রণা সিদ্ধ করেন।”—যিশাইয় ৪৪:২৫, ২৬.
বাবিল এবং যিরূশালেম সম্বন্ধে চমকপ্রদ বার্তা
৭, ৮. বাবিলের জন্য যিশাইয়ের কোন্ অনুপ্রাণিত বার্তা ছিল এবং তার বাক্যের অর্থ কী ছিল?
৭ যিহূদা এবং যিরূশালেমের মানব বসতিহীন অবস্থায় ৭০ বছরের জন্য জনশূন্য হওয়ার ছিল। কিন্তু, যিহোবা যিশাইয় এবং যিহিষ্কেলের মাধ্যমে ঘোষণা করেছিলেন যে নগরটি পুনর্নিমিত এবং দেশটি সেই যথাযথ সময়ে বসতিপূর্ণ হবে যা তিনি ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন! এটি একটি বিস্ময়কর ভবিষ্যদ্বাণী ছিল। কেন? কারণ বাবিল এই বিষয়ে কুখ্যাত ছিল যে এটি এর বন্দীদের কখনও মুক্ত করে না। (যিশাইয় ১৪:৪, ১৫-১৭) তাই সম্ভবত কে এই বন্দীদের মুক্ত করতে পারতেন? কে বিশাল প্রাচীর এবং নদী-প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাসহ, প্রবল শক্তিশালী বাবিলকে পরাস্ত করতে পারতেন? সর্বশক্তিমান্ যিহোবা পারতেন! আর তিনি বলেছিলেন যে তিনি তা করবেন: “[সদাপ্রভু] . . . অগাধ জলকে [সেটি হল, নগরের জল প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা] বলেন, শুষ্ক হও, আমি তোমার নদনদী শুকাইয়া ফেলিব। তিনি কোরসের উদ্দেশে কহেন, আমার পালরক্ষক, সে আমার সমস্ত মনোরথ সিদ্ধ করিবে। তিনি যিরূশালেমের বিষয়ে বলেন, সে পুনর্নির্ম্মিত হইবে, এবং মন্দিরকে বলেন, তোমার ভিত্তিমূল স্থাপিত হইবে।”—যিশাইয় ৪৪:২৫, ২৭, ২৮.
৮ সেই বিষয়টি সম্বন্ধে চিন্তা করুন! ইউফ্রেটিস নদী, মানুষের কাছে সত্যই এক দুর্জয় প্রতিবন্ধক, যা যিহোবার কাছে লোহিত-তপ্ত স্থানে এক বিন্দু জলের মত ছিল। প্রতিবন্ধক বাষ্পীভূত হবে! বাবিল পতিত হবে। যদিও এটি পারস্যের কোরসের জন্মের প্রায় ১৫০ বছর পূর্বে ছিল, যিহোবা যিশাইয়কে দিয়ে এই রাজার বাবিল অধিকার এবং যিরূশালেম ও এর মন্দির পুনর্নির্মাণ করতে তাদের ফিরে আসতে তার অনুমতি প্রদানের মাধ্যমে যিহূদী বন্দীদের মুক্তি সম্বন্ধে ভবিষ্যদ্বাণী করিয়েছিলেন।
৯. বাবিলের শাস্তির জন্য তাঁর প্রতিনিধি হিসাবে যিহোবা কার নাম বলেছিলেন?
৯ আমরা এই ভবিষ্যদ্বাণী যিশাইয় ৪৫:১-৩ পদে পাই: “সদাপ্রভু আপন অভিষিক্ত ব্যক্তি, কোরসের, বিষয়ে এই কথা কহেন, আমি তাহার দক্ষিণ হস্ত ধরিয়াছি, আমি তাহার সম্মুখে নানা জাতিকে পরাভব করিব, . . . তাহার অগ্রে কবাট সকল মুক্ত করিব, আর পুরদ্বার সকল বদ্ধ থাকিবে না। আমি তোমার অগ্রে অগ্রে গমন করিয়া উচ্চনীচ স্থান সমান করিব, আমি পিত্তলের কবাট ভগ্ন করিব, ও লৌহের হুড়কা কাটিয়া ফেলিব। আর আমি তোমাকে অন্ধকারাবৃত ধনকোষ ও গুপ্ত স্থানে সঞ্চিত নিধি দিব; যেন তুমি জানিতে পার, আমি সদাপ্রভুই তোমার নাম ধরিয়া ডাকি।”
১০. কোন্ উপায়ে কোরস “অভিষিক্ত” ছিলেন এবং কিভাবে যিহোবা তার সম্বন্ধে তার জন্মের একশত বছরেরও বেশি পূর্বে কথা বলেছিলেন?
১০ লক্ষ্য করুন যে যিহোবা কোরসের সাথে এমনভাবে কথা বলেন যেন তিনি ইতিমধ্যেই জীবিত আছেন। এটি পৌলের উক্তির সাথে সঙ্গতিপূর্ণ যে যিহোবা “যাহা নাই, তাহা আছে বলেন।” (রোমীয় ৪:১৭) এছাড়াও, ঈশ্বর কোরসকে “আপন অভিষিক্ত ব্যক্তি” হিসাবে শনাক্ত করান। তিনি কেন তা করেছিলেন? যাইহোক, যিহোবার মহাযাজক কখনই কোরসের মস্তকে পবিত্র অভিষেক তেল ঢালেননি। সত্য, কিন্তু এটি একটি ভবিষ্যদ্বাণীমূলক অভিষেক। এটি এক বিশেষ দায়িত্বপদে অধিষ্ঠিত করাকে ইঙ্গিত করে। সুতরাং, ঈশ্বর কোরসের অগ্রিম নিযুক্তিকে এক অভিষেক হিসাবে বলতে পেরেছিলেন।—তুলনা করুন ১ রাজাবলি ১৯:১৫-১৭; ২ রাজাবলি ৮:১৩.
ঈশ্বর তাঁর বার্তাবাহকগণের বাক্যসকল পরিপূর্ণ করেন
১১. বাবিলে বসবাসকারীরা কেন নিরাপদ বোধ করেছিল?
১১ কোরস বাবিলের বিরুদ্ধে অগ্রসর হওয়ার সময়ে, এর নাগরিকেরা অত্যন্ত নিশ্চিত এবং নিরাপদ বোধ করেছিল। তাদের নগরটি এক গভীর এবং প্রশস্ত প্রতিরক্ষামূলক পরিখা দ্বারা পরিবেষ্টিত ছিল, যেটি ইউফ্রেটিস নদী দ্বারা গঠিত। যেখানে নদীটি নগরের মধ্যে প্রবাহিত হয়েছিল, সেখান থেকে নদীর পূর্বকূল বরাবর একটি অবিচ্ছেদ্য জেটি ছিল। এটিকে নগর থেকে পৃথক করতে, নবুখদ্নিৎসর যা নির্মাণ করেছিলেন সেটিকে তিনি বলেছিলেন “এক বিশাল প্রাচীর, যা এক পর্বতের মত সরান যেতে পারে না . . . এর মস্তককে [তিনি] পর্বত সমান উঁচু করেছিলেন।”a এই প্রাচীরের বৃহৎ তামার দরজাসহ প্রবেশপথ ছিল। সেখানে প্রবেশ করতে, একজনকে নদীর কিনারা থেকে ঢালু স্থান দিয়ে উঠতে হত। তাই অবাক হওয়ার কিছুই নেই যে বাবিলের বন্দীরা কখনও মুক্ত হওয়ার বিষয়ে হতাশ ছিল!
১২, ১৩. তাঁর বার্তাবাহক যিশাইয়ের মাধ্যমে যিহোবার বাক্য কিভাবে সত্য হয়েছিল যখন বাবিল কোরসের দ্বারা পতিত হয়?
১২ কিন্তু সেই যিহূদী বন্দীরা নয় যাদের যিহোবাতে বিশ্বাস ছিল! তাদের একটি উজ্জ্বল আশা ছিল। তাঁর ভাববাদীদের মাধ্যমে, ঈশ্বর তাদের মুক্ত করার প্রতিজ্ঞা করেছিলেন। কিভাবে ঈশ্বর তাঁর প্রতিজ্ঞা পরিপূর্ণ করেছিলেন? কোরস তার সেনাবাহিনীকে বাবিলের কয়েক কিলোমিটার উত্তরে একটি স্থানে ইউফ্রেটিস নদীর গতিপথ ঘুরিয়ে দিতে আদেশ দিয়েছিলেন। এইভাবে, নগরের প্রধান প্রতিরক্ষা এক আপেক্ষিকভাবে শুষ্ক নদীগর্ভে পরিণত হয়েছিল। চরম সংকটপূর্ণ সেই রাত্রিতে, বাবিলে পানোৎসবে অংশগ্রহণকারী ব্যক্তিরা ইউফ্রেটিসের তীরবর্তী সম্মুখের কবাট অসতর্কতাবশতঃ খুলে রেখেছিল। যিহোবা আক্ষরিকভাবে তামার কবাট ভেঙ্গে ফেলেননি; অথবা তিনি লোহার হুড়কা কাটেননি যা সেগুলিকে বন্ধ করে রাখত, কিন্তু সেগুলিকে খোলা এবং হুড়কামুক্ত রাখতে তাঁর বিস্ময়কর কৌশলী পরিচালনার একই প্রভাব ছিল। বাবিলের প্রাচীর অকেজো হয়ে গিয়েছিল। কোরসের সৈন্যদলকে ভিতরে প্রবেশ করতে সেখানে আরোহণ করতে হয়নি। যিহোবা কোরসের অগ্রে গমন করেছিলেন, “উচ্চনীচ স্থান” মসৃণ করেছিলেন, হ্যাঁ, সমস্ত বাধাগুলি। যিশাইয় ঈশ্বরের সত্য বার্তাবাহক হিসাবে প্রমাণিত হয়েছিলেন।
১৩ নগরটি যখন কোরসের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে আসে, তখন এর সমস্ত ধনসম্পদ তার হাতে চলে আসে, যার অন্তর্ভুক্ত ছিল অন্ধকার, গুপ্ত ঘরে লুকানো সম্পদও। যিহোবা ঈশ্বর কোরসের জন্য এটি কেন করেছিলেন? এই কারণে যে তিনি জানবেন যিহোবা, যিনি ‘তার নাম ধরে তাকে ডাকেন,’ হলেন সত্য ভবিষ্যদ্বাণীর ঈশ্বর এবং মহাবিশ্বের সার্বভৌম প্রভু। তিনি জানবেন যে তাঁর লোক ইস্রায়েলকে মুক্ত করতে ঈশ্বর তাকে ক্ষমতাপ্রাপ্ত হওয়ার ব্যবস্থা করেছেন।
১৪, ১৫. কিভাবে আমরা জানতে পারি যে কোরস বাবিলের উপর তার বিজয়ের জন্য যিহোবার কাছে ঋণী ছিলেন?
১৪ কোরসের উদ্দেশ্যে যিহোবার বাক্যগুলি শুনুন: “আমার দাস যাকোবের ও আমার মনোনীত ইস্রায়েলের নিমিত্ত আমি তোমার নাম ধরিয়া তোমাকে ডাকিয়াছি; তুমি আমাকে না জানিলেও তোমাকে উপাধি দিয়াছি। আমিই সদাপ্রভু, আর কেহ নয়; আমি ব্যতীত অন্য ঈশ্বর নাই; তুমি আমাকে না জানিলেও আমি তোমার কটি বন্ধ করিব; যেন সূর্য্যোদয়ের স্থানাবধি পশ্চিম দিক্ পর্য্যন্ত লোকে জানিতে পারে যে, আমি ব্যতীত অন্য নাই; আমিই সদাপ্রভু, আর কেহ নয়। আমি দীপ্তির রচনাকারী ও অন্ধকারের সৃষ্টিকর্ত্তা, আমি শান্তির রচনাকারী [যেটি হল তাঁর নির্বাসিত লোকেদের জন্য] ও [বাবিলের জন্য] অনিষ্টের সৃষ্টিকর্ত্তা; আমি সদাপ্রভু এই সকলের সাধনকর্ত্তা।”—যিশাইয় ৪৫:৪-৭.
১৫ কোরস তার বাবিল জয়ের জন্য যিহোবার কাছে ঋণী ছিলেন, কারণ তিনিই ঐ দুষ্ট নগরের বিরুদ্ধে তাঁর মনোরথ পূর্ণ এবং তাঁর বন্দী লোকেদের মুক্ত করতে তাকে শক্তিশালী করেছিলেন। এটি করার দ্বারা, ঈশ্বর তাঁর স্বর্গকে ধার্মিক প্রভাব অথবা শক্তি বর্ষণ করতে আদেশ দিয়েছিলেন। তিনি তাঁর পৃথিবীকে উন্মুক্ত হতে এবং তাঁর নির্বাসিত লোকেদের জন্য ধার্মিক ফল ও পরিত্রাণ উৎপন্ন করতে আদেশ করেছিলেন। আর তাঁর রূপক স্বর্গ ও পৃথিবী এই আদেশের প্রতি সাড়া প্রদান করেছিল। (যিশাইয় ৪৫:৮) তার মৃত্যুর একশত বছরের কিছু বেশি পরে, যিশাইয় যিহোবার সত্য বার্তাবাহক হিসাবে প্রদর্শিত হয়েছিলেন!
সিয়োনের জন্য বার্তাবাহকগণের সুসমাচার!
১৬. যিরূশালেমের জনশূন্য নগরে কোন্ সুসমাচার ঘোষিত হয়েছিল যখন বাবিল পরাজিত হয়?
১৬ কিন্তু আরও কিছু রয়েছে। যিশাইয় ৫২:৭ পদ যিরূশালেমের জন্য সুসমাচার জানায়: “আহা! পর্ব্বতগণের উপরে তাহারই চরণ কেমন শোভা পাইতেছে, যে সুসমাচার প্রচার করে, শান্তি ঘোষণা করে, মঙ্গলের সুসমাচার প্রচার করে, পরিত্রাণ ঘোষণা করে, সিয়োনকে বলে, তোমার ঈশ্বর রাজত্ব করেন।” কল্পনা করুন এটি দেখা কতই না রোমাঞ্চকর ছিল যে পর্বতগুলি থেকে একজন বার্তাবাহক যিরূশালেমের সমীপবর্তী হচ্ছেন! তার কাছে অবশ্যই সংবাদ আছে। এটি কী? এটি হল সিয়োনের জন্য শিহরণজনক সংবাদ। শান্তির সংবাদ, হ্যাঁ, ঈশ্বরের প্রীতির সংবাদ। যিরূশালেম এবং তার মন্দির পুনর্নির্মিত হবে! আর বার্তাবাহক উদ্দীপিত জয়োল্লাসের সাথে ঘোষণা করেন: “তোমার ঈশ্বর রাজত্ব করেন।”
১৭, ১৮. কিভাবে কোরসের বাবিল জয় যিহোবার নিজস্ব নামকে প্রভাবিত করে?
১৭ যখন যিহোবা তাঁর রূপক সিংহাসন যার উপর দায়ূদের বংশের রাজারা বসতেন তার বিপর্যয় ঘটাতে বাবিলীয়দের অনুমোদন করেছিলেন, তখন হয়ত মনে হয়েছিল যে তিনি আর রাজা নন। পরিবর্তে, বাবিলের প্রধান দেবতা, মার্ডাককে রাজা বলে মনে হয়েছিল। কিন্তু, যখন সিয়োনের ঈশ্বর বাবিলকে পরাস্ত করেন, তখন তিনি তাঁর সার্বিক সার্বভৌমত্বকে প্রদর্শন করেছিলেন—যে তিনি ছিলেন সর্বমহান রাজা। আর এই বিষয়টিকে জোরালো করতে যে, “মহান্ রাজার নগরী” যিরূশালেমকে, এর মন্দিরসহ পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করা হয়েছিল। (মথি ৫:৩৫) সেই বার্তাবাহক যিনি এইরূপ সুসমাচার বহন করে নিয়ে এসেছিলেন, যদিও তার চরণ ধুলিময়, ময়লা এবং চূর্ণ ছিল, সিয়োন ও তার ঈশ্বরের প্রেমিকগণের চোখে সেগুলি দেখতে অত্যন্ত শোভিত ছিল!
১৮ ভবিষ্যদ্বাণীমূলক অর্থে, বাবিলের পতনের অর্থ ছিল যে ঈশ্বরের রাজ্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল এবং সুসমাচার বহনকারীরা, সেই তথ্যের একজন ঘোষক হয়েছিলেন। এছাড়াও, এই প্রাচীন দূত যিনি যিশাইয়ের মাধ্যমে ভাববাণী করেছিলেন, মহত্তর সুসমাচারের এক বার্তাবাহককে চিত্রিত করেছিল—বিশ্বাসকারী সমস্ত লোকের জন্য অপূর্ব নিহিতার্থসহ এর মহিমান্বিত অভ্যন্তরস্থ বিষয় এবং এর রাজ্যের বিষয়বস্তুর কারণে এটি মহত্তর।
১৯. ইস্রায়েল দেশ সম্বন্ধে কোন্ বার্তা যিহোবা যিহিষ্কেলের মাধ্যমে প্রদান করেছিলেন?
১৯ যিহিষ্কেলকেও পুনঃস্থাপনের উজ্জ্বল ভবিষ্যদ্বাণীগুলি দেওয়া হয়েছিল। তিনি ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন: “প্রভু সদাপ্রভু এই কথা কহেন, . . . আমি . . . নগর সকলকে বসতিবিশিষ্ট করিব, এবং উৎসন্ন স্থান সকল নির্ম্মিত হইবে। আর লোকে বলিবে, এই ধ্বংসিত দেশ এদন উদ্যানের তুল্য হইল।”—যিহিষ্কেল ৩৬:৩৩, ৩৫.
২০. যিশাইয় ভবিষ্যদ্বাণীমূলকভাবে যিরূশালেমের প্রতি কোন্ আনন্দদায়ক উপদেশ দিয়েছিলেন?
২০ বাবিলের বন্দীত্বে, ঈশ্বরের লোকেরা সিয়োনের জন্য বিলাপ করেছিল। (গীতসংহিতা ১৩৭:১) এখন তারা আনন্দ করতে পারে। যিশাইয় উপদেশ দিয়েছিলেন: “হে যিরূশালেমের উৎসন্ন স্থান সকল, উচ্চরব কর, একসঙ্গে আনন্দগান কর, কেননা সদাপ্রভু আপন প্রজাদিগকে সান্ত্বনা করিয়াছেন, তিনি যিরূশালেমকে মুক্ত করিয়াছেন। সদাপ্রভু সর্ব্বজাতির দৃষ্টিতে আপন পবিত্র বাহু অনাবৃত করিয়াছেন; আর পৃথিবীর সমুদয় প্রান্ত আমাদের ঈশ্বরের পরিত্রাণ দেখিবে।”—যিশাইয় ৫২:৯, ১০.
২১. কিভাবে যিশাইয় ৫২:৯, ১০ পদের বাক্যগুলি বাবিলের পরাজয়ের পরে পরিপূর্ণ হয়েছিল?
২১ হ্যাঁ, যিহোবার মনোনীত লোকেদের আনন্দ করার মহান কারণ ছিল। তারা এখন সেই স্থান যা একসময়ে জনশূন্য ছিল তা পুনরায় অধিকার করতে এবং সেটিকে এদন উদ্যানের তুল্য করতে যাচ্ছিল। যিহোবা তাদের জন্য “আপন পবিত্র বাহু অনাবৃত” করেছিলেন। তাদের প্রিয় বাসভূমিতে ফিরিয়ে নিয়ে আসার জন্য কার্যকারী হতে বলা যেতে পারে যেন তিনি তাঁর বস্ত্রের হাত গুটিয়েছিলেন। এটি ইতিহাসের কোন গৌণ, অপ্রত্যক্ষ ঘটনা ছিল না। না, সমস্ত লোক যারা তখন জীবিত ছিল তারা একটি জাতির জন্য বিস্ময়কর পরিত্রাণ নিয়ে আসতে মানবজাতির বিষয়ে ঈশ্বরের ‘অনাবৃত বাহুকে’ ক্ষমতা প্রয়োগ করতে দেখেছিল। তাদের নিখুঁত প্রমাণ দেওয়া হয়েছিল যে যিশাইয় এবং যিহিষ্কেল যিহোবার সত্য বার্তাবাহক ছিলেন। কেউই সন্দেহ করতে পারত না যে সিয়োনের ঈশ্বরই ছিলেন সমগ্র পৃথিবীতে একমাত্র জীবন্ত এবং সত্য ঈশ্বর। যিশাইয় ৩৫:২ পদে, আমরা পড়ি: “তাহারা দেখিতে পাইবে সদাপ্রভুর প্রতাপ, আমাদের ঈশ্বরের শোভা।” যারা যিহোবার ঈশ্বরত্বের এই প্রমাণকে গ্রহণ করেছিল তারা তাঁর উপাসনার প্রতি ফিরেছিল।
২২. (ক) আজকের দিনে কিসের জন্য আমরা কৃতজ্ঞ হতে পারি? (খ) যিহোবা মিথ্যা বার্তাবাহকদের প্রকাশ করেন বলে কেন আমাদের বিশেষভাবে কৃতজ্ঞ হওয়া উচিত?
২২ আমাদের কতই না কৃতজ্ঞ হওয়া উচিত যে যিহোবা তাঁর সত্য বার্তাবাহকদের শনাক্ত করান! তিনিই প্রকৃতপক্ষে “আপন দাসের বাক্য স্থির করেন, ও আপন দূতগণের মন্ত্রণা সিদ্ধ করেন।” (যিশাইয় ৪৪:২৬) পুনঃস্থাপনের যে ভবিষ্যদ্বাণীগুলি তিনি যিশাইয় ও যিহিষ্কেলকে দিয়েছিলেন তা তাঁর দাসেদের প্রতি তাঁর মহান প্রেম, অযাচিত করুণা এবং দয়াকে তুলে ধরে। নিশ্চিতভাবে, এই জন্য যিহোবা আমাদের সকলের প্রশংসার যোগ্য! আর আজকের দিনে আমাদের বিশেষভাবে কৃতজ্ঞ হওয়া উচিত যে তিনি মিথ্যা বার্তাবাহকদের প্রকাশ করেন। তা এই কারণে যে জগতের দৃশ্যপটে তাদের অনেকেই এখন বিদ্যমান। তাদের বাগাড়ম্বরপূর্ণ বার্তা যিহোবার ঘোষিত উদ্দেশ্যগুলিকে উপেক্ষা করে। পরবর্তী প্রবন্ধটি আমাদের সেই মিথ্যা বার্তাবাহকদের শনাক্ত করতে সাহায্য করবে।
[পাদটীকাগুলো]
a আইরা মরিস প্রাইস, ১৯২৫ দ্বারা লিখিত স্মৃতিসৌধ ও পুরাতন নিয়ম (ইংরাজি)।
আপনি কি ব্যাখ্যা করতে পারেন?
◻ কিভাবে যিহোবা তাঁর সত্য বার্তাবাহকদের শনাক্ত করান?
◻ যিশাইয়ের মাধ্যমে, বাবিলকে পরাজিত করার জন্য তাঁর প্রতিনিধি হিসাবে যিহোবা কার নাম বলেছিলেন?
◻ বাবিলের পরাজয় সম্বন্ধে বর্ণিত যিশাইয়ের ভবিষ্যদ্বাণী কিভাবে পরিপূর্ণ হয়েছিল?
◻ বাবিলের পরাজয় যিহোবার নামের উপর কোন্ উত্তম প্রভাব এনেছিল?
[৯ পৃষ্ঠার চিত্র]
যিহিষ্কেলের দিনের জাতিগুলির কাছে বাবিল অজেয় বলে মনে হয়েছিল