জীবন ও পরিচর্যা সভার জন্য অধ্যয়ন পুস্তিকা-র রেফারেন্স
ফেব্রুয়ারি ৬-১২
ঈশ্বরের বাক্যের গুপ্তধন | যিশাইয় ৪৭-৫১
“যিহোবার বাধ্য হওয়া আশীর্বাদ নিয়ে আসে”
(যিশাইয় ৪৮:১৭) সদাপ্রভু, তোমার মুক্তিদাতা, ইস্রায়েলের পবিত্রতম, এই কথা কহেন, আমি সদাপ্রভু তোমার ঈশ্বর, আমি তোমার উপকারজনক শিক্ষা দান করি, ও তোমার গন্তব্য পথে তোমাকে গমন করাই।
যিশাইয়ের ভবিষ্যদ্বাণী-২ ১৩১ অনু. ১৮, ইংরেজি
যিহোবা আমাদের মঙ্গলের জন্য শিক্ষা দান করেন
“আমার আজ্ঞাতে অবধান কর”
১৮ যিহোবার আত্মার দ্বারা শক্তি লাভ করে ভাববাদী ঘোষণা করেন: “প্রভু সদাপ্রভু আমাকে ও তাঁহার আত্মাকে প্রেরণ করিয়াছেন। সদাপ্রভু, তোমার মুক্তিদাতা, ইস্রায়েলের পবিত্রতম, এই কথা কহেন, আমি সদাপ্রভু তোমার ঈশ্বর, আমি তোমার উপকারজনক শিক্ষা দান করি, ও তোমার গন্তব্য পথে তোমাকে গমন করাই।” (যিশাইয় ৪৮:১৬খ, ১৭) যিহোবার যত্নের এই প্রেমময় অভিব্যক্তি ইস্রায়েল জাতিকে আশ্বাস দেবে, ঈশ্বর বাবিলের কাছ থেকে তাদের উদ্ধার করতে যাচ্ছেন। তিনি হলেন তাদের মুক্তিদাতা। (যিশাইয় ৫৪:৫) যিহোবার আন্তরিক আকাঙ্ক্ষা হল ইস্রায়েলীয়রা তাঁর সঙ্গে তাদের সম্পর্ক পুনর্স্থাপন করবে এবং তাঁর আজ্ঞাতে অবধান করবে। সত্য উপাসনার ভিত্তি হচ্ছে ঈশ্বরের নির্দেশনার প্রতি বাধ্য হওয়া। ইস্রায়েলীয়রা সঠিক পথে গমন করতে পারে না, যদি না তাদের ‘গন্তব্য পথ’ দেখিয়ে দেওয়া হয়।
(যিশাইয় ৪৮:১৮) আহা! তুমি কেন আমার আজ্ঞাতে অবধান কর নাই? করিলে তোমার শান্তি নদীর ন্যায়, তোমার ধার্ম্মিকতা সমুদ্র-তরঙ্গের ন্যায় হইত।
যিশাইয়ের ভবিষ্যদ্বাণী-২ ১৩১ অনু. ১৯, ইংরেজি
যিহোবা আমাদের মঙ্গলের জন্য শিক্ষা দান করেন
১৯ যিহোবার লোকেরা যেন দুর্দশা এড়িয়ে চলে এবং জীবন উপভোগ করে, তাঁর সেই আকাঙ্ক্ষা সুন্দরভাবে বর্ণনা করা হয়েছে: “আহা! তুমি কেন আমার আজ্ঞাতে অবধান কর নাই? করিলে তোমার শান্তি নদীর ন্যায়, তোমার ধার্ম্মিকতা সমুদ্র-তরঙ্গের ন্যায় হইত।” (যিশাইয় ৪৮:১৮) সর্বশক্তিমান সৃষ্টিকর্তার কাছ থেকে কতই-না আন্তরিক এক আবেদন! (দ্বিতীয় বিবরণ ৫:২৯; গীতসংহিতা ৮১:১৩) বন্দিত্বে চলে যাওয়ার পরিবর্তে, ইস্রায়েলীয়রা এমন শান্তি উপভোগ করতে পারে, যা নদীতে বয়ে চলা জলের মতো প্রচুর। (গীতসংহিতা ১১৯:১৬৫) তাদের ধার্মিকতার কাজগুলো সমুদ্রের ঢেউয়ের মতো অগণিত হতে পারে। (আমোষ ৫:২৪) তাদের প্রতি সত্যিই আগ্রহী এমন একজন ব্যক্তি হিসেবে যিহোবা ইস্রায়েলীয়দের কাছে আবেদন জানান, তাদের কোন পথে গমন করা উচিত তা প্রেমের সঙ্গে তাদের দেখিয়ে দেন। তবে, যদি তারা তাঁর কথা শোনে!
(যিশাইয় ৪৮:১৯) আর তোমার বংশ বালুকার ন্যায় হইত, তোমার সন্তান তাহার কণাসমুহের ন্যায় হইত, তাহার নাম উচ্ছিন্ন ও আমার সম্মুখ হইতে লুপ্ত হইত না।
যিশাইয়ের ভবিষ্যদ্বাণী-২ ১৩২ অনু. ২০-২১, ইংরেজি
যিহোবা আমাদের মঙ্গলের জন্য শিক্ষা দান করেন
২০ ইস্রায়েলীয়রা যদি অনুতপ্ত হয়, তা হলে তারা কোন আশীর্বাদগুলো লাভ করবে? যিহোবা বলেন: “আর তোমার বংশ বালুকার ন্যায় হইত, তোমার সন্তান তাহার কণাসমুহের ন্যায় হইত, তাহার নাম উচ্ছিন্ন ও আমার সম্মুখ হইতে লুপ্ত হইত না।” (যিশাইয় ৪৮:১৯) যিহোবা তাঁর লোকেদের তাঁর এই প্রতিজ্ঞা স্মরণ করিয়ে দেন, অব্রাহামের বংশ “আকাশের তারাগণের ও সমুদ্রতীরস্থ বালুকার ন্যায়” বহুসংখ্যক হবে। (আদিপুস্তক ২২:১৭; ৩২:১২) কিন্তু, অব্রাহামের এই বংশধররা বিদ্রোহী হয়ে উঠেছে আর এই প্রতিজ্ঞা অনুযায়ী আশীর্বাদ লাভ করার কোনো অধিকার তাদের নেই। আসলে, তাদের আচরণ এতটাই খারাপ যে, যিহোবার ব্যবস্থা অনুযায়ী একটা জাতি হিসেবে তাদের নাম উচ্ছিন্ন হওয়ার যোগ্য। (দ্বিতীয় বিবরণ ২৮:৪৫) তা সত্ত্বেও, তাঁর লোকেদের লুপ্ত বা নিশ্চিহ্ন করার আকাঙ্ক্ষা যিহোবার নেই আর তিনি তাদের পুরোপুরি পরিত্যাগ করতে চান না।
২১ এই জোরালো বাক্যাংশে স্পষ্টভাবে প্রকাশিত নীতিগুলো বর্তমানে যিহোবার উপাসকদের প্রতি প্রযোজ্য। যিহোবা হলেন জীবনের উনুই বা উৎস আর আমাদের জীবনকে কীভাবে ব্যবহার করা উচিত সেই বিষয়ে তিনি অন্য যেকোনো ব্যক্তির চেয়ে আরও ভালো জানেন। (গীতসংহিতা ৩৬:৯) তিনি আমাদের আনন্দ কেড়ে নেওয়ার জন্য নয় বরং আমাদের উপকারের জন্য বিভিন্ন নির্দেশনা দিয়েছেন। সত্য খ্রিস্টানরা যিহোবার নির্দেশনা খোঁজার মাধ্যমে সাড়া প্রদান করে। (মীখা ৪:২) তাঁর নির্দেশনা আমাদের বিশ্বাস ও তাঁর সঙ্গে আমাদের সম্পর্ককে সুরক্ষা করে এবং শয়তানের কলুষিত প্রভাব থেকে আমাদের রক্ষা করে। আমরা যখন ঈশ্বরের বিভিন্ন আইনের পিছনে থাকা নীতিগুলো উপলব্ধি করি, তখন আমরা এটা বুঝতে পারি, যিহোবা আমাদের মঙ্গলের জন্য শিক্ষা দেন। আমরা বুঝতে পারি, “তাঁহার আজ্ঞা সকল দুর্ব্বহ নয়।” আর আমরা উচ্ছিন্ন হব না।—১ যোহন ২:১৭; ৫:৩.
আধ্যাত্মিক রত্ন খুঁজে বের করুন
(যিশাইয় ৪৯:৬) তিনি বলেন, তুমি যে যাকোবের বংশ সকলকে উঠাইবার জন্য ও ইস্রায়েলের রক্ষিত লোকদিগকে পুনর্ব্বার আনিবার জন্য আমার দাস হও, ইহা লঘু বিষয়; আমি তোমাকে জাতিগণের দীপ্তিস্বরূপ করিব, যেন তুমি পৃথিবীর সীমা পর্য্যন্ত আমার পরিত্রাণস্বরূপ হও।
যিশাইয় বইয়ের দ্বিতীয় বিভাগের প্রধান বিষয়গুলো
৪৯:৬—কীভাবে মশীহ “জাতিগণের দীপ্তিস্বরূপ,” এমনকি যদিও তাঁর পার্থিব পরিচর্যা শুধু ইস্রায়েল-সন্তানদের মধ্যে সীমিত ছিল? যিশুর মৃত্যুর পর যা ঘটেছিল, সেই কারণে এমনটা বলা যায়। যিশাইয় ৪৯:৬ পদ তাঁর শিষ্যদের প্রতি প্রযোজ্য। (প্রেরিত ১৩:৪৬, ৪৭) আজকে, উপাসকদের এক বিস্তর লোকের দ্বারা সাহায্যপ্রাপ্ত হয়ে অভিষিক্ত খ্রিস্টানরা “জাতিগণের দীপ্তিস্বরূপ” কাজ করে আর “পৃথিবীর সীমা পর্য্যন্ত” লোকেদেরকে জ্ঞানালোকিত করছে।—মথি ২৪:১৪; ২৮:১৯, ২০.
(যিশাইয় ৫০:১) সদাপ্রভু এই কথা কহেন, আমি যে পত্র দ্বারা তোমাদের মাতাকে ত্যাগ করিয়াছি, তাহার সেই ত্যাগপত্র কোথায়? কিম্বা আমার মহাজনদের মধ্যে কাহার কাছে তোমাদিগকে বিক্রয় করিয়াছি? দেখ, তোমাদের অপরাধ প্রযুক্ত তোমরা বিক্রীত হইয়াছ, এবং তোমাদের অধর্ম্ম প্রযুক্ত তোমাদের মাতা ত্যক্তা হইয়াছে।
অন্তর্দৃষ্টি-১ ৬৪৩ অনু. ৪-৫, ইংরেজি
বিবাহবিচ্ছেদ
রূপক বিবাহবিচ্ছেদ। বৈবাহিক সম্পর্ককে শাস্ত্রে রূপক অর্থে ব্যবহার করা হয়েছে। (যিশা ৫৪:১, ৫, ৬; ৬২:১-৬) এ ছাড়া, শাস্ত্রে রূপক বিবাহবিচ্ছেদ বা একজন স্ত্রীকে ত্যাগ করার বিষয়েও উল্লেখ করা হয়েছে।—যির ৩:৮.
খ্রিস্টপূর্ব ৬০৭ সালে যখন যিহূদা রাজ্যের পতন হয়েছিল ও যিরূশালেম ধ্বংস হয়েছিল, তখন বাবিলীয়রা সেই দেশের অধিবাসীদের নির্বাসনে নিয়ে গিয়েছিল। যে-যিহুদিরা সেই সময়ে নির্বাসনে থাকবে, তাদের কাছে ভবিষ্যদ্বাণীমূলকভাবে যিহোবা বহু বছর আগে বলেছিলেন: “আমি যে পত্র দ্বারা তোমাদের মাতাকে ত্যাগ করিয়াছি, তাহার সেই ত্যাগপত্র কোথায়?” (যিশা ৫০:১) তাদের “মাতাকে” বা জাতীয় সংগঠনকে ন্যায্য কারণেই ত্যাগ করা হয়েছে। এর কারণ এই নয় যে, যিহোবা তাঁর চুক্তি ভঙ্গ করেছেন ও বিবাহবিচ্ছেদ প্রক্রিয়া শুরু করেছেন বরং এর কারণ হল সে ব্যবস্থা চুক্তির বিরুদ্ধে অন্যায় করেছে। কিন্তু ইস্রায়েলীয়দের এক অবশিষ্টাংশ অনুতপ্ত হয়েছিল এবং তাদের দেশে তাদের সঙ্গে যিহোবার স্বামীতুল্য সম্পর্ক পুনর্নবীকরণ করার জন্য প্রার্থনা করেছিল। যিহোবা নিজের নামের অনুরোধে, প্রতিজ্ঞা অনুযায়ী ৭০ বছরের জনশূন্য অবস্থার পর খ্রিস্টপূর্ব ৫৩৭ সালে তাঁর লোকেদের তাদের দেশে পুনর্স্থাপন করেছিলেন।—গীত ১৩৭:১-৯; বিবাহ দেখুন।
বাইবেল পাঠ
(যিশাইয় ৫১:১২-২৩) আমি, আমিই তোমাদের সান্ত্বনাকর্ত্তা। তুমি কে যে, মর্ত্ত্যকে ভয় করিতেছ, সে ত মরিয়া যাইবে; এবং মনুষ্য-সন্তানকে ভয় করিতেছ, সে ত তৃণের ন্যায় হইয়া পড়িবে; ১৩ আর তোমার নির্ম্মাতা সদাপ্রভুকে ভুলিয়া গিয়াছ, যিনি আকাশমণ্ডল বিস্তার করিয়াছেন, পৃথিবীর ভিত্তিমূল স্থাপন করিয়াছেন; এবং তুমি সমস্ত দিন অবিরত উপদ্রবীর ক্রোধ হেতু ভয় পাইতেছ, যখন সে বিনাশ করিতে প্রস্তুত হইয়াছে? উপদ্রবীর ক্রোধ কোথায়? ন্যুব্জ বন্দি শীঘ্রই মুক্ত হইবে; ১৪ সে মরিয়া কূপে নামিয়া যাইবে না, আর তাহার খাদ্যের অভাব হইবে না। ১৫ আমি ত সদাপ্রভু, তোমার ঈশ্বর, আমি সমুদ্রকে ব্যস্ত করিলে তাহার তরঙ্গ কল্লোলধ্বনি করে; বাহিনীগণের সদাপ্রভু, এই আমার নাম। ১৬ আর আমি আপন বাক্য তোমার মুখে রাখিলাম, আপন হস্তের ছায়ায় তোমাকে আচ্ছাদন করিলাম। আমার উদ্দেশ্য, আকাশমণ্ডল রোপণ করি, পৃথিবীর ভিত্তিমূল স্থাপন করি, এবং সিয়োনকে বলি, তুমি আমার প্রজা। ১৭ জাগ, জাগ, উঠিয়া দাঁড়াও, হে যিরূশালেম, তুমি সদাপ্রভুর হস্ত হইতে তাঁহার ক্রোধ-পানপাত্রে পান করিয়াছ, মত্ততাজনক বৃহৎ পানপাত্রে পান করিয়াছ, তলানি চাটিয়া খাইয়াছ। ১৮ [এই পুরী] যে সকল পুত্ত্র প্রসব করিয়াছে, তাহাদের মধ্যে তাহাকে লইয়া যাইবার কেহই নাই; যে সকল পুত্ত্র প্রতিপালন করিয়াছে, তাহাদের মধ্যে ইহার হস্ত ধরিবার কেহ নাই। ১৯ এই দুই তোমার প্রতি ঘটিয়াছে; কে তোমার নিমিত্ত বিলাপ করিবে? ধনাপহার ও বিনাশ, দুর্ভিক্ষ ও খড়্গ; আমি কিরূপে তোমাকে সান্ত্বনা করিব? ২০ জালে বদ্ধ হরিণের ন্যায় তোমার পুত্ত্রগণ মূর্চ্ছিত হইয়াছে, প্রতি সড়কের মাথায় পড়িয়া আছে; তাহারা সদাপ্রভুর ক্রোধে তোমার ঈশ্বরের ধমকে পরিপূর্ণ। ২১ অতএব তুমি এই কথা শুন, হে দুঃখিনি, তুমি মত্তা, কিন্তু দ্রাক্ষারসে নয়; ২২ তোমার প্রভু সদাপ্রভু, তোমার ঈশ্বর, যিনি আপন প্রজাদের পক্ষবাদী, তিনি এই কথা কহেন, দেখ, আমি মত্ততাজনক পানপাত্র, আমার ক্রোধরূপ বৃহৎ পানপাত্র, তোমার হস্ত হইতে লইলাম; সেই পানপাত্রে তুমি আর পান করিবে না। ২৩ আর আমি তোমার সেই ক্লেশদাতাদের হস্তে তাহা সমর্পণ করিব, যাহারা তোমার প্রাণকে বলিয়াছে, ‘হেঁট হও, আমরা তোমার উপর দিয়া গমন করি,’ আর তুমি ভূমির ন্যায় ও সড়কের ন্যায় পথিকদের কাছে আপন পৃষ্ঠ পাতিয়া দিয়াছ।
বর্ষপুস্তক ১৬ ১৪৪-১৪৫, ইংরেজি
ইন্দোনেশিয়া
আমরা আমাদের বিশ্বাসের ব্যাপারে আপোশ করব না
ড্যানিয়েল লোকোল্লো
জন্ম ১৯৬৫
বাপ্তিস্ম ১৯৮৬
সংক্ষিপ্ত পরিচয় একজন বিশেষ অগ্রগামী, যিনি তাড়নার সময়েও দৃঢ়তা বজায় রেখেছিলেন।
১৯৮৯ সালের ১৪ এপ্রিল, আমি ফ্লোরেস দ্বীপের মাউমেরে শহরে একটা সভা পরিচালনা করছিলাম। সেই সময়ে হঠাৎ সরকারি কর্মকর্তারা বাড়ির মধ্যে ঢোকে এবং আমাকে ও আরও তিন জনকে গ্রেপ্তার করে।
স্থানীয় কারাগারের প্রহরীরা জোর করে আমাদের দিয়ে পতাকা অভিবাদন করানোর চেষ্টা করে। আমরা যখন তা করতে প্রত্যাখ্যান করি, তখন তারা আমাদের মারধর করে, লাথি মারে এবং পাঁচ দিন ধরে দিনের বেলায় প্রখর রোদের মধ্যে দাঁড় করিয়ে রাখে। রাতের বেলা আমরা অত্যন্ত পরিশ্রান্ত হয়ে ও শরীরে ব্যথা নিয়ে আমাদের ছোটো, নোংরা কক্ষের মধ্যে সিমেন্টের শক্ত মেঝেতে শুয়ে কাঁপতাম। কারারক্ষক বার বার আমাদের আপোশ করতে বলেছিলেন, কিন্তু আমরা উত্তর দিয়েছিলাম, “আমরা মরে গেলেও পতাকা অভিবাদন করব না।” আমাদের আগের অগণিত খ্রিস্টানের মতো আমরাও এমনটা মনে করেছিলাম, আমরা “ধার্ম্মিকতার নিমিত্ত দুঃখভোগ” করার বিশেষ সুযোগ পেয়েছি।—১ পিতর ৩:১৪.
ইন্দোনেশিয়া
আমরা নির্দেশনার বাধ্য হয়েছি—এবং বেঁচে আছি!
ব্লাসিউস ডা গোমেজ
জন্ম ১৯৬৩
বাপ্তিস্ম ১৯৯৫
সংক্ষিপ্ত পরিচয় একজন প্রাচীন, যিনি মালুকু দ্বীপপুঞ্জের এক অংশে অর্থাৎ আম্বনে ধর্মের কারণে সংগঠিত এক দাঙ্গার সময়ে প্রেমের সঙ্গে পালের যত্ন নিয়েছিলেন।
১৯৯৯ সালের ১৯ জানুয়ারি, আমার ঘর থেকে প্রায় তিন কিলোমিটার (১.৮ মাইল) দূরে মুসলমান ও খ্রিস্টানদের মধ্যে বিদ্যমান শত্রুতা হঠাৎ করে চরম হিংস্রতায় পরিণত হয়েছিল। তখন পরিস্থিতি অশান্ত হয়ে পড়েছিল।a
নিজের পরিবারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পর, অন্যান্য প্রকাশক ঠিক আছে কি না তা জানার জন্য আমি তাদের ফোন করেছিলাম। আমি তাদের শান্ত থাকার জন্য এবং বিপদজনক এলাকা এড়িয়ে চলার জন্য পরামর্শ দিয়েছিলাম। পরবর্তী সময়ে, প্রাচীনরা পালের সঙ্গে দেখা করেছিলেন, যাতে তারা ভাই-বোনদের আধ্যাত্মিকভাবে শক্তিশালী করতে পারেন এবং উপাসনা করার জন্য তাদের ছোটো ছোটো দলে মিলিত হওয়ার জন্য উৎসাহিত করতে পারেন।
শাখা অফিস আমাদের পরামর্শ দিয়েছিল, যেন আমরা বিপদজনক এলাকায় বসবাস করছে এমন যেকোনো প্রকাশককে সেখান থেকে সরিয়ে নিই। তাই আমরা বেশ কয়েকটা পরিবারকে এই নির্দেশনা জানিয়েছিলাম। একজন ভাই, যিনি সেই জায়গা ত্যাগ করতে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন, তিনি পরে সশস্ত্র জনতার হাতে নিহত হন। কিন্তু, যারা শাখা অফিসের নির্দেশনার প্রতি মনোযোগ দিয়েছিল, তারা সকলে রক্ষা পান।
a মালুকুজুড়ে দু-বছর ধরে প্রচণ্ড দাঙ্গা চলেছিল আর এর ফলে দশ হাজার লোক ঘরছাড়া হয়েছিল।
ফেব্রুয়ারি ১৩-১৯
ঈশ্বরের বাক্যের গুপ্তধন | যিশাইয় ৫২-৫৭
“খ্রিস্ট আমাদের জন্য কষ্টভোগ করেছিলেন”
(যিশাইয় ৫৩:৩-৫) তিনি অবজ্ঞাত ও মনুষ্যদের ত্যাজ্য, ব্যথার পাত্র ও যাতনা পরিচিত হইলেন; লোকে যাহা হইতে মুখ আচ্ছাদন করে, তাহার ন্যায় তিনি অবজ্ঞাত হইলেন, আর আমরা তাঁহাকে মান্য করি নাই। ৪ সত্য, আমাদের যাতনা সকল তিনিই তুলিয়া লইয়াছেন, আমাদের ব্যথা সকল তিনি বহন করিয়াছেন; তবু আমরা মনে করিলাম, তিনি আহত, ঈশ্বরকর্ত্তৃক প্রহারিত ও দুঃখার্ত্ত। ৫ কিন্তু তিনি আমাদের অধর্ম্মের নিমিত্ত বিদ্ধ, আমাদের অপরাধের নিমিত্ত চূর্ণ হইলেন; আমাদের শান্তিজনক শাস্তি তাঁহার উপরে বর্ত্তিল, এবং তাঁহার ক্ষত সকল দ্বারা আমাদের আরোগ্য হইল।
প্রহরীদুর্গ ০৯ ১/১৫ ২৬ অনু. ৩-৫
যিহোবার দাস—‘আমাদের অধর্ম্মের নিমিত্ত বিদ্ধ হইলেন’
“অবজ্ঞাত হইলেন” এবং ‘মান্য করা হয় নাই’
৩ যিশাইয় ৫৩:৩ পদ পড়ুন। ঈশ্বরের একজাত পুত্রের জন্য তাঁর পিতার পাশে থেকে সেবা করার আনন্দ ত্যাগ করার এবং পাপ ও মৃত্যু থেকে মানবজাতিকে রক্ষা করতে তাঁর জীবন দান করার জন্য পৃথিবীতে আসার অর্থ কী ছিল, তা একটু কল্পনা করুন! (ফিলি. ২:৫-৮) তাঁর বলিদানের উদ্দেশ্য ছিল মানবজাতির জন্য পাপের প্রকৃত ক্ষমা নিয়ে আসা, যে-বিষয়টা মোশির ব্যবস্থার অধীনে পশুবলি উৎসর্গ করার দ্বারা কেবল আভাস দেওয়া হয়েছিল। (ইব্রীয় ১০:১-৪) তাঁর কি সাদর অভ্যর্থনা লাভ করা ও সম্মান পাওয়া উচিত ছিল না, অন্ততপক্ষে সেই যিহুদিদের কাছ থেকে, যারা প্রতিজ্ঞাত মশীহের জন্য অপেক্ষা করছিল? (যোহন ৬:১৪) এর পরিবর্তে, যিহুদিরা খ্রিস্টকে ‘অবজ্ঞা’ করেছিল এবং তারা ‘তাঁহাকে মান্য করে নাই,’ যেমনটা যিশাইয় ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন। প্রেরিত যোহন লিখেছিলেন: “তিনি নিজ অধিকারে [“দেশে,” বাংলা কমন ল্যাঙ্গুয়েজ ভারসন] আসিলেন, আর যাহারা তাঁহার নিজের, তাহারা তাঁহাকে গ্রহণ করিল না।” (যোহন ১:১১) প্রেরিত পিতর যিহুদিদের বলেছিলেন: “আমাদের পিতৃপুরুষদের ঈশ্বর, আপনার দাস সেই যীশুকে গৌরবান্বিত করিয়াছেন, যাঁহাকে তোমরা শত্রুহস্তে সমর্পণ করিয়াছিলে, এবং পীলাত যখন তাঁহাকে ছাড়িয়া দিতে স্থির করিয়াছিলেন, তখন তাঁহার সাক্ষাতে তোমরা অস্বীকার করিয়াছিলে। তোমরা সেই পবিত্র ও ধর্ম্মময় ব্যক্তিকে অস্বীকার করিয়াছিলে।”—প্রেরিত ৩:১৩, ১৪.
৪ এ ছাড়া, যিশাইয় ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন যে, যিশুকে “যাতনা [“রোগের সঙ্গে” বাংলা কমন ল্যাঙ্গুয়েজ ভারশন] পরিচিত” হতে হবে। যিশু তাঁর পরিচর্যার সময়ে নিশ্চিতভাবেই মাঝে মাঝে ক্লান্ত হয়েছিলেন কিন্তু এমন কোনো ইঙ্গিত পাওয়া যায় না যে, তিনি অসুস্থ হয়েছিলেন। (যোহন ৪:৬) কিন্তু, তিনি সেই ব্যক্তিদের রোগের সঙ্গে পরিচিত ছিলেন, যাদের কাছে তিনি প্রচার করেছিলেন। তিনি তাদের প্রতি মমতা বোধ করেছিলেন এবং অনেককে সুস্থ করেছিলেন। (মার্ক ১:৩২-৩৪) এভাবে যিশু সেই ভবিষ্যদ্বাণী পরিপূর্ণ করেছিলেন, যেটা বলে: “সত্য, আমাদের যাতনা [“রোগ,” বাংলা কমন ল্যাঙ্গুয়েজ ভারশন] সকল তিনিই তুলিয়া লইয়াছেন, আমাদের ব্যথা সকল তিনি বহন করিয়াছেন।”—যিশা. ৫৩:৪ক; মথি ৮:১৬, ১৭.
যেন “ঈশ্বরকর্ত্তৃক প্রহারিত”
৫ যিশাইয় ৫৩:৪খ পদ পড়ুন। যিশুর সময়ের অনেক লোক তাঁর কষ্টভোগ ও মৃত্যুর কারণ সম্বন্ধে বুঝতে পারেনি। তারা মনে করেছিল যে, ঈশ্বর তাঁকে শাস্তি দিচ্ছিলেন। (মথি ২৭:৩৮-৪৪) যিহুদিরা যিশুকে ঈশ্বরনিন্দার অভিযোগে অভিযুক্ত করেছিল। (মার্ক ১৪:৬১-৬৪; যোহন ১০:৩৩) অবশ্যই, যিশু পাপী অথবা ঈশ্বরনিন্দুক কোনোটাই ছিলেন না। কিন্তু, তাঁর পিতার প্রতি তাঁর মহৎ প্রেমের পরিপ্রেক্ষিতে, তাঁকে যে ঈশ্বরনিন্দার অভিযোগে অভিযুক্ত হয়ে মারা যেতে হবে, সেই ধারণাটা নিশ্চয়ই যিহোবার দাস হিসেবে তাঁর কষ্টভোগকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছিল। তা সত্ত্বেও, তিনি যিহোবার ইচ্ছার প্রতি বশীভূত থাকতে ইচ্ছুক ছিলেন।—মথি ২৬:৩৯.
(যিশাইয় ৫৩:৭, ৮) তিনি উপদ্রুত হইলেন, তবু দুঃখভোগ স্বীকার করিলেন, তিনি মুখ খুলিলেন না; মেষশাবক যেমন হত হইবার জন্য নীত হয়, মেষী যেমন লোমচ্ছেদকদের সম্মুখে নীরব হয়, সেইরূপ তিনি মুখ খুলিলেন না। ৮ তিনি উপদ্রব ও বিচার দ্বারা অপনীত হইলেন; তৎকালীয়দের মধ্যে কে ইহা আলোচনা করিল যে, তিনি জীবিতদের দেশ হইতে উচ্ছিন্ন হইলেন? আমার জাতির অধর্ম্ম প্রযুক্তই তাঁহার উপরে আঘাত পড়িল।
প্রহরীদুর্গ ০৯ ১/১৫ ২৭ অনু. ১০
যিহোবার দাস—‘আমাদের অধর্ম্মের নিমিত্ত বিদ্ধ হইলেন’
“মেষশাবক যেমন হত হইবার জন্য নীত হয়”
১০ যিশাইয় ৫৩:৭, ৮ পদ পড়ুন। যোহন বাপ্তাইজক যখন যিশুকে আসতে দেখেছিলেন, তখন তিনি সবিস্ময়ে বলেছিলেন: “ঐ দেখ, ঈশ্বরের মেষশাবক, যিনি জগতের পাপভার লইয়া যান।” (যোহন ১:২৯) যিশুকে মেষশাবক হিসেবে উল্লেখ করার সময় যোহনের মনে হয়তো যিশাইয়ের বলা এই কথাগুলো ছিল: “মেষশাবক যেমন হত হইবার জন্য নীত হয়।” (যিশা. ৫৩:৭) “তিনি মৃত্যুর জন্য আপন প্রাণ ঢালিয়া দিলেন,” যিশাইয় ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন। (যিশা. ৫৩:১২) আগ্রহের বিষয় হল, যে-রাতে যিশু তাঁর মৃত্যুর স্মরণার্থ দিবস প্রবর্তন করেছিলেন, সেই রাতে তিনি ১১ জন বিশ্বস্ত প্রেরিতকে এক পানপাত্র দ্রাক্ষারস দিয়ে বলেছিলেন: “ইহা আমার রক্ত, নূতন নিয়মের রক্ত, যাহা অনেকের জন্য, পাপমোচনের নিমিত্ত, পাতিত হয়।”—মথি ২৬:২৮.
(যিশাইয় ৫৩:১১, ১২) তিনি আপন প্রাণের শ্রমফল দেখিবেন, তৃপ্ত হইবেন; আমার ধার্ম্মিক দাস আপনার জ্ঞান দিয়া অনেককে ধার্ম্মিক করিবেন, এবং তিনিই তাহাদের অপরাধ সকল বহন করিবেন। ১২ এই জন্য আমি মহানদিগের মধ্যে তাঁহাকে অংশ দিব, তিনি পরাক্রমীদের সহিত লুট বিভাগ করিবেন, কারণ তিনি মৃত্যুর জন্য আপন প্রাণ ঢালিয়া দিলেন, তিনি অধর্ম্মীদের সহিত গণিত হইলেন; আর তিনিই অনেকের পাপভার তুলিয়া লইয়াছেন, এবং অধর্ম্মীদের জন্য অনুরোধ করিতেছেন।
প্রহরীদুর্গ ০৯ ১/১৫ ২৮ অনু. ১৩
যিহোবার দাস—‘আমাদের অধর্ম্মের নিমিত্ত বিদ্ধ হইলেন’
দাস “অনেককে ধার্ম্মিক” করেন
১৩ যিশাইয় ৫৩:১১, ১২ পদ পড়ুন। তাঁর মনোনীত দাস সম্বন্ধে যিহোবা বলেন: “আমার ধার্ম্মিক দাস . . . অনেককে ধার্ম্মিক করিবেন।” কীভাবে? ১২ পদের শেষাংশ এর উত্তর সম্বন্ধে ধারণা দেয়। “আর তিনিই [দাস] . . . অধর্ম্মীদের জন্য অনুরোধ করিতেছেন।” আদমের সমস্ত বংশধর পাপী অর্থাৎ ‘অধর্ম্মী’ হয়ে জন্মেছে আর তাই তারা “পাপের বেতন” অর্থাৎ মৃত্যু লাভ করে। (রোমীয় ৫:১২; ৬:২৩) যিহোবা ও পাপী মানুষের মধ্যে সম্মিলন অপরিহার্য। যিশু পাপী মানবজাতির পক্ষে কীভাবে ‘অনুরোধ করিয়াছেন’ অথবা মধ্যস্থতা করেছেন, তা এই বলে যিশাইয়ের ভবিষ্যদ্বাণীর ৫৩ অধ্যায় সুন্দরভাবে বর্ণনা করে: “আমাদের শান্তিজনক শাস্তি তাঁহার উপরে বর্ত্তিল, এবং তাঁহার ক্ষত সকল দ্বারা আমাদের আরোগ্য হইল।”—যিশা. ৫৩:৫.
আধ্যাত্মিক রত্ন খুঁজে বের করুন
(যিশাইয় ৫৪:১) অয়ি বন্ধ্যে, অপ্রসূতে, তুমি আনন্দগান কর, অয়ি গর্ব্ভব্যথা-রহিতে, তুমি উচ্চৈঃস্বরে আনন্দগান কর, ও হর্ষনাদ কর; কেননা সধবার সন্তান অপেক্ষা অনাথার সন্তান অধিক, ইহা সদাপ্রভু কহেন।
এক “রূপক নাটক” আমাদের কাছে যার মূল্য রয়েছে
তা হলে, ‘স্বাধীনা’ সারা এবং তার পুত্র ইস্হাক কাকে চিত্রিত করেছিল? পৌল ইঙ্গিত করেছিলেন যে, “বন্ধ্যে” সারা ঈশ্বরের স্ত্রী, তাঁর সংগঠনের স্বর্গীয় অংশকে চিত্রিত করেছিল। এই স্বর্গীয় স্ত্রী এই অর্থে বন্ধ্যা ছিল যে, যিশু পৃথিবীতে আসার আগে, এখানে তার আত্মায় অভিষিক্ত কোনো “সন্তান” ছিল না। (গালাতীয় ৪:২৭; যিশাইয় ৫৪:১-৬) কিন্তু, সা.কা. ৩৩ সালের পঞ্চাশত্তমীর দিনে, এক দল নারী-পুরুষের ওপর পবিত্র আত্মা বর্ষিত হয়েছিল, যারা এর ফলে এই স্বর্গীয় স্ত্রীর সন্তান হিসেবে পুনরায় জন্মগ্রহণ করেছিল। এই সংগঠনের দ্বারা জন্মানো সন্তানদের ঈশ্বরের দত্তকপুত্র হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছিল এবং এক নতুন চুক্তির সম্পর্কের অধীনে তারা যিশু খ্রিস্টের সহদায়াদ হয়েছিল। (রোমীয় ৮:১৫-১৭) এই সন্তানদের একজন, প্রেরিত পৌল লিখতে পেরেছিলেন: “ঊর্দ্ধ্বস্থ যিরূশালেম স্বাধীনা, আর সে আমাদের জননী।”—গালাতীয় ৪:২৬.
(যিশাইয় ৫৭:১৫) কেননা যিনি উচ্চ ও উন্নত, যিনি অনন্তকালনিবাসী, যাঁহার নাম “পবিত্র”, তিনি এই কথা কহেন, আমি ঊর্দ্ধ্বলোকে ও পবিত্র স্থানে বাস করি, চূর্ণ ও নম্রাত্মা মনুষ্যের সঙ্গেও বাস করি, যেন নম্রদিগের আত্মাকে সঞ্জীবিত করি ও চূর্ণ লোকদের হৃদয়কে সঞ্জীবিত করি।
প্রহরীদুর্গ ০৫ ১০/১৫ ২৬ অনু. ৩
অকৃত্রিম নম্রতা গড়ে তোলার প্রচেষ্টা করুন
নম্রতার সর্বমহান উদাহরণ
৩ যিহোবা অননুসন্ধেয়ভাবে মহান এবং উচ্চ কিন্তু “সদাপ্রভুর প্রতি যাহাদের অন্তঃকরণ একাগ্র, তাহাদের পক্ষে আপনাকে বলবান দেখাইবার জন্য তাঁহার চক্ষু পৃথিবীর সর্ব্বত্র ভ্রমণ করে।” (২ বংশাবলি ১৬:৯) আর যিহোবা যখন সেইসমস্ত অবনত উপাসককে খুঁজে পান, যাদের হৃদয় বিভিন্ন পরীক্ষার কারণে ভেঙে গিয়েছে, তখন তিনি কী করেন? এক অর্থে, তিনি তাঁর পবিত্র আত্মার মাধ্যমে এই ধরনের ব্যক্তিদের সঙ্গে “বাস” করেন ‘যেন নম্রদিগের আত্মাকে সঞ্জীবিত করেন ও চূর্ণ লোকদের হৃদয়কে সঞ্জীবিত করেন।’ (যিশাইয় ৫৭:১৫) এভাবে, তার সঞ্জীবিত উপাসকরা আনন্দের সঙ্গে পুনরায় তাঁর সেবা করার জন্য সুসজ্জিভূত হয়। ঈশ্বরের ক্ষেত্রে তা কতই না নম্রতার বিষয়!
বাইবেল পাঠ
(যিশাইয় ৫৭:১-১১) ধার্ম্মিক বিনষ্ট হইতেছে, কিন্তু কেহ সে বিষয়ে মনোযোগ করে না; সাধু মনুষ্যগণকে চয়ন করা যাইতেছে, কিন্তু কেহ বিবেচনা করে না যে, বিপদের সম্মুখ হইতে ধার্ম্মিককে চয়ন করা যাইতেছে। ২ সে শান্তিতে প্রবেশ করে; সরলপথ-গামীরা প্রত্যেকে আপন আপন শয্যার উপরে বিশ্রাম করে। ৩ কিন্তু, হে গণিকার পুত্ত্রগণ, পরদারিকের ও বেশ্যার বংশ, তোমরা নিকটবর্ত্তী হইয়া এখানে আইস। ৪ তোমরা কাহাকে উপহাস কর? কাহাকে দেখিয়া মুখ বক্র ও জিহ্বা বাহির কর? তোমরা কি অধর্ম্মের সন্তান ও মিথ্যা কথার বংশ নও? ৫ তোমরা এলা বৃক্ষগণের মধ্যে সমুদয় হরিৎপর্ণ বৃক্ষের তলে [দেবকামে] জ্বলিয়া থাক, তোমরা নানা উপত্যকায় ও শৈল-দরীর তলে আপন আপন বালকগণকে বধ করিয়া থাক। ৬ উপত্যকার চিক্কণ প্রস্তর সকলের মধ্যে তোমার অংশ, সেইগুলিই তোমার অধিকার; তাহাদেরই উদ্দেশে তুমি পানীয় দ্রব্য ঢালিয়াছ, নৈবেদ্য উৎসর্গ করিয়াছ। ৭ এই সকলেতে আমি কি ক্ষান্ত হইব? তুমি উর্চ্চ ও তুঙ্গ পর্ব্বতের উপরে তোমার শয্যা পাতিয়াছ; সেই স্থানেও তুমি বলিদান করিতে উঠিয়াছিলে; ৮ আর তোমার স্মৃতিস্তম্ভ কবাটের ও চৌকাঠের পশ্চাতে রাখিয়াছ; কেননা তুমি আমাকে ছাড়িয়া আর এক জনকে পাইয়া বস্ত্র খুলিয়া খাটে উঠিয়াছ, আপন শয্যা বৃদ্ধি করিয়া উহাদের সহিত নিয়ম করিয়াছ, উহাদের শয্যা দেখিয়া তাহা ভালবাসিয়াছ। ৯ আর তুমি তৈল মাখিয়া রাজার নিকটে গমন করিয়াছিলে, প্রচুর সুগন্ধিদ্রব্য ব্যবহার করিয়াছিলে, দূরদেশে আপন দূতগণকে প্রেরণ করিয়াছিলে, এবং পাতাল পর্য্যন্ত আপনাকে অবনত করিয়াছিলে। ১০ তোমার যাতায়াতের আধিক্য প্রযুক্ত পথশ্রান্তা হইয়াছিলে, তথাপি ‘আশা নাই’ ইহা বল নাই; তোমার হস্তের নাড়ী টের পাইয়াছ, এজন্য তুমি ক্লান্তা হও নাই। ১১ বল দেখি, কাহা হইতে এমন ত্রাসযুক্তা ও ভীতা হইয়াছ যে, মিথ্যা কথা বলিতেছ, এবং আমাকে ভুলিয়া গিয়াছ, মনে স্থান দেও নাই? আমি কি চিরকালাবধি নীরব রহি নাই, তাই বুঝি আমাকে ভয় কর না?
ফেব্রুয়ারি ২০-২৬
ঈশ্বরের বাক্যের গুপ্তধন | যিশাইয় ৫৮-৬২
“সদাপ্রভুর প্রসন্নতার বৎসর ঘোষণা করুন”
(যিশাইয় ৬১:১, ২) প্রভু সদাপ্রভুর আত্মা আমাতে অধিষ্ঠান করেন, কেননা নম্রগণের কাছে সুসমাচার প্রচার করিতে সদাপ্রভু আমাকে অভিষেক করিয়াছেন; তিনি আমাকে প্রেরণ করিয়াছেন, যেন আমি ভগ্নান্তঃকরণ লোকদের ক্ষত বাঁধিয়া দিই; যেন বন্দি লোকদের কাছে মুক্তি, ও কারাবদ্ধ লোকদের কাছে কারামোচন প্রচার করি; ২ যেন সদাপ্রভুর প্রসন্নতার বৎসর ও আমাদের ঈশ্বরের প্রতিশোধের দিন ঘোষণা করি; যেন সমস্ত শোকার্ত্তকে সান্ত্বনা করি;
যিশাইয়ের ভবিষ্যদ্বাণী-২ ৩২২ অনু. ৪, ইংরেজি
সিয়োনে ধার্মিকতা অঙ্কুরিত হয়
“প্রসন্নতার বৎসর”
৪ যিশাইয় লেখেন: “প্রভু সদাপ্রভুর আত্মা আমাতে অধিষ্ঠান করেন, কেননা নম্রগণের কাছে সুসমাচার প্রচার করিতে সদাপ্রভু আমাকে অভিষেক করিয়াছেন; তিনি আমাকে প্রেরণ করিয়াছেন, যেন আমি ভগ্নান্তঃকরণ লোকদের ক্ষত বাঁধিয়া দিই; যেন বন্দি লোকদের কাছে মুক্তি, ও কারাবদ্ধ লোকদের কাছে কারামোচন প্রচার করি।” (যিশাইয় ৬১:১) সুসমাচার জানানোর জন্য কাকে নিযুক্ত করা হয়েছে? সম্ভবত, প্রথম ব্যক্তি হলেন যিশাইয়, যিনি বাবিলে থাকা বন্দিদের জন্য সুসমাচার লিখে রাখার বিষয়ে ঈশ্বরের দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়েছেন। কিন্তু, যিশু যখন যিশাইয়ের কথাগুলো নিজের প্রতি প্রয়োগ করেছিলেন, তখন তিনি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পরিপূর্ণতার প্রতি নির্দেশ করেছিলেন। (লূক ৪:১৬-২১) হ্যাঁ, মৃদুশীল ব্যক্তিদের কাছে সুসমাচার জানানোর জন্য যিশুকে পাঠানো হয়েছিল আর এই কারণে বাপ্তিস্মের সময়ে তাঁকে পবিত্র আত্মার দ্বারা অভিষিক্ত করা হয়েছিল।—মথি ৩:১৬, ১৭.
(যিশাইয় ৬১:৩, ৪) যেন সিয়োনের শোকার্ত্ত লোকদিগকে বর দিই, যেন তাহাদিগকে ভস্মের পরিবর্ত্তে শিরোভূষণ, শোকের পরিবর্ত্তে আনন্দতৈল, অবসন্ন আত্মার পরিবর্ত্তে প্রশংসারূপ পরিচ্ছদ দান করি; তাই তাহারা ধার্ম্মিকতা-বৃক্ষ ও সদাপ্রভুর রোপিত তাঁহার ভূষণার্থক উদ্যান বলিয়া আখ্যাত হইবে। ৪ তাহারা পুরাকালের ধ্বংসিত স্থান সকল নির্ম্মাণ করিবে, পূর্ব্বকালের উৎসন্ন স্থান সকল গাঁথিয়া তুলিবে, এবং ধ্বংসিত নগর, বহু পুরুষ পূর্ব্বের উৎসন্ন স্থান সকল নূতন করিবে।
যিশাইয়ের ভবিষ্যদ্বাণী-২ ৩২৬-৩২৭ অনু. ১৩-১৫, ইংরেজি
সিয়োনে ধার্মিকতা অঙ্কুরিত হয়
১৩ তেত্রিশ খ্রিস্টাব্দের পঞ্চাশত্তমীর দিন থেকে ঈশ্বর তাঁর নতুন জাতির অর্থাৎ ‘ঈশ্বরের ইস্রায়েলের’ আধ্যাত্মিক রাজ্যে একইরকম “ধার্ম্মিকতা-বৃক্ষ”—সাহসী অভিষিক্ত খ্রিস্টানদের—রোপণ করেছেন। (গালাতীয় ৬:১৬) শত শত বছর ধরে, এই ‘বৃক্ষের’ সংখ্যা ১,৪৪,০০০ হয়েছে, যে-বৃক্ষগুলো যিহোবা ঈশ্বরকে সৌন্দর্যমণ্ডিত বা গৌরবান্বিত করার জন্য ধার্মিক ফল উৎপন্ন করছে। (প্রকাশিত বাক্য ১৪:৩) বড়ো বড়ো ‘বৃক্ষের’ অবশিষ্টাংশ ১৯১৯ সাল থেকে সতেজ হয়ে উঠেছে, যখন ঈশ্বরের ইস্রায়েলের অবশিষ্টাংশকে যিহোবা সাময়িক নিষ্ক্রিয় অবস্থা থেকে পুনরুজ্জীবিত করেছেন। প্রচুর পরিমাণ আধ্যাত্মিক জল সরবরাহ করার মাধ্যমে যিহোবা প্রকৃতই ধার্মিক ও ফলদায়ী গাছপালার এক অরণ্য উৎপন্ন করেছেন।—যিশাইয় ২৭:৬.
১৪ ‘বৃক্ষের’ কাজের উপর জোর দিয়ে যিশাইয় আরও বলেন: “তাহারা পুরাকালের ধ্বংসিত স্থান সকল নির্ম্মাণ করিবে, পূর্ব্বকালের উৎসন্ন স্থান সকল গাঁথিয়া তুলিবে, এবং ধ্বংসিত নগর, বহু পুরুষ পূর্ব্বের উৎসন্ন স্থান সকল নূতন করিবে।” (যিশাইয় ৬১:৪) পারস্যরাজ কোরসের আদেশে বিশ্বস্ত যিহুদিরা বহু বছর ধরে বিধ্বস্ত অবস্থায় পড়ে থাকা যিরূশালেম ও এর মন্দির পুনর্নির্মাণ করার জন্য বাবিল থেকে যিরূশালেমে ফিরে গিয়েছিল। এ ছাড়া, ৩৩ খ্রিস্টাব্দের ও ১৯১৯ সালের পরবর্তী বছরগুলোতেও উল্লেখযোগ্য উপায়ে পুনর্স্থাপনের কাজ করা হয়েছে।
১৫ তেত্রিশ খ্রিস্টাব্দে, যখন যিশুকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল, তাঁর বিচার করা হয়েছিল ও তাঁকে হত্যা করা হয়েছিল, তখন তাঁর শিষ্যরা অত্যন্ত দুঃখিত হয়ে পড়েছিলেন। (মথি ২৬:৩১) কিন্তু, পুনরুত্থানের পর তিনি যখন তাদের সামনে আবির্ভূত হয়েছিলেন, তখন তাদের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন হয়েছিল। আর তাদের উপর পবিত্র আত্মা বর্ষণ করার পর, তারা “যিরূশালেমে, সমুদয় যিহূদীয়া ও শমরিয়া দেশে, এবং পৃথিবীর প্রান্ত পর্য্যন্ত” সুসমাচার প্রচার কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েছিলেন। (প্রেরিত ১:৮) এভাবে তারা সত্য উপাসনা পুনর্স্থাপন করতে শুরু করেছিলেন। একইভাবে, ১৯১৯ সাল থেকে যিশু খ্রিস্ট তাঁর অভিষিক্ত ভাইদের অবশিষ্টাংশের মাধ্যমে “বহু পুরুষ পূর্ব্বের উৎসন্ন স্থান সকল” পুনর্নির্মাণ করেছেন। শত শত বছর ধরে খ্রিস্টীয়জগতের পাদরিরা যিহোবা সম্বন্ধে জ্ঞান প্রদান করতে ব্যর্থ হয়েছেন, এর স্থলে মানুষের তৈরি পরম্পরাগত রীতিনীতি ও অশাস্ত্রীয় মতবাদ শিক্ষা দিয়েছেন। অভিষিক্ত খ্রিস্টানরা তাদের মণ্ডলীগুলোকে মিথ্যা ধর্মের দ্বারা কলুষিত ছিল এমন সমস্ত অভ্যাস থেকে সম্পূর্ণরূপে মুক্ত করেছেন, যাতে সত্য উপাসনা পুনর্স্থাপনের কাজ এগিয়ে যেতে পারে। আর তারা এমন এক অভিযান শুরু করেছেন, যা সর্বকালের সর্ববৃহৎ সাক্ষ্যদান অভিযান বলে প্রমাণিত হয়েছে।—মার্ক ১৩:১০.
(যিশাইয় ৬১:৫, ৬) আর বিদেশিগণ দাঁড়াইয়া তোমাদের পাল চরাইবে, বিজাতি-সন্তানেরা তোমাদের শস্যক্ষেত্রের কৃষক ও তোমাদের দ্রাক্ষাক্ষেত্রের পাইটকারী হইবে। ৬ কিন্তু তোমরা সদাপ্রভুর যাজক বলিয়া আখ্যাত হইবে, লোকে তোমাদিগকে আমাদের ঈশ্বরের পরিচারক বলিবে; তোমরা জাতিগণের ঐশ্বর্য্য ভোগ করিবে, ও তাহাদের প্রতাপে শ্লাঘা করিবে।
প্রহরীদুর্গ ১২ ১২/১৫ ২৫ অনু. ৫-৬
“প্রবাসী” ব্যক্তিরা সত্য উপাসনায় একতাবদ্ধ
৫ অন্যদিকে, কেউ হয়তো যিশাইয় বইয়ের ৬১ অধ্যায় সম্বন্ধে বলতে পারেন, যেখানে এমন একটা ভবিষ্যদ্বাণী রয়েছে, যা খ্রিস্টীয় মণ্ডলীতে পরিপূর্ণ হচ্ছে। এই অধ্যায়ের ৬ পদ সেই ব্যক্তিদের সম্বন্ধে উল্লেখ করে, যারা “সদাপ্রভুর যাজক” হিসেবে সেবা করবে। কিন্তু, ৫ পদ সেই “বিজাতি-সন্তানের” বা বিদেশিদের সম্বন্ধে বলে, যারা সেই ‘যাজকদের’ সঙ্গে সহযোগিতা এবং কাজ করবে। এটাকে কীভাবে বোঝা যেতে পারে?
৬ আমরা বুঝতে পারি যে, “সদাপ্রভুর যাজক” হল অভিষিক্ত খ্রিস্টানরা, যারা “প্রথম পুনরুত্থানের” অংশী এবং যারা “ঈশ্বরের ও খ্রীষ্টের যাজক হইবে, এবং সেই সহস্র বৎসর তাঁহার সঙ্গে রাজত্ব করিবে।” (প্রকা. ২০:৬) এ ছাড়া, এমন অনেক অনুগত খ্রিস্টান আছে, যাদের পার্থিব আশা রয়েছে। যারা স্বর্গে সেবা করবে, তাদের সঙ্গে যদিও এরা কাজ করছে এবং ঘনিষ্ঠভাবে মেলামেশা করছে, তবুও রূপক অর্থে বললে, এরা হচ্ছে বিদেশি। তারা ‘সদাপ্রভুর যাজকদেরকে’ আনন্দের সঙ্গে সমর্থন করে এবং তাদের সঙ্গে কাজ করে এবং রূপকভাবে তাদের “কৃষক” এবং “দ্রাক্ষাক্ষেত্রের পাইটকারী” হিসেবে সেবা করে। হ্যাঁ, তারা ঈশ্বরের গৌরবের জন্য আধ্যাত্মিক ফল গড়ে তোলায় সাহায্য করে, লোকেদেরকে প্রশিক্ষণ দেয় এবং সংগ্রহ করে। বাস্তবিকপক্ষে, অভিষিক্ত ব্যক্তিরা এবং “আরও মেষ” সেই অকপট ব্যক্তিদের খুঁজে বের করে এবং এরপর তাদেরকে প্রেমের সঙ্গে পালন করে, যারা চিরকাল ঈশ্বরের সেবা করার জন্য আকাঙ্ক্ষী।—যোহন ১০:১৬.
আধ্যাত্মিক রত্ন খুঁজে বের করুন
(যিশাইয় ৬০:১৭) আমি পিত্তলের পরিবর্ত্তে সুবর্ণ, এবং লৌহের পরিবর্ত্তে রৌপ্য আনিব, কাষ্ঠের পরিবর্ত্তে পিত্তল, ও প্রস্তরের পরিবর্ত্তে লৌহ আনিব; আর আমি শান্তিকে তোমার অধ্যক্ষ করিব, ধার্ম্মিকতাকে তোমার শাসনকর্ত্তা করিব।
প্রহরীদুর্গ ১৫ ৭/১৫ ৯-১০ অনু. ১৪-১৭
আধ্যাত্মিক পরমদেশকে প্রসারিত করার জন্য কাজ করুন
১৪ আমাদের মণ্ডলীগুলোতে অনেক বয়স্ক ব্যক্তি আছেন, যারা বিভিন্ন রদবদল দেখেছেন আর এসব রদবদল যিহোবার সংগঠনের পার্থিব অংশকে আরও সুন্দর করে তুলেছে। তাদের সেই সময়ের কথা মনে আছে, যখন মণ্ডলীতে প্রাচীনগোষ্ঠীর পরিবর্তে একজন মণ্ডলীর দাস ছিলেন, যখন বিভিন্ন দেশে শাখা কমিটি-র পরিবর্তে একজন শাখার দাস ছিলেন কিংবা যখন যিহোবার সাক্ষিদের পরিচালকগোষ্ঠী-র পরিবর্তে ওয়াচ টাওয়ার সোসাইটি-র প্রেসিডেন্ট নির্দেশনা দিতেন। যদিও এই ভাইদের সঙ্গে সাহায্য করার জন্য বিশ্বস্ত সহযোগীরা ছিলেন, কিন্তু মণ্ডলীতে, শাখা অফিসে এবং বিশ্বপ্রধান কার্যালয়ে বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নেওয়ার দায়িত্ব মূলত একজন ব্যক্তিরই ছিল। ১৯৭০ সালের পর বিভিন্ন রদবদল করা হয়েছিল, যাতে এক জন ব্যক্তির পরিবর্তে প্রাচীনরা দলগতভাবে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।
১৫ এসব রদবদলের ফলে কেন সংগঠন উপকৃত হয়েছে? কারণ শাস্ত্র থেকে আরও ভালো বোধগম্যতা লাভ করার পর সেইসমস্ত রদবদল করা হয়েছিল। সমস্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য একজন ব্যক্তির পরিবর্তে যিহোবা যে-প্রাচীনদের বা ‘মনুষ্যদিগের নানা বর’ জুগিয়েছেন, তাদের সকলের উত্তম গুণাবলি থেকে সংগঠন উপকৃত হচ্ছে।—ইফি. ৪:৮; হিতো. ২৪:৬.
১৬ সম্প্রতি আমাদের সাহিত্যাদিতে যে-সমস্ত রদবদল করা হয়েছে, সেই বিষয়ে একটু চিন্তা করুন। আমরা পরিচর্যায় সাহায্যকারী এবং আকর্ষণীয় বিভিন্ন প্রকাশনা অর্পণ করতে পারছি। এ ছাড়া, সুসমাচার প্রচার করার জন্য নতুন প্রযুক্তিকে আমরা যেভাবে ব্যবহার করছি, সেই বিষয়টাও চিন্তা করুন। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, jw.org ওয়েবসাইট অনেক লোকের কাছে পৌঁছে গিয়েছে, যাতে তারা প্রয়োজনীয় সাহায্য লাভ করতে পারে। এসব রদবদল দেখে আমরা বুঝতে পারি, লোকেদের প্রতি যিহোবার গভীর আগ্রহ রয়েছে এবং তিনি তাদের ভালোবাসেন।
১৭ এ ছাড়া, আমরা যাতে পারিবারিক উপাসনা অথবা ব্যক্তিগত অধ্যয়নের জন্য সময় আলাদা রাখতে পারি, সেইজন্য আমাদের সভাগুলোতে যে-রদবদল করা হয়েছে, সেটাও আমরা উপলব্ধি করি। আর আমাদের সম্মেলনের কার্যক্রমে যে-সমস্ত পরিবর্তন করা হচ্ছে, আমরা সেগুলোও উপলব্ধি করি। আমরা প্রায়ই বলে থাকি, প্রতি বছর সম্মেলনের কার্যক্রম আরও ভালো হচ্ছে! তা ছাড়া, আমাদের বিভিন্ন বাইবেল স্কুল থেকে আমরা প্রশিক্ষণ লাভ করে থাকি। আমরা এই স্কুলগুলোর জন্য কৃতজ্ঞ। এসব রদবদল থেকে এটা স্পষ্ট যে, যিহোবা তাঁর সংগঠনকে নির্দেশনা দিচ্ছেন এবং তিনি এই আধ্যাত্মিক পরমদেশকে দিন দিন আরও সুন্দর করে তুলছেন!
(যিশাইয় ৬১:৮, ৯) কেননা আমি সদাপ্রভু ন্যায়বিচার ভালবাসি, অধর্ম্মযুক্ত অপহরণ ঘৃণা করি; আর আমি সত্যে তাহাদের ক্রিয়ার ফল দিব, ও তাহাদের সহিত চিরস্থায়ী এক নিয়ম করিব। ৯ আর তাহাদের বংশ জাতিগণের মধ্যে, ও তাহাদের সন্তানগণ লোকবৃন্দের মধ্যে পরিচিত হইবে; দেখিবামাত্র সকলে তাহাদিগকে চিনিবে যে, তাহারা সদাপ্রভুর আশীর্ব্বাদপ্রাপ্ত বংশ।
যিশাইয় বইয়ের দ্বিতীয় বিভাগের প্রধান বিষয়গুলো
শাস্ত্রীয় প্রশ্নগুলোর উত্তর:
৬১:৮, ৯—“চিরস্থায়ী এক নিয়ম” বা চুক্তি কী আর “বংশ” কারা? এটা হল সেই নতুন চুক্তি, যা যিহোবা অভিষিক্ত খ্রিস্টানদের সঙ্গে সম্পাদন করেছেন। “বংশ” হচ্ছে “আরও মেষ”—সেই লক্ষ লক্ষ ব্যক্তিরা, যারা অভিষিক্তদের বার্তার প্রতি সাড়া দেয়।—যোহন ১০:১৬.
বাইবেল পাঠ
(যিশাইয় ৬২:১-১২) সিয়োনের নিমিত্ত আমি নীরব থাকিব না, যিরূশালেমের নিমিত্ত ক্ষান্ত থাকিব না, যাবৎআলোকের ন্যায় তাহার ধার্ম্মিকতা, জ্বলন্ত প্রদীপের ন্যায় তাহার পরিত্রাণ উদিত না হয়। ২ আর জাতিগণ তোমার ধার্ম্মিকতা, ও সমস্ত রাজা তোমার প্রতাপ দর্শন করিবে; এবং তুমি এক নূতন নামে আখ্যাত হইবে, যাহা সদাপ্রভুর মুখ নির্ণয় করিবে। ৩ আর তুমি সদাপ্রভুর হস্তস্থিত ভূষণার্থক মুকুট, তোমার ঈশ্বরের করতলস্থিত রাজকিরীট হইবে। ৪ লোকে তোমাকে আর পরিত্যক্তা বলিবে না, এবং তোমার ভূমিকে আর ধ্বংসস্থান বলিবে না; কিন্তু তুমি হিফ্সীবা [উহাতে আমার প্রীতি], ও তোমার ভূমি বিয়ূলা [বিবাহিতা] নামে আখ্যাতা হইবে? কেননা সদাপ্রভু তোমাতে প্রীত, এবং তোমার ভূমি বিবাহিতা হইবে। ৫ বস্তুতঃ যুবক যেমন কুমারীকে বিবাহ করে, তেমনি তোমার পুত্ত্রগণ তোমাকে বিবাহ করিবে; এবং বর যেমন কন্যাতে আমোদ করে, তেমনি তোমার ঈশ্বর তোমাতে আমোদ করিবেন। ৬ হে যিরূশালেম, আমি তোমার প্রাচীরের উপরে প্রহরিগণকে নিযুক্ত করিয়াছি; তাহারা কি দিন কি রাত্রি কদাচ নীরব থাকিবে না। ৭ তোমরা, যাহারা সদাপ্রভুকে স্মরণ করাইয়া থাক, তোমরা ক্ষান্ত থাকিও না, এবং তাঁহাকেও ক্ষান্ত থাকিতে দিও না, যে পর্য্যন্ত তিনি যিরূশালেমকে স্থাপন না করেন, ও পৃথিবীর মধ্যে প্রশংসার পাত্র না করেন। ৮ সদাপ্রভু আপন দক্ষিণ হস্ত ও আপন বলবান্বাহু তুলিয়া শপথ করিয়াছেন, নিশ্চয় আমি অন্নের নিমিত্ত তোমার শত্রুদিগকে তোমার গোম আর দিব না, এবং বিজাতিসন্তানেরা তোমার পরিশ্রম দ্বারা প্রস্তুত তোমার দ্রাক্ষারস আর পান করিতে পাইবে না; ৯ কিন্তু যাহারা উহা সঞ্চয় করিবে, তাহারাই ভোজন করিবে, আর সদাপ্রভুর প্রশংসা করিবে; এবং যাহারা ইহা সংগ্রহ করিবে, তাহারাই আমার পবিত্র প্রাঙ্গণে পান করিবে। ১০ তোমরা অগ্রসর হও, পুরদ্বার দিয়া অগ্রসর হও, লোকদের জন্য পথ প্রস্তুত কর, উচ্চ কর, রাজপথ উচ্চ কর, প্রস্তর সকল সরাইয়া ফেল, জাতিগণের জন্য পতাকা তুলিয়া ধর। ১১ দেখ, সদাপ্রভু পৃথিবীর প্রান্ত পর্য্যন্ত এই রব শুনাইয়াছেন, তোমরা সিয়োন-কন্যাকে বল, দেখ, তোমার পরিত্রাণ উপস্থিত; দেখ, তাঁহার সঙ্গে তাঁহার [দাতব্য] বেতন আছে, তাঁহার অগ্রে তাঁহার [দাতব্য] পুরস্কার আছে। ১২ আর তাহাদিগকে বলা যাইবে, ‘পবিত্র প্রজা’, ‘সদাপ্রভুর মুক্ত লোক’; এবং তোমাকে বলা যাইবে, ‘অন্বেষিতা’, ‘অপরিত্যক্তা নগরী’।
ফেব্রুয়ারি ২৭–মার্চ ৫
ঈশ্বরের বাক্যের গুপ্তধন | যিশাইয় ৬৩-৬৬
“নতুন আকাশমণ্ডল ও নতুন পৃথিবী প্রচুর আনন্দ নিয়ে আসবে”
(যিশাইয় ৬৫:১৭) কারণ দেখ, আমি নূতন আকাশমণ্ডলের ও নূতন পৃথিবীর সৃষ্টি করি; এবং পূর্ব্বে যাহা ছিল, তাহা স্মরণে থাকিবে না, আর মনে পড়িবে না।
যিশাইয়ের ভবিষ্যদ্বাণী-২ ৩৮৩ অনু. ২৩, ইংরেজি
“আমি যাহা সৃষ্টি করি, তোমরা তাহাতে চিরকাল . . . উল্লাস কর”
২৩ প্রকাশিত বাক্য বই একটা দর্শন সম্বন্ধে বর্ণনা করে, যে-দর্শনে প্রেরিত যোহন যিহোবার আসন্ন দিন দেখেছিলেন, যখন এই বিধিব্যবস্থা আর থাকবে না। এরপর, শয়তানকে অগাধলোকে বদ্ধ রাখা হবে। (প্রকাশিত বাক্য ১৯:১১–২০:৩) এই বর্ণনার পর যোহন যিশাইয়ের ভবিষ্যদ্বাণীমূলক কথাগুলো পুনরাবৃত্তি করেন: “আমি ‘এক নূতন আকাশ ও এক নূতন পৃথিবী’ দেখিলাম।” এই চমৎকার দর্শন সম্বন্ধে তুলে ধরার পর এই বিবরণের পরবর্তী পদগুলো সেই সময় সম্বন্ধে জানায়, যখন যিহোবা ঈশ্বর এই পৃথিবীর পরিস্থিতি আরও ভালো করার জন্য আমূল পরিবর্তন করবেন। (প্রকাশিত বাক্য ২১:১, ৩-৫) স্পষ্টতই, “নূতন আকাশমণ্ডলের ও নূতন পৃথিবীর” বিষয়ে যিশাইয়ের প্রতিজ্ঞা ঈশ্বরের নতুন জগতে অপূর্ব উপায়ে পরিপূর্ণ হবে! নতুন স্বর্গীয় সরকারের অধীনে এক নতুন পার্থিব সমাজ, আধ্যাত্মিক ও আক্ষরিক পরমদেশ উপভোগ করবে। “পূর্ব্বে যাহা ছিল, তাহা [অসুস্থতা, কষ্ট ও মানুষেরা মুখোমুখি হয় এমন অন্যান্য বিপর্যয়] স্মরণে থাকিবে না, আর মনে পড়িবে না,” এই প্রতিজ্ঞা সত্যিকার অর্থেই সান্ত্বনাদায়ক। সেই সময়ে আমাদের যা-কিছু মনে পড়বে, সেগুলো আমাদের অনেক দুঃখ বা ব্যথা দেবে না, যা বর্তমানে অনেকের হৃদয়কে ভারগ্রস্ত করে।
(যিশাইয় ৬৫:১৮, ১৯) কিন্তু আমি যাহা সৃষ্টি করি, তোমরা তাহাতে চিরকাল আমোদ ও উল্লাস কর; কারণ দেখ, আমি যিরূশালেমকে উল্লাসভূমি ও তাহার প্রজাদিগকে আনন্দ-ভূমি করিয়া সৃষ্টি করি। ১৯ আমি যিরূশালেমে উল্লাস করিব, আমার প্রজাগণে আমোদ করিব; এবং তাহার মধ্যে রোদনের শব্দ কি ক্রন্দনের শব্দ আর শুনা যাইবে না।
যিশাইয়ের ভবিষ্যদ্বাণী-২ ৩৮৪ অনু. ২৫, ইংরেজি
“আমি যাহা সৃষ্টি করি, তোমরা তাহাতে চিরকাল . . . উল্লাস কর”
২৫ বর্তমানেও যিহোবা যিরূশালেমকে এক “উল্লাসভূমি” করেন। কীভাবে? ইতিমধ্যেই আমরা যেমন দেখেছি, নতুন আকাশমণ্ডল বা স্বর্গীয় সরকার ১৯১৪ সালে অস্তিত্বে এসেছে আর এতে অবশেষে ১,৪৪,০০০ সহ-শাসক অংশী হবেন। এই ব্যক্তিদের ভবিষ্যদ্বাণীমূলকভাবে “নূতন যিরূশালেম” হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। (প্রকাশিত বাক্য ২১:২) এই নতুন যিরূশালেম সম্বন্ধে ঈশ্বর বলেন: “দেখ, আমি যিরূশালেমকে উল্লাসভূমি ও তাহার প্রজাদিগকে আনন্দ-ভূমি করিয়া সৃষ্টি করি।” ঈশ্বর নতুন যিরূশালেমের মাধ্যমে বাধ্য মানবজাতির উপর অপরিমেয় আশীর্বাদ বর্ষণ করবেন। রোদনের বা ক্রন্দনের শব্দ আর শোনা যাবে না কারণ যিহোবা “[আমাদের] মনোবাঞ্ছা সকল পূর্ণ করিবেন।”—গীতসংহিতা ৩৭:৩, ৪.
(যিশাইয় ৬৫:২১-২৩) আর লোকেরা গৃহ নির্ম্মাণ করিয়া তাহার মধ্যে বসতি করিবে, দ্রাক্ষাক্ষেত্র প্রস্তুত করিয়া তাহার ফল ভোগ করিবে। ২২ তাহারা গৃহ নির্ম্মাণ করিলে অন্যে বাস করিবে না, তাহারা রোপণ করিলে অন্যে ভোগ করিবে না; বস্তুতঃ আমার প্রজাদের আয়ু বৃক্ষের আয়ুর তুল্য হইবে, এবং আমার মনোনীত লোকেরা দীর্ঘকাল আপন আপন হস্তের শ্রমফল ভোগ করিবে। ২৩ তাহারা বৃথা পরিশ্রম করিবে না, বিহ্বলতার নিমিত্ত সন্তানের জন্ম দিবে না, কারণ তাহারা সদাপ্রভুর আশীর্ব্বাদপ্রাপ্ত বংশ, ও তাহাদের সন্তানগণ তাহাদের সহবর্ত্তী হইবে।
প্রহরীদুর্গ ১২ ৯/১৫ ৯ অনু. ৪-৫
হাজার বছর এবং এর পরও শান্তি!
‘লোকেরা গৃহ নির্ম্মাণ করিবে, দ্রাক্ষাক্ষেত্র প্রস্তুত করিবে’
৪ কেই-বা না চায় যে, তার নিজের একটা বাড়ি থাকুক, যেখানে তিনি এবং তার পরিবার সুরক্ষা ও নিরাপদ বোধ করতে পারেন? কিন্তু, বর্তমান জগতে পর্যাপ্ত বাসস্থান এক গুরুতর সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। লোকেরা ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় গাদাগাদি করে বাস করে। অনেককে কোনোরকমে অস্থায়ী কুঁড়ে ঘরে এবং শহরের বস্তি এলাকায় বাস করতে হয়। নিজেদের একটা বাড়ি থাকার স্বপ্ন কেবল এক স্বপ্নই থেকে যায়।
৫ রাজ্য শাসনের অধীনে, নিজের বাড়ি থাকার বিষয়ে প্রত্যেক অধিবাসীর আকাঙ্ক্ষা পরিপূর্ণ হবে কারণ যিশাইয়ের মাধ্যমে এই ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছিল: “লোকেরা গৃহ নির্ম্মাণ করিয়া তাহার মধ্যে বসতি করিবে, দ্রাক্ষাক্ষেত্র প্রস্তুত করিয়া তাহার ফল ভোগ করিবে।” (যিশা. ৬৫:২১) তবে, নিজের একটা বাড়ি থাকাই একমাত্র প্রত্যাশা নয়। কারণ, বর্তমানে কেউ কেউ নিজেদের বাড়িতে আর এমনকী বিশাল অট্টালিকাতে অথবা বিশাল জায়গা নিয়ে সেখানে বাস করে। কিন্তু, সবসময়ই এইরকম ভয় থাকে যে, এই বুঝি টাকাপয়সার অভাবের কারণে বাড়িঘর হাতছাড়া হয়ে যাবে অথবা সেখানে চোর—অথবা আরও খারাপ কেউ—ঢুকে পড়বে। রাজ্য শাসনের অধীনে সমস্তকিছু কতই না ভিন্ন হবে! ভাববাদী মীখা লিখেছিলেন: “প্রত্যেকে আপন আপন দ্রাক্ষালতার ও আপন আপন ডুমুরবৃক্ষের তলে বসিবে; কেহ তাহাদিগকে ভয় দেখাইবে না।”—মীখা ৪:৪.
আধ্যাত্মিক রত্ন খুঁজে বের করুন
(যিশাইয় ৬৩:৫) আমি দেখিলাম, কিন্তু সহকারী কেহ ছিল না; আমি চমকিত হইলাম, কেননা সহায় কেহ ছিল না; তাই আমারই বাহু আমার জন্য পরিত্রাণ সাধন করিল, ও আমার কোপই আমাকে তুলিয়া ধরিল।
যিশাইয় বইয়ের দ্বিতীয় বিভাগের প্রধান বিষয়গুলো
৬৩:৫—ঈশ্বরের কোপ কীভাবে তাঁকে তুলে ধরে বা সমর্থন করে? ঈশ্বরের কোপ হল এক নিয়ন্ত্রিত আবেগ—তাঁর ধার্মিক ক্রোধ। তাঁর কোপ তাঁকে তাঁর ধার্মিক বিচার সম্পাদন করতে সমর্থন করে ও প্রেরণা দেয়।
(যিশাইয় ৬৪:৮) কিন্তু এখন, হে সদাপ্রভু, তুমি আমাদের পিতা; আমরা মৃত্তিকা, আর তুমি আমাদের কুম্ভকার; আমরা সকলে তোমার হস্তকৃত বস্তু।
প্রহরীদুর্গ ১৩ ৬/১৫ ২৫ অনু. ৩-৫
যিহোবার শাসন যেন আপনাকে গঠন করে
কুম্ভকার যেভাবে তাঁর ক্ষমতা ব্যবহার করেন
৩ ব্যক্তি-বিশেষ এবং বিভিন্ন জাতির ওপর যিহোবার ক্ষমতাকে দৃষ্টান্তের সাহায্যে বর্ণনা করে যিশাইয় ৬৪:৮ পদ বলে: “হে সদাপ্রভু, তুমি আমাদের পিতা; আমরা মৃত্তিকা, আর তুমি আমাদের কুম্ভকার; আমরা সকলে তোমার হস্তকৃত বস্তু।” মাটি দিয়ে তার পছন্দমতো একটা পাত্র গঠন করার পূর্ণ ক্ষমতা একজন কুম্ভকারের রয়েছে। এর ওপর মাটির কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। মানুষ এবং ঈশ্বরের বেলায়ও একই বিষয় বলা যায়। উপযুক্তভাবে মানুষ ঈশ্বরের সঙ্গে তর্ক করতে পারে না, যেমন মাটি সেই কুম্ভকারের সঙ্গে করতে পারে না, যিনি মাটিকে আকার দান করেন।—পড়ুন, যিরমিয় ১৮:১-৬.
৪ যিহোবা প্রাচীন ইস্রায়েলের কাছে তাঁর ক্ষমতা প্রকাশ করার জন্য একজন কুম্ভকার মাটিকে যেভাবে গঠন করেন, সেটা তুলে ধরেছিলেন। তবে, এখানে এক উল্লেখযোগ্য পার্থক্য রয়েছে। একজন কুম্ভকার সাধারণত মাটি দিয়ে এমন পাত্র তৈরি করে থাকেন, যেটা তিনি তৈরি করতে সমর্থ। যিহোবা কি নিজের ইচ্ছাখুশিমতো লোকেদের বা বিভিন্ন জাতিকে গঠন করেন, কিছু লোক বা জাতিকে উত্তম এবং অন্য লোক বা জাতিকে মন্দ হিসেবে গঠন করেন? বাইবেলের উত্তর হল, না। যিহোবা মানবজাতিকে অত্যন্ত মূল্যবান এক উপহার দিয়েছেন আর তা হল, স্বাধীন ইচ্ছা। তিনি তাঁর সার্বভৌম ক্ষমতাকে এমন উপায়ে ব্যবহার করেন না, যা এই উপহারকে মূল্যহীন করে দেয়। মানুষের অবশ্যই সৃষ্টিকর্তা, যিহোবার দ্বারা গঠিত হওয়া বেছে নিতে হবে।—পড়ুন, যিরমিয় ১৮:৭-১০.
৫ কিন্তু, কী হবে যদি মানুষ একগুঁয়েভাবে মহান কুম্ভকারের দ্বারা গঠিত হতে প্রত্যাখ্যান করে? সেই সময়, তিনি কীভাবে তাঁর ঐশিক ক্ষমতা ব্যবহার করেন? কোনো নির্দিষ্ট উদ্দেশ্য সাধনের ক্ষেত্রে অনুপযুক্ত হয়ে পড়লে সেই মাটিকে কী করা হয়, সেটা চিন্তা করুন। আসলে, কুম্ভকার তা দিয়ে হয় অন্য ধরনের কোনো পাত্র তৈরি করতে পারেন অথবা চাইলে তা ফেলে দিতে পারেন! কিন্তু, মাটি যখন ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে পড়ে, তখন দোষ সাধারণত কুম্ভকারের। তবে, মহান কুম্ভকারের ক্ষেত্রে বিষয়টা কখনো এমন নয়। (দ্বিতীয়. ৩২:৪) একজন ব্যক্তি যখন যিহোবার দ্বারা গঠিত হওয়ার বিষয়টা প্রত্যাখ্যান করেন, তখন দোষ সবসময় সেই ব্যক্তির। যিহোবা মানুষের ওপর তাঁর কুম্ভকারতুল্য অধিকার বা ক্ষমতা ব্যবহার করেন আর তা তিনি তাঁর দ্বারা গঠিত হওয়ার প্রতি মানুষ যেভাবে সাড়া দেয়, সেটার ওপর ভিত্তি করে তাঁর আচরণকে রদবদল করার মাধ্যমে করে থাকেন। যারা সঠিকভাবে সাড়া দেয়, তাদেরকে উপকারী হিসেবে গঠন করা হয়। উদাহরণস্বরূপ, অভিষিক্ত খ্রিস্টানরা হল ‘দয়াপাত্র’ যাদেরকে “সমাদরের পাত্র” হিসেবে গঠন করা হয়েছে। অন্যদিকে, যারা একগুঁয়েভাবে ঈশ্বরের বিরোধিতা করে, তারা হল, ‘বিনাশার্থে পরিপক্ব ক্রোধপাত্র।’—রোমীয় ৯:১৯-২৩.
বাইবেল পাঠ
(যিশাইয় ৬৩:১-১০) উনি কে, যিনি ইদোম হইতে আসিতেছেন, রক্তরঞ্জিত বস্ত্র পরিয়া বস্ত্রা হইতে আসিতেছেন? উনি কে, যিনি আপন পরিচ্ছদে প্রতাপান্বিত, আপন শক্তির বাহুল্যে চলিয়া আসিতেছেন? ‘এ আমি, যিনি ধর্ম্মশীলতায় কথা বলেন, ও যিনি পরিত্রাণ করণে বলবান্।’ ২ আপনার পরিচ্ছদ রক্তমাখা কেন? আপনার বস্ত্র কুণ্ডে দ্রাক্ষাদলনকারীর বস্ত্রবৎ কেন? ৩ ‘আমি কুণ্ডের দ্রাক্ষা একাকী দলন করিয়াছি, জাতিগণের মধ্যে কেহই আমার সঙ্গে ছিল না। আমি ক্রোধে তাহাদিগকে দলন করিলাম, কোপভরে তাহাদিগকে মর্দ্দন করিলাম; আর তাহাদের রক্তের ছিটা আমার বস্ত্রে লাগিল, আমার সমস্ত পরিচ্ছদ কলঙ্কি করিলাম। ৪ কেননা প্রতিশোধের দিন আমার চিত্তে রহিয়াছে, ও আমার মুক্ত লোকদের বৎসর আসিল। ৫ আমি দেখিলাম, কিন্তু সহকারী কেহ ছিল না; আমি চমকিত হইলাম, কেননা সহায় কেহ ছিল না; তাই আমারই বাহু আমার জন্য পরিত্রাণ সাধন করিল, ও আমার কোপই আমাকে তুলিয়া ধরিল। ৬ আর আমি ক্রোধে জাতিগণকে দলন করিলাম, কোপভরে তাহাদিগকে মত্ত করিলাম, মৃত্তিকাতে তাহাদের রক্তপাত করিলাম।’ ৭ আমি সদাপ্রভুর নানাবিধ দয়া কীর্ত্তন করিব; সদাপ্রভু আমাদের যে সকল উপকার করিয়াছেন, এবং আপনার নানাবিধ করুণা ও প্রচুর দয়ানুসারে ইস্রায়েলকুলের যে প্রচুর মঙ্গল করিয়াছেন, তদনুসারে আমি সদাপ্রভুর প্রশংসা কীর্ত্তন করিব। ৮ কারণ তিনি কহিলেন, উহারা অবশ্য আমার প্রজা, উহারা এমন সন্তান, যাহারা মিথ্যা আচরণ করিবে না; এইরূপে তিনি তাহাদের ত্রাণকর্ত্তা হইলেন। ৯ তাহাদের সকল দুঃখে তিনি দুঃখিত হইতেন, তাঁহার শ্রীমুখস্বরূপ দূত তাহাদিগকে পরিত্রাণ করিতেন; তিনি আপন প্রেমে ও আপন স্নেহে তাহাদিগকে মুক্ত করিতেন, এবং পুরাকালের সমস্ত দিন তাহাদিগকে তুলিয়া বহন করিতেন। ১০ কিন্তু তাহারা বিদ্রোহী হইয়া তাঁহার পবিত্র আত্মাকে শোকাকুল করিত, তাহাতে তিনি ফিরিয়া তাহাদের শত্রু হইলেন, আপনি তাহাদের সহিত যুদ্ধ করিতে লাগিলেন।