পরিত্রাণের জন্য সাধারণ্যে ঘোষণা করুন
“যে কেউ যিহোবার নামে ডাকে, সে পরিত্রাণ পাবে।”—রোমীয় ১০:১৩, NW.
১. ইতিহাসব্যাপী কোন্ সতর্কবাণীগুলি ঘোষিত হয়ে এসেছে?
ইতিহাস বেশ কয়েকটি ‘যিহোবার দিন’ সম্বন্ধে বর্ণনা করে। নোহের দিনের জলপ্লাবন, সদোম ও ঘমোরা নগরের বিলুপ্তিকরণ এবং সা.কা.পূ. ৬০৭ আর সা.কা. ৭০ সালে যিরূশালেমের ধ্বংস ছিল যিহোবার মহৎ ও ভয়ঙ্কর দিন। ঐ দিনগুলি ছিল তাদের উপর বিচার নিয়ে আসার সময় যারা যিহোবার বিপক্ষে বিদ্রোহ করেছিল। (মালাখি ৪:৫; লূক ২১:২২) সেই দিনগুলিতে অনেকে তাদের দুষ্টতার জন্য ধ্বংস হয়েছিল। কিন্তু কিছু ব্যক্তি রক্ষা পেয়েছিল। দুষ্টদের আসন্ন বিপর্যয় সম্বন্ধে জানানো আর সৎহৃদয়বান ব্যক্তিদের পরিত্রাণের এক সুযোগ দেওয়ার জন্য, যিহোবা সতর্কবাণী ঘোষণা করিয়েছিলেন।
২, ৩. (ক) পঞ্চাশত্তমীর দিনে কোন্ ভবিষ্যদ্বাণীমূলক সতর্কবাণী উদ্ধৃত করা হয়েছিল? (খ) সা.কা ৩৩ সালের পঞ্চাশত্তমীর দিন থেকে যিহোবার নামে ডাকার জন্য কিসের প্রয়োজন ছিল?
২ সা.কা. ৭০ সালে যিরূশালেমের ধ্বংস এর একটি উল্লেখযোগ্য উদাহরণ। প্রায় ৯০০ বছর আগে, সেই ঘটনা সম্বন্ধে ভাববাণী করতে গিয়ে ভাববাদী যোয়েল লিখেছিলেন: “আমি আকাশে ও পৃথিবীতে অদ্ভুত লক্ষণ দেখাইব,—রক্ত, অগ্নি ও ধূমস্তম্ভ দেখাইব। সদাপ্রভুর ঐ মহৎ ও ভয়ঙ্কর দিনের আগমনের পূর্ব্বে সূর্য্য অন্ধকার ও চন্দ্র রক্ত হইয়া যাইবে।” এইধরনের ভয়ঙ্কর সময় থেকে কিভাবে একজন রক্ষা পেতে পারে? অনুপ্রাণিত হয়ে যোয়েল লিখেছিলেন: “যে কেহ সদাপ্রভুর [“যিহোবার,” “NW”] নামে ডাকিবে সেই রক্ষা পাইবে; কারণ যিহোবার বাক্যানুসারে সিয়োন পর্ব্বতে ও যিরূশালেমে রক্ষাপ্রাপ্ত দল থাকিবে, এবং পলাতক সকলের মধ্যে এমন লোক থাকিবে, যাহাদিগকে যিহোবা ডাকিবেন।”—যোয়েল ২:৩০-৩২.
৩ সা.কা. ৩৩ সালে পঞ্চাশত্তমীর দিনে প্রেরিত পিতর যিরূশালেমে, যিহূদী ও ধর্মান্তরিতদের একটি জনতার উদ্দেশ্যে বক্তৃতা দিয়েছিলেন এবং যোয়েলের ভবিষ্যদ্বাণী থেকে উদ্ধৃত করে দেখিয়েছিলেন যে তার শ্রোতারা তাদের দিনে এর এক পরিপূর্ণতা প্রত্যাশা করতে পারেন: “আমি উপরে আকাশে নানা অদ্ভুত লক্ষণ এবং নীচে পৃথিবীতে নানা চিহ্ন রক্ত, অগ্নি ও ধূম-বাষ্প দেখাইব। প্রভুর [“যিহোবার,” “NW”] সেই মহৎ ও প্রসিদ্ধ দিনের আগমনের পূর্ব্বে সূর্য্য অন্ধকার হইয়া যাইবে, চন্দ্র রক্ত হইয়া যাইবে; আর এইরূপ হইবে, যে কেহ প্রভুর [“যিহোবার,” “NW”] নামে ডাকিবে, সেই পরিত্রাণ পাইবে।” (প্রেরিত ২:১৬-২১) পিতরের কথা শ্রবণরত জনতা সকলে মোশির ব্যবস্থার অধীনস্থ ছিল আর তাই তারা যিহোবার নামটি জানত। পিতর ব্যাখ্যা করেছিলেন যে এখন থেকে যিহোবার নামে ডাকা আরও বেশি কিছুকে জড়িত করবে। উল্লেখযোগ্যভাবে, এটি যীশুর নামে বাপ্তাইজিত হওয়াকে অন্তর্ভুক্ত করেছিল, যিনি হত ও পরে অমর স্বর্গীয় জীবনে পুনরুত্থিত হয়েছিলেন।—প্রেরিত ২:৩৭, ৩৮.
৪. খ্রীষ্টানেরা চতুর্দিকে কোন্ বার্তা ঘোষণা করেছিলেন?
৪ পঞ্চাশত্তমীর দিন থেকে খ্রীষ্টানেরা পুনরুত্থিত যীশু সম্বন্ধে বিস্তারিতভাবে প্রচার করেছিলেন। (১ করিন্থীয় ১:২৩) তারা জানিয়েছিলেন যে মানুষেরা যিহোবা ঈশ্বরের দ্বারা আধ্যাত্মিক দত্তক পুত্র হিসাবে গৃহীত হতে এবং এক আধ্যাত্মিক জাতি নতুন “ঈশ্বরের ইস্রায়েলের” অংশী হতে পারেন যারা চতুর্দিকে ‘যিহোবার গুণকীর্ত্তন করবেন।’ (গালাতীয় ৬:১৬; ১ পিতর ২:৯) যারা মৃত্যু পর্যন্ত বিশ্বস্ত ছিলেন, তাঁরা যীশুর সহদায়াদ হিসাবে তাঁর স্বর্গীয় রাজ্যে অমর স্বর্গীয় জীবন লাভ করবেন। (মথি ২৪:১৩; রোমীয় ৮:১৫, ১৬; ১ করিন্থীয় ১৫:৫০-৫৪) এছাড়াও, এই খ্রীষ্টানদের যিহোবার আসন্ন মহৎ ও ভয়ঙ্কর দিন সম্বন্ধে ঘোষণা করতে হয়েছিল। তাদের যিহূদী সমাজকে সতর্ক করতে হয়েছিল যে তারা এমন এক ক্লেশ ভোগ করবে যা তখনও পর্যন্ত যিরূশালেম ও ঈশ্বরের স্বীকৃত লোকেদের উপর আসা যে কোন ক্লেশকে ছাপিয়ে যাবে। তৎসত্ত্বেও, রক্ষাপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা ছিলেন। কারা? যারা যিহোবার নামে ডেকেছিলেন।
“শেষ কালে”
৫. ভবিষ্যদ্বাণীর কোন্ পরিপূর্ণতাগুলি আজকে ঘটে চলেছে?
৫ বিভিন্নভাবে, তখনকার পরিস্থিতি আজকে আমরা যা দেখছি তার পূর্বাভাস দিয়েছিল। ১৯১৪ সাল থেকে, মানবজাতি এক বিশেষ সময়কালে বাস করে আসছে যেটিকে বাইবেল “শেষ সময়,” (“NW”) ‘যুগান্ত’ আর ‘শেষ কাল’ বলে উল্লেখ করেছে। (দানিয়েল ১২:১, ৪; মথি ২৪:৩-৮; ২ তীমথিয় ৩:১-৫, ১৩) আমাদের শতাব্দীতে নিষ্ঠুর যুদ্ধগুলি, লাগামহীন দৌরাত্ম্য আর সমাজ ও পরিবেশের ধ্বংসাত্মক অবস্থা বাইবেলের ভবিষ্যদ্বাণীর এক উল্লেখযোগ্য পরিপূর্ণতা সরবরাহ করেছে। এই সমস্তই যীশুর ভবিষ্যদ্বাণীকৃত চিহ্নগুলির অংশ যা ইঙ্গিত করে মানবজাতি যিহোবার সর্বশেষ, অবশ্যম্ভাবী ভয়ঙ্কর দিন অভিজ্ঞতা করতে চলেছে। এটি হর্মাগিদোনের যুদ্ধে সর্বোচ্চ সীমায় পৌঁছায় যা “মহাক্লেশ . . . যেরূপ জগতের আরম্ভ অবধি এ পর্য্যন্ত কখনও হয় নাই, কখনও হইবেও না” তার চরম পর্যায়।—মথি ২৪:২১; প্রকাশিত বাক্য ১৬:১৬.
৬. (ক) মৃদুশীল ব্যক্তিদের রক্ষা করার জন্য যিহোবা কিভাবে কাজ করে চলেছেন? (খ) কিভাবে পরিত্রাণ পাওয়া যায় সেই সম্বন্ধে পৌলের পরামর্শ আমরা কোথায় পাই?
৬ সেই বিপর্যয়ের দিন যতই নিকটবর্তী হচ্ছে, যিহোবা মৃদুশীল ব্যক্তিদের পরিত্রাণের জন্য কাজ করছেন। এই “শেষ সময়”-এ তিনি ঈশ্বরের আধ্যাত্মিক ইস্রায়েলের অবশিষ্ট ব্যক্তিদের একত্রিত করেছেন এবং ১৯৩০ সাল থেকে তাঁর পার্থিব দাসেদের একত্র করার প্রতি মনোযোগী হয়েছেন, যারা “প্রত্যেক জাতির ও বংশের ও প্রজাবৃন্দের ও ভাষার বিস্তর লোক, তাহা গণনা করিতে সমর্থ কেহ” নয়। একটি দল হিসাবে তারা জীবিত অবস্থায় “মহাক্লেশের মধ্য হইতে আসিয়াছে।” (প্রকাশিত বাক্য ৭:৯, ১৪) কিন্তু কিভাবে প্রত্যেক ব্যক্তি তাদের নিজ নিজ পরিত্রাণ নিশ্চিত করতে পারেন? প্রেরিত পৌল সেই প্রশ্নের উত্তর দেন। রোমীয় ১০ অধ্যায়ে তিনি পরিত্রাণের জন্য উত্তম পরামর্শ প্রদান করেন—যে পরামর্শ তার দিনে প্রযোজ্য ছিল এবং আবার আমাদের দিনেও প্রযোজ্য।
পরিত্রাণের জন্য প্রার্থনা
৭. (ক) রোমীয় ১০:১, ২ পদে কোন্ আশাকে চিহ্নিত করা হয়েছে? (খ) ঘোষণা করার জন্য যিহোবার এখন কেন আরও অধিক প্রসারিত “সুসমাচার” রয়েছে?
৭ পৌল যখন রোমীয় পুস্তকটি লেখেন, তখন ইতিমধ্যেই যিহোবা ইস্রায়েলকে একটি জাতি হিসাবে পরিত্যাগ করেছিলেন। তবুও, প্রেরিত দৃঢ়তার সাথে বলেছিলেন: “আমার হৃদয়ের সুবাসনা এবং তাহাদের জন্য ঈশ্বরের কাছে বিনতি এই, যেন তাহাদের পরিত্রাণ হয়।” তার আশা ছিল যেন প্রত্যেক যিহূদী ঈশ্বরের ইচ্ছা সম্বন্ধীয় যথার্থ জ্ঞান লাভ করতে পারে যা তাদের পরিত্রাণ লাভ করার দিকে পরিচালিত করবে। (রোমীয় ১০:১, ২) এছাড়াও, যিহোবা মানবজাতির সমগ্র জগৎকে পরিত্রাণ দিতে আকাঙ্ক্ষী যারা যোহন ৩:১৬ পদে যেমন ইঙ্গিত করা হয়েছে সেই অনুযায়ী বিশ্বাস অনুশীলন করেন: “ঈশ্বর জগৎকে এমন প্রেম করিলেন যে, আপনার একজাত পুত্ত্রকে দান করিলেন, যেন, যে কেহ তাঁহাতে বিশ্বাস করে, সে বিনষ্ট না হয়, কিন্তু অনন্ত জীবন পায়।” যীশুর মুক্তির মূল্যরূপ বলিদান সেই মহান পরিত্রাণের পথ খুলে দিয়েছিল। নোহের দিন ও এর পরের অন্যান্য বিচারের দিনগুলির মত ঘোষণা করার জন্য যিহোবার “সুসমাচার” রয়েছে যা পরিত্রাণের পথকে নির্দেশ করে।—মার্ক ১৩:১০, ১৯, ২০.
৮. পৌলের নমুনা অনুকরণ করে সত্য খ্রীষ্টানেরা কাদের প্রতি আজকে সুবাসনা প্রদর্শন করেন এবং কিভাবে?
৮ যিহূদী ও পরজাতি উভয়ের প্রতি তার নিজের সুবাসনা দেখিয়ে পৌল প্রতিটি সুযোগে প্রচার করেছিলেন। তিনি “যিহূদী ও গ্রীকদিগকে বিশ্বাস করিতে প্রবৃত্তি দিতেন।” তিনি ইফিষের প্রাচীনদের বলেছিলেন: “কোন হিতকথা গোপন না করিয়া তোমাদিগকে সকলই জানাইতে, এবং সাধারণ্যে ও ঘরে ঘরে শিক্ষা দিতে, সঙ্কুচিত হই নাই; ঈশ্বরের প্রতি মনপরিবর্ত্তন এবং আমাদের প্রভু যীশুর প্রতি বিশ্বাস বিষয়ে যিহূদী ও গ্রীকদের নিকটে সাক্ষ্য দিয়া আসিতেছি।” (প্রেরিত ১৮:৪; ২০:২০, ২১) একইভাবে, যিহোবার সাক্ষীরাও নিজেদের প্রচার কাজে নিয়োজিত রাখে, কেবল নামধারী খ্রীষ্টানদের কাছে নয় কিন্তু সমস্ত লোকেদের কাছে এমনকি “পৃথিবীর প্রান্ত পর্য্যন্ত।”—প্রেরিত ১:৮; ১৮:৫.
“বিশ্বাসেরই সেই ‘বার্ত্তা’” স্বীকার করা
৯. (ক) রোমীয় ১০:৮, ৯ পদ কোন্ ধরনের বিশ্বাসের বিষয়ে উৎসাহিত করে? (খ) কখন এবং কিভাবে আমাদের বিশ্বাসকে স্বীকার করা উচিত?
৯ পরিত্রাণের জন্য স্থায়ী বিশ্বাসের প্রয়োজন। দ্বিতীয় বিবরণ ৩০:১৪ পদ উদ্ধৃত করে পৌল ঘোষণা করেছিলেন: “‘সেই বার্ত্তা তোমার নিকটবর্ত্তী, তোমার মুখে ও তোমার হৃদয়ে রহিয়াছে,’ অর্থাৎ বিশ্বাসেরই সেই বার্ত্তা, যাহা আমরা প্রচার করি।” (রোমীয় ১০:৮) আমরা যখন “বিশ্বাসেরই সেই ‘বার্ত্তা’” প্রচার করি এটি আমাদের হৃদয়ে আরও গভীরভাবে ছাপ ফেলে। পৌলের ক্ষেত্রেও তাই হয়েছিল আর তার পরবর্তী বাক্যগুলি অন্যদের সাথে বিশ্বাস বন্টনের ক্ষেত্রে তার মত হওয়ার জন্য আমাদের স্থিরসংকল্পকে শক্তিশালী করতে পারে: “তুমি যদি ‘মুখে’ যীশুকে প্রভু বলিয়া স্বীকার কর, এবং ‘হৃদয়ে’ বিশ্বাস কর যে, ঈশ্বর তাঁহাকে মৃতগণের মধ্য হইতে উত্থাপন করিয়াছেন, তবে পরিত্রাণ পাইবে।” (রোমীয় ১০:৯) এই স্বীকারোক্তি কেবলমাত্র অন্যদের সামনে বাপ্তিস্মের সময় করলেই হবে না, বরঞ্চ অবশ্যই এটি হবে ক্রমাগতভাবে স্বীকার করে চলা, সত্যের সমস্ত উত্তম দিকগুলি সম্বন্ধে সাধারণ্যে উদ্যমী সাক্ষ্যদান করা। এইধরনের সত্য সার্বভৌম প্রভু যিহোবার মহামূল্যবান নাম; আমাদের মশীহ রাজা ও মুক্তিদাতা প্রভু যীশু খ্রীষ্ট; এবং চমৎকার রাজ্য প্রতিজ্ঞাগুলির উপর কেন্দ্রীভূত।
১০. রোমীয় ১০:১০, ১১ পদের সাথে মিল রেখে “বিশ্বাসেরই সেই ‘বার্ত্তা’” কিভাবে আমাদের বহন করা উচিত?
১০ যারা “বিশ্বাসেরই সেই ‘বার্ত্তা’” গ্রহণ ও প্রয়োগ না করে তাদের কারও পরিত্রাণ হবে না, যেমন প্রেরিত বলে চলেন: “লোকে হৃদয়ে বিশ্বাস করে, ধার্ম্মিকতার জন্য, এবং মুখে স্বীকার করে, পরিত্রাণের জন্য। কেননা শাস্ত্র বলে, ‘যে কেহ তাঁহার উপরে বিশ্বাস করে, সে লজ্জিত হইবে না।’” (রোমীয় ১০:১০, ১১) আমাদের অবশ্যই “বিশ্বাসেরই সেই ‘বার্ত্তা’” সম্বন্ধে যথার্থ জ্ঞান অর্জন করতে এবং তা আমাদের হৃদয়ে ক্রমাগতভাবে প্রতিপালিত করতে হবে যেন আমরা অন্যদের তা বলতে প্রণোদিত হই। স্বয়ং যীশু আমাদের স্মরণ করিয়ে দেন: “কেননা যে কেহ এই কালের ব্যভিচারী ও পাপিষ্ঠ লোকদের মধ্যে আমাকে ও আমার বাক্যকে লজ্জার বিষয় জ্ঞান করে, মনুষ্যপুত্ত্র তাহাকে লজ্জার বিষয় জ্ঞান করিবেন, যখন তিনি পবিত্র দূতগণের সহিত আপন পিতার প্রতাপে আসিবেন।”—মার্ক ৮:৩৮.
১১. কতখানি বিস্তৃতভাবে সুসমাচার ঘোষিত হওয়া উচিত এবং কেন?
১১ ভাববাদী দানিয়েল যেমন ভাববাণী করেছিলেন যে এই শেষ সময়ে “যাহারা বুদ্ধিমান” তারা “বিতানের দীপ্তির ন্যায়” দেদীপ্যমান হবেন, যখন রাজ্যের সাক্ষ্য পৃথিবীর প্রান্ত পর্যন্ত প্রসারিত হবে। তারা “অনেককে ধার্মিকতার প্রতি ফিরায়” আর বাস্তবিকই প্রকৃত জ্ঞান প্রাচুর্যপূর্ণ হয়েছে কারণ যিহোবা এই শেষ সময় সম্বন্ধীয় ভবিষ্যদ্বাণীগুলির উপর যে কোন সময়ের চেয়ে আরও উজ্জ্বলভাবে আলোকসম্পাত করছেন। (দানিয়েল ১২:৩, ৪) যারা সত্য ও ধার্মিকতা ভালবাসে তাদের সকলের পরিত্রাণের জন্য এক অত্যাবশ্যকীয় বার্তা এখানে রয়েছে।
১২. কিভাবে রোমীয় ১০:১২ পদ, প্রকাশিত বাক্য ১৪:৬ পদে বর্ণিত দূতের কার্যভারের সাথে সম্পর্কযুক্ত?
১২ প্রেরিত পৌল আরও বলেন: “যিহূদী ও গ্রীকে কিছুই প্রভেদ নাই; কেননা সকলেরই একমাত্র প্রভু; যত লোক তাঁহাকে ডাকে, সেই সকলের পক্ষে তিনি ধনবান্।” (রোমীয় ১০:১২) আজকে অবশ্যই এমনকি সুদূর প্রসারিত বিশ্বব্যাপী পর্যায়ে “সুসমাচার” প্রচারিত হবে—সমস্ত লোকেদের কাছে, পৃথিবীর প্রান্ত পর্যন্ত। প্রকাশিত বাক্য ১৪:৬ পদে উল্লেখিত দূত আকাশের মধ্যপথে উড়ে চলেছেন আমাদের উপর “অনন্তকালীন সুসমাচার, . . . পৃথিবী-নিবাসীদিগকে, প্রত্যক জাতি ও বংশ ও ভাষা ও প্রজাবৃন্দকে” জানানোর দায়িত্বভার ন্যস্ত করে। যারা সাড়া প্রদান করেন তাদের এটি কিভাবে উপকৃত করবে?
যিহোবার নামে ডাকা
১৩. (ক) ১৯৯৮ সালে আমাদের বাৎসরিক শাস্ত্রপদটি কী? (খ) কেন আজকে এই বাৎসরিক শাস্ত্রপদটি সর্বাপেক্ষা উপযুক্ত?
১৩ যোয়েল ২:৩২ পদ উদ্ধৃত করে পৌল ঘোষণা করেন: “যে কেউ যিহোবার নামে ডাকে, সে পরিত্রাণ পাবে।” (রোমীয় ১০:১৩) এটি কতই না উপযুক্ত যে ঐ শব্দগুলি যিহোবার সাক্ষীদের ১৯৯৮ সালের বাৎসরিক শাস্ত্রপদের জন্য নির্বাচন করা হয়েছে! যিহোবাতে নির্ভর করে সামনে অগ্রসর হওয়া এবং তাঁর নাম ও মহৎ উদ্দেশ্যগুলি যা বহন করে সেগুলি জানানো পূর্বে আর কখনও এত গুরুত্বপূর্ণ হয়নি। প্রথম শতাব্দীর মত বর্তমান কলুষিত বিধিব্যবস্থার শেষ দিনগুলিতে আলোড়ন সৃষ্টিকারী আহ্বান প্রসারিত হচ্ছে: “এই কালের কুটিল লোকদের হইতে আপনাদিগকে রক্ষা কর।” (প্রেরিত ২:৪০) জগদ্ব্যাপী সমস্ত ঈশ্বর ভয়শীল লোকেদের পক্ষে তাদের নিজেদের ও অন্যান্য সকলের জন্য যারা তাদের সুসমাচার সম্বন্ধে সাধারণ্যে ঘোষণায় কর্ণপাত করে, পরিত্রাণ পেতে যিহোবার নামে ডাকার জন্য এটি এক তুরীধ্বনিবৎ আমন্ত্রণ।—১ তীমথিয় ৪:১৬.
১৪. পরিত্রাণের জন্য আমাদের কোন্ শৈলকে ডাকতে হবে?
১৪ যিহোবার মহৎ দিন যখন হঠাৎ এই পৃথিবীতে উপস্থিত হবে তখন কী হবে? অধিকাংশই পরিত্রাণের জন্য যিহোবার দিকে তাকাবে না। মানবজাতি সাধারণভাবে ‘পর্ব্বত ও শৈল সকলকে কহিতে লাগিবে, আমাদের উপরে পতিত হও, যিনি সিংহাসনে বসিয়া আছেন, তাঁহার সম্মুখ হইতে এবং মেষশাবকের ক্রোধ হইতে আমাদিগকে লুকাইয়া রাখ।’ (প্রকাশিত বাক্য ৬:১৫, ১৬) এই বিধিব্যবস্থার পর্বততুল্য সংগঠন ও প্রতিষ্ঠানগুলির উপর তারা আশা রাখবে। কিন্তু আরও কতই না ভাল হত যদি তারা সর্বোচ্চ শৈল যিহোবার উপর তাদের আস্থা স্থাপন করত! (দ্বিতীয় বিবরণ ৩২:৩, ৪) তাঁর সম্বন্ধে রাজা দায়ূদ বলেছিলেন: “সদাপ্রভু মম শৈল, মম দুর্গ, ও মম রক্ষাকর্ত্তা।” যিহোবা আমাদের ‘ত্রাণ-শৈল।’ (গীতসংহিতা ১৮:২; ৯৫:১) তাঁর নাম “দৃঢ় দুর্গ,” আসন্ন সংকটের সময় আমাদের সুরক্ষার জন্য যথেষ্ট দৃঢ় একমাত্র “দুর্গ।” (হিতোপদেশ ১৮:১০) তাই, বর্তমানে জীবিত প্রায় ৬০০ কোটি লোকের মধ্যে যত বেশি জনকে সম্ভব বিশ্বস্ততা ও আন্তরিকতার সাথে যিহোবার নামে ডাকতে শিক্ষা দেওয়া অপরিহার্য।
১৫. বিশ্বাস সম্বন্ধে রোমীয় ১০:১৪ পদ কী ইঙ্গিত দেয়?
১৫ উপযুক্তরূপেই প্রেরিত পৌল জিজ্ঞাসা করেছিলেন: “তবে তাহারা যাঁহাতে বিশ্বাস করে নাই, কেমন করিয়া তাঁহাকে ডাকিবে?” (রোমীয় ১০:১৪) এখনও এমন অসংখ্য ব্যক্তিরা রয়েছেন যাদের পরিত্রাণ পেতে “বিশ্বাসেরই সেই ‘বার্ত্তা’”-কে তাদের নিজের করে নেওয়ার জন্য সাহায্যের প্রয়োজন আছে। বিশ্বাস অত্যাবশ্যক। অপর একটি পত্রে পৌল উল্লেখ করেন: “বিনা বিশ্বাসে [ঈশ্বরের] প্রীতির পাত্র হওয়া কাহারও সাধ্য নয়; কারণ যে ব্যক্তি ঈশ্বরের নিকটে উপস্থিত হয়, তাহার ইহা বিশ্বাস করা আবশ্যক যে ঈশ্বর আছেন, এবং যাহারা তাঁহার অন্বেষণ করে, তিনি তাহাদের পুরস্কারদাতা।” (ইব্রীয় ১১:৬) তাহলে, কিভাবে এই লক্ষ লক্ষ ব্যক্তিরা যিহোবাতে তাদের বিশ্বাস স্থাপন করতে পারে? রোমীয়দের উদ্দেশ্যে লিখিত পত্রে পৌল জিজ্ঞাসা করেন: “আর যাঁহার কথা শুনে নাই, কেমন করিয়া তাঁহাতে বিশ্বাস করিবে?” (রোমীয় ১০:১৪) তাদের শ্রবণের জন্য যিহোবা কি কোন মাধ্যম প্রদান করেন? এটি নিশ্চিত যে তিনি করেন! পৌলের পরবর্তী কথাগুলি শুনুন: “আর প্রচারক না থাকিলে কেমন করিয়া শুনিবে?”
১৬. ঐশিক ব্যবস্থায় প্রচারকেরা কেন অপরিহার্য?
১৬ পৌলের যুক্তি থেকে এটি সুস্পষ্ট যে প্রচারকদের প্রয়োজন রয়েছে। যীশু ইঙ্গিত করেছিলেন যে “বিধিব্যবস্থার শেষ” পর্যন্ত এইরকমই হবে। (মথি ২৪:১৪; ২৮:১৮-২০) রক্ষা পেতে যিহোবার নামে ডাকতে সাহায্য করার জন্য প্রচার করা ঐশিক ব্যবস্থার একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এমনকি খ্রীষ্টীয় জগতে অধিকাংশ ব্যক্তিই ঈশ্বরের মহামূল্যবান নামকে সম্মান করার জন্য কিছুই করেন না। নৈরাশ্যজনকভাবে অনেকেই যিহোবাকে অব্যাখ্যাত ত্রিত্ব মতবাদের অন্য দুটি সত্ত্বার সাথে যুক্ত করে বিভ্রান্তির সৃষ্টি করেছে। এছাড়াও অনেকেই সেই শ্রেণীতে পড়েন যাদের সম্বন্ধে গীতসংহিতা ১৪:১ ও ৫৩:১ পদ বলে: “মূঢ় মনে মনে বলিয়াছে, ‘ঈশ্বর নাই।’” তাদের জানা প্রয়োজন যে যিহোবা জীবন্ত ঈশ্বর আর তারা যদি আসন্ন মহাক্লেশ থেকে রক্ষা পেতে চায়, তবে অবশ্যই তাদের তাঁর নাম ও সেটি যা বহন করে তার অর্থ বুঝতে হবে।
প্রচারকদের ‘শোভিত চরণ’
১৭. (ক) পৌলের জন্য এক পুনর্স্থাপনমূলক ভবিষ্যদ্বাণী উদ্ধৃতি করা কেন উপযুক্ত ছিল? (খ) ‘শোভিত চরণ’ থাকার সাথে কী জড়িত?
১৭ প্রেরিত পৌলের আরেকটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন ছিল: “আর প্রেরিত না হইলে কেমন করিয়া প্রচার করিবে? যেমন লিখিত আছে, ‘যাহারা মঙ্গলের সুসমাচার প্রচার করে, তাহাদের চরণ কেমন শোভা পায়।’” (রোমীয় ১০:১৫) পৌল এখানে যিশাইয় ৫২:৭ পদ থেকে উদ্ধৃতি করেন যেটি পুনর্স্থাপনমূলক ভবিষ্যদ্বাণীর একটি অংশ যা ১৯১৯ সাল থেকে প্রয়োগযোগ্য। আজকে আরও একবার যিহোবা তাদের পাঠান যারা “সুসমাচার প্রচার করে, শান্তি ঘোষণা করে, মঙ্গলের সুসমাচার প্রচার করে, পরিত্রাণ ঘোষণা করে।” বাধ্যতার সাথে যিহোবার ‘প্রহরীগণ’ ও তাদের সঙ্গীরা উচ্চৈঃস্বরে আনন্দগান করে চলেছেন। (যিশাইয় ৫২:৭, ৮) আজকে যারা পরিত্রাণ ঘোষণা করেন, তাদের চরণ হয়ত ক্লান্ত হয়ে পড়তে পারে, এমনকি গৃহ থেকে গৃহে হেঁটে যাওয়ার সময় তা হয়ত নোংরা হতে পারে কিন্তু তাদের মুখমণ্ডল আনন্দে কতই না উদ্ভাসিত হয়! তারা জানেন যে, শান্তির সুসমাচার ঘোষণা ও পরিত্রাণের প্রতি দৃষ্টি নিবদ্ধ রেখে যিহোবার নামে ডাকতে তাদের সাহায্য করে শোকার্ত ব্যক্তিদের সান্ত্বনা প্রদান করতে তারা ঈশ্বর কর্তৃক নিযুক্ত।
১৮. চতুর্দিকে সুসমাচার ঘোষণার চূড়ান্ত ফলাফল সম্বন্ধে রোমীয় ১০:১৬-১৮ পদ কী বলে?
১৮ লোকেরা ‘যা শুনেছে তাতে বিশ্বাস’ করুক অথবা তার অবাধ্য হওয়াকে বেছে নিক, পৌলের বাক্য সত্য বলে ধ্বনিত হয়: “তাহারা কি শুনিতে পায় নাই? পাইয়াছে বই কি! ‘তাহাদের স্বর ব্যাপ্ত হইল সমস্ত পৃথিবীতে, তাহাদের বাক্য জগতের সীমা পর্য্যন্ত।’” (রোমীয় ১০:১৬-১৮) ঠিক যেমন “আকাশমণ্ডল ঈশ্বরের গৌরব বর্ণনা” করে যা তাঁর সৃষ্টিকার্যে প্রদর্শিত হয়েছে, তেমনি পৃথিবীতে তাঁর সাক্ষীদের অবশ্যই ঘোষণা করতে হবে “সদাপ্রভুর প্রসন্নতার বৎসর ও আমাদের ঈশ্বরের প্রতিশোধের দিন . . . যেন সমস্ত শোকার্ত্তকে সান্ত্বনা করি।”—গীতসংহিতা ১৯:১-৪; যিশাইয় ৬১:২.
১৯. আজকে যারা ‘যিহোবার নামে ডাকে’ তাদের জন্য কোন্ ফল অপেক্ষা করছে?
১৯ যে কোন সময়ের চেয়ে যিহোবার মহৎ ও ভয়ঙ্কর দিন অধিকতর নিকটবর্তী। “হায় হায়, কেমন দিন! সদাপ্রভুর দিন ত সন্নিকট; উহা সর্ব্বশক্তিমানের নিকট হইতে প্রলয়ের ন্যায় আসিতেছে।” (যোয়েল ১:১৫; ২:৩১) অসংখ্য ব্যক্তিরা তৎপরতার সাথে সুসমাচারের প্রতি সাড়া দিয়ে যিহোবার সংগঠনে একত্রিত হবেন, এটিই আমাদের প্রার্থনা। (যিশাইয় ৬০:৮; হবক্কূক ২:৩) নোহের দিন, লোটের দিন এবং ধর্মভ্রষ্ট ইস্রায়েল ও যিহূদার সময়ে যিহোবা দুষ্টদের উপর যে ধ্বংস এনেছিলেন তা স্মরণ করুন। আমরা এখন সর্বাপেক্ষা বৃহৎ মহাক্লেশের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে আছি যখন অনন্ত শান্তির এক পরমদেশের পথ তৈরি করে যিহোবার ঝটিকা এই পৃথিবী থেকে দুষ্টতাকে নির্মূল করবে। যারা বিশ্বস্ততার সাথে “যিহোবার নামে ডাকে” তাদের মধ্যে আপনি কি একজন হবেন? যদি তাই হয়, আনন্দ করুন! আপনার জন্য স্বয়ং ঈশ্বরের প্রতিজ্ঞা রয়েছে যে আপনি পরিত্রাণ পাবেন।—রোমীয় ১০:১৩.
আপনি কিভাবে উত্তর দেবেন?
◻ সা.কা. ৩৩ সালের পঞ্চাশত্তমীর দিন থেকে কোন্ নতুন বিষয়গুলি ঘোষিত হয়েছিল?
◻ কিভাবে খ্রীষ্টানদের “বিশ্বাসেরই সেই ‘বার্ত্তা’”-র প্রতি মনোযোগ দেওয়া উচিত?
◻ ‘যিহোবার নামে ডাকার’ অর্থ কী?
◻ কোন্ অর্থে রাজ্যের বার্তাবাহকদের ‘শোভিত চরণ’ রয়েছে?
[Pictures on page 18]
ঈশ্বরের লোকেরা পুয়ের্টো রিকো, সেনেগাল, পেরু, পাপুয়া নিউ গিনি—হ্যাঁ, বিশ্বের চতুর্দিকে তাঁর গুণকীর্তন করছেন