“যে ছোট, সে সহস্র” হয়ে উঠেছে
“যে ছোট, সে সহস্র হইয়া উঠিবে, যে ক্ষুদ্র, সে বলবান্ জাতি হইয়া উঠিবে।”—যিশাইয় ৬০:২২.
১, ২. (ক) আজকে কেন জগৎ অন্ধকারাচ্ছন্ন? (খ) কীভাবে যিহোবার দীপ্তি ধীরে ধীরে তাঁর লোকেদের ওপর উদিত হয়েছে?
“অন্ধকার পৃথিবীকে, ঘোর তিমির জাতিগণকে, আচ্ছন্ন করিতেছে, কিন্তু তোমার উপরে সদাপ্রভু উদিত হইবেন, এবং তাঁহার প্রতাপ তোমার উপরে দৃষ্ট হইবে।” (যিশাইয় ৬০:২) এই কথাগুলো থেকে খুব ভালভাবে বোঝা যায় যে ১৯১৯ সাল থেকে পৃথিবীর অবস্থা কেমন। খ্রীষ্টীয়জগৎ “জগতের জ্যোতি” যীশু খ্রীষ্টের রাজকীয় উপস্থিতির চিহ্নকে অস্বীকার করেছে। (যোহন ৮:১২; মথি ২৪:৩) “অন্ধকারের জগৎপতিদের” প্রধান, শয়তান “অতিশয় রাগাপন্ন” বলে বিংশ শতাব্দীই ইতিহাসের সবচেয়ে নৃশংস এবং ধ্বংসাত্মক সময় ছিল। (প্রকাশিত বাক্য ১২:১২; ইফিষীয় ৬:১২) আজকে বেশির ভাগ লোকই আধ্যাত্মিক অন্ধকারে বাস করছে।
২ তারপরও আজকে জগতে জ্যোতি রয়েছে। যিহোবা তাঁর দাসদের ওপর অর্থাৎ অভিষিক্ত অবশিষ্টাংশদের ওপর ‘উদিত হয়েছেন,’ যারা হলেন পৃথিবীতে তাঁর স্বর্গীয় “স্ত্রীর” প্রতিনিধি। (যিশাইয় ৬০:১, NW) বিশেষ করে ১৯১৯ সালে বাবিলনীয়দের বন্দিত্ব থেকে মুক্ত হওয়ার পর তারা ঈশ্বরের প্রতাপ দেখিয়েছেন এবং ‘তাদের দীপ্তি মনুষ্যদের সাক্ষাতে উজ্জ্বল’ করেছেন। (মথি ৫:১৬) ১৯১৯ সাল থেকে ১৯৩১ সালের মধ্যে রাজ্যের দীপ্তি ধীরে ধীরে আরও উজ্জ্বল হয়েছে এবং বাবিলনীয় ধ্যানধারণা থেকে এই ব্যক্তিরা মুক্ত হয়েছেন। তাদের সংখ্যা বেড়ে হাজার হাজার হয়েছে কারণ যিহোবা তাঁর প্রতিজ্ঞা পূর্ণ করেছেন: “আমি নিশ্চয়ই ইস্রায়েলের অবশিষ্টাংশকে সংগ্রহ করিব; তাহাদিগকে বস্রার মেষগণের ন্যায় একত্র করিব; যেমন বাথানের মধ্যস্থিত পাল, তেমনি তাহারা মনুষ্য-বাহুল্যে কোলাহল করিবে।” (মীখা ২:১২) ১৯৩১ সালে যিহোবার লোকেদের ওপর তাঁর প্রতাপ আরও স্পষ্টভাবে দেখা গিয়েছিল যখন তারা যিহোবার সাক্ষি নাম নিয়েছিলেন।—যিশাইয় ৪৩:১০, ১২.
৩. অভিষিক্তরা ছাড়াও অন্যদের ওপরও যে যিহোবার দীপ্তি উদিত হয়েছিল তা কী করে স্পষ্টভাবে বোঝা গিয়েছিল?
৩ যিহোবা কি শুধু “ক্ষুদ্র মেষপাল” এর অবশিষ্টাংশদের ওপরই উদিত হয়েছিলেন? (লূক ১২:৩২) না। ১৯৩১ সালের ১লা সেপ্টেম্বরের প্রহরীদুর্গ (ইংরেজি) আরেকটা দলের কথা বলেছিল। যিহিষ্কেল ৯:১-১১ পদের ব্যাখ্যা থেকে বোঝা যায় যে ওই পদগুলোতে যে পুরুষের কথা বলা হয়েছে যার কটিদেশে লেখকের মস্যাধার ছিল, তিনি অভিষিক্ত অবশিষ্টাংশদের প্রতিনিধিত্ব করেন। সেই “পুরুষ” কাদের কপালে চিহ্ন দেন? “অপর মেষ”-দের কপালে, যাদের পরমদেশ পৃথিবীতে চিরকাল বেঁচে থাকার আশা রয়েছে। (যোহন ১০:১৬, NW; গীতসংহিতা ৩৭:২৯) ১৯৩৫ সালে বোঝা গিয়েছিল যে “অপর মেষ”-দের এই দল হল “প্রত্যেক জাতির . . . বিস্তর লোক,” যাদের প্রেরিত যোহন দর্শনে দেখেছিলেন। (প্রকাশিত বাক্য ৭:৯-১৪) ১৯৩৫ সাল থেকে আজ পর্যন্ত এই বিস্তর লোকেদের সংগ্রহ করার জন্য অনেক কাজ করা হচ্ছে।
৪. যিশাইয় ৬০:৩ পদে বলা “রাজগণ” ও “জাতিগণ” কারা?
৪ এই সংগ্রহের কথা যিশাইয়ের ভবিষ্যদ্বাণীতে পরোক্ষভাবে লেখা হয়েছে যখন এটা বলে: “জাতিগণ তোমার দীপ্তির কাছে আগমন করিবে, রাজগণ তোমার অরুণোদয়ের আলোর কাছে আসিবে।” (যিশাইয় ৬০:৩) এই “রাজগণ” কারা? তারা হলেন ১,৪৪,০০০ জনের অবশিষ্টাংশ লোকেরা যারা যীশু খ্রীষ্টের সঙ্গে স্বর্গে রাজত্ব করবেন এবং তারা সাক্ষ্যদানের কাজকে এগিয়ে নিয়ে চলেছেন। (রোমীয় ৮:১৭; প্রকাশিত বাক্য ১২:১৭; ১৪:১) আজকে, অভিষিক্ত অবশিষ্টাংশদের সংখ্যা ‘জাতিগণের’ তুলনায় খুবই কম, যারা পৃথিবীতে বেঁচে থাকার আশা রাখেন এবং যারা যিহোবার কাছ থেকে শিক্ষা নেওয়ার জন্য ছুটে আসছেন ও অন্যদেরকেও এই কাজ করার জন্য উৎসাহিত করছেন।—যিশাইয় ২:৩.
যিহোবার উদ্যোগী দাসেরা
৫. (ক) কোন্ বিষয়গুলো দেখায় যে যিহোবার লোকেদের উদ্যোগ এতটুকু কমে যায়নি? (খ) ১৯৯৯ সালে কোন্ দেশগুলোতে উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি হয়েছে? (১৭-২০ পৃষ্ঠার তালিকা দেখুন।)
৫ বিংশ শতাব্দীতে যিহোবার আধুনিক সাক্ষিরা কত উদ্যোগই না দেখিয়েছিলেন! তাদের ওপর একটার পর একটা চাপ এসেছে কিন্তু এই ২০০০ সালেও তাদের উদ্যোগ এতটুকু কমে যায়নি। আজও তারা যীশুর এই আদেশকে খুব মন দিয়ে মানেন: “তোমরা . . . সমুদয় জাতিকে শিষ্য কর।” (মথি ২৮:১৯, ২০) বিংশ শতাব্দীর শেষ পরিচর্যা বছরে সুসমাচার প্রচারকদের নতুন সর্বোচ্চ সংখ্যা ছিল ৫৯,১২,৪৯২ জন। তারা ঈশ্বর ও তাঁর উদ্দেশ্য সম্বন্ধে লোকেদের কাছে মোট ১১৪,৪৫,৬৬,৮৪৯ ঘন্টা কথা বলেছিলেন, যা খুবই উল্লেখযোগ্য। তারা আগ্রহী ব্যক্তিদের কাছে ৪২,০০,৪৭,৭৯৬ বার ফিরে গিয়েছিলেন এবং বিনা পয়সায় ৪৪,৩৩,৮৮৪টা বাইবেল অধ্যয়ন করেছিলেন। উদ্যোগী পরিচর্যার কী দারুণ বিবরণ!
৬. অগ্রগামীদের জন্য নতুন কোন্ ব্যবস্থা করা হয়েছিল আর তাতে কেমন সাড়া পাওয়া গিয়েছিল?
৬ গত বছরের জানুয়ারি মাসে পরিচালক গোষ্ঠী অগ্রগামীদের জন্য ঘন্টা কিছুটা কমিয়ে দিয়েছিলেন। এর ফলে অনেকেই নিয়মিত অথবা সহায়ক অগ্রগামী হিসেবে কাজ শুরু করেছেন। যেমন, ১৯৯৯ সালের প্রথম চার মাসে নেদারল্যান্ড শাখা অফিস আগের বছরের চারগুণ বেশি নিয়মিত অগ্রগামীর আবেদনপত্র পেয়েছিল। ঘানা রিপোর্ট করে: “অগ্রগামীদের ঘন্টা কমিয়ে দেওয়ায় আমাদের এখানে নিয়মিত অগ্রগামীদের সংখ্যা অনেক বেড়ে গেছে।” ১৯৯৯ পরিচর্যা বছরে সারা পৃথিবীতে অগ্রগামীদের সংখ্যা ৭,৩৮,৩৪৩ জনে পৌঁছেছিল—‘সৎক্রিয়াতে উদ্যোগের’ এক চমৎকার উদাহরণ।—তীত ২:১৪.
৭. কীভাবে যিহোবা তাঁর দাসদের উদ্যোগী কাজকে আশীর্বাদ করেছেন?
৭ এই উদ্যোগী কাজকে কি যিহোবা আশীর্বাদ করেছেন? হ্যাঁ, করেছেন। যিশাইয়ের মাধ্যমে তিনি বলেছিলেন: “তুমি চারিদিকে চক্ষু তুলিয়া দেখ, উহারা সকলে একত্র হইয়া তোমার কাছে আসিতেছে; তোমার পুত্ত্রগণ দূর হইতে আসিবে, তোমার কন্যাগণ কক্ষে করিয়া আনীত হইবে।” (যিশাইয় ৬০:৪) যে অভিষিক্ত “পুত্ত্রগণ” এবং “কন্যাগণ”-কে সংগ্রহ করা হয়েছে তারা আজও উদ্যোগের সঙ্গে ঈশ্বরের সেবা করে চলেছেন। আর এখন দেশ এবং দ্বীপগুলো মিলিয়ে মোট ২৩৪টা জায়গায় যিহোবার অভিষিক্ত “পুত্ত্রগণ” ও ‘কন্যাগণের’ সঙ্গে যোগ দেওয়ার জন্য যীশুর অপর মেষদেরও সংগ্রহ করা হচ্ছে।
‘সমস্ত সৎকর্ম্ম’
৮. যিহোবার সাক্ষিরা কোন্ কোন্ ‘সৎকর্ম্ম’ করেন?
৮ রাজ্যের সুসমাচার প্রচার করা এবং আগ্রহী লোকেদেরকে শিষ্য বানানো খ্রীষ্টানদের দায়িত্ব। কিন্তু সেইসঙ্গে তারা “সমস্ত সৎকর্ম্মের জন্য সুসজ্জীভূত।” (বাঁকা অক্ষরে মুদ্রণ আমাদের।) (২ তীমথিয় ৩:১৭) তাই, তারা ভালবাসা দেখিয়ে তাদের পরিবারের দেখাশোনা করেন, অতিথিসেবা করেন এবং অসুস্থদের দেখতে যান। (১ তীমথিয় ৫:৮; ইব্রীয় ১৩:১৬) আর কিংডম হল বানানোর মতো কাজগুলোতে অনেক স্বেচ্ছাসেবীরা কাজ করে থাকেন ও এই কাজ খুব ভাল সাক্ষ্য দেয়। টোগোতে একটা হল বানানোর পর সেখানকার ক্যারিসমেটিক গির্জার কিছু কর্মকর্তারা জানতে চেয়েছিলেন যে কেন যিহোবার সাক্ষিরা তাদের নিজেদের বিল্ডিংগুলো নিজেরাই বানাতে পারেন অথচ এর জন্য গির্জাকে অন্য লোকেদের ভাড়া করতে হয়! টোগো রিপোর্ট করে যে উন্নত মানের কিংডম হলগুলো লোকেদের মনে এত ভাল ছাপ ফেলেছে যে সেখানকার কেউ কেউ হলগুলোর আশেপাশে ঘর ভাড়া নিতে চাচ্ছেন অথবা ঘর বানাতে চাচ্ছেন।
৯. প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় যিহোবার সাক্ষিরা কী করেছেন?
৯ আবার কখনও কখনও অন্যধরনের সৎকর্ম করারও দরকার হয়। গত পরিচর্যা বছরে অনেক দেশে প্রাকৃতিক দুর্যোগ হয়েছিল আর সাহায্য করার জন্য সবসময় সবচেয়ে প্রথমে যিহোবার সাক্ষিরাই এগিয়ে গিয়েছিলেন। উদাহরণ হিসেবে হন্ডুরাসের কথা বলা যায়, যেখানে মিচ ঘূর্ণিঝড়ে প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল। সেখানে ত্রাণসামগ্রী বিতরণের জন্য শাখা অফিস সঙ্গে সঙ্গে জরুরি কমিটি গঠন করেছিল। হন্ডুরাস এবং অন্যান্য দেশের সাক্ষিরা কাপড়, খাবার, ওষুধ এবং অন্যান্য দরকারি জিনিস দিয়ে সাহায্য করেছিলেন। আঞ্চলিক বিল্ডিং কমিটিগুলো বাড়ি মেরামত করে দিয়েছিল। দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত ভাইরা শীঘ্রিই তাদের স্বাভাবিক কাজকর্ম শুরু করতে পেরেছিলেন। ইকুয়েডরে প্রবল বন্যায় যখন কিছু বাড়িঘর ভেসে গিয়েছিল তখন যিহোবার সাক্ষিরা তাদের ভাইদের সাহায্য করেছিলেন। এইরকম সংকটময় পরিস্থিতিতে তাদের ভাল কাজ দেখে একজন সরকারি কর্মকর্তা বলেছিলেন: “আমি যদি এই লোকেদের পেতাম, তাহলে আমি অলৌকিক কিছু করতে পারতাম! পৃথিবীর সব জায়গাতেই আপনাদের মতো লোক থাকা দরকার।” এইরকম সৎকর্ম যিহোবা ঈশ্বরের প্রশংসা নিয়ে আসে আর তা সাক্ষ্য দেয় যে আমাদের “ভক্তি সর্ব্ববিষয়ে সুফলদায়িকা।”—১ তীমথিয় ৪:৮.
তারা “উড়িয়া আসিতেছে, মেঘের ন্যায়”
১০. অভিষিক্তদের সংখ্যা যদিও কমে আসছে, তবুও কেন আগের চেয়ে এখন আরও বেশি করে যিহোবার নাম ঘোষিত হচ্ছে?
১০ এরপর যিহোবা জিজ্ঞেস করেন: “এ কাহারা উড়িয়া আসিতেছে, মেঘের ন্যায়, আপন আপন খোপের দিকে কপোতের ন্যায়? সত্যই উপকূল সকল আমার অপেক্ষা করিবে, তর্শীশের জাহাজ সকল অগ্রগামী হইবে, দূর হইতে তোমার সন্তানদিগকে আনিবে, . . . বিজাতি-সন্তানেরা তোমার প্রাচীর গাঁথিবে, তাহাদের রাজগণ তোমার পরিচর্য্যা করিবে।” (যিশাইয় ৬০:৮-১০) প্রথমে যিহোবা তাঁর “পুত্ত্রগণ” অর্থাৎ অভিষিক্ত খ্রীষ্টানদের ওপর ‘উদিত হয়েছিলেন।’ তারপর এসেছিলেন “বিজাতি-সন্তানেরা” অর্থাৎ বিরাট জনতা, যারা বিশ্বস্তভাবে তাদের অভিষিক্ত ভাইদের সঙ্গে সেবা করেন, সুসমাচার প্রচার কাজে তাদের পরিচালনাকে মেনে নেন। তাই, অভিষিক্তদের সংখ্যা যদিও কমে যাচ্ছে, তবুও আগের চেয়ে এখন আরও বেশি করে যিহোবার নাম পৃথিবীর সব জায়গায় ঘোষিত হচ্ছে।
১১. (ক) এখনও কোন্ কাজ চলছে আর ১৯৯৯ সালে এর ফল কী হয়েছে? (খ) ১৯৯৯ সালে কোন্ দেশগুলোতে অনেক লোকেরা বাপ্তিস্ম নিয়েছেন? (১৭-২০ পৃষ্ঠার তালিকা দেখুন।)
১১ ফলে লাখ লাখ লোকেরা “আপন আপন খোপের দিকে কপোতের ন্যায়” উড়ে আসছেন, খ্রীষ্টীয় মণ্ডলীতে আশ্রয় খুঁজে নিচ্ছেন। প্রতি বছর লাখ লাখ লোক যুক্ত হচ্ছেন এবং আরও অনেকের জন্য পথ এখনও খোলা রয়েছে। যিশাইয় বলেন: “তোমার পুরদ্বার সকল সর্ব্বদা খোলা থাকিবে, কি দিন কি রাত্রি কখনও রুদ্ধ হইবে না; জাতিগণের ঐশ্বর্য্য তোমার কাছে আনা যাইবে।” (যিশাইয় ৬০:১১) গত বছর যিহোবার কাছে নিজেদেরকে উৎসর্গ করার চিহ্ন হিসেবে ৩,২৩,৪৩৯ জন বাপ্তিস্ম নিয়েছিলেন আর যিহোবা এখনও এই দরজা বন্ধ করে দেননি। “সর্ব্বজাতির মনোরঞ্জন বস্তু সকল” অর্থাৎ বিরাট জনতার সদস্যরা এখনও দলে দলে সেখান দিয়ে ঢুকছেন। (হগয় ২:৭) যারা অন্ধকারের মধ্যে থেকে বেরিয়ে আসতে চান তাদের কাউকেই ফিরিয়ে দেওয়া হয় না। (যোহন ১২:৪৬) আমরা প্রার্থনা করি যেন এই লোকেরা কখনোই দীপ্তির প্রতি তাদের উপলব্ধি হারিয়ে না ফেলেন!
বিরোধিতার মধ্যেও সাহসী
১২. যারা অন্ধকারকে ভালবাসে তারা দীপ্তিকে একেবারে শেষ করে দেওয়ার জন্য কীভাবে চেষ্টা করেছে?
১২ যারা অন্ধকার ভালবাসে তারা যিহোবার দীপ্তিকে ঘৃণা করে। (যোহন ৩:১৯) এমনকি কেউ কেউ এই দীপ্তিকে একেবারে শেষ করে দিতে চায়। অবশ্য এতে অবাক হওয়ার কিছুই নেই। এমনকি “প্রকৃত জ্যোতি . . . যিনি সকল মনুষ্যকে দীপ্তি দেন” সেই যীশুকে পর্যন্ত লোকেরা উপহাস করেছিল, তাঁর বিরোধিতা করেছিল এবং শেষ পর্যন্ত তার নিজ লোকেরা তাঁকে মেরে ফেলেছিল। (যোহন ১:১৯) বিংশ শতাব্দীতে, যিহোবার দীপ্তিকে ছড়িয়ে দেওয়ার কারণে যিহোবার সাক্ষিদেরও টিটকারি দেওয়া হয়েছে, জেলে ভরা হয়েছে, তাদের কাজকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে এবং তাদেরকে মেরে ফেলা হয়েছে। কয়েক বছর ধরে বিরোধীরা, যারা ঈশ্বরের জ্যোতিকে প্রতিফলিত করেন তাদের সম্বন্ধে রেডিও, টিভি ও খবরের কাগজ মিথ্যা কথা রটাচ্ছে। কেউ কেউ লোকেদেরকে বিশ্বাস করাতে চায় যে যিহোবার সাক্ষিরা খুবই বিপদজনক দল আর তাই তাদের কাজে বাধা দেওয়া উচিত অথবা তাদের কাজকে নিষিদ্ধ করে দেওয়া উচিত। এই বিরোধীরা কি সফল হয়েছে?
১৩. বুদ্ধি করে রেডিও, টিভি এবং খবরের কাগজে আমাদের সম্বন্ধে সঠিক তথ্য জানানোর ফল কী হয়েছে?
১৩ না। যেখানে সম্ভব যিহোবার সাক্ষিরা সঠিক তথ্য জানানোর জন্য সংবাদ মাধ্যমগুলোর কাছে গিয়েছেন। ফলে, খবরের কাগজ, পত্রিকা এবং রেডিও, টিভিতে যিহোবার নাম প্রকাশ পেয়েছে। আর তা প্রচার কাজে খুব ভাল ফল নিয়ে এসেছে। উদাহরণ হিসেবে ডেনমার্কের জাতীয় টিভিতে “ডেনিস লোকেদের বিশ্বাস কেন কমে যাচ্ছে” এই বিষয়ের ওপর একটা আলোচনা হয়েছিল। অন্যান্য ধর্মের লোকেদের সঙ্গে যিহোবার সাক্ষিদেরও সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়েছিল। ওই অনুষ্ঠান দেখে একজন মহিলা বলেছিলেন: “সহজেই বোঝা যায় যে ঈশ্বরের আত্মা কাদের সঙ্গে আছে।” তার সঙ্গে বাইবেল অধ্যয়ন শুরু করা হয়েছিল।
১৪. খুব হতাশ হয়ে বিরোধিরা শীঘ্রিই কোন্ হতাশাজনক বিষয় বুঝতে বাধ্য হবে?
১৪ যিহোবার সাক্ষিরা জানেন যে এই জগতের অনেকেই তাদের বিরোধিতা করবে। ((যোহন ১৭:১৪) তারপরও তারা যিশাইয়ের ভবিষ্যদ্বাণী পড়ে শক্তি পান: “যাহারা তোমাকে দুঃখ দিত, তাহাদের সন্তানগণ হেঁট হইয়া তোমার নিকটে আসিবে; এবং যাহারা তোমাকে হেয়জ্ঞান করিত, তাহারা সকলে তোমার পদতলে প্রণিপাত করিবে, আর তোমাকে বলিবে, এ সদাপ্রভুর নগরী, এ ইস্রায়েলের পবিত্রতমের সিয়োন।” (যিশাইয় ৬০:১৪) খুব হতাশ হয়ে বিরোধিরা শীঘ্রিই বুঝতে পারবে যে তারা আসলে ঈশ্বরের সঙ্গে যুদ্ধ করেছে। আর এই যুদ্ধে কে জয়ী হতে পারে?
১৫. কীভাবে যিহোবার সাক্ষিরা “জাতিগণের দুগ্ধ পান” করেন আর শিক্ষা দেওয়া এবং সুসমাচার প্রচার কাজে তা কীভাবে দেখা গেছে?
১৫ এরপর যিহোবা প্রতিজ্ঞা করেন: “আমি তোমাকে চিরস্থায়ী শ্লাঘার পাত্র . . . করিব। আর তুমি জাতিগণের দুগ্ধ পান করিবে, এবং রাজগণের স্তন চুষিবে; আর জানিবে যে, আমি সদাপ্রভুই তোমার ত্রাণকর্ত্তা।” (যিশাইয় ৬০:১৫, ১৬) হ্যাঁ, যিহোবাই হলেন তাঁর লোকেদের ত্রাণকর্তা। তারা যদি তাঁর ওপর ভরসা রাখেন, তাহলে তারা “চিরস্থায়ী” হবেন। আর তারা সত্য উপাসনাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য জগতের বিভিন্ন সুযোগসুবিধাকে কাজে লাগিয়ে “জাতিগণের দুগ্ধ পান করিবে।” উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, কমপিউটার এবং উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থাকে বুদ্ধির সঙ্গে কাজে লাগিয়ে সহজেই মাসে দুবার করে ১২১টা ভাষায় প্রহরীদুর্গ এবং ৬২টা ভাষায় সচেতন থাক! পত্রিকা ছাপানো যাচ্ছে। নতুন জগৎ অনুবাদ (ইংরেজি) বাইবেলকে নতুন নতুন ভাষায় অনুবাদ করার জন্য একটা বিশেষ কমপিউটার সফট্ওয়্যার প্রোগ্রাম তৈরি করা হয়েছে আর এই অনুবাদগুলো পেয়ে আমরা খুবই খুশি। ১৯৯৯ সালে যখন ক্রোয়েশীয় ভাষায় খ্রীষ্টীয় গ্রিক শাস্ত্রের সংস্করণ প্রকাশ করা হয়েছিল তখন খুশিতে হাজার হাজার লোকেদের চোখ জলে ভরে গিয়েছিল। একজন বয়স্ক ভাই বলেছিলেন: “আমি অনেক দিন ধরে এই বাইবেলের জন্য অপেক্ষা করে আছি। এখন আমি শান্তিতে মরতে পারব!” ৩৪টা ভাষায় আংশিক বা পুরোপুরি নতুন জগৎ অনুবাদ ছাপানোর সংখ্যা ১০ কোটি ছাড়িয়ে গেছে।
উচ্চ নৈতিক মান
১৬, ১৭. (ক) কঠিন হলেও, যিহোবার উচ্চ নৈতিক মান বজায় রাখা কেন খুবই জরুরি? (খ) কোন্ অভিজ্ঞতা দেখায় যে যুবক-যুবতীরা চাইলে জগতের কলুষতাকে এড়াতে পারে?
১৬ যীশু বলেছিলেন: “যে কেহ কদাচরণ করে, সে জ্যোতি ঘৃণা করে।” (যোহন ৩:২০) অন্যদিকে, যারা জ্যোতিতে থাকেন তারা যিহোবার উচ্চ নৈতিক মানগুলোকে ভালবাসেন। যিশাইয়ের মাধ্যমে যিহোবা বলেন: “তোমার প্রজারা সকলে ধার্ম্মিক হইবে।” (যিশাইয় ৬০:২১ক) যৌন অনৈতিকতা, মিথ্যা বলা, লোভ এবং অহংকারে ভরা এই জগতে ধার্মিক মান বজায় রাখা খুবই কঠিন। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, জিনিসপত্রের দাম দিন দিন বেড়ে চলেছে আর তাই ধনসম্পদের পিছনে ছুটতে গিয়ে খারাপ পথে চলে যাওয়া খুবই সহজ। কিন্তু পৌল সতর্ক করেছিলেন: “যাহারা ধনী হইতে বাসনা করে, তাহারা পরীক্ষাতে ও ফাঁদে এবং নানাবিধ মূঢ় ও হানিকর অভিলাষে পতিত হয়, সে সকল মনুষ্যদিগকে সংহারে ও বিনাশে মগ্ন করে।” (১ তীমথিয় ৬:৯) কেউ যখন ব্যাবসায় এত বেশি সময় দেন যে সত্যিকারের জরুরি বিষয়গুলো, যেমন খ্রীষ্টান ভাইবোনদের সঙ্গে মেলামেশা, পবিত্র উপাসনা, নীতিবোধ এবং পরিবারের দায়িত্বগুলোকে জলাঞ্জলি দেন, তখন তা কত দুঃখের বিষয়!
১৭ ধার্মিক মানগুলোকে বজায় রাখা বিশেষ করে যুবক-যুবতীদের জন্য খুবই কঠিন কারণ তাদের বেশির ভাগ সঙ্গীসাথি মাদকাসক্ত এবং অনৈতিক জীবনযাপন করে। সুরিনামে, ১৪ বছরের এক মেয়েকে তারই স্কুলের এক সুদর্শন ছেলে যৌন সম্পর্ক করার জন্য বলেছিল। কিন্তু সে তা অস্বীকার করেছিল এবং তাকে বলেছিল যে বাইবেল বিয়ের বাইরে যৌন সম্পর্ক করতে নিষেধ করে। স্কুলের অন্যান্য মেয়েরা তাকে টিটকারি দিয়েছিল এবং তার মন পালটানোর জন্য চাপ দিয়েছিল আর বলেছিল যে ওই ছেলের সঙ্গে তারা সবাই যৌন সম্পর্ক করতে রাজি। এতকিছুর পরও সেই মেয়ে অটল ছিল। কয়েক সপ্তাহ পর সেই ছেলের রক্ত পরীক্ষা করে এইচআইভি জীবাণু পাওয়া গিয়েছিল এবং সে খুবই অসুস্থ হয়ে পড়েছিল। সেই মেয়ে কত খুশি হয়েছিল যে সে ‘ব্যভিচার হইতে পৃথক থাকার’ বিষয়ে যিহোবার আজ্ঞার বাধ্য ছিল। (প্রেরিত ১৫:২৮, ২৯) যিহোবার সাক্ষিরা তাদের মাঝে এইরকম যুবক-যুবতীদের পেয়ে খুবই গর্বিত, যারা সঠিক পথে অটল থাকে। তাদের বিশ্বাস এবং তাদের বাবামাদের বিশ্বাস যিহোবাকে “বিভূষিত” করে—যিহোবা ঈশ্বরের নামের সম্মান নিয়ে আসে।—যিশাইয় ৬০:২১খ।
যিহোবা বৃদ্ধি দিয়েছেন
১৮. (ক) যিহোবা তাঁর লোকেদের জন্য কোন্ মহৎ কাজ করেছেন? (খ) সেই কাজ যে এখনও শেষ হয়নি তার কোন্ প্রমাণ আছে এবং যারা জ্যোতিতে থাকেন তাদের জন্য কোন্ সুন্দর ভবিষ্যৎ অপেক্ষা করছে?
১৮ হ্যাঁ, যিহোবা তাঁর লোকেদের ওপর আলো বর্ষণ করেন, তাদের আশীর্বাদ করেন, পরিচালনা দেন এবং তাদের শক্তি জোগান। এই বিংশ শতাব্দীতে তারা যিশাইয়ের ভবিষ্যদ্বাণী পরিপূর্ণ হতে দেখেছেন: “যে ছোট, সে সহস্র হইয়া উঠিবে, যে ক্ষুদ্র, সে বলবান্ জাতি হইয়া উঠিবে; আমি সদাপ্রভু যথাকালে ইহা সম্পন্ন করিতে সত্বর হইব।” (যিশাইয় ৬০:২২) ১৯১৯ সালে যে জাতি “ছোট” ছিল সেই জাতি এখন “সহস্র” হয়ে উঠেছে। আর এখনও সেই বৃদ্ধি শেষ হয়ে যায়নি! গত বছর ১,৪০,৮৮,৭৫১ জন যীশুর মৃত্যুর স্মরণার্থক সভায় যোগ দিয়েছিলেন। তাদের অনেকেই সাক্ষি ছিলেন না। আমরা খুব খুশি যে তারা এই গুরুত্বপূর্ণ সভায় যোগ দিয়েছিলেন এবং আমরা তাদেরকে জ্যোতিতে চলার জন্য আমন্ত্রণ জানাই। যিহোবা এখনও তাঁর লোকেদের ওপর উজ্জ্বলভাবে উদিত হন। লোকেদের জন্য তাঁর সংগঠনের দরজা এখনও খোলা। তাই আসুন আমরা সবাই যিহোবার জ্যোতিতে থাকার জন্য সংকল্প নিই। আমাদের জন্য তা এখনই কত আশীর্বাদ নিয়ে আসে! আর সামনে যখন সমস্ত সৃষ্টি যিহোবার প্রশংসা করবে এবং তাঁর প্রতাপের মহিমায় আনন্দ করবে, তখন তা কত আনন্দের বিষয় হবে!—প্রকাশিত বাক্য ৫:১৩, ১৪.
আপনি কি বলতে পারেন?
• এই শেষ কালে কারা যিহোবার জ্যোতিকে ছড়িয়ে দিয়েছেন?
• কী দেখায় যে যিহোবার লোকেদের উদ্যোগ কমে যায়নি?
• কিছু সৎকর্ম কী যা যিহোবার সাক্ষিরা করে থাকেন?
• প্রচণ্ড বিরোধিতা সত্ত্বেও, আমরা কোন্ বিষয়ে নিশ্চিত?
[১৭-২০ পৃষ্ঠার তালিকা]
বিশ্বব্যাপী যিহোবার সাক্ষিদের ১৯৯৯ পরিচর্যা বছরের রিপোর্ট
(পুরোপুরি ফরম্যাট করা টেক্সটের জন্য এই প্রকাশনা দেখুন.)
[১৫ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]
এখনও লোকেরা যিহোবার সংগঠনের দিকে আসছেন
[১৬ পৃষ্ঠার চিত্র]
যারা জ্যোতি ভালবাসেন তাদের জন্য যিহোবা তাঁর দরজা খোলা রেখেছেন বলে আমরা খুবই খুশি