পুনরধিষ্ঠিত “দেশে” একসাথে সহাবস্থান
“তোমরা সদাপ্রভুর যাজক বলিয়া আখ্যাত হইবে, লোকে তোমাদিগকে আমাদের ঈশ্বরের পরিচারক বলিবে।”—যিশাইয় ৬১:৬.
১, ২. (ক) ইস্রায়েলে ধর্মান্তরিতদের কিধরনের পরিস্থিতি ছিল? (খ) আধুনিক কালে “বিস্তর লোক”-দের সদস্যেরা কিধরনের মনোভাব প্রকাশ করেছে?
প্রাচীন কালে, ইস্রায়েল যখন বিশ্বস্ত ছিল, তখন তারা জগতের সামনে যিহোবার যে মহিমা তার সাক্ষী হিসাবে কাজ করেছিল। (যিশাইয় ৪১:৮, ৯; ৪৩:১০) অনেক বিদেশীরা সাড়া দিয়েছিল এবং তারা তাঁর মনোনীত লোকেদের সংস্পর্শে আসার মাধ্যমে যিহোবার উপাসনা করতে পেরেছিল। বস্তুতপক্ষে, তারা ইস্রায়েলের উদ্দেশ্যে তাই বলেছিল যা রূৎ, নয়মীকে বলেছিলেন: “তোমার লোকই আমার লোক, তোমার ঈশ্বরই আমার ঈশ্বর।” (রূতের বিবরণ ১:১৬) তারা নিয়ম চুক্তির নীতিগুলির প্রতি বশ্যতা স্বীকার করে, পুরুষেরা ত্বকচ্ছেদ করে। (যাত্রাপুস্তক ১২:৪৩-৪৮) কিছু স্ত্রীলোক ইস্রায়েলীয়দের বিবাহ করে। যিরীহোর রাহব এবং মোয়াবদেশীয় রূৎ যীশু খ্রীষ্টের পূর্বপুরুষ হন। (মথি ১:৫) এই সব ধর্মান্তরিত ব্যক্তিরা ইস্রায়েল মণ্ডলীর অংশ ছিলেন।—দ্বিতীয় বিবরণ ২৩:৭, ৮.
২ ইস্রায়েলের ধর্মান্তরিত ব্যক্তিদের মত, আজকের “বিস্তর লোক” অভিষিক্ত অবশিষ্টাংশদের বলেছে: “আমরা তোমাদের সহিত যাইব, কেননা আমরা শুনিলাম, ঈশ্বর তোমাদের সহবর্ত্তী।” (প্রকাশিত বাক্য ৭:৯; সখরিয় ৮:২৩) তারা এটি স্বীকার করে যে এই অভিষিক্ত খ্রীষ্টানেরা হল যিহোবার “বিশ্বস্ত ও বুদ্ধিমান্ দাস” এবং তারা এদের সাথে এমন নিবিড়ভাবে কাজ করে যে এই অভিষিক্তেরা এবং “অপর মেষ” “এক পাল, ও এক পালক” হিসাবে পরিগণিত হয়। (মথি ২৪:৪৫-৪৭; যোহন ১০:১৬) এই বিস্তর লোকের কী হবে যখন তাদের সমস্ত অভিষিক্ত ভাইরা তাদের স্বর্গীয় পুরষ্কার লাভ করবে? তাদের ভয় পাওয়ার কোন কারণ নেই। এই সমগ্র “শেষকাল,” ধরে যিহোবা সেই সময়ের জন্য প্রস্তুতি নিয়ে এসেছেন।—২ তীমথিয় ৩:১.
এক আত্মিক “দেশ”
৩. পিতরের দ্বারা ভাববাণী করা “নূতন আকাশমন্ডল” কী এবং এটি কবে প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে?
৩ স্বর্গীয় শাসন ব্যবস্থার মধ্যে ১,৪৪,০০০ অভিষিক্ত খ্রীষ্টানদের যে অংশ থাকবে, সেইবিষয়ের উপর প্রেরিত পিতর ভাববাণী করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন: “তাঁহার প্রতিজ্ঞা অনুসারে আমরা এমন নূতন আকাশমন্ডলের ও নূতন পৃথিবীর অপেক্ষায় আছি, যাহার মধ্যে ধার্ম্মিকতা বসতি করে।” (২ পিতর ৩:১৩) এই “নূতন আকাশমন্ডল” ১৯১৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়, যখন খ্রীষ্ট রাজা হিসাবে স্বর্গীয় রাজ্যে অধিষ্ঠান করেন। কিন্তু “নূতন পৃথিবী” সম্বন্ধে কী বলা চলে?
৪. (ক) ১৯১৯ সালে কোন্ অপ্রত্যাশিত ঘটনাটি ঘটে? (খ) ‘এক দিবসে জাতির জন্ম’ সেটি কী এবং কোন্ ‘দেশ প্রসব বেদনার মাধ্যমে জন্ম নেয়’?
৪ ১৯১৯ সালে, যিহোবা অভিষিক্ত অবশিষ্টাংশদের মহতী বাবিলের বন্দীত্ব থেকে বার করে আনেন। (প্রকাশিত বাক্য ১৮:৪) খ্রীষ্টজগতের নেতাদের পক্ষে এই নাটকীয় ঘটনাটি ছিল একেবারে অপ্রত্যাশিত। এই সম্বন্ধে বাইবেল বলে: “এমন কথা কে শুনিয়াছে? এমন কার্য্য কে দেখিয়াছে? এক দিবসে কি কোন দেশের জন্ম হইবে? কোন জাতি কি একেবারেই ভূমিষ্ঠ হইবে?” (যিশাইয় ৬৬:৮) যখন অভিষিক্ত মণ্ডলী আকস্মিকভাবে জাতিগণের কাছে এক স্বাধীন লোক হিসাবে উপস্থিত হয়, তখন সেটি অবশ্যই একটি জাতির ক্ষেত্রে “এক দিবসে জন্ম” হওয়ার সামিল। কিন্তু, এই “দেশ”-টি কী ছিল? এক অর্থে এটি ছিল প্রাচীন ইস্রায়েল দেশের এক আত্মিক প্রতিরূপ। এটি ছিল এমন একটি অবস্থা যেখানে এই নবজাত “জাতি”-কে কাজ করার সুযোগ দেওয়া হয়, এমন একটি স্থান যেখানে যিশাইয় পুস্তকে উল্লেখিত পরমদেশ সম্বন্ধীয় ভাববাণীগুলির আধুনিক অর্থাৎ আত্মিক পরিপূর্ণতা ঘটবে। (যিশাইয় ৩২:১৬-২০; ৩৫:১-৭; তুলনা করুন ইব্রীয় ১২:১২-১৪.) দৈহিকভাবে একজন খ্রীষ্টান যেখানেই থাকুক না কেন, সে সেই “দেশ” এর মধ্যে থাকতে পারবে।
৫. ১৯১৯ সালে কোন্ কেন্দ্রীয় বিষয়টি অস্তিত্বপ্রাপ্ত হয়? ব্যাখ্যা করুন।
৫ কিন্তু এর সাথে পিতরের দ্বারা ভাববাণী করা “নূতন পৃথিবী” তার কী সম্পর্ক? নতুন “জাতি,” যা ১৯১৯ সালে এক পুনরধিষ্ঠিত “দেশ”-এ জন্ম গ্রহণ করেছিল সেটি জগদ্ব্যাপী এক সংগঠনে পরিণত হবে যার অন্তর্ভুক্ত হবে যিহোবার অভিষিক্ত এবং অনভিষিক্ত উভয় দলেরই প্রশংসাকারীগণ। এই সংগঠনটি হর্মাগিদোন থেকে রক্ষা পেয়ে ঈশ্বরের নতুন জগতে প্রবেশ করবে। এইভাবে সেই জাতিকে ধার্মিক মানব সমাজের এক কেন্দ্রবিন্দু হিসাবে গণ্য করা হবে অর্থাৎ নতুন পৃথিবী, যা শয়তানের জগৎ ধ্বংস হয়ে যাওয়ার পরেও অস্তিত্বে থাকবে।a ১৯৩০ এর দশকের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে, অভিষিক্তদের দলগতভাবে এই পুনরধিষ্ঠিত দেশে একত্রিত করা হয়েছে। সেই সময় থেকে, বিশেষভাবে অপর মেষের অন্তর্ভুক্ত বিস্তর লোকেদের সংগ্রহ করার যে কাজ তার উপর জোর দেওয়া হয়, যাদের সংখ্যা আজ প্রায় ৫০ লক্ষে দাঁড়িয়েছে। (প্রকাশিত বাক্য ১৪:১৫, ১৬) এই দেশ কি অত্যধিক জনাকীর্ণ? না, এর সীমানা যতটা প্রয়োজন ততটাই প্রসারিত করা যেতে পারে। (যিশাইয় ২৬:১৫) অবশ্যই, এর জনসংখ্যার বৃদ্ধি পরিদর্শন করা অত্যন্ত আনন্দের বিষয় যখন অভিষিক্ত অবশিষ্টাংশেরা “দেশ”-কে “ফলে”-র দ্বারা পরিপূর্ণ করবে—অর্থাৎ স্বাস্থ্যকর, প্রাণবন্ত আধ্যাত্মিক খাদ্য। (যিশাইয় ২৭:৬) কিন্তু ঈশ্বরের লোকেদের পুনরধিষ্ঠিত যে এই “দেশ” সেখানে অপর মেষেদের কিধরনের অবস্থা থাকবে?
“দেশ”-এর মধ্যে বিদেশীরা সক্রিয়
৬. ঈশ্বরের লোকেদের “দেশ”-এ বিদেশীরা কিভাবে সক্রিয় ছিল?
৬ ঠিক যেমন ইস্রায়েল দেশে ধর্মান্তরিতেরা মোশির নিয়মের প্রতি বশ্যতা স্বীকার করেছিল, ঠিক আজকের দিনে বিস্তর লোক এই পুনরধিষ্ঠিত “দেশ”-এ যিহোবার আদেশের প্রতি বাধ্যতা দেখিয়ে থাকে। তাদের অভিষিক্ত ভাইদের দ্বারা শিক্ষিত হওয়ার ফলে, তারা সমস্ত ধরনের মিথ্যা উপাসনার থেকে নিজেদের সরিয়ে রাখে এবং রক্তের পবিত্রতা মেনে চলে। (প্রেরিত ১৫:১৯, ২০; গালাতীয় ৫:১৯, ২০; কলসীয় ৩:৫) তারা যিহোবাকে তাদের সমস্ত হৃদয়, মন, প্রাণ ও শক্তি দিয়ে ভালবাসে এবং নিজেদের মত প্রতিবেশীদের প্রেম করে। (মথি ২২:৩৭; যাকোব ২:৮) প্রাচীন ইস্রায়েলে ধর্মান্তরিতেরা শলোমনের মন্দির নির্মাণ কাজে সাহায্য করেছিল এবং সত্য উপাসনাকে পুনর্প্রতিষ্ঠিত করার ক্ষেত্রে সমর্থন জানিয়েছিল। (১ বংশাবলি ২২:২; ২ বংশাবলি ১৫:৮-১৪; ৩০:২৫) আজকে, বিস্তর লোকও নির্মাণ প্রকল্পে অংশগ্রহণ করে থাকে। উদাহরণস্বরূপ, তারা মণ্ডলী ও সীমাগুলিকে গড়তে সাহায্য করে এবং এটা বলাই বাহুল্য যে তারা কিংডম হল, অ্যাসেমব্লি হল এবং শাখা দপ্তরগুলির জন্য নির্মাণ প্রকল্পে অংশ নিয়ে থাকে।
৭. যিরূশালেম নির্বাসনের পর কোন্ ঘটনা ঘটে যখন মন্দিরের পরিচর্যা করার জন্য যথেষ্ট পরিমাণে লেবীয়রা ছিল না?
৭ সা.শ.পূ. ৫৩৭ সালে, যখন ইস্রায়েলীয়রা বাবিলনীয় বন্দীত্ব থেকে ফিরে আসে, তখন তারা পুনর্নির্মিত মন্দিরে পরিচর্যার কাজকে সংগঠিত করে। কিন্তু, যে সব লেবীয়রা ফিরে এসেছিল তাদের সংখ্যা কিন্তু অনেক ছিল না। অতএব, নেথিনিম—যারা ত্বকচ্ছেদপ্রাপ্ত পরবাসী ছিল এবং যারা এর আগে লেবীয়দের সাহায্য করত—তাদের এই মন্দিরের পরিচর্যায় আরও অতিরিক্ত কাজের সুযোগ দেওয়া হয়। কিন্তু, তারা হারোন বংশীয় অভিষিক্ত যাজকদের সমকক্ষ ছিল না।b—ইষ্রা ৭:২৪; ৮:১৫-২০; নহিমিয় ৩:২২-২৬.
৮, ৯. শেষকালে পবিত্র পরিচর্যা করার ক্ষেত্রে কিভাবে অপর মেষেরা ক্রমবর্ধমান পরিমাণে অংশগ্রহণ করেছে?
৮ আজকের অভিষিক্ত খ্রীষ্টানেরা এই ধারাটিকে মেনে চলেছে। “শেষকাল” এর সময় যতই এগিয়ে যাচ্ছে, ঈশ্বরের লোকেদের এই “দেশ”-এ অভিষিক্তদের সংখ্যা ক্রমশই কমে যাচ্ছে। (দানিয়েল ১২:৯; প্রকাশিত বাক্য ১২:১৭) এর পরিপ্রেক্ষিতে এখন “আরাধনা” সম্বন্ধীয় অধিকাংশ কাজের ভার বিস্তর লোকেরা সম্পাদন করে থাকে। (প্রকাশিত বাক্য ৭:১৫) তাদের অভিষিক্ত ভাইদের নেতৃত্বকে অনুসরণ করে তারা, “ঈশ্বরের উদ্দেশে নিয়ত স্তব-বলি, অর্থাৎ তাঁহার নাম স্বীকারকারী ওষ্ঠাধরের ফল, উৎসর্গ” করে। তারা “উপকার ও সহভাগিতার কার্য্য” ভুলে যায় না, কারণ তারা জানে যে “সেই প্রকার যজ্ঞে ঈশ্বর প্রীত হন।”—ইব্রীয় ১৩:১৫, ১৬.
৯ এছাড়াও, যেহেতু বিস্তর লোকেদের সংখ্যা প্রতি বছরে লক্ষের হারে বেড়ে চলেছে, তাই এই ক্রমবর্ধমান সংখ্যার জন্য তত্ত্বাবধানের প্রয়োজন আছে। একসময় কেবলমাত্র অভিষিক্ত খ্রীষ্টানেরাই শুধু এর দায়িত্ব বহন করতেন। কিন্তু, এখন অধিকাংশ মণ্ডলীর এবং সীমা, জেলা এবং শাখাগুলির যা প্রয়োজন তা দেখাশোনা করার দায়িত্ব অপর মেষের উপর ন্যস্ত করা হয়েছে। ১৯৯২ সালে কয়েক জনকে সুযোগ দেওয়া হয় পরিচালক গোষ্ঠীর কমিটির সভাগুলিতে যোগদান করতে এবং সেখানে তারা অমতদানকারী সহায়কের ভূমিকা নেয়। তবুও, এই অপর মেষেরা তাদের অভিষিক্ত সহ-খ্রীষ্টানদের কাছে বিশ্বস্ত থাকে এবং যিহোবার বিশ্বস্ত ও বুদ্ধিমান দাস হিসাবে তাদের সমর্থন করা, এক সুযোগ বলে মনে করে।—মথি ২৫:৩৪-৪০.
“শেকতুল্য”
১০, ১১. কিছু পলেষ্টীয়দের অনুসরণে, কিভাবে ঈশ্বরের কিছু পূর্ববর্তী শত্রুরা তাদের হৃদয় পরিবর্তন করেছিল? এর ফল কী দাঁড়িয়েছিল?
১০ যেভাবে বিশ্বস্ত ও বুদ্ধিমান দাস অপর মেষেদের দায়িত্বপূর্ণ কাজ ব্যবহার করছে, সেই বিষয় সখরিয় ৯:৬, ৭ পদে ভবিষ্যদ্বাণী করা ছিল। সেখানে আমরা পড়ি: “আমি পলেষ্টীয়দের দর্প চূর্ণ করিব। আর আমি তাহার মুখ হইতে তাহার পেষ রক্ত, ও দন্তের মধ্য হইতে তাহার জঘন্য বস্তু সকল অপসারণ করিব; আর সে অবশিষ্ট থাকিয়া আপনিও আমাদের ঈশ্বরের লোক হইবে; সে যিহূদার মধ্যে অধ্যক্ষতুল্য [শেকতুল্য, NW] হইবে, এবং ইক্রোণ যিবূষীয়ের তুল্য হইবে।”c পলেষ্টীয়রা ছিল যিহোবার লোকেদের প্রত্যয়িত শত্রু, আজকের দিনে শয়তানের জগৎ যেমন। (১ যোহন ৫:১৯) ঠিক যেমন পরিশেষে পলেষ্টীয়রা লোক হিসাবে সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হয়েছিল, তেমনি এই জগৎ, তার ধর্মীয়, রাজনৈতিক এবং বাণিজ্যিক উপকরণসহ, খুব শীঘ্রই যিহোবার ধ্বংসাত্মক ক্রোধ উপলব্ধি করবে।—প্রকাশিত বাক্য ১৮:২১; ১৯:১৯-২১.
১১ কিন্তু, সখরিয়ের বাক্য অনুসারে, কিছু পলেষ্টীয়দের হৃদয়ের পরিবর্তন ঘটে এবং এটি চিত্রিত করে যে আজকের দিনে কিছু জাগতিক লোক চিরকাল ধরে যিহোবার শত্রু থাকবে না। তারা নিন্দনীয় রীতিনীতি এবং ঘৃণার্হ বলিদানসহ ধর্মীয় পৌত্তলিকতা পরিত্যাগ করবে এবং যিহোবার চোখে নিজেদের ধৌত করবে। আমাদের দিনে এইধরনের সংশোধিত “পলেষ্টীয়”-দের দেখতে পাওয়া যায় বিস্তর লোকদের মধ্যে।
১২. আধুনিক কালে কিভাবে “ইক্রোণ” “যীবূষীয়ের তুল্য” হয়?
১২ ভাববাণী অনুসারে, পলেষ্টীয়দের প্রধান নগর ইক্রোণ “যিবূষীয়ের তুল্য” হবে। যিবূষীয়েরাও এক সময় ইস্রায়েলের শত্রু ছিল। যিরূশালেম তাদের হাতে ছিল যতক্ষণ না দায়ূদ তা জয় করেন। তবুও, ইস্রায়েলের সাথে যুদ্ধে যারা রক্ষা পেয়েছিল স্পষ্টতই তাদের মধ্যে কয়েকজন ধর্মান্তরিত হয়। তারা ইস্রায়েল দেশে দাস হিসাবে কাজ করেছিল আর এমনকি মন্দির নির্মাণের কাজেও তারা অংশ নিয়েছিল। (২ শমূয়েল ৫:৪-৯; ২ বংশাবলি ৮:১-১৮) আজকের দিনে, “ইক্রোণীয়রা” যারা যিহোবার উপাসনার দিকে ফিরে তাকিয়েছে তাদেরও সুযোগ রয়েছে বিশ্বস্ত ও বুদ্ধিমান দাসের তত্ত্বাবধানে সেই “দেশ”-এ পরিচর্যা করার।
১৩. প্রাচীন জগতে অধ্যক্ষেরা কারা ছিল?
১৩ সখরিয় বলেছিলেন যে পলেষ্টীয়রা যিহূদার শেকতুল্য হবে। ‘আল্লুফ্’, এই ইব্রীয় শব্দটি যখন “শেক” হিসাবে অনুবাদিত হয় তখন তার অর্থ দাঁড়ায় “সহস্রের নেতা” (অথবা, “কিলিয়ার্ক”)। এটি একটি অত্যন্ত উচ্চ পদ। ইদোমের এই প্রাচীন জাতির আপাতদৃষ্টিতে মাত্র ১৩ জন অধ্যক্ষ ছিল। (আদিপুস্তক ৩৬:১৫-১৯) ইস্রায়েলের সম্বন্ধে কথা বলার সময় সাধারণত “অধ্যক্ষ” শব্দটি ব্যবহার করা হয় না, কিন্তু “ইস্রায়েলের সহস্রপতি (অথবা, প্রধান)” এই অভিব্যক্তিটি প্রায়ই উল্লেখিত হয়। যখন মোশি ইস্রায়েলদের প্রতিনিধিদের একত্রিত করেন, তখন তিনি “ইস্রায়েলের সহস্রপতি”-দের ডাকেন।d এদের মধ্যে ১২ জন ছিল আর তারা কেবলমাত্র মোশিরই অধীনস্থ ছিল। (গণনাপুস্তক ১:৪-১৬) ঠিক তেমনি, সামরিকবাহিনীর সংগঠনে, সহস্রপতিরা কেবলমাত্র জেনারেল অথবা রাজার পরের স্থানটি নিত।—২ শমূয়েল ১৮:১, ২; ২ বংশাবলি ২৫:৫.
১৪. আজকে “পলেষ্টীয়রা” কিভাবে অধ্যক্ষ হয়?
১৪ সখরিয় এটা ভবিষ্যদ্বাণী করেননি যে অনুতপ্ত পলেষ্টীয় ইস্রায়েলের অধ্যক্ষ হবে। সেটি যথার্থ হবে না যেহেতু সে ইস্রায়েলীয় বংশে জন্ম গ্রহণ করেনি। কিন্তু সে অধ্যক্ষের মত হত, অর্থাৎ অধ্যক্ষের যে কর্তৃত্বব্যঞ্জক স্থানের তুল্য স্থান দখল করতে পারত। আর সেটাই হয়েছিল। যতই অভিষিক্ত খ্রীষ্টানদের সংখ্যা হ্রাস পেতে শুরু করে এবং জীবিতেরা বয়সের দ্বারা সীমিত হয়ে পড়ে, ততই অনুশীলনপ্রাপ্ত অপরমেষ সেই স্থানটিকে পরিপূর্ণ করে। তারা তাদের অভিষিক্ত ভাইদের স্থানচ্যুত করতে চায় না। কিন্তু বিশ্বস্ত ও বুদ্ধিমান দাস তাদের এই “দেশ”-এ প্রয়োজনীয় অধিকার দিয়েছে যাতে করে ঈশ্বরের সংগঠন সুষ্ঠুভাবে এগিয়ে যেতে পারে। এই প্রগতিশীল পদ্ধতিটির সম্বন্ধে আরেকটি ভাববাণী করা হয়েছে।
যাজক ও কৃষকেরা
১৫. (ক) যিশাইয় ৬১:৫, ৬ পদের পরিপূর্ণতায় কারা “সদাপ্রভুর যাজকবর্গ” এবং কখন তারা চরম অর্থে এই পদে কাজ করে? (খ) কারা সেই “বিদেশি” যারা ইস্রায়েলের কৃষকের কাজ করে এবং—আত্মিক অর্থে—এই কাজের অন্তর্ভুক্ত কী?
১৫ যিশাইয় ৬১:৫, ৬ এইভাবে পড়া হয়: “বিদেশিগণ দাঁড়াইয়া তোমাদের পাল চরাইবে, বিজাতি-সন্তানেরা তোমাদের শস্যক্ষেত্রের কৃষক ও তোমাদের দ্রাক্ষাক্ষেত্রের পাইটকারী হইবে। কিন্তু তোমরা সদাপ্রভুর যাজক বলিয়া আখ্যাত হইবে, লোকে তোমাদিগকে আমাদের ঈশ্বরের পরিচারক বলিবে। তোমরা জাতিগণের ঐশ্বর্য্য ভোগ করিবে, ও তাহাদের প্রতাপে শ্লাঘা করিবে।” আজকের “সদাপ্রভুর যাজক” হল অভিষিক্ত খ্রীষ্টানেরা। চরম এবং সম্পূর্ণ অর্থে তারা “সদাপ্রভুর যাজক . . . ., আমাদের ঈশ্বরের পরিচারক,” হিসাবে স্বর্গীয় রাজ্যে সেবা করবে। (প্রকাশিত বাক্য ৪:৯-১১) কারা সেই “বিদেশি” যাদের উপর কৃষকের কাজের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে? তারা হল অপর মেষ, যারা ঈশ্বরের ইস্রায়েলের “দেশ”-এ অবস্থান করে। পালন করা, চাষ করা ও পাইটকারের কাজ যা তাদের উপর ন্যস্ত করা হয়েছে সেগুলি কী? গুরুত্বপূর্ণ আধ্যাত্মিক অর্থে, এই কাজগুলির অন্তর্ভুক্ত হল লোকেদের সাহায্য করা, তাদের লালনপালন করা এবং কর্ষণ করা।—যিশাইয় ৫:৭; মথি ৯:৩৭, ৩৮; ১ করিন্থীয় ৩:৯; ১ পিতর ৫:২.
১৬. পরিশেষে কারা ঈশ্বরের লোকেদের “দেশ”-এ সমস্ত কার্যভার গ্রহণ করবে?
১৬ বর্তমানে, খুব অল্প সংখ্যায় আত্মিক ইস্রায়েলের অবশিষ্টাংশেরা এই পৃথিবীতে আছে এবং তারা এই আধ্যাত্মিক পালন, চাষ ও পাইটকারীর কাজে অংশ নিচ্ছে। যখন অভিষিক্ত মণ্ডলী সম্পূর্ণরূপে খ্রীষ্টের সাথে একত্রিত হবে, তখন এই সমস্ত কাজের দায়িত্ব অপর মেষেদের উপর দিয়ে দেওয়া হবে। এমনকি তখন “দেশ”-এর উপর মানবিক রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বও থাকবে যোগ্য অপর মেষের হাতে, যাদের যিহিষ্কেলের পুস্তকে অধ্যক্ষ শ্রেণী হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে।—যিহিষ্কেল অধ্যায় ৪৫, ৪৬.e
“দেশ” অস্তিত্বে থেকে যায়
১৭. সমগ্র এই শেষকালের সময় ধরে যিহোবা কোন্ ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করে এসেছেন?
১৭ হ্যাঁ, বিস্তর লোকেদের ভয় পাওয়ার কোন কারণ নেই! যিহোবা তাদের জন্য যথেষ্ট প্রস্তুতি করেছেন। এই শেষকালে পৃথিবীতে সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হল অভিষিক্তদের সংগ্রহ ও মুদ্রাঙ্কিত করা। (প্রকাশিত বাক্য ৭:৩) কিন্তু, এই কাজটি যে হচ্ছে তা দেখার সাথে সাথে, যিহোবা অপর মেষেদের তাদের সংস্পর্শে নিয়ে আসেন এই পুনর্প্রতিষ্ঠিত আত্মিক দেশে। সেখানে তাদের আধ্যাত্মিক খাদ্য এবং খ্রীষ্টীয় জীবনধারা সম্পর্কে অনুশীলন দেওয়া হয়। এছাড়াও, তারা পবিত্র সেবা, অর্থাৎ রক্ষণাবেক্ষণের যে দায়িত্ব সেক্ষেত্রে এক উত্তম ভিত্তি স্থাপন করার সুযোগ পায়। এই জন্য তারা যিহোবার কাছে ও তাদের অভিষিক্ত ভাইদের কাছে অত্যন্ত কৃতজ্ঞ।
১৮. কোন্ ঘটনার সম্মুখীন হয়েও অপর মেষেরা আত্মিক ইস্রায়েলের “দেশ”-এ বিশ্বস্ততার সাথে থাকবে?
১৮ যখন মাগীয় গোগ্ ঈশ্বরের লোকেদের উপর শেষ আক্রমণ আনবে, তখন অপর মেষেরা তাদের অভিষিক্ত অবশিষ্টাংশদের সাথে সেই “অপ্রাচীর গ্রামপূর্ণ দেশে” স্থিরভাবে দাঁড়িয়ে থাকবে। অপর মেষ সেই “দেশ”-এ থাকবে যখন জাতিগণের উপর যে ধ্বংস আসবে তার থেকে পরিত্রাণ পাবে এবং ঈশ্বরের নতুন জগতে প্রবেশ করবে। (যিহিষ্কেল ৩৮:১১; ৩৯:১২, ১৩; দানিয়েল ১২:১; প্রকাশিত বাক্য ৭:৯, ১৪) বিশ্বস্তসহকারে থাকার দরুন, তাদের কখনও এই অপূর্ব স্থানটিকে পরিত্যাগ করতে হবে না।—যিশাইয় ১১:৯.
১৯, ২০. (ক) নতুন জগতে, “দেশ”-এর অধিবাসীরা কোন্ অপূর্ব তত্ত্বাবধান উপভোগ করবে? (খ) কোন্ জিনিসের প্রতি আমরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি?
১৯ প্রাচীন ইস্রায়েল মনুষ্য রাজাদের দ্বারা শাসিত হত আর তাদের ছিল লেবীয় যাজকবর্গ। নতুন জগতে তাদের দেখাশোনা করার জন্য খ্রীষ্টানদের আরও উত্তম ব্যবস্থা থাকবে। যিহোবার অধীনে তারা মহান যাজক ও রাজা যীশু খ্রীষ্ট এবং ১,৪৪,০০০ জন সহ-যাজক ও রাজাদের বশীভূত হবে—যাদের মধ্যে কয়েকজনকে তারা আগে পৃথিবীতে তাদের খ্রীষ্টীয় ভাই ও বোন হিসাবে জানত। (প্রকাশিত বাক্য ২১:১) আত্মিক দেশের বিশ্বস্ত বাসিন্দারা পৃথিবীতে পুনর্প্রতিষ্ঠিত আক্ষরিক পরমদেশে থাকবে, নতুন যিরূশালেম থেকে আগত আরোগ্যমূলক আশীর্বাদগুলিকে উপভোগ করবে।—যিশাইয় ৩২:১; প্রকাশিত বাক্য ২১:২; ২২:১, ২.
২০ যতই যিহোবার মহান স্বর্গীয় রথটি তাঁর উদ্দেশ্যকে সাধন করার জন্য অদম্য গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে, আমরা সকলেই অধীর আগ্রহে আমাদের উপর যে কার্যভার ন্যস্ত হয়েছে তা পরিপূর্ণ করে চলার চেষ্টা করছি। (যিহিষ্কেল ১:১-২৮) যখন সেই উদ্দেশ্যগুলি পরিশেষে সম্পাদিত হবে, তখন চিন্তা করে দেখুন যে কী আনন্দের সাথেই না যিহোবার মহিমা উদ্যাপিত হবে! তখন প্রকাশিত বাক্য ৫:১৩ পদে নথিভুক্ত ঐকতান সমস্ত সৃষ্টির দ্বারা ধ্বনিত হবে: “যিনি সিংহাসনে বসিয়া আছেন, তাঁহার প্রতি ও মেষশাবকের প্রতি ধন্যবাদ ও সমাদর ও গৌরব ও কর্ত্তৃত্ব যুগপর্য্যায়ের যুগে যুগে বর্ত্তুক।” আমাদের স্থান স্বর্গে বা পৃথিবীতে যেখানেই থাকুক না কেন আমরা কি সেই অপূর্ব প্রশংসার যে ঐকতান তার সাথে কন্ঠ মেলাতে আগ্রহী নই?
[পাদটীকাগুলো]
a “নূতন আকাশমন্ডল ও নূতন পৃথিবী,” (ইংরাজি), ওয়াচটাওয়ার বাইবেল অ্যান্ড ট্র্যাক্ট সোসাইটি অফ নিউ ইয়র্ক, ইনক., দ্বারা ১৯৫৩ সালে প্রকাশিত বইটির পৃষ্ঠা ৩২২-৩ দেখুন।
b পূর্ণ আলোচনার জন্য, “যিহোবার ব্যবস্থা, সেই ‘দত্ত’ ব্যক্তিরা” জুলাই ১, ১৯৯২ সালের প্রহরীদুর্গ সংস্করণে প্রকাশিত প্রবন্ধটি দেখুন।
c ঈশ্বতন্ত্রের মাধ্যমে মানবজাতির জন্য পরমদেশ পুনর্স্থাপন!, (ইংরাজি), ১৯৭২ সালে, ওয়াচটাওয়ার বাইবেল অ্যান্ড ট্র্যাক্ট সোসাইটি অফ নিউ ইয়র্ক, ইনক., দ্বারা প্রকাশিত বইটির ২৬৪-৯ পৃষ্ঠা দেখুন।
d ইব্রীয়: রাশেয়ালফেইস্রায়েল, অনুবাদিত কিলিয়ারকয় ইস্রায়েল, ইস্রায়েলের কিলিয়ার্ক সেপ্টুয়াজিন্ট-এ।
e “জাতিগণ জানবে যে আমিই যিহোবা”—কিভাব?, ১৯৭১ সালে ওয়াচটাওয়ার বাইবেল অ্যান্ড ট্র্যাক্ট সোসাইটি অফ নিউ ইয়র্ক, ইনক., দ্বারা প্রকাশিত বইটির পৃষ্ঠা ৪০১-৭ দেখুন।
আপনি কিভাবে উত্তর দেবেন?
◻ ১৯১৯ সালে কোন্ “দেশ” পুনরধিষ্ঠিত হয় এবং এটি কিভাবে অধিবাসীদের দ্বারা পরিপূর্ণ হয়?
◻ ঈশ্বরের পুনরধিষ্ঠিত “দেশ”-এ অপর মেষেদের কিভাবে অতিরিক্ত দায়িত্বগুলি দেওয়া হয়?
◻ বিস্তর লোকেদের সদস্যেরা কোন্ অর্থে “যিবূষীয়ের তুল্য”? “যিহূদার মধ্যে অধ্যক্ষের তুল্য”?
◻ কতদিন বিশ্বস্ত অপর মেষেরা “দেশ”-এ বাস করবে?
[২৩ পৃষ্ঠার চিত্র]
আধুনিক পলেষ্টীয়রা হবে “যিহূদার মধ্যে শেকতুল্য”
[Pictures on page 24]
অভিষিক্ত ও অপর মেষেরা একসাথে আত্মিক দেশে কাজ করে