-
যে-উত্তরাধিকারের ওপর আপনি নির্ভর করতে পারেন২০০৪ প্রহরীদুর্গ | অক্টোবর ১
-
-
যে-উত্তরাধিকারের ওপর আপনি নির্ভর করতে পারেন
“আপনি যদি কারও কাছ থেকে চিঠির মাধ্যমে এমন একটা বিজ্ঞপ্তি পান, যেখানে বলা আছে যে আপনার জন্য দাবিদারহীন এক উত্তরাধিকার অপেক্ষা করে আছে, তা হলে সতর্ক থাকুন। আপনি ধূর্ত প্রতারকের লক্ষ্যবস্তু হতে পারেন।”
এই সাবধানবাণীই যুক্তরাষ্ট্রের ডাক পরিদর্শন বিভাগ, এর ওয়েব সাইটে দিয়েছিল। কেন? কারণ হাজার হাজার লোক চিঠিতে এই কথা সম্বলিত একটা বিজ্ঞপ্তি পেয়েছিল, ‘আপনার এক আত্মীয় মারা গিয়েছেন আর আপনার জন্য এক উত্তরাধিকার রেখে গিয়েছেন।’ এর ফলে, অনেকে ‘সম্পত্তি-তথ্যের’ জন্য ৩০ বা এরও বেশি ডলারসহ চিঠি পাঠিয়েছিল, যা কোথায় সেই উত্তরাধিকার রয়েছে এবং কীভাবে তা দাবি করা যেতে পারে, সেই সম্বন্ধে ব্যাখ্যা করবে বলে মনে করা হয়েছিল। তারা অত্যন্ত হতাশ হয়েছিল। প্রত্যেক উত্তরদাতা একই তথ্য পেয়েছিল—আর কারও পক্ষে কোনোকিছুর উত্তরাধিকারী হওয়ার সম্ভাবনা প্রায় শূন্য ছিল।
এই ধরনের পরিকল্পনাগুলো, উত্তরাধিকার লাভ করার বিষয়ে লোকেদের স্বাভাবিক আকাঙ্ক্ষার কাছে আকর্ষণীয় বলে মনে হয়। কিন্তু, বাইবেল অনুমোদন সহকারে সেই ব্যক্তিদের কথা বলে, যারা এক অধিকার বা উত্তরাধিকারের ব্যবস্থা করে, যখন এটি বলে: “সৎ লোক পুত্ত্রদের পুত্ত্রগণের জন্য অধিকার রাখিয়া যায়।” (হিতোপদেশ ১৩:২২) বাস্তবিকপক্ষে, পর্বতেদত্ত উপদেশে এই সুপরিচিত এবং কাঙ্ক্ষিত বিবৃতি অন্য আর কেউ নন কিন্তু স্বয়ং যিশু খ্রিস্ট দিয়েছেন: “ধন্য যাহারা মৃদুশীল, কারণ তাহারা দেশের [“পৃথিবীর,” NW] অধিকারী হইবে।”—মথি ৫:৫.
যিশুর কথাগুলো, প্রাচীন ইস্রায়েলের রাজা দায়ূদ কয়েক শতাব্দী আগে যা লিখতে অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন, তা আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয়: “মৃদুশীলেরা দেশের [“পৃথিবীর,” NW] অধিকারী হইবে, এবং শান্তির বাহুল্যে আমোদ করিবে।”—গীতসংহিতা ৩৭:১১.
“পৃথিবীর অধিকারী”—কতই না রোমাঞ্চকর এক প্রত্যাশা! কিন্তু, আমরা কি নিশ্চিত হতে পারি যে, এটা শুধু আরেকটা চাতুরীপূর্ণ পরিকল্পনা নয়, যা লোকেদের কোনোকিছু পাওয়া থেকে বঞ্চিত করার জন্য তৈরি করা হয়েছে? হ্যাঁ, আমরা হতে পারি। যেহেতু পৃথিবী হল যিহোবার বিস্ময়কর সৃষ্টির একটা অংশ, তাই নির্মাতা এবং মালিক হিসেবে তিনি যাকে বাছাই করেন, তাকেই এটি দেওয়ার বৈধ অধিকার তাঁর রয়েছে। রাজা দায়ূদের মাধ্যমে যিহোবা তাঁর প্রিয় পুত্র যিশু খ্রিস্টের কাছে এই ভবিষ্যদ্বাণীমূলক প্রতিজ্ঞা করেছিলেন: “আমার নিকটে যাচ্ঞা কর, আমি জাতিগণকে তোমার দায়াংশ করিব, পৃথিবীর প্রান্ত সকল তোমার অধিকারে আনিয়া দিব।” (গীতসংহিতা ২:৮) এই কারণে প্রেরিত পৌল যিশুর সম্বন্ধে এভাবে বর্ণনা করেছেন, “ইহাকেই [ঈশ্বর] সর্ব্বাধিকারী দায়াদ করিয়াছেন।” (ইব্রীয় ১:২) তাই, আমরা পূর্ণ আস্থা রাখতে পারি যে, যিশু যখন বলেছিলেন, মৃদুশীল ব্যক্তি “পৃথিবীর অধিকারী হইবে,” তখন তিনি তা সরল বিশ্বাস সহকারে বলেছিলেন আর তাঁর প্রতিজ্ঞা পরিপূর্ণ করার যথাযথ ক্ষমতা তাঁর রয়েছে।—মথি ২৮:১৮.
তা হলে, গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নটা হল কীভাবে সেই প্রতিজ্ঞা সত্য হবে? আজকে আমরা যেখানেই তাকাই না কেন, মনে হয় যেন আগ্রাসী এবং উচ্চমনা ব্যক্তিরা সবচেয়ে লাভবান হচ্ছে এবং তারা যা চাচ্ছে তা-ই অধিকার করছে। তা হলে, মৃদুশীল ব্যক্তিরা কীসের অধিকার লাভ করবে? এ ছাড়া, পৃথিবী দূষণসহ গুরুতর সমস্যাগুলোর দ্বারা জর্জরিত এবং লোভী ও সংকীর্ণমনা লোকেরা এর সম্পদগুলোকে স্বীয় স্বার্থে কাজে লাগাচ্ছে। তা হলে, উত্তরাধিকারী হওয়ার মতো এমন এক পৃথিবী কি থাকবে? এই প্রশ্নগুলো এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের উত্তর পাওয়ার জন্য আমরা আপনাকে পরের প্রবন্ধ পড়তে আমন্ত্রণ জানাচ্ছি।
-
-
“মৃদুশীলেরা পৃথিবীর অধিকারী হইবে”—কীভাবে?২০০৪ প্রহরীদুর্গ | অক্টোবর ১
-
-
“মৃদুশীলেরা পৃথিবীর অধিকারী হইবে”—কীভাবে?
“আপনি হয়তো যিশুর এই হৃদয়গ্রাহী কথাগুলো জানেন যে, ‘মৃদুশীলেরা দেশের [“পৃথিবীর,” NW] অধিকারী হইবে।’ কিন্তু, লোকেরা একে অপরের প্রতি এবং পৃথিবীর ক্ষেত্রে যা করছে, সেই সমস্তকিছুর পরিপ্রেক্ষিতে আপনার কি মনে হয় যে, মৃদুশীল ব্যক্তির জন্য উত্তরাধিকার লাভ করার মতো কোনোকিছু থাকবে?”—মথি ৫:৫; গীতসংহিতা ৩৭:১১.
মিরিয়াম নামে যিহোবার একজন সাক্ষি, বাইবেলের আলোচনা শুরু করার জন্য এই প্রশ্ন ব্যবহার করেছিলেন। যে-ব্যক্তির সঙ্গে তিনি কথা বলেছিলেন, তিনি উত্তর দিয়েছিলেন যে যিশু যদি এই প্রতিজ্ঞা করে থাকেন, তা হলে পৃথিবী এক বিধ্বস্ত অথবা অনাবাসযোগ্য স্তূপ নয় বরং এর নামের যোগ্য অনুসারে অবশ্যই এক উত্তরাধিকার হবে।
নিশ্চিতভাবে, সেটা ছিল এক আশাবাদী উত্তর। কিন্তু, এইরকম ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি রাখার কোনো কারণ কি আমাদের রয়েছে? অবশ্যই রয়েছে, কারণ বাইবেল আমাদের এটা বিশ্বাস করার দৃঢ় কারণ জোগায় যে, প্রতিজ্ঞা পূর্ণ হবেই হবে। আসলে, সেই প্রতিজ্ঞার পরিপূর্ণতা মানবজাতি এবং পৃথিবীর জন্য ঈশ্বরের উদ্দেশ্যের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে যুক্ত। আর আমাদের নিশ্চয়তা দেওয়া হয়েছে যে, ঈশ্বর যা উদ্দেশ্য করেন, তা তিনি পূর্ণ করবেন। (যিশাইয় ৫৫:১১) তা হলে, মানবজাতির জন্য আদিতে ঈশ্বরের উদ্দেশ্য কী ছিল আর সেগুলোর সমস্তকিছু কীভাবে সম্পাদিত হবে?
পৃথিবীর জন্য ঈশ্বরের চিরস্থায়ী উদ্দেশ্য
যিহোবা ঈশ্বর এক নির্দিষ্ট উদ্দেশ্যে পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন। “আকাশমণ্ডলের সৃষ্টিকর্ত্তা সদাপ্রভু, স্বয়ং ঈশ্বর, যিনি পৃথিবীকে সংগঠন করিয়া নির্ম্মাণ করিয়াছেন, তাহা স্থাপন করিয়াছেন, ও অনর্থক সৃষ্টি না করিয়া বাসস্থানার্থে নির্ম্মাণ করিয়াছেন, তিনি এই কথা কহেন, আমিই সদাপ্রভু, আর কেহ নয়।” (যিশাইয় ৪৫:১৮) তাই, পৃথিবী সুনির্দিষ্টভাবে মানবজাতির বসবাসের জন্য তৈরি করা হয়েছিল। অধিকন্তু, পৃথিবীর জন্য ঈশ্বরের উদ্দেশ্য হল যে, এটা মানবজাতির চিরস্থায়ী বাসস্থান হবে। “তিনি পৃথিবীকে তাহার ভিত্তিমূলের উপরে স্থাপন করিয়াছেন; তাহা অনন্তকালেও বিচলিত হইবে না।”—গীতসংহিতা ১০৪:৫; ১১৯:৯০.
পৃথিবীর বিষয়ে ঈশ্বরের উদ্দেশ্য, প্রথম মানব যুগলকে তিনি যে-কার্যভার দিয়েছিলেন, সেটার মধ্যেও স্পষ্ট হয়েছিল। আদম এবং হবাকে যিহোবা বলেছিলেন: “তোমরা প্রজাবন্ত ও বহুবংশ হও, এবং পৃথিবী পরিপূর্ণ ও বশীভূত কর, আর সমুদ্রের মৎস্যগণের উপরে, আকাশের পক্ষিগণের উপরে, এবং ভূমিতে গমনশীল যাবতীয় জীবজন্তুর উপরে কর্ত্তৃত্ব কর।” (আদিপুস্তক ১:২৮) আদম ও হবাকে আস্থা সহকারে যে-পৃথিবী দেওয়া হয়েছিল, তা তাদের এবং তাদের বংশধরদের জন্য অনন্তকালীন বাসস্থান হওয়ার কথা ছিল। “স্বর্গ সদাপ্রভুরই স্বর্গ,” বহু শতাব্দী পরে গীতরচক ঘোষণা করেছিলেন, “কিন্তু তিনি পৃথিবী মনুষ্য-সন্তানদিগকে দিয়াছেন।”—গীতসংহিতা ১১৫:১৬.
সেই বিস্ময়কর প্রত্যাশাকে উপলব্ধি করার জন্য আদম ও হবা আর সেইসঙ্গে তাদের বংশধরদের প্রত্যেককে অবশ্যই সৃষ্টিকর্তা ও জীবনদাতা যিহোবা ঈশ্বরকে তাদের সার্বভৌম হিসেবে গ্রহণ করতে এবং তাঁর বাধ্য থাকতে ইচ্ছুক হতে হতো। এই ক্ষেত্রে যিহোবা সন্দেহের কোনো অবকাশ রাখেননি, যখন তিনি মানুষকে এই আজ্ঞা দিয়েছিলেন: “তুমি এই উদ্যানের সমস্ত বৃক্ষের ফল স্বচ্ছন্দে ভোজন করিও; কিন্তু সদসদ্-জ্ঞানদায়ক যে বৃক্ষ, তাহার ফল ভোজন করিও না, কেননা যে দিন তাহার ফল খাইবে, সেই দিন মরিবেই মরিবে।” (আদিপুস্তক ২:১৬, ১৭) আদম ও হবাকে চিরকাল এদন বাগানে বাস করতে হলে, তাদেরকে অবশ্যই সেই সহজ এবং স্পষ্টভাবে বর্ণিত আজ্ঞা পালন করতে হতো। তা করা, স্বর্গীয় পিতা তাদের জন্য যা কিছু করেছেন, সেগুলোর সমস্তকিছুর জন্য তাদের কৃতজ্ঞতার এক অভিব্যক্তি হতো।
আদম ও হবাকে যে-আজ্ঞা দেওয়া হয়েছিল, তা লঙ্ঘন করার মাধ্যমে তারা যখন স্বেচ্ছায় ঈশ্বরের অবাধ্য হয়েছিল, তখন বাস্তবিকপক্ষে তারা তাঁকে পরিত্যাগ করেছিল, যিনি তাদের সেই সমস্তকিছু জুগিয়েছিলেন, যা তাদের ছিল। (আদিপুস্তক ৩:৬) তা করার মাধ্যমে তারা শুধু নিজেদের জন্যই নয় কিন্তু সেইসঙ্গে তাদের বংশধরের জন্যও অপূর্ব পরমদেশ গৃহ হারিয়েছিল। (রোমীয় ৫:১২) প্রথম দম্পতির অবাধ্যতা কি পৃথিবী সৃষ্টি করার বিষয়ে ঈশ্বরের উদ্দেশ্যকে ব্যাহত করেছিল?
পরিবর্তন নেই এমন এক ঈশ্বর
ঈশ্বর তাঁর ভাববাদী মালাখির মাধ্যমে ঘোষণা করেছিলেন: “আমি সদাপ্রভু, আমার পরিবর্ত্তন নাই।” (মালাখি ৩:৬) এই পদের ওপর মন্তব্য করতে গিয়ে ফরাসি বাইবেল পণ্ডিত এল. ফিয়ঁ মন্তব্য করেছিলেন যে, এই ঘোষণা ঐশিক প্রতিজ্ঞাগুলো সম্পাদনের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। “যিহোবা তাঁর বিদ্রোহী লোকেদের সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করে দিতে পারতেন,” ফিয়ঁ লিখেছিলেন, “কিন্তু তাঁর প্রতিজ্ঞাগুলোর ক্ষেত্রে তিনি অপরিবর্তনীয় হওয়ায়, যা-ই হোক না কেন তিনি অতীতে যে-প্রতিজ্ঞাগুলো করেছেন, সেগুলোর ক্ষেত্রে বিশ্বস্ত থাকবেন।” কোনো ব্যক্তিবিশেষ, কোনো জাতি অথবা সমস্ত মানবজাতির ক্ষেত্রেই হোক না কেন, ঈশ্বরের প্রতিজ্ঞা ভুলে যাওয়া হবে না বরং সেগুলো তাঁর উপযুক্ত সময়ে পরিপূর্ণ করা হবে। “তিনি আপন নিয়ম চিরকাল স্মরণ করেন, সেই বাক্য তিনি সহস্র পুরুষপরম্পরার প্রতি আদেশ করিয়াছেন।”—গীতসংহিতা ১০৫:৮.
কিন্তু, কীভাবে আমরা নিশ্চিত হতে পারি যে, পৃথিবীর বিষয়ে যিহোবা তাঁর আদি উদ্দেশ্য পরিবর্তন করেননি? আমরা এই বিষয়ে নিশ্চিত হতে পারি কারণ ঈশ্বরের অনুপ্রাণিত বাক্য বাইবেল জুড়ে আমরা ঐশিক উদ্দেশ্যের এই উল্লেখ সম্বন্ধে পাই যে, পৃথিবী বাধ্য মানবজাতিকে দেওয়া হবে। (গীতসংহিতা ২৫:১৩, NW; ৩৭:৯, ২২, ২৯, ৩৪, NW) এ ছাড়াও, যিহোবার দ্বারা আশীর্বাদপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের সম্বন্ধে শাস্ত্র বলে যে তারা নিরাপদে বাস করে এবং প্রত্যেকে “আপন আপন দ্রাক্ষালতার ও আপন আপন ডুমুরবৃক্ষের তলে” বসে আর “কেহ তাহাদিগকে ভয় দেখাইবে না।” (মীখা ৪:৪; যিহিষ্কেল ৩৪:২৮) যে-ব্যক্তিরা যিহোবার দ্বারা মনোনীত, তারা “গৃহ নির্ম্মাণ করিয়া তাহার মধ্যে বসতি করিবে, দ্রাক্ষাক্ষেত্র প্রস্তুত করিয়া তাহার ফল ভোগ করিবে।” তারা এমনকি ক্ষেত্রের পশুদের সঙ্গেও শান্তি উপভোগ করবে।—যিশাইয় ১১:৬-৯; ৬৫:২১, ২৫.
বাইবেল আরেকটা উপায়ে ঈশ্বরের প্রতিজ্ঞার পূর্বাভাস দেয়। রাজা শলোমনের রাজত্বের সময়ে ইস্রায়েল জাতি শান্তি এবং সমৃদ্ধির সময় উপভোগ করেছিল। তার শাসনের অধীনে, “শলোমনের সমস্ত অধিকার-সময়ে দান অবধি বের্-শেবা পর্য্যন্ত যিহূদা ও ইস্রায়েল প্রত্যেক জন আপন আপন দ্রাক্ষালতার ও আপন আপন ডুমুর বৃক্ষের তলে নির্ভয়ে বাস করিত।” (১ রাজাবলি ৪:২৫) বাইবেল বলে যে, যিশু “শলোমন হইতেও মহান্” এবং তাঁর রাজত্ব সম্বন্ধে গীতরচক ভবিষ্যদ্বাণীমূলকভাবে ঘোষণা করেছিলেন: “তাঁহার সময়ে ধার্ম্মিক লোক প্রফুল্ল হইবে, চন্দ্রের স্থিতিকাল পর্য্যন্ত প্রচুর শান্তি হইবে।” আর সেই সময়ে “দেশমধ্যে পর্ব্বত-শিখরে প্রচুর শস্য হইবে।”—লূক ১১:৩১; গীতসংহিতা ৭২:৭, ১৬.
তাঁর কথা অনুযায়ী যিহোবা ঈশ্বর নিশ্চিত করবেন যে, প্রতিজ্ঞাত উত্তরাধিকার যেন শুধু প্রাপ্তিসাধ্যই না হয় কিন্তু সেইসঙ্গে এর সমস্ত সৌন্দর্যও যাতে পুনর্স্থাপিত হয়। প্রকাশিত বাক্য ২১:৪ পদে ঈশ্বরের বাক্য আমাদের বলে যে, প্রতিজ্ঞাত নতুন জগতে ঈশ্বর “[লোকেদের] সমস্ত নেত্রজল মুছাইয়া দিবেন; এবং মৃত্যু আর হইবে না; শোক বা আর্ত্তনাদ বা ব্যথাও আর হইবে না; কারণ প্রথম বিষয় সকল লুপ্ত হইল।” যে-বিষয়ে প্রতিজ্ঞা করা হয়েছে, তা প্রকৃতই পরমদেশ হবে।—লূক ২৩:৪৩.
যেভাবে প্রতিজ্ঞাত উত্তরাধিকারের অংশী হওয়া যায়
পৃথিবীর পরমদেশে রূপান্তর সেই সরকারের অধীনে ঘটবে, যা স্বর্গ থেকে রাজত্ব করবে, যে-রাজ্যের রাজা হলেন যিশু খ্রিস্ট। (মথি ৬:৯, ১০) প্রথমে সেই রাজ্য “পৃথিবীনাশকদিগকে নাশ” করবে। (প্রকাশিত বাক্য ১১:১৮; দানিয়েল ২:৪৪) এরপর “শান্তিরাজ” হিসেবে যিশু খ্রিস্ট এই ভবিষ্যদ্বাণীমূলক কথাগুলো পরিপূর্ণ করবেন: “কর্ত্তৃত্ববৃদ্ধির ও শান্তির সীমা থাকিবে না।” (যিশাইয় ৯:৬, ৭) সেই রাজ্যের অধীনে লক্ষ লক্ষ মানুষ পৃথিবীর উত্তরাধিকারী হওয়ার সুযোগ পাবে, যাদের অন্তর্ভুক্ত সেই ব্যক্তিরাও যারা পুনরুত্থানের মাধ্যমে জীবন ফিরে পাবে।—যোহন ৫:২৮, ২৯; প্রেরিত ২৪:১৫.
কারা সেই অপূর্ব উত্তরাধিকার লাভ করবে? যিশুর কথাগুলো বিবেচনা করুন: “ধন্য যাহারা মৃদুশীল, কারণ তাহারা দেশের [“পৃথিবীর,” NW] অধিকারী হইবে।” (মথি ৫:৫) মৃদুশীল হওয়ার অর্থ কী? অভিধানগুলো “মৃদু” শব্দটিকে সাধারণত কোমল, পরিমিত, বাধ্য, শান্ত এমনকি ভীরু হিসেবে বর্ণনা করে। কিন্তু, মূল যে-গ্রিক শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে, সেটা দিয়ে আরও বেশি কিছুকে বোঝায়। এই শব্দটিতে “কোমলতা রয়েছে,” উইলিয়াম বার্কলের নিউ টেস্টামেন্ট ওয়ার্ডবুক বলে, “তবে সেই কোমলতার পিছনে ইস্পাতের ন্যায় শক্তি রয়েছে।” এটা এমন এক মানসিক প্রবণতাকে বোঝায়, যা একজন ব্যক্তিকে অসন্তুষ্ট অথবা প্রতিশোধের চিন্তাভাবনা ছাড়াই ক্ষতি সহ্য করতে সমর্থ করে আর এর সমস্তকিছুর কারণ হল ঈশ্বরের সঙ্গে উত্তম সম্পর্ক এবং সেই সম্পর্ক তার জন্য শক্তির এক উৎসে পরিণত হয়।—যিশাইয় ১২:২; ফিলিপীয় ৪:১৩.
মৃদুশীল ব্যক্তি তার ব্যক্তিগত জীবনের সমস্ত ক্ষেত্রে নম্রতার সঙ্গে ঈশ্বরের মানগুলো গ্রহণ করেন; তিনি নিজের দৃষ্টিভঙ্গি অথবা অন্যদের মতামত অনুযায়ী চলার ক্ষেত্রে নাছোড়বান্দা নন। এ ছাড়া, তিনি শিখতে এবং যিহোবার দ্বারা শিক্ষা পেতেও ইচ্ছুক। গীতরচক দায়ূদ লিখেছিলেন: “[যিহোবা] নম্রদিগকে ন্যায়বিচারের পথে চালান, নম্রদিগকে আপন পথ দেখাইয়া দেন।”—গীতসংহিতা ২৫:৯; হিতোপদেশ ৩:৫, ৬.
আপনি কি সেই ‘নম্রদিগের’ মধ্যে থাকবেন, যারা পৃথিবীর অধিকারী হবে? যিহোবার বাক্য অধ্যবসায়ের সঙ্গে অধ্যয়ন করার মাধ্যমে তাঁকে এবং তাঁর ইচ্ছা জেনে ও সেইসঙ্গে যা জেনেছেন তা পালন করে আপনিও পার্থিব এক পরমদেশের অধিকারী হওয়ার এবং সেখানে চিরকাল বাস করার জন্য অপেক্ষা করতে পারেন।—যোহন ১৭:৩.
-