পাঠক-পাঠিকাদের থেকে প্রশ্নসকল
যিশু তাঁর শ্রোতাদের বলেছিলেন: “তোমাদের স্বর্গীয় পিতা যেমন সিদ্ধ, তোমরাও, তেমনি সিদ্ধ হও।” কীভাবে আজকে মানুষেরা ‘সিদ্ধ হইতে’ পারে?—মথি ৫:৪৮.
এই প্রশ্নের উত্তরটা, বাইবেলে “সিদ্ধ” এবং “সিদ্ধতা” শব্দগুলো যেভাবে ব্যবহৃত হয়েছে, সেটা বোঝার ওপর নির্ভর করে। শাস্ত্রে যে-সমস্ত বিষয়কে “সিদ্ধ” বলে বর্ণনা করা হয়েছে, সেগুলোর সমস্তই হয়তো সম্পূর্ণ অর্থে সিদ্ধ নয়। অবশ্য, যিহোবা হলেন সম্পূর্ণ অর্থে সিদ্ধতার অধিকারী। মানুষ কিংবা বিভিন্ন বিষয় শুধুমাত্র আপেক্ষিক অর্থে সিদ্ধ হতে পারে। বাইবেলে যে-ইব্রীয় ও গ্রিক শব্দগুলোকে “সিদ্ধ” হিসেবে অনুবাদ করা হয়েছে, প্রায়ই সেগুলোর অর্থ হল, কোনো কর্তৃপক্ষের স্থাপিত মান অনুযায়ী “সম্পূর্ণ,” “পরিপক্ব” অথবা “নির্দোষ।”
আদম এবং হবাকে নৈতিক, আধ্যাত্মিক ও শারীরিক দিক দিয়ে সিদ্ধ হিসেবে সৃষ্টি করা হয়েছিল। তারা তাদের সৃষ্টিকর্তার স্থাপিত মান অনুযায়ী সিদ্ধ ছিল। তাদের অবাধ্যতার কারণে তারা সেই মান বজায় রাখতে ব্যর্থ হয়েছিল আর তাই তারা নিজেদের এবং তাদের বংশধরদের জন্য সিদ্ধতা হারিয়েছিল। এভাবে আদমের মাধ্যমেই পাপ, অসিদ্ধতা এবং মৃত্যু মানবজাতির মধ্যে প্রবেশ করেছিল।—রোমীয় ৫:১২.
কিন্তু, যিশু যেমন পর্বতেদত্ত উপদেশে স্পষ্টভাবে তুলে ধরেছিলেন, এমনকী অসিদ্ধ লোকেরাও আপেক্ষিক অর্থে সিদ্ধ হতে পারে। সেই বক্তৃতায় তিনি সিদ্ধ বা সম্পূর্ণ প্রেমের মান স্থাপন করেছিলেন। এটা হল সেই প্রেম, যা ঈশ্বর মানবজাতির প্রতি দেখিয়েছেন। যিশু বলেছিলেন: “তোমরা আপন আপন শত্রুদিগকে প্রেম করিও, এবং যাহারা তোমাদিগকে তাড়না করে তাহাদের জন্য প্রার্থনা করিও; যেন তোমরা আপনাদের স্বর্গস্থ পিতার সন্তান হও, কারণ তিনি ভাল মন্দ লোকদের উপরে আপনার সূর্য্য উদিত করেন, এবং ধার্ম্মিক অধার্ম্মিকগণের উপরে জল বর্ষান।” (মথি ৫:৪৪, ৪৫) সেই পর্যায় পর্যন্ত প্রেম দেখানোর মাধ্যমে, যিশুর শিষ্যরা ঈশ্বরের নিখুঁত উদাহরণ অনুকরণ করতে পারত।
আজকে, বিশ্বব্যাপী যিহোবার সাক্ষিরা অন্যদের প্রতি প্রেম দেখানোর সেই উচ্চ মান বজায় রাখার জন্য কঠোর প্রচেষ্টা করে থাকে। তারা সমস্ত পটভূমির, জাতির এবং ধর্মের লোকেদেরকে বাইবেলের সত্যের সঠিক জ্ঞান জানতে সাহায্য করার ব্যাপারে আকাঙ্ক্ষী। বর্তমানে দ্বীপ ও দেশ মিলিয়ে ২৩৬টা জায়গায় সাক্ষিরা ৭০,০০,০০০-রও বেশি আগ্রহী ব্যক্তির সঙ্গে বাইবেল অধ্যয়ন পরিচালনা করছে।
“কেননা যাহারা তোমাদিগকে প্রেম করে, তাহাদিগকেই প্রেম করিলে তোমাদের কি পুরস্কার হইবে?” যিশু জিজ্ঞেস করেছিলেন। “করগ্রাহীরাও কি সেই মত করে না? আর তোমরা যদি কেবল আপন আপন ভ্রাতৃগণকে মঙ্গলবাদ কর, তবে অধিক কি কর্ম্ম কর? পরজাতীয়েরাও কি সেইরূপ করে না?” (মথি ৫:৪৬, ৪৭) সত্য খ্রিস্টানরা নির্দিষ্ট কোনো শিক্ষাগত বা জাতিগত পটভূমি থেকে আসা লোকেদের প্রতি পক্ষপাতিত্ব দেখায় না; কিংবা তারা শুধুমাত্র সেই ব্যক্তিদের প্রতিই ভালোবাসা দেখায় না, যারা এর প্রতিদান দিতে সমর্থ। এর পরিবর্তে, তারা দরিদ্র ও অসুস্থ এবং যুবক ও বয়স্ক ব্যক্তিদের সাহায্য করে থাকে। এই উপায়গুলোর মাধ্যমে, খ্রিস্টানরা যিহোবার প্রেমকে অনুকরণ করতে পারে আর এভাবে আপেক্ষিক অর্থে সিদ্ধ হতে পারে।
আদম যে-সিদ্ধতা হারিয়েছিল, তা কি আমরা কখনো উপভোগ করতে সমর্থ হব? হ্যাঁ, যিশুর মুক্তির মূল্যরূপ বলিদানে বিশ্বাস করার মাধ্যমে বাধ্য মানবজাতি, খ্রিস্টের হাজার বছরের রাজত্বের সময়, যখন ‘ঈশ্বরের পুত্র দিয়াবলের কার্য্য সকল লোপ করিবেন,’ তখন সম্পূর্ণ সিদ্ধতায় পৌঁছাবে।—১ যোহন ৩:৮.