আপনি কি যিহোবার সার্বভৌমত্বকে সমর্থন করেন?
“জাতিগণের মধ্যে বল, সদাপ্রভু রাজত্ব করেন।”—গীতসংহিতা ৯৬:১০.
১, ২. (ক) সাধারণ কাল প্রায় ২৯ সালের অক্টোবর মাসে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কোন ঘটনা ঘটেছিল? (খ) যিশুর জন্য সেই ঘটনার অর্থ কী ছিল?
সাধারণ কাল প্রায় ২৯ সালের অক্টোবর মাসে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটা ঘটনা ঘটেছিল, যা পৃথিবীতে আগে কখনো দেখা যায়নি। সুসমাচার লেখক মথি বর্ণনা করেন: “পরে যীশু বাপ্তাইজিত হইয়া অমনি জল হইতে উঠিলেন; আর দেখ, তাঁহার নিমিত্ত স্বর্গ খুলিয়া গেল, এবং [যোহন বাপ্তাইজক] ঈশ্বরের আত্মাকে কপোতের ন্যায় নামিয়া [যিশুর] উপরে আসিতে দেখিলেন। আর দেখ, স্বর্গ হইতে এই বাণী হইল, ‘ইনিই আমার প্রিয় পুত্ত্র, ইঁহাতেই আমি প্রীত।’” এটা ছিল সেই কয়েকটা ঘটনার মধ্যে একটা, যা চারজন সুসমাচার লেখকই লিপিবদ্ধ করেছে।—মথি ৩:১৬, ১৭; মার্ক ১:৯-১১; লূক ৩:২১, ২২; যোহন ১:৩২-৩৪.
২ যিশুর ওপর পবিত্র আত্মার দৃশ্যত বর্ষণ তাঁকে অভিষিক্ত ব্যক্তি হিসেবে শনাক্ত করেছিল, যে-শব্দের অর্থ হল মশীহ অথবা খ্রিস্ট। (যোহন ১:৩৩) অবশেষে, সেই প্রতিজ্ঞাত ‘বংশ’ আবির্ভূত হয়েছিল! যোহন বাপ্তাইজকের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা ব্যক্তিই ছিলেন তিনি, যাঁর পাদমূল শয়তান চূর্ণ করবে এবং যিনি যিহোবা ও তাঁর সার্বভৌমত্বের প্রধান শত্রুর মস্তক চূর্ণ করবেন। (আদিপুস্তক ৩:১৫) সেই সময় থেকে, যিশু পূর্ণরূপে অবগত ছিলেন যে, ঈশ্বরের সার্বভৌমত্ব ও রাজ্যের বিষয়ে যিহোবার উদ্দেশ্য পরিপূর্ণ করার জন্য তাঁকে আপ্রাণ চেষ্টা করতে হবে।
৩. যিহোবার সার্বভৌমত্বকে সমর্থন করার জন্য তাঁকে যে-ভূমিকা পালন করতে হয়েছিল, সেটার জন্য যিশু কীভাবে নিজেকে প্রস্তুত করেছিলেন?
৩ তাঁকে যে-কাজ দেওয়া হয়েছে, সেটার জন্য প্রস্তুত হতে “যীশু পবিত্র আত্মায় পূর্ণ হইয়া যর্দ্দন হইতে ফিরিয়া আসিলেন, এবং . . . সেই আত্মার আবেশে প্রান্তর মধ্যে চালিত হইলেন।” (লূক ৪:১; মার্ক ১:১২) সেখানে শয়তানের দ্বারা উত্থাপিত সার্বভৌমত্বের বিচার্য বিষয় ও যিহোবার সার্বভৌমত্বকে সমর্থন করার জন্য তাঁকে যে-কাজ করতে হবে, সেই সম্বন্ধে গভীরভাবে ধ্যান করার জন্য যিশুর হাতে ৪০ দিন পর্যন্ত সময় ছিল। সেই বিচার্য বিষয়ের সঙ্গে স্বর্গের ও পৃথিবীর বুদ্ধিবিশিষ্ট সমস্ত প্রাণী জড়িত। তাই, আমাদের যিশুর বিশ্বস্ত কাজ বিবেচনা করা এবং আমরাও যে যিহোবার সার্বভৌমত্বকে সমর্থন করতে চাই, তা প্রদর্শন করার জন্য আমাদের কী করতে হবে, তা দেখা উচিত।—ইয়োব ১:৬-১২; ২:২-৬.
সার্বভৌমত্বের বিচার্য বিষয়টা উত্থাপন করা হয়েছিল
৪. শয়তান এমন কোন পদক্ষেপ নিয়েছিল, যা সার্বভৌমত্বের বিচার্য বিষয়কে উত্থাপন করেছিল?
৪ অবশ্য, সবেমাত্র উল্লেখিত কোনো ঘটনাই শয়তানের নজর এড়ায়নি। সে দেরি না করেই ঈশ্বরের ‘নারীর’ প্রধান ‘বংশের’ ওপর আক্রমণ নিয়ে এসেছিল। (আদিপুস্তক ৩:১৫) শয়তান তিনবার যিশুকে প্রলুব্ধ করতে চেয়েছিল, এই প্রস্তাব দিয়েছিল যে, তাঁর পিতা যা চান সেটা না করে যিশুর সেই বিষয়টাই করা উচিত, যেটা তাঁর কাছে সুবিধাজনক বলে মনে হয়। বিশেষভাবে তৃতীয় প্রলোভনের সময় সার্বভৌমত্বের বিচার্য বিষয়টা উত্থাপন করা হয়েছিল। যিশুকে “জগতের সমস্ত রাজ্য ও সেই সকলের প্রতাপ” দেখিয়ে শয়তান নির্লজ্জভাবে যিশুকে বলেছিল: “তুমি যদি ভূমিষ্ঠ হইয়া আমাকে প্রণাম কর, এই সমস্তই আমি তোমাকে দিব।” ‘জগতের সমস্ত রাজ্যের’ ওপর বাস্তবিকই শয়তানের নিয়ন্ত্রণ আছে, তা পুরোপুরি অবগত থাকায় যিশু সার্বভৌমত্বের বিচার্য বিষয়ে তাঁর অবস্থান কোথায়, তা এই উত্তর দেওয়ার মাধ্যমে দেখিয়েছিলেন: “দূর হও, শয়তান; কেননা লেখা আছে, “তোমার ঈশ্বর প্রভুকেই প্রণাম করিবে, কেবল তাঁহারই আরাধনা করিবে।”—মথি ৪:৮-১০.
৫. যিশুকে কোন কঠিন কার্যভার পরিপূর্ণ করতে হয়েছিল?
৫ যিশুর জীবনধারা স্পষ্টভাবে দেখিয়েছিল যে, তাঁর জন্য যিহোবার সার্বভৌমত্বকে সমর্থন করাই ছিল প্রধান লক্ষ্য। যিশু ভাল করেই জানতেন যে, ঈশ্বরের সার্বভৌমত্বের ন্যায্যতা প্রমাণ করার জন্য শয়তানের হাতে মৃত্যু—ভবিষ্যদ্বাণীমূলকভাবে যেমন বলা হয়েছে নারীর ‘বংশের’ পাদমূল চূর্ণ করা—পর্যন্ত তাঁকে বিশ্বস্ত থাকতে হবে। (মথি ১৬:২১; ১৭:১২) এ ছাড়া, তাঁকে এই বিষয়েও সাক্ষ্য দিতে হয়েছিল যে, বিদ্রোহী শয়তানকে দমন করার এবং সমস্ত সৃষ্টির জন্য শান্তি ও শৃঙ্খলা পুনর্স্থাপন করার জন্য যিহোবার দ্বারা শক্তিপ্রাপ্ত ঈশ্বরের রাজ্যই হল মাধ্যম। (মথি ৬:৯, ১০) এই কঠিন কার্যভার পরিপূর্ণ করার জন্য যিশু কী করেছিলেন?
“ঈশ্বরের রাজ্য সন্নিকট হইল”
৬. কীভাবে যিশু জানিয়েছিলেন যে, রাজ্যই হল সেই মাধ্যম, যেটাকে ঈশ্বর ‘দিয়াবলের কার্য্য সকল লোপ করিবার’ জন্য ব্যবহার করবেন?
৬ প্রথমে, “যীশু গালীলে আসিয়া ঈশ্বরের সুসমাচার প্রচার করিয়া বলিতে লাগিলেন, ‘কাল সম্পূর্ণ হইল, ঈশ্বরের রাজ্য সন্নিকট হইল।’” (মার্ক ১:১৪, ১৫) বস্তুতপক্ষে, তিনি বলেছিলেন: “আমাকে ঈশ্বরের রাজ্যের সুসমাচার প্রচার করিতে হইবে; কেননা সেই জন্যই আমি প্রেরিত হইয়াছি।” (লূক ৪:১৮-২১, ৪৩) তিনি সেই দেশের এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্ত পর্যন্ত ভ্রমণ করেছিলেন, ‘ঈশ্বরের রাজ্যের সুসমাচার প্রচার ও ঘোষণা’ করেছিলেন। (লূক ৮:১) এ ছাড়া, যিশু অনেক পরাক্রম কাজও করেছিলেন—জনতাকে খাইয়েছিলেন, প্রাকৃতিক শক্তিকে নিয়ন্ত্রণ করেছিলেন, অসুস্থদের সুস্থ করেছিলেন এবং মৃতদের উত্থিত করেছিলেন। এই অলৌকিক কাজগুলোর মাধ্যমে যিশু প্রমাণ করেছিলেন যে, ঈশ্বর এদনের বিদ্রোহের কারণে আসা ক্ষতি ও দুঃখকষ্টকে দূর করতে পারেন এবং এভাবে “দিয়াবলের কার্য্য সকল লোপ করেন।”—১ যোহন ৩:৮.
৭. যিশু তাঁর অনুসারীদের কী করার জন্য নির্দেশ দিয়েছিলেন আর এর ফলাফল কী হয়েছিল?
৭ যথাসম্ভব পূর্ণরূপে রাজ্যের সুসমাচার ঘোষণা করার জন্য যিশু একদল বিশ্বস্ত অনুসারীকে একত্র করেছিলেন এবং তাদেরকে সেই কাজের জন্য প্রশিক্ষণ দিয়েছিলেন। প্রথমে তিনি তাঁর ১২ জন প্রেরিতকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন এবং ‘ঈশ্বরের রাজ্য প্রচার করিতে তাঁহাদিগকে প্রেরণ করিয়াছিলেন।’ (লূক ৯:১, ২) এরপর তিনি আরও ৭০ জনকে এই বার্তা ঘোষণা করার জন্য পাঠিয়েছিলেন: “ঈশ্বরের রাজ্য তোমাদের সন্নিকট হইল।” (লূক ১০:১, ৮, ৯) এই শিষ্যরা যখন ফিরে এসে রাজ্য প্রচার কাজে তারা যে-সাফল্য অর্জন করেছিল, সেই সম্বন্ধে যিশুকে জানিয়েছিল, তখন তিনি বলেছিলেন: “আমি শয়তানকে বিদ্যুতের ন্যায় স্বর্গ হইতে পতিত দেখিতেছিলাম।”—লূক ১০:১৭, ১৮.
৮. যিশুর জীবনধারা স্পষ্টভাবে কী দেখিয়েছিল?
৮ রাজ্যের পক্ষে সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য যিশু সর্বাত্মক প্রচেষ্টা করেছিলেন এবং কখনো সুযোগ হাতছাড়া করেননি। তিনি অবিরতভাবে কাজ করেছিলেন, দিনরাত পরিশ্রম করেছিলেন, এমনকি জীবনের সাধারণ আরাম-আয়েশও ত্যাগ করেছিলেন। “শৃগালদের গর্ত্ত আছে, এবং আকাশের পক্ষিগণের বাসা আছে, কিন্তু মনুষ্যপুত্ত্রের মস্তক রাখিবার স্থান নাই,” তিনি বলেছিলেন। (লূক ৯:৫৮; মার্ক ৬:৩১; যোহন ৪:৩১-৩৪) তাঁর মারা যাওয়ার কিছু সময় আগে, যিশু পন্তীয় পীলাতের সামনে সাহসের সঙ্গে বলেছিলেন: “আমি . . . এই জন্য জগতে আসিয়াছি, যেন সত্যের পক্ষে সাক্ষ্য দিই।” (যোহন ১৮:৩৭) যিশুর সমগ্র জীবনধারা দেখিয়েছিল যে, তিনি কেবল এক মহান শিক্ষক অথবা অলৌকিক কার্যকারী বা এমনকি শুধু এক আত্মত্যাগী পরিত্রাতা হওয়ার জন্য আসেননি কিন্তু যিহোবার সার্বভৌম ইচ্ছা সমর্থন করার এবং রাজ্যের মাধ্যমে সেই ইচ্ছা পরিপূর্ণ করার ব্যাপারে ঈশ্বরের ক্ষমতা সম্বন্ধে সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য এসেছিলেন।—যোহন ১৪:৬.
“সমাপ্ত হইল”
৯. কীভাবে শয়তান অবশেষে ঈশ্বরের নারীর ‘বংশের’ পাদমূলে আঘাত করায় সফল হয়েছিল?
৯ রাজ্যের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত যেসমস্ত বিষয় যিশু করেছিলেন, সেগুলো বিপক্ষ শয়তান দিয়াবলকে খুশি করেনি। বার বার, তার ‘বংশের’ পার্থিব অংশের—রাজনৈতিক ও ধর্মীয় উভয় অংশের—মাধ্যমে শয়তান ঈশ্বরের নারীর ‘বংশকে’ শেষ করে দেওয়ার প্রচেষ্টা করেছিল। তাঁর জন্মের সময় থেকে তাঁর পার্থিব জীবনের শেষ পর্যন্ত যিশু শয়তান ও তার সহযোগীদের লক্ষ্যবস্তু ছিলেন। অবশেষে সা.কা. ৩৩ সালের বসন্তকালে, ঈশ্বরের পুত্রের, বিপক্ষের দ্বারা পাদমূলে চূর্ণ হওয়ার জন্য তার হাতে সমর্পিত হওয়ার সময় এসেছিল। (মথি ২০:১৮, ১৯; লূক ১৮:৩১-৩৩) সুসমাচারের বিবরণ স্পষ্টভাবে দেখায় যে, কীভাবে লোকেরা—ঈষ্করিয়োতীয় যিহূদা থেকে শুরু করে প্রধান যাজকগণ, অধ্যাপক, ফরীশীরা এবং রোমীয়রা—যিশুকে নিন্দা করার ও এক “যাতনাদণ্ডে” যন্ত্রণাদায়ক মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার জন্য শয়তানের দ্বারা সূক্ষ্মভাবে ব্যবহৃত হয়েছিল।—প্রেরিত ২:২২, ২৩, NW.
১০. যাতনাদণ্ডে মৃত্যুর মাধ্যমে যিশু মূলত কী সম্পন্ন করেছিলেন?
১০ আপনার মনে কোন বিষয়টা আসে, যখন আপনি যাতনাদণ্ডে যিশুর ধীরে ধীরে ও যন্ত্রণাদায়ক মৃত্যুদণ্ড ভোগ করার কথা চিন্তা করেন? সম্ভবত আপনি মুক্তির মূল্যরূপ সেই বলিদানের কথা স্মরণ করে থাকেন, যা যিশু নিঃস্বার্থভাবে পাপী মানবজাতির জন্য প্রদান করেছেন। (মথি ২০:২৮; যোহন ১৫:১৩) আপনি হয়তো সেই বলিদান জোগাতে গিয়ে যিহোবা যে-মহান প্রেম দেখিয়েছেন, তা দেখে বিস্মিত হয়েছেন। (যোহন ৩:১৬) সম্ভবত আপনি সেই রোমীয় শতপতির মতো একইরকম বোধ করেন, যিনি এই কথা বলতে অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন: “সত্যই, ইনি ঈশ্বরের পুত্ত্র ছিলেন।” (মথি ২৭:৫৪) নিশ্চিতভাবেই এই সবই হল সঠিক প্রতিক্রিয়া। অন্যদিকে, মনে করে দেখুন যে, যাতনাদণ্ডে যিশুর শেষ কথাগুলো ছিল: “সমাপ্ত হইল।” (যোহন ১৯:৩০) কী সমাপ্ত বা সম্পন্ন হয়েছিল? যদিও যিশু তাঁর জীবন ও মৃত্যুর মাধ্যমে অনেক কিছু অর্জন করেছিলেন কিন্তু যিশু কি মূলত যিহোবার সার্বভৌমত্বের বিচার্য বিষয়টা মীমাংসা করার জন্যই পৃথিবীতে আসেননি? আর এটা কি ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়নি যে, ‘বংশ’ হিসেবে তিনি শয়তানের হাতে চরম পরীক্ষা ভোগ করবেন, যাতে যিহোবার নামকে সমস্ত নিন্দা থেকে মুক্ত করতে পারেন? (যিশাইয় ৫৩:৩-৭) এগুলো ছিল গুরু দায়িত্ব কিন্তু যিশু সেগুলো পুরোপুরিভাবে পরিপূর্ণ করেছিলেন। কী এক সম্পাদন!
১১. এদনের ভবিষ্যদ্বাণী পুরোপুরিভাবে পরিপূর্ণ করার জন্য যিশু কী করবেন?
১১ যিশু তাঁর বিশ্বস্ততা ও আনুগত্যের জন্য পুনরুত্থিত হয়েছিলেন, তবে একজন মানুষ হিসেবে নয় বরং “জীবনদায়ক আত্মা” হিসেবে। (১ করিন্থীয় ১৫:৪৫; ১ পিতর ৩:১৮) তাঁর গৌরবান্বিত পুত্রের কাছে যিহোবার প্রতিজ্ঞা ছিল: “তুমি আমার দক্ষিণে বস, যাবৎ আমি তোমার শত্রুগণকে তোমার পাদপীঠ না করি।” (গীতসংহিতা ১১০:১) সেই ‘শত্রুগণের’ অন্তর্ভুক্ত প্রধান অপরাধী শয়তান এবং তারা সকলে, যাদের নিয়ে তার ‘বংশ’ গঠিত। যিহোবার মশীহ রাজ্যের রাজা হিসেবে যিশু খ্রিস্ট স্বর্গ ও পৃথিবীর সমস্ত বিদ্রোহীকে ধ্বংস করায় নেতৃত্ব নেবেন। (প্রকাশিত বাক্য ১২:৭-৯; ১৯:১১-১৬; ২০:১-৩, ১০) এরপর আদিপুস্তক ৩:১৫ পদের ভবিষ্যদ্বাণী ও সেইসঙ্গে যিশু তাঁর অনুসারীদের যে-প্রার্থনা শিখিয়েছিলেন, তা পুরোপুরিভাবে পরিপূর্ণ হবে আর সেই প্রার্থনা হল: “তোমার রাজ্য আইসুক, তোমার ইচ্ছা সিদ্ধ হউক, যেমন স্বর্গে তেমনি পৃথিবীতেও হউক।”—মথি ৬:১০; ফিলিপীয় ২:৮-১১.
অনুসরণ করার মতো এক আদর্শ
১২, ১৩. (ক) আজকে রাজ্যের সুসমাচারের প্রতি কোন সাড়া দেখা যাচ্ছে? (খ) খ্রিস্টের পদচিহ্ন অনুসরণ করার ক্ষেত্রে আমাদের কী বিবেচনা করতে হবে?
১২ আজকে, অনেক দেশে রাজ্যের সুসমাচার প্রচারিত হচ্ছে, যেমনটা হবে বলে যিশু ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন। (মথি ২৪:১৪) এর ফলে লক্ষ লক্ষ লোক ঈশ্বরের কাছে তাদের জীবন উৎসর্গ করেছে। রাজ্য যে-আশীর্বাদগুলো নিয়ে আসবে, সেই সম্বন্ধে তারা রোমাঞ্চিত। তারা এক পরমদেশ পৃথিবীতে চিরকাল শান্তিতে ও নিরাপদে বাস করার জন্য অপেক্ষা করে আছে আর তারা আনন্দের সঙ্গে তাদের আশা সম্বন্ধে অন্যদের বলে থাকে। (গীতসংহিতা ৩৭:১১; ২ পিতর ৩:১৩) আপনিও কি এই রাজ্য ঘোষণাকারীদের মধ্যে একজন? যদি হয়ে থাকেন, তা হলে আপনি প্রশংসা পাওয়ার যোগ্য। কিন্তু, আরও কিছু রয়েছে, যা আমাদের প্রত্যেককে অবশ্যই বিবেচনা করতে হবে?
১৩ প্রেরিত পিতর লিখেছিলেন: “খ্রীষ্টও তোমাদের নিমিত্ত দুঃখ ভোগ করিলেন, এ বিষয়ে তোমাদের জন্য এক আদর্শ রাখিয়া গিয়াছেন, যেন তোমরা তাঁহার পদচিহ্নের অনুগমন কর।” (১ পিতর ২:২১) লক্ষ করুন যে, এখানে পিতর প্রচার করায় যিশুর উদ্যোগ অথবা শিক্ষা দেওয়ায় তাঁর দক্ষতা সম্বন্ধে উল্লেখ করেনি বরং দুঃখভোগের বিষয়ে বলেছেন। একজন প্রত্যক্ষ সাক্ষি হিসেবে পিতর খুব ভাল করেই জানতেন যে, যিশু কতদূর পর্যন্ত দুঃখভোগ করতে ইচ্ছুক ছিলেন, যাতে যিহোবার সার্বভৌমত্বের প্রতি বশীভূত থাকতে এবং শয়তানকে মিথ্যাবাদী প্রমাণ করতে পারেন। তা হলে, কোন কোন উপায়ে আমরা যিশুর পদচিহ্ন অনুগমন বা অনুসরণ করতে পারি? নিজেদেরকে আমাদের জিজ্ঞেস করতে হবে: ‘যিহোবার সার্বভৌমত্বকে সমর্থন ও সম্মান করার জন্য আমি কতদূর পর্যন্ত দুঃখভোগ করতে ইচ্ছুক? আমি যেভাবে আমার জীবনযাপন এবং পরিচর্যা সম্পন্ন করি, সেগুলোর মাধ্যমে কি দেখাই যে, যিহোবার সার্বভৌমত্বকে সমর্থন করাই হল আমার চিন্তার প্রধান বিষয়?’—কলসীয় ৩:১৭.
১৪, ১৫. (ক) ভ্রান্ত পরামর্শ ও প্রস্তাবগুলোর বিষয়ে যিশু কেমন প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিলেন এবং কেন? (খ) কোন বিচার্য বিষয়টা সর্বদা আমাদের মনে রাখতে হবে? (“যিহোবার পক্ষ সমর্থন করুন” নামক বাক্স থেকে মন্তব্য অন্তর্ভুক্ত করুন।)
১৪ প্রতিদিন আমরা ছোটবড় বিভিন্ন পরীক্ষা এবং সিদ্ধান্তের মুখোমুখি হই। কোন উপায়ে সাড়া দিতে হবে, তা আমাদের কীভাবে নির্ধারণ করা উচিত? উদাহরণস্বরূপ, আমরা যখন এমন কিছু করার প্রলোভনের মুখে পড়ি, যা আমাদের খ্রিস্টীয় অবস্থানকে ঝুঁকির মুখে ফেলবে, তখন আমরা কীভাবে প্রতিক্রিয়া দেখাই? পিতর যখন যিশুকে বলেছিলেন যে, এটা আপনার কাছ থেকে দূরে থাকুক, তখন যিশুর প্রতিক্রিয়া কেমন ছিল? “আমার সম্মুখ হইতে দূর হও, শয়তান,” যিশু ধমক দিয়ে বলেছিলেন। “যাহা ঈশ্বরের, তাহা নয়, কিন্তু যাহা মনুষ্যের, তাহাই তুমি ভাবিতেছ।” (মথি ১৬:২১-২৩) অথবা আমাদের যখন আধ্যাত্মিক মঙ্গলের বিনিময়ে আর্থিক অথবা কেরিয়ারের উন্নতির জন্য সুযোগসুবিধার প্রস্তাব দেওয়া হয়, তখন আমরা কি যিশুর মতো প্রতিক্রিয়া দেখাই? যিশু যখন বুঝতে পেরেছিলেন যে, যারা তাঁর অলৌকিক কাজ দেখেছিল, তারা “রাজা করিবার জন্য তাঁহাকে ধরিতে উদ্যত হইয়াছে,” তখন তিনি সঙ্গে সঙ্গে তাদের কাছ থেকে দূরে চলে গিয়েছিলেন।—যোহন ৬:১৫.
১৫ কেন যিশু এই সময় ও অন্যান্য ক্ষেত্রে এত দৃঢ়ভাবে প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিলেন? কারণ তিনি স্পষ্টভাবে দেখেছিলেন যে, এর সঙ্গে তাঁর ব্যক্তিগত নিরাপত্তা অথবা সুযোগসুবিধার চেয়ে আরও বেশি কিছু জড়িত রয়েছে। তিনি তাঁর পিতার ইচ্ছা পালন করতে ও যেকোনো মূল্যে যিহোবার সার্বভৌমত্বকে সমর্থন করতে চেয়েছিলেন। (মথি ২৬:৫০-৫৪) তাই, সর্বদা আমাদের মনে যদি প্রকৃত বিচার্য বিষয়টা স্পষ্ট না থাকে, যেমনটা যিশুর ছিল, তা হলে সবসময় আপোশ করার অথবা ব্যর্থ হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। কেন? কারণ আমরা সহজেই শয়তানের চাতুরীর ফাঁদে পড়তে পারি, যে ভুল বিষয়গুলোকে কাঙ্ক্ষিত করে তুলে ধরার ক্ষেত্রে দক্ষ, যেমনটা সে হবাকে প্রলোভিত করার সময় করেছিল।—২ করিন্থীয় ১১:১৪; ১ তীমথিয় ২:১৪.
১৬. অন্যদের সাহায্য করার ব্যাপারে আমাদের মূল লক্ষ্য কী হওয়া উচিত?
১৬ আমাদের পরিচর্যায় আমরা লোকেদের সঙ্গে তাদের চিন্তার বিষয়গুলো নিয়ে কথা বলার এবং বাইবেল থেকে সেগুলোর উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করি। বাইবেল অধ্যয়নের ব্যাপারে তাদের আগ্রহ জাগিয়ে তোলার জন্য এটা এক কার্যকারী উপায়। তবে, আমাদের মূল লক্ষ্য কেবল বাইবেল কী বলে অথবা ঈশ্বরের রাজ্য কোন আশীর্বাদগুলো নিয়ে আসবে, তা-ই লোকেদের জানতে সাহায্য করা নয়। প্রকৃত বিচার্য বিষয়টা উপলব্ধি করার জন্য তাদেরকে আমাদের সাহায্য করতে হবে। তারা কি প্রকৃত খ্রিস্টান হয়ে উঠতে এবং তাদের “যাতনাদণ্ড” তুলে নিতে ও রাজ্যের জন্য দুঃখভোগ করতে ইচ্ছুক? (মার্ক ৮:৩৪, NW) তারা কি সেই ব্যক্তিদের দলে যোগ দিতে প্রস্তুত, যারা যিহোবার সার্বভৌমত্বকে সমর্থন করে আর এভাবে শয়তানকে মিথ্যাবাদী ও অপবাদক বলে প্রমাণ করে? (হিতোপদেশ ২৭:১১) নিজেদের ও অন্যদের তা করতে সাহায্য করা আমাদের জন্য বিশেষ সুযোগ।—১ তীমথিয় ৪:১৬.
যখন ঈশ্বরই “সর্ব্বেসর্ব্বা” হবেন
১৭, ১৮. আমরা যদি দেখাই যে, আমরা যিহোবার সার্বভৌমত্বকে সমর্থন করি, তা হলে কোন গৌরবান্বিত সময়ের প্রতীক্ষা করতে পারি?
১৭ আমরা যে যিহোবার সার্বভৌমত্বকে সমর্থন করি, তা এখন আমাদের আচারব্যবহার ও পরিচর্যার মাধ্যমে দেখানোর জন্য আমাদের যথাসাধ্য করার সময় আমরা সেই সময়ের প্রতীক্ষা করতে পারি, যখন যিশু খ্রিস্ট “পিতা ঈশ্বরের হস্তে রাজ্য সমর্পণ করিবেন।” কখন তা হবে? প্রেরিত পৌল ব্যাখ্যা করেন: ‘তিনি সমস্ত আধিপত্য এবং সমস্ত কর্ত্তৃত্ব ও পরাক্রম লোপ করিবেন। কেননা যাবৎ তিনি “সমস্ত শত্রুকে তাঁহার পদতলে না রাখিবেন,” তাঁহাকে রাজত্ব করিতেই হইবে। আর পুত্ত্র আপনিও তাঁহার বশীভূত হইবেন, যিনি সকলই তাঁহার বশে রাখিয়াছিলেন; যেন ঈশ্বরই সর্ব্বেসর্ব্বা হন।’—১ করিন্থীয় ১৫:২৪, ২৫, ২৮.
১৮ ঈশ্বর যখন “সর্ব্বেসর্ব্বা” হবেন, তখন তা কত গৌরবান্বিত সময়ই না হবে! রাজ্য এর উদ্দেশ্য সম্পন্ন করবে। যিহোবার সার্বভৌমত্বের সকল বিরোধীদের নিশ্চিহ্ন করে দেওয়া হবে। নিখিলবিশ্বে সর্বত্র শান্তি ও শৃঙ্খলা পুনর্স্থাপিত হবে। গীতরচকের ভাষায় সমস্ত সৃষ্টি এই গান গাইবে: “সদাপ্রভুর নামের গৌরব কীর্ত্তন কর, . . . জাতিগণের মধ্যে বল, সদাপ্রভু রাজত্ব করেন।”—গীতসংহিতা ৯৬:৮, ১০.
আপনি কি উত্তর দিতে পারেন?
• কীভাবে যিশু ঈশ্বরের সার্বভৌমত্বের বিচার্য বিষয়টা সর্বাগ্রে রেখেছিলেন?
• যিশু তাঁর পরিচর্যা ও মৃত্যুর মাধ্যমে মূলত কী সম্পন্ন করেছিলেন?
• আমরা যে যিহোবার সার্বভৌমত্বকে সমর্থন করি, তা দেখানোর জন্য কোন কোন উপায়ে আমরা যিশুর উদাহরণ অনুসরণ করতে পারি?
[২৯ পৃষ্ঠার বাক্স/চিত্রগুলো]
যিহোবার পক্ষ সমর্থন করুন
কোরিয়া ও অন্য জায়গার অনেক ভাইবোনেরা যেমন জানে যে, খ্রিস্টানরা যখন চরম পরীক্ষাগুলোর মুখোমুখি হয়, তখন এই কারণটা স্পষ্ট মনে রাখা সাহায্যকারী যে, কেন এই ধরনের পরীক্ষাগুলো তাদের ওপর আসে।
“যে-বিষয়টা আমাদের ধৈর্য ধরতে সাহায্য করেছিল,” একজন যিহোবার সাক্ষি বলেন, যিনি প্রাক্তন সোভিয়েত শাসনের অধীনে জেলে ছিলেন, “সেটা ছিল এদন উদ্যানে উত্থাপিত বিচার্য বিষয়—শাসন করার বিষয়ে ঈশ্বরের অধিকার সম্বন্ধীয় বিচার্য বিষয়—সম্বন্ধে স্পষ্ট বোধগম্যতা। . . . আমরা জানতাম যে, যিহোবার শাসনকে সমর্থন করার সুযোগ আমাদের রয়েছে। . . . এটা আমাদের দৃঢ় রেখেছিল এবং আমাদের নীতিনিষ্ঠা বজায় রাখতে সাহায্য করেছিল।”
আরেকজন সাক্ষি ব্যাখ্যা করেছিলেন যে, কী তাকে ও সহসাক্ষিদের শ্রম শিবিরে সাহায্য করেছিল। “যিহোবা আমাদের সাহায্য করেছিলেন,” তিনি বলেছিলেন। “কঠিন অবস্থা সত্ত্বেও আমরা আধ্যাত্মিকভাবে সজাগ ছিলাম। আমরা সবসময় পরস্পরকে এই ইতিবাচক চিন্তাভাবনা সম্বন্ধে বলে আনন্দিত রাখতাম যে, আমরা সর্বজনীন সার্বভৌমত্বের বিচার্য বিষয়ে যিহোবার পক্ষ সমর্থন করেছি।”
[২৬ পৃষ্ঠার চিত্র]
শয়তানের দ্বারা প্রলোভিত হওয়ার সময় যিশু কীভাবে যিহোবার সার্বভৌমত্বকে সমর্থন করেছিলেন?
[২৮ পৃষ্ঠার চিত্র]
যিশুর মৃত্যু দ্বারা কী সম্পন্ন হয়েছিল?