যিহোবাকে অনুকরণ করুন—ন্যায়বিচার ও ধার্মিকতা অনুশীলন করুন
“আমি সদাপ্রভু পৃথিবীতে দয়া, বিচার [“ন্যায়বিচার,” “NW”] ও ধার্ম্মিকতার অনুষ্ঠান করি, কারণ ঐ সকলে আমি প্রীত।”—যিরমিয় ৯:২৪.
১. যিহোবা কোন্ চমৎকার প্রত্যাশা তুলে ধরেছিলেন?
যিহোবা প্রতিজ্ঞা করেছিলেন যে এমন সময় আসবে যখন প্রত্যেকে তাঁকে জানবে। তাঁর ভাববাদী যিশাইয়ের মাধ্যমে তিনি বলেছিলেন: “সে সকল আমার পবিত্র পর্ব্বতের কোন স্থানে হিংসা কিম্বা বিনাশ করিবে না; কারণ সমুদ্র যেমন জলে আচ্ছন্ন, তেমনি পৃথিবী সদাপ্রভু-বিষয়ক জ্ঞানে পরিপূর্ণ হইবে।” (যিশাইয় ১১:৯) কী এক চমৎকার প্রত্যাশাই না সেটি!
২. যিহোবাকে জানা কী অন্তর্ভুক্ত করে? কেন?
২ অতএব, যিহোবাকে জানার অর্থ কী? যিরমিয়ের কাছে যিহোবা সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলি প্রকাশ করেছিলেন: “সে বুঝিতে পারে ও আমার এই পরিচয় পাইয়াছে যে, আমি সদাপ্রভু পৃথিবীতে দয়া, ন্যায়বিচার ও ধার্ম্মিকতার অনুষ্ঠান করি, কারণ ঐ সকলে আমি প্রীত, ইহা সদাপ্রভু কহেন।” (যিরমিয় ৯:২৪) অতএব, যিহোবাকে জানা তিনি যেভাবে ন্যায়বিচার ও ধার্মিকতা অনুশীলন করেন তা জানাকে অন্তর্ভুক্ত করে। সুতরাং আমরা যদি ওই গুণাবলি অনুশীলন করি, তাহলে তিনি আমাদের প্রতি প্রীত হবেন। কিভাবে আমরা তা করতে পারি? তাঁর বাক্য, বাইবেলে যিহোবা যুগ যুগ ধরে অসিদ্ধ মানুষের সঙ্গে তাঁর আচরণের একটি নথি সংরক্ষিত করেছেন। এটি অধ্যয়ন করার দ্বারা, আমরা যিহোবার ন্যায়বিচার ও ধার্মিকতার পথ জানতে পারি এবং তাঁকে অনুকরণ করি।—রোমীয় ১৫:৪.
ন্যায়পরায়ণ কিন্তু করুণাময়
৩, ৪. সদোম ও ঘমোরাকে ধ্বংস করার ক্ষেত্রে কেন যিহোবা ন্যায্য প্রমাণিত হয়েছিলেন?
৩ সদোম ও ঘমোরার উপর ঐশিক বিচার একটি চমৎকার উদাহরণ যা যিহোবার ন্যায়বিচারের কয়েকটি দিককে স্পষ্টভাবে তুলে ধরে। যিহোবা কেবল প্রয়োজনীয় শাস্তিই দেননি কিন্তু তিনি যোগ্য ব্যক্তিদের রক্ষাও করেছিলেন। ওই নগরগুলির ধ্বংস কী প্রকৃতই ন্যায়বিচারকে প্রমাণ করেছিল? অব্রাহাম প্রথমে তা মনে করেননি, যার স্পষ্টতই সদোমের দুষ্টতার পরিধি সম্বন্ধে সীমিত জ্ঞান ছিল। যিহোবা অব্রাহামকে আশ্বাস দিয়েছিলেন, যদি কেবল দশ জন ধার্মিক লোকও পাওয়া যায়, তাহলে তিনি ওই নগরকে ধ্বংস করা থেকে বিরত হবেন। স্পষ্টতই, যিহোবার ন্যায়বিচার অসহিষ্ণু কিংবা নির্দয় নয়।—আদিপুস্তক ১৮:২০-৩২.
৪ দুজন দূতের পরিদর্শন সদোমের নৈতিক অধঃপতনের এক স্পষ্ট প্রমাণ প্রদান করেছিল। যখন নগরের “আবাল বৃদ্ধ সমস্ত লোক” জানতে পেরেছিল যে দুজন লোক লোটের গৃহে থাকার জন্য এসেছেন, তখন তারা সমকামিতাপূর্ণ দলগত ধর্ষণ করার আকাঙ্ক্ষা নিয়ে তার গৃহে আক্রমণ করেছিল। তাদের লম্পটতা সত্যই এক নিচু স্তরে গিয়ে পৌঁছেছিল! নিঃসন্দেহে, নগরের উপর যিহোবার বিচার ন্যায্য ছিল।—আদিপুস্তক ১৯:১-৫, ২৪, ২৫.
৫. কিভাবে ঈশ্বর সদোম থেকে লোট ও তার পরিবারকে উদ্ধার করেছিলেন?
৫ সদোম ও ঘমোরার ধ্বংসকে এক সতর্কতামূলক উদাহরণ হিসাবে উল্লেখ করার পর, প্রেরিত পিতর লিখেছিলেন: “প্রভু [“যিহোবা,” “NW”] ভক্তদিগকে পরীক্ষা হইতে উদ্ধার করিতে, . . . জানেন।” (২ পিতর ২:৬-৯) ন্যায়বিচার সন্তোষজনক হত না যদি ধার্মিক লোট ও তার পরিবার সদোমের দুষ্ট লোকেদের সঙ্গে ধ্বংস হয়ে যেতেন। তাই, যিহোবার দূতেরা আসন্ন ধ্বংস সম্বন্ধে লোটকে সর্তক করেছিলেন। লোট যখন যেতে দেরি করেছিলেন, তখন দূতেরা “সদাপ্রভুর স্নেহ প্রযুক্ত” তাকে, তার স্ত্রী এবং মেয়েদেরকে হাত ধরে নগরের বাইরে নিয়ে গিয়েছিলেন। (আদিপুস্তক ১৯:১২-১৬) আমরা নিশ্চিত হতে পারি যে এই দুষ্ট ব্যবস্থার আসন্ন ধ্বংসে যিহোবা ধার্মিকদের প্রতি একইরকম স্নেহ দেখাবেন।
৬. দুষ্ট বিধিব্যবস্থার আসন্ন ধ্বংস সম্বন্ধে কেন আমাদের অত্যধিক উদ্বিগ্ন হওয়া উচিত নয়?
৬ যদিও এই ব্যবস্থার শেষ এক “প্রতিশোধের সময়” হবে, তবুও আমাদের অত্যধিক উদ্বিগ্ন হওয়ার কোন কারণ নেই। (লূক ২১:২২) যিহোবা হর্মাগিদোনে যে ন্যায়বিচার সম্পাদন করবেন তা “সর্ব্বাংশে ন্যায্য” প্রমাণিত হবে। (গীতসংহিতা ১৯:৯) অব্রাহাম যেমন শিখেছিলেন, তদ্রূপ আমরা যিহোবার ন্যায়বিচারে পূর্ণ আস্থা রাখতে পারি, যা আমাদের চেয়ে অনেক উঁচু স্তরের। অব্রাহাম জিজ্ঞাসা করেছিলেন: “সমস্ত পৃথিবীর বিচারকর্ত্তা কি ন্যায়বিচার করিবেন না?” (আদিপুস্তক ১৮:২৫. ইয়োব ৩৪:১০ পদের সঙ্গে তুলনা করুন।) অথবা যিশাইয় যেমন যথার্থভাবে এটি তুলে ধরেছিলেন, “কে [যিহোবাকে] . . . বিচারপথ [“ন্যায়বিচারের পথ,” “NW”] দেখাইয়াছে?”—যিশাইয় ৪০:১৪.
মানবজাতিকে রক্ষা করার জন্য একটি ধার্মিক কাজ
৭. ঈশ্বরের ন্যায়বিচার ও তাঁর দয়ার মধ্যে কী সম্পর্ক রয়েছে?
৭ ঈশ্বরের ন্যায়বিচার কেবল তিনি যেভাবে অপরাধীদের শাস্তি দেন তার মাধ্যমেই প্রকাশিত হয় না। যিহোবা নিজেকে “ধর্ম্মশীল ও ত্রাণকারী ঈশ্বর” হিসাবে বর্ণনা করেন। (যিশাইয় ৪৫:২১) স্পষ্টতই, ঈশ্বরের ধার্মিকতা কিংবা ন্যায়বিচার এবং পাপের প্রভাবগুলি থেকে মানবজাতিকে রক্ষা করার জন্য তাঁর আকাঙ্ক্ষার মধ্যে এক নিবিড় সম্পর্ক আছে। এই বিষয়বস্তুর উপর মন্তব্য করতে গিয়ে, দি ইন্টারন্যাশনাল স্ট্যান্ডার্ড বাইবেল এনসাইক্লোপিডিয়া ১৯৮২ সংস্করণ উল্লেখ করে যে “ঈশ্বরের ন্যায়বিচার তাঁর দয়া প্রকাশ এবং তাঁর পরিত্রাণ সম্পন্ন করার জন্য বাস্তব উপায়গুলি অন্বেষণ করে।” এর মানে নয় যে ঈশ্বরের ন্যায়বিচার দয়ার দ্বারা কোমল হওয়া প্রয়োজন কিন্তু বিপরীতে, এটি ঠিক তাই কারণ দয়া ঈশ্বরের ন্যায়বিচারের একটি অভিব্যক্তি। মানবজাতির পরিত্রাণের জন্য মুক্তির মূল্য সম্বন্ধীয় ঈশ্বরের ব্যবস্থা ঐশিক ন্যায়বিচারের এই দিকটির এক উল্লেখযোগ্য উদাহরণ।
৮, ৯. (ক) “ধার্ম্মিকতার একটী কাজ” বর্ণনাটিতে কী জড়িত ছিল? কেন? (খ) যিহোবা আমাদের কাছ থেকে কী চান?
৮ মুক্তির মূল্যটি—ঈশ্বরের একজাত পুত্র, যীশু খ্রীষ্টের মূল্যবান জীবন—এক উচ্চমূল্য ছিল, কারণ যিহোবার মানদণ্ডগুলি সর্বজনীন আর তিনি নিজেও সেগুলি মেনে চলেন। (মথি ২০:২৮) আদম সিদ্ধ জীবন হারিয়েছিল, ফলে আদমের বংশধরদের জন্য জীবন পুনরুদ্ধার করতে আরেকটি সিদ্ধ জীবনের প্রয়োজন পড়েছিল। (রোমীয় ৫:১৯-২১) প্রেরিত পৌল মুক্তির মূল্য প্রদান সহ যীশুর আনুগত্যপূর্ণ জীবনধারাকে “ধার্ম্মিকতার একটী কার্য্য” হিসাবে বর্ণনা করেন। (রোমীয় ৫:১৮) তা কেন? কারণ যিহোবার দৃষ্টিকোণ থেকে, মানবজাতিকে মুক্ত করা সঠিক এবং ন্যায্য বিষয় ছিল, যদিও এটি করার জন্য তাঁকে চরম মূল্য দিতে হয়েছিল। আদমের সন্তানসন্ততি ‘থেৎলা নলের’ মত ছিল যাদের ঈশ্বর ভাঙতে চাননি, অথবা ‘সধূম শলিতার’ মত যেগুলিকে তিনি নেভাতে চাননি। (মথি ১২:২০) ঈশ্বরের দৃঢ়বিশ্বাস ছিল যে আদমের বংশধরদের মধ্যে থেকে অনেক বিশ্বস্ত পুরুষ ও নারী উদ্ভুত হবেন।—মথি ২৫:৩৪ পদের সঙ্গে তুলনা করুন।
৯ প্রেম ও ন্যায়বিচারের এই মহৎ কাজের প্রতি আমাদের কিভাবে সাড়া দেওয়া উচিত? যিহোবা আমাদের কাছে যে বিষয়গুলি চান তার একটি হল আমরা যেন “ন্যায্য আচরণ” অনুশীলন করি। (মীখা ৬:৮) কিভাবে আমরা তা করতে পারি?
ন্যায়বিচার অনুসন্ধান করুন, ধার্মিকতা অনুধাবন করুন
১০. (ক) একটি উপায় কী যেখানে আমরা ন্যায়বিচার অনুশীলন করে থাকি? (খ) কিভাবে আমরা প্রথমে ঈশ্বরের ধার্মিকতা চেষ্টা করতে পারি?
১০ সর্বপ্রথমে, আমাদের ঈশ্বরের নৈতিক মানদণ্ডগুলি মেনে চলতে হবে। যেহেতু ঈশ্বরের মানদণ্ডগুলি ন্যায্য ও ধার্মিক, তাই আমরা যখন সেগুলির সঙ্গে সংগতি রেখে জীবনযাপন করি তখন আমরা ন্যায়বিচার অনুশীলন করছি। যিহোবা তাঁর লোকেদের কাছ থেকে সেটিই প্রত্যাশা করেন। যিহোবা ইস্রায়েলীয়দের বলেছিলেন, “সদাচরণ শিক্ষা কর, ন্যায়বিচারের অনুশীলন কর।” (যিশাইয় ১:১৭) যীশু পার্বত্য উপদেশে তাঁর শ্রোতাদের একই পরামর্শ দিয়েছিলেন, যখন তিনি তাদের ‘প্রথমে রাজ্য ও ঈশ্বরের ধার্মিকতার চেষ্টা’ করতে নির্দেশ দিয়েছিলেন। (মথি ৬:৩৩) পৌল তীমথিয়কে “ধার্ম্মিকতা . . . অনুধাবন” করতে উৎসাহিত করেছিলেন। (১ তীমথিয় ৬:১১) আমরা যখন আচরণ সম্বন্ধীয় ঈশ্বরের মানদণ্ডগুলির সঙ্গে সংগতি রেখে জীবনযাপন করি এবং নতুন ব্যক্তিত্ব পরিধান করি, তখন আমরা প্রকৃত ন্যায়বিচার ও ধার্মিকতা অনুধাবন করছি। (ইফিষীয় ৪:২৩, ২৪) অন্য কথায়, ঈশ্বরের পথে বিষয়গুলি করার দ্বারা আমরা ন্যায়বিচার অনুসন্ধান করি।
১১. কেন এবং কিভাবে পাপের কর্তৃত্বের বিরুদ্ধে আমাদের লড়াই করা উচিত?
১১ আমরা ভালভাবে অবগত আছি যে, অসিদ্ধ মানুষের পক্ষে যা ন্যায্য ও সঠিক তা করা সবসময় সহজ নয়। (রোমীয় ৭:১৪-২০) পৌল রোমীয় খ্রীষ্টানদের পাপের কর্তৃত্বের বিরুদ্ধে লড়াই করতে উৎসাহিত করেছিলেন যাতে তারা ঈশ্বরের কাছে তাদের উৎসর্গীকৃত দেহগুলিকে “ধার্ম্মিকতার অস্ত্ররূপে” সমর্পণ করতে পারেন, যা তাঁর উদ্দেশ্য সম্পাদনের ক্ষেত্রে কাজে লাগবে। (রোমীয় ৬:১২-১৪) অনুরূপভাবে, নিয়মিত ঈশ্বরের বাক্য অধ্যয়ন ও প্রয়োগের দ্বারা, আমরা ‘প্রভুর [“যিহোবা,” “NW”] চেতনা’ গ্রহণ করতে এবং ‘ধার্ম্মিকতায় শাসিত’ হতে পারি।—ইফিষীয় ৬:৪; ২ তীমথিয় ৩:১৬, ১৭.
১২. আমরা যেভাবে চাই যে যিহোবা আমাদের প্রতি করুন সেভাবে অন্যদের সঙ্গে আচরণ করতে হলে আমাদের কী এড়িয়ে চলা উচিত?
১২ দ্বিতীয়ত, আমরা ধার্মিকতা অনুশীলন করি যখন আমরা অন্যদের সঙ্গে সেইরকম আচরণ করি যেভাবে আমরা চাই যে যিহোবা আমাদের সঙ্গে আচরণ করুন। এক দ্বৈত মানদণ্ড থাকা সহজ—আমাদের নিজেদের ক্ষেত্রে কোমল কিন্তু অন্যদের ক্ষেত্রে কঠোর। আমরা চটপট নিজেদের ত্রুটিগুলির জন্য অজুহাত দেখাই কিন্তু অন্যদের ভুলগুলির সমালোচনা করতে তৎপর হই, যা হয়ত আমাদের ভুলগুলির তুলনায় তুচ্ছ। যীশু যথাযথভাবেই জিজ্ঞাসা করেন: “তোমার ভ্রাতার চক্ষে যে কুটা আছে, তাহাই কেন দেখিতেছ, কিন্তু তোমার নিজের চক্ষে যে কড়িকাট আছে, তাহা কেন ভাবিয়া দেখিতেছ না?” (মথি ৭:১-৩) আমাদের ভুলে যাওয়া উচিত নয় যে যিহোবা যদি আমাদের অপরাধগুলি পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পরীক্ষা করতেন তাহলে আমরা কেউই দাঁড়াতে পারতাম না। (গীতসংহিতা ১৩০:৩, ৪) যিহোবার ন্যায়বিচার যদি তাঁকে আমাদের ভাইদের দুর্বলতাগুলি উপেক্ষা করতে অনুমোদন করে, তাহলে প্রতিকূলভাবে তাদের বিচার করার আমরা কে?—রোমীয় ১৪:৪, ১০.
১৩. রাজ্যের সুসমাচার প্রচার করার জন্য কেন একজন ধার্মিক ব্যক্তি বাধ্যতা অনুভব করেন?
১৩ তৃতীয়ত, আমরা ঈশ্বরীয় ন্যায়বিচার প্রদর্শন করি যখন আমরা অধ্যবসায়ের সঙ্গে প্রচার কাজে রত থাকি। যিহোবা আমাদের পরামর্শ দেন, “যাহাদের মঙ্গল করা উচিত, তাহাদের মঙ্গল করিতে অস্বীকার করিও না, যখন তাহা করিবার ক্ষমতা তোমার হাতে থাকে।” (হিতোপদেশ ৩:২৭) যে জীবনদায়ক জ্ঞান যিহোবা অত্যন্ত উদারতার সঙ্গে আমাদের দিয়েছেন তা নিজেদের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা ঠিক নয়। এটি সত্য যে, অনেক লোকই হয়ত আমাদের বার্তা প্রত্যাখ্যান করতে পারেন কিন্তু যতদিন পর্যন্ত যিহোবা তাদের প্রতি দয়া দেখাতে চান, ততদিন তাদের ‘মনপরিবর্ত্তন পর্য্যন্ত পৌঁছানোর’ সুযোগ দিতে আমাদের ইচ্ছুক হওয়া উচিত। (২ পিতর ৩:৯) আর যীশুর মত, আমরাও আনন্দিত হই যখন আমরা কাউকে ন্যায়বিচার ও ধার্মিকতার প্রতি ফিরে আসতে সাহায্য করতে পারি। (লূক ১৫:৭) আমাদের জন্য এখন “ধার্ম্মিকতার বীজ বপন” করার অনুকূল সময়।—হোশেয় ১০:১২.
‘ন্যায়ের শাসনকর্ত্তৃগণ’
১৪. ন্যায়বিচারের বিষয়ে প্রাচীনেরা কোন্ ভূমিকা পালন করেন?
১৪ আমাদের সকলের অবশ্যই ধার্মিকতার পথে চলতে হবে কিন্তু খ্রীষ্টীয় মণ্ডলীর প্রাচীনদের এই বিষয়ে একটি বিশেষ দায়িত্ব রয়েছে। যীশুর রাজোচিত শাসন ‘ন্যায়বিচার ও ধার্ম্মিকতা সহকারে সুদৃঢ়।’ অতএব, প্রাচীনদের জন্য মানদণ্ডটি হল ঐশিক ন্যায়বিচার। (যিশাইয় ৯:৭) যিশাইয় ৩২:১ পদে ভবিষ্যদ্বাণীরূপে যে বিষয় বর্ণিত আছে তা তারা স্মরণে রাখেন: “দেখ, এক রাজা ধার্ম্মিকতায় রাজত্ব করিবেন, ও শাসনকর্ত্তৃগণ ন্যায়ে শাসন করিবেন।” আত্মায় অভিষিক্ত অধ্যক্ষগণ কিংবা “ঈশ্বরের ধনাধ্যক্ষ” হিসাবে, প্রাচীনদের ঈশ্বরের পথে বিষয়গুলি সম্পাদন করা উচিত।—তীত ১:৭.
১৫, ১৬. (ক) কিভাবে প্রাচীনেরা যীশুর দৃষ্টান্তের বিশ্বস্ত মেষপালককে অনুকরণ করেন? (খ) যারা আধ্যাত্মিকভাবে হারিয়ে যান তাদের সম্বন্ধে প্রাচীনেরা কেমন অনুভব করেন?
১৫ যীশু দেখিয়েছিলেন যে যিহোবার ন্যায়বিচার ছিল করুণাপূর্ণ, দয়াপূর্ণ এবং যুক্তিসংগত। সর্বোপরি, তিনি যাদের সমস্যা ছিল তাদের সাহায্য করতে এবং “যাহা হারাইয়া গিয়াছিল, তাহার অন্বেষণ ও পরিত্রাণ করিতে” চেষ্টা করেছিলেন। (লূক ১৯:১০) যীশুর দৃষ্টান্তের মেষপালক যিনি খুঁজে না পাওয়া পর্যন্ত অক্লান্তভাবে একটি হারানো মেষের অন্বেষণ করেছিলেন, তার মত প্রাচীনেরা আধ্যাত্মিকভাবে দলভ্রষ্ট ব্যক্তিদের অন্বেষণ করেন এবং তাদের খোঁয়াড়ে ফিরিয়ে আনার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করেন।—মথি ১৮:১২, ১৩.
১৬ যারা হয়ত গুরুতর পাপ করেছেন তাদের অবজ্ঞা করার পরিবর্তে, প্রাচীনেরা তাদেরকে সংশোধন করার এবং অনুতপ্ত হওয়ার জন্য পরিচালনা দানের চেষ্টা করেন যদি তা সম্ভব হয়। তারা আনন্দিত হন যখন বিপথগামী কাউকে সাহায্য করতে পারেন। কিন্তু, একজন অপরাধী যখন অনুতপ্ত হতে ব্যর্থ হন তখন তা তাদের দুঃখিত করে। তখন ঈশ্বরের ধার্মিক মানদণ্ডগুলি তাদের অনুতাপহীন ব্যক্তিকে সমাজচ্যুত করতে আদেশ দেয়। তথাপি, অপব্যয়ী পুত্রের পিতার মত, তারা আশা করেন যে কোন একদিন বিপথগামী ব্যক্তিটি তার “চেতনা” ফিরে পাবেন। (লূক ১৫:১৭, ১৮) তাই, প্রাচীনেরা নির্দিষ্ট কিছু সমাজচ্যুত ব্যক্তিদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করার পদক্ষেপ নিয়ে থাকেন এটি স্মরণ করিয়ে দিতে যে কিভাবে তারা যিহোবার সংগঠনে ফিরে আসতে পারেন।a
১৭. অপরাধসংক্রান্ত একটি বিষয় পরিচালনার সময় প্রাচীনদের কোন্ লক্ষ্য থাকে এবং কোন্ গুণ সেই লক্ষ্য অর্জনে তাদের সাহায্য করবে?
১৭ অপরাধসংক্রান্ত বিষয়গুলি সমাধান করার সময় প্রাচীনদের বিশেষভাবে যিহোবার ন্যায়বিচার অনুকরণ করা প্রয়োজন। পাপীরা যীশুর “নিকটে আসিতেছিল” কারণ তারা অনুভব করেছিলেন যে তিনি তাদের বুঝতে পারবেন এবং সাহায্য করবেন। (লূক ১৫:১; মথি ৯:১২, ১৩) অবশ্য, যীশু অপরাধকে ক্ষমা করেননি। যীশুর সঙ্গে অতিবাহিত একটি ভোজনের সময়, একজন কুখ্যাত পরধনগ্রাহী সক্কেয়কে অনুতপ্ত এবং অন্যদের প্রতি তিনি যে ভোগান্তি নিয়ে এসেছিলেন সেই সমস্তের জন্য সংশোধিত হতে প্রণোদিত করেছিল। (লূক ১৯:৮-১০) আজকে প্রাচীনদের তাদের বিচারসংক্রান্ত শুনানিগুলিতে একই লক্ষ্য থাকে—বিপথগামী ব্যক্তিকে অনুতপ্ত হওয়ার দিকে পরিচালিত করা। যীশু যেমন ছিলেন তদ্রূপ তারা যদি সহজগম্য হন, তাহলে অনেক অপরাধী তাদের সাহায্য চাওয়াকে সহজ বলে মনে করবেন।
১৮. কী প্রাচীনদের “বাত্যা হইতে আচ্ছাদন” এর মত হতে সমর্থ করবে?
১৮ সংবেদনশীল হৃদয়, প্রাচীনদের ঐশিক ন্যায়বিচার সম্পাদন করতে সাহায্য করবে যা রূঢ় কিংবা অনুভূতিহীন নয়। আগ্রহজনকভাবে, ইস্রায়েলীয়দের ন্যায়বিচার শিক্ষা দেওয়ার জন্য ইষ্রা কেবল তার মন নয় কিন্তু হৃদয়কেও প্রস্তুত করেছিলেন। (ইষ্রা ৭:১০) এক উপলব্ধিপূর্ণ হৃদয় প্রাচীনদের উপযুক্ত শাস্ত্রীয় নীতিগুলি প্রয়োগ এবং প্রত্যেক ব্যক্তির পরিস্থিতিগুলি বিবেচনা করতে সমর্থ করবে। রক্তস্রাবগ্রস্ত স্ত্রীলোকটিকে যীশু যখন সুস্থ করেছিলেন, তখন তিনি দেখিয়েছিলেন যে যিহোবার ন্যায়বিচার মানে ব্যবস্থার প্রকৃত অর্থ আর সেইসঙ্গে বাহ্যিক অর্থও বোঝা। (লূক ৮:৪৩-৪৮) যে প্রাচীনেরা করুণার সঙ্গে ন্যায়বিচার সম্পাদন করেন তারা হয়ত তাদের জন্য “বাত্যা হইতে আচ্ছাদন” এর অনুরূপ যারা নিজেদের দুর্বলতাগুলি কিংবা আমরা যেখানে বাস করি সেই দুষ্ট ব্যবস্থার দ্বারা আঘাত পেয়েছেন।—যিশাইয় ৩২:২.
১৯. কিভাবে একজন বোন ঐশিক ন্যায়বিচার প্রয়োগের প্রতি সাড়া দিয়েছিলেন?
১৯ একজন বোন যিনি এক গুরুতর পাপ করেছিলেন তিনি সরাসরি ঐশিক ন্যায়বিচারকে উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন। তিনি স্বীকার করেন, “সত্যি কথা বলতে কি, আমি প্রাচীনদের কাছে যেতে ভয় পেয়েছিলাম। কিন্তু তারা আমার সঙ্গে করুণা এবং মর্যাদাপূর্ণ আচরণ করেছিলেন। প্রাচীনেরা একগুঁয়ে বিচারকদের মত নন বরঞ্চ তারা পিতার মত। তারা আমাকে বুঝতে সাহায্য করেছিলেন যে আমি যদি আমার আচরণ সংশোধন করতে দৃঢ়সংকল্প হই তাহলে যিহোবা আমাকে অগ্রাহ্য করবেন না। আমি সরাসরি জানতে পেরেছিলাম যে কিভাবে তিনি একজন প্রেমময় পিতার মত আমাদের শাসন করে থাকেন। তিনি আমার মিনতি শুনবেন এই দৃঢ়বিশ্বাস নিয়ে আমি যিহোবার কাছে আমার হৃদয় উন্মুক্ত করতে পেরেছিলাম। অতীতের দিকে তাকিয়ে, আমি অকপটে বলতে পারি যে প্রাচীনদের সঙ্গে সাত বছর আগের সাক্ষাৎটি যিহোবার কাছ থেকে আসা একটি আশীর্বাদ ছিল। আর এরপর থেকে তাঁর সঙ্গে আমার সম্পর্ক আরও দৃঢ় হয়েছে।”
ন্যায়বিচার রক্ষা করুন ও ধার্মিকতার অনুষ্ঠান করুন
২০. ন্যায়বিচার এবং ধার্মিকতা সম্বন্ধে বোধগম্যতা ও তা অনুশীলন করার উপকারগুলি কী?
২০ এটি কৃতজ্ঞ হওয়ার বিষয় যে, ঐশিক ন্যায়বিচারের অর্থ একজন ব্যক্তির যা প্রাপ্য তার চেয়ে তার প্রতি আরও বেশি কিছু প্রদান করা। যিহোবার ন্যায়বিচার তাঁকে যারা বিশ্বাস অনুশীলন করেন তাদের অনন্ত জীবন প্রদান করতে প্রণোদিত করে। (গীতসংহিতা ১০৩:১০; রোমীয় ৫:১৫, ১৮) ঈশ্বর এভাবে আমাদের সঙ্গে আচরণ করেন কারণ তাঁর ন্যায়বিচার আমাদের পরিস্থিতিগুলি বিবেচনা করে এবং এটি দণ্ড দেওয়ার পরিবর্তে রক্ষা করার চেষ্টা করে। সত্যই, যিহোবার ন্যায়বিচারের ব্যাপকতা সম্বন্ধে এক অধিকতর উত্তম বোধগম্যতা আমাদের তাঁর নিকটবর্তী করে। আর যতই আমরা তাঁর ব্যক্তিত্বের এই বৈশিষ্ট্যটি অনুকরণ করতে কঠোরভাবে চেষ্টা করব, ততই আমাদের ও অন্যান্যদের জীবন প্রচুররূপে আশীর্বাদপ্রাপ্ত হবে। আমাদের ন্যায়বিচার অনুধাবন আমাদের স্বর্গীয় পিতার অলক্ষিত থাকবে না। যিহোবা আমাদের কাছে প্রতিজ্ঞা করেন: “তোমরা ন্যায়বিচার রক্ষা কর, ধার্ম্মিকতার অনুষ্ঠান কর, কেননা আমার পরিত্রাণ আগতপ্রায়, এবং আমার ধার্ম্মিকতার প্রকাশ সন্নিকট। ধন্য সেই ব্যক্তি, যে এইরূপ আচরণ করে।”—যিশাইয় ৫৬:১, ২.
[পাদটীকাগুলো]
a ১৯৯১ সালের ১৫ই এপ্রিলের প্রহরীদুর্গ (ইংরাজি), পৃষ্ঠা ২২-৩ দেখুন।
আপনি কি স্মরণ করতে পারেন?
◻ সদোম ও ঘমোরার ধ্বংস যিহোবার ন্যায়বিচার সম্বন্ধে আমাদের কী শিক্ষা দেয়?
◻ মুক্তির মূল্য কেন ঈশ্বরের ন্যায়বিচার ও প্রেমের এক উল্লেখযোগ্য অভিব্যক্তি?
◻ তিনটি উপায় কী যেখানে আমরা ন্যায়বিচার অনুশীলন করতে পারি?
◻ কোন্ বিশেষ উপায়ে প্রাচীনেরা ঐশিক ন্যায়বিচার অনুকরণ করতে পারেন?
[১৫ পৃষ্ঠার চিত্র]
আমাদের প্রচার কাজের দ্বারা, আমরা ঈশ্বরীয় ন্যায়বিচার প্রদর্শন করি
[১৬ পৃষ্ঠার চিত্র]
প্রাচীনেরা যখন ঈশ্বরীয় ন্যায়বিচার প্রকাশ করেন, তখন সমস্যাগ্রস্তেরা তাদের সাহায্য চাওয়াকে সহজ মনে করেন