যিহোবার দয়া সম্বন্ধে যোনা শেখেন
যিহোবা তাঁর ভাববাদী যোনাকে একটি কার্যভার দেন। সময়টি ছিল সা.শ.পূ. নবম শতাব্দী এবং যারবিয়াম দ্বিতীয় ইস্রায়েলের উপর শাসন করছিলেন। যোনা সবূলূনীয় শহর গাৎ-হেফরের অধিবাসী। (যিহোশূয়ের পুস্তক ১৯:১০, ১৩; ২ রাজাবলি ১৪:২৫) ঈশ্বর যোনাকে অশূরীয় রাজধানী নীনবীতে পাঠাচ্ছেন যা তার নিজের শহর থেকে ৮০০ কিলোমিটারের বেশি উত্তরপূর্বে অবস্থিত। তাকে নীনবীয়দের সতর্ক করতে হবে যে তারা ঈশ্বরের পক্ষ থেকে ধ্বংসের সম্মুখীন হতে চলেছে।
যোনা হয়ত ভেবেছিল: ‘কেন আমি ওই নগর ও তার লোকেদের কাছে যাব? তারা এমনকি যিহোবার কাছে উৎসর্গীকৃত নয়। ওই রক্তপিপাসু অশূরীয়রা কখনও ইস্রায়েলীদের মত যিহোবার সাথে নিয়মচুক্তির অধীনে প্রবেশ করেনি। কেন, ওই দুষ্ট জাতির লোকেরা অমঙ্গলের লক্ষণ হিসাবে আমার সতর্কবার্তাকে বিবেচনা করবে এবং হয়ত ইস্রায়েলের উপর জয়লাভ করবে! না! আমি যাব না। আমি যাফোতে পালিয়ে যাব আর বিপরীত দিকে যাত্রা করব—তর্শীশের পথে, মহাসমুদ্রের অপর প্রান্তে। এটিই আমি করব!—যোনা ১:১-৩.
সমুদ্রে বিপদ!
শীঘ্রই যোনা ভূমধ্যসাগরীয় উপকূল যাফোতে পৌঁছান। তিনি তার ভাড়া দেন ও তর্শীশে যাবে এমন একটি জাহাজে ওঠেন, যা সাধারণত স্পেনের সাথে সংশ্লিষ্ট, নীনবী থেকে প্রায় ৩,৫০০ কিলোমিটার পশ্চিমে। একবার সমুদ্র পথে রওনা হওয়ার পর, এই উদ্বিগ্ন ভাববাদী পাটাতনের নিচে যান ও ঘুমিয়ে পড়েন। শীঘ্রই যিহোবা সমুদ্রে সজোরে প্রচণ্ড বাতাস পাঠান আর প্রত্যেক ভীত নাবিকেরা রক্ষা পাওয়ার জন্য নিজ নিজ দেবতাকে ডাকতে থাকে। জাহাজ এত বেশি আন্দোলিত ও বিক্ষিপ্ত হতে থাকে যে জাহাজ হালকা করার জন্য জাহাজের উপর থেকে সমস্ত মাল ফেলে দেওয়া হয়। তবুও মনে হয় জাহাজটি নিশ্চিত ডুবে যাবে আর যোনা সেই উত্তেজিত প্রধান নাবিককে চিৎকার করে বলতে শোনেন: “ওহে, তুমি যে ঘুমাইতেছ তোমার কি হইল? উঠ তোমার ঈশ্বরকে ডাক; হয়ত ঈশ্বর আমাদের বিষয় চিন্তা করিবেন, ও আমরা বিনষ্ট হইব না।” যোনা ওঠেন ও জাহাজের পাটাতনে আসেন।—যোনা ১:৪-৬.
“আইস, আমরা গুলিবাঁট করি,” নাবিকেরা বলে, “তাহা হইলে জানিতে পারিব, কাহার দোষে আমাদের প্রতি এই অমঙ্গল ঘটিতেছে।” যোনার নামে গুলি উঠল। তার উদ্বেগ সম্বন্ধে চিন্তা করে দেখুন যখন নাবিকেরা বলে: “বল দেখি, কাহার দোষে আমাদের প্রতি এই অমঙ্গল ঘটিতেছে? তোমার ব্যবসায় কি? কোথা হইতে আসিয়াছ? তুমি কোন্ দেশের লোক? কোন্ জাতীয়?” যোনা তাদের বলেন যে তিনি একজন ইব্রীয় যিনি ‘স্বর্গের ঈশ্বর সদাপ্রভুর’ উপাসনা করেন এবং তিনি তাকে শ্রদ্ধাপূর্ণ ভয় করেন “তিনি সমুদ্র ও স্থল নির্ম্মাণ করিয়াছেন।” তাদের উপর ঝড় এসেছে কারণ বাধ্যতার সাথে ঈশ্বরের সংবাদ নীনবীতে নিয়ে যাওয়ার পরিবর্তে তিনি যিহোবার সম্মুখ থেকে পালাচ্ছেন।—যোনা ১:৭-১০.
নাবিকেরা জিজ্ঞাসা করে: “আমরা তোমাকে কি করিলে সমুদ্র আমাদের প্রতি ক্ষান্ত হইতে পারে?” যেহেতু সমুদ্র আরও বেশি উত্তাল হয়ে উঠছিল, যোনা বলেন: “আমাকে ধরিয়া সমুদ্রে ফেলিয়া দেও, তাহাতে সমুদ্র তোমাদের পক্ষে ক্ষান্ত হইবে; কেননা আমি জানি, আমারই দোষে তোমাদের উপরে এই ভারী ঝড় উপস্থিত হইয়াছে।” যিহোবার দাসকে সমুদ্রের মাঝে এবং নিশ্চিত মৃত্যুতে নিক্ষেপ করতে না চেয়ে লোকেরা নৌকাকে শুষ্ক ভূমিতে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করল। ব্যর্থ হয়ে নাবিকেরা বলে ওঠে: “হে সদাপ্রভু, বিনতি করি, এই ব্যক্তির প্রাণের নিমিত্ত আমাদের বিনাশ না হউক, এবং আমাদের উপর নির্দোষের রক্ত অর্পণ করিও না; কেননা হে সদাপ্রভু, তুমি আপন ইচ্ছামত কর্ম্ম করিয়াছ।”—যোনা ১:১১-১৪.
সমুদ্রের মাঝে
নাবিকেরা যোনাকে জাহাজের উপর থেকে ফেলে দেয়। যখন তিনি উত্তাল সমুদ্রের মধ্যে ডুবে যেতে থাকেন এর উদ্দামতা শান্ত হতে থাকে। এটি দেখে “লোকেরা সদাপ্রভু হইতে অতিশয় ভীত হইল; আর তাহারা সদাপ্রভুর উদ্দেশে বলিদান করিল, এবং নানা মানত করিল।”—যোনা ১:১৫, ১৬.
জলরাশি যোনার উপর আসায় নিঃসন্দেহে তিনি প্রার্থনা করেন। তিনি অনুভব করেন যে তিনি একটি নরম খাদের মধ্যে দিয়ে গড়িয়ে যাচ্ছেন যেন এক বিরাট গহ্বরের মধ্যে তিনি পিছলে পড়ছেন। আশ্চর্যজনকভাবে তিনি তখনও নিশ্বাস নিতে পারছিলেন! তার চর্তুদিকে সামুদ্রিক গুল্মের আবরণের পরিবর্তে যোনা সত্যিই এক অদ্বিতীয় জায়গায় নিজেকে খুঁজে পান। এর কারণ “সদাপ্রভু যোনাকে গ্রাস করণার্থে একটা বৃহৎ মৎস নিরূপণ করিয়াছিলেন; সেই মৎসের উদরে যোনা তিন দিন ও তিন রাত্রি যাপন করিলেন।”—যোনা ১:১৭.
যোনার ঐকান্তিক প্রার্থনা
ওই বৃহৎ মাছের পেটে থাকার সময় যোনার প্রার্থনা করার সময় হয়। তার কিছু কথা নির্দিষ্ট কিছু গীতের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। পরে যোনা তার প্রার্থনা লিপিবদ্ধ করে তার হতাশা ও অনুতাপ ব্যক্ত করেন। উদাহরণস্বরূপ, তার মনে হয়েছিল যে তার জন্য মাছের পেট শিওল, তার কবরে পরিণত হয়েছে। সুতরাং তিনি প্রার্থনা করেছিলেন: “আমি সঙ্কট প্রযুক্ত সদাপ্রভুকে ডাকিলাম, আর তিনি আমাকে উত্তর দিলেন; আমি পাতালের উদর হইতে আর্ত্তনাদ করিলাম, তুমি আমার রব শ্রবণ করিলে।” (যোনা ২:১, ২) আরোহণ গীতের দুটি সংগীত—সম্ভবত যা ইস্রায়েলীয়রা গেয়েছিল যিরূশালেমে তাদের বাৎসরিক উৎসব পালন করতে যাওয়ার সময়—সমরূপ চিন্তাধারা প্রকাশ করে।—গীতসংহিতা ১২০:১; ১৩০:১, ২.
সমুদ্রের মধ্যে থাকাকালীন অবস্থাকে স্মরণ করে যোনা প্রার্থনা করেন: “তুমি [যিহোবা] আমাকে অগাধ জলে, সমুদ্র-গর্ভে [মধ্যে] নিক্ষেপ করিলে, আর স্রোত আমাকে বেষ্টন করিল, তোমার সকল ঢেউ, তোমার সকল তরঙ্গ,—আমার উপর দিয়া গেল।”—যোনা ২:৩; তুলনা করুন গীতসংহিতা ৪২:৭; ৬৯:২.
যোনার আশঙ্কা ছিল যে তার অবাধ্যতার মূল্যস্বরূপ তাকে ঐশিক অনুমোদন হারাতে হবে এবং তিনি আর কখনও ঈশ্বরের মন্দির দেখতে পাবেন না। তিনি প্রার্থনা করেন: “আমি কহিলাম, আমি তোমার নয়নগোচর হইতে দূরীভূত, তথাপি পুনরায় তোমার পবিত্র মন্দিরের দিকে দৃষ্টিপাত করিব।” (যোনা ২:৪; তুলনা করুন গীতসংহিতা ৩১:২২.) যোনার অবস্থা এতই করুণ ছিল যে তিনি বলেন: “জলরাশি আমাকে ঘেরিল, প্রাণ পর্য্যন্ত উঠিল, [তার জীবন বিপন্ন করে] জলধি আমাকে বেষ্টন করিল, মৃণাল [সমুদ্রের মধ্যে] আমার মস্তকে জড়াইল।” (যোনা ২:৫; তুলনা করুন গীতসংহিতা ৬৯:১.) যোনার দুর্দশাপূর্ণ অবস্থার বিষয়ে কল্পনা করুন যে কারণে তিনি আরও বলেন: “আমি পর্ব্বতগণের মূল পর্য্যন্ত নামিয়া গেলাম; [মাছের ভিতরে]। আমার পশ্চাতে পৃথিবীর অর্গল সকল [কবরের মত] চিরতরে বদ্ধ হইল; তথাপি হে আমার ঈশ্বর সদাপ্রভু, তুমি আমার প্রাণকে কূপ হইতে উঠাইলে [তৃতীয় দিনে]।”—যোনা ২:৬; তুলনা করুন গীতসংহিতা ৩০:৩.
যদিও তিনি মাছের পেটে ছিলেন, যোনা ভাবেননি: ‘আমি এতই অবসন্ন যে আমি প্রার্থনা করতে পারব না।’ পরিবর্তে তিনি প্রার্থনা করেন: “আমার মধ্যে প্রাণ অবসন্ন হইলে [মৃত্যুর আশঙ্কায়] আমি সদাপ্রভুকে স্মরণ করিলাম [এই বিশ্বাসে যে তিনিই শক্তি এবং দয়াতে অতুলনীয়], আর আমার প্রার্থনা তোমার নিকটে, তোমার পবিত্র মন্দিরে, উপস্থিত হইল।” (যোনা ২:৭) স্বর্গীয় মন্দির থেকে ঈশ্বর যোনার প্রার্থনা শুনেছিলেন এবং তাকে উদ্ধার করেছিলেন।
পরিসমাপ্তিতে যোনা প্রার্থনা করেন: “যাহারা অলীক নিঃসার বস্তু মানে [মিথ্যা ঈশ্বরের প্রাণহীন মূর্তির উপর নির্ভর করার দ্বারা], তাহারা নিজ দয়ানিধিকে পরিত্যাগ করে [যিনি এই গুণ প্রদর্শন করেন তাঁকে পরিত্যাগ করে]; কিন্তু আমি তোমার [যিহোবা ঈশ্বর] উদ্দেশে স্তবধ্বনি সহ বলিদান করিব; আমি যে মানত করিয়াছি [এই অভিজ্ঞতা ভোগ করার সময় অথবা অন্যান্য পরিস্থিতিতে], তাহা পূর্ণ করিব; পরিত্রাণ সদাপ্রভুরই কাছে।” (যোনা ২:৮, ৯; তুলনা করুন গীতসংহিতা ৩১:৬; ৫০:১৪.) কেবলমাত্র ঈশ্বরই তাকে মৃত্যু থেকে উদ্ধার করতে পারেন এবিষয়ে সচেতন হওয়ায় অনুতপ্ত ভাববাদী (তাঁর কাছে রাজা দায়ূদ ও শলোমনের মত) যিহোবার কাছেই পরিত্রাণ আছে বলে মনে করেন।—গীতসংহিতা ৩:৮; হিতোপদেশ ২১:৩১.
যোনা বাধ্যতা দেখান
অনেক চিন্তা ও একান্ত প্রার্থনার পর যোনা অনুভব করেন যে তিনি সেই খাদের মধ্যে দিয়ে বার হয়ে আসছেন যেখান দিয়ে তিনি ভিতরে গিয়েছিলেন। পরিশেষে, তাকে শুষ্ক ভূমিতে নিক্ষেপ করা হয়। (যোনা ২:১০) এই উদ্ধারের প্রতি কৃতজ্ঞতাস্বরূপ যোনা ঈশ্বরের বাক্যের বাধ্য হন: “তুমি উঠ, নীনবীতে, সেই মহানগরে যাও, আর আমি তোমাকে যাহা ঘোষণা করিতে বলি, তাহা সেই নগরের উদ্দেশে ঘোষণা কর।” (যোনা ৩:১, ২) যোনা অশূরীয় রাজধানীর উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন। যখন তিনি লক্ষ্য করেন যে এটি কোন্ দিন, তখন তিনি বোঝেন যে তিনি তিনদিন মাছের পেটে ছিলেন। ভাববাদী ইউফ্রেটিস নদী ও তার বিশাল পশ্চিমী বাঁক পার হয়ে পূর্বদিকে ভ্রমণ করে, উত্তর মেসোপটেমিয়া অতিক্রম করে টাইগ্রীস নদীতে আসেন ও পরিশেষে সেই মহানগরীতে এসে পৌঁছান।—যোনা ৩:৩.
যোনা এক বৃহৎ শহর নীনবীতে প্রবেশ করেন। তিনি একদিন শহরটির মধ্যে দিয়ে পরিভ্রমণ করেন ও তারপর ঘোষণা করেন: “আর চল্লিশ দিন গত হইলে নীনবী উৎপাটিত হইবে।” যোনা কি অলৌকিকভাবে অশূরীয় ভাষায় জ্ঞান লাভ করেছিলেন? আমাদের সে বিষয়ে বলা হয়নি। কিন্তু এমনকি যদি তিনি ইব্রীয় ভাষাতেও বলে থাকেন ও কেউ তা ভাষান্তরিত করে থাকে, তার ঘোষণা ফল উৎপন্ন করেছিল। নীনবীর লোকেরা ঈশ্বরে বিশ্বাস করতে শুরু করেছিল। তাদের ক্ষুদ্র মহান সকলে উপবাস করেছিল ও চট পরেছিল। যখন নীনবীর রাজার কাছে এই বার্তা পৌঁছায়, তিনি সিংহাসন থেকে ওঠেন, তার রাজ পোশাক পরিত্যাগ করেন, চট পরিধান করেন ও ভষ্মের উপর বসেন।—যোনা ৩:৪-৬.
যোনা কতই না বিস্মিত হন! অশূরীয় রাজা ঘোষক পাঠিয়ে প্রচার করেন: “মনুষ্য ও গোমেষাদি পশু কেহ কিছু আস্বাদন না করুক, ভোজন কি জল গ্রহণ না করুক; কিন্তু মনুষ্য ও পশু চট পরিধান করিয়া যথাশক্তি ঈশ্বরকে ডাকুক, আর প্রত্যেক জন আপন আপন কুপথ ও আপন আপন হস্তস্থিত দৌরাত্ম্য হইতে ফিরুক। হয় ত ঈশ্বর ক্ষান্ত হইবেন, অনুশোচনা করিবেন ও আপন প্রজ্বলিত ক্রোধ হইতে নিবৃত্ত হইবেন, তাহাতে আমরা বিনষ্ট হইব না।”—যোনা ৩:৭-৯.
নীনবীর লোকেরা তাদের রাজার নির্দেশের সাথে সমমত হয়। যখন ঈশ্বর দেখেন যে তারা তাদের মন্দ পথ থেকে ফিরেছে, তাদের বিপক্ষে তিনি যে দুর্যোগবার্তা ঘোষণা করেছিলেন তারজন্য তিনি অনুশোচনা করেন, সুতরাং তিনি এটি নিয়ে আসেননি। (যোনা ৩:১০) তাদের অনুতাপ, নম্রতা ও বিশ্বাস প্রযুক্ত যিহোবা স্থির করেন তাদের উপর তার অভিপ্রেত বিচার আরোপ করবেন না।
অসন্তুষ্ট ভাববাদী
চল্লিশ দিন গত হয় ও নীনবীর প্রতি কিছুই ঘটে না। (যোনা ৩:৪) নীনবীয়রা ধ্বংসিত হবে না বুঝে যোনা ভীষণভাবে বিরক্ত হন ও ক্রোধে ক্ষুব্ধ হন ও প্রার্থনা করেন: “হে সদাপ্রভু, বিনতি করি, আমি স্বদেশে থাকিতে কি ইহাই বলি নাই? সেই জন্য ত্বরা করিয়া তর্শীশে পলাইতে গিয়াছিলাম; কেননা আমি জানিতাম তুমি কৃপাময় ও স্নেহশীল ঈশ্বর, ক্রোধে ধীর ও দয়াতে মহান্ এবং অমঙ্গলের বিষয়ে অনুশোচনাকারী। অতএব এখন, হে সদাপ্রভু বিনতি করি, আমা হইতে আমার প্রাণ হরণ কর, কেননা আমার জীবন অপেক্ষা মরণ ভাল।” ঈশ্বর এই প্রশ্নগুলিতে সাড়া দেন: “তুমি ক্রোধ করিয়া কি ভাল করিতেছ?”—যোনা ৪:১-৪.
এরপর যোনা ক্রোধবশত সেই নগরের বাইরে গেলেন। পূর্বদিকে গিয়ে তিনি একটি কুটীর নির্মাণ করলেন যেন তিনি তার ছায়ায় বসতে পারেন যতক্ষণ না তিনি দেখতে পান সেই নগরের প্রতি কী ঘটে। এর প্রতিদানে যিহোবা সহানুভূতিপূর্বক “এক এরণ্ড গাছ নিরূপণ করিলেন আর সেই গাছটী বাড়াইয়া যোনার উপরে আনিলেন, যেন তাঁহার মস্তকের উপরে ছায়া হয়, যেন তাঁহার দুর্ম্মতি হইতে তাঁহাকে উদ্ধার করা হয়।” সেই এরণ্ড গাছটি দেখে যোনা কতই না খুশি হন! কিন্তু সূর্য উদয়কালে গাছটিকে আঘাত করার জন্য ঈশ্বর একটি কীট নিরূপণ করেন আর এটি শুকিয়ে যেতে শুরু করে। শীঘ্রই এটি সম্পূর্ণ শুকিয়ে যায়। পরে ঈশ্বর এক তপ্ত পূর্বীয় বায়ু পাঠান। সূর্য এখন সেই ভাববাদীর মাথার উপর কিরণ দিচ্ছে, সেইজন্য তিনি অবসন্ন হয়ে পড়েন। তিনি মৃত্যু প্রার্থনা করতে থাকেন। তিনি বার বার বলতে থাকেন: “আমার জীবন অপেক্ষা মরণ ভাল।”—যোনা ৪:৫-৮.
যিহোবা এখন কথা বলেন। তিনি যোনাকে জিজ্ঞাসা করেন: “তুমি এরণ্ড গাছটীর নিমিত্ত ক্রোধ করিয়া কি ভাল করিতেছ?” যোনা উত্তর দেয়: “মৃত্যু পর্য্যন্ত আমার ক্রোধ করাই ভাল।” মূলতঃ, যিহোবা এখন সেই ভাববাদীকে বলেন: ‘তুমি এই এরণ্ড গাছটির প্রতি দয়ার্দ্র হইয়াছ। কিন্তু তুমি এই এরণ্ড গাছের নিমিত্ত কোন শ্রম কর নাই, এবং এটা বাড়াও নাই। ইহা এক রাত্রিতে উৎপন্ন ও এক রাত্রিতে উচ্ছিন্ন হইল।’ ঈশ্বর আবারও যুক্তি করেন: “তবে আমি কি নীনবীর প্রতি, ঐ মহানগরের প্রতি, দয়ার্দ্র হইব না? তথায় এমন এক লক্ষ বিশংতি সহস্রের অধিক মনুষ্য আছে, যাহারা দক্ষিণ হস্ত হইতে বাম হস্তের প্রভেদ জানে না; আর অনেক পশুও আছে।” (যোনা ৪:৯-১১) সঠিক উত্তর স্পষ্ট প্রতীয়মান।
যোনা অনুতপ্ত হন ও তার নাম বহনকারী বাইবেলের বই লেখেন। কিভাবে তিনি জেনেছিলেন যে নাবিকেরা যিহোবার থেকে অতিশয় ভীত হয়েছিল, বলিদান করেছিল ও মানত করেছিল? ঐশিক অনুপ্রেরণায় অথবা মন্দিরে, কোন একজন নাবিক বা যাত্রীর কাছ থেকে।—যোনা ১:১৬; ২:৪.
“যোনার চিহ্ন”
যখন অধ্যাপক ও ফরীশীরা যীশু খ্রীষ্টের কাছে চিহ্ন চেয়েছিল, তিনি বলেছিলেন: “এই কালের দুষ্ট ও ব্যভিচারী লোক চিহ্নের অন্বেষণ করে, কিন্তু যোনা ভাববাদীর চিহ্ন ছাড়া আর কোন চিহ্ন ইহাদিগকে দেওয়া যাইবে না।” যীশু আরও যোগ দিয়েছিলেন: “কারণ যোনা যেমন তিন দিবারাত্র বৃহৎ মৎস্যের উদরে ছিলেন, তেমনি মনুষ্যপুত্ত্রও তিন দিবারাত্র পৃথিবীর গর্ব্ভে থাকিবেন।” (মথি ১২:৩৮-৪০) যিহূদী দিন সূর্যাস্ত দিয়ে শুরু হত। খ্রীষ্ট মারা গিয়েছিলেন শুক্রবার সন্ধ্যাবেলা, নিশান ১৪, সা.শ. ৩৩ সালে। তাঁর দেহ একটি কবরে রাখা হয়েছিল ওই দিন সূর্যাস্তের আগে। নিশান ১৫ শুরু হয়েছিল সেইদিন সন্ধ্যাবেলা ও তা চলেছিল যতক্ষণ না শনিবার সূর্যাস্ত হয়, সপ্তাহের সপ্তম ও শেষ দিন। সেই সময় থেকে নিশান ১৬ শুরু হয়েছিল আর তা প্রসারিত ছিল যাকে আমরা রবিবার বলি তার সূর্যাস্ত পর্যন্ত। ফলস্বরূপ, যীশু মৃত অবস্থায় ও কবরে ছিলেন নিশান ১৪ তারিখের প্রায় কিছুটা সময়, নিশান ১৫ তারিখ সম্পূর্ণ দিন ব্যাপী তিনি কবরস্থ অবস্থায় ছিলেন এবং নিশান ১৬ তারিখের রাত্রিকাল তিনি কবরে ছিলেন। যখন একজন স্ত্রীলোক রবিবার সকালে কবরের কাছে এসেছিল, তিনি ইতিমধ্যেই পুনরুত্থিত হয়েছিলেন।—মথি ২৭:৫৭-৬১; ২৮:১-৭.
যীশু অংশত তিন দিন কবরে ছিলেন। তাঁর শত্রুরা তাই “যোনার চিহ্ন” পেয়েছিল, কিন্তু খ্রীষ্ট বলেছিলেন: “নীনবীয় লোকেরা বিচারে এই কালের লোকদের সহিত দাঁড়াইয়া ইহাদিগকে দোষী করিবে, কেননা তাহারা যোনার প্রচারে মন ফিরাইয়াছিল, আর দেখ, যোনা হইতে মহান্ এক ব্যক্তি এখানে আছেন।” (মথি ১২:৪১) কতই না সত্য! যিহূদীদের মধ্যে যীশু খ্রীষ্ট ছিলেন—যোনার চেয়ে মহৎ এক ভাববাদী। যদিও যোনা নীনবীয়দের জন্য পর্যাপ্ত চিহ্নস্বরূপ ছিল, যীশু, ওই ভাববাদী যা করেছিলেন তার তুলনায় আরও অনেক বেশি কর্তৃত্ব ও সমর্থনকারী প্রমাণ সহ প্রচার করেছিলেন। তবুও, সার্বজনীনভাবে যিহূদীরা তাঁকে বিশ্বাস করেনি।—যোহন ৪:৪৮.
জাতিগতভাবে যিহূদীরা নম্রভাবে যোনার চেয়েও মহৎ ভাববাদীকে গ্রহণ করেনি এবং তারা তাঁর প্রতি বিশ্বাস প্রদর্শন করেনি। কিন্তু তাদের পূর্বপুরুষদের সম্বন্ধে কী বলা যায়? তাদেরও বিশ্বাস ও নম্রতার মনোভাবের অভাব ছিল। বস্তুতপক্ষে, যিহোবা যোনাকে নীনবীতে পাঠিয়েছিলেন প্রমাণস্বরূপ অনুতপ্ত নীনবীয় ও শক্ত-গ্রীব ইস্রায়েলীয়দের মধ্যে পার্থক্য স্পষ্টভাবে দেখাবার জন্য যাদের মধ্যে নিদারুণভাবে বিশ্বাস ও নম্রতার অভাব ছিল।—তুলনা করুন দ্বিতীয় বিবরণ ৯:৬, ১৩.
যোনার নিজের সম্বন্ধে কী বলা যায়? তিনি শিক্ষা করেছিলেন ঈশ্বরের করুণা কত মহৎ। আরও, অনুতপ্ত নীনবীয়দের প্রতি দয়া দেখানোর জন্য যোনার অসন্তোষের প্রতি যিহোবার প্রতিক্রিয়া আমাদের অভিযোগ করা থেকে বিরত রাখবে যখন আমাদের স্বর্গীয় পিতা আজকের দিনে লোকেদের প্রতি করুণা প্রসারিত করেন। সত্যই, আসুন আমরা আনন্দ করি যে প্রতি বছর সহস্রাধিক লোকেরা নম্র হৃদয়ে বিশ্বাসে যিহোবার প্রতি ফিরছে।