‘ধার্ম্মিকেরা সূর্য্যের ন্যায় দেদীপ্যমান হইবে’
“তখন ধার্ম্মিকেরা আপনাদের পিতার রাজ্যে সূর্য্যের ন্যায় দেদীপ্যমান হইবে।”—মথি ১৩:৪৩.
১. যিশু রাজ্যের কোন দিকগুলোর বিষয়ে ব্যাখ্যা করার জন্য বিভিন্ন দৃষ্টান্ত ব্যবহার করেছিলেন?
যিশু খ্রিস্ট রাজ্যের বিভিন্ন দিক সম্বন্ধে ব্যাখ্যা করার জন্য অনেক দৃষ্টান্ত বা নীতিগল্প ব্যবহার করেছিলেন। তিনি ‘দৃষ্টান্ত দ্বারা লোকসমূহকে কহিতেন, দৃষ্টান্ত ব্যতিরেকে তাহাদিগকে কিছুই কহিতেন না।’ (মথি ১৩:৩৪) রাজ্যের সত্যের বীজ বপন করা সম্বন্ধীয় দৃষ্টান্তগুলোতে যিশু বার্তা গ্রহণ করার ক্ষেত্রে একজন ব্যক্তির হৃদয়ের অবস্থার যে-ভূমিকা ও সেইসঙ্গে আধ্যাত্মিক বৃদ্ধির ক্ষেত্রে যিহোবা যে-ভূমিকা পালন করেন, সেই বিষয়ে জোর দিয়েছিলেন। (মার্ক ৪:৩-৯, ২৬-২৯) এ ছাড়া, যিশু দৃষ্টান্তের মাধ্যমে সেই ব্যক্তিদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি সম্বন্ধেও তুলে ধরেছিলেন, যারা রাজ্যের বার্তার প্রতি মনোযোগ দেবে, এমনকী তখনও যখন আমাদের কাজের ফলাফল সঙ্গেসঙ্গে বোঝা যায় না। (মথি ১৩:৩১-৩৩) অধিকন্তু, তিনি জোর দিয়েছিলেন যে, রাজ্যের বার্তার প্রতি সাড়া দেয় এমন সকলেই যে সেই রাজ্যের উপযুক্ত প্রজা, তা নয়।—মথি ১৩:৪৭-৫০.a
২. যিশুর বলা গোম ও শ্যামাঘাসের দৃষ্টান্তে ভালো বীজ কোন বিষয়কে চিত্রিত করে?
২ কিন্তু, যিশুর দৃষ্টান্তগুলোর মধ্যে একটা সেই ব্যক্তিদের সংগ্রহ করার ওপর জোর দেয়, যারা যিশুর রাজ্যে তাঁর সঙ্গে শাসন করবে। এই দৃষ্টান্তকে প্রায়ই গোম ও শ্যামাঘাসের নীতিগল্প বলা হয়ে থাকে আর এটা মথি ১৩ অধ্যায়ে লিপিবদ্ধ রয়েছে। আবার অন্য আরেকটা দৃষ্টান্তে, যিশু আমাদের বলেন, যে-বীজ বপন করা হয় সেটা হল “রাজ্যের বাক্য” আর এই দৃষ্টান্তে তিনি আমাদের বলেন যে, ভালো বীজ ভিন্ন কিছুকে—‘রাজ্যের সন্তানগণকে’—চিত্রিত করে। (মথি ১৩:১৯, ৩৮) তারা রাজ্যের প্রজা নয়, বরং “পুত্ত্র” অর্থাৎ রাজ্যের দায়াদ।—রোমীয় ৮:১৪-১৭; পড়ুন, গালাতীয় ৪:৬, ৭.
গোম ও শ্যামাঘাসের দৃষ্টান্ত
৩. দৃষ্টান্তের ব্যক্তিটি যে-সমস্যার মুখোমুখি হন এবং তিনি যেভাবে এই সমস্যা সমাধানের সিদ্ধান্ত নেন, তা ব্যাখ্যা করুন।
৩ দৃষ্টান্তটি এইরকম: “স্বর্গ-রাজ্যকে এমন এক ব্যক্তির সহিত তুলনা করা যায়, যিনি আপন ক্ষেত্রে ভাল বীজ বপন করিলেন। কিন্তু লোকে নিদ্রা গেলে পর তাঁহার শত্রু আসিয়া ঐ গোমের মধ্যে শ্যামাঘাসের বীজ বপন করিয়া চলিয়া গেল। পরে যখন বীজ অঙ্কুরিত হইয়া ফল দিল, তখন শ্যামাঘাসও প্রকাশ হইয়া পড়িল। তাহাতে সেই গৃহকর্ত্তার দাসেরা আসিয়া তাঁহাকে কহিল, মহাশয়, আপনি কি নিজ ক্ষেত্রে ভাল বীজ বুনেন নাই? তবে শ্যামাঘাস কোথা হইতে হইল? তিনি তাহাদিগকে কহিলেন, কোন শত্রু ইহা করিয়াছে। দাসেরা তাঁহাকে কহিল, তবে আপনি কি এমন ইচ্ছা করেন যে, আমরা গিয়া তাহা সংগ্রহ করি? তিনি কহিলেন, না, কি জানি, শ্যামাঘাস সংগ্রহ করিবার সময়ে তোমরা তাহার সহিত গোমও উপড়াইয়া ফেলিবে। শস্যচ্ছেদনের সময় পর্য্যন্ত উভয়কে একত্র বাড়িতে দেও। পরে ছেদনের সময়ে আমি ছেদকদিগকে বলিব, তোমরা প্রথমে শ্যামাঘাস সংগ্রহ করিয়া পোড়াইবার জন্য বোঝা বোঝা বাঁধিয়া রাখ, কিন্তু [“আর তার পরে,” বাংলা কমন ল্যাঙ্গুয়েজ ভারসন] গোম আমার গোলায় সংগ্রহ কর।”—মথি ১৩:২৪-৩০.
৪. (ক) দৃষ্টান্তে উল্লেখিত সেই ব্যক্তি কে? (খ) কখন ও কীভাবে যিশু এই বীজ বপন করতে শুরু করেছিলেন?
৪ সেই ব্যক্তি কে, যিনি তার ক্ষেত্রে ভালো বীজ বপন করেছিলেন? যিশু পরে সেটার উত্তর দেন, যখন তিনি তাঁর শিষ্যদের কাছে ব্যাখ্যা করেন: “যিনি ভাল বীজ বপন করেন, তিনি মনুষ্যপুত্ত্র।” (মথি ১৩:৩৭) ‘মনুষ্যপুত্ত্র’ যিশু সাড়ে তিন বছর ধরে তাঁর পার্থিব পরিচর্যার সময় সেই ক্ষেত্র বপনের জন্য প্রস্তুত করেছিলেন। (মথি ৮:২০; ২৫:৩১; ২৬:৬৪) এরপর সা.কা. ৩৩ সালের পঞ্চাশত্তমীর দিন থেকে, তিনি ভালো বীজ—‘রাজ্যের সন্তানগণকে’—বপন করতে শুরু করেছিলেন। এই বপনের কাজ স্পষ্টত তখন ঘটেছিল, যখন যিহোবার প্রতিনিধি হিসেবে যিশু, শিষ্যদের ওপর পবিত্র আত্মা সেচন করতে শুরু করেছিলেন ও এর মাধ্যমে তাদেরকে ঈশ্বরের পুত্র হিসেবে অভিষেক করেছিলেন।b (প্রেরিত ২:৩৩) সেই ভালো বীজ বৃদ্ধি পেয়ে পরিপক্ব বা পাকা গোমে পরিণত হয়েছিল। তাই, ভালো বীজ বপন করার পিছনে উদ্দেশ্যটা ছিল, শেষপর্যন্ত সেই ব্যক্তিদের পূর্ণ সংখ্যাকে সংগ্রহ করা, যারা যিশুর সঙ্গে তাঁর রাজ্যে তাঁর সহদায়াদ ও সহশাসক হবে।
৫. এই দৃষ্টান্তে শত্রু কে এবং শ্যামাঘাস কাদের চিত্রিত করে?
৫ এখানে শত্রু কে এবং শ্যামাঘাসই বা কারা? যিশু আমাদের বলেন যে, শত্রু হচ্ছে “দিয়াবল।” শ্যামাঘাসকে “সেই পাপাত্মার সন্তানগণ” হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। (মথি ১৩:২৫, ৩৮, ৩৯) আক্ষরিক অর্থে, যিশু যে-শ্যামাঘাসের কথা উল্লেখ করেছিলেন, সেগুলো সম্ভবত আঁশ দিয়ে আবৃত আগাছা ছিল। এই বিষাক্ত চারাগাছগুলো পরিপক্ব হওয়ার আগে কচি অবস্থায় দেখতে ঠিক গোমের চারার মতোই লাগে। নকল খ্রিস্টানদের বোঝাতে কী এক উপযুক্ত চিত্র, যারা নিজেদের রাজ্যের সন্তান হিসেবে দাবি করে কিন্তু প্রকৃত ফল উৎপন্ন করে না! এই কপট খ্রিস্টানরা, যারা নিজেদেরকে খ্রিস্টের অনুসারী হিসেবে দাবি করে, তারা আসলে শয়তান দিয়াবলের ‘বংশের’ অংশ।—আদি. ৩:১৫.
৬. কখন শ্যামাঘাস প্রকাশ পেতে শুরু করেছিল আর সেই সময় কীভাবে লোকেরা ‘নিদ্রা গিয়াছিল’?
৬ কখন এই শ্যামাঘাসতুল্য খ্রিস্টানদের বপন করা হয়েছিল? ‘লোকেরা নিদ্রা গেলে পর,’ যিশু বলেন। (মথি ১৩:২৫) এটা কখন ছিল? আমরা এই প্রশ্নের উত্তর ইফিষীয় প্রাচীনদের উদ্দেশে বলা প্রেরিত পৌলের এই কথাগুলোতে খুঁজে পাই: “আমি জানি, আমি গেলে পর দুরন্ত কেন্দুয়ারা তোমাদের মধ্যে প্রবেশ করিবে, পালের প্রতি মমতা করিবে না; এবং তোমাদের মধ্য হইতেও কোন কোন লোক উঠিয়া শিষ্যদিগকে আপনাদের পশ্চাৎ টানিয়া লইবার জন্য বিপরীত কথা কহিবে।” (প্রেরিত ২০:২৯, ৩০) এ ছাড়া, তিনি সেই প্রাচীনদের ক্রমাগত আধ্যাত্মিকভাবে জেগে থাকার বিষয়ে পরামর্শ দিয়েছিলেন। প্রেরিতরা, যারা ধর্মভ্রষ্টতার বিরুদ্ধে এক “বাধা” হিসেবে কাজ করেছিল, তারা মৃত্যুতে নিদ্রাগত হওয়ার পর, অনেক খ্রিস্টান আধ্যাত্মিকভাবে নিদ্রাচ্ছন্ন হয়ে পড়েছিল। (পড়ুন, ২ থিষলনীকীয় ২:৩, ৬-৮.) সেই সময়ই ব্যাপক ধর্মভ্রষ্টতার সূত্রপাত ঘটে এবং শ্যামাঘাসতুল্য খ্রিস্টানরা প্রকাশ পেতে শুরু করে।।
৭. কিছু গোম কি শ্যামাঘাসে পরিণত হয়েছিল? ব্যাখ্যা করুন।
৭ যিশু বলেননি যে, গোম শ্যামাঘাসে পরিণত হবে বরং বলেছিলেন যে, গোমের মধ্যে শ্যামাঘাসও বপন করা হয়েছিল। তাই, এই দৃষ্টান্ত সেই প্রকৃত খ্রিস্টানদের বিষয় চিত্রিত করে না, যারা সত্য থেকে বিপথগামী হয়ে যায়। এর পরিবর্তে, এটা শয়তানের এক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত প্রচেষ্টাকে নির্দেশ করে, যে কিনা খ্রিস্টীয় মণ্ডলীতে দুষ্ট লোকেদের প্রবেশ করানোর দ্বারা এটাকে কলুষিত করতে চায়। শেষ প্রেরিত যোহন যখন বৃদ্ধ হয়ে গিয়েছিলেন, সেই সময়ের মধ্যে এইরকম ধর্মভ্রষ্টতা স্পষ্ট দেখা গিয়েছিল।—২ পিতর ২:১-৩; ১ যোহন ২:১৮.
“শস্যচ্ছেদনের সময় পর্য্যন্ত উভয়কে একত্র বাড়িতে দেও”
৮, ৯. (ক) কেন তার দাসদের প্রতি প্রভুর নির্দেশগুলো যিশুর শ্রোতাদের কাছে বোঝা কঠিন ছিল না? (খ) পরিপূর্ণতার ক্ষেত্রে, কীভাবে গোম ও শ্যামাঘাস একসঙ্গে বেড়ে উঠেছিল?
৮ সেই প্রভুর দাসেরা তাকে সমস্যাটা সম্বন্ধে অবগত করে এবং তাকে জিজ্ঞেস করে: “তবে আপনি কি এমন ইচ্ছা করেন যে, আমরা গিয়া [শ্যামাঘাস] সংগ্রহ করি?” (মথি ১৩:২৭, ২৮) তার উত্তর শুনে হয়তো অবাক লাগতে পারে। তিনি তাদের বলেন যে, গোম ও শ্যামাঘাসকে শস্যচ্ছেদনের সময় পর্যন্ত যেন একত্রে বাড়তে দেওয়া হয়। সেই আদেশের অর্থ বোঝা যিশুর শিষ্যদের কাছে কঠিন ছিল না। তারা বুঝতে পেরেছিল যে, আঁশ দিয়ে আবৃত আগাছা থেকে গোমের চারাকে আলাদা করা কত কঠিন। কৃষিকাজে কিছুটা অভিজ্ঞতা রয়েছে এমন ব্যক্তিরা এও বুঝতে পেরেছিল যে, আঁশ দিয়ে আবৃত আগাছার শিকড়গুলো সাধারণত গোমের চারার শিকড়ের সঙ্গে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে যায়।c তাই, এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই যে, প্রভু তাদেরকে অপেক্ষা করার নির্দেশ দেন!
৯ একইভাবে, বিগত শতাব্দীগুলো ধরে খ্রিস্টীয়জগতের বিভিন্ন সম্প্রদায় শ্যামাঘাসের প্রচুর ফলন ঘটিয়েছে—প্রথমে রোমান ক্যাথলিক ও অর্থোডক্স গির্জাগুলোর মধ্যে এবং পরে সেই অসংখ্য প্রোটেস্টান্ট দলের মধ্যে, যেগুলো দ্রুত বৃদ্ধি পেয়েছে। একইসময়ে, ক্ষেত্ররূপ এই জগতে প্রকৃত গোমের কিছু বীজ বপন করা হয়েছিল। দৃষ্টান্তের গৃহকর্তা চারাগাছগুলো বেড়ে ওঠার সেই দীর্ঘসময় ধৈর্যপূর্বক অপেক্ষা করেছিলেন, যতক্ষণ পর্যন্ত না শস্যচ্ছেদনের তুলনামূলক সংক্ষিপ্ত সময় উপস্থিত হয়।
দীর্ঘপ্রতীক্ষিত শস্যচ্ছেদনের সময়
১০, ১১. (ক) শস্যচ্ছেদনের সময় কখন? (খ) কীভাবে যিহোবার গোলায় রূপক গোম আনা হয়েছিল?
১০ যিশু আমাদের বলেন: “ছেদনের সময় যুগান্ত; ছেদকেরা স্বর্গদূত।” (মথি ১৩:৩৯) এই দুষ্ট যুগের বা বিধিব্যবস্থার শেষকালে, এক পৃথকীকরণ সম্পন্ন হয়—রাজ্যের সন্তানদের সংগ্রহ করা হয় আর যেকোনো শ্যামাঘাসতুল্য ব্যক্তিদের মধ্যে থেকে তাদের পৃথক করা হয়। এই সম্বন্ধে প্রেরিত পিতর আমাদের বলেন: “ঈশ্বরের গৃহে বিচার আরম্ভ হইবার সময় হইল; আর যদি তাহা প্রথমে আমাদিগেতে আরম্ভ হয়, তবে যাহারা ঈশ্বরের সুসমাচারের অবাধ্য, তাহাদের পরিণাম কি হইবে?”—১ পিতর ৪:১৭.
১১ শেষকাল অর্থাৎ “যুগান্ত” বা বিধিব্যবস্থার শেষ শুরু হওয়ার অল্প পরেই সেই ব্যক্তিদের বিচার শুরু হয়েছিল, যারা নিজেদের প্রকৃত খ্রিস্টান হিসেবে দাবি করেছিল আর তা এই বিষয়টা দেখার জন্য যে, তারা আসলে ‘রাজ্যের সন্তান’ ছিল নাকি ‘পাপাত্মার সন্তান’ ছিল। শস্যচ্ছেদনের শুরুতে, “প্রথমে” মহতী বাবিলের পতন হয়েছিল এবং “তার পরে” রাজ্যের সন্তানদের সংগ্রহ করা হয়েছিল। (মথি ১৩:৩০) কিন্তু, কীভাবে তখন থেকে যিহোবার গোলায় রূপক গোম আনা হয়েছিল? এই ছেদনকৃত ব্যক্তিদের হয় পুনর্স্থাপিত খ্রিস্টীয় মণ্ডলীতে নিয়ে আসা হয়েছিল, যেখানে তাদের প্রতি ঈশ্বরের অনুগ্রহ ও সুরক্ষা রয়েছে অথবা তারা তাদের স্বর্গীয় পুরস্কার লাভ করেছিল।
১২. শস্যচ্ছেদন কতটা সময় ধরে চলে?
১২ সেই বিচার কতটা সময় স্থায়ী হয়? যিশু শস্যচ্ছেদনের “সময়” সম্বন্ধে উল্লেখ করেছিলেন, যা সাধারণত এক নির্দিষ্ট সময়কাল ধরে চলে। (প্রকা. ১৪:১৫, ১৬) অভিষিক্তদের আলাদা আলাদা সদস্যের বিচার শেষ সময়কাল ধরে চলে। তাদেরকে চূড়ান্তভাবে মুদ্রাঙ্কিত না করা পর্যন্ত এই কাজ চলতে থাকবে।—প্রকা. ৭:১-৪.
১৩. কীভাবে শ্যামাঘাস বিঘ্ন জন্মায় ও কীভাবে তারা অধর্ম করে চলেছে?
১৩ রাজ্য থেকে কাদের সংগ্রহ করা হবে আর কীভাবে তারা বিঘ্ন জন্মায় ও অধর্ম করে? (মথি ১৩:৪১) খ্রিস্টীয়জগতের শ্যামাঘাসতুল্য পাদরিরা শত শত বছর ধরে লক্ষ লক্ষ লোককে ভ্রান্ত করেছে। তারা “বিঘ্নজনক বিষয়” অর্থাৎ ঈশ্বরকে অসম্মান করে এমন শিক্ষাগুলো, যেমন নরকাগ্নিতে চিরকাল ধরে শাস্তি পাওয়া এবং বিভ্রান্তিকর ও রহস্যময় ত্রিত্ব মতবাদের মতো শিক্ষাগুলোর দ্বারা তা করেছে। অনেক ধর্মীয় নেতা এই জগতের সঙ্গে ব্যভিচারমূলক বন্ধুত্বের মাধ্যমে ও কিছু কিছু ক্ষেত্রে তাদের চরম অনৈতিক আচরণের দ্বারা তাদের পালের সামনে এক মন্দ উদাহরণ স্থাপন করেছে। (যাকোব ৪:৪) অধিকন্তু, খ্রিস্টীয়জগৎ এর সদস্যদের মধ্যে অনৈতিকতাকে দিন দিন প্রশ্রয় দিয়ে যাচ্ছে। (পড়ুন, যিহূদা ৪.) এই সমস্ত কিছু সত্ত্বেও, তারা লোক-দেখানো ধার্মিকতা ও ঈশ্বরভক্তি দেখিয়ে চলে। এইরকম শ্যামাঘাসতুল্য প্রভাব ও কলুষিত শিক্ষাগুলো, যেগুলো বিঘ্ন জন্মায়, সেগুলো থেকে পৃথক হতে পেরে রাজ্যের সন্তানরা কতই না সুখী!
১৪. কীভাবে শ্যামাঘাসতুল্য ব্যক্তিরা রোদন ও দন্তঘর্ষণ করে?
১৪ কীভাবে শ্যামাঘাসতুল্য ব্যক্তিরা রোদন ও দন্তঘর্ষণ করে? (মথি ১৩:৪২) “পাপাত্মার সন্তানগণ” এই কারণে যাতনা ভোগ করে যে, “রাজ্যের সন্তানগণ” এই শ্যামাঘাসতুল্য ব্যক্তিদের আধ্যাত্মিকভাবে বিষাক্ত অবস্থাকে উন্মোচন করে দিয়েছে। এ ছাড়া, তাদের গির্জার সদস্যদের কাছ থেকে সমর্থন হ্রাস পাওয়ার ও সেইসঙ্গে তাদের ওপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলার কারণেও তারা শোক করে।—পড়ুন, যিশাইয় ৬৫:১৩, ১৪.
১৫. কোন অর্থে শ্যামাঘাসতুল্য ব্যক্তিদের আগুনে পোড়ানো হয়?
১৫ কোন অর্থে শ্যামাঘাস সংগ্রহ করা হয় ও আগুনে পোড়ানো হয়? (মথি ১৩:৪০) এটা শ্যামাঘাসের চূড়ান্ত পরিণতিকে নির্দেশ করে। তাদের রূপকভাবে জলন্ত অগ্নিকুণ্ডে নিক্ষিপ্ত হওয়া ইঙ্গিত করে যে, তারা অনন্ত ধ্বংসের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। (প্রকা. ২০:১৪; ২১:৮) নকল, শ্যামাঘাসতুল্য খ্রিস্টান অর্থাৎ বঞ্চকদের ‘মহাক্লেশের’ সময় নির্মূল করা হবে।—মথি ২৪:২১.
তারা “সূর্য্যের ন্যায় দেদীপ্যমান হইবে”
১৬, ১৭. ঈশ্বরের মন্দির সম্বন্ধে মালাখি কোন ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন আর কীভাবে তা পরিপূর্ণ হতে শুরু করেছিল?
১৬ কোন সময়ে গোমতুল্য ব্যক্তিরা “সূর্য্যের ন্যায় দেদীপ্যমান” হয়? (মথি ১৩:৪৩) ঈশ্বরের মন্দির পরিষ্কার করা সম্বন্ধে মালাখি ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন: “তোমরা যে প্রভুর অন্বেষণ করিতেছ, তিনি অকস্মাৎ আপন মন্দিরে আসিবেন; নিয়মের সেই দূত, যাঁহাতে তোমাদের প্রীতি, দেখ, তিনি আসিতেছেন, ইহা বাহিনীগণের সদাপ্রভু কহেন। কিন্তু তাঁহার আগমনের দিন কে সহ্য করিতে পারিবে; আর তিনি দর্শন দিলে কে দাঁড়াইতে পারিবে? কেননা তিনি রৌপ্য পরিষ্কারকের অগ্নিতুল্য ও রজকের ক্ষারতুল্য। তিনি রৌপ্য-পরিষ্কারক ও শুচিকারক হইয়া বসিবেন, তিনি লেবির সন্তানদিগকে শুচি করিবেন, এবং স্বর্ণের ও রৌপ্যের ন্যায় তাহাদিগকে বিশুদ্ধ করিবেন; তাহাতে তাহারা সদাপ্রভুর উদ্দেশে ধার্ম্মিকতায় নৈবেদ্য উৎসর্গ করিবে।”—মালাখি ৩:১-৩.
১৭ আধুনিক সময়ে, এই ভবিষ্যদ্বাণী স্পষ্টতই ১৯১৮ সালে পরিপূর্ণ হতে শুরু করেছিল, যখন যিহোবা “নিয়মের” বা চুক্তির “সেই দূত” যিশু খ্রিস্টের সঙ্গে আত্মিক মন্দির পরীক্ষা করেছিলেন। এই পরিষ্কার করার কাজ সম্পন্ন হওয়ার পর কী ঘটে, সেই সম্বন্ধে মালাখি আমাদের বলেন: “তোমরা ফিরিয়া আসিবে, এবং ধার্ম্মিক ও দুষ্টের মধ্যে, যে ঈশ্বরের সেবা করে, ও যে তাঁহার সেবা না করে, উভয়ের মধ্যে প্রভেদ দেখিবে।” (মালাখি ৩:১৮) পুনরুজ্জীবিত হয়ে ওঠা সত্য খ্রিস্টানদের কাজে লক্ষণীয় বৃদ্ধি সেই সময়কালকে শস্যচ্ছেদনের শুরুর সময়কাল হিসেবে নির্দেশ করে।
১৮. আমাদের দিনে কী ঘটবে বলে দানিয়েল ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন?
১৮ ভাববাদী দানিয়েল আমাদের দিন সম্বন্ধে বলেছিলেন, যখন তিনি ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন: “যাহারা বুদ্ধিমান্, তাহারা বিতানের দীপ্তির ন্যায়, এবং যাহারা অনেককে ধার্ম্মিকতার প্রতি ফিরায়, তাহারা তারাগণের ন্যায় অনন্তকাল দেদীপ্যমান হইবে।” (দানি. ১২:৩) এই ব্যক্তিরা কারা, যারা এত উজ্জ্বলভাবে দেদীপ্যমান হয়? তারা অভিষিক্ত খ্রিস্টানরা ছাড়া আর কেউ নয়, যারা হল সেই প্রকৃত গোম, যাদের বিষয়ে যিশু তাঁর গোম ও শ্যামাঘাসের দৃষ্টান্তে উল্লেখ করেছেন! মেষতুল্য ব্যক্তিদের বিস্তর লোক স্পষ্টভাবে দেখতে পাচ্ছে যে, শ্যামাঘাসতুল্য নকল খ্রিস্টানদের “সংগ্রহ” করা হচ্ছে। আত্মিক ইস্রায়েলের অবশিষ্টাংশের সঙ্গে যুক্ত হয়ে রাজ্যের এই ভাবী প্রজারা একইভাবে এই অন্ধকারময় জগতে তাদের দীপ্তি উজ্জ্বল হতে দিচ্ছে।—সখ. ৮:২৩; মথি ৫:১৪-১৬; ফিলি. ২:১৫.
১৯, ২০. “রাজ্যের সন্তানগণ” কীসের জন্য উৎসুকভাবে অপেক্ষা করে আছে আর পরবর্তী প্রবন্ধে আমরা কোন বিষয় নিয়ে আলোচনা করব?
১৯ আজকে, “রাজ্যের সন্তানগণ” তাদের গৌরবান্বিত, স্বর্গীয় পুরস্কারের জন্য উৎসুকভাবে অপেক্ষা করে আছে। (রোমীয় ৮:১৮, ১৯; ১ করি. ১৫:৫৩; ফিলি. ১:২১-২৪) তবে, সেই সময় আসা না পর্যন্ত তাদের বিশ্বস্ততা বজায় রাখতে হবে, ক্রমাগত উজ্জ্বলভাবে দেদীপ্যমান হতে হবে এবং “পাপাত্মার সন্তানগণ” থেকে পৃথক থাকতে হবে। (মথি ১৩:৩৮; প্রকা. ২:১০) আমরা সকলে কতই না সুখী হতে পারি যে, আমাদের সময়ে শ্যামাঘাসের এই রূপক ‘সংগ্রহ করিবার’ ফলাফল দেখার বিশেষ সুযোগ আমাদের হয়েছে!
২০ কিন্তু, কীভাবে এই রাজ্যের সন্তানগণ এবং বৃদ্ধিরত বিস্তর লোক, যাদের রাজ্যের প্রজা হিসেবে পৃথিবীতে চিরকাল বেঁচে থাকার আশা রয়েছে, তারা এক পাল হয়? পরবর্তী প্রবন্ধ এই প্রশ্নের উত্তর দেবে।
[পাদটীকাগুলো]
a এই দৃষ্টান্তগুলো সম্বন্ধে বিস্তারিত আলোচনার জন্য ২০০৮ সালের ১৫ জুলাই প্রহরীদুর্গ পত্রিকার ১২-২১ পৃষ্ঠা দেখুন।
b এই নীতিগল্পে বপন করা, প্রচার ও শিষ্য তৈরির কাজকে প্রতিনিধিত্ব করে না, যা সেই নতুন ব্যক্তিদের নিয়ে আসবে, যারা অভিষিক্ত খ্রিস্টান হয়ে উঠবে। ক্ষেত্রে যে-ভালো বীজ বপন করা হয়েছে, সেই সম্বন্ধে যিশু বলেছিলেন: “ভাল বীজ [হচ্ছে] রাজ্যের সন্তানগণ,” এমন নয় যে, তারা পরে রাজ্যের সন্তান হয়ে উঠবে। তাই, বপন করা বলতে ক্ষেত্ররূপ এই জগতে রাজ্যের এই সন্তানদের অভিষিক্ত করাকে বোঝায়।
c আঁশ দিয়ে আবৃত আগাছার শিকড়গুলো গোমের শিকড়ের সঙ্গে এতটাই আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে যায় যে, শস্যচ্ছেদনের আগে সেগুলোকে উপড়ে ফেলতে গেলে অনেক গোমের চারা নষ্ট হয়ে যাবে।—শাস্ত্রের প্রতি অন্তর্দৃষ্টি (ইংরেজি) বইয়ের ১ম খণ্ডের ১১৭৮ পৃষ্ঠা দেখুন।
আপনার কি মনে আছে?
যিশুর বলা গোম ও শ্যামাঘাসের দৃষ্টান্তে, এই বিষয়গুলোর অর্থ কী?
• ভালো বীজ
• যে-ব্যক্তি বীজ বপন করেছিলেন
• বীজ বপন করা
• শত্রু
• শ্যামাঘাস
• শস্যচ্ছেদনের সময়
• গোলা
• রোদন ও দন্তঘর্ষণ
• জলন্ত অগ্নিকুণ্ড
[২০ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]
সাধারণ কাল ৩৩ সালের পঞ্চাশত্তমীর দিন ভালো বীজ বপন করা শুরু হয়েছিল
[২৩ পৃষ্ঠার চিত্র]
রূপক গোম এখন যিহোবার গোলায় নিয়ে আসা হচ্ছে
[সৌজন্যে]
Pictorial Archive (Near Eastern History) Est.