অধ্যয়ন প্রবন্ধ ৩৬
আপনি কি মনুষ্যধারী হওয়ার জন্য প্রস্তুত?
“ভয় করিও না, এখন অবধি তুমি জীবনার্থে মানুষ ধরিবে।”—লূক ৫:১০.
গান সংখ্যা ৩৩ তাদের ভয় কোরো না!
সারাংশa
১. যিশু চার জন জেলেকে কোন আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন এবং কীভাবে তারা প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিলেন?
শিষ্য পিতর, আন্দ্রিয়, যাকোব ও যোহন পেশাদার জেলে ছিলেন। কল্পনা করুন, তারা যিশুর কাছ থেকে এই আমন্ত্রণ পেয়ে কতটা অবাক হয়ে গিয়েছিলেন: “আমার পশ্চাৎ আইস। আমি তোমাদিগকে মনুষ্যধারী করিব।”b তারা কীভাবে সাড়া দিয়েছিলেন? বাইবেল বলে: “তখনই তাঁহারা জাল পরিত্যাগ করিয়া তাঁহার পশ্চাদগামী হইলেন।” (মথি ৪:১৮-২২) সেই সিদ্ধান্ত তাদের জীবনকে চিরকালের জন্য পালটে দিয়েছিল। আক্ষরিক মাছ ধরার পরিবর্তে তারা ‘জীবনার্থে মানুষ ধরিতে’ শুরু করেছিলেন। (লূক ৫:১০) বর্তমানে, যিশু সেই একই আমন্ত্রণ সৎহৃদয়ের ব্যক্তিদের জানান, যারা সত্যকে ভালোবাসে। (মথি ২৮:১৯, ২০) আপনি কি মনুষ্যধারী হয়ে ওঠার বিষয়ে যিশুর আমন্ত্রণে সাড়া দিয়েছেন?
২. মনুষ্যধারী হয়ে ওঠার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়াকে কেন আমাদের গুরুত্বের সঙ্গে নেওয়া উচিত এবং কী আমাদের এই পদক্ষেপ নিতে সাহায্য করবে?
২ হতে পারে, আপনি বাইবেল অধ্যয়ন করছেন এবং যথেষ্ট উন্নতি করেছেন আর এখন হয়তো আপনি সুসমাচার প্রচার করার জন্য একজন প্রকাশক হবেন কি না, তা ভাবছেন। আপনি যিশুর আমন্ত্রণে সাড়া দেবেন কি না, সেই বিষয়ে যদি দ্বিধাদ্বন্দ্বের মধ্যে থেকে থাকেন, তা হলে নিরুৎসাহিত হবেন না। আপনার দ্বিধাবোধ সম্ভবত এটা প্রকাশ করে যে, আপনি এই সিদ্ধান্তকে সত্যিই অনেক গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে দেখেন। আসলে বাইবেল বলে, পিতর ও তার সঙ্গীরা তাদের আক্ষরিক জাল “তখনই” অর্থাৎ সঙ্গেসঙ্গে পরিত্যাগ করেছিলেন। তবে, পিতর ও তার ভাইয়েরা কোনো কিছু না ভেবেই এই সিদ্ধান্ত নেননি। ছয় মাসেরও বেশি সময় আগে তারা যিশুকে জানতে পেরেছিলেন এবং তাঁকে মশীহ হিসেবে গ্রহণ করেছিলেন। (যোহন ১:৩৫-৪২) একইভাবে, আপনি হয়তো ইতিমধ্যেই যিহোবা ও যিশু সম্বন্ধে অনেক কিছু শিখেছেন এবং আপনি আধ্যাত্মিকভাবে উন্নতি করে যেতে চান। কিন্তু, একজন প্রকাশক হওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে আপনাকে অবশ্যই সেটার বিষয়ে ভালোভাবে চিন্তা করতে হবে। কী পিতর, আন্দ্রিয় ও অন্যদের ব্যক্তিগতভাবে সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করেছিল?
৩. কী আপনাকে খ্রিস্টের একজন কার্যকারী শিষ্য হয়ে ওঠার জন্য সাহায্য করতে পারে?
৩ যিশুর সেই শিষ্যরা মাছ ধরার বিষয়ে আকাঙ্ক্ষী, সুদক্ষ ও সাহসী ছিলেন এবং তারা আত্মশাসন করতে জানতেন আর তাই তারা সফল জেলে হয়ে উঠতে পেরেছিলেন। কোনো সন্দেহ নেই, এই গুণগুলো তাদের সফল মনুষ্যধারী হয়ে ওঠার জন্য সাহায্য করেছিল। এই প্রবন্ধে আলোচনা করা হবে যে, কীভাবে আপনি সেই গুণগুলো গড়ে তুলতে পারেন, যাতে আপনি খ্রিস্টের একজন কার্যকারী শিষ্য হয়ে উঠতে পারেন।
প্রচার করার বিষয়ে আপনার আকাঙ্ক্ষাকে আরও দৃঢ় করুন
৪. কেন পিতর মাছ ধরার বিষয়ে আকাঙ্ক্ষী ছিলেন?
৪ পিতর পরিবারের ভরণ-পোষণ জোগানোর জন্য মাছ ধরতেন। কিন্তু, মাছ ধরা তার জন্য কেবলমাত্র একটা কাজ ছিল না। সত্যি বলতে কী, তিনি মাছ ধরতে ভালোবাসতেন। (যোহন ২১:৩, ৯-১৫) এ ছাড়া, তিনি মনুষ্যধারী হওয়ার বিষয়টাও ভালোবাসতে শিখেছিলেন। আর যিহোবার সমর্থনে তিনি এই কাজে খুবই পারদর্শী হয়ে উঠেছিলেন।—প্রেরিত ২:১৪, ৪১.
৫. লূক ৫:৮-১১ পদ অনুযায়ী কেন পিতর ভয় পেয়ে গিয়েছিলেন এবং কী আমাদের একই ধরনের অনুভূতি কাটিয়ে ওঠার জন্য সাহায্য করতে পারে?
৫ আমরা যিহোবাকে ভালোবাসি বলে প্রচার করি; এটাই আমাদের মূলত প্রচার করতে অনুপ্রাণিত করে। যিহোবার প্রতি ভালোবাসা আমাদের মধ্যে থাকা যেকোনো অক্ষমতার অনুভূতিকে কাটিয়ে ওঠার জন্য সাহায্য করতে পারে। যিশু যখন পিতরকে মনুষ্যধারী হওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন, তখন তিনি তাকে বলেছিলেন: “ভয় করিও না।” (পড়ুন, লূক ৫:৮-১১.) যিশুর শিষ্য হয়ে গেলে কী হতে পারে, এই ভেবে পিতর ভয় পাননি। এর পরিবর্তে, যিশু অলৌকিকভাবে যখন তাদের অনেক মাছ ধরতে সাহায্য করেছিলেন, তখন সেটা দেখে পিতর অবাক হয়ে গিয়েছিলেন এবং যিশুর সঙ্গে কাজ করার বিষয়ে নিজেকে অযোগ্য বলে মনে করেছিলেন। অন্যদিকে, আপনি যখন এটা উপলব্ধি করেন যে, খ্রিস্টের একজন শিষ্য হয়ে ওঠার সঙ্গে কী কী জড়িত রয়েছে, তখন আপনি হয়তো চাপগ্রস্ত বোধ করতে পারেন। যদি তা-ই হয়, তা হলে যিহোবা, যিশু এবং আপনার প্রতিবেশীর প্রতি ভালোবাসাকে আরও শক্তিশালী করুন। আপনি যখন এমনটা করবেন, তখন আপনি মনুষ্যধারী হয়ে ওঠার বিষয়ে যিশুর আমন্ত্রণে সাড়া দেওয়ার জন্য অনুপ্রাণিত হবেন।—মথি ২২:৩৭, ৩৯; যোহন ১৪:১৫.
৬. আর কী আমাদের প্রচার করার জন্য অনুপ্রাণিত করে?
৬ কেন আমরা প্রচার করার জন্য অনুপ্রাণিত হই, সেটার পিছনে থাকা আরও কয়েকটা কারণ নিয়ে বিবেচনা করুন। আমরা যিশুর এই আজ্ঞার বাধ্য হতে চাই: “তোমরা গিয়া . . . শিষ্য কর।” (মথি ২৮:১৯, ২০) এ ছাড়া, আমরা প্রচার করি কারণ লোকেরা “ব্যাকুল ও ছিন্নভিন্ন” অবস্থায় রয়েছে এবং তাদের সত্যিই রাজ্য সম্বন্ধে সত্য শেখার প্রয়োজন রয়েছে। (মথি ৯:৩৬) যিহোবা চান যেন সমস্ত ধরনের লোক সত্যের তত্ত্বজ্ঞান বা সঠিক জ্ঞান সম্বন্ধে জানতে এবং পরিত্রাণ লাভ করতে পারে।—১ তীম. ২:৪.
৭. কীভাবে রোমীয় ১০:১৩-১৫ পদ আমাদের দেখায় যে, প্রচার কাজ গুরুত্বপূর্ণ?
৭ আমরা যখন এই বিষয়টা নিয়ে চিন্তা করি যে, আমাদের প্রচার কাজ লোকেদের কীভাবে প্রভাবিত করে, তখন আমরা প্রচার করার জন্য অনুপ্রাণিত হই। একজন আক্ষরিক জেলে বিক্রি করার অথবা খাবার জন্য মাছ ধরেন। কিন্তু, তার বিপরীতে আমরা লোকেদের জীবন রক্ষা করার জন্য তাদের ‘ধরি।’—পড়ুন, রোমীয় ১০:১৩-১৫; ১ তীম. ৪:১৬.
আপনার জ্ঞান বৃদ্ধি করুন
৮-৯. একজন জেলেকে অবশ্যই কী জানতে হবে এবং কেন?
৮ যিশুর দিনে একজন জেলেকে এটা জানতে হতো যে, তাকে কোন ধরনের মাছ ধরতে হবে। (লেবীয়. ১১:৯-১২) এ ছাড়া, তাকে এটাও জানতে হতো যে, কোথায় সেই মাছ পাওয়া যেতে পারে। মাছেরা সাধারণত এমন জায়গায় থাকে, যে-জায়গার জল তাদের পছন্দ এবং যেখানে প্রচুর খাবার থাকে। এ ছাড়া, একজন জেলে কখন মাছ ধরতে যান, সেটাও অনেক গুরুত্বপূর্ণ। প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপে বসবাসরত একজন স্থানীয় সাক্ষি যখন একজন মিশনারিকে তার সঙ্গে মাছ ধরতে যাওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন, তখন তিনি মাছ ধরার উপযুক্ত সময় সম্বন্ধে সেই মিশনারিকে কী বলেছিলেন, তা লক্ষ করুন। সেই মিশনারি স্থানীয় সাক্ষি ভাইকে বলেছিলেন, “আমি আপনার সঙ্গে কাল সকাল নয়টার সময়ে দেখা করব।” সেই স্থানীয় ভাই উত্তরে বলেছিলেন, “আপনি কোথাও একটা ভুল করছেন। মাছ ধরতে চাইলে, আমাদের নিজেদের সুবিধা মতো সময়ে নয় বরং মাছ ধরার জন্য উপযুক্ত সময়ে যেতে হবে।”
৯ একইভাবে, প্রথম শতাব্দীর মনুষ্যধারীরা এমন জায়গায় গিয়েছিল, যেখানে “মাছ” থাকত এবং এমন সময়ে সেখানে গিয়েছিল, যে-সময়ে “মাছ” পাওয়ার সম্ভাবনা ছিল। উদাহরণ স্বরূপ, যিশুর অনুসারীরা মন্দিরে, সমাজগৃহে, ঘরে ঘরে ও বাজারে প্রচার করেছিল। (প্রেরিত ৫:৪২; ১৭:১৭; ১৮:৪) একইভাবে, আমাদের নির্ধারিত প্রচারের এলাকার লোকেদের অভ্যাস সম্বন্ধে আমাদের অবগত হতে হবে। আমাদের জানতে হবে যে, কখন ও কোথায় লোকেরা থাকে আর তারপর তাদের কাছে প্রচার করার জন্য সেই অনুযায়ী আমাদের খাপ খাইয়ে নিতে হবে।—১ করি. ৯:১৯-২৩.
১০. যিহোবার সংগঠন আমাদের কোন হাতিয়ারগুলো প্রদান করেছে?
১০ একজন জেলের উপযুক্ত সরঞ্জামের প্রয়োজন হতো এবং তাকে সেই সরঞ্জামের ব্যবহার সম্বন্ধেও জানতে হতো।আমাদেরও প্রচার করার জন্য উপযুক্ত হাতিয়ারের প্রয়োজন রয়েছে। আর আমাদের সেই হাতিয়ারগুলোর ব্যবহার সম্বন্ধে জানতে হবে। যিশু তাঁর শিষ্যদের এই বিষয়ে স্পষ্ট নির্দেশনা দিয়েছিলেন যে, মনুষ্যধারী হওয়ার ক্ষেত্রে কীভাবে সফল হওয়া যায়। তিনি তাদের বলেছিলেন, তাদের সঙ্গে করে কী কী নিয়ে যেতে হবে, কোথায় প্রচার করতে হবে এবং কী প্রচার করতে হবে। (মথি ১০:৫-৭; লূক ১০:১-১১) বর্তমানে, যিহোবার সংগঠন আমাদের শিক্ষাদানের হাতিয়ার বাক্স প্রদান করেছে, যেখানে কার্যকরী হাতিয়ারগুলো রয়েছে।c আর আমাদের সেগুলোর ব্যবহার সম্বন্ধে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। এই প্রশিক্ষণ আমাদের কার্যকারী প্রচারক এবং উত্তম শিক্ষক হয়ে ওঠার জন্য প্রয়োজনীয় আস্থা ও দক্ষতা অর্জন করতে সাহায্য করে।—২ তীম. ২:১৫.
সাহস গড়ে তুলুন
১১. কেন মনুষ্যধারীদের অবশ্যই সাহসী হতে হবে?
১১ পেশাদার জেলেদের সাহসী হতে হয় কারণ তারা সবসময় আবহাওয়া সম্বন্ধে আগে থেকে অনুমান করতে পারে না এবং তাদের কখনো কখনো সমুদ্রে অপ্রত্যাশিতভাবে ঝড়ের মুখোমুখি হতে হয়। প্রায়ই তাদের রাতের অন্ধকারে কাজ করতে হয়। মনুষ্যধারীদেরও সাহসী হওয়ার প্রয়োজন রয়েছে। আমরা যখন প্রচার করতে শুরু করি এবং অন্যদের বলি যে, আমরা যিহোবার সাক্ষি, তখন পরিবারের সদস্যরা আমাদের বিরোধিতা করতে পারে, বন্ধুবান্ধবরা আমাদের উপহাস করতে পারে এবং কেউ কেউ আমাদের বার্তা না-ও শুনতে পারে। কিন্তু, আমরা এতে অবাক হই না। যিশু সতর্ক করেছিলেন যে, তিনি তাঁর অনুসারীদের এমন লোকেদের কাছে প্রচার করতে পাঠাচ্ছেন, যারা তাদের বিরোধিতা করবে।—মথি ১০:১৬.
১২. যিহোশূয়ের পুস্তক ১:৭-৯ পদ অনুযায়ী কী আমাদের সাহস গড়ে তোলার জন্য সাহায্য করতে পারে?
১২ কীভাবে আপনি সাহস গড়ে তুলতে পারেন? প্রথমে এই বিষয়ে নিশ্চিত হোন যে, যিশু ক্রমাগত স্বর্গ থেকে এই কাজে নির্দেশনা দিচ্ছেন। (যোহন ১৬:৩৩; প্রকা. ১৪:১৪-১৬) তারপর, যিহোবার এই প্রতিজ্ঞার উপর আপনার আস্থাকে শক্তিশালী করুন যে, তিনি আপনার যত্ন নেবেন। (মথি ৬:৩২-৩৪) আপনার বিশ্বাস যতবেশি শক্তিশালী হবে, আপনি ততবেশি সাহসী হয়ে উঠবেন। পিতর ও তার সঙ্গীরা যখন যিশুকে অনুসরণ করার জন্য নিজেদের মাছের ব্যাবসা ত্যাগ করেছিলেন, তখন তারা অগাধ বিশ্বাস দেখিয়েছিলেন। একইভাবে, আপনি যখন আপনার বন্ধুবান্ধব এবং পরিবারের সদস্যদের জানিয়েছিলেন যে, আপনি যিহোবার সাক্ষিদের সঙ্গে বাইবেল অধ্যয়ন করতে এবং তাদের সভায় যেতে শুরু করেছেন, তখন আপনি অগাধ বিশ্বাস দেখিয়েছিলেন! কোনো সন্দেহ নেই, আপনি যিহোবার ধার্মিক মান অনুযায়ী জীবনযাপন করার জন্য নিজের আচরণ ও জীবনধারায় আমূল পরিবর্তন করেছেন। এরজন্যেও বিশ্বাস ও সাহসের প্রয়োজন। আপনি যখন ক্রমাগত সাহস গড়ে তোলেন, তখন আপনি যিহোবার এই কথায় আস্থা রাখতে পারেন, “তুমি যে কোন স্থানে যাও, সেই স্থানে তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভু তোমার সহবর্ত্তী।”—পড়ুন, যিহোশূয়ের পুস্তক ১:৭-৯.
১৩. কীভাবে ধ্যান ও প্রার্থনা করা আপনাকে সাহস গড়ে তোলার জন্য সাহায্য করতে পারে?
১৩ আর কীভাবে আপনি সাহস গড়ে তুলতে পারেন? সাহস চেয়ে যিহোবার কাছে প্রার্থনা করুন। (প্রেরিত ৪:২৯, ৩১) যিহোবা আপনার প্রার্থনার উত্তর দেবেন এবং তিনি কখনো আপনাকে পরিত্যাগ করবেন না। তিনি আপনাকে সাহায্য করার জন্য সবসময় আপনার পাশে থাকবেন। এ ছাড়া, যিহোবা অতীতে অন্যদের যেভাবে উদ্ধার করেছিলেন, তা নিয়ে আপনি ধ্যান করতে পারেন। আর সেইসঙ্গে যিহোবা যেভাবে আপনাকে বিভিন্ন প্রতিদ্বন্দ্বিতার সঙ্গে মোকাবিলা করতে সাহায্য করেছেন এবং আপনার জীবনধারায় বিভিন্ন পরিবর্তন করার জন্য আপনাকে যেভাবে শক্তিশালী করেছেন, তা নিয়ে ধ্যান করতে পারেন। নিশ্চিতভাবেই, যে-ঈশ্বর তাঁর লোকেদের সূফসাগর পার হতে সাহায্য করেছিলেন, তিনি আপনাকেও খ্রিস্টের শিষ্য হয়ে ওঠার জন্য সাহায্য করতে পারেন। (যাত্রা. ১৪:১৩) গীতরচকের মতো আপনিও একই বিশ্বাস বজায় রাখতে পারেন, যিনি বলেছিলেন: “সদাপ্রভু আমার সপক্ষ, আমি ভয় করিব না; মনুষ্য আমার কি করিতে পারে?”—গীত. ১১৮:৬.
১৪. বোন মাসে ও বোন তোমোইয়োর অভিজ্ঞতা থেকে আপনি কী শেখেন?
১৪ সাহসী হয়ে ওঠার আরেকটা উপায় নিয়ে বিবেচনা করুন। যিহোবা যেভাবে লাজুক স্বভাবের ব্যক্তিদের সাহসী হয়ে ওঠার জন্য সাহায্য করেছিলেন, সেই বিষয়ে শেখার মাধ্যমে আমরা সাহস গড়ে তুলতে পারি। মাসে নামে একজন বোনের অভিজ্ঞতা বিবেচনা করুন। তিনি লাজুক স্বভাবের ছিলেন এবং মনে করতেন যে, তিনি কোনোদিনও জনসাধারণ্যে নিজের বিশ্বাস সম্বন্ধে কথা বলতে পারবেন না। একজন অপরিচিত ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলা তার কাছে এমন একটা উঁচু দেওয়াল অতিক্রম করার মতো ছিল, যেটা তিনি কোনোদিনও অতিক্রম করতে পারবেন না বলে মনে করেছিলেন। তাই, তিনি ঈশ্বর ও প্রতিবেশীর প্রতি তার ভালোবাসাকে গভীর করার জন্য এক বিশেষ প্রচেষ্টা করেছিলেন। আমরা যে-সময়ে বাস করছি, সেটার গুরুত্ব সম্বন্ধে তিনি গভীরভাবে চিন্তা করেছিলেন এবং প্রচার করার আকাঙ্ক্ষাকে বৃদ্ধি করার জন্য সাহায্য চেয়ে প্রার্থনা করেছিলেন। তিনি ভয় কাটিয়ে উঠেছিলেন আর এমনকী একজন নিয়মিত অগ্রগামী হিসেবে সেবা করেছিলেন। যিহোবা নতুন প্রকাশকদেরও ‘সাহসী’ হয়ে ওঠার জন্য সাহায্য করতে পারেন। তোমোইয়ো নামে একজন বোনের অভিজ্ঞতা বিবেচনা করুন। তিনি যখন প্রথম বার ঘরে ঘরে প্রচারে গিয়েছিলেন, তখন প্রথম বাড়ির গৃহকর্ত্রী চিৎকার করে তাকে বলেন: “আমি যিহোবার সাক্ষিদের কথা শুনতে চাই না!” আর তারপর তাদের মুখের সামনে জোরে দরজা বন্ধ করে দিয়েছিলেন। বোন তোমোইয়ো সাহসের সঙ্গে তার সঙ্গীকে বলেছিলেন: “দারুণ তো! আমি মুখ খোলার আগেই উনি বুঝতে পেরে গিয়েছিলেন, আমি একজন যিহোবার সাক্ষি।” বোন তোমোইয়ো বর্তমানে একজন নিয়মিত অগ্রগামী হিসেবে সেবা করেন।
আত্মশাসন গড়ে তুলুন
১৫. আত্মশাসন কী এবং কেন খ্রিস্টানদের জন্য আত্মশাসন করা গুরুত্বপূর্ণ?
১৫ সফল জেলেরা আত্মশাসন করতে জানে। আত্মশাসন হল “এমন একটা গুণ, যেটা আপনাকে সেই কাজগুলো করতে সাহায্য করে, যেগুলো আপনার করা উচিত।” ভোর বেলায় ঘুম থেকে ওঠার, কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত লেগে থাকার এবং খারাপ আবহাওয়া সত্ত্বেও হাল ছেড়ে না দিয়ে মাছ ধরার জন্য পেশাদার জেলেদের আত্মশাসন করতে হয়। আমরা যদি ধৈর্য ধরতে এবং আমাদের কাজ সমাপ্ত করতে চাই, তা হলে আমাদেরও আত্মশাসন করতে হবে।—মথি ১০:২২.
১৬. কীভাবে আমরা আত্মশাসন গড়ে তুলতে পারি?
১৬ আমরা সাধারণত সহজ উপায়ে কাজ করতে পছন্দ করি। তবে, কখনো কখনো সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো সহজ উপায়ে করা যায় না। এই ধরনের পরিস্থিতিতে আমাদের আত্মশাসন গুণটার প্রয়োজন দেখা দেয়, যেটা আমরা জন্মগতভাবে লাভ করি না। আর এই গুণটা গড়ে তোলার জন্য আমাদের ইন্দ্রিয়দমন গুণটার প্রয়োজন হয়। তাই, আমাদের পক্ষে যে-কাজগুলো করা হয়তো কঠিন, সেগুলো করার বিষয়ে নিজেদের প্রশিক্ষিত করার জন্য আমাদের সাহায্যের প্রয়োজন রয়েছে। আর যিহোবা তাঁর পবিত্র আত্মার মাধ্যমে আমাদের সাহায্য করেন।—গালা. ৫:২২, ২৩.
১৭. প্রথম করিন্থীয় ৯:২৫-২৭ পদ অনুযায়ী প্রেরিত পৌল আত্মশাসন গুণটা প্রদর্শন করার বিষয়ে নিজের প্রচেষ্টা সম্বন্ধে কীভাবে ব্যাখ্যা করেছিলেন?
১৭ প্রেরিত পৌল আত্মশাসন গুণটা প্রদর্শন করেছিলেন। কিন্তু, তিনি এটা স্বীকার করেছিলেন যে, যা সঠিক, তা করার জন্য তাকে নিজের দেহকে “প্রহার” করতে হয়। (পড়ুন, ১ করিন্থীয় ৯:২৫-২৭.) তিনি অন্যদেরও আত্মশাসন করার এবং সমস্ত কিছু “শিষ্ট ও সুনিয়মিতরূপে” করার জন্য জোরালো পরামর্শ দিয়েছিলেন। (১ করি. ১৪:৪০) আমাদেরও অবশ্যই এক উত্তম আধ্যাত্মিক তালিকা বজায় রাখার মাধ্যমে আত্মশাসন গুণটা অনুশীলন করতে হবে, যে-তালিকার অন্তর্ভুক্ত হল নিয়মিতভাবে রূপক মাছ ধরার কাজে অংশ নেওয়া।—প্রেরিত ২:৪৬.
দেরি করবেন না
১৮. যিহোবার দৃষ্টিতে সফল হওয়ার জন্য আমাদের অবশ্যই কী করতে হবে?
১৮ একজন পেশাদার জেলে কতটা মাছ ধরেছেন, সেটার উপর ভিত্তি করে নিজের সাফল্য পরিমাপ করেন। এর বিপরীতে, আমরা কত জন ব্যক্তিকে ঈশ্বরের সংগঠনে আসতে সাহায্য করেছি, সেটার উপর ভিত্তি করে নিজেদের সাফল্য পরিমাপ করি না। (লূক ৮:১১-১৫) আমরা যদি ক্রমাগত সুসমাচার প্রচার করি এবং অন্যদের শিক্ষা দিই, তা হলে যিহোবা আমাদের সফল হিসেবে দেখবেন। কেন? কারণ এভাবে আমরা তাঁর ও তাঁর পুত্রের বাধ্য হচ্ছি।—মার্ক ১৩:১০; প্রেরিত ৫:২৮, ২৯.
১৯-২০. বর্তমানে প্রচার করার কোন বিশেষ কারণ আমাদের কাছে রয়েছে?
১৯ কোনো কোনো দেশে নির্দিষ্ট কিছু মাসে মাছ ধরার অনুমতি দেওয়া হয়। সেই দেশগুলোতে একজন জেলে হয়তো সেই সময়ে মাছ ধরার আরও বেশি তাগিদ অনুভব করেন, যখন মাছ ধরার সময় শেষ হয়ে আসে। মনুষ্যধারী হিসেবে বর্তমানে প্রচার করার অতিরিক্ত কারণ আমাদের কাছে রয়েছে: এই বিধিব্যবস্থার ধ্বংস দ্রুত এগিয়ে আসছে! জীবনরক্ষাকারী বার্তা প্রচার করার জন্য খুব অল্পসময়ই বাকি রয়েছে। তাই, দেরি করবেন না অথবা এইরকম ভাববেন না যে, এই গুরুত্বপূর্ণ কাজে অংশ নেওয়ার উদ্দেশে আপনাকে উপযুক্ত সময়ের জন্য অপেক্ষা করতে হবে।—উপ. ১১:৪.
২০ প্রচার করার জন্য আপনার আকাঙ্ক্ষাকে আরও দৃঢ় করার, বাইবেল সম্বন্ধে আপনার জ্ঞানকে বৃদ্ধি করার, সাহস ও আত্মশাসন গড়ে তোলার জন্য এখনই পদক্ষেপ নিন। আশি লক্ষেরও বেশি মনুষ্যধারীর সঙ্গে যোগ দিন এবং যিহোবাতে যে-আনন্দ, তা উপভোগ করুন। (নহি. ৮:১০) যতটা সম্ভব বেশি লোকের কাছে প্রচার করার এবং যিহোবা যতক্ষণ না থামতে বলছেন, ততক্ষণ এই কাজ চালিয়ে যাওয়ার বিষয়ে দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ হোন। পরবর্তী প্রবন্ধে তিনটে উপায় নিয়ে আলোচনা করা হবে, যে-উপায়গুলোতে আমরা মনুষ্যধারী হিসেবে ক্রমাগত রাজ্যের প্রচার কাজ করার বিষয়ে আমাদের সংকল্পকে আরও শক্তিশালী করতে পারি।
গান সংখ্যা ৪৭ সুসমাচার ঘোষণা করো
a যিশু নম্র ও কঠোর পরিশ্রমী জেলেদের তাঁর শিষ্য হওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। যিশু আজও সেই ব্যক্তিদের মনুষ্যধারী হওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানান, যাদের এই গুণগুলো রয়েছে। এই প্রবন্ধে আলোচনা করা হবে, যে-বাইবেল ছাত্ররা যিশুর আমন্ত্রণ গ্রহণ করার ক্ষেত্রে দ্বিধা বোধ করে, তাদের কী করা উচিত।
b এই অভিব্যক্তির অর্থ: “মনুষ্যধারী” অভিব্যক্তিটা সেই সমস্ত ব্যক্তিকে চিত্রিত করে, যারা সুসমাচার প্রচার করে এবং খ্রিস্টের শিষ্য হয়ে ওঠার জন্য অন্যদের শিক্ষা দেয়।
c ২০১৮ সালের অক্টোবর মাসের প্রহরীদুর্গ পত্রিকার ১১-১৬ পৃষ্ঠায় দেওয়া “সত্য শেখান” শিরোনামের প্রবন্ধটা দেখুন।