-
‘একটী মহামূল্য মুক্তা পাওয়া’২০০৫ প্রহরীদুর্গ | ফেব্রুয়ারি ১
-
-
‘একটী মহামূল্য মুক্তা পাওয়া’
“স্বর্গ-রাজ্য বলে আক্রান্ত হইতেছে, এবং আক্রমীরা সবলে তাহা অধিকার করিতেছে।”—মথি ১১:১২.
১, ২. (ক) রাজ্য সম্বন্ধীয় নীতিগল্পগুলোর একটাতে যিশু কোন বিরল গুণের বিষয় তুলে ধরেছিলেন? (খ) মহামূল্য মুক্তার নীতিগল্পে যিশু কী বলেছিলেন?
এমন কোনোকিছু কি রয়েছে, যেটাকে আপনি এতটাই মূল্যবান মনে করেন যে, সেটা পাওয়ার জন্য আপনার যা কিছু আছে তার সমস্তই পরিত্যাগ করবেন? যদিও লোকেরা কিছু লক্ষ্যের—টাকাপয়সা, খ্যাতি, ক্ষমতা বা পদমর্যাদার—অনুধাবন করতে গিয়ে নিজেকে পুরোপুরি নিয়োজিত করার বিষয় বলে থাকে কিন্তু একজন ব্যক্তি সাধারণত অতি বিরল ক্ষেত্রেই এমন কাম্য কিছু পেয়ে থাকে, যেটার জন্য তিনি সমস্তকিছু পরিত্যাগ করতে ইচ্ছুক হন। যিশু খ্রিস্ট এই বিরল অথচ চমৎকার গুণটিকে ঈশ্বরের রাজ্য সম্বন্ধীয় চিন্তা উদ্রেগকারী তাঁর অনেক নীতিগল্পের একটাতে উল্লেখ করেছিলেন।
২ এটা হচ্ছে একটা নীতিগল্প বা দৃষ্টান্ত, যা যিশু শুধুমাত্র তাঁর শিষ্যদের বলেছিলেন আর সেটাকে প্রায়ই মহামূল্য মুক্তার দৃষ্টান্ত বলা হয়। যিশু এই কথা বলেছিলেন: “স্বর্গ-রাজ্য এমন এক বণিকের তুল্য, যে উত্তম উত্তম মুক্তা অন্বেষণ করিতেছিল, সে একটী মহামূল্য মুক্তা দেখিতে পাইয়া গিয়া [“অবিলম্বে,” NW] সর্ব্বস্ব বিক্রয় করিয়া তাহা ক্রয় করিল।” (মথি ১৩:৩৬, ৪৫, ৪৬) এই দৃষ্টান্ত থেকে তাঁর শ্রোতারা কোন বিষয়টা শিখুক বলে যিশু চেয়েছিলেন? আর কীভাবে আমরা যিশুর কথাগুলো থেকে উপকৃত হতে পারি?
মুক্তার মহামূল্য গুণ
৩. প্রাচীনকালে উত্তম মানের মুক্তা কেন এত মূল্যবান ছিল?
৩ প্রাচীনকাল থেকেই মুক্তাকে অলংকার সামগ্রী হিসেবে মূল্যবান বলে গণ্য করা হচ্ছে। একটি উৎস বলে যে, রোমীয় পণ্ডিত প্লিনি দি এল্ডারের মতে, মুক্তা “দামি সামগ্রীগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ স্থান” দখল করেছিল। সোনা, রুপো বা অন্যান্য দামি রত্নগুলোর বৈসাদৃশ্যে মুক্তা জীবিত বস্তুগুলো থেকে উৎপাদিত হয়ে থাকে। এটা সকলেরই জানা যে, নির্দিষ্ট প্রকারের ঝিনুক, অমসৃণ বস্তুগুলোকে—যেমন পাথরের ক্ষুদ্র কণাগুলোকে—নেকার নামে পরিচিত ক্ষরিত বস্তুর প্রলেপের মধ্যে ঢেকে রাখার মাধ্যমে চকচকে মুক্তায় পরিণত করতে পারে। প্রাচীনকালে, সর্বোত্তম মানের মুক্তা মূলত ইস্রায়েল দেশ থেকে দূরে অবস্থিত লোহিত সাগর, পারস্য উপসাগর এবং ভারত মহাসাগর থেকে সংগ্রহ করা হতো। নিঃসন্দেহে, এই কারণেই যিশু “এমন এক বণিকের” কথা বলেছিলেন “যে উত্তম উত্তম মুক্তা অন্বেষণ করিতেছিল।” প্রকৃতই মূল্যবান এমন মুক্তা খুঁজে পাওয়ার জন্য প্রচুর পরিমাণে প্রচেষ্টা করতে হবে।
৪. বণিকের সম্বন্ধে যিশুর নীতিগল্পের মূল শিক্ষাটা কী?
৪ যদিও উত্তম মানের মুক্তা অনেক দিন থেকেই দামি সামগ্রী হিসেবে সমাদৃত হয়ে আসছে কিন্তু এটা স্পষ্ট যে, সেগুলোর অর্থমূল্য যিশুর নীতিগল্পের মূল শিক্ষা নয়। এই নীতিগল্পে যিশু ঈশ্বরের রাজ্যকে শুধুমাত্র একটি মহামূল্য মুক্তার সঙ্গেই তুলনা করেননি; তিনি ‘উত্তম মুক্তা অন্বেষণ করিতেছিল এমন এক বণিক’ এবং এইরকম একটা মুক্তা পাওয়ার পর তার সাড়াদানের প্রতিও মনোযোগ আকর্ষণ করেছিলেন। সাধারণ দোকানদারের বৈসাদৃশ্যে একজন মুক্তা বণিক বা পাইকারি বিক্রেতা ছিলেন এমন এক ব্যক্তি যাকে ব্যবসায় অভিজ্ঞ বলা যেতে পারে আর যার তীক্ষ্ণ দৃষ্টি ছিল অথবা মুক্তাকে অদ্বিতীয় করে তোলে এমন শৈল্পিক গুণাগুণ ও সূক্ষ্ম পার্থক্যগুলো নির্ণয় করার প্রয়োজনীয় বিচক্ষণতা ছিল। তিনি একটা মুক্তা দেখে বুঝতে পারবেন যে, এটা খাঁটি কি না ও সেইসঙ্গে নিকৃষ্ট বা নকল পণ্যের দ্বারা তিনি ঠকবেন না।
৫, ৬. (ক) যিশুর নীতিগল্পের বণিকের ক্ষেত্রে কোন বিষয়টা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য? (খ) গুপ্তধনের নীতিগল্প বণিক সম্বন্ধে কোন বিষয় প্রকাশ করে?
৫ স্বতন্ত্র এই বণিকের অন্য আরেকটা বিষয় বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। একজন সাধারণ বণিক হয়তো প্রথমে মুক্তার বাজারদর হিসাব করেন যাতে নির্ণয় করতে পারেন যে, লাভ করতে হলে তাকে কত মূল্য দিতে হবে। তিনি হয়তো এও বিবেচনা করবেন যে, বাজারে এই ধরনের মুক্তার চাহিদা আছে কি না, যাতে তিনি এটাকে তাড়াতাড়ি বিক্রি করে দিতে পারেন। অন্য কথায়, তিনি মুক্তার মালিক হওয়া নয় বরং তার বিনিয়োগকৃত অর্থ থেকে দ্রুত মুনাফা অর্জনে আগ্রহী হবেন। কিন্তু, যিশুর নীতিগল্পের বণিকের ক্ষেত্রে তেমনটা হয়নি। তার আগ্রহ অর্থবিষয়ক বা বস্তুগত ছিল না। বস্তুত, তিনি যেটার অন্বেষণ করছিলেন, সেটা পাওয়ার জন্য তার “সর্ব্বস্ব”—সম্ভবত তার সমস্ত ব্যক্তিগত সম্পদ ও সম্পত্তি—পরিত্যাগ করতে ইচ্ছুক ছিলেন।
৬ অধিকাংশ বণিকের চোখে, যিশুর নীতিগল্পে বলা ব্যক্তি যা করেছিলেন, তা সম্ভবত মূর্খতাপূর্ণ কাজ ছিল। একজন বিচক্ষণ ব্যবসায়ী এই ধরনের এক ঝুঁকিপূর্ণ ব্যাবসা হাতে নেওয়ার কথা মাথায়ই আনবেন না। কিন্তু, যিশুর নীতিগল্পের বণিকের কাছে মূল্য সম্বন্ধে এক ভিন্ন মান ছিল। তার পুরস্কার ছিল কোনো আর্থিক সুবিধা নয় বরং অতুলনীয় মূল্যের কোনোকিছু অর্জন করার আনন্দ ও পরিতৃপ্তি। এই বিষয়টা যিশুর বলা এই ধরনের অন্য আরেকটা দৃষ্টান্তে স্পষ্ট করা হয়েছে। তিনি বলেছিলেন: “স্বর্গ-রাজ্য ক্ষেত্রমধ্যে গুপ্ত এমন ধনের তুল্য, যাহা দেখিতে পাইয়া এক ব্যক্তি গোপন করিয়া রাখিল, পরে আনন্দ হেতু গিয়া সর্ব্বস্ব বিক্রয় করিয়া সেই ক্ষেত্র ক্রয় করিল।” (মথি ১৩:৪৪) হ্যাঁ, ধন আবিষ্কার করা ও সেটার মালিক হওয়ার ফলে যে-আনন্দ আসে, সেটাই সেই ব্যক্তিকে সবকিছু পরিত্যাগ করার জন্য প্রেরণা দিতে যথেষ্ট ছিল। আজকে কি এই ধরনের ব্যক্তিরা রয়েছে? এমন কোনো ধন কি রয়েছে, যা এই ধরনের ত্যাগস্বীকারের যোগ্য?
যারা মহামূল্যকে উপলব্ধি করেছিল
৭. কীভাবে যিশু দেখিয়েছিলেন যে, তিনি রাজ্যের মহামূল্যকে গভীরভাবে উপলব্ধি করেছিলেন?
৭ যিশু তাঁর নীতিগল্পটা বলতে গিয়ে ‘স্বর্গরাজ্যের’ বিষয়ে বলছিলেন। এটা নিশ্চিত যে তিনি নিজেও রাজ্যের মহামূল্যকে উপলব্ধি করেছিলেন। সুসমাচারের বিবরণগুলো সেই বিষয়ে জোরালো সাক্ষ্য দেয়। সা.কা. ২৯ সালে যিশু তাঁর বাপ্তিস্মের পর “প্রচার করিতে আরম্ভ করিলেন; বলিতে লাগিলেন, ‘মন ফিরাও, কেননা স্বর্গ-রাজ্য সন্নিকট হইল’।” প্রায় সাড়ে তিন বছর তিনি জনতাকে রাজ্য সম্বন্ধে শিক্ষা দিয়েছিলেন। তিনি সেই দেশের এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্ত পর্যন্ত গমন করেছিলেন, ‘ঈশ্বরের রাজ্যের সুসমাচার প্রচার করিতে করিতে নগরে নগরে ও গ্রামে গ্রামে ভ্রমণ করিয়াছিলেন।’—মথি ৪:১৭; লূক ৮:১.
৮. রাজ্য কী সম্পাদন করবে তা দেখানোর জন্য যিশু কী করেছিলেন?
৮ সারাদেশে অসংখ্য অলৌকিক কাজ করার দ্বারা—যেগুলোর মধ্যে ছিল অসুস্থকে সুস্থ করা, ক্ষুধার্তকে খাওয়ানো, প্রকৃতিকে বশে আনা, এমনকি মৃতদের পুনরুত্থিত করা—যিশু এও দেখিয়েছিলেন যে, ঈশ্বরের রাজ্য কী সম্পাদন করবে। (মথি ১৪:১৪-২১; মার্ক ৪:৩৭-৩৯; লূক ৭:১১-১৭) শেষ পর্যন্ত তিনি তাঁর জীবন দান করে, যাতনাদণ্ডে একজন শহীদের মতো মৃত্যুবরণ করে ঈশ্বর ও রাজ্যের প্রতি তাঁর আনুগত্য প্রমাণ করেছিলেন। সেই বণিক যেভাবে ‘মহামূল্য মুক্তার’ জন্য তার সবকিছু স্বেচ্ছায় দিয়ে দিয়েছিলেন, ঠিক তেমনই যিশু রাজ্যের জন্য বেঁচে ছিলেন ও মারাও গিয়েছিলেন।—যোহন ১৮:৩৭.
৯. যিশুর প্রাথমিক শিষ্যদের মধ্যে কোন বিরল গুণ দেখা গিয়েছিল?
৯ যিশু শুধুমাত্র রাজ্যের ওপরই নয় কিন্তু সেইসঙ্গে অনুসারীদের এক ক্ষুদ্র দলকে একত্রিত করার ওপরও তাঁর নিজের জীবনকে কেন্দ্রীভূত করেছিলেন। তারাও ছিল সেই ব্যক্তি যারা রাজ্যের মহামূল্যকে গভীরভাবে উপলব্ধি করেছিল। তাদের মধ্যে ছিল আন্দ্রিয়, যিনি মূলত যোহন বাপ্তাইজকের একজন শিষ্য ছিলেন। যিশুই ছিলেন “ঈশ্বরের মেষশাবক” এই বিষয়ে যোহনের সাক্ষ্য শোনার পর, আন্দ্রিয় এবং যোহনের অন্য আরেকজন শিষ্য, খুব সম্ভবত সিবদিয়ের পুত্রদের মধ্যে একজন যার নামও ছিল যোহন, তারা তৎক্ষণাৎ যিশুর কাছে এসেছিল এবং বিশ্বাসী হয়েছিল। কিন্তু বিষয়টা সেখানেই শেষ হয়ে যায়নি। তখনই আন্দ্রিয় তার ভাই শিমোনের কাছে গিয়েছিলেন এবং তাকে বলেছিলেন: “আমরা মশীহের দেখা পাইয়াছি।” এর পর পরই শিমোন (যিনি কৈফা বা পিতর হিসেবে পরিচিত হয়ে উঠেছিলেন) এবং সেইসঙ্গে ফিলিপ ও তার বন্ধু নথনেলও যিশুকে মশীহ হিসেবে শনাক্ত করতে পেরেছিল। বাস্তবিকপক্ষে, নথনেল যিশুকে এই কথা বলতে পরিচালিত হয়েছিলেন: “আপনিই ঈশ্বরের পুত্ত্র, আপনিই ইস্রায়েলের রাজা।”—যোহন ১:৩৫-৪৯.
কাজ করার জন্য উদ্দীপিত
১০. শিষ্যরা কীভাবে সাড়া দিয়েছিল, যখন যিশু তাদের সঙ্গে প্রথম সাক্ষাতের কিছু সময় পর এসেছিলেন এবং তাদের আহ্বান করেছিলেন?
১০ আন্দ্রিয়, পিতর, যোহন এবং অন্যেরা যখন মশীহকে আবিষ্কার করেছিল, তখন তাদের যে-রোমাঞ্চকর অনুভূতি হয়েছিল, সেটাকে সেই বণিকের অনুভূতির সঙ্গে তুলনা করা যেতে পারে, যখন তিনি মহামূল্য মুক্তা খুঁজে পেয়েছিলেন। এখন তারা কী করবে? যিশুর সঙ্গে প্রথম সাক্ষাৎ হওয়ার পর পরই তারা কী করেছিল, সেই বিষয়ে সুসমাচারের বিবরণগুলো আমাদের বেশি কিছু জানায় না। আপাতদৃষ্টিতে মনে হয় যে, তাদের মধ্যে অধিকাংশই তাদের স্বাভাবিক জীবনধারায় ফিরে গিয়েছিল। কিন্তু, প্রায় ছয় মাস থেকে এক বছর পর, যিশু আবারও আন্দ্রিয়, পিতর, যোহন এবং যোহনের ভাই যাকোবের কাছে এসেছিলেন, যখন তারা গালীল সমুদ্রের ধারে তাদের মাছ ধরার ব্যবসায় রত ছিল।a তাদের দেখে যিশু বলেছিলেন: “আমার পশ্চাৎ আইস। আমি তোমাদিগকে মনুষ্যধারী করিব।” তারা কীভাবে সাড়া দিয়েছিল? পিতর ও আন্দ্রিয় সম্বন্ধে মথির বিবরণ বলে: “তখনই তাঁহারা জাল পরিত্যাগ করিয়া তাঁহার পশ্চাদগামী হইলেন।” যাকোব ও যোহনের সম্বন্ধে আমরা পড়ি: “তখনই তাঁহারা নৌকা ও আপনাদের পিতাকে পরিত্যাগ করিয়া তাঁহার পশ্চাদগামী হইলেন।” লূকের বিবরণ আরও বলে যে, তারা “সকলই পরিত্যাগ করিয়া তাঁহার পশ্চাদগামী হইলেন।”—মথি ৪:১৮-২২; লূক ৫:১-১১.
১১. সম্ভবত কোন বিষয়টা যিশুর আহ্বানের প্রতি শিষ্যদের অবিলম্বে সাড়া দিতে পরিচালিত করেছিল?
১১ শিষ্যদের অবিলম্বে সাড়াদান কি তাড়াহুড়ো করে নেওয়া কোনো সিদ্ধান্ত ছিল? কখনোই না! যদিও তারা যিশুর সঙ্গে তাদের প্রথম সাক্ষাতের পর তাদের মাছ ধরার পারিবারিক ব্যবসায় ফিরে গিয়েছিল কিন্তু কোনো সন্দেহ নেই যে, সেই সময় তারা যা দেখেছিল ও শুনেছিল, তা তাদের হৃদয়ে ও মনে এক গভীর ছাপ ফেলেছিল। প্রায় এক বছর কেটে যাওয়া তাদেরকে সেই বিষয়গুলো নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করার জন্য যথেষ্ট সময় দিয়েছিল। এখন সিদ্ধান্ত গ্রহণের সময় এসেছিল। তারা কি সেই বণিকের মতো হবে, যার হৃদয় অমূল্য মুক্তা আবিষ্কারের দ্বারা এতটাই উদ্দীপিত হয়েছিল যে, যিশুর বর্ণনা অনুযায়ী তিনি ‘অবিলম্বে গিয়া’ সেই মুক্তা কেনার জন্য যা যা করতে হবে তা-ই করেছিলেন? হ্যাঁ। তারা যা দেখেছিল ও শুনেছিল তা তাদের হৃদয়কে উদ্দীপিত করেছিল। তারা বুঝতে পেরেছিল যে, পদক্ষেপ নেওয়ার সময় এসেছে। তাই, বিবরণগুলো আমাদের যেমন বলে যে, কোনোরকম দ্বিধা না করেই তারা সমস্তকিছু পরিত্যাগ করেছিল এবং যিশুর অনুসারী হয়ে উঠেছিল।
১২, ১৩. (ক) যিশুর কথা শুনেছিল এমন অনেকে কীভাবে সাড়া দিয়েছিল? (খ) যিশু তাঁর বিশ্বস্ত শিষ্যদের বিষয়ে কী বলেছিলেন এবং তাঁর কথাগুলো কী ইঙ্গিত করে?
১২ সুসমাচারের বিবরণগুলোতে পরে উল্লেখিত কয়েক জন ব্যক্তির চেয়ে এই বিশ্বস্ত ব্যক্তিরা কতই না আলাদা ছিল! অনেকে যিশুর দ্বারা সুস্থ হয়েছিল বা তাঁর কাছ থেকে খাবার খেয়েছিল কিন্তু তারা যার যার মতো তাদের নিজেদের কাজকর্মে ফিরে গিয়েছিল। (লূক ১৭:১৭, ১৮; যোহন ৬:২৬) কেউ কেউ এমনকি যিশু যখন তাদেরকে তাঁর অনুসারী হওয়ার আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন, তখন তারা পিছিয়ে গিয়েছিল। (লূক ৯:৫৯-৬২) অন্যদিকে, বিশ্বস্ত ব্যক্তিদের সম্বন্ধে যিশু পরে বলেছিলেন: “যোহন বাপ্তাইজকের কাল হইতে এখন পর্য্যন্ত স্বর্গ-রাজ্য বলে আক্রান্ত হইতেছে, এবং আক্রমীরা সবলে তাহা অধিকার করিতেছে।”—মথি ১১:১২.
১৩ পদটি সম্বন্ধে বাইবেল পণ্ডিত হাইনরিখ্ মাইয়ার বলেন: “এই কথাগুলোর দ্বারা আসন্ন মশীহ রাজ্যের জন্য উৎসুক, অপ্রতিরোধ্য প্রচেষ্টা ও সংগ্রামকে বর্ণনা করা হয়েছে . . . রাজ্য সম্বন্ধে আগ্রহ খুবই উৎসুক ও শক্তিশালী (কোনোভাবে শান্ত ও প্রত্যাশী নয়)।” সেই বণিকের মতো, এই অল্প কিছু ব্যক্তি শীঘ্রই যা সত্যিই মূল্যবান ছিল সেটাকে শনাক্ত করেছিল আর তারা রাজ্যের জন্য স্বেচ্ছায় তাদের সমস্তই পরিত্যাগ করেছিল।—মথি ১৯:২৭, ২৮; ফিলিপীয় ৩:৮.
অন্যেরা অন্বেষণে অংশ নিয়েছিল
১৪. কীভাবে যিশু রাজ্যের প্রচার কাজের জন্য প্রেরিতদের প্রস্তুত করেছিলেন এবং এর ফল কী হয়েছিল?
১৪ যিশু যখন তাঁর পরিচর্যা চালিয়ে গিয়েছিলেন, তখন তিনি রাজ্যের লক্ষ্যে উপনীত হতে অন্যদের প্রশিক্ষণ দিয়েছিলেন ও সাহায্য করেছিলেন। প্রথমে তিনি তাঁর শিষ্যদের মধ্যে থেকে ১২ জনকে বাছাই করেছিলেন ও তাদেরকে প্রেরিত হিসেবে নিযুক্ত করেছিলেন বা তারা তাঁর দ্বারা পাঠানো ব্যক্তি ছিল। কীভাবে তাদের পরিচর্যা সম্পাদন করতে হবে, সেই সম্বন্ধে যিশু তাদেরকে বিস্তারিত নির্দেশনা দিয়েছিলেন এবং সেইসঙ্গে তাদের সামনে যে-প্রতিদ্বন্দ্বিতা ও কষ্টকর পরিস্থিতিগুলো ছিল, সেগুলো সম্বন্ধে তাদের বিভিন্ন সাবধানবাণী দিয়েছিলেন। (মথি ১০:১-৪২; লূক ৬:১২-১৬) পরবর্তী দুই বছর বা আরও বেশি সময় তারা যিশুর সঙ্গে সারাদেশ জুড়ে প্রচার করেছিল এবং তাঁর সঙ্গে এক ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক উপভোগ করেছিল। তারা তাঁর কথাগুলো শুনেছিল, তাঁর শক্তিশালী কাজগুলোর সাক্ষি হয়েছিল এবং তাঁর ব্যক্তিগত উদাহরণ দেখেছিল। (মথি ১৩:১৬, ১৭) নিঃসন্দেহে এই সমস্তকিছুই গভীরভাবে তাদের স্পর্শ করেছিল, এতখানিই স্পর্শ করেছিল যে, সেই বণিকের মতো তারা উদ্যোগের সঙ্গে ও সর্বান্তঃকরণে রাজ্যের অনুধাবন করেছিল।
১৫. আনন্দ করার জন্য তাঁর অনুসারীদের কোন প্রকৃত কারণ ছিল বলে যিশু জানিয়েছিলেন?
১৫ বারো জন প্রেরিত ছাড়াও, যিশু “আরও সত্তর জনকে নিযুক্ত করিলেন, আর . . . সেই সমস্ত নগরে ও স্থানে আপনার অগ্রে দুই দুই জন করিয়া তাহাদিগকে প্রেরণ করিলেন।” এ ছাড়া, তিনি তাদেরকে সম্মুখস্থ পরীক্ষা ও কষ্টগুলোর বিষয় বলেছিলেন এবং লোকেদের কাছে এই কথা বলতে নির্দেশনা দিয়েছিলেন: “ঈশ্বরের রাজ্য তোমাদের সন্নিকট হইল।” (লূক ১০:১-১২) সেই ৭০ জন যখন ফিরে এসেছিল, তখন তারা খুবই আনন্দিত হয়েছিল এবং যিশুকে এই সংবাদ দিয়েছিল: “প্রভু, আপনার নামে ভূতগণও আমাদের বশীভূত হয়।” কিন্তু, সম্ভবত তাদের অবাক করে দিয়ে যিশু প্রকাশ করেছিলেন যে, রাজ্যের প্রতি তাদের উদ্যোগের কারণে এমনকি আরও বড় আনন্দ তাদের জন্য সঞ্চিত ছিল। তিনি তাদের বলেছিলেন: “আত্মারা যে তোমাদের বশীভূত হয়, ইহাতে আনন্দ করিও না; কিন্তু তোমাদের নাম যে স্বর্গে লিখিত আছে, ইহাতেই আনন্দ কর।”—লূক ১০:১৭, ২০.
১৬, ১৭. (ক) যিশু তাঁর বিশ্বস্ত প্রেরিতদের সঙ্গে শেষ রাত কাটানোর সময় কী বলেছিলেন? (খ) যিশুর কথাগুলো প্রেরিতদের জন্য কোন আনন্দ ও আশ্বাস নিয়ে এসেছিল?
১৬ শেষে, সা.কা. ৩৩ সালের ১৪ই নিশান রাতে যিশু যখন তাঁর প্রেরিতদের সঙ্গে ছিলেন, তখন তিনি প্রভুর সান্ধ্যভোজ প্রবর্তন করেছিলেন এবং তাদের সেই ঘটনা স্মরণ করার আদেশ দিয়েছিলেন। সন্ধ্যাবেলায় যিশু তাঁর অবশিষ্ট ১১ জন প্রেরিতকে বলেছিলেন: “তোমরাই আমার সকল পরীক্ষার মধ্যে আমার সঙ্গে সঙ্গে বরাবর রহিয়াছ; আর আমার পিতা যেমন আমার জন্য নিরূপণ করিয়াছেন, আমিও তেমনি তোমাদের জন্য এক রাজ্য নিরূপণ করিতেছি [“আমার পিতা যেমন আমার সঙ্গে এক রাজ্যের জন্য চুক্তি করেছেন, তেমনই আমিও তোমাদের সঙ্গে একটা চুক্তি করছি,” NW], যেন তোমরা আমার রাজ্যে আমার মেজে ভোজন পান কর; আর তোমরা সিংহাসনে বসিয়া ইস্রায়েলের দ্বাদশ বংশের বিচার করিবে।”—লূক ২২:১৯, ২০, ২৮-৩০.
১৭ প্রেরিতরা যখন যিশুর কাছ থেকে এই কথাগুলো শুনেছিল, তখন তা তাদের হৃদয়কে কতই না আনন্দ এবং পরিতৃপ্তিতে পূর্ণ করেছিল! তাদেরকে সেই সর্বোচ্চ সম্মান ও অদ্বিতীয় সুযোগ দেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল, যা যেকোনো মানুষ পেতে পারত। (মথি ৭:১৩, ১৪; ১ পিতর ২:৯) সেই বণিকের মতো, তারা যিশুকে অনুসরণ করে রাজ্যের অনুধাবন করতে গিয়ে অনেক কিছু পরিত্যাগ করেছে। তখন তাদের আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল যে এই পর্যন্ত তারা যে-ত্যাগস্বীকারগুলো করেছে, সেগুলো বৃথা যায়নি।
১৮. এগারো জন প্রেরিতের পাশাপাশি আর কারা শেষ পর্যন্ত রাজ্য থেকে উপকার লাভ করবে?
১৮ তবে, সেই রাতে কেবল যিশুর সঙ্গে উপস্থিত প্রেরিতরাই রাজ্য থেকে উপকার লাভ করবে না। এটা যিহোবারই ইচ্ছা ছিল যে মোট ১,৪৪,০০০ জন ব্যক্তিকে গৌরবান্বিত স্বর্গীয় রাজ্যে যিশুর সহশাসক হিসেবে রাজ্য চুক্তিতে গ্রহণ করা হবে। এ ছাড়া, প্রেরিত যোহন দর্শনে দেখেছিলেন যে, “বিস্তর লোক, তাহা গণনা করিতে সমর্থ কেহ ছিল না . . . তাহারা সিংহাসনের সম্মুখে ও মেষ শাবকের সম্মুখে দাঁড়াইয়া আছে . . . কহিতেছে, ‘পরিত্রাণ আমাদের ঈশ্বরের, যিনি সিংহাসনে বসিয়া আছেন, এবং মেষশাবকের দান।’” এরা হচ্ছে রাজ্যের পার্থিব প্রজা।b—প্রকাশিত বাক্য ৭:৯, ১০; ১৪:১, ৪.
১৯, ২০. (ক) সমস্ত জাতির লোকেদের জন্য কোন সুযোগ খোলা রয়েছে? (খ) পরের প্রবন্ধে কোন প্রশ্ন আলোচনা করা হবে?
১৯ স্বর্গারোহণ করার অল্প কিছু সময় আগে যিশু তাঁর বিশ্বস্ত অনুসারীদের আদেশ দিয়েছিলেন: “অতএব তোমরা গিয়া সমুদয় জাতিকে শিষ্য কর; পিতার ও পুত্ত্রের ও পবিত্র আত্মার নামে তাহাদিগকে বাপ্তাইজ কর; আমি তোমাদিগকে যাহা যাহা আজ্ঞা করিয়াছি সে সমস্ত পালন করিতে তাহাদিগকে শিক্ষা দেও। আর দেখ, আমিই যুগান্ত পর্য্যন্ত প্রতিদিন তোমাদের সঙ্গে সঙ্গে আছি।” (মথি ২৮:১৯, ২০) এভাবে সমস্ত জাতি থেকে আসা লোকেরা যিশু খ্রিস্টের শিষ্য হয়ে উঠতে পারবে। তারাও তাদের হৃদয়কে রাজ্যের প্রতি—স্বর্গীয় অথবা পার্থিব যে-পুরস্কারের জন্যই হোক না কেন—নিবিষ্ট করবে, ঠিক যেমন উত্তম মানের মুক্তার ক্ষেত্রে সেই বণিক করেছিলেন।
২০ যিশুর কথাগুলো ইঙ্গিত করেছিল যে, শিষ্য তৈরির কাজ ‘যুগান্ত’ পর্যন্ত চলতে থাকবে। তাই, আমাদের দিনে এখনও কি এমন ব্যক্তিরা রয়েছে, যারা ঈশ্বরের রাজ্যের অনুধাবন করতে গিয়ে তাদের সমস্তই দিয়ে দিতে ইচ্ছুক? এই প্রশ্নটাই পরের প্রবন্ধে আলোচনা করা হবে।
[পাদটীকাগুলো]
a সিবদিয়ের পুত্র যোহন হয়তো প্রথমবার সাক্ষাতের পরই যিশুকে অনুসরণ করেছিলেন এবং তাঁর কৃত কিছু কাজ নিজের চোখে দেখেছিলেন, ফলে সেগুলো যোহনকে তার সুসমাচারের বিবরণে এতটা প্রাণবন্তভাবে লিপিবদ্ধ করতে সমর্থ করেছিল। (যোহন ২-৫ অধ্যায়) তবে, যিশু তাকে আহ্বান করার কিছু সময় আগে তিনি তার পরিবারের মাছ ধরার ব্যবসায় ফিরে গিয়েছিলেন।
b আরও বিস্তারিত জানার জন্য যিহোবার সাক্ষিদের দ্বারা প্রকাশিত জ্ঞান যা অনন্ত জীবনে পরিচালিত করে বইয়ের ১০ অধ্যায় দেখুন।
-
-
আজকে ‘মহামূল্য মুক্তার’ অনুধাবন করা২০০৫ প্রহরীদুর্গ | ফেব্রুয়ারি ১
-
-
আজকে ‘মহামূল্য মুক্তার’ অনুধাবন করা
“সর্ব্ব জাতির কাছে সাক্ষ্য দিবার নিমিত্ত রাজ্যের এই সুসমাচার সমুদয় জগতে প্রচার করা যাইবে।”—মথি ২৪:১৪.
১, ২. (ক) যিশুর দিনে যিহুদিরা ঈশ্বরের রাজ্য সম্বন্ধে কেমন বোধ করেছিল? (খ) রাজ্য সম্বন্ধে সঠিক বোধগম্যতা প্রদান করার জন্য যিশু কী করেছিলেন এবং ফল কী হয়েছিল?
যিশু যখন পৃথিবীতে ছিলেন, তখন ঈশ্বরের রাজ্য যিহুদিদের মধ্যে এক গভীর আগ্রহের বিষয় ছিল। (মথি ৩:১, ২; ৪:২৩-২৫; যোহন ১:৪৯) তবে, প্রথমে তাদের অধিকাংশই এটার পরিধি ও ক্ষমতা সম্বন্ধে পুরোপুরিভাবে উপলব্ধি করতে পারেনি; কিংবা তারা এও বুঝতে পারেনি যে, এটা এক স্বর্গীয় সরকার হবে। (যোহন ৩:১-৫) এমনকি যিশুর অনুসারী হয়ে উঠেছিল এমন কয়েক জন ব্যক্তিও পুরোপুরিভাবে বুঝতে পারেনি যে, ঈশ্বরের রাজ্য কী অথবা খ্রিস্টের সহযোগী শাসক হওয়ার আশীর্বাদ লাভ করার জন্য তাদের কী করতে হবে।—মথি ২০:২০-২২; লূক ১৯:১১; প্রেরিত ১:৬.
২ সময় পেরিয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে যিশু ধৈর্য ধরে তাঁর শিষ্যদের আগের প্রবন্ধে আলোচিত মহামূল্য মুক্তার দৃষ্টান্তসহ আরও অনেক বিষয় শিখিয়েছিলেন, তাদেরকে স্বর্গীয় রাজ্যের অনুধাবন করতে গিয়ে প্রাণপণ করার গুরুত্ব সম্বন্ধে দেখিয়েছিলেন। (মথি ৬:৩৩; ১৩:৪৫, ৪৬; লূক ১৩:২৩, ২৪) এটা নিশ্চয়ই তাদের হৃদয়কে গভীরভাবে স্পর্শ করেছিল কারণ তারা শীঘ্রই পৃথিবীর প্রান্ত পর্যন্ত রাজ্যের সুসমাচারের অক্লান্ত ও সাহসী ঘোষণাকারীতে পরিণত হয়েছিল, যে-সম্বন্ধে প্রেরিত পুস্তকে প্রচুর সাক্ষ্যপ্রমাণ পাওয়া যায়।—প্রেরিত ১:৮; কলসীয় ১:২৩.
৩. আমাদের সময় সম্বন্ধে বলতে গিয়ে রাজ্যের বিষয়ে যিশু কী বলেছিলেন?
৩ বর্তমান সম্বন্ধে কী বলা যায়? লক্ষ লক্ষ লোককে রাজ্যের অধীনে এক পার্থিব পরমদেশের আশীর্বাদগুলো সম্বন্ধে জানানো হয়েছে। ‘যুগান্ত’ সম্বন্ধে তাঁর মহান ভবিষ্যদ্বাণীতে যিশু নির্দিষ্টভাবে বলেছিলেন: “সর্ব্ব জাতির কাছে সাক্ষ্য দিবার নিমিত্ত রাজ্যের এই সুসমাচার সমুদয় জগতে প্রচার করা যাইবে; আর তখন শেষ উপস্থিত হইবে।” (মথি ২৪:৩, ১৪; মার্ক ১৩:১০) তিনি এও ব্যাখ্যা করেছিলেন যে, প্রবল বাধা ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাগুলো, এমনকি তাড়না সত্ত্বেও এই বিশাল কাজটা চালিয়ে যেতে হবে। তবে, তিনি এই আশ্বাস দিয়েছিলেন: “যে কেহ শেষ পর্য্যন্ত স্থির থাকিবে, সেই পরিত্রাণ পাইবে।” (মথি ২৪:৯-১৩) এই সমস্তকিছুর জন্য সেই ধরনের আত্মত্যাগ ও উৎসর্গীকরণের প্রয়োজন, যা যিশুর দৃষ্টান্তের বণিক প্রদর্শন করেছিলেন। আজকে কি এইরকম ব্যক্তিরা রয়েছে, যারা রাজ্যের অনুধাবন করতে গিয়ে এই ধরনের বিশ্বাস ও উদ্যোগ দেখায়?
সত্য আবিষ্কার করার আনন্দ
৪. আজকে লোকেদের ওপর রাজ্যের সত্যের কোন প্রভাব রয়েছে?
৪ যিশুর দৃষ্টান্তের বণিক যখন এমন কিছু পেয়েছিলেন, যেটাকে তিনি এক “মহামূল্য মুক্তা” হিসেবে উপলব্ধি করেছিলেন, তখন তিনি অতিশয় আনন্দিত হয়েছিলেন। সেই আনন্দ তাকে সেই মুক্তাটা পাওয়ার জন্য তার সাধ্যমতো সমস্তই করতে পরিচালিত করেছিল। (ইব্রীয় ১২:১) একইভাবে আজকে, ঈশ্বর ও তাঁর রাজ্য সম্বন্ধে সত্য লোকেদের আকৃষ্ট করে ও প্রেরণা দেয়। এই বিষয়টা ভাই এ. এইচ. ম্যাকমিলানের মন্তব্যের কথা মনে করিয়ে দেয়, যিনি বিশ্বাস এগিয়ে চলেছে (ইংরেজি) বইয়ে মানবজাতির জন্য ঈশ্বর ও তার উদ্দেশ্য সম্বন্ধে তাঁর ব্যক্তিগত অনুসন্ধানের বিষয়ে লিখেছিলেন। তিনি বলেছিলেন: “আমি যা খুঁজে পেয়েছি, তা হাজার হাজার ব্যক্তি প্রতি বছর খুঁজে পাচ্ছে। আর তারা ঠিক আপনার ও আমার মতোই সাধারণ লোক, কারণ তারা সমস্ত জাতি, বর্ণ, জীবনের সমস্ত পটভূমি ও সব বয়সের মধ্যে থেকে আসছে। সত্য কোনো ব্যক্তিদের বাছবিচার করে না। এটি সমস্ত ধরনের লোককে আকৃষ্ট করে।”
৫. দুহাজার চার সালের পরিচর্যা বছরের রিপোর্টে কোন উত্তম ফলগুলো দেখা যায়?
৫ সেই কথাগুলোর সত্যতা দেখা যায় কারণ বছরের পর বছর ধরে লক্ষ লক্ষ সৎহৃদয়ের ব্যক্তি ঈশ্বরের রাজ্যের সুসমাচারের দ্বারা পরিচালিত হয়ে যিহোবা ও তাঁর ইচ্ছা পালন করার জন্য তাদের জীবন উৎসর্গ করছে। ২০০৩ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ২০০৪ সালের আগস্ট পর্যন্ত ব্যাপ্ত ২০০৪ সালের পরিচর্যা বছর কোনো ব্যতিক্রম ছিল না। সেই ১২ মাসে ২,৬২,৪১৬ জন ব্যক্তি জলে বাপ্তিস্ম নিয়ে যিহোবার প্রতি তাদের উৎসর্গীকরণের প্রতীককে লোকেদের সামনে প্রকাশ করেছিল। এটা দ্বীপ ও দেশ মিলিয়ে ২৩৫টা জায়গায় হয়েছিল, যেখানে যিহোবার সাক্ষিরা সমস্ত পটভূমির লোককে সাহায্য করার জন্য এবং সমস্ত জাতি, বংশ ও ভাষার লোককে ঈশ্বরের বাক্য থেকে জীবনদায়ী সত্য জানানোর জন্য ৬০,৮৫,৩৮৭টা গৃহ বাইবেল অধ্যয়ন করাচ্ছে।—প্রকাশিত বাক্য ৭:৯.
৬. বছরের পর বছর ধরে ক্রমাগত বৃদ্ধির কারণ কী?
৬ কোন বিষয়টা এই সমস্তকিছু সম্ভবপর করেছে? কোনো সন্দেহ নেই যে, যিহোবা এই সঠিক প্রবণতাসম্পন্ন ব্যক্তিদের তাঁর কাছে আকর্ষণ করেন। (যোহন ৬:৬৫; প্রেরিত ১৩:৪৮, NW) কিন্তু, সেই ব্যক্তিদের নিঃস্বার্থ মনোভাব ও অক্লান্ত প্রচেষ্টাকে হালকা করে দেখা উচিত নয়, যারা রাজ্যের অনুধাবন করতে গিয়ে নিজেদের পুরোপুরিভাবে বিলিয়ে দিয়েছে। ৭৯ বছর বয়সে ভাই ম্যাকমিলান লিখেছিলেন: “অসুস্থ ও মুমূর্ষু মানবজাতি সম্বন্ধে প্রথম যখন আমি প্রতিজ্ঞাগুলো জেনেছিলাম, তখন থেকে বাইবেলে প্রকাশিত বার্তার প্রতি আমার আশা ম্লান হয়ে যায়নি। সেই মুহূর্ত থেকে আমি বাইবেল কী শিক্ষা দেয় সেই বিষয়ে আরও বেশি জানার জন্য দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ হয়েছি, যাতে আমার মতো যারা সর্বশক্তিমান ঈশ্বর যিহোবা এবং মানবজাতির প্রতি তাঁর উত্তম উদ্দেশ্যগুলো সম্বন্ধে জ্ঞান লাভ করার চেষ্টা করছে, তাদের সাহায্য করতে পারি।”
৭. কোন অভিজ্ঞতা সেই ব্যক্তিদের আনন্দ ও উৎসুক মনোভাবকে প্রদর্শন করে, যারা বাইবেলের সত্য খুঁজে পাচ্ছে?
৭ আজকে যিহোবার দাসদের মধ্যেও উৎসুক মনোভাব দেখা যায়। উদাহরণ হিসেবে, অস্ট্রিয়ার ভিয়েনা থেকে আসা ড্যানিয়েলার কথা বিবেচনা করুন। তিনি বলেছিলেন: “ছেলেবেলা থেকেই ঈশ্বর আমার সর্বোত্তম বন্ধু। আমি সবসময় তাঁর নাম জানতে চেয়েছিলাম কারণ আমার কাছে ‘ঈশ্বর’ খুব বেশি নৈর্ব্যক্তিক ছিলেন। কিন্তু, আমাকে ১৭ বছর বয়স পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়েছিল আর এরপরই যিহোবার সাক্ষিরা আমার দরজায় এসেছিল। ঈশ্বর সম্বন্ধে আমি যা কিছু জানতে চেয়েছিলাম, তার সবই তারা ব্যাখ্যা করেছিল। আমি শেষ পর্যন্ত সত্য খুঁজে পেয়েছিলাম আর এটা ছিল চমৎকার! আমি এতটাই রোমাঞ্চিত হয়েছিলাম যে, সকলের কাছে প্রচার করতে শুরু করেছিলাম।” তার উদ্যমী মনোভাবের কারণে শীঘ্রই সহপাঠীরা তাকে উপহাস করতে শুরু করেছিল। “তবে এই বিষয়টা আমার কাছে এমন ছিল যেন বাইবেলের ভবিষ্যদ্বাণীর পরিপূর্ণতা আমি দেখতে পাচ্ছিলাম,” ড্যানিয়েলা বলে চলেন, “কারণ আমি শিখেছি, যিশু বলেছিলেন যে তাঁর অনুসারীরা তাঁর নামের জন্য ঘৃণিত ও তাড়িত হবে। আমি খুবই সুখী ও বিস্মিত হয়েছিলাম।” শীঘ্রই, ড্যানিয়েলা তার জীবন যিহোবার কাছে উৎসর্গ করেছিলেন, বাপ্তিস্ম নিয়েছিলেন এবং মিশনারি সেবার লক্ষ্যের অনুধাবন করতে শুরু করেছিলেন। বিয়ের পর, ড্যানিয়েলা তার স্বামী হেলমুটের সঙ্গে একত্রে ভিয়েনায় আফ্রিকান, চাইনিজ, ফিলিপিনো ও ভারতীয় লোকেদের কাছে প্রচার করতে শুরু করেছিলেন। ড্যানিয়েলা এবং হেলমুট এখন দক্ষিণপশ্চিম আফ্রিকায় মিশনারি হিসেবে সেবা করছে।
তারা হাল ছেড়ে দেয়নি
৮. উত্তম ফলদায়ক একটা উপায় কী, যেটার মাধ্যমে অনেকে ঈশ্বরের প্রতি তাদের ভালবাসা ও তাঁর রাজ্যের প্রতি তাদের আনুগত্য দেখিয়েছে?
৮ বাস্তবিকই, মিশনারি পরিচর্যা হচ্ছে নানা উপায়গুলোর মধ্যে একটা, যার মাধ্যমে আজ যিহোবার লোকেরা ঈশ্বরের প্রতি তাদের ভালবাসা এবং তাঁর রাজ্যের প্রতি তাদের আনুগত্য প্রদর্শন করে। যারা এই পরিচর্যা গ্রহণ করে, যিশুর দৃষ্টান্তের সেই বণিকের মতো তারা রাজ্যের জন্য দূরবর্তী স্থানগুলোতে ভ্রমণ করতে ইচ্ছুক। অবশ্য, এই মিশনরারিরা রাজ্যের সুসমাচার খুঁজে পাওয়ার জন্য ভ্রমণ করে না; তারা পৃথিবীর সবচেয়ে দূরবর্তী স্থানগুলোতে বসবাসরত লোকেদের কাছে এটি নিয়ে যাচ্ছে, তাদেরকে যিশু খ্রিস্টের শিষ্য হয়ে উঠতে শিক্ষা দিচ্ছে ও সাহায্য করছে। (মথি ২৮:১৯, ২০) অনেক দেশে, তাদের অস্বাভাবিক কষ্ট সহ্য করতে হয়। কিন্তু তাদের ধৈর্য প্রচুররূপে ফল উৎপন্ন করে থাকে।
৯, ১০. মধ্য আফ্রিকা প্রজাতন্ত্রের মতো দূরবর্তী জায়গাগুলোর মিশনারিরা কোন রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতাগুলো উপভোগ করে থাকে?
৯ উদাহরণস্বরূপ, মধ্য আফ্রিকা প্রজাতন্ত্রের উদাহরণ বিবেচনা করুন, যেখানে গত বছর খ্রিস্টের মৃত্যুর স্মরণার্থ সভায় উপস্থিতি ছিল ১৬,১৮৪ জন, যা সেই দেশের রাজ্য প্রকাশকদের চেয়ে প্রায় সাত গুণ বেশি। যেহেতু সেই দেশের অনেক জায়গায় বিদ্যুৎ সরবরাহ নেই, তাই লোকেরা সাধারণত ঘরের বাইরে গাছের ছায়ায় বসে তাদের দৈনন্দিন কাজকর্ম করে থাকে। অতএব, মিশনারিরাও সাধারণত একইভাবে তাদের কাজ করে থাকে—বাড়ির বাইরে এক ছায়াঘেরা গাছের নিচে বসে বাইবেল অধ্যয়ন করিয়ে থাকে। শুধুমাত্র বাইরে আলো ও ঠাণ্ডাই নয় সেইসঙ্গে আরেকটা সুবিধাও রয়েছে। বাইবেলের প্রতি লোকেদের সহজাত ভালবাসা রয়েছে এবং ধর্মীয় বিষয়গুলো আলোচনা করা খুবই সাধারণ। প্রায়ই, পথিকরা কী ঘটছে তা লক্ষ করে থাকে এবং তারাও স্বাভাবিকভাবে অধ্যয়নে যোগ দেয়।
১০ এভাবে, একজন মিশনারি যখন ঘরের বাইরে বসে বাইবেল অধ্যয়ন করাচ্ছিলেন, তখন রাস্তার ওপারে বসবাসরত একজন যুবক এগিয়ে আসে এবং বলে যে যেহেতু তার কাছে কেউ আসেনি, তাই সেই মিশনারির উচিত তার কাছে আসা এবং তাকেও বাইবেল অধ্যয়ন করানো। সেই মিশনারি অবশ্যই খুশিমনে রাজি হয়েছিলেন আর ওই যুবক এখন দ্রুত উন্নতি করছে। সেই দেশে পুলিশ প্রায়ই সাক্ষিদের রাস্তায় থামিয়ে থাকে, তবে তাদের ওপর কোনো সমন জারি করতে বা তাদের কাছ থেকে জরিমানা আদায় করতে নয় বরং প্রহরীদুর্গ ও সচেতন থাক! পত্রিকার নতুন সংখ্যা চাইতে এবং বিশেষভাবে তারা উপভোগ করেছে এমন কোনো প্রবন্ধের জন্য ধন্যবাদ জানাতে তাদেরকে তারা থামিয়ে থাকে।
১১. পরীক্ষাগুলো সত্ত্বেও, দীর্ঘসময়ের মিশনারিরা তাদের পরিচর্যা সম্বন্ধে কেমন বোধ করে থাকে?
১১ যারা ৪০ বা ৫০ বছর আগে মিশনারি পরিচর্যা শুরু করেছিল, তাদের মধ্যে অনেকে এখনও বিশ্বস্তভাবে ক্ষেত্রে সেবা করে চলেছে। আমাদের সকলের জন্য বিশ্বাস ও অধ্যবসায়ের কী এক উদাহরণ! বিগত ৪২ বছর ধরে, এক দম্পতি তিনটে দেশে মিশনারি হিসেবে সেবা করেছে। স্বামী বলেন: “সমস্যা এসেছে। উদাহরণস্বরূপ, আমরা ৩৫ বছর ধরে ম্যালেরিয়া রোগের সঙ্গে লড়াই করেছি। তা সত্ত্বেও, আমরা কখনও মিশনারি হওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য অনুশোচনা করিনি।” তার স্ত্রী আরও বলেন: “কৃতজ্ঞ হওয়ার অনেক কারণ সবসময়ই রয়েছে। ক্ষেত্রের পরিচর্যা হল এই ধরনের এক আনন্দ আর তাই বাইবেল অধ্যয়ন শুরু করা সহজ। আপনি যখন দেখেন যে, ছাত্র-ছাত্রীরা সভাগুলোতে আসে এবং একে অন্যের সঙ্গে পরিচিত হয়, তখন প্রত্যেক বার মনে হয় যেন পরিবারের সদস্যরা একত্রে মিলিত হচ্ছে।”
তারা ‘সকলই ক্ষতি বলিয়া গণ্য করে’
১২. রাজ্যের মূল্যের প্রতি প্রকৃত উপলব্ধি কীভাবে প্রকাশ করা হয়েছে?
১২ বণিক যখন একটা মহামূল্য মুক্তা খুঁজে পেয়েছিলেন, তখন তিনি সেটা ‘দেখিতে পাইয়া গিয়া [“অবিলম্বে,” NW] সর্ব্বস্ব বিক্রয় করিয়া তাহা ক্রয় করিয়াছিলেন।’ (মথি ১৩:৪৬) মূল্যবান হিসেবে সমাদৃত কিছুকে পরিত্যাগ করতে ইচ্ছুক মনোভাবই হচ্ছে সেই ব্যক্তিদের বৈশিষ্ট্য, যারা রাজ্যের মূল্যকে প্রকৃতই উপলব্ধি করে থাকে। খ্রিস্টের সঙ্গে রাজ্যের গৌরবের অংশী হওয়ার বিশেষ সুযোগ লাভ করবেন এমন একজন ব্যক্তি হিসেবে প্রেরিত পৌল বলেছিলেন: “বাস্তবিক আমার প্রভু খ্রীষ্ট যীশুর জ্ঞানের শ্রেষ্ঠতা প্রযুক্ত আমি সকলই ক্ষতি বলিয়া গণ্য করিতেছি; তাঁহার নিমিত্ত সমস্তেরই ক্ষতি সহ্য করিয়াছি, এবং তাহা মলবৎ গণ্য করিতেছি, যেন খ্রীষ্টকে লাভ করি।”—ফিলিপীয় ৩:৮.
১৩. চেক প্রজাতন্ত্রের একজন ব্যক্তি কীভাবে রাজ্যের জন্য তার ভালবাসা প্রদর্শন করেছিলেন?
১৩ একইভাবে, আজকে অনেকে রাজ্যের আশীর্বাদ লাভ করার জন্য তাদের জীবনে বড় বড় পরিবর্তন করতে ইচ্ছুক আছে। উদাহরণস্বরূপ, ২০০৩ সালের অক্টোবর মাসে, চেক প্রজাতন্ত্রের একটা স্কুলের ৬০ বছর বয়স্ক প্রধান শিক্ষক বাইবেল অধ্যয়ন সহায়ক জ্ঞান যা অনন্ত জীবনে পরিচালিত করে বইটি পান। এটি পড়ার পরই সঙ্গে সঙ্গে তিনি বাইবেল অধ্যয়ন করার জন্য তার এলাকার যিহোবার সাক্ষিদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তিনি উত্তম আধ্যাত্মিক অগ্রগতি করেন এবং শীঘ্রই সমস্ত সভাতে উপস্থিত হতে শুরু করেন। কিন্তু মেয়র পদে দাঁড়ানো এবং পরে রাজ্য সভার এক সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হওয়ার বিষয়ে তার পরিকল্পনা সম্বন্ধে কী বলা যায়? তিনি এক ভিন্ন লক্ষ্য—রাজ্য ঘোষণাকারী হিসেবে জীবনের লক্ষ্য—অনুধাবন করা বেছে নিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, “আমি আমার ছাত্র-ছাত্রীদের কাছে অনেক অনেক বাইবেল সাহিত্য অর্পণ করতে পেরেছিলাম।” তিনি ২০০৪ সালের জুলাই মাসের একটা সম্মেলনে জলে বাপ্তিস্ম নিয়ে যিহোবার কাছে তার উৎসর্গীকরণের প্রতীককে প্রকাশ করেছেন।
১৪. (ক) রাজ্যের সুসমাচার লক্ষ লক্ষ ব্যক্তিকে কী করতে পরিচালিত করেছে? (খ) আমরা প্রত্যেকে নিজেদের কোন গম্ভীর প্রশ্নগুলো জিজ্ঞেস করতে পারি?
১৪ সারা পৃথিবীতে অন্যান্য লক্ষ লক্ষ ব্যক্তি রাজ্যের সুসমাচারের প্রতি একইভাবে সাড়া দিয়েছে। তারা মন্দ জগৎ থেকে বেরিয়ে এসেছে, তাদের পুরনো ব্যক্তিত্বকে ত্যাগ করেছে, তাদের পূর্বের বন্ধুবান্ধবদের ছেড়ে এসেছে এবং জাগতিক অনুধাবনগুলোকে পরিত্যাগ করেছে। (যোহন ১৫:১৯; ইফিষীয় ৪:২২-২৪; যাকোব ৪:৪; ১ যোহন ২:১৫-১৭) কেন তারা এই সমস্ত করে? কারণ তারা এই বর্তমান বিধিব্যবস্থা দিতে পারে এমন সমস্তকিছুর ঊর্ধ্বে ঈশ্বরের রাজ্যের আশীর্বাদগুলোকে আরও অধিক মূল্যবান বলে গণ্য করে। রাজ্যের সুসমাচার সম্বন্ধে আপনিও কি একইরকম মনে করেন? আপনি কি আপনার জীবনধারা, মূল্যবোধ এবং লক্ষ্যগুলোকে যিহোবা যেভাবে চান, তার সঙ্গে মিল রাখার জন্য প্রয়োজনীয় পরিবর্তনগুলো করতে এটার দ্বারা প্রেরণা পেয়েছেন? তা করা আপনার জন্য এখন ও ভবিষ্যতে প্রচুর আশীর্বাদ নিয়ে আসবে।
শস্যচ্ছেদন চূড়ান্ত অবস্থায় পৌঁছাচ্ছে
১৫. শেষকালে ঈশ্বরের লোকেরা কী করবে বলে ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছিল?
১৫ গীতরচক লিখেছিলেন: “তোমার বিক্রম-দিনে তোমার প্রজাগণ স্বেচ্ছায় দত্ত উপহার হইবে।” যারা নিজেদের প্রদান করেছে তাদের অন্তর্ভুক্ত ‘শিশিরতুল্য যুবকেরা’ এবং ‘শুভবার্তার প্রচারিকাগণের মহাবাহিনী।’ (গীতসংহিতা ৬৮:১১; ১১০:৩) এই শেষকালে যিহোবার লোকেদের—নারী-পুরুষ, যুবক-বৃদ্ধ সকলের—অধ্যবসায় ও আত্মত্যাগের ফল কী হয়েছে?
১৬. ঈশ্বরের দাসেরা কীভাবে রাজ্য সম্বন্ধে শিখতে অন্যদের সাহায্য করার জন্য তাদের কাছে পৌঁছাচ্ছে, তার একটা উদাহরণ দিন।
১৬ ভারতে, একজন অগ্রগামী বা পূর্ণসময়ের রাজ্য ঘোষণাকারী বোন চিন্তা করেছিলেন যে, সেই দেশে কুড়ি লক্ষেরও বেশি বধির লোকেদের কীভাবে রাজ্য সম্বন্ধে জানতে সাহায্য করা যেতে পারে। (যিশাইয় ৩৫:৫) তিনি সাংকেতিক ভাষা শেখার জন্য একটা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। সেখানে তিনি অনেক বধির লোককে রাজ্যের আশা সম্বন্ধে জানাতে পেরেছিলেন ও বাইবেল অধ্যয়ন দল গড়ে উঠেছিল। অল্প কয়েক সপ্তাহের মধ্যে, প্রায় ১২ জনেরও বেশি লোক কিংডম হলের সভাতে আসতে শুরু করেছিল। পরে, একটা বিয়ের অনুষ্ঠানে সেই অগ্রগামীর সঙ্গে কলকাতার একজন বধির যুবকের দেখা হয়, যার মনে অনেক প্রশ্ন ছিল এবং সে যিহোবার সম্বন্ধে আরও জানার ব্যাপারে বেশ আগ্রহ দেখিয়েছিল। কিন্তু, একটা সমস্যা ছিল। সেই যুবকের কলেজে ভর্তি হওয়ার জন্য ১,৬০০ কিলোমিটার দূরে কলকাতায় ফিরে যাওয়ার কথা ছিল আর কলকাতায় সাংকেতিক ভাষা জানে এমন কোনো সাক্ষিও ছিল না। আপ্রাণ প্রচেষ্টা করে সে তার বাবাকে কলকাতার পরিবর্তে ব্যাঙ্গালোরেই একটা কলেজে পড়ার অনুমতি দিতে রাজি করায়, যাতে সে তার বাইবেল অধ্যয়ন চালিয়ে যেতে পারে। সে উত্তম আধ্যাত্মিক অগ্রগতি করে আর প্রায় এক বছর পর সে যিহোবার কাছে তার জীবন উৎসর্গ করে। ফলস্বরূপ, সে বেশ কয়েক জন বধির লোকের সঙ্গে বাইবেল অধ্যয়ন করে, যার মধ্যে তার ছেলেবেলার এক বন্ধুও রয়েছে। ভারতের শাখা অফিস এখন অগ্রগামীদের সাংকেতিক ভাষা শেখার জন্য ব্যবস্থা করছে, যাতে তারা এই ক্ষেত্রটাতে সাহায্য করতে পারে।
১৭. এই পত্রিকার ১৯ থেকে ২২ পৃষ্ঠায় দেওয়া ২০০৪ পরিচর্যা বছরের রিপোর্ট সম্বন্ধে কোন বিষয়টা আপনার কাছে বিশেষভাবে উৎসাহজনক মনে হয়, তা বর্ণনা করুন।
১৭ এই পত্রিকার ১৯ থেকে ২২ পৃষ্ঠায় আপনি পৃথিবীব্যাপী যিহোবার সাক্ষিদের ২০০৪ পরিচর্যা বছরের ক্ষেত্রের কাজের রিপোর্ট দেখতে পাবেন। এটা পরীক্ষা করার জন্য একটু সময় করে নিন এবং আজকে যিহোবার লোকেরা যে সারা পৃথিবীতে ‘মহামূল্য মুক্তার’ অনুধাবনের ওপর তাদের দৃষ্টিকে পুরোপুরিভাবে কেন্দ্রীভূত রেখেছে, নিজের চোখে সেটার প্রমাণ দেখুন।
‘প্রথমে রাজ্যের বিষয় চেষ্টা করিয়া’ চলুন
১৮. বণিকের নীতিগল্পে যিশু কোন তথ্য অন্তর্ভুক্ত করেননি এবং কেন করেননি?
১৮ যিশুর বলা বণিকের দৃষ্টান্তে আরেকবার ফিরে গিয়ে আমরা দেখতে পাই যে, সেই বণিক তার যা কিছু ছিল সমস্তই বিক্রি করার পর তিনি কীভাবে তার ভরণপোষণ জোগাবেন, সেই বিষয়ে যিশু কোনোকিছুই বলেননি। স্বাভাবিকভাবেই কেউ কেউ হয়তো জিজ্ঞেস করতে পারে: ‘যেহেতু সেই বণিকের এখন কোনো সঞ্চয়ই নেই, তা হলে কীভাবে তিনি খাদ্য, বস্ত্র ও বাসস্থান লাভ করবেন? সেই মূল্যবান মুক্তা তার জন্য কোন উপকারই বা নিয়ে আসবে?’ মাংসিক দৃষ্টিকোণ থেকে সেগুলোকে যুক্তিসংগত প্রশ্ন বলে মনে হবে। কিন্তু, যিশু কি তাঁর শিষ্যদের জোরালোভাবে এই অনুরোধ করেননি যে: “কিন্তু তোমরা প্রথমে তাঁহার রাজ্য ও তাঁহার ধার্ম্মিকতার বিষয়ে চেষ্টা কর, তাহা হইলে ঐ সকল দ্রব্যও তোমাদিগকে দেওয়া হইবে”? (মথি ৬:৩১-৩৩) নীতিগল্পের মূল বিষয়টা হচ্ছে, ঈশ্বরের প্রতি সর্বান্তঃকরণ ভক্তি ও রাজ্যের জন্য উদ্যোগ প্রদর্শন করা প্রয়োজন। এটার মধ্যে কি আমাদের জন্য কোনো শিক্ষা রয়েছে?
১৯. মহামূল্য মুক্তা সম্বন্ধে যিশুর নীতিগল্প থেকে আমরা কোন মূল শিক্ষা লাভ করতে পারি?
১৯ আমরা চমৎকার সুসমাচার সম্বন্ধে সবেমাত্র জেনে থাকি বা দশকের পর দশক ধরে রাজ্যের অনুধাবন করছি ও অন্যদের এর আশীর্বাদগুলোর বিষয়ে বলে আসছি, যা-ই হোক না কেন, আমাদের অবশ্যই রাজ্যকে সবসময় আমাদের আগ্রহ ও মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দু করতে হবে। বর্তমান সময় হচ্ছে কঠিন সময় কিন্তু আমাদের এইরকম বিশ্বাস করার দৃঢ় কারণ রয়েছে যে, আমরা যেটার অনুধাবন করছি সেটা হচ্ছে বাস্তব এবং অতুলনীয়—ঠিক সেই মুক্তার মতো, যা বণিক খুঁজে পেয়েছিলেন। জগতের ঘটনা ও বাইবেলের পরিপূর্ণ ভবিষ্যদ্বাণীগুলো এই বিষয়ে দৃঢ়প্রত্যয় উৎপাদক প্রমাণ জোগায় যে, আমরা ‘যুগান্তে’ বাস করছি। (মথি ২৪:৩) তাই, সেই বণিকের মতো আসুন আমরা ঈশ্বরের রাজ্যের প্রতি সর্বান্তঃকরণ উদ্যোগ দেখাই ও সুসমাচার ঘোষণা করার বিশেষ সুযোগের জন্য আনন্দ করি।—গীতসংহিতা ৯:১, ২.
-