পাঠকদের থেকে প্রশ্নসকল
অনেক যিহোবার সাক্ষী বিবাহ বার্ষিকী পালন করেন। জন্মদিনও, যে দিন আপনি জন্মেছিলেন তার বার্ষিকী। তাহলে তারা কেন বিবাহ বার্ষিকী উদ্যাপন করেন কিন্তু জন্মদিন নয়?
খোলাখুলিভাবে বলতে গেলে, খ্রীষ্টানদের কোনটিই উদ্যাপন করার প্রয়োজন নেই। তবুও, এর অর্থ এই নয় যে দুটি অনুষ্ঠানের তাৎপর্য একই অথবা খ্রীষ্টানেরা জন্মদিনকে যেভাবে দেখেন, বিবাহ বার্ষিকীকেও তাদের সেইভাবেই দেখা উচিত।
যেমন উল্লেখ করা হয়েছে, এটি বলা যেতে পারে যে উভয়ই বার্ষিকী কারণ একটি “বার্ষিকী” হল ‘কোন ঘটনাকে চিহ্নিত করে একটি তারিখের বাৎসরিক পুনরুদয়।’ যে কোন ঘটনার বার্ষিকী হতে পারে—যে দিনে আপনার দুর্ঘটনা ঘটেছিল, যে দিনে আপনি চন্দ্রগ্রহণ দেখেছিলেন, যে দিনে আপনি আপনার পরিবারের সঙ্গে সাঁতার কাটতে গিয়েছিলেন এবং এইধরনের আরও কোন ঘটনার। এটি স্পষ্ট যে, খ্রীষ্টানেরা সমস্ত “বার্ষিকী”-কে একটি বিশেষ দিন হিসাবে গণ্য করেন না বা তা স্মরণ করার জন্য কোন জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠান করেন না। একজনের কোন একটি ঘটনার বিভিন্ন দিকগুলি বিবেচনা করা এবং যা উপযুক্ত সেটি স্থির করা উচিত।
উদাহরণস্বরূপ, ঈশ্বর ইস্রায়েলীয়দের নির্দিষ্টভাবে প্রতি বছর সেই দিনটি উদ্যাপন করার নির্দেশ দিয়েছিলেন, যে দিনে তিনি মিশরে ইস্রায়েলদের ঘরে ঘরে তাঁর স্বর্গদূত প্রেরণ করেছিলেন এবং ফলস্বরূপ তাঁর লোকেরা সা.কা.পূ. ১৫১৩ সালে মিশর থেকে যাত্রা করেছিল। (যাত্রাপুস্তক ১২:১৪) পরবর্তীকালে, ঈশ্বরের নির্দেশের প্রতি বাধ্যতা দেখিয়ে যিহূদীরা ও যীশু এই ঘটনার বার্ষিকী পালন করতেন আর এটি করার সময় তারা কোন জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠান বা উপহার দেওয়া নেওয়া করেননি। এছাড়াও, যিহূদীরা মন্দির পুনরুৎসর্গীকরণকে একটি বিশেষ বার্ষিকী হিসাবে দেখতেন। বাইবেলে কোথাও এই ঐতিহাসিক ঘটনাটিকে স্মরণ করার আদেশ দেওয়া হয়নি কিন্তু যোহন ১০:২২, ২৩ পদ বলে যে যীশু এটি পালন করার জন্য সমালোচনা করেননি। পরিশেষে, খ্রীষ্টানেরা যীশুর মৃত্যু বার্ষিকী উদ্যাপন করা শুরু করেন। আর অবশ্যই, ঈশ্বরের বাক্যে পাওয়া এক স্পষ্ট আদেশের প্রতি বাধ্য হয়ে তারা এটি করেন।—লূক ২২:১৯, ২০.
বিবাহ বার্ষিকী সম্বন্ধে কী বলা যায়? কিছু দেশে এটি সার্বজনীন যে স্বামী এবং স্ত্রী তাদের বিবাহ বার্ষিকী পালন করে থাকেন, যে বিবাহের উদ্যোক্তা ঈশ্বর নিজে। (আদিপুস্তক ২:১৮-২৪; মথি ১৯:৪-৬) অবশ্যই, বাইবেল বলে না যে বিবাহ করা খারাপ। যীশু এক বিবাহ অনুষ্ঠানে গিয়েছিলেন ও সেই অনুষ্ঠানের আনন্দকে বাড়িয়ে তুলতে অবদান রেখেছিলেন।—যোহন ২:১-১১.
অতএব, এটি আশ্চর্যের বিষয় হবে না যে এক দম্পতি তাদের বিবাহ বার্ষিকীতে, সেই ঘটনার আনন্দকে বিবেচনা করতে এবং এক দম্পতি হিসাবে সাফল্যের সঙ্গে কাজ করার সংকল্পকে সতেজ করতে একত্রে সময় অতিবাহিত করবেন। এখন তারা এই আনন্দময় ঘটনাকে একান্তে, কেবল দুজনে অথবা তাদের কিছু আত্মীয় ও ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের নিয়ে উদ্যাপন করবেন এটি তাদের নিজস্ব সিদ্ধান্ত। অনুষ্ঠানটি একটি বৃহৎ সামাজিক সমাবেশের মতো হওয়া উচিত নয়। ওই অনুষ্ঠানে খ্রীষ্টানেরা সেই নীতিগুলি দ্বারা পরিচালিত হতে চাইবেন যা তাদের প্রতিদিনের জীবনের জন্য প্রযোজ্য। অতএব, একজন ব্যক্তি বিবাহ বার্ষিকী উদ্যাপন করবেন কী করবেন না, সেটি তার ব্যক্তিগত ব্যাপার।—রোমীয় ১৩:১৩, ১৪.
কিন্তু, জন্মদিনকে একটি বিশেষ দিন হিসাবে গণ্য করা সম্বন্ধে কী? আর এইধরনের কোন বার্ষিকী উদ্যাপন করার বিষয়ে বাইবেল কি কিছু বলে?
এই শতাব্দীর প্রথমদিকে, বাইবেল ছাত্ররা, তখন যিহোবার সাক্ষীরা যে নামে পরিচিত ছিলেন, জন্মদিনকে স্মরণ করতেন। তাদের মধ্যে অনেকে প্রতিদিনের স্বর্গীয় মান্না (ইংরাজি) নামের ছোট বইগুলি সঙ্গে রাখতেন। এইগুলিতে প্রত্যেক দিনের জন্য একটি বাইবেলের পদ থাকত এবং অনেক খ্রীষ্টান তাদের সঙ্গী বাইবেল ছাত্রদের ছোট ছোট ছবি তাদের জন্মদিন অনুযায়ী সেই পৃষ্ঠাগুলিতে রাখতেন। এছাড়াও ১৯০৯ সালের ১৫ই ফেব্রুয়ারি সংখ্যার প্রহরীদুর্গ (ইংরাজি) বর্ণনা করেছিল যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার জ্যাকসনভিলের একটি সম্মেলনে সোসাইটির তৎকালীন সভাপতি ভাই রাসেলকে প্ল্যাটফর্মে আহ্বান করা হয়েছিল। কেন? তাকে বাতাবিলেবু, আনারস এবং কমলালেবুর কিছু বাক্স তার জন্মদিনের উপহার হিসাবে দিয়ে তাকে অবাক করে দেওয়া হয়েছিল। এটি আমাদের অতীত সম্বন্ধে কিছু ধারণা দিয়ে থাকে। প্রসঙ্গক্রমে স্মরণ করুন যে, সেই সময়ে বাইবেল ছাত্রেরা ২৫শে ডিসেম্বরকে যীশুর জন্ম বার্ষিকী অথবা জন্মদিন হিসাবে পালন করতেন। এমনকি ব্রুকলিনের প্রধান কার্যালয়ে প্রথাগতভাবে বড়দিনের ভোজও পরিবেশন করা হতো।
অবশ্যই, তারপর থেকে ঈশ্বরের লোকেরা বিভিন্ন বিষয়ে আধ্যাত্মিকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছেন। ১৯২০-র দশকে সত্যের জ্যোতি তাদের নিম্নোক্ত বিষয়গুলি দেখতে সমর্থ করেছিল:
যীশু ২৫শে ডিসেম্বর জন্মগ্রহণ করেননি, এই তারিখটি পৌত্তলিক ধর্মের সঙ্গে যুক্ত। বাইবেল আমাদের যীশুর মৃত্যুর দিন স্মরণ করতে বলে, তাঁর অথবা অন্য কারও জন্ম বার্ষিকী নয়। এটি করা উপদেশক ৭:১ পদের সঙ্গে মিল রাখে আর তা দেখায় যে কিভাবে একজন বিশ্বস্ত ব্যক্তির জীবনের শেষ তার জন্মদিনের চেয়ে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। বাইবেলে কোন বিশ্বস্ত সেবকের জন্মদিন উদ্যাপন করার বিবরণ নেই। এটি পৌত্তলিকদের জন্মদিন পালন সম্বন্ধে লিপিবদ্ধ করে আর এই অনুষ্ঠানগুলিতে যে নিষ্ঠুর কাজ করা হয়েছিল সেগুলি সম্বন্ধে জানায়। আসুন আমরা এই জন্ম বার্ষিকীগুলির পটভূমি দেখি।
প্রথম জন্মদিনটি হল যোষেফের দিনে ফরৌণের জন্মদিন উৎসব। (আদিপুস্তক ৪০:২০-২৩) এই সম্বন্ধে, হেস্টিংসের ধর্ম ও নীতিশাস্ত্রের বিশ্বকোষ (ইংরাজি)-এ জন্মদিনের উপর প্রবন্ধটি এইভাবে শুরু হয়: “যদিও জন্মের দিনটিকে গুরুত্ব দেওয়াই ছিল জন্মদিন পালনের প্রথার উদ্দেশ্য কিন্তু জন্মদিনে যে অনুষ্ঠানগুলি করা হত সেগুলি এসেছিল পৌত্তলিক ধর্ম থেকে।” পরে, বিশ্বকোষটি মিশরীয় পুরাতত্ত্ববিদ স্যার জে. গার্ডনার উইলকিনসানের কথা উদ্ধৃত করে যিনি লিখেছিলেন: “প্রত্যেক মিশরীয় তার জন্মের দিনটির প্রতি, এমনকি তার জন্মের সময়ের প্রতি খুব বেশি গুরুত্ব দিতেন; আর সম্ভবত পারস্যের মতো, এখানেও প্রত্যেক ব্যক্তি অত্যন্ত আনন্দের সঙ্গে তার জন্মদিন পালন করতেন, যখন সবরকম আমোদপ্রমোদ করা হতো, তারা তাদের বন্ধুবান্ধবদের নিয়ে মজা করতেন আর প্রচুর পরিমাণে রুচিকর বিশেষ খাবার পরিবেশন করা হতো।
বাইবেলে আরেকটি জন্মদিন উৎসব সম্বন্ধে উল্লেখ করে আর সেটি হল হেরোদের জন্মদিন, যে দিনটিতে যোহন বাপ্তাইজকের মস্তকছেদন করা হয়েছিল। (মথি ১৪:৬-১০) আন্তর্জাতিক আদর্শ বাইবেল বিশ্বকোষ (১৯৭৯ সংস্করণ) (ইংরাজি) আমাদের জানায় যে: “আলেকজান্ডারের সময়ের পূর্ববর্তী গ্রিকেরা দেবতা এবং বিশিষ্ট ব্যক্তিদের জন্মদিন পালন করতেন। এই উৎসবকে গ্রিক ভাষায় জেনেথ্লিয়া বলা হত কারণ জেনিসিয়া শব্দের অর্থ একজন বিশিষ্ট মৃত ব্যক্তির জন্মদিন স্মরণ করার অনুষ্ঠান। ২ ম্যাকাবীস ৬:৭-এ আমরা অ্যান্টিওকাস ৪র্থ এর মাসিক জেনিথলিয়া-র একটি উল্লেখ দেখতে পাই, যে সময়ে যিহূদীদের ‘বলিদানে অংশ গ্রহণ’ করার জন্য জোর করা হয়েছিল। যখন হেরোদ তার জন্মদিন পালন করছিলেন তখন তিনি আলেকজান্ডারের পরবর্তী গ্রিক সংস্কৃতিকে অনুকরণ করে তা করেছিলেন; কিন্তু আলেকডান্ডারের পূর্ববর্তী সময়ের ইস্রায়েলীয়রা জন্মদিন পালন করতেন বলে কোন প্রমাণ পাওয়া যায় না।”
এটি স্বীকার্য যে, আজকের দিনে সত্য খ্রীষ্টানেরা সমস্ত অভ্যাস অথবা প্রথার উৎস আর সম্ভবত কোন্ প্রাচীন ধর্মের সঙ্গে এর যোগ আছে সে বিষয়ে অত্যধিক উদ্বিগ্ন নন। আবার তারা ঈশ্বরের বাক্য বাইবেলে দেওয়া যথাযথ নির্দেশকে উপেক্ষাও করেন না। এটি দেখায় যে বাইবেলে যে সমস্ত জন্মদিন পালনের বিবরণ পাওয়া যায়, সেগুলি পরজাতীয়েরা পালন করেছিলেন আর সেইসময় নিষ্ঠুর কাজগুলি করা হয়েছিল। তাই, স্পষ্টতই শাস্ত্র জন্মদিন পালনকে অনুমোদন করে না এবং প্রকৃত খ্রীষ্টানেরা তার সঙ্গে দ্বিমত নন।
সুতরাং, খ্রীষ্টানেরা বিবাহ বার্ষিকী পালন করবেন কি করবেন না তা স্থির করা তাদের নিজস্ব ব্যাপার হলেও, পরিপক্ব খ্রীষ্টানেরা কেন জন্মদিন পালন করবেন না তার উপযুক্ত কারণ রয়েছে।