অধ্যয়ন প্রবন্ধ ৯
গান ৭৫ হে প্রভু! আমাকে পাঠাও!
আপনি কি যিহোবার কাছে নিজের জীবন উৎসর্গ করার জন্য প্রস্তুত?
“আমি সদাপ্রভু হইতে যে সকল মঙ্গল পাইয়াছি, তাহার পরিবর্ত্তে তাঁহাকে কি ফিরাইয়া দিব?”—গীত. ১১৬:১২.
আমরা কী শিখব?
এই প্রবন্ধে বলা হবে, আপনি যিহোবার প্রতি আপনার ভালোবাসা কীভাবে বাড়াতে পারেন। এটা করার ফলে, আপনি যিহোবার কাছে নিজের জীবন উৎসর্গ করতে এবং বাপ্তিস্ম নিতে চাইবেন।
১-২. বাপ্তিস্ম নেওয়ার আগে কী করা গুরুত্বপূর্ণ?
বিগত পাঁচ বছরে দশ লক্ষেরও বেশি লোক বাপ্তিস্ম নিয়েছে এবং যিহোবার সাক্ষি হয়েছে। তাদের মধ্যে অনেকে তীমথিয়ের মতো ছোটোবেলায় সত্য শিখেছে। (২ তীম. ৩:১৪, ১৫) কিছু লোক বড়ো হওয়ার পর সত্য শিখেছে। আবার অনেকে বয়স্ক হয়ে যাওয়ার পর সত্য শিখেছে। যেমন, কয়েক বছর আগে ৯৭ বছর বয়সি একজন মহিলা বাপ্তিস্ম নিয়েছেন এবং যিহোবার সাক্ষি হয়েছেন।
২ আপনি যদি একজন বাইবেল ছাত্র হয়ে থাকেন কিংবা আপনি যদি আপনার বাবা-মায়ের কাছে বাইবেল অধ্যয়ন করেন, তা হলে আপনি কি বাপ্তিস্ম নেওয়ার কথা চিন্তা করেছেন? যদি চিন্তা করে থাকেন, তা হলে আপনি সত্যিই একটা দারুণ পদক্ষেপ নেওয়ার কথা ভেবেছেন। কিন্তু, বাপ্তিস্ম নেওয়ার আগে যিহোবার কাছে নিজের জীবন উৎসর্গ করা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। এই প্রবন্ধে আপনি জানতে পারবেন, নিজের জীবন উৎসর্গ করার মানে কী এবং কীভাবে এটা করা যেতে পারে। এই প্রবন্ধে আপনি এটাও জানতে পারবেন, আপনি যদি যিহোবার কাছে নিজের জীবন উৎসর্গ করার এবং বাপ্তিস্ম নেওয়ার জন্য প্রস্তুত থাকেন, তা হলে কেন আপনার সেটা থেকে পিছিয়ে যাওয়া উচিত নয়।
নিজের জীবন উৎসর্গ করার মানে কী?
৩. এমন কিছু লোকের বিষয়ে বলুন, যারা যিহোবার কাছে উৎসর্গীকৃত ছিল।
৩ বাইবেলে বলা হয়েছে, অতীতে যে-লোকেরা যিহোবার কাছে নিজেদের জীবন উৎসর্গ করেছিল, তাদের একটা বিশেষ উদ্দেশ্যের জন্য আলাদা করা হয়েছিল। যেমন, ইজরায়েল জাতি যিহোবার কাছে উৎসর্গীকৃত ছিল। কিন্তু, সেই জাতির কিছু লোককে একটা বিশেষ উপায়ে যিহোবার জন্য আলাদা করা হয়েছিল। তাদের মধ্যে একজন ছিলেন হারোণ। তিনি একটা পাগড়ি পড়তেন, যেটার উপরে সোনার পাতের পবিত্র মুকুট ছিল। সেই মুকুট উৎসর্গীকরণের পবিত্র চিহ্ন ছিল। সোনার মুকুট থেকে এটা বোঝা যেত, হারোণকে একটা বিশেষ সেবার জন্য আলাদা করা হয়েছে অর্থাৎ তিনি ইজরায়েলের মহাযাজক। (লেবীয়. ৮:৯) নাসরীয়েরাও একটা বিশেষ উদ্দেশ্যের জন্য যিহোবার কাছে উৎসর্গীকৃত ছিল। “নাসরীয়” একটা ইব্রীয় শব্দ, যেটার মানে হল, “আলাদা করে রাখা” কিংবা “উৎসর্গ করে রাখা।” মোশির ব্যবস্থায় নাসরীয়দের জন্য কিছু বিশেষ নির্দেশনা ছিল, যেগুলো তাদের মেনে চলতে হত।—গণনা. ৬:২-৮.
৪. (ক) যে-লোকেরা নিজেদের জীবন যিহোবার কাছে উৎসর্গ করে, তারা কোন বিশেষ উদ্দেশ্য নিয়ে বেঁচে থাকে? (খ) নিজেকে অস্বীকার করার মানে কী? (ছবিও দেখুন।)
৪ যিহোবার কাছে নিজের জীবন উৎসর্গ করার পর আপনি এক বিশেষ উদ্দেশ্য নিয়ে বেঁচে থাকেন। সেটা কী? আপনি যিশু খ্রিস্টের শিষ্য হয়ে ওঠেন এবং ঈশ্বরের ইচ্ছা পালন করা আপনার কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে যায়। যে-লোকেরা যিশু খ্রিস্টের শিষ্য হয়, তাদের কাছ থেকে কী আশা করা হয়? যিশু বলেছিলেন, “কেউ যদি আমাকে অনুসরণ করতে চায়, তা হলে সে নিজেকে অস্বীকার করুক।” (মথি ১৬:২৪) এর মানে হল, আপনি যখন যিহোবার কাছে আপনার জীবন উৎসর্গ করবেন, তখন আপনাকে এমন কাজ করা প্রত্যাখ্যান করতে হবে, যেগুলো যিহোবা পছন্দ করেন না। (২ করি. ৫:১৪, ১৫) যেমন, ‘পাপপূর্ণ স্বভাবের কাজ’ অর্থাৎ যৌন অনৈতিকতার মতো খারাপ কাজ। (গালা. ৫:১৯-২১; ১ করি. ৬:১৮) এই সমস্ত কিছু চিন্তা করে আপনার কি এমনটা মনে হচ্ছে যে, আপনি চার দেওয়ালে বন্দি হয়ে যাবেন? আপনি যদি যিহোবাকে ভালোবাসেন, তা হলে আপনি এমনটা মনে করবেন না বরং আপনি নিশ্চিত থাকবেন, যিহোবার আইনকানুন মেনে চললে আপনারই ভালো হবে। (গীত. ১১৯:৯৭; যিশা. ৪৮:১৭, ১৮) এই বিষয়ে নিকোলাস নামে একজন ভাই বলেন, “আপনি চাইলে যিহোবার মানগুলোকে জেলের মতো মনে করতে পারেন, যেটার মধ্যে আপনি বন্দি রয়েছেন। অথবা আপনি এটাকে একটা সিংহের খাঁচার মতো মনে করতে পারেন, যেটার কারণে আপনি সুরক্ষিত আছেন।”
৫. (ক) আপনি কীভাবে নিজের জীবন যিহোবার কাছে উৎসর্গ করতে পারেন? (খ) নিজের জীবন উৎসর্গ করা এবং বাপ্তিস্ম নেওয়ার মধ্যে কোন পার্থক্য রয়েছে? (ছবিও দেখুন।)
৫ আপনি কীভাবে নিজের জীবন যিহোবার কাছে উৎসর্গ করতে পারেন? আপনি এক বিশেষ প্রার্থনা করতে পারেন এবং তাঁর কাছে প্রতিজ্ঞা করতে পারেন যে, এখন থেকে আপনি শুধুমাত্র তাঁর উপাসনা করবেন এবং তাঁর ইচ্ছাকেই নিজের জীবনে প্রথম স্থান দেবেন। এক অর্থে আপনি তাঁর কাছে এই প্রতিজ্ঞা করছেন, আপনি ‘সমস্ত হৃদয়, সমস্ত প্রাণ, সমস্ত মন এবং সমস্ত শক্তি দিয়ে আপনার ঈশ্বর যিহোবাকে ভালোবাসবেন।’ (মার্ক ১২:৩০) আপনি যখন নিজের জীবন উৎসর্গ করেন, তখন আপনি ব্যক্তিগতভাবে সেটা করে থাকেন। এটা শুধুমাত্র আপনার এবং যিহোবার মধ্যে একটা ব্যক্তিগত বিষয়। কিন্তু, বাপ্তিস্ম সবার সামনে নেওয়া হয়। এর মাধ্যমে লোকেরা জানতে পারবে, আপনি নিজের জীবন যিহোবার কাছে উৎসর্গ করেছেন। নিজের জীবন উৎসর্গ করা হল, যিহোবার কাছে করা একটা বিশেষ প্রতিজ্ঞা। আপনি নিশ্চয়ই আপনার এই প্রতিজ্ঞা অনুসারে জীবনযাপন করতে চাইবেন এবং যিহোবাও আপনার কাছ থেকে এটাই আশা করেন।—উপ. ৫:৪, ৫.
কেন যিহোবার কাছে নিজের জীবন উৎসর্গ করবেন?
৬. যিহোবার কাছে নিজের জীবন উৎসর্গ করার সবচেয়ে বড়ো কারণ কী?
৬ কেন আপনি নিজের জীবন যিহোবার কাছে উৎসর্গ করবেন? এর সবচেয়ে বড়ো কারণ হল, আপনি যিহোবাকে ভালোবাসেন। আপনি এমনি এমনিই তাঁকে ভালোবাসেন না। আপনি তাঁর সম্বন্ধে ‘সঠিক জ্ঞান’ এবং “পবিত্র শক্তির মাধ্যমে বোঝার ক্ষমতা” লাভ করেন আর তাঁর উদ্দেশ্য সম্বন্ধে জানতে পারেন। এভাবে তাঁর প্রতি আপনার ভালোবাসা বাড়তে থাকে। (কল. ১:৯) ভালোভাবে অধ্যয়ন করলে আপনি নিশ্চিত হবেন, (১) যিহোবা সত্যিই আছেন, (২) যিহোবা বাইবেল লিখিয়েছেন আর (৩) তিনি তাঁর সংগঠনের মাধ্যমে নিজের উদ্দেশ্য পূরণ করছেন।
৭. ঈশ্বরের কাছে নিজের জীবন উৎসর্গ করার জন্য কী করা গুরুত্বপূর্ণ?
৭ যিহোবার কাছে নিজের জীবন উৎসর্গ করার জন্য একজন ব্যক্তি বাইবেলের মৌলিক শিক্ষাগুলো শেখেন এবং যিহোবার মান অনুযায়ী চলেন। শুধু তা-ই নয়, তিনি যতটা সম্ভব অন্যদেরও এই বিষয়ে বলেন। (মথি ২৮:১৯, ২০) এমনটা করার মাধ্যমে ধীরে ধীরে যিহোবার প্রতি তার ভালোবাসা এতটাই বেড়ে যায় যে, তিনি শুধুমাত্র তাঁর উপাসনা করতে চান। আপনিও কি তা-ই অনুভব করেন? আপনি যদি সত্যিই মন থেকে যিহোবাকে ভালোবেসে থাকেন, তা হলে আপনি আপনার বাবা-মা অথবা বাইবেল শিক্ষককে খুশি করার জন্য নিজের জীবন উৎসর্গ করবেন না আর এমনকী আপনার বন্ধুদের দেখাদেখিও তা করবেন না। এর পরিবর্তে, যিহোবার প্রতি ভালোবাসা থাকার কারণে আপনি এই পদক্ষেপ নেবেন।
৮. কোন বিষয় নিয়ে চিন্তা করলে আপনি যিহোবার কাছে নিজের জীবন উৎসর্গ করতে চাইবেন? (গীতসংহিতা ১১৬:১২-১৪)
৮ আপনি যখন চিন্তা করবেন, যিহোবা আপনার জন্য কত কিছু করেছেন, তখন তাঁর কাছে নিজের জীবন উৎসর্গ করা থেকে আপনি নিজেকে আটকাতে পারবেন না। (পড়ুন, গীতসংহিতা ১১৬:১২-১৪.) বাইবেলে লেখা আছে, “সমস্ত উত্তম ও নিখুঁত দান” যিহোবার কাছ থেকে আসে। (যাকোব ১:১৭) যিহোবার দেওয়া কোন উপহার আমাদের জন্য সবচেয়ে বেশি মূল্যবান? তাঁর পুত্র যিশু খ্রিস্টের মুক্তির মূল্য। একটু চিন্তা করুন, মুক্তির মূল্যের কারণে কত কিছু সম্ভব হয়েছে। আপনি যিহোবার সঙ্গে এক ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তুলতে পেরেছেন এবং অনন্তজীবনের এক অপূর্ব আশা লাভ করেছেন। (১ যোহন ৪:৯, ১০, ১৯) এর চেয়ে বড়ো ভালোবাসার প্রমাণ আর কি কিছু হতে পারে? আপনি যদি এই বিষয়ে এবং যিহোবার দেওয়া সমস্ত আশীর্বাদ নিয়ে চিন্তা করেন, তা হলে আপনার হৃদয় কৃতজ্ঞতায় ভরে যাবে এবং আপনি নিজের জীবন যিহোবার কাছে উৎসর্গ করতে চাইবেন। (দ্বিতীয়. ১৬:১৭; ২ করি. ৫:১৫) আপনি চিরকাল জীবন উপভোগ করুন! বইয়ের পাঠ ৪৬-এর বিষয় ৪ পড়ার মাধ্যমে এই ব্যাপারে অনেক কিছু জানতে পারবেন। সেখানে দেওয়া তিন মিনিটের একটা ভিডিও দেখুন, যেটার বিষয় হল, “আমরা ঈশ্বরকে কোন উপহার দিতে পারি?”
আপনি কি নিজের জীবন উৎসর্গ করতে এবং বাপ্তিস্ম নিতে প্রস্তুত?
৯. বাপ্তিস্ম নেওয়ার ক্ষেত্রে কেন একজন ব্যক্তির অন্যদের সঙ্গে নিজের তুলনা করা উচিত নয়?
৯ আপনার হয়তো মনে হয়, আপনি এখন নিজের জীবন উৎসর্গ করার এবং বাপ্তিস্ম নেওয়ার জন্য প্রস্তুত নন। আপনাকে হয়তো নিজের জীবনে আরও কিছু পরিবর্তন করতে হবে অথবা নিজের বিশ্বাস বাড়ানোর জন্য আপনার আরও সময়ের প্রয়োজন। (কল. ২:৬, ৭) মনে রাখবেন, প্রত্যেক ছাত্র আলাদা। কেউ কেউ হয়তো খুব তাড়াতাড়ি যিহোবাকে ভালোবাসতে পারে। আবার অনেকের পক্ষে এটা করার জন্য একটু সময় লাগতে পারে। প্রত্যেক অল্পবয়সি আলাদা আলাদা বয়সে নিজের জীবন উৎসর্গ করে এবং বাপ্তিস্ম নেয়। তাই, অন্যদের সঙ্গে নিজের তুলনা করবেন না বরং এটা দেখার চেষ্টা করুন যে, আপনাকে নিজের মধ্যে কোন কোন পরিবর্তন করতে হবে আর সেগুলো করুন।—গালা. ৬:৪, ৫.
১০. আপনার যদি মনে হয়, আপনি এখন নিজের জীবন উৎসর্গ করার এবং বাপ্তিস্ম নেওয়ার জন্য প্রস্তুত নন, তা হলে আপনি কী করতে পারেন? (এ ছাড়া, “যারা ছোটো থেকেই সত্য শিখেছে” বক্স দেখুন।)
১০ কিন্তু এরপরও যদি আপনার মনে হয়, আপনি এখন নিজের জীবন উৎসর্গ করার এবং বাপ্তিস্ম নেওয়ার জন্য প্রস্তুত নন, তা হলে হাল ছেড়ে দেবেন না। এই লক্ষ্য অর্জন করার জন্য প্রচেষ্টা করে চলুন এবং নিজের মধ্যে প্রয়োজনীয় পরিবর্তন করার জন্য যিহোবার কাছে সাহায্য চেয়ে প্রার্থনা করুন। (ফিলি. ২:১৩; ৩:১৬) নিশ্চিত থাকুন, তিনি আপনার প্রার্থনা শুনবেন এবং আপনাকে সাহায্য করবেন।—১ যোহন ৫:১৪.
কেন কেউ কেউ নিজেদের জীবন উৎসর্গ করতে দোনোমনো করে?
১১. বিশ্বস্ত থাকার জন্য যিহোবা কীভাবে আমাদের সাহায্য করবেন?
১১ কিছু লোক বাপ্তিস্ম নেওয়ার জন্য প্রস্তুত থাকে, কিন্তু তারপরও তারা এই পদক্ষেপ নেওয়ার ক্ষেত্রে দোনোমনো করে। তারা হয়তো চিন্তা করে, ‘আমি যদি কোনো ভুল করে ফেলি এবং মণ্ডলী থেকে আমাকে বের করে দেওয়া হয়, তা হলে কী হবে?’ আপনারও যদি এমনটা মনে হয়, তা হলে চিন্তা করবেন না। নিশ্চিত থাকুন, ‘যিহোবা যেভাবে চান, সেই অনুযায়ী চলে তাঁকে পুরোপুরি খুশি’ করার জন্য তিনি আপনাকে সাহায্য করবেন। (কল. ১:১০) যিহোবা যেমন তাঁর অনেক সেবককে সঠিক কাজ করার জন্য সাহস জুগিয়েছিলেন, ঠিক একইভাবে তিনি আপনাকেও সাহস জোগাবেন। (১ করি. ১০:১৩) যিহোবা তাঁর সেবকদের সাহায্য করেন, তাই অনেক কম ব্যক্তিকেই মণ্ডলী থেকে সমাজচ্যুত করা হয়। সত্যিই, যিহোবা বিভিন্ন উপায়ে তাঁর লোকদের প্রস্তুত করেন যেন তারা তাঁর প্রতি বিশ্বস্ত থাকে।
১২. আমরা কোনো গুরুতর পাপ করা থেকে কীভাবে নিজেদের আটকাতে পারি?
১২ প্রত্যেক ব্যক্তিকেই খারাপ কাজ করার জন্য প্রলোভিত করা হয়। (যাকোব ১:১৪) কিন্তু, সেই খারাপ কাজ আপনি করবেন কি করবেন না, সেটা আপনার উপর নির্ভর করে। আপনি নিজেই সিদ্ধান্ত নিতে পারেন যে, আপনি কী করবেন এবং কীভাবে জীবনযাপন করবেন। কেউ কেউ বলতে পারে, তারা তাদের আকাঙ্ক্ষাকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না, এটা তাদের হাতের বাইরে। কিন্তু, এমনটা একেবারেই নয়। তারা তাদের আকাঙ্ক্ষাকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে এবং আপনিও তা করতে পারেন। আপনার মনে যদি খারাপ আকাঙ্ক্ষা চলে আসে, তা হলে সেই অনুযায়ী কাজ করা থেকে আপনি নিজেকে আটকাতে পারেন। কোন বিষয়টা আপনাকে সাহায্য করবে? প্রতিদিন যিহোবার কাছে প্রার্থনা করুন। ক্রমাগত তাঁর বাক্য নিয়ে অধ্যয়ন করুন। নিয়মিত সভাগুলোতে যান। আপনি যা বিশ্বাস করেন, সেই বিষয়ে অন্যদেরও বলুন। আপনি যখন ক্রমাগত এগুলো করবেন, তখন আপনি নিজের জীবন উৎসর্গ করার সময়ে যে-প্রতিজ্ঞা করেছিলেন, সেই অনুসারে চলতেও পারবেন। আর মনে রাখুন, যিহোবা আপনার সঙ্গে রয়েছেন এবং তিনি আপনাকে সাহায্য করবেন।—গালা. ৫:১৬.
১৩. আমরা যোষেফের কাছ থেকে কী শিখতে পারি?
১৩ আগে থেকেই চিন্তা করে রাখুন, প্রলোভিত করা হলে আপনি কী করবেন। এমনটা করলে নিজের জীবন উৎসর্গ করার সময়ে আপনি যে-প্রতিজ্ঞা করেছিলেন, সেই অনুসারে চলা আপনার জন্য সহজ হয়ে যাবে। বাইবেলে এমন কিছু ব্যক্তির কথা বলা রয়েছে, যারা এটাই করেছিল। যদিও তারা নিখুঁত ছিল না, কিন্তু তাদের যখন প্রলোভিত করা হয়েছিল, তখন তারা যিহোবার প্রতি বিশ্বস্ত ছিল। যোষেফের উদাহরণের উপর মনোযোগ দিন। পোটীফরের স্ত্রী তাকে বার বার প্রলোভিত করার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু যোষেফ জানতেন, এইরকম পরিস্থিতিতে তাকে কী করতে হবে। বাইবেল বলে, যোষেফ স্পষ্টভাবে তাকে না বলে দিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, “আমি কিরূপে এই মহা দুষ্কর্ম্ম করিতে ও ঈশ্বরের বিরুদ্ধে পাপ করিতে পারি?” (আদি. ৩৯:৮-১০) এর থেকে বোঝা যায় যে, যোষেফ আগে থেকেই চিন্তা করেছিলেন, এইরকম পরিস্থিতিতে তিনি কী করবেন। তাই, পোটীফরের স্ত্রীকে না বলতে তিনি একটুও দেরি করেননি।
১৪. আমরা কী করতে পারি, যাতে প্রলোভন এলেও আমরা খারাপ কাজ করে না ফেলি?
১৪ আপনি যোষেফের মতো কী করতে পারেন? আপনি এখন থেকেই চিন্তা করতে পারেন, আপনাকে যদি প্রলোভিত করা হয়, তা হলে আপনি কী করবেন। এমন কাজগুলো করবেন না, যেগুলো যিহোবা ঘৃণা করেন আর সেই বিষয় নিয়ে চিন্তাও করবেন না। (গীত. ৯৭:১০; ১১৯:১৬৫) এমনটা করলে যখন প্রলোভন আসবে, তখন আপনি স্থির থাকতে পারবেন। কেন? কারণ আপনি আগে থেকেই জানবেন, সেই সময়ে আপনাকে কী করতে হবে।
১৫. কীভাবে একজন ব্যক্তি দেখাতে পারেন যে, তিনি “আন্তরিকভাবে ঈশ্বরের অন্বেষণ” করছেন? (ইব্রীয় ১১:৬)
১৫ আপনি হয়তো নিশ্চিত যে, আপনি যা শিখছেন, সেটাই সত্য এবং আপনি হৃদয় থেকে যিহোবার সেবা করতে চান। কিন্তু তা সত্ত্বেও, আপনি হয়তো নিজের জীবন উৎসর্গ করার এবং বাপ্তিস্ম নেওয়ার ক্ষেত্রে দোনোমনো করছেন। যদি তা-ই হয়, তা হলে আপনি রাজা দায়ূদের মতো যিহোবার কাছে বিনতি করতে পারেন: “হে ঈশ্বর, আমাকে অনুসন্ধান কর, আমার অন্তঃকরণ জ্ঞাত হও; আমার পরীক্ষা কর, আমার চিন্তা সকল জ্ঞাত হও; আর দেখ, আমাতে দুষ্টতার পথ পাওয়া যায় কি না, এবং সনাতন পথে আমাকে গমন করাও।” (গীত. ১৩৯:২৩, ২৪) এভাবে আপনি যখন যিহোবার কাছে প্রার্থনা করবেন আর নিজের জীবন উৎসর্গ করার ও বাপ্তিস্মের নেওয়ার যে-লক্ষ্য রেখেছেন, সেই অনুযায়ী প্রচেষ্টা করবেন, তখন আপনি দেখাবেন যে, আপনি “আন্তরিকভাবে তাঁর অন্বেষণ” করছেন। তাই, আপনি নিশ্চিত থাকতে পারেন, যিহোবা অবশ্যই আপনাকে আশীর্বাদ করবেন।—পড়ুন, ইব্রীয় ১১:৬.
ক্রমাগত যিহোবার নিকটবর্তী হোন
১৬-১৭. কীভাবে যিহোবা তাদেরও তাঁর প্রতি আকর্ষণ করেন, যাদের বাবা-মা তাদের সত্য শেখায়? (যোহন ৬:৪৪)
১৬ যিশু বলেছিলেন, যিহোবাই তাঁর শিষ্যদের নিজের প্রতি আকর্ষণ করেন। (পড়ুন, যোহন ৬:৪৪.) এটা কতই-না চমৎকার এক বিষয়! যিহোবা প্রত্যেকের মধ্যেই ভালো কিছু লক্ষ করেন। তাই, তিনি তাদের তাঁর প্রতি আকর্ষণ করেন। তিনি আপনার মধ্যেও ভালো কিছু দেখেছেন। যিহোবা প্রত্যেক ব্যক্তিকে তাঁর “বিশেষ সম্পদ” বা “মূল্যবান সম্পত্তি” হিসেবে দেখেন।—দ্বিতীয়. ৭:৬, NW, পাদটীকা।
১৭ কিন্তু, আপনার বাবা-মা যদি সত্যে থাকে, তা হলে আপনার মনে হতে পারে, তারা যিহোবার উপাসনা করছে বলে আপনি তা করছেন এবং যিহোবা আপনাকে তাঁর প্রতি আকর্ষণ করেননি। কিন্তু লক্ষ করুন, বাইবেলে কী লেখা রয়েছে: “ঈশ্বরের নিকটবর্তী হও, তাতে তিনিও তোমাদের নিকটবর্তী হবেন।” (যাকোব ৪:৮; ১ বংশা. ২৮:৯) তাই, আপনি যখন যিহোবার নিকটবর্তী হওয়ার জন্য পদক্ষেপ নেবেন, তখন তিনিও আপনার নিকটবর্তী হবেন। এমনটা নয় যে, যিহোবা আপনার বাবা-মাকে তাঁর প্রতি আকর্ষণ করেছেন আর আপনি এমনি এমনিই সত্যে চলে এসেছেন। যিহোবা প্রত্যেক ব্যক্তিকে তাঁর প্রতি আকর্ষণ করেন, এমনকী তাদেরও, যাদের বাবা-মা তাদের সত্য শেখায়। একজন ব্যক্তি যখন যিহোবার নিকটবর্তী হওয়ার জন্য পদক্ষেপ নেয়, তখন যিহোবাও তার নিকটবর্তী হন, যেমনটা যাকোব ৪:৮ পদ লেখা রয়েছে।—তুলনা করুন, ২ থিষলনীকীয় ২:১৩.
১৮. পরের প্রবন্ধে আমরা কী নিয়ে আলোচনা করব? (গীতসংহিতা ৪০:৮)
১৮ আপনি যখন যিহোবার কাছে নিজের জীবন উৎসর্গ করেন এবং বাপ্তিস্ম নেন, তখন আপনি যিশুর মতো উদ্যোগ দেখিয়ে থাকেন। যিশু ইচ্ছুকমনে তাঁর পিতার কাছে নিজের জীবন উৎসর্গ করেছিলেন, যাতে তিনি তাঁর পিতার ইচ্ছা পূরণ করতে পারেন। (পড়ুন, গীতসংহিতা ৪০:৮; ইব্রীয় ১০:৭) পরের প্রবন্ধে আমরা আলোচনা করব, কীভাবে বাপ্তিস্মের পরও আপনি বিশ্বস্তভাবে যিহোবার সেবা করে চলতে পারেন।
আপনি কীভাবে উত্তর দেবেন?
যিহোবার কাছে নিজের জীবন উৎসর্গ করার মানে কী?
যিহোবার কাছে নিজের জীবন উৎসর্গ করার জন্য তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা দেখানো কেন এত গুরুত্বপূর্ণ?
আপনি কোনো গুরুতর পাপ করা থেকে নিজেকে কীভাবে আটকাতে পারেন?
গান ৩৮ তিনি সবল করবেন তোমায়