অবিবাহিত অবস্থা—বিক্ষেপহীন কাজের এক দ্বার
“একাগ্রমনে প্রভুতে আসক্ত থাক।”—১ করিন্থীয় ৭:৩৫.
১. করিন্থের খ্রীষ্টানদের সম্বন্ধে কোন্ উদ্বেগজনক সংবাদ পৌল পেয়েছিলেন?
প্রেরিত পৌল গ্রীসের করিন্থে বসবাসকারী তার খ্রীষ্টীয় ভাইয়েদের সম্বন্ধে উদ্বিগ্ন ছিলেন। প্রায় পাঁচ বছর পূর্বে তিনি এই সমৃদ্ধ শহরটিতে মণ্ডলী স্থাপন করেছিলেন যেটি অনৈতিকতার জন্য সুপরিচিত ছিল। এখন, প্রায় সা.শ. ৫৫ সালে সাধারণ শতাব্দীতে এশিয়া মাইনরের ইফিষে থাকাকালীন সময়েও, তিনি করিন্থ থেকে মনুষ্যদের অনুসরণকারী হওয়ার কারণে দলাদলি, বিভেদ ও একটি গুরুতর অনৈতিকতাকে অনুমোদন করার উদ্বেগজনক সংবাদগুলি পান। এছাড়া, পৌল করিন্থীয়ের খ্রীষ্টানদের কাছ থেকে যৌন সম্পর্ক, কৌমার্য, বিবাহ, পৃথক থাকা এবং পুনর্বিবাহ সম্বন্ধে নির্দেশনা চেয়ে পাঠানো একটি পত্র পেয়েছিলেন।
২. করিন্থে বিদ্যমান অনৈতিকতা কিভাবে আপাতদৃষ্টিতে সেই শহরের খ্রীষ্টানদেরকে প্রভাবিত করছিল?
২ করিন্থে বিদ্যমান অবাধ অনৈতিকতা স্থানীয় মণ্ডলীকে দুইভাবে প্রভাবিত করছিল বলে মনে হয়। কিছু খ্রীষ্টানেরা নৈতিক শিথিলতার পরিবেশকে মেনে নিয়েছিল এবং অনৈতিকতাকে অনুমোদন করছিল। (১ করিন্থীয় ৫:১; ৬:১৫-১৭) স্পষ্টতই অন্যেরা, ঐ শহরের সর্বত্র বিদ্যমান ভোগ-বিলাসের প্রতি প্রতিক্রিয়াস্বরূপ সমস্ত যৌন সম্পর্ক থেকে, এমনকি বিবাহিত দম্পতিদের মধ্যেও বিরত থাকার জন্য পরামর্শ দেওয়ার মত চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছেছিল।—১ করিন্থীয় ৭:৫.
৩. করিন্থীয়দের উদ্দেশ্যে তার প্রথম পত্রে পৌল কোন্ বিষয়গুলি প্রাথমিকভাবে আলোচনা করেছিলেন?
৩ করিন্থীয়দের প্রতি লেখা দীর্ঘ পত্রে পৌল প্রথমে অনৈক্যতার সমস্যাটি সম্বন্ধে উল্লেখ করেন। (১ করিন্থীয়, ১-৪ অধ্যায়) তিনি তাদের পরামর্শ দেন মানুষদের অনুসরণ করাকে পরিহার করতে যা কেবলমাত্র ক্ষতিকর বিভেদের দিকেই পরিচালিত করতে পারে। ঈশ্বরের “সহকার্য্যকারী” হিসাবে তাদের একতাবদ্ধ হওয়া উচিত। তারপর তিনি মণ্ডলীকে নৈতিকভাবে শুদ্ধ রাখার জন্য তাদের সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা প্রদান করেন। (অধ্যায় ৫, ৬) এরপর প্রেরিত তাদের পত্রটির প্রতি মনোনিবেশ করেন।
অবিবাহিত অবস্থাকে সুপারিশ করা হয়েছে
৪. “স্ত্রীলোককে স্পর্শ না করা মনুষ্যের ভাল” এই কথাগুলি বলার দ্বারা পৌল কী বোঝাতে চেয়েছিলেন?
৪ তিনি শুরু করেন: “আবার তোমরা যে সকল কথা লিখিয়াছ, তাহার বিষয়; স্ত্রীলোককে স্পর্শ না করা মনুষ্যের ভাল।” (১ করিন্থীয় ৭:১) এখানে “স্ত্রীলোককে স্পর্শ না করা” অভিব্যক্তিটির অর্থ যৌন বাসনাকে চরিতার্থ করার জন্য কোন স্ত্রীলোকের সাথে শারীরিক যোগাযোগকে পরিহার করা। যেহেতু পৌল ইতিপূর্বেই ব্যভিচারকে নিন্দা করেছিলেন, তাই এখন তিনি বিবাহ ব্যবস্থার অন্তর্গত যৌন সম্পর্ক সম্বন্ধে উল্লেখ করছিলেন। সুতরাং, পৌল এখন অবিবাহিত অবস্থাকে সুপারিশ করছিলেন। (১ করিন্থীয় ৬:৯, ১৬, ১৮; তুলনা করুন আদিপুস্তক ২০:৬; হিতোপদেশ ৬:২৯.) এর কিছু পরেই, তিনি লেখেন: “পরন্তু অবিবাহিত লোকদের ও বিধবাদের কাছে আমার কথা এই, তাহারা যদি আমার মত থাকিতে পারে, তবে তাহাদের পক্ষে তাহাই ভাল।” (১ করিন্থীয় ৭:৮) পৌল অবিবাহিত বা সম্ভবত বিপত্নীক ছিলেন।—১ করিন্থীয় ৯:৫.
৫, ৬. (ক) এটি কেন স্পষ্ট যে পৌল সন্ন্যাসীর জীবনধারাকে সুপারিশ করেননি? (খ) কেন পৌল অবিবাহিত অবস্থাকে সুপারিশ করেন?
৫ সম্ভবত করিন্থের খ্রীষ্টানেরা গ্রীক দর্শনের সংস্পর্শে এসেছিল যেখানে কিছু ব্যক্তিরা কঠোর তপস্যা বা আত্ম-ত্যাগকে প্রশংসা করত। হয়ত এই জন্যই করিন্থীয়রা পৌলকে জিজ্ঞাসা করেছিল সকল ধরনের যৌন সম্পর্ককে এড়িয়ে চলা কি খ্রীষ্টানদের জন্য “ভাল”? পৌলের উত্তর গ্রীক দর্শনকে প্রতিফলিত করেনি। (কলসীয় ২:৮) ক্যাথলিক ধর্মতত্ত্ববিদদের বিপরীতে তিনি কোথাও এক মঠ বা ধর্মীয় আবাসে চিরকুমার তপস্বী জীবনের পরামর্শ দেননি যেন অবিবাহিত ব্যক্তিরা বিশেষভাবে পবিত্র এবং তাদের জীবন-যাত্রাপ্রণালী এবং প্রার্থনার মাধ্যমে তারা তাদের নিজেদের পরিত্রাণ আনয়ন করবে।
৬ পৌল “উপস্থিত সঙ্কট প্রযুক্ত” অবিবাহিত অবস্থাকে সুপারিশ করেছিলেন। (১ করিন্থীয় ৭:২৬) তিনি হয়ত খ্রীষ্টানেরা যে কঠিন সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছিল তার কথা উল্লেখ করছিলেন যা বিবাহের মাধ্যমে আরও অধিক জটিল হয়ে উঠতে পারত। (১ করিন্থীয় ৭:২৮) অবিবাহিত খ্রীষ্টানদের প্রতি তার পরামর্শ ছিল: “যদি আমার মত থাকিতে পারে, তবে তাহাদের পক্ষে তাহাই ভাল।” বিপত্নীকদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন: “তুমি কি স্ত্রী হইতে মুক্ত? স্ত্রীর চেষ্টা করিও না।” একজন খ্রীষ্টীয় বিধবা সম্বন্ধে তিনি লেখেন: “আমার মতানুসারে সে অমনি থাকিলে আরও ধন্যা। আর আমার বোধ হয়, আমিও ঈশ্বরের আত্মাকে পাইয়াছি।”—১ করিন্থীয় ৭:৮, ২৭, ৪০.
অবিবাহিত থাকা বাধ্যতামূলক নয়
৭, ৮. কী দেখায় যে পৌল কোন খ্রীষ্টানকে অবিবাহিত থাকতে বাধ্য করেননি?
৭ এই পরামর্শ প্রদানের সময় নিঃসন্দেহে যিহোবার পবিত্র আত্মা পৌলকে পরিচালনা দিয়েছিল। কৌমার্য এবং বিবাহ সম্বন্ধে তার সম্পূর্ণ উপস্থাপনা ভারসাম্য এবং সংযম প্রদর্শন করে। তিনি এটিকে বিশ্বস্ততা বা অবিশ্বস্ততার কোন বিষয় করেননি। বরঞ্চ এটি হচ্ছে স্বাধীন মনোনয়নের বিষয়, তবুও তা সেই সমস্ত ব্যক্তিদের অবিবাহিত থাকার জন্য পরামর্শ দেয় যারা ঐ অবস্থায় বিশুদ্ধ থাকতে পারবে।
৮ “স্ত্রীলোককে স্পর্শ না করা মনুষ্যের ভাল” এটি বলার ঠিক পরেই পৌল আরও বলেন: “কিন্তু ব্যভিচার নিবারণের জন্য প্রত্যেক পুরুষের নিজের নিজের ভার্য্যা থাকুক, এবং প্রত্যেক স্ত্রীর নিজের নিজের স্বামী থাকুক।” (১ করিন্থীয় ৭:১, ২) অবিবাহিত ব্যক্তি এবং বিধবাদের “আমার মত থাকিতে,” পরামর্শ দেওয়ার পর তিনি শীঘ্রই আরও বলেন: “কিন্তু তাহারা যদি ইন্দ্রিয় দমন করিতে না পারে, তবে বিবাহ করুক; কেননা আগুনে জ্বলা অপেক্ষা বরং বিবাহ করা ভাল।” (১ করিন্থীয় ৭:৮, ৯) আবারও বিপত্নীকদের প্রতি তার পরামর্শ ছিল: “স্ত্রীর চেষ্টা করিও না। কিন্তু বিবাহ করিলেও তোমার পাপ হয় না।” (১ করিন্থীয় ৭:২৭, ২৮) এই ভারসাম্যপূর্ণ পরামর্শ স্বাধীন মনোনয়নের বিষয়টিকে প্রতিফলিত করে।
৯. যীশু এবং পৌলের কথা অনুসারে কিভাবে বিবাহিত এবং অবিবাহিত অবস্থা উভয়ই ঈশ্বরের কাছ থেকে দানস্বরূপ?
৯ পৌল দেখিয়েছিলেন যে বিবাহিত এবং অবিবাহিত থাকা উভয়ই ঈশ্বরের নিকট থেকে দানস্বরূপ। “আমার ইচ্ছা এই যে, সকল মনুষ্যই আমার মত হয়; কিন্তু প্রত্যেক জন ঈশ্বর হইতে আপন আপন অনুগ্রহ-দান পাইয়াছে, এক জন এক প্রকার, অন্য জন অন্য প্রকার।” (১ করিন্থীয় ৭:৭) নিঃসন্দেহে, যীশু যা বলেছিলেন তা তার মনে ছিল। বিবাহ ঈশ্বরের কাছ থেকে এসেছে তা প্রতিষ্ঠিত করার পর, যীশু দেখিয়েছিলেন যে রাজ্যের আগ্রহের জন্য পরিচর্যা করার লক্ষ্যে অবিবাহিত থাকা হচ্ছে একটি বিশেষ দান: “সকলে এই কথা গ্রহণ করে না, কিন্তু যাহাদিগকে ক্ষমতা দত্ত হইয়াছে, তাহারাই করে। কারণ এমন নপুংসক আছে, যাহারা মাতার উদর হইতে সেইরূপ হইয়া জন্মিয়াছে; আর এমন নপুংসক আছে, যাহাদিগকে মানুষে নপুংসক করিয়াছে; আর এমন নপুংসক আছে, যাহারা স্বর্গ-রাজ্যের নিমিত্তে আপনাদিগকে নপুংসক করিয়াছে। যে গ্রহণ করিতে পারে, সে গ্রহণ করুক।”—মথি ১৯:৪-৬, ১১, ১২.
অবিবাহিত থাকার দানকে গ্রহণ করা
১০. কিভাবে একজন ব্যক্তি অবিবাহিত থাকার দানকে “গ্রহণ” করতে পারে?
১০ যখন পৌল এবং যীশু উভয়েই অবিবাহিত থাকাকে একটি “দান” হিসাবে বলেছিলেন, তারা কেউই এটিকে এক অলৌকিক দান হিসাবে বলেননি যা শুধুমাত্র অল্প কয়েকজনই লাভ করতে পারে। যীশু বলেছিলেন যে ঐ দান “সকলে . . . গ্রহণ করে না,” কিন্তু যারা পারে তাদেরকে তিনি পরামর্শ দেন যে তারা “গ্রহণ করুক,” যেমন যীশু এবং পৌল করেছিলেন। সত্যই, পৌল লিখেছিলেন যে “আগুনে জ্বলা অপেক্ষা বরং বিবাহ করা ভাল,” কিন্তু তিনি তাদের সম্বন্ধে বলছিলেন যারা “ইন্দ্রিয় দমন করিতে না পারে।” (১ করিন্থীয় ৭:৯) তার পূর্ববর্তী লেখাগুলিতে পৌল দেখিয়েছিলেন যে খ্রীষ্টানেরা আগুনে জ্বলাকে পরিহার করতে পারে। (গালাতীয় ৫:১৬, ২২-২৪) আত্মার বশে চলার অর্থ হচ্ছে আমাদের প্রতিটি পদক্ষেপকে যিহোবার আত্মা দ্বারা পরিচালিত হতে দেওয়া। খ্রীষ্টীয় যুবক-যুবতীরা কি তা করতে পারে? হ্যাঁ, যদি তারা ঘনিষ্ঠভাবে যিহোবার বাক্যকে অনুসরণ করে। গীতরচক লিখেছিলেন: “যুবক [অথবা যুবতী] কেমন করিয়া নিজ পথ বিশুদ্ধ করিবে? তোমার বাক্যানুসারে সাবধান হইয়াই করিবে।”—গীতসংহিতা ১১৯:৯.
১১. ‘আত্মার বশে চলার” অর্থ কী?
১১ এটি বিভিন্ন প্রশ্রয়দানকারী ধারণাগুলি যা অনেক টিভি অনুষ্ঠান, চলচ্চিত্র, পত্রিকার প্রবন্ধ, বই এবং গানের পঙ্ক্তিগুলির মাধ্যমে পরিব্যাপ্ত হতে পারে, তার বিরুদ্ধে সতর্ক থাকাকে অন্তর্ভুক্ত করে। এইধরনের ধারণাগুলি মাংসিক বিষয়-কেন্দ্রীক। যে কোন লিঙ্গের একজন খ্রীষ্টীয় যুবক ব্যক্তি যে অবিবাহিত অবস্থাকে গ্রহণ করতে চায় তার উচিত “মাংসের বশে নয়, কিন্তু আত্মার বশে চলিতেছি, ব্যবস্থার ধর্ম্মবিধি সেই আমাদিগেতে সিদ্ধ হয়। কেননা যাহারা মাংসের বশে আছে, তাহারা মাংসিক বিষয় ভাবে; কিন্তু যাহারা আত্মার বশে আছে, তাহারা আত্মিক বিষয় ভাবে।” (বাঁকা অক্ষরে মুদ্রণ আমাদের।) (রোমীয় ৮:৪, ৫) আত্মার বিষয়গুলি হচ্ছে ন্যায্য, বিশুদ্ধ, প্রীতিজনক, এবং সদ্গুণসম্পন্ন। খ্রীষ্টীয় যুবক এবং বৃদ্ধেরা “সেই সকল আলোচনা” করলে ভাল করবেন।—ফিলিপীয় ৪:৮, ৯.
১২. অবিবাহিত থাকার দানকে গ্রহণ করার সাথে বিশেষভাবে কী জড়িত?
১২ অবিবাহিত অবস্থার দানকে গ্রহণ করার জন্য মূলত একজনের হৃদয়কে সেই লক্ষ্যে স্থাপন করা এবং তা অনুধাবন করতে সাহায্যের জন্য যিহোবার কাছে প্রার্থনা করা প্রকৃতপক্ষেই একটি বিষয়। (ফিলিপীয় ৪:৬, ৭) পৌল লিখেছিলেন: “যে ব্যক্তি হৃদয়ে স্থির, যাহার কোন প্রয়োজন নাই, এবং আপনি আপন ইচ্ছা সম্বন্ধে কর্ত্তা, সে যদি আপন কন্যাকে কুমারী রাখিতে হৃদয়ে স্থির করিয়া থাকে, তবে ভাল করে। অতএব যে আপন কুমারী কন্যার বিবাহ দেয়, সে ভাল করে; এবং যে না দেয়, সে আরও ভাল করে।”—১ করিন্থীয় ৭:৩৭, ৩৮.
এক উদ্দেশ্যসহ অবিবাহিত থাকা
১৩, ১৪. (ক) বিবাহিত এবং অবিবাহিত খ্রীষ্টানদের মধ্যে প্রেরিত পৌল কোন্ তুলনা করেছিলেন? (খ) কেবলমাত্র কিভাবে একজন অবিবাহিত খ্রীষ্টান, বিবাহিতদের চেয়ে “আরও ভাল” করতে পারে?
১৩ অবিবাহিত থাকা শুধুমাত্র একটি প্রশংসার বিষয় নয়। তাহলে কোন্ অর্থে এটি “আরও ভাল” হতে পারে? প্রকৃতপক্ষে, এটি নির্ভর করে একজন ব্যক্তি এর দ্বারা আগত স্বাধীনতাকে কিভাবে ব্যবহার করে তার উপর। পৌল লিখেছিলেন: “আমার বাসনা এই যে, তোমরা চিন্তা-রহিত হও। যে অবিবাহিত, সে প্রভুর বিষয় চিন্তা করে, কিরূপে প্রভুকে সন্তুষ্ট করিবে। কিন্তু যে বিবাহিত, সে সংসারের বিষয় চিন্তা করে, কিরূপে স্ত্রীকে সন্তুষ্ট করিবে; তাই তাহার বিভিন্নতা ঘটে। আর অবিবাহিতা স্ত্রী ও কুমারী প্রভুর বিষয় চিন্তা করে, যেন দেহে ও আত্মাতে পবিত্রা হয়; কিন্তু বিবাহিতা স্ত্রী সংসারের বিষয় চিন্তা করে, কিরূপে স্বামীকে সন্তুষ্ট করিবে। এই কথা আমি তোমাদের নিজের হিতের জন্য বলিতেছি; তোমাদের গলায় রজ্জু দিবার জন্য নয়, কিন্তু তোমরা যেন শিষ্টাচরণ কর, এবং একাগ্রমনে প্রভুতে আসক্ত থাক।”—১ করিন্থীয় ৭:৩২-৩৫.
১৪ একজন অবিবাহিত খ্রীষ্টান যে তার অবিবাহিত অবস্থাকে স্বার্থপর লক্ষ্য অনুধাবন করার জন্য ব্যবহার করছে সে বিবাহিত খ্রীষ্টানদের থেকে “আরও ভাল” করছে না। সে অবিবাহিত রয়েছে “স্বর্গ-রাজ্যের নিমিত্তে” নয়, বরঞ্চ তার ব্যক্তিগত কারণের জন্য। (মথি ১৯:১২) অবিবাহিত পুরুষ অথবা স্ত্রীর “প্রভুর বিষয় চিন্তা” করা উচিত, “প্রভুকে সন্তুষ্ট” করার জন্য উদ্বিগ্ন হওয়া উচিত এবং “একাগ্রমনে প্রভুতে আসক্ত” থাকা উচিত। এর অর্থ হচ্ছে যিহোবা এবং খ্রীষ্ট যীশুর পরিচর্যায় অবিভক্ত মনোযোগ প্রদান করা। শুধুমাত্র তা করার মাধ্যমেই অবিবাহিত পুরুষ এবং স্ত্রীরা বিবাহিত খ্রীষ্টানদের চেয়ে “আরও ভাল” করে থাকেন।
বিক্ষেপহীন কাজ
১৫. ১ করিন্থীয় ৭ অধ্যায়ে পৌলের বক্তব্যের মুখ্য বিষয়টি কী?
১৫ এই অধ্যায়টিতে পৌলের বক্তব্যের সম্পূর্ণ সারমর্ম হচ্ছে: যদিও বিবাহ বৈধ এবং কয়েকটি বিশেষ পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে কারও পক্ষে পরামর্শজনকও, তবুও খ্রীষ্টীয় পুরুষ ও স্ত্রীরা যারা সামান্যতম বিক্ষিপ্ত হয়ে যিহোবাকে সেবা করতে চায় তাদের জন্য অবিবাহিত থাকা অনস্বীকার্যভাবে উপকারী। কার্যত বিবাহিত ব্যক্তির “বিভিন্নতা ঘটে,” কিন্তু অবিবাহিত খ্রীষ্টান “প্রভুর বিষয়ে” মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করার জন্য স্বাধীন।
১৬, ১৭. একজন অবিবাহিত খ্রীষ্টান কিভাবে “প্রভুর বিষয়ে” আরও ভালভাবে মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করতে পারে?
১৬ প্রভুর বিষয়গুলি কী যে ক্ষেত্রে একজন অবিবাহিত খ্রীষ্টান একজন বিবাহিত খ্রীষ্টানের চেয়ে অধিকতর স্বাধীনভাবে মনোযোগ দিতে পারে? আরেকটি প্রসঙ্গে যীশু বলেছিলেন “ঈশ্বরের যাহা”—তা একজন খ্রীষ্টান কৈসরকে দিতে পারে না। (মথি ২২:২১) এই বিষয়গুলি অত্যাবশকীয়ভাবে একজন খ্রীষ্টানের জীবন, উপাসনা এবং পরিচর্যাকে জড়িত করে।—মথি ৪:১০; রোমীয় ১৪:৮; ২ করিন্থীয় ২:১৭; ৩:৫, ৬; ৪:১.
১৭ অবিবাহিত ব্যক্তিরা যিহোবার সেবায় নিজেদের নিয়োজিত করতে সাধারণতঃ অধিকতর স্বাধীন, যা তাদের আধ্যাত্মিকতাকে উপকৃত করতে এবং তাদের পরিচর্যাকে প্রসারিত করতে পারে। তারা ব্যক্তিগত অধ্যয়ন এবং ধ্যান করার জন্য অধিকতর সময় ব্যয় করতে পারে। অবিবাহিত খ্রীষ্টানেরা প্রায়ই বিবাহিতেরা যা পারে তার চেয়ে আরও সহজভাবে তাদের তালিকায় বাইবেল পড়াকে যুক্ত করতে পারে। তারা হয়ত আরও ভালভাবে সভাগুলি এবং ক্ষেত্রের পরিচর্যার জন্য প্রস্তুতি নিতে পারে। এই সমস্ত কিছুই হল তাদের “নিজের হিতের জন্য।”—১ করিন্থীয় ৭:৩৫.
১৮. কিভাবে অনেক অবিবাহিত ভাইয়েরা দেখায় যে তারা “একাগ্রমনে” যিহোবাকে সেবা করতে চায়?
১৮ অনেক অবিবাহিত ভাইয়েরা যারা ইতিমধ্যেই পরিচারক দাস হিসাবে সেবা করছেন তারা যিহোবাকে বলার জন্য স্বাধীন যে: “এই আমি, আমাকে পাঠাও।” (যিশাইয় ৬:৮) তারা মিনিস্টিরিয়াল ট্রেনিং স্কুল-এ যোগদানের জন্য আবেদন করতে পারেন যেটি অবিবাহিত পরিচারক দাস এবং প্রাচীনদের জন্য সংরক্ষিত, যারা যেখানে অধিকতর প্রয়োজন সেখানে সেবা করার জন্য স্বাধীন। এমনকি যে সমস্ত অবিবাহিত ভাইয়েরা যারা তাদের নিজেদের মণ্ডলী পরিত্যাগ করতে পারবে না, তারা পরিচারক দাস অথবা প্রাচীন হিসাবে তাদের ভাইয়েদের সেবা করার জন্য নিজেদের প্রাপ্তিসাধ্য করতে পারেন।—ফিলিপীয় ২:২০-২৩.
১৯. কিভাবে অনেক অবিবাহিত বোনেরা আশীর্বাদপ্রাপ্ত এবং একটি উপায় কী যার মাধ্যমে তারা মণ্ডলীর জন্য আশীর্বাদস্বরূপ হতে পারেন?
১৯ অবিবাহিত বোনেদের পরামর্শ এবং নির্ভর করার জন্য কোন মানব মস্তক না থাকায় তারা হয়ত আরও দ্রুত ‘সদাপ্রভুতে তাদের ভার অর্পণ’ করতে পারেন। (গীতসংহিতা ৫৫:২২; ১ করিন্থীয় ১১:৩) এটি বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ সেই বোনেদের ক্ষেত্রে যারা যিহোবার প্রতি প্রেমের কারণে অবিবাহিত। যদি উপযুক্ত সময়ে তারা বিবাহ করে তাহলে “কেবল প্রভুতেই,” অর্থাৎ কেবলমাত্র যিহোবার কাছে উৎসর্গীকৃত একজন ব্যক্তিকেই করবেন। (১ করিন্থীয় ৭:৩৯) প্রাচীনেরা তাদের মণ্ডলীতে অবিবাহিত বোনেদের পেয়ে কৃতজ্ঞ; এই বোনেরা প্রায়ই অসুস্থ এবং বয়স্কদের পরিদর্শন এবং সাহায্য করে থাকেন। এটি সম্পর্কিত সকলের জন্য আনন্দ নিয়ে আসে।—প্রেরিত ২০:৩৫.
২০. কিভাবে অনেক খ্রীষ্টানেরা দেখাচ্ছে যে তারা “একাগ্রমনে প্রভুতে আসক্ত”?
২০ অনেক খ্রীষ্টীয় যুবক-যুবতীরা তাদের বিষয়গুলিকে এমনভাবে বিন্যস্ত করেছেন যাতে “একাগ্রমনে প্রভুতে আসক্ত” হতে পারেন। (১ করিন্থীয় ৭:৩৫) তারা পূর্ণ-সময় অগ্রগামী পরিচারক হিসাবে, মিশনারী হিসাবে অথবা ওয়াচটাওয়ার সোসাইটির শাখা অফিসগুলির যে কোন একটিতে যিহোবাকে সেবা করছেন। আর তারা কতই না এক আনন্দিত দল! তাদের উপস্থিতি কতই না সতেজতাদায়ক! কারণ, যিহোবা এবং যীশুর চোখে তারা “শিশিরতুল্য।”—গীতসংহিতা ১১০:৩.
চিরস্থায়ী কৌমার্য ব্রত নয়
২১. (ক) এটি কেন স্পষ্ট যে পৌল কৌমার্যের ব্রত নিতে উৎসাহিত করেননি? (খ) “সৌকুমার্য্য অতীত হইয়া থাকে” এই কথার দ্বারা তিনি কী ইঙ্গিত করেছিলেন?
২১ পৌলের পরামর্শের মুখ্য বিষয়টি হচ্ছে যে খ্রীষ্টানেরা তাদের জীবনে অবিবাহিত অবস্থাকে গ্রহণ করলে “ভাল” করবে। (১ করিন্থীয় ৭:১, ৮, ২৬, ৩৭) কিন্তু কোনভাবেই তিনি তাদেরকে কৌমার্য ব্রত গ্রহণ করার জন্য আমন্ত্রণ জানাননি। বিপরীতে তিনি লিখেছিলেন: “যদি কাহারও বোধ হয় যে, সে তাহার কুমারী কন্যার [“কুমারীত্বের,” NW] প্রতি অশিষ্টাচরণ করিতেছে, যদি সৌকুমার্য্য অতীত হইয়া থাকে, আর এই প্রকার হওয়া আবশ্যক হয়, তবে সে যাহা ইচ্ছা করে, তাহা করুক; ইহাতে তাহার পাপ নাই, বিবাহ হউক।” (১ করিন্থীয় ৭:৩৬) গ্রীক শব্দ (হাইপেরাক্মস) অনুবাদিত হয়েছে “সৌকুমার্য্য অতীত হইয়া থাকে” যার আক্ষরিক অর্থ হচ্ছে “সর্বোচ্চ সীমাকে অতিক্রম করা” এবং প্রবল যৌন আকাঙ্ক্ষার শীর্ষ তরঙ্গকে অতিক্রম করা। সুতরাং যারা কয়েক বছর অবিবাহিত অবস্থায় কাটিয়েছে এবং পরে মনে করে যে তাদের বিবাহ করা উচিত, একজন সহবিশ্বাসীকে বিবাহ করার জন্য তারা সম্পূর্ণরূপে স্বাধীন।—২ করিন্থীয় ৬:১৪.
২২. অল্প বয়সে বিবাহ না করা কেন একজন খ্রীষ্টানের পক্ষে সমস্ত দৃষ্টিকোণ থেকে উপকারী?
২২ একজন খ্রীষ্টীয় যুবক-যুবতী যে বছরগুলি একাগ্রমনে যিহোবাকে সেবা করতে ব্যয় করে তা এক বিজ্ঞ বিনিয়োগ। সেগুলি তাকে ব্যবহারিক প্রজ্ঞা, অভিজ্ঞতা এবং অন্তর্দৃষ্টি অর্জন করতে অনুমোদন করে। (হিতোপদেশ ১:৩, ৪) একজন ব্যক্তি যিনি রাজ্যের জন্য অবিবাহিত থেকেছেন তিনি পরবর্তী সময়ে, অধিকতর ভাল অবস্থানে থাকেন, যদি তিনি বিবাহিত জীবন এবং সম্ভবত পিতৃত্বের দায়িত্বগুলি গ্রহণ করতে সিদ্ধান্ত নেন।
২৩. যারা বিবাহ করার জন্য মনস্থ করেছে তারা কী মনে করতে পারে, কিন্তু কোন্ প্রশ্নটি পরবর্তী প্রবন্ধগুলিতে আলোচনা করা হবে?
২৩ কিছু খ্রীষ্টানেরা যারা কয়েক বছর অবিবাহিত অবস্থায় যিহোবাকে পূর্ণ-সময় সেবা করার কাজে ব্যয় করেছেন, তারা যে কোন ধরনের পূর্ণ-সময় পরিচর্যার লক্ষ্য নিয়ে সতর্কতার সাথে তাদের ভবিষ্যৎ সাথীকে মনোনীত করেন। এটি অবশ্যই সর্বোচ্চ প্রশংসার যোগ্য। কেউ কেউ হয়ত এমনকি বিবাহ করার চিন্তা করে এটি মনে করে যে তাদের বিবাহকে তারা কোন ভাবেই তাদের পরিচর্যায় বাধা হতে অনুমোদন করবে না। কিন্তু একজন বিবাহিত খ্রীষ্টানের কী সে অবিবাহিত অবস্থায় যিহোবাকে পরিচর্যা করার কাজে যতটা স্বাধীন ছিল সেরকম মনে করা উচিত? এই প্রশ্নটি পরবর্তী প্রবন্ধগুলিতে আলোচনা করা হবে।
পুনরালোচনার মাধ্যমে
◻ প্রেরিত পৌল কেন করিন্থের মণ্ডলীকে লেখার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেছিলেন?
◻ আমরা কেন জানি যে পৌল সন্ন্যাসীর জীবনধারাকে সুপারিশ করছিলেন না?
◻ কিভাবে একজন ব্যক্তি অবিবাহিত অবস্থাকে “গ্রহণ” করতে পারেন?
◻ কিভাবে অবিবাহিত বোনেরা তাদের অবিবাহিত অবস্থা থেকে উপকার লাভ করতে পারে?
◻ কোন্ কোন্ উপায়ে অবিবাহিত ভাইয়েরা “একাগ্রমনে” যিহোবাকে সেবা করতে তাদের স্বাধীনতা থেকে সুযোগ গ্রহণ করতে পারেন?