বিয়ে সম্বন্ধে ঈশ্বরের ব্যবস্থার প্রতি সম্মান দেখান
“ঈশ্বর যাহার যোগ করিয়া দিয়াছেন, মনুষ্য তাহার বিয়োগ না করুক।”—মার্ক ১০:৯.
১, ২. ইব্রীয় ১৩:৪ পদ অনুযায়ী আমাদের কী করার জন্য অনুপ্রাণিত হওয়া উচিত?
আমরা সবাই যিহোবাকে সম্মানিত করতে চাই। তিনি আমাদের কাছ থেকে গৌরব, সম্মান ও সমাদর পাওয়ার যোগ্য আর তিনি প্রতিজ্ঞা করেন যে, তিনিও বিনিময়ে আমাদের গৌরবান্বিত বা সম্মানিত করবেন। (১ শমূ. ২:৩০; হিতো. ৩:৯; প্রকা. ৪:১১) এ ছাড়া, তিনি চান যেন আমরা অন্যদের যেমন, সরকারি কর্মকর্তাদের সমাদর বা সম্মান করি। (রোমীয় ১২:১০; ১৩:৭) তবে, একটা নির্দিষ্ট ক্ষেত্র রয়েছে, যেটাতে আমাদের বিশেষভাবে সম্মান দেখাতে হবে। সেটা হল বিয়ের ক্ষেত্রে।
২ প্রেরিত পৌল লিখেছিলেন: “সকলের মধ্যে বিবাহ আদরণীয়” বা সম্মাননীয় “ও সেই শয্যা বিমল [হউক]।” (ইব্রীয় ১৩:৪) পৌল কেবল বিয়ে সম্বন্ধে একটা সাধারণ উক্তি করছিলেন না। তিনি খ্রিস্টানদের বলছিলেন যে, তাদের বিয়ের ব্যবস্থার প্রতি সম্মান দেখাতে হবে অর্থাৎ সেটাকে মূল্যবান হিসেবে দেখতে হবে। আপনি কি সমস্ত বিয়েকে আর বিশেষভাবে আপনি যদি বিবাহিত হয়ে থাকেন, তা হলে আপনার নিজের বিয়েকে এভাবেই দেখে থাকেন?
৩. যিশু বিয়ে সম্বন্ধে কোন গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ দিয়েছিলেন? (শুরুতে দেওয়া ছবিটা দেখুন।)
৩ আপনি যদি বিয়েকে মূল্যবান হিসেবে দেখে থাকেন, তা হলে আপনি একজন ব্যক্তির চমৎকার উদাহরণ অনুসরণ করছেন। যিশু নিজে বিয়ের ব্যবস্থার প্রতি সম্মান দেখিয়েছিলেন। ফরীশীরা যখন তাঁকে স্ত্রী পরিত্যাগ করা অর্থাৎ বিবাহবিচ্ছেদ করা সম্বন্ধে প্রশ্ন জিজ্ঞেস করেছিল, তখন তিনি উল্লেখ করেছিলেন যে, ঈশ্বর প্রথম বিয়ে সম্বন্ধে কী বলেছিলেন: “এই কারণ মনুষ্য আপন পিতামাতাকে ত্যাগ করিয়া আপন স্ত্রীতে আসক্ত হইবে, আর সে দুই জন একাঙ্গ হইবে।” যিশু আরও বলেছিলেন: “ঈশ্বর যাহার যোগ করিয়া দিয়াছেন, মনুষ্য তাহার বিয়োগ না করুক।”—পড়ুন, মার্ক ১০:২-১২; আদি. ২:২৪.
৪. বিয়ের বিষয়ে যিহোবার উদ্দেশ্য কী ছিল?
৪ যিশু এই বিষয়ে একমত হয়েছিলেন যে, ঈশ্বরই বিয়ের ব্যবস্থা করেছিলেন এবং বিয়ে চিরস্থায়ী হওয়া উচিত। ঈশ্বর যখন প্রথম বিয়ে দিয়েছিলেন, তখন তিনি আদম ও হবাকে বলেননি যে, তারা বিবাহবিচ্ছেদ করতে পারবেন। এর পরিবর্তে, তাঁর উদ্দেশ্য ছিল যে, “সে দুই জন” চিরকাল ধরে বিবাহবন্ধনে একতাবদ্ধ থাকবে।
যে-বিষয়গুলো কিছু সময়ের জন্য বিয়েকে পরিবর্তিত করেছিল
৫. কীভাবে মৃত্যু বিয়েকে প্রভাবিত করেছিল?
৫ তবে আপনি জানেন যে, আদম যখন পাপ করেছিলেন, তখন অনেক বিষয় পরিবর্তিত হয়ে গিয়েছিল। সেই পরিবর্তনগুলোর মধ্যে একটা ছিল মানুষ মারা যেতে শুরু করেছিল আর এই পরিবর্তন বিয়েকে প্রভাবিত করেছিল। প্রেরিত পৌল খ্রিস্টানদের কাছে ব্যাখ্যা করেছিলেন যে, মৃত্যু বিবাহবন্ধনকে শেষ করে দেয় এবং জীবিত সাথি পুনর্বিবাহ করার জন্য স্বাধীন হয়।—রোমীয় ৭:১-৩.
৬. বিয়ের বিষয়ে ঈশ্বরের দৃষ্টিভঙ্গি সম্বন্ধে মোশির ব্যবস্থা আমাদের কী শেখায়?
৬ ঈশ্বর ইস্রায়েলীয়দের যে-ব্যবস্থা দিয়েছিলেন, সেখানে তিনি বিয়ে সম্বন্ধে বিস্তারিত বিষয় জানিয়েছিলেন। উদাহরণ স্বরূপ, একজন ইস্রায়েলীয় পুরুষ একাধিক স্ত্রী রাখতে পারতেন। এই প্রথা এমনকী ঈশ্বর ব্যবস্থা দেওয়ার আগে থেকেই প্রচলিত ছিল। তবে, ব্যবস্থা মহিলা ও সন্তানদের দুর্ব্যবহারের শিকার হওয়া থেকে সুরক্ষিত রেখেছিল। উদাহরণ স্বরূপ, যদি কোনো ইস্রায়েলীয় পুরুষ একজন দাসীকে বিয়ে করতেন আর পরে দ্বিতীয় কোনো মহিলাকে বিয়ে করতেন, তা হলে তাকে তখনও ঠিক আগের মতোই তার প্রথম স্ত্রীর প্রয়োজনগুলোর যত্ন নিতে হতো। ঈশ্বর চেয়েছিলেন যেন তিনি ক্রমাগত তার প্রথম স্ত্রীকে সুরক্ষিত রাখেন ও তার যত্ন নেন। (যাত্রা. ২১:৯, ১০) বর্তমানে, আমরা মোশির ব্যবস্থা অনুসরণ করি না। কিন্তু, সেটা আমাদের শেখায় যে, ঈশ্বর বিয়ের ব্যবস্থাকে খুবই মূল্যবান হিসেবে দেখেন। এটা নিশ্চিতভাবেই আমাদের বিয়ের ব্যবস্থার প্রতি সম্মান দেখাতে সাহায্য করে।
৭, ৮. (ক) দ্বিতীয় বিবরণ ২৪:১ পদ অনুযায়ী ব্যবস্থায় বিবাহবিচ্ছেদ সম্বন্ধে কী বলা হয়েছিল? (খ) যিহোবা বিবাহবিচ্ছেদকে কীভাবে দেখেন?
৭ ব্যবস্থায় বিবাহবিচ্ছেদ সম্বন্ধে কী বলা হয়েছিল? যদিও যিহোবা কখনোই চাননি, একজন স্বামী ও একজন স্ত্রীর বিবাহবিচ্ছেদ হোক কিন্তু ব্যবস্থা একজন ইস্রায়েলীয় পুরুষকে অনুমতি দিয়েছিল যে, তিনি তার স্ত্রীর সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদ করতে পারতেন, যদি তিনি ‘তাহাতে কোন প্রকার অনুপযুক্ত ব্যবহার দেখিতে পাইতেন।’ (পড়ুন, দ্বিতীয় বিবরণ ২৪:১.) ব্যবস্থা এই বিষয়ে বর্ণনা করেনি যে, “কোন প্রকার অনুপযুক্ত ব্যবহার” হিসেবে কোন বিষয়গুলোকে বিবেচনা করা যেতে পারে। তবে, এটা নিশ্চয়ই কোনো লজ্জাজনক আচরণ অথবা অশুচি বিষয়কে বুঝিয়েছিল, কোনো ছোটোখাটো ভুলকে বোঝায়নি। (দ্বিতীয়. ২৩:১৪) দুঃখের বিষয় হল যিশুর দিনে অনেক যিহুদি পুরুষ তাদের স্ত্রীদের সঙ্গে “যে সে কারণে” বিবাহবিচ্ছেদ করছিল। (মথি ১৯:৩) নিশ্চিতভাবেই, আমরা এইরকম মনোভাব গড়ে তুলতে চাই না।
৮ ভাববাদী মালাখির দিনে এটা খুবই সাধারণ এক বিষয় ছিল যে, একজন পুরুষ তার প্রথম স্ত্রীর সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদ করতেন, হতে পারে এমন কোনো কমবয়সি মহিলাকে বিয়ে করার জন্য, যিনি যিহোবার সেবা করতেন না। কিন্তু, ঈশ্বর একেবারে স্পষ্ট করে দিয়েছিলেন যে, তিনি বিবাহবিচ্ছেদকে কীভাবে দেখেন। তিনি বলেছিলেন: “আমি স্ত্রীত্যাগ” বা বিবাহবিচ্ছেদ “ঘৃণা করি।” (মালাখি ২:১৪-১৬) বিয়ে সম্বন্ধে ঈশ্বরের দৃষ্টিভঙ্গি সেই শুরুর সময় থেকে পরিবর্তিত হয়নি, যখন তিনি বলেছিলেন, একজন পুরুষ “আপন স্ত্রীতে আসক্ত হইবে, এবং তাহারা একাঙ্গ হইবে।” (আদি. ২:২৪) আর যিশু সেইসময়ে বিয়ে সম্বন্ধে তাঁর পিতার দৃষ্টিভঙ্গিকে সমর্থন করেছিলেন, যখন তিনি বলেছিলেন: “ঈশ্বর যাহার যোগ করিয়া দিয়াছেন, মনুষ্য তাহার বিয়োগ না করুক।”—মথি ১৯:৬.
বিবাহবিচ্ছেদ করার একমাত্র কারণ
৯. মার্ক ১০:১১, ১২ পদে বলা যিশুর কথাগুলোর অর্থ কী?
৯ কেউ কেউ জিজ্ঞেস করতে পারে, ‘একজন খ্রিস্টান কি কখনো কোনো কারণে বিবাহবিচ্ছেদ ও পুনর্বিবাহ করতে পারেন?’ লক্ষ করুন, যিশু কী বলেছিলেন: “যে কেহ আপন স্ত্রীকে পরিত্যাগ” বা স্ত্রীর সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদ “করিয়া অন্যাকে বিবাহ করে, সে তাহার বিরুদ্ধে ব্যভিচার করে; আর স্ত্রী যদি আপন স্বামীকে পরিত্যাগ” বা স্বামীর সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদ “করিয়া আর এক জনকে বিবাহ করে, তবে সেও ব্যভিচার করে।” (মার্ক ১০:১১, ১২; লূক ১৬:১৮) স্পষ্টতই, যিশু বিয়ের ব্যবস্থার প্রতি সম্মান দেখিয়েছিলেন এবং চেয়েছিলেন যেন অন্যেরাও এমনটাই করে। একজন পুরুষ যদি তার বিশ্বস্ত স্ত্রীর সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদ করেন ও পুনর্বিবাহ করেন, তা হলে তিনি আসলে ব্যভিচার করবেন। একজন মহিলা যদি তার বিশ্বস্ত স্বামীর সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদ করেন, তা হলে এই একই বিষয় সত্য হবে। এর কারণ হল কেবল বিবাহবিচ্ছেদ করাই বিবাহবন্ধনকে শেষ করে দেয় না। ঈশ্বর তখনও সেই দম্পতিকে “একাঙ্গ” হিসেবে দেখেন। যিশু আরও বলেছিলেন যে, একজন পুরুষ যদি তার নির্দোষ স্ত্রীর সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদ করেন, তা হলে সেই স্ত্রী ব্যভিচার করার ঝুঁকির মুখে থাকবেন। কীভাবে? সেই সময়ে, যে-স্ত্রীর সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদ করা হতো, তিনি হয়তো মনে করতে পারতেন যে, আর্থিকভাবে সাহায্য লাভ করার জন্য তাকে পুনর্বিবাহ করতেই হবে। এই ধরনের এক বিয়ে ব্যভিচার করার মতো একই বিষয় হবে।
১০. একমাত্র কোন কারণে একজন খ্রিস্টান বিবাহবিচ্ছেদ করতে ও পুনর্বিবাহ করার জন্য স্বাধীন হতে পারেন?
১০ যিশু শিখিয়েছিলেন যে, কেবল একটাই কারণ রয়েছে, যেজন্য একজন ব্যক্তি বিবাহবিচ্ছেদ করতে পারেন: “আমি তোমাদিগকে কহিতেছি, ব্যভিচার [“যৌন অনৈতিকতা,” NW] দোষ ব্যতিরেকে যে কেহ আপন স্ত্রীকে পরিত্যাগ” বা স্ত্রীর সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদ “করিয়া অন্যাকে বিবাহ করে, সে ব্যভিচার করে।” (মথি ১৯:৯) তিনি পর্বতেদত্ত উপদেশে এই একই বিষয় উল্লেখ করেছিলেন। (মথি ৫:৩১, ৩২) উভয় সময়েই যিশু “ব্যভিচার [“যৌন অনৈতিকতা,” NW]” সম্বন্ধে উল্লেখ করেছিলেন। যৌন অনৈতিকতার অন্তর্ভুক্ত হতে পারে এই ধরনের পাপ যেমন, ব্যভিচার, বেশ্যাবৃত্তি, অবিবাহিত ব্যক্তিদের মধ্যে যৌনসম্পর্ক, সমকামিতা ও পশুগমন। উদাহরণ স্বরূপ, যদি কোনো বিবাহিত পুরুষ যৌন অনৈতিকতায় লিপ্ত হন, তা হলে তার স্ত্রী সিদ্ধান্ত নিতে পারেন যে, তিনি তার স্বামীর সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদ করবেন কি না। যদি তিনি তার স্বামীর সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদ করেন, তা হলে ঈশ্বর আর তাদের বিবাহিত হিসেবে দেখবেন না।
১১. কেন একজন খ্রিস্টানের বিবাহসাথি অনৈতিকতায় লিপ্ত হওয়া সত্ত্বেও তিনি হয়তো বিবাহবিচ্ছেদ না করার সিদ্ধান্ত নিতে পারেন?
১১ লক্ষ করুন, যিশু এমনটা বলেননি যে, একজন বিবাহিত ব্যক্তি যদি যৌন অনৈতিকতায় লিপ্ত হন, তা হলে নির্দোষ সাথিকে তার সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদ করতেই হবে। উদাহরণ স্বরূপ, একজন স্বামী যৌন অনৈতিকতায় লিপ্ত হওয়া সত্ত্বেও তার স্ত্রী হয়তো তার সঙ্গে বিবাহিত থাকা বেছে নিতে পারেন। কেন? সেই স্ত্রী হয়তো তখনও তার স্বামীকে ভালোবাসেন এবং তিনি হয়তো তাকে ক্ষমা করতে এবং তাদের বিয়েকে উন্নত করার জন্য তার সঙ্গে কাজ করতে ইচ্ছুক। এ ছাড়া, সেই স্ত্রী যদি বিবাহবিচ্ছেদ করেন এবং পুনর্বিবাহ না করেন, তা হলে তিনি নির্দিষ্ট কিছু সমস্যা ভোগ করবেন। উদাহরণ স্বরূপ, তার বস্তুগত ও যৌন প্রয়োজনগুলোর বিষয়ে কী বলা যায়? তিনি কি একাকিত্ব বোধ করবেন? সেই বিবাহবিচ্ছেদ সন্তানদের উপর কোন প্রভাব ফেলবে? তাদের সত্যে বড়ো করে তোলা কি আরও বেশি কঠিন হয়ে উঠবে? (১ করি. ৭:১৪) স্পষ্টতই, যে-নির্দোষ সাথি বিবাহবিচ্ছেদ করা বেছে নেবেন, তিনি গুরুতর সমস্যার মুখোমুখি হবেন।
১২, ১৩. (ক) হোশেয়র বিয়েতে কী ঘটেছিল? (খ) কেন হোশেয় গোমরকে ফিরিয়ে নিয়েছিলেন এবং তার বিয়ে থেকে আমরা কী শিখতে পারি?
১২ ভাববাদী হোশেয়র অভিজ্ঞতা আমাদের এই বিষয়ে অনেক কিছু শেখায় যে, ঈশ্বর বিয়েকে কীভাবে দেখেন। ঈশ্বর হোশেয়কে গোমর নামে একজন মহিলাকে বিয়ে করতে বলেছিলেন, যিনি ‘ব্যভিচারের স্ত্রী’ হবেন এবং ‘ব্যভিচারের সন্তানদিগের’ জন্ম দেবেন। গোমর ও হোশেয়র একটি ছেলে হয়েছিল। (হোশেয় ১:২, ৩) পরবর্তী সময়ে, গোমরের একটি মেয়ে ও আরেকটি ছেলে হয়েছিল, যাদের বাবা সম্ভবত অন্য কোনো পুরুষ ছিলেন। যদিও গোমর একাধিক বার ব্যভিচার করেছিলেন, তারপরও হোশেয় তাদের বিবাহবন্ধন শেষ করে দেননি। একসময়ে, গোমর হোশেয়কে ত্যাগ করেছিলেন এবং অন্য ব্যক্তির দাসী হয়ে উঠেছিলেন। তা সত্ত্বেও, হোশেয় তাকে ফিরিয়ে এনেছিলেন। (হোশেয় ৩:১, ২) যিহোবা হোশেয়কে ব্যবহার করে এটা দেখিয়েছিলেন যে, ইস্রায়েল জাতি তাঁর প্রতি অবিশ্বস্ত হওয়ার ও অন্য দেবতাদের উপাসনা করার পরও কীভাবে তিনি বার বার সেই জাতিকে ক্ষমা করেছিলেন। হোশেয়র বিয়ে থেকে আমরা কী শিখতে পারি?
১৩ একজন খ্রিস্টানের সাথি যদি অনৈতিকতায় লিপ্ত হন, তা হলে সেই নির্দোষ খ্রিস্টানকে একটা সিদ্ধান্ত নিতে হবে। যিশু বলেছিলেন যে, এমনটা হলে নির্দোষ সাথির কাছে বিবাহবিচ্ছেদ করার ও পুনর্বিবাহ করার জন্য স্বাধীন হওয়ার উপযুক্ত কারণ থাকবে। তবে, সেই নির্দোষ ব্যক্তি যদি তার সাথিকে ক্ষমা করা বেছে নেন, তা হলে সেটা ভুল হবে না। হোশেয় গোমরকে ফিরিয়ে নিয়েছিলেন। গোমর হোশেয়র কাছে ফিরে আসার পর হোশেয় তাকে বলেছিলেন যে, তিনি আর অন্য কোনো পুরুষের সঙ্গে যৌন সম্পর্ক করতে পারবেন না। হোশেয় কিছু সময়ের জন্য গোমরের সঙ্গে ‘তদ্রূপ ব্যবহার করিয়াছিলেন’ অর্থাৎ নতুন জগৎ অনুবাদ (ইংরেজি) বাইবেলের পাদটীকা অনুযায়ী হোশেয় গোমরের সঙ্গে ‘সম্পর্ক করেননি।’ (হোশেয় ৩:৩) কিন্তু একসময়ে, হোশেয় নিশ্চয়ই তার স্ত্রীর সঙ্গে আবারও যৌন সম্পর্ক করেছিলেন। এটা চিত্রিত করেছিল যে, কীভাবে ঈশ্বর ইস্রায়েলীয়দের ফিরিয়ে আনার ও তাদের সঙ্গে আবারও সম্পর্ক বজায় রাখার জন্য ইচ্ছুক ছিলেন। (হোশেয় ১:১১; ৩:৩-৫) বর্তমানে, এটা বিয়ে সম্বন্ধে আমাদের কী শেখায়? কোনো নির্দোষ সাথি যদি আবারও তার দোষী সাথির সঙ্গে যৌন সম্পর্ক করতে শুরু করেন, তা হলে এটা দেখাবে যে, নির্দোষ সাথি তার সাথিকে ক্ষমা করে দিয়েছেন। (১ করি. ৭:৩, ৫) এ ক্ষেত্রে, বিবাহবিচ্ছেদ করার কোনো উপযুক্ত কারণ আর থাকবে না। এরপর থেকে সেই স্বামী ও স্ত্রীর ঈশ্বরের মতো করে বিয়েকে দেখার জন্য একসঙ্গে কাজ করা ও একে অন্যকে সাহায্য করা উচিত।
গুরুতর সমস্যার মুখেও বিয়ের ব্যবস্থার প্রতি সম্মান দেখান
১৪. প্রথম করিন্থীয় ৭:১০, ১১ পদ অনুযায়ী একটা বিয়েতে কী ঘটতে পারে?
১৪ সমস্ত খ্রিস্টানেরই যিহোবা ও যিশুর মতো করে বিয়ের ব্যবস্থার প্রতি সম্মান দেখানো উচিত। কিন্তু, কখনো কখনো কেউ কেউ এমনটা করে না কারণ আমরা সবাই অসিদ্ধ। (রোমীয় ৭:১৮-২৩) তাই, আমাদের এটা জেনে অবাক হওয়া উচিত নয় যে, প্রথম শতাব্দীর খ্রিস্টানদের মধ্যে কারো কারো বিয়েতে গুরুতর সমস্যা ছিল। পৌল লিখেছিলেন, “স্ত্রী স্বামীর নিকট হইতে চলিয়া না যাউক” অর্থাৎ পৃথক না থাকুক। কিন্তু, কখনো কখনো এমনটাই হয়েছিল।—পড়ুন, ১ করিন্থীয় ৭:১০, ১১.
১৫, ১৬. (ক) বিয়েতে যদি কোনো সমস্যা দেখা দেয়, তা হলে একটা দম্পতির লক্ষ্য কী হওয়া উচিত এবং কেন? (খ) একজনের বিবাহসাথি যদি যিহোবার সেবা না করেন, তা হলে কীভাবে এটা প্রযোজ্য হয়?
১৫ পৌল ব্যাখ্যা করেননি যে, কোন পরিস্থিতিগুলো দম্পতিদের পৃথক থাকতে পরিচালিত করেছিল। কিন্তু আমরা জানি, সমস্যাটা এমন ছিল না যে, স্বামী যৌন অনৈতিকতায় লিপ্ত হয়েছেন। এমনটা হলে সেই স্ত্রীর কাছে বিবাহবিচ্ছেদ করার ও পুনর্বিবাহ করার কারণ থাকত। পৌল লিখেছিলেন যে, কোনো স্ত্রী যদি তার স্বামীর কাছ থেকে পৃথক থাকেন, তা হলে তার ‘অবিবাহিতা থাকা, কিম্বা স্বামীর সহিত সম্মিলিতা হওয়া’ উচিত। তাই, ঈশ্বর তখনও সেই দম্পতিকে বিবাহিত হিসেবে দেখছিলেন। পৌল বলেছিলেন যে, একটা দম্পতি যেকোনো সমস্যা অথবা কঠিন পরিস্থিতিরই মুখোমুখি হোক না কেন, তাদের মধ্যে কেউই যদি যৌন অনৈতিকতায় লিপ্ত না হয়ে থাকেন, তা হলে তাদের লক্ষ্য হওয়া উচিত সম্মিলিত হওয়া অর্থাৎ তাদের সমস্যা সমাধান করা ও একসঙ্গে থাকা। তারা প্রাচীনদের কাছে সাহায্য চাইতে পারেন। প্রাচীনরা কারো পক্ষ নেবেন না, তবে তারা বাইবেল থেকে ব্যাবহারিক পরামর্শ দিতে পারেন।
১৬ কিন্তু, একজন খ্রিস্টানের বিবাহসাথি যদি যিহোবার সেবা না করেন, তা হলে? তাদের বিয়েতে যদি কোনো সমস্যা দেখা দেয়, তা হলে পৃথক থাকা কি গ্রহণযোগ্য হবে? ইতিমধ্যেই যেমন উল্লেখ করা হয়েছে, বাইবেল বলে যৌন অনৈতিকতা হল বিবাহবিচ্ছেদ করার একটা উপযুক্ত কারণ। কিন্তু, বাইবেল এটা উল্লেখ করে না যে, কোন কারণগুলোর জন্য একটা দম্পতি পৃথক থাকতে পারেন। পৌল লিখেছিলেন: “যে স্ত্রীর অবিশ্বাসী স্বামী আছে, আর সেই ব্যক্তি তাহার সহিত বাস করিতে সম্মত হয়, তবে সে স্বামীকে পরিত্যাগ না করুক।” (১ করি. ৭:১২, ১৩) এটা বর্তমানেও প্রযোজ্য।
১৭, ১৮. কেন কোনো কোনো খ্রিস্টান গুরুতর সমস্যা সত্ত্বেও বিবাহিত থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে?
১৭ তবে, এমন কিছু পরিস্থিতি দেখা গিয়েছে, যখন একজন “অবিশ্বাসী স্বামী” দেখিয়েছেন যে, তিনি তার স্ত্রীর সঙ্গে “বাস করিতে সম্মত” নন। উদাহরণ স্বরূপ, সেই স্বামী হয়তো অতিরিক্ত শারীরিক নির্যাতন করেন, হতে পারে এতটাই বেশি নির্যাতন করেন যে, তার স্ত্রী মনে করেন, তার স্বাস্থ্য অথবা জীবন ঝুঁকির মুখে রয়েছে। তিনি হয়তো তার স্ত্রীকে ও পরিবারকে বস্তুগত দিক দিয়ে সাহায্য করতে প্রত্যাখ্যান করেন অথবা স্ত্রীর পক্ষে ঈশ্বরের সেবা করাকে অসম্ভব করে তোলেন। এই ধরনের পরিস্থিতিতে একজন খ্রিস্টান স্ত্রী হয়তো ব্যক্তিগতভাবে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন যে, তার স্বামী যা-ই বলুক না কেন, তিনি তার সঙ্গে “বাস করিতে সম্মত” নন আর পৃথক থাকা প্রয়োজনীয়। কিন্তু, একইরকম পরিস্থিতিতে থাকা অন্যান্য খ্রিস্টানরা তাদের সাথির সঙ্গে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তারা ধৈর্য ধরেছে এবং তাদের বিয়েকে উন্নত করার জন্য কাজ করার চেষ্টা করেছে। কেন তারা এইরকম সিদ্ধান্ত নিয়েছে?
১৮ যদি কোনো দম্পতি এই ধরনের পরিস্থিতিতে পৃথক থাকার সিদ্ধান্ত নেন, তা হলে তারা তখনও বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ থাকবেন এবং সেই সমস্যাগুলো ভোগ করবেন, যেগুলোর বিষয়ে আমরা আগে উল্লেখ করেছি। প্রেরিত পৌল দম্পতিদের একসঙ্গে থাকার জন্য আরেকটা কারণ দিয়েছিলেন। তিনি লিখেছিলেন: “অবিশ্বাসী স্বামী সেই স্ত্রীতে পবিত্রীকৃত হইয়াছে, এবং অবিশ্বাসিনী স্ত্রী সেই ভ্রাতাতে পবিত্রীকৃতা হইয়াছে; তাহা না হইলে তোমাদের সন্তানগণ অশুচি হইত, কিন্তু বাস্তবিক তাহারা পবিত্র।” (১ করি. ৭:১৪) অনেক খ্রিস্টান তাদের ন-সাক্ষি বিবাহসাথির সঙ্গে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যদিও তাদের পরিস্থিতি খুবই কঠিন ছিল। তারা এইরকম ত্যাগস্বীকার করার জন্য সেইসময়ে বিশেষভাবে আনন্দিত হয়েছে, যখন পরবর্তী সময়ে তাদের সাথি একজন যিহোবার সাক্ষি হয়েছেন।—পড়ুন, ১ করিন্থীয় ৭:১৬; ১ পিতর ৩:১, ২.
১৯. কেন খ্রিস্টীয় মণ্ডলীতে এত বেশি দম্পতি রয়েছে, যারা সফল বিবাহিত জীবন উপভোগ করছে?
১৯ যিশু বিবাহবিচ্ছেদ সম্বন্ধে পরামর্শ দিয়েছিলেন এবং প্রেরিত পৌল পৃথক থাকার বিষয়ে পরামর্শ দিয়েছিলেন। তারা দু-জনেই চেয়েছিলেন যেন ঈশ্বরের দাসেরা বিয়ের ব্যবস্থার প্রতি সম্মান দেখায়। বর্তমানে, বিশ্বব্যাপী খ্রিস্টীয় মণ্ডলীতে এমন অনেক দম্পতি রয়েছে, যারা সফল বিবাহিত জীবন উপভোগ করছে। আপনি সম্ভবত আপনার মণ্ডলীতে এমন অনেক সুখী বিয়ের উদাহরণ খুঁজে পেতে পারেন, যেখানে অনুগত স্বামীরা তাদের স্ত্রীদের ভালোবাসে এবং প্রেমময় স্ত্রীরা তাদের স্বামীদের সম্মান করে। তারা সবাই দেখায় যে, বিয়ে সম্মাননীয় হতে পারে। আর আমরা আনন্দিত হতে পারি যে, লক্ষ লক্ষ স্বামী ও স্ত্রী ঈশ্বরের এই কথাগুলোকে সত্য বলে প্রমাণিত করছে: “মনুষ্য আপন পিতা মাতাকে ত্যাগ করিয়া আপন স্ত্রীতে আসক্ত হইবে, এবং সেই দুই জন একাঙ্গ হইবে।”—ইফি. ৫:৩১, ৩৩.