অধ্যায় ৫
যেভাবে জগৎ থেকে পৃথক থাকা যায়
“তোমরা ত জগতের নহ।” —যোহন ১৫:১৯.
১. একজন মানুষ হিসেবে পৃথিবীতে তাঁর শেষ রাতে যিশু কোন বিষয়টার উপর জোর দিয়েছিলেন?
একজন মানুষ হিসেবে পৃথিবীতে তাঁর শেষ রাতে, যিশু তাঁর অনুসারীদের ভাবী মঙ্গল নিয়ে গভীর চিন্তা প্রকাশ করেছিলেন। তিনি এমনকী বিষয়টা নিয়ে প্রার্থনাও করেছিলেন, তাঁর পিতাকে বলেছিলেন: “আমি নিবেদন করিতেছি না যে, তুমি তাহাদিগকে জগৎ হইতে লইয়া যাও, কিন্তু তাহাদিগকে সেই পাপাত্মা হইতে রক্ষা কর। তাহারা জগতের নয়, যেমন আমিও জগতের নই।” (যোহন ১৭:১৫, ১৬) এই আন্তরিক অনুরোধের মধ্যে যিশু তাঁর অনুসারীদের জন্য তাঁর গভীর প্রেম ও সেইসঙ্গে সেই রাতের আগেও তাদের মধ্যে কিছু জনকে বলা তাঁর এই কথার গুরুত্ব প্রকাশ করেছিলেন: “তোমরা ত জগতের নহ।” (যোহন ১৫:১৯) স্পষ্টতই, এই বিষয়টা যিশুর কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল যে, তাঁর অনুসারীরা যেন জগৎ থেকে পৃথক থাকে!
২. যিশুর উল্লেখিত “জগৎ” বলতে কী বোঝায়?
২ যিশুর উল্লেখিত “জগৎ” শব্দটা সেইসমস্ত মানবজাতিকে নির্দেশ করে, যারা ঈশ্বরের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন, শয়তানের দ্বারা শাসিত ও সেইসঙ্গে তার কাছ থেকে উদ্ভূত স্বার্থপর এবং গর্বিত মনোভাবের দাস। (যোহন ১৪:৩০; ইফিষীয় ২:২; ১ যোহন ৫:১৯) সত্যিই, “[সেই] জগতের মিত্রতা ঈশ্বরের সহিত শত্রুতা।” (যাকোব ৪:৪) তাহলে, যারা ঈশ্বরের প্রেমে অবস্থিতি করতে চায়, তারা সকলে কীভাবে জগতের মধ্যে থেকেও জগৎ থেকে পৃথক থাকতে পারে? আমরা পাঁচটা উপায় বিবেচনা করব: খ্রিস্টের অধীনস্থ ঈশ্বরের রাজ্যের প্রতি অনুগত এবং জাগতিক রাজনীতির ব্যাপারে নিরপেক্ষ থাকার মাধ্যমে, জগতের আত্মাকে প্রতিরোধ করার মাধ্যমে, আমাদের পোশাক-আশাক ও সাজগোজের ব্যাপারে শালীনতা বজায় রাখার মাধ্যমে, আমাদের জীবনকে সরল রাখার মাধ্যমে এবং আধ্যাত্মিক যুদ্ধসজ্জা পরিধান করার মাধ্যমে।
অনুগত ও নিরপেক্ষ থাকা
৩. (ক) যিশু তাঁর দিনের রাজনীতিকে কোন দৃষ্টিতে দেখেছিলেন? (খ) কেন এটা বলা যেতে পারে যে, যিশুর অভিষিক্ত অনুসারীরা রাজদূত হিসেবে সেবা করে থাকে? (পাদটীকা অন্তর্ভুক্ত করুন।)
৩ তাঁর দিনের রাজনীতিতে অংশ নেওয়ার পরিবর্তে, যিশু সেই ভাবী স্বর্গীয় সরকার, ঈশ্বরের রাজ্য সম্বন্ধে প্রচার করার উপর মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করেছিলেন, যার সম্ভাব্য রাজা ছিলেন তিনি নিজেই। (দানিয়েল ৭:১৩, ১৪; লূক ৪:৪৩; ১৭:২০, ২১) তাই, রোমীয় দেশাধ্যক্ষ পন্তীয় পীলাতের সামনে যিশু বলতে পেরেছিলেন: “আমার রাজ্য এ জগতের নয়।” (যোহন ১৮:৩৬) তাঁর বিশ্বস্ত অনুসারীরা, খ্রিস্ট ও তাঁর রাজ্যের প্রতি তাদের আনুগত্য প্রদর্শন এবং জগতের কাছে সেই রাজ্য সম্বন্ধে ঘোষণা করার মাধ্যমে তাঁর উদাহরণ অনুকরণ করে থাকে। (মথি ২৪:১৪) “খ্রীষ্টের পক্ষেই আমরা রাজ-দূতের কর্ম্ম করিতেছি,” প্রেরিত পৌল লিখেছিলেন। “আমরা খ্রীষ্টের পক্ষে এই বিনতি করিতেছি, তোমরা ঈশ্বরের সহিত সম্মিলিত হও।”a—২ করিন্থীয় ৫:২০.
৪. কীভাবে সমস্ত সত্য খ্রিস্টান ঈশ্বরের রাজ্যের পক্ষে আনুগত্য প্রদর্শন করেছে? (“প্রাথমিক নিরপেক্ষ খ্রিস্টানরা” শিরোনামের বাক্সটা দেখুন।)
৪ যেহেতু রাজদূতেরা কোনো বিদেশি শাসক অথবা রাষ্ট্রকে প্রতিনিধিত্ব করেন, তাই তারা যে-দেশগুলোতে সেবা করেন, সেখানকার আভ্যন্তরীণ ব্যাপারগুলোতে হস্তক্ষেপ করেন না; তারা নিরপেক্ষ থাকেন। কিন্তু, রাজদূতেরা যে-দেশকে প্রতিনিধিত্ব করেন, সেই দেশের সরকারকে সমর্থন করে থাকেন। খ্রিস্টের অভিষিক্ত অনুসারীদের বেলায়ও একই বিষয় সত্য, যারা “স্বর্গপুরীর প্রজা।” (ফিলিপীয় ৩:২০) বস্তুতপক্ষে, তাদের উদ্যোগী রাজ্যের প্রচার কাজের দরুণ তারা খ্রিস্টের লক্ষ লক্ষ ‘আরও মেষকে’ ‘ঈশ্বরের সহিত সম্মিলিত হইবার’ জন্য সাহায্য করেছেন। (যোহন ১০:১৬; মথি ২৫:৩১-৪০) এই আরও মেষের অন্তর্ভুক্ত লোকেরা যিশুর অভিষিক্ত ভাইদের সমর্থন করে খ্রিস্টের দূত হিসেবে সেবা করে। মশীহ রাজ্যকে সমর্থন করে এমন একতাবদ্ধ এক পাল হিসেবে দু-দলই জগতের রাজনৈতিক ব্যাপারগুলোতে কঠোর নিরপেক্ষতা বজায় রাখে।—পড়ুন, যিশাইয় ২:২-৪.
৫. কীভাবে খ্রিস্টীয় মণ্ডলী প্রাচীন ইস্রায়েল থেকে ভিন্ন আর কীভাবে এই ভিন্নতা প্রকাশ পায়?
৫ খ্রিস্টের প্রতি আনুগত্যই, সত্য খ্রিস্টানদের নিরপেক্ষ থাকার একমাত্র কারণ নয়। ঈশ্বরের প্রাচীন লোকেরা কেবল একটা দেশে বাস করত কিন্তু আজকে আমরা এক আন্তর্জাতিক ভ্রাতৃসমাজের অংশ। (মথি ২৮:১৯; ১ পিতর ২:৯) তাই, আমরা যদি স্থানীয় রাজনৈতিক দলগুলোকে সমর্থন করি, তাহলে রাজ্যের বার্তার বিষয়ে আমাদের নির্দ্বিধায় কথা বলার ক্ষমতা এবং আমাদের খ্রিস্টীয় নিরপেক্ষতা চরম ঝুঁকির মুখে পড়বে। (১ করিন্থীয় ১:১০) অধিকন্তু, যুদ্ধের সময় আমরা আমাদের সহবিশ্বাসীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করব, যাদেরকে কিনা প্রেম করার জন্য আমাদেরকে আজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। (যোহন ১৩:৩৪, ৩৫; ১ যোহন ৩:১০-১২) সুতরাং, উপযুক্ত কারণেই যিশু তাঁর শিষ্যদের লড়াই করা থেকে বিরত থাকতে বলেছিলেন। আর তিনি এমনকী তাদেরকে শত্রুদেরও প্রেম করতে বলেছিলেন।—মথি ৫:৪৪; ২৬:৫২; “আমি কি নিরপেক্ষ আছি?” শিরোনামের বাক্সটা দেখুন।
৬. কীভাবে ঈশ্বরের প্রতি আপনার উৎসর্গীকরণ কৈসরের সঙ্গে আপনার সম্পর্ককে প্রভাবিত করে?
৬ সত্য খ্রিস্টান হিসেবে আমরা ঈশ্বরের কাছে আমাদের জীবন উৎসর্গ করেছি, কোনো মানুষ, মানব প্রতিষ্ঠান অথবা জাতির কাছে নয়। ১ করিন্থীয় ৬:২০ পদ বলে: “তোমরা নিজের নও, কারণ মূল্য দ্বারা ক্রীত হইয়াছ।” তাই, যদিও যিশুর অনুসারীরা সম্মান ও কর প্রদান করার এবং আপেক্ষিকভাবে বশ্যতা দেখানোর মাধ্যমে কৈসরের প্রাপ্য কৈসরকে দিয়ে থাকে কিন্তু তারা “ঈশ্বরের যাহা যাহা, ঈশ্বরকে” প্রদান করে। (মার্ক ১২:১৭; রোমীয় ১৩:১-৭) এর অন্তর্ভুক্ত, তাদের উপাসনা, পূর্ণহৃদয়ের প্রেম এবং অনুগত বাধ্যতা। প্রয়োজন হলে ঈশ্বরের জন্য তারা তাদের জীবন দিতেও প্রস্তুত রয়েছে।—লূক ৪:৮; ১০:২৭; পড়ুন, প্রেরিত ৫:২৯; রোমীয় ১৪:৮.
“জগতের আত্মাকে” প্রতিরোধ করা
৭, ৮. ‘জগতের আত্মা’ কী আর কীভাবে সেই আত্মা অবাধ্য ব্যক্তিদের মধ্যে “কার্য্য” করে?
৭ আরেকটা যে-উপায়ে খ্রিস্টানরা জগৎ থেকে পৃথক থাকে তা হল, জগতের মন্দ আত্মাকে প্রতিরোধ করার মাধ্যমে। “আমরা জগতের আত্মাকে পাই নাই, বরং ঈশ্বর হইতে নির্গত আত্মাকে পাইয়াছি,” প্রেরিত পৌল লিখেছিলেন। (১ করিন্থীয় ২:১২) ইফিষীয়দের উদ্দেশে তিনি বলেছিলেন: “তোমরা পূর্ব্বে চলিতে, এই জগতের . . . অনুসারে, আকাশের [“বাতাসের,” NW] কর্ত্তৃত্বাধিপতির অনুসারে, যে আত্মা এখনঅ বাধ্যতার সন্তানগণের মধ্যে কার্য্য করিতেছে।”—ইফিষীয় ২:২, ৩.
৮ জগতের ‘বাতাস’ অথবা আত্মা হল এক অদৃশ্য, প্ররোচনাকারী শক্তি, যা ঈশ্বরের প্রতি অবাধ্যতাকে উসকে দেয় এবং ‘মাংসের অভিলাষ, চক্ষুর অভিলাষকে’ জাগিয়ে তোলে। (১ যোহন ২:১৬; ১ তীমথিয় ৬:৯, ১০) এই আত্মা পাপপূর্ণ মাংসের কাছে এর আবেদন, এর চতুরতা, এর নির্দয়তা এবং বায়ুর মতো এর পরিব্যাপকতার দ্বারা জগতের উপর ‘কর্ত্তৃত্ব’ করে থাকে। অধিকন্তু, এটা অবাধ্য ব্যক্তিদের মধ্যে এই ধরনের ভক্তিহীন বৈশিষ্ট্যগুলো ধীরে ধীরে গড়ে তোলার মাধ্যমে “কার্য্য” করে থাকে যেমন, স্বার্থপরতা, উদ্ধত মনোভাব, লোভাতুর উচ্চাকাঙ্ক্ষা এবং নৈতিক দিক দিয়ে স্বাধীনচেতা ও বিদ্রোহী মনোভাব।b সহজভাবে বললে, জগতের আত্মা ক্রমান্বয়ে দিয়াবলের বৈশিষ্ট্যগুলোকে মানুষের হৃদয়ে গড়ে উঠতে মদত জোগায়।—যোহন ৮:৪৪; প্রেরিত ১৩:১০; ১ যোহন ৩:৮, ১০.
৯. কোন কোন উপায়ে জগতের আত্মা আমাদের মনে ও হৃদয়ে প্রবেশ করতে পারে?
৯ জগতের আত্মা কি আপনার মনে ও হৃদয়ে শিকড় গজাতে পারে? হ্যাঁ, তবে একমাত্র তখনই, যখন আপনি অসতর্ক হওয়ার মাধ্যমে সেটাকে তা করার সুযোগ দেন। (পড়ুন, হিতোপদেশ ৪:২৩.) বেশিরভাগ সময়ই এর প্রভাব অত্যন্ত সূক্ষ্মভাবে শুরু হয়, হতে পারে সেই সংসর্গের মাধ্যমে, যাদেরকে দেখতে হয়তো ভালো লোক বলে মনে হয় কিন্তু বস্তুতপক্ষে যিহোবার প্রতি তাদের কোনো প্রেমই নেই। (হিতোপদেশ ১৩:২০; ১ করিন্থীয় ১৫:৩৩) এ ছাড়া, আপনি আপত্তিকর সাহিত্যাদি, পর্নোগ্রাফি অথবা ধর্মভ্রষ্ট ইন্টারনেট সাইট, ক্ষতিকর আমোদপ্রমোদ এবং চরম প্রতিযোগিতামূলক খেলাধূলার মাধ্যমে—প্রকৃতপক্ষে, শয়তান অথবা তার বিধিব্যবস্থার চিন্তাধারা প্রকাশ করে এমন যেকারো অথবা যেকোনো কিছুর মাধ্যমে—সেই মন্দ আত্মাকে ধারণ করতে পারেন।
১০. কীভাবে আমরা জগতের আত্মাকে প্রতিরোধ করতে পারি?
১০ কীভাবে আমরা জগতের প্রতারণাপূর্ণ আত্মাকে প্রতিরোধ করতে এবং নিজেদেরকে ঈশ্বরের প্রেমে রক্ষা করতে পারি? একমাত্র যিহোবার আধ্যাত্মিক ব্যবস্থাগুলো থেকে পূর্ণ উপকার লাভ করার এবং ক্রমাগত পবিত্র আত্মার জন্য প্রার্থনা করার মাধ্যমে। দিয়াবল অথবা শয়তানের নিয়ন্ত্রণাধীন দুষ্ট জগৎ থেকে যিহোবা আরও অনেক বেশি মহান। (১ যোহন ৪:৪) তাই, প্রার্থনায় যিহোবার নিকটবর্তী থাকা আমাদের জন্য কতই-না গুরুত্বপূর্ণ!
আমাদের পোশাক-আশাক ও সাজগোজের ব্যাপারে শালীনতা বজায় রাখা
১১. কীভাবে জগতের আত্মা পোশাক-আশাকের মানের উপর প্রভাব ফেলেছে?
১১ আত্মার যে-বাহ্যিক লক্ষণ একজন ব্যক্তিকে প্ররোচিত করে, তা হল তার পোশাক-আশাক, সাজগোজ এবং পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা। অনেক দেশে পোশাক-আশাকের মান এতটাই নীচে নেমে গিয়েছে যে, টেলিভিশনের একজন ভাষ্যকার বলেছিলেন, শীঘ্র যৌনকর্মীদের জন্য পরার মতো আর কোনো কিছুই অবশিষ্ট থাকবে না। এমনকী এখনও কিশোর বয়সে পৌঁছায়নি এমন মেয়েরাও এই প্রবণতার দ্বারা প্রভাবিত হয়েছে—“অবাধে শরীর দেখানো অথচ শালীনতা দেখাতে কার্পণ্য করা,” যেমনটা একটা সংবাদপত্রের রিপোর্ট বলে। আরেকটা প্রবণতা হল, অগোছালোভাবে পোশাক-আশাক পরা, যা এক বিদ্রোহী মনোভাব ও সেইসঙ্গে মর্যাদা এবং আত্মসম্মানের অভাবকে প্রতিফলিত করে।
১২, ১৩. আমাদের পোশাক-আশাক ও সাজগোজ কোন নীতিগুলোর দ্বারা পরিচালিত হওয়া উচিত?
১২ যিহোবার দাস হিসেবে আমরা উপযুক্তভাবেই চাই যেন আমাদেরকে দেখতে ভালো দেখায়, যার অর্থ এমনভাবে পোশাক-আশাক পরা, যা পরিপাটী, পরিচ্ছন্ন, রুচিসম্মত এবং উপলক্ষ্য অনুযায়ী উপযুক্ত। সবসময় আমাদের বেশভূষায় শালীনতা বা ‘সলজ্জ ও সুবুদ্ধিভাব’ প্রকাশ পাওয়া উচিত, যা ‘সৎক্রিয়ার’ সঙ্গে সঙ্গে “ঈশ্বর-ভক্তি অঙ্গীকারিণী” যেকারো—পুরুষ অথবা নারীর—জন্য উপযুক্ত। অবশ্য, আমাদের প্রধান চিন্তার বিষয় হল নিজেদের প্রতি মনোযোগ আকর্ষণ করা নয় বরং ‘ঈশ্বরের প্রেমে আপনাদিগকে রক্ষা করা।’ (১ তীমথিয় ২:৯, ১০; যিহূদা ২১) হ্যাঁ, আমরা চাই আমাদের সবচেয়ে সুন্দর ভূষণ যেন হয় “হৃদয়ের গুপ্ত মনুষ্য . . . [যাহা] ঈশ্বরের দৃষ্টিতে বহুমূল্য।”—১ পিতর ৩:৩, ৪.
১৩ এ ছাড়া, এও মনে রাখবেন যে, আমাদের পোশাক-আশাকের ধরন ও সাজগোজ, অন্যেরা সত্য উপাসনাকে কীভাবে দেখে, সেটার উপরও প্রভাব ফেলে। যে-গ্রিক শব্দকে ‘সলজ্জ’ বা শালীনতা হিসেবে অনুবাদ করা হয়েছে, তা যখন নৈতিক অর্থে ব্যবহৃত হয়, তখন শ্রদ্ধা, সশ্রদ্ধ ভয় ও অন্যদের অনুভূতি বা মতামতের প্রতি সম্মানের ধারণা প্রকাশ করে। তাই, আমাদের লক্ষ্য হওয়া উচিত, অন্যদের বিবেককে আমাদের তথাকথিত অধিকারগুলোর চেয়ে অগ্রাধিকার দেওয়া। সর্বোপরি, আমরা যিহোবা ও তাঁর লোকেদের জন্য সম্মান নিয়ে আসতে এবং নিজেদেরকে ঈশ্বরের পরিচারক বলে যোগ্যপাত্র দেখাতে চাই ও “সকলই ঈশ্বরের গৌরবার্থে” করতে চাই।—১ করিন্থীয় ১০:৩১; ২ করিন্থীয় ৬:৩, ৪; ৭:১.
১৪. আমাদের বেশভূষা ও পরিচ্ছন্নতার ক্ষেত্রে নিজেদেরকে কোন প্রশ্নগুলো জিজ্ঞেস করা উচিত?
১৪ আমাদের পোশাক-আশাক, সাজগোজ এবং পরিচ্ছন্নতা সেই সময় আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ, যখন আমরা ক্ষেত্রের পরিচর্যায় রত থাকি অথবা কোনো খ্রিস্টীয় সভায় যোগদান করি। নিজেকে জিজ্ঞেস করুন: ‘আমার বেশভূষা ও ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতা কি অন্যদেরকে আমার প্রতি অযথা আকর্ষণ করায়? সেগুলো কি অন্যদের বিব্রত করে? এই ক্ষেত্রগুলোতে আমি কি আমার অধিকারগুলোকে মণ্ডলীতে পরিচর্যার বিশেষ সুযোগগুলোর জন্য যোগ্য হওয়ার চেয়ে আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করি?’—লূক ১৪:১১; ১ পিতর ৫:৬.
১৫. কেন ঈশ্বরের বাক্য পোশাক-আশাক, সাজগোজ ও পরিচ্ছন্নতার বিষয়ে নিয়মের কোনো তালিকা দেয় না?
১৫ পোশাক-আশাক, সাজগোজ এবং পরিচ্ছন্নতার বিষয়ে বাইবেল খ্রিস্টানদের জন্য নিয়মের কোনো তালিকা দেয়নি। আমাদের বেছে নেওয়ার অথবা আমাদের চিন্তাশক্তিকে ব্যবহার করার স্বাধীনতাকে অগ্রাহ্য করার কোনো আকাঙ্ক্ষা যিহোবার নেই। এর পরিবর্তে, তিনি চান যেন আমরা এমন পরিপক্ব ব্যক্তি হয়ে উঠি, যারা বাইবেলের নীতিগুলো নিয়ে যুক্তি করে এবং যাদের “জ্ঞানেন্দ্রিয় সকল অভ্যাস প্রযুক্ত সদসৎ বিষয়ের বিচারণে পটু হইয়াছে।” (ইব্রীয় ৫:১৪) সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল, তিনি চান যেন আমরা প্রেমের—ঈশ্বর ও প্রতিবেশীদের প্রতি প্রেমের—দ্বারা পরিচালিত হই। (পড়ুন, মার্ক ১২:৩০, ৩১.) সেই সীমার মধ্যে পোশাক-আশাক ও সাজগোজের ব্যাপারে প্রচুর বৈচিত্র্যের সম্ভাবনা রয়েছে। এর প্রমাণ রংবেরঙের পোশাক-আশাকে সজ্জিত যিহোবার লোকেদের আনন্দিত দলের মধ্যে দেখা যেতে পারে, তা তারা পৃথিবীর যেখানেই একত্রিত হোক না কেন।
আমাদের জীবনকে সরল রাখা
১৬. কীভাবে জগতের আত্মা যিশুর শিক্ষার বিপরীত আর নিজেদেরকে কোন প্রশ্নগুলো জিজ্ঞেস করা উচিত?
১৬ জগতের আত্মা প্রতারণামূলক এবং এটা লক্ষ লক্ষ লোককে সুখের জন্য টাকাপয়সা রোজগার করার ও বস্তুগত বিষয়ের পিছনে ছুটতে প্ররোচিত করে। কিন্তু, যিশু বলেছিলেন: “উপচিয়া পড়িলেও মনুষ্যের সম্পত্তিতে তাহার জীবন হয় না।” (লূক ১২:১৫) যদিও যিশু সন্ন্যাস জীবন অথবা চরম আত্মত্যাগমূলক জীবনকে অনুমোদন করেন না, তবে তিনি শিখিয়েছিলেন যে, সেই ব্যক্তিরা জীবন ও প্রকৃত ‘সুখ’ উপভোগ করে, যারা “তাদের আধ্যাত্মিক চাহিদা সম্বন্ধে সচেতন” এবং যারা আধ্যাত্মিক বিষয়গুলোর উপর কেন্দ্র করে সরলভাবে জীবনযাপন করে। (মথি ৫:৩, NW; ৬:২২) নিজেকে জিজ্ঞেস করুন: ‘যিশু যা শিক্ষা দিয়েছিলেন, তা কি আমি প্রকৃতই বিশ্বাস করি না কি আমি “মিথ্যাবাদীর পিতার” দ্বারা প্রভাবিত হচ্ছি?’ (যোহন ৮:৪৪) ‘আমার কথাবার্তা, আমার লক্ষ্য, আমার অগ্রাধিকারগুলো এবং আমার জীবনধারা কী প্রকাশ করে?’—লূক ৬:৪৫; ২১:৩৪-৩৬; ২ যোহন ৬.
১৭. যারা সরলভাবে জীবনযাপন করে, তারা যে-উপকারগুলো উপভোগ করে, সেগুলোর কয়েকটা বলুন।
১৭ “প্রজ্ঞা নিজ কর্ম্মসমূহ দ্বারা নির্দ্দোষ বলিয়া গণিত হয়,” যিশু বলেছিলেন। (মথি ১১:১৯) যারা সরলভাবে জীবনযাপন করে, তারা যে-উপকারগুলো লাভ করে, সেগুলোর মাত্র কয়েকটা বিবেচনা করুন। তারা রাজ্যের পরিচর্যায় প্রকৃত বিশ্রাম বা সতেজতা খুঁজে পায়। (মথি ১১:২৯, ৩০) তারা অযথা উদ্বিগ্নতা এড়িয়ে চলে আর এভাবে অনেক মানসিক ও আবেগগত যন্ত্রণা থেকে নিজেদের মুক্ত রাখে। (পড়ুন, ১ তীমথিয় ৬:৯, ১০.) জীবনের প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো পেয়ে সন্তুষ্ট থাকায়, পরিবার ও খ্রিস্টান বন্ধুবান্ধবদের জন্য তাদের আরও বেশি সময় রয়েছে। এর ফলে তারা হয়তো আরও ভালোভাবে ঘুমাতে পারে। (উপদেশক ৫:১২) তারা দান করার প্রচুর আনন্দ লাভ করে, তা তারা তাদের সাধ্যমতো যেভাবেই করুক না কেন। (প্রেরিত ২০:৩৫) আর তারা “প্রত্যাশায় উপচিয়া” পড়ে এবং তাদের মনের শান্তি ও পরিতৃপ্তি রয়েছে। (রোমীয় ১৫:১৩; মথি ৬:৩১, ৩২) এই আশীর্বাদগুলো সত্যিই অমূল্য!
“সমগ্র যুদ্ধসজ্জা” গ্রহণ করা
১৮. কীভাবে বাইবেল আমাদের শত্রু, তার পদ্ধতিগুলো এবং আমাদের লড়াইয়ের ধরন সম্বন্ধে বর্ণনা করে?
১৮ যারা নিজেদেরকে ঈশ্বরের প্রেমে রক্ষা করে, তারা ঈশ্বরকে সেবা করার ক্ষেত্রে তাদেরকে বিরত করার জন্য শয়তানের প্রচেষ্টাগুলো থেকে সুরক্ষিত থাকে, যে খ্রিস্টানদেরকে কেবল সুখ থেকেই নয় কিন্তু অনন্তজীবন থেকেও বঞ্চিত করতে চায়। (১ পিতর ৫:৮) পৌল বলেছিলেন, “রক্তমাংসের সহিত নয়, কিন্তু আধিপত্য সকলের সহিত, কর্ত্তৃত্ব সকলের সহিত, এই অন্ধকারের জগৎপতিদের সহিত, স্বর্গীয় স্থানে দুষ্টতার আত্মাগণের সহিত আমাদের মল্লযুদ্ধ হইতেছে।” (ইফিষীয় ৬:১২) “মল্লযুদ্ধ” শব্দটা দেখায় যে, আমাদের লড়াই দূর থেকে—রূপকভাবে বললে গুপ্ত স্থানে নিরাপত্তার মধ্যে থেকে—নয় বরং সামনাসামনি। অধিকন্তু, “আধিপত্য,” “কর্ত্তৃত্ব” এবং “জগৎপতিদের” শব্দগুলো ইঙ্গিত দেয় যে, আত্মিক জগৎ থেকে আসা আক্রমণগুলো অত্যন্ত সংগঠিত এবং পরিকল্পিত।
১৯. খ্রিস্টীয় আধ্যাত্মিক যুদ্ধসজ্জা সম্বন্ধে বর্ণনা করুন।
১৯ কিন্তু, মানবত্রুটি এবং সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও আমরা জয়ী হতে পারি। কীভাবে? “ঈশ্বরের সমগ্র যুদ্ধসজ্জা” গ্রহণ করার মাধ্যমে। (ইফিষীয় ৬:১৩) সেই যুদ্ধসজ্জা সম্বন্ধে বর্ণনা করতে গিয়ে ইফিষীয় ৬:১৪-১৮ পদ বলে: “অতএব সত্যের কটিবন্ধনীতে বদ্ধকটি হইয়া, ধার্ম্মিকতার বুকপাটা পরিয়া, এবং শান্তির সুসমাচারের সুসজ্জতার পাদুকা চরণে দিয়া দাঁড়াইয়া থাক; এই সকল ছাড়া বিশ্বাসের ঢালও গ্রহণ কর, যাহার দ্বারা তোমরা সেই পাপাত্মার সমস্ত অগ্নিবাণ নির্ব্বাণ করিতে পারিবে; এবং পরিত্রাণের [বা আশার] শিরস্ত্রাণ ও আত্মার খড়গ, অর্থাৎ ঈশ্বরের বাক্য গ্রহণ কর। সর্ব্ববিধ প্রার্থনা ও বিনতি সহকারে সর্ব্বসময়ে আত্মাতে প্রার্থনা কর।”
২০. কীভাবে আমাদের পরিস্থিতি একজন আক্ষরিক সৈন্য থেকে ভিন্ন?
২০ যেহেতু এটা ঈশ্বরের কাছ থেকে একটা ব্যবস্থা, তাই সেই আধ্যাত্মিক যুদ্ধসজ্জা আমরা যতক্ষণ পর্যন্ত সবসময় পরে থাকব, ততক্ষণ পর্যন্ত আমরা ব্যর্থ হব না। লড়াই থেকে হয়তো দীর্ঘ সময় ধরে বিরত রয়েছে এমন আক্ষরিক সৈন্যদের বিপরীতে, খ্রিস্টানরা জীবন-মৃত্যুর এক অবিরাম লড়াইয়ে জড়িত রয়েছে, যা ঈশ্বর শয়তানের জগৎ ধ্বংস না করা এবং সমস্ত দুষ্ট আত্মাকে অগাধলোকে আটকে না রাখা পর্যন্ত বন্ধ হবে না। (প্রকাশিত বাক্য ১২:১৭; ২০:১-৩) তাই, আপনি যদি দুর্বলতা অথবা মন্দ আকাঙ্ক্ষাগুলোর সঙ্গে লড়াই করে থাকেন, তাহলে হাল ছেড়ে দেবেন না কারণ আমাদের সকলেরই নিজেকে “প্রহার” করতে হয়, যাতে আমরা যিহোবার প্রতি বিশ্বস্ত থাকতে পারি। (১ করিন্থীয় ৯:২৭) বস্তুতপক্ষে, সেই সময়ই আমাদের উদ্বিগ্ন থাকা উচিত, যখন আমরা মল্লযুদ্ধ করছি না!
২১. একমাত্র কীভাবে আমরা আমাদের আধ্যাত্মিক যুদ্ধে জয়ী হতে পারব?
২১ অধিকন্তু, আমরা নিজেদের শক্তিতে এই লড়াইয়ে জয়ী হতে পারব না। তাই, পৌল আমাদেরকে যিহোবার কাছে “সর্ব্বসময়ে আত্মাতে” প্রার্থনা করার প্রয়োজনীয়তা সম্বন্ধে মনে করিয়ে দিয়েছেন। একই সময়ে, তাঁর বাক্য অধ্যয়ন করার মাধ্যমে এবং প্রতিটা সুযোগে ‘সহসেনাদের’ সঙ্গে মেলামেশা করার মাধ্যমে আমাদের যিহোবার কথা শোনা উচিত কারণ আমরা এই যুদ্ধে একা নই! (ফিলীমন ২; ইব্রীয় ১০:২৪, ২৫) যারা এই সমস্ত ক্ষেত্রে বিশ্বস্ত থাকে, তারা কেবল জয়ীই হবে না কিন্তু সেইসঙ্গে যখন তাদের বিশ্বাসের প্রতিদ্বন্দ্বিতা আসবে, তখন তারা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাসের পক্ষসমর্থন করতেও সমর্থ হবে।
আপনার বিশ্বাসের পক্ষসমর্থন করার জন্য প্রস্তুত থাকুন
২২, ২৩. (ক) কেন আমাদের বিশ্বাসের পক্ষসমর্থন করার জন্য সবসময় প্রস্তুত থাকতে হবে আর নিজেদেরকে কোন প্রশ্নগুলো জিজ্ঞেস করা উচিত? (খ) পরের অধ্যায়ে কোন বিষয়টা বিবেচনা করা হবে?
২২ “তোমরা ত জগতের নহ,” যিশু বলেছিলেন, “এই জন্য জগৎ তোমাদিগকে দ্বেষ করে।” (যোহন ১৫:১৯) তাই, খ্রিস্টানদের অবশ্যই সবসময় তাদের বিশ্বাসের পক্ষসমর্থন করার এবং তা ‘ভয়ের [“শ্রদ্ধার” ইজি-টু-রিড ভারশন]’ ও মৃদুতার সঙ্গে করার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। (পড়ুন, ১ পিতর ৩:১৫.) নিজেকে জিজ্ঞেস করুন: ‘আমি কি বুঝতে পারি যে, কেন যিহোবার সাক্ষিরা মাঝে মাঝে এমন অবস্থান গ্রহণ করে, যা জনপ্রিয় মতবাদের বিপরীত? যখন এইরকম এক অবস্থান গ্রহণ করার প্রতিদ্বন্দ্বিতা আসে, তখন আমি কি এই বিষয়ে পুরোপুরি প্রত্যয়ী আছি যে, বাইবেল ও বিশ্বস্ত দাস যা বলে, তা সঠিক?’ (মথি ২৪:৪৫; যোহন ১৭:১৭) ‘আর আমাকে যখন যিহোবার চোখে যা সঠিক তা করতে হয়, তখন আমি কি আলাদা হওয়ার জন্য কেবল প্রস্তুতই নয় কিন্তু সেইসঙ্গে আলাদা হওয়ার জন্য গর্ববোধও করি?’—গীতসংহিতা ৩৪:২; মথি ১০:৩২, ৩৩.
২৩ তবে, প্রায়ই জগৎ থেকে আমাদের পৃথক থাকার আকাঙ্ক্ষা আরও সূক্ষ্ম উপায়গুলোতে পরীক্ষিত হয়ে থাকে। উদাহরণ স্বরূপ, শুরুতে যেমন উল্লেখ করা হয়েছে, দিয়াবল জাগতিক আমোদপ্রমোদের মাধ্যমে যিহোবার দাসদেরকে জগতের দিকে প্রলুব্ধ করার চেষ্টা করে। কীভাবে আমরা গঠনমূলক আমোদপ্রমোদ বাছাই করতে পারি, যা আমাদেরকে সতেজ করবে ও একইসঙ্গে আমাদেরকে এক শুদ্ধ বিবেক প্রদান করবে? এই বিষয়টা পরের অধ্যায়ে বিবেচনা করা হবে।
a ৩৩ সালের পঞ্চাশত্তমীর দিন থেকে, খ্রিস্ট পৃথিবীতে তাঁর অভিষিক্ত অনুসারীদের মণ্ডলীর উপর রাজা হিসেবে সেবা করছেন। (কলসীয় ১:১৩) ১৯১৪ সালে, খ্রিস্ট ‘জগতের রাজ্যের’ উপর রাজা হিসেবে কর্তৃত্ব গ্রহণ করেছেন। তাই, অভিষিক্ত খ্রিস্টানরা এখন মশীহ রাজ্যের রাজদূত হিসেবেও সেবা করছে।—প্রকাশিত বাক্য ১১:১৫.
b যিহোবার সাক্ষিদের দ্বারা প্রকাশিত শাস্ত্র থেকে যুক্তি করা (ইংরেজি) বইয়ের ৩৮৯-৩৯৩ পৃষ্ঠা দেখুন।
c পরিশিষ্টের “পতাকা অভিবাদন, ভোট দেওয়া এবং বেসামরিক কাজ” শিরোনামের প্রবন্ধটা দেখুন।