ঈশ্বরের বাক্যকে ভালবাসার উপকারগুলো
“[প্রজ্ঞাকে] প্রেম কর, সে তোমাকে সংরক্ষণ করিবে। . . . যখন তাহাকে আলিঙ্গন কর, সে তোমাকে মান্য করিবে।”—হিতোপদেশ ৪:৬, ৮.
১. ঈশ্বরের বাক্যকে সত্যিকারভাবে ভালবাসার সঙ্গে কী জড়িত?
একজন খ্রীষ্টানের জন্য বাইবেল পড়া খুবই জরুরি। কিন্তু, শুধু বাইবেল পড়াই বোঝায় না যে ঈশ্বরের বাক্যের জন্য তার ভালবাসা আছে। কী হবে যদি কেউ বাইবেল পড়েন কিন্তু বাইবেল যে কাজগুলোকে নিষেধ করে সেগুলো করেন? তাহলে পরিষ্কার বোঝা যায় যে তিনি গীতসংহিতা ১১৯ অধ্যায়ের লেখকের মতো করে ঈশ্বরের বাক্যকে ভালবাসেন না। গীতরচক ঈশ্বরের বাক্যকে ভালবাসতেন বলে সেখানে যা করতে বলা হয়েছিল তিনি তাই করেছিলেন।—গীতসংহিতা ১১৯:৯৭, ১০১, ১০৫.
২. ঈশ্বরের বাক্য থেকে যে প্রজ্ঞা পাওয়া যায় তা কোন্ উপকার নিয়ে আসে?
২ ঈশ্বরের বাক্যের সঙ্গে মিল রেখে চলার জন্য একজনের চিন্তাভাবনা ও জীবনে অনেক পরিবর্তন করা দরকার। এইরকম জীবনযাপনে ঈশ্বরীয় প্রজ্ঞা দেখা যায় অর্থাৎ বাইবেল অধ্যয়ন করে একজন যে জ্ঞান ও বুদ্ধি লাভ করেন তা তার জীবনে কাজে লাগান। “[প্রজ্ঞাকে] প্রেম কর, সে তোমাকে সংরক্ষণ করিবে। তাহাকে শিরোধার্য্য কর, সে তোমাকে উন্নত করিবে, যখন তাহাকে আলিঙ্গন কর, সে তোমাকে মান্য করিবে। সে তোমার মস্তকে লাবণ্যভূষণ দিবে, সে শোভার মুকুট তোমাকে প্রদান করিবে।” (হিতোপদেশ ৪:৬, ৮, ৯) ঈশ্বরের বাক্যকে ভালবাসার এবং মেনে চলার জন্য কত সুন্দর উৎসাহ! রক্ষা পেতে, মর্যাদা পেতে এবং প্রশংসা পেতে কে না চায়?
স্থায়ী ক্ষতি থেকে সুরক্ষা
৩. আগের চেয়ে এখন কেন আরও বেশি করে খ্রীষ্টানদের রক্ষা পাওয়া দরকার এবং কার কাছ থেকে?
৩ ঈশ্বরের বাক্য অধ্যয়ন করে ও কাজে লাগিয়ে যে প্রজ্ঞা পাওয়া যায় তা কীভাবে একজনকে রক্ষা করে? একটা বিষয় হল তিনি শয়তান দিয়াবলের কাছ থেকে রক্ষা পান। যীশু তাঁর শিষ্যদের সেই দুষ্ট আত্মিক ব্যক্তি শয়তানের কাছ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য প্রার্থনা করতে শিখিয়েছিলেন। (মথি ৬:১৩) আজকে, আমাদেরও প্রার্থনায় এই অনুরোধ জানানো সত্যিই খুব জরুরি। শয়তান ও তার মন্দ দূতেদের ১৯১৪ সালের পর স্বর্গ থেকে নিক্ষেপ করা হয়েছে আর তাই শয়তান “অতিশয় রাগাপন্ন, সে জানে, তাহার কাল সংক্ষিপ্ত।” (প্রকাশিত বাক্য ১২:৯, ১০, ১২) এই শেষ সময়ে তার রাগ আরও প্রচণ্ড হয়ে উঠেছে কারণ “যাহারা ঈশ্বরের আজ্ঞা পালন ও যীশুর সাক্ষ্য ধারণ করে” তাদের সঙ্গে যুদ্ধ করে সে জয়ী হচ্ছে না।—প্রকাশিত বাক্য ১২:১৭.
৪. শয়তানের চাপ ও ফাঁদগুলো থেকে খ্রীষ্টানেরা কীভাবে রক্ষা পেতে পারেন?
৪ প্রচণ্ড রাগ নিয়ে শয়তান এই খ্রীষ্টান সেবকদের জীবনে সমস্যা তৈরি করে চলেছে এবং তাদের কাজে হিংস্রভাবে তাড়না করছে কিংবা বিভিন্নরকম বাধা আনছে। এছাড়াও সে রাজ্য ঘোষণাকারীদের প্রলুব্ধ করে যাতে তারা রাজ্যের সুসমাচার প্রচার কাজে মন না দিয়ে জগতের নাম, আরামপ্রিয় জীবন, ধনসম্পদ এবং আনন্দ ফূর্তির পিছনে ছোটে। কী ঈশ্বরের বিশ্বস্ত দাসেদের রক্ষা করতে পারে যাতে তারা শয়তানের চাপের কাছে হার না মানে অথবা তার ফাঁদে পা না দেয়? অবশ্যই প্রার্থনা, যিহোবার সঙ্গে ব্যক্তিগত ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক এবং তাঁর প্রতিজ্ঞাগুলো যে পূর্ণ হবেই তাতে বিশ্বাস রাখা খুবই দরকার। কিন্তু এই সমস্তকিছুই আমাদের জ্ঞান এবং ঈশ্বরের বাক্য আমাদের যে নির্দেশনা দেয় তা মেনে চলার জন্য আমাদের দৃঢ়সংকল্পের ওপর নির্ভর করে। বাইবেল ও বাইবেল অধ্যয়নের সহায়ক বইপত্রিকা পড়ে, খ্রীষ্টীয় সভাগুলোতে যোগ দিয়ে, পরিপক্ব খ্রীষ্টানদের কাছে পাওয়া শাস্ত্রীয় পরামর্শে মন দিয়ে অথবা ঈশ্বরের আত্মা আমাদেরকে যে নীতিগুলো মনে করিয়ে দেয় সেই বিষয়ে প্রার্থনা ও ধ্যান করে আমরা এই বিষয়গুলো মনে করতে পারব।—যিশাইয় ৩০:২১; যোহন ১৪:২৬; ১ যোহন ২:১৫-১৭.
৫. ঈশ্বরের বাক্যের প্রজ্ঞা আমাদের কীভাবে রক্ষা করে?
৫ যারা ঈশ্বরের বাক্যকে ভালবাসেন তারা অন্যান্য দিক দিয়েও রক্ষা পান। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, তারা নেশাকর ওষুধ, তামাক সেবন ও যৌন অনৈতিকতার ফলে যে বিবেকের দংশন ও রোগব্যাধি হয় সেগুলো থেকে মুক্ত থাকেন। (১ করিন্থীয় ৫:১১; ২ করিন্থীয় ৭:১) তারা বাজে সমালোচনা করে অথবা নোংরা কথাবার্তা বলে তাদের নিজেদের মধ্যে সম্পর্ককে নষ্ট হতে দেন না। (ইফিষীয় ৪:৩১) কিংবা তারা জগতের জ্ঞানী ব্যক্তিদের ছলনাপূর্ণ দর্শনে আকৃষ্ট হয়ে কোনরকম সন্দেহও করেন না। (১ করিন্থীয় ৩:১৯) ঈশ্বরের বাক্যকে ভালবেসে তারা সেইসমস্ত বিষয়গুলো থেকে রক্ষা পান যেগুলো ঈশ্বরের সঙ্গে তাদের সম্পর্কে ফাটল ধরাতে পারে ও অনন্ত জীবনের আশা থেকে তাদের বঞ্চিত করতে পারে। বাইবেলের চমৎকার প্রতিজ্ঞাগুলোতে তাদের প্রতিবেশীদের বিশ্বাস জন্মাতে সাহায্য করার জন্য তারা দিন-রাত ব্যস্ত থাকেন, কারণ তারা জানেন যে তা করলে ‘তারা নিজেকে ও যারা তাদের কথা শুনে, তাদের পরিত্রাণ করবেন।’—১ তীমথিয় ৪:১৬.
৬. ঈশ্বরের বাক্যের প্রজ্ঞা কীভাবে আমাদের এমনকি কঠিন পরিস্থিতিতেও সুরক্ষা জোগাতে পারে?
৬ এটা ঠিক যে প্রত্যেকের এমনকি যারা ঈশ্বরের বাক্যকে ভালবাসেন তাদের প্রতিও “কাল ও দৈব ঘটে।” (উপদেশক ৯:১১) আমাদের মধ্যে কেউ কেউ প্রাকৃতিক দুর্যোগে পড়বেন, গুরুতর অসুস্থ হবেন, দুর্ঘটনায় পড়বেন অথবা কারও আকস্মিক মৃত্যু হবে, এগুলো অস্বাভাবিক কিছু নয়। তবুও আমরা সুরক্ষিত। যে ব্যক্তি ঈশ্বরের বাক্যকে সত্যি সত্যি ভালবাসেন কোন বিপর্যয়ই তার স্থায়ী ক্ষতি করতে পারে না। তাই ভবিষ্যতে কী হবে তা নিয়ে আমাদের অতিরিক্ত চিন্তা করার দরকার নেই। নিজেরা সাবধান হওয়ার পর বিষয়গুলোকে যিহোবার হাতে ছেড়ে দেওয়াই ভাল এবং আজকে জীবনে নিরাপত্তা নেই বলে তা যেন আমাদের মনের শান্তি কেড়ে না নেয়। (মথি ৬:৩৩, ৩৪; ফিলিপীয় ৪:৬, ৭) পুনরুত্থানের আশা এবং আরও ভাল জীবন যে আসবে সেই বিষয়টা মনে রাখুন যখন ঈশ্বর ‘সকলই নূতন করিবেন।’—প্রকাশিত বাক্য ২১:৫; যোহন ১১:২৫.
নিজেকে “উত্তম ভূমি” করে তুলুন
৭. যে জনতা যীশুর কথা শুনতে এসেছিল তাদের যীশু কোন্ দৃষ্টান্ত বলেছিলেন?
৭ ঈশ্বরের বাক্যকে সঠিক দৃষ্টিতে দেখা যে কতটা জরুরি তা যীশু তাঁর এক উপমায় তুলে ধরেছিলেন। যীশু যখন প্যালেস্টাইনে সুসমাচার প্রচার করেছিলেন তখন অনেকে তাঁর কথা শোনার জন্য জড়ো হয়েছিল। (লূক ৮:১, ৪) কিন্তু, সকলেই ঈশ্বরের বাক্যকে ভালবাসেনি। কোন সন্দেহ নেই যে অনেকে তাঁর কথা শুনতে এসেছিল কারণ তারা অলৌকিক কাজ দেখতে চেয়েছিল অথবা যীশুর শিক্ষাদানের চমৎকার পদ্ধতি অনেকের কাছে ভাল লাগত। তাই যীশু সেই জনতাকে একটা দৃষ্টান্ত বলেছিলেন: “বীজবাপক আপন বীজ বপন করিতে গেল। বপনের সময়ে কতক বীজ পথের পার্শ্বে পড়িল, তাহাতে তাহা পদতলে দলিত হইল, ও আকাশের পক্ষিগণ তাহা খাইয়া ফেলিল। আর কতক পাষাণের উপরে পড়িল, তাহাতে তাহা অঙ্কুরিত হইলে রস না পাওয়াতে শুকাইয়া গেল। আর কতক কাঁটাবনের মধ্যে পড়িল, তাহাতে কাঁটা সকল সঙ্গে সঙ্গে অঙ্কুরিত হইয়া তাহা চাপিয়া রাখিল। আর কতক বীজ উত্তম ভূমিতে পড়িল, তাহাতে তাহা অঙ্কুরিত হইয়া শত গুণ ফল উৎপন্ন করিল।”—লূক ৮:৫-৮.
৮. যীশুর দৃষ্টান্তে বীজ কী?
৮ যীশুর উপমাটা দেখায় যে লোকেদের হৃদয়ের অবস্থার ওপর ভিত্তি করে রাজ্যের সুসমাচার প্রচারের প্রতি আলাদা আলাদা রকম সাড়া পাওয়া যাবে। এখানে বীজ হল “ঈশ্বরের বাক্য।” (লূক ৮:১১) অথবা ওই উপমার আরেকটা বিবরণ বলে বীজ হল “রাজ্যের বাক্য।” (মথি ১৩:১৯) যেহেতু ঈশ্বরের বাক্যের মূল বিষয় হল রাজা যীশু খ্রীষ্টের অধীনে স্বর্গীয় রাজ্য যার মাধ্যমে যিহোবা তাঁর সার্বভৌমত্বকে তুলে ধরবেন ও তাঁর নামকে পবিত্র করবেন, তাই যীশু এর জন্য ঈশ্বরের বাক্য অথবা রাজ্যের বাক্য যে কোন কথাকেই ব্যবহার করতে পারতেন। (মথি ৬:৯, ১০) অতএব, বীজ হল ঈশ্বরের বাক্য বাইবেলের সুসমাচার। তাই যিহোবার সাক্ষিরা যখন প্রকৃত বীজবাপক যীশু খ্রীষ্টের মতো বীজ বপন করেন তখন তারা এই রাজ্যের বার্তাকেই প্রচার করেন। আর তাতে তারা কেমন সাড়া পান?
৯. (ক) পথের পাশে? (খ) পাথুরে ভূমিতে? (গ) কাঁটাবনে? পড়া বীজগুলো কী বোঝায়?
৯ যীশু বলেছিলেন যে কিছু বীজ পথের পাশে পড়ে আর লোকেদের পায়ের তলায় চাপা পড়ে। এটা সেই লোকেদের বোঝায় যারা জীবনের অন্য বিষয়গুলোতে এত বেশি করে জড়িত যে রাজ্যের বীজ তাদের হৃদয়ে ভাল মতো শিকড় বিস্তার করতে পারে না। ঈশ্বরের বাক্যের জন্য ভালবাসা গড়ে তোলার আগেই “দিয়াবল আসিয়া তাহাদের হৃদয় হইতে সেই বাক্য হরণ করিয়া লয়, যেন তাহারা বিশ্বাস করিয়া পরিত্রাণ না পায়।” (লূক ৮:১২) কিছু বীজ পাথুরে ভূমিতে পড়ে। এরা হল সেই লোক যাদের বাইবেলের বার্তা শুনতে ভাল লাগে কিন্তু তারা সেটাকে তাদের হৃদয়ে পৌঁছতে দেয় না। যখন বিরোধিতা আসে অথবা যখন বাইবেলের পরামর্শকে কাজে লাগানো কঠিন বলে মনে হয় তখন তারা “সরিয়া পড়ে” কারণ তাদের কোন শিকড় নেই। (লূক ৮:১৩) আবার এমন লোকেরাও আছে যারা “জীবনের চিন্তা ও ধন ও সুখভোগের দ্বারা” আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে। ফলে কাঁটা যেমন গাছকে বেড়ে উঠতে দেয় না তেমনই তারাও এগুলোর মধ্যে “চাপা পড়ে।”—লূক ৮:১৪.
১০, ১১. (ক) উত্তম ভূমি কাকে চিত্রিত করে? (খ) আমাদের হৃদয়ে ঈশ্বরের বাক্যকে “ধরিয়া” রাখার জন্য আমাদের কী করতে হবে?
১০ শেষে কিছু বীজ ভাল ভূমিতে পড়ে। এটা সেই লোকেদের বোঝায় যারা “সৎ ও উত্তম হৃদয়ে” বার্তাকে গ্রহণ করে। স্বাভাবিকভাবেই আমাদের মধ্যে প্রত্যেকে মনে করতে পারে যে সে নিজে উত্তম ভূমি। কিন্তু, ঈশ্বরই ঠিক করবেন যে আমরা কেমন ভূমি আর সেটাই জরুরি। (হিতোপদেশ ১৭:৩; ১ করিন্থীয় ৪:৪, ৫) তাঁর বাক্য বলে যে ‘সৎ ও উত্তম হৃদয়’ থাকা হল এমন কিছু, যা আমরা এখন থেকে শুরু করে আমাদের মৃত্যু পর্যন্ত অথবা যতদিন না ঈশ্বর এই দুষ্ট বিধিব্যবস্থার শেষ নিয়ে আসছেন তার আগে পর্যন্ত যে কাজ করি তার দ্বারা প্রমাণ করি। প্রথমেই যদি আমরা রাজ্যের বার্তায় ভালভাবে সাড়া দিই, তাহলে তা ভাল। কিন্তু যারা সৎ ও উত্তম হৃদয়ের লোক তারা ঈশ্বরের বাক্য গ্রহণ করে ও “ধরিয়া রাখে, এবং ধৈর্য্য সহকারে ফল উৎপন্ন করে।”—লূক ৮:১৫.
১১ ঈশ্বরের বাক্যকে আমাদের হৃদয়ে ধরে রাখার একমাত্র উপায় হল, ব্যক্তিগতভাবে ও খ্রীষ্টান ভাইবোনদের সঙ্গে ঈশ্বরের বাক্য পড়া ও অধ্যয়ন করা। যীশুর সত্য শিষ্যদের আধ্যাত্মিক বিষয়গুলোর যত্ন নেওয়ার জন্য যে মাধ্যমকে নিয়োগ করা হয়েছে তারা যে আত্মিক খাদ্যের ব্যবস্থা করেন তার সবকিছু গ্রহণ করাও এর মধ্যে পড়ে। (মথি ২৪:৪৫-৪৭) এভাবে যারা ঈশ্বরের বাক্যকে তাদের হৃদয়ে ধরে রাখেন, ঈশ্বরের বাক্যের জন্য তাদের ভালবাসা তাদেরকে “ধৈর্য্য সহকারে ফল উৎপন্ন” করতেও সাহায্য করে।
১২. কোন্ ফল আমাদের ধৈর্য ধরে উৎপন্ন করতে হবে?
১২ উত্তম ভূমিতে কোন্ ফল উৎপন্ন হয়? সাধারণত কোন গাছ থেকে একই জাতের বীজ উৎপন্ন হয় এবং আরও ফল উৎপন্ন করার জন্য সেগুলোকে বপন করা হয়। একইভাবে, সৎ ও উত্তম হৃদয়ের লোকেদের মধ্যে বাক্যের বীজ বেড়ে ওঠে এবং তাদেরকে আধ্যাত্মিক উন্নতি করে চলতে সাহায্য করে, যতক্ষণ না তারা অন্যদের হৃদয়ে সেই বীজ বপন করার মতো পরিপক্ব হন। (মথি ২৮:১৯, ২০) আর ধৈর্য তাদেরকে বপন কাজে সাহায্য করে। বীজ বপন করার সময় যে ধৈর্য খুবই জরুরি তা যীশু দেখিয়েছিলেন যখন তিনি বলেছিলেন: “যে কেহ শেষ পর্য্যন্ত স্থির থাকিবে, সেই পরিত্রাণ পাইবে। আর সর্ব্ব জাতির কাছে সাক্ষ্য দিবার নিমিত্ত রাজ্যের এই সুসমাচার সমুদয় জগতে প্রচার করা যাইবে; আর তখন শেষ উপস্থিত হইবে।”—মথি ২৪:১৩, ১৪.
“সমস্ত সৎকর্ম্মে ফলবান্ . . . হও”
১৩. পৌল কোন্ প্রার্থনা করেছিলেন যা দেখায় যে ফল উৎপন্ন করার জন্য ঈশ্বরের বাক্যের জ্ঞান দরকার?
১৩ প্রেরিত পৌলও ফল উৎপন্ন করার কথা বলেছিলেন এবং ফল উৎপন্ন করাকে তিনি ঈশ্বরের বাক্যের সঙ্গে তুলনা করেছিলেন। তিনি তার খ্রীষ্টান ভাইবোনদের জন্য এই বলে প্রার্থনা করেছিলেন: “তোমরা সমস্ত আত্মিক জ্ঞানে ও বুদ্ধিতে [ঈশ্বরের] ইচ্ছার তত্ত্বজ্ঞানে পূর্ণ হও, আর তদ্দ্বারা প্রভুর যোগ্যরূপে সর্ব্বতোভাবে প্রীতিজনক আচরণ কর, সমস্ত সৎকর্ম্মে ফলবান্ ও ঈশ্বরের তত্ত্বজ্ঞানে বর্দ্ধিষ্ণু হও।”—কলসীয় ১:৯, ১০; ফিলিপীয় ১:৯-১১.
১৪-১৬. যারা ঈশ্বরের বাক্যকে ভালবাসেন তারা পৌলের প্রার্থনার সঙ্গে মিল রেখে কোন্ ফল উৎপন্ন করেন?
১৪ অতএব, পৌল দেখিয়েছিলেন যে শুধু বাইবেলের জ্ঞান নেওয়াই সব দায়িত্ব শেষ করে দেয় না। কিন্তু ঈশ্বরের বাক্যের জন্য আমাদের ভালবাসা আমাদেরকে “প্রভুর [যিহোবার] যোগ্যরূপে” চালাবে আর আমরা সবসময় ‘সমস্ত সৎকর্ম্মের জন্য ফলবান্’ হব। কোন্ সৎকর্ম? এই শেষকালে রাজ্যের সুসমাচার প্রচার করা হল খ্রীষ্টানদের জন্য সবচেয়ে জরুরি কাজ। (মার্ক ১৩:১০) এছাড়াও, যারা ঈশ্বরের বাক্যকে ভালবাসেন তারা এই কাজের জন্য তাদের সাধ্য মতো আর্থিক দান দিয়েও সাহায্য করে থাকেন। এই সুযোগ পেয়ে তারা খুবই খুশি কারণ তারা জানেন যে “ঈশ্বর হৃষ্টচিত্ত দাতাকে ভাল বাসেন।” (২ করিন্থীয় ৯:৭) তাদের দানগুলো সারা পৃথিবীর একশটারও বেশি বেথেল পরিবারগুলোর ব্যয় বহন করে, যেখান থেকে রাজ্যের প্রচার কাজকে পরিচালনা দেওয়া হয় এবং যেগুলোর কয়েকটাতে বাইবেল ও বাইবেল ভিত্তিক বইপত্রিকাও ছাপানো হয়। এছাড়াও বড় বড় খ্রীষ্টীয় সম্মেলন ও ভ্রমণ অধ্যক্ষ, মিশনারি এবং অন্যান্য পূর্ণ-সময়ের সুসমাচার প্রচারকদের জন্যও তাদের দানগুলোকে কাজে লাগানো হয়।
১৫ এছাড়া সত্য উপাসনার জন্য বিভিন্ন হল নির্মাণ করা এবং সেগুলোর দেখাশোনা করাও সৎকর্মের মধ্যে পড়ে। ঈশ্বরের বাক্যের জন্য ভালবাসা আছে বলেই তাঁর উপাসকেরা লক্ষ্য রাখেন যাতে সম্মেলন হল ও কিংডম হলগুলোর কোনরকম অযত্ন না হয়। (নহিমিয় ১০:৩৯ পদের সঙ্গে তুলনা করুন।) এই বিল্ডিংগুলোর ওপর যেহেতু ঈশ্বরের নাম থাকে তাই এগুলোর ভিতর ও বাইরে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও সুন্দর রাখা জরুরি এবং সেইসঙ্গে যারা এখানে উপাসনা করবেন তাদের আচার-আচরণও খারাপ হওয়া উচিত নয়। (২ করিন্থীয় ৬:৩) কিছু খ্রীষ্টানেরা ঈশ্বরের সেবায় অনেক কিছু করতে পারেন। ঈশ্বরের বাক্যের জন্য ভালবাসা তাদেরকে তাদের বাড়ি থেকে দূরে গিয়ে উপাসনার জন্য নতুন নতুন বিল্ডিং তৈরির কাজ করতে প্রেরণা দেয়, যেখানকার ভাইরা হয়তো গরিব অথবা তাদের দক্ষতার অভাব আছে।—২ করিন্থীয় ৮:১৪.
১৬ এছাড়াও “সমস্ত সৎকর্ম্মে ফলবান্” হওয়ার মধ্যে রয়েছে পরিবারের ভরণপোষণ করা এবং খ্রীষ্টান ভাইবোনদের জন্য চিন্তা করা। আমরা ‘বিশ্বাস-বাটীর পরিজনদের’ এবং ‘[আমাদের] নিজ বাটীর লোকদের প্রতি ভক্তি প্রকাশ করি’ কারণ ঈশ্বরের বাক্যের জন্য আমাদের ভালবাসা আছে। (গালাতীয় ৬:১০; ১ তীমথিয় ৫:৪, ৮) এর মধ্যে অসুস্থ লোকেদের দেখতে যাওয়া এবং দুঃখী লোকেদের সান্ত্বনা দেওয়া পড়ে। আর চিকিৎসার ব্যাপারে কোন সমস্যায় পড়লে মণ্ডলীর প্রাচীনেরা ও হসপিটাল লিয়াজোন কমিটিগুলো কত সাহায্যই না করে থাকে! (প্রেরিত ১৫:২৯) এছাড়াও দিনের পর দিন দুর্যোগ বেড়েই চলেছে—যেগুলোর কিছু কিছু প্রাকৃতিক আবার কিছু কিছু মানুষের নিজেদের তৈরি। ঈশ্বরের আত্মার সাহায্যে যিহোবার সাক্ষিরা পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গায় অনেক প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও দুর্ঘটনার সময়ে তাদের খ্রীষ্টান ভাইবোনদেরকে দ্রুত ত্রাণ সামগ্রী জুগিয়ে ভাল উদাহরণ দেখিয়েছেন। যারা ঈশ্বরের বাক্যকে ভালবাসেন তারা সবাই এইরকম ভাল ফল দেখান।
ভবিষ্যতে চমৎকার উপকারগুলো
১৭, ১৮. (ক) রাজ্যের বীজ বপন করা কোন্ কাজ করে চলেছে? (খ) ঈশ্বরের বাক্যকে যারা ভালবাসেন তারা শীঘ্রই কোন্ শিহরণজনক ঘটনাগুলো দেখতে পাবেন?
১৭ রাজ্যের বীজ বপন করা মানবজাতির জন্য প্রচুর উপকার এনে চলেছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে প্রতি বছর প্রায় ৩,০০,০০০ জনের বেশি ব্যক্তি বাইবেলের বার্তাকে তাদের হৃদয়ে শিকড় বিস্তার করতে দিয়েছেন এবং ঈশ্বরের কাছে নিজেদের জীবন উৎসর্গ করেছেন ও জলে বাপ্তিস্ম নিয়েছেন। তাদের জন্য কী এক চমৎকার ভবিষ্যৎই না অপেক্ষা করছে!
১৮ ঈশ্বরের বাক্যকে যারা ভালবাসেন তারা জানেন যে শীঘ্রই যিহোবা ঈশ্বর তাঁর নামকে উচ্চীকৃত করবেন। মিথ্যা ধর্মের বিশ্ব সাম্রাজ্য “মহতী বাবিল” ধ্বংস হবে। (প্রকাশিত বাক্য ১৮:২, ৮) তারপর, যারা ঈশ্বরের বাক্যের সঙ্গে মিল রেখে চলাকে অস্বীকার করবে তাদেরকে রাজা যীশু খ্রীষ্ট মৃত্যুদণ্ড দেবেন। (গীতসংহিতা ২:৯-১১; দানিয়েল ২:৪৪) এরপর, ঈশ্বরের রাজ্য অপরাধ, যুদ্ধ ও অন্যান্য দুর্যোগ থেকে স্থায়ী মুক্তি নিয়ে আসবে। দুঃখ, অসুস্থতা ও মৃত্যুর জন্য মানুষকে আর সান্ত্বনা দেওয়ার দরকার হবে না।—প্রকাশিত বাক্য ২১:৩, ৪.
১৯, ২০. ঈশ্বরের বাক্যকে যারা সত্যিই ভালবাসেন তাদের জন্য কোন্ চমৎকার ভবিষ্যৎ রয়েছে?
১৯ ঈশ্বরের বাক্যকে যারা ভালবাসেন সেই সময় তারা কত সুন্দর কাজই না করবেন! হর্মাগিদোন থেকে রক্ষা পেয়ে লোকেরা খুশি মনে পৃথিবীকে পরমদেশ করে তুলবেন। মৃত ব্যক্তিরা যারা এখন কবরে আছেন এবং পুনরুত্থানের আশায় ঈশ্বরের স্মরণে আছেন তাদের বিভিন্ন দরকার মেটানোর কাজ এই লোকেদের জন্য খুবই রোমাঞ্চকর হবে। (যোহন ৫:২৮, ২৯) সেই সময় পৃথিবীবাসীদের কাছে সার্বভৌম প্রভু যিহোবার কাছ থেকে তাঁর মহিমান্বিত পুত্র যীশু খ্রীষ্টের মাধ্যমে নিখুঁত নির্দেশনা আসবে। নতুন জগতে বাস করার জন্য যিহোবার নির্দেশনাগুলো জানাতে ‘কয়েকখান পুস্তক খোলা হইবে।’—প্রকাশিত বাক্য ২০:১২.
২০ যিহোবার নিরূপিত সময়ে বিশ্বস্ত অভিষিক্ত খ্রীষ্টানেরা “খ্রীষ্টের সহদায়াদ” হওয়ার পুরস্কার পাবেন। (রোমীয় ৮:১৭) খ্রীষ্টের হাজার বছরের রাজত্বে ঈশ্বরের বাক্যকে যারা ভালবাসেন তাদের সকলের মন ও শরীরকে সিদ্ধ করা হবে। সবশেষ পরীক্ষায় বিশ্বস্ত থাকার পর তাদেরকে অনন্ত জীবনের পুরস্কার দেওয়া হবে এবং তারা “ঈশ্বরের সন্তানগণের প্রতাপের স্বাধীনতা পাইবে।” (রোমীয় ৮:২১; প্রকাশিত বাক্য ২০:১-৩, ৭-১০) কত চমৎকার সময়ই না তা হবে! ঈশ্বর আমাদেরকে স্বর্গে অথবা পৃথিবীতে যে পুরস্কারই দিন না কেন, তাঁর বাক্যের জন্য ভালবাসা ও ঈশ্বরীয় প্রজ্ঞা মেনে কাজ করা এবং ধৈর্য ধরা আমাদেরকে এখন ও ভবিষ্যতে সুরক্ষা এনে দেবে। আর যেহেতু আমরা ‘তাহাকে আলিঙ্গন করিয়াছি, তা আমাদের মান্য করিবে।’—হিতোপদেশ ৪:৬, ৮.
আপনি কি ব্যাখ্যা করতে পারেন?
◻ ঈশ্বরের বাক্যের জন্য আমাদের ভালবাসা কীভাবে আমাদের সুরক্ষা এনে দেবে?
◻ যীশুর দৃষ্টান্তের বীজ কী এবং এটাকে কীভাবে বপন করা হয়?
◻ আমরা কীভাবে “উত্তম ভূমি” হয়ে উঠি?
◻ ঈশ্বরের বাক্যকে যারা ভালবাসেন তাদের জন্য কোন্ উপকারগুলো রয়েছে?
[১৬ পৃষ্ঠার চিত্র]
যীশুর দৃষ্টান্তের বীজ হল ঈশ্বরের বাক্য বাইবেলের সুসমাচার
[সজন্যে]
Garo Nalbandian
[১৭ পৃষ্ঠার চিত্র]
যিহোবার সাক্ষিরা মহান বীজবাপককে অনুকরণ করেন
[১৮ পৃষ্ঠার চিত্র]
হর্মাগিদোন থেকে যারা রক্ষা পাবেন তারা পৃথিবীর ফল উপভোগ করবেন