খ্রিস্টীয় বাপ্তিস্মের চাহিদাগুলো পূরণ করা
“আমার বাপ্তাইজিত হইবার বাধা কি?”—প্রেরিত ৮:৩৬.
১, ২. কীভাবে ফিলিপ একজন ইথিওপীয় কর্মকর্তার সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছিলেন এবং কী দেখায় যে, এই ব্যক্তি সত্য উপাসনার প্রতি আগ্রহী ছিলেন?
যিশু মারা যাওয়ার এক বা দুবছর পর, একজন সরকারি কর্মকর্তা দক্ষিণ দিকে, যে-পথ যিরূশালেম থেকে ঘসার দিকে গিয়েছে, সেই পথে যাত্রা করছিলেন। সামনে সম্ভবত আরও ১,৫০০ কিলোমিটার দীর্ঘ এক ক্লান্তিকর রথযাত্রা রয়েছে। এই আন্তরিক ব্যক্তি যিহোবাকে উপাসনা করার জন্য ইথিওপিয়া থেকে যিরূশালেমের সুদীর্ঘ পথ যাত্রা করেন। এই দীর্ঘ ফিরতি পথে ঈশ্বরের বাক্য পড়ার মাধ্যমে তিনি তার সময়কে বিজ্ঞতার সঙ্গে ব্যবহার করছেন—এটাই ছিল সেই ব্যক্তির বিশ্বাসের প্রমাণ। যিহোবা এই আন্তরিক ব্যক্তিকে লক্ষ করেন এবং তার কাছে প্রচার করার জন্য একজন দূতের মাধ্যমে তিনি শিষ্য ফিলিপকে পরিচালনা দেন।—প্রেরিত ৮:২৬-২৮.
২ ফিলিপ সহজেই আলোচনা শুরু করতে পারেন কারণ সেই ইথিওপীয় কর্মকর্তা তখনকার রীতি অনুযায়ী জোরে জোরে পড়ছিলেন। তাই, ফিলিপ শুনতে পারেন যে, তিনি যিশাইয়ের পুস্তক থেকে পড়ছেন। ফিলিপের এই সাধারণ প্রশ্নটাই সেই ব্যক্তির আগ্রহকে জাগিয়ে তোলে: “আপনি যাহা পাঠ করিতেছেন, তাহা কি বুঝিতে পারিতেছেন?” এর ফলে যিশাইয় ৫৩:৭, ৮ পদ নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। শেষে, ফিলিপ “তাঁহার কাছে যীশু-বিষয়ক সুসমাচার প্রচার করিলেন।”—প্রেরিত ৮:২৯-৩৫.
৩, ৪. (ক) কেন ফিলিপ দেরি না করেই ইথিওপীয় ব্যক্তিকে বাপ্তিস্ম দিয়েছিলেন? (খ) আমরা এখন কোন প্রশ্নগুলো বিবেচনা করব?
৩ অল্পসময়ের মধ্যেই, সেই ইথিওপীয় ব্যক্তি ঈশ্বরের উদ্দেশ্যের মধ্যে যিশুর ভূমিকা ও সেইসঙ্গে খ্রিস্টের একজন বাপ্তাইজিত শিষ্য হওয়ার প্রয়োজন সম্বন্ধে বুঝতে পারেন। কাছেই একটা জলাশয় দেখার পর তিনি ফিলিপকে জিজ্ঞেস করেন: “আমার বাপ্তাইজিত হইবার বাধা কি?” অবশ্য, এই পরিস্থিতি আলাদা ছিল। কারণ তিনি এমন একজন বিশ্বাসী ব্যক্তি ছিলেন, যিনি ইতিমধ্যেই যিহুদি ধর্মান্তরিত ব্যক্তি হিসেবে ঈশ্বরের উপাসনা করতেন। দীর্ঘসময়ের জন্য তিনি হয়তো বাপ্তাইজিত হওয়ার আরেকটা সুযোগ পাবেন না। এর চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টা হল, এই ব্যক্তি বুঝতে পেরেছিলেন যে, ঈশ্বর তার কাছ থেকে কী চান এবং তিনি এতে পূর্ণহৃদয়ে সাড়া দিতে চেয়েছিলেন। ফিলিপ আনন্দের সঙ্গে তার অনুরোধে রাজি হন এবং বাপ্তাইজিত হওয়ার পর সেই ইথিওপীয় “আনন্দ করিতে করিতে আপন পথে চলিয়া গেলেন।” নিঃসন্দেহে, তিনি তার নিজের দেশে সুসমাচারের এক উদ্যমী প্রচারক হয়ে উঠেছিলেন।—প্রেরিত ৮:৩৬-৩৮.
৪ যদিও উৎসর্গীকরণ এবং বাপ্তিস্মের পদক্ষেপগুলো হালকাভাবে বা তাড়াহুড়ো করে নেওয়ার মতো কোনো বিষয় নয় কিন্তু ইথিওপীয় কর্মকর্তার উদাহরণ দেখায় যে, মাঝে মাঝে কেউ কেউ ঈশ্বরের বাক্যের সত্য জানার পর পরই বাপ্তাইজিত হয়েছিল।a তাই, এই প্রশ্নগুলো বিবেচনা করা উপযুক্ত: বাপ্তিস্মের আগে কোন ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া উচিত? কখন বয়সের বিষয়টা বিবেচনা করা উচিত? একজন ব্যক্তি বাপ্তাইজিত হওয়ার আগে তার মধ্যে কোন আধ্যাত্মিক উন্নতি দেখতে পাওয়া উচিত? সর্বোপরি, কেন যিহোবা চান যেন তাঁর দাসেরা এই পদক্ষেপ নেয়?
এক গুরুগম্ভীর চুক্তি
৫, ৬. (ক) অতীতে ঈশ্বরের লোকেরা যিহোবার প্রেমের প্রতি কীভাবে সাড়া দিয়েছিল? (খ) বাপ্তাইজিত হওয়ার পর, ঈশ্বরের সঙ্গে আমরা কোন নিকট সম্পর্ক উপভোগ করতে পারি?
৫ ইস্রায়েলীয়দের মিশর থেকে উদ্ধার করার পর, যিহোবা তাদেরকে তাঁর “নিজস্ব অধিকার” হিসেবে গ্রহণ করতে, তাদেরকে ভালবাসা দেখাতে ও সুরক্ষা করতে এবং “পবিত্র এক জাতি” হিসেবে গঠন করতে ইচ্ছুক ছিলেন। কিন্তু, এই আশীর্বাদগুলো লাভ করার জন্য সেই লোকেদের সুনির্দিষ্ট উপায়ে ঈশ্বরের প্রেমের প্রতি সাড়া দিতে হতো। আর তারা ‘সদাপ্রভু যাহা যাহা বলিয়াছিলেন, সেই সকল কথা’ পালন করার জন্য একমত হয়ে এবং তাঁর সঙ্গে এক নিয়ম বা চুক্তিতে প্রবেশ করে তাতে সাড়া দিয়েছিল। (যাত্রাপুস্তক ১৯:৪-৯) প্রথম শতাব্দীতে, যিশু তাঁর অনুসারীদের সমস্ত জাতির লোকেদের শিষ্য তৈরি করার আদেশ দিয়েছিলেন এবং যারা তাঁর শিক্ষা গ্রহণ করেছিল, তারা বাপ্তাইজিত হয়েছিল। যিশু খ্রিস্টের ওপর বিশ্বাসের ভিত্তিতে ঈশ্বরের সঙ্গে এক উত্তম সম্পর্কের পরেই বাপ্তিস্ম নেওয়া হয়েছিল।—মথি ২৮:১৯, ২০; প্রেরিত ২:৩৮, ৪১.
৬ এই শাস্ত্রীয় বিবরণ দেখায় যে, যিহোবা সেই ব্যক্তিদের আশীর্বাদ করেন, যারা তাঁকে সেবা করার জন্য এক গুরুগম্ভীর চুক্তি করে এবং তা বজায় রাখে। খ্রিস্টানদের জন্য উৎসর্গীকরণ এবং বাপ্তিস্ম হল অত্যাবশ্যকীয় পদক্ষেপ, যা যিহোবার আশীর্বাদ নিয়ে আসে। আমরা তাঁর পথে চলার এবং তাঁর নির্দেশনা খোঁজার জন্য দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ। (গীতসংহিতা ৪৮:১৪) এর ফলে, যিহোবা রূপকভাবে আমাদের হাত ধরেন এবং সেই পথে গমন করান, যে-পথে আমাদের গমনাগমন করা উচিত।—গীতসংহিতা ৭৩:২৩; যিশাইয় ৩০:২১; ৪১:১০, ১৩.
৭. কেন উৎসর্গীকরণ এবং বাপ্তিস্ম এক ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত?
৭ এই পদক্ষেপগুলো নেওয়ার ক্ষেত্রে আমাদের অনুপ্রেরণা হওয়া উচিত যিহোবার প্রতি প্রেম এবং তাঁকে সেবা করার ইচ্ছা। তিনি যথেষ্ট সময় ধরে অধ্যয়ন করেছেন, এই কথা কেউ তাকে বলেছে বলেই অথবা তার বন্ধুবান্ধবরা বাপ্তিস্ম নিচ্ছে দেখেই কারো বাপ্তিস্ম নেওয়া উচিত নয়। সাধারণত, বাবামা এবং অন্যান্য পরিপক্ব খ্রিস্টানরা হয়তো একজন ব্যক্তিকে উৎসর্গীকরণ ও বাপ্তিস্মের বিষয়ে চিন্তা করতে উৎসাহিত করে থাকে। পঞ্চাশত্তমীর দিনে যে-ব্যক্তিরা প্রেরিত পিতরের কথা শুনেছিল, তাদেরকে তিনি ‘বাপ্তাইজিত হইবার’ জন্য জোরালো পরামর্শ দিয়েছিলেন। (প্রেরিত ২:৩৮) তা সত্ত্বেও, আমাদের উৎসর্গীকরণ এক ব্যক্তিগত বিষয় এবং আমাদের হয়ে অন্য আর কেউই তা করতে পারে না। ঈশ্বরের ইচ্ছা পালন করার বিষয়ে আমাদের নিজেদের সিদ্ধান্ত নিজেদেরই নিতে হবে।—গীতসংহিতা ৪০:৮.
বাপ্তিস্মের জন্য পর্যাপ্ত প্রস্তুতি
৮, ৯. (ক) কেন শিশু বাপ্তিস্ম শাস্ত্রীয়ভাবে গ্রহণযোগ্য নয়? (খ) বাপ্তিস্মের আগে অল্পবয়স্কদের কোন আধ্যাত্মিক উন্নতি করা উচিত?
৮ ছোট ছেলেমেয়েরা কি বুদ্ধিপূর্বক উৎসর্গীকরণ করার মতো অবস্থানে রয়েছে? কত বছরে বাপ্তিস্ম নেওয়া যায়, সেই সম্বন্ধে শাস্ত্র কিছু বলে না। তবে, নিশ্চিতভাবেই শিশুরা বিশ্বাসী হতে, বিশ্বাস অনুশীলন করতে অথবা ঈশ্বরের কাছে উৎসর্গীকরণ করতে পারে না। (প্রেরিত ৮:১২) প্রথম শতাব্দীর খ্রিস্টানদের বিষয়ে ইতিহাসবেত্তা অগাস্টাস নেয়ান্ডার তার খ্রিস্টীয় ধর্ম এবং গির্জার সাধারণ ইতিহাস (ইংরেজি) বইয়ে বলেন: “প্রথমে শুধু প্রাপ্তবয়স্কদের বাপ্তিস্ম দেওয়া হতো কারণ এই লোকেরা বুঝতে পারত যে, বাপ্তিস্ম এবং বিশ্বাস ওতপ্রোতভাবে জড়িত।”
৯ অল্পবয়স্কদের বেলায় কেউ কেউ তুলনামূলকভাবে অল্পবয়সে কিছুটা আধ্যাত্মিকতা গড়ে তুলতে পারে, আবার অন্যেরা কিছুটা সময় নিয়ে থাকে। কিন্তু, বাপ্তাইজিত হওয়ার আগে একজন অল্পবয়স্কের যিহোবার সঙ্গে এক ব্যক্তিগত সম্পর্ক, শাস্ত্রের মৌলিক বিষয়গুলো সম্বন্ধে এক সঠিক বোধগম্যতা এবং উৎসর্গীকরণের সঙ্গে কী যুক্ত রয়েছে, সেই সম্বন্ধে স্পষ্ট উপলব্ধি থাকা উচিত, যেমনটা প্রাপ্তবয়স্কদের বেলায়ও প্রযোজ্য।
১০. উৎসর্গীকরণ এবং বাপ্তিস্মের আগে কোন পদক্ষেপগুলো নিতে হবে?
১০ যিশু তাঁর শিষ্যদের আদেশ দিয়েছিলেন যেন তারা নতুন ব্যক্তিদের সেইসমস্ত শিক্ষা দেয়, যা তিনি তাদেরকে আজ্ঞা করেছেন। (মথি ২৮:২০) তাই প্রথমে, নতুন ব্যক্তিদের সত্য সম্বন্ধে সঠিক জ্ঞান লাভ করতে হবে আর এটা তাদেরকে যিহোবা ও তাঁর বাক্যের প্রতি বিশ্বাস গড়ে তুলতে সাহায্য করবে। (রোমীয় ১০:১৭; ১ তীমথিয় ২:৪; ইব্রীয় ১১:৬) এরপর, শাস্ত্রীয় সত্যগুলো যখন একজন ব্যক্তির হৃদয়কে স্পর্শ করে, তখন এটা তাদেরকে অনুতপ্ত হতে এবং তার পূর্বের জীবনধারা থেকে ফিরে আসতে প্রেরণা দেয়। (প্রেরিত ৩:১৯) অবশেষে, সেই ব্যক্তি এমন পর্যায়ে পৌঁছান, যখন তিনি নিজেকে যিহোবার কাছে উৎসর্গ করতে এবং যিশুর আদেশ অনুযায়ী বাপ্তাইজিত হতে চান।
১১. কেন বাপ্তিস্মের আগে আমাদের নিয়মিতভাবে প্রচার কাজে যোগ দেওয়া গুরুত্বপূর্ণ?
১১ বাপ্তিস্মের পথে উন্নতি করার আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হল, রাজ্যের সুসমাচার প্রচার কাজে অংশ নেওয়া। এটা হল সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ, যা যিহোবা এই শেষকালে তাঁর লোকেদের দিয়েছেন। (মথি ২৪:১৪) এর মাধ্যমে অবাপ্তাইজিত প্রকাশকরা তাদের বিশ্বাস সম্বন্ধে অন্যদের বলে আনন্দ পেতে পারে। এ ছাড়া, এই কাজে অংশ নেওয়া তাদেরকে বাপ্তিস্মের পরে ক্ষেত্রের পরিচর্যায় নিয়মিত এবং উদ্যোগী অংশ নিতেও সজ্জিত করে।—রোমীয় ১০:৯, ১০, ১৪, ১৫.
কোনোকিছু কি আপনাকে বাপ্তাইজিত হতে বাধা দেয়?
১২. কী হয়তো কাউকে কাউকে বাপ্তাইজিত হতে বাধা দেয়?
১২ কেউ কেউ হয়তো বাপ্তিস্ম নেওয়া থেকে বিরত থাকে কারণ এটা যে-দায়িত্বগুলো নিয়ে আসে, তারা সেগুলো গ্রহণ করতে চায় না। তারা বুঝতে পারে যে, যিহোবার মানগুলো পূরণ করতে গেলে তাদেরকে জীবনে অনেক গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তনগুলো করতে হবে। অথবা তারা হয়তো এই ভেবে ভয় পায় যে, বাপ্তিস্মের পরে ঈশ্বরের চাহিদা অনুযায়ী জীবনযাপন করা তাদের পক্ষে কঠিন হবে। কেউ কেউ এমনকি এই যুক্তি দেখাতে পারে যে, “একদিন হয়তো আমি খারাপ কিছু করে ফেলব আর আমাকে মণ্ডলী থেকে সমাজচ্যুত করা হবে।”
১৩. যিশুর দিনে কোন বিষয়গুলো কয়েক জনকে যিশুর অনুসারী হওয়ার ক্ষেত্রে বাধা দিয়েছিল?
১৩ যিশুর দিনে কেউ কেউ ব্যক্তিগত আগ্রহের বিষয়গুলো এবং পারিবারিক বন্ধনকে তাঁর শিষ্য হওয়ার ক্ষেত্রে বাধা হতে দিয়েছিল। একজন অধ্যাপক বলেছিলেন যে, যিশু যেখানেই যান না কেন, তিনি তাঁকে অনুসরণ করবেন। কিন্তু, যিশু বিভিন্ন সময়ে উল্লেখ করেছিলেন যে এমনকি রাত কাটানোর জন্যও তাঁর কোনো জায়গা নেই। যিশু যখন আরেকজন শ্রোতাকে তাঁর অনুসারী হতে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন, তখন সেই ব্যক্তি উত্তর দিয়েছিলেন যে তাকে প্রথমে তার বাবাকে “কবর” দিতে হবে। সম্ভবত, তিনি যিশুকে অনুসরণ করার এবং প্রয়োজন অনুযায়ী পারিবারিক দায়িত্ব পালন করার চেয়ে বরং বাড়িতে থাকতে ও তার বাবার মৃত্যু পর্যন্ত অপেক্ষা করতে চেয়েছিলেন। অবশেষে, তৃতীয় এক ব্যক্তি বলেছিলেন যে, যিশুকে অনুসরণ করার আগে তাকে তার ঘরের সকলের কাছ থেকে “বিদায় লইয়া” আসতে হবে। যিশু এই দেরিকে ‘পিছনে ফিরিয়া চাওয়া’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। তাই এটা স্পষ্ট যে, যারা দেরি করতে চায় তারা সবসময়ই তাদের খ্রিস্টীয় দায়িত্ব কৌশলে এড়ানোর জন্য অজুহাত খুঁজে পেতে সমর্থ হয়।—লূক ৯:৫৭-৬২.
১৪. (ক) যিশু যখন পিতর, আন্দ্রিয়, যাকোব এবং যোহনকে মনুষ্যধারী হওয়ার আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন, তখন তারা কেমন প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিল? (খ) যিশুর জোয়ালি গ্রহণ করার ক্ষেত্রে কেন আমাদের দ্বিধা করা উচিত নয়?
১৪ পিতর, আন্দ্রিয়, যাকোব এবং যোহনের উদাহরণ একেবারে আলাদা। যিশু যখন তাদেরকে তাঁকে অনুসরণ করার ও মনুষ্যধারী হওয়ার আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন, বাইবেল বলে: “আর তখনই তাঁহারা জাল পরিত্যাগ করিয়া তাঁহার পশ্চাদগামী হইলেন।” (মথি ৪:১৯-২২) তারা সঙ্গে সঙ্গে এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার দ্বারা ব্যক্তিগতভাবে সেই অভিজ্ঞতা লাভ করেছিল, যে-বিষয়ে যিশু পরে তাদেরকে বলেছিলেন: “আমার যোঁয়ালি আপনাদের উপরে তুলিয়া লও, এবং আমার কাছে শিক্ষা কর, কেননা আমি মৃদুশীল ও নম্রচিত্ত; তাহাতে তোমরা আপন আপন প্রাণের জন্য বিশ্রাম পাইবে। কারণ আমার যোঁয়ালি সহজ ও আমার ভার লঘু।” (মথি ১১:২৯, ৩০) যদিও বাপ্তিস্ম দায়িত্বের জোয়ালি নিয়ে আসে কিন্তু যিশু আমাদের আশ্বাস দেন যে, এটা সহজ ও বহনযোগ্য জোয়ালি, যা আমাদের জন্য অপরিমেয় বিশ্রাম বা সতেজতা নিয়ে আসবে।
১৫. কীভাবে মোশি এবং যিরমিয়ের উদাহরণ দেখায় যে, আমরা ঈশ্বরের সমর্থন লাভের ওপর নির্ভর করতে পারি?
১৫ অবশ্য, অযোগ্য মনে করার অনুভূতি খুবই স্বাভাবিক। মোশি এবং যিরমিয় উভয়েই যিহোবা তাদের যে-কার্যভার দিয়েছিলেন, তা পালন করার ক্ষেত্রে প্রথমে নিজেদের অযোগ্য মনে করেছিল। (যাত্রাপুস্তক ৩:১১; যিরমিয় ১:৬) কীভাবে ঈশ্বর তাদের আশ্বাস দিয়েছিলেন? “আমি তোমার সহবর্ত্তী হইব,” মোশিকে তিনি বলেছিলেন। “আমি তোমার সঙ্গে সঙ্গে আছি,” যিরমিয়ের কাছে তিনি প্রতিজ্ঞা করেছিলেন। (যাত্রাপুস্তক ৩:১২; যিরমিয় ১:৮) আমরাও ঐশিক সমর্থনের ওপর আস্থা রাখতে পারি। ঈশ্বরের প্রতি ভালবাসা এবং তাঁর প্রতি নির্ভরতা আমাদেরকে আমরা উৎসর্গীকরণের যোগ্যরূপে চলতে পারব কি না, সেই সম্বন্ধে পুষে রাখা সন্দেহেগুলো কাটিয়ে ওঠার জন্য সাহায্য করতে পারে। প্রেরিত যোহন লিখেছিলেন, “প্রেমে ভয় নাই, বরং সিদ্ধ প্রেম ভয়কে বাহির করিয়া দেয়।” (১ যোহন ৪:১৮) একটা ছোট ছেলেকে যখন একা একা হাঁটতে হয়, তখন সে হয়তো ভয় পেতে পারে কিন্তু সে যখন তার বাবার হাত ধরে হাঁটে, তখন তার আস্থা থাকে। একইভাবে, আমরা যদি আমাদের সমস্ত হৃদয়ে যিহোবার ওপর বিশ্বাস বা নির্ভর করি, তা হলে তাঁর সঙ্গে সঙ্গে গমনাগমন করার সময় তিনি ‘আমাদের পথ সকল সরল করিবার’ প্রতিজ্ঞা করেন।—হিতোপদেশ ৩:৫, ৬.
মর্যাদাপূর্ণ এক উপলক্ষ
১৬. কেন বাপ্তিস্মের সঙ্গে জলে পুরোপুরি নিমজ্জিত হওয়া জড়িত?
১৬ বাপ্তিস্ম সাধারণত একটা শাস্ত্রীয় বক্তৃতার পরে হয়ে থাকে, যে-বক্তৃতায় খ্রিস্টীয় বাপ্তিস্মের তাৎপর্য সম্বন্ধে ব্যাখ্যা করা হয়। এই বক্তৃতার শেষে বাপ্তিস্মের জন্য দুটো প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার মাধ্যমে প্রার্থীদের তাদের বিশ্বাস সম্বন্ধে জনসমক্ষে ঘোষণা করতে বলা হয়। (রোমীয় ১০:১০; ২২ পৃষ্ঠার বাক্স দেখুন।) এরপর প্রার্থীরা যিশুর দ্বারা স্থাপিত আদর্শ অনুসরণ করে জলে নিমজ্জিত হয়। বাইবেল দেখায় যে, বাপ্তাইজিত হওয়ার পর যিশু “জল হইতে উঠিলেন’ অথবা ‘জলের মধ্য হইতে উঠিলেন।’ (মথি ৩:১৬; মার্ক ১:১০) স্পষ্টতই, যোহন বাপ্তাইজক যিশুকে পুরোপুরি নিমজ্জিত করেছিলেন।b সম্পূর্ণরূপে নিমজ্জিত হওয়া আমরা আমাদের জীবনে যে-নাটকীয় পরিবর্তন করেছি, সেটাকে চিত্রিত করে অর্থাৎ রূপকভাবে আমরা আমাদের পূর্বের জীবনধারার কাছে মারা যাই এবং ঈশ্বরের সেবায় এক নতুন জীবন শুরু করি।
১৭. কীভাবে বাপ্তিস্মপ্রার্থী এবং দর্শক উভয়েই উপলক্ষের মর্যাদার ক্ষেত্রে অবদান রাখতে পারে?
১৭ বাপ্তিস্ম একইসঙ্গে গুরুগম্ভীর এবং আনন্দপূর্ণ এক উপলক্ষ। বাইবেল জানায় যে, যোহন যখন যিশুকে জর্দন নদীতে নিমজ্জিত করেছিলেন, তখন যিশু প্রার্থনা করেছিলেন। (লূক ৩:২১, ২২) এই উদাহরণের সঙ্গে মিল রেখে আজকে বাপ্তিস্মপ্রার্থীদের মর্যাদাপূর্ণ আচরণ দেখানো উচিত। আর যেহেতু বাইবেল আমাদের রোজকার জীবনে মার্জিতভাবে পোশাক-আশাক পরার জন্য জোরালো পরামর্শ দেয়, তাই আমাদের বাপ্তিস্মের দিনে এই পরামর্শে আরও কত বেশি মনোযোগ দেওয়া উচিত! (১ তীমথিয় ২:৯) দর্শকরাও বাপ্তিস্মের বক্তৃতা মনোযোগ দিয়ে শুনে এবং সুশৃঙ্খলা বজায় রেখে বাপ্তিস্ম দেখার মাধ্যমে সঠিক সম্মান প্রদর্শন করতে পারে।—১ করিন্থীয় ১৪:৪০.
বাপ্তাইজিত শিষ্যরা যে-আশীর্বাদগুলো উপভোগ করে
১৮, ১৯. বাপ্তিস্ম কোন কোন বিশেষ সুযোগ এবং আশীর্বাদ নিয়ে আসে?
১৮ ঈশ্বরের কাছে নিজেকে উৎসর্গ করার এবং বাপ্তাইজিত হওয়ার পর আমরা এক বিশেষ পরিবারের অংশ হই। প্রথমত, যিহোবা আমাদের পিতা এবং বন্ধু হয়ে ওঠেন। বাপ্তিস্মের আগে আমরা ঈশ্বরের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন ছিলাম; কিন্তু এখন আমরা পুনরায় সম্মিলিত হয়েছি। (২ করিন্থীয় ৫:১৯; কলসীয় ১:২০) খ্রিস্টের বলিদানের মাধ্যমে আমরা যিহোবার নিকটবর্তী হয়েছি এবং তিনি আমাদের নিকটবর্তী হন। (যাকোব ৪:৮) ভাববাদী মালাখি বর্ণনা করেছেন যে, কীভাবে যিহোবা সেই ব্যক্তিদের প্রতি মনোযোগ দেন এবং তাদের কথা শোনেন, যারা তাঁর নাম ব্যবহার করে এবং তা বহন করে আর তাদের নাম তিনি তাঁর স্মরণার্থকপুস্তকে যুক্ত করেন। “তাহারা আমারই হইবে,” ঈশ্বর বলেন, “কোন মনুষ্য যেমন আপন সেবাকারী পুত্ত্রের প্রতি মমতা করে, আমি তাহাদের প্রতি তেমনি মমতা করিব।”—মালাখি ৩:১৬-১৮.
১৯ এ ছাড়া, বাপ্তিস্ম আমাদেরকে বিশ্বব্যাপী ভ্রাতৃসমাজের অংশ হয়ে উঠতে সমর্থ করে। প্রেরিত পিতর যখন জিজ্ঞেস করেছিলেন যে, খ্রিস্টের শিষ্যরা যে-ত্যাগস্বীকার করছে, সেটার জন্য তারা কোন ধরনের আশীর্বাদ লাভ করবে, তখন যিশু প্রতিজ্ঞা করেছিলেন: “যে কোন ব্যক্তি আমার নামের জন্য বাটী, কি ভ্রাতা, কি ভগিনী, কি পিতা, কি মাতা, কি সন্তান, কি ক্ষেত্র পরিত্যাগ করিয়াছে, সে তাহার শত গুণ পাইবে, এবং অনন্ত জীবনের অধিকারী হইবে।” (মথি ১৯:২৯) কয়েক বছর পরে পিতর সেই ‘ভ্রাতৃসমাজের’ বিষয়ে লিখেছিলেন, যা “জগতে” বা পৃথিবীতে গড়ে উঠেছিল। পিতর ব্যক্তিগতভাবে প্রেমময় ভ্রাতৃসমাজের সাহায্য ও আশীর্বাদগুলো লাভ করেছিলেন আর আমরাও তা লাভ করতে পারি।—১ পিতর ২:১৭; ৫:৯.
২০. বাপ্তিস্ম কোন অপূর্ব প্রত্যাশা দেয়?
২০ অধিকন্তু, যিশু ইঙ্গিত দিয়েছিলেন যে, যারা তাঁকে অনুসরণ করে তারা “অনন্ত জীবনের অধিকারী হইবে।” হ্যাঁ, উৎসর্গীকরণ এবং বাপ্তিস্ম “প্রকৃতরূপে জীবন”—ঈশ্বরের নতুন জগতে অনন্তজীবন—‘ধরিয়া রাখিবার’ প্রত্যাশা দেয়। (১ তীমথিয় ৬:১৯) ভবিষ্যৎ সম্বন্ধে আমরা নিজেদের এবং আমাদের পরিবারের জন্য এর চেয়ে ভাল আর কোন ভিত্তি গড়তে পারি? এই অপূর্ব প্রত্যাশা আমাদেরকে ‘যুগে যুগে চিরকাল আমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর নামে চলিতে’ সমর্থ করবে।—মীখা ৪:৫.
[পাদটীকাগুলো]
a একইভাবে, পঞ্চাশত্তমীর দিনে যে-তিন হাজার যিহুদি এবং ধর্মান্তরিত ব্যক্তিরা পিতরের কথা শুনেছিল, তারাও দেরি না করে বাপ্তাইজিত হয়েছিল। অবশ্য, ইথিওপীয় নপুংসকের মতো তারাও ইতিমধ্যে ঈশ্বরের বাক্যের মৌলিক শিক্ষা এবং নীতিগুলোর সঙ্গে পরিচিত ছিল।—প্রেরিত ২:৩৭-৪১.
b গ্রিক শব্দ বাপ্তিস্মা (বাপ্তিস্ম) সম্বন্ধে ভাইনের এক্সপজিটরি ডিকশনারি অভ্ নিউ টেস্টামেন্ট ওয়ার্ডস্ বলে যে, এটি “সম্পূর্ণভাবে নিমজ্জিত হওয়া, ডুব দেওয়া এবং উঠে আসার প্রক্রিয়াকে” চিত্রিত করে।
আপনি কি ব্যাখ্যা করতে পারেন?
• কীভাবে এবং কেন আমাদের যিহোবার প্রেমের প্রতি সাড়া দেওয়া উচিত?
• বাপ্তিস্মের আগে কোন আধ্যাত্মিক উন্নতি করা উচিত?
• ব্যর্থতার ভয় অথবা দায়িত্ব নিতে না চাওয়ার বিষয়টাকে কেন আমাদের বাপ্তাইজিত হওয়ার ক্ষেত্রে বাধা হতে দেওয়া উচিত নয়?
• যিশু খ্রিস্টের বাপ্তাইজিত শিষ্যরা কোন অদ্বিতীয় আশীর্বাদগুলো উপভোগ করতে পারে?
[২৬ পৃষ্ঠার চিত্র]
“আমার বাপ্তাইজিত হইবার বাধা কি?”
[২৯ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]
বাপ্তিস্ম একইসঙ্গে গুরুগম্ভীর ও আনন্দপূর্ণ এক উপলক্ষ