আপনি কি রাজ্যের জন্য ত্যাগস্বীকার করবেন?
“ঈশ্বর হৃষ্টচিত্ত দাতাকে ভালোবাসেন।”—২ করি. ৯:৭.
১. অনেকে কোন ধরনের ত্যাগস্বীকার করে এবং কেন?
লোকেরা সেই বিষয়গুলোর জন্য স্বেচ্ছায় ত্যাগস্বীকার করে, যেগুলো তাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। বাবা-মায়েরা তাদের সন্তানদের উপকারের জন্য নিজেদের সময়, টাকাপয়সা এবং শক্তি প্রদান করে। যেখানে সঙ্গীসাথিরা খেলাধুলা এবং মজা করে সময় কাটায়, সেখানে অল্পবয়সি ক্রীড়াবিদরা, যারা অলিম্পিকে নিজেদের দেশকে প্রতিনিধিত্ব করার জন্য আকুল আকাঙ্ক্ষী, তারা প্রতিদিন কয়েক ঘন্টা ধরে অক্লান্তভাবে অনুশীলন এবং চর্চা করে। যিশুও সেই বিষয়গুলোর জন্য ত্যাগস্বীকার করেছিলেন, যেগুলো তাঁর কাছে গুরুত্বপূর্ণ ছিল। তিনি আরামদায়ক জীবনযাপন করার চেষ্টা করেননি এবং তাঁর কোনো সন্তানসন্ততি ছিল না। এর পরিবর্তে, তিনি রাজ্যের বিষয়গুলোকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ওপর মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করেছিলেন। (মথি ৪:১৭; লূক ৯:৫৮) একইভাবে, তাঁর অনুসারীরা ঈশ্বরের রাজ্যকে সমর্থন করার জন্য অনেক ত্যাগস্বীকার করেছিল। তাদের প্রধান চিন্তার বিষয় ছিল, সেই রাজ্যকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া আর রাজ্যকে সমর্থন করার জন্য তারা যতটা সম্ভব পূর্ণরূপে ত্যাগস্বীকার করেছিল। (মথি ৪:১৮-২২; ১৯:২৭) তাই, নিজেদেরকে আমরা জিজ্ঞেস করতে পারি, ‘আমার জীবনে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টা কী?’
২. (ক) কোন ত্যাগস্বীকারগুলো সমস্ত খ্রিস্টানের জন্য অপরিহার্য? (খ) কেউ কেউ অতিরিক্ত কোন ত্যাগস্বীকার করে থাকে?
২ কিছু ত্যাগস্বীকার রয়েছে, যেগুলো সমস্ত সত্য খ্রিস্টানের জন্য অপরিহার্য আর সেগুলো যিহোবার সঙ্গে এক উত্তম সম্পর্ক গড়ে তোলার ও তা বজায় রাখার জন্য অতীব গুরুত্বপূর্ণ। এই ত্যাগস্বীকারের অন্তর্ভুক্ত, প্রার্থনা, বাইবেল পাঠ, পারিবারিক উপাসনা, সভায় যোগদান এবং ক্ষেত্রের পরিচর্যায় অংশগ্রহণ করার জন্য ব্যক্তিগত সময় ও শক্তি প্রদান করা।a (যিহো. ১:৮; মথি ২৮:১৯, ২০; ইব্রীয় ১০:২৪, ২৫) আমাদের প্রচেষ্টা ও যিহোবার আশীর্বাদের ফলে প্রচার কাজ দ্রুতগতিতে বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং অনেকে ‘সদাপ্রভুর গৃহের পর্ব্বতের’ দিকে স্রোতের ন্যায় প্রবাহিত হচ্ছে। (যিশা. ২:২) রাজ্যের কাজগুলোকে সমর্থন করার জন্য অনেকে বেথেলে সেবা করার, কিংডম হল এবং সম্মেলন হল নির্মাণে সহায়তা করার, সম্মেলনগুলো সংগঠিত করার অথবা প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় ত্রাণসামগ্রী বিতরণের কাজ করার জন্য ত্যাগস্বীকার করে থাকে। এই অতিরিক্ত কাজগুলো জীবন লাভ করার কোনো চাহিদা নয় কিন্তু রাজ্যের বিষয়গুলোকে সমর্থন করার জন্য অতীব গুরুত্বপূর্ণ।
৩. (ক) আমরা যখন রাজ্যের জন্য ত্যাগস্বীকার করি, তখন কীভাবে আমরা উপকার লাভ করি? (খ) আমাদের কোন প্রশ্নগুলো বিবেচনা করা উচিত?
৩ রাজ্যকে সক্রিয়ভাবে সমর্থন করার প্রয়োজন আগে কখনো এতটা দেখা যায়নি। এটা দেখা অত্যন্ত আনন্দদায়ক যে, অনেকে যিহোবার জন্য স্বেচ্ছায় ত্যাগস্বীকার করছে। (পড়ুন, গীতসংহিতা ৫৪:৬.) ঈশ্বরের রাজ্যের জন্য অপেক্ষা করার সময় এইরকম এক উদার মনোভাব আমাদের জন্য অনেক আনন্দ নিয়ে আসে। (দ্বিতীয়. ১৬:১৫; প্রেরিত ২০:৩৫) তবে, আমাদের প্রত্যেকের নিজেদেরকে পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে পরীক্ষা করা উচিত। এমন দিকগুলো কি রয়েছে, যেখানে আমরা রাজ্যের জন্য অতিরিক্ত ত্যাগস্বীকার করতে পারি? কীভাবে আমরা আমাদের সময়, টাকাপয়সা, শক্তি এবং কর্মদক্ষতাকে ব্যবহার করছি? আমাদের কোন সতর্কতা সম্বন্ধে বিবেচনা করতে হবে? আসুন আমরা এমন একটা আদর্শ বিবেচনা করে দেখি, যা স্বেচ্ছায় এই ধরনের ত্যাগস্বীকার করার জন্য আমরা অনুকরণ করতে পারি আর এভাবে আমাদের আনন্দ বৃদ্ধি করতে পারি।
প্রাচীন ইস্রায়েলের বিভিন্ন বলিদান
৪. বলি উৎসর্গ করার মাধ্যমে ইস্রায়েলীয়রা কীভাবে উপকৃত হতো?
৪ প্রাচীন ইস্রায়েলে পাপের ক্ষমা পাওয়ার জন্য বলি উৎসর্গ করতে হতো। লোকেদের যিহোবার অনুগ্রহ লাভ করার জন্য বলি উৎসর্গ করা অপরিহার্য ছিল। এগুলোর মধ্যে কিছু ছিল আবশ্যক; আবার কিছু ছিল স্বেচ্ছাপ্রদত্ত। (লেবীয়. ২৩:৩৭, ৩৮) হোমবলি যিহোবার উদ্দেশে স্বেচ্ছায়দত্ত উপহার হিসেবে উৎসর্গ করা যেত। বলিদানের এক উল্লেখযোগ্য উদাহরণ, শলোমনের দিনে মন্দির প্রতিষ্ঠা করার সময় দেখা গিয়েছিল।—২ বংশা. ৭:৪-৬.
৫. সেই ব্যক্তিদের জন্য যিহোবা কোন ব্যবস্থা করেছিলেন, যারা দরিদ্র ছিল?
৫ যিহোবা প্রেমের সঙ্গে উপলব্ধি করেছিলেন যে, প্রত্যেকে একই পরিমাণ বলি উৎসর্গ করতে পারবে না আর তাই তিনি প্রত্যেকের কাছ থেকে কেবল তাদের সামর্থ্য অনুযায়ী চাইতেন। যিহোবার আইন অনুযায়ী পশুর রক্ত পাতিত হতে হবে আর এটা ছিল তাঁর পুত্র যিশুর মাধ্যমে ‘আগামী উত্তম উত্তম বিষয়ের ছায়াস্বরূপ।’ (ইব্রীয় ১০:১-৪) কিন্তু, যিহোবা সেই আইনের ব্যাপারে কঠোর ছিলেন না। উদাহরণ স্বরূপ, একজন ব্যক্তি যদি পাল থেকে কোনো পশু উৎসর্গ করতে না পারতেন, তাহলে ঈশ্বর বলিদান হিসেবে ঘুঘু গ্রহণ করতেন। তাই, এমনকী দরিদ্র ব্যক্তিও আনন্দের সঙ্গে যিহোবার উদ্দেশ্যে বলি উৎসর্গ করতে পারতেন। (লেবীয়. ১:৩, ১০, ১৪; ৫:৭) যদিও বলিকৃত পশুর মধ্যে বিভিন্নতা ছিল কিন্তু স্বেচ্ছায় বলি উৎসর্গ করত এমন প্রত্যেকের কাছ থেকে দুটো বিষয় আশা করা হতো।
৬. স্বেচ্ছায়দত্ত বলিদান করার সময় প্রত্যেক ব্যক্তির কাছ থেকে কী আশা করা হতো এবং সেই চাহিদাগুলো পূরণ করা কতটা গুরুত্বপূর্ণ ছিল?
৬ প্রথমত, একজন ব্যক্তিকে তার সর্বোত্তমটা দিতে হতো। যিহোবা সেই জাতিকে বলেছিলেন যে, ‘গ্রাহ্য হইবার’ জন্য যেকোনো বলিদান নিখুঁত হতে হবে। (লেবীয়. ২২:১৮-২০) পশুর মধ্যে যদি কোনো খুঁত থাকত, তাহলে সেটাকে যিহোবার কাছে গ্রহণযোগ্য বলি হিসেবে দেখা হতো না। দ্বিতীয়ত, যে-ব্যক্তি বলিদান করতেন, তাকে শুচি ও শুদ্ধ হতে হতো। একজন ব্যক্তি যদি অশুচি অবস্থায় থাকতেন, তাহলে স্বেচ্ছায় বলিদান করার আগে যিহোবার সামনে তার অবস্থান পুনর্স্থাপন করার জন্য তাকে পাপার্থক বলি বা দোষার্থক বলি উৎসর্গ করতে হতো। (লেবীয়. ৫:৫, ৬, ১৫) এটা এক গুরুতর বিষয় ছিল। যিহোবা স্পষ্টভাবে বলে দিয়েছিলেন যে, কোনো ব্যক্তি যদি অশুচি অবস্থায় মঙ্গলার্থক বলিদানে অংশ নেয়, যেটার অন্তর্ভুক্ত স্বেচ্ছায়দত্ত বলিদানও, তাহলে সে ঈশ্বরের লোকেদের মধ্যে থেকে উচ্ছিন্ন হবে। (লেবীয়. ৭:২০, ২১) অন্যদিকে, যিনি বলিদান করছেন, তার যদি যিহোবার সামনে এক উত্তম অবস্থান থাকত এবং তার বলি নিখুঁত হতো, তাহলে সেই দাতা পরিতৃপ্তি লাভ করে আনন্দিত হতে পারতেন।—পড়ুন, ১ বংশাবলি ২৯:৯.
বর্তমানে বিভিন্ন ত্যাগস্বীকার করা
৭, ৮. (ক) রাজ্যের জন্য ত্যাগস্বীকার করার মাধ্যমে অনেকে কোন আনন্দ লাভ করে? (খ) আমাদের কাছে কোন সম্পদ রয়েছে?
৭ বর্তমানেও, অনেকে যিহোবার সেবায় নিজেদেরকে বিলিয়ে দিতে ইচ্ছুক আর যিহোবা এতে আনন্দিত হন। আমাদের ভাই-বোনদের জন্য কাজ করা পরিতৃপ্তিদায়ক। কিংডম হল নির্মাণে অংশ নেন এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগের দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের সহায়তা করেন এমন একজন ভাই বলেন যে, এভাবে সেবা করে তিনি যে-পরিতৃপ্তি লাভ করেন, তা ভাষায় প্রকাশ করা অনেক কঠিন। তিনি বলেন, “স্থানীয় ভাই ও বোনেরা নতুন কিংডম হলে দাঁড়ানোর অথবা কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় সহায়তা লাভ করার পর, যে-আনন্দ এবং উপলব্ধি প্রকাশ করে, তা দেখা সমস্ত কাজ এবং প্রচেষ্টাকে সার্থক করে তোলে।”
৮ যিহোবার আধুনিক দিনের সংগঠন সবসময় যিহোবার কাজকে সমর্থন করার জন্য বিভিন্ন সুযোগ খুঁজে থাকে। ১৯০৪ সালে, ভাই সি. টি. রাসেল লিখেছিলেন: “প্রত্যেক ব্যক্তির নিজেকে তার নিজের সময়, প্রভাব, অর্থ ইত্যাদির ওপর প্রভুর নিযুক্ত গৃহাধ্যক্ষ হিসেবে গণ্য করতে হবে এবং প্রত্যেকের তাদের সাধ্যমতো এবং তাদের প্রভুর গৌরবের জন্য এই তালন্তগুলো ব্যবহার করার চেষ্টা করতে হবে।” যদিও আমরা অনেক আশীর্বাদ লাভ করি কিন্তু যিহোবার উদ্দেশে ত্যাগস্বীকার করার জন্য আমাদের পক্ষ থেকেও কিছু করতে হবে। (২ শমূ. ২৪:২১-২৪) আমাদের কাছে যে-সমস্ত সম্পদ রয়েছে, সেগুলোকে কি আমরা সর্বোত্তম উপায়ে ব্যবহার করতে পারি?
৯. আমাদের সময় ব্যবহারের ক্ষেত্রে, লূক ১০:২-৪ পদে প্রাপ্ত যিশুর নির্দেশনা থেকে আমরা কোন নীতি কাজে লাগাতে পারি?
৯ আমাদের সময়। আমাদের সাহিত্যাদি অনুবাদ করার এবং ছাপানোর জন্য, উপাসনাস্থল নির্মাণ করার জন্য, সম্মেলনগুলো সংগঠিত করার জন্য, দুর্যোগের সময় ত্রাণকাজে সহায়তা করার জন্য এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় কাজে অংশগ্রহণ করার জন্য যথেষ্ট সময় এবং প্রচেষ্টার প্রয়োজন। দিনে আমাদের জন্য কেবল এক নির্দিষ্ট সময় বাধা আছে। যিশু এমন একটা নীতি জুগিয়েছিলেন, যা আমাদের সাহায্য করতে পারে। যিশু যখন তাঁর শিষ্যদের ক্ষেত্রে পাঠিয়েছিলেন, তখন তিনি তাদেরকে বলেছিলেন, যেন তারা “পথের মধ্যে কাহাকেও মঙ্গলবাদ” না করে। (লূক ১০:২-৪) কেন যিশু এইরকম নির্দেশনা দিয়েছিলেন? একজন বাইবেল পণ্ডিত বলেন: “প্রাচ্যের দেশগুলোতে লোকেরা কেবল আমাদের মতো সামান্য নত হয়ে অথবা হাত মিলিয়ে সম্ভাষণ জানাত না বরং তারা কয়েক বার আলিঙ্গন করত, মাথা নত করত এবং এমনকী মাটিতে উবুড় হয়ে পড়ত। এই সমস্তকিছু করার জন্য যথেষ্ট সময়ের প্রয়োজন ছিল।” যিশু যে তাঁর অনুসারীদের রূঢ় হতে বলছিলেন এমন নয়। এর পরিবর্তে, তিনি তাদেরকে এটা বোঝার জন্য সাহায্য করছিলেন যে, তাদের হাতে সীমিত সময় রয়েছে আর তাই অধিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোর যত্ন নেওয়ার জন্য তাদের এই সময়কে সর্বোত্তম উপায়ে ব্যবহার করতে হবে। (ইফি. ৫:১৬) আমরা কি এই নীতি কাজে লাগাতে পারি, যাতে রাজ্যের কাজে সহায়তা করার জন্য আমাদের হাতে আরও বেশি সময় থাকে?
১০, ১১. (ক) কিছু উপায় কী, যেগুলোর মাধ্যমে আমাদের দান বিশ্বব্যাপী কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে? (খ) ১ করিন্থীয় ১৬:১, ২ পদে প্রাপ্ত কোন নীতি আমাদের সাহায্য করতে পারে?
১০ আমাদের টাকাপয়সা। রাজ্যের কাজগুলোকে সমর্থন করার জন্য প্রচুর অর্থের প্রয়োজন। প্রতি বছর ভ্রমণ অধ্যক্ষ, বিশেষ অগ্রগামী এবং মিশনারিদের ব্যয়ভার বহন করার জন্য কোটি কোটি টাকা খরচ করতে হয়। ১৯৯৯ সাল থেকে, সীমিত সম্পদ রয়েছে এমন দেশগুলোতে ২৪,৫০০টারও বেশি কিংডম হল নির্মাণ করা হয়েছে। এ ছাড়া, এখনও আরও প্রায় ৬,৪০০টা কিংডম হল প্রয়োজন। প্রতি মাসে প্রায় ১০ কোটি প্রহরীদুর্গ এবং সচেতন থাক! পত্রিকা ছাপানো হয়। এই সমস্তকিছু আপনাদের স্বেচ্ছাকৃত দানের মাধ্যমে জোগানো হয়।
১১ প্রেরিত পৌল এমন একটা নীতি জুগিয়েছেন, যা দানের বিষয়টা বিবেচনা করার সময় অনুসরণ করা যেতে পারে। (পড়ুন, ১ করিন্থীয় ১৬:১, ২.) অনুপ্রাণিত হয়ে তিনি তার করিন্থের ভাইদের উৎসাহিত করেছিলেন, যেন তারা তাদের হাতে কতটুকু অর্থ থাকে, তা দেখার জন্য সপ্তাহ শেষ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা না করে বরং সপ্তাহের শুরুতেই তাদের সামর্থ্য অনুযায়ী কিছু অর্থ আলাদা করে রাখে। প্রথম শতাব্দীর মতো, আমাদের সময়ের ভাই-বোনেরাও তাদের পরিস্থিতি অনুযায়ী উদারভাবে দান করার জন্য আগে থেকেই পরিকল্পনা করে রাখে। (লূক ২১:১-৪; প্রেরিত ৪:৩২-৩৫) যিহোবা এইরকম দানশীল মনোভাবকে মূল্যবান বলে গণ্য করেন।
১২, ১৩. কোন উদ্বিগ্নতাগুলোর কারণে হয়তো কেউ কেউ তাদের শক্তি এবং কর্মদক্ষতা দিতে চায় না কিন্তু যিহোবা কীভাবে তাদেরকে সাহায্য করবেন?
১২ আমাদের শক্তি এবং কর্মদক্ষতা। রাজ্যের জন্য আমাদের শক্তি এবং কর্মদক্ষতা ব্যবহার করার প্রচেষ্টায় যিহোবা আমাদের সমর্থন করেন। তিনি আমাদেরকে সেই সময়ও সাহায্য করার প্রতিজ্ঞা করেন, যখন আমরা ক্লান্ত হয়ে পড়ি। (যিশা. ৪০:২৯-৩১) আমরা কি এইরকমটা মনে করি যে, এই কাজে সহায়তা করার ব্যাপারে আমাদের বেশি দক্ষতা নেই? আমরা কি এইরকম যুক্তি দেখাই যে, আমাদের চেয়ে আরও বেশি যোগ্য ভাইয়েরা রয়েছে? মনে রাখবেন, যিহোবা একজন ব্যক্তির সহজাত কর্মদক্ষতাকে আরও উন্নত করতে পারেন, যেমনটা তিনি বৎসলেল এবং অহলীয়াবের ক্ষেত্রে করেছিলেন।—যাত্রা. ৩১:১-৬; শিরোনামের পাশে দেওয়া ছবিটা দেখুন।
১৩ যিহোবা আমাদেরকে আমাদের সর্বোত্তমটা দেওয়ার এবং তা দিতে অস্বীকার না করার জন্য উৎসাহিত করেন। (হিতো. ৩:২৭) মন্দির পুনর্নির্মাণের সময় যিহোবা যিরূশালেমের যিহুদিদের বলেছিলেন, তারা যেন নির্মাণ কাজের জন্য তারা যা করছিল, সেটা নিয়ে ধ্যান করে। (হগয় ১:২-৫) তারা বিক্ষিপ্ত হয়ে পড়েছিল এবং তাদের মনোযোগ হারিয়ে ফেলেছিল। আমাদের বিবেচনা করে দেখা উচিত যে, আমাদের অগ্রাধিকারের বিষয়গুলো যিহোবার অগ্রাধিকারের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ কি না। আমরা কি ‘আপন আপন পথ আলোচনা করিতে’ পারি, যাতে এই শেষকালে রাজ্যের কাজে আরও বেশি করে অংশ নিতে পারি?
আমাদের সামর্থ্য অনুযায়ী ত্যাগস্বীকার করা
১৪, ১৫. (ক) দরিদ্র ভাই-বোনদের উদাহরণের মাধ্যমে কীভাবে আমাদের উৎসাহিত করা হয়েছে? (খ) আমাদের ইচ্ছা কী হওয়া উচিত?
১৪ অনেকে এমন এলাকায় বাস করে, যেখানে কষ্ট এবং দারিদ্র্য খুবই সাধারণ বিষয়। আমাদের সংগঠন সেই ভাই-বোনদের অভাব “পূর্ণ” করার প্রচেষ্টা করে, যারা এই ধরনের দেশে বাস করে। (২ করি. ৮:১৪) তা সত্ত্বেও, এমনকী সীমিত সম্পদ রয়েছে এমন ভাই-বোনেরাও দান করার বিশেষ সুযোগকে মূল্যবান বলে গণ্য করে। বস্তুগত দিক দিয়ে দরিদ্র ভাই-বোনেরা যখন হৃষ্টচিত্তে দান করার জন্য অনুপ্রাণিত হয়, তখন যিহোবা আনন্দিত হন।—২ করি. ৯:৭.
১৫ আফ্রিকার অত্যন্ত দরিদ্র একটা দেশে কিছু ভাই-বোন তাদের বাগানের ছোট্ট একটা জায়গা আলাদা করে রাখে এবং সেই জায়গায় উৎপাদিত দ্রব্য বিক্রি করে যে-অর্থ লাভ করে, তা রাজ্যের কাজে সমর্থন করার জন্য ব্যবহার করে। সেই একই দেশে অতীব প্রয়োজনীয় একটা কিংডম হল নির্মাণ প্রকল্পের জন্য পরিকল্পনা করা হয়েছিল। স্থানীয় ভাই-বোনেরা এতে সাহায্য করতে চেয়েছিল। তবে, সেই প্রকল্প আবাদের মরসুমের মাঝামাঝিতে সম্পাদন করার কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু, সেখানে অংশগ্রহণ করার জন্য দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ হওয়ায় তারা দিনের বেলা কিংডম হল প্রকল্পে কাজ করেছিল এবং এরপর বিকেলে বাগানে কাজ করার জন্য গিয়েছিল, যাতে সেখানে তারা শস্য উৎপাদন করতে পারে। কী এক আত্মত্যাগমূলক মনোভাব! এটা আমাদের প্রথম শতাব্দীর মাকিদনিয়ার ভাই-বোনদের কথা মনে করিয়ে দেয়। তারা ‘অগাধ দীনতার’ মধ্যে ছিল কিন্তু তার পরও তারা হাতে যে-প্রকল্প ছিল, সেটাতে সাহায্য করার বিশেষ সুযোগের জন্য অনুনয় করেছিল। (২ করি. ৮:১-৪) একইভাবে, আমরাও যেন প্রত্যেকে ‘সদাপ্রভুর দত্ত আশীর্ব্বাদানুসারে আপন আপন সঙ্গতি অনুযায়ী দান করি।’—পড়ুন, দ্বিতীয় বিবরণ ১৬:১৭.
১৬. কীভাবে আমরা নিশ্চিত করতে পারি যে, আমাদের ত্যাগস্বীকার যিহোবার কাছে গ্রাহ্য হয়?
১৬ কিন্তু, একটা বিষয়ে সতর্ক থাকা প্রয়োজন। প্রাচীন ইস্রায়েলীয়দের মতো আমাদের নিশ্চিত করতে হবে যে, আমাদের স্বেচ্ছায়দত্ত বলিদান বা ত্যাগস্বীকার যেন ঈশ্বরের কাছে গ্রহণযোগ্য হয়। আমাদের ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে, যাতে আমরা আমাদের পরিবার এবং যিহোবার উপাসনার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত প্রধান দায়িত্বগুলোর যত্ন নিতে পারি। অন্যদের জন্য আমাদের সময় এবং সম্পদ ব্যবহার করতে গিয়ে আমাদের পরিবারের আধ্যাত্মিকতা এবং দৈহিক মঙ্গলের বিষয়টা অবহেলিত হওয়া উচিত নয়। আমরা যদি তা করি, তাহলে আমরা এমন বিষয় থেকে দিচ্ছি, যা আমাদর নেই। (পড়ুন, ২ করিন্থীয় ৮:১২.) এ ছাড়া, আমাদের নিজেদের আধ্যাত্মিকতাও বজায় রাখতে হবে। (১ করি. ৯:২৬, ২৭) কিন্তু নিশ্চিত থাকুন যে, আমরা যখন বাইবেলের মান অনুযায়ী জীবনযাপন করি, তখন আমাদের ত্যাগস্বীকার আমাদের জন্য প্রচুর আনন্দ এবং পরিতৃপ্তি নিয়ে আসে আর সেগুলো যিহোবার কাছে “গ্রাহ্য” হয়।
আমাদের ত্যাগস্বীকারগুলো অত্যন্ত মূল্যবান
১৭, ১৮. রাজ্যের জন্য ত্যাগস্বীকার করছে এমন সকলের জন্য আমরা কেমন বোধ করি এবং আমাদের প্রত্যেকের কী বিবেচনা করা উচিত?
১৭ আমাদের অনেক ভাই এবং বোন রাজ্যের প্রয়োজনীয় কাজগুলোকে সমর্থন করার জন্য তাদের কাজের মাধ্যমে ‘আপনাদিগকে পেয় নৈবেদ্যরূপে সেচিত করে।’ (ফিলি. ২:১৭) আমরা আন্তরিকভাবে সেই ব্যক্তিদের প্রতি উপলব্ধি দেখাই, যারা এইরকম দানশীল মনোভাব প্রদর্শন করে। রাজ্যের কাজে নেতৃত্বদান করে এমন ভাইদের স্ত্রী এবং সন্তানরাও তাদের উদার ও আত্মত্যাগমূলক মনোভাবের জন্য প্রশংসা পাওয়ার যোগ্য।
১৮ রাজ্যের বিষয়গুলোকে সমর্থন করার জন্য যথেষ্ট পরিশ্রম করতে হয়। আসুন আমরা প্রার্থনাপূর্বক বিবেচনা করে দেখি যে, কীভাবে আমরা যতটা সম্ভব আরও বেশি করে অংশ নিতে পারি। আপনি নিশ্চিত থাকতে পারেন যে, এখন এর পুরস্কার প্রচুর এবং “আগামী যুগে” এমনকী আরও বেশি হবে।—মার্ক ১০:২৮-৩০.
a ২০১২ সালের ১৫ জানুয়ারি প্রহরীদুর্গ পত্রিকার ২১-২৫ পৃষ্ঠায় “যিহোবার উদ্দেশে প্রাণের সঙ্গে বলি উৎসর্গ করা” শিরোনামের প্রবন্ধটি দেখুন।