পরিত্রাণ পাওয়ার জন্য আমাদের অবশ্যই কী করতে হবে?
একবার একজন ব্যক্তি যীশুকে জিজ্ঞাসা করেন: “প্রভু, যাহারা পরিত্রাণ পাইতেছে, তাহাদের সংখ্যা কি অল্প?” যীশু কিভাবে উত্তর দিয়েছিলেন? তিনি কি বলেছিলেন: ‘শুধুমাত্র আমাকে প্রভু এবং পরিত্রাতা হিসাবে গ্রহণ কর তাহলেই পরিত্রাণ পাবে?’ না! যীশু বলেছিলেন: “সঙ্কীর্ণ দ্বার দিয়া প্রবেশ করিতে প্রাণপন কর; কেননা আমি তোমাদিগকে বলিতেছি, অনেকে প্রবেশ করিতে চেষ্টা করিবে, কিন্তু পারিবে না।”—লূক ১৩:২৩, ২৪.
যীশু কি সেই ব্যক্তির প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেননি? না, লোকটি পরিত্রাণ পাওয়া কতটা কঠিন তা জিজ্ঞাসা করেননি; তিনি জিজ্ঞাসা করেছিলেন যে সংখ্যা অল্প হবে কি না। তাই যীশু শুধু বলেছিলেন যে একজন ব্যক্তি যা আশা করতে পারে তার থেকে অপেক্ষাকৃতভাবে কম লোকেরা এই মনোরম আশীর্বাদ লাভ করার জন্য প্রাণপন প্রচেষ্টা করবে।
কিছু পাঠক হয়ত প্রতিবাদ করতে পারে, ‘আমাকে তা বলা হয়নি।’ এরা হয়তত যোহন ৩:১৬ পদ উদ্ধৃত করে যা বলে: “কারণ ঈশ্বর জগৎকে এমন প্রেম করিলেন যে, আপনার একজাত পুত্ত্রকে দান করিলেন, যেন, যে কেহ তাঁহাতে বিশ্বাস করে, সে বিনষ্ট না হয়, কিন্তু অনন্ত জীবন পায়।” কিন্তু, আমরা উত্তর দিয়ে থাকি: ‘তাহলে আমাদের কী বিশ্বাস করা উচিত? যে যীশু প্রকৃতই কি জীবিত ছিলেন? হ্যাঁ, অবশ্যই। তিনি হলেন ঈশ্বরের পুত্র? তা ত অবশ্যই! আর যেহেতু বাইবেল যীশুকে “গুরু” এবং “প্রভু” বলে সম্ভাষণ করে, তাহলে আমাদের কি তিনি যা শিক্ষা দিয়েছিলেন তা বিশ্বাস করা, তাঁর প্রতি বাধ্য হওয়া এবং তাঁকে অনুসরণ করা উচিত নয়?’—যোহন ১৩:১৩; মথি ১৬:১৬.
যীশুকে অনুসরণ করা
এখানে একটা সমস্যার সৃষ্টি হয়! অনেক লোকেদের যাদের বলে দেওয়া হয়েছে যে তারা “পরিত্রাণ” লাভ করেছে তাদের যীশুকে অনুসরণ করা অথবা বাধ্য হওয়ার খুব কম প্রবণতা থাকে। বস্তুতপক্ষে, একজন প্রটেস্টান্ট পাদরি লেখেন: “অবশ্যই খ্রীষ্টের প্রতি আমাদের বিশ্বাস থাকা প্রয়োজন। কিন্তু এটি দাবি করা হয় যে, যা অবশ্য প্রয়োজনীয় তা বাইবেলে কোথাও সমর্থন পাওয়া যায় না।”
পরিবর্তে, বাইবেল অনৈতিক অভ্যাসগুলির তালিকা দেয় যা লোকেদের মধ্যে সাধারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে যারা নিজেদের “পরিত্রাণ” পেয়েছে বলে মনে করে। এক ব্যক্তি যে এই ধারায় চলেছিল সেই বিষয়ে খ্রীষ্টানদের নির্দেশ দেওয়া হয়: “আপনাদের মধ্য হইতে সেই দুষ্টকে বাহির করিয়া দেও।” অবশ্যই ঈশ্বর চাইবেন না যে দুষ্ট লোকেরা তাঁর খ্রীষ্টীয় মণ্ডলীকে দূষিত করুক!—১ করিন্থীয় ৫:১১-১৩.
তাহলে যীশুকে অনুসরণ করার অর্থ কী এবং কিভাবে আমরা তা করতে পারি? যীশু কী করেছিলেন? তিনি কি অনৈতিক ব্যক্তি ছিলেন? ব্যভিচারী ছিলেন? এক মদ্যপায়ী ছিলেন? মিথ্যাবাদী ছিলেন? তিনি কী তাঁর ব্যবসা ক্ষেত্রে অসৎ ছিলেন? অবশ্যই নয়! ‘কিন্তু,’ আপনি হয়ত জিজ্ঞাসা করতে পারেন, ‘আমাকে কি এই সব বিষয় আমার জীবন থেকে বার করে দিতে হবে?’ এর উত্তর পেতে হলে, ইফিষীয় ৪:১৭ পদ থেকে ৫:৫ পদ অবধি বিবেচনা করুন। এটি বলে না যে, যা কিছুই আমরা করি না কেন ঈশ্বর আমাদের গ্রহণ করবেন। পরিবর্তে, এটি আমাদের বলে জগতের জাতির ন্যায় না হতে যারা “সর্ব্বপ্রকার অশুচি ক্রিয়া করিবার জন্য . . . স্বৈরিতায় সমর্পণ করিয়াছে . . . কিন্তু তোমরা খ্রীষ্টের বিষয়ে এরূপ শিক্ষা পাও নাই; . . . তোমরা পূর্ব্বকালীন আচরণ সম্বন্ধে সেই পুরাতন মনুষ্যকে ত্যাগ কর, . . . চোর আর চুরি না করুক, . . . কিন্তু বেশ্যাগমনের ও সর্ব্বপ্রকার অশুদ্ধতার বা লোভের নামও যেন তোমাদের মধ্যে না হয়, যেমন পবিত্রগণের উপযুক্ত। . . . কেননা তোমরা নিশ্চয় জানিতেছ, বেশ্যাগামী কি অশুদ্ধাচারী কি লোভী—সে ত প্রতিমাপূজক—কেহই খ্রীষ্টের ও ঈশ্বরের রাজ্যে অধিকার পায় না।”
আমরা কি যীশুকে অনুসরণ করছি যদি আমরা কিছুটা পরিমাণে তাঁর উদাহরণ অনুযায়ী চলবার চেষ্টা না করি? আমাদের কি কাজ করে আমাদের জীবনকে আরও খ্রীষ্টতুল্য করতে হবে না? এই গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন, যা কদাচিৎ বা আদৌ সেইসব ব্যক্তিদের দ্বারা বিবেচিত হয় যারা বলে, ঠিক যেমন একটি ধর্মীয় ট্র্যাক্ট মন্তব্য করে: “আপনি যেরকম ব্যক্তি—ঠিক সেইরূপেই খ্রীষ্টের কাছে আসুন।”
যীশুর এক শিষ্য সাবধান করে দেন যে, অনৈশ্বরিক লোকেরা “আমাদের ঈশ্বরের অনুগ্রহ লম্পটতায় পরিণত করে, এবং আমাদের একমাত্র অধিপতি ও প্রভু যীশু খ্রীষ্টকে অস্বীকার করে।” (যিহূদা ৪) কিভাবে আমরা, প্রকৃতপক্ষে ঈশ্বরের করুণাকে “লম্পটতায়” পরিণত করতে পারি? আমরা তা করতে পারি এই ধরে নিয়ে যে খ্রীষ্টের বলিদান, মানব অসিদ্ধতার ফলে যে পাপগুলি আমরা ছেড়ে আসার চেষ্টা করছি তার পরিবর্তে জেনেবুঝে পাপ যা আমরা করে চলব ঠিক করেছি তা মোচন করে। আমরা অবশ্যই আমেরিকার এক জনপ্রিয় প্রচারকের সাথে একমত হতে চাই না, যিনি বলেছিলেন যে “পরিষ্কার হতে, ছেড়ে দিতে অথবা উল্টো দিকে যেতে” হবে না।—বৈসাদৃশ্যে দেখুন প্রেরিত ১৭:৩০; রোমীয় ৩:২৫; যাকোব ৫:১৯, ২০.
বিশ্বাস কর্ম করতে প্রণোদিত করে
অনেক লোকেদের বলা হয়েছে যে “যীশুর উপর বিশ্বাস করা”-র অর্থ হল বিশ্বাস প্রদর্শনের একটি মাত্র কর্ম এবং আমাদের বিশ্বাস এতটা দৃঢ় হতে হবে না যার দরুন আমাদের বাধ্য হতে প্রণোদিত করবে। কিন্তু বাইবেল এই বিষয় একমত নয়। যীশু বলেননি যে, যে লোকেরা খ্রীষ্টীয় জীবনধারায় চলতে শুরু করে তারা পরিত্রাণ পাবে। পরিবর্তে, তিনি বলেছিলেন: “যে কেহ শেষ পর্য্যন্ত স্থির থাকিবে, সেই পরিত্রাণ পাইবে।” (মথি ১০:২২) বাইবেল আমাদের খ্রীষ্টীয় জীবনধারাকে এক দৌড়ের সাথে তুলনা করে, যার শেষে পুরস্কার হিসাবে পরিত্রাণ রয়েছে। আর এটি আমাদের উৎসাহ দেয়: “তোমরা এরূপে দৌড়, যেন পুরস্কার পাও।”—১ করিন্থীয় ৯:২৪.
তাই, “খ্রীষ্টকে গ্রহণ করা”-র সাথে শুধুমাত্র তাঁর সর্বোৎকৃষ্ট বলিদান থেকে যে আশীর্বাদগুলি আসে তা গ্রহণ করার থেকে আরও বেশি কিছু জড়িত রয়েছে। বাধ্যতার প্রয়োজন রয়েছে। প্রেরিত পিতর বলেন যে ন্যায়বিচার শুরু হবে ‘ঈশ্বরের গৃহ’ থেকে এবং তিনি আরও বলেন: “যদি তাহা প্রথমে আমাদিগেতে আরম্ভ হয়, তবে যাহারা ঈশ্বরের সুসমাচারের অবাধ্য, তাহাদের পরিণাম কি হইবে?” (বাঁকা অক্ষরে মুদ্রণ আমাদের।) (১ পিতর ৪:১৭) তাই আমাদের শুধুমাত্র শোনা এবং বিশ্বাস করার থেকে আরও বেশি কিছু করতে হবে। বাইবেল বলে যে আমাদের অবশ্যই ‘বাক্যের কার্য্যকারী হতে হবে, আপনাদিগকে [নিজেদের] ভুলাইয়া শ্রোতামাত্র হব না।’—যাকোব ১:২২.
যীশুর নিজের বার্তাগুলি
বাইবেলের পুস্তক প্রকাশিত বাক্যতে যীশুর বার্তাগুলি রয়েছে, যা তিনি যোহনের মাধ্যমে প্রাচীনকালের সাতটি খ্রীষ্টীয় মণ্ডলীকে দিয়েছিলেন। (প্রকাশিত বাক্য ১:১, ৪) যীশু কি বলেছিলেন যে যেহেতু এই মণ্ডলীগুলির লোকেরা ইতিমধ্যেই তাঁকে “গ্রহণ” করেছে, অতএব সেটাই যথেষ্ট? না। তিনি তাদের কাজগুলি, তাদের কঠোর পরিশ্রম এবং তাদের ধৈর্যের প্রশংসা করেছিলেন এবং তাদের প্রেম, বিশ্বাস এবং পরিচর্যা সম্বন্ধে কথা বলেছিলেন। কিন্তু তিনি বলেছিলেন যে দিয়াবল তাদের পরীক্ষায় ফেলবে এবং তারা “[তারা] আপন আপন কার্য্যানুযায়ী” পুরস্কৃত হবে।—প্রকাশিত বাক্য ২:২, ১০, ১৯, ২৩.
সাধারণ লোকেরা যা বোঝে যীশু এর থেকে আরও বেশি দায়িত্বের কথা বর্ণনা করেছেন, যত শীঘ্রই তারা ধর্মীয় সভায় তাঁকে “গ্রহণ” করবে তাদের পরিত্রাণ হল “শেষ কাজ।” যীশু বলেছিলেন: “কেহ যদি আমার পশ্চাৎ আসিতে ইচ্ছা করে, তবে সে আপনাকে অস্বীকার করুক, আপন ক্রুশ তুলিয়া লউক, এবং আমার পশ্চাদ্গামী হউক। কেননা যে কেহ আপন প্রাণ রক্ষা করিতে ইচ্ছা করে, সে তাহা হারাইবে, আর যে কেহ আমার নিমিত্তে আপন প্রাণ হারায়, সে তাহা পাইবে।”—মথি ১৬:২৪, ২৫.
নিজেকে অস্বীকার করা? যীশুর পশ্চাদ্গামী হওয়া? এর জন্য প্রচেষ্টার প্রয়োজন? এটি আমাদের জীবনধারাকে পরিবর্তন করবে। তবুও, যীশু কি সত্যই বলেছিলেন যে কেউ কেউ হয়ত ‘আপন প্রাণ হারাবে’—তাঁর জন্য মৃত্যুবরণ করবে? হ্যাঁ, এইধরনের বিশ্বাস শুধুমাত্র উত্তম বিষয়গুলির জ্ঞান থেকে আসে যা আপনি ঈশ্বরের বাক্য অধ্যয়ন করে শিখতে পারেন। এটি প্রমাণিত হয় স্তিফানের দিনে যাকে ধর্মীয় গোঁড়া ব্যক্তিরা পাথর দিয়ে মারে, “তিনি যে বিজ্ঞতার ও যে আত্মার বলে কথা কহিতেছিলেন, তাহার প্রতিরোধ করিতে তাহাদের সাধ্য হইল না।” (প্রেরিত ৬:৮-১২; ৭:৫৭-৬০) আর এইধরনের বিশ্বাস আমাদের দিনেও প্রদর্শিত হয়েছে শত শত যিহোবার সাক্ষীদের দ্বারা যারা নাৎসি কন্সেনট্রেশন ক্যাম্পে মৃত্যুবরণ করেছিল, কিন্তু তাদের বাইবেল-শিক্ষিত বিবেককে উলঙ্ঘন করেনি।a
খ্রীষ্টীয় উদ্দীপনা
আমাদের অবশ্যই খ্রীষ্টীয় বিশ্বাস ধরে রাখতে হবে, কিছু গির্জায় অথবা টেলিভিশন প্রোগ্রামে আপনি যা শুনে থাকেন তার বিপরীতে, বাইবেল বলে যে আমরা পড়ে যেতে পারি। এটি এমন খ্রীষ্টানেদের সম্বন্ধে বলে যারা “সোজা পথ” ত্যাগ করেছে। (২ পিতর ২:১, ১৫) তাই আমাদের প্রয়োজন ‘সভয়ে ও সকম্পে আপন আপন পরিত্রাণ সম্পন্ন করা।’ ফিলিপীয় ২:১২; ২ পিতর ২:২০.
এইভাবেই কি প্রথম শতাব্দীর খ্রীষ্টানেরা অর্থাৎ লোকেরা যারা যীশু এবং তাঁর প্রেরিতদের শিক্ষা দিতে শুনেছিল তারা বুঝেছিল? হ্যাঁ। তারা জানত যে তাদের কিছু করতে হবে। যীশু বলেছিলেন: “অতএব তোমরা গিয়া সমুদয় জাতিকে শিষ্য কর; . . . আমি তোমাদিগকে যাহা যাহা আজ্ঞা করিয়াছি, সে সমস্ত পালন করিতে তাহাদিগকে শিক্ষা দেও।”—মথি ২৮:১৯, ২০.
যীশু এটি বলার কিছু সপ্তাহ পর, ৩,০০০ ব্যক্তি শুধুমাত্র একদিনে বাপ্তিস্ম গ্রহণ করে। খুব শীঘ্রই বিশ্বাসীদের সংখ্যা বেড়ে ৫,০০০-তে দাঁড়ায়। যারা বিশ্বাস করেছিল তারা অন্যদের শিক্ষা দেয়। যখন নির্যাতন তাদের ছিন্ন ভিন্ন করে দেয়, এটি শুধুমাত্র তাদের বার্তাকে ছড়াতে সাহায্য করেছিল। বাইবেল শুধুমাত্র কয়েকটি নেতাদের সম্বন্ধে বলেনি কিন্তু “যাহারা ছিন্নভিন্ন হইয়াছিল, তাহারা চারিদিকে ভ্রমণ করিয়া সুসমাচারের বাক্য প্রচার করিল।” প্রায় ৩০ বছর বাদে, প্রেরিত পৌল তাই লিখতে পেরেছিলেন যে সুসমাচার “আকাশমণ্ডলের অধঃস্থিত সমস্ত সৃষ্টির কাছে প্রচারিত হইয়াছে।”—প্রেরিত ২:৪১; ৪:৪; ৮:৪; কলসীয় ১:২৩.
পৌল ধর্মান্তরিত করেননি, ঠিক যেমন কিছু টিভির সুসমাচার প্রচারক করে থাকে এই বলে: ‘যীশুকে এখনই গ্রহণ কর, ফলে চিরকালের জন্য পরিত্রাণ পাবে।’ এমনকি তার আমেরিকান পাদরির মত আস্থাও ছিল না যিনি লেখেন: “কিশোর হিসাবে আমি . . . ইতিমধ্যেই পরিত্রাণ লাভ করেছিলাম।” এই খ্রীষ্টীয় বার্তা জাতিগণের কাছে পৌঁছানোর জন্য যীশু ব্যক্তিগতভাবে পৌলকে মনোনীত করার প্রায় ২০ বছর পর, এই কঠোর পরিশ্রমী প্রেরিত লিখেছিলেন: “আমার নিজ দেহকে প্রহার করিয়া দাসত্বে রাখিতেছি, পাছে অন্য লোকদের কাছে প্রচার করিবার পর আমি আপনি কোন ক্রমে অগ্রাহ্য হইয়া পড়ি।”—১ করিন্থীয় ৯:২৭; প্রেরিত ৯:৫, ৬, ১৫.
পরিত্রাণ ঈশ্বরের কাছ থেকে এক উপহারস্বরূপ। এটিকে অর্জন করা যায় না। তবুও এর জন্য আমাদের পক্ষ থেকে প্রচেষ্টার প্রয়োজন। যদি আপনাকে কেউ মূল্যবান উপহার দিয়ে থাকে আর সেটির প্রতি উপলব্ধিবোধ না দেখিয়ে আপনি যদি তা তুলে না নেন, আপনার কৃতজ্ঞতাবোধের অভাব দেখে সেই দাতা হয়ত সেটিকে অন্য কাউকে দিতে প্রণোদিত হবে। যীশু খ্রীষ্টের রক্ত কত মূল্যবান? এটি একটি বিনামূল্যের উপহার, কিন্তু আমাদের এটির প্রতি গভীর উপলব্ধিবোধ দেখাতে হবে।
সত্য খ্রীষ্টানেরা রক্ষামূলক পরিস্থিতিতে আছে কারণ তারা ঈশ্বরের সামনে অনুমোদনের স্থানে রয়েছে। দলগতভাবে তাদের পরিত্রাণ নিশ্চিত। ব্যক্তিগতভাবে তাদের ঈশ্বরের মান অনুযায়ী পৌঁছাতে হবে। কিন্তু, আমরা অকৃতকার্য হতে পারি, কারণ যীশু বলেছিলেন: “কেহ যদি আমাতে না থাকে, তাহা হইলে শাখার ন্যায় তাহাকে বাহিরে ফেলিয়া দেওয়া যায় ও সে শুকাইয়া যায়।”—যোহন ১৫:৬.
“ঈশ্বরের বাক্য জীবন্ত”
পূর্বের প্রবন্ধে উল্লেখিত যে কথোপকথন তা প্রায় ৬০ বছর আগে ঘটে। জনি এখনও বিশ্বাস করে যে শুধুমাত্র যীশু খ্রীষ্টের মাধ্যমে পরিত্রাণ আসে, কিন্তু সে বুঝতে পারে যে তার জন্য আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। তার দৃঢ় প্রত্যয় রয়েছে যে বাইবেল মানবজাতির জন্য একমাত্র প্রকৃত আশার উৎসের দিকে নির্দেশ করে এবং আমাদের অবশ্যই এই মনোরম বইটি পড়তে হবে, এর দ্বারা প্রণোদিত হতে হবে এবং প্রেমের, বিশ্বাসের, দয়ার, বাধ্যতার এবং ধৈর্যের কার্য করতে এটির দ্বারা আমাদের প্রণোদিত হওয়া উচিত। তিনি তার ছেলেমেয়েদের সেই একই বিষয়গুলি বিশ্বাস করতে শিখিয়েছেন এবং এখন তার ছেলেমেয়েরা তাদের নিজের ছেলেমেয়েদের একইভাবে বড় করছে দেখে তিনি কতই না খুশি হয়েছেন। তার ইচ্ছা হল যে সকলের যেন সেই একই ধরনের বিশ্বাস থাকে এবং অন্যদের হৃদয় ও মনের মধ্যে প্রবেশ করানোর জন্য তিনি যতটা সম্ভব করেন।
প্রেরিত পৌল এটি লিখতে অনুপ্রাণিত হন যে “ঈশ্বরের বাক্য জীবন্ত ও কার্য্যসাধক।” (ইব্রীয় ৪:১২) এটি জীবনকে পরিবর্তন করতে পারে। এটি আপনাকে প্রেমের, বিশ্বাসের এবং বাধ্যতার আন্তরিক কার্য্য করতে প্রণোদিত করতে পারে। শুধুমাত্র মনেতে বাইবেল যা বলে তা “গ্রহণ” করার চেয়ে আরও কিছু আপনাকে করতে হবে। এটি অধ্যয়ন করুন এবং এর দ্বারা নিজের হৃদয়কে প্রণোদিত হতে দিন। নিজেকে এর প্রজ্ঞার দ্বারা পরিচালিত হতে দিন। প্রায় ৫০,০০,০০০ জন যিহোবার ইচ্ছুক সাক্ষীরা প্রায় ২৩০টি দেশে গৃহ বাইবেল অধ্যয়নের প্রস্তাব দিয়ে থাকে। এই অধ্যয়নের দ্বারা আপনি কী শিখতে পারেন সেই বিষয়ে জানার জন্য এই পত্রিকার প্রকাশকদের কাছে লিখুন। যে বিশ্বাস এবং আধ্যাত্মিক শক্তি আপনি লাভ করবেন তা আপনাকে আনন্দ দেবে!
[পাদটীকাগুলো]
a তার বইয়ে দ্যা নাৎসি স্টেট অ্যান্ড দ্যা নিউ রিলিজিয়ান: ফাইভ কেস স্টাডিস ইন নন কনফারমিটি, ডা. ক্রিস্টিন ই. কিং রিপোর্ট করেন: “দুইজন জার্মান [যিহোবার] সাক্ষীদের মধ্যে একজনকে কারারুদ্ধ করা হয় আর চারজনের মধ্যে একজন তাদের জীবন হারায়।”
[৭ পৃষ্ঠার বাক্স]
কেন ‘বিশ্বাসের পক্ষে প্রাণপণ করবেন’?
বাইবেলে যিহূদার পুস্তক “যীশু খ্রীষ্টের নিমিত্ত রক্ষিত, সেই আহূতগণের” উদ্দেশ্যে লেখা হয়েছিল। এটি কি বলে যে যেহেতু তারা ‘যীশুকে গ্রহণ করেছে’ তাই তাদের পরিত্রাণ নিশ্চিত? না, যিহূদা এই খ্রীষ্টানদের “বিশ্বাসের পক্ষে প্রাণপণ করিতে” বলেছিলেন। এটি করার জন্য তাদের তিনি তিনটি কারণ দিয়েছিলেন। প্রথমে ঈশ্বর “মিসর দেশ হইতে প্রজাদিগকে নিস্তার” দেন, কিন্তু অনেকে পরে বিপথগামী হয়। দ্বিতীয়ত এমনকি দূতেরা বিদ্রোহ করে এবং মন্দ দূত হয়ে যায়। তৃতীয়ত ঈশ্বর সদোম ও ঘমোরাকে ধ্বংস করেছিলেন, কারণ মন্দ যৌন অনৈতিকতা সেই দেশগুলিতে অভ্যাস করা হত। যিহূদা এই বাইবেলের বিবরণগুলি “দৃষ্টান্তরূপে” প্রদান করেন। হ্যাঁ, এমনকি বিশ্বাসীরা যারা “যীশুর খ্রীষ্টের নিমিত্ত রক্ষিত” তাদেরও অবশ্যই যত্ন নিতে হবে যাতে করে সত্য বিশ্বাস থেকে তারা পড়ে না যায়।—যিহূদা ১-৭.
[৮ পৃষ্ঠার বাক্স]
কোন্টি সঠিক?
বাইবেল বলে: “কার্য্য ব্যতিরেকে বিশ্বাস দ্বারাই মনুষ্য ধার্ম্মিক গণিত হয়।” এটি আরও বলে: “কর্ম্মহেতু মনুষ্য ধার্ম্মিক গণিত হয়, সুধু বিশ্বাসহেতু নয়।” কোন্টি সঠিক? আমরা বিশ্বাস না কর্ম দ্বারা ধার্মিক গণিত হই?—রোমীয় ৩:২৮; যাকোব ২:২৪.
বাইবেল থেকে সংগতিপূর্ণ উত্তর হল যে দুটিই সঠিক।
শতাব্দী ধরে যে নিয়ম মোশির মাধ্যমে ঈশ্বর দিয়েছিলেন তার জন্য প্রয়োজন ছিল যে যিহূদী উপাসকেরা যেন বিশেষ বলিদান ও দান দেয় তাদের উৎসবগুলি এবং খাদ্য সম্পর্কে নিয়ম ও অন্যান্য প্রয়োজনীয়তাগুলি পালন করার জন্য। সেই “নিয়মের কার্যগুলি” অথবা শুধুমাত্র “কার্যগুলি,” আর প্রয়োজন হয় না যখন যীশু সর্বশেষ বলিদানটি দেন।—রোমীয় ১০:৪.
বাস্তব তথ্যটি হল এই যে মোশির নিয়মের অধীনে যে কার্যগুলি করা হত তা পরিবর্তিত হয় যীশুর সর্বোৎকৃষ্ট বলিদান দ্বারা, এর অর্থ এই নয় যে আমরা বাইবেলের নির্দেশনা এড়িয়ে যেতে পারি। এটি বলে: “সেই খ্রীষ্টের রক্ত তোমাদের সংবেদকে মৃত [পুরাতন] ক্রিয়াকলাপ হইতে কত অধিক নিশ্চয় শুচি না করিবে, যেন তোমরা জীবন্ত ঈশ্বরের আরাধনা করিতে পার।”—ইব্রীয় ৯:১৪.
আমরা কিভাবে ‘জীবন্ত ঈশ্বরের আরাধনা করি’? বাইবেল আমাদের মাংসের কার্যের বিরুদ্ধে লড়াই করতে, জগতের অনৈতিকতা প্রতিরোধ করতে এবং এর ফাঁদ এড়িয়ে চলতে বলে। এটি বলে: “সহজ বাধাজনক পাপ” ফেলে দিয়ে ‘বিশ্বাসের উত্তম যুদ্ধে প্রাণপণ করতে,’ এবং ‘ধৈর্য্যপূর্ব্বক আমাদের সম্মুখস্থ ধাবনক্ষেত্রে দৌড়; বিশ্বাসের আদিকর্ত্তা ও সিদ্ধিকর্ত্তা যীশুর প্রতি দৃষ্টি রেখে।’ আর বাইবেল উৎসাহ দেয় আমরা যেন ‘প্রাণের ক্লান্তিতে অবসন্ন না হই।’—১ তীমথিয় ৬:১২; ইব্রীয় ১২:১-৩; গালাতীয় ৫:১৯-২১.
এগুলি করার দ্বারা আমরা পরিত্রাণ অর্জন করি না, কারণ কোন মনুষ্য নেই যে পর্যাপ্ত করে এই মহৎ আশীর্বাদগুলির যোগ্য হতে পারে। যদি আমরা প্রেম এবং বাধ্যতা দেখাতে অসমর্থ হই সেইসব ক্ষেত্রে যা বাইবেল বলে যে ঈশ্বর এবং খ্রীষ্ট আমাদের কাছ থেকে আশা করেন তাহলে আমরা এই সুন্দর উপহারের যোগ্য হব না। আমাদের বিশ্বাস প্রদর্শনে যদি কর্ম না থাকে তাহলে আমাদের দাবি যে, আমরা যীশুকে অনুসরণ করছি তাতে অকৃতকার্য হব কারণ বাইবেল বলে: “বিশ্বাসও কর্ম্মবিহীন হইলে আপনি একা বলিয়া তাহা মৃত।”—যাকোব ২:১৭.
[৭ পৃষ্ঠার চিত্র]
বাইবেল অধ্যয়ন করুন এবং এর দ্বারা নিজেকে প্রণোদিত হতে দিন